করোনা সংক্রমণ ধীরে ধীরে কমে এলেও বেড়েছে ডেঙ্গুর প্রকোপ। আগের বছরের তুলনায় এবার ডেঙ্গুর উপসর্গ কিছুটা ভিন্ন হওয়ায় রোগীরা দেরিতে হাসপাতালে আসছে। কিছু বোঝার আগেই পরিস্থিতি জটিল হয়ে উঠছে। এ কারণে অন্যান্য বছরের তুলনায় আক্রান্তরা দ্রুত মারা যাচ্ছে।
ডেঙ্গু আক্রান্তদের সেবা দেয়া একাধিক চিকিৎসকের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এডিস মশা নিধনে সিটি করপোরেশন ব্যর্থ হওয়ায় বিপদে রয়েছে নগরবাসী। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম থাকায় বড় ঝুঁকিতে রয়েছে শিশুরা।
তারা বলছেন, ডেঙ্গুর ভয়াবহতা অন্য বছরের তুলনায় আলাদা হওয়ায় মারা গেছে অর্ধশতাধিক মানুষ। তাই প্রতিরোধে সচেতনতা বাড়ানোর পাশাপাশি প্রাথমিক লক্ষণ দেখা দেয়ার সঙ্গে সঙ্গে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়ার পরামর্শ বিশেষজ্ঞদের।
চিকিৎসকরা বলছেন, এবার ডেঙ্গু ভালো হয়ে যাওয়ার পর শকড সিনড্রম বা নিউমোনিয়া দেখা দিচ্ছে। এককভাবে শুধু ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হচ্ছে না কেউই। ডেঙ্গুর সঙ্গে ডেঙ্গু-পরবর্তী জটিলতাও মানুষকে ভোগাচ্ছে।
তারা আরও বলেন, জ্বর ভালো হয়ে গেলেও চার থেকে সাত দিন সতর্ক থাকতে হবে। প্রাথমিক পর্যায়ে ডেঙ্গু শনাক্ত ও চিকিৎসায় মৃত্যুর সংখ্যা কমিয়ে আনা সম্ভব।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য বলছে, ২০০০ সাল থেকে মূলত ডেঙ্গুতে আক্রান্তের সংখ্যা ও মৃত্যুবিষয়ক তথ্য দিয়ে আসছে তারা। ওই বছর ৯৩ জনের মৃত্যুর সংবাদ দেয়া হয়।
২০০১ সালে ৪৪ ও ২০০২ সালে ৫৮ জনের মৃত্যুর সংবাদ দেয় সরকারি এ সংস্থাটি। এরপর ডেঙ্গু সহনশীল পর্যায়ে ছিল। এ নিয়ে তেমন আলোচনাও ছিল না।
গত ২০ বছরে ডেঙ্গুতে সবচেয়ে বেশি মৃত্যু হয় ২০১৯ সালে। ওই বছর ১৭৯ জনের মৃত্যুর খবর দেয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
চলতি বছর এখন পর্যন্ত ডেঙ্গুতে মারা গেছে ৫৪ জন। এ নিয়ে চলতি বছর ১৩ হাজার ৭ জনের দেহে ডেঙ্গু শনাক্ত হয়েছে।
এ বিষয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) ভাইরোলজি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. সাইফুল্লাহ মুন্সি বলেন, ডেঙ্গু রোগের অনেক ধরন রয়েছে। তবে এবার ‘ডেনভি-৩’-এর প্রভাব বেশি।
তিনি বলেন, ২০১৭ সালে দেশে প্রথম এই ধরন শনাক্ত হয়। এর আগে ডেনভি-১ ও ডেনভি-২-এ আক্রান্ত হয়ে অনেকের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে উঠেছে। কিন্তু ডেনভি-৩-এর বিরুদ্ধে এই ক্ষমতা কার্যকর হচ্ছে না।
সাইফুল্লাহ মুন্সি বলেন, ‘যারা আগের দুই ভ্যারিয়েন্টে আক্রান্ত, তারা নতুন করে ডেনভি-৩-এ আক্রান্ত হলে হেমোরেজ বা সংকটাপন্ন অবস্থায় পড়ছেন। এ কারণে এবার আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর সংখ্যা বাড়ছে। এর জিনোম সিকোয়েন্সিং ভবিষ্যতে ভ্যাকসিন উৎপাদনে সহায়ক হবে।’
তিনি বলেন, ‘এবার ডেঙ্গু আক্রান্তদের বেশিরভাগের শরীরে ডেনভি-৩ ভ্যারিয়েন্ট শনাক্ত হয়েছে। আর ডেঙ্গু আক্রান্তদের মধ্যে অন্য বছরের তুলনায় মৃত্যুও বেশি হচ্ছে।’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ব্যক্তিগত চিকিৎসক অধ্যাপক ডা. এ বি এম আব্দুল্লাহ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘২০১৯ সালেও ডেনভি-৩-এর ধরনের কারণে এ রোগের প্রাদুর্ভাব বেশি দেখা দিয়েছিল। এবারও এই ধরনের সংক্রমণ বেশি হচ্ছে বলে মৃত্যুর সংখ্যাও বেশি।
‘যাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম তারা বেশি মারা যাচ্ছেন। এ কারণে শিশুরা আক্রান্ত হলে দ্রুত সময়ের মধ্যে জটিল পরিস্থিতি তৈরি হচ্ছে। এ ছাড়া বয়স্ক ও যারা হৃদরোগ, উচ্চ রক্তচাপ, লিভার সমস্যাসহ বিভিন্ন রোগে ভুগছেন, তারা আক্রান্ত হলে ঝুঁকি বেশি।’
এ বি এম আব্দুল্লাহ জানান, মৃত্যুর সংখ্যা বাড়ার একটি বড় কারণ দেরিতে হাসপাতালে আসা। জ্বর-সর্দি দেখা দিলে শুরুর দিকে অনেকে এটাকে তেমন পাত্তা দেয় না। এটাই সমস্যা তৈরি করে।
এ কারণে কারও সামান্য জ্বর-সর্দি দেখা দিলে অবহেলা না করে ডেঙ্গু ও করোনা পরীক্ষা করতে হবে। দ্রুত সময়ের মধ্যে চিকিৎসা নিশ্চিত করতে হবে। প্রয়োজনীয় সব পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে হবে।
শুরু থেকে চিকিৎসা নিশ্চিত করতে পারলে মৃত্যুর ঝুঁকি অনেকাংশে কমে আসে। তাই সবাইকে সচেতন হতে হবে। ডেঙ্গু ভাইরাস না ছড়াতে এডিস মশা যাতে বংশবিস্তার করতে না পারে, সেদিকে লক্ষ রাখতে হবে। ডেঙ্গু প্রতিরোধ সবচেয়ে বেশি জরুরি বলে মনে করেন তিনি।
এবারের ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসা দিতে বেগ পোহাতে হচ্ছে জানিয়ে এ চিকিৎসক বলেন, ‘সাধারণ ডেঙ্গুতে অনেক বেশি জ্বর থাকে। তবে এবারের ডেঙ্গুতে শরীরের তাপমাত্রা ১০১-১০২ ডিগ্রির মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকছে।’
তিনি বলেন, ‘হেমোরেজিক নয়, শকড সিনড্রোম হয়, তবে হাড় বা শরীরের সংযোগস্থলে ব্যথাও হয় না। তাই অনেকেই বুঝতে পারে না। তারা ভাবেন, দু-এক দিনের মধ্যে ঠিক হয়ে যাবে। তবে দ্রুত সময়ে অবস্থা জটিল হয়ে উঠছে। সাধারণত ডেঙ্গুতে এমন লক্ষণ দেখা যায় না।’
ডেঙ্গু আক্রান্ত হলে শিশুদের শরীরে পানির স্বল্পতা দেখা দিচ্ছে। তাই শুরুতে পানির শরবত ও পানি জাতীয় ফল বেশি খেতে দিতে হবে বলে জানান তিনি।
অধ্যাপক ডা. এ বি এম আব্দুল্লাহ বলেন, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হিসাব অনুযায়ী প্রতিদিন অনেক রোগী হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছে।
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. লেনিন চৌধুরী নিউজবাংলাকে বলেন, ‘এবার শকড সিনড্রোম বেশি হচ্ছে। এর আগে হেমোরেজিক ডেঙ্গু বেশি দেখেছি। শকড সিনড্রোমে শরীরে পানি কমে যায়, তাপ বেড়ে যায়, হার্টবিট কমে যায়, ব্লাডপ্রেশার কমে যায় এবং রোগী জ্ঞান হারাতে পারে। ফুসফুস ও পেটে পানি জমে।
‘আর হেমোরেজিক ডেঙ্গুতে রক্তক্ষরণ হয়, শরীরে র্যাশ ওঠে, তাপমাত্রা ১০৪ থেকে ১০৫ হয়। এটার সঙ্গে দেশের মানুষ পরিচিত। তাই সে বুঝতে পারে কী করতে হবে।’
তিনি বলেন, এবারের ডেঙ্গুতে তাপমাত্রা ১০১ ডিগ্রি থাকছে, র্যাশ দেখা যায় না, রক্তক্ষরণও হয় না। ফলে অনেকে বুঝতেই পারেন না যে, তিনি ডেঙ্গু আক্রান্ত বা গুরুত্ব দেন না। জ্বর চলে যাওয়ার পরে প্লাটিলেট ভেঙে ব্লাডপ্রেশার কমে কলাপস করে। ফলে এবার মৃত্যুর হার বেশি।
এ বিষয়ে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ভাইরোলজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক নুসরাত সুলতানা নিউজবাংলাকে বলেন, ‘ডেঙ্গু ও করোনা মহামারি একই সঙ্গে আসার কারণে পরীক্ষা না করে নিশ্চিত করে বলা যায় না রোগী ডেঙ্গু নাকি করোনায় আক্রান্ত। এ কারণে চিকিৎসা করতেও দেরি হচ্ছে।’
তিনি বলেন, অনেকেই ডেঙ্গু আক্রান্ত হওয়ার পর ভালো হয়ে যাচ্ছেন। কিন্তু এ ভালো হয়তো অনেক খারাপ দিকে নিয়ে যাচ্ছে। হাসপাতালে আসতে দেরি হচ্ছে। হাসপাতালে জটিল অবস্থায় আসার কারণে তাদের আইসিইউ প্রয়োজন হচ্ছে।
নুসরাত আরও বলেন, ‘করোনা রোগীতে অধিকাংশ আইসিইউ পূর্ণ থাকায় ডেঙ্গু রোগীদের দ্রুত আইসিইউ সেবা দেয়া সম্ভব হচ্ছে না। এতে অনেক রোগীর মৃত্যু হচ্ছে।
‘সাধারণত ডেঙ্গু রোগী হাসপাতালে নেয়ার ১২ থেকে ১৫ দিনের মধ্যে মারা যায়। তবে এবার এর চেয়ে কম সময়ের মধ্যে মৃত্যু হচ্ছে।’
দেশজুড়ে ডেঙ্গুর প্রকোপ বাড়তে শুরু করেছে। রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে শনিবার একদিনেই ৮০ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী ভর্তি হয়েছে। তবে প্রকোপটা বরাবরের মতোই ঢাকায় বেশি।
বর্তমানে দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি রয়েছে ২০২ জন ডেঙ্গু রোগী। তাদের মধ্যে ঢাকার সরকারি-বেসরকারি ৫৩টি হাসপাতালে রয়েছে ১৭৬ জন। বাকি ২৬ জন ঢাকার বাইরের বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর শনিবার জানায়, এদিন সকাল ৮টা পর্যন্ত পূর্ববর্তী ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে ৮০ জন দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। তাদের মধ্যে ঢাকায় ৭৩ জন আর ঢাকার বাইরে ভর্তি হয়েছে সাতজন।
চলতি বছরে এ পর্যন্ত ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে মোট এক হাজার ৭০৪ জন। তাদের মধ্যে চিকিৎসা নিয়ে বাড়ি ফিরে গেছে এক হাজার ১১৯ জন। আর চলতি বছরে এখন পর্যন্ত ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে ১৩ জন।
২০০০ সালে দেশে ডেঙ্গু শনাক্ত হওয়ার পর থেকে বছরের প্রথম ৫ মাসে এতো মৃত্যু এবং হাসপাতালে এতোসংখ্যক রোগী আগে দেখা যায়নি।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দেশে ডেঙ্গুর ধরন বদলেছে। তাতে একদিকে ডেঙ্গু যেমন ভয়ংকর হয়ে উঠছে, তেমনি ‘শহুরে রোগ’ ডেঙ্গু শহর ছাড়িয়ে ঝুঁকি বাড়িয়েছে দেশজুড়ে।
বর্ষা মৌসুম শুরুর আগেই ডেঙ্গুর বিপজ্জনক অবস্থার বিষয়ে তারা বলছেন, বর্তমান সময়ে এসে বর্ষাকাল বা বৃষ্টি এসবের সঙ্গে ডেঙ্গুর ততোটা সম্পর্ক নেই। কারণ ডেঙ্গু বিস্তারকারী এডিস মশার লার্ভা এখন জমে থাকছে নির্মাণাধীন ভবন, ওয়াসার মিটার বক্সসহ বিভিন্ন জায়গায়। আর এসব কারণে ডেঙ্গু হয়ে উঠেছে সারা বছরের রোগ। এটা কেবল ঢাকাকেন্দ্রিক নয়, পুরো দেশের ঝুঁকির কারণ।
আরও পড়ুন:এডিস মশাবাহিত রোগ ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন আরও ২২০ জন।
শুক্রবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুম থেকে গত ২৪ ঘণ্টার এ হিসাব দেয়া হয়েছে।
নতুন করে হাসপাতালে ভর্তি রোগীদর মধ্যে ঢাকায় ১০৪ এবং ঢাকার বাইরে বিভিন্ন হাসপাতালে ১১৬ জন ভর্তি হয়েছেন।
অধিদপ্তর থেকে বলা হয়, বর্তমানে দেশের বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে মোট এক হাজার ৬০ ডেঙ্গু রোগী চিকিৎসাধীন। ঢাকার ৫৩টি সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে বর্তমানে ৫৯১ এবং অন্যান্য বিভাগের হাসপাতালে ভর্তি ৪৬৯ জন রোগী।
এ বছর ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে সারা দেশে ৬০ হাজার ২৯৬ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এর মধ্যে ঢাকায় ৩৮ হাজার ১০৪ জন এবং ঢাকার বাইরে ২২ হাজার ১৯৪ জন।
এ বছর ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে সারা দেশে ২৬৬ জন মারা গেছেন। চিকিৎসা শেষে হাসপাতাল থেকে সুস্থ হয়েছেন ৫৮ হাজার ৯৭২ জন। এর মধ্যে ঢাকায় ৩৭ হাজার ৩৪৯ জন এবং ঢাকার বাইরে বিভিন্ন স্থানে ২১ হাজার ৬২৩ জন সুস্থ হয়েছেন।
আরও পড়ুন:দেশের প্রায় ৫ কোটি মানুষ থাইরয়েডের সমস্যায় ভুগছেন। পুরুষদের তুলনায় নারীরা এই সমস্যায় পড়েছেন চার থেকে পাঁচ গুণ।
বুধবার রাজধানীতে অ্যাসোসিয়েশন অফ ক্লিনিক্যাল অ্যান্ড্রোক্রাইনোলজি অ্যান্ড ডায়াবেটোলজিস্ট অফ বাংলাদেশ (এসিইডিবি) আয়োজিত বিশ্ব থাইরয়েড দিবস উপলক্ষে সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানানো হয়।
এসিইডিবির অফিসে সংবাদ সম্মেলনের সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের সভাপতি অধ্যাপক ডা. মো. ফরিদ উদ্দিন। সঞ্চালনা করেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের সহকারী অধ্যাপক ডা. এম এ হালিম খান।
সংবাদ সম্মেলনে আরও বলা হয়, থাইরয়েড রোগীর অর্ধেকের বেশি মানুষ জানেন না যে তারা এ সমস্যায় ভুগছেন।
ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে অধ্যাপক ইন্দ্রজিৎ প্রসাদ বলেন, বন্ধ্যাত্বের অন্যতম কারণ থাইরয়েড সমস্যা। তাই গর্ভধারণ সংক্রান্ত সমস্যা হলে গাইনি বিশেষজ্ঞের পরামর্শের পাশাপাশি থাইরয়েডের চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়া উচিৎ। তা না হলে নবজাতকের মানসিক ও শারীরিক বৃদ্ধিতে ব্যাঘাত ঘটতে পারে।
তিনি বলেন, এ অবস্থায় শিশু অস্বাভাবিক হিসেবে বেড়ে উঠতে পারে। এ অবস্থা থেকে মুক্তি পেতে গর্ভবতী অবস্থায় ও প্রসবের আগে থাইরয়েড পরীক্ষা জরুরি।
ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ নিউরোসায়েন্সেস ও হাসপাতালের সহকারী অধ্যাপক আতিকুর রহমান বলেন, সাধারণত আয়োডিনের অভাবে গলাফুলা রোগ হয়ে থাকে, যাকে সাধারণ ভাষায় ঘ্যাগ রোগ বলা হয়।
বাংলাদেশে আয়োডিন যুক্ত লবণ খাওয়া হলেও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) ডায়াবেটিস ও হরমোন বিভাগের উদ্যোগে পরিচালিত সাম্প্রতিক গবেষণা বলছে, দেশের বেশিরভাগ স্কুলগামী শিশু এবং গর্ভবতী মায়েদের আয়োডিনের অভাব রয়েছে। আয়োডিন শরীরে খুব প্রয়োজনীয় থাইরয়েড হরমোন তৈরিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
অনুষ্ঠানে থাইরয়েড বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক মীর মোশাররফ হোসেন বলেন, থাইরয়েডের বিষয়ে সচেতনতা জরুরি। থাইরয়েডের বিষয়ে স্পষ্ট ধারণা না থাকায় অনেকে দেরিতে চিকিৎসা নিচ্ছেন। আবার কেউ কেউ না জেনেই অনেকের পরামর্শে পরামর্শে ওষুধ খান। এতে অনেক সময় ভুল ওষুধ খাচ্ছেন। এতে রোগের জটিলতা বাড়ছে।
থাইরয়েডের প্রকারভেদ রয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, হাইপো থাইরয়েড হলে, অল্প খাবার খেয়েও মানুষের ওজন বেড়ে যাবে, শরীর দুর্বল লাগবে। এসব রোগীদর কোষ্ঠকাঠিন্য দেখা দেয়, নারীদের ক্ষেত্রে অনিয়ন্ত্রিত মাসিকের সমস্যা হয়। অপরদিকে হাইপার থাইরয়েডের ক্ষেত্রে তার বিপরীত লক্ষণ দেখা যায়। এর চিকিৎসাও আলাদা হবে।
নীতিমালা অনুসরণ না করে যে সব বেসরকারি নার্সিং শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে সে সব প্রতিষ্ঠানের অনুমোদন দ্রুত বাতিলসহ পাঁচ দফা দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ নার্সেস অ্যাসোসিয়েশন কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী পরিষদ।
রোববার সংগঠেনর পক্ষ থেকে করা এক সংবাদ সম্মেলনে এমন দাবি জানানো হয়। একইসঙ্গে আগামী ৩০ মে’র মধ্যে দাবি ব্যস্তবায়ন না হলে ৩১ মে সারা দেশে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করার ঘোষণাও দেয়া হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য দেন অ্যাসোসিয়েশনের লিগ্যাল অ্যাডভাইজার হোসাইন আহমেদ শিপন। সংবাদ সম্মেলনের স্বগত বক্তব্য দেন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি খাঁন মো. গোলাম মোরশেদ। আরও উপস্থিত ছিলেন স্বাধীনতা নার্সেস পরিষদের মহাসচিব ইকবাল হোসেন সবুজ, বাংলাদেশ বেসিক গ্র্যাজুয়েট নার্সেস সোসাইটির সভাপতি নাসিমুল হক ইমরান, ঢাকা নার্সিং কলেজ স্টুডেন্ট ওয়েলফেয়ার অর্গানাইজেশনের সভাপতি রাকিবুল হোসেন রাকিব প্রমুখ।
হোসাইন আহমেদ শিপন বলেন, বেসরকারি নার্সিং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর ৮০ ভাগ নিজস্ব হাসপাতাল নেই এবং কোনো হাসপাতালে সাথে আইনগত চুক্তিভিত্তিক পার্টনারশিপ নেই। এগুলোর অবকাঠামো (একাডেমিক ভবন, হোস্টেল), দক্ষ জনবল (শিক্ষক, অফিস স্টাফ), শিক্ষা উপকরণ, ক্লিনিক্যাল প্র্যাকটিসের হাসপাতালসহ নার্সিং শিক্ষার প্রয়োজনীয় সুযোগ-সুবিধার ন্যূনতম ব্যবস্থাও নেই। ব্যবসায়িক উদ্দেশ্যে প্রতিষ্ঠিত এসব প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থী মূল্যায়ন পদ্ধতিতে গলদ ব্যাপক।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ নার্সিং অ্যান্ড মিডওয়াইফারি কাউন্সিলের কিছু কর্মকর্তাদের ইচ্ছা অনুযায়ী পছন্দের ব্যক্তির নামে বেসরকারি নার্সিং কলেজের অনুমোদনের দিয়ে আসছে। ভুঁইফোঁড় প্রতিষ্ঠানকে নিবন্ধন দিয়ে লাখ লাখ টাকা আদায় করছে এখানকার একটি সিন্ডিকেট।
হোসাইন আহমেদ শিপন বলেন, এই কাউন্সিলের অধীনে সারাদেশে ৩৭২টি বেসরকারি নার্সিং কলেজ পরিচালিত হচ্ছে। এর মধ্যে অবৈধভাবে শতাধিক নার্সিং কলেজের নিবন্ধন নিয়েছেন সাইক নার্সিং কলেজের চেয়ারম্যান আবু হাসনাত মো. ইয়াহিয়া এবং ডিডব্লিউএফ নার্সিং কলেজের চেয়ারম্যান মো. জহিরুল ইসলাম শুধু এ দুজনের নামেই নিবন্ধন নেয়া রয়েছে ৫৯টি প্রতিষ্ঠানের। এর মধ্যে আবু হাসনাত ৪৪টি ও জহিরের ১৫টি। এ প্রতিষ্ঠানগুলো দ্রুত সময়ে নিবন্ধন বাতিল করা হোক।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো অন্য দাবিগুলো রমধ্যে রয়েছে- স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় কর্তৃক ডিপ্লোমা ইন পেশেন্ট কেয়ার টেকনোলজিস্টদের ডিপ্লোমা ইন নার্সিং সায়েন্স অ্যান্ড মিডওয়াইফারি কোর্সের সমমানের প্রজ্ঞাপন অনতিবিলম্বে বাতিল পূর্বক এইচএসসি পাশের পর তিন বছর মেয়াদি ডিপ্লোমা ইন নার্সিং সায়েন্স অ্যান্ড মিডওয়াইফারি কোর্সকে স্নাতক ডিগ্রীতে রূপান্তর করতে হবে। গ্র্যাজুয়েট নার্সদের জন্য নার্সিং পেশায় স্পেশাল ক্যাডার সার্ভিস (সেবা ক্যাডার) অনতিবিলম্বে চালু করা এবং প্রথম শ্রেণির শূন্য পদগুলোতে নিয়োগের ব্যবস্থা। সরকারি চাকরিতে কর্মরত নার্সদের মূল বেতনের ৩০ শতাংশ ঝুঁকি ভাতা অনতিবিলম্বে নিশ্চিত করা, অন্যান্য টেকনিক্যাল পেশাজীবীদের মতো আগে দেয়া চাকরির শুরুতে অতিরিক্ত ইনক্রিমেন্ট প্রদানের সুবিধা বহাল রাখতে হবে। নার্সিং শিক্ষার্থীদের ইন্টার্নশিপ ভাতা ২০ হাজার টাকায় উন্নীত করা।
ঝালকাঠির কাঠালিয়া উপজেলা সাবরেজিস্টার অফিসের দক্ষিণ পাশের সড়কে প্রবেশ করলেই চোখে পড়বে ‘বিবেকানন্দ ডেন্টাল কেয়ার’ নামে একটি দন্ত চিকিৎসা কেন্দ্র। দরজায় কাচ লাগানো পরিপাটি এই কক্ষে ঢুকলে দেখা মিলবে শিবানন্দ শিবু ওরফে শিবু শীল নামের এক ব্যক্তির সঙ্গে।
একসময়ে সেলুনে নাপিতের কাজ করা এই শিবুই এখানকার দন্ত চিকিৎসক। আগে যারা শিবুর কাছে চুল দাড়ি কামিয়েছে তারাসহ শিবুর বন্ধুরাও তাকে ডাক্তার রুপে দেখে হতভম্ব। আর যারা তাকে চেনেন না তারা রোগী হয়ে আসছেন দাঁতের চিকিৎসা করাতে।
‘ডা. শিবানন্দ শিবু’ লিখা ছাপানো কাগজে (প্যাড) রোগীকে ব্যবস্থাপত্রও লেখে দিচ্ছেন তিনি। দিচ্ছেন অ্যান্টিবায়োটিক মেডিসিন আবার দাঁতের সার্জারি করছেন।
শিবুর বাড়ি কাঠালিয়া উপজেলার শৌলজালিয়া গ্রামে। ডাক্তার না হয়েও নামের আগে ডা. লিখে চেম্বার খুলে মানুষের সঙ্গে ১০ বছর ধরে প্রতারণা করে আসছেন তিনি।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বছর দশেক আগেও বরগুনা জেলার বেতাগী পৌর শহরের একটি সেলুনে নাপিতের কাজ করতেন এই শিবু ।
শিবুর বড় ভাই বাবুল চন্দ্র শীল এবং বাল্যবন্ধু ও সহপাঠী ওবায়দুর রহমান, আব্দুল কাদের এবং এনায়েত হোসেনের সঙ্গে কথা হয় নিউজবাংলার।
তারা নিউজবাংলাকে জানান, বাড়ির পাশে শৌলজালিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে তিন বার মেট্রিক পরীক্ষা দেন শিবু। সবশেষ ১৯৯১ সনে পরীক্ষায় অংশ নেন। কিন্তু ওইবারও উত্তীর্ণ হতে পারেননি। পরবর্তী সময়ে বরগুনা জেলার বেতাগী বন্দরে একটি সেলুনে সাত বছর নাপিতের কাজ করেন শিবু। সেখানে থাকাকালীন ওই সেলুনের পাশে থাকা ‘আলম ডেন্টাল কেয়ার’ নামে একটি দন্ত চিকিৎসা কেন্দ্রে অবসর সময় কাটাতো শিবু শীল। আর সেখানের কাজ দেখে দেখে নিজে দন্ত চিকিৎসক হওয়ার সাধ জাগে। দাঁতের চিকিৎসা লাভজনক হওয়ায় তিনি নাপিতের পেশা ছেড়ে নিজ এলাকা ঝালকাঠির কাঠালিয়ায় এসে চেম্বার খুলে নামের আগে ডাক্তার লাগিয়ে শুরু করেন দাঁতের চিকিৎসা।
সম্প্রতি এক স্কুলশিক্ষিকাকে ভুল চিকিৎসা দেয়ার পর গোটা উপজেলায় সমালোচিত হন শিবানন্দ শিবু।
ভুক্তভোগী স্কুলশিক্ষিকা প্রতিভা রানী বলেন, ‘গত ২৯ এপ্রিল দাঁতে ক্যাপ বসাই। এর কয়েকদিন পরে ক্যাপটি খুলে যায়। চেম্বারে গিয়ে বিষয়টি জানালে ডা. শিবু আমাকে একটি ইনজেকশন পুশ করেন। কিছুক্ষণ পর দাঁতে সার্জারি করে প্রেসক্রিপশনে অ্যান্টিবায়োটিকসহ বেশ কিছু ওষুধ লিখে দেন। ওই ওষুধ খাওয়ার পর আমার সমস্ত শরীরে জ্বালা-পোড়া শুরু হয়, শরীরে ফোসকা ওঠতে থাকে। আমার শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে স্বজনরা আমাকে অন্য চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যায়। আর তখনই ধরা পরে আমার শরীরে ভুল ইনজেকশনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া শুরু হয়েছে।’
মাধ্যমিকের গণ্ডি না পেরিয়ে কিভাবে তিনি চেম্বার খুলে ডাক্তার লিখে রোগী দেখছেন এ প্রশ্ন করা হলে ‘বিবেকানন্দ ডেন্টাল কেয়ারের’ স্বত্ত্বাধিকারী শিবানন্দ শিবু বলেন, ‘নামের আগে ডাক্তার শব্দটি আমি লিখি নাই, ঔষধ কোম্পানির লোকেরা আমাকে প্যাড তৈরি করে দিয়েছেন ভুলটা তারাই করেছেন।’
শিবু আরও বলেন, ‘সেলুনের কাজ ছেড়ে পল্লি চিকিৎসক (এলএমএএফ) কোর্স এবং ডেন্টাল ডিপ্লোমা কোর্স আমি করেছি। স্কুলশিক্ষক প্রতিভা রানীর মূলত ড্রাগ রিঅ্যাকশন হয়েছে।’
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. তাপস কুমার তালুকদার বলেন, ‘দাঁতের চিকিৎসা করতে হলে বিডিএস ডিগ্রি অর্জন ছাড়া কেউ ডা. লিখতে পারবেন না। সাধারণ রোগীদের সচেতন হতে হবে। হাতুড়ে ডাক্তারের কাছে যাওয়া যাবে না।’
ঝালকাঠির সিভিল সার্জন ডা. এইচ এম জহিরুল ইসলাম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘ভুক্তভোগী ওই শিক্ষিকা আমাদের কাছে লিখিত অভিযোগ দিলে প্রয়োজনীয় আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে। তবে ঘটনা শুনে আমি উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তাকে বিষয়টি দেখার জন্য নির্দেশনা দিয়েছি। আমরা শিবুর কাগজপত্র দেখব।’
আরও পড়ুন:রাজশাহী নগরীর একটি বেসরকারি হাসপাতালের অপারেশন থিয়েটারে এক প্রসূতির বাচ্চা চুরির অভিযোগ উঠেছে। স্বজনরা বলছেন, নবজাতক চুরি করা হয়েছে। আর চিকিৎসক বলছেন, বাস্তবে ওই নারী অন্তঃসত্ত্বা ছিলেন না। এটি মানসিক সমস্যা, যাকে বলে ফ্যানটম প্র্যাগনেন্সি। মানসিক ধারণার প্রভাবেই রোগীর পেট ফুলে গিয়েছিল।
রাজশাহী নগরীর তালাইমারী এলাকার বাসিন্দা সৈয়দা তামান্না আখতার। বৃহস্পতিবার প্রসব বেদনা উঠলে রাজশাহী নগরীর লক্ষ্মীপুর এলাকার রয়েল হাসপাতালে আসেন। সেখানে চিকিৎসকের পরামর্শে বেরা ২টার দিকে হাসপাতালে ভর্তি হন তিনি। বিকেল ৩টার দিকে তাকে অপারেশন থিয়েটারে (ওটি) নেয়া হয়। ওটিতে এক ঘণ্টা পার না হতেই রোগীকে বের করে আনা হয়। তবে এ সময় ওই নারীর সঙ্গে কোনো বাচ্চা ছিল না। রোগীর স্বজনরা জানতে চাইলে চিকিৎসকরা জানান, তার পেটে কোনো বাচ্চা নেই।
স্বজনদের অভিযোগ, তামান্না আখতারের গর্ভে দুটি সন্তান ছিল। ওটিতে নেয়ার পর রোগীকে অ্যানেসথেসিয়ার (অজ্ঞান করার) ইনজেকশনও দেয়া হয়। এরপর তিনি বাচ্চা প্রসব করেছেন। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তার সেই বাচ্চা চুরি করেছে।
তামান্না আখতার বলেন, ‘আমি ৯ মাস ১২ দিনের অন্তঃসত্ত্বা ছিলাম। এর আগেও আমি ডাক্তার দেখিয়েছি। আমার দুইটা বাচ্চা ছিল। আলট্রাসনোগ্রামে দেখা গেছে, একটি ছেলে ও একটি মেয়ে। বৃহস্পতিবার দুপুরে হাসপাতালে ভর্তির পর আমাকে ওটিতে নেয়া হয়। এর আগে আমার সব কাগজপত্র জমা দেয়া হয়।
‘ওটিতে নেয়ার পর আমাকে একটি ইনজেকশন দেয়া হয়। এক পর্যায়ে আমার পুরো শরীর ঝাঁকি দিচ্ছিল। এরপর আমার আর কিছু মনে নেই। জ্ঞান ফেরার পর জানতে পারলাম আমার পেটে নাকি কোনো বাচ্চা ছিল না।’
তিনি বলেন, ‘যদি মৃত বাচ্চাও হয় সেটা আমাকে দেয়া হোক। আমার বেবি যদি না-ই থাকে তাহলে ৯ মাস ১২ দিন আমি কী ক্যারি করলাম?’
তামান্নার শাশুড়ি তাহেরা বিশ্বাস বলেন, ‘আমার বউমাকে ওটিতে নিয়ে যাওয়ার পর তারা বাচ্চার জন্য নতুন কাপড়ও নিয়ে যায়। এর কিছুক্ষণ পরই তারা সেটি ফিরিয়ে দিয়ে যায়। আমাদের বলে রোগীর প্রেশার উঠেছে, ইনজেকশন দেয়া হয়েছে। এখন ঘুমাচ্ছে। প্রেসার কমলে অপারেশন করা হবে।
‘কিছুক্ষণ পরই আমার মেয়ে ওটিতে গিয়ে দেখে বউমার পেট নেমে গেছে। আগের মতো উঁচু নেই। এখানে নিয়ে আসার পর আমি দেখি রক্ত আসছে। কিন্তু কোনো অপারেশন করা হয়নি। এখন আমার বউমার পেট তাহলে কমল কিসে?
এ বিষয়ে জানতে চাইলে রয়েল হাসপাতালের অ্যানেসথেসিয়ার চিকিৎসক আলী চৌধুরী রিমন বলেন, ‘রোগীর অবস্থা গুরুতর ছিল। রোগীর ভাইয়ের কাছে শুনেছি তার পেটে দুটি বাচ্চা আছে। আমারও মনে হয়েছিল পেটে বাচ্চা ছিল। তাই অজ্ঞান করার ইনজেকশন দিয়েছি।’
হাসপাতালের গাইনি বিশেষজ্ঞ নিশাত আনাম বর্ণা বলেন, ‘তামান্নার পেটে বাচ্চা ছিল না। তাকে ওটিতে নেয়া হয়েছিল। সেখানে তার আল্ট্রাসনোগ্রামসহ অন্যান্য কাগজ দেখতে চাওয়া হলে তারা ২০২২ সালের ডিসেম্বরের একটি প্রেসক্রিপশন ছাড়া আর কোনো কাগজ দেখাতে পারেনি।
‘আসলে এটি একটি মানসিক সমস্যা। এর একটি সাইকোজিক্যাল টার্ম আছে, যাকে বলে ফ্যানটম প্র্যাগনেন্সি। রোগী মনে মনে ধরে নিয়েছিলেন যে তিনি প্র্যাগনেন্ট। এরই প্রভাবে তার পেট ফুলে গিয়েছিল। ওটিতে অ্যানেসথেসিয়া দেয়ার পর বিষয়গুলো স্বাভাবিক হয়ে আসে। তার যে ব্লিডিং হয়েছে সেটিও মেয়েদের স্বাভাবিক ব্লিডিং।’
রাজশাহী নগরীর রাজপাড়া থানার দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এসআই কাজল নন্দী বলেন, ‘এ বিষয়ে ভুক্তভোগী লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। আমরা বিষয়টির তদন্ত করছি। তদন্তে যা পাওয়া যাবে তার পরিপ্রেক্ষিতে ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
বিশ্বে উচ্চ রক্তচাপের রোগী দিন দিন বাড়ছে। বাংলাদেশও এর ব্যতিক্রম নয়। সব মিলিয়ে দেশে উচ্চ রক্তচাপে ভোগা রোগীর সংখ্যা প্রায় ৪ কোটি।
বুধবার বিশ্ব উচ্চ রক্তচাপ দিবস উপলক্ষে মঙ্গলবার ঢাকা মেডিক্যাল কলেজে বাংলাদেশ মেডিসিন সোসাইটি ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তর যৌথভাবে এক সেমিনারের আয়োজন করে। এতেই উঠে আসে ওই তথ্য।
১৭ মে পালিত হচ্ছে বিশ্ব উচ্চ রক্তচাপ দিবস। ওয়ার্ল্ড হাইপারটেনশন লিগের সদস্য হিসেবে ‘হাইপারটেনশন কমিটি অফ ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন অফ বাংলাদেশ’ ২০০৬ সাল থেকে প্রতি বছর এই দিনে দিবসটি পালন করে আসছে।
এবারের দিবসের প্রতিপাদ্য ‘সঠিকভাবে রক্তচাপ মাপুন, নিয়ন্ত্রণে রাখুন এবং দীর্ঘজীবী হোন’।
সেমিনারে বলা হয়, দেশের জনসংখ্যার ২৭ শতাংশ বা চার কোটির বেশি মানুষ উচ্চ রক্তচাপে ভুগছেন। আবার তাদের মধ্যে ৫৯ শতাংশ জানেনই না যে, তারা এই রোগে ভুগছেন। ওষুধ গ্রহণ করার পরও ৮৮ শতাংশ মানুষের উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে নেই।
মূল বক্তব্য উপস্থাপন করেন ঢাকা মেডিকেল কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ খান আবুল কালাম আজাদ। তিনি বলেন, ‘অনিয়ন্ত্রিত রক্তচাপ হৃদ্যন্ত্র, কিডনি, মস্তিষ্ক ও চোখের ক্ষতি করে। নিয়ন্ত্রণহীন উচ্চ রক্তচাপ হঠাৎ মৃত্যু ডেকে আনতে পারে।’
২০২২ সালে প্রতি পাঁচজনে একজন বা জনসংখ্যার ২১ শতাংশ উচ্চ রক্তচাপে আক্রান্ত ছিলেন।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই উচ্চ রক্তচাপের কারণে হৃদরোগ, হৃদরোগজনিত মৃত্যুঝুঁকি, স্ট্রোক এবং কিডনি বিকল হয়ে মৃত্যুর হার কয়েকগুণ বেড়ে যায়।
আরও পড়ুন:
মন্তব্য