গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জে রংপুর চিনিকলের জমি থেকে উচ্ছেদ ও আখ কাটাকে কেন্দ্র করে ২০১৬ সালের ৬ নভেম্বর স্থানীয় সাঁওতাল-পল্লিতে হামলা, অগ্নিসংযোগ ও তিন সাঁওতালকে গুলি করে হত্যার ঘটনায় তীব্র সমালোচনা হয়েছিল দেশজুড়ে। সাঁওতালদের বাড়িঘরে আগুন দেয়ার ভিডিও হয়েছিল ভাইরাল। এসেছিল বিশ্ব মিডিয়ায়ও।
এরপর দীর্ঘদিন এ নিয়ে আলোচনা ছিল না। ২০১৬ সালের সেই ঘটনার পর চিনিকলের ১ হাজার ৮৪২ একর জমি পুরোটাই প্রায় দখলে নেয় সাঁওতাল জনগোষ্ঠী।
পরবর্তী সময়ে কিছু জমিতে অবশ্য কাঁটাতারের বেড়া দিয়ে এই জনগোষ্ঠীর যাতায়াত বন্ধ করে দেয় মিল কর্তৃপক্ষ। এর মধ্যে গত বছর সরকারের সিদ্ধান্তে বন্ধ হয়ে যায় রংপুর চিনিকলসহ দেশের বেশ কয়েকটি চিনিকল। এরপর থেকে পুরো সম্পত্তিই দখলে নিয়েছে সাঁওতালরা।
সম্প্রতি এই এলাকা নিয়ে ফের উত্তপ্ত পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। প্রায় দুই হাজার একরের এই জমিতে অর্থনৈতিক অঞ্চল ইপিজেড (রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চল) করার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদনের পর জমি পরিদর্শনসহ পরবর্তী কাজও শুরু করেছে বাংলাদেশ রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (বেপজা)।
এর পরই এ সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে ফেটে পড়েছেন সাঁওতালরা। এ জমি নিজেদের দাবি করে ফের আন্দোলনে নেমে সড়ক অবরোধসহ নানা কর্মসূচি পালন করছেন তারা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বরাবর স্মারকলিপিও দিয়েছেন ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর বাসিন্দারা।
জনগোষ্ঠীটির দাবি, ইপিজেড স্থাপন সাঁওতালদের নিঃস্ব করার পরিকল্পনা। ৬ নভেম্বরে মানুষ হত্যা করেও উচ্ছেদে ব্যর্থ হয়ে সরকার নতুন করে ইপিজেড স্থাপনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তবে তারা এ সিদ্ধান্ত মানবেন না। তিন ফসলি এই জমিতে কৃষি আবাদই হবে; ইপিজেড নয়। জীবন দিয়ে হলেও তারা বাপ-দাদার জমি রক্ষার হুঁশিয়ারিও দিয়েছেন।
স্থানীয় একটি পক্ষ অবশ্য বলছে অন্য কথা। তাদের দাবি, চিনিকলের জমিতে ইপিজেড হলে অসংখ্য শিল্পকারখানা গড়ে উঠবে। সেখানে কর্মসংস্থানের সুযোগ হবে গাইবান্ধাসহ উত্তরাঞ্চলের ২ লাখ মানুষের।
প্রধানমন্ত্রীর সিদ্ধান্তকে সাধুবাদ জানিয়ে এ অঞ্চলের মানুষদের মিষ্টি বিতরণ ও আনন্দ মিছিল করতেও দেখা গেছে।
প্রশাসন বলছে, চিনিকলের জমিতে ইপিজেড হলে এ অঞ্চলের শিক্ষিত ও বেকার যুবকরা চাকরির সুযোগ পাবেন। গাইবান্ধাসহ পুরো রংপুর বিভাগের জীবনমানে পরিবর্তন আসবে। সেখানে সাঁওতাল জনগোষ্ঠীই বেশি সুযোগ-সুবিধা ভোগ করবে। উত্তরাঞ্চল হবে অর্থনৈতিক এলাকা; যা জাতীয় অর্থনীতিতে ব্যাপক ভূমিকা রাখবে।
তবে সরকারের বৃহত্তর এই পরিকল্পনা মানতে রাজি নয় সাঁওতালরা। গত শনিবার ইপিজেড স্থাপনের সিদ্ধান্ত বাতিলের দাবিতে ভূমি পুনরুদ্ধার কমিটির ব্যানারে গোবিন্দগঞ্জের মাদারগঞ্জ এলাকায় বিক্ষোভ মিছিল করেছেন তারা।
একই ধরনের কর্মসূচি ছাড়াও বেশ কিছু দিন ধরে ঘোড়াঘাট-দিনাজপুর আঞ্চলিক মহাসড়ক অবরোধ, মানববন্ধন ও প্রধানমন্ত্রীসহ বিভিন্ন দপ্তরে আবেদন-স্মারকলিপির মাধ্যমেও এই সিদ্ধান্ত বাতিলের দাবি জানিয়ে আসছে জনগোষ্ঠীটি।
এসব কর্মসূচিতে সাঁওতাল নেতারা জানান, ফসলি জমি নষ্ট করে শিল্পকারখানা স্থাপনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নিষেধ রয়েছে। তারপরও একটি মহল বেপজা কর্তৃপক্ষকে প্রভাবিত করে সাঁওতাল-পল্লির তিন ফসলি জমিতে শিল্পকারখানা স্থাপনের পাঁয়তারা করছে; যা কোনোভাবেই মানবেন না তারা।
তারা আরও জানান, ১৯৫৩-৫৪ সালে বাঙালি ও সাঁওতালদের কাছ থেকে এসব জমি অধিগ্রহণ করে রংপুর চিনিকল। শর্ত অনুযায়ী, কখনও মিল বন্ধ হয়ে গেলে বা জমিতে আখ চাষ না হলে জমি প্রকৃত মালিকরা ফেরত পাবেন। বর্তমানে মিল বন্ধসহ আখ চাষ বন্ধ হওয়ায় সেই শর্ত শেষ হয়েছে। তাই এই জমির পৈতৃক সূত্রে মালিক সাঁওতাল ও বাঙালিরা।
সাঁওতাল-পল্লি এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, ইপিজেড স্থাপনের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের খবরে পতিত জমিগুলোতেও ছোট ছোট নতুন ছাপরা ঘর নির্মাণ করে দখলে নিয়েছেন সাঁওতালরা, যা সেই ৬ নভেম্বরের ঘটনার সঙ্গে মিলে যায়। এ ছাড়া তারা দীর্ঘদিন ধরে একসঙ্গে বসবাস করে এলেও এখন জমি হাতছাড়া না করতে ভিন্ন ভিন্ন জমিতে ছাপরায় বসবাস শুরু করেছেন।
ইপিজেড স্থাপনের বিরোধিতা করে সাঁওতাল-পল্লির চামগড়া এলাকার টাটু টুডু বলেন, ‘আমি চাই আমার বাপ-দাদার পৈতৃক জমি সরকার ফিরত দেক। আমাদের সরিয়ে দিয়ে সরকার ইপিজেড করতি পারে না। এটা হতে দিব না। জীবন দিব, কিন্তু জমি দেব না।’
৬ নভেম্বরে ঘটনায় পুলিশের গুলিতে পা হারানো পল্লীর বিমল কিসকু বলেন, ‘আমরা বাপ-দাদার ভিটেতে চাষাবাদ করে থাকতে চাই। খাইতে চাই। আমরা কৃষি লোক, চাষবাদ করব; বাপ-দাদার জমিতে থাকব। ইপিজেড আমরা আশ্রয়ও দিব না। জমিতে কিছু তুলতিই দিব না।’
সাহেবগঞ্জ-বাগদাফার্ম ভূমি উদ্ধার সংগ্রাম কমিটির সভাপতি বার্নাবাস টুডু বলেন, ‘২০১৬ সালে অনেকভাবে আমাদের নির্যাতন করা হইছে। পুলিশসহকারে এলাকার যারা প্রভাবশালী তারা আমাদের নির্যাতন করেছে। গুলি করে আমাদের তিনজন ভাইকে মেরে ফেলছে। আমাদের ঘরে আগুন লাগে দিছে। লুটপাট করছে। বাপ-দাদার এই পৈতৃক ভিটে আমরা মরলেও ছাড়ব না। ইপিজেড হতে দিব না।’
সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক জাফরুল ইসলাম প্রধান বলেন, ‘এই সম্পত্তি আমাদের মা। এই সম্পত্তি আমাদের জীবন। এটাই আমাদের অস্তিত্ব। এখানে আমরা জীবন দিয়ে হলেও জমি রক্ষা করব।’
স্বাধীনতাযুদ্ধে সাঁওতালদের বিভিন্ন অবদানের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘আমরাও দেশের উন্নয়ন চাই। তবে নৃগোষ্ঠী সাঁওতাল সম্প্রদায়কে উচ্ছেদ, নিঃস্ব করে সেই উন্নয়ন করাটা কতটুকু যৌক্তিক?’
সরকার দ্রুত ইপিজেড স্থাপনের সিদ্ধান্ত বাতিল না করলে বৃহত্তর আন্দোলনের ঘোষণাও দেন তিনি।
৬ নভেম্বর সাঁওতাল-পল্লিতে হামলা, ভাঙচুর, লুটপাট ও বাড়িঘর পুড়িয়ে দেয়ার ঘটনার মামলার বাদী থমাস হেমব্রম বলেন, ‘সরকারের যে কর্তৃপক্ষ আমাদের বাপ-দাদার জমিতে ইপিজেড করতে চাচ্ছে; তা আমরা দেব না। আমরা তিন-তিনটে ভাই হারাছি, দরকার হলে আমরাও জীবন দিব, তবুও জমিতে একটা ইট পুঁততে দেব না।’
তিনি আরও বলেন, ‘৬ নভেম্বর গুলি করে হত্যা, হামলা, লুটপাটের মামলার বাদী হয়েও হয়তো এর বিচার দেখে যেতে পারব না। কারণ বারবার ভুল ও ত্রুটিপূর্ণ তদন্ত প্রতিবেদন আদালতে জমা দিচ্ছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। এ ছাড়া মামলার মূল আসামিদের বারবার চার্জশিট থেকে নাম বাদ দেয়া হচ্ছে।’
সাঁওতালরা বিরোধিতা করলেও স্থানীয়দের একটি অংশ আবার ইপিজেড করার পক্ষে।
স্থানীয় পাড়া কচুয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক এ এফ এম শরিফুজ্জামান শরীফ বলেন, ‘ইপিজেড হলে এলাকার আর্থসামাজিক উন্নয়ন হবে। এখানে বেকার যুবকদের কর্মসংস্থানের সুযোগ হবে। গোবিন্দগঞ্জসহ উত্তরাঞ্চলে উন্নয়ন হবে।’
গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার সাবেক মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার শেমলেন্দু মোহন রায় জিবু বাবু বলেন, ‘সাঁওতালদের আমরা কখনোই আমাদের প্রতিদ্বন্দ্বী ভাবি না। তারা তো শুধু ১২ শতাংশ। আর আমরা হিন্দু-মুসলিম ৮৮ শতাংশ। তাহলে এই সম্পত্তি তারা তাদের বাপ-দাদার সম্পত্তি বলে চালিয়ে দিলে তো হবে না। যত দ্রুত সম্ভব এই ইপিজেড বাস্তবায়ন হোক, এটাই আমি চাই।’
এমন অবস্থায় গত ২৪ আগস্ট ইপিজেড বাস্তবায়নে রংপুর চিনিকলের সাহেবগঞ্জ-বাগদাফার্মের বিভিন্ন এলাকা পরিদর্শন করেন বাংলাদেশ রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ এলাকা কর্তৃপক্ষের (বেপজা) নির্বাহী চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল নজরুল ইসলাম। এর আগে গাইবান্ধার জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিদের নিয়ে এক মতবিনিময় সভায় অংশ নেন তিনি।
ওই সময় তিনি বলেন, ‘গোবিন্দগঞ্জে ইপিজেড স্থাপনের মাধ্যমে এমন একটা কর্মপরিবেশ তৈরি করা হবে, যা হবে আন্তর্জাতিক মানের। সরকার কখনও সাধারণ মানুষের অমঙ্গল কামনা করে না। বৃহত্তর রংপুর ও রাজশাহী বিভাগের মাঝামাঝি এই গোবিন্দগঞ্জে ইপিজেড এই বৃহৎ অঞ্চলের আমূল পরিবর্তন ঘটাবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘এই ইপিজেড দুই লক্ষাধিক মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি করবে। ইপিজেড এখানে দেবে মিনি ক্যান্টনমেন্ট। এ ছাড়া স্বাস্থ্যসেবা থেকে শুরু করে সব ধরনের আধুনিক সুযোগ-সুবিধা থাকবে। তা ছাড়া এখানে আন্তর্জাতিক মানের কর্মপরিবেশ নিশ্চিত করা হবে।’
এ ছাড়া এখানকার ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়ন ও কর্মসংস্থানসহ তাদের পুনর্বাসনের আশ্বাসও দেন তিনি।
সাঁওতালরা আন্দোলন শুরু করলেও এবার স্থানীয় প্রশাসন বেশ সতর্ক। সাঁওতালদের সঙ্গে কোনো সংঘাত নয় বরং শান্তিপূর্ণ আলোচনার কথা জানিয়েছে গোবিন্দগঞ্জ উপজেলা প্রশাসন।
ইউএনও আবু সাঈদ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘ইপিজেড স্থাপন সরকারি সিদ্ধান্ত। এর বিরোধিতা করে কেউ অপ্রীতিকর ঘটনা যাতে না ঘটাতে পারে, সে জন্য সজাগ রয়েছে উপজেলা প্রশাসন।’
৬ নভেম্বরের ঘটনা যেভাবে
১৯৫৩-৫৪ সালে গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার মহিমাগঞ্জে রংপুর চিনিকলের আখ চাষের জন্য উপজেলার সাপমারা ও কাটাবাড়ী ইউনিয়নের কয়েকটি গ্রামের ১ হাজার ৮৪২ দশমিক ৩০ একর জমি অধিগ্রহণ করে সরকার। এ জমির মধ্যে সাঁওতাল সম্প্রদায়ের ছিল ২৭ শতাংশ এবং স্থানীয় মুসলমানদের ৭৩ শতাংশ। জমি অধিগ্রহণের পর এর নামকরণ করা হয় সাহেবগঞ্জ-বাগদাফার্ম।
২০১৬ সালের জুলাইয়ে সাহেবগঞ্জ-বাগদাফার্মের প্রায় ১০০ একর জমিতে ছোট ছোট ছাপরা ও ঝুপড়ি ঘর তুলে বসবাস শুরু করেন সাঁওতাল-বাঙালিরা। ২০১৬ সালের ৬ নভেম্বর সকালে আখ কাটা নিয়ে পুলিশসহ চিনিকলের শ্রমিক-কর্মচারীদের সঙ্গে সাঁওতালদের সংঘর্ষ বাধে। এতে গুলিবিদ্ধ হয়ে তিন সাঁওতাল নিহত হন। আহত হন উভয় পক্ষের কমপক্ষে ৩০ জন।
ওই দিন সন্ধ্যার দিকে সাঁওতালদের ঘরে আগুন দিয়ে উচ্ছেদের চেষ্টা চালায় পুলিশ ও প্রশাসন। এ ঘটনায় দেশজুড়ে আলোচনা-সমালোচনা শুরু হয়। পরে ধীরে ধীরে ওই এলাকা সাঁওতালদের দখলে চলে যায়।
তীব্র থেকে অতি তীব্র মাত্রায় পাবনা জেলার ওপর দিয়ে বয়ে যাচ্ছে তাপপ্রবাহ। অসহনীয় দাবদাহে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। গত তিন-চার দিন তাপমাত্রা কিছুটা কমলেও শুক্রবার চলতি মৌসুমে জেলার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছাড়িয়ে গেছে।
এদিন পাবনার ঈশ্বরদীতে ৪২ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে যা জেলায় চলতি মৌসুমের সর্বোচ্চ তাপমাত্রার রেকর্ড। বৃহস্পতিবার তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল ৪১ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। গত রবিবার (২১ এপ্রিল) ঈশ্বরদীতে প্রথমবার ৪২ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়।
ঈশ্বরদী আবহাওয়া অফিসের সহকারী পর্যবেক্ষক নাজমুল হক রঞ্জন জানান, জেলার তাপমাত্রা আরও বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে।
অতি তীব্র তাপদাহে পাবনার মানুষের দৈনন্দিন কাজ ব্যাহত হচ্ছে। বিশেষ করে কৃষক, রিকশাচালক, ভ্যানচালক, ইটভাটার শ্রমিকসহ দিনমজুরদের জন্য অসহ্য হয়ে পড়েছে। এছাড়াও তীব্র গরমে ডায়রিয়াসহ নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে শিশুসহ সব বয়সের মানুষ।
গাইবান্ধায় ছিনতাইকারীর ছুরিকাঘাতে খুন হয়েছেন আশরাফ আলী নামের এক রিকশাচালক। এ ঘটনায় অভিযুক্ত সাদেকুল ইসলামকে কারাগারে পাঠিয়েছে পুলিশ।
বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে সদর উপজেলার সুন্দরগঞ্জ-কুপতলা সড়কের ৭৫ নম্বর রেলগেট নামক এলাকায় এ ছিনতাই ও হত্যাকাণ্ড ঘটে। পরে শুক্রবার দুপুরে আদালতের মাধ্যমে সাদেকুলকে কারাগারে পাঠানো হয়।
৫০ বছর বয়সী রিকশাচালক আশরাফ আলী সদর উপজেলার খোলাহাটী ইউনিয়নের সাহার ভিটার গ্রামের মৃত ফয়জার রহমানের ছেলে। অন্যদিকে ছিনতাই ও হত্যায় অভিযুক্ত সাদেকুল ইসলাম কুপতলা ইউনিয়নের রামপ্রসাদ গ্রামের বাসিন্দা।
নিউজবাংলাকে এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন গাইবান্ধা সদর থানার ওসি মাসুদ রানা।
ওসি জানান, প্রতিদিনের মতোই বৃহস্পতিবার রাতে রিকশা নিয়ে বাড়ি ফিরছিলেন আশরাফ আলী। তিনি কুপতলা এলাকার ৭৫ নম্বর রেলগেটে পৌঁছালে আগে থেকে ওঁৎ পেতে থাকা সাদেকুল ইসলাম তার পথ রোধ করে ছুরি ধরে রিকশা এবং চাবি কেড়ে নিয়ে তাকে চলে যেতে বলেন। আশরাফ আলী এতে রাজি না হওয়ায় বিষয়টি নিয়ে প্রথমে উভয়ের মধ্যে ধস্তাধস্তি শুরু হয়। এক পর্যায়ে ক্ষিপ্ত সাদেকুল আশরাফ আলীর পেটে ছুরিকাঘাত করেন। পরে স্থানীয়রা তাকে চিকিৎসার জন্য গাইবান্ধা জেনারেল হাসপাতালে নিলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
ওসি বলেন, ‘এ ঘটনার পর অভিযান চালিয়ে ওই রাতেই অভিযুক্ত সাদেকুল ইসলামকে আটক করা হয়। একই সঙ্গে ঘটনাস্থল থেকে রিকশাটিও উদ্ধার করা হয়। পরে আজ (শুক্রবার) দুপুরে সাদেকুলকে একমাত্র আসামি করে থানায় একটি হত্যা মামলা করেন নিহতের স্ত্রী মনোয়ারা বেগম। মামলায় আসামিকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে দুপুরেই আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়।’
পাবনার সাঁথিয়া উপজেলার অগ্রণী ব্যাংকের কাশিনাথপুর শাখায় প্রায় সাড়ে ১০ কোটি টাকার অনিয়মের অভিযোগে শাখা ম্যানেজারসহ ৩ কর্মকর্তাকে আটকের পর কারাগারে পাঠিয়েছে আদালত।
শুক্রবার বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে তাদের কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক আনোয়ার হোসেন সাগর। এদিন দুপুরে তাদের আদালতে প্রেরণ করে সাঁথিয়া থানা পুলিশ।
বিষয়টি নিশ্চিত করে আদালতের জিআরও এএসআই মাহবুবুর রহমান জানান, বিকেলে সাঁথিয়া থানা থেকে এনে তাদের আদালতে তোলা হয়। এ সময় কেউ তাদের জন্য জামিন আবেদন করেননি। ফলে আদালত তাদের জেলা কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
আটককৃতরা হলেন- অগ্রণী ব্যাংক কাশিনাথপুর শাখার ব্যবস্থাপক (সিনিয়র প্রিন্সিপাল অফিসার) সুজানগর উপজেলার দুর্গাপুর গ্রামের বাসিন্দা হারুন বিন সালাম, সিনিয়র অফিসার সাঁথিয়া উপজেলার কাশিনাথপুর এলাকার বাসিন্দা আবু জাফর এবং ক্যাশিয়ার বেড়া উপজেলার নতুন ভারেঙ্গা গ্রামের বাসিন্দা সুব্রত চক্রবর্তী।
ব্যাংক কর্তৃপক্ষের বরাত দিয়ে পুলিশ জানায়, বৃহস্পতিবার সকালে অগ্রণী ব্যাংকের রাজশাহী বিভাগীয় অফিস থেকে ৫ সদস্যবিশিষ্ট অডিট টিম কাশিনাথপুর শাখায় অডিটে আসে। দিনভর অডিট করে তারা ১০ কোটি ১৩ লাখ ৬২ হাজার ৩৭৮ টাকা আর্থিক অনিয়ম পান। এ বিষয়ে সাঁথিয়া থানায় ওই শাখার ম্যানেজার (সিনিয়র প্রিন্সিপাল অফিসার) হারুন বিন সালাম, ক্যাশ অফিসার সুব্রত চক্রবর্তী ও সিনিয়র অফিসার আবু জাফরকে অভিযুক্ত করে অভিযোগ দিলে পুলিশ বৃহস্পতিবার রাতে তাদের তিনজনকে আটক করে।
বিষয়টি নিশ্চিত করে সাঁথিয়া থানার ওসি আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘অডিটে অনিয়ম ধরা পড়লে তাদের আটক করে সাঁথিয়া থানা পুলিশকে খবর দেয় ব্যাংক কর্তৃপক্ষ। পুলিশ গিয়ে তাদের আটক করে থানায় নিয়ে আসে। আজ (শুক্রবার) দুপুরে জিডির ভিত্তিতে আটককৃতদের আদালতে পাঠানো হয়। পরবর্তীতে বিষয়টি নিয়ে দুদক আইনগত পদক্ষেপ গ্রহণ করবে।’
আরও পড়ুন:দীর্ঘ এক যুগ বন্ধ থাকার পর পুনরায় শ্রীমঙ্গল-পাত্রখোলা সড়কে বাস পরিষেবা চালু করেছে শ্রীমঙ্গল-শমশেরনগর-কুলাউড়া বাস মালিক সমিতি।
বৃহস্পতিবার সকালে কমলগঞ্জ উপজেলার মাধবপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আসিদ আলী ও ইসলামপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সোলেমান মিয়াকে সঙ্গে নিয়ে বাস সার্ভিস উদ্বোধন করেন শ্রীমঙ্গল বাস মালিক সমিতি ও শ্রমিক ইউনিয়নের নেতারা।
প্রাথমিক পর্যায়ে এই রুটে ৫০ মিনিট পরপর ২৪টি বাস চলাচল করবে বলে সমিতির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে। প্রতিদিন সকাল ৮টা থেকে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত শ্রীমঙ্গল থেকে ভানুগাছ মাধবপুর সড়ক দিয়ে ইসলামপুর ইউনিয়নের কুরমা চা বাগান পর্যন্ত এ বাস চলাচল করবে।
কুরমা থেকে শ্রীমঙ্গল পর্যন্ত বাসভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে ৬০ টাকা। এছাড়া পাত্রখোলা থেকে শ্রীমঙ্গল পর্যন্ত ৫০ টাকা, মাধবপুর থেকে শ্রীমঙ্গল পর্যন্ত ৪০ টাকা, কুরমা থেকে ভানুগাছ পর্যন্ত ৪০ টাকা, পাত্রখোলা থেকে ভানুগাছ পর্যন্ত ২৫ টাকা, মাধবপুর থেকে ভানুগাছ পর্যন্ত ১৫ টাকা এবং ভানুগাছ থেকে শ্রীমঙ্গল ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে ২৫ টাকা।
বৃহস্পতিবার সকাল ১১টায় কুরমা নতুন বাস স্ট্যান্ডে বাস চলাচলের উদ্বোধন শেষে মতবিনিময় সভায় শ্রীমঙ্গল-শমসেরনগর-কুলাউড়া বাস-মিনিবাস মালিক সমিতির সভাপতি মো. তসলিম চৌধুরীর সভাপতিত্বে ও প্রকৌশলী যোগেশ্বর চন্দ্র সিংহের পরিচালনায় বক্তব্য রাখেন ইউপি চেয়ারম্যান সোলেমান মিয়া, সাংবাদিক আসাদুজ্জামান শাওন, ইউপি সদস্য আব্দুল্লাহ, নুরুল হক, বাস মালিক সমিতির সহ-সভাপতি দেলোয়ার হোসেন দুলাল, সাধারণ সম্পাদক ফজলুল হক, গ্রুপ সভাপতি কাসেম মিয়া ও আব্দুস সালাম প্রমুখ।
এর আগে মাধবপুর বাজারে বাস প্রবেশ করলে এলাকাবাসী বাস মালিক সমিতি ও শ্রমিক ইউনিয়নের নেতাদের ফুলেল শুভেচ্ছা জানান। এ সময় যাত্রীদের মানসম্পন্ন সেবা দিতে সর্বোচ্চ চেষ্টা করা হবে বলে আশ্বস্ত করেন বাস মালিক সমিতি ও শ্রমিক ইউনিয়নের নেতারা।
এদিকে সিএনজি থেকে ভাড়া কম করে বাস সার্ভিস চালু হওয়ায় যাত্রীসহ স্কুল কলেজ শিক্ষার্থীরা বেজায় খুশি।
পঞ্চগড় সদর উপজেলায় চাওয়াই নদীতে গোসল করতে নেমে পানিতে ডুবে আলমি আক্তার ও ইসরাত জাহান সিফাত নামে দুই শিশুর মৃত্যু হয়েছে।
শুক্রবার দুপুরে জেলার সদর উপজেলার অমরখানা ইউনিয়নের চাওয়াই নদীর চৈতন্যপাড়া এলাকায় এই দুর্ঘটনা ঘটে।
১২ বছরের আলমি ওই এলাকার আব্দুল আজিজের মেয়ে এবং ৯ বছরের সিফাত সাইফুল ইসলামের মেয়ে। তারা দুজনে সম্পর্কে ফুফু-ভাতিজি।
স্থানীয়দের বরাত দিয়ে পুলিশ জানায়, শুক্রবার দুপুরে আলমি ও সিফাত বাড়ির পাশে চাওয়াই নদীতে গোসল করতে যায়৷ গোসল করতে গিয়ে সিফাত পানিতে ডুবে যেতে থাকলে তাকে বাঁচাতে এগিয়ে যায় আলমি৷ পরে দুজনেই পানিতে ডুবে যায়। এ সময় নদীর পাড়ে থাকা অন্য আরেক শিশু ঘটনাটি দেখে দৌড়ে তাদের পরিবারের লোকজনকে খবর দিলে তারা দ্রুত ঘটনাস্থলে এসে মৃত অবস্থায় নদী থেকে দুজনের মরদেহ উদ্ধার করে।
খবর পেয়ে পুলিশ দুই শিশুর মরদেহের সুরতহাল করে।
পঞ্চগড় সদর থানার উপ-পরিদর্শক পলাশ চন্দ্র রায় বলেন, ‘দুই শিশুর মধ্যে একজন সাঁতার জানত, আরেকজন জানত না। একজন আরেকজনকে বাঁচাতে গিয়ে দুজনেই একসঙ্গে ডুবে মারা গেছে বলে জানিয়েছে স্থনীয়রা।’
মরদেহের সুরতহাল শেষে ইউপি চেয়ারম্যানের মাধ্যমে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে বলে জানান এ কর্মকর্তা।
আরও পড়ুন:আনসার সদস্য তরিকুল ইসলাম। বাড়ি তার বাগেরহাট সদর উপজেলার খানপুর গ্রামে। বর্তমানে ঢাকার সুত্রাপুর থানায় কর্মরত।
৩৮ বছর বয়সী এ যুবকের নেশা বিয়ে করা। যেখানেই যান সেখানেই তিনি বিয়ে করেন। এ পর্যন্ত ৭টি বিয়ে করেছেন।
সর্বশেষ তিনি বিয়ে করেন ঝিনাইদহ শহরের পবহাটি এলাকার। ঢাকায় থাকাকালে সেঁজুতি নামের পবহাটির একটি মেয়ের সঙ্গে সপ্তমবারের মতো সংসার শুরু করেন তিনি।
তবে এর মানে এই নয় যে, তার আগের সব স্ত্রীর সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন হয়েছে। বর্তমানে তৃতীয় স্ত্রী পারভীন তার গ্রামের বাড়িতে এবং ষষ্ঠ স্ত্রী রয়েছেন যশোরের বেনাপোলে। ২ স্ত্রীর ঘরে ২টি সন্তানও রয়েছে তরিকুলের।
সম্প্রতি সংসার জীবন নিয়ে বিপাকে পড়েছেন এই যুবক। স্বামীকে ফিরে পেতে আড়াই বছরের মেয়েকে নিয়ে ঝিনাইদহের পবহাটিতে আসেন ষষ্ঠ স্ত্রী হোসনে আরা আক্তার সাথী। তরিকুলকে স্বামী দাবি করলে সেখানে বেঁধে যায় রণক্ষেত্র। স্বামীকে নিয়ে সেঁজুতির সঙ্গে শুরু হয় তার কাড়াকাড়ি। কোনো উপায় না পেয়ে পালিয়ে যান আনসার সদস্য তরিকুল ইসলাম।
নিউজবাংলাকে সাথী জানান, বেনাপোল বন্দরে কর্মরত থাকা অবস্থায় নিজেকে এতিম পরিচয় দিয়ে তাকে বিয়ে করেন তরিকুল। ২০১৮ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর তাদের বিয়ের পর থেকে একসঙ্গেই ছিলেন দুজন। তবে ২০২২ সালে বদলি হয়ে ঢাকায় চলে যান তরিকুল। তার কিছুদিন পর থেকে সাথীর সঙ্গে তার সব ধরনের যোগাযোগ বন্ধ।
তিনি জানান, ঢাকায় বদলি হওয়ার পর থেকে তার ও তাদের সন্তানের কোনো খরচ পাঠাতেন না তরিকুল। এরই মধ্যে সেঁজুতির সঙ্গে তার ইমোতে পরিচয় হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে ওই বছরের ডিসেম্বর মাসে সেঁজুতিকে বিয়ে করেন তিনি।
সাথী বলেন, ‘গত ঈদে আমার কাছে গিয়ে ৬ দিন ছিল। সেখানে আমাকে ভুলিয়ে আমার কাছ থেকে ৪০ হাজার টাকা নিয়ে চলে আসে। তারপর আবার সকল যোগাযোগ বন্ধ করে দিয়েছে। আমার আড়াই বছরের মেয়েটি বাবার জন্য সব সময় কান্নাকাটি করে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমার স্বামী ঝিনাইদহ আছে- এমন খবর পেয়ে আমরা ওই বাড়িতে গিয়েছিলাম। সেখানে আমাদের মারধর করে বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছে। আর এর মধ্যে আবার পালিয়েছে সে (তরিকুল)। আমি তরিকুল ও সেঁজুতির বিচার চাই।’
এ ব্যাপারে জানতে আনসার সদস্য তরিকুলের মোবাইল নম্বরে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তার ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।
আরও পড়ুন:চাঁপাইনবাবগঞ্জের নাচোলে একটি পরিত্যক্ত গভীর নলকূপের পাইপের মধ্যে পড়ে এক যুবকের মরদেহ উদ্ধার হয়েছে।
শুক্রবার সকাল ১১টার পর থেকে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা উপজেলার নেজামপুর ইউনিয়নের পূর্ব নেমাজপুর গ্রামে মাঠের মধ্যে থাকা ওই পাইপ থেকে উদ্ধারের চেষ্টা করছিলেন।
বিকেল সোয়া ৪টার দিকে মানসিক প্রতিবন্ধী রনি বর্মনকে (২৩) অবশেষে মৃত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়।
স্থানীয়রা জানান, বিএমডিএর গভীর নলকূপটির পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ায়, নতুন করে আরেকটি গভীর নলকূপ কিছুদিন আগে বসানো হয়, ফলে আগেরটি পরিত্যক্ত হয়ে পড়ে ছিল। ওই পরিত্যক্ত নলকূপের পাইপের মধ্যেই পড়ে যান রনি বর্মন।
নাচোল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. তারেকুর রহমান জানান, প্রায় ৫ ঘণ্টার বেশি সময়ের চেষ্টায় বিকেলে সোয়া ৪টার দিকে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা রনি বর্মনকে মৃত অবস্থায় উদ্ধার করেন। এখন আইনি প্রক্রিয়া শেষে পুলিশ মরদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করবে।
স্থানীয়রা জানান, রনি বর্মন গভীর নলকূপের ওই এলাকায় ঘোরাঘুরি করতেন। সকালে পরিত্যক্ত গভীর নলকূপের পাইপের কাছে গেলে,পড়ে যান। এ সময় মাঠের কয়েকজন কৃষক ওই নলকূপের কাছে পানি খাওয়ার জন্য এসেছিলেন, তারা ছেলেটির কান্নার আওয়াজ শুনে সবাইকে জানান, খবর দেয়া হয় ফায়ার সার্ভিসকে।
মন্তব্য