গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জে রংপুর চিনিকলের জমি থেকে উচ্ছেদ ও আখ কাটাকে কেন্দ্র করে ২০১৬ সালের ৬ নভেম্বর স্থানীয় সাঁওতাল-পল্লিতে হামলা, অগ্নিসংযোগ ও তিন সাঁওতালকে গুলি করে হত্যার ঘটনায় তীব্র সমালোচনা হয়েছিল দেশজুড়ে। সাঁওতালদের বাড়িঘরে আগুন দেয়ার ভিডিও হয়েছিল ভাইরাল। এসেছিল বিশ্ব মিডিয়ায়ও।
এরপর দীর্ঘদিন এ নিয়ে আলোচনা ছিল না। ২০১৬ সালের সেই ঘটনার পর চিনিকলের ১ হাজার ৮৪২ একর জমি পুরোটাই প্রায় দখলে নেয় সাঁওতাল জনগোষ্ঠী।
পরবর্তী সময়ে কিছু জমিতে অবশ্য কাঁটাতারের বেড়া দিয়ে এই জনগোষ্ঠীর যাতায়াত বন্ধ করে দেয় মিল কর্তৃপক্ষ। এর মধ্যে গত বছর সরকারের সিদ্ধান্তে বন্ধ হয়ে যায় রংপুর চিনিকলসহ দেশের বেশ কয়েকটি চিনিকল। এরপর থেকে পুরো সম্পত্তিই দখলে নিয়েছে সাঁওতালরা।
সম্প্রতি এই এলাকা নিয়ে ফের উত্তপ্ত পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। প্রায় দুই হাজার একরের এই জমিতে অর্থনৈতিক অঞ্চল ইপিজেড (রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চল) করার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদনের পর জমি পরিদর্শনসহ পরবর্তী কাজও শুরু করেছে বাংলাদেশ রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (বেপজা)।
এর পরই এ সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে ফেটে পড়েছেন সাঁওতালরা। এ জমি নিজেদের দাবি করে ফের আন্দোলনে নেমে সড়ক অবরোধসহ নানা কর্মসূচি পালন করছেন তারা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বরাবর স্মারকলিপিও দিয়েছেন ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর বাসিন্দারা।
জনগোষ্ঠীটির দাবি, ইপিজেড স্থাপন সাঁওতালদের নিঃস্ব করার পরিকল্পনা। ৬ নভেম্বরে মানুষ হত্যা করেও উচ্ছেদে ব্যর্থ হয়ে সরকার নতুন করে ইপিজেড স্থাপনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তবে তারা এ সিদ্ধান্ত মানবেন না। তিন ফসলি এই জমিতে কৃষি আবাদই হবে; ইপিজেড নয়। জীবন দিয়ে হলেও তারা বাপ-দাদার জমি রক্ষার হুঁশিয়ারিও দিয়েছেন।
স্থানীয় একটি পক্ষ অবশ্য বলছে অন্য কথা। তাদের দাবি, চিনিকলের জমিতে ইপিজেড হলে অসংখ্য শিল্পকারখানা গড়ে উঠবে। সেখানে কর্মসংস্থানের সুযোগ হবে গাইবান্ধাসহ উত্তরাঞ্চলের ২ লাখ মানুষের।
প্রধানমন্ত্রীর সিদ্ধান্তকে সাধুবাদ জানিয়ে এ অঞ্চলের মানুষদের মিষ্টি বিতরণ ও আনন্দ মিছিল করতেও দেখা গেছে।
প্রশাসন বলছে, চিনিকলের জমিতে ইপিজেড হলে এ অঞ্চলের শিক্ষিত ও বেকার যুবকরা চাকরির সুযোগ পাবেন। গাইবান্ধাসহ পুরো রংপুর বিভাগের জীবনমানে পরিবর্তন আসবে। সেখানে সাঁওতাল জনগোষ্ঠীই বেশি সুযোগ-সুবিধা ভোগ করবে। উত্তরাঞ্চল হবে অর্থনৈতিক এলাকা; যা জাতীয় অর্থনীতিতে ব্যাপক ভূমিকা রাখবে।
তবে সরকারের বৃহত্তর এই পরিকল্পনা মানতে রাজি নয় সাঁওতালরা। গত শনিবার ইপিজেড স্থাপনের সিদ্ধান্ত বাতিলের দাবিতে ভূমি পুনরুদ্ধার কমিটির ব্যানারে গোবিন্দগঞ্জের মাদারগঞ্জ এলাকায় বিক্ষোভ মিছিল করেছেন তারা।
একই ধরনের কর্মসূচি ছাড়াও বেশ কিছু দিন ধরে ঘোড়াঘাট-দিনাজপুর আঞ্চলিক মহাসড়ক অবরোধ, মানববন্ধন ও প্রধানমন্ত্রীসহ বিভিন্ন দপ্তরে আবেদন-স্মারকলিপির মাধ্যমেও এই সিদ্ধান্ত বাতিলের দাবি জানিয়ে আসছে জনগোষ্ঠীটি।
এসব কর্মসূচিতে সাঁওতাল নেতারা জানান, ফসলি জমি নষ্ট করে শিল্পকারখানা স্থাপনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নিষেধ রয়েছে। তারপরও একটি মহল বেপজা কর্তৃপক্ষকে প্রভাবিত করে সাঁওতাল-পল্লির তিন ফসলি জমিতে শিল্পকারখানা স্থাপনের পাঁয়তারা করছে; যা কোনোভাবেই মানবেন না তারা।
তারা আরও জানান, ১৯৫৩-৫৪ সালে বাঙালি ও সাঁওতালদের কাছ থেকে এসব জমি অধিগ্রহণ করে রংপুর চিনিকল। শর্ত অনুযায়ী, কখনও মিল বন্ধ হয়ে গেলে বা জমিতে আখ চাষ না হলে জমি প্রকৃত মালিকরা ফেরত পাবেন। বর্তমানে মিল বন্ধসহ আখ চাষ বন্ধ হওয়ায় সেই শর্ত শেষ হয়েছে। তাই এই জমির পৈতৃক সূত্রে মালিক সাঁওতাল ও বাঙালিরা।
সাঁওতাল-পল্লি এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, ইপিজেড স্থাপনের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের খবরে পতিত জমিগুলোতেও ছোট ছোট নতুন ছাপরা ঘর নির্মাণ করে দখলে নিয়েছেন সাঁওতালরা, যা সেই ৬ নভেম্বরের ঘটনার সঙ্গে মিলে যায়। এ ছাড়া তারা দীর্ঘদিন ধরে একসঙ্গে বসবাস করে এলেও এখন জমি হাতছাড়া না করতে ভিন্ন ভিন্ন জমিতে ছাপরায় বসবাস শুরু করেছেন।
ইপিজেড স্থাপনের বিরোধিতা করে সাঁওতাল-পল্লির চামগড়া এলাকার টাটু টুডু বলেন, ‘আমি চাই আমার বাপ-দাদার পৈতৃক জমি সরকার ফিরত দেক। আমাদের সরিয়ে দিয়ে সরকার ইপিজেড করতি পারে না। এটা হতে দিব না। জীবন দিব, কিন্তু জমি দেব না।’
৬ নভেম্বরে ঘটনায় পুলিশের গুলিতে পা হারানো পল্লীর বিমল কিসকু বলেন, ‘আমরা বাপ-দাদার ভিটেতে চাষাবাদ করে থাকতে চাই। খাইতে চাই। আমরা কৃষি লোক, চাষবাদ করব; বাপ-দাদার জমিতে থাকব। ইপিজেড আমরা আশ্রয়ও দিব না। জমিতে কিছু তুলতিই দিব না।’
সাহেবগঞ্জ-বাগদাফার্ম ভূমি উদ্ধার সংগ্রাম কমিটির সভাপতি বার্নাবাস টুডু বলেন, ‘২০১৬ সালে অনেকভাবে আমাদের নির্যাতন করা হইছে। পুলিশসহকারে এলাকার যারা প্রভাবশালী তারা আমাদের নির্যাতন করেছে। গুলি করে আমাদের তিনজন ভাইকে মেরে ফেলছে। আমাদের ঘরে আগুন লাগে দিছে। লুটপাট করছে। বাপ-দাদার এই পৈতৃক ভিটে আমরা মরলেও ছাড়ব না। ইপিজেড হতে দিব না।’
সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক জাফরুল ইসলাম প্রধান বলেন, ‘এই সম্পত্তি আমাদের মা। এই সম্পত্তি আমাদের জীবন। এটাই আমাদের অস্তিত্ব। এখানে আমরা জীবন দিয়ে হলেও জমি রক্ষা করব।’
স্বাধীনতাযুদ্ধে সাঁওতালদের বিভিন্ন অবদানের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘আমরাও দেশের উন্নয়ন চাই। তবে নৃগোষ্ঠী সাঁওতাল সম্প্রদায়কে উচ্ছেদ, নিঃস্ব করে সেই উন্নয়ন করাটা কতটুকু যৌক্তিক?’
সরকার দ্রুত ইপিজেড স্থাপনের সিদ্ধান্ত বাতিল না করলে বৃহত্তর আন্দোলনের ঘোষণাও দেন তিনি।
৬ নভেম্বর সাঁওতাল-পল্লিতে হামলা, ভাঙচুর, লুটপাট ও বাড়িঘর পুড়িয়ে দেয়ার ঘটনার মামলার বাদী থমাস হেমব্রম বলেন, ‘সরকারের যে কর্তৃপক্ষ আমাদের বাপ-দাদার জমিতে ইপিজেড করতে চাচ্ছে; তা আমরা দেব না। আমরা তিন-তিনটে ভাই হারাছি, দরকার হলে আমরাও জীবন দিব, তবুও জমিতে একটা ইট পুঁততে দেব না।’
তিনি আরও বলেন, ‘৬ নভেম্বর গুলি করে হত্যা, হামলা, লুটপাটের মামলার বাদী হয়েও হয়তো এর বিচার দেখে যেতে পারব না। কারণ বারবার ভুল ও ত্রুটিপূর্ণ তদন্ত প্রতিবেদন আদালতে জমা দিচ্ছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। এ ছাড়া মামলার মূল আসামিদের বারবার চার্জশিট থেকে নাম বাদ দেয়া হচ্ছে।’
সাঁওতালরা বিরোধিতা করলেও স্থানীয়দের একটি অংশ আবার ইপিজেড করার পক্ষে।
স্থানীয় পাড়া কচুয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক এ এফ এম শরিফুজ্জামান শরীফ বলেন, ‘ইপিজেড হলে এলাকার আর্থসামাজিক উন্নয়ন হবে। এখানে বেকার যুবকদের কর্মসংস্থানের সুযোগ হবে। গোবিন্দগঞ্জসহ উত্তরাঞ্চলে উন্নয়ন হবে।’
গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার সাবেক মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার শেমলেন্দু মোহন রায় জিবু বাবু বলেন, ‘সাঁওতালদের আমরা কখনোই আমাদের প্রতিদ্বন্দ্বী ভাবি না। তারা তো শুধু ১২ শতাংশ। আর আমরা হিন্দু-মুসলিম ৮৮ শতাংশ। তাহলে এই সম্পত্তি তারা তাদের বাপ-দাদার সম্পত্তি বলে চালিয়ে দিলে তো হবে না। যত দ্রুত সম্ভব এই ইপিজেড বাস্তবায়ন হোক, এটাই আমি চাই।’
এমন অবস্থায় গত ২৪ আগস্ট ইপিজেড বাস্তবায়নে রংপুর চিনিকলের সাহেবগঞ্জ-বাগদাফার্মের বিভিন্ন এলাকা পরিদর্শন করেন বাংলাদেশ রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ এলাকা কর্তৃপক্ষের (বেপজা) নির্বাহী চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল নজরুল ইসলাম। এর আগে গাইবান্ধার জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিদের নিয়ে এক মতবিনিময় সভায় অংশ নেন তিনি।
ওই সময় তিনি বলেন, ‘গোবিন্দগঞ্জে ইপিজেড স্থাপনের মাধ্যমে এমন একটা কর্মপরিবেশ তৈরি করা হবে, যা হবে আন্তর্জাতিক মানের। সরকার কখনও সাধারণ মানুষের অমঙ্গল কামনা করে না। বৃহত্তর রংপুর ও রাজশাহী বিভাগের মাঝামাঝি এই গোবিন্দগঞ্জে ইপিজেড এই বৃহৎ অঞ্চলের আমূল পরিবর্তন ঘটাবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘এই ইপিজেড দুই লক্ষাধিক মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি করবে। ইপিজেড এখানে দেবে মিনি ক্যান্টনমেন্ট। এ ছাড়া স্বাস্থ্যসেবা থেকে শুরু করে সব ধরনের আধুনিক সুযোগ-সুবিধা থাকবে। তা ছাড়া এখানে আন্তর্জাতিক মানের কর্মপরিবেশ নিশ্চিত করা হবে।’
এ ছাড়া এখানকার ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়ন ও কর্মসংস্থানসহ তাদের পুনর্বাসনের আশ্বাসও দেন তিনি।
সাঁওতালরা আন্দোলন শুরু করলেও এবার স্থানীয় প্রশাসন বেশ সতর্ক। সাঁওতালদের সঙ্গে কোনো সংঘাত নয় বরং শান্তিপূর্ণ আলোচনার কথা জানিয়েছে গোবিন্দগঞ্জ উপজেলা প্রশাসন।
ইউএনও আবু সাঈদ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘ইপিজেড স্থাপন সরকারি সিদ্ধান্ত। এর বিরোধিতা করে কেউ অপ্রীতিকর ঘটনা যাতে না ঘটাতে পারে, সে জন্য সজাগ রয়েছে উপজেলা প্রশাসন।’
৬ নভেম্বরের ঘটনা যেভাবে
১৯৫৩-৫৪ সালে গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার মহিমাগঞ্জে রংপুর চিনিকলের আখ চাষের জন্য উপজেলার সাপমারা ও কাটাবাড়ী ইউনিয়নের কয়েকটি গ্রামের ১ হাজার ৮৪২ দশমিক ৩০ একর জমি অধিগ্রহণ করে সরকার। এ জমির মধ্যে সাঁওতাল সম্প্রদায়ের ছিল ২৭ শতাংশ এবং স্থানীয় মুসলমানদের ৭৩ শতাংশ। জমি অধিগ্রহণের পর এর নামকরণ করা হয় সাহেবগঞ্জ-বাগদাফার্ম।
২০১৬ সালের জুলাইয়ে সাহেবগঞ্জ-বাগদাফার্মের প্রায় ১০০ একর জমিতে ছোট ছোট ছাপরা ও ঝুপড়ি ঘর তুলে বসবাস শুরু করেন সাঁওতাল-বাঙালিরা। ২০১৬ সালের ৬ নভেম্বর সকালে আখ কাটা নিয়ে পুলিশসহ চিনিকলের শ্রমিক-কর্মচারীদের সঙ্গে সাঁওতালদের সংঘর্ষ বাধে। এতে গুলিবিদ্ধ হয়ে তিন সাঁওতাল নিহত হন। আহত হন উভয় পক্ষের কমপক্ষে ৩০ জন।
ওই দিন সন্ধ্যার দিকে সাঁওতালদের ঘরে আগুন দিয়ে উচ্ছেদের চেষ্টা চালায় পুলিশ ও প্রশাসন। এ ঘটনায় দেশজুড়ে আলোচনা-সমালোচনা শুরু হয়। পরে ধীরে ধীরে ওই এলাকা সাঁওতালদের দখলে চলে যায়।
শেরপুরে নালিতাবাড়ী উপজেলার কাটাবাড়ী সীমান্তের বিদ্যুতায়িত হয়ে আরও একটি একটি বন্যহাতি নিহত হয়েছে। বনবিভাগের মধুটিলা রেঞ্জের আওতাধীন এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
স্থানীয়দের কাছ থেকে খবর পেয়ে শনিবার (৫ জুলাই) সকালে বনবিভাগের লোকজন ঘটনাস্থলে গিয়ে হাতিটির মরদেহ উদ্ধার করে।
খাদ্যের সন্ধানে পাহাড় থেকে নেমে আসা হাতিটি বৈদ্যুতিক ফাঁদে পড়ে নিহত হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছে বনবিভাগ।
মধুটিলা রেঞ্জের রেঞ্জার দেওয়ান আলী ঘটনাটি নিশ্চিত করে জানিয়েছেন, হাতিটির শুড়ে পোড়া ক্ষতের দাগ রয়েছে। এটির বয়স ১৫ থেকে ২০ বছর হবে। এটি একটি মাদি হাতি। এ ব্যাপারে পরবর্তী প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।
স্থানীয় সূত্র জানায়, সাম্প্রতিককালে মধুটিলা রেঞ্জের আওতাধীন এলাকায় খাদ্যের সন্ধানে বন্যহাতি লোকালয়ে নেমে আসার ঘটনা বৃদ্ধি পেয়েছে। খেতে ফসল না থাকায় হাতির দল বাড়িঘরেও হানা দিচ্ছে। এতে স্থানীয়ভাবে অনেক পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছিল। যেখানে বন্যহাতির দেহটি পড়ে ছিল, সেখানে কোনো ধরনের বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম না থাকলেও হাতিপাগাড় ক্যাম্পের আশপাশে অনেক বসতি ও বাড়িঘর রয়েছে।
এ নিয়ে চার মাসের কম সময়ের ব্যবধানে মধুটিলা রেঞ্জ এলাকায় তিনটি বন্যহাতির মরদেহ উদ্ধার করল বনবিভাগ।
এর আগে গত ২০ মার্চ পূর্ব সমশ্চুড়া গ্রামের লালনেংগড় এলাকায় বিদ্যুতায়িত হয়ে নিহত একটি বন্যহাতির মরদেহ উদ্ধার করা হয়। তারপর গত ২৯ মে দাওধারা পাহাড় থেকে সদ্যোজাত একটি হাতিশাবকের মরদেহ উদ্ধার করা হয়।
ঘন ঘন হাতির মরদেহ উদ্ধারের ঘটনায় উদ্বেগ জানিয়েছেন পরিবেশ ও প্রকৃতিপ্রেমীরা।
নিধারঞ্জন কোচ নামে এক অধিকারকর্মী নিজের ফেসবুক ওয়ালে শনিবার নিহত হাতির মরদেহের ছবি পোস্ট করে প্রশ্ন ছুড়ে দিয়ে লিখেছেন, ‘আবারো বন্যহাতির মৃত্যু। এর শেষ কোথায়? হাতি-মানুষের দ্বন্দ্ব নিসনে সরকারি উদ্যোগ কী? ক্ষতিপূরণ প্রদানই কি যথেষ্ট? হাতি-মানুষের সহাবস্থানের পথ খুঁজতে খুঁজতে এশিয়ান হাতি নাই হয়ে যাবে!’
সিলেটের ওসমানীনগরে এনা ও ইউনিক পরিবহনের দুটি বাসের সংঘর্ষে ঘটনাস্থলেই একজন নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন অন্তত ১০ জন।
শনিবার (৫ জুলাই) সকাল ৬টার দিকে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের কুরুয়া বাজারের পাশে এ দুর্ঘটনা ঘটে।
নিহত রাজু মিয়ার (২৬) বাড়ি ফরিদপুর জেলার তারাকান্দা থানায়। তিনি ইউনিক বাসের হেলপার ছিলেন।
দুর্ঘটনায় আহতদের মধ্যে অন্তত দুজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সিলেট থেকে ছেড়ে আসা ইউনিক পরিবহনের বাসের সঙ্গে ঢাকা থেকে আসা এনা পরিবহনের বাসটির সংঘর্ষ হয়। এতে ঘটনাস্থলেই ইউনিকের হেলপার রাজু মিয়ার নিহত হন। বেপরোয়া গতিতে ভুল পাশ থেকে এসে এনা পরিবহনের ওই কোচটি এ দুর্ঘটনা ঘটায় বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান।
দুর্ঘটনার খবর পেয়ে ফায়াস সার্ভিস, ওসমানীনগর থানা পুলিশ ও শেরপুর হাইওয়ে পুলিশ এসে হতাহতদের উদ্ধার করে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠায়।
দুর্ঘটনার পর কুরুয়া বাজারের দুই পাশে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে কয়েক কিলোমিটার যানজট দেখা দেয়। পরে সকাল সোয়া ১০টার দিকে দুর্ঘটনাকবলিত গাড়ি দুটি সরিয়ে যানজট নিরসন করে পুলিশ।
শেরপুর হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবু তাহের দেওয়ান জানান, দুই গাড়ির সংঘর্ষ হলে বিকট শব্দে স্থানীয়রা এগিয়ে গিয়ে প্রাথমিক উদ্ধারকাজ শুরু করেন। পরে স্থানীয় থানা পুলিশ, হাইওয়ে পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা তাতে যোগ দেন।
তিনি আরও জানান, হাইওয়ে পুলিশ রাজুর লাশ উদ্ধার করে ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠিয়েছে। বাস দুটিকে রাস্তা থেকে সরিয়ে যান চলাচল স্বাভাবিক করা হয়েছে।
কেশবপুরের ঐতিহ্য কালোমুখো হনুমান খাদ্য সংকট ও বন উজাড় হয়ে যাওয়ায় বিভিন্ন এলাকায় চলে যাচ্ছে। প্রয়োজনীয় খাবার না পেয়ে মারাও যাচ্ছে। কালোমুখো হনুমান রক্ষার দাবি উঠেছে।
জানা গেছে, একসময় কেশবপুরে ছিল কালোমুখো হনুমানের অভয়ারণ্য। বন উজাড় হয়ে যাওয়ায় এবং খাদ্য সংকটে সময়ের গতির সঙ্গে কমে যাচ্ছে হনুমান। বর্তমানে ১৮০ থেকে ২০০টি হনুমান কেশবপুরে রয়েছে বলে স্থানীয় বন বিভাগ জানায়। এখান থেকে ৪/৫ বছর আগে ছিল ২৫০ থেকে ৩০০ টি। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, দেশ বিভক্তির আগে ভারতের মাড়োয়াররা ব্যবসা বাণিজ্যের জন্য যশোরের কেশবপুরে বসবাসের পাশাপাশি আসা-যাওয়া করত। এ সময় তাদের যানবাহনে করে দুটি কালোমুখো হনুমান ভারত থেকে কেশবপুরে আসে। সেই থেকে হনুমানের এখানে পত্তন শুরু হয়। ওই এক জোড়া হনুমান থেকে এখানে শত শত হনুমানের কালের আবর্তনে ওরা আজ বিলুপ্তির পথে। একসময় কেশবপুর অঞ্চলে ঘন বনজঙ্গল ছিল। এসব বনের ফল ও লতাপাতা খেয়ে ওরা জীবিকা নির্বাহ করত। বর্তমানে জনসংখ্যা বৃদ্ধির পাশাপাশি বন উজাড়সহ ঘনবসতি এবং এলাকায় অবৈধ ইটভাটায় গিলে খাচ্ছে এসব বনের কাঠ। এতে উজাড় হচ্ছে বন। এদিকে কেশবপুর উপজেলায় পল্লীবিদ্যুতের তারে কভার সিস্টেম না থাকায় প্রায়ই বিদ্যুতের তারে জড়িয়ে বিদ্যুৎস্পৃষ্টে ওরা মারা যাচ্ছে। খাদ্য সংকটের কারণে কেশবপুরের হনুমান দেশের বিভিন্ন এলাকায় চলে যাচ্ছে।
উপজেলা বন বিভাগের কর্মকর্তা মোনায়েম হোসেন বলেন, কেশবপুর এলাকায় বনজঙ্গল কমে যাওয়ার কারণে হনুমানের খাদ্য সংকট দেখা দিয়েছে। ওদের রক্ষায় সরকারিভাবে খাদ্য সরবরাহ করা হচ্ছে।
কেশবপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার রেকসোনা খাতুন বলেন, হনুমান রক্ষায় সরকারিভাবে খাদ্য সরবরাহ করা হয়। এ ছাড়া বিভিন্ন এনজিও ব্যক্তি গত ভাবেও অনেকেই খাদ্য দেয়, যার কারণে ওরা গ্রামাঞ্চল ছেড়ে বর্তমানে শহরে বেশি বিচরণ করছে।
নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন করোনা আক্রান্ত এক বৃদ্ধের মৃত্যু হয়েছে।
করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃত জেবল হক (৮০) কবিরহাট উপজেলার চাপরাশিরহাট ইউনিয়নের লামছি গ্রামের মৃত গনু মিয়ার ছেলে।
বুধবার (২ জুলাই) সকালে বিষয়টি নিশ্চিত করেন নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডা. রাজীব আহমেদ চৌধুরী। এর আগে, গতকাল মঙ্গলবার (১ জুলাই) রাত ১০টার দিকে নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালের করোনা ইউনিটে তার মৃত্যু হয়।
ডা. রাজীব আহমেদ চৌধুরী বলেন, গত ২৪ ঘণ্টায় করোনা আক্রান্ত হয়ে এক বৃদ্ধের মৃত্যু হয়েছে। গত মঙ্গলবার সকাল ১০টার দিকে ওই বৃদ্ধ হাসপাতালে ভর্তি হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রাত ১০টার দিকে মারা যান তিনি। এদিকে গত ২৪ ঘন্টায় নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালের এক জনের নমুনা পরীক্ষায় একজনের শরীরে করোনা শনাক্ত হয়েছে।
এ বিষয়ে জেলা সিভিল সার্জন ডা.মরিয়ম সিমি বলেন, মারা যাওয়া ব্যক্তি সকালে হাসপাতালে ভর্তি হয়। দুপুরে তার করোনা শনাক্ত হওয়ার পর সেখানে রাতে তার মৃত্যু হয়। এখন পর্যন্ত নোয়াখালীতে মোট ৩ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। কিট সল্পতার কারণে উপজেলা পর্যায়ে করোনা টেস্ট এখনো শুরু করা হয়নি।
সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবের নেতৃত্ব নিয়ে চলমান বিরোধের জেরে ক্লাবের সভাপতি আবুল কাশেমসহ সাংবাদিকদের উপর অতর্কিত হামলার ঘটনা ঘটেছে। এতে অন্তত ৩০ সাংবাদিক আহত হয়েছেন।
অভিযোগ উঠেছে, ক্লাবের কথিত সভাপতি মাদকাসক্ত আওয়ামী দোসর আবু সাঈদ ও সাধারণ সম্পাদক আব্দুল বারীর নেতৃত্বে আল ইমরান ও অমিত ঘোষ বাপ্পাসহ ভাড়াটে সন্ত্রাসী ও মাদকাসক্তরা এই হামলা চালায়।
সোমবার (৩০ জুন) সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবের সামনে এই হামলায় ইন্ডিপেনডেন্ট টেলিভিশনের সাংবাদিক ও প্রেসক্লাবের সভাপতি আবুল কাশেম, ভোরের আকাশের সাংবাদিক আমিনুর রহমান, ডিবিসি নিউজের সাংবাদিক বেলাল হোসেন, অনির্বানের সোহরাব হোসেনসহ অন্তত ৩০ সাংবাদিক গুরুতর আহত হয়েছেন।
হামলার শিকার সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবের সভাপতি আবুল কাশেম বলেন, আমরা শান্তিপূর্ণভাবে প্রেসক্লাবে একটি সভা করার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম। ঠিক সেই মুহূর্তে আবু সাঈদ ও আব্দুল বারীর নেতৃত্বে আলিপুর থেকে আনা ভাড়াটে সন্ত্রাসী ও মাদকাসক্তরা আমাদের উপর পরিকল্পিতভাবে হামলা করে। তাদের হামলায় আমাদের অন্তত ৩০ জন সাংবাদিক ও সদস্য আহত হয়েছেন।
তিনি আরও অভিযোগ করেন, আবু সাঈদ ও আব্দুল বারী দীর্ঘদিন ধরে অবৈধভাবে প্রেসক্লাব দখল করে রেখেছেন এবং তাদের মতের বিরুদ্ধে গেলেই এভাবে হামলা ও নির্যাতন চালানো হয়।
এই ন্যাক্কারজনক হামলার ঘটনায় সাতক্ষীরার সাংবাদিক মহলে তীব্র ক্ষোভ ও উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়েছে। সাংবাদিকরা অবিলম্বে হামলাকারীদের গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনার জোর দাবি জানিয়েছেন।
ঘটনার পর থেকে প্রেসক্লাব এলাকায় থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে সেখানে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
কুমিল্লার দাউদকান্দি পৌরসভার ২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট ঘোষণা করা হয়েছে। বাজেট ঘোষণা করেন সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও দাউদকান্দি পৌর প্রশাসক রেদওয়ান ইসলাম।
সোমবার (৩০ জুন) দুপুরে পৌরসভা হলরুমে এ বাজেট ঘোষণা করা হয়। বাজেটে সর্বমোট আয় ৪২ কোটি ৯১ লাখ ৫৯ হাজার টাকা ও মোট ব্যয় ৩৬ কোটি ৭৪ হাজার টাকা প্রস্তাব করা হয়। পৌর প্রশাসক রেদওয়ান ইসলাম তার প্রস্তাবিত বাজেটে ২০২৫-২৬ অর্থ বছরে রাজস্ব খাত থেকে ১৩ কোটি ২৩ লাখ ৪১ হাজার ৩ শত ৩১ টাকা ও উন্নয়ন খাত থেকে ২৯ কোটি ৬৮ লাখ ১৮ হাজার ৪৫ টাকা আহরনের লক্ষমাত্রা নির্ধারন করা হয়েছে। বাজেটে উদ্ধৃত্ত ধরা হয়েছে ৬ কোটি ১৭ লাখ ২ হাজার ৩ শত ৭৮ টাকা।
এছাড়াও বাজেটে খাতওয়ারী ব্যয়ের হিসেবে দেখা যায় রাজস্ব খাতে ব্যয় ৯ কোটি ৫৯ লাখ ৫৭ হাজার টাকা এবং উন্নয়ন ব্যয় দুই কোটি ১৫ লাখ টাকা ধরা হয়েছে।
এ সময় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা.হাবিবুর রহমান,পৌরসভার নির্বাহী কর্মকর্তা তাজুল ইসলাম, হিসাবরক্ষক শাহাদাত হোসেনসহ পৌরসভার অন্যান্য কর্মকর্তারা।
নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে মাদকাসক্ত হয়ে মাতলামি করার প্রতিবাদ করায় ইয়াছিন (৩৮) ও সিপন( ৩২) নামে দুই যুবক গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। আহতদের মধ্যে একজনকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এবং অপরজনকে রূপগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে।
শুক্রবার দিবাগত রাতে উপজেলার মুড়াপাড়া টঙ্গীরঘাট এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
গুলিবিদ্ধ ইয়াছিন মুড়াপাড়ার হাউলিপাড়া এলাকার ইদু মিয়ার ছেলে এবং সিপন টঙ্গীরঘাট এলাকার আলাউদ্দিনের ছেলে।
রূপগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) তরিকুল ইসলাম জানান, রাত ১১টার দিকে ইয়াছিন তার স্ত্রীকে নিয়ে বিয়ের অনুষ্ঠান শেষে খালাতো বোনের বাড়ি যাচ্ছিলেন। পথে স্থানীয় সোহরাব নামের এক যুবক মাদকাসক্ত অবস্থায় তাদের উদ্দেশে গালিগালাজ করলে ইয়াছিন প্রতিবাদ করেন। পরে তিনি খালাতো ভাই সিপনকে নিয়ে স্থানীয় অহিদুল্লার বাড়িতে গিয়ে ঘটনার কথা জানান। সেখানেই সোহরাব ক্ষিপ্ত হয়ে পিস্তল দিয়ে তাদের লক্ষ্য করে গুলি চালায়। এতে ইয়াছিনের মাথায় ও সিপনের পায়ে গুলি লাগে।
তাদের প্রথমে স্থানীয় একটি বেসরকারি হাসপাতালে নেওয়া হয়। পরে সিপনকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এবং ইয়াছিনকে রূপগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়।
ঘটনার পরপরই পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে গুলির খোসা উদ্ধার করেছে এবং জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তিনজনকে আটক করেছে। এ ঘটনায় আইনগত ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।
মন্তব্য