উড়ে এসে ক্ষমতায় জুড়ে বসা ব্যক্তিদের দেশের মানুষের প্রতি কোনো দায়িত্ববোধ থাকে না বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে বুধবার সকালে ভূমি মন্ত্রণালয়ের ভূমি ভবন, উপজেলা ও ইউনিয়নের ভূমি অফিস ভবন, অনলাইন ভূমি উন্নয়ন কর পরিশোধ কার্যক্রম এবং ভূমি ডাটা ব্যাংকের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন।
অনুষ্ঠানে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে যুক্ত ছিলেন সরকারপ্রধান।
এ সময় তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগ যতদিন ক্ষমতায় থাকে দেশের মানুষ সেবা পায়, দেশের উন্নতি হয়। আন্তরিকতার সাথে আমরা কাজ করি। আমরা একটা আদর্শ নিয়ে কাজ করি, একটি নীতি নিয়ে কাজ করি। সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করি। কেন করি?
‘কারণ এ দেশের মানুষের মুক্তির জন্য, স্বাধীনতার জন্য সংগ্রাম করেছে আওয়ামী লীগের কর্মীরা, পাশে থেকেছে জনগণ। উড়ে এসে জুড়ে যারা ক্ষমতায় বসে, তাদের সে দায়বদ্ধতা থাকে না। ক্ষমতাকে তারা ভোগদখলের একটা জায়গা বানায়। অর্থসম্পদ বানানোর একটি মেশিন হিসেবে পায়। আর দেশের মানুষ মরুক, বাঁচুক তাদের কোনো খেয়ালই থাকে না। এটাই হলো বাস্তবতা। তাই আওয়ামী লীগ যখন ক্ষমতায় আসে, তখনই দেশের মানুষের সার্বিক উন্নতি হয়।’
তিনি বলেন, ‘আরও দুর্ভাগ্যের বিষয়, একটি কথা না বলে পারছি না এখানে। বিএনপি-জামায়াত জোট ২০১৩ সালে যেভাবে অগ্নিসন্ত্রাস শুরু করেছিল, তাতে বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে তারা অনেকগুলো ভূমি অফিস জ্বালিয়ে পুড়িয়ে দেয়।
‘তারা শুধু ভূমি অফিসই জ্বালায়নি, চলন্ত বাসে যাত্রীরা যাচ্ছে, সেখানে নারী-পুরুষ-শিশু, সেই বাসে আগুন দিয়ে জীবন্ত মানুষ পুড়িয়ে মারে। সিএনজি ড্রাইভার সিএনজি চালিয়ে যাচ্ছে, তাকে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে মারে। গাড়ি থেকে ড্রাইভারকে বের করে তার গায়ে পেট্রল ঢেলে আগুন জ্বালিয়ে পুড়িয়ে হত্যা করে। এভাবে তারা একটি ধ্বংসযজ্ঞ চালাতে থাকে। সেখানে প্রায় ছয়টি ভূমি অফিসসহ অনেকগুলো ভূমি অফিস নষ্ট করে দেয়। সেগুলো পুড়িয়ে দেয়।’
আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বলেন, ‘তখন একটা ঘোষণা দিয়েছিলাম যে, যারা এই ভূমি অফিস পোড়াচ্ছে তাদের যেন আর কোনো দিন জমির মালিকানা না থাকে। কারণ তারা তো আগুন দিয়ে পুড়িয়েই দিয়েছে। তারা আর পাবে কেন? এই হুমকির পরে কিন্তু তাদের এই ভূমি অফিস পোড়ানোটা বন্ধ হয়।
‘তাদের এই ধ্বংসযযজ্ঞ আমরা দেখেছি। আসলে বিএনপি-জামায়াত এরা তো আর মানুষের জন্য কাজ করে না। অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলকারী একটা মিলিটারি ডিক্টেটরের হাতে তৈরি করা এ সংগঠন। কাজেই মানুষের প্রতি এদের কোনো দায়িত্ববোধও নেই, দেশের জন্যও নেই। ক্ষমতা আর ক্ষমতায় থেকে টাকা বাড়ানো, জঙ্গিবাদ-সন্ত্রাস-দুর্নীতি এটাই তাদের কাজ এবং সেটাই তারা করেছে।’
দোরগোড়ায় সেবা পৌঁছে দেয়াই লক্ষ্য
সাধারণ মানুষ যেন কোনো ভোগান্তি ছাড়াই সরকারি বিভিন্ন সেবা ঘরে বসেই পায় তা নিশ্চিত করাই ডিজিটাল বাংলাদেশের লক্ষ্য বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
তিনি বলেন, ‘দ্বিতীয় দফায় যখন আমরা ২০০৯-এ সরকার গঠন করি, তার আগে ২০০৮-এর নির্বাচনে আমরা আমাদের ইশতেহারে ঘোষণা দিয়েছিলাম ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ে তুলব। ডিজিটাল বাংলাদেশ অর্থাৎ প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে সেবাটা মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেয়া এবং মানুষের জীবনটা সহজ করা।
‘দুর্নীতি, অনিয়ম দূর করা—এটাই ছিল আমাদের লক্ষ্য। সেদিকে লক্ষ্য রেখেই আমরা বিভিন্ন পদক্ষেপ নিই এবং ভূমি ব্যবস্থাপনাটাকে ডিজিটাইজড করে মানুষের কাছে সেবাটা পৌঁছে দেয়ার জন্য আর মানুষের অধিকার সুরক্ষিত করবার জন্য আমরা বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছিলাম।’
সরকারপ্রধান বলেন, ‘আমাদের সরকারের নির্বাচনি ইশতেহারে যে রূপকল্প-২০২১ আমরা ঘোষণা দিয়েছিলাম, আমরা একটি সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনাই নিয়েছিলাম। ২০২১-এর মধ্যে বাংলাদেশ কেমন বাংলাদেশ হবে তারই একটি দিকনির্দেশনা আমরা দিয়েছিলাম। পরবর্তী সময়ে ২০৪১ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশ কীভাবে তৈরি হবে আমরা সেই পরিপ্রেক্ষিত পরিকল্পনাও ইতিমধ্যে প্রণয়ণ করেছি।
‘এতে আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে শতভাগ মিউটেশন কার্যক্রম যেন সম্পন্ন হয় এবং বাংলাদেশের ভূমি ব্যবস্থাপনা যেন সম্পূর্ণ ডিজিটাইজড হয়। কারণ মানুষ যেন খামোখা হয়রানির শিকার না হয়, মানুষকে যেন ভোগান্তির শিকার না হতে হয়, দুয়ারে দুয়ারে ঘুরে বেড়াতে না হয়, সেদিকে লক্ষ্য রেখেই ভূমি সেবাটা যেন হাতের মুঠোয় পায়, সে ব্যবস্থাটাই আমরা করতে চেয়েছি। কাজেই হাতের মুঠোয় ভূমিসেবা নিশ্চিত করতে অনলাইনে খতিয়ান সংগ্রহ, উত্তরাধিকার ক্যালকুলেটর, অনলাইন ডাটাবেজসহ ভূমি সেবার সব ক্ষেত্রে অধিকতর ডিজিটাল প্রযুক্তি ব্যবহার করা হচ্ছে।’
তিনি বলেন, ‘অনলাইনে খতিয়ান সংগ্রহ সিস্টেম বাস্তবায়ন হচ্ছে। এতে ঘরে বসে সহজেই মানুষ তাদের জমির পর্চা পাচ্ছে। এতে তারা খুবই খুশি। সারা বাংলাদেশে প্রায় ৪ কোটি ৯৪ লাখ ডিজিটাইজড খতিয়ান নিয়ে তৈরি করা হয়েছে ভার্চুয়াল রেকর্ড রুম। এই রুম থেকে যে কেউ বিনা পয়সায় তার কাঙ্ক্ষিত খতিয়ান সংগ্রহ করতে পারবে।
‘আর যারা ঘরে বসে কম্পিউটার ব্যবহার করে করতে পারবে না, তাদের জন্য ডিজিটাল সেন্টার করে দেয়া হয়েছে। সেখানেও তারা সেই সেবাটা নিতে পারেন। তাদের জন্য সেই সুযোগটাও আমরা তৈরি করে দিয়েছি। প্রত্যেকটা এলাকায় যেমনটা করা হয়েছে, আবার প্রত্যেক পোস্ট অফিসেও করা হয়েছে, সেখান থেকেই মানুষ সেই সেবাটা নিতে পারে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ভূমি ব্যবস্থাপনাকে ডিজিটাইজড করতে তিনটি প্রকল্প নেয়া হয়েছে, ভূমি ব্যবস্থাপনা অটোমেশন প্রকল্প, ডিজিটাল পদ্ধতিতে ভূমি জরিপ করার জন্য ভূমি রেকর্ড ও জরিপ অধিদপ্তরে শক্তিশালীকরণ প্রকল্প এবং মৌজা ও ব্লকভিত্তিক ভূমি জোনিং প্রকল্প।
‘এটা এখন পর্যন্ত যতটুকু হয়েছে, আগামীতে সম্পূর্ণভাবে বাস্তবায়িত হবে। এই কাজগুলো শেষ হলে আমি মনে করি বাংলাদেশের জন্য একটি আমূল পরিবর্তন আসবে। মানুষও প্রযুক্তি ব্যবহার করে তার সেবাটা পাবে।’
তিনি বলেন, ‘যেকোনো একজন জমির মালিককে ভূমি উন্নয়ন কর প্রদানের জন্য ইউনিয়ন ভূমি অফিস পর্যন্ত যেতে হয়। কিন্তু আজকের যে পদ্ধতি তাতে অনলাইনেই দিতে পারবেন। আর এখন তো মোবাইল ফোন সকলেরই হাতে। আমরা শুধু মুখেই বলিনি; কাজেও সেটা বাস্তবায়ন করেছি। ভূমি কর প্রদানের জন্য আবশ্যিকভাবে ভূমি অফিস পর্যন্ত যাওয়ার প্রয়োজন হয় না। ডিজিটালাইজড পদ্ধতিতে তিনি কর পরিশোধ করতে পারেন।
‘দেশে-বিদেশে যেখানেই থাকেন, সেখান থেকেই সেটা করতে পারবেন। সে সুযোগটা সৃষ্টি করা হয়েছে। ঘরে বসেই যেন ভূমির মালিক উন্নয়ন কর পরিশোধ করতে পারেন, তার জন্য বাস্তবায়ন করা হচ্ছে অনলাইনে ভূমি উন্নয়ন কর পরিশোধের ডিজিটাল পদ্ধতি। এর মাধ্যমে মানুষের ভোগান্তিও কমে যাবে। তিন কোটি হোল্ডিংয়ের মধ্যে প্রায় এক কোটি হোল্ডিংয়ের ডাটা এন্ট্রির কাজ এরই মধ্যে সম্পন্ন হয়েছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে যেকোনো নাগরিক যেকোনো স্থান থেকে ভূমি উন্নয়ন কর সংক্রান্ত তথ্য জানতে পারবেন। অনলাইনে পরিশোধ করতে পারবেন, অনলাইনেই দাখিলা পেয়ে যাবেন। এতে সময় বাঁচবে, খরচ বাঁচবে। হয়রানি থেকেই মানুষ রক্ষা পাবে। পাশাপাশি ভূমি উন্নয়ন কর সরাসরি সরকারের কোষাগারে জমা হবে। আগে হয়তো যা পাওয়া যেত কিছু যেত, কিছু যেত না। এখন আর তা হবে না।’
উপজেলা ভূমি অফিস জীর্ণ কেন?
দেশের বিগত কোনো সরকারই উপজেলা ভূমি অফিসগুলো সংস্কারে কোনো উদ্যোগ নেয়নি কেন তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
তিনি বলেন, ‘আমরা ভূমি ব্যবস্থাপনাটা আরও উন্নত করতে চাই। সেই সাথে আমরা জানি, সারা দেশে ঠিকমতো কাজ করা যেত না।
‘কিছুক্ষণ আগে আপনারা যে ভিডিওটা দেখালেন তাতে উপজেলা ভূমি অফিসগুলোর যে জীর্ণ দশা, এই জীর্ণ দশা কেন? আমি জানি না। আমাদের আগে তো আরও অনেকেই ক্ষমতায় এসেছেন। কেন এ ব্যাপারে কোনো সংস্কার করা হয়নি, এটাই বড় প্রশ্ন।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘প্রত্যেকটি এলাকায় আমাদের ভূমি অফিসগুলো উন্নত করার যে পদক্ষেপ আমরা নিয়েছি এবং সেখানে যে কর্মকর্তাদের অভাব ছিল, সেটা পূরণেরও ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। বর্তমানে প্রায় সব উপজেলায় সহকারী ভূমি কমিশনার পদায়ন করা হয়েছে।
‘একই সাথে দাপ্তরিক কাজ পরিচালনা, মোবাইল কোর্ট পরিচালনার জন্য যানবাহন প্রদান করা হয়েছে। এতে প্রশাসনের গতিশীলতা বৃদ্ধি পেয়েছে এবং জনগণকে কাঙ্ক্ষিত সেবাও দিতে পারছে।’
তিনি বলেন, ‘দেশের বেশির ভাগ উপজেলা ভূমি অফিসগুলো জরাজীর্ণ ছিল। এখন সব জায়গায় আমরা নতুন অফিস করে দিচ্ছি। ১৩৯টি উপজেলা ভূমি অফিস নির্মাণের কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়, তার মধ্যে ১২৯টির নির্মাণকাজ সম্পন্ন হয়েছে। প্রত্যেকটি উপজেলার অফিসগুলোকে নতুনভাবে গড়ে তোলা। যেগুলো হয়নি, সেগুলো দ্রুত প্রকল্প নিয়ে কাজ সম্পন্ন করতে হবে। এখান থেকেও মানুষ যথাযথ সেবা পাবে।
‘আমাদের ভূমি অফিসগুলো বিভিন্ন জায়গায় ছড়ানো-ছিটানো ছিল। আমরা আস্তে আস্তে সব অফিসকে এক ভবনে আনছি। মানুষ যাতে সব সেবা এক জায়গায় পেতে পারে, সে ব্যবস্থাটা আমরা নিয়েছি।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নটা পূরণ করতে হবে। তার জন্য সবচেয়ে বেশি দরকার মানুষের বাসস্থান, মানুষের অধিকার নিশ্চিত করা এবং মানুষের জীবনটাকে সুন্দর করে গড়ে তোলা। সে লক্ষ্য নিয়েই আমরা পদক্ষেপ নিই। তা ছাড়া আমরা দেখেছি শুধু আমাদের দেশই নয়, বিশ্বের সব দেশেই যখন নগরায়ণ শুরু হয়, তখন কিন্তু সেটা যদি সুপরিকল্পিতভাবে হয়, তাহলে কোনো অসুবিধা হয় না।
‘কিন্তু যখন এটা শুরু হয় তখন সেটা পরিকল্পনা মাফিক হয় না। কাজেই নগরায়ণের চাপে একদিকে আমরা যেমন কৃষিজমি হারাই, অন্যদিকে বনায়ন ধ্বংস হয়, পরিবেশ নষ্ট হয়। এটা খুব একটা স্বাভাবিক নিয়মই ছিল। কিন্তু আমরা সরকারে আসার পর থেকে আমাদের প্রচেষ্টাই ছিল ভূমির ব্যবহার, ভূমি উন্নয়ন এবং ভূমিকে যথাযথভাবে রক্ষা করা। যেমন কৃষিজমি রক্ষা করা, আবার মানুষের বসতিও সুন্দরভাবে গড়ে তোলা। প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে মানুষকে রক্ষা করা এসব বিষয় মাথায় রেখেই আমরা বিভিন্ন পদক্ষেপ নিই।’
তিনি বলেন, ‘ভূমি ব্যবহারের জন্য যে একটা নীতিমালা প্রয়োজন, আমাদের নির্বাচনি ইশতেহারেও এটা আমরা যুক্ত করেছিলাম। ২০০১ সালে আমরা সে ধরনের একটি নীতিমালা প্রণয়নও করি। ১৯৯৬ সালে আমরা যখন সরকার গঠন করি, তখনই আমরা কিছু পদক্ষেপ নিই।
‘২৮টি মৌলিক বিষয় এতে সংযোজন করি। একটি জাতীয় ভূমি ব্যবহার কমিটিও আমরা সে সময় গঠন করেছিলাম।’
অধিগ্রহণের জমি ব্যবহারে আর সমস্যা হবে না
দেশের সরকারি সব জমির তথ্যভান্ডার তৈরির ফলে এখন থেকে অধিগ্রহণ করা জমিতে প্রকল্প নিতে আর কোনো সমস্যা হবে না বলে আশা প্রকাশ করেছেন সরকারপ্রধান।
তিনি বলেন, ‘দেশের সায়রাত মহাল অর্থাৎ যেখানে জলাভূমি আছে সেগুলোর ডিজিটাল ডেটাবেজ ছিল না। এর জন্য এগুলোর তথ্য পেতে দীর্ঘ সময় লাগে। যেকোনো প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে গেলে সবচেয়ে বেশি সমস্যা হয় এই ভূমি নিয়ে।
‘কোথায় ভূমি পাওয়া যাবে, সেগুলোর মালিকানা খোঁজা, তারপর অর্থ পরিশোধ করা…অনেক ঝামেলা। ডিজিটাইজড হলে আর ডাটাবেজ থাকলে কোথায় কোন জমি আছে, কী অবস্থায় আছে, সেটা এই ভূমি তথ্য থেকে সব পাওয়া যাবে। এতে কাজগুলো করতে সুবিধা হবে। ভবিষ্যতে উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন আরও সহজতর হবে।’
সরকারপ্রধান বলেন, ‘আরেকটা সমস্যা ছিল, ডাটাবেজ না থাকার কারণে অনেক সময় অনেক দপ্তর বা সংস্থা তাদের কত জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে বা কোথায় আছে, তা জানতে পারত না।
‘ফলে আবার নতুন জমি অধিগ্রহণের জন্য…আর যেকোনো প্রকল্প হলে একটু নতুন জমি অধিগ্রহণের বিষয়ে অনেকের আবার আকাঙ্ক্ষাটাও বেশি থাকে। এ রকম একটি মানসিকতা আমি লক্ষ করি। কিন্তু এখন যেহেতু একটি ভূমি ব্যাংক হয়ে যাচ্ছে, এখন আর অধিগ্রহণকৃত জমি ব্যবহারে কোনো সমস্যা হবে না।’
তিনি বলেন, ‘নতুন পদ্ধতিতে রেকর্ডগুলো সুরক্ষিত থাকবে। হার্ড কপিও যেমন থাকবে, আবার ডিজিটাল পদ্ধতিতেও সফট কপি থাকবে। তথ্য পেতে আর কোনো অসুবিধা হবে না।
‘এই সেবা নিশ্চিত করতে ইউনিয়ন পর্যায়ে ১৪৯৮টি ভূমি অফিস নির্মাণের প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। এর মধ্যে ৯৯৫টির নির্মাণকাজ সম্পন্ন হয়েছে। আশা করি বাকিগুলিও খুব দ্রুত শেষ হবে।’
আরও পড়ুন:রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (রাকসু) ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (চাকসু) নির্বাচন সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে অনুষ্ঠিত হবে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী।
তিনি বলেন, এসব নির্বাচন নিয়ে কোনো উদ্বেগ নেই, ভালোভাবেই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে বলে আশা করছি। এজন্য আপনাদের (সাংবাদিক) সাহায্য ও সহযোগিতা দরকার।
আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে সচিবালয়ে রাকসু ও চাকসু নির্বাচন-২০২৫ উপলক্ষে সার্বিক প্রস্তুতি ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি বিষয়ক সভা শেষে ব্রিফিংয়ে তিনি এসব কথা বলেন।
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (জাকসু) নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। খুব তাড়াতাড়ি রাকসু ও চাকসু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। আজ তাদের সঙ্গে আলাপ করেছি। তারা দেশের সবচেয়ে উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত, শুধু দেশেই না বিদেশেও উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত । যারা ভোট দেবে তারাও উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত।
তিনি বলেন, ‘তাদের অভিজ্ঞতা আজ শেয়ার করলাম। যেহেতু আমাদের একটা জাতীয় নির্বাচন আছে ফেব্রুয়ারিতে, এই নির্বাচনগুলো দেখে আমাদের কিছু অভিজ্ঞতা হচ্ছে। সেটা আমরা জাতীয় নির্বাচনে কীভাবে প্রয়োগ করতে পারবো সেজন্য আজকে বসেছিলাম।’
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, তারা আজ ভালো ভালো সাজেশন দিয়ে গেছে। সেই সাজেশন আমরা ভবিষ্যতে কাজে লাগাবো। একইসঙ্গে নিজেদের মধ্যে আলোচনায় তাদেরও উপকার হয়েছে। যেহেতু দুইটা নির্বাচন হয়েছে। সেখানে নির্বাচনে কী করতে হবে, ছোটখাটো ভুল-ত্রুটি থাকলে সেগুলো কীভাবে সমাধান করা হবে, এসব নিয়ে বিস্তারিত কথা হয়েছে।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, সভায় তারা কোনো ধরনের শঙ্কার কথা জানায়নি।
আজকের সভায় কি ধরনের সাজেশন এসেছে-এমন প্রশ্নের জবাবে উপদেষ্টা বলেন, নির্বাচনের বিষয়ে তারা বলেছে- কতগুলো সেন্টার হওয়া দরকার, ভোট গণনা কীভাবে হবে, কালি কীভাবে ব্যবহার করতে হবে, এসব নিয়ে কথা হয়েছে। দ্রুত ফল ঘোষণার জন্যও কি ব্যবস্থা নেয়া যায়, আলোচনা হয়েছে। ভোটারদের ছবিযুক্ত আইডি কার্ড ও ভোটার তালিকা যেন স্বচ্ছ থাকে এসব বিষয় নিয়ে কথা হয়েছে।
ব্রিফিংয়ে শিক্ষা উপদেষ্টা সি আর আবরার বলেন, রাকসু ও চাকসু নির্বাচন যাতে সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে অনুষ্ঠিত হয়, এসব বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে। ডাকসু ও জাকসু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। এ দুটি নির্বাচন থেকে অনেক কিছু শনাক্ত হয়েছে। এসব নির্বাচনে কোন বিষয়গুলো কাজ করেছে বা কোন বিষয়গুলো কাজ করেনি, তার একটি ধারণা পাওয়া গেছে।
তিনি বলেন, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আমন্ত্রণে আমরা এখানে এসেছি। আজকের সভায় ফলপ্রসূ আলোচনা হয়েছে। এ দুটি নির্বাচন নিয়ে শিক্ষার্থীদের ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনা আছে। ভালো নির্বাচন হবে বলে আশা করছি।
ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিনজনের বিরুদ্ধে জুলাই-আগস্টে ছাত্র জনতার গণঅভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ৪৭ তম সাক্ষী হিসেবে জবানবন্দি পেশ করেছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির আহ্বায়ক ও জুলাই আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়া নাহিদ ইসলাম।
বিচারপতি গোলাম মর্তুজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এ আজ জবানবন্দি পেশ শেষ করেন নাহিদ। তিনি গতকাল জবানবন্দি পেশ শুরু করেন।
আজ বিকেলে তাকে জেরা করবেন এই মামলায় পলাতক শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমির হোসেন।
এ মামলায় প্রসিকিউসন পক্ষে আজ চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম ও গাজী এসএইচ তামিম শুনানি করেন। সেই সাথে অপর প্রসিকিউটররা শুনানিতে উপস্থিত ছিলেন।
উক্ত মামলায় পলাতক শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে ছিলেন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমির হোসেন। এ মামলায় গ্রেফতার হয়ে পরে রাজসাক্ষী হওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ।
মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলায় শেখ হাসিনা, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ও সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে গত ১০ জুলাই অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১।
একপর্যায়ে এ মামলায় দোষ স্বীকার করে ঘটনার সত্যতা উদঘাটনে (অ্যাপ্রোভার) রাজসাক্ষী হতে সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের আবেদন মঞ্জুর করেন ট্র্যাইব্যুনাল। পরবর্তীকালে এ মামলার ৩৬ তম সাক্ষী হিসেবে সাক্ষ্য দেন রাজসাক্ষী পুলিশের সাবেক আইজিপি চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুন।
এ মামলাটি ছাড়াও শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে ট্রাইব্যুনালে আরও দুটি মামলা রয়েছে। এর মধ্যে একটি মামলায় আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে গুম-খুনের ঘটনায় তাকে আসামি করা হয়েছে। অন্য মামলাটি হয়েছে রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হত্যাকাণ্ডের ঘটনায়।
গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান দমনে আওয়ামী লীগ সরকার, এর দলীয় ক্যাডার ও সরকারের অনুগত প্রশাসনসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে বলে একের পর এক অভিযোগ জমা পড়ে। দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে এসব অপরাধের বিচার কাজ চলছে
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতার বলেছেন, পরিবারে পুরুষের সঙ্গে নারী জেলেদেরও কার্ড থাকতে হবে। তিনি বলেন, সরকারের দেওয়া জেলে কার্ডে পুরুষ জেলেদের নামই আসে, মাত্র ৪ শতাংশ সেখানে নারী। পরিবারে একজন চাকরি করলে তিনিই চাকরিজীবী হোন কিন্তু যারা মাছ ধরে তার পুরো পরিবার এ কাজে যুক্ত। এ প্রক্রিয়ায় বেশিরভাগ সময় নারীদের বেশি কাজ করতে হয়। তাই পুরুষ জেলেদের সঙ্গে নারীদেরও কার্ড দেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে।
উপদেষ্টা আজ বুধবার সকালে রাজধানীর প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁও হোটেলে বেসরকারি গবেষণা ও উন্নয়ন সংস্থা সেন্টার ফর ন্যাচারাল রিসোর্স স্টাডিজ (সিএনআরএস) আয়োজিত “টেকসই মৎস্য ব্যবস্থাপনা বিষয়ক জাতীয় নীতি সংলাপ”-এ প্রধান অতিথির বক্তৃতায় এসব কথা বলেন।
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা বলেন, এ সেমিনার এসে দায়িত্ব বেড়ে গেছে। আমাদের জেলেদের বিশেষ করে নারী জেলেদের নিয়ে আরো বেশি কাজ করতে হবে। এখন পর্যন্ত নারীদেরকে কৃষকের স্বীকৃতি পাওয়ার জন্য লড়াই করতে হচ্ছে। আর নারী জেলেদের কথা তো বলাই বাহুল্য। অথচ নারী জেলেরা তার পরিবার পরিজনের জন্য নদীতে মাছ ধরে। স্বামীর অবর্তমানে সংসার চালায়।
মৎস্য উপদেষ্টা বলেন, "এ পেশায় পুরো পরিবারকে নিয়ে কাজ করতে হয়। মান্তা সম্প্রদায়ের দুঃখ দুর্দশার কথা শুনে খুব কষ্ট পেলাম।" জেলে সম্প্রদায়ের আইনগত সমস্যা নিয়ে উপদেষ্টা বলেন, সাগরে মাছ ধরতে গিয়ে ঝড় তুফানে অনেক জেলে মারা যায়, কেউ হারিয়ে যায়, সেসব পুরুষের হদিস না থাকায় ব্যাংকের টাকাও তুলতে পারে না তাদের স্ত্রীরা। তা ছাড়া নারীকে বিধবা ভাতাও দেওয়া যায় না। এসব আইনি জটিলতা দূর করতে হবে।
তিনি বলেন, "আমাদের আইনগুলো পুরুষদের কথা চিন্তা করে করা। সেখানে নারীদের স্থান খুব কম। আর আগের মৎস্য আইনও একই ধরনের। তাই মৎস্য আইনের খসড়া ২০২৫ -এ আমরা এসকল সমস্যার সমাধানে দৃষ্টি দিয়েছি। আর নারীদের স্বীকৃতি দিলে হলে সংখ্যার স্বীকৃতি দিতে হবে। অথচ আমাদের তালিকায় নারীজেলের সংখ্যা খুবই নগন্য, মাত্র ৪ শতাংশ। কিন্তু সমাজে অসংখ্য নারী জেলে রয়েছে। এসব ঘাটতি পূরণে আমরা কাজ করছি। "
অমৎস্যজীবীরা মৎস্যজীবীর কার্ড নিয়ে গেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমরা আগের তালিকা অনুসন্ধান করে দেখেছি অমৎস্যজীবীরা মৎস্যজীবীর কার্ড নিয়ে গেছে। এখন সেগুলো বাতিল করা হয়েছে। আমরা চাই যেন প্রকৃত জেলেরা কার্ড পেতে পারে। সেইসঙ্গে যে পরিবারে পুরুষ জেলের কার্ড থাকবে সেখানে নারীদেরও থাকতে হবে।
কাঁকড়া ও ঝিনুক মানুষের খাদ্যের অংশ এটিকে বন অধিদপ্তরের সংজ্ঞা থেকে বের করতে হবে বলে মন্তব্য করেন তিনি। তা ছাড়া যারা কীটনাশক ব্যবহার করে মাছ ধরছে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। জলমহাল ইজারা সম্পর্কে উপদেষ্টা বলেন, জলমহালের কাছের মানুষের নামে অন্যরা জলমহাল ইজারা নেয়। এক্ষেত্রে জৈবভিত্তিক ইজারা দিতে হবে, অর্থাৎ এ পেশার সঙ্গে জড়িত জেলেদের দিতে হবে। বাওড়ে ইজারা জেলেদের দেওয়ার কথা নিশ্চিত হচ্ছে, তবে হাওর নিয়েও ভূমি মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে কথা চলছে। যাতে প্রকৃত জেলেরা তা পায়।
নিজেদের সীমাবদ্ধতার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, মাছ ধরা নিষিদ্ধ করা সময়ে যতজনকে ভিজিএফ কার্ডের আওতায় সহযোগিতা দেওয়া দরকার তা দেওয়া সম্ভব হয় না। এর পরিমাণ ও সংখ্যা বাড়ানোর জন্য আমরা অর্থ মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছি। আমরা একটি বৈষম্যহীন সমাজ গড়ে তুলতে চাই।
বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মৎস্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ড. মো. আব্দুর রউফ। তিনি বলেন, নারী শ্রমিকরা পুরুষের চেয়ে ৩০ শতাংশ কম মজুরি পায়। তা ছাড়া আমাদের জলমহাল ইজারা রাজস্বভিত্তিক দেওয়া হয়। এটি বাতিল করে জাল যার জলা তার নীতিতে নিতে হবে। জন্মনিবন্ধন ও এনআইডি কার্ড নিশ্চিত করে জেলে কার্ড দেওয়া হবে। বর্তমানে আমাদের নিবন্ধনে ১৭ লাখ জেলের মধ্যে ৪৪ হাজার রয়েছে নারী। এ সংখ্যা আমরা বৃদ্ধি করতে হবে।
এসময় স্বাগত বক্তব্য রাখেন সিএনআরএস এর পরিচালক মি. এম. আনিসুল ইসলাম। এমপাওয়ারিং উমেন থ্রু সিভিল সোসাইটি অ্যাক্টর্স ইন বাংলাদেশ (ইডাব্লিউসিএসএ) প্রকল্পের পরিচিতি উপস্থাপন করেন অক্সফাম বাংলাদেশের প্রোগ্রাম কোঅর্ডিনেটর শাহজাদী বেগম।
সংলাপে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সিএনআরএস-এর পরিচালক ড. এম. আমিনুল ইসলাম এবং জাগো নারী টিম লিডার রিসার্চ আহমেদ আবিদুর রেজা খান।
সংলাপ শেষে মুক্ত আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়, যেখানে নারী মৎস্যজীবীদের ক্ষমতায়ন ও টেকসই মৎস্য ব্যবস্থাপনা জোরদারে বিভিন্ন সুপারিশ উপস্থাপিত হয়।
সংলাপে সরকারি কর্মকর্তা, গবেষক, উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা, সিভিল সোসাইটি, শিক্ষাবিদ এবং উপকূলীয় অঞ্চলের মৎস্যসম্প্রদায়ের প্রতিনিধিরা অংশগ্রহণ করেন।
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেছেন, গত বছরের চেয়ে এবার পূজা শান্তিপূর্ণ ও উৎসবমুখর পরিবেশে করতে সরকার বদ্ধপরিকর।
তিনি বলেন, পূজা উপলক্ষে হামলার কোনো হুমকি নেই। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে যেকোনো পদক্ষেপ নেওয়া হবে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ভালো থাকবে।
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা আজ বুধবার রমনা কালী মন্দির পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের এ কথা বলেন। এ সময় রমনা কালী মন্দির কমিটির সভাপতি অপর্ণা রায়সহ কমিটির নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
জাহাঙ্গীর বলেন, পূজা নির্বিঘ্নে অনুষ্ঠানের জন্য ২৪ ঘণ্টা মনিটরিং করা হবে। সে কারণে একটি নতুন অ্যাপ খোলা হয়েছে। কোথাও কোনো দুর্ঘটনা ঘটলে সাথে সাথে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
পূজা শান্তিপূর্ণভাবে উদযাপনের জন্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পাশাপাশি পূজা উদযাপন কমিটিকে নজরদারি করার আহ্বান জানান স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা। তিনি বলেন, এটি ধর্মীয় অনুষ্ঠান, সে কারণে ধর্মীয় নিয়ম মেনে সবাই এক সঙ্গে কাজ করতে হবে।
তিনি আরো বলেন, বিগত সরকারের সময় ২ কোটি টাকা পূজা উপলক্ষে বরাদ্দ দেওয়া হতো। বর্তমান সরকার তা থেকে বাড়িয়ে গত বছর এ লক্ষ্যে ৪ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছিল; এবার সেটি থেকে বাড়িয়ে ৫ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছে। পূজা মণ্ডপের সংখ্যাও বৃদ্ধি করা হয়েছে। প্রয়োজনে আরো সহায়তা করা হবে।
তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মোঃ মাহফুজ আলম বলেছেন, যেসব শিশু জুলাই গণঅভ্যুত্থানে শহিদ হয়েছে, তাদের লেখা ও স্মৃতিচিহ্ন নিয়ে 'নবারুণ' পত্রিকার বিশেষ সংখ্যা প্রকাশ করতে হবে। এ বিষয়ে দ্রুত উদ্যোগ গ্রহণ করতে উপদেষ্টা চলচ্চিত্র ও প্রকাশনা অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের প্রতি আহ্বান জানান। বুধবার (১৭ই সেপ্টেম্বর) ঢাকার তথ্য ভবনে চলচ্চিত্র ও প্রকাশনা অধিদপ্তর প্রকাশিত কিশোর মাসিক পত্রিক 'নবারুণ'-এর লেখকদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় তিনি এই আহ্বান জানান।
'নবারুণ' পত্রিকা নিয়ে কাজ করার অনেক সুযোগ রয়েছে উল্লেখ করে উপদেষ্টা বলেন, এই পত্রিকায় শিশু-কিশোরদের আঁকা ছবি ও লেখা গুরুত্বসহকারে প্রকাশ করতে হবে। 'নবারুণ' পত্রিকায় শিশু-কিশোরদের লেখা ও ছবি বেশি পরিমাণে প্রকাশিত হলে তারা অনুপ্রাণিত হবে। এতে তাদের সৃজনশীলতা বিকশিত হবে।
মাহফুজ আলম বলেন, "যে সরকারই দায়িত্বে আসুক না কেন, শিশু-কিশোরদের ব্যাপারে নিরপেক্ষ থাকা উচিত।" তিনি ভাষা আন্দোলন, মহান মুক্তিযুদ্ধ, চব্বিশের গণঅভ্যুত্থান-সহ আর্থসামাজিক বিভিন্ন বিষয়ের ওপর লেখালিখি করার জন্য লেখকদের প্রতি অনুরোধ জানান।
'নবারুণ' পত্রিকা ডিজিটাল পদ্ধতিতে সংরক্ষণের ওপর গুরুত্বারোপ করে তিনি বলেন, প্রকাশনার শুরু থেকে (১৯৭০ খ্রিষ্টাব্দ) এ পর্যন্ত 'নবারুণ' পত্রিকার সকল সংখ্যা ডিজিটাল পদ্ধতিতে সংরক্ষণ করতে হবে এবং তা জনগণের জন্য উন্মুক্ত রাখতে হবে। এতে পাঠক অনলাইনে পুরাতন সংখ্যা পড়ে সমৃদ্ধ হতে পারবেন।
'নবারুণ' পত্রিকার কলেবর বাড়ানোর তাগিদ দিয়ে উপদেষ্টা বলেন, 'নবারুণ' পত্রিকায় নতুন লেখকদের জন্য আলাদা বিভাগ চালু করা উচিত। পত্রিকার প্রতি সংখ্যায় কমপক্ষে পাঁচ জন নতুন লেখকের লেখা প্রকাশের জন্য তিনি কর্তৃপক্ষকে পরামর্শ দেন। তিনি শিশু-সাহিত্যিকদের নিয়ে দিনব্যাপী একটি কর্মশালা আয়োজনের উদ্যোগ গ্রহণের জন্য চলচ্চিত্র ও প্রকাশনা অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের প্রতি আহ্বান জানান।
সভায় তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা বলেন, যেসব লেখক ৪০-৫০ বছর ধরে লিখছেন, তাঁদের লেখা 'নবারুণ' পত্রিকায় ধারাবাহিকভাবে প্রকাশ করতে হবে। এতে পত্রিকা আরও সমৃদ্ধ হবে। তিনি 'নবারুণ' পত্রিকার লেখক-সম্মানি বাড়াতে কর্তৃপক্ষকে উদ্যোগ নেওয়ার তাগিদ দেন।
সভায় 'নবারুণ' পত্রিকার লেখকরা তাঁদের মতামত তুলে ধরেন। তাঁরা 'নবারুণ'-কে একটি অসাধারণ ও সাহসী পত্রিকা হিসেবে আখ্যায়িত করেন। তাঁরা পত্রিকাটির মানোন্নয়নে বেশ কিছু প্রস্তাব উপস্থাপন করেন।
মতবিনিময় সভায় বক্তব্য দেন চলচ্চিত্র ও প্রকাশনা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক খালেদা বেগম। সভার শুরুতে 'নবারুণ' পত্রিকা বিষয়ে তথ্যচিত্র উপস্থাপনা করেন পত্রিকার সম্পাদক ইসরাত জাহান। মতবিনিময় সভাটি সঞ্চালন করেন চলচ্চিত্র ও প্রকাশনা অধিদপ্তরের সিনিয়র সম্পাদক শাহিদা সুলতানা।
প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস আগামী বছরের ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে অবাধ, সুষ্ঠু, স্বচ্ছ ও উৎসবমুখর জাতীয় নির্বাচন আয়োজনের প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেছেন।
আজ বুধবার ঢাকায় রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় ইউরোপীয় পার্লামেন্ট সদস্য (এমইপি) মুনির সাতোরির নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধিদলের সঙ্গে বৈঠকে তিনি এ কথা বলেন।
প্রধান উপদেষ্টা প্রতিনিধিদলকে জানান, ‘আমরা ইতোমধ্যেই নির্বাচনের সময়সূচি ঘোষণা করেছি। নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে ফেব্রুয়ারির শুরুতে, রমজানের ঠিক আগে।’
তিনি উল্লেখ করেন, জনসাধারণ বিশেষ করে তরুণদের মধ্যে নির্বাচনী উৎসাহ বাড়ছে, কারণ দীর্ঘদিন পর—কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ে তিন দশকেরও বেশি সময় পর—ছাত্র সংসদ নির্বাচন আবার শুরু হয়েছে।
তিনি বলেন, ‘জাতীয় নির্বাচন হবে শান্তিপূর্ণ, সুষ্ঠু, স্বচ্ছ ও উৎসবমুখর।’ তিনি যোগ করেন, কিছু শক্তি এখনো নির্বাচন বিলম্বিত করার চেষ্টা করছে, তবে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার নির্ধারিত সময়ে নির্বাচন আয়োজনের ব্যাপারে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ।
প্রধান উপদেষ্টা আশা প্রকাশ করেন, তরুণ ভোটাররা এবার রেকর্ড সংখ্যায় ভোটাধিকার প্রয়োগ করবে, কারণ ১৫ বছরেরও বেশি সময় পর অনেকেই প্রথমবারের মতো ভোট দেবে।
তিনি বলেন, ‘ফেব্রুয়ারির নির্বাচন বাংলাদেশের জন্য এক নতুন সূচনা বয়ে আনবে। এটি আমাদের ইতিহাসে এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা করবে—জাতির জন্য এক নতুন যাত্রা।’
এক ঘণ্টাব্যাপী আলোচনায় প্রধান উপদেষ্টা ও ইউরোপীয় আইনপ্রণেতারা অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সংস্কার উদ্যোগ, বাংলাদেশের উন্নয়ন ও গণতান্ত্রিক রূপান্তরে ইউরোপীয় ইউনিয়নের অব্যাহত সমর্থন এবং চলমান রোহিঙ্গা মানবিক সংকট নিয়ে মতবিনিময় করেন।
আগামী নির্বাচন বাংলাদেশে এক গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত হয়ে উঠতে পারে বলে আশা প্রকাশ করেন ইউরোপীয় আইনপ্রণেতারা। একজন আইনপ্রণেতা প্রধান উপদেষ্টা ও তাঁর সরকারের গত ১৪ মাসের ‘অসাধারণ’ প্রচেষ্টার প্রশংসা করেন।
একজন ডাচ আইনপ্রণেতা মন্তব্য করেন, বাংলাদেশ কতিপয় দেশের মধ্যে অন্যতম, যেখানে ‘ঘটনাগুলো সঠিক পথে এগোচ্ছে।’
প্রধান উপদেষ্টা ইউরোপীয় ইউনিয়নের অবিচল সমর্থনের জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন এবং বাংলাদেশে অবস্থানরত এক মিলিয়নেরও বেশি রোহিঙ্গা শরণার্থীর জন্য বাড়তি তহবিল প্রদানের আহ্বান জানান।
বিশেষ করে সম্প্রতি অর্থাভাবের কারণে বন্ধ হয়ে যাওয়া রোহিঙ্গা ক্যাম্পের স্কুলগুলো পুনরায় চালু করতে সহায়তা প্রদানের অনুরোধ জানান তিনি।
প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ দূত লুৎফে সিদ্দিকী অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের গৃহীত গুরুত্বপূর্ণ শ্রম সংস্কারগুলো তুলে ধরে বলেন, এসব পদক্ষেপ বাংলাদেশ-ইইউ সম্পর্ক আরও জোরদার করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
দক্ষিণ কোরিয়ার সিউলে ওয়েস্টিন পারনাস হোটেলে আজ থেকে ০৩(তিন) দিনব্যাপী (১৬-১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫) গ্লোবাল ইনফ্রাস্ট্রাকচার কো-অপারেশন কনফারেন্স (জিআইসিসি)-২০২৫ অনুষ্ঠিত হচ্ছে। আজ সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সেতু বিভাগের সচিব ও বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষের নির্বাহী পরিচালক জনাব মোহাম্মদ আবদুর রউফ গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের পক্ষে প্রতিনিধিত্ব করেন। সম্মেলনে সেতু সচিব সেতু বিভাগের বিভিন্ন প্রকল্পের উপর প্রেজেন্টেশন উপস্থাপন করেন। সেতু সচিব প্রেজেন্টেশনে উল্লেখ করেন সেতু বিভাগের কয়েকটি প্রকল্পে কোরিয়ান ইডিসিএফ/ইডিপিএফ (EDCF/EDPF) অর্থানয়ের সুযোগ রয়েছে। বাংলাদেশের পরিবহন খাতে দক্ষিণ কোরিয়ার কাজ করার অনেক সুযোগ রয়েছে।
জিআইসিসি-২০২৫ সম্মেলনের লক্ষ্য কোরিয়ান নির্মাণ সংস্থাগুলোর জন্য আন্তর্জাতিক বাজারে সম্প্রসারণের সুযোগ তৈরি করা এবং বিভিন্ন দেশের প্রকল্প বাস্থবায়নকারীদের সাথে কৌশলগত সম্পর্ক স্থাপন করা। এটি মূলত একটি বিজনেস-টু-বিজনেস প্ল্যাটফর্ম হিসেবে কাজ করে, যেখানে কোরিয়ান কোম্পানিগুলো বিদেশী সরকার, প্রজেক্ট ডেভেলপার এবং আন্তর্জাতিক আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সাথে সরাসরি যোগাযোগ করতে পারে। সম্মেলনে প্রায় ৫০০ জন অংশগ্রহণকারী উপস্থিত ছিলেন, যার মধ্যে ৩০টি দেশের মন্ত্রী ও উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা, আন্তর্জাতিক আর্থিক প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরা এবং কোরিয়ান শীর্ষস্থানীয় নির্মাণ সংস্থাগুলির কর্মকর্তারা রয়েছেন।
এই সম্মেলনের মূল উদ্দেশ্যগুলো হলো: বিভিন্ন দেশের আসন্ন অবকাঠামো প্রজেক্ট সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ ও আদান-প্রদান, বিভিন্ন দেশের মন্ত্রী, উচ্চপদস্থ সরকারি কর্মকর্তা, এবং আন্তর্জাতিক আর্থিক প্রতিষ্ঠানের নির্বাহীদের সাথে সম্পর্ক স্থাপন, নতুন প্রজেক্টে অংশগ্রহণের জন্য চুক্তি এবং সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর এবং কোরিয়ান উন্নত প্রযুক্তি যেমন স্মার্ট সিটি, হাই-স্পিড রেল, এবং স্মার্ট পোর্ট সিস্টেমের সাথে পরিচিতি করা।
এছাড়াও সম্মেলনের বাকী অংশে বিভিন্ন দেশের অবকাঠামো উন্নয়নের চ্যালেঞ্জ এবং সুযোগ নিয়ে আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞদের প্যানেল আলোচনা, বিভিন্ন দেশের প্রজেক্ট ব্রিফিং, ব্যক্তিগত বিজনেস মিটিং, কোরিয়ান শীর্ষস্থানীয় কোম্পানিগুলো তাদের নতুন প্রযুক্তি প্রদর্শন করবে।
মন্তব্য