গবেষণাধর্মী ও স্বতন্ত্র চিকিৎসা পদ্ধতি ফিজিওথেরাপি। নানা ধরনের শারীরিক সমস্যা বা রোগে সব বয়সী মানুষ এ থেরাপি নিতে পারে। এতে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার আশঙ্কা নেই বললেই চলে। এ কারণে দিন-দিন জনপ্রিয় হচ্ছে চিকিৎসার এ পদ্ধতিটি।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, ফিজিওথেরাপিস্টরা পুনর্বাসন চিকিৎসায় মানবদেহের কর্মক্ষমতা, শারীরিক সঞ্চালন, চলন ব্যাপ্তির নিয়ন্ত্রণ, সর্বোচ্চ শারীরিক সক্ষমতার উন্নতি, ব্যথাজনিত উপসর্গ নিরাময় এবং শারীরিক ব্যাধি, অক্ষমতা ও প্রতিবন্ধিতার চিকিৎসা ও প্রতিরোধ করে থাকেন।
ফিজিওথেরাপিস্টের পরিধি বিস্তৃত। তিনি মাস্কুলোস্কেলেটাল, নিউরোলজিক্যাল, পেডিয়াট্রিক, জেরিয়াট্রিক ও কার্ডিওপালমোনারি রোগীদের চিকিৎসা দেন।
কারা দেন ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা
সরকার স্বীকৃত বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ফিজিওথেরাপি চিকিৎসাবিজ্ঞানে স্নাতক ডিগ্রিধারী চিকিৎসকরাই ফিজিওথেরাপিস্ট হিসেবে গণ্য হন। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এবং বাংলাদেশ রিহ্যাবিলিটেশন কাউন্সিল-২০১৮-এর নির্দেশনা অনুযায়ী, ফিজিওথেরাপি চিকিৎসকরা স্বাধীনভাবে পেশার চর্চা করেন।
ফিজিওথেরাপিস্ট রোগীর পর্যালোচনা ও সমস্যা নির্ণয়ের মাধ্যমে উপযুক্ত চিকিৎসা দেন। তিনি লব্ধজ্ঞান প্রয়োগের মাধ্যমে চিকিৎসা দেয়ায় সম্পূর্ণ স্বাধীন ও স্বনির্ভর।
ফিজিওথেরাপি চিকিৎসার ক্ষেত্র
ফিজিওথেরাপিস্টরা স্বতন্ত্রভাবে চিকিৎসা দেন। একজন ফিজিওথেরাপিস্ট যেসব রোগ বা সমস্যায় চিকিৎসা দেন, সেগুলো হলো মাস্কুলোস্কেলেটাল ও অর্থোপেডিকস কন্ডিশন, নিউরোলজিক্যাল বা স্নায়ুতান্ত্রিক কন্ডিশন, রেসপিরেটরি বা শ্বাস-প্রশ্বাসের সঙ্গে সম্পৃক্ত কন্ডিশন, পেডিয়াট্রিক বা শিশুদের সমস্যাজনিত কন্ডিশন, স্পোর্টস বা খেলাধুলায় আঘাতজনিত সমস্যা, গায়নোকলজিক্যাল কন্ডিশন, মেডিক্যাল ও সার্জিক্যাল কন্ডিশন, জেরিয়াট্রিক বা বার্ধক্যজনিত সমস্যা, পেলিয়াট্রিক কেয়ার এবং আর্গোনমিক্যাল উপদেশ।
যে কারণে দেয়া হয় ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা
যেসব কারণে ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা দেয়া হয় এর অন্যতম হলো ব্যথা উপশম, অস্থিসন্ধির সচলতা, নড়ন ক্ষমতা বৃদ্ধি ও যথাযথ অবস্থা বজায় রাখা; মাংসপেশির শক্তিবৃদ্ধি এবং যথাযথ অবস্থা বজায় রাখা, যেকোনো অঙ্গ বিকলাঙ্গতা থেকে রক্ষা করা, শারীরিক ভারসাম্যের উন্নতি করা, মাসলটোনকে স্বাভাবিক করা, ফুসফুসের স্বাভাবিক কর্মক্ষমতা ও এর ধারণক্ষমতা যথাযথ বজায় রাখা এবং উন্নতি করা, শ্বাসকষ্ট উপশমের ব্যবস্থা করা, স্নায়ুতান্ত্রিক যেকোনো রোগাক্রান্ত শিশুর স্বাভাবিক বৃদ্ধি ত্বরান্বিত করা (যেমন: সেরিব্রাল পালসি, স্পাইনা বাইফিডা ও অটিজম) এবং জেরিয়াট্রিক ও গাইনোকলজিক্যাল সমস্যা প্রতিরোধ ও প্রশমন।
ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা প্রসারে প্রতিবন্ধকতা
সরকারি জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের হাসপাতালে প্রথম শ্রেণির পদে স্নাতক ডিগ্রিধারী ফিজিওথেরাপি চিকিৎসক নিয়োগ না হওয়ায় দেশের প্রান্তিক জনগণ সঠিক এবং মানসম্পন্ন ফিজিওথেরাপি চিকিৎসাসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।
এ ছাড়া সারা দেশের প্রতিবন্ধী ও প্রতিবন্ধিতার ঝুঁকিতে থাকা রোগীরা ভুয়া এবং নিবন্ধনহীন ফিজিওথেরাপি সেন্টার থেকে অপচিকিৎসার শিকার হচ্ছেন।
যথাযথ সরকারি তদারকি না থাকায় যেখানে-সেখানে ফিজিওথেরাপি সেন্টার গড়ে উঠছে। অনেক ভুয়া ডিগ্রিধারীরা ফিজিওথেরাপি চিকিৎসার নামে অপচিকিৎসা প্রদান করছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
এর ফলে প্রতিবন্ধী ও প্রতিবন্ধিতার ঝুঁকিতে থাকা রোগীদের নানা স্বাস্থ্যঝুঁকিসহ মৃত্যুহার বাড়ার শঙ্কা তৈরি হচ্ছে।
মানসম্পন্ন ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অভাবে বিপুল চাহিদার পরও পর্যাপ্ত ফিজিওথেরাপি চিকিৎসক তৈরি হচ্ছে না। এতে রোগীরা মানসম্পন্ন ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।
ফিজিওথেরাপি চিকিৎসার প্রসারে করণীয়
সরকারি জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে হাসপাতালে প্রথম শ্রেণির পদে স্নাতক ডিগ্রিধারী ফিজিওথেরাপি চিকিৎসক নিয়োগ দেয়ার মাধ্যমে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর মধ্যে মানসম্পন্ন ও কার্যকর চিকিৎসা পৌঁছে দেয়ার পদক্ষেপ নিতে হবে।
যথাযথ আইন প্রয়োগ করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর সহযোগিতায় যেখানে-সেখানে গড়ে ওঠা মান ও নিবন্ধনহীন ফিজিওথেরাপি সেন্টার এবং ভুয়া ডিগ্রিধারীদের ফিজিওথেরাপি অপচিকিৎসার বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নিতে হবে।
সরকারি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিজিওথেরাপি ও পুনর্বাসন বিভাগ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে মেধাবী শিক্ষার্থীদের ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা শিক্ষায় অন্তর্ভুক্ত করার মাধ্যমে চিকিৎসা সেবার মান উন্নত করতে হবে।
পক্ষাঘাতগ্রস্তদের পুনর্বাসনকেন্দ্রে (সিআরপি) ফিজিওথেরাপি বিভাগের প্রধান ডা. মুহাম্মদ আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘বাংলাদেশে প্রায় তিন হাজার গ্র্যাজুয়েট ফিজিওথেরাপিস্ট আছেন, কিন্তু ঢাকার শহরেই প্রায় ২,৩০০ ফিজিওথেরাপি সেন্টার আছে, যেখানে নামেমাত্র ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা সেবা দেয়া হয়।
‘এরই পরিপ্রেক্ষিতে যদি গ্র্যাজুয়েট ফিজিওথেরাপিস্ট, ডিপ্লোমা ফিজিওথেরাপি এবং ফিজিওথেরাপি অ্যাসিস্ট্যান্ট নিবন্ধন নম্বর করার ব্যবস্থা করা হয়, তাহলে সাধারণ জনগণ সঠিক ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা সেবা পাবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘সরকারিভাবে উপজেলা হাসপাতাল থেকে টারশিয়ারি পর্যায়ের হাসপাতালে ফিজিওথেরাপি পদে নিয়োগ হলে প্রান্তিক জনগোষ্ঠী ফিজিওথেরাপির সঠিক চিকিৎসা পাবেন।’
দেশে গত ২৪ ঘণ্টায় ৩১২টি নমুনা পরীক্ষা করে ১৩ জনের শরীরে করোনাভাইরাস শনাক্ত করা হয়েছে। তবে এ সময়ের মধ্যে কেউ মারা যায়নি। আজ মঙ্গলবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সমন্বিত নিয়ন্ত্রণ কক্ষ থেকে পাঠানো প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানানো হয়। এ দিন প্রতি ১০০ নমুনায় শনাক্তের হার ৪ দশমিক ১৭ শতাংশ বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানায়, ‘২০২০ সালের ১৮ মার্চ থেকে এখন পর্যন্ত দেশে করোনায় মৃত্যু ২৯ হাজার ৫২১ জন। এর মধ্যে চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে এখন পর্যন্ত মৃত্যু হয়েছে ২২ জনের। এছাড়া ২০২০ সালের ৮ মার্চ থেকে মোট শনাক্ত হয়েছে ২০ লাখ ৫২ হাজার ১২৭ জন। এর মধ্যে গত জানুয়ারি থেকে এখন পর্যন্ত শনাক্ত হয়েছেন ৫৮২ জন।
এডিশ মশাবাহিত ডেঙ্গু রোগে আক্রান্তের সংখ্যা ক্রমেই বেড়ে চলেছে। সারা দেশে মশা নিধন কার্যক্রমের দুর্বলতার কারণে ডেঙ্গু পরিস্থিতি উদ্বেগজনক মোড় নিয়েছে। চলতি বছরের মে মাসের তুলনায় জুন মাসে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা প্রায় তিনগুণ বেড়েছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের দেওয়া পরিসংখ্যান বিশ্লেষণে দেখা যায়, বছরের শুরুর দিকে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা তুলনামূলকভাবে কম ছিল। জানুয়ারিতে ১,১৬১ জন, ফেব্রুয়ারিতে ৩৭৪, মার্চে ৩৩৬ এবং এপ্রিলে ৭০১ জন হাসপাতালে ভর্তি হন। তবে মে মাস থেকে পরিস্থিতির অবনতি হতে শুরু করে এবং জুনে এসে তা ভয়াবহ রূপ নেয়। আশঙ্কার বিষয় হলো, ঢাকার বাইরের জেলাগুলোতে, বিশেষ করে বরগুনায়, ডেঙ্গুর প্রকোপ অনেক বেশি।
এদিকে চলতি বছরের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত দেশে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা ১০ হাজার ২৯৬ জনে পৌঁছেছে। সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে আরও ৪২৯ জন আক্রান্ত হয়েছেন। এ সময়ে কারও মৃত্যু হয়নি।
সোমবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুম থেকে পাঠানো এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, নতুন শনাক্ত ৪২৯ জন ডেঙ্গুরোগীর মধ্যে— বরিশাল বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ১৪৯ জন; চট্টগ্রাম বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ৫৭ জন; ঢাকা বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ৬১ জন; ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন ৪২ জন; ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন ৪৫ জন; খুলনা বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ২১ জন ও রাজশাহী বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ৫৪ জন।
গত ২৪ ঘণ্টায় সুস্থ হয়ে হাসপাতাল ছাড়পত্র পেয়েছেন ৩৫৮ জন রোগী। চলতি বছরে এ পর্যন্ত মোট ৯ হাজার ৮৭ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী সুস্থ হয়ে হাসপাতাল ছেড়েছেন।
চলতি বছরের ৩০ জুন পর্যন্ত ডেঙ্গু আক্রান্তদের মধ্যে পুরুষ ৫৯ দশমিক ১ শতাংশ এবং নারী ৪০ দশমিক ৯ শতাংশ।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানায়, গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে কোনো মৃত্যুর ঘটনা না ঘটলেও চলতি বছরে এখন পর্যন্ত ৪২ জন মারা গেছেন। মৃতদের মধ্যে একজন রাজশাহী বিভাগের বাসিন্দা।
এদিকে বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করে বলছেন, এডিস মশার বিস্তার এখনই নিয়ন্ত্রণ করা না গেলে পরিস্থিতি নাগালের বাইরে চলে যেতে পারে। বিশেষ করে রাজধানীর বাইরের এলাকাগুলোতে জরুরি ভিত্তিতে ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের কীটতত্ত্ববিদ অধ্যাপক কবিরুল বাশার গণমাধ্যমকে বলেন, 'মে মাসের তুলনায় জুনে আক্রান্তের সংখ্যা তিনগুণ হয়েছে। এই ধারা অব্যাহত থাকলে জুলাইয়ে এ সংখ্যা চার থেকে পাঁচগুণ এবং আগস্টে দশগুণ পর্যন্ত বাড়তে পারে।'
প্রসঙ্গত, ২০২৪ সালের জানুয়ারি থেকে ৩০ জুন পর্যন্ত দেশে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১০ হাজার ২৯৬ জনে। এর আগে ২০২৩ সালের পুরো বছরে দেশে ডেঙ্গু আক্রান্ত হন ৩ লাখ ২১ হাজার ১৭৯ জন এবং মারা যান ১ হাজার ৭০৫ জন। ২০২৪ সালের পুরো বছরের (১ জানুয়ারি–৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত) সর্বমোট হিসাব অনুযায়ী, ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ১ লাখ ১ হাজার ২১৪ জন এবং মৃতের সংখ্যা ছিল ৫৭৫ জন।
করোনা সংক্রমণের নতুন ঢেউয়ের মধ্যে দেশে আরও ২১ জনের শরীরে প্রাণঘাতী ভাইরাসটি শনাক্ত করা হয়েছে।
রবিবার (২৯ জুন) সকাল ৮টা থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টায় এসব শনাক্ত হয়েছে। তবে, নতুন করে কোনো মৃত্যুর ঘটনা ঘটেনি এই সময়ের মধ্যে।
সোমবার (৩০ জুন) স্বাস্থ্য সেবা বিভাগ এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এই তথ্য জানিয়েছে।
এতে বলা হয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় ৩৮৪ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। পরীক্ষার বিপরীতে শনাক্তের হার ৫ দশমিক ৪৭ শতাংশ।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, এ পর্যন্ত ২০ লাখ ৫২ হাজার ১১৪ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে এখন পর্যন্ত মারা গেছেন ২২ জন। আর দেশে ভাইরাসটিতে মোট মৃত্যু হয়েছে ২৯ হাজার ৫২১ জনের।
গত শনিবার সকাল ৮টা থেকে রোববার সকাল ৮টা পর্যন্ত (একদিনে) ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন আরও ৩৮৩ জন রোগী। এসব রোগীদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ১৩৬ জন আক্রান্ত বরিশাল বিভাগে। একইসঙ্গে এই সময়ে ডেঙ্গুতে আরও একজনের মৃত্যু হয়েছে।
রোববার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুম থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
এতে বলা হয়েছে, হাসপাতালে নতুন ভর্তিদের মধ্যে বরিশাল বিভাগে ১৩৬ জন, চট্টগ্রাম বিভাগে ৫৫ জন, ঢাকা বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ৪৮, ঢাকা উত্তর সিটিতে ৩২ জন, ঢাকা দক্ষিণ সিটিতে ২৮, খুলনা বিভাগে ৪১ জন, ময়মনসিংহ বিভাগে ১০ জন এবং রাজশাহী বিভাগে ৩৩ জন নতুন রোগী ভর্তি হয়েছেন।
এদিকে গত এক দিনে সারাদেশে ৩৪৯ জন ডেঙ্গু রোগী হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র পেয়েছেন। এ নিয়ে চলতি বছর ছাড়পত্র পেয়েছেন ৮ হাজার ৭২৮ জন।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, এবছরের জানুয়ারি থেকে এখন পর্যন্ত সব মিলিয়ে ৯ হাজার ৮৬৭ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। তবে বছরের এখন পর্যন্ত ডেঙ্গুতে মৃত্যু হয়েছে ৪২ জনের।
সারাদেশে করোনা ভাইরাসের নতুন সাব-ভ্যারিয়েন্ট এর সংক্রমণ বৃদ্ধি পাওয়ায় পর সিলেট এ ভাইরাসে আক্রান্ত একজনের মৃত্যু হয়েছে।
শনিবার দুপরে এ তথ্যটি নিশ্চিত করেছে সিলেট বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। নতুন করে করোনার আক্রমন শুরুর পর সিলেটে প্রথম এই কোন রোগী মারা গেলেন।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানায়, করোনায় আক্রান্ত ৬৯ বছর বয়েসি পুরুষ ১৯ জুন শহীদ শামসুদ্দিন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। বৃহস্পতিবার রাতে মারা যান তিনি। এছাড়া সিলেটে এ পর্যন্ত করোনায় আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ২০ জন বলে জানায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন শহীদ শামসুদ্দিন হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডাক্তার মো. মিজানুর রহমান জানান, নিহত ব্যক্তির বাড়ি সিলেট সদর উপজেলায়। তিনি করোনা ছাড়াও আরও অন্যান্য জটিল রোগে আক্রান্ত ছিলেন।
চট্টগ্রামে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে আরও একজনের মৃত্যু হয়েছে; গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে শনাক্ত হয়েছেন আরও ছয়জন। এ নিয়ে চলতি জুন মাসেই জেলায় করোনায় মৃতের সংখ্যা সাতজনে দাঁড়াল।
২৮ জুন চট্টগ্রাম সিভিল সার্জন কার্যালয় থেকে পাঠানো সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টার প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়।
প্রতিবেদনে বলা হয়, জেলার মিরসরাই উপজেলার বাসিন্দা সালেহা বেগম (৪০) নামে এক নারী শুক্রবার নগরের জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। করোনায় আক্রান্ত হওয়ার আগে থেকেই তিনি হৃদরোগসহ নানা জটিলতায় ভুগছিলেন।
এদিকে, সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় ৯১টি নমুনা পরীক্ষা করে ছয়জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। তাদের মধ্যে চারজন নগরের এবং দুজন বিভিন্ন উপজেলার বাসিন্দা।
শনাক্ত হওয়া রোগীদের মধ্যে নগরের শেভরন ডায়াগনস্টিক সেন্টারে চারজন এবং এভারকেয়ার হাসপাতালে দুজনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছিল।
সিভিল সার্জন কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, চট্টগ্রামে চলতি জুন মাসে মোট ১৩০ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। আক্রান্তদের মধ্যে ৬৬ জন পুরুষ, ৬৩ জন নারী ও একজন শিশু রয়েছে।
মশাবাহীত রোগ ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে গত ২৪ ঘণ্টায় বরিশালের দুই জেলায় দুজনের মৃত্যু হয়েছে। একই সময় গোটা বিভাগের সরকারি হাসপাতালগুলোতে ভর্তি হয়েছেন আরও ১০৫ জন আক্রান্ত রোগী। এ নিয়ে বর্তমানে বিভাগের ছয় জেলার সরকারি হাসপাতালগুলোতে ভর্তি থেকে চিকিৎসা নিচ্ছেন ৪৩৫ জন। মৃত্যুবরণ করা দুজন হলেন- বরগুনা জেলার বেতাগী উপজেলার কালিকাবাড়ি এলাকার বাসিন্দা আ. করিম (৫০) ও পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলার টিয়াখালী ইউনিয়নের রাজপাড়া এলাকার মো. ইউসুফ খন্দকার (৭২)। এর মধ্যে আ. করিম বরিশাল শেরইবাংলা চিকিৎসা মহাবিদ্যালয় হাসপাতালে ও বৃদ্ধ মো. ইউসুফ খন্দকার কলাপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। গতকাল শুক্রবার দুপুরে বরিশাল বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ডা. শ্যামল কৃষ্ণ মণ্ডল এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, বর্তমানে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হওয়ার সংখ্যা উদ্বেগ ও আশঙ্কাজনক। এ পরিস্থিতি থেকে বেরোতে হবে। চিকিৎসার চেয়ে প্রতিরোধ জরুরি। তাই মশার বিস্তার রোধ করতে বাড়ির আশেপাশে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করতে হবে। মশার কামড় থেকে নিজেকে রক্ষায় ব্যবস্থা নিতে হবে।
বরিশাল বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্যানুযায়ী, চলতি বছরের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত বরিশাল বিভাগের ছয় জেলার বিভিন্ন হাসপাতালে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে ভর্তি হয়েছেন ৪ হাজার ৩০৫ জন। এদের মধ্যে মৃত্যু হয়েছে ১১ জনের। বর্তমানে চিকিৎসা নিচ্ছেন ৪৩৫ জন।
বরগুনায় আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। মৃত ১১ জনের মধ্যে ছয়জনেরই বরগুনার বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু হয়েছে। শুধু মৃত্যুই নয় এ জেলায় আক্রান্তের সংখ্যাও বেশি, বরগুনা জেলায় এ পর্যন্ত ২ হাজার ৬৩২ জন ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন।
মন্তব্য