প্রায় এক শ ব্যাংক অ্যাকাউন্টে শতাধিক কোটি টাকা লেনদেন করা মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের তৃতীয় শ্রেণির এক কর্মকর্তা আতিকুর রহমান নিজেকে ব্যবসায়ী হিসেবে দাবি করেছেন।
দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) বলছে, দেশের ১৫টি ব্যাংকে আতিকুর রহমানের ৯৭টি ব্যাংক হিসাবের তথ্য পাওয়া গেছে। এসব ব্যাংকে ২০০৭ সাল থেকে চলতি বছরের ২৮ মার্চ পর্যন্ত ১১০ কোটি ৬৯ লাখ ৯২ হাজার ৩৯২ টাকা লেনদেন হয়েছে।
সোমবার দুপুরে দুদকে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে আতিকুর জানান, চাকরির আগে থেকেই তিনি একজন ব্যবসায়ী। এসব টাকা তার ব্যবসার টাকা। এ ছাড়া বিভিন্ন ব্যাংকে ১০ কোটি টাকার ওপরে ঋণ রয়েছে।
দুদক সচিব মুহা. আনোয়ার হোসেন হাওলাদার সাংবাদিকদের বলেন, ‘আইডিয়ালের কর্মচারী ও প্রশাসনিক কর্মকর্তা আতিকুরকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। তার কাছে সম্পদের হিসাব চাওয়া হয়েছিল, তিনি তা দিয়ে গেছেন। এখন আমরা এগুলো ধরে ধরে অনুসন্ধান ও তদন্ত করব।’
গাজীপুরের কালিগঞ্জের এক কৃষক পরিবারের সন্তান আতিকুর। শিক্ষাগত যোগ্যতায় একজন ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার। ২০০৪ সালে মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজে তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারী হিসেবে উপসহকারী প্রকৌশলী পদে যোগ দেন তিনি। ২০১৫ সালে প্রশাসনিক কর্মকর্তা হিসেবে অতিরিক্ত দায়িত্ব পান। যদিও এমপিওভুক্ত উচ্চ মাধ্যমিক কলেজে প্রশাসনিক কর্মকর্তার কোনো পদ নেই।
তবে আইডিয়ালে চাকরি পাওয়ার পরই আঙুল ফুলে কলাগাছ হতে থাকে আতিকুরের। কোটিপতিদের তালিকায় নাম উঠেছে অনেক আগে। ঢাকায় একাধিক বাড়ি-ফ্ল্যাটের মালিক তিনি; ব্যবহার করেন দামি গাড়ি।
দুদকের প্রাথমিক অনুসন্ধানে দেখা গেছে, আইডিয়াল স্কুলে যোগ দেয়ার আগে আতিকুর কনকর্ড নামে একটি ডেভেলপার প্রতিষ্ঠানে চাকরি করতেন। আইডিয়াল স্কুলে ভর্তি বাণিজ্যের সঙ্গে জড়িয়ে আয়কৃত অর্থ দিয়ে তিনি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছেন।
তার নামে রামপুরার বনশ্রী মসজিদ মার্কেটে বিশ্বাস নামে লাইব্রেরি, আফতাবনগরে বি ব্লকে বিশ্বাস বাজার নামে একটি প্রতিষ্ঠান, রামপুরা বনশ্রী এলাকার ৫ নম্বর সড়কের ১২ নম্বর প্লটে ভিশন-৭১ নামে একটি রিয়েল এস্টেট প্রতিষ্ঠান, আফতাবনগরে চারটি বাড়ি এবং বনশ্রীতে আরেকটি বাড়ির সন্ধান পাওয়া গেছে। এ ছাড়া, বনশ্রী এলাকায় খান ফিলিং অ্যান্ড এলপিজি, আফতাবনগরে ন্যাশনাল ফ্রায়েড কিচেন নামে একটি প্রতিষ্ঠান রয়েছে।
দুদকের প্রধান কার্যালয়ে দুদকের সহকারী পরিচালক মাহবুবুল আলম আতিক সোমবার আতিকুরকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন।
পরে সাংবাদিকদের আতিকুর বলেন, ‘আমার বাবা কৃষক, আমি কৃষকের ছেলে। আমার বাড়তি কোনো সম্পত্তি নেই, যা আছে ডেভেলপার ব্যবসা থেকে অর্জিত। বনশ্রী ও আফতাব নগরে যে বাড়ি সেটা আমার নয়, ডেভেলপার কোম্পানির।’
অভিযোগ রয়েছে, মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজে অবৈধ ভর্তিসহ সব বাণিজ্যের হোতা এই আতিকুর রহমান। তিনটি ক্যাম্পাসের প্রায় ২৭ হাজার শিক্ষার্থীর ড্রেস (পোশাক) তৈরি, ক্যানটিন, লাইব্রেরি সবই তার নিয়ন্ত্রণে। এমনকি স্কুলের সামনে ফুটপাতে শতাধিক দোকান বসিয়েও তিনি আয় করেন মোটা অঙ্কের টাকা। এ ছাড়া, প্রতিষ্ঠানে যত ধরনের কেনাকাটা, উন্নয়ন ও সংস্কারকাজ হয় তার সবই করেন আতিক। দরপত্রেও অংশ নেয় নামে-বেনামে তারই প্রতিষ্ঠান। সেখানে চলে বড় ধরনের লুটপাট।
গত ১২ বছরে প্রতিষ্ঠানে পাঁচ শতাধিক শিক্ষক-কর্মচারী নিয়োগ দেয়া হয়েছে। বেশির ভাগ শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে ৫ থেকে ১০ লাখ টাকা এবং কর্মচারী নিয়োগে ২ থেকে ৫ লাখ টাকা পর্যন্ত লেনদেন হয়েছে। এসব নিয়োগের একটি অংশ আতিকুরের পকেটেও এসেছে বলে অভিযোগ আছে।
এক প্রশ্নের জবাবে আতিকুর বলেন, ‘ভর্তি বাণিজ্যের যে অভিযোগের কথা বলছেন সেটা আমি করি না। অন্য কেউ করে থাকতে পারেন। আমি চুক্তিভিত্তিক চাকরি করি। আমি প্রশাসনিক কর্মকর্তা নই।’
গত ৮ আগস্ট আতিকুর রহমান খানের বিরুদ্ধে বিদেশযাত্রার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে আদালত। আতিকুর রহমানের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ ওঠার পর গত ৩ আগস্ট শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে তা তদন্তের নির্দেশ দেয়া হয়।
আরও পড়ুন:ঈদ উপলক্ষে লম্বা ছুটিতে বেশ কিছুদিন ধরে একপ্রকার ফাঁকা হয়ে গেছে শহর ঢাকা। সড়কগুলোতে নেই যানবাহনের চাপ; স্কুল-কলেজ, অফিস-আদালতও বন্ধ; রাস্তায় লোকজনও হাতেগোনা। এই অবস্থায় গত কয়েকদিন বৃষ্টি কমে গেলেও রাজধানীর বাতাসের মানে খুব বেশি অবনতি হয়নি।
বৃহস্পতিবার (১২ জুন) সকাল ১০টার দিকে ঢাকার বাতাসের একিউআই স্কোর ছিল মাত্র ৬৬। আর দূষিত শহরের তালিকায় ঢাকার অবস্থান আরও অবাক হওয়ার মতো। প্রতিনিয়ত বায়ুদূষণে শীর্ষ শহরগুলোর তালিকায় জায়গা করে নিলেও ঢাকার অবস্থান আজ ৫৫তম।
কণা দূষণের একিউআই মান যদি ০ থেকে ৫০-এর মধ্যে থাকে, তবে তা ‘ভালো’ হিসেবে বিবেচিত হয়। ৫১ থেকে ১০০-এর মধ্যে হলে সেটি ‘মাঝারি’। ঢাকার বাতাস আজ মাঝারি হলেও ‘ভালো’ থেকে খুব বেশি দূরে নয়।
এই সময়ে ৬৭ একিউআই স্কোর নিয়ে দূষিত শহরের তালিকার ৫২তম স্থানে ছিল স্পেনের বার্সেলোনা, ৫০তম স্থানে সুইজারল্যান্ডের বেয়ার্ন, ৬৮ স্কোর নিয়ে ৪৯তম স্থানে যুক্তরাষ্ট্রের সল্ট লেক সিটি, ৭০ ও ৭১ স্কোর নিয়ে ৪৪ ও ৪৩তম স্থানে নিউইয়র্ক ও ওয়াশিংটন ডিসি, ৭৩ স্কোর নিয়ে ৩৮তম স্থানে কানাডার টরেন্টো, ৮০ স্কোর নিয়ে ২৭তম দূষিত শহর শিকাগো, ৯৯ স্কোর নিয়ে ১৫তম স্থানে ইতালির রোম এবং ১২৮ স্কোর নিয়ে তালিকার সপ্তম স্থানে রয়েছে মিলান।
তবে ১৬৮ একিউইউ স্কোর নিয়ে এই সময়ে বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত শহর ছিল ভারতের দিল্লি। ১৬২, ১৫৬ ও ১৩৭ স্কোর নিয়ে এর পরের তিন দূষিত শহর যথাক্রমে ইরাকের বাগদাদ, পাকিস্তানের লাহোর ও সৌদি আরবের রিয়াদ।
একিউআই স্কোর ১০১ থেকে ১৫০ হলে ‘সংবেদনশীল গোষ্ঠীর জন্য অস্বাস্থ্যকর’ বলে গণ্য করা হয়। এই পর্যায়ে সংবেদনশীল ব্যক্তিদের দীর্ঘ সময় বাইরে পরিশ্রম না করার পরামর্শ দেওয়া হয়। এ ছাড়া ১৫১ থেকে ২০০ হলে তা ‘অস্বাস্থ্যকর’, ২০১ থেকে ৩০০ হলে ‘খুব অস্বাস্থ্যকর’ এবং ৩০১-এর বেশি হলে তা ‘বিপজ্জনক’ হিসেবে বিবেচিত হয়, যা জনস্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ঝুঁকি সৃষ্টি করে।
বাংলাদেশে একিউআই সূচক নির্ধারিত হয় পাঁচ ধরনের দূষণের ভিত্তিতে— বস্তুকণা (পিএম১০ ও পিএম২.৫), নাইট্রোজেন ডাই-অক্সাইড (এনও₂), কার্বন মনো-অক্সাইড (সিও), সালফার ডাই-অক্সাইড (এসও₂) ও ওজোন।
ঢাকা দীর্ঘদিন ধরেই বায়ুদূষণজনিত সমস্যায় ভুগছে। শীতকালে এখানকার বায়ুমান সাধারণত সবচেয়ে খারাপ থাকে, আর বর্ষাকালে তুলনামূলকভাবে উন্নত হয়।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) জানিয়েছে, বায়ুদূষণের কারণে প্রতিবছর বিশ্বে আনুমানিক ৭০ লাখ মানুষের মৃত্যু হয়। এসব মৃত্যুর প্রধান কারণ হলো স্ট্রোক, হৃদরোগ, দীর্ঘস্থায়ী শ্বাসকষ্ট (সিওপিডি), ফুসফুসের ক্যান্সার এবং শ্বাসযন্ত্রের তীব্র সংক্রমণ।
এডিস মশার বিস্তার রোধে তাৎক্ষণিক ফল পেতে ১৪ জুন থেকে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন(ডিএসসিসি) এলাকায় দ্বিগুণহারে কীটনাশক প্রয়োগের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
এডিস মশার বিস্তার রোধে করণীয় নির্ধারণ ও কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন ও করোনা প্রতিরোধে ডিএসসিসি প্রশাসক মো. শাহজাহান মিয়ার সভাপতিত্বে আজ রাজধানীর ওয়াসা ভবনের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত এক সভায় এই সিদ্ধান্ত হয়।
সভায় অ্যাডাল্টিসাইডিং কার্যক্রমে (ফগার মেশিন দ্বারা পরিচালিত) বর্তমানে ব্যবহৃত ৩০ লিটার কীটনাশকের পরিবর্তে দ্বিগুণ পরিমাণ অর্থাৎ ৬০ লিটার কীটনাশক প্রতিদিন ব্যবহারের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।
এ ছাড়া অঞ্চলভিত্তিক ডেঙ্গু মনিটরিং টিম গঠন ও জনবল ঘাটতি পূরণে উদ্যোগসহ জনগুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়।
সভায় মশক কর্মীদের সকাল ও বিকেলে নিয়মিত উপস্থিতি নিশ্চিত করা, সঠিক অনুপাতে কীটনাশক প্রয়োগ যাচাই, মোবাইল কোর্ট পরিচালনা এবং মশক কর্মী দ্বারা বাড়ির ভিতর, আঙিনা ও ছাদের জমানো পানিসহ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা নিশ্চিতকরণে আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তাকে আহ্বায়ক এবং সহকারী স্বাস্থ্য কর্মকর্তাকে সদস্য সচিব করে অঞ্চল ভিত্তিক ডেঙ্গু মনিটরিং টিম গঠনের সিদ্ধান্ত হয়।
এছাড়া, ডেঙ্গু ও করোনা বিষয়ে ডিএসসিসি সহকারী স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. ফারিয়া ফয়েজকে ফোকাল পয়েন্ট কর্মকর্তা হিসেবে মনোনীত করা হয়।
সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী চলতি মাসের মধ্যে কীটতত্ত্ববিদদের সমন্বয়ে নগর ভবনে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণ বিষয়ক সেমিনার অনুষ্ঠিত হবে এবং প্রতিদিনের ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীদের হালনাগাদ তথ্য ডিএসসিসির ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হবে। মশক নিধনে জনবল ঘাটতি পূরণে নিয়োগ প্রক্রিয়া অব্যাহত রাখাসহ ডেঙ্গু ও করোনা রোধে জনসচেতনতা বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।
সভায় ডিএসসিসি প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ড. মো. জিল্লুর রহমান, সচিব মুহাম্মদ শফিকুল ইসলাম, প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা এয়ার কমডোর মো. মাহাবুবুর রহমান তালুকদার, প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. নিশাত পারভীনসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
রাজধানীর মোহাম্মদপুর থানাধীন বিভিন্ন এলাকায় বিশেষ অভিযান পরিচালনা করে বিভিন্ন অপরাধে জড়িত ৫ জনকে গ্রেপ্তার করেছে ডিএমপির মোহাম্মদপুর থানা পুলিশ।
আজ মঙ্গলবার ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের মোহাম্মদপুর জোনের সহকারী পুলিশ কমিশনার (এসি) এ কে এম মেহেদী হাসান গণমাধ্যমকে এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
গ্রেপ্তাররা হলেন- সেলিম (৪৫), রফিক (৪০), সাদ্দাম (৩০), উজ্জ্বল (৩২) ও শামীম (২৫)।
গতকাল সোমবার (৯জুন) মোহাম্মদপুর থানা এলাকার বিভিন্ন স্থানে বিশেষ অভিযান পরিচালনা করে তাদেরকে গ্রেপ্তার করা হয়।
এদের মধ্যে রয়েছে ওয়ারেন্টভুক্ত আসামি ১জন, মাদক মামলায় ১জন, দূস্যতার মামলায় ১জন এবং অন্যান্য মামলায় ২জন।
গ্রেপ্তার হওয়া আসামিদের আদালতে পাঠানো হয়েছে।
রাজধানীর পল্লবী থানার মিল্লাত ক্যাম্প এলাকায় পূর্বশত্রুতার জেরে এক যুবককে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে।
আজ মঙ্গলবার সকাল ৭টার দিকে পুলিশ খবর পেয়ে তার মরদেহ উদ্ধার করেছে।
নিহত ওই যুবকের নাম রাকিবুল হাসান সানি (২৯)। ভোর ৪টা থেকে ৫টার মধ্যেই এই হত্যাকাণ্ড ঘটে থাকতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। তার বিরুদ্ধে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড ও মাদক চক্রে জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে।
এ বিষয়ে পল্লবী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শহীদুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা সকাল সাতটার দিকে খবর পেয়ে মরদেহ উদ্ধার করেছি। পরে মরদেহ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। এ ঘটনায় মামলার প্রস্তুতি চলছে এবং পরিবারের পক্ষ থেকে অভিযোগ জানানো হবে।’
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, মাদক বিক্রির আধিপত্য বিস্তার ও দ্বন্দ্বকে কেন্দ্র করে প্রতিপক্ষের লোকজন তাকে হত্যা করেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। তবে রাতের আঁধারে হত্যাকারীরা কীভাবে ঘটনাটি ঘটিয়েছে; তা এখনও স্পষ্ট নয়।
নিহতের পরিবারের দাবি, সানি একজন অটোরিকশাচালক ছিলেন। পরিবারের সদস্যদের অভিযোগ, গেল রমজান মাসেও একটি সংঘবদ্ধ সন্ত্রাসী চক্র তার ওপর হামলা চালিয়েছিল।
ঘটনার পর থেকে মিল্লাত ক্যাম্প এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে এবং এলাকায় পুলিশ ও সিআইডি সদস্যরা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কাজ করছেন।
গতকাল শনিবার পবিত্র ঈদুল আজহার দিনে বন্ধ থাকার পর আজ রোববার থেকে ফের চালু হয়েছে মেট্রোরেল। তবে মেট্রোতে কোরবানির পশুর চামড়া, কাঁচা বা রান্না করা মাংস পরিবহন করা যাবে না।
রোববার সকাল ৮টা থেকে মেট্রোরেল চলাচল শুরু হয়।
ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড (ডিএমটিসিএল) সূত্রে জানা যায়, আজ (রোববার) প্রতি ৩০ মিনিট পরপর ট্রেন চলছে। আগামীকাল সোমবার থেকে মেট্রোরেল সরকারি ছুটির দিনের সময়সূচি অনুযায়ী চলাচল করবে।
গত মঙ্গলবার ডিএমটিসিএলের পরিচালক (প্রশাসন) এ কে এম খায়রুল আলমের স্বাক্ষর করা এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, মেট্রোরেলে কোরবানির পশুর চামড়া, কাঁচা বা রান্না করা মাংস পরিবহন করা যাবে না। মেট্রো স্টেশনের প্রতিটি গেটে যাত্রীদের যথাযথভাবে তল্লাশি করা হবে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, কোনো যাত্রীর কাছে কাঁচা বা রান্না করা মাংস পাওয়া গেলে তাৎক্ষণিক তার মেট্রো স্টেশনে প্রবেশ আটকে দেওয়া হবে। মেট্রোরেলের নিরাপত্তা কর্মীদের এসব নির্দেশনা কঠোরভাবে বাস্তবায়ন করতেও বিজ্ঞপ্তিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
ঈদুল আজহার দ্বিতীয় দিনেও রাজধানী ঢাকার বিভিন্ন জায়গায় কোরবানির দৃশ্য চোখে পড়েছে।
গতকাল শনিবার ঈদের প্রথম দিন ব্যস্ততা ও চাপ সামলাতে না পেরে কিংবা কসাই সংকটের কারণে যারা কোরবানি করতে পারেননি আজ রোববার ঈদের দ্বিতীয় দিনে তারা পশু কোরবানি করছেন। নগরীর পুরান ঢাকা, লালবাগ, টিকাটুলী, মুগদা এবং বাসাবো এলাকায় সকাল থেকেই কোরবানির পশু জবাই ও মাংস প্রক্রিয়াকরণের ব্যস্ত দৃশ্য চোখে পড়েছে।
পুরান ঢাকার বংশাল এলাকায় সরেজমিনে দেখা যায়, কয়েকটি বাসার সামনে পলিথিন টানিয়ে পশু কোরবানির প্রস্তুতি চলছে। আবার অনেকেই ইতোমধ্যে পশু কোরবানি সম্পন্ন করেছেন। তার কিছু দূরেই রাস্তার পাশে কয়েকজন তরুণ মাংস কাটছেন, পাশে দাঁড়িয়ে কসাই নির্দেশনা দিচ্ছেন। কিছু দূরে শিশু-কিশোররা দাঁড়িয়ে কোরবানির দৃশ্য দেখছে। লালবাগের বউবাজার, টিকাটুলীর জনবহুল গলি, মুগদা ও বাসাবোর অভ্যন্তরীণ বেশকিছু সড়কেও একই চিত্র দেখা যায়।
সংশ্লিষ্টরা জানান, গতকাল ঈদের দিন কসাই সংকট এবং সময় ও প্রস্তুতির অভাবে কোরবানি করতে না পেরে অনেকেই আজ করছেন। কারও কারও গরু হাট থেকে বাড়ি পৌঁছেছে ঈদের দিন রাতে। আবার কেউ কেউ ইচ্ছে করেই ভিড় এড়িয়ে আজ কোরবানি করছেন, যাতে সময় নিয়ে কাজ করতে পারেন।
এদিকে আজও পরিচ্ছন্নতা রক্ষায় সিটি করপোরেশনের তৎপরতা দেখা গেছে। ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন জানিয়েছে, কোরবানির দ্বিতীয় দিনেও পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম চলছে। ডিএনসিসির পরিচ্ছন্নতা বিভাগের এক কর্মকর্তা বলেন, যেসব এলাকায় আজ কোরবানি হচ্ছে, সেখানে আমরা নির্ধারিত পয়েন্টে কর্মী পাঠিয়ে বর্জ্য অপসারণ করছি। ঈদের তিন দিনই আমরা মাঠে থাকব।
ধর্মীয় দিক থেকে ঈদুল আজহার দ্বিতীয় দিন অর্থাৎ ১১ জিলহজও কোরবানির জন্য গুরুত্বপূর্ণ। ইসলামের বর্ণনায় এ দিনটি মর্যাদাপূর্ণ বলে উল্লেখ রয়েছে। নবী করিম (সা.) বলেছেন, আল্লাহর কাছে সবচেয়ে শ্রেষ্ঠ দিন হলো কোরবানির দিন, এরপরের দিনটি। তাই অনেকেই আজও কোরবানি করছেন। শরিয়ত অনুযায়ী ১০ থেকে ১২ জিলহজ, মোট তিন দিন কোরবানি করার বিধান রয়েছে। এই সময়ের মধ্যে যে কোনো দিন কোরবানি দেওয়া বৈধ, তবে প্রথম দিন কোরবানি করা সবচেয়ে উত্তম। সময়মতো কোরবানি না হলে তার পরিবর্তে সদকা করারও নির্দেশ রয়েছে।
ঈদুল আজহায় এবার টানা ১০দিন ছুটিতে রাজধানী ছেড়ে নিজ বাড়িতে ঈদ কাটাতে গেছেন অনেকে। অন্য যেকোনো সময়ের তুলনায় এখন ঢাকায় মানুষজন অনেক কম। তাছাড়া, যানবাহনও কম। তবে কম মানুষ কিংবা কম যানবাহনের ধোঁয়াও ঢাকার বাতাসের মানে তেমন পরিবর্তন আনতে পারেনি।
আজ রোববার ঈদের দ্বিতীয় দিনে অনেকটা ফাঁকা ঢাকার বাতাস সংবেদনশীলদের জন্য অস্বাস্থ্যকর। ১১টা ২৮ মিনিটে ঢাকার বাতাসের একিউআই স্কোর ছিল ১৩০, এই স্কোর নিয়ে দূষিত বাতাসের শহরের তালিকায় ৫ম স্থানে অবস্থান করছে ঢাকা। তাই ঢাকায় অবস্থানরত সংবেদনশীলরা রয়েছেন ঝুঁকিতে।
প্রথমত, ঢাকায় মানুষ কম এখন, যান চলাচলও নেই তেমন। আবার মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে বৃষ্টিপাতও হয়েছে টানা কয়েকদিন। তা সত্ত্বেও বাতাসের মানের অবনতি নিয়ে চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
এদিন ১৬৬ স্কোর নিয়ে তালিকার শীর্ষে রয়েছে চিলির সান্তিয়াগো, দ্বিতীয় ও তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে ভারতের দিল্লি ও যুক্তরাষ্ট্রের ডেট্রয়েট। শহর দুটির স্কোর ১৫৩ ও ১৪৫।
কণা দূষণের একিউআই মান যদি ০ থেকে ৫০-এর মধ্যে থাকে, তবে তা ‘ভালো’ হিসেবে বিবেচিত হয়। ৫১ থেকে ১০০-এর মধ্যে হলে ‘মাঝারি’, আর ১০১ থেকে ১৫০ হলে ‘সংবেদনশীল গোষ্ঠীর জন্য অস্বাস্থ্যকর’ বলে গণ্য করা হয়। এই পর্যায়ে সংবেদনশীল ব্যক্তিদের দীর্ঘ সময় বাইরে পরিশ্রম না করার পরামর্শ দেওয়া হয়।
একিউআই সূচক ১৫১ থেকে ২০০ হলে তা ‘অস্বাস্থ্যকর’, ২০১ থেকে ৩০০ হলে ‘খুব অস্বাস্থ্যকর’ এবং ৩০১-এর বেশি হলে তা ‘বিপজ্জনক’ হিসেবে বিবেচিত হয়, যা জনস্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ঝুঁকি সৃষ্টি করে।
বাংলাদেশে একিউআই সূচক নির্ধারিত হয় পাঁচ ধরনের দূষণের ভিত্তিতে— বস্তুকণা (পিএম১০ ও পিএম২.৫), নাইট্রোজেন ডাই-অক্সাইড (এনও₂), কার্বন মনো-অক্সাইড (সিও), সালফার ডাই-অক্সাইড (এসও₂) ও ওজোন।
ঢাকা দীর্ঘদিন ধরেই বায়ুদূষণজনিত সমস্যায় ভুগছে। শীতকালে এখানকার বায়ুমান সাধারণত সবচেয়ে খারাপ থাকে, আর বর্ষাকালে তুলনামূলকভাবে উন্নত হয়।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) জানিয়েছে, বায়ুদূষণের কারণে প্রতিবছর বিশ্বে আনুমানিক ৭০ লাখ মানুষের মৃত্যু হয়। এসব মৃত্যুর প্রধান কারণ হলো স্ট্রোক, হৃদরোগ, দীর্ঘস্থায়ী শ্বাসকষ্ট (সিওপিডি), ফুসফুসের ক্যান্সার এবং শ্বাসযন্ত্রের তীব্র সংক্রমণ।
মন্তব্য