উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল এবং ভারতের গজলডোবার সবকটি গেট খুলে দেয়ায় দেশের প্রধান প্রধান নদ-নদীর পানি বেড়েছে। এতে দেশের উত্তর ও মধ্য অঞ্চলে বন্যা পরিস্থিতি দেখা দিয়েছে। পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন ৩ লাখ ৩০ হাজারেরও বেশি মানুষ। পানি বৃ্দ্ধির পাশাপাশি বিভিন্ন অঞ্চলে দেখা দিয়েছে তীব্র ভাঙন। তলিয়ে গেছে শত শত একর ফসলি জমি।
গাইবান্ধা
জেলায় ব্রহ্মপুত্র নদের পানি বিপৎসীমার ৪৯ সেন্টিমিটার ও ঘাঘট নদীর পানি বিপৎসীমার ২১ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। তবে বিপৎসীমার নিচ দিয়ে যাচ্ছে করতোয়া ও তিস্তার পানি।
গত এক সপ্তাহ ধরে গাইবান্ধার চার উপজেলার প্রায় ৫০ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। রাস্তাঘাটসহ ঘরবাড়ি ডুবে যাওয়ায় মানবেতর জীবনযাপন করছেন বানভাসীরা।
গাইবান্ধা পানি উন্নয়ন বোর্ডের কন্ট্রোল রুমের দায়িত্বরত অপারেটর নাসরিন ময়না জানান, ভারী বর্ষণ না হলেও কয়েক দিন ধরে উজান থেকে পানি ঢুকে পড়ছে গাইবান্ধার চার নদীতে। এতে ব্রহ্মপুত্র ও ঘাঘট নদীর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। আর করতোয়া ও তিস্তার পানি বিপৎসীমার নিচে রয়েছে।
জেলার বন্যাকবলিত বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, ব্রহ্মপুত্রের পানি বেড়ে এরই মধ্যে গাইবান্ধা সদর উপজেলার কামারজানি বন্দর, সৈয়দপুর, গোঘাট ও লঞ্চঘাটসহ বেশ কিছু এলাকা প্লাবিত হয়েছে। পানি ঢুকে পড়েছে ফুলছড়ি উপজেলার ফজলুপুর, উড়িয়া, গজারিয়া ও এরেন্ডাবাড়িসহ আরও কিছু ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চলের গ্রামগুলোতে।
তাছাড়া সাঘাটা উপজেলার বাঁশহাটা, চিনিরপটল, পবনতাইড়, হলদিয়া, পালপাড়া, চকপাড়া, থৈকরপাড়া, মুন্সিরহাটসহ বেশ কিছু এলাকার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। প্লাবিত হয়েছে সুন্দরগঞ্জ উপজেলার বিস্তীর্ণ চরাঞ্চলসহ শ্রীপুর, বেলকা, কাপাসিয়া, চণ্ডিপুর এবং তারাপুর ইউনিয়নের বেশ কিছু গ্রাম।
পানি বৃদ্ধির ফলে ব্রহ্মপুত্রে দেখা দিয়েছে ব্যাপক ভাঙন। হুমকির মুখে পড়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ। স্কুল, মসজিদসহ ভাঙন আতঙ্কে রয়েছে বহু সরকারি স্থাপনা।
বানভাসীদের অনেকেই তাদের বাড়িঘর অন্যত্র সরিয়ে নিচ্ছেন। তাছাড়া এসব এলাকার চরাঞ্চলের রাস্তাঘাট, ফসলি জমিসহ শত শত হেক্টর আউশের ক্ষেত তলিয়ে গেছে।
জেলার চার নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় ব্রহ্মপুত্র বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ এলাকায় বসবাসরত মানুষ উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন। এ ছাড়া বাঁধের বেশ কয়েকটি পয়েন্ট অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। পানির চাপ বাড়লেই বাঁধের ওই অংশগুলো ভেঙে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা।
সৈয়দপুর ঘাটে আশ্রয় নেয়া রাবেয়া বেওয়া বলেন, ‘পানি বাড়তিছে। ভয়ও বাড়তিছে। ঘরবাড়ি পানিত ডুবি গেল। কেউ দেখপের আলো না। এখন হামরা কোনটে যাই। কী খাই।’
ফুলছড়ি উপজেলার উড়িয়া গ্রামের আমিনুর মিয়া বলেন, ‘ঘরবাড়ি ডুবতিছে। গরুবাছুর বাঁচাই, না নিজে বাঁচি। টংগত বসি বসি রাত কাটতিচে।’
সুন্দরগঞ্জ উপজেলার চণ্ডিপুরের মজিদ বলেন, ‘পানি যে হারে বাড়ছে, তাতে করে এবার বানের পানি সব নিয়ে যাবে। মানুষ না খেয়ে মরবে।’
নীলফামারী
নীলফামারীতে শনিবার সকাল ৯টায় ডালিয়ায় তিস্তা ব্যারাজ পয়েন্টে পানি বিপৎসীমার ২০ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। পানি কমতে থাকলেও ভাঙন আতঙ্কে দিন পার করছেন এলাকার লোকজন।
এর আগে শুক্রবার সকালে বিপৎসীমার ৩৫ সেন্টিমিটার ও বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ২৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হয়।
ব্যারাজের ভাটিতে ঝুনাগাছ চাপানী ইউনিয়নের দক্ষিণ সোনাখুলি গ্রামে তিস্তার বাঁধে আশ্রিতরা জানান, ইউনিয়নের ভেন্ডাবাড়ী গ্রামের গত রোববার রাতে তিস্তার দুই নম্বর স্পার বাঁধটির দেড় শ মিটার ভেঙে যায়। এ সময় পানিবন্দি হয়ে পড়ে ভেন্ডবাড়ীসহ ভাবনচুর, দক্ষিণ সোনাখুলি ও কুটিপাড়া গুচ্ছগ্রামের হাজারো পরিবার। পরিবার নিয়ে অনেকেই আশ্রয় নেন বাঁধসহ উঁচু স্থানে।
গত বুধবার থেকে পানি কমতে থাকলে স্বস্তি ফেরে পরিবারগুলোর মাঝে। কিন্তু বৃহস্পতিবার রাত থেকে পানি বেড়ে বিপৎসীমা অতিক্রম করায় ব্যারাজের ৪৪টি গেট খুলে দিয়ে নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করে পানি উন্নয়ন বোর্ড।
দক্ষিণ সোনাখুলি গ্রামের গৃহবধূ হালিমা বেগম বলেন, ‘এইবার দফায় দফায় নদীত পানি বাড়ে আর কমে। একটা বানের ধাক্কা সামলাইতে না সামলাইতে আরেকটা বান আইসে। এতে করি জমির সোগ আবাদ নষ্ট হইল। সামনের দিনোত হামরা খামো কী ভাববার পাচ্ছি না।’
ওই গ্রামের আবেদ আলী বলেন, ‘এই জীবনোত নয়বার ভিটা বদল করিনু। এইবার ভিটা না ভাঙিলেও নদীর বান (বাঁধ) ভাঙি চাইর একর আবাদি জমি নদীর পেটত গেইল।’
সিরাজগঞ্জ
গত ২৪ ঘণ্টায় সিরাজগঞ্জ পয়েন্টে যমুনা নদীর পানি ২ সেন্টিমিটার বেড়ে বিপৎসীমার ৬৮ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
এতে জেলার পাঁচ উপজেলার চরাঞ্চলের ২৮টি ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন লক্ষাধিক মানুষ।
সিরাজগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘যমুনায় পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র জানিয়েছে, যমুনা নদীর পানি আরও বাড়তে পারে। এতে জেলার অনেক স্থানেই বন্যা পরিস্থিতি আরও খারাপ হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।’
জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা আব্দুর রহিম নিউজবাংলাকে জানান, বন্যাকবলিত উপজেলা নির্বাহী অফিসারদের বরাত দিয়ে, এরই মধ্যে বন্যার্তদের জন্য ১৩৯টি আশ্রয়কেন্দ্র খুলে দেয়া হয়েছে। ৫টি উপজেলায় ১২৫ টন ক্ষয়রাতি চাল এবং ৫ লাখ নগদ টাকা সাহায্যও দেয়া হয়েছে।
জামালপুর
জামালপুরের ছয়টি উপজেলার ৩৯টি ইউনিয়নের ১৬৯টি গ্রাম বন্যাকবলিত হয়ে পড়েছে। দুর্যোগ মোকাবিলায় ১৫৫টি আশ্রয়কেন্দ্র খুলে দেয়া হলেও অনেকেই খোলা আকাশের নিচে উঁচু স্থানে আশ্রয় নিয়েছেন।
দেওয়ানগঞ্জের বাহাদুরাবাদ ঘাট পয়েন্টে শনিবার দুপুরে যমুনার পানি বিপৎসীমার ৫৭ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে বলে জানিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড।
জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, জেলার ২৫ হাজার পরিবার পানিবন্দি জীবনযাপন করছে। এ ছাড়া যমুনার বিভিন্ন পয়েন্টে ভাঙনের কারণে গৃহহীন হয়ে পড়েছে ৬৫টি পরিবার।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপপরিচালক সাখাওয়াৎ ইকরাম জানান, বন্যার পানিতে জেলার ৩ হাজার ৬২৩ হেক্টর জমির ফসল তলিয়ে গেছে। এর মধ্যে রোপা আমন ধান ৩ হাজার ৫৩০ হেক্টর, রোপা আমনের বীজতলা ৪৫ হেক্টর এবং বিভিন্ন শাকসবজি ৪৮ হেক্টর রয়েছে।
জেলা ত্রাণ ও পুর্নবাসন কর্মকর্তা মো. নায়েব আলী জানান, বন্যার্তদের মাঝে এরই মধ্যে ১১২ টন চাল, ৩৪ লাখ টাকা এবং এক হাজার প্যাকেট শুকনা খাবার বিতরণ করা হয়েছে।
তিনি আরও জানান, বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের তুলনায় বরাদ্দের পরিমাণ খুবই কম। তাই কর্তৃপক্ষের কাছে আরও বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে।
ফরিদপুর
পদ্মার পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় ফরিদপুর জেলার চারটি উপজেলায় বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। প্রতিদিনই প্লাবিত হচ্ছে নতুন নতুন এলাকা। একই সঙ্গে জেলার বিভিন্ন জায়গায় দেখা দিয়েছে তীব্র নদীভাঙন।
জেলা সদর, চরভদ্রাসন, সদরপুর, ভাঙ্গা ও মধুখালী উপজেলার বহু গ্রামে ফসলি জমি, রাস্তা, নিচু এলাকার বসতবাড়ি তলিয়ে গেছে। অর্ধলক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। বন্যাকবলিত এলাকাগুলোতে দেখা দিয়েছে সুপেয় পানি ও গবাদিপশুর খাদ্যসংকট।
ফরিদপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী সুলতান মাহমুদ জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় গোয়ালন্দ পয়েন্টে ৫ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে পদ্মার পানি বিপৎসীমার ৭৪ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
আলফাডাঙ্গা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তৌহিদ এলাহি জানান, স্থানীয় সংসদ সদস্য ও জেলা প্রশাসক নদীভাঙনকবলিত এলাকা পরিদর্শন করেছেন। ভাঙন রোধে জিও ব্যাগ ফেলা হচ্ছে।
ফরিদপুরের জেলা প্রশাসক অতুল সরকার জানান, পানিবন্দি মানুষের মাঝে খাদ্যসহায়তা দেয়া হচ্ছে। পর্যাপ্ত খাদ্য মজুত রয়েছে। এ ছাড়া খাদ্যের পাশাপাশি পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেটও বিতরণ করা হচ্ছে। বন্যার্তদের জন্য আশ্রয়কেন্দ্রও প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
মুন্সিগঞ্জ
মুন্সিগঞ্জের ভাগ্যকূল পয়েন্টে পদ্মার পানি বিপৎসীমার ১৯ সেন্টিমিটার আর মাওয়া পয়েন্টে ১৬ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এর ফলে পদ্মা নদীতীরবর্তী শ্রীনগর, লৌহজং, টঙ্গীবাড়ী ও মুন্সিগঞ্জ সদর উপজেলার বিভিন্ন গ্রামের নিম্নাঞ্চলে পানি ঢুকতে শুরু করেছে।
এদিকে, টঙ্গীবাড়ী উপজেলার গাড়ুরগাও, পূর্ব হাসাইল, চৌসার, বানারী, মান্দ্রা, আটিগাওসহ প্রায় ৩০টি গ্রামে বন্যার পানি প্রবেশ করেছে।
জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের অফিস সহকারী জয়নাল আবেদীন জানান, নদীতীরবর্তী নিচু এলাকাগুলোতে পানি ঢুকলেও রাস্তাঘাট এখনও পানির ওপরে রয়েছে।
আরও পড়ুন:চট্টগ্রামের কর্ণফুলী নদীতে ফিশিং বোটের ইঞ্জিন বিস্ফোরণে চারজন আহত হয়েছেন। এদের মধ্যে তিনজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। তাদের চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার দুপুরে পতেঙ্গা থানাধীন ১৫ নম্বর ঘাটে নোঙর করা একটি ফিশিং বোটে এ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে।
দগ্ধরা হলেন- ৫৫ বছর বয়সী জামাল উদ্দিন, ৪৫ বছর বয়সী মাহমুদুল করিম ও মফিজুর রহমান এবং ২৮ বছর বয়সী এমরান। এদের মধ্যে প্রথম তিনজনের শরীরের ৮০-৮৫ শতাংশ পর্যন্ত পুড়ে গিয়েছে। অন্যজনের শরীর পুড়েছে অন্তত ২০ শতাংশ।
চমেক হাসপাতালে বার্ন ও ক্যাজুয়ালটি ইউনিটের প্রধান ডা. রফিক উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘আহত চারজনের মধ্যে তিনজনের বড় ধরনের বার্ন হয়েছে। এই ধরনের রোগীদের অবস্থা ভালো থাকে না।’
চট্টগ্রাম সদরঘাট নৌ-থানার ওসি একরাম উল্লাহ বলেন, ‘মাছ ধরার ট্রলারে ইঞ্জিন থেকে সৃষ্ট আগুনে ৪ জন দগ্ধ হয়েছে। তাদেরকে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।’
স্বাধীনতা দিবসের এক অনুষ্ঠানে নাটোর-১ আসনের সংসদ সদস্য আবুল কালাম আজাদ প্রকাশ্যে দুর্নীতি করার ঘোষণা দিয়েছেন।
মঙ্গলবার সকালে লালপুর উপজেলা পরিষদের অডিটোরিয়ামে উপজেলা প্রশাসনের আয়োজিত মুক্তিযোদ্ধাদের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে দেয়া বক্তব্যের এক পর্যায়ে দুর্নীতি করার ঘোষণা দেন এ সংসদ সদস্য।
তার বক্তব্যের অংশবিশেষের একটি ভিডিও ক্লিপ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ছড়িয়ে পড়লে মুহূর্তেই তা ভাইরাল হয়ে যায়।
প্রকাশিত ওই ভিডিওতে আবুল কালাম আজাদকে বলতে শোনা যায়, ‘পাঁচটা বছর (২০১৪-২০১৮) বেতন ভাতার টাকা ছাড়া আমার কোনো সম্পদ ছিল না; আগামীতেও থাকবে না। এবার (দ্বাদশ জাতীয় সংসদ) নির্বাচনে ১ কোটি ২৬ লাখ টাকা খরচ হয়েছে। সেই টাকা আমি তুলব। যেভাবেই হোক তুলবই। এতটুক অনিয়ম আমি করবই। এটুকু অন্যায় করব, আর করব না।’
প্রকাশ্যে সংসদ সদস্যের এমন বক্তব্য বুধবার রাতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে জেলাজুড়ে আলোচনা-সমালোচনার সৃষ্টি হয়।
ওই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন লালপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) শারমিন আখতার। নিউজবাংলাকে বলেন, ‘এ বিষয়ে আমার কোনো মন্তব্য নেই। উনার বক্তব্য উনি বলেছেন, এখানে আমার কোনো কথা নেই।’
বক্তব্যর বিষয়ে সংসদ সদস্য আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘আমার বক্তব্যে এটা বোঝাতে চেয়েছি যে, অনেকেই এরকম করে। আমার বক্তব্য বিকৃত করে প্রচার করা হচ্ছে।’
এ বিষয়ে দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটি জেলা শাখার সভাপতি আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ‘সরকারি অনুষ্ঠানে প্রকাশ্যে একজন সংসদ সদস্যের এমন বক্তব্য খুব দুর্ভাগ্যজনক। সংসদ সদস্যের এমন বক্তব্যে তার সহকারী এবং দলীয় নেতা-কর্মীরা দুর্নীতিতে উৎসাহিত হবেন। এটা একদিকে যেমন পরিষ্কারভাবে শপথের লংঘন, অন্যদিকে নির্বাচনি বিধিরও লংঘন।
‘নির্বাচনি আচরণবিধি অনুযায়ী, নির্বাচনি প্রচারকাজে একজন সংসদ সদস্য ১ কোটি ২৬ লাখ টাকা ব্যয় করতে পারেন না।’
সংসদ সদস্যের কাছে গঠনমূলক বক্তব্যেরও প্রত্যাশার কথা জানান তিনি।
মানিকগঞ্জ শহরের প্রবেশপথে যানজট নিরসনে ও পথচারীদের যাতায়াতের সুবিধার্থে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ অভিযান পরিচালিত হয়েছে।
পৌরসভা কর্তৃপক্ষের উদ্যোগে বৃহস্পতিবার ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের মানিকগঞ্জ বাসস্ট্যান্ড ও পৌর সুপার মার্কেটের সামনের সড়ক ও ফুটপাত থেকে শতাধিক হকার ও অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ অভিযান করা হয়।
প্যানেল মেয়র তসলিম মিয়া জানান, দীর্ঘদিন ধরে অবৈধ অস্থায়ী কিছু ব্যবসায়ীরা ফুটপাত ও সড়কের একাংশ দখল করে ব্যবসা করে আসছেন। এতে করে শহরে যানজটের সৃষ্টি হয় এবং পথচারীদের ভোগান্তিতে পড়তে হয়। পথচারীদের সুবিধার্থে যানজট দূর করতেই এই উচ্ছেদ অভিযান।
উচ্ছেদ অভিযানে মানিকগঞ্জ সদর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট জহিরুল আলম, পৌরসভার প্যানেল মেয়র-২ মো. তসলিম মিয়া ও সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর রাজিয়া সুলতানাসহ থানা পুলিশ ও পৌরসভার কর্মচারীরা উপস্থিত ছিলেন।
ঝালকাঠির রাজাপুরে নদীর তীর থেকে এক ভ্যানচালকের মরদেহ উদ্ধার করেছে থানা পুলিশ।
স্থানীয়দের কাছ থেকে খবর পেয়ে বৃহস্পতিবার দুপুরে মরদেহটি উদ্ধার করা হয়।
প্রাণ হারানো যুবকের মামুন হোসেন, যার বয়স ২৫ বছর। তিনি রাজাপুরের পশ্চিম সাতুরিয়া গ্রামের মোকসেদ আলীর ছেলে।
ভ্যানচালক মামুন দুই দিন আগে নিখোঁজ হয়েছিলেন জানিয়ে রাজাপুর থানার ওসি আতাউর রহমান বলেন, ‘স্থানীয়দের কাছ থেকে সংবাদ পেয়ে সাতুরিয়া গ্রামের ইদুরবাড়ি এলাকায় কচা নদীর তীর থেকে মরদেহ উদ্ধার করে থানায় নেয়া হয়। লাশের ময়নাতদন্তসহ পরবর্তী সময়ে আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে, তবে এটি হত্যা নাকি দুর্ঘটনা, সেটি তদন্তে বের হবে।’
এ পুলিশ কর্মকর্তা আরও বলেন, যুবকের পরিবারের পক্ষ থেকে এখনও কেউ অভিযোগ করেনি। সুরতহাল শেষে ময়নাতদন্তের জন্য মরদেহ ঝালকাঠি সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে।
মাদারীপুরের ডাসার উপজেলার গোপালপুর ইউনিয়নের পূর্ব পূয়ালী গ্রামের আব্দুর রহিম হাওলাদারের একমাত্র ছেলে রাব্বি হাওলাদার।
২৫ বছর বয়সী রাব্বির দুটি কিডনিই নষ্ট। ডাক্তারের পরামর্শ তার কিডনি ট্রান্সপ্ল্যান্ট করতে হবে। বর্তমানে তার চিকিৎসার জন্য প্রায় ১০ লাখ টাকার প্রয়োজন বলে জানিয়েছেন চিকিৎসক।
রাব্বির কিডনি প্রতিস্থাপনের জন্য এতো টাকা লাগবে শোনার পর থেকেই তার কৃষক বাবা সাহায্যের জন্য ছুটছেন চেয়ারম্যান, মেম্বারসহ স্থানীয় বিত্তবানদের কাছে। কেন না তার সবকিছুই বিক্রি করে দিলেও এক থেকে দেড় লাখ টাকার বেশি জোগাড় করার সামর্থ্য হচ্ছে না।
রাব্বি বর্তমানে ঢাকার মিরপুর কিডনি ফাউন্ডেশন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। এমন অবস্থায় কৃষক বাবা তার সন্তানকে বাঁচাতে দেশবাসীর কাছে সাহায্যের আবেদন করেছেন। দেশের বিত্তবানরা সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিলেই হয়ত বেঁচে যাবে তার সন্তান।
রাব্বির পরিবার সূত্রে জানা যায়, রাব্বি হাওলাদার কয়েক মাস আগে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ (সেবাচিম) হাসপাতালে নিয়ে যান তার পরিবার। সেখানে চিকিৎসক তার পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে বলেন রাব্বির দুটি কিডনিই নষ্ট হয়ে গেছে। পরে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী নিয়মিত চিকিৎসা চলছিল রাব্বির, কিন্তু কিছুদিন আগে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েন। পরে তাকে মিরপুর কিডনি ফাউন্ডেশন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
এরই মধ্যে প্রায় আড়াই লাখ টাকার ওপরে শুধু হাসপাতাল ও ওষুধের বিল দিতে হয়েছে। দরিদ্র এই পরিবারটি আত্মীয়স্বজনসহ সবার সহায়তায় ওই বিল দেয়া সম্ভব হয়।
রাব্বির মা রেভা বেগম কান্না জড়িত কণ্ঠে বলেন, ‘এভাবে আর কয়দিন চিকিৎসা করাতে পারব জানি না। কারণ আমাদের সামর্থ্য শেষ হয়ে এসেছে। শুধু টাকার অভাবে তাকে ভালো কোনো হাসপাতালেও নিতে পারছি না, কিন্তু কিডনি প্রতিস্থাপনের জন্য অপারেশনের ধকল সহ্য করার মতো সুস্থ অবস্থায় আনা খুব জরুরি।’
রাব্বির বাবা আব্দুর রহিম বলেন, ‘আমাদের পরিবারের পক্ষ থেকে সবার কাছে অনুরোধ করা হচ্ছে আপনাদের ভালোবাসা ও সাহায্য আমাদের খুব প্রয়োজন। কারণ শুধু টাকার অভাবে বিনা চিকিৎসায় আমার একমাত্র ছেলে অকালে ঝরে যাবে তা আমার জীবন থাকতে মানতে পারছি না।’
তাকে কেউ সাহায্য করতে চাইলে ০১৯৯৭-২২৮৯৭৫ ও ০১৯৮৭-৩৬৬৫৬৮ (বিকাশ-পার্সোনাল) নাম্বারে পাঠাতে পারেন ও যোগাযোগ করতে পারেন।
আরও পড়ুন:ফরিদপুর সদরে যৌনপল্লি থেকে দুই তরুণীকে উদ্ধার করেছে কোতোয়ালি থানা পুলিশ।
এ ঘটনায় ওই পল্লির এক নারীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
ফরিদপুর কোতোয়ালি থানার ওসি মো. হাসানুজ্জামান স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বুধবার রাতে এসব তথ্য জানানো হয়।
গ্রেপ্তারকৃত পারুল বেগম ওরফে পারু (৪৮) জেলার রথখোলা যৌনপল্লির বাসিন্দা।
মামলার অন্য আসামিরা হলেন আপন (৩০), জহির (৩০) ও ববি (৩৮)।
গ্রেপ্তার না হওয়া এ তিনজনের মধ্যে ববি যৌনপল্লির সর্দারনি হিসেবে পরিচিত। আপন ও জহিরের পূর্ণাঙ্গ পরিচয় পাওয়া যায়নি।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, পার্লারে ভালো বেতনে চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে চাঁদপুরের কচুয়া থানা এলাকা থেকে এক তরুণীকে গত ১০ মার্চ ঢাকায় নিয়ে আসেন আপন। দুই দিন সেখানে রেখে তাকে (তরুণী) তিন ব্যক্তির হাতে তুলে দেন তিনি। ওই তিন ব্যক্তি ১৩ মার্চ সন্ধ্যায় তরুণীকে রথখোলা যৌনপল্লিতে এনে পারুর কাছে দেড় লাখ টাকায় বিক্রি করে দেন। পরের দিন একটি সাদা কাগজে তরুণীর স্বাক্ষর নিয়ে জানানো হয়, এখন থেকে তিনি যৌনপল্লির লাইসেন্সধারী সদস্য।
এতে আরও বলা হয়, মেয়েটিকে পারুর বাসায় রেখে ববি ও অন্যদের মাধ্যমে জোর করে দেহ ব্যবসায় বাধ্য করা হয়। এর মাঝে মেয়েটি বাড়িতে যোগাযোগের জন্য একজন খদ্দেরকে তার ছোট বোনের মোবাইল নম্বর দেন। পরে ওই খদ্দেরের মোবাইল কলের মাধ্যমে মেয়েটির সন্ধান পায় তার পরিবার। এরপর তার মা ও ফুফা রথখোলায় এসে তাকে দেখতে পেয়ে স্থানীয় থানা পুলিশকে জানায়।
বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়, পুলিশ যৌনপল্লিতে অভিযান চালানোর পর ফেনীর পূর্ব ছাগলনাইয়ার আরেক তরুণীও তাকে উদ্ধারে পুলিশের সাহায্য চান। ওই তরুণী জানান, তাকেও চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে প্রথমে ঢাকার মিরপুরের একটি বাসায় এক রাত রেখে রথখোলা যৌনপল্লিতে এনে পারুর কাছে বিক্রি করা হয়।
কোতোয়ালি থানার ওসি হাসানুজ্জামান জানান, যৌনপল্লিতে তরুণীকে নেয়ার ঘটনায় তার মায়ের অভিযোগের ভিত্তিতে মানব পাচার প্রতিরোধ ও দমন আইনে কোতোয়ালি থানায় মামলা করা হয়েছে। পরবর্তী সময়ে কোতোয়ালি থানার উপপরিদর্শক (এসআই) ফাহিম ফয়সাল মামলার তদন্তভার গ্রহণ করে অভিযান চালিয়ে পারুল বেগম ওরফে পারুকে গ্রেপ্তার করে। অন্য আসামিদের গ্রেপ্তারের জোর চেষ্টা চলছে।
নোয়াখালীর কবিরহাটে পুকুরের পানিতে ডুবে সহোদর দুই শিশুর মৃত্যু হয়েছে।
উপজেলার চাপরাশিরহাট ইউনিয়নের রামেশ্বপুর গ্রামের ছর আলী মাঝি বাড়ির পুকুরে বুধবার সকালে এ ঘটনা ঘটে।
প্রাণ হারানো দুই শিশু হলো সাত বছর বয়সী বিবি ফাতেমা বেগম ও তার চার বছরের ভাই আবিদ হোসেন। শিশুদ্বয় ছর আলী মাঝি বাড়ির আবদুল হাইয়ের সন্তান।
কোম্পানীগঞ্জ থানার ওসি হুমায়ন কবির বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, ‘দুই ভাই-বোন সকালে ঘরের পাশে পুকুরে দাঁত ব্রাশ করতে যায়। এ সময় হাত-মুখ ধোয়ার সময় একজন পুকুরে পড়ে গেলে আরেকজন উদ্ধার করতে পানিতে নামে।
‘পরে দুজনই পানিতে ডুবে যায়। একপর্যায়ে পরিবারের সদস্যরা দুজনকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে চিকিৎসক তাদের মৃত বলে জানান।’
তিনি আরও বলেন, ‘মরদেহ স্বজনরা নিয়ে গেছেন। এ ঘটনায় থানায় একটি অপমৃত্যুর মামলা করা হয়।’
আরও পড়ুন:
মন্তব্য