নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লার তল্লা এলাকায় বাইতুস সালাত জামে মসজিদের পাশে একটি ঘরে ভাড়া থাকতেন ভ্যানচালক মো. মিজান। গত বছরের ৪ সেপ্টেম্বর রাতে মসজিদে নামাজ পড়তে গিয়ে ভয়াবহ বিস্ফোরণে তিনি প্রাণ হারান। একমাত্র উপার্জনক্ষম সদস্যকে হারিয়ে এক বছর ধরে ভুগছে তার পরিবার।
মিজানের স্ত্রী কুলসুম বেগম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘অনেক সময় ঘরে চাল থাকে না। তাই অন্যের বাড়ি থেকে সাহায্য তুলি। তারপরও সংসার চালাতে অনেক কষ্ট হয়। কারণ আমার তো কামাই নাই। বাধ্য হইয়া সেলাই মেশিন কিনছি। তা দিয়া এখন আমাগো কোনোমতে সংসার চলে।
‘আমার স্বামী সারা মাস ভ্যান চালানোর পর গ্রামে আমাগো জন্য টাকা পাঠাইত। উনি মারা যাওয়ার পর সরকারি ও বেসরকারি যে সাহায্য পাইছি, তা দিয়া বড় মেয়েরে বিয়া দিছি। আর ছোট মেয়ের বিয়ার জন্য বাকি টাকা জমায় রাখছি। কারণ তাও যদি সংসারে খরচ করি তাইলে মেয়ের বিয়া দিমু ক্যামনে? আমরা তো গরিব; গরিবের দুঃখর শেষ আছে?’
বিস্ফোরণে নিহত হন দিনমজুর মনির হোসেন। তার বাড়ি বরিশালের বাকেরগঞ্জ উপজেলার বারদরিয়া গ্রামে। তিনি তল্লায় বাড়ি ভাড়া করে থাকতেন। তার বোনের বাড়িও একই এলাকায়।
তার বোন আঁখি বেগম বলেন, ‘ভাই মারা যাওয়ার পর সন্তানদের নিয়ে গ্রামের বাড়িতে চলে গেছে তার স্ত্রী। গ্রামে বিভিন্ন কাজ করে কোনো রকম সংসার চালান। আমার ভাইয়ের ৭ বছরের ছেলেডা এখনও তল্লায় আসলে মসজিদের সামনে গিয়া বাবারে খোঁজে। আমরা আমাগো ভাই হারানোর বিচার চাই। সরকার যাতে এ বিচারটা তাড়াতাড়ি শেষ করে এইটাই আমাগো শেষ প্রত্যাশা।’
বিস্ফোরণের ঘটনায় প্রাণ হারান সে সময় মসজিদে নামাজ পড়তে যাওয়া রংমিস্ত্রি হুমায়ন কবির। তার স্ত্রী মমতাজ বেগম বলেন, ‘যারে দিয়া সংসার চলত, সে-ই তো নাই। বর্তমানে অনেক কষ্ট কইরা সংসার চলাইতে হয়। কারণ আমার এক ছেলে প্রতিবন্ধী, আরেক ছেলে বেকার। স্বামী মারা যাওয়ার পর থেকে অনেক টানাটানি কইরা সংসার চলে।
‘বিচার তো চাই। বিচারের অপেক্ষাই তো আছি। কই গ্যাস কোম্পানির কোনো লোকের বিচার হইল না। যাগো স্বজন মরছে আমরা সবাই বিচারের পথ চাইয়া আছি।’
এশার নামাজ চলাকালে সেদিনের ওই বিস্ফোরণে ৩৭ মুসল্লি ও এক পথচারী দগ্ধ হন। তাদের মধ্যে ৩৪ জন ঢাকার শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে মারা গেছেন। সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন চারজন।
মিজান, মনির ও হুমায়ুনের মতো প্রাণ হারানো অন্যদের স্বজনরাও ক্ষুব্ধ এতদিনে বিচার শুরু না হওয়ায়। তাদের অভিযোগ, ঘটনার পর কিছু সহায়তা এলেও তা দিয়ে এক বছর চলা যায়নি। কারণ নিহতদের বেশিরভাগই নিজ নিজ পরিবারের প্রধান ও একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি ছিলেন।
মামলার তদন্তকারী সংস্থা বলছে, অবহেলায় মৃত্যুর অভিযোগের মামলায় আদালতে ২৯ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেয়া হয়। তিতাস গ্যাসের আট কর্মকর্তা ও কর্মচারীর বিরুদ্ধে তিন দফা আবেদন করেও কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে অনুমতি পায়নি সিআইডি। এ কারণে সম্পূরক অভিযোগপত্র দাখিল করতে না পারায় তাদের বিচারের মুখোমুখি করা যাচ্ছে না।
মসজিদের বিস্ফোরণের ওই ঘটনার তদন্ত কর্মকর্তা বাবুল আক্তার নিউজবাংলাকে জানান, বিস্ফোরণের ঘটনায় ‘অবহেলাজনিত মৃত্যুর অভিযোগে’ মামলা হয়।
তিনি জানান, তদন্তে গ্যাস বিতরণ সংস্থা তিতাস, বিদ্যুৎ বিতরণ সংস্থা ডিপিডিসি, মসজিদ কমিটির অবহেলা ও স্থানীয় ১০ জন কর্মীর জড়িত থাকার সত্যতা পাওয়া যায়। এদের মধ্যে তিতাস গ্যাসের কর্মকর্তা-কর্মচারী ছাড়া অন্য ২৯ জনকে আসামি করে আদালতে অভিযোগপত্র দেয়া হয়েছে।
তবে তিনবার আবেদন করেও তিতাস কর্তৃপক্ষের অনাপত্তি না পাওয়ায় তাদের লোকজনের বিরুদ্ধে সম্পূরক অভিযোগপত্র জমা দেয়া সম্ভব হচ্ছে না। ফলে পুরো বিষয়টি আদালতের ওপর নির্ভর করছে।
আদালত পুলিশের পরিদর্শক আসাদুজ্জামান নিউজবাংলাকে জানান, মামলাটি এখন জেলা ও দায়রা জজ আদালতে বিচারাধীন। তাই পরবর্তী শুনানির পর বিস্তারিত জানানো যাবে।
এ বিষয়ে তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড নারায়ণগঞ্জের উপমহাব্যবস্থাপক গোলাম ফারুক নিউজবাংলাকে জানান, আট কর্মকর্তা-কর্মচারীর বিষয়ে সিআইডির দেয়া আবেদনের বিষয়ে ঢাকায় তিতাসের লিগ্যাল এইড অফিসের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা জানেন। আঞ্চলিক অফিস থেকে এ বিষয়ে কিছু বলা সম্ভব নয়।
এদিকে মসজিদ কমিটির কয়েক দফা আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে প্রায় ১ বছরের মাথায় গত ২৯ আগস্ট মসজিদটি খুলে দেয়ার সিদ্ধান্ত জানিয়েছে জেলা প্রশাসন। ছয় শর্তে মসজিদটি খুলে দেয়ার অনুমতি দিয়েছেন জেলা প্রশাসক (ডিসি) মোস্তাইন বিল্লাহ।
এর মধ্যে আছে মসজিদের বিদ্যুৎসংক্রান্ত সব কার্যক্রমের সঠিকতা নিশ্চিত করা, মসজিদের পাশে গ্যাসলাইন নেই অথবা গ্যাস লাইন ঠিক আছে এই মর্মে তিতাস গ্যাস কর্তৃপক্ষ থেকে প্রত্যয়নপত্র সংগ্রহ, প্রতিটি তলায় পর্যাপ্ত অগ্নিনির্বাপণ সরঞ্জামাদি রাখা, মসজিদে একাধিক দরজা রাখার ব্যবস্থা করা, তিন মাস পরপর অনুমোদিত প্রকৌশলী ও এবিসি লাইসেন্সপ্রাপ্ত টেকনিশিয়ান দিয়ে পরীক্ষা করানো ও আপাতত মসজিদটিতে এসির ব্যবহার না করা।
ডিসি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘ফায়ার সার্ভিস, ডিপিডিসি, তিতাস ও পুলিশ মসজিদ খোলার বিষয়ে ইতিবাচক প্রতিবেদন দিয়েছে। এই সরকারি দপ্তরগুলোর কাছ থেকে প্রতিবেদন চাওয়া হয়েছিল। তাদের প্রতিবেদনের পর সরকারি নিয়ম অনুযায়ী ছয়টি শর্ত দিয়ে মসজিদটি খুলে দেয়ার সিদ্ধান্ত মসজিদ কমিটিকে জানিয়ে দেয়া হয়েছে। তাদেরকে বলা হয়েছে এই মসজিদের নামাজ পড়ানো হলেও কিংবা নতুন করে নির্মাণ করা হলেও তিন মাস পর জেলা প্রশাসন তা মনিটরিং করবে।’
ডিসি আরও জানান, ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলো যদি কোনো আর্থিক সহায়তার জন্য আবেদন করে, তাহলে সে ব্যবস্থা করা হবে।
মসজিদ কমিটির সভাপতি আবদুল গফুর নিউজবাংলাকে জানান, বিস্ফোরণের ঘটনার পর থেকে মসজিদটি বন্ধ রাখার কারণে ভেতরের অবস্থা জরাজীর্ণ। বিভিন্ন স্থানে ফাটল সৃষ্টি হয়েছে। এ কারণে শুক্রবার জুমার নামাজের মধ্য দিয়ে মসজিদ চালুর কথা থাকলেও তা হয়নি।
তিনি জানান, মসজিদটি এখনও নামাজের অনুপযোগী ও ঝুঁকিপূর্ণ। এ কারণে কমিটির লোকজনের সিদ্ধান্তে নতুন করে সংস্কার কিংবা নতুন করে নির্মাণ করা লাগবে।
বিস্ফোরণের ঘটনার দুই দিন পর ফতুল্লা থানার উপপরির্দশক হুমায়ন কবির বাদী হয়ে ‘অবহেলায় মৃত্যুর অভিযোগ’ এনে মামলা করেন। ১০ সেপ্টেম্বর মামলাটির তদন্তের দায়িত্ব পায় পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ, সিআইডি। এ সংস্থা তিতাসের আট কর্মকর্তা-কর্মচারী, মসজিদ কমিটির সভাপতি, ডিপিডিসির মিটার রিডার ও স্থানীয় এক বিদ্যুৎ মিস্ত্রিকে গ্রেপ্তার করে জিজ্ঞাসাবাদ করে।
সাড়ে তিন মাসেরও বেশি সময় তদন্তের পর গত বছরের ৩১ ডিসেম্বর ২৯ জনকে আসামি করে আদালতে অভিযোগপত্র দেয় সিআইডি।
প্রতিবেদনে বিস্ফোরণের জন্য গ্যাস বিতরণ সংস্থা তিতাস, বিদ্যুৎ বিতরণ সংস্থা ডিপিডিসির স্থানীয় ১০ জন কর্মীর পাশপাশি দায়ী করা হয়েছে মসজিদ কমিটির অবহেলাকেও।
তবে মামলাটিতে তিতাসকে দায়ী করা হলেও তাদের কাউকে চার্জশিটভুক্ত করা হয়নি। ওই সময় সিআইডির কর্মকর্তারা জানান, আদালতের অনুমতি সাপেক্ষে তিতাসের কর্মকর্তা-কর্মচারীর বিরুদ্ধে সম্পূরক অভিযোগপত্র জমা দেয়া হবে।
মামলার আসামিদের সবাই জামিনে আছেন।
আরও পড়ুন:কেশবপুরের ঐতিহ্য কালোমুখো হনুমান খাদ্য সংকট ও বন উজাড় হয়ে যাওয়ায় বিভিন্ন এলাকায় চলে যাচ্ছে। প্রয়োজনীয় খাবার না পেয়ে মারাও যাচ্ছে। কালোমুখো হনুমান রক্ষার দাবি উঠেছে।
জানা গেছে, একসময় কেশবপুরে ছিল কালোমুখো হনুমানের অভয়ারণ্য। বন উজাড় হয়ে যাওয়ায় এবং খাদ্য সংকটে সময়ের গতির সঙ্গে কমে যাচ্ছে হনুমান। বর্তমানে ১৮০ থেকে ২০০টি হনুমান কেশবপুরে রয়েছে বলে স্থানীয় বন বিভাগ জানায়। এখান থেকে ৪/৫ বছর আগে ছিল ২৫০ থেকে ৩০০ টি। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, দেশ বিভক্তির আগে ভারতের মাড়োয়াররা ব্যবসা বাণিজ্যের জন্য যশোরের কেশবপুরে বসবাসের পাশাপাশি আসা-যাওয়া করত। এ সময় তাদের যানবাহনে করে দুটি কালোমুখো হনুমান ভারত থেকে কেশবপুরে আসে। সেই থেকে হনুমানের এখানে পত্তন শুরু হয়। ওই এক জোড়া হনুমান থেকে এখানে শত শত হনুমানের কালের আবর্তনে ওরা আজ বিলুপ্তির পথে। একসময় কেশবপুর অঞ্চলে ঘন বনজঙ্গল ছিল। এসব বনের ফল ও লতাপাতা খেয়ে ওরা জীবিকা নির্বাহ করত। বর্তমানে জনসংখ্যা বৃদ্ধির পাশাপাশি বন উজাড়সহ ঘনবসতি এবং এলাকায় অবৈধ ইটভাটায় গিলে খাচ্ছে এসব বনের কাঠ। এতে উজাড় হচ্ছে বন। এদিকে কেশবপুর উপজেলায় পল্লীবিদ্যুতের তারে কভার সিস্টেম না থাকায় প্রায়ই বিদ্যুতের তারে জড়িয়ে বিদ্যুৎস্পৃষ্টে ওরা মারা যাচ্ছে। খাদ্য সংকটের কারণে কেশবপুরের হনুমান দেশের বিভিন্ন এলাকায় চলে যাচ্ছে।
উপজেলা বন বিভাগের কর্মকর্তা মোনায়েম হোসেন বলেন, কেশবপুর এলাকায় বনজঙ্গল কমে যাওয়ার কারণে হনুমানের খাদ্য সংকট দেখা দিয়েছে। ওদের রক্ষায় সরকারিভাবে খাদ্য সরবরাহ করা হচ্ছে।
কেশবপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার রেকসোনা খাতুন বলেন, হনুমান রক্ষায় সরকারিভাবে খাদ্য সরবরাহ করা হয়। এ ছাড়া বিভিন্ন এনজিও ব্যক্তি গত ভাবেও অনেকেই খাদ্য দেয়, যার কারণে ওরা গ্রামাঞ্চল ছেড়ে বর্তমানে শহরে বেশি বিচরণ করছে।
নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন করোনা আক্রান্ত এক বৃদ্ধের মৃত্যু হয়েছে।
করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃত জেবল হক (৮০) কবিরহাট উপজেলার চাপরাশিরহাট ইউনিয়নের লামছি গ্রামের মৃত গনু মিয়ার ছেলে।
বুধবার (২ জুলাই) সকালে বিষয়টি নিশ্চিত করেন নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডা. রাজীব আহমেদ চৌধুরী। এর আগে, গতকাল মঙ্গলবার (১ জুলাই) রাত ১০টার দিকে নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালের করোনা ইউনিটে তার মৃত্যু হয়।
ডা. রাজীব আহমেদ চৌধুরী বলেন, গত ২৪ ঘণ্টায় করোনা আক্রান্ত হয়ে এক বৃদ্ধের মৃত্যু হয়েছে। গত মঙ্গলবার সকাল ১০টার দিকে ওই বৃদ্ধ হাসপাতালে ভর্তি হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রাত ১০টার দিকে মারা যান তিনি। এদিকে গত ২৪ ঘন্টায় নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালের এক জনের নমুনা পরীক্ষায় একজনের শরীরে করোনা শনাক্ত হয়েছে।
এ বিষয়ে জেলা সিভিল সার্জন ডা.মরিয়ম সিমি বলেন, মারা যাওয়া ব্যক্তি সকালে হাসপাতালে ভর্তি হয়। দুপুরে তার করোনা শনাক্ত হওয়ার পর সেখানে রাতে তার মৃত্যু হয়। এখন পর্যন্ত নোয়াখালীতে মোট ৩ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। কিট সল্পতার কারণে উপজেলা পর্যায়ে করোনা টেস্ট এখনো শুরু করা হয়নি।
সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবের নেতৃত্ব নিয়ে চলমান বিরোধের জেরে ক্লাবের সভাপতি আবুল কাশেমসহ সাংবাদিকদের উপর অতর্কিত হামলার ঘটনা ঘটেছে। এতে অন্তত ৩০ সাংবাদিক আহত হয়েছেন।
অভিযোগ উঠেছে, ক্লাবের কথিত সভাপতি মাদকাসক্ত আওয়ামী দোসর আবু সাঈদ ও সাধারণ সম্পাদক আব্দুল বারীর নেতৃত্বে আল ইমরান ও অমিত ঘোষ বাপ্পাসহ ভাড়াটে সন্ত্রাসী ও মাদকাসক্তরা এই হামলা চালায়।
সোমবার (৩০ জুন) সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবের সামনে এই হামলায় ইন্ডিপেনডেন্ট টেলিভিশনের সাংবাদিক ও প্রেসক্লাবের সভাপতি আবুল কাশেম, ভোরের আকাশের সাংবাদিক আমিনুর রহমান, ডিবিসি নিউজের সাংবাদিক বেলাল হোসেন, অনির্বানের সোহরাব হোসেনসহ অন্তত ৩০ সাংবাদিক গুরুতর আহত হয়েছেন।
হামলার শিকার সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবের সভাপতি আবুল কাশেম বলেন, আমরা শান্তিপূর্ণভাবে প্রেসক্লাবে একটি সভা করার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম। ঠিক সেই মুহূর্তে আবু সাঈদ ও আব্দুল বারীর নেতৃত্বে আলিপুর থেকে আনা ভাড়াটে সন্ত্রাসী ও মাদকাসক্তরা আমাদের উপর পরিকল্পিতভাবে হামলা করে। তাদের হামলায় আমাদের অন্তত ৩০ জন সাংবাদিক ও সদস্য আহত হয়েছেন।
তিনি আরও অভিযোগ করেন, আবু সাঈদ ও আব্দুল বারী দীর্ঘদিন ধরে অবৈধভাবে প্রেসক্লাব দখল করে রেখেছেন এবং তাদের মতের বিরুদ্ধে গেলেই এভাবে হামলা ও নির্যাতন চালানো হয়।
এই ন্যাক্কারজনক হামলার ঘটনায় সাতক্ষীরার সাংবাদিক মহলে তীব্র ক্ষোভ ও উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়েছে। সাংবাদিকরা অবিলম্বে হামলাকারীদের গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনার জোর দাবি জানিয়েছেন।
ঘটনার পর থেকে প্রেসক্লাব এলাকায় থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে সেখানে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
কুমিল্লার দাউদকান্দি পৌরসভার ২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট ঘোষণা করা হয়েছে। বাজেট ঘোষণা করেন সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও দাউদকান্দি পৌর প্রশাসক রেদওয়ান ইসলাম।
সোমবার (৩০ জুন) দুপুরে পৌরসভা হলরুমে এ বাজেট ঘোষণা করা হয়। বাজেটে সর্বমোট আয় ৪২ কোটি ৯১ লাখ ৫৯ হাজার টাকা ও মোট ব্যয় ৩৬ কোটি ৭৪ হাজার টাকা প্রস্তাব করা হয়। পৌর প্রশাসক রেদওয়ান ইসলাম তার প্রস্তাবিত বাজেটে ২০২৫-২৬ অর্থ বছরে রাজস্ব খাত থেকে ১৩ কোটি ২৩ লাখ ৪১ হাজার ৩ শত ৩১ টাকা ও উন্নয়ন খাত থেকে ২৯ কোটি ৬৮ লাখ ১৮ হাজার ৪৫ টাকা আহরনের লক্ষমাত্রা নির্ধারন করা হয়েছে। বাজেটে উদ্ধৃত্ত ধরা হয়েছে ৬ কোটি ১৭ লাখ ২ হাজার ৩ শত ৭৮ টাকা।
এছাড়াও বাজেটে খাতওয়ারী ব্যয়ের হিসেবে দেখা যায় রাজস্ব খাতে ব্যয় ৯ কোটি ৫৯ লাখ ৫৭ হাজার টাকা এবং উন্নয়ন ব্যয় দুই কোটি ১৫ লাখ টাকা ধরা হয়েছে।
এ সময় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা.হাবিবুর রহমান,পৌরসভার নির্বাহী কর্মকর্তা তাজুল ইসলাম, হিসাবরক্ষক শাহাদাত হোসেনসহ পৌরসভার অন্যান্য কর্মকর্তারা।
নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে মাদকাসক্ত হয়ে মাতলামি করার প্রতিবাদ করায় ইয়াছিন (৩৮) ও সিপন( ৩২) নামে দুই যুবক গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। আহতদের মধ্যে একজনকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এবং অপরজনকে রূপগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে।
শুক্রবার দিবাগত রাতে উপজেলার মুড়াপাড়া টঙ্গীরঘাট এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
গুলিবিদ্ধ ইয়াছিন মুড়াপাড়ার হাউলিপাড়া এলাকার ইদু মিয়ার ছেলে এবং সিপন টঙ্গীরঘাট এলাকার আলাউদ্দিনের ছেলে।
রূপগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) তরিকুল ইসলাম জানান, রাত ১১টার দিকে ইয়াছিন তার স্ত্রীকে নিয়ে বিয়ের অনুষ্ঠান শেষে খালাতো বোনের বাড়ি যাচ্ছিলেন। পথে স্থানীয় সোহরাব নামের এক যুবক মাদকাসক্ত অবস্থায় তাদের উদ্দেশে গালিগালাজ করলে ইয়াছিন প্রতিবাদ করেন। পরে তিনি খালাতো ভাই সিপনকে নিয়ে স্থানীয় অহিদুল্লার বাড়িতে গিয়ে ঘটনার কথা জানান। সেখানেই সোহরাব ক্ষিপ্ত হয়ে পিস্তল দিয়ে তাদের লক্ষ্য করে গুলি চালায়। এতে ইয়াছিনের মাথায় ও সিপনের পায়ে গুলি লাগে।
তাদের প্রথমে স্থানীয় একটি বেসরকারি হাসপাতালে নেওয়া হয়। পরে সিপনকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এবং ইয়াছিনকে রূপগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়।
ঘটনার পরপরই পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে গুলির খোসা উদ্ধার করেছে এবং জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তিনজনকে আটক করেছে। এ ঘটনায় আইনগত ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।
নোয়াখালীতে গ্রাম আদালত সম্পর্কে ব্যাপক সচরতা বৃদ্ধিতে স্থানীয় সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানসমূহের অংশ গ্রহণের সমন্বিত পরিকল্পনা বিষয়ক কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
নোয়াখালী জেলা প্রশাসনের আয়োজনে বুধবার সকাল ১১ টার দিকে (২৫ জুন) জেলা প্রশাসকের কার্যালয় তৃতীয় তলায় মিনি কনফারেন্স হলরুমে কর্মশালায় উপস্থিত ছিলেন, নোয়াখালী জেলা প্রশাসক খন্দকার ইশতিয়াক আহমেদ, স্থানীয় সরকার বিভাগের উপ-পরিচালক জালাল উদ্দিন,নোয়াখালী অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ ইয়াসিন, গ্রাম আদালত নোয়াখালী ম্যানেজার আহসানুল্লাহ চৌধুরী মামুনসহ এনজিও প্রতিনিধি, সাংবাদিক, রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গ,সরকারি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাগণ উপস্থিত ছিলেন।
যশোরের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালতের একটি বিচারাধীন মামলার নথি থেকে এজাহারের কপি রহস্যজনকভাবে গায়েব হয়ে গেছে। আদালতের নথি থেকে গুরুত্বপূর্ণ এই কাগজ হারিয়ে যাওয়ার ঘটনায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে।
বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে আমলে নিয়ে মামলার বেঞ্চ সহকারী হুমায়ুন কবির ও আসামিপক্ষের আইনজীবী আহসান হাবিব মুকুলকে শোকজ করেছেন বিচারক। তাদের তিন কার্যদিবসের মধ্যে এ বিষয়ে ব্যাখা দিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
আদালত সূত্র জানায়, ঘটনাটি ঘটে গত ২২ জুন যশোরের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ প্রথম আদালতে। ওই দিন মামলাটির (এসসি-১৬৬৯/২০১৮) সাক্ষ্য গ্রহণের জন্য নির্ধারিত ছিল। আদালতে আসামি, রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলি ও আসামিপক্ষের আইনজীবী—সবাই উপস্থিত ছিলেন।
সাক্ষ্যগ্রহণ চলাকালে বিচারক মো. সালেহুজ্জামান মামলার নথি পর্যবেক্ষণ করে দেখতে পান, নথিতে মামলার এজাহারের কপি নেই। তাৎক্ষণিকভাবে তিনি আদালতের বেঞ্চ সহকারীকে বিষয়টি অবগত করলে তিনি জানান, সাক্ষ্য গ্রহণের আগে আইনজীবী আহসান হাবিব মুকুল তার কাছ থেকে নথি নিয়ে গিয়েছিলেন এবং এজাহার দেখে প্রয়োজনীয় তথ্য লিখে নিয়েছিলেন। এরপর তিনি আবার নথি বিচারকের কাছে জমা দেন।
এরপর এজলাসেই বিচারক আইনজীবীর কাছে জিজ্ঞাসা করলে তিনি এ বিষয়ে কিছুই জানেন না বলে মন্তব্য করেন। ফলে বিষয়টি নিয়ে তোলপাড় শুরু হয়। জেলা আইনজীবী সমিতির নেতারাসহ সিনিয়র আইনজীবীরা এজলাসে হাজির হন। একপর্যায় বিচারক ওই দুইজনকে শোকজ করে আগামী ১৩ আগস্ট মামলার পরবর্তী দিন ধার্য করেন।
বেঞ্চ সহকারী হুমায়ুন কবির বলেন, ‘বিচারক এজলাসে ওঠার আগে আইনজীবী মামলার নথি নিয়েছিলেন। পরে ফেরত দেন। আমি নিজে নথিতে কোনো হেরফের করিনি। আইনজীবী কিংবা আইনজীবীর সহকারীর মাধ্যমে এই ঘটনা ঘটতে পারে।’
অন্যদিকে, আইনজীবী আহসান হাবিব মুকুল জানান, তিনি নথি নিয়েছিলেন ঠিকই, তবে বিচারক এজলাসে চলে আসায় তা যথাযথভাবে বেঞ্চ সহকারীর কাছে ফিরিয়ে দিয়েছেন। তিনি আসামির চালান কপি থেকে তথ্য নিয়েছেন। এজাহার সংক্রান্ত বিষয়ে তিনি কিছুই জানেন না বলেও দাবি করেন।
যশোর জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট এম এ গফুর বলেন, ‘ঘটনাটি আমাদের নজরে এসেছে। একজন আইনজীবী এমন কাজ করতে পারেন না। আমরা বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে পর্যবেক্ষণ করছি।’
আদালত ও আইনজীবী সমিতি সূত্র আরও জানায়, আদালতে থাকা মামলার মুল কপি থেকে মামলার এজাহারের কপি সরিয়ে নিয়ে বাড়তি সুবিধা নেওয়ার সুযোগ নেই। এ ছাড়া এজাহার কপি হারিয়ে গেলেও মামলার বিচারের ক্ষেত্রে প্রভাব পড়ার সম্ভাবনা নেই। কারণ ওই মামলার এজাহারের ফটোকপি রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলির কাছে সংরক্ষিত থাকে। এর বাইরেও অনেক মাধ্যমে মামলার এজাহারের কপি পাওয়ার সুযোগ রয়েছে।
তবে, মুল নথিতে এজাহারের কপি না থাকাটা সমীচীন নয়। এ বিষয়টি অবশ্যই খতিয়ে দেখা প্রয়োজন বলে জানায় সূত্র।
মন্তব্য