সাবেক প্রধানমন্ত্রী, বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে ঢাকাসহ সারা দেশে মোট ৩৭টি মামলা রয়েছে। এর মধ্যে একটি মামলা দুই ধাপ এগিয়ে আপিল বিভাগে বিচারাধীন। আর আরেকটি মামলা এক ধাপ এগিয়ে হাইকোর্টে শুনানির অপেক্ষায়। বাকি ৩৫টি মামলা দেশের বিভিন্ন জেলার নিম্ন আদালতে বিচারাধীন।
দুই মামলায় সাজাপ্রাপ্ত হয়ে সরকারের শর্ত সাপেক্ষে কারামুক্ত হয়ে খালেদা জিয়া এখন বাসায় অবস্থান করছেন। এর মধ্যে একটি মামলা আপিল বিভাগে চূড়ান্ত শুনানির অপেক্ষায় আছে, আরেকটি হাইকোর্টে।
এসব মামলার শুনানির উদ্যোগের চেয়ে রাজনৈতিকভাবে প্রত্যাহারের দাবি খালেদা জিয়ার আইনজীবীদের। যে কারণে শুনানির কোনো উদ্যোগ দেখা যায়নি গত দেড় বছরেও।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে খালেদা জিয়ার আইনজীবী ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘বেগম জিয়ার বিরুদ্ধে সরকার মিথ্যা মামলা দিয়েছে। এখন সরকার সেগুলো প্রত্যাহার করবে। আমরা শুনানির উদ্যোগ কেন নেব? সবগুলোই মিথ্যা মামলা, সরকার তা জানে। আমাদের দাবি হলো, এখন সরকার এগুলো প্রত্যাহার করে নিক।
‘খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের বিরুদ্ধে যেসব মামলা রয়েছে, সেগুলো প্রত্যাহার করবে সরকার। অন্যথায় আন্দোলন করে মামলা প্রত্যাহারে বাধ্য করা হবে। সরকার রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে মামলা দিয়েছে, রাজনৈতিকভাবেই মামলা প্রত্যাহার করা হবে।’
বিএনপির আইন বিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার কায়সার কামাল নিউজবাংলাকে বলেন, ‘বেগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে মোট ৩৭টি মামলা রয়েছে। সব মামলাতেই তিনি জামিনে আছেন। শুধু দুটি মামলায় ওনার কনভিকশন (সাজা) হয়েছে। মামলা দুটি হলো জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট ও জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলা।
‘এর মধ্যে জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলায় বিচারিক আদালতে দেওয়া সাজার বিরুদ্ধে আমরা হাইকোর্টে আপিল করেছি। সেই আপিল যথারীতি শুনানি হবে। আর জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় হাইকোর্ট বিভাগ তার সাজা বৃদ্ধি করেছে। তার বিরুদ্ধে আমরা আপিল বিভাগে আপিল করেছি।’
তিনি বলেন, ‘আপনারা জানেন আপিল বিভাগে এবং হাইকোর্ট বিভাগে আপিল মামলাগুলাে একটা নির্দিষ্ট প্রক্রিয়ার মাধ্যমে শুনানি হয়। বছরেরটা বছর এভাবে ধরে শুনানি করা হয়। যখন এই মামলার শুনানির জন্য তালিকায় আসবে, তখন আমরা শুনানি করব।
‘আমরা তো আপিল ফাইল করে রেখেছি। স্বাভাবিকভাবে যখন শুনানির জন্য আসবে তখন এ ব্যাপারে কার্যকর পদক্ষেপ নিব।’
আদালত ও আইনজীবী সূত্রে জানা যায়, বেগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে মোট ৩৭ মামলার মধ্যে পাঁচটি দুর্নীতি মামলা, চারটি মানহানি মামলা, রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা একটি আর বাকিগুলো হত্যা, অগ্নিসংযোগ ও নাশকতার অভিযোগে। এর মধ্যে হাইকোর্টের আদেশে স্থগিত আছে ১৬টি মামলার কার্যক্রম।
জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলা
ট্রাস্টের নামে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে ২০০৮ সালে সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলা করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। এ মামলায় ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দেন বিচারিক আদালত। পরে ওই রায়ের বিরুদ্ধে খালেদা জিয়া হাইকোর্টে আপিল করলে তা খারিজ হয়ে যায়। একই সঙ্গে দুদকের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে সাজার পরিমাণ বাড়িয়ে ১০ বছর কারাদণ্ড দেয় হাইকোর্ট। এরপর ওই বছরের ১৮ নভেম্বর খালাস চেয়ে আপিল বিভাগে আবেদন করেন বিএনপি চেয়ারপারসন। তারপর থেকে আজ অবধি এ মামলার শুনানি শুরু হয়নি।
জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলা
জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলায় ২০১৮ সালের ২৯ অক্টোবর রায় ঘোষণা করেন পুরান ঢাকার নাজিমুদ্দিন রোডের পুরোনো কেন্দ্রীয় কারাগারে স্থাপিত ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৫-এর বিচারক ড. মো. আকতারুজ্জামান। রায়ে খালেদা জিয়াসহ অন্য তিন আসামিকে সাত বছর করে কারাদণ্ড দেওয়া হয়। এ ছাড়া প্রত্যেককে ১০ লাখ টাকা করে অর্থদণ্ড দেওয়া হয়। এই রায়ের বিরুদ্ধে খালেদা জিয়া আপিল করলে ২০১৯ সালের ৩০ এপ্রিল তা শুনানির জন্য গ্রহণ করে অর্থদণ্ড স্থগিত করে হাইকোর্ট। এরপর থেকে মামলাটি সে অবস্থায় আছে।
রাজধানীর দারুসসালাম থানায় ১১ মামলা
রাজধানীর গাবতলী, বালুর মাঠ ও মিরপুর মাজার রোডসংলগ্ন এলাকায় ২০১৫ সালের জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত যানবাহন ভাঙচুর, পুলিশের কাজে বাধা দানসহ নাশকতার অভিযোগে খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে দারুসসালাম থানায় ১১টি মামলা হয়। ঢাকার বকশীবাজারে বিশেষ জজ আদালতে মামলাগুলো বিচারের জন্য উঠলেও হাইকোর্টের আদেশের ফলে এর কার্যক্রম বর্তমানে স্থগিত রয়েছে।
রাজধানীর যাত্রাবাড়ী থানায় চার মামলা
২০১৫ সালের জানুয়ারিতে পেট্রোল বোমা দিয়ে চারজনের গায়ে অগ্নিসংযোগ, হত্যা ও হতাহতের ঘটনায় যাত্রাবাড়ী থানায় খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে মোট চারটি মামলা করা হয়। এ মামলাগুলোও হাইকোর্টের আদেশে স্থগিত হয়ে আছে।
কুমিল্লায় ৩ মামলা
২০১৫ সালের ২৫ জানুয়ারি ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের হায়দারপুলের চৌদ্দগ্রামে একটি কাভার্ড ভ্যানে অগ্নিসংযোগ ও আশপাশের বেশ কিছু গাড়ি ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে। পরে এ ঘটনায় ২০১৫ সালের ২৫ জানুয়ারি চৌদ্দগ্রাম থানায় বিশেষ ক্ষমতা আইনে এবং নাশকতার অভিযোগে দুটি মামলা হয়। ২০১৭ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারিতে এ মামলায় কুমিল্লার চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট কোর্টে অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়। খালেদা জিয়াসহ ৩২ জনকে এ মামলায় আসামি করা হয়। এর একটিতে তিনি হাইকোর্ট থেকে জামিনে আছেন, যা পরে আপিলে বহাল থাকে। আরেকটি মামলায় হাইকোর্টে খালেদা জিয়ার জামিন আবেদন শুনানি অবস্থায় রয়েছে।
একই বছরের ২ ফেব্রুয়ারি ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে একটি বাসে পেট্রল বোমা নিক্ষেপ করা হয়। এই ঘটনায় সাত যাত্রী মারা যান এবং আরও ২৫-২৬ জন গুরুতর আহত হন। এ ঘটনায় পরদিন (৩ ফেব্রুয়ারি) চৌদ্দগ্রাম থানার এসআই নুরুজ্জামান বাদী হয়ে ৫৬ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন। এ মামলায় আদালতে অভিযোগপত্র দেওয়া হলেও বিচারকার্য এখনও শুরু হয়নি।
রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগ এক মামলা
একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের সংখ্যা নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টির অভিযোগে খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে ২০১৬ সালের ২৫ জানুয়ারি রাষ্ট্রদ্রোহের মামলা করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মোমতাজ উদ্দিন আহমেদ মেহেদী। ঢাকার বকশীবাজারে বিশেষ জজ আদালতে চলমান এ মামলার কার্যক্রম হাইকোর্টের নির্দেশের কারণে স্থগিত রয়েছে।
নাইকো দুর্নীতি মামলা
ক্ষমতার অপব্যবহার করে তিনটি গ্যাসক্ষেত্র পরিত্যক্ত দেখিয়ে কানাডীয় কোম্পানি নাইকোর হাতে ‘তুলে দেওয়ার’ মাধ্যমে রাষ্ট্রের প্রায় ১৩ হাজার ৭৭৭ কোটি টাকার ক্ষতির অভিযোগ ওঠে খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে। বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে খালেদা জিয়া গ্রেপ্তার হওয়ার পর ২০০৭ সালের ৯ ডিসেম্বর তেজগাঁও থানায় এ মামলা করে দুদক। ২০০৮ সালের ৫ মে খালেদা জিয়াসহ ১১ জনের বিরুদ্ধে এ মামলায় অভিযোগপত্র দেয় দুদক। বর্তমানে মামলাটি ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৯-এ বিচারাধীন।
গ্যাটকো দুর্নীতি মামলা
ঢাকার কমলাপুর আইসিডি ও চট্টগ্রাম বন্দরের কনটেইনার হ্যান্ডেলিংয়ে গ্লোবাল অ্যাগ্রো ট্রেড কোম্পানি লিমিটেডকে (গ্যাটকো) ঠিকাদার হিসেবে নিয়োগে দুর্নীতির অভিযোগে ২০০৭ সালের ২ সেপ্টেম্বর খালেদা জিয়া ও তার ছোট ছেলে (প্রয়াত) আরাফাত রহমান কোকোসহ ১৩ জনকে আসামি করে রাজধানীর তেজগাঁও থানায় গ্যাটকো দুর্নীতি মামলা করেন দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) উপপরিচালক গোলাম শাহরিয়ার চৌধুরী। মামলায় গ্যাটকোকে ঠিকাদার হিসেবে নিয়োগ দিয়ে রাষ্ট্রের ১৪ কোটি ৫৬ লাখ ৩৭ হাজার ৬১৬ টাকা ক্ষতির অভিযোগ করা হয়। বিচারক আবু সৈয়দ দিলজার হোসেনের নেতৃত্বাধীন ঢাকার ৩ নম্বর বিশেষ জজ আদালতে বিচারাধীন।
বড়পুকুরিয়া কয়লাখনি দুর্নীতি মামলা
দিনাজপুরের বড়পুকুরিয়া কয়লাখনি থেকে কয়লা উত্তোলন, ব্যবস্থাপনা ও রক্ষণাবেক্ষণে ঠিকাদার নিয়োগে অনিয়ম এবং রাষ্ট্রের ১৫৮ কোটি ৭১ লাখ টাকা ক্ষতি ও আত্মসাতের অভিযোগে ২০০৮ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি শাহবাগ থানায় এ মামলা করা হয়। ওই বছর ৫ অক্টোবর ১৬ আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করে দুদক। বর্তমানে মামলাটি ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-২-এ অভিযোগ গঠনের শুনানির জন্য রয়েছে।
গুলশানে বোমা হামলার অভিযোগে মামলা
২০১৫ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি মুক্তিযোদ্ধা পরিষদ বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয় ঘেরাও কর্মসূচি পালনের জন্য গুলশানে সমবেত হয়। পরে নৌপরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খানের নেতৃত্বে মিছিল নিয়ে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয় ঘেরাও করার জন্য রওনা হলে আসামিরা হত্যার উদ্দেশ্যে তাদের ওপর বোমা নিক্ষেপ করে বলে অভিযোগ করা হয়। পরে ওই ঘটনায় বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া, ভাইস চেয়ারম্যান সেলিমা রহমান, খন্দকার মাহবুবুর রহমানসহ ১৪ জনের বিরুদ্ধে গুলশান থানায় মামলা করেন সড়ক পরিবহন মালিক-শ্রমিক ঐক্য পরিষদের নেতা ইসমাইল হোসেন। ঢাকার ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলাটি পুলিশ প্রতিবেদন দাখিলের অপেক্ষায় রয়েছে।
খুলনায় অগ্নিসংযোগের অভিযোগে মামলা
খুলনার ফুলতলা উপজেলায় বাসে অগ্নিসংযোগের ঘটনায় করা মামলায় খালেদা জিয়াকে হুকুমের আসামি করা হয়। ২০১৫ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি ফুলতলা থানার সাব-ইন্সপেক্টর খায়রুল বাশার বাদী হয়ে খালেদা জিয়াসহ মোট ৫৪ জনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাতপরিচয় আরও ৬০-৭০ জনকে আসামি করে মামলাটি করেন। বর্তমানে মামলাটি খুলনার ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে অভিযোগপত্র দাখিলের পর্যায়ে রয়েছে।
মানহানির দুই মামলা
শ্রমিক দিবসে রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জনসভায় বক্তব্য দেওয়ার সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছেলে ও তথ্য-প্রযুক্তিবিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়কে নিয়ে ‘মিথ্যা’ বক্তব্য দেওয়ার অভিযোগে খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে ঢাকার বিচারিক আদালতে বাংলাদেশ জননেত্রী পরিষদের সভাপতি এ বি সিদ্দিকী মানহানির মামলা করেন, যা বর্তমানে পুলিশের প্রতিবেদনের অপেক্ষায় রয়েছে।
এ ছাড়া সজীব ওয়াজেদ জয়ের অ্যাকাউন্টে ৩০ কোটি ডলার রয়েছে বলে ‘মিথ্যা’ বক্তব্য দেওয়ার অভিযোগে ২০১৬ সালের ৩ মে ‘আমরা মুক্তিযোদ্ধার সন্তান’-এর মুরাদনগর উপজেলা কমিটির সভাপতি শরিফুল আলম চৌধুরী খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে ১ কোটি টাকার মানহানির মামলা করেন। কুমিল্লার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলাটি প্রতিবেদনের জন্য অপেক্ষমাণ।
৪২ জনকে হত্যার অভিযোগে মামলা
২০ দলীয় জোটের আন্দোলনে রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার হয়ে মারা যাওয়া ৪২ জনকে হত্যার অভিযোগে এনে ২০১৫ সালের ২ ফেব্রুয়ারি খালেদা জিয়াসহ দলটির বেশ কয়েকজন জ্যেষ্ঠ নেতার বিরুদ্ধে মামলা করা হয়। বাংলাদেশ জননেত্রী পরিষদের সভাপতি এ বি সিদ্দিকী ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে এ মামলা করেন। মামলাটি বর্তমানে পুলিশের প্রতিবেদনের অপেক্ষায় রয়েছে।
পঞ্চগড়ে এক মামলা
২০১৪ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর ২০১৫ সালে গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের দলীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে অবরোধ কর্মসূচির ডাক দেওয়া হয়। এরপর থেকে খালেদা জিয়া, মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও রুহুল কবীর রিজভীকে হুকুমের আসামি করে পঞ্চগড়ের জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত-৩-এ মামলাটি করা হয়। পঞ্চগড়ের বোদা উপজেলার স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. সোহাগ মামলাটি করেন। মামলার তিন আসামির বিরুদ্ধে তাদের নির্দেশে দলীয় নেতা-কর্মীসহ সন্ত্রাসীরা পেট্রল বোমা দিয়ে মানুষ হত্যা ও নানাভাবে জানমালের ক্ষতিসাধনের পাশাপাশি রাষ্ট্রদ্রোহের মতো অপরাধ করেছেন বলে অভিযোগ আনা হয়। এ মামলাটিও পুলিশের প্রতিবেদনের অপেক্ষায় রয়েছে।
মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের নিয়ে কটাক্ষ, বঙ্গবন্ধুর অবদান প্রশ্নবিদ্ধ করার অভিযোগে মামলা
২০১৫ সালের ২১ ডিসেম্বর বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী মুক্তিযোদ্ধা দল আয়োজিত এক আলোচনা সভায় মুক্তিযুদ্ধে বঙ্গবন্ধুর অবদান এবং শহীদদের সংখ্যা নিয়ে বিভ্রান্তিকর তথ্য দিয়ে বক্তব্য দেন খালেদা জিয়া। পরের দিন খালেদা জিয়ার ওই বক্তব্য বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত হয়। ওই বক্তব্যে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের নিয়ে কটাক্ষ করা হয়েছে, স্বাধীনতা যুদ্ধে বঙ্গবন্ধুর অবদান এবং ভূমিকাকে প্রশ্নবিদ্ধ করা হয়েছে বলে অভিযোগ তুলে ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন জজ কোর্টে মামলা করা হয়।
ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত ও জাতিগত বিভেদ সৃষ্টির অভিযোগে দুই মামলা
২০১৪ সালের ১০ অক্টোবর খালেদা জিয়ার এক বক্তব্যের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ ও বিভিন্ন ধর্মাবলম্বীদের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত ও জাতিগত বিভেদ সৃষ্টির অভিযোগ ওঠে। পরে ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলা হয়।
নড়াইলে মানহানির মামলা
২০১৫ সালের ২১ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় ঢাকায় মুক্তিযোদ্ধাদের সমাবেশে খালেদা জিয়া স্বাধীনতা যুদ্ধে ৩০ লাখ শহীদের সংখ্যা নিয়ে বিতর্ক আছে বলে মন্তব্য করেন। এ ছাড়া একই সমাবেশে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নাম উল্লেখ না করে তাকে (বঙ্গবন্ধু) ইঙ্গিত করে খালেদা জিয়া বলেন, ‘তিনি স্বাধীনতা চাননি। পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হতে চেয়েছিলেন, স্বাধীন বাংলাদেশ চাননি।’
তার ওই বক্তব্য বিভিন্ন সংবাদপত্র ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় প্রচার হয়; যার পরিপ্রেক্ষিতে নড়াইলের কালিয়ার চাপাইল গ্রামের রায়হান ফারুকী ইমাম বাদী হয়ে খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে মানহানির মামলা করেন। ২০১৫ সালের ২৪ ডিসেম্বর নড়াইলের জেলা জজ আদালতে তিনি এ মামলা করেন। এ মামলাটিতেও পুলিশের প্রতিবেদন জমা পড়েছে।
‘মিথ্যা’ জন্মদিন পালনের অভিযোগে মামলা
১৫ আগস্ট খালেদা জিয়ার জন্মদিন পালনকে ভুয়া অভিযোগ করে ২০১৬ সালের ৩০ আগস্ট ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক গাজী জহিরুল ইসলাম ঢাকা চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলাটি দায়ের করেন। মামলাটিতে পুলিশের প্রতিবেদন আমলে নিয়েছেন আদালত। তবে নিম্ন আদালত থেকে এ মামলায় খালেদা জিয়া জামিনে আছেন।
বাংলাদেশের মানচিত্র, জাতীয় পতাকা ও মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃতির অভিযোগের মামলা
বাংলাদেশের মানচিত্র, জাতীয় পতাকা ও মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃত করার অভিযোগে ২০১৬ সালের ৩ নভেম্বর ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে একটি মামলা দায়ের করা হয়।
মানহানির আরেক মামলা
২০১৬ সালের ৩১ ডিসেম্বর রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে এক অনুষ্ঠানে খালেদা জিয়া বলেন, ‘জেনারেল জিয়াউর রহমান স্বাধীনতার ঘোষণা দেওয়ায় এ দেশের জনগণ যুদ্ধে নেমেছিল।’ অনুষ্ঠানে খালেদা জিয়া আরও বলেছিলেন, ‘আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে দেশে কোনো উন্নতি হয়নি। সারা দেশে উন্নয়নের নামে লুটপাট হয়েছে। এ ছাড়া আওয়ামী লীগ দলীয় লোকদের জঙ্গি বানিয়ে নিরীহ লোকজনকে হত্যা করছে।’
এ বক্তব্যকে কেন্দ্র করে খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মানহানির অভিযোগে মামলা করা হয়।
আরও পড়ুন:জুলাই সনদের খসড়া পর্যালোচনা করে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের কাছে নিজেদের মতামত জমা দিয়েছে বিএনপি। গতকাল বুধবার সন্ধ্যায় দলটির পক্ষ থেকে এই মতামত জমা দেওয়া হয়।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদের বরাত দিয়ে দলের মিডিয়া সেলের সদস্য শায়রুল কবির খান এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। এর আগে বিএনপির একটি সূত্র জানিয়েছিল দলটি ২১ আগস্ট তাদের মতামত জমা দেবে।
এদিকে জুলাই সনদের মতামত জমাদানের সময় আগামী ২২ আগস্ট বিকেল ৩টা পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। গতকাল বুধবার এই তথ্য জানানো হয়েছে।
এর আগে গত শনিবার মতামত চেয়ে জুলাই সনদের খসড়া রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে পাঠিয়েছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। সনদের পটভূমিতে পিলখানা হত্যাকাণ্ড, শাপলা চত্বর হত্যাকাণ্ড এবং ২০১৮ সালের কোটা আন্দোলনের কথা উল্লেখ করা হয়েছে।
জুলাই সনদের চূড়ান্ত খসড়ায় প্রস্তাবে বলা হয়েছে, এই সনদের কোনো বিধান, প্রস্তাব ও সুপারিশ সাংবিধানিক ও আইনগতভাবে বলবৎ হিসেবে গণ্য হবে বিধায় এর বৈধতা, প্রয়োজনীয়তা কিংবা জারির কর্তৃত্ব সম্পর্কে কোনো আদালতে প্রশ্ন তোলা যাবে না।
জুলাই সনদের যেসব সুপারিশ অবিলম্বে বাস্তবায়নযোগ্য বলে বিবেচিত, সেগুলো কোনো প্রকার কালক্ষেপণ না করে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে সরকার সম্পূর্ণরূপে বাস্তবায়ন করবে, তা বলা হয়েছে।
ঐকমত্য কমিশন বলছে, সনদে এমন অনেক বিষয় রয়েছে যেগুলো কোনো কোনো দল একমত হননি। সেসব বিষয়ে দলগুলো নোট অব ডিসেন্ট দিয়েছেন।
ওই সব বিষয়ও ‘নোট অব ডিসেন্ট’ বা ভিন্নমতের বিষয়গুলোও উল্লেখ করা হয়েছে জুলাই সনদের খসড়ায়।
পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচনে জনগণের অধিকার পরিপূর্ণ হবে না বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। থাইল্যান্ড থেকে চিকিৎসা শেষে গতকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ঢাকা হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এ মন্তব্য করেন।
পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচনের পক্ষ নয় বিএনপি এমনটা জানিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, পিআর পদ্ধতিতে এদেশের মানুষ অভ্যস্ত নয়, এতে জনগণের অধিকার পরিপূর্ণ হবে না। দেশে যে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংকট আছে তা থেকে উদ্ধারের একমাত্র পথ হচ্ছে একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন।
তিনি বলেন, ‘দেশের মানুষ নির্বাচন চায়, সংকট নিরসনের একমাত্র পথ দ্রুত নির্বাচন। যারা সংস্কার চাচ্ছে না, সেটা তাদের দলের ব্যাপার।
ডাকসু নির্বাচন নিয়ে তিনি বলেন, ‘সবার অংশগ্রহণে সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে সম্পন্ন হোক, এটাই প্রত্যাশা।’
এর আগে গত বুধবার সকালে থাই এয়ারওয়েজের একটি ফ্লাইটে স্ত্রীসহ চিকিৎসার জন্য ঢাকা ত্যাগ করেন তিনি। দেশে ফিরে সুস্থ আছেন বলেও জানান বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
নওগাঁ জেলা বিএনপির দ্বিবার্ষিক সম্মেলনের উদ্বোধন করা হয়েছে। সোমবার ১১ আগষ্ট দুপুর ১ টায় নওগাঁ কনভেনশন সেন্টারে এই সম্মেলনের অধিবেশনের উদ্বোধন ঘোষণা করেন বিএনপির রাজশাহী বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত ও চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মন্ডলীর সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুস সালাম
উদ্বোধনের শুরুতেই জাতীয় সংগীত ও দলীয় গান পরিবেশন করে সন্মান প্রদর্শন করা হয়। স্বাধীনতা যুদ্ধে সকল শহীদ ও জুলাই আন্দোলনে সকল শহীদদের আত্মার প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।
এই সম্মেলনে প্রধান অতিথি হিসেবে ভার্চুয়ালি যোগ দেবেন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। তিনি নতুনভাবে দল পরিচালনার পাশাপাশি নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে বিভিন্ন দিকনির্দেশনামূলক বক্তব্য দেবেন।
প্রধান বক্তা হিসেবে উপস্থিত থাকবেন সাবেক মন্ত্রী ও বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত আছেন রাজশাহী বিভাগের সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ শাহীন শওকত, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আমিরুল ইসলাম খান আলীম ও এ এইচ এম ওবায়দুর রহমান চন্দন।
এদিন বিকেল ৩টা থেকে শুরু হবে ভোট গ্রহণ। চলবে সন্ধ্যা ৬ টা পর্যন্ত। কাউন্সিলে সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক এবং দুটি সাংগঠনিক সম্পাদক পদে জেলার ১৪টি ইউনিটের ১ হাজার ৪১৪ ভোটার গোপন ব্যালটে জেলা বিএনপির নেতৃত্ব নির্ধারণ করবেন।
কাজেই সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক ও সাংগঠনিক সম্পাদকের গুরুত্বপূর্ণ পদ কারা পাচ্ছেন, কারা হাসবে জয়ের হাসি, কাদের নেতৃত্বে চলবে জেলা বিএনপির নেতাকর্মীদের সাংগঠনিক কার্যক্রম তা নিয়ে চলছে গুঞ্জন।
দীর্ঘ ১৫ বছর পর অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া জেলা বিএনপির সম্মেলন ঘিরে নেতাকর্মীদের মধ্যে উৎসবের আমেজ বিরাজ করছে। এতদিন নানা সীমাবদ্ধতায় সম্মেলন করতে না পারলেও পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে বেশ ঘটা করে সম্মেলনের আয়োজন করেছে দলটি। তাই সম্মেলন ঘিরে পুরো শহর সেজেছে নতুন কমিটির নেতৃত্বে আসা নেতাদের ছবি, ব্যানার, ফেস্টুন আর বিলবোর্ডে। এই সম্মেলন ঘিরে ১৭ বছর হামলা, মামলা, নির্যাতন ও কারাবরনে জর্জরিত নেতাকর্মীরা ফিরে পেয়েছেন প্রাণচাঞ্চল্য। কর্মীরাও মুখে আছেন নতুন নেতৃত্ব বাছাইয়ে।
এই সম্মেলনে নেতৃত্বে কারা আসছেন এ নিয়ে তৃনমূল থেকে শুরু করে শহরের রাজনৈতিক অঙ্গনে চলছে চুলচেরা বিশ্লেষণ। অনেক নেতাকর্মী ভাবছেন নতুন নেতৃত্ব আসবে, আবার কেউ কেউ ভাবছেন ধারাবাহিক নেতার মধ্যে দুই একজন জয়ী হতে পারেন।
তবে নেতাকর্মীরা বলছেন, যারা বিএনপির রাজনীতিতে রাজপথে ছিলেন, রাজপথ থেকে উঠে এসেছেন, রাজনীতিতে যাদের দলীয় পরিচয় বেশি, যারা কর্মী বান্ধব তারাই আসুক নেতৃত্বে। দলের দুর্দিনে যারা ত্যাগ স্বীকার করেছেন, নির্যাতন নিপীড়নের শিকার হয়েছেন তারা যেন সঠিক মূল্যায়ন পান। এছাড়াও সম্মেলনের মধ্য দিয়ে নতুন করে দলকে পুনরুজ্জীবিত ও সুসংগঠিত করে আগামী সংসদ নির্বাচনে বিএনপিকে বিজয়ী করতে ভূমিকা রাখবে এমন নেতৃত্ব চান নেতাকর্মীরা।
দলীয় সুত্রে জানা যায়, সর্বশেষ ২০১০ সালে জেলা বিএনপির দ্বিবার্ষিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। ওই সম্মেলনে কাউন্সিলরদের ভোটের মাধ্যমে সভাপতি নির্বাচিত হন সামসুজ্জোহা খান, সাধারণ সম্পাদক জাহিদুল ইসলাম এবং সাংগঠনিক সম্পাদক নির্বাচিত হন মামুনুর রহমান রিপন। ২০১৫ সালে ওই কমিটি বিলুপ্ত হওয়ার পর সম্মেলনের মাধ্যমে আর কোনো কমিটি গঠন হয়নি।
এরপর ২০২২ সালে আবু বক্কর সিদ্দিক নান্নুকে আহ্বায়ক ও বায়েজিদ হোসেন পলাশকে সদস্য সচিব করে গঠিত আহ্বায়ক কমিটির মাধ্যমে জেলা বিএনপির সাংগঠনিক কার্যক্রম চলছিল।
পট পরিবর্তনের পর বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্দেশনা অনুসারে, ঘোষিত সম্মেলন উপলক্ষে নির্বাচন পরিচালনা কমিটি গঠন করা হয়। গত রোববার (৩ আগষ্ট) তফসিল ঘোষণা করেন সম্মেলন পরিচালনা কমিটির প্রধান সমন্বয়কারী ও বগুড়া জেলা বিএনপির সভাপতি রেজাউল করিম বাদশা। পরের দিন সোমবার জেলা বিএনপির দলীয় কার্যালয়ে সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক ও সাংগঠনিক সম্পাদক এই দুইটি পদপ্রত্যাশী প্রার্থীদের মধ্যে মনোনয়নপত্র বিতরণ করা হয়। একই দিনে মনোনয়নপত্র জমা, যাচাই-বাছাই ও চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করা হয়।
উল্লেখ, সভাপতি পদপ্রত্যাশীরা হলেন- জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি নজমুল হক সনি, জেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক জাহিদুল ইসলাম ধলু, জেলা বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক আবু বক্কর সিদ্দিক নান্নু, জেলা বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক মাষ্টার হাফিজুর রহমান, জেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাসুদ হাসান তুহিন, পৌর বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক আবদুস শুকুর, জেলা বিএনপির সাবেক কোষাধ্যক্ষ এস এম মামুনুর রহমান ও জেলা বিএনপির সাবেক সদস্য এ বি এম আমিনুর রহমান।
সাধারণ সম্পাদক পদ পাওয়ার জন্য লড়ছেন চারজন। তারা হলেন- জেলা বিএনপির সাবেক সদস্য সচিব বায়েজিদ হোসেন পলাশ, জেলা বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক মামুনুর রহমান রিপন, জেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক শহিদুল ইসলাম ও আমিনুল হক বেলাল। এবং সাংগঠনিক সম্পাদকের দুটি পদের জন্য আটজন মনোনয়ন তুলেছেন। তারা হলেন শফিউল আজম (ভিপি) রানা, নূর-ই আলম, ফরিদুজ্জামান, খায়রুল আলম, শবনম মোস্তারী, সুলতান মামুনুর রশিদ, কামরুজ্জামান কামাল ও জহুরুল হক।
এদিকে এই সম্মেলনের আগের দিন রোববার (১০ আগস্ট) দুপুর ২টায় নওগাঁ জেলা প্রেস ক্লাব মিলনায়তনে সংবাদ সম্মেলন করে সম্মেলনের কাউন্সিলর বা ভোটার তালিকাকে ‘বিতর্কিত’ উল্লেখ করে সম্মেলনে সাধারণ সম্পাদকের পদ থেকে প্রার্থীতা প্রত্যাহারের ঘোষণা দিয়েছেন বিএনপি নেতা আমিনুল ইসলাম বেলাল।
জুলাই ঘোষণাপত্র অনুষ্ঠানে অংশ নেবেন বিএনপি’র শীর্ষ ৫ জন নেতা। দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের নেতৃত্বে স্থায়ী কমিটির ৫ সদস্য এই অনুষ্ঠানে অংশ নেবেন।
বিএনপি’র মিডিয়া সেলের সদস্য শায়রুল কবির খান এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
অন্যান্য সদস্যরা হলেন- বিএনপি’র স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, ডক্টর আব্দুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান ও সালাহউদ্দিন আহমদ।
এদিকে, সোমবার রাতে বিএনপি’র সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম স্থায়ী কমিটির বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। বৈঠকটি রাজধানীর গুলশানে বিএনপি’র চেয়ারপার্সনের কার্যালয়ে রাত সাড়ে ৮টায় শুরু হয়ে রাত সাড়ে ১০টায় শেষ হয়।
বৈঠকে ভার্চুয়ালি সভাপতিত্ব করেন বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।
বিএনপির চেয়ারপার্সন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানকে ঘেরাও করতে চাওয়া নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লা থানার বিএনপির সদস্য লুৎফর রহমান খোকাকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। মঙ্গলবার বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীর সই করা চিঠিতে এই বহিষ্কারাদেশ দেওয়া হয়। তবে বহিষ্কারের বিষয়টি বুধবার সকালে প্রকাশ পায়।
বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন জেলা বিএনপির যুগ্ম আহবায়ক মাসুকুল ইসলাম রাজীব। তিনি বলেন, বহিষ্কারের তথ্যটি সঠিক।
চিঠিতে বলা হয়, দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গ এবং দলীয় নীতি, আদর্শ ও সংহতির পরিপন্থি কার্যকলাপের জন্য নারায়ণগঞ্জ জেলার ফতুল্লা থানার বিএনপির সদস্য লুৎফর রহমান খোকাকে বিএনপির প্রাথমিক সদস্যসহ সব পর্যায়ের পদ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে।
এর আগে, গত ২৩ জুলাই বিকেলে নারায়ণগঞ্জের সদর উপজেলার ফতুল্লায় সোনালি সংসদ মাঠে বিএনপির সদস্য নবায়ন ও নতুন সদস্য সংগ্রহ অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন লুৎফর রহমান খোকা। তিনি বলেন, শাহ আলমের (নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনে মনোনয়ন প্রত্যাশী) জন্য আমরা নমিনেশন আনবো। প্রয়োজনে আমরা আত্মাহুতি দেবো কেন্দ্রীয় অফিসের সামনে। তারেক রহমান ও দেশনেত্রী খালেদা জিয়াকে ও বিএনপির মহাসচিবকে ঘেরাও করবো।
তিনি বলেন, বিএনপির সর্বোচ্চ মহলকে পরিষ্কার ভাষায় বলতে চাই, ফতুল্লাকে নিয়ে যদি কোনো ষড়যন্ত্র করা হয়, তাহলে কাউকে ছাড়া হবে না।
তিনি আরও বলেন, এখানে কোনো জোট চলবে না। এই খেলা আর খেলবেন না। ধানের শীষ ছাড়া ফতুল্লায় কিছু চলবে না। ফতুল্লার জনগণের আবেগ, আশা-আকাঙ্ক্ষা নিয়ে ছিনিমিনি খেলবেন না। ফতুল্লার মানুষদের প্রিয় নেতা শাহ আলমকে বাদ দিয়ে এখানে কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া মানেই জনগণের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা।
এদিকে এই ঘটনার দুই দিন পর বিএনপির শীর্ষ নেতাদের ঘেরাও করার মন্তব্যটি সঠিক হয়নি বলে স্বীকার করেন লুৎফর রহমান খোকা। তিনি বলেন, মন্তব্যটি স্লিপ অব টাং বলতে পারেন। নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের প্রায় ৮০ ভাগ ভোটার বিএনপির। এখানে যদি জোটের অন্য কাউকে দেওয়া হয়, তাহলে সেটা ভোটারদের জন্য কষ্টদায়ক। বিষয়টি কেন্দ্রকে বোঝাতে গিয়ে একটু বেশি বলে ফেলেছি। এটা আমার ঠিক হয়নি
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, জনগণের প্রতিনিধি অন্তর্ভুক্ত না করে এবং একটি সঠিক গণতান্ত্রিক কাঠামো জাতীয় নির্বাচনের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠা না করে কোনও প্রকৃত সংস্কার সম্ভব নয়।
শুক্রবার (২৫ জুলাই) এক আলোচনাসভায় বক্তব্য দিতে গিয়ে তিনি তাদের সমালোচনা করেন যারা মনে করেন, সংস্কার রাতারাতি বা কয়েকটি বৈঠকের মধ্য দিয়েই হয়ে যেতে পারে। তিনি বলেন, ‘সংস্কার একটি প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে সম্পন্ন করতে হয়। এটি একটি চলমান প্রক্রিয়া।’
বিএনপি নেতা বলেন, যদি সরকার মনে করে যে, তারা চাইলেই কাল থেকে পুলিশ ঘুষ নেওয়া বন্ধ করে দেবে, তাহলে সেটা হবে না। ‘আপনাকে এমন একটি কাঠামো তৈরি করতে হবে যেখানে ঘুষ নেওয়াকে নিরুৎসাহিত করা হয়।’
জিয়া পরিষদ এই আলোচনাসভার আয়োজন করে, যার শিরোনাম ছিল ‘জুলাই অভ্যুত্থান: প্রত্যাশা ও প্রাপ্তি’। এটি গত বছরের গণ-অভ্যুত্থানের প্রথম বার্ষিকী উপলক্ষে জাতীয় প্রেসক্লাবে অনুষ্ঠিত হয়।
ফখরুল দেশের উন্নয়নে বাধা হিসেবে বিদ্যমান আমলাতন্ত্রকে দায়ী করেন। তিনি বলেন, ‘আমাদের আমলাতন্ত্র উন্নয়নের একটি বড় বাধা। এটি একটি নেতিবাচক আমলাতন্ত্র এবং এটিকে একটি ইতিবাচক কাঠামোয় রূপান্তর করতে হবে। তা করতে হলে মূলত জনগণকে এই প্রক্রিয়ায় অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।’
বিএনপি নেতা বলেন, রাজনৈতিক দলগুলোর উচিত জনগণের কাছে ফিরে যাওয়া, তাদের চাহিদা বোঝা এবং সেই চাহিদাকে রাষ্ট্র পরিচালনায় প্রতিফলিত করা।
নির্বাচন চাওয়ার কারণে বিএনপিকে ঘিরে চলমান সমালোচনার প্রসঙ্গে ফখরুল বলেন, ‘আমরা নির্বাচন নিয়ে কথা বলা শুরু করতেই বলা হলো, বিএনপি শুধু নির্বাচন চায়। কিন্তু কেউ কি ভেবে দেখেছে, আমরা কেন নির্বাচন চাই?’
তিনি ব্যাখ্যা করে বলেন, নির্বাচন ছাড়া প্রকৃত জনপ্রতিনিধি নির্বাচন করা যায় না। ‘আর যদি প্রতিনিধি না থাকে, তাহলে তারা কীভাবে সংসদে যাবে? আর যদি নির্বাচিত সংসদ না থাকে, তাহলে কীভাবে জনগণের শাসন প্রতিষ্ঠা হবে?’
ফখরুল বলেন, ‘আপনি দেশ চালাতে বাড়ি ও বিদেশ থেকে কয়েকজন লোক ভাড়া করে আনতে পারেন না। এটি সম্ভব নয়।’
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, বাংলাদেশকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে এবং প্রতিটি সংকটকে সংহতি নিয়ে মোকাবিলা করতে হবে।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তাঁর ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এক পোস্টে বলেন, জাতির এই শোকের সময়ে আমি সকল গণতন্ত্রপন্থী সহযোদ্ধার প্রতি শান্ত ও সংহত থাকার আহ্বান জানাচ্ছি।
তিনি আরো বলেন, বিভেদমূলক সংঘাত কিংবা জনতার উচ্ছৃঙ্খল আচরণ বন্ধ করতে হলে আমাদের সহনশীলতা ও আত্মসংযমের ভিত্তিতে একটি শক্তিশালী সমাজব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে।
তারেক রহমান বলেন, নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্র রাজনৈতিক সংগঠনের কিছু সদস্যের মাধ্যমে জনতা ও পুলিশের মধ্যে উত্তেজনা সৃষ্টির এবং সহিংসতা উসকে দেওয়ার উদ্বেগজনক খবর পাওয়া যাচ্ছে। এসব গোষ্ঠীকে অনুরোধ করব, বাংলাদেশের ইতিহাসের এমন একটি শোকাবহ মুহূর্তকে নিজেদের স্বার্থে কাজে লাগানোর অপচেষ্টা থেকে বিরত থাকুন। এর পরিবর্তে জাতি হিসেবে ঐক্যবদ্ধ হওয়া এবং সহানুভূতি ও সংহতি প্রদর্শনের দিকেই আমাদের মনোযোগ দেওয়া উচিত।
তিনি বলেন, আমাদের শক্তি ব্যয় হোক নিখোঁজ প্রিয়জনদের খুঁজে বের করা, নিহতদের সঠিকভাবে তালিকাভুক্ত করা, আহতদের সর্বোত্তম চিকিৎসা নিশ্চিত করা এবং বিমান দুর্ঘটনার মূল কারণ নির্ধারণে কর্তৃপক্ষকে নিরপেক্ষ ও কার্যকর তদন্তের সুযোগ করে দেওয়ার কাজে।
তারেক রহমান বলেন, প্রাণহানির শিকার নিরীহ ব্যক্তিবর্গ এবং তাদের শোকসন্তপ্ত পরিবারগুলোর পাশে রয়েছে আমাদের হৃদয়ের গভীর সহানুভূতি। বাংলাদেশকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে এবং প্রতিটি সংকটকে সংহতি নিয়ে মোকাবিলা করতে হবে।
মন্তব্য