চলমান করোনা মহামারি সংকট ও আফগান পরিস্থিতি বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটের জন্য চ্যালেঞ্জ হলেও রোহিঙ্গা ইস্যুর স্থায়ী সমাধান না হওয়া পর্যন্ত এটি এজেন্ডা থেকে অদৃশ্য হবে না বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশে ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের (ইইউ) বিদায়ী রাষ্ট্রদূত রেন্সজে তিরিঙ্ক।
তিনি বলেছেন, ‘আমার কাছে ম্যাজিক রেসিপি বা ক্রিস্টাল বল নেই যে, নিমেষে এই পরিস্থিতির উন্নতি হবে। কিন্তু আমি নিশ্চিত করে বলতে পারি, এটি (রোহিঙ্গা ইস্যু) এজেন্ডা থেকে অদৃশ্য হয়ে যাবে না।’
বৃহস্পতিবার ‘বাংলাদেশ-ইউরোপীয় ইউনিয়ন সম্পর্কের ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা’ শীর্ষক অনলাইন আলোচনায় মূল বক্তা হিসেবে ইইউ দূত এসব কথা বলেন।
কসমস গ্রুপের প্রতিষ্ঠান কসমস ফাউন্ডেশন অ্যাম্বাসেডর লেকচার সিরিজের অংশ হিসেবে এই ওয়েবিনার আয়োজন করে।
বর্তমানে আফগানিস্তানের পরিস্থিতিও খুব গুরুত্বপূর্ণ উল্লেখ করে রাষ্ট্রদূত তিরিঙ্ক বলেন, ‘এর মানে এই নয় যে, রোহিঙ্গা ইস্যু অদৃশ্য হয়ে যাবে। আমি এটি অনুসরণ করতে থাকব।’
আলোচনায় উদ্বোধনী বক্তব্য দেন কসমস ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান এনায়েতুল্লাহ খান। সভাপতিত্ব করেন প্রখ্যাত কূটনীতিক ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক পররাষ্ট্রবিষয়ক উপদেষ্টা ড. ইফতেখার আহমেদ চৌধুরী।
এ ছাড়া আলোচক প্যানেলে আরও উপস্থিত ছিলেন সিপিডির বিশিষ্ট ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য, বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) সাবেক সভাপতি ড. রুবানা হক, পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান ড. জিয়াদি সাত্তার, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ইমতিয়াজ আহমেদ এবং কসমস ফাউন্ডেশনের ইমেরিটাস উপদেষ্টা সাবেক রাষ্ট্রদূত তারিক এ করিম।
এনায়েতুল্লাহ খান ক্রমবর্ধমান যুক্তরাষ্ট্র-চীন দ্বন্দ্ব, করোনা মহামারি, জলবায়ু পরিবর্তন এবং আফগানিস্তান-সংকটের মতো বিষয়গুলো তুলে ধরে বলেন, ‘মনে হচ্ছে রোহিঙ্গা শরণার্থী ইস্যুটি মানুষের মন থেকে অদৃশ্য হয়ে যাচ্ছে।’
রোহিঙ্গা ইস্যুকে অত্যন্ত জটিল উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘ভারত, চীন ও জাপান এই তিনটি গুরুত্বপূর্ণ দেশের সহযোগিতা ছাড়া রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধান করা যাবে বলে আমি মনে করি না।’
ইইউ রাষ্ট্রদূতের কাছে তিনি প্রশ্ন রেখে বলেন, ‘মিয়ানমারের সৃষ্ট এই সমস্যা সমাধানে ইইউ বাংলাদেশকে কী সহায়তা করতে পারে?’
জবাবে রাষ্ট্রদূত তিরিঙ্ক বলেন, ‘মিয়ানমারকে অবশ্যই প্রথমে একটি রাজনৈতিক সমাধান খুঁজে বের করতে হবে। তবে এটি খুবই দুঃখজনক যে ১ ফেব্রুয়ারি মিয়ানমারে একটি সামরিক অভ্যুত্থান ঘটে, যা সত্যিই এই অলোচনার ক্ষেত্রে এক বিরাট ধাক্কা।’
জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে এ নিয়ে চলা তৎপরতা সম্পর্কে রাষ্ট্রদূত বলেন, ‘দুর্ভাগ্যবশত তারা সেখানকার পরিস্থিতি দেখেছে এবং এটি খুব ইতিবাচক নয়।’
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ, ভারত, চীন এবং জাপানের সঙ্গে অংশীদার হিসেবে আলোচনা চালিয়ে যাওয়ার জন্য আমরা যোগাযোগ করছি। এটি আমাদের সব সময় এজেন্ডায় থাকে।’
আন্তর্জাতিক সহায়তা সংস্থা এবং জাতিসংঘের মাধ্যমে ইইউ রোহিঙ্গা সংকট এবং বাংলাদেশের কক্সবাজার জেলার স্থানীয় সম্প্রদায়ের জীবন-জীবিকার সহায়তায় উল্লেখযোগ্য তহবিল দিয়ে আসছে।
রোহিঙ্গা ইস্যুকে অর্থনৈতিক স্বার্থ থেকে বিচ্ছিন্ন করতে হবে এমন পরামর্শ দিয়ে অধ্যাপক ইমতিয়াজ আহমেদ বলেন, ‘মহামারি এবং রোহিঙ্গা দুটি বিষয় এখন বাংলাদেশের জন্য বড় উদ্বেগ এবং এই দুটি বিষয় বাংলাদেশের রাজনৈতিক অর্থনীতির সাথে জড়িত। বাংলাদেশ চায় রোহিঙ্গা ইস্যু এবং টিকা কূটনীতিতে ইইউ সক্রিয় ভূমিকা পালন করুক।’
তিনি বলেন, ‘ইউরোপের মূল্যবোধ, আইনের শাসন, সরকার পদ্ধতি এবং মানবাধিকারের প্রশ্নে মিয়ানমারের সঙ্গে ইইউর সম্পর্কের বিষয়টি আসলে মেলানো যায় না।
‘আমি বুঝতে পারছি না ইইউ পার্লামেন্ট কেন বর্তমান মিয়ানমারের সামরিক কর্মকর্তাদের উদ্ভট গণতন্ত্রকে সহায়তা করে। ইইউ মিয়ানমারের নির্বাচনেও সহায়তা করেছে। সামরিক কর্মকর্তারা যখন সংসদে বসেন তখন এটা গণতন্ত্র থাকে না। ইইউকে আরও কঠিন হওয়া উচিত ছিল এবং এটা নিয়ে প্রশ্ন তোলা যেত।’
অধ্যাপক ইমতিয়াজ বলেন, ‘বাংলাদেশ চায় রোহিঙ্গা ইস্যু এবং টিকা কূটনীতিতে ইইউ সক্রিয় ভূমিকা পালন করুক।’
তিনি বলেন, ‘যখন মিয়ানমারের কথা আসে প্রায় ৯০০ মানুষ হত্যার পরও ইইউ এখনও মিয়ানমারের সঙ্গে প্রায় একই ধরনের সম্পর্কের মধ্যে রয়েছে। আপনারা কেবল কিছু সামরিক কর্মকর্তাদের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন, যারা কখনোই ইইউ দেশগুলোতে যায় না এবং তাদের কোনো ব্যাংক অ্যাকাউন্টও নেই। আপনারা খুব সম্প্রতি মিয়ানমারকে ঋণ পরিশোধেও সহায়তা করেছেন।’
অধ্যাপক ইমতিয়াজ বলেন, ‘ইইউ মিয়ানমারের সঙ্গে ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে এবং এটি চীন ও থাইল্যান্ডের পর মিয়ানমারের তৃতীয় বৃহত্তম বাণিজ্য অংশীদার। আমি এখানে ব্যবসায়িক আগ্রহ এবং রাজনীতি দেখে বুঝতে পারি, ইইউ তার ব্যবসায়িক স্বার্থের কারণে রোহিঙ্গা ইস্যুতে মিয়ানমারকে সত্যিকার অর্থে চাপ দিতে পারছে না।’
তিনি বিদায়ী ইইউ রাষ্ট্রদূতকে ব্রাসেলসে ফিরে যাওয়ার পর রোহিঙ্গা ইস্যুকে অর্থনৈতিক স্বার্থ থেকে বিচ্ছিন্ন করার চেষ্টা করার আহ্বান জানান।
অধ্যাপক ইমতিয়াজ আরও বলেন, ‘শুধুমাত্র ব্যবসায়িক স্বার্থের কারণে ইইউ মিয়ানমারের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে যাবে না, যদিও ইরান ও উত্তর কোরিয়াসহ বিশ্বের বেশ কয়েকটি দেশে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘যতক্ষণ না পরিস্থিতি আরও উন্নত হয় যুক্তরাষ্ট্রের মতো ইইউ আফগানিস্তানের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে পারে, কিন্তু মিয়ানমারে তা করবে না। ৯০০ এরও বেশি লোক নিহত হয়েছে, কিন্তু আপনারা এখনও সেদিকে যাননি।’
তিনি বলেন, ‘নেদারল্যান্ডস ছাড়া ইইউ দেশগুলোর কেউই আন্তর্জাতিক আদালতে গাম্বিয়াকে প্রকাশ্যে সহায়তা করেনি। যদিও ইইউ সাময়িক রায়কে স্বাগত জানিয়েছে, কিন্তু তারা সহায়তা করছে না।’
অধ্যাপক ইমতিয়াজ বলেন, ‘দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর গণহত্যা ইস্যুতে সামগ্রিকভাবে ইউরোপ খুবই সক্রিয় ছিল, কিন্তু এখানে যখন মিয়ানমারের কথা আসে তখন তারা চুপ থাকছেন।’
এই আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞ বলেন, 'উইঘুরদের বিরুদ্ধে গণহত্যার ক্ষেত্রে আপনি চীনের সমালোচনাকারী, কিন্তু মিয়ানমারের ক্ষেত্রে আপনি চুপ। সুতরাং আমি মনে করি এটি দিন দিন ক্ষতির কারণ হচ্ছে এবং একপর্যায়ে জনগণ ইউরোপকে গুরুত্বসহকারে নেবে না এবং তাদের স্বার্থ ক্ষতিগ্রস্ত হবে।’
তিনি বলেন, ‘দ্বিতীয় উপায়টি হলো রোহিঙ্গা প্রবাসীদের নাগরিক সত্তা গঠনে সহায়তা করা। কারণ ইউরোপে বিশেষ করে জার্মানি, যুক্তরাজ্য এবং ফ্রান্সসহ বেশ কয়েকটি দেশে রোহিঙ্গা সংগঠন রয়েছে। ইউরোপের রোহিঙ্গা প্রবাসীরা বেশ সক্রিয় এবং ভালো অবস্থানে রয়েছেন।’
অধ্যাপক ইমতিয়াজ বলেন, ‘যখন একটি দেশ গণহত্যা করে তখন তা দ্বিপক্ষীয় সমস্যা হিসেবে থাকে না। কারণ সংজ্ঞা অনুসারে এটি অভ্যন্তরীণ সমস্যা হয়ে দাঁড়ায়। তাই আমি মনে করি, ইইউর একত্রিত হওয়ার সময় এসেছে এবং রোহিঙ্গাদের অংশগ্রহণে একটি আন্তর্জাতিক সম্মেলন ডাকা উচিত। ওই সম্মেলন থেকে একটি নাগরিক সত্তা গঠন করা যেতে পারে।’
মিয়ানমারের ভূরাজনীতিতে ভারত, চীন এবং জাপান এই তিনটি দেশ গুরুত্বপূর্ণ বলেও ইমতিয়াজ আহমেদ উল্লেখ করেন।
তিনি বলেন, ‘রাষ্ট্রদূত তিরিঙ্ক যখন ব্রাসেলসে ফিরে যাবেন তখন সমস্যাটি সমাধানের জন্য সক্রিয়ভাবে কাজ করতে পারেন। কারণ রোহিঙ্গাদের দুর্দশা তিনি নিজের চোখে দেখেছেন।’
সাবেক রাষ্ট্রদূত তারিক করিম বলেন, ‘দুটি বড় সমস্যাগ্রস্ত দেশ মিয়ানমার এবং আফগানিস্তানের পাশে বাংলাদেশের অবস্থান। এই দুটি সমস্যা সমগ্র অঞ্চলকে অস্থিতিশীল করে তুলতে পারে। এর প্রভাব দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় নিরাপত্তায় এবং বিশ্বব্যাপী অনেক প্রভাব ফেলবে।’
তিনি ইইউকে শুধু বিশ্বব্যাপী নয়, দক্ষিণ এশিয়া এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় তাদের ভূমিকা পুনর্মূল্যায়নের আহ্বান জানান।
রাষ্ট্রদূত তিরিঙ্ক অন্যান্য অংশীদারদের সঙ্গে আলোচনায় রোহিঙ্গা ইস্যুতে বাংলাদেশকে সক্রিয় সহযোগিতা দেয়ার আশ্বাস দিয়ে আলোচনা শেষ করেন।
আরও পড়ুন:
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগরে উপজেলা যুবদলের সাবেক সভাপতি ও উপজেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমান মুকুল দুর্বৃত্তদের গুলিতে গুরুতর আহত হয়েছেন।
শুক্রবার (২৩ অক্টোবর ২০২৫) রাত ৮টার দিকে নবীনগর পৌরসভার ৪নং ওয়ার্ডের পদ্মপাড়া এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, রাত সাড়ে ৮টার দিকে নবীনগর বাজার থেকে রিকশাযোগে নিজ বাড়িতে ফেরেন মফিজুর রহমান মুকুল। বাড়ির গেইটের সামনে রিকশা থেকে নামার সঙ্গে সঙ্গে ওত পেতে থাকা দুর্বৃত্তরা তার পিঠে অস্ত্র ঠেকিয়ে পরপর দুটি গুলি করে পালিয়ে যায়। এতে তিনি মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। ঘটনাস্থল থেকে পুলিশ তিনটি গুলির খোসা উদ্ধার করেছে।
চিৎকার শুনে আশপাশের লোকজন ছুটে এসে রক্তাক্ত অবস্থায় তাকে উদ্ধার করে নবীনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যায়। পরে তার অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়।
গুলিবিদ্ধ মফিজুরের বড় ভাই মিজানুর রহমান বলেন,“মানুষের চিৎকার শুনে বাইরে এসে দেখি ভাই রক্তাক্ত অবস্থায় মাটিতে পড়ে আছেন। দ্রুত তাকে হাসপাতালে নিয়ে যাই।”
নবীনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাহিনুর ইসলাম জানান,ঘটনার খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। তদন্ত চলছে এবং জড়িতদের শনাক্তে চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।”
নবীনগর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কর্তব্যরত চিকিৎসক জানান, মফিজুর রহমানের পিঠের নিচে কোমরের কাছে দুটি গুলি লেগেছে। অতিরিক্ত রক্তক্ষরণের কারণে তার রক্তচাপ অত্যন্ত কম ছিল।
জানা যায়, শুক্রবার রাতে উপজেলার বিটঘর ও শিবপুর ইউনিয়নে দলীয় কর্মসূচি শেষে তিনি নিজ বাড়ি পদ্মপাড়ায় ফিরছিলেন। বাড়ির কাছাকাছি পৌঁছালে পেছন থেকে দুর্বৃত্তরা গুলি চালিয়ে পালিয়ে যায়।
স্থানীয় বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা এ হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়ে দ্রুত হামলাকারীদের গ্রেপ্তারের দাবি জানিয়েছেন।
বাঙ্গালীর ইলিশের রাজ্য হিসেবে খ্যাত লক্ষ্মীপুরের রামগতি-কমলনগরের মেঘনায় জাটকা ও মা-ইলিশ রক্ষায় ২২ দিনের সরকারি নিষেধাজ্ঞা শেষ হবে আজ (২৫ অক্টোবর) শনিবার রাত ১২ টায়। নিষেধাজ্ঞা শেষে ইলিশ শিকারে নদীতে নামার প্রস্তুতি নিচ্ছেন এ অঞ্চলের জেলেরা।
গত ৩ অক্টোবর রাত ১২ টা থেকে ২৫ অক্টোবর রাত ১২ টা পর্যন্ত মোট ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা শেষ হচ্ছে আজ শনিবার। এই ২২ দিনে বেশীরভাগ জেলেরা ইলিশ ধরা থেকে বিরত থাকলেও রামগতি উপজেলা মৎস্য অফিসের সহকারী আব্দুজ্জাহের ও বড়খেরী নৌ-পুলিশ ফাঁড়ির নিয়োগকৃত দালাল ও যুবলীগ নেতা মোহাম্মদ ইসমাইলের সেল্টারে রামগতি মাছঘাট, বয়ারচর ব্রীজঘাট, গাবতলী ঘাট, টাংকিরঘাট সহ মেঘনা নদীর কয়েকটি পয়েন্টে নৌকা প্রতি ১০ থেকে ১৫ হাজার করে টাকা নিয়ে অবাধে মা-ইলিশ নিধন করার অভিযোগ রয়েছে। অভিযানের শেষ দুই দিন জাটকা ও মা-ইলিশ নিধনের প্রতিযোগিতায় নামেন বড়খেরী নৌ-পুলিশ ও মৎস্য অফিস। গতকাল শুক্রবার (২৪ অক্টোবর) বেশ কিছু নৌকা আটক করলেও তাদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা না নিয়ে নৌকা প্রতি ১০ হাজার টাকা নিয়ে ছেড়ে দেয় নৌ-পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ সফিকুর রহমান। এমনটাই জানিয়েছে ২ জন জেলে। এতে মৎস্য সম্পদ রক্ষায় সরকারের দেওয়া নিষেধাজ্ঞা প্রশ্নবিদ্ধ হয়। খোদ দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্তৃপক্ষরাই এ নিষেধাজ্ঞা অমান্য করাই জনমনে ক্ষোভ-অসন্তোষ দেখা গেছে।
এদিকে নিষেধাজ্ঞা শেষে জেলেরা নদীতে মাছ শিকারের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। শেষ মুহূর্তে ব্যস্ত সময় পার করছেন জেলেরা। নৌকা-ট্রলার ধোয়ামোছার কাজে ব্যস্ত তারা। অনেকেই জাল বুনতে দেখা গেছে।
রামগতি ও কমলনগর উপজেলার কয়েকটি জেলে পল্লীতে গিয়ে এমন চিত্র দেখা গেছে, কেউ জাল ও মাছ ধরার নৌকা মেরামত করে আগেই প্রস্তুতি সেরে নিচ্ছেন,আবার পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করা হয়েছে নদী পাড়ের মাছের আড়তগুলো। কয়েক ঘন্টা পর নদীতে নামবেন তারা। তাই এখন দম ফালানো সময় নেই তাদের। অভিযান সফল হওয়ায় আগামীতে ইলিশ উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে বলে মনে করছেন উপজেলা মৎস্য অধিদপ্তর।
উপজেলা মৎস্য অফিস সূত্রে জানা গেছে, কমলনগরে ১৪ হাজার ৯৮ জন নিবন্ধিত জেলে রয়েছে। আর রামগতিতে নিবন্ধিত জেলের সংখ্যা ২০ হাজার ৩৬০ জন। দুই উপজেলায় মোট ৩৪ হাজার ৪৫৮ জন জেলে রয়েছে।
আলেকজান্ডার মাছঘাটের জেলে রবিউল মাঝি জানান,অন্যবারের তুলনায় এবারের নিষেধাজ্ঞায় ছিল নড়েবড়ে। এ কারণে প্রচুর জেলে নদীতে মা-ইলিশ শিকার করতে পেরেছে। ফলে আমরা যারা নিষেধাজ্ঞা মেনে নদীতে যায়নি,তারা কেউ মহাজন থেকে, কেউ এনজিও থেকে উচ্চ সুদে ঋণ নিয়ে সংসার চালিয়েছি।
বিবিরহাট উছখালী ঘাটের জেলে মফিজ মাঝি জানান, এই ২২ দিন অনেক কষ্ট করে সংসার চালিয়েছি। সরকার সামান্য কিছু চাল দেয়, তা দিয়ে তার ৯ জনের সংসার চলেনা। নিষেধাজ্ঞা শেষ হওয়ায় বেশ খুশি তিনি।
কমলনগর উপজেলার লুধুয়া মাছঘাটের জেলে নিজাম উদ্দিন বলেন আমার তিনটা ছোট বাচ্চা, স্ত্রী, মা সবাই তাকিয়ে থাকে আমার রোজগারের দিকে। নিষেধাজ্ঞার ২২ দিন একটি এনজিও থেকে ২০ হাজার টাকা সুদের উপর ঋণ নিয়ে চলেছি। নিষেধাজ্ঞা শেষ এখন নদীতে গিয়ে ওই ঋণ পরিশোধ করতে হবে সংসারও চালাতে হবে।
মৎস্য অফিস সুত্রে জানা যায়, লক্ষ্মীপুরের রামগতির আলেকজান্ডার থেকে চাঁদপুরের ষাটনল এলাকার ১০০ কিলোমিটার পর্যন্ত ৩ অক্টোবর রাত ১২ টা থেকে ২৫ অক্টোবর মোট ২২ দিন মেঘনা নদীতে সব ধরনের মাছ ধরা নিষিদ্ধ ছিল। এই ১০০ কিলোমিটার মেঘনা নদী এলাকাকে ইলিশের অভয়াশ্রম হিসেবে ঘোষণা করছে সরকার। নিষেধাজ্ঞার সময় ওইসব এলাকায় সব রকমের ইলিশ সংরক্ষণ, আহরণ, পরিবহন, বাজারজাতকরণ ও মজুতকরণ নিষিদ্ধ ছিল।
কমলনগর উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা তুর্য সাহা ও রামগতি উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মোঃ সৌরব-উজ জামান বলেন, ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা সফলতার সাথে শেষ হয়েছে। মৎস্য বিভাগ, জেলা-উপজেলা প্রশাসন, নৌ-পুলিশ ও কোস্টগার্ডের সমন্বয়ে প্রতিদিন অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে।
ফিলিস্তিনের গাজায় যুদ্ধ-পরবর্তী সময়ে নেতৃত্ব দিতে চায় সৌদি আরব। হামাসকে নিরস্ত্র ও প্রভাবহীন করার পাশাপাশি ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষকে (পিএ) আর্থিক ও লজিস্টিক সহায়তা দিয়ে পুনরায় শক্তিশালী করতে চায় রিয়াদ। সৌদি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক গোপন প্রতিবেদন সংবাদমাধ্যম মিডল ইস্ট আইয়ের হাতে এসেছে। সেখানেই এই পরিকল্পনার কথা উঠে এসেছে।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, সৌদি আরব গাজায় একটি আন্তর্জাতিক শান্তিরক্ষী বাহিনী মোতায়েনের উদ্যোগকে সমর্থন করবে। এমন একটি বাহিনীতে সৌদি আরবসহ অন্য আরব ও মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ অংশ নিতে পারে।
এতে বলা হয়, গাজা উপত্যকা ও ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে স্থিতিশীলতা বাড়াতে সৌদি আরব নিজের দৃষ্টিভঙ্গি উপস্থাপন করতে চায়। এটি বাস্তবায়নের অংশ হিসেবে গাজার শাসনব্যবস্থায় হামাসের ভূমিকা কমানো এবং ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষকে এমনভাবে সংস্কার করা হবে, যাতে ১৯৬৭ সালের সীমানার ভিত্তিতে জেরুজালেমকে রাজধানী করে একটি স্বাধীন ও সার্বভৌম ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র গঠনের জন-আকাঙ্ক্ষা পূরণ হয়।
সৌদি আরব মনে করে, হামাস শান্তি প্রচেষ্টাকে বাধাগ্রস্ত করছে এবং বিভাজনকে আরো গভীর করছে, তাই গোষ্ঠীটির প্রভাব কমানো জরুরি। হামাসকে নিরস্ত্র করার কাজটি হবে আন্তর্জাতিক ও আঞ্চলিক চুক্তির মাধ্যমে ধাপে ধাপে, যা নিরপেক্ষতা নিশ্চিত করবে।
ধীরে ধীরে গাজায় প্রশাসনিক দায়িত্ব ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের হাতে তুলে দিলে হামাসের প্রভাব কমবে। এই প্রক্রিয়াকে দুই রাষ্ট্রভিত্তিক সমাধানের সঙ্গে সংযুক্ত করার কথা বলা হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পুরো উদ্যোগটি মিসর, জর্ডান ও ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের সঙ্গে পরামর্শের ভিত্তিতে বাস্তবায়ন করা হবে। এ বিষয়ে নির্দেশনা দিয়েছেন সৌদি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রভাবশালী কর্মকর্তা মানাল বিনতে হাসান রাদওয়ান।
ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ ২০০৭ সালের পর থেকে গাজায় কোনো উপস্থিতি বজায় রাখতে পারেনি। সে সময় হামাসের নির্বাচনী বিজয়কে কেন্দ্র করে ফাতাহ ও হামাসের সংঘর্ষ শুরু হয়।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দুর্নীতি মোকাবিলা, দক্ষতা বৃদ্ধি এবং সব ফিলিস্তিনি গোষ্ঠীর প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করার মাধ্যমে সৌদি আরব ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের প্রতিষ্ঠানগুলোতে সংস্কার আনতে চায়। সৌদি ফিলিস্তিনি জনগণের মৌলিক সেবা নিশ্চিত করতে আর্থিক ও কারিগরি সহায়তাও দেবে। এ ছাড়া ‘ফিলিস্তিনি জাতীয় সংলাপের’ আহ্বান জানানো হয়েছে, যাতে বিভিন্ন গোষ্ঠী ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের ছাতার নিচে ঐক্যবদ্ধ হতে পারে। সৌদি আরব এই সংলাপকে সহায়তা করতে আঞ্চলিক কর্মশালা ও সম্মেলনের আয়োজন করবে।
তবে হামাসকে এই সংলাপে অন্তর্ভুক্ত করা হবে কি না, সে বিষয়ে কোনো উল্লেখ নেই। পুরো প্রতিবেদনে ইসরাইলের নাম একবারও আসেনি।
কূটনৈতিক প্রেক্ষাপট
প্রতিবেদনটিতে যে তারিখ উল্লেখ ছিল, এর আগের দিনই জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে সৌদি পররাষ্ট্রমন্ত্রী প্রিন্স ফয়সাল বিন ফারহান গাজায় ইসরাইলের গণহত্যা বন্ধে অবিলম্বে আন্তর্জাতিক পদক্ষেপের আহ্বান জানিয়েছিলেন।
গ্রীষ্মকালে সৌদি আরব ও ফ্রান্স যৌথভাবে গাজার জন্য একটি শান্তি পরিকল্পনা প্রস্তাব করে, যা চলমান গণহত্যা বন্ধ, আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা বাহিনী মোতায়েন এবং ইসরাইল-ফিলিস্তিন সংলাপ পুনরায় চালুর আহ্বান জানায়।
তবে অক্টোবরের শুরুতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তার নিজস্ব যুদ্ধবিরতি চুক্তি কার্যকর করেন, যেখানে কয়েকটি মধ্যপ্রাচ্যের রাষ্ট্র সহযোগিতা করে। ওই চুক্তিতে সৌদি-ফরাসি প্রস্তাবের অনেক অংশই অন্তর্ভুক্ত করা হয়।
চুক্তি অনুযায়ী, যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার পর বন্দি বিনিময় ও আংশিক ইসরাইলি সেনা প্রত্যাহার ঘটে। হামাস নিরস্ত্রীকরণের কথা বলা হয় চুক্তিতে। তবে হামাস নেতারা স্পষ্টভাবে প্রত্যাখ্যান করে বলেছেন, ইসরাইলি দখল শেষ হয়ে একটি স্বাধীন ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত না হওয়া পর্যন্ত নিরস্ত্রীকরণ সম্ভব নয়।
জাতিসংঘ অধিবেশনের ফাঁকে ট্রাম্প জর্ডান, সংযুক্ত আরব আমিরাত, ইন্দোনেশিয়া, পাকিস্তান, তুরস্ক, সৌদি আরব, কাতার ও মিসরসহ বিভিন্ন আরব ও মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশের নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেন। সেখানে তিনি গাজায় শান্তিরক্ষী বাহিনী গঠনে এসব দেশের সেনা পাঠানোর আহ্বান জানান।
পরে যুদ্ধবিরতি কার্যকর হলে মিসরের শারম আল শেখে গাজার ভবিষ্যৎ নিয়ে এক শীর্ষ বৈঠক ডাকা হয়। তবে সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ বিন জায়েদ আল নাহিয়ান বৈঠকে অংশ নেননি।
মিসর, সৌদি ও আমিরাতি সূত্রগুলো মিডল ইস্ট আইকে জানায়, তাদের অনুপস্থিতির কারণ ছিল চুক্তিতে প্রত্যাশিত প্রভাব ও ভূমিকা না পাওয়া নিয়ে অসন্তুষ্টি।
অঞ্চলের সবচেয়ে ধনী রাষ্ট্র হিসেবে সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাতকেই গাজার মানবিক ত্রাণ ও পুনর্গঠনের মূল ব্যয় বহন করতে হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
ইসরাইলের প্রতিক্রিয়া
এদিকে বৃহস্পতিবার ইসরাইলের কট্টর ডানপন্থী অর্থমন্ত্রী বেজালেল স্মোত্রিচ বলেছেন, সৌদি আরব যদি ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার বিনিময়ে সম্পর্ক স্বাভাবিক করতে চায়, তবে ইসরাইল তা প্রত্যাখ্যান করবে। সূত্র : মিডল ইস্ট আই
তিনতলা ভবন নির্মাণ শেষে হস্তান্তরের দুই বছর পেরিয়ে গেলেও জয়পুরহাটের ক্ষেতলাল উপজেলার মেডিকেল অ্যাসিস্ট্যান্ট ট্রেনিং স্কুলের (ম্যাটস) কার্যক্রম এখনো চালু হয়নি। সেখানে নেই কোন আসবাবপত্র ও বিদ্যুৎ–সংযোগ। পর্যাপ্ত জনবলও নিয়োগ দেওয়া হয়নি।
সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বলছে, আগামী বছর থেকে ম্যাটস চালুর সম্ভাবনা আছে। প্রাথমিক পর্যায়ে ম্যাটসে রেসিডেনসিয়াল ফিল্ড সাইট ট্রেইনিংয়ে (আরএফএসটি) কার্যক্রম শুরু হতে পারে। এরপর পূর্ণাঙ্গভাবে শিক্ষার্থী ভর্তি ও পাঠদানের প্রস্তুতি নেওয়া হবে। স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের তত্ত্বাবধানে ৩০ কোটি ৫৬ লাখ টাকা ব্যয়ে ২০২০ সালে জয়পুরহাট-মোকামতলা আঞ্চলিক মহাসড়কের পাশে ক্ষেতলাল উপজেলার বটতলীতে ম্যাটসের নির্মাণকাজ শুরু হয়।
কাজটি সম্পন্ন করে ময়মনসিংহের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এম এস এন্টারপ্রাইজ। নির্মাণ শেষে ২০২৩ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর ভবনটি তৎকালীন জয়পুরহাট সিভিল সার্জন ওয়াজেদ আলীর কাছে হস্তান্তর করা হয়। গত ২০ জানুয়ারি কে এম জোবায়ের গালিবকে প্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষ হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে, তবে এখনো অন্য কোনো কর্মকর্তা বা কর্মচারী নিয়োগ দেওয়া হয়নি। প্রতিষ্ঠানটিতে একটি একাডেমিক ভবন, অধ্যক্ষ ও উপাধ্যক্ষের দুটি পৃথক বাসভবন, ছাত্রছাত্রীদের জন্য দুটি আবাসিক হল, গ্যারেজ ও অন্যান্য ভবন নির্মাণ করা হয়েছে।
স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের বগুড়ার নির্বাহী প্রকৌশলী মো. নজরুল ইসলাম বলেন, ক্ষেতলাল মেডিকেল অ্যাসিস্ট্যান্ট ট্রেনিং স্কুল ভবন ৩০ কোটি ৫৬ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মিত হয়েছে। ২০২৩ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ম্যাটস বুঝিয়ে দিয়েছেন।
স্থানীয় কয়েকজন ব্যক্তি জানান, ম্যাটস হস্তান্তরের পর কোনো নিরাপত্তাকর্মী ছিলেন না। কেউ না থাকায় রাতের বেলায় কয়েক দফায় ম্যাটসে চুরির ঘটনা ঘটেছে। দ্রুত চালু করা না গেলে অযত্ন আর অবহেলায় প্রতিষ্ঠানটি নষ্ট হয়ে হবে।
বটতলী এলাকার মিনহাজুল মুকিত বলেন, যদি চালুই করতে না পারে, তাহলে কোটি কোটি টাকা ব্যয়ে প্রতিষ্ঠানটি নির্মাণ করার কোন প্রয়োজন ছিল না।
ম্যাটসের অধ্যক্ষ কে এম জোবায়ের গালিব বলেন, আমাকে গত জানুয়ারিতে এখানে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এখনো অন্যান্য কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগ দেওয়া হয়নি। আসবাব ও বিদ্যুৎ–সংযোগ নেই। প্রতিষ্ঠানটি দ্রুত চালুর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের পরিকল্পনা বিভাগের পরিচালক বরাবরে চিঠি দেওয়া হয়েছে। আগামী বছর প্রতিষ্ঠানটি চালু হতে পারে। প্রাথমিক পর্যায়ে ম্যাটসে রেসিডেনসিয়াল ফিল্ড সাইট ট্রেনিংয়ের কার্যক্রম শুরু হতে পারে।
জয়পুরহাট সিভিল সার্জন আল মামুন বলেন, ম্যাটস নির্মাণের পর তাদের কাছে হস্তান্তর করা হয়। সেখানে এখন অধ্যক্ষ নিয়োগ দিয়েছে কর্তৃপক্ষ। জানামতে, আপাতত ম্যাটসের কার্যক্রম থাকবে না। রেসিডেনসিয়াল ফিল্ড সাইট ট্রেইনিংয়ের কার্যক্রম শুরু হতে পারে।
প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, শান্তি ও বহুপাক্ষিকতার যৌথ আকাঙ্ক্ষা পূরণের জন্য জাতিসংঘকে ক্রমাগত বিকশিত হতে হবে এবং সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে এগিয়ে যেতে হবে।
তিনি বলেন, ‘যদি জাতিসংঘ আমাদের সবার শান্তি ও বহুপাক্ষিক সহযোগিতার আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়ন করতে চায়, তবে তাকে অবশ্যই পরিবর্তিত বিশ্ব বাস্তবতার সঙ্গে অভিযোজিত হতে হবে। আমরা জাতিসংঘ সংস্কারের পক্ষে— যাতে এটি আরও গতিশীল, সমন্বিত এবং পরিবর্তনশীল বৈশ্বিক পরিস্থিতিতে সবার প্রত্যাশা পূরণে সক্ষম হয়।’
প্রধান উপদেষ্টা ২৪ অক্টোবর জাতিসংঘ দিবস উপলক্ষ্যে দেওয়া এক বাণীতে এ কথা বলেন। এ বছর জাতিসংঘ প্রতিষ্ঠার ৮০তম বার্ষিকী পালন করা হচ্ছে।
তিনি বলেন, ‘এই তাৎপর্যপূর্ণ দিনে আমরা অঙ্গীকার করছি যে, জাতিসংঘ সনদে কল্পিত শান্তিপূর্ণ ও স্থিতিশীল বিশ্ব গড়ে তুলতে বাংলাদেশ তার দায়িত্ব পালন অব্যাহত রাখবে।’
অধ্যাপক ইউনূস বাংলাদেশের জনগণের পক্ষ থেকে জাতিসংঘের সদস্য রাষ্ট্রসমূহ, জাতিসংঘ সব অংশীদার এবং সংশ্লিষ্ট সব পক্ষকে ‘জাতিসংঘ দিবস’-এর শুভেচ্ছা জানান।
তিনি বলেন, ‘এ দিনটি হলো ভয় ও অভাবমুক্ত বিশ্ব গড়ে তোলার অঙ্গীকার নতুন করে স্মরণ করার একটি সুযোগ। একই সঙ্গে জাতিসংঘ যে বহুপাক্ষিক সহযোগিতা ও ঐকমত্যের চেতনা বহন করে, তা পুনরুজ্জীবিত করারও সময়।’
গত আট দশকে জাতিসংঘ তার কার্যক্রমের পরিধি উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি করেছে এবং বিশ্বজুড়ে সম্পৃক্ততা আরও গভীর করেছে বলে মন্তব্য করেন প্রধান উপদেষ্টা।
তিনি বলেন, ‘জাতিসংঘ শান্তি ও নিরাপত্তা রক্ষা, মানবাধিকার সুরক্ষা এবং টেকসই উন্নয়ন ও মানবকল্যাণে এক অগ্রণী ভূমিকা রেখেছে।’
অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ১৯৭৪ সালে জাতিসংঘের সদস্যপদ পাওয়ার পর থেকে বাংলাদেশ একটি সক্রিয়, দায়িত্বশীল ও অবদানশীল সদস্য রাষ্ট্র হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছে।
তিনি বলেন, ‘শান্তির সংস্কৃতির পতাকা হাতে নিয়ে বাংলাদেশ বিশ্বের সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনগুলোতে অংশ নিয়েছে এবং নীল হেলমেটধারী দেশগুলোর মধ্যে অন্যতম শীর্ষ অবদানকারী দেশ হিসেবে অবস্থান করছে।’
‘আমাদের অনেক সাহসী শান্তিরক্ষী বিশ্বে শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য সর্বোচ্চ আত্মত্যাগ করেছেন,’ যোগ করেন অধ্যাপক ইউনুস।
তিনি বলেন, টেকসই উন্নয়ন, বাণিজ্য কিংবা জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলার ক্ষেত্রেই হোক—বাংলাদেশসহ বৈশ্বিক দক্ষিণের দেশগুলো নিয়মভিত্তিক বহুপাক্ষিক ব্যবস্থায় বিকশিত হয়।
‘তবে উদ্বেগের বিষয় হলো, একতরফা সিদ্ধান্ত ও দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কে বৈষম্যমূলক আচরণের ফলে বিশ্বে উত্তেজনা বেড়ে চলেছে,’ তিনি মন্তব্য করেন।
সাম্প্রতিক সংঘাতসমূহ বিশ্বকে গভীর অনিশ্চয়তার মুখে ফেলেছে উল্লেখ করে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘আমাদের স্বীকার করতে হবে যে বহুপক্ষীয় কূটনীতি এখন কঠিন পরীক্ষার মুখে। চরম জাতীয়তাবাদ ও মানবিক কষ্টের প্রতি উদাসীনতা মানবজাতির দীর্ঘ সংগ্রামে অর্জিত অগ্রগতিকে ধ্বংস করছে।’
তিনি বলেন, ‘আজ বিশ্বের মানুষ গাজার এক ভয়াবহ গণহত্যার সরাসরি সম্প্রচার প্রত্যক্ষ করছে।’
অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ‘আমাদের নিজস্ব অঞ্চলেও আমরা রোহিঙ্গাদের অধিকারবঞ্চনা ও নির্যাতনের সাক্ষী। এটি সাংস্কৃতিক পরিচয়ভিত্তিক রাজনীতির ফল। এ বিষয়ে আমরা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের নতুন মনোযোগ কামনা করেছি।’
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে বৈঠক করছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) একটি প্রতিনিধি দল। শনিবার সকাল ১০টার দিকে জাতীয় সংসদ ভবন এলাকায় ঐকমত্য কমিশনের কার্যালয়ে এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
এনসিপির প্রতিনিধি দলে থাকবেন—দলের যুগ্ম আহ্বায়ক সারোয়ার তুষার, জাবেদ রাসিন, খালেদ সাইফুল্লাহ ও যুগ্ম সদস্য সচিব জহিরুল ইসলাম মুসা।
বৈঠকে এনসিপির প্রতিনিধি দল জুলাই সনদের বাস্তবায়ন আদেশ, আইনি ভিত্তিসহ সনদের নানা বিষয়ে আলোচনা করবেন বলে জানা গেছে।
নওগাঁর ধামইরহাটে গরুবোঝাই ইঞ্জিন চালিত ভটভটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে খাদে পড়ে চালকসহ দুইজন মারা গেছে। শনিবার সকাল সাড়ে ৭টায় উপজেলার বিহারীনগর বাইপাস সড়কের তালঝাড়ি ফুটবল মাঠের পাশে এ দুর্ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় আরও ৪ জন আহত হয়েছেন।
নিহতরা হলেন ভটভটি চালক আড়ানগর এলাকার বাসিন্দা পাড়ার জয়দুল ইসলামের ছেলে মাসুদুর রহমান মওলা (৩৫) ও আড়ানগর গ্রামের নজিম উদ্দিনের ছেলে মোহাম্মদ ভুট্টু (৪০)।
এ ঘটনায় আড়ানগর গ্রামের মুকুল হোসেনের ছেলে জিহাদ (২৫), ফতেপুর গ্রামের মৃত কফিল উদ্দিনের ছেলে জাইদুল ইসলাম (৫৫), লক্ষণপাড়া গ্রামের মৃত আছির উদ্দিনের ছেলে নাজিম উদ্দিন (৭০) ও মোটরসাইকেল চালক দিনাজপুর জেলার জহুরুল ইসলামের ছেলে মো. সেলিম রেজা আহত হয়েছেন। আহত সেলিম ও নাজিমের অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় তাদের রাজশাহী মেডিকেল হাসপাতালে রেফার করা হয়েছে।
স্থানীয়রা জানান, শনিবার সকালে উপজেলার আড়ানগর এলাকা থেকে একটি ভটভটিযোগে বিহারীনগর-পিড়লডাঙ্গা বাইপাস সড়ক হয়ে জয়পুরহাট জেলার গরুর হাটে যাচ্ছিলেন কয়েকজন গরু ব্যবসায়ী। পথে বাইপাস সড়কের তালঝাড়ি এলাকার ডবল ব্রিজের কাছে একটি মোটরসাইকেলকে সাইড দিতে গিয়ে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ভটভটি ও মোটরসাইকেল উল্টে রাস্তার পাশে ধানক্ষেতে পড়ে যায়। খবর পেয়ে ধামইরহাট থানা পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিস টিম স্থানীয়দের সহযোগিতায় আহতদের উদ্ধার করে ধামইরহাট স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রেরণ করেন।
ধামইরহাট থানার ওসি ঈমাম জাফর জানান, নিজ গাড়িতে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে মৃত্যুবরণ করায় এবং কোনো অভিযোগ না থাকায় লাশ দুটি পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। আহতদের সুচিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়েছে।
মন্তব্য