তামাকের রাজ্য রংপুরে দিন দিন জনপ্রিয় হয়ে উঠছে কফিসহ বিদেশি কিছু ফলের চাষ।
কৃষি বিভাগ বলছে, অনুকূল আবহাওয়া ও মাটির উর্বরতার কারণে অন্যান্য ফসলের চেয়ে কম খরচে এসব ফলে ভালো ফলন পাচ্ছেন চাষিরা। পাশাপাশি চারাও বিক্রি হচ্ছে। এ কারণে কফি, ত্বীন, পেপিনোমেলন, ড্রাগন ও মাল্টা চাষে আগ্রহও বাড়ছে।
জেলায় বছর কয়েক আগে শখের বশেই কফি ও বিদেশি এসব ফল চাষ শুরু করেন নয়া উদ্যোক্তারা। এখন বাণিজ্যিকভাবেই এসবের ব্যাপক চাষ হচ্ছে।
তামাকের রাজ্যে কফি চাষ
রংপুরের বিভিন্ন উপজেলায় অন্যান্য ফসলের মতোই বিস্তৃত মাঠজুড়ে তামাকের চাষ হয়। অন্যান্য ফসলের চেয়ে লাভজনক হওয়ায় এ অঞ্চলে তামাক চাষ জনপ্রিয়।
এ বছর তামাকের পাশাপাশি রংপুরের তারাগঞ্জ ও কাউনিয়া উপজেলায় কফি চাষ শুরু হয়েছে। এই দুটি উপজেলায় ১ দশমিক ২৮ একর জমিতে ১১টি বাগানে কফি চাষ করা হয়েছে।
এর মধ্যে রংপুরের কাউনিয়া উপজেলায় ১০টি আর তারাগঞ্জ উপজেলায় ১টি বাগান রয়েছে।
তারাগঞ্জ উপজেলার গোয়ালবাড়ী গ্রামের যুবক মোখলেছুর রহমান জানান, ইউটিউবে দেখে ২০১৭ সালে কক্সবাজারের এক ব্যক্তির মাধ্যমে ভারত থেকে ১ হাজার কফি গাছের চারা নিয়ে আসেন। ২৮ শতক জমিতে এসব চারা রোপণ করে শেষ পর্যন্ত ৪৫০টি গাছ বাঁচাতে পেরেছিলেন। এ বছর প্রতিটি গাছে প্রায় ৩ হাজার করে কফি ধরেছে।
তিনি জানানলেন, এই কফি গাছগুলোর বয়স ৩০ পার হলে ফলন বাড়বে বহুগুণ। তখন প্রায় কোটি টাকার কফি বিক্রি সম্ভব হবে। এসব কারণে অনেকেই বাণিজ্যিকভাবে কফি চাষে আগ্রহী হয়ে উঠেছেন।
মোখলেছুর বলেন, ‘নতুন কফি বাগানের অভিজ্ঞতা অর্জনের পাশাপাশি প্রায় আড়াই লাখ টাকার কফি ও বীজ বিক্রি করেছি।’
কাউনিয়া উপজেলার নাজিরদহ গ্রামের চাষি ইয়াছিন আলী বলেন, ‘আমি ১০ শতক জমির ওপর ৮৮টি গাছ লাগিয়েছি। গাছগুলো বেশ বড় হয়েছে। আশা করছি দ্রুত ফল আসবে।’
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কাউনিয়া উপজেলায় ইয়াছিনের মতো আরও নয় যুবক এই কফি চাষ শুরু করেছেন। প্রত্যেকেই ১০ শতক জমির ওপর ৮৮টি করে গাছ লাগিয়ে পরিচর্যা করছেন।
ত্বীন চাষে ভাগ্যবদল
মরু অঞ্চলের জনপ্রিয় ফল ত্বীন এখন চাষ হচ্ছে রংপুরের মিঠাপুকুর শাল্টিগোপালপুরে। ইনাম হাসান রাহাত ও তার বড় ভাই আসিফ হাসান রাতুল এই ত্বীন ফল চাষ করছেন।
ইনাম বলেন, ‘সৌদি আরব থেকে এক ব্যক্তির মাধ্যমে বীজ সংগ্রহ করি। দুই ভাই মিলে নিজেদের ৩৩ শতক জমিতে শুরু করি ত্বীন চাষ।
‘এই ফল মূলত বালুতে ভালো হয়। প্রথমদিকে লালমাটিতে এই ফলের চাষ নিয়ে খানিকটা সন্দেহ হলেও এখন দারুণ হচ্ছে গাছগুলো। মাত্র ছয় মাসের মধ্যে গাছগুলোতে ত্বীন ফল আসে।’
তিনি আরও বলেন, ‘ফলগুলো দেখতে অনেকটা আমাদের দেশের ডুমুর ফলের মতো। একেকটি ফলের ওজন প্রায় ১০০ গ্রাম। এ বাগান থেকে এখন পর্যন্ত মোট ১০০ কেজি ফল সংগ্রহ করা হয়েছে।
‘প্রতি কেজি বিক্রি হয়েছে ৭০০ থেকে ১ হাজার টাকায়। সে হিসেবে প্রতিটি ফলের দাম হয় এক ডলার। আর প্রতিটি চারা বিক্রি করা হচ্ছে ৫০০ থেকে ৭০০ টাকায়।’
আসিফ হাসান রাতুল জানান, ত্বীন ফলের চাষের কথা জানাজানি হওয়ায় দূরদূরান্ত থেকে মানুষ আসছেন ফলের গাছ দেখতে। অনেকেই ত্বীন চাষে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। ফল বিক্রির পাশাপাশি লাভ হচ্ছে চারাও বিক্রি করেও।
সফলতা পেপিনোমেলনেও
পেপিনোমেলন নামে মহাঔষধি অস্ট্রেলিয়ান এই ফল বাংলাদেশে প্রথম চাষ হচ্ছে রংপুরের মিঠাপুকুরে। শিক্ষকতা পেশা ছেড়ে এই ফল চাষ করছেন এ এস এম সেলিম। অস্ট্রেলিয়া থেকে আনা এই ফলগাছ এখন ব্যাপক সাড়া ফেলেছে কৃষি বিভাগেও।
পেপিনোমেলন ফল ১ ফুট লম্বা। গাছটি দেখতে বেগুন গাছের মতো।
সেলিম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমি সাভারে একটি বেসরকারি কলেজে শিক্ষকতা করতাম। ইউটিউবে দেখে আমি এই গাছের প্রতি আগ্রহী হই। ৪ বছর আগে অস্ট্রেলিয়ায় থাকা এক বন্ধুর সঙ্গে যোগাযোগ করে একটি চারা আনি।
‘সেই চারা জমির একটি কোণে রোপণ করি। সেখান থেকে অনেক চারা হয়। এই একটি গাছ থেকেই আমার স্বপ্ন পূরণ হয়।
এখন ১০ শতক জমির ওপর চাষ করছি এই ফল। ফলের পাশাপাশি চারাও বিক্রি করছি।’
তিনি জানান, ক্যানসার, কিডনী সংক্রান্ত জটিলতা, ডায়াবেটিসসহ ২১টি রোগের মহা ওষুধ হিসেবে কাজ করে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ এই ফলটি।
সেলিমের দাবি, দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের কৃষক এই ফলের চারা সংগ্রহ করে রোপণ করছেন। কম খরচে লাভ বেশি হওয়ায় বাণিজ্যিকভাবে চাষে আগ্রহী হচ্ছেন স্থানীয় অন্য কৃষকরাও।
সেলিমের প্রতিবেশী হারুণ বলেন, ‘সেলিম ভাইয়ের কাছ থেকে চারা কিনে আমিও পাঁচ শতক জমিতে এই ফল লাগিয়েছি। গাছগুলো বড় হচ্ছে। তার কাছ থেকে পরামর্শ নিয়ে পরিচর্যা করছি।’
ড্রাগন চাষে লাভ দেখছে চাষিরা
রংপুরের তারাগঞ্জে বুড়িরহাট গ্রামের শামীমা আক্তার ড্রাগন চাষ করে সফল হয়েছেন। এ বছর ৪০ হাজার টাকা লাভও করেছেন তিনি।
শামীমা নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমার বাবা একজন সফল কৃষক ছিলেন। তিনি তার জমিতে মাছ, লিচু, কলা, আদা চাষে সফল হয়েছিলেন। আদা চাষ করে কৃষি বিভাগ থেকে পুরস্কারও পেয়েছেন। আব্বার সেই কৃষিকাজ দেখে ছোটবেলা থেকেই লেখাপড়ার পাশাপাশি বাড়ির বিভিন্ন জায়গায় ফুল-ফল ও ঔষধি গাছের চারা লাগাতাম।
‘২০১৫ সালে স্বামী ফরিদ আলমের সঙ্গে ভিয়েতনাম গিয়ে ড্রাগন ফল খেয়ে খুব মজা পাই। এরপর নিজেই সিদ্ধান্ত নেই এই ফল চাষের। আব্বার পরামর্শে তার ৫৫ শতক জমিতে ২০১৬ সালের শেষ দিকে ৮০০টি ড্রাগন ফলের চারা রোপণ করি। সেখানে এবার ফল এসেছে।’
শামীমা জানান, প্রতিটি গাছে বছরে ৫০ থেকে ৭০টি পর্যন্ত ড্রাগন ফল ধরে। ওজনে একটি ফল ৬০০-৮০০ গ্রাম পর্যন্ত হয়।
কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা যায়, রংপুর জেলাজুড়ে ২৭টি ড্রাগন বাগান রয়েছে। এ বছর ৯ হেক্টর জমিতে ১৮০ টন ড্রাগন উৎপাদন হয়েছে। এক বিঘা জমিতে ড্রাগন ফল চাষ করতে দেড় লাখ টাকার মতো প্রয়োজন হয়। চারা রোপণের ১ বছরের মধ্যে ফলন আসতে শুরু করে।
রংপুর হর্টিকালচার সেন্টারের উপপরিচালক আফতাব হোসেন জানান, ড্রাগন চাষ অত্যন্ত লাভজনক। এতে খরচ কম আবার লাভ বেশি। তা ছাড়া বিদেশি এই ফলগুলো পুষ্টিগুণে ভরপুর।
মাল্টা চাষও বেড়েছে
রংপুরে এ পর্যন্ত সর্বোচ্চ ৭২ হেক্টর জমিতে চাষ হচ্ছে মাল্টা। উৎপাদন হয়েছে ১ হাজার ৪৪০ টন।
বদরগঞ্জে ১১ দশমিক ৫০ হেক্টর, তারাগঞ্জে ১২ দশমিক ৫০ হেক্টর, পীরগঞ্জে ২৫ হেক্টর, পীরগাছায় ১ দশমিক ১১ হেক্টর, মিঠাপুকুরে ৬ হেক্টর, গঙ্গাচড়ায় ৯ দশমিক ৪ হেক্টর, কাউনিয়ায় ২ দশমিক ৬ হেক্টর, সদরে ৩ হেক্টর, মহানগরে ১ দশমিক ৫০ হেক্টরে চাষ হয়েছে মাল্টার।
পীরগঞ্জের কুমেদপুর ইউনিয়নের শিবপুর গ্রামে মালয়েশিয়াপ্রবাসী মিজানুর রহমান বাণিজ্যিকভাবে মাল্টা চাষ করছেন। ২০১৬ সালে ৩ বিঘা জমিতে লাগানো ৪০০ গাছ এখন পুরোদমে ফল দিচ্ছে। এর পাশাপাশি তিনি চারা উৎপাদন করে চারাপ্রতি ৮০ থেকে ২০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি করছেন।
মিজানুর জানান, সঠিকভাবে চাষ এবং সময়মতো কৃষি বিভাগের পরামর্শ পেলে মাল্টা চাষ করে অর্থনৈতিকভাবে উন্নতি করতে পারবেন চাষীরা।
যা বলল কৃষি বিভাগ
রংপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কৃষি প্রশিক্ষণ কর্মকর্তা রিয়াজ উদ্দিন নিউজবাংলাকে জানান, নতুন নতুন ফল চাষে কৃষকদের মধ্যে আগ্রহ বাড়ছে। সম্ভাবনাময় নতুন বিদেশি ফলের চাষে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে। এসব ফল চাষ সম্প্রসারণে এর উৎস, চাষাবাদ প্রক্রিয়া ও প্রযুক্তি বিষয়ে তাদের পরামর্শও দেয়া হচ্ছে।
আরও পড়ুন:কক্সবাজারের টেকনাফের সাবরাং ইউনিয়নের শাহপরীর দ্বীপে ঘরে ঢুকে এক নারী ও তার মেয়েকে বিবস্ত্র করে নির্যাতনের লিখিত অভিযোগ করা হয়েছে।
গত সোমবারের ঘটনায় বৃহস্পতিবার টেকনাফ মডেল থানায় অভিযোগটি করেন ছেনুয়ারা বেগম নামের নারী।
লিখিত অভিযোগে বলা হয়, গত সোমবার রাত দুইটার দিকে শাহপরীর দ্বীপের পূর্ব উত্তরপাড়া এলাকার নুর মোহাম্মদের স্ত্রী ছেনুয়ারা বেগমের ঘরের দরজা ভেঙে আয়ুব খানের নেতৃত্বে ১০ থেকে ১৫ জন প্রবেশ করেন। তারা ছেনুয়ারা ও তার মেয়ের হাত-পা বেঁধে মুখে কাপড় ঢুকিয়ে এলোপাতাড়ি লাথি ও ঘুষি মারেন। একপর্যায়ে মা ও মেয়ে উভয়কে বিবস্ত্র করেন আইয়ুব ও তার লোকজন।
অভিযোগে আরও বলা হয়, হামলাকারীরা ভয়ভীতি প্রদর্শন করে স্বর্ণ ও টাকা ছিনিয়ে নিয়ে যান। যাওয়ার সময় তাদের বিরুদ্ধে নির্যাতনের বিষয়ে কাউকে জানানো হলে প্রাণনাশের হুমকি দিয়ে চলে যান৷
এ বিষয়ে ছেনুয়ারা বেগম বলেন, ‘সন্ত্রাসী আয়ুব খানের নেতৃত্বে ১০ থেকে ১৫ জন যুবক আমার বাড়িতে ভয়ভীতি দেখিয়ে প্রবেশ করে। পরে বাড়ি থেকে আমাকে জোরপূর্বক কয়েকজন লোক বের করে রশি দিয়ে বেঁধে রাখে এবং আমার মেয়েকে নির্যাতন করে স্বর্ণ ও টাকা নিয়ে যায়। তাদের বিরুদ্ধে ঘটে যাওয়া বিষয়ে কাউকে বললে মেরে ফেলা হবে বলে চলে যায়।’
থানায় অভিযোগের পর আয়ুব হুমকি দিয়েছে জানিয়ে ছেনুয়ারা বলেন, ‘সেই আয়ুব খান মোবাইল ফোনের মাধ্যমে বলে, মামলা হলে কী হবে? জামিন নিয়ে বাহির হয়ে আমাকে আর আমার মেয়েকে মেরে ফেলা হবে বলে প্রাণনাশের হুমকি-ধমকি দিচ্ছে। এ বিষয়ে আমি টেকনাফ মডেল থানায় লিখিত অভিযোগ করেছি।’
এ বিষয়ে সাবরাং ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য রেজাউল করিম রেজু বলেন, ‘আমি বিষয়টি শুনেছি এবং সঠিক তদন্ত করে পুলিশকে সহযোগিতা করব।’
অভিযোগ তদন্ত কর্মকর্তা উপপরিদর্শক (এসআই) মোহাম্মদ সোহেল বলেন, ‘আমি ঘটনার সত্যতা পেয়েছি এবং আমি মামলা করার জন্য ওসি বরাবর সুপারিশ করেছি।’
টেকনাফ মডেল থানার ওসি ওসমান গণি বলেন, ‘আরও গভীরভাবে তদন্ত করে দোষীদের গ্রেপ্তার করা হবে।’
আরও পড়ুন:মৌলভীবাজারে বিশেষ ক্ষমতা আইনে করা নাশকতা মামলায় জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক সাবেক উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান মিজান ও জেলা যুবদলের সাধারণ সম্পাদক এমএ মুহিতসহ ১৪ নেতাকর্মীকে কারাগারে পাঠিয়েছে আদালত।
বৃহস্পতিবার দুপুরে মৌলভীবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালতে হাজির হয়ে জামিন আবেদন করলে তা নামঞ্জুর করে বিচারক তাদের কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।
উচ্চ আদালতের মঞ্জুরকৃত জামিন শেষ হওয়ায় তারা আদালতে হাজির হন।
মৌলভীবাজার মডেল থানায় ২০২৩ সালের নভেম্বর ও ডিসেম্বর মাসে করা দুটি রাজনৈতিক মামলার ১৪ জন আসামি হাজির হলে আদালত তাদের সবার জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে প্রেরণ করে।
মামলার অন্যান্য আসামিরা হলেন- জেলা বিএনপির সহ-সাধারণ সম্পাদক মুহিতুর রহমান হেলাল, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক মাহমুদুর রহমান, জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলে সাবেক সভাপতি ও পৌর কাউন্সিলর স্বাগত কিশোর দাস চৌধুরী, জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সদস্য সচিব আহমেদ আহাদ, যুবদলের এমএ নিশাদ, যুবদলের সিরাজুল ইসলাম পিরুন, স্বেচ্ছাসেবক দলের নুরুল ইসলাম, যুবদলের ওয়াহিদুর রহমান জুনেদ, স্বেচ্ছাসেবক দলের আব্দুল হান্নান, স্বেচ্ছাসেবক দলের রোহেল আহমেদ, স্বেচ্ছাসেবক দলের মামুনুর রশিদ ও যুবদলের জাহেদ আহমেদ।
মৌলভীবাজার জেলা আদালত পুলিশের পরিদর্শক মো. ইউনুছ মিয়া জানান, ২০২৩ সালে নাশকতার অভিযোগে করা মামলায় মৌলভীবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালতে হাজির হয়ে জামিন আবেদন করেন আসামিরা। আদালত শুনানি শেষে আবেদন নামঞ্জুর করে তাদের কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
রাঙ্গামাটির বাঘাইছড়ি থানাধীন সাজেকে শ্রমিকবাহী ডাম্প ট্রাক খাদে পড়ে নিহতের সংখ্যা বেড়ে ৯ জনে দাঁড়িয়েছে।
বাঘাইছড়ি থানার সহকারী পুলিশ সুপার আবদুল আওয়াল বুধবার রাতে বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
তিনি জানান, আহত শ্রমিকদের উদ্ধার করে খাগড়াছড়ি হাসপাতালে নেয়ার পর চিকিৎসক তিনজনকে মৃত বলে জানান।
এর আগে বিকেলে সাজেকের উদয়পুর সীমান্ত সড়কের ৯০ ডিগ্রি এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে।
পুলিশের ভাষ্য, খাগড়াছড়ি থেকে সাজেকের উদয়পুর সীমান্তবর্তী সড়ক নির্মাণের জন্য ডাম্প ট্রাকে ১৪ জন শ্রমিক জামান ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানির সেতুর কাজে যাচ্ছিলেন। পথে গাড়িটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে পাহাড়ের ঢালে পড়ে যায়। এতে ঘটনাস্থলে ছয়জনের মৃত্যু হয়।
বাঘাইছড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শিরিন আক্তার সাংবাদিকদের জানান, যেখানে দুর্ঘটনাটি ঘটেছে, সেটি খুবই দুর্গম এলাকা। আহত শ্রমিকদের উদ্ধার করে খাগড়াছড়ি জেনারেল হাসপাতালে পাঠিয়েছে পুলিশ ও সেনাবাহিনী, তবে তাৎক্ষণিকভাবে কারও নাম-পরিচয় জানা যায়নি।
আরও পড়ুন:মৌলভীবাজার জেলার রাজনগর উপজেলায় ৭ (সাত) বছরের একটি শিশুকে ধর্ষণের অভিযোগে সৈয়দ সরাফত আলী নামের এক ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ ব্যুরো অফ ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)।
পিবিআইয়ের পরিদর্শক রিপন চন্দ্র গোপের নেতৃত্বে একটি অভিযানিক দল বুধবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে শ্রীমঙ্গল রেলওয়ে স্টেশন এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে।
৬০ বছর বয়সী সৈয়দ সরাফত আলী রাজনগর থানার করিমপুর চা বাগান এলাকার বাসিন্দা।
পিবিআই জানায়, শিশুটিকে বাঁশের বাঁশি বানিয়ে দেয়ার লোভ দেখিয়ে গত ১৪ এপ্রিল বেলা পৌনে দুইটার দিকে সৈয়দ সরাফত আলী তার বাড়ির পাশের বাঁশ ঝাড়ের নিচে নিয়ে যান। সেখানে তাকে মাটিতে ফেলে ধর্ষণ করেন। বিষয়টি নিয়ে এলাকায় আলোড়ন সৃষ্টি হলে তিনি আত্নগোপন করেন।
অসুস্থ অবস্থায় শিশুটিকে গত প্রথমে রাজনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও পরে মৌলভীবাজার ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতাল ভর্তি করে চিকিৎসা করানো হয়।
এ বিষয়ে শিশুটির বাবা বাদী হয়ে রাজনগর থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা করেন।
পিবিআই মৌলভীবাজার পুলিশ সুপার এহতেশামুল হক বলেন, ‘শিশু ধর্ষণের ঘটনায় অপরাধীর পার পাওয়ার সুযোগ নেই। আইনের আওতায় এনে তাদের বিচার করা হবে। মামলার খুঁটিনাটি বিষয় বিবেচনায় রেখে নিখুঁত তদন্ত প্রতিবেদন আদালতে দাখিল করা হবে।’
আরও পড়ুন:চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জে সোনামসজিদ স্থলবন্দরে দায়িত্ব পালনকালে রুহুল আমিন নামে এক ট্রাফিক ইন্সপেক্টরের মৃত্যু হয়েছে। তার বাড়ি যশোরের বেনাপোলে। বাবার নাম কোরবান আলী।
নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়ের বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষের অধীন সোনামসজিদ স্থলবন্দরে ট্রাফিক ইন্সপেক্টরের দায়িত্ব পালন করছিলেন তিনি।
শিবগঞ্জ থানার ওসি সাজ্জাদ হোসেন জানান, সোনামসজিদ স্থলবন্দরের পানামা পোর্ট লিংক লিমিটেডের মধ্যে ট্রাক পরিদর্শন শেষে দুপুর পৌনে ১টার অফিস কক্ষে ফিরে অসুস্থ হয়ে পড়েন রুহুল আমিন। সহকর্মীরা তাকে দ্রুত শিবগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
চাঁপাইনবাবগঞ্জের সিভিল সার্জন এসএম মাহমুদুর রশিদ জানান, ট্রাফিক ইন্সপেক্টর রুহুল আমিন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আনার আগেই মারা যান। হাসপাতালে যারা নিয়ে এসেছিলেন তারা বলেছেন যে তিনি তৃষ্ণার্ত ছিলেন, পানি খেতে চেয়েছিলেন।
তবে তার মৃত্যু যে হিট স্ট্রোকে হয়েছে এটা এখনই নিশ্চিত করে বলা যাবে না। অন্য কোনো রোগেও তার মৃত্যু হয়ে থাকতে পারে। তবে এখন যেহেতু প্রচণ্ড গরম চলছে তাই এটার প্রভাব থাকতে পারে।
সশস্ত্র বিদ্রোহীদের সঙ্গে যুদ্ধের মধ্যে পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া মিয়ানমারের সেনা ও সীমান্তরক্ষী বাহিনীর ২৮৮ জন সদস্যকে ফেরত পাঠানো হয়েছে।
বৃহস্পতিবার সকাল ৭টার দিকে কক্সবাজার শহরের নুনিয়াছড়া বিআইডব্লিটিএ জেটি ঘাট থেকে কঠোর নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে তাদের টাগবোটে তুলে দেয়া হয়।
কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. ইয়ামিন হোসেন জানান, গভীর সাগরে নিয়ে যাওয়ার পর সেখানে অপেক্ষায় থাকা মিয়ানমার নৌবাহিনীর জাহাজ চিন ডুইনে তাদের তুলে দেয়া হবে।
বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া সেনা ও সীমান্তরক্ষীদের ফেরত নিতে মিয়ানমারের ওই জাহাজ বুধবারই বাংলাদেশের জলসীমায় পৌঁছায়। ওই জাহাজে করেই ১৭৩ জন বাংলাদেশি ফিরে এসেছেন। যারা বিভিন্নভাবে মিয়ানমারে আটকা পড়েছিলেন বা সাজা পেয়ে জেলখানায় ছিলেন।
মিয়ানমার নৌবাহিনীর ওই জাহাজে করে দেশটির ৫ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দলও বুধবার দুপুরে কক্সবাজার পৌঁছায়। পরে তারা বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি ১১ ব্যাটালিয়নে বিজিবি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে যান। সেখানে পৌঁছানোর পর তারা মিয়ানমারের বিজিপি ও সেনা সদস্যদের যাচাই-বাছাইসহ অন্যান্য আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করা হয়।
বিজিবি ও প্রশাসনের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, বৃহস্পতিবার ভোর সাড়ে ৪টার দিকে ১১টি বাসে করে মিয়ানমারের বিজিপি ও সেনা সদস্যদের কক্সবাজার শহরের বিআইডব্লিউটিএ জেটি ঘাটে নিয়ে আসা হয়।
সেখানে আনার পর ইমিগ্রেশন ও ডকুমেন্টেশনের আনুষ্ঠানিকতা সেরে শুরু হয় হস্তান্তর প্রক্রিয়া। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বিজিবি, জেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন, জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ ও কোস্ট গার্ডের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বাংলাদেশশে মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূতসহ দেশটির প্রতিনিধি দলের কাছে তাদের হস্তান্তর করেন।
এরপর সকাল ৭টার দিকে মিয়ানমারের সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদের কর্ণফুলি টাগবোটে তুলে দেয়া হয়। কোস্ট গার্ডের একটি ট্রলার টাগবোটটিকে পাহারা দিয়ে গভীর সাগরে নিয়ে যায়।
দীর্ঘদিন ধরে মিয়ানমারে সেনাবাহিনী ও বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোর মধ্যে সংঘর্ষ চলছে, যার আঁচ লেগেছে বাংলাদেশের সীমান্ত এলাকাতেও। সীমান্তের ওপারের মর্টার শেল ও গুলি এসে এপারে হতাহতের ঘটনাও ঘটেছে।
ওই সংঘাতের মধ্যে পালিয়ে আসা মিয়ানমারের সীমান্তরক্ষী ও সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যসহ ৩৩০ জনকে প্রথম দফায় গত ১৬ ফেব্রুয়ারি ফেরত পাঠিয়েছিল সরকার।
তাদের মধ্যে মিয়ানমারের বর্ডার গার্ড পুলিশ-বিজিপি ৩০২ জন, তাদের পরিবারের চার সদস্য, দুজন সেনা সদস্য, ১৮ জন ইমিগ্রেশন সদস্য এবং চারজন বেসামরিক নাগরিক ছিলেন।
এরপর বান্দরবান ও কক্সবাজার সীমান্ত নিয়ে কয়েক দফায় আরো ২৮৮ জন সীমান্তরক্ষী ও সেনা সদস্য এসে বাংলাদেশে আশ্রয় নেন। এবার তাদের ফেরত পাঠানো হলো।
মুন্সীগঞ্জের লৌহজংয়ে পদ্মা নদীতে বুধবার রাতের আঁধারে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের সময় দুটি ড্রেজার জব্দ করেছে নৌ-পুলিশ।
মাওয়া নৌ ফাঁড়ির ইনচার্জ মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমান বৃহস্পতিবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
তিনি জানান, রাতের আঁধারে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের খবর পেয়ে উপজেলার মেদিনীমণ্ডল ইউনিয়নের যশিলদিয়ায় বুধবার রাত দেড়টার দিকে পদ্মা নদীতে অভিযান চালানো হয়। ওই সময় নিয়ম অমান্য করে বালু উত্তোলন করায় ওই দুটি ড্রেজার জব্দ করা হয়।
তিনি আরও জানান, ড্রেজার জব্দ করার সময় কাউকে আটক করা সম্ভব হয়নি। জব্দকৃত ড্রেজার দুটির বিষয়ে আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে।
মন্তব্য