‘ঘরর সামনে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর স্বপ্নের মতো লার। আগে বিদেশত্তুন আত্মীয় যাইলে আইলে ঢাকা, চিটাগাং যা পইত্ত কিন্তু এখন সুজা ঘরর দোয়ারত বিদায় দিয়ুম, রিসিভ গইজ্জুম।’
কক্সবাজার বিমানবন্দরকে দেশের চতুর্থ আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে রূপান্তরের লক্ষ্যে রোববার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে রানওয়ের সম্প্রসারণকাজ উদ্বোধন করেন।
এতে এভাবেই নিজের অনুভূতি প্রকাশ করেন কক্সবাজার শহরের নতুন বাহাড়ছড়া এলাকার সাজ্জাদ হোসেন।
রেলপথের পর এবার কক্সবাজারের মানুষ পাচ্ছে সাগর ছোঁয়া বিমানবন্দর।
শুধু সাজ্জাদ হোসেনই নন, কক্সবাজারের নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ চতুর্থ আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ও দেশের সবচেয়ে দীর্ঘ রানওয়ে প্রকল্পের উদ্বোধনে নিজেদের উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেন।
কক্সবাজারের বাংলাবাজার এলাকার মো. হারুন ১০ বছর ধরে সৌদি প্রবাসী।
তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘বছর, দু বছর শেষে দেশত সফর আয়ি। তখন আরত্তুন চিটাং শহরর নামা পইত্ত কিন্তু এহন কক্সবাজার আন্তর্জাতিক বিমান অয়ে এহন অক্কল সোজা সৌদি আরবত্তুন কক্সবাজার আসা যাওয়া গইয়্যুম।’
আরেক প্রবাসী মনিরুল আলম মনির বলেন, ‘আইজ্জা টিভিত হবর চাইয়ি ঢাকা শহরর মতত কক্সবাজার বিমানবন্দর অর, তাও বিদেশি স্টাইলে, যহন দেশেত আইয়্যুম তহন আর চিন্তা নাই। প্রবাসীরা আর ঢাকা-চিটাং নয়, আরা এহন সোজা বিমানবন্দরত্তু ঘরত আইয়্যুম।’
বেবিচক কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে ৯ হাজার ফুট দীর্ঘ রানওয়েকে ১০ হাজার ৭০০ ফুটে সম্প্রসারণ করা হচ্ছে। এর মধ্যে ১ হাজার ৩০০ ফুট থাকবে সমুদ্রের মধ্যে। আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে উন্নীত করতে বঙ্গোপসাগরের তলদেশে ব্লক দিয়ে বাড়ানো হচ্ছে রানওয়ে।
প্রকল্পে ব্যয় হচ্ছে ১ হাজার ৫৬৮ কোটি ৮৬ লাখ টাকা, যার পুরোটাই অর্থায়ন করছে বেবিচক। এই নির্মাণকাজের দায়িত্ব পেয়েছে চীনের দুটি প্রতিষ্ঠান।
৫ হাজার ১৭৯ কোটি টাকা ব্যয়ে কক্সবাজার বিমানবন্দরের নতুন টার্মিনাল ভবন নির্মাণ, রানওয়ে সম্প্রসারণ ও শক্তি বৃদ্ধি, এয়ারফিল্ড গ্রাউন্ড লাইটিং সিস্টেম স্থাপনের কাজ চলমান।
সাগরের মধ্যে রানওয়ে সম্প্রসারণ করতে প্রথমে সাগরের নিচে স্থাপন করা হবে জিও টিউব, ড্রেজিংয়ের মাধ্যমে অপসারণ করা হবে পানি। শুরু হবে খনন-প্রক্রিয়া ও বালু ভরাট কার্যক্রম।
এরপর প্রাথমিক পর্যায় থেকে দ্বিতীয় ও তৃতীয় পর্যায়ে হবে বালুর স্তরবিন্যাস। চূড়ান্ত পর্যায়ে হবে রানওয়ের জন্য বালুর স্তরবিন্যাস। তারপর হবে পাথুরে স্তরবিন্যাস ও নিশ্ছিদ্রকরণ, পিচঢালাই ও নিশ্ছিদ্রকরণ। এভাবেই তৈরি হবে রানওয়ে ও প্রাথমিক সমুদ্র থেকে রক্ষাকারী বাঁধ। এর পরপরই হবে রানওয়ের শোভাবর্ধন ও নির্দেশক বাতি স্থাপন।
সমুদ্র তলদেশে ব্লক তৈরি করে এর ওপর স্থাপনা নির্মাণ করা হবে। দেশে এই প্রথম কোনো স্থাপনা নির্মাণ করা হচ্ছে এই প্রক্রিয়ায়।
বেবিচক বলছে, ‘কক্সবাজার বিমানবন্দরকে ঘিরে তৈরি হবে এভিয়েশনের হাব। সারা বিশ্ব থেকে সুপরিসর বিমান কক্সবাজারে ওঠানামা করাতেই এমন উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।’
কক্সবাজার জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি ফরিদুল মোস্তফা বলেন, ‘কক্সবাজারের সঙ্গে আগে দেশের মানুষের যাতায়াতের দুয়ার খোলা ছিল। আজকে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী গোটা পৃথিবীর জন্য কক্সবাজারের দুয়ার খুলে দিয়েছেন। এজন্য তাকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই।’
কক্সবাজার-৩ আসনের সংসদ সদস্য সাইমুম সরওয়ার কমল জানান, আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর নির্মাণের মাধ্যমে কক্সবাজারের জন্য একটি নতুন দিগন্তের সূচনা হলো। সমুদ্রে নির্মিত রানওয়েতে যখন পর্যটকবাহী বিমান অবতরণ করবে তখন মনে হবে এটি কক্সবাজার নয়, যেন হংকং।
জেলা সিভিল সোসাইটির সভাপতি আবু মোর্শেদ চৌধুরী খোকা জানান, কক্সবাজারে চলমান কর্মযজ্ঞের মধ্যে এই বিমানবন্দরের প্রকল্প অন্যতম। এর মাধ্যমে এই এলাকার ব্যবসায়ী, উদ্যোক্তা ও বিনিয়োগকারীরা শুধু আমদানি-রপ্তানির মাধ্যমে নয়, নানাভাবে অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হবেন।
আরও পড়ুন:আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে সার্বিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ ও নির্বাচনের প্রস্তুতিমূলক কার্যক্রম সুসংহত করতে নির্বাচন কমিশন (ইসি) এক বিস্তারিত কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। এবার নির্বাচনে এআই অপপ্রচার ও নির্বাচনি এলাকায় গোপনীয়তার স্বার্থে ড্রোনের ব্যবহার নিষিদ্ধ করা হবে।
এছাড়া, নির্বাচনকালীন পরিবেশ স্বাভাবিক রাখতে অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার, সংখ্যালঘু নিরাপত্তা, বিদেশি পর্যবেক্ষকদের সহযোগিতা এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এআই প্রযুক্তিনির্ভর ভুল তথ্য প্রচার রোধের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে বিশেষ কর্মপন্থা নির্ধারণ করা হচ্ছে।
সোমবার (২০ অক্টোবর) রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনের সম্মেলন কক্ষে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রধানদের সঙ্গে বৈঠকে বসে নির্বাচন কমিশন। বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিন। বৈঠকে অন্য চার নির্বাচন কমিশনার, ইসির সিনিয়র সচিব ও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
সার্বিক আইনশৃঙ্খলা কাঠামো, ৩ পর্যায়ের নিরাপত্তা কৌশল
নির্বাচন কমিশনের নির্দেশনা অনুযায়ী আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মূলত তিনটি ধাপে নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে।
তফসিল ঘোষণার পূর্বে : স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তত্ত্বাবধানে চিহ্নিত অপরাধী, সন্ত্রাসী ও নির্বাচনে বিঘ্ন সৃষ্টিকারীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এই ধাপে অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার এবং সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষায় প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া আবশ্যক।
তফসিল ঘোষণা থেকে নির্বাচন পর্যন্ত : অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সময়। সকল প্রার্থীর নির্বিঘ্নে প্রচার-প্রচারণা এবং ভোটারদের নির্ভয়ে ভোটাধিকার প্রয়োগ নিশ্চিত করতে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ভোটকেন্দ্রের নিরাপত্তা ও সার্বিক শান্তিশৃঙ্খলা রক্ষার্থে পুলিশ, আনসার ও গ্রাম পুলিশের পাশাপাশি মোবাইল টিম ও স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে র্যাব, পুলিশ, বিজিবি, আমর্ড পুলিশ, ব্যাটালিয়ন আনসার, কোস্টগার্ড এবং ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে সশস্ত্র বাহিনী নিয়োজিত থাকবে।
নির্বাচন পরবর্তী কার্যক্রম : নির্বাচন পরবর্তী সহিংসতা রোধে নির্বাচনের পরবর্তী ৪৮ ঘণ্টা বা ২ দিন পর্যন্ত স্থানীয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে সহযোগিতার জন্য মোবাইল টিম ও স্ট্রাইকিং ফোর্স নিয়োজিত থাকবে। এই সময়ে আইনগত নির্দেশনা প্রদানের জন্য এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট এবং সংক্ষিপ্ত বিচার কাজের জন্য জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ও ইলেক্টোরাল ইনকোয়ারি কমিটি দায়িত্ব পালন করবে।
প্রস্তুতিমূলক কার্যক্রম ও বিশেষ পদক্ষেপগুলো বর্তমানে ভোটার তালিকা হালনাগাদ ও নির্বাচনি এলাকার সীমানা নির্ধারণ সম্পন্ন হয়েছে। চলমান প্রস্তুতিমূলক কার্যক্রমের মধ্যে রয়েছে রাজনৈতিক দল নিবন্ধন, ভোটার তালিকার সিডি প্রস্তুত এবং ভোটকেন্দ্র স্থাপনের জন্য প্রতিষ্ঠান বাছাই।
এছাড়াও, ইসি বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে প্রস্তুতিমূলক কার্যক্রম গ্রহণের ওপর জোর দিয়েছে।
শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় রাখার কর্মপরিকল্পনা : তফসিল ঘোষণার পর থেকে ভোটগ্রহণের কয়েক দিন পর পর্যন্ত প্রতিটি ভোটকেন্দ্রের নিরাপত্তা ও দেশের সার্বিক পরিবেশ শান্তিপূর্ণ রাখার জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে বিশেষ নির্দেশনা জারি করে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সমন্বয় সাধন ও সুসংহতকরণ : নির্বাচনে সমান সুযোগ সৃষ্টির লক্ষ্যে সব আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থা, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও স্থানীয় প্রশাসনের মধ্যে কার্যকর সমন্বয় নিশ্চিত করতে বলা হয়েছে। পল্লী এলাকায় শান্তি শৃঙ্খলা রক্ষার্থে গ্রাম পুলিশ/চৌকিদার/দফাদার নিয়োগের পাশাপাশি ইউপি সচিবদেরও সম্পৃক্ত করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি ও সংখ্যালঘু নিরাপত্তা : সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের পূর্বশর্ত হিসেবে সংখ্যালঘু, ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী ও সাধারণ জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এবং অন্তর্ঘাতমূলক বা নাশকতামূলক কর্মকাণ্ড রোধে সতর্ক দৃষ্টি রাখতে হবে।
অবৈধ অস্ত্রের ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ : সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য নির্বাচনি এলাকায় অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার ও ব্যবহারকারীদের দমনের লক্ষ্যে যৌথ অভিযান জোরদার করা হবে। তফসিল ঘোষণার পর বৈধ অস্ত্র প্রদর্শনের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের জন্য জেলা ম্যাজিস্ট্রেটকে নির্দেশনা দিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে বলা হয়েছে।
এআই নির্ভর ভুল তথ্য প্রচার রোধ : সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এআই প্রযুক্তি ব্যবহার করে বা অন্য কোনোভাবে বিভ্রান্তিকর ও মানহানিকর তথ্য প্রচার রোধে কার্যকর কৌশল নির্ধারণের প্রয়োজন হবে। এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশন নিরলসভাবে কাজ করছে এবং সংশ্লিষ্ট সবাইকে পদক্ষেপ নিতে বলা হয়েছে।
বিদেশি সাংবাদিক ও পর্যবেক্ষকদের নিরাপত্তা : নির্বাচন পর্যবেক্ষণের জন্য বিদেশ থেকে আগত পর্যবেক্ষক প্রতিনিধি ও সাংবাদিকরা যাতে নিরাপত্তার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করতে পারেন, তার জন্য সব প্রকার আইনানুগ সহযোগিতা নিশ্চিত করা হবে।
পোস্টাল ভোটিং ব্যবস্থাপনা : প্রবাসী ও পোস্টাল ব্যালটে ভোটদানে যোগ্যদের জন্য পোস্টাল ব্যালট পেপার নিরাপত্তার সঙ্গে ডাকবিভাগ থেকে সংশ্লিষ্ট দেশে প্রেরণ এবং ফেরত আসার সময় নিরবিচ্ছিন্ন নিরাপত্তা নিশ্চিত করে রিটার্নিং অফিসারের কার্যালয়ে প্রেরণ করতে হবে।
সশস্ত্র বাহিনী মোতায়েন পরিকল্পনা : In Aid to the Civil Power অনুযায়ী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ন্যায় ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষ্যেও ভোটকেন্দ্রে ও নির্বাচনি এলাকায় সশস্ত্র বাহিনী মোতায়েনসহ এ বিষয়ক বিস্তারিত পরিকল্পনা প্রণয়ন করা হবে।
ড্রোন ব্যবহার নিষিদ্ধকরণ : নিরাপত্তার ঝুঁকি, গোপনীয়তা লঙ্ঘন এবং অননুমোদিত ব্যবহারের কারণে নির্বাচনি এলাকায় ড্রোন ব্যবহার নিষিদ্ধ করার প্রয়োজন হবে।
যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (আইসিসি) গ্রেপ্তারি পরোয়ানা করে প্রায় এক বছর আগে। তার বিরুদ্ধে অভিযোগের মধ্যে রয়েছে অনাহারকে যুদ্ধের অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করা। সম্প্রতি যুদ্ধবিরতি চুক্তি কার্যকরের পরেও, ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী গাজায় ত্রাণ প্রবেশে বাধা দিয়ে যাচ্ছেন।
আল জাজিরার এক প্রতিবেদনে বলা হয়, রোববার ইসরাইল সরকার গাজায় মানবিক সহায়তা প্রবেশ সাময়িকভাবে বন্ধ করে দিয়েছে। জিম্মিদের লাশ হস্তান্তরে হামাসকে চাপ দিতেই এই পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন তেলআবিব।
আল জাজিরার সাংবাদিক আলি হার্ব বলেন, সাহায্য বন্ধ করা যুদ্ধবিরতির স্পষ্ট লঙ্ঘন। এটি আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইনেরও লঙ্ঘন।
আইসিসির সংবিধান অনুযায়ী বেসামরিক নাগরিকদের অনাহারকে যুদ্ধের অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করে তাদের বেঁচে থাকার জন্য অপরিহার্য জিনিসপত্র থেকে বঞ্চিত করা নিষিদ্ধ। এরমধ্যে জেনেভা কনভেনশনের অধীনে ত্রাণ সরবরাহে ইচ্ছাকৃতভাবে বাধা দেয়াও অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।
তাছাড়া, জাতিসংঘের তদন্তকারীরা গত মাসে এক প্রতিবেদনে জানায়, ইসরাইল গাজায় ক্ষুধাকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করছে।
আল জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘গাজা উপত্যকায় ইসরাইলি অবরোধের সময় যুদ্ধের নীতি হিসেবে অনাহারকে ব্যবহার করায়, শিশুদের ওপর এর ভয়ানক প্রভাব পড়েছে। যার ফলে অনাহার, তীব্র অপুষ্টির আশঙ্কাজনকভাবে বেড়েছে, কলেরা এবং দীর্ঘস্থায়ী ডায়রিয়ার মতো রোগের প্রাদুর্ভাবের ঝুঁকি বৃদ্ধি পেয়েছে এবং অপুষ্টিতে মৃত্যু হারও বেড়েছে।
যুদ্ধবিরতির পরেও, ইসরাইল গাজায় সাহায্য প্রবেশ বন্ধ করে দিয়েছে। একইসঙ্গে ভূখণ্ডে মানবিক সংকটের জন্য হামাস এবং জাতিসংঘসহ অন্যান্য পক্ষকে দায়ী করেছে তারা।
দেশ গড়ার বড় সুযোগ রাজনৈতিক অনৈক্যের কারণে নষ্ট হচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
সোমবার দুপুরে রাজধানীর কাকরাইলের ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারিং ইনস্টিটিউটে বিশ্ববিদ্যালয় পরিক্রমা কর্তৃক এসএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ প্রাপ্ত ছাত্র-ছাত্রীদের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি একথা বলেন৷
মির্জা ফখরুল বলেন, বড় একটা অভ্যুত্থানের পর বড় একটা সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে দেশটাকে সুন্দর করে গড়ে তুলবার। অথচ আমরা দেখছি রাজনীতিবিদরা ঐক্য হারিয়ে ফেলছেন। আমরা চারদিকে দেখছি অনৈক্যের সুর। এতে হতাশ হয়ে পড়ছি।
রাজনীতিকে সুন্দর করতে ভূমিকা রাখার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, রাজনীতির মধ্যে যদি সৌন্দর্য না আনা যায়, সততা না আনা যায়, রাজনীতির মধ্যে যদি স্বপ্ন পূরণ করবার ও লক্ষ্যে দৌড় দেবার ইচ্ছা তৈরি করা না যায় -রাজনীতি কখনোই সুন্দর হবে না।
তিনি বলেন, রাজনীতি যদি হয় ব্যক্তিগত স্বার্থে সম্পদ তৈরি করা-তাহলে মানুষের ঘৃণা ছাড়া আর কিছু যুক্ত করতে পারবে না। আর সেটা রাজনীতি সুন্দর করতে পারে না।
অনুষ্ঠানে বিএনপির নির্বাহী কমিটির প্রশিক্ষণ বিষয়ক সম্পাদক রাশেদা বেগম হীরার সভাপতিত্বে আরো বক্তব্য রাখেন- বিএনপির সমাজকল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক কামরুজ্জামান, বাংলাদেশ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় সমিতির চেয়ারম্যান ড. মো. সবুর খান, ঢাকা মহানগর উত্তর ড্যাব সভাপতি প্রফেসর ডা. সরকার মাহবুব আলম, মোশাররফ হোসেন পুস্তি, মো. মফিজুর রহমান প্রমুখ।
অনলাইন পর্নোগ্রাফি সংক্রান্ত গ্রুপ, অ্যাডমিন ও অর্থ লেনদেনকারী প্রতারক চক্রকে শনাক্ত করে যথাযথ আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছেন ঢাকার একটি আদালত। তাদের বিরুদ্ধে মামলা দায়েরের নির্দেশও দেওয়া হয়েছে।
‘টেলিগ্রামে হাজারো তরুণীর নগ্ন ভিডিও বিক্রি’ শিরোনামে একটি দৈনিক পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদন আমলে নিয়ে গত রোববার (১৯ অক্টোবর) এ আদেশ দেন ঢাকার অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট জাকির হোসাইন।
আদেশে ডিবি পুলিশের সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনারকে একজন চৌকস ও দক্ষ তদন্ত কর্মকর্তা নিয়োগের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
বিচারক আদেশে, তদন্তকালে উৎঘাটিত তথ্য ও ঘটনার আলোকে নিয়মিত মামলা দায়েরের নির্দেশ দেন। তদন্ত কর্মকর্তাকে প্রতি ১৫ দিন অন্তর তদন্তের অগ্রগতি প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। উভয় সংবাদদাতাকে তদন্তকালে সহযোগিতা করার নির্দেশ দিয়ে আগামী ৩০ নভেম্বরের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেন আদালত।
আদালতে প্রসিকিউশন বিভাগের উপ-পরিদর্শক রুকনুজ্জামান এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
এর আগে শনিবার একটি দৈনিক পত্রিকার প্রথম পাতায় ‘টেলিগ্রামে হাজারো তরুণীর নগ্ন ভিডিও বিক্রি’ শিরোনামে সংবাদ প্রকাশিত হয়। ওই সংবাদটি বিবিসি বাংলাসহ বিভিন্ন পত্রিকা ও অনলাইন সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত হয়। সংবাদটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপকভাবে আলোচিত হয়। জনস্বার্থ বিবেচনায় এবং ফৌজদারি কার্যবিধির ১৯০ (১)(সি) ধারায় বিষয়টি আদালতের নজরে আসে। জনসাধারণের জন্য গুরুত্বপূর্ণ বিবেচনায় আদালত থেকে এ আদেশ দেওয়া হয়।
সারা দেশে সাম্প্রতিক ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের পর শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের সতর্ক থাকার নির্দেশ দিয়েছে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি)। সরকারি ও বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এবং মাঠপর্যায়ের শিক্ষা অফিসগুলোতে অগ্নিদুর্ঘটনা এড়াতে এ নির্দেশনা পাঠানো হয়েছে।
রোববার (১৯ অক্টোবর) অধিদপ্তরের প্রশাসন শাখার সহকারী পরিচালক মো. খালিদ হোসেন এ নির্দেশনায় সই করেছেন।
নির্দেশনায় বলা হয়, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীন সব অধিদপ্তর, দপ্তর, অফিস বা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে বের হওয়ার আগে নিজ নিজ রুমের সব বৈদ্যুতিক সুইচ, লাইট, ফ্যান ও কম্পিউটার বন্ধ করতে হবে। পাশাপাশি এসির প্লাগ খুলে রাখা নিশ্চিত করতে বলা হয়েছে।
নোটিশে শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের অফিস ত্যাগের আগে এসব বিষয় যাচাই করে সতর্কতামূলক ভূমিকা পালনের অনুরোধ জানানো হয়। এটি সরকারি-বেসরকারি স্কুলের প্রধান শিক্ষক, কলেজের অধ্যক্ষ, জেলা ও উপজেলা শিক্ষা অফিস ও মাউশির সব আঞ্চলিক কার্যালয়ে পাঠানো হয়েছে।
জানা গেছে, সম্প্রতি দেশে একের পর এক অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় প্রাণহানি ও ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির পর এ উদ্যোগ নিয়েছে অধিদপ্তর।
সম্প্রতি মিরপুরের শিয়ালবাড়ির রাসায়নিকের গুদামে আগুনে ১৬ জন নিহত হয়েছেন। এ ছাড়া, চট্টগ্রামের ইপিজেড এলাকার একটি তোয়ালে কারখানায় লাগা আগুন প্রায় সাড়ে ১৭ ঘণ্টা পর নিয়ন্ত্রণে আসে। আর সবশেষে গত ১৮ অক্টোবর হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কার্গো সেকশনে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে।
অন্তর্বর্তী সরকার সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য নতুন জাতীয় বেতন কাঠামো প্রণয়নের উদ্যোগ নিয়েছে। এরই মধ্যে নতুন বেতন কাঠামো নির্ধারণের জন্য পে-কমিশন গঠন করেছে সরকার। আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে সরকারের কাছে চূড়ান্ত সুপারিশ জমা দেবে এই কমিশন।
সব ঠিক থাকলে আগামী বছরের শুরু থেকেই সরকারি চাকরিজীবীরা নতুন কাঠামোর সুবিধা ভোগ করতে পারবেন। নতুন কাঠামোয় শুধু বেতন নয়, চিকিৎসা, শিক্ষা ও পদোন্নতিসহ বিভিন্ন ভাতায় বড় পরিবর্তন আসছে। সেইসঙ্গে জাতীয় বেতন স্কেল কার্যকর হলে কিছু সুবিধা বাতিল হতে পারে।
‘সাকল্য বেতন’ বা ‘পারিশ্রমিক’ নামে একটি বিকল্প বেতন কাঠামো গঠনের কথা প্রস্তাবে বলা হয়েছে, যেখানে বর্তমান কাঠামোর কোনো ভাতা বা আর্থিক ও অনার্থিক সুবিধা থাকবে না। এই প্রস্তাবিত কাঠামো এরই মধ্যে অনেক উন্নত ও উন্নয়নশীল দেশে চালু রয়েছে।
এদিকে বিভিন্ন কমিটির সভা, সেমিনার ও প্রশিক্ষণে অংশ নিয়ে সরকারি কর্মচারীরা যে সম্মানী বা ভাতা নিচ্ছেন, তা নৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য নয়। কর্মকর্তারা নিজ নিজ পদের দায়িত্ব পালনের জন্য আলাদাভাবে এই সম্মানী নিচ্ছেন, ফলে বছরে প্রায় এক হাজার কোটি টাকা ব্যয় হচ্ছে। এই সুবিধা বাতিলের প্রস্তাবও কমিশনের কাছে দেওয়া হয়েছে।
সম্প্রতি পে-কমিশনের সুপারিশ প্রসঙ্গে অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ গণমাধ্যমকে জানান, পে-কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়নে যে অতিরিক্ত অর্থের প্রয়োজন হবে, তা সংশোধিত বাজেটে বরাদ্দ রাখা হবে। ডিসেম্বরে চলতি বাজেট সংশোধনের কাজ শুরু হবে।
তিনি আরো বলেন, পে-কমিশনের গেজেট প্রকাশের ওপর এ বাস্তবায়ন নির্ভর করবে। তবে আগামী বছরের শুরুতে এটি কার্যকর হতে পারে।
সর্বশেষ ২০১৫ সালের পে-স্কেল ঘোষণা করা হয়। ওই স্কেলের বেতন কাঠামো পর্যালোচনা করে দেখা যায়, তখন সর্বোচ্চ গ্রেড-১-এ মূল বেতন ১৯৫ শতাংশ (৪০ হাজার থেকে ৭৮ হাজার টাকা) বাড়ানো হয়। আর সর্বনিম্ন বেতনের ক্ষেত্রে ২০১ শতাংশ বাড়িয়ে ৪ হাজার থেকে করা হয় ৮ হাজার ২৫০ টাকা।
অর্থ আত্মসাতের দুই পৃথক মামলায় ফটিকছড়ির এক সাবেক এনজিও সচিবকে মোট ১০ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড ও দুই লাখের বেশি টাকা অর্থদণ্ডের আদেশ দিয়েছেন চট্টগ্রামের বিভাগীয় বিশেষ জজ আদালত।
সোমবার (২০ অক্টোবর) চট্টগ্রাম বিভাগীয় বিশেষ জজ আদালতের বিচারক এই দুটি মামলার রায় ঘোষণা করেন। দণ্ডপ্রাপ্ত ব্যক্তি হলেন ফটিকছড়ি উপজেলার সৈয়দ হাসানুজ্জামান লোটন।
আদালত সূত্রে জানা গেছে, লোটন এনজিও সংস্থার সচিব থাকাকালীন সময়ে প্রতিষ্ঠানের তহবিল থেকে দুই দফায় অর্থ আত্মসাৎ করেন। প্রথম মামলায় (স্পেশাল মামলা নং ৯/১৪, ফটিকছড়ি থানার মামলা নং ০৯(০৫)০৩) তিনি ৭৯ হাজার ১৭০ টাকা আত্মসাৎ করেন। অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় আদালত দণ্ডবিধির ৪০৯ ধারায় তাঁকে ৫ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড ও আত্মসাৎ করা সমপরিমাণ অর্থদণ্ড দেন।
একই দিনে ঘোষিত দ্বিতীয় রায়ে (স্পেশাল মামলা নং ৪/১৪) লোটনকে একই ধারায় আরও ৫ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড ও ১ লাখ ৪৪ হাজার টাকার অর্থদণ্ড দেওয়া হয়। এই মামলায় অভিযোগ ছিল, তিনি এনজিওর সচিব থাকা অবস্থায় প্রতিষ্ঠানের তহবিল থেকে ওই অর্থ আত্মসাৎ করেছিলেন।
প্রথম মামলায় রাষ্ট্রপক্ষে পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) ছিলেন মো. রেজাউল করিম রনি এবং দ্বিতীয় মামলায় পিপি ছিলেন মুহাম্মদ কবির হোসাইন। দুজনেই বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
রায়ের সময় আসামি আদালতে উপস্থিত ছিলেন না। রায় ঘোষণার পর আদালত তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছেন বলে আদালত সূত্রে জানা গেছে।
রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীরা বলেন, জনগণের অর্থ আত্মসাৎ করে কেউ পার পাবে না এই রায় তারই প্রমাণ। আদালতের এই সিদ্ধান্ত ভবিষ্যতে অন্যদের জন্য সতর্কবার্তা হিসেবে কাজ করবে।
আদালত সূত্র আরও জানায়, একই ব্যক্তির বিরুদ্ধে আত্মসাতের একাধিক মামলা বিচারাধীন রয়েছে। রায়ের মাধ্যমে দীর্ঘদিন ধরে চলা দুটি মামলার নিষ্পত্তি হলো।
মন্তব্য