তিন বছর ধরে নদী খনন করা হয়েছে। দুই পাড়ে নৌ টার্মিনালসহ আরও বেশ কিছু অবকাঠামো নির্মাণ শেষ। এখন শুধু উদ্বোধনের অপেক্ষা। কিন্তু শেষে এসে জানানো হলো, এই নৌপথ ফেরি চলাচলে উপযোগী নয়। প্রকল্প বাতিল। গচ্চা ১৪৫ কোটি টাকা।
বৃহত্তর রংপুর বিভাগের সঙ্গে জামালপুর, ময়মনসিংহ ও সিলেটসহ কয়েক জেলার মানুষের চলাচলে দূরত্ব কমাতে এই নৌরুট চালুর উদ্যোগ। সেই সঙ্গে বঙ্গবন্ধু সেতুর ওপর ঝুঁকি কমানোও ছিল উদ্দেশ্য।
গাইবান্ধার বালাসীঘাট থেকে জামালপুরের বাহাদুরাবাদ পর্যন্ত ফেরি চলাচলে নৌরুট খনন, নদীর দুই পাড়ে টার্মিনালসহ যাবতীয় অবকাঠামো নির্মাণের এই প্রকল্প শুরু হয় ২০১৭ সালে।
বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ) প্রকল্প বাস্তবায়ন করে। প্রকল্পের কাজ শুরু হয়েছিল ১২৪ কোটি ৭৭ লাখ টাকা ব্যয় ধরে। পরবর্তীতে দুই দফা সংশোধনের মাধ্যমে প্রকল্পটির ব্যয় বাড়িয়ে ১৪৫ কোটি ২ লাখ টাকা করা হয়। সময়ও বাড়ানো হয়। গত জুনে প্রকল্পের কাজ শেষ হয়।
উদ্বোধনের আগে সম্প্রতি একটি প্রতিবেদন দিয়েছে বিআইডব্লিউটিএ-এর কারিগরি কমিটি। প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘নাব্যতা-সংকট সম্ভাব্যতা সমীক্ষা ছাড়াই প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। এ ছাড়া নদীর যে পরিমাণ ড্রেজিং প্রয়োজন, তার চেয়ে অনেক কম ধরা হয়। প্রকল্প বাস্তবায়নে সমন্বয়হীনতাসহ বেশি দূরত্বের নৌপথ চিহ্নিত করা এবং পূর্ণাঙ্গ সম্ভাব্যতা সমীক্ষা ছাড়াই প্রকল্পের স্থান নিরূপণ করা হয়েছে। নদীর মরফোলজিক্যাল অবস্থা না জেনেই দুই পাড়ে ঘাট নির্মাণ করা হয়। তাছাড়া প্রকল্প শুরুর সঙ্গে সঙ্গে সড়ক বিভাগ রাস্তা নির্মাণকাজ আরম্ভ করেনি।’
বালাসীঘাট-বাহাদুরাবাদ পর্যন্ত দীর্ঘ ২৬ কিলোমিটার এ নৌরুটে ফেরি সার্ভিস চালুর লক্ষ্যে প্রকল্প বাস্তবায়ন শেষ পর্যায়ে এসে কাজের সম্ভাব্যতা যাচাইয়ে একটি ‘কারিগরি কমিটি’ গঠন করে বিআইডব্লিউটিএ।
সংস্থাটির ড্রেজিং বিভাগের তৎকালীন অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী রকিবুল ইসলাম তালুকদারকে প্রধান করে পাঁচ সদস্যের এই কমিটি চলতি বছরের এপ্রিল ও মে মাসে সরেজমিন পরিদর্শন করে সম্প্রতি এই প্রতিবেদন জমা দিয়েছে।
প্রতিবেদনে বালাসীঘাট ও বাহাদুরাবাদের দুই প্রান্তের ফেরিঘাট স্থানান্তর করতে বলা হয়েছে। আর যেসব অবকাঠামো নির্মাণ করা হয়ে গেছে, তা ভিন্ন কাজে ব্যবহারের সুপারিশ করা হয়েছে।
চলতি বছরের জুনে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগ (সেক্টর-৮) এই প্রকল্পের নিবিড় পরিবীক্ষণ সমীক্ষা প্রতিবেদনে প্রকল্প বাস্তবায়ন সম্পর্কিত কিছু সমস্যা চিহ্নিত করে। সেই প্রতিবেদনের আলোকে পরামর্শক দল প্রকল্প এলাকা পরিদর্শন করে ‘ভৌত কাজের গুণগত মান ও কাজের তদারকির অভাব রয়েছে’ বলে উল্লেখ করে। তাছাড়া প্রকল্পের কাজ শুরু হওয়ার সাথে সাথেই পরিচালনা এবং রক্ষণাবেক্ষণের সমস্ত বাজেট শেষ হয়ে যাওয়া, ভৌত অবকাঠামো নির্মাণে শাটারিং কাজে বাঁশের খুঁটি ব্যবহার করা, শাটারিং ঠিকমতো না হওয়ায় আনসার ব্যারাকের বিমে সঠিকভাবে ঢালাই না হওয়া ইত্যাদি অনিয়ম চিহ্নিত করা হয়।
স্টেকহোল্ডার অ্যানালাইসিস ও সম্ভাব্যতা সমীক্ষা না করা, সমন্বয়হীনতা, ড্রেজিংয়ের পরিমাণ কম হওয়া ও ড্রেজ স্পয়েলের ক্ষেত্রে অব্যবস্থাপনার কথা তুলে ধরে পরামর্শক দল।
এ ছাড়া আরও বলা হয়েছে, প্রয়োজনীয় জনবলের অভাবে তদারকি কাজের ব্যত্যয় পরিলক্ষিত হয়েছে। চলাচলের জন্য নদীর চ্যানেল চালু রাখার বিষয়টি প্রকল্প প্রণয়নের সময়েই চিন্তা করা উচিত ছিল। উজানের নাব্যতা মাথায় রেখে নদীর চ্যানেল নির্ধারণ করা দরকার ছিল। এ ছাড়া নিরাপদ নৌ চলাচল বেসিন ও চ্যানেল নিশ্চিতকরণে অবশ্যই নির্দিষ্ট নৌরুট পরিচালনা ও রক্ষণাবেক্ষণের দরকার ছিল বলে মনে করে পরামর্শক দল।
এই পথ দিয়ে আবারও ফেরি চলাচল শুরু হবে, এমনটা প্রত্যাশা ছিল বৃহত্তর রংপুর বিভাগসহ কয়েক জেলার মানুষের। এই পথে ফেরি সার্ভিস চালু হলে পণ্য পরিবহনে স্থানভেদে ১০০ থেকে ১৫০ কিলোমিটার দূরত্ব কমে যেত। সেই সঙ্গে বঙ্গবন্ধু সেতুর ওপর সৃষ্ট অতিরিক্ত চাপ কমে আসত।
২০১৭ সালের অক্টোবরে ‘বালাসী ও বাহাদুরাবাদে ফেরিঘাটসহ আনুষঙ্গিক স্থাপনাদি নির্মাণ’ শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় একনেক সভায় প্রকল্পটি অনুমোদন পায়। ওই সময়ে প্রকল্প ব্যয় ধরা হয় ১২৪ কোটি ৭৭ লাখ টাকা। এর মেয়াদ ধরা হয় একই বছরের জুলাই থেকে ২০১৯ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত। কিন্তু পরবর্তীতে দুই দফায় প্রকল্প সংশোধন করে ব্যয় বাড়িয়ে ১৪৫ কোটি ২ লাখ টাকা ও ২০২১ সালের জুন পর্যন্ত মেয়াদ বৃদ্ধি করা হয়।
প্রকল্পের আওতায় জমি অধিগ্রহণ, বাস টার্মিনাল, টোল আদায় বুথ, পুলিশ ব্যারাক, ফায়ার সার্ভিস, আনসার ব্যারাক, রেস্টুরেন্ট, মসজিদ, ফেরিঘাট ও ইন্টারনাল রোডসহ বেশ কিছু স্থাপনা নির্মাণ করা হয়। ফেরি চলাচলে নদী ড্রেজিংকাজও সম্পন্ন হয়।
১৯৩৮ সালে ঢাকার সঙ্গে দেশের উত্তরাঞ্চলের রেল যোগাযোগ বৃদ্ধির লক্ষ্যে গাইবান্ধা জেলার ফুলছড়ি উপজেলায় তিস্তামুখঘাট ও জামালপুর জেলার দেওয়ানগঞ্জের বাহাদুরাবাদ ঘাটে যমুনা নদীতে রেল ফেরি সার্ভিস চালু করা হয়। তৎকালীন রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ ঢাকা, চট্টগ্রাম এবং বৃহত্তর ময়মনসিংহ জেলার জামালপুর, শেরপুর, নেত্রকোনা ও কিশোরগঞ্জ জেলার সঙ্গে উত্তরাঞ্চলের বৃহত্তর রংপুর জেলার গাইবান্ধা, কুড়িগ্রাম, লালমনিরহাট, নীলফামারী, দিনাজপুর, পঞ্চগড় ও ঠাকুরগাঁও জেলাসহ বিভিন্ন অঞ্চলের মধ্যে যাত্রী ও মালামাল পারাপারের জন্য যোগাযোগ গড়ে তুলতে এ ফেরি সার্ভিসটি চালু করে। এরপর থেকেই এ ঘাট দিয়ে স্বল্পব্যয়ে অল্প সময়ে যাত্রী পারাপার, কৃষিপণ্য, ডিজেল, সার সরবরাহসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় মালামাল পরিবহন করা হতো। ১৯৯০ সালের পর যমুনা নদীর নাব্যতা-সংকটের কারণে ফেরি সার্ভিসটি তিস্তামুখঘাট থেকে বালাসীঘাটে স্থানান্তর করা হয়।
পরবর্তীতে ‘বঙ্গবন্ধু সেতু’ চালু হওয়ার পর এসব জেলার মানুষের যাতায়াতে ভোগান্তি কমে যায়। সড়ক পথে দূরত্ব কমায় অর্ধেকের কম ভাড়ায় ঢাকার সঙ্গে এসব জেলার যাতায়াতের সুযোগ সৃষ্টি হয়। পরে ২০০৫ সালের ১৫ জুন গাইবান্ধার বালাসীঘাট ও জামালপুরের বাহাদুরাবাদ নৌরুটে বন্ধ হয়ে যায় ফেরি চলাচল।
সেই থেকে এই পথে শ্যালো ইঞ্জিনচালিত ছোট-বড় নৌকাই কম দূরত্বে যাতায়াতের একমাত্র মাধ্যম হয়ে দাঁড়ায়। যমুনার পূর্ব-পশ্চিমপাড়ের লাখ লাখ মানুষ প্রতিদিন এ নৌপথে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করে আসছে। এতে করে চরাঞ্চলের বাসিন্দাদের পণ্য পরিবহন ও চিকিৎসাসেবাসহ যেকোনো প্রয়োজনে যাতায়াতে নৌকায় গুনতে হচ্ছে বেশি ভাড়া।
ফেরিঘাট বাতিলের এই সিদ্ধান্ত নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন জেলার রাজনৈতিকসহ সামাজিক আন্দোলনের নেতারা। তারা বলেন, এই সিদ্ধান্ত হঠকারিতা ও সরকারের অর্থ অপচয় এবং জনগণের সঙ্গে প্রতারণার শামিল। তদন্তসহ জড়িতদের বিচারের দাবিও জানান তারা।
এ নিয়ে বালাসীঘাট এলাকার বাসিন্দা শাওন বিশ্বাস বলেন, ‘জেলাবাসীর একটা আশা ছিল, এখানে ইনপুট-আউটপুটের ভালো ব্যবসা হবে। কিন্তু এখন তো দেখা যাচ্ছে অন্যটা। এত টাকা ইনভেস্ট করে যদি ফেরিই না চলে, তাহলে কাজ করার কী দরকার ছিল।’
ঘাটে ঘুরতে আসা সোহেল রানা বলেন, ‘এই ঘাটটি আগে থেকেই ব্যবসায়ের একটা কেন্দ্রবিন্দু ছিল। ফেরি চলাচল শুরু হলে এটি আরও প্রসার হতো। কিন্তু সবকিছু নির্মাণ করার পর হঠাৎ করে কেন এটা বলা হচ্ছে যে, ঘাটে ফেরি চলবে না? প্রথমে তো উপযোগী ছিল; কাজ শেষের পর অনুপযোগী হয়ে গেল?’
শিক্ষার্থী রায়হান কবির বলেন, ‘ফেরি ঘাটের কাজ শুরুর পর অনেকেই ব্যবসায় অনেক ইনভেস্ট করেছেন। এখন যদি এটা চালু না হয়, তাহলে তো অনেক বড় ক্ষতির মুখে পড়বেন এসব ব্যবসায়ী।’
এ বিষয়ে গাইবান্ধা নাগরিক মঞ্চের সদস্যসচিব অ্যাডভোকেট সিরাজুল ইসলাম বাবু বলেন, ‘আমরা খুবই আশাহত হয়েছি। এই প্রকল্প বাস্তবায়নে যে রাষ্ট্রীয় অর্থ ব্যয় করা হয়েছে, তা লুটপাট ও জনগণের সঙ্গে প্রতারণা করা হয়েছে। প্রকল্প শুরুর আগে অবশ্যই পরিকল্পনা করেই ফেরি ঘাট নির্মাণ করা হয়েছে। শেষ সময়ে এসে বন্ধের সিদ্ধান্ত বাংলাদেশের জনগণের সাথে প্রতারণার শামিল।’
জেলা সামাজিক সংগ্রাম পরিষদের আহ্বায়ক জাহাঙ্গীর কবীর তনু বলেন, ‘আমরা জানতে পেরেছি, নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় থেকে এখানে একটা স্ট্যাডি করে ভুল পরিসংখ্যান দিয়েছে। প্রকল্পের সমস্ত কাজ শেষ করার পর তাদের বোধোদয় হয়েছে - এই রুটে ফেরি চলাচল সম্ভব নয়। কারিগরি কমিটির এই প্রতিবেদনে ত্রুটি রয়েছে।’
এ বিষয়ে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী এক সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘বিকল্প কয়েকটি জায়গা আছে; যাতে রুটটি কমিয়ে আনা যায়। সেই জায়গা স্টাডি করে অন্তত একটি ফেরি ওই রুটে চালু করার চেষ্টা করছি। সেটি স্থায়ী না হলে সেখানে বিকল্প হিসেবে লঞ্চ ও স্পিডবোট চালুর উদ্যোগ নেয়া হবে।’
ফেনীতে বন্যার পানি নামতে শুরু করেছে। এর সঙ্গে দেখা দিয়েছে নতুন এক আতঙ্ক। বন্যার কবল থেকে রক্ষা পেতে মানুষের বাড়িঘরে আশ্রয় নিয়েছিল নানা প্রজাতির সাপ। এখন ঘরে ফিরলেও সাপ আতঙ্ক বিরাজ করছে স্থানীয়দের মাঝে। এরই মধ্যে পরশুরামে বিষধর সাপের কামড়ে রোকেয়া আক্তার রিনা (৫০) নামে এক গৃহবধুর মৃত্যু হয়েছে।
শুক্রবার (১১ জুলাই) বিকাল ৫টার দিকে ফেনীর পরশুরামের পৌর এলাকার সলিয়া গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।
নিহত রিনা পৌর এলাকার সলিয়া গ্রামের শফিকুল ইসলাম শহীদের স্ত্রী। তার এক ছেলে দুই মেয়ে রয়েছে।
স্থানীয়রা জানান, বন্যার পানি শুকিয়ে গেলে রান্না করার জন্য রান্নাঘরে গেলে সেখানে একটি অজ্ঞাত বিষধর সাপ রিনাকে কামড় দেয়। তাকে উদ্ধার করে প্রথমে পরশুরাম উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হয়। এরপর ফেনী ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
নিহতের স্বামী শফিকুল ইসলাম জানান, শুক্রবার বিকাল ৫টার দিকে রিনা রান্না ঘরে যায়। এ সময় রান্নাঘরের একটি গর্ত থেকে বিষধর একটি সাপ বের হয়ে তার পায়ে কামড় দেয়। তার চিৎকার শুনে তাকে উদ্ধার করে প্রথমে পরশুরাম উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্রেক্স নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে তার কোনো চিকিৎসা না হওয়ায় ফেনী সদর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। হাসপাতালে নেওয়ার পর কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
ফেনী ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডাক্তার রেদোয়ান বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, হাসপাতালে আনার আগেই ওই গৃহবধূর মৃত্যু হয়েছিল।
টানা ৩ দিনের বৃষ্টিতে বেনাপোল বন্দর এলাকায় জলবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। বন্দর অভ্যন্তরের অনেক স্থানে হাটু পানি জমায় মারাত্বক ভাবে ব্যহত হচ্ছে পণ্য খালাস প্রক্রিয়া। যানবাহন ও নিরাপত্তাকর্মীদের চলাচলে অনুপযোগী হয়ে পড়ায় বন্দরের ৯.১২.১৫.১৬ ও ১৮ নম্বর সেড থেকে লোড আনলোড বন্ধ হয়ে আছে।
ড্রেনেজ ব্যবস্থা না থাকায় সামান্য বৃষ্টি হলেই বন্দরে হাটু পানি জমে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়ে থাকে। কয়েক বছর ধরে এ দূর্ভোগ হলেও নজর নাই বন্দর কর্তৃপক্ষের। তবে বন্দর কর্তৃপক্ষ বলছেন, রেলকর্তৃপক্ষ কালভাট না রেখে মাটি ভরাট করায় পানি নিষ্কাসনে বাধা গ্রুস্থ্য হচ্ছে।
তবে এসব শেড ও ওপেন ইয়ার্ড অধিকাংশই দীর্ঘ মেয়াদি পরিকল্পনা নিয়ে তৈরী হয়নি। বন্দর সড়কের উচ্চতার চেয়ে পণ্যগারগুলো নিচু হওয়ায় একটু বৃষ্টিপাত বেশি হলে পানি নিষ্কাষনের অভাবে পণ্যগার ও ইয়াডে জলবদ্ধতা তৈরী হয়। এতে পানিতে ভিজে যেমন পণ্যের গুনগত মান নষ্ট হয় তেমনি চলাচলের বিঘ্ন ঘটছে। তবে আজ সকাল থেকে সেচ যন্ত্র চালিয়ে পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করা হচ্ছে।
বেনাপোল বন্দর পরিচালক শামিম হোসেন জানান, বন্দরের জলবদ্ধতা প্রতি বছরে তৈরী হয়। বিশেষ করে রেল বিভাগ কালভাট না রেখে মাটি ভরাট করায় সমস্যার সন্মুখিন হতে হচ্ছে। বন্দরের পানি নিষ্কাসন ব্যবস্থা বন্ধ হয়ে পড়েছে। তবে দ্রুত এ অবস্থা কাটিয়ে তুলতে পাশ্ববর্তী হাওড়ের সাথে বন্দরের ড্রেন তৈরীর পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। প্রেরক: রাশেদুর রহমান রাশু, বেনাপোল যশোর ।
কক্সবাজারের চকরিয়ায় গত রোববার (৬ জুলাই) মালুমঘাট বাজার থেকে পুলিশের উপর হামলা চালিয়ে এক যুবক পালিয়ে যায়। পালিয়ে যাওয়া সে যুবক সাজ্জাদ হোসেন (২০) কে কক্সবাজারের ডিবি পুলিশ কলাতলীর একটি আবাসিক হোটেল থেকে আটক করে।
মঙ্গলবার (৮ জুলাই) দিবাগত রাত তিনটায় কক্সবাজারের একটি আবাসিক হোটেল (ওয়ার্ল্ড বিচ রিসোর্ট) অভিযান পরিচালনা করে কক্সবাজারের ডিবি পুলিশ। রাত প্রায় তিনটায় নেশাগ্রস্ত অবস্থায় ওই হোটেলের একটি কক্ষ থেকে তাকে আটক করা হয়।
চকরিয়া থানা পুলিশের বিশেষ নজরদারি ও কক্সবাজারের গোয়েন্দা পুলিশের শ্বাসরুদ্ধকর অভিযানে আসামি সাজ্জাদ হোসেন কে আটক করতে সক্ষম হয় কক্সবাজার ডিবি পুলিশ।
এবিষয়ে চকরিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শফিকুল ইসলাম বলেন, পলাতক আসামি সাজ্জাদ কে কক্সবাজার ডিবি পুলিশ আটক করেছে। প্রাথমিকভাবে সদর মডেল থানায় নিয়ে যাওয়া হয়। এরপর চকরিয়া থানায় নিয়ে আসা হবে। তার বিরুদ্ধে একটি পুলিশ এসল্ট মামলা করা হয়েছে।
পঞ্চগড়ের দেবীগঞ্জে করতোয়া নদী থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের অভিযোগে যৌথবাহিনীর অভিযানে একজনকে দুই লাখ টাকা অর্থদণ্ড প্রদান করা হয়েছে।
মঙ্গলবার (৮ জুলাই) রাত ৯টার দিকে শালডাঙ্গা ইউনিয়নের ধুলাঝাড়ি বাজারের করতোয়া নদীসংলগ্ন এলাকায় অভিযানটি চালানো হয়।
দেবীগঞ্জ সেনা ক্যাম্পের ক্যাম্প কমান্ডার মেজর জুবায়ের হোসেন সিয়ামের নেতৃত্বে সেনাবাহিনী ও দেবীগঞ্জ থানা পুলিশের সমন্বয়ে এ অভিযান পরিচালিত হয়।
অভিযানে বালু উত্তোলনের কাজে ব্যবহৃত দুইটি ট্রাক্টরসহ চালক রাজু ইসলাম ও শান্ত আহমেদকে আটক করা হয়। পরে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মাহমুদুল হাসান ঘটনাস্থলে এসে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করেন।
আদালতের রায়ে রাজু ইসলামকে বালু মহাল ও মাটি ব্যবস্থাপনা আইনের ধারা লঙ্ঘন করায় দুই লাখ টাকা অর্থদণ্ড দেওয়া হয়, অনাদায়ে তিন মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ডের আদেশ দেন বিচারক। তবে রাজু ইসলাম অর্থদণ্ডের অর্থ পরিশোধ করায় ট্রাক্টর দুটি ছেড়ে দেওয়া হয়।
স্থানীয় প্রশাসন জানায়, অবৈধভাবে বালু উত্তোলন রোধে যৌথবাহিনীর অভিযান চলমান থাকবে।
কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলায় মাত্র এক মাসের ব্যবধানে একই ক্লিনিকে সিজারিয়ান ডেলিভারির সময় দুই প্রসূতির মৃত্যু হয়েছে। সর্বশেষ সোমবার (৭ জুলাই) রাতে মুন্নি খাতুন (২৫) নামে এক অন্তঃসত্ত্বা নারী সিজারিয়ান অপারেশনের সময় মারা যান। এর আগে ৮ জুন ওই ক্লিনিকেই আখি খাতুন (২২) নামের আরেক প্রসূতির মৃত্যুর অভিযোগ ওঠে। পরপর এমন দু’টি মৃত্যুর ঘটনায় এলাকায় চরম উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। ক্লিনিক মালিকের ছেলে মাছরাঙ্গা টেলিভিশনের কুষ্টিয়া জেলা প্রতিনিধি হওয়ায় প্রভাব খাটিয়ে বিষয়টি ধামাচাপা দেয়ার চেস্টা করছে বলে জানাগেছে।
সোমবার রাতে মুন্নির মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়লে ক্ষুব্ধ এলাকাবাসী ক্লিনিক মালিক আবুল হোসেনের ব্রাকপাড়া এলাকার বাড়িতে হামলা চালিয়েছে বলে জানিয়েছেন পুলিশ। পরে তারা গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
নিহত মুন্নি খাতুন উপজেলার তারাগুনিয়া ব্রাকপাড়া এলাকার মঞ্জু হোসেনের মেয়ে। আর নিহত আখি খাতুন পূর্ব কবিরাজপাড়া গ্রামের ইমনের স্ত্রী।
মুন্নির পরিবারের সদস্যরা জানান, গর্ভাবস্থায় জটিলতা দেখা দিলে সোমবার তাকে উপজেলার বিভিন্ন ক্লিনিকে নেওয়া হয়। কিন্তু চিকিৎসকরা ঝুঁকির কথা বলে কুষ্টিয়া বা রাজশাহীতে রেফার করার পরামর্শ দেন। সন্ধ্যায় তাকে তারাগুনিয়া থানার মোড় বাজারের আবুল হোসেনের মালিকানাধীন তারাগুনিয়া ক্লিনিক নামের একটি বেসরকারি ক্লিনিকে নেওয়া হলে কর্তৃপক্ষ সিজারিয়ানে সম্মত হয়। কিন্তু রাত ৯টার দিকে অপারেশনের সময়ই মুন্নির মৃত্যু হয়।
এ বিষয়ে তারাগুনিয়া ক্লিনিকের মালিক আবুল হোসেন বলেন, “রোগী কীভাবে মারা গেছে সেটা ডাক্তাররাই ভালো বলতে পারবেন। আমি নিজে অপারেশনে ছিলাম না, তাই কিছু জানি না। টাকা দিয়ে বিষয়টি ধামাচাপা দেওয়ার অভিযোগ সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন।”
অপারেশনকারী চিকিৎসক ডা. সফর আলী বলেন, “রোগীকে ওটিতে আনার আগে অ্যানেসথেসিয়া চিকিৎসক ওষুধ প্রয়োগ করেন। আমরা ওটিতে ঢুকেই দেখি রোগী স্ট্রোক করেছে। এরপর দ্রুত নবজাতকের প্রাণ রক্ষায় সিজারিয়ান সম্পন্ন করি।”
এ বিষয়ে দৌলতপুর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. তৌহিদুল হাসান তুহিন বলেন, “একই প্রতিষ্ঠানে পরপর দুই প্রসূতির মৃত্যু অত্যন্ত উদ্বেগজনক। আমরা বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে খতিয়ে দেখছি। আজই ক্লিনিকটি পরিদর্শন করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।”
দৌলতপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নাজমুল হুদা বলেন, “গতকাল রাতে তারাগুনিয়া এলাকার একটি ক্লিনিকে প্রসূতির মৃত্যুর ঘটনায় ক্লিনিক এলাকায় উত্তেজনা ও হট্টগোলের আশঙ্কায় আমি তাৎক্ষণিকভাবে পুলিশ পাঠাই। পরে জানতে পারি, নিহত নারীর এলাকা থেকে কিছু লোকজন ক্লিনিক মালিকের বাড়িতে হামলা চালায়। আমরা দ্রুত সেখানে পুলিশ পাঠিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনি। প্রসূতির মৃত্যুর ঘটনায় এখন পর্যন্ত থানায় কোনো লিখিত অভিযোগ দায়ের হয়নি। শুনেছি দুই পক্ষ নিজেদের মধ্যে বিষয়টি সমাধান করে নিয়েছে।”
এবিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আবদুল হাই সিদ্দিকী বলেন, এক মাসের মধ্যে দুইজন রোগীর মৃত্যু অত্যান্ত দুঃখজনক। ঘটনায় কর্তৃপক্ষকে বলবো তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য।
একই ক্লিনিকে এক মাসের ব্যবধানে দুই প্রসূতির মৃত্যুকে কেন্দ্র করে এলাকায় চরম ক্ষোভ ও আতঙ্ক বিরাজ করছে। এ ঘটনায় স্থানীয়রা স্বাস্থ্য বিভাগের পক্ষ থেকে দ্রুত তদন্ত করে দায়ীদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন।
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি'র জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ও ভোলা-২ (বোরহানউদ্দিন-দৌলতখানের) সাবেক সংসদ সদস্য মো: হাফিজ ইব্রাহিমের নামে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার কাছে সেলিম নামে এক ব্যক্তির দেওয়া অভিযোগটি মিথ্যা, বানোয়াট ও ষড়যন্ত্রমূলক বলে দাবি করা হয়েছে।
রোববার বিকেলে বোরহানউদ্দিন উপজেলার বড়মানিকায় শহীদ জিয়া স্মৃতি সংসদের আয়োজনে বৃক্ষরোপন কর্মসূচিতে গণমাধ্যমকর্মীদের দেয়া স্বাক্ষাতকারে এ দাবি করেন হাফিজ ইব্রাহিম।
এর আগে দৈনিক ইত্তেফাক, সমকাল, যায়যায়দিন সহ বেশ কয়েকটি পত্রিকার ডিজিটাল প্লাট ফরমে একটি সংবাদে দেখা যায়, স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার কাছে হাফিজ ইব্রাহিমের বিরুদ্ধে জোরপূর্বক জমি দখলের অভিযোগ তুলে সেলিম নামে এক ব্যক্তি অভিযোগ করছেন।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে গণমাধ্যমকর্মীদের হাফিজ ইব্রাহিম বলেন, সংবাদটি ডিজিটাল প্লাট ফরমে প্রকাশ হওয়ার পর আমার নজরে আসে। আমি মনোযোগ দিয়ে তার অভিযোগ শুনি। যে ব্যক্তি আমার নামে জমি দখলের অভিযোগ তুলেছেন। তিনি আমার নির্বাচনী এলাকার বাসিন্দা না। আমি খবর নিয়ে জেনেছি, তিনি ভোলা-১ সদর আসনের বাসিন্দা ভোলা সদর আসনের সাবেক এমপি ও মন্ত্রী মরহুম মোশারেফ হোসেন শাহজাহানের বাড়ির পাশে তার বাড়ি। আমি খোঁজ নিয়ে জানতে পারি সেলিম নামে ওই ব্যক্তির সাথে তার আপন ভাতিজি জামাইয়ের দীর্ঘদিন ধরে জমি-জমা নিয়ে বিরোধ রয়েছে তার ভাতিজি জামাই তাকে হুমকি ধামকি দিয়ে থাকতে পারে এ বিষয়ে আমার কিছুই জানা নেই। এমনকি ওই বিষয়ে ভোলা সদর থানায় মামলা রয়েছে।
হাফিজ ইব্রাহিম আরও বলেন, আসন্ন সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে একটি মহল আমার বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাচ্ছে। পতিত সরকারের পলাতক একটি কুচক্রী মহল বিএনপির নামে মিথ্যা প্রোপাগান্ডা ছড়াচ্ছে ও দেশকে অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করছে। তিনি সাংবাদিকদের উদ্দেশ্যে বলেন আপনারা এই ঘটনার পেছনে যে আসল সত্য রয়েছে তা উদঘাটন করুন।
জুলাই-আগস্ট ছাত্র আন্দোলনের সময় রাজশাহী মহানগরীর একটি থানা থেকে লুট হওয়া অস্ত্র, ম্যাগাজিন ও গুলি উদ্ধার করেছে র্যাব-৫।
রোববার রাত সাড়ে ১২টার দিকে নগরীর টিকাপাড়া এলাকার একটি বালুর স্তূপের আনুমানিক ২ ফুট গভীর থেকে এগুলো উদ্ধার করা হয়।
সোমবার সকালে র্যাব-৫ এর মিডিয়া সেল থেকে পাঠানো প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানানো হয়।
অভিযানে একটি ৭.৬২ মি.মি. বিদেশি পিস্তল, একটি ম্যাগাজিন এবং এক রাউন্ড গুলি উদ্ধার করা হয়েছে।
র্যাব জানায়, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে র্যাব-৫; সিপিএসসি’র একটি আভিযানিক দল জানতে পারে, ছাত্র আন্দোলন চলাকালীন লুট হওয়া অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্র, ম্যাগাজিন ও গুলি দুষ্কৃতকারীরা বোয়ালিয়া থানাধীন টিকাপাড়া এলাকায় লুকিয়ে রেখেছে। পরে নিরপেক্ষ সাক্ষীদের উপস্থিতিতে অভিযান চালিয়ে বালুর স্তূপের ভেতর থেকে বিদেশি পিস্তল, ম্যাগাজিন ও গুলি উদ্ধার করে র্যাবের গোয়েন্দা দল।
এ বিষয়ে বোয়ালিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বাসস’কে জানান, এটি পুলিশের ব্যবহৃত আগ্নেয়াস্ত্র। তবে কোন থানার অস্ত্র সেটি নিশ্চিত করা যায়নি। কারণ পিস্তলের গায়ে বাট নম্বর ঘষা-মাজার চিহ্ন স্পষ্ট। উদ্ধারকৃত বিদেশি পিস্তল, ম্যাগাজিন ও গুলি বোয়ালিয়া থানায় জিডির পর হস্তান্তর করা হয়েছে।
মন্তব্য