মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্ব দেয়া জাতীয় চার নেতা হত্যা মামলার বিচারে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে আদালতে কী হয়েছিল, তা তুলে ধরে ন্যায়বিচার না পাওয়ার আক্ষেপের কথা জানালেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক।
বিচারিক আদালতে খালাস পাওয়া চার আসামি কার্যত বিচারিক আদালত পরিচালনা করতেন জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, উচ্চ আদালত থেকে যে রায় এসেছে, সেটাও প্রত্যাশিত ছিল না। তার মতে, সেই রায় ছিল ‘পার্ভার্ট’ বা বিকৃত।
মন্ত্রী জানান, বিচারিক আদালত যাদের বিরুদ্ধে রায় দিয়েছিল, তাদের মধ্যে পলাতক একজনের মৃত্যুদণ্ড বহাল রেখে বাকিদের খালাস দেয়া হয়েছিল হাইকোর্টে। পরে আপিল বিভাগে গিয়ে সেই রায় বাতিল করাতে সক্ষম হন তিনি।
‘বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার: আইনি পর্যালোচনা’ শীর্ষক বিশেষ আলোচনা সভার আয়োজন করে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, গোপালগঞ্জের আইন অনুষদ।
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য এ কিউ এম মাহবুবের সভাপতিত্বে আলোচনায় প্রধান অতিথ ছিলেন আইনমন্ত্রী।
হত্যা, বিচারে বিলম্ব, বিচারিক আদালতে যা হয়েছে
১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার আড়াই মাস যেতে না-যেতে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে গুলি করে হত্যা করা হয় স্বাধীন বাংলাদেশ সরকারের ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম, প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদ, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এ এইচ এম কামারুজ্জামান ও অর্থমন্ত্রী ক্যাপ্টেন মনসুর আলীকে।
বঙ্গবন্ধু হত্যার মতো এই হত্যায় জড়িতদেরও বিচার হয়নি। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর বিচারে গতি পায়। তবে ওই সরকারের আমলে রায় হয়নি।
ঘটনার ২৯ বছর পর ২০০৪ সালের ২০ অক্টোবর ঢাকার মহানগর দায়রা জজ আদালত এই মামলার রায় ঘোষণা করে। সে সময় ক্ষমতায় বিএনপি-জামায়াত জোট।
বিচারক তিন আসামিকে মৃত্যুদণ্ড ও ১২ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন।
চার আসামি কে এম ওবায়দুর রহমান, শাহ মোয়াজ্জেম হোসেন, তাহের উদ্দিন ঠাকুর ও নুরুল ইসলামকে দেয়া হয় খালাস।
আইনমন্ত্রী বলেন, ‘এরাই (সে সময়) কোর্ট চালায়। এরাই জজ সাহেবকে বলে এটা করেন, জেরা করেন সাক্ষীদের। আর যা বলে তাই (করেন বিচারক)।
এই হত্যা মামলার বিচারে আইনজীবী হিসেবে আনিসুল যুক্ত হন ২০০২ সালের ২৮ অক্টোবর। তিনি বলেন, ‘আমার পিতা (সিরাজুল হক) মারা যাওয়ার পর আমাকে জেল হত্যা মামলার দায়িত্ব দিয়ে গেলেন। আমাকে কৌঁসুলি নিযুক্ত করা হয়েছিল। তার পরের বছর মার্চ মাস পর্যন্ত।’
তবে আদালতে যা হচ্ছিল, তা দেখে বিচার-প্রক্রিয়া থেকে দূরে সরে দাঁড়ান আনিসুল। বলেন, ‘তখন মার্চ মাসের ২৪ তারিখ, ২০০৪ সাল। আমি আমার প্রসিকিউশন টিম নিয়ে পদত্যাগ করি। আমি তখন বলি যে আমরা বিচার পাব না। আমরা সেদিন বিচার পাইনি।’
বিচারিক আদালত সে সময় মৃত্যুদণ্ড দেয় রিসালদার মোসলেহ উদ্দিন, দফাদার মারফত আলী শাহ ও দফাদার মো. আবুল হাশেমকে।
যাবজ্জীবন কারাদণ্ড পান লে. কর্নেল সৈয়দ ফারুক রহমান, লে. কর্নেল সুলতান শাহরিয়ার রশিদ খান, মেজর (অব.) বজলুল হুদা ও মেজর (অব.) এ কে এম মহিউদ্দিন আহমেদ, কর্নেল (অব.) খন্দকার আবদুর রশিদ, লে. কর্নেল (অব.) শরিফুল হক ডালিম, কর্নেল (অব.) এম বি নূর চৌধুরী, লে. কর্নেল (অব.) এ এম রাশেদ চৌধুরী, মেজর (অব.) আহম্মদ শরিফুল হোসেন, ক্যাপ্টেন (অব.) আবদুল মাজেদ, ক্যাপ্টেন (অব.) কিশমত হাশেম, ক্যাপ্টেন (অব.) নাজমুল হোসেন আনসার।
হাইকোর্টে যা হয়েছিল
মন্ত্রী বলেন, “যখন এটা ২০০৮ সালে হাইকোর্ট ডিভিশনে আসে, আমি জানি কী ওনাদের আইন। ওনারা হয়তো অনেক বেশি আইন জানেন। পরে প্রমাণিত হয়েছে ওনারা আইন জানেন না।
দ্বৈত বেঞ্চ সকলকে খালাস দিয়ে একজনকে রেখেছে, যাকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। সকলকে খালাস দিয়েছে। তখন আমি আপিল বিভাগে যাই, তখন আমাকে বলে ‘দিস ইজ এ প্রিপাস্টেরাস জাজমেন্ট’। আমি বলি সে জন্যই তো আপনাদের কাছে আসা।”
মন্ত্রী বলেন, ‘আমাকে বলে (বিচারপতি) আপনি কী চান? তখন আমি বললাম, বিচারিক আদালত যে রায় দিয়েছে, সেটাই বহাল রাখেন। সেভাবে বহাল রেখে হাইকোর্ট ডিভিশনের পার্ভার্ট রায় বাতিল করল।’
বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলা প্রসঙ্গ
আলোচনার বিষয় বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলা নিয়েও দীর্ঘ বক্তব্য রাখেন আইনমন্ত্রী।
১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর সেনাশাসক জিয়াউর রহমানের আমলে সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ বাতিল করে বিচারের পথ খোলে।
আওয়ামী লীগ সরকারের আমলেই বিচারিক আদালত ও হাইকোর্টের রায় এলেও আপিল বিভাগের রায় আসেনি।
আইনমন্ত্রী বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলায় বিভক্ত রায় হয়েছিল (হাইকোর্টে)। একজন বিচারপতি এম রুহুল আমীন ১০ জনকে মৃত্যুদণ্ডাদেশ দিয়েছিলেন। আর বিচারপতি এ বি এম খাইরুল হক ১৫ জনকেই মৃত্যুদণ্ড দিয়েছিলেন। তাই আইন অনুযায়ী এটা তৃতীয় বিচারক ফজলুল করিমের কাছে যায়। সেখানে তিনি ১২ জনকে মৃত্যুদণ্ডাদেশ দেন। সেটি পরে আবার আপিল বিভাগে চলে যায়। তবে ২০০১ সালে এটি আবার থেমে যায়।’
সে সময় বিএনপি ক্ষমতায় আসে। আপিল বিভাগে নতুন বিচারক নিয়োগ না দেয়ায় আর শুনানি হয়নি।
আইনমন্ত্রী বলেন, “তখন আমার পিতা মওদুদ আহমদ সাহেবকে ফোন করেন। তখন আমি ওনাকে বলি, ‘দেখেন সংবিধানে তো আছে একটা মামলা শোনার জন্য বিচারক দেয়া যায়। আপিল বিভাগে বিচারকসংকট আছে, আপনি এই মামলার জন্য দুজন বিচারক দেন।’
“মওদুদ সাহেব আমার কথা শোনেননি। এই মামলাটি ২০০৬ সাল পর্যন্ত শুনানি করেননি।”
২০০৭ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ক্ষমতায় আসার পর আপিল বিভাগে নতুন বিচারপতি নিয়োগ দিলে বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার শুনানি শুরু হয়। কিন্তু পরে থেমে যায়। এরপর ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার গঠনের পর তা আবার শুরু হয়।
২০০৯ সালের ১৯ নভেম্বর ১২ আসামির মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখে।
২০১০ সালের ২৭ জানুয়ারি রাতে সৈয়দ ফারুক রহমান, বজলুল হুদা, এ কে এম মহিউদ্দিন আহমেদ, সুলতান শাহরিয়ার রশিদ খান ও মুহিউদ্দিন আহমেদের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়। আরেক খুনি ক্যাপ্টেন (বরখাস্ত) আবদুল মাজেদের ফাঁসি কার্যকর করা হয় ২০২০ সালের মে মাসের প্রথম সপ্তাহে।
এখনও পাঁচ খুনি ধরাছোঁয়ার বাইরে। আর এক খুনি বিদেশে মারা গেছে বলে তথ্য মিলেছে।
জিয়াউর রহমানকে প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা প্রমাণ করতে হবে
বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের ১৯৭১ সালে ভারতে যাওয়া, আর জেড ফোর্স নামে একটি বাহিনীর প্রধান হওয়া ছাড়া তার কর্মকাণ্ডে আইনমন্ত্রীর কখনও মনে হয়নি তিনি মুক্তিযুদ্ধের চেতনা লালন করেছেন। বলেন, ‘সে কারণে তাকে প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা বলা সঠিক হবে কি না, সেটা মনে হয় বিতর্কযোগ্য।’
মরমী সাধক ফকির লালনশাহের কুষ্টিয়াস্থ ছেঁউড়িয়া মাজার ভবনে দীর্ঘদিন ধরে ফাটল দেখা দেয়ায় আতংকিত হয়ে পড়েছেন বাউল ও ভক্তরা। মাজারের পূর্ব ,পশ্চিম উত্তর পাশের অংশের পিলারেও ফাটল ধরেছে। মাজারের গম্বুজেও ফাটলধরায় খসে পড়ছে পলেস্তারা। বৃষ্টি হলেই সমাধীর উপরে পানি পড়ছে। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে আসেকানদের খেদমত করছেন খাদেম। তবে বারবার সংস্কার হয় তাতে কোন কাজে আসেনা। তাই এবার সংস্কার নয় করতে হবে পুনর্নির্মাণ, এমন দাবী এসব লালন ভক্ত ফকির বাউলদের।
১৯৬২ সালে নির্মিত লালন মাজারের প্রধান ফটক ও মুল মাজার। এর মধ্যে কেটে গেছে ৬৩ বছর। ১৯৯৬ সালে নির্মিত হয় ভেতরের অডিটোরিয়াম ও মিউজিয়াম। প্রতিবছর দুটি উৎসব আসলেই মূল গেট ও মাজারসাদা, কালো রঙ্গে আচ্ছাদিত হয়। দিনে দিনে ইটের গাঁতুনির ভবন ও মুল গেটের স্থায়ীত্ব হারিয়েছে। দেখা দিয়েছে এখন ফাটল।
বাংলাদেশ সহ বিশ্বের কোটি কোটি লালন ভক্তদের মাঝে বাউল সম্রাট লালন শাহের অস্তিত্বকে টিকিয়ে রাখতে হলে এর মুল ডিজাইন ঠিক রেখে প্রয়োজন স্থায়ী সংস্কার করা প্রয়োজন এমন প্রত্যাশ লালন ভক্ত ও অনুসারীদের।
লালনের আখড়াবাড়িতে ঘুরতে আসা দশনার্থী এস এম রুশদী জানান ফকির লালন সাইজীর আখড়া বাড়িটি এখানে তার সমাধীস্থল (হকের ঘর) এটা এখন বর্তমানে জরাজীর্ণ অবস্থায় উপর থেকে চুন-সড়কি খুলে পড়ছে । অনেক জায়গায় ফেটে গেছে। সাইজীর মাথার ও বুকের উপর গম্বুজ ফেটে পানি পড়ছে। চারিদিকে এটা একটা বেহাল অবস্থার মধ্যে আছে।
লালন একাডেমির শিল্পী আনু ফকির বলেন, সাঈজীর মাজারটি পাকিস্তান আমলে তৈরি। ওই হিসাবে মাজারের বযস ৬০ বছরের বেশি হয়ে গেছে। এর আগে সংস্কার একবার করা হয়েছিল কিন্তু সেটা টিকে নাই। এখানে সংস্কার করলে টিকবে না মাজারটি পূর্ণনির্মাণ করতে পারলে ভালো হয়। সাইজীর মাজারের গম্বুজ ফেটে গিয়েছে, পানি পড়ে, সময় সময় প্লাস্টার খুলে পড়ছে। এখানে সব সময় দর্শনার্থীরা চলাফেরা করে এবং খাদেম সাহেব বসে থাকেন। এটা খুবই ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে, যখন তখন ঘটতে পারে বড় ধরনের দূর্ঘটনা। আমরা জেলা প্রশাসন ও সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের প্রতি জোর দাবি জানাচ্ছি সাইজীর মাজারটি সংস্কার না করে যেন নতুন করে পুনর্নির্মাণ করা হয়।
মাজারের ভারপ্রাপ্ত খাদেম মাসুদ শাহ বলেন, বাউল সম্রাট লালন শাহের মাজার সারা বিশ্বের ভেতর আন্তর্জাতিক মাজার। এই মাজারে আছে বাত্তির নিচে অন্ধকার। এর আগে তারা সংস্কার করছে। সংস্কার করার কিছুদিনের মধ্যেই আবার যাচ্ছে তাই হয়ে গিয়েছে। পাকিস্তান পিরিয়ডে ১৯৬২ সালে তৈরি করা মাজার। সেই মাজারে আজ চতুরদিকে ফাটল ধরে গেছে। গম্বুজের নিচে চারিদিকে ফাটল ধরে গেছে। বৃষ্টি হলে সাইজীর বুকের উপর পানি পড়ে। ছাদেও রড বেরিয়ে গেছে। আগে একবার ভেঙ্গে খাদেম আহত হয়েছিলেন। আমরা চাচ্ছি সংস্কার না করে মাজারটাকে যেন পুনর্নির্মাণ করা হয়।
লালন একাডেমির সভাপতি ও কুষ্টিয়া জেলা প্রশাসক মো: তৌফিকুর রহমান বলেন, যেহেতু এটি একটি সংবেদনশীল বিষয়, সেহেতু ওই মাজারটিকে ভেঙে আবার তৈরি করতে গেলে সে ক্ষেত্রে ভক্তদের সাথে, আশপাশের মানুষ, সুধিজন এবং মন্ত্রণালয়ের সাথে আলোচনা করে ব্যবস্থা নিতে হবে। আমরা প্রতিবারের মত সংস্কার এবারও করবো। অলরেডি পদক্ষেপ নেয়ার জন্য গণপূর্ত অধিদপ্তরকে আমরা বলেছি এবং তারা উদ্যোগ নিয়েছে। এটা অচিরেই সমাধান হবে। কিন্তু আশঙ্কা করা হচ্ছে যে দুর্ঘটনা ঘটবে, এরকম আশংকা আমার মনে হয়না আছে। ছোট ছোট কিছু সমস্যা আছে সেগুলো মেরামত করলে ঠিক হয়ে যাবে।
ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) সাথে শ্রম খাতের পারস্পরিক সহযোগিতা জোরদার, শ্রমিকদের অধিকার সুরক্ষা সম্পর্কিত বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আজ বাংলাদেশ সচিবালয়ে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিব এ এইচ এম সফিকুজ্জামান এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের বাংলাদেশে নিযুক্ত রাষ্ট্রদূত এইস ই মাইকেল মিলারের মধ্যে এক গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
বৈঠকে শ্রম আইন যুগোপযোগীকরণ, ট্রেড ইউনিয়ন রেজিস্ট্রেশন প্রক্রিয়া ডিজিটালাইজেশন, শ্রমিকদের বিরুদ্ধে থাকা মামলা দ্রুত নিষ্পত্তি, শিশুশ্রম ও জবরদস্তিমূলক শ্রম নিরসন, সামাজিক সংলাপ জোরদার, ফ্যাক্টরি পরিদর্শন কার্যক্রম বৃদ্ধি এবং সামগ্রিকভাবে শ্রম খাতের সংস্কার নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়।
শ্রম সচিব এ এইচ এম সফিকুজ্জামান বৈঠকে বলেন, গত বছরের সেপ্টেম্বরে ত্রিপক্ষীয় পরামর্শ পরিষদ (টিসিসি) কর্তৃক স্বাক্ষরিত ১৮ দফা দাবি বাস্তবায়ন এবং শ্রম সংস্কার কমিশনের সুপারিশ পর্যালোচনা করা হচ্ছে । মাননীয় প্রধান উপদেষ্টার নির্দেশনা অনুযায়ী শ্রম উপদেষ্টার নেতৃত্বে শ্রম আইন আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী সংশোধন করা হবে। আগামী ২৬ আগস্ট ত্রিপক্ষীয় পরামর্শক পরিষদ (TCC) এর সভায় সংশোধনী প্রস্তাব উপস্থাপন করে সকল অংশীজনের মতামত গ্রহণ করা হবে।
তিনি আরও জানান, শ্রমিক বা শ্রমিক নেতৃবৃন্দের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক বা হয়রানিমুলক ৪৫ টি মামলার মধ্যে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়, আইন মন্ত্রণালয় এবং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করে ইতোমধ্যে ৪৪ টি মামলা নিষ্পত্তি হয়েছে। পেশাগত স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও) এর কনভেনশন সি ১৫৫ এবং সি ১৮৭ অনুস্বাক্ষর এবং কর্মক্ষেত্রে নারীর প্রতি সহিংসতা ও হয়রানি বন্ধে কনভেনশন সি ১৯০ অনুস্বাক্ষরের প্রক্রিয়া দ্রুততম সময়ের মধ্যে সম্পন্ন করা হবে। এছাড়া, ট্রেড ইউনিয়ন রেজিস্ট্রেশন ব্যবস্থাকে আরও স্বচ্ছ ও দ্রুততর করতে শ্রম অধিদপ্তর একে ডিজিটালাইজড করার কাজ করছে।
ইইউ রাষ্ট্রদূত এইস ই মাইকেল মিলার ট্রেড ইউনিয়ন গঠন ও তাদের কার্যক্রম পরিচালনায় নিয়োগকর্তা বা কোনো পক্ষের হস্তক্ষেপ না থাকতে দেওয়া, বাংলাদেশ শ্রম আইন (বিএলএ) এবং রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চল (ইপিজেড) শ্রম আইনের মধ্যে সামঞ্জস্য আনা, শ্রমিকদের বিরুদ্ধে চলমান সকল পুরনো ও বিচারাধীন মামলা দ্রুত নিষ্পত্তি, নিয়মিত সামাজিক সংলাপের আয়োজন, শ্রমঘন এলাকায় ফ্যাক্টরি পরিদর্শন বাড়ানো এবং অনানুষ্ঠানিক খাতের শ্রমিকদেরও শ্রম আইনের আওতায় আনার গুরুত্বের উপর আলোকপাত করেন।
এছাড়াও বাংলাদেশের চলমান শ্রম সংস্কার কার্যক্রমের মধ্যে আন্তর্জাতিক শ্রম মানদণ্ডের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ কম্প্রিহেনসীভ শ্রম আইনের সংশোধনীর উপর তিনি গুরুতারোপ করেন। কেননা ইউরোপীয় ইউনিয়নের বাজারে বাংলাদেশের পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে প্রাপ্ত 'এভরিথিং বাট আর্মস' (ইবিএ) সুবিধার ধারাবাহিকতায় স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণের পরে জিএসপি প্লাস বাজার সুবিধাসহ সেইফ গার্ড ক্লজের ক্ষেত্রে ইতিবাচক পদক্ষেপ বিবেচনার লক্ষ্যে শ্রম আইনের প্রত্যাশিত সংশোধনী ইউরোপীয় ইউনিয়নের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে জানান রাষ্ট্রদূত এইস ই মাইকেল মিলার।
বৈঠকে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাবৃন্দ এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতার বলেছেন, “প্রাকৃতিকভাবে মাছ পাওয়ার স্থান ধ্বংস হলে মৎস্যজীবীরা মাছ পাবে না। বর্তমানে যেখানে যে পরিমাণ মাছ পাওয়ার কথা, তা পাওয়া যাচ্ছে না। এতে প্রকৃত মৎস্যজীবীরা বঞ্চিত হচ্ছে। তাই সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে অমৎস্যজীবীদের কাছে আর জলাশয় ইজারা দেওয়া যাবে না। তিনি বলেন, ইতোমধ্যে বাওড় ইজারা সমস্যার সমাধানে ভূমি মন্ত্রণালয়ের অনুমতি নেওয়া হয়েছে।
আজ বিকেলে রাজধানীর বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমিতে জাতীয় মৎস্য সপ্তাহ ২০২৫-এর মূল্যায়ন, সমাপনী ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় উপদেষ্টা এসব কথা বলেন। অনুষ্ঠানের আয়োজন করে মৎস্য অধিদপ্তর।
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা বলেন, মৎস্য সপ্তাহ শেষ হলেও, আজ থেকেই শুরু হলো সারা বছরের মৎস্য সপ্তাহ। নতুন উদ্যোমে কাজ শুরু করতে হবে। এ সপ্তাহে যেভাবে মানুষের মধ্যে উৎসাহ-উদ্দীপনা তৈরি হয়েছে, তা সবার মাঝে ছড়িয়ে দিতে হবে। তিনি এ বছরের মৎস্য পদক প্রসঙ্গে বলেন, পদকপ্রাপ্তি বিষয়ে কোনো প্রকার তদবির হয়নি। একাধিক ধাপ অতিক্রম করেই যোগ্যদের পদক প্রদান করা হয়েছে।
বিএফআরআইয়ের তরুণ বিজ্ঞানীদের প্রশংসা করে উপদেষ্টা বলেন, অভয়াশ্রম নিয়ে আপনাদের নিবিড় গবেষণা আমাদের অনুপ্রাণিত করছে। গবেষণাকে কেবল কাগজে সীমাবদ্ধ না রেখে মাঠ পর্যায়ে প্রয়োগ করতে হবে।
তিনি আরও বলেন, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় শুধু খাদ্য উৎপাদন নয়, এটি একটি বৌদ্ধিক কেন্দ্র (ইন্টেলেকচুয়াল স্পেস)। দেশের মানুষের জন্য সাশ্রয়ী মূল্যে ইলিশ সরবরাহ করতে হবে, আর আমরা তা করতে সক্ষম হবো।
অনুষ্ঠানে মৎস্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ড. মো. আবদুর রউফ বলেন, ইলিশ উৎপাদন প্রকৃতি নির্ভর। অনেক জায়গায় বাধার কারণে ইলিশ সাগর থেকে নদীতে আসতে পারে না। ফলে ইলিশ আহরণ কম হয়, আর দাম বেড়ে যায়। তিনি আরও বলেন, চিংড়ি চাষ বৃদ্ধির জন্য নির্দিষ্ট জোন তৈরির উদ্যোগ নেওয়া হবে।
মৎস্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ড. মো. আবদুর রউফের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মন্ত্রণালয়ের সচিব আবু তাহের মুহাম্মদ জাবের। সম্মানিত অতিথি ছিলেন প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ড. মো. আবু সুফিয়ান, বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক ড. অনুরাধা ভদ্রা এবং মৎস্য উন্নয়ন করপোরেশনের পরিচালক মোহাম্মদ বদরুল হক। অনুষ্ঠানে মৎস্য অধিদপ্তরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, মৎস্যজীবী ও সুধীজন অংশ নেন।
সিরাজগঞ্জে দুদকের ১৮১তম গণশুনানিতে ১৩৪টি অভিযোগের মধ্যে উত্থাপিত ৯৫ টি অভিযোগের মধ্যে তাৎক্ষণিকভাবে ৩৪টি অভিযোগ নিষ্পত্তি করা হয়,৩২টি অভিযোগ দুদুক কর্তৃক অনুসন্ধান হবে বিভাগীয় তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে ২৬ টি অভিযোগের এবং আদালতে মামলা থাকায় ৩ টি অভিযোগের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি।
সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধি এবং দুর্নীতি প্রতিরোধের লক্ষ্যে রবিবার সকাল ৯টায় সিরাজগঞ্জ জেলার জেলা শিল্পকলা একাডেমী মিলনায়তনে দুদকের ১৮১ তম গণশুনানি উদ্বোধন করে প্রধান অতিথি দুদকের কমিশনার ( তদন্ত) মিঞা মুহাম্মদ আলি আকবার আজিজী বলেন, সুনীতি নয় তাই দুর্নীতি। সেবাদাতা ও সেবাগ্রহীতার মধ্যে দ্বন্দ্ব ও অনৈতিক কর্মকান্ডের কারণে দুর্নীতির প্রসার ঘটে। ছোট ছোট অসংগতি দিনে দিনে কিভাবে ক্ষোভের বিদ্রোহ ছড়িয়ে পড়ে তা বিগত গণহত্যাকারী পতিত সরকার হাড়ে হাড়ে টের পেয়েছে,এর চেয়ে আর ভাল উদাহরণ হতে পারে না।
বর্তমান দুর্নীতি দমন কমিশন ( মোমেন কমিশন) জিরো টলারেন্স নীতিতে চলছে,চলবে। আর দুর্নীতি নয়,দুর্নীতি নির্মূল করে সুখী সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ে তোলাই গণশুনানির উদ্দেশ্য।
দুদকের পাবনা সমন্বিত জেলা কার্যালয় আয়োজিত ও সিরাজগঞ্জ জেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় দুদকের ১৮১তম গণশুনানিতে সভাপতিত্ব করেন সিরাজগঞ্জ জেলা প্রশাসক মুহাম্মদ নজরুল ইসলাম।
গণশুনানিতে স্বাগত বক্তব্য রাখেন দুর্নীতি দমন কমিশনের রাজশাহী বিভাগীয় কার্যালয়ের পরিচালক মোঃ ফজলুল হক। অতিথিবৃন্দের মধ্যে বক্তব্য রাখেন দুদকের মহাপরিচালক ( প্রতিরোধ) মোঃ আখতার হোসেন, মহাপরিচালক ( তদন্ত ১) মুহাম্মদ রেজাউল করিম ও পুলিশ সুপার মোঃ ফারুক হোসেন।
কানায় কানায় পূর্ণ অডিটোরিয়ামে জেলার বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষ,ছাত্র জনতাসহ সহকারী বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা কর্মচারী গণমাধ্যমকর্মীদের উপস্থিতিতে দাখিলকৃত ১৩৪ অভিযোগের মধ্যে ৯৫টি উত্থাপিত হয়। সকাল ৯টা থেকে বিরতিহীনভাবে বিকেলে ৫টা পর্যন্ত গণ শুনানির মডারেট করেন জেলা প্রশাসক মুহাম্মদ নজরুল ইসলাম।
দুদকের উপপরিচালক ( জনসংযোগ) মোঃ আকতারুল ইসলাম জানান গণশুনানিতে বিভিন্ন সরকারি অফিসে সেবা প্রাপ্তিতে হয়রানীর শিকার বা সেবা বঞ্চিত সংক্ষুব্ধ জনসাধারণ তাদের অভিযোগসমূহ সিরাজগঞ্জ জেলার সকল সরকারি দপ্তর প্রধানদের উপস্থিতিতে কমিশনের সামনে তুলে ধরেন। একই সাথে সেবা বঞ্চিত জনসাধরণের উত্থাপিত অভিযোগের বিষয়ে দুদক কর্তৃক তাৎক্ষণিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হবে। সরকারি পরিষেবা প্রাপ্তি নিশ্চিতকরণ এবং সরকারি কর্মকর্তাদের মাঝে সততা, নিষ্ঠা, জবাবদিহিতা ও মূল্যাবোধ বৃদ্ধি করার মাধ্যমে দেশ থেকে দুর্নীতি নির্মূল করাই ছিল এই গণশুনানির মূল অভিপ্রায়।
ডাকসুর সাবেক ভিপি ও মন্ত্রী আমান উল্লাহ আমান বলেছেন, শেখ হাসিনা দেশে কোন উন্নয়ন করেনি, শুধু নাম পরিবর্তন করেছে, আর আল্লাহ তাকেই পরিবর্তন করে দিয়েছেন।
রবিবার (২৪ আগস্ট) বিকেলে কেরানীগঞ্জের হিজলা আইডিয়াল হাইস্কুল মাঠে নতুন ভাবন নির্মাণ কাজের উদ্বোধন পরবর্তী এক সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
তিনি বলেন, দীর্ঘদিন পর আল্লাহ জনগণকে ভোট দেওয়ার সুযোগ তৈরি করে দিয়েছে। দল হিসেবে আওয়ামীলীগকে নিষিদ্ধ করেছে বর্তমান সরকার, তাদের নেতারা হত্যা-গুমের অপরাধে পালিয়ে বেড়াচ্ছে, হাসিনাসহ তাদের নেতাদের ফাঁসি হবে, আর সে ফাঁসির ভয়ে হলেও তারা আর ফিরে আসবেনা।
যে যাই বলুক দেশে আওয়ামী লীগের আর রাজনীতি করার সুযোগ নেই বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে ঢাকা জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক ব্যারিস্টার ইরফান ইবনে আমান অমি বলেন, আগামী নির্বাচনেরর রোডম্যাপ অনুযায়ী ফেব্রুয়ারিতে যে নির্বাচন, সে নির্বাচনে সরকার গঠন করবে বিএনপি।
স্কুল কমিটির সভাপতি হাজী তাজ উদ্দিন আহমেদ এর সভাপতিত্বে এসময় উপস্থিত ছিলেন কেরানীগঞ্জ মডেল উপজেলা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি শামিম হাসান, সাধারণ সম্পাদক হাসমত উল্লাহ নবী, সাবেক যুবদলের আহবায়ক মাসুদ রানা, সেচ্ছাসেবক দলের সিনিয়র যুগ্ম আহবায়ক ওয়ালিউল্লাহ সেলিম, ছাত্রদল নেতা হাজী সাইফুলসহ দলের অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতৃবৃন্দ।
বিএনপি চেয়ারপার্সন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্যের খোঁজ নিতে তাঁর বাসভবনে গেছেন বাংলাদেশ সফররত পাকিস্তানের উপ-প্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসহাক দার।
দলটির মিডিয়া সেলের সদস্য শায়রুল কবির খান জানিয়েছেন, পাকিস্তানের উপ-প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বাধীন একটি প্রতিনিধি দল আজ সন্ধ্যা ৭টার দিকে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার গুলশানের বাসভবনে সাক্ষাৎ করেন। তারা এই সময় খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্যের খোঁজখবর নেন।
সাক্ষাৎকালে বিএনপি চেয়ারপারসনের সঙ্গে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এবং স্থায়ী কমিটির সদস্য ডা. এ. জেড. এম. জাহিদ হোসেন উপস্থিত ছিলেন।
পাকিস্তানের উপ-প্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসহাক দার আজ রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন।
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বাসস’কে এ তথ্য জানান।
ইসহাক দার দুই দিনের বাংলাদেশ সফরে গতকাল ঢাকায় পৌঁছান।
মন্তব্য