জনসেবার মান বাড়াতে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের সঙ্গে রেলকে সংযুক্ত করা হবে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ফলে দূর-দূরান্ত থেকে ঢাকায় আসা মানুষ কমলাপুর থেকে সরাসরি ট্রেনে করে বিমানবন্দরে পৌঁছাতে পারবেন।
কক্সবাজার বিমানবন্দরকে দেশের চতুর্থ আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে রূপান্তরের লক্ষ্যে রোববার গণভবন প্রান্ত থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে যুক্ত হয়ে রানওয়ের সমুদ্র সম্প্রসারণ কাজের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ সময় তিনি বিমান ও বিমানবন্দরের আধুনিকায়ন নিয়ে একগুচ্ছ ভাবনার কথা তুলে ধরেন।
শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের সঙ্গে রেল যোগাযোগ তৈরির পরিকল্পনার কথা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘একটা আন্ডারপাস করে সংযোগটা আমরা করতে চাচ্ছি। মেট্রোরেলের কাজ অনেকাংশে এগিয়ে গেছে। মেট্রোরেলের যে লাইন বাংলাদেশ ব্যাংক পর্যন্ত, সেটা কিন্তু আমরা ইতিমধ্যেই কমলাপুর রেল স্টেশন পর্যন্ত সম্প্রাসরণের ব্যবস্থা নিয়েছি।’
তিনি বলেন, ‘ভৌগোলিক অবস্থানটাকে সামনে রেখেই সব কিছু ভাবা হচ্ছে। আমাদের দেশটাকে সারাবিশ্বের সঙ্গে যোগাযোগের একটা কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত করতে চাই। যাতে আর্থিকভাবে আমাদের দেশ অনেক লাভবান হবে।’
দেশের অর্থনীতির চালিকাশক্তিকে আরও বেগবান করতে সব বিমানবন্দর আধুনিকায়নের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক ও আঞ্চলিক যোগাযোগ বাড়াতেও সরকারের পরিকল্পনা তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
তিনি বলেন, ‘ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের থার্ড টার্মিনাল নির্মাণ; নতুন রাডার স্থাপন; জেট ফুয়েল যেন পাইপলাইনের মাধ্যমে চলে আসে, সেই পাইপলাইন নির্মাণ করা হবে।’
রংপুরের সৈয়দপুর বিমানবন্দরকেও উন্নত করে আঞ্চলিক বিমানবন্দরে রূপ দিতে চান সরকারপ্রধান। বলেন, ‘নেপাল, ভুটান, ভারতের কয়েকটি রাজ্য যেন এই বিমানবন্দরটি ব্যবহার করতে পারে, সে ব্যবস্থা করতে চাই।’
সিলেটের বিমানবন্দর আন্তর্জাতিক হলেও সেটি নিয়ে আছে সরকারের পরিকল্পনা। এ প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, ‘সেখানেও আসাম, মেঘালয়সহ ভারতের অনেক রাজ্য যেন আমাদের এই বিমানবন্দর ব্যবহার করতে পারে, তার পরিকল্পনা আছে। চট্টগ্রামেরটাও আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর। সেখানে ত্রিপুরা থেকে শুরু করে ভারতের অনেক প্রদেশ আমাদের এটা ব্যবহার করতে পারে।’
আন্তর্জাতিক যোগাযোগের একটা হাব তৈরির স্বপ্ন প্রধানমন্ত্রীর। তিনি বলেন, ‘একটি আন্তর্জাতিক সহযোগিতার ক্ষেত্র তৈরি করার চিন্তা আমাদের আছে। সেভাবেই আমরা এসব বিমানবন্দরকে অত্যাধুনিক করতে চাই।’
কক্সবাজার বিমানবন্দরের রানওয়ে সম্প্রসারণের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হওয়ার বিষয়টি ইঙ্গিত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এয়ারপোর্টটা সম্প্রসারণ হলে আমি মনে করি যে পাশ্চাত্য থেকে প্রাচ্য বা প্রাচ্য থেকে পাশ্চাত্যে যত প্লেন যাবে, তাদের রিফুয়েলিংয়ের জন্য সব থেকে বেশি সুবিধাজনক জায়গা হবে এই কক্সবাজার।’
হংকং, সিঙ্গাপুর, দুবাইয়ের পর কক্সবাজার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হবে জানিয়ে সরকারপ্রধান বলেন, ‘খুব স্বল্পসময়ে (বিমান) এখানে এসে তারা নামতে পারবে। রিফুয়েলিং করতে পারবে, যেতে পারবে।
‘কক্সবাজারে সুপরিসর বিমান যেন নামতে পারে, আন্তর্জাতিক যাত্রী পরিবহনে থাকা সব বিমান যেন নামতে পারে, সেভাবে কক্সবাজার এয়ারপোর্টকে আমরা উন্নত করব। এটাকে আমরা আন্তর্জাতিক মানের বিমানবন্দর করব।’
বাড়ছে আন্তর্জাতিক রুট
বিমানের আরও রুট বাড়ানোর কথা জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শুধু পশ্চিমামুখী না হয়ে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোতে নতুন নতুন রুট তৈরিতে সরকারের পরিকল্পনা সামনে তুলে ধরেন তিনি।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমাদের প্রচেষ্টা রয়ে গেছে, আন্তর্জাতিক রুটে আরও কয়েকটি দেশে যাওয়ার। যেমন- নিউ ইয়র্ক, টরেন্টো, সিডনি। এই দূরত্ব চলার মতো আমাদের ড্রিমলাইনার আছে।
‘দক্ষিণ এশিয়া এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর সঙ্গেও আমাদের যোগাযোগটা বাড়াতে হবে। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর সঙ্গেও আমাদের যোগাযোগ হলে ব্যবসা-বাণিজ্য সম্প্রসারণ হবে। আমরা শুধু পশ্চিমাদের দিকে মুখ করে থাকব না। পাশাপাশি অন্য যে দেশগুলো আছে আমাদের বন্ধুপ্রতিম, সেখানেও আমাদের বিমান যাতে যায় ভবিষ্যতে, আমরা সেই চেষ্টা করব।’
এ সময় বিমান পরিচালনায় যারা যুক্ত আছেন, তাদের সবাইকে নিজ নিজ দায়িত্ব পালনে সচেষ্ট থাকার নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী। বলেন, ‘যারা বিমানে কাজ করেন, তাদের আমি অনুরোধ করব সততার সঙ্গে, দক্ষতার সঙ্গে এটা পরিচালনা করবেন। সিভিল এভিয়েশন নিরাপত্তা থেকে শুরু করে, যেন এটা আন্তর্জাতিক মানের হয় সেটা আপনারা দেখবেন।’
বিমানের আধুনিকায়ন
আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার আগে বিমানের দুরবস্থার কথা স্মরণ করিয়ে দেন প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, ‘আকাশপথে যেতে যেতে পানি পড়ত। এন্টারটেইনমেন্টের কোনো ব্যবস্থা ছিল না। ঝুরঝুরে প্লেনের পাইলটদের আমি বলতাম যে, তাদের স্পেশাল পুরস্কার দেয়া উচিত। এ ধরনের প্লেন যারা চালাতে পারে, তারা কতটা দক্ষ।
‘অনেক সময় অনুমতি নিয়ে ককপিটে গিয়ে তাদের জিজ্ঞেস করতাম, কথাও বলতাম, তাদের সমস্যা কী? প্রবাসে আমাদের এক কোটি মানুষ থাকে। তারা কিন্তু আমাদের নিজস্ব প্লেন পেলে সেটাতেই চড়তে চায়, তাদের যত কষ্টই হোক। সেই বিমানে চড়ার তিক্ত অভিজ্ঞতা আমার আছে। সব কিছুর পরও মনে হতো নিজের দেশের জাহাজে যাচ্ছি।’
সেই দুঃখ দূর করতেই ২০০৯ সালে সরকার গঠনের পর বোয়িং থেকে ড্রিমলাইনারসহ ১৬টি অত্যাধুনিক বিমান যুক্ত করা হয়েছে বলে জানান শেখ হাসিনা।
প্রধানমন্ত্রীর আক্ষেপ
প্রধানমন্ত্রী আক্ষেপ করে বলেন, ‘সব থেকে দুর্ভাগ্য যে, আমরা ১৬টি বিমান নতুন নিলাম, কিন্তু চালাতে পারছি না। করোনার কারণে সমস্ত যাতায়াত বন্ধ। এটা আমাদের জন্য সত্যিই খুব দুঃখের একটা বিষয়। যখনই আমরা প্রস্তুতি নিলাম, তখনই করোনা এসে সব কিছু স্থবির করে দিল।’
তবে এখান থেকে মুক্তি ঘটবে বলে বিশ্বাস প্রধানমন্ত্রীর। আর তাই দেশের সবাইকে করোনাভাইরাস থেকে মুক্ত থাকতে স্বাস্থ্যবিধি মেন চলার আহ্বান জানান তিনি।
বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ যাতে ক্যাটাগরি-১ এ উন্নীত হতে পারে, সেজন্য সবাইকে নিজ নিজ দায়িত্ব যথাযথভাবে পালনের নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী।
আরও পড়ুন:আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে রংপুর-৪ (কাউনিয়া-পীরগাছা) আসনে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)’র প্রার্থী হিসেবে দলের সদস্য সচিব আখতার হোসেনের নাম ঘোষণা করেছেন দলের আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম।
মঙ্গলবার রাত ১১টায় কাউনিয়া বাসস্ট্যান্ডে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের বার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত ‘দেশ গড়তে জুলাই পদযাত্রা’ কর্মসূচির অংশ হিসেবে আয়োজিত এক পথসভায় তিনি এ ঘোষণা দেন।
নাহিদ ইসলাম বলেন, আখতার হোসেনের নেতৃত্বে কাউনিয়া ও পীরগাছা উপজেলা উন্নয়ন ও অগ্রগতির মূলধারায় প্রবেশ করবে।
এ সময় এনসিপি’র দক্ষিণাঞ্চলীয় প্রধান সংগঠক মো. হাসনাত আবদুল্লাহ, আখতার হোসেনকে কাউনিয়ার সন্তান হিসেবে পরিচয় করিয়ে দেন।
সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন এনসিপি’র কেন্দ্রীয় নেতারা।
তাদের মধ্যে ছিলেন- দলের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক সামান্থা শারমিন ও জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সদস্য সচিব ডা. তাসনিম জারা।
সমাবেশটি সঞ্চালনা করেন দলের উত্তরাঞ্চলীয় প্রধান সংগঠক সারজিস আলম।
অনুষ্ঠানে এনসিপি’র মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী ও জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মুখ্য সমন্বয়ক আবদুল হান্নান মাসুদসহ অন্যান্য নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে, এনসিপি রংপুরের পীরগঞ্জ উপজেলার বাবানপুর গ্রামে শহীদ আবু সাঈদের কবর জিয়ারতের মধ্য দিয়ে জুলাই পদযাত্রা শুরু করে।
পদযাত্রা শুরু হয় সেই স্থান থেকে, যেখানে শহীদ আবু সাঈদকে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে গুলি করে পুলিশ।
সেখান থেকে রংপুর শহরের ডিসি মোড় পর্যন্ত হেঁটে যান নেতা-কর্মীরা।
পরে, পদযাত্রাটি কাউনিয়া উপজেলা শহরে পৌঁছায় এবং মধ্যরাতে পথসভার মাধ্যমে এর সমাপ্তি ঘটে।
আদালত অবমাননার একটি মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ছয় মাসের কারাদণ্ড দিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল (আইসিটি)। গত বছরের ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকার অপসারণের পর এটাই প্রথম কোনো আদালতের রায়, যাতে তাকে দণ্ডিত করা হয়েছে।
বুধবার (২ জুলাই) আইসিটির চেয়ারম্যান বিচারপতি গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল এ আদেশ দেন। ট্রাইব্যুনালের দুই সদস্য হলেন বিচারপতি মো. শফিউল আলম মাহমুদ ও বিচারক মো. মোহিতুল হক এনাম চৌধুরী।
একই মামলায় গাইবান্ধা জেলা ছাত্রলীগের তৎকালীন নেতা শাকিল আকন্দ বুলবুলকে দুই মাসের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।
এই ধরনের মামলায় পলাতক আসামির জন্য আইনজীবী নিয়োগের পূর্ব নজির না থাকলেও ন্যায়বিচারের স্বার্থে শেখ হাসিনার পক্ষে রাষ্ট্রীয় খরচে একজন আইনজীবী নিয়োগ দেওয়া হয়।
মামলার বিবরণ অনুযায়ী, গত বছরের ২৫ অক্টোবর শেখ হাসিনা ছাত্রলীগ নেতা শাকিলের সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলেন।
সেই অডিও ক্লিপে শেখ হাসিনাকে বলতে শোনা যায়, ‘২২৬ জনকে মারার লাইসেন্স পেয়ে গেছি’—যা বিচারব্যবস্থার প্রতি সরাসরি হুমকি হিসেবে বিবেচনা করে আদালত। পরে এই ঘটনায় আইসিটিতে মামলা করেন রাষ্ট্রপক্ষ।
গত ৩০ এপ্রিল এ-সংক্রান্ত শুনানিতে দুই আসামিকে ২৫ মে ট্রাইব্যুনালে হাজির হয়ে ব্যাখ্যা দিতে বলা হয়। ধার্য তারিখে তারা হাজির হননি। কিংবা আইনজীবীর মাধ্যমেও ব্যাখ্যা দেননি। সেদিন ট্রাইব্যুনাল দুই আসামিকে সশরীর হাজির হয়ে অভিযোগের বিষয়ে জবাব দেওয়ার জন্য সংবাদপত্রে বিজ্ঞপ্তি দিতে নির্দেশ দেন।
পরদিন দুটি সংবাদপত্রে এই বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয়। বিজ্ঞপ্তিতে দুজনকে গত ৩ জুন ট্রাইব্যুনালে হাজির হয়ে অভিযোগের বিষয়ে জবাব দিতে বলা হয়। সেদিনও তারা হাজির হননি। পূর্ণাঙ্গ শুনানির জন্য ১৯ জুন তারিখ নির্ধারণ করেছিলেন ট্রাইব্যুনাল।
১৯ জুন এই মামলায় সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এ ওয়াই মশিউজ্জামানকে অ্যামিকাস কিউরি (আদালতের আইনি সহায়তাকারী) হিসেবে নিয়োগ দেন ট্রাইব্যুনাল। মামলার পরবর্তী শুনানি ধার্য করা হয় ২৫ জুন।
২৫ জুন মামলায় প্রস্তুতি নিতে অ্যামিকাস কিউরি মশিউজ্জামানের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে তাকে এক সপ্তাহ সময় দেন ট্রাইব্যুনাল। সেদিনই এই মামলার পরবর্তী শুনানির তারিখ ধার্য করা হয় ২ জুলাই। আজ দুই আসামিকে কারাদণ্ড দিয়ে রায় দিলেন ট্রাইব্যুনাল।
সাগরে সৃষ্ট লঘুচাপের প্রভাবে গেল দু’দিন ধরে ভোলার অভ্যন্তরীণ নৌরুটে লঞ্চ চলাচল বন্ধ রয়েছে। থেমে থেমে বৃষ্টি হওয়ার সঙ্গে বইছে দমকা বাতাস।
বুধবার (২ জুলাই) সকালে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহণ কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ) এর উপ-পরিচালক মো. রিয়াদ হোসেন দৈনিক বাংলাকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
সাগর উত্তাল হওয়ায় সমুদ্র বন্দরে ৩ নম্বর ও নদী বন্দরে ১ নম্বর সতর্ক সংকেত জারি করা হয়েছে। এ অবস্থায় বিআইডব্লিউটিএ ভোলার ইলিশা-লক্ষীপুর, আলেকজান্ডার-দৌলতখান, মনপুরা-তজুমুদ্দিন ও মনপুরা-ঢাকাসহ জেলার অভ্যন্তরীণ বেশ কয়েকটি রুটে যাত্রীবাহী লঞ্চ চলাচল বন্ধ রেখেছে।
এদিকে, লঞ্চ চলাচল বন্ধ থাকায় যাত্রীরা ভোগান্তির মধ্যে পড়েছেন। যাত্রীরা বলছেন, দ্বীপ জেলা ভোলা থেকে অন্য জেলায় যাওয়ার একমাত্র মাধ্যম হচ্ছে নৌপথ। কিন্তু, বৈরী আবহাওয়ায় তারা চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন।
বিআইডব্লিউটিএ এর উপ-পরিচালক মো. রিয়াদ হোসেন জানান, সমুদ্র উত্তাল হওয়ায় ৩ নম্বর সতর্ক সংকেত চলছে। এছাড়াও নদীবন্দরে ১ নম্বর সতর্ক সংকেত চলছে। যাঁর ফলে নদী ও সমুদ্র বেশ উত্তাল রয়েছে। যাত্রীদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে ভোলার অভ্যন্তরীণ বেশ কয়েকটি রুটে লঞ্চ চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছে। পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত এসব রুটে লঞ্চ চলাচল বন্ধ থাকবে।
নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন করোনা আক্রান্ত এক বৃদ্ধের মৃত্যু হয়েছে।
করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃত জেবল হক (৮০) কবিরহাট উপজেলার চাপরাশিরহাট ইউনিয়নের লামছি গ্রামের মৃত গনু মিয়ার ছেলে।
বুধবার (২ জুলাই) সকালে বিষয়টি নিশ্চিত করেন নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডা. রাজীব আহমেদ চৌধুরী। এর আগে, গতকাল মঙ্গলবার (১ জুলাই) রাত ১০টার দিকে নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালের করোনা ইউনিটে তার মৃত্যু হয়।
ডা. রাজীব আহমেদ চৌধুরী বলেন, গত ২৪ ঘণ্টায় করোনা আক্রান্ত হয়ে এক বৃদ্ধের মৃত্যু হয়েছে। গত মঙ্গলবার সকাল ১০টার দিকে ওই বৃদ্ধ হাসপাতালে ভর্তি হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রাত ১০টার দিকে মারা যান তিনি। এদিকে গত ২৪ ঘন্টায় নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালের এক জনের নমুনা পরীক্ষায় একজনের শরীরে করোনা শনাক্ত হয়েছে।
এ বিষয়ে জেলা সিভিল সার্জন ডা.মরিয়ম সিমি বলেন, মারা যাওয়া ব্যক্তি সকালে হাসপাতালে ভর্তি হয়। দুপুরে তার করোনা শনাক্ত হওয়ার পর সেখানে রাতে তার মৃত্যু হয়। এখন পর্যন্ত নোয়াখালীতে মোট ৩ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। কিট সল্পতার কারণে উপজেলা পর্যায়ে করোনা টেস্ট এখনো শুরু করা হয়নি।
জুলাইয়ের মাঝামাঝি কিংবা তৃতীয় সপ্তাহের দিকে জুলাই সনদে পৌঁছানোর বিষয়ে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহ-সভাপতি অধ্যাপক ড. আলী রীয়াজ। তিনি বলেছেন, ‘চেষ্টা করলে জুলাই মাসের মাঝামাঝিতে আমরা একটি সনদের জায়গায় যেতে পারব।’
বুধবার (২ জুলাই) ঢাকায় ফরেন সার্ভিস একাডেমির দোয়েল হলে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে কমিশনের আলোচনার শুরুতে তিনি এ মন্তব্য করেন।
আলী রীয়াজ বলেন, ‘এক বছর আগে, আমরা সবাই মিলে সব ধরনের বাধা-বিঘ্ন মোকাবিলা করে যে অর্জন করতে চেয়েছি, তার একটি পর্যায় অতিক্রম করে আজ এখানে আমরা সমবেত হয়েছি। বাংলাদেশের রাষ্ট্র কাঠামোর পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যেন আমরা একটি জবাবদিহিমূলক রাষ্ট্র তৈরি করতে পারি, সেই চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। যেন নাগরিকের গণতান্ত্রিক ও জীবনের অধিকার সুরক্ষিত হয়, যেন গুম-হত্যা, বিচারবহির্ভূত হত্যা ও বিচারিক হত্যার শিকার হতে না হয় আমাদের।’
‘এটি আপনাদের (রাজনীতিবিদ) অবদান, আপনাদের কর্মীদের অবদান, নাগরিকদের অবদান। এটি সব রাজনৈতিক দলের ঊর্ধ্বে উঠে জনগণের সাফল্য।’
তিনি বলেন, ‘এই সাফল্য শুধু একটি পর্যায়ে এসে থেমে গেলে হবে না। এটিকে সুরক্ষিত করতে হবে এবং সেই সুরক্ষার উপায় খুঁজছি আমরা, যেন সংস্কারের কার্যক্রমে এগিয়ে যেতে পারি। আপনারা তাতে আন্তরিকভাবে সহায়তা করছেন, যদিও এ দায়িত্ব আমাদের সবার।’
‘কখনো কখনো আমরা অগ্রসর হই, কখনো আবার যতটা অগ্রসর হতে চাই, ততটা না পেরে খানিকটা হতাশ হই। কিন্তু তবুও আজকের এই দিনে দাঁড়িয়ে আমার মনে হচ্ছে, আমরা চেষ্টা করলে জুলাই মাসের মাঝামাঝিতে একটি সনদের জায়গায় যেতে পারব।’
ঐকমত্য কমিশনের সহ-সভাপতি বলেন, ‘আপনাদের সবার চেষ্টা ও সহযোগিতা হচ্ছে সবচেয়ে বড় জিনিস। দলগত, জোটগত ও ব্যক্তিগতভাবে চেষ্টা করে আমরা আশাবাদী হয়েছি। আমি মনে করি, আমরা এই জায়গাটিতে পৌঁছাতে পারব। কারণ, আমাদের সবার সেই আন্তরিক চেষ্টা আছে।’
জুলাই অভ্যুত্থানে হতাহতদের স্মরণে আলী রীয়াজ বলেন, ‘আমরা আমাদের বন্ধু, কর্মী ও ভাইবোনদের হারিয়েছি। অনেকে আহত অবস্থায় এখনো জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে আছেন; লড়াই করছেন। তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা ও দায়বদ্ধতা থেকে এখানে আমাদের আসা।’
‘প্রতিদিনই আমরা পরস্পরকে জানছি ও বুঝছি। সে কারণে আমি আশাবাদী। আমরা আশাবাদী যে একটি জায়গায় পৌঁছাতে পারব। কেননা, যে দায় ও দায়বদ্ধতা—সেটি আপনারা প্রাণ দিয়ে উপলব্ধি করেন। আমরাও প্রাণ দিয়ে উপলব্ধি করি। মানুষেরও প্রত্যাশা আছে, তারা আমাদের দিকে তাকিয়ে আছেন। সেই জায়গায়, আমরা সবাই যেন অগ্রসর হতে পারি।’
জুলাইয়ের মাঝামাঝি কিংবা তৃতীয় সপ্তাহের দিকে জুলাই সনদে পৌঁছানোর বিষয়ে আশাবাদের কথা জানিয়ে উদ্বোধনী বক্তব্য শেষ করেন জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহ-সভাপতি।
বৈঠকে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিদের পাশাপাশি উপস্থিত আছেন, কমিশনের সদস্য সফর রাজ হোসেন, বিচারপতি এমদাদুল হক, ড. বদিউল আলম মজুমদার ও ড. আইয়ুব মিয়া।
জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন চলাকালে সাভারের আশুলিয়ায় লাশ পোড়ানোর ঘটনায় মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় আনুষ্ঠানিকভাবে (ফরমাল চার্জ) অভিযোগ দাখিল করা হয়েছে।
বুধবার সকালে ট্রাইব্যুনালের রেজিস্ট্রার বরাবর প্রধান প্রসিকিউটরের পক্ষে প্রসিকিউটর ফারুক আহমেদ ও মো. সাইমুম রেজা তালুকদার এ অভিযোগপত্র দাখিল করেন।
এই মামলায় এখন পর্যন্ত ৭ জন আসামিকে গ্রেফতার করা হয়েছে বলে ট্রাইব্যুনালকে জানিয়েছে প্রসিকিউশন।
মামলা দায়েরের পর চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম সাংবাদিকদের জানান, গত ৫ আগস্ট আশুলিয়ায় ছয় তরুণকে গুলি করে হত্যার পর, তাদের মরদেহ একটি পুলিশ ভ্যানে রেখে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। অভিযোগ রয়েছে, আগুন দেওয়ার সময় অন্তত একজন তরুণ জীবিত ছিলেন এবং তার শরীরে পেট্রোল ঢেলে আগুন লাগানো হয়।
তিনি আরো বলেন, এটি ছিল একটি ভয়াবহ ও নৃশংস ঘটনা, যা মানবতাবিরোধী অপরাধের আওতায় বিচারযোগ্য।
পদ্মা সেতু প্রকল্পে পরামর্শক নিয়োগে প্রাথমিকভাবে অনিয়ম-দুর্নীতির প্রমাণ পেয়েছেন বলে জানিয়েছেন দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) চেয়ারম্যান আব্দুল মোমেন।
মঙ্গলবার দুদকের কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি বলেন, ‘যথেষ্ট তথ্য প্রমাণ থাকার পরও এই মামলা পরিসমাপ্তি করা হয়। গেল জানুয়ারিতে শুরু হওয়া অনুসন্ধানে ইতোমধ্যে পদ্মা সেতুর পরামর্শক নিয়োগে প্রাথমিকভাবে অনিয়ম-দুর্নীতির প্রমাণও মিলেছে।’
দুদক চেয়ারম্যান বলেন, গায়ের জোরেই পদ্মা সেতু দুর্নীতি মামলায় আসামিদের অব্যাহতি দিয়েছিল তৎকালীন দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
সংস্থাটির চেয়ারম্যানের দাবি, বেশকিছু দুর্নীতির তথ্য মিলেছে। এই মামলায় আসামির অব্যাহতির পেছনে তৎকালীন কমিশনের দায় আছে কি না তাও খতিয়ে দেখার কথা জানান তিনি।
আব্দুল মোমেন বলেন, নতুন তদন্তে কারো সংশ্লিষ্টতা মিললে, তাদেরকেও আইনের আওতায় আনা হবে।
প্রসঙ্গত, পদ্মা সেতু পরামর্শক নিয়োগের বিষয়ে করা মামলা নিষ্পত্তির দীর্ঘ একযুগ পর; গত জানুয়ারি মাসে সেই মামলা পুনরায় অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নেয় দুদক। গঠন করা হয় উচ্চ পর্যায়ে কমিটি।
জানা যায়, ২০১২ সালে পদ্মা সেতুতে বিশ্বব্যাংকের অর্থায়ন নিয়ে টানাপড়েনের মধ্যে সাতজনের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ এনে মামলা করে দুদক। তবে ২০১৪ সালে অদৃশ্য কারণে মামলাটি পরিসমাপ্তি করে তৎকালীন বদিউজ্জামান ও শাহাবুদ্দিন চুপ্পু কমিশন।
মন্তব্য