দেশের চতুর্থ আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর হিসেবে চালু হতে যাচ্ছে কক্সবাজার আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর। এই বিমানবন্দরেই হবে দেশের সবচেয়ে দীর্ঘ রানওয়ে। রানওয়ের একটি অংশ তৈরি করা হচ্ছে সমুদ্র ভরাট করে। ফলে এক প্রকার সমুদ্র ছুঁয়ে এখানে রানওয়েতে বিমান ওঠানামা করবে।
বাংলাদেশের বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক) সূত্র বলছে, কক্সবাজার বিমানবন্দরকে ঘিরে তৈরি হবে এভিয়েশনের হাব। সারা বিশ্ব থেকে সুপরিসর বিমান কক্সবাজারে ওঠানামা করতেই এমন উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
এদিকে কক্সবাজারের আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর পেয়ে বাসিন্দারা উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছেন।
২৯ আগস্ট ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে সম্প্রসারণ কাজের উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
যেভাবে তৈরি হবে সমুদ্রে রানওয়ে
বেবিচক কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে ৯ হাজার ফুট দীর্ঘ রানওয়েকে ১০ হাজার ৭০০ ফুটে সম্প্রসারণ করা হচ্ছে। এর মধ্যে ১ হাজার ৩০০ ফুট থাকবে সমুদ্রের মধ্যে। আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে উন্নীত করতে বঙ্গোপসাগরের তলদেশে ব্লক দিয়ে বাড়ানো হচ্ছে রানওয়ে।
প্রকল্পে ব্যয় হচ্ছে ১ হাজার ৫৬৮ কোটি ৮৬ লাখ টাকা, যার পুরোটাই অর্থায়ন করছে বেবিচক। এই নির্মাণকাজের দায়িত্ব পেয়েছে চীনের দুটি প্রতিষ্ঠান।
৫ হাজার ১৭৯ কোটি টাকা ব্যয়ে কক্সবাজার বিমানবন্দরের নতুন টার্মিনাল ভবন নির্মাণ, রানওয়ে সম্প্রসারণ ও শক্তি বৃদ্ধি, এয়ারফিল্ড গ্রাউন্ড লাইটিং সিস্টেম স্থাপনের কাজ চলমান।
সাগরের মধ্যে রানওয়ে সম্প্রসারণ করতে প্রথমে সাগরের নিচে স্থাপন করা হবে জিও টিউব, ড্রেজিংয়ের মাধ্যমে অপসারণ করা হবে পানি। শুরু হবে খনন-প্রক্রিয়া ও বালু ভরাট কার্যক্রম।
এরপর প্রাথমিক পর্যায় থেকে দ্বিতীয় ও তৃতীয় পর্যায়ে হবে বালুর স্তরবিন্যাস। চূড়ান্ত পর্যায়ে হবে রানওয়ের জন্য বালুর স্তরবিন্যাস। তারপর হবে পাথুরে স্তরবিন্যাস ও নিশ্ছিদ্রকরণ, পিচঢালাই ও নিশ্ছিদ্রকরণ। এভাবেই তৈরি হবে রানওয়ে ও প্রাথমিক সমুদ্র থেকে রক্ষাকারী বাঁধ। এর পরপরই হবে রানওয়ের শোভাবর্ধন ও নির্দেশক বাতি স্থাপন।
সমুদ্র তলদেশে ব্লক তৈরি করে এর ওপর স্থাপনা নির্মাণ করা হবে। দেশে এই প্রথম কোনো স্থাপনা নির্মাণ করা হচ্ছে এই প্রক্রিয়ায়।
নামবে বোয়িং
কক্সবাজার বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ বলছে, বিমানবন্দরের মহেশখালী চ্যানেলের দিকে জমি অধিগ্রহণের মাধ্যমে সম্প্রসারিত হচ্ছে এই রানওয়ে। প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে নতুন প্রজন্মের উড়োজাহাজ বোয়িং-৭৭৭-৩০০ ইআর, ৭৪৭-৪০০ ও এয়ারবাসের মতো উড়োজাহাজ সহজেই ওঠানামা করতে পারবে।
আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর হওয়ায় খুশির শেষ নেই কক্সবাজারবাসীর।
পিএমখালীর প্রবাসী মিজানুর রহমান বলেন, ‘পাঁচ বছর আগে ওমান পাড়ি দিয়েছিলাম। ফিরেছি করোনার আগেই। সামনে আবারো সৌদি আরব যাচ্ছি। আগে আমাদের অন্যান্য দেশে যেতে হলে হয় চিটাগাং, নয় তো ঢাকা এয়ারপোর্টে যেতে হতো। এখন কক্সবাজার আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর হওয়ায় আমার শহর থেকে সরাসরি প্রবাসে যেতে পারব। এটা হবে তা কখনও কল্পনাও করিনি।’
নুনিয়ারছড়া এলাকায় বাসিন্দা নুরুল আজিম রানা বলেন, ‘বাড়ির সামনে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর সত্যি স্বপ্নের মতো লাগছে। আগে প্রবাস থেকে কোনো আত্মীয় দেশে এলে চিটাগাং গিয়ে রিসিভ করতে হতো। কিন্তু এখন ঘরের সামনে এসে পড়বে বিমান। খুব ভালো লাগছে।’
কক্সবাজারের বাসিন্দা বর্তমানে সৌদিপ্রবাসী শওকত আলী বলেন, ‘১০ বছর ধরে প্রবাসে আছি। যখনই দেশে ফিরি তখন চিটাগাং থেকে আবারও কক্সবাজার দীর্ঘপথ সড়কে পাড়ি দিতে হতো। এখন সোজা কক্সবাজার খুব ভালো লাগছে।’
আশপাশের ব্যবসা-বাণিজ্য থেকে শুরু করে অনেক সুযোগ-সুবিধা পাবেন স্থানীয়রা।
প্রশাসন যা বলছে
কক্সবাজার বিমানবন্দরের ব্যবস্থাপক আব্দুল্লাহ আল ফারুক জানান, এটি বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় রানওয়ে। বড় বড় বোয়িং ও বিশ্বের বড় বিমানগুলোও এই রানওয়েতে নামতে পারবে।
আগামী বছরই কক্সবাজার বিমানবন্দর আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর হিসেবে যাত্রা শুরু করবে বলে তিনি আশা করছেন।
২৯ আগস্ট ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে সম্প্রসারণকাজের উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
এই রানওয়ে সম্প্রসারণকে ঘিরে নানা রঙে সেজেছে কক্সবাজার শহর। মোড়ে মোড়ে বসানো হয়েছে এলইডি স্ক্রিন, যাতে দেখানো হবে উদ্ধোধনী অনুষ্ঠান। ব্যানার-পোস্টারে ছেয়ে গেছে পুরো শহর।
২৭ আগস্ট বিকেলে কক্সবাজার বিমানবন্দরে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের প্রস্তুতি দেখতে যান বেবিচকের চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মফিদুর রহমান।
এ সময় তিনি বলেন, ‘প্রথমে ৯ হাজার ফুট থেকে আরও ৩ হাজার ফুট সমুদ্রে রানওয়ে সম্প্রসারণের কথা ছিল। কিন্তু অনেক গবেষণা ও কক্সবাজারের পরিবেশের কথা চিন্তা করে রানওয়ে ১ হাজার ৭০০ ফুট সম্প্রসারণের সিদ্ধান্ত হয়।
‘প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে এটি সম্প্রসারণ করা হচ্ছে। রানওয়ে সম্প্রসারিত হলে দেশের পর্যটনসহ অর্থ খাতে ব্যাপক পরিবর্তন আসবে। এ ছাড়া এই বিমানবন্দরকে ঘিরে একটি এভিয়েশন হাব তৈরি হবে।’
বেবিচকের চেয়ারম্যান মফিদুর আরও বলেন, ‘কক্সবাজার বিমানবন্দরের রানওয়ে সম্প্রসারণকাজ শেষ হলেই এখানে ওঠানামা করতে পারবে ৩৮০-এর মতো সুপরিসর এয়ারবাস।’
প্রস্তুতি দেখতে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী মাহবুব আলীও যান।
এ সময় তিনি বলেন, ‘কক্সবাজারকে আন্তর্জাতিক মানের পর্যটনকেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্যে বিভিন্ন উন্নয়নকাজ চলমান। এর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে বিমানবন্দরের উন্নয়ন।
‘আশা করছি, গোটা প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে কক্সবাজারে আন্তর্জাতিক ফ্লাইট চালু হবে। দেশি-বিদেশি পর্যটকরা কক্সবাজারে সহজে যাতায়াতসহ নানাবিধ সুবিধা ভোগ করবেন।’
আরও পড়ুন:প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বিষয়ে সর্বোচ্চ উদারতা দেখিয়েছেন বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।
রাজধানীর বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ের দলীয় কার্যালয়ে ঢাকা ও বিভিন্ন অঞ্চলের নেতাদের সঙ্গে সভাপতিমণ্ডলীর সদস্যদের যৌথসভা শেষে রোববার তিনি এ মন্তব্য করেন।
ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘আমরা খালেদা জিয়ার বিষয়ে সংবেদনশীল। তিনি (শেখ হাসিনা) খালেদা জিয়ার বিষয়ে সর্বোচ্চ উদারতা দেখিয়েছেন। তিনি দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন।’
ভয়েস অফ আমেরিকায় প্রধানমন্ত্রীর দেয়া সাক্ষাৎকারে খালেদা জিয়ার চিকিৎসার বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘সাক্ষাৎকারে প্রধানমন্ত্রী যে কথা বলেছেন তাতে খালেদা জিয়ার চিকিৎসার বিষয়টি পরিষ্কার হয়েছে। বিএনপি প্রধানের চিকিৎসার বিষয়ে প্রচলিত আইনে সরকারের কিছু করার নেই। আইন অনুযায়ী আদালতের দ্বারস্থ হয়ে নির্দেশ মেনে তাকে চিকিৎসা করাতে হবে।’
এ সময় ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ চলতি অক্টোবর মাসে রাজধানী ঢাকায় তিনটি এবং ঢাকার বাইরে দুটিসহ মোট পাঁচটি সমাবেশ করবে বলে জানান দলটির সাধারণ সম্পাদক।
ওবায়দুল কাদের জানান, পাঁচটির মধ্যে একটি জনসমাবেশ এবং বাকি চারটি হবে সুধী সমাবেশ। ৩ অক্টোবর সাভারের আমিনবাজারের মহাসমাবেশটি হবে এ মাসের একমাত্র জনসমাবেশ ।
আর বাকি ৪টি সুধী সমাবেশ হবে- ৭ অক্টোবর বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনাল উদ্বোধন, ১০ অক্টোবর পদ্মাসেতুর রেলসেতুর উদ্বোধন, মেট্রোরেলের মতিঝিল অংশ উদ্বোধন এবং ২৮ অক্টোবর বঙ্গবন্ধু টানেলের উদ্বোধন উপলক্ষে।
বিএনপিকে ইঙ্গিত করে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘আওয়ামী লীগ অবৈধ দল হলে কেন খালেদা জিয়ার মুক্তি কিংবা বিদেশে পাঠানোর জন্য অনুমতি চাওয়া হয়। রাজনৈতিক দল হিসেবে বিএনপিকে কথার সীমারেখা মানা উচিত।’
তিনি বলেন, ‘আ স ম আব্দুর রবও একজন সাজাপ্রাপ্ত আসামি ছিলেন। খালেদা জিয়ার প্রসঙ্গে আ স ম আব্দুর রব উদাহরণ হতে পারে না। হাজী সেলিমও কিন্তু আইনের বাইরে যাওয়ার সুযোগ পাননি। আওয়ামী লীগ শূন্যে ভেসে হাওয়ায় উড়ে কিংবা বন্দুকের নল উঁচিয়ে ক্ষমতায় বসেনি।’
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘রাজনীতিতে কঠিন এক চ্যালেঞ্জে আছি। এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতেই যৌথ সভার আয়োজন। বিএনপিকে প্রতিপক্ষ নয়, শত্রুপক্ষ মনে করতে হবে।’
রাজনীতির মাঠে বিএনপিকে মোকাবিলায় নেতা-কর্মীদের সর্বোচ্চ সতর্ক থাকার আহ্বান জানান আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।
আলটিমেটামেও বিএনপি ব্যর্থ মন্তব্য করে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘গত ১৫ বছরে অনেকবার বিএনপির হাঁকডাক শোনা হয়েছে। বিএনপি বিভিন্ন সময় নির্বাচনে আওয়ামী লীগের আসন নিয়ে তিরস্কার করে সমালোচনা করেছিল, যা ছিল বিএনপির অহংকার, দম্ভ। যারা আওয়ামী লীগের পতন দেখছে তাদের নিজেদের পতন হয় কি না সেটাই এখন দেখার বিষয়।’
রাজনীতিবিদদের বেফাঁস কথা বলা থেকে দূরে থাকা উচিত বলেও পরামর্শ দেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক। এ সময় তিনি আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের বিলবোর্ড কিংবা পোস্টার ফেস্টুন করে প্রচারণা থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানান।
তিনি বলেন, ‘এক এগারোর মতো অস্বাভাবিক সরকার তৈরি করার সুগভীর ষড়যন্ত্র করছে বিএনপি, তাদের একমাত্র টার্গেট হচ্ছে শেখ হাসিনাকে হটানো।
আগামী ৪ অক্টোবর দুপুরে প্রধানমন্ত্রী দেশে ফিরবেন জানিয়ে তিনি বলেন, ‘তিনি আমাদের জন্য অনেকগুলো আন্তর্জাতিক পুরস্কার ও সম্মাননা নিয়ে এসেছেন।’
প্রধানমন্ত্রী দেশে ফিরলে আওয়ামী লীগের দেয়া সংবর্ধনার প্রস্তাব এ সময় তিনি ফিরিয়ে দেন।
গণমাধ্যমের ওপর ভিসা নীতি প্রয়োগ বিষয়ে ঢাকায় নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত পিটার হাসের বক্তব্যে হতাশা ও উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন দেশের ১৯০ জন বিশিষ্ট নাগরিক।
শনিবার এক বিবৃতিতে এই উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়। খবর বাসসের
এতে বলা হয়, গণমাধ্যমে ভিসা নীতি প্রয়োগের ঘোষণা যুক্তরাষ্ট্রের ঘোষিত গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নীতির পরিপন্থী। বাংলাদেশের গণমাধ্যম উগ্রবাদী শক্তি, জঙ্গি, জামায়াত ইসলামীর মতো যুদ্ধাপরাধীর দল, সন্ত্রাসী গোষ্ঠী যারা প্রগতিশীল ও ধর্মনিরপেক্ষ শক্তিগুলোকে নির্মূল করতে চায়, তাদের বিরুদ্ধে সচেতনতা তৈরিতে সোচ্চার ভূমিকা রাখছে। এর ফলে বাংলাদেশ তালেবানের মতো একটি রাষ্ট্রে পরিণত হয়নি।
বিবৃতিতে বিশিষ্ট নাগরিকরা বলেন, গণমাধ্যমের ওপর ভিসা নীতি নিয়ে হাসের বক্তব্যটিকে কট্টরপন্থী ও স্বাধীনতাবিরোধীরা স্বাগত জানিয়েছে। এই পক্ষটি অন্যান্য নীতিতে পশ্চিমাদের নিন্দা করে, মুক্তচিন্তকদের শত্রু মনে করে এবং তারা ১৯৭১ সালে যুদ্ধাপরাধীদের দায়মুক্তির পক্ষে। হাসের বক্তব্যকে জামায়াতে ইসলামীর মুখপত্র হিসেবে পরিচিত ‘বাঁশের কেল্লা’ নামের ফেসবুক পেজ থেকে স্বাগত জানিয়ে পোস্ট করা হয়েছে। যেখানে হাসকে ‘একজন সত্যিকারের বন্ধু’ বলে উল্লেখ করা হয়েছে। অতীতে এই পেজে ব্লগার ও মুক্তচিন্তকদের হত্যার পক্ষে নানা বক্তব্য প্রচার করা হয়েছে। ফলে, এই পেজে হাসের বিবৃতি নিয়ে উল্লাস আসলে ধর্মনিরপেক্ষ নাগরিকদের জন্য নিগূঢ় বার্তা দেয়।
বিবৃতিতে বলা হয়, ‘আমরা দেখেছি, জামায়াতে ইসলামীর নেতাদের মুক্তিযুদ্ধকালের মানবতাবিরোধী অপরাধ, ধর্মনিরপেক্ষ নাগরিকদের কণ্ঠরোধ ও সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে। সেখানে যুক্তরাষ্ট্রের বক্তব্য নিয়ে “বাঁশের কেল্লা” পেজে আস্ফালন চলছে।’
এতে বলা হয়, ‘আমরা দেখেছি, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা ভিসা নীতিতে গণমাধ্যমের কথা উল্লেখ করা থেকে বিরত ছিলেন। কিন্তু হাস তার বক্তব্য প্রত্যাহার না করায় ধারণা করা যায়, গণমাধ্যমের বিরুদ্ধে এই পদক্ষেপ নেয়ার সিদ্ধান্ত হয়তো চূড়ান্ত। এরই মধ্যে সম্পাদক ও সাংবাদিকেরা এটির নিন্দা করেছেন। হাসের এই বক্তব্যের কারণে সংবাদমাধ্যমগুলো সমালোচনামূলক প্রতিবেদন প্রকাশে বাধাপ্রাপ্ত হবে বলে অনেকেই মত দিয়েছেন।’
হাসের দ্বৈতনীতির বিষয়টি তার বক্তব্যে উঠে এসেছে উল্লেখ করে বিশিষ্ট নাগরিকরা বিবৃতিতে বলেন, বাংলাদেশে আসার পর থেকে তিনি গণমাধ্যমের স্বাধীনতার পক্ষে সোচ্চার ছিলেন। কিন্তু তার এখনকার অবস্থান গণমাধ্যমের স্বাধীনতার মৌলিক অবস্থানকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে। অন্যদিকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ঘোষণা ছিল, গণমাধ্যমকে স্বাধীনভাবে কাজ করতে না দিলে তারাও ভিসা নীতির আওতায় আসবেন। কিন্তু হাসের বিবৃতিতে দেখা যায়, বাংলাদেশের সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠিত করতে যুক্তরাষ্ট্রের যে প্রতিশ্রুতি, আর সেখানে গণমাধ্যমের ভূমিকার যে সুযোগ ছিল, সেটিকে মারাত্মক বাধাগ্রস্ত করবে।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ‘আমরা যুক্তরাষ্ট্রের একাধিক প্রচেষ্টা দেখেছি, যা দেশের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতিকে বিপন্ন করার সম্ভাবনা রাখে। র্যাবের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র সরকারের নিষেধাজ্ঞার দাবি উত্থাপনে বড় ভূমিকা রেখেছেন দেশটির বিতর্কিত মার্কিন সিনেটর বব মেনেন্ডেজ। এ ছাড়া ছয় মার্কিন কংগ্রেসম্যানের স্বাক্ষরে একটি বিবৃতি প্রদান করা, যেখানে দাবি করা হয়েছে, বর্তমান সরকারের আমলে সংখ্যালঘুদের সংখ্যা অর্ধেক হয়ে গেছে, যা একেবারে বাস্তবতাবিবর্জিত এবং ন্যায়সংগত নয়। ফলে, এই বিষয়গুলো আমাদের চিন্তা করতে বাধ্য করে যে এ ধরনের কার্যক্রমের পেছনে ভিন্ন কোনো ইচ্ছা রয়েছে কি না।’
বিবৃতিতে বলা হয়, ‘অতীতে ২০১৩ থেকে ২০১৫ সালে জামায়াত এবং সাম্প্রদায়িক শক্তির সংখ্যালঘুদের ওপর সাম্প্রদায়িক হামলা থেকে শুরু করে হোলি আর্টিজান বেকারিতে জঙ্গি ও সন্ত্রাসীদের হামলা আমরা দেখেছি। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সহায়তা ব্যতীত এসব সাম্প্রদায়িক শক্তির বিরুদ্ধে যুদ্ধ করা অসম্ভব। বিএনপি-জামায়াত সর্বশেষ যেই জোট সরকার গঠন করেছিল, সে সময়ও ২৮ হাজারের বেশি হামলা চালানো হয় সংখ্যালঘুদের ওপর, যেখানে তাদের সম্পত্তি, বাড়িঘর দখলসহ মন্দিরে ভাঙচুর ও লুটপাট চালানো হয়, জীবন্ত মানুষকে জ্বালিয়ে দেয়া হয়। কিন্তু এ বিষয়ে তৎকালীন সরকারকে কোনো ব্যবস্থা নিতে দেখা যায়নি। কিন্তু বর্তমান সরকার নির্বাচিত হয়ে আসার পর রাষ্ট্রের সহায়তায় সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতন বন্ধ হয়েছে। আর সাম্প্রদায়িক এই সম্প্রতি বজায় রাখার জন্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।’
বিবৃতিতে বলা হয়, ‘আমরা দেখতে পেলাম, ন্যায়বিচার সমুন্নত রাখার প্রতি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিশ্রুতির বাস্তবায়ন ঘটেনি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের দণ্ডপ্রাপ্ত এবং আত্মস্বীকৃত খুনিদের ক্ষেত্রে, যাদের যুক্তরাষ্ট্র আশ্রয় প্রদান করছে। এটি বাংলাদেশের জন্য এমন এক জঘন্য হত্যাকান্ড, যা মৌলবাদী শক্তির উত্থান ঘটায়। সুতরাং আমরা মনে করি যে ভিসা নীতিটি কীভাবে প্রয়োগ করা হবে, তা নিয়ে প্রশ্ন উত্থাপন করা যৌক্তিক। কারা এর অনুমোদন দেবে এবং এই ধরনের পদক্ষেপের বৈধতা নিয়ে কারা সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন, তা বোঝাটাও জরুরি। কারণ, আমরা রাষ্ট্রদূতের কার্যকলাপ দেখেছি এবং অন্যান্য কার্যাবলিও দেখেছি, যা দেশকে অস্থিতিশীল করতে চাওয়া মৌলবাদী শক্তিগুলোর জন্য বারুদ হিসেবে কাজে এসেছে।’
বিবৃতিতে লেখক, অধিকারকর্মী, সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের নেতা, বীর মুক্তিযোদ্ধা, শহীদ বুদ্ধিজীবী পরিবারের সদস্য, যুদ্ধাপরাধবিরোধী প্রচারক, সাংবাদিক, সাংস্কৃতিক কর্মীসহ মোট ১৯০ জন বিশিষ্ট নাগরিক স্বাক্ষর করেছেন। তাদের মধ্যে রয়েছেন সাংবাদিক শাহরিয়ার কবির, নাট্যজন রামেন্দু মজুমদার, অধ্যাপক মুনতাসীর মামুন, শহীদজায়া শিক্ষাবিদ শ্যামলী নাসরিন চৌধুরী, কথাশিল্পী অধ্যাপক মুহম্মদ জাফর ইকবাল, শহীদজায়া সালমা হক, বীর মুক্তিযোদ্ধা বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক, আইনজীবী ও বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রাণা দাশগুপ্ত, চলচ্চিত্রনির্মাতা নাসির উদ্দিন ইউসুফ, ক্যাপ্টেন (অব.) আলমগীর সাত্তার বীর প্রতীক, চিকিৎসক আমজাদ হোসেন, বীর মুক্তিযোদ্ধা চিকিৎসক নূরন নবী, অধ্যাপক শিল্পী আবুল বারক আলভী, অধ্যাপক মেজবাহ কামাল, চিকিৎসক শেখ বাহারুল আলম, চিকিৎসক ইকবাল কবীর, বীর মুক্তিযোদ্ধা সমাজকর্মী সুব্রত চক্রবর্ত্তী, বীর মুক্তিযোদ্ধা ভূতত্ত্ববিদ মকবুল-ই এলাহী চৌধুরী, অধ্যাপক আবদুল গাফ্ফার, কবি জয়দুল হোসেন, সমাজকর্মী কাজী লুৎফর রহমান, সমাজকর্মী কামরুননেসা মান্নান, আইনজীবী আজাহার উল্লাহ্ ভূঁইয়া, নির্মল রোজারিও, সভাপতি বাংলাদেশ খ্রিষ্টান অ্যাসোসিয়েশন, ভিক্ষু সুনন্দপ্রিয়, সাধারণ সম্পাদক বুড্ডিস্ট ফেডারেশন।
‘খবরের সব দিক, সব দিকের খবর’ স্লোগান সঙ্গী করে ২০২০ সালের আজকের দিনটিতে যাত্রা শুরু নিউজবাংলা টোয়েন্টিফোর ডটকম-এর। নতুন দিনের সাংবাদিকতার আদর্শ ধারণ করে অভিজ্ঞতা ও তারুণ্যে প্রদীপ্ত একদল তথ্যযোদ্ধার মেধা ও শ্রমে আজ তিন বছর পেরিয়ে চতুর্থ বর্ষে পা দিল নিউজ পোর্টালটি।
তৃতীয় বর্ষপূর্তি ও চতুর্থ বর্ষে পদার্পণের ক্ষণটি কেক কেটে উদযাপন হয়েছে নিউজবাংলা প্রাঙ্গণে। রোববার সন্ধ্যায় প্রতিষ্ঠানের সব কর্মীর উপস্থিতিতে ঘরোয়া আয়োজনে দিনটি পালন করা হয়।
এসময় নিউজবাংলা ও দৈনিক বাংলার ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক চৌধুরী জাফরউল্লাহ শারাফাত বলেন, ‘নিউজবাংলা হলো আমাদের বিজয় রথের সারথী। দুই বাংলা, অর্থাৎ দৈনিক বাংলা ও নিউজবাংলা, দুই প্রতিষ্ঠানকে এগিয়ে নিতে সারথীর ভূমিকা পালন করে চলেছে নিউজবাংলা।’
তিনি বলেন, ‘প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই নিউজবাংলার সংবাদকর্মীরা প্রতিষ্ঠানটিকে দেশের প্রথম সারির অনলাইন সংবাদমাধ্যমে পরিণত করেছেন। দৈনিক বাংলার সংবাদকর্মীদের সঙ্গে সমন্বয় করে নিজেদের শক্তি আরও বাড়িয়ে নিউজবাংলা অনন্য উচ্চতায় পৌঁছবে, আমি সবসময় এই কামনা করি।’
এ সময় প্রতিষ্ঠানটির মান ধরে রাখতে অক্লান্ত পরিশ্রম করে যাওয়া নিউজবাংলার সংবাদকর্মীদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন তিনি। এ ছাড়া সারা দেশ থেকে প্রতি মুহূর্তের খবর সবার আগে সংগ্রহ করে তা সরবরাহ করা জেলা ও উপজেলা প্রতিনিধিদেরও ধন্যবাদ জানান সম্পাদক।
শুধু তিন বা চার বছর পূর্তি নয়, নিউজবাংলা শত-সহস্র বছর ধরে পাঠকের চাহিদা অনুযায়ী সংবাদ পরিবেশন করে যাবে; দেশের মানুষের দুঃখ-দুর্দশার কথা দায়িত্বপ্রাপ্তদের অবগত করা ও উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ড জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেবে; দেশের শাসন বিভাগ ও জনগণের মধ্যে সমন্বয় করে দেশকে আরও এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টায় নিয়োজিত থাকবে- এমনটা প্রত্যাশা করেন তিনি।
এরপর সবাইকে সঙ্গে নিয়ে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর কেক কাটেন ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক।
এসময় উপস্থিত ছিলেন নিউজবাংলার নির্বাহী পরিচালক অবসরপ্রাপ্ত মেজর আফিজুর রহমান, বার্তা সম্পাদক কামরুল হাসান খান, যুগ্ম বার্তা সম্পাদক আজাহারুল ইসলাম, প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শাহিনুর রহমান, সিনিয়র আইটি অফিসার সাইদুল ইসলাম মিঠু, বিজনেস ডেভেলপমেন্ট বিভাগের সহকারী মহাব্যবস্থাপক জাকারিয়া হোসেন জয় এবং প্রতিষ্ঠানটির রিপোর্টার, সাব-এডিটরসহ বিভিন্ন বিভাগের কর্মীরা।
আরও পড়ুন:জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জীবনী নিয়ে নির্মিত বায়োপিক ‘মুজিব-একটি জাতির রূপকার’ আগামী ১৩ অক্টোবর মুক্তি দেয়ার ঘোষণা করে ট্রেলার ও পোস্টার উদ্বোধন করেছেন তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ।
রাজধানীর হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালের বলরুমে রোববার সকাল সাড়ে ১১টার দিকে জাকজমকপূর্ণ এক অনুষ্ঠানে চলচ্চিত্রটি মুক্তির আগের গুরুত্বপূর্ণ কার্যক্রমগুলো সম্পন্ন হয়। এ সময় তিনি এ ঘোষণা দেন।
বাংলাদেশ ও ভারত সরকারের যৌথ প্রযোজনায় নির্মিত এ চলচ্চিত্রটি নিয়ে অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি অংশগ্রহণ করেন চলচ্চিত্রের কেন্দ্রীয় ‘মুজিব’ চরিত্রের অভিনেতা আরিফিন শুভ এবং চলচ্চিত্রের পরিচালক শ্যাম বেনেগাল।
অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের সচিব হুমায়ুন কবীর খোন্দকার, বিএফডিসির অতিরিক্ত সচিব ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক নুজহাত ইয়াসমিনসহ চলচ্চিত্রটির শিল্পী, কলাকুশলী, চলচ্চিত্র ব্যক্তিত্ব এবং সাংবাদিকরা।
‘আমাদের জাহাজের ইঞ্জিন নষ্ট হয়ে ইঞ্জিন রুমে পানি ঢুকতেছে। এখন জাহাজের কন্ট্রোল নাই, সাগরে এলোমেলো ভাসতেছি। আমরা ১৪ জন ক্রু আছি জাহাজে। আমাদের উদ্ধারের ব্যবস্থা নেন দয়া করে।’
এমন অনুরোধ জানিয়ে শনিবার সকাল সাড়ে ১০টায় মুরাদ (১৮) নামে একটি লাইটার জাহাজের ক্রু জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯ নম্বরে ফোন করেন। পরবর্তীতে তৎপরতা চালিয়ে কোস্টগার্ড ওই ১৩ নাবিককে উদ্ধার করে।
জানা যায়, এমভি মাস্টার সুমন-২ নামে একটি লাইটার জাহাজ এক হাজার ১০০ টন কয়লা বোঝাই করে চট্টগ্রাম থেকে দাউদকান্দি যাচ্ছিল। এক পর্যায়ে ইঞ্জিন বিকল হয়ে পড়ে। ইঞ্জিন রুমে পানি ঢুকে জাহাজটি সাগরে নিয়ন্ত্রণহীন ভাসতে থাকে। এ সময় জাহাজটি সাঙ্গু গ্যাস ফিল্ড থেকে আনুমানিক ৯ দশমিক ৫ নটিক্যাল মাইল উত্তরে গভীর সাগরে অবস্থান করছিল।
নাবিক মুরাদের কলটি রিসিভ করেন ৯৯৯ কলটেকার কনস্টেবল মো. আবদুল কাদের। তিনি তাৎক্ষণিকভাবে কোস্টগার্ড নিয়ন্ত্রণ কক্ষ ও সন্দ্বীপ কোস্টগার্ডে ঘটনাটি জানিয়ে দ্রুত উদ্ধারে ব্যবস্থা গ্রহণের আহ্বান জানান।
পরবর্তীতে ৯৯৯ ডেসপাচার এসআই কবির রায়হান উদ্ধার-সংশ্লিষ্ট সবার সঙ্গে যোগাযোগ করে উদ্ধার তৎপরতার আপডেট নিতে থাকেন।
সংবাদ পেয়ে কোস্টগার্ডের নিয়মিত টহল কার্যক্রম পরিচালনাকারী জাহাজ ‘সবুজ বাংলা’ দুর্ঘটনাস্থলে গিয়ে লাইটার জাহাজটি থেকে ১৩ জন ক্রুকে নিরাপদে উদ্ধার করে।
উদ্ধারকৃতদের প্রাথমিক শুশ্রূষা এবং খাবার সরবরাহ করা হয়। পরবর্তীতে মালিক পক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করে উদ্ধারকৃত ক্রু এবং জাহাজটি বুঝিয়ে দেয়া হয়।
কোস্টগার্ড উদ্ধারকারী দলের নেতৃত্ব দেয়া লে. কমান্ডার আব্দুল্লাহ আল মামুন ৯৯৯-কে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
আরও পড়ুন:বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে বিদেশ নিয়ে চিকিৎসা দিতে তার পরিবারের পক্ষ থেকে করা আবেদনের বিষয়ে আইন মন্ত্রণালয়ের মতামত জানিয়েছেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক।
সচিবালয়ের রোববার সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, খালেদা জিয়া বিদেশে চিকিৎসা নিতে চাইলে তার কারাদণ্ড স্থগিতের আদেশটি তুলে নেয়া হবে।
মন্ত্রী বলেন, ‘আপনারা জানেন যে, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় হতে আইনি মতামতের জন্য বেগম খালেদা জিয়ার ভাইয়ের যে শেষ দরখাস্তটা, সেটা হচ্ছে যে, তাকে পারমানেন্টলি মুক্তি দেয়ার জন্য এবং তাকে বিদেশ পাঠানোর জন্য অনুমতি দেয়া। সেটা আইনি মতামতের জন্য আমাদের কাছে পাঠানো হয়েছিল। আমরা আইনি মতামত দিয়ে সেটা কিছুক্ষণ আগে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়ে দিয়েছি। আপনাদের প্রশ্ন আমরা কী আইনি মতামত দিয়েছি।
‘প্রথম কথা হচ্ছে যে, প্রথম যে দরখাস্তটা ছিল, যেটা ২০২০ সালের মার্চ মাসে নিষ্পত্তি হয়, সেই দরখাস্তে ছিল যে, বেগম খালেদা জিয়া অত্যন্ত অসুস্থ। তাকে কারাগার থেকে মুক্তি দিয়ে তার সুচিকিৎসা যেন হয়, সেটার ব্যবস্থা করা এবং তখন সেই দরখাস্তের ওপর আমরা একটা সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম এবং সেই দরখাস্তের ওপর যে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছিল, সেই সিদ্ধান্তটা হচ্ছে যে দুটো শর্তসাপেক্ষে তার দণ্ডাদেশ ছয় মাসের জন্য স্থগিত রেখে তাকে মুক্তি দেয়া হয়েছিল। এটা ফৌজদারি কার্যবিধির ৪০১-এর উপধারা ১-এর ক্ষমতাবলে এবং সেখানে দুটো শর্ত দেয়া হয়েছিল। সেই দুটো শর্ত হচ্ছে যে, প্রথম তিনি বাসায় থেকে তার চিকিৎসা নেবেন। দ্বিতীয়, তিনি বিদেশে যেতে পারবেন না এবং সেই শর্তগুলো মেনে কারাগার থেকে মুক্ত হন এবং বাসায় ফিরে যান এবং এইভাবেই আপনার সেই দরখাস্তটা নিষ্পত্তি করা হয়।’
তিনি বলেন, ‘নিষ্পত্তি করার পরে শুধু দরখাস্ততে এইটুকু জিনিস উন্মুক্ত ছিল। সেটা হচ্ছে তাকে দেয়া হয়েছিল ছয় মাসের জন্য এবং প্রত্যেক ছয় মাসে বৃদ্ধি করা যাবে কি না, সেই ব্যাপারে ছিল এবং প্রত্যেক ছয় মাসে বৃদ্ধি করে সেটা আটবার বৃদ্ধি করা হয়েছে। ফৌজদারি কার্যবিধির ৪০১ ধারার কোনো দরখাস্ত যদি একবার নিষ্পত্তি করা হয়, সেই নিষ্পত্তিকৃত দরখাস্ত পুনর্বিবেচনা করার কোনো অবকাশ আইনে থাকে না।
‘আমরা ঠিক সেই ফৌজদারি কার্যবিধির ৪০১ ধারার উপধারা ১, উপধারা ২, উপধারা ৩, উপধারা ৪, উপধারা ৫ এবং সর্বশেষ উপধারা ৬ আমরা ব্যাখ্যা করে আমাদের মতামত পাঠিয়ে দিয়েছি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে এবং সেই মতামত হচ্ছে যে, ৪০১ ধারার ক্ষমতাবলে যে দরখাস্ত নিষ্পত্তি করা হয়েছে, সেটা একটা পাস্ট অ্যান্ড ক্লোজ ট্রান্সজেকশন। এটা আর খোলার কোনো উপায় নাই। ধন্যবাদ।’
অপর এক প্রশ্নের জবাবে আইনমন্ত্রী বলেন, ‘যেটা আমি আগেও বলেছি, বারবারই বলছি, সেটা হচ্ছে যে, তাকে এখন যেই আদেশবলে তার যে ৪০১ ধারায় যে ছয় মাস দুটি শর্তযুক্তভাবে তাকে মুক্তি দেয়া হয়েছে এবং সাজা স্থগিত রেখে সেটা বাতিল করে তারপরে আবার পুনরায় বিবেচনা করার স্কোপ থাকলে সেটা করা হবে।’
শারীরিক বিভিন্ন জটিলতায় রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি খালেদা জিয়াকে চিকিৎসার জন্য বিদেশ পাঠাতে গত ২৫ সেপ্টেম্বর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের সঙ্গে দেখা করেন বিএনপি চেয়ারপারসনের ছোট ভাই শামীম এস্কান্দার। পরে মতামত দেয়ার জন্য আবেদনটি আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে চিকিৎসার জন্য বিদেশ নিতে দীর্ঘদিন ধরে দাবি জানিয়ে আসছেন দলের জ্যেষ্ঠ নেতারা। ভয়েস অব আমেরিকার বাংলা বিভাগকে শনিবার বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘সরকার ইচ্ছা করলে প্রশাসনিক আদেশেই খালেদা জিয়াকে চিকিৎসার জন্য বিদেশে নেয়ার ব্যবস্থা করতে পারে।’
তিনি বলেন, ‘সরকার যে আদেশে খালেদা জিয়ার সাজা স্থগিত করেছে, সেখানে দুটি শর্ত জুড়ে দেয়া আছে। তার একটি শর্ত হলো বিদেশে যাওয়া যাবে না। এই শর্তটি তুলে দিলেই খালেদা জিয়া বিদেশে গিয়ে চিকিৎসা করে আবার দেশে আসতে পারবেন।’
দুর্নীতির মামলায় দণ্ডিত হয়ে ২০১৮ সালে খালেদা জিয়া কারাগারে গিয়েছিলেন। দেশে করোনাভাইরাস মহামারি শুরুর পর পরিবারের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ২০২০ সালের ২৫ মার্চ সরকার নির্বাহী আদেশে তার সাজা স্থগিত করে। এরপর কয়েক দফায় তার দণ্ডাদেশ স্থগিতের মেয়াদ বাড়ানো হয়।
আরও পড়ুন:সংবিধান অনুযায়ী সরকার নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে বলে জাপানের রাষ্ট্রদূতকে জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।
সচিবালয়ে রোববার তার নিজ দপ্তরে বাংলাদেশে নিযুক্ত জাপানের রাষ্ট্রদূত ইয়োমা কিমিনোরির সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাতে তিনি এ কথা বলেন।
কাদের বলেন, ‘সংবিধান অনুযায়ী সরকার দেশে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে।’
সেতুমন্ত্রী বলেন, ‘জাতীয় নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহার প্রণয়ন কমিটির প্রথম বৈঠক এরই মধ্যে অনুষ্ঠিত হয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘সাক্ষাৎকালে বাংলাদেশে জাপানের সহায়তায় চলমান প্রকল্পের অগ্রগতিসহ দুই দেশের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ককে আরও কীভাবে জোরদার করা যায়, সে বিষয়ে আলোচনা হয়।’
মন্তব্য