যেকোনো রাজনৈতিক দলের জন্যই রাজধানী সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। যেকোনো আন্দোলন-সংগ্রামে রাজধানীর নেতা-কর্মীদের শক্তির ওপরই নির্ভর করে রাজনৈতিক দলগুলো।
করোনায় দীর্ঘদিন কোনো রাজনৈতিক কর্মসূচি না থাকায় তৃণমূলের ভিত দুর্বল হচ্ছে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের। সব বিভাগের কার্যক্রমেই রয়েছে স্থবিরতা। তবে নেতা-কর্মীরা বলছেন, এর মধ্যে সবচেয়ে নাজুক অবস্থা ঢাকা মহানগরীর।
দফায় দফায় ঘোষণা দিয়েও মহানগরীর ওয়ার্ডগুলোতে কোনো কমিটি এখনও দেয়া যায়নি। কমিটি দিতে ঢাকা বিভাগে দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম মহানগর উত্তর ও দক্ষিণের নেতাদের সঙ্গে বেশ কয়েকটি বর্ধিত সভা করলেও কোনো ফল নেই।
সবশেষ বর্ধিত সভায় মির্জা আজম উষ্মা প্রকাশ করে বলেন, ‘ঢাকা বিভাগে সবচেয়ে দুর্বল সংগঠন ঢাকা মহানগর। কোনো চর্চা না থাকায় মহানগরের নেতা-কর্মীদের মধ্যে এক ধরনের জড়তা চলে এসেছে। আমরা চেষ্টা করছি এটা সচল করতে।
‘ঢাকা মহানগর উত্তর মোটামুটি সচল থাকলেও পিছিয়ে রয়েছে ঢাকা দক্ষিণ। আমার চেষ্টা দুটি ইউনিটকেই সমান্তরালভাবে এগিয়ে নেয়ার।’
২০১৯ সালে আওয়ামী লীগের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ইউনিট ঢাকা মহানগর উত্তর ও ঢাকা দক্ষিণের আংশিক কমিটি অনুমোদন দেয় কেন্দ্রীয় সংসদ। এতে বজলুর রহমানকে সভাপতি ও এস এম মান্নান কচিকে সাধারণ সম্পাদক করে ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের আংশিক কমিটি ঘোষণা দেয়া হয়। এ ছাড়া আবু আহমেদ মন্নাফীকে সভাপতি এবং মো. হুমায়ুন কবিরকে সাধারণ সম্পাদক করে ঢাকা দক্ষিণ মহানগরের আংশিক কমিটি ঘোষণা হয়।
পরের বছরের সেপ্টেম্বরে তারা পূর্ণাঙ্গ কমিটির প্রস্তাব কেন্দ্রে জমা দেন। ২০২০ সালের ১৮ নভেম্বর সেই প্রস্তাব অনুমোদন করে ঢাকা উত্তরের জন্য ৯২ সদস্যের পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করা হয়। এর এক দিন পরেই ৭৩ সদস্যের পূর্ণাঙ্গ কমিটি পায় ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগ।
গত বছরের মার্চে দেশে করোনার সংক্রমণ শুরু হলে সাংগঠনিক কার্যক্রম গুটিয়ে নিয়েছিল ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ। এরপর থেকে দৃশ্যমান কোনো রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে নেই দলটির নেতা-কর্মীরা। এর প্রভাব পড়েছে রাজধানীর দুটি ইউনিটেও। কমিটি থাকলেও করোনার কারণে সাংগঠনিক কোনো কার্যক্রম সেভাবে করার সুযোগ পাননি নতুন দায়িত্ব পাওয়া নেতারা।
কেন্দ্রের নির্দেশে করোনার সময় মানবিক কার্যক্রম পরিচালনা করলেও সাংগঠনিক কাজে গতি আসেনি। সম্প্রতি ওয়ার্ড কমিটিগুলো পূর্ণাঙ্গ করতে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণে কয়েকটি সাংগঠনিক দল তৈরি করে তাদের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে নেতা-কর্মীদের মধ্যে বিরোধ কমানোর।
২০১৬ সাল থেকে থানা ও ওয়ার্ড কমিটিগুলো শুধু সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক দিয়েই কার্যক্রম পরিচালনা করছে। মহানগরে নতুন নেতৃত্ব এলেও সেইগুলো আর পূর্ণাঙ্গ হয়নি। আর এ কারণে মহানগরের নেতা-কর্মীদের মধ্যেও তৈরি হয়েছে হতাশা। দলীয় কাজে উৎসাহ হারিয়েছেন অনেকে। এর ফলে দলের সাংগঠনিক ভিত দুর্বল হয়েছে রাজধানীতে। নেতাদের সাথে কর্মীদের দূরত্বও ক্রমেই বাড়ছে।
ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সভাপতি আবু আহমেদ মন্নাফী নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমাদের সাংগঠনিক টিম করে দেয়া হয়েছে, তারা কাজ করছে। আগস্টের কাজই আমরা শেষ করতে পারছি না। প্রতিদিনই চারটা-পাঁচটা করে অনুষ্ঠান থাকে। আওয়ামী লীগের রীতি অনুযায়ী আগস্ট মাসে কোনো কমিটির কাজ করা হয় না। এরপরেও সাংগঠনিক টিমগুলো ওয়ার্ড ইউনিটে কর্মিসভা করছে। সচেতন করছে, যাতে ভালো মানুষদের নেতৃত্বে নিয়ে আসা যায়।
‘মন্দ লোক যেমন চাঁদাবাজ বা দখলবাজরা যাতে না আসে, সে বিষয়ে নেতা-কর্মীদের বলা হচ্ছে। এই মাসটা শেষ হলে সদস্য বই নেতা-কর্মীদের দিয়ে দেব। এরপর আশা করি, সদস্য সংগ্রহ কার্যক্রম শুরু হবে। আস্তে আস্তে কাজ হবে। এটা তো এক দিনে হবে না। যেহেতু বড় দল, তাই আমরা এখানে যেন বিতর্কিতরা আসতে না পারেন সে বিষয়ে সতর্কতার সাথে সামনে এগোচ্ছি।’
ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এস এম মান্নান কচি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমরা সাংগঠনিক কার্যক্রম তখনই শুরু করব, যখন করোনার প্রকোপ কমে আসবে। এ দেশের মানুষের সেবা করা আমাদের প্রথম দায়িত্ব। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আমাদের বলেছেন, সব সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড স্থগিত রেখে সম্মেলন স্থগিত করে দিতে। আগস্ট মাসে আমরা এমনিতেই সম্মেলন করি না, তার ওপর করোনা, তাই প্রশ্নই আসে না।
‘আমরা এখন মানবিক কার্যক্রমকেই গুরুত্ব দিচ্ছি। হাজার হাজার মানুষকে আমরা প্রতিদিনই খাবার দিচ্ছি। তাদের সহযোগিতা করছি। যখন করোনা মোটামুটিভাবে নিয়ন্ত্রণে আসবে, তখনই আমরা সাংগঠনিক সম্মেলন করব। এর আগে না। এখন মানুষের সেবাই আমরা করে যাব। সেটাই আমরা প্রতিদিন ওয়ার্ডভিত্তিক করে যাচ্ছি।’
কোন বিভাগের অবস্থা কী?
আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, অক্টোবরের মধ্যে ঢাকা বিভাগের সব থানায় সম্মেলন শেষ করার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।
দেশে করোনা শুরুর পর থেকে ঢাকা ছাড়াও অন্য বিভাগগুলোতে চলছে সাংগঠনিক স্থবিরতা। এর ফলে জেলায় জেলায় দেখা দিয়েছে অভ্যন্তরীণ কোন্দল, যা সামাল দেয়া ক্রমেই কঠিন হয়ে পড়ছে।
জেলা-উপজেলার অনেক কমিটির মেয়াদ শেষ হলেও নতুন কমিটি হচ্ছে না। যেগুলোর সম্মেলন এরই মধ্যে হয়েছে, সেগুলোর অনেকগুলোই এখনও পূর্ণাঙ্গ হয়নি।
এরই মধ্যে নোয়াখালী, ব্রাহ্মণবাড়িয়াসহ বেশ কয়েকটি জেলায় নেতা-কর্মীদের মতবিরোধ সামনে এসেছে। নোয়াখালী জেলার নেতাদের নিয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের ছোট ভাই কাদের মির্জার নানা বক্তব্যে বিষয়টি আরও পরিষ্কার হয়। জেলা নেতাদের সঙ্গে কেন্দ্রীয় নেতাদের দফায় দফায় বৈঠকেও বিষয়টির কোনো সুরাহা হয়নি।
এ ছাড়া বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য স্থাপন ইস্যুতে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় হেফাজতে ইসলামের তাণ্ডব ঠেকাতে ব্যর্থতার বিষয়টিও সামনে এসেছে। জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক, ছাত্রলীগের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের ওপর হামলা হলেও কোনো নেতা-কর্মীকে এগিয়ে আসতে দেখা যায়নি।
সিলেট বিভাগের মধ্যে সুনামগঞ্জ, হবিগঞ্জসহ বেশ কয়েকটি উপজেলায় সম্মেলন এখনও বাকি রয়েছে। কোভিড পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে এসব উপজেলায় পূর্ণাঙ্গ কমিটি দেয়া হবে বলে জানিয়েছে কেন্দ্র।
দেশে করোনা সংক্রমণ শুরুর পর গত দেড় বছরে রাজশাহী বিভাগের তিনটি জেলা ও ২৭টি উপজেলায় সম্মেলন হয়েছে। এর মধ্যে কোথাও ভোটের মাধ্যমে, কোথাও বা সমঝোতার মাধ্যমে নির্বাচন করা হয়েছে নেতৃত্ব। তবে এখনও বাকি রয়েছে সিরাজগঞ্জ, নাটোর, নওগাঁ ও পাবনায় জেলা সম্মেলন।
খুলনা বিভাগের সাতটি জেলায় সম্মেলন হয়েছে। এখনও বাকি আছে যশোর, ঝিনাইদহ, মাগুরা, চুয়াডাঙ্গা ও মেহেরপুরের সম্মেলন। এরই মধ্যে ওয়ার্ড এবং ইউনিয়নগুলোতে সম্মেলনের নির্দেশনা দিয়েছে কেন্দ্র।
রংপুর বিভাগের ছয়টি জেলা রংপুর জেলা ও মহানগর, নীলফামারী, ঠাকুরগাঁও, লালমনিরহাট ও কুড়িগ্রাম জেলার সরাসরি সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে। নেতা-কর্মীরা বলছেন, কোভিড পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলেই মেয়াদোত্তীর্ণ জেলা ও উপজেলাগুলোর সম্মেলন অনুষ্ঠানের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে।
চট্টগ্রাম বিভাগে সম্মেলন বাকি আছে সাতটি জেলার। এ বিভাগে সম্মেলনের অপেক্ষায় আছে ৭০টি উপজেলা, থানা ও সদর-পৌরসভা।
ময়মনসিংহ বিভাগের পাঁচটি জেলা ইউনিটের সবগুলোরই কমিটির মেয়াদ শেষ হয়েছে। করোনার কারণে জেলাগুলোতে সম্মেলনের কার্যক্রম শুরু হয়নি।
বরিশাল বিভাগের বরগুনা ও পিরোজপুরে সম্মেলনের উদ্যোগ নেয়া হলেও করোনার কারণে থমকে আছে কাজ। নেতা-কর্মীরা বলছেন, করোনা নিয়ন্ত্রণে আসার পর মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটি ভেঙে সম্মেলনের মাধ্যমে নতুন নেতৃত্ব আনা হবে।
কেন্দ্রীয় নেতারা বলছেন, করোনার প্রকোপ কমলে আবারও সাংগঠনিক তৎপরতা শুরু করবে আওয়ামী লীগ। দলের কেন্দ্রীয় যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমাদের কর্মসূচি আগে থেকে দেয়াই আছে, প্যানডেমিকের প্রকোপ কমে গেলেই আমরা সাংগঠনিক তৎপরতা শুরু করব।
‘এখন তো তারিখ ঠিক করা যাচ্ছে না। এটা নির্ভর করছে পরিস্থিতির ওপর। আমাদের সিদ্ধান্ত প্রকোপ কমলেই আমরা কার্যক্রম শুরু করব। সবকিছু স্বাভাবিক হলে আমাদেরও কর্মকাণ্ড শুরু হয়ে যাবে।’
আরও পড়ুন:
আসন্ন জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে বিএনপি ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনে থাকা রাজনৈতিক দলগুলোকে নিয়ে বৃহৎ জোট গঠন করতে চায় বলে জানিয়েছেন দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ।
সোমবার (২৭ অক্টোবর) যুবদলের ৪৭তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে জিয়াউর রহমানের সমাধিতে শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে গণমাধ্যমকর্মীদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এ কথা জানান।
সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, ফ্যাসিবাদবিরোধী ঐক্য অটুট রাখতে চায় বিএনপি। আর ঐক্য বজায় রাখতে কেউ যেন বিভেদের পথে না যায় সেই বার্তাও দিতে চায় দলটি।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই সদস্য বলেন, আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে সারাদেশের প্রার্থীদের সঙ্গে দলের হাইকমান্ডের বৈঠক হচ্ছে। দল ও নিজেদের মধ্যে ঐক্য ধরে রাখার বার্তা দিতেই হাইকমান্ডের এই বৈঠক করছে বিএনপি।
এ সময়, আগামীর বাংলাদেশ হবে তারুণ্যনির্ভর মন্তব্য করে বিএনপির এই নেতা বলেন, তরুণ-যুবকদের রাজনৈতিক ভাবনাকে ধারণ করে সামনের দিনে জাতি বিনির্মাণে কর্মসূচি প্রণয়ন করবে বিএনপি।
সোমবার (২৭ অক্টোবর) যুবদলের ৪৭তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে জিয়াউর রহমানের সমাধিতে বিএনপি নেতা-কর্মীদের শ্রদ্ধা নিবেদন।
চট্টগ্রামের রাউজানে সন্ত্রাসীদের গুলিতে আলমগীর আলম (৫৫) নামে এক বিএনপি নেতা নিহত হয়েছেন। গতকাল শনিবার বিকেল ৫টার দিকে পৌরসভার ৯ নম্বর ওয়ার্ডের কায়কোবাদ আহম্মদ জামে মসজিদের সামনে এ ঘটনা ঘটে। এ সময় রিয়াজ ও আকিব নামে দুইজন যুবদল নেতাও গুলিবিদ্ধ হওয়ার ঘটনা ঘটেছে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন রাউজান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মনিরুল ইসলাম ভূঁইয়া।
স্থানীয়রা জানান, নিহত আলমগীর আলম বিএনপি নেতা। তিনি রাউজান পৌরসভার ৯নং ওয়ার্ডের পূর্ব রাউজানের সিদ্দিক চৌধুরী বাড়ির আবদুস সত্তারের ছেলে।
আলমগীরের ছেলে আসফায়েত হোসেন বলেন, শনিবার দুপুরে পরিবারের সবাই মিলে পূর্ব রাউজান রশিদ পাড়ায় ফুফুর বাড়িতে দাওয়াত খেতে গিয়েছিলাম। বিকেলে বাড়ি ফেরার পথে কায়কোবাদ আহম্মদ জামে মসজিদের সামনে সন্ত্রাসীরা এলোপাতাড়ি গুলি করে আমার বাবাকে হত্যা করে।
রাউজান থানার ওসি মনিরুল ইসলাম ভূঁইয়া বলেন, আলমগীর নামে এক ব্যক্তির গুলিবিদ্ধ মরদেহ সড়কের পাশ থেকে উদ্ধার করা হয়েছে। তাকে কে বা কারা গুলি করে পালিয়ে গেছে। ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়। মরদেহ উদ্ধার করে থানায় নেওয়া হয়েছে। সুরতহাল শেষে ময়নাতদন্তের জন্য লাশ চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হবে।
এদিকে বিএনপি নেতা আলমগীর হত্যার ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা গোলাম আকবর খোন্দকার। তিনি বলেন, আলমগীর আওয়ামী শাসনামলে দীর্ঘ ১২ বছর কারাভোগের পর সম্প্রতি কারামুক্ত হয়েছিল। তাকে প্রকাশ্যে গুলি করে যারা হত্যা করেছে- তাদের গ্রেপ্তার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।
গত ৭ অক্টোবর উপজেলার বিএনপি কর্মী মুহাম্মদ আবদুল হাকিমকে (৫২) রাউজানের খামার বাড়ি থেকে ফেরার পথে হাটহাজারীর মদুনাঘাটে চলন্ত গাড়িতে গুলি করে হত্যা করে অস্ত্রধারীরা। এ ঘটনার রেশ না কাটতেই উপজেলায় আরও একটি হত্যার ঘটনা ঘটল।
উল্লেখ্য, রাউজানে গত ৫ আগস্টের পর রাজনৈতিক সহিংসতায় মোট ১৭টি হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে ১২টি রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ড বলে জানা যায়।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন বলেছেন, ‘আদর্শ ও মতের পার্থক্য থাকা সত্ত্বেও গণতন্ত্রের স্বার্থে স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষায় সবাইকে এক হতে হবে। ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের প্রত্যাবর্তনের সব দরজা বন্ধে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে।’
গতকাল শনিবার রাজধানীর শিল্পকলা একাডেমিতে একটি জাতীয় দৈনিকের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।
সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, ‘রাজনৈতিক দলের বিভেদের কারণে ফ্যাসিবাদের প্রত্যাবর্তন ঘটলে জাতি ক্ষমা করবে না।’
তিনি বলেন, ‘ভবিষ্যতে রাজনৈতিক দলে মতপার্থক্য থাকা সত্ত্বেও দেশ ও সার্বভৌমত্বের প্রশ্নে সবাই ঐক্যবদ্ধ থেকে ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের প্রত্যাবর্তন ঠেকাবো।’
আবেগাপ্লুত কণ্ঠে তিনি বলেন, ‘দুই-চার কলাম লেখার জন্য আমাকে প্রায় সাড়ে নয় বছর নির্বাসনে থাকতে হয়েছে, আয়নাঘরে থাকতে হয়েছে, নির্যাতনে কারাগারে থাকতে হয়েছে। কিন্তু কখনো সংগ্রামের পথ থেকে পিছিয়ে যাইনি।’
সালাহউদ্দিন আরও বলেন, ‘এক সময় আমি ও আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক মাহমুদুর রহমান পিজি হাসপাতালের প্রিজন সেলে ছিলাম। করোনারি কেয়ার ইউনিটের একটি সেলে আমাদের রাখা হয়। তিনি অনশন শুরু করলে তাকে বলেছিলাম, আপনি মারা গেলে শেখ হাসিনা খুশি হবে, দয়া করে অনশন ভঙ্গ করুন। ছয়-সাত দিন পর মুরুব্বিরা দেখা করে তার অনশন ভাঙ্গান।’
ছাত্রদের অভ্যুত্থানের গৌরবময় ইতিহাস বুকে ধারণ করে নতুন বাংলাদেশ নির্মাণে সকলকে এগিয়ে আসতে হবে বলেও উল্লেখ করেন বিএনপির এই সিনিয়র নেতা।
তিনি বলেন, ‘ছাত্র আন্দোলনের রক্তঝরা দিনগুলো স্মৃতিতে ধরে রেখে, তার ভিত্তিতেই আমাদের আগামীর বাংলাদেশ গড়তে হবে। সন্তানদের জন্য একটি প্রকৃত গণতান্ত্রিক সমাজ, রাষ্ট্র ও সরকার ব্যবস্থা গড়ে তোলাই হবে আমাদের দায়িত্ব।’
আমাদের সন্তানদের রক্তের অঙ্গীকার পূরণ করতে হবে বলে সকলের প্রতি আহ্বান জানান বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই সদস্য।
বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ও জেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক এবং মানিকগঞ্জ-১ আসনে এমপি প্রার্থী এস.এ জিন্নাহ কবির বলেছেন, স্বাধীনতাবিরোধী জামায়াত ইসলাম ধর্মকে ব্যবহার করে সাধারণ মানুষকে ধোকা দিয়ে ভোট নেওয়ার পাঁয়তারা করছে। সাধারণ ভোটাদের ইসলাম ধর্ম নিয়ে মিথ্যা অপব্যাখ্যা দিয়ে বলে বেড়াচ্ছে দাঁড়িপাল্লায় ভোট দিলে জান্নাতে যাওয়া যাবে, নাওজুবিল্লাহ দেখেন কত বড় মিথ্যাবাদী।
তিনি বলেছেন, কোরআন শরীফের নিয়ম মেনে ও আল্লাহর সকল কিছু মেনে আল্লাহর খাঁটি বান্দা হলে একমাত্র জান্নাত পাওয়া যেতে পারে। ধর্ম ব্যবসায়ী জামায়াতের মিথ্যা কথায় আপনারা বিভ্রান্ত হবেন না। স্বাধীনতাবিরোধী মিথ্যাবাদী, প্রতারণাকারী জামায়াতকে প্রতিহত করতে হবে।
গত শুক্রবার সন্ধ্যা ৭টায় মানিকগঞ্জের ঘিওর উপজেলার বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের উদ্যোগে ঘিওর পাবলিক লাইব্রেরি মাঠে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ৩১ দফা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে লিফলেট বিতরণ ও প্রচারণা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথ বলেন।
ঘিওর উপজেলা বিএনপির সভাপতি মীর মানিকুজ্জামান মানিকের সভাপতিত্বে ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জানে আলমের সঞ্চালনায় উপস্থিত ছিলেন, জেলা যুবদলের আহ্বায়ক কাজী মোস্তাক হেসেন দিপু, দৌলতপুর উপজেলা বিএনপির সভাপতি ও সাবেক চেয়ারম্যান সিরাজুল ইসলাম, জেলা বিএনপি সাবেক কৃষিবিষয়ক সম্পাদক ও জেলা বিএনপি আহ্বায়ক কমিটির সদস্য ও দৌলতপুর উপজেলা বিএনপির সহসভাপতি মো. লোকমান হোসেন, জেলা কৃষক দলের সিনিয়র সহসভাপতি মাসুদুর রহমান মাসুদ, দৌলতপুর উপজেলা বিএনপির সহসভাপতি আবদুল মতিন মাস্টার, সাধারণ সম্পাদক আনিসুর রহমান আনিস ও জেলা যুবদলের সদস্য মোসলেম উদ্দিন প্রমুখ।
বিএনপি আগামীতে ক্ষমতায় এলে শিক্ষাখাতে সর্বোচ্চ বরাদ্দ দেওয়া হবে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।
কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়া সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে “রাষ্ট্র কাঠামো মেরামতের রূপরেখা ৩১ দফা” বিষয়ে খন্দকার শামসুল আলম ফাউন্ডেশন আয়োজিত মেধাবৃত্তি পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশ ও পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে এ কথা বলেন তিনি।
অনুষ্ঠানে কিশোরগঞ্জ জেলা বিএনপি’র সভাপতি মো. শরীফুল আলমের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি হিসেবে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে বক্তব্য রাখেন বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।
তারেক রহমান বলেন, “দেশকে এগিয়ে নিতে হলে প্রাথমিক শিক্ষাকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিতে হবে। বিএনপি আগামীতে ক্ষমতায় এলে শিক্ষাখাতে সর্বোচ্চ বরাদ্দ দেওয়া হবে। শিক্ষকদের এমন সাপোর্ট দেওয়া হবে যাতে তারা পাঠদানে পুরো মনোযোগ দিতে পারেন।”
তিনি আরও বলেন, “দুর্নীতির বিরুদ্ধে সবাইকে সোচ্চার হতে হবে। প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের শেখানো হবে নিজের যত্ন নেওয়া এবং বয়োজ্যেষ্ঠদের প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শনের শিক্ষা।”
তারেক রহমান জানান, ভবিষ্যতে মেধাবীদের প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক হিসেবে নিয়োগে অগ্রাধিকার দেওয়া হবে এবং শিক্ষকদের মর্যাদা ও প্রণোদনা বাড়ানো হবে।
তারেক রহমান বলেন, “বিগত ১৫ বছরে প্রচুর অর্থবিত্ত পাচার হয়ে গেছে। পানির অপর নাম জীবন তাই খালগুলো পুনঃখনন ও পানির সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে।”
তিনি উল্লেখ করেন, শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান ১৯৭৯ সালে যে খাল খনন কর্মসূচি নিয়েছিলেন, তা পুনরায় বাস্তবায়নের মাধ্যমে পানির সংকট ও আর্সেনিক সমস্যা সমাধানের পথ উন্মুক্ত হবে।
ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, “মেধাবীদের মধ্যেই লুকিয়ে আছে আগামীর নেতৃত্ব। তরুণরা যেন বিদেশে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার মতো যোগ্যতা অর্জন করতে পারে ভাষা শিক্ষা, কারিগরি শিক্ষা, সাহিত্য-সংস্কৃতি প্রতিটি ক্ষেত্রে স্কুল থেকেই দক্ষতা গড়ে তোলা হবে।”
তিনি প্রতিশ্রুতি দেন, কোনো মেধাবী যেন আর ঝরে না পড়ে, সে লক্ষ্যে সরকার গঠন করলে শিক্ষাব্যবস্থায় যুগান্তকারী সংস্কার আনা হবে।
এছাড়াও বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন, বিএনপি'র স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আব্দুল মঈন খান, বিএনপি'র চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুস সালাম, ছাত্রদলের সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিব ।
প্রধান অতিথি তারেক রহমানের বক্তব্যের আগে অনুষ্ঠানস্থল থেকে ছাত্র-ছাত্রীরা সরাসরি বিএনপি'র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে বিভিন্ন প্রশ্ন করে। ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানও ছাত্র-ছাত্রীরা উত্তর দেন।
উল্লেখ্য যে, তারেক রহমান ঘোষিত ৩১ দফার ওপর গত ১৬ আগস্ট ১০ হাজারের ওপর শিক্ষার্থীর পরীক্ষা নেওয়া হয়। পুরস্কার দেওয়া হয় ৬০ জনকে। এরমধ্যে প্রথম পুরস্কার ২৫ হাজার টাকা, দ্বিতীয় পুরস্কার ১৫ হাজার টাকা, তৃতীয় পুরস্কার ১০ হাজার টাকা এবং চতুর্থ পুরস্কার ৫ হাজার টাকা।
প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত তিনটি স্কুলকে এক লাখ করে তিন লাখ টাকা দেওয়া হয়।
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে বৈঠক করছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) একটি প্রতিনিধি দল। শনিবার সকাল ১০টার দিকে জাতীয় সংসদ ভবন এলাকায় ঐকমত্য কমিশনের কার্যালয়ে এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
এনসিপির প্রতিনিধি দলে থাকবেন—দলের যুগ্ম আহ্বায়ক সারোয়ার তুষার, জাবেদ রাসিন, খালেদ সাইফুল্লাহ ও যুগ্ম সদস্য সচিব জহিরুল ইসলাম মুসা।
বৈঠকে এনসিপির প্রতিনিধি দল জুলাই সনদের বাস্তবায়ন আদেশ, আইনি ভিত্তিসহ সনদের নানা বিষয়ে আলোচনা করবেন বলে জানা গেছে।
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, ক্ষমা প্রার্থনা কমপক্ষে তিনবার চেয়েছি। অধ্যাপক গোলাম আজম, মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী এবং আমিও চেয়েছি। শুধু এখন নয়, ৪৭ সাল থেকে জামায়াতে ইসলামী দ্বারা কেউ যদি কোনো কষ্ট পেয়ে থাকেন অথবা কারও কোনো ক্ষতি হয়ে থাকে আমি সব ব্যক্তি এবং সংগঠনের পক্ষে নিঃশর্তে আপনাদের কাছে ক্ষমা চাই।
যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে স্থানীয় সময় বুধবার সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় ক্ষমার বিষয়ে তিনি এসব কথা বলেন। প্রায় দুই ঘণ্টা যাবৎ স্থানীয় সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন ডা. শফিকুর রহমান।
তিনি বলেন, এ ক্ষমা গোটা জাতি হইলেও চাই, ব্যক্তি হইলেও চাই, কোনো অসুবিধা নাই। আমরা কেউ কখনো বলিনি—আমরা কেউ ভুলের ঊর্ধ্বে।
জামায়াত আমির বলেন, আমাদের ১০০টার মধ্যে ৯৯টা সিদ্ধান্ত সঠিক, একটা তো বেঠিক হতে পারে। সেই বেঠিক একটা সিদ্ধান্তের জন্য জাতির ক্ষতি হতে পারে। সে ক্ষেত্রে আমার কোনো সিদ্ধান্তের জন্য যদি জাতির ক্ষতি হয় তাহলে আমার মাফ চাইতে অসুবিধা কোথায়?
ফেব্রুয়ারিতে রোজার আগে নির্বাচন নিয়ে কোনো অনিশ্চয়তা নেই। জামায়াত ক্ষমতায় গেলে সাংবিধানিক অধিকার অনুযায়ী সংখ্যালঘুরা নির্বিঘ্নে থাকবে বলে উল্লেখ করেন ডা. শফিকুর রহমান।
মন্তব্য