রাজধানীর চন্দ্রিমা উদ্যানে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের সমাধিতে তার মরদেহ নেই বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
বিষয়টি বিএনপি নেতারা জানেন কি না, তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন তিনি।
রাজধানীর ২৩ বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউতে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে বৃহস্পতিবার দলটির ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ আয়োজিত শোক দিবসের আলোচনায় তিনি এসব কথা বলেন।
আয়োজনে গণভবন প্রান্ত থেকে ভিডিও কনফারেন্সে যুক্ত হন সরকারপ্রধান।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আজকে চন্দ্রিমা উদ্যানে জিয়ার কবরে গিয়ে যে মারামারি করল বিএনপি, তারা জানে না যে সেখানে জিয়ার কবর নাই, জিয়া নাই ওখানে, জিয়ার লাশ নাই? তারা তো ভালোই জানে। তাহলে এত নাটক করে কেন? খালেদা জিয়াও ভালোভাবে জানে।
‘খালেদা জিয়া বা তারেক জিয়া কি বলতে পারবে তারা তাদের (স্বামী ও) বাবার লাশ দেখেছে? গুলি খাওয়া লাশ তো দেখাই যায়। তারা কি দেখেছে কখনো বা কেউ কি কোনো ছবি দেখেছে কখনো? দেখেনি। কারণ ওখানে কোনো লাশ ছিল না। ওখানে একটা বাক্স আনা হয়েছিল। সেখানে ওই বাক্সের ফাঁক দিয়ে যারা দেখেছে, সেই এরশাদের মুখ থেকেই শোনা, কমব্যাট ড্রেস পড়া ছিল। জিয়াউর রহমান তখন প্রেসিডেন্ট। সে তখন কমব্যাট ড্রেস পড়ে না। এটা কি বিএনপির লোকরা জানে না?’
বিএনপির সমালোচনা করে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ‘তাদের মারামারি, ধস্তাধস্তি করার চরিত্র তো এখনও যায়নি। কিন্তু আমাদের স্বাধীনতার বিরোধী চক্র, দেশি ও আন্তর্জাতিক একটি সমর্থন তাদের সবসময় ছিল, এটাই সবচেয়ে দুর্ভাগ্যের।’
‘জিয়া ফিল্ডে যুদ্ধ করেছে এমন ইতিহাস নেই’
মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিলেও জিয়াউর রহমান সরাসরি ময়দানে যুদ্ধ করেছেন এমন ইতিহাস নেই বলে জানিয়েছেন সরকারপ্রধান।
তিনি বলেন, ‘যেহেতু ২৫ মার্চে পাকিস্তান সেনাবাহিনী যখন নিরস্ত্র বাঙালির ওপর আক্রমণ শুরু করে দেয় প্রথমে রাজারবাগ পুলিশ ফাঁড়ি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, পিলখানায় তখন ইপিআর হেডকোয়ার্টারে।
‘পূর্ব থেকে যেহেতু প্রস্তুতি ছিল, স্বাধীনতার যে আনুষ্ঠানিক ঘোষণাটা ওই ইপিআরের ওয়্যারলেসের মাধ্যমেই সেটা প্রচার করে দেয়া হয়। যখন তারা আক্রমণ শুরু করে তার পরবর্তীতে যে চারজন সেখানে ছিলেন, সুবেদার মেজর শওকত আলীসহ তারা কিন্তু পাকিস্তান হানাদার বাহিনীর কাছে ধরা পড়ে। দীর্ঘদিন অত্যাচার করে তাদের হত্যা করা হয়।’
মুক্তিযুদ্ধে জিয়ার ভূমিকা নিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘জিয়াউর রহমান সেই সোয়াত জাহাজ থেকেই অস্ত্র আনতে গিয়েছিলেন। ২৫ মার্চের ঘোষণার পরেও কিন্তু জিয়াউর রহমান পাকিস্তান হানাদার বাহিনীর একজন সৈনিক হিসেবেই কাজ করছিল। চট্টগ্রামে আমাদের নেতা-কর্মী যারা ব্যারিকেডে দিচ্ছিল, তার হাতে কিন্তু অনেকেই নিহত হয়েছে।
‘জাতির পিতার ঘোষণাটা ২৬ তারিখ দুপুরবেলা চট্টগ্রামের সাধারণ সম্পাদক হান্নান সাহেব প্রথম পাঠ করেন। এরপর একে একে আমাদের সেখানে যারা নেতৃবৃন্দ তারা সবাই পাঠ করেন। সে সময় নেতাদের মধ্যেও একটি কথা ছিল যে একজন সামরিক অফিসারকে দিয়ে যদি ঘোষণাটা পাঠ করানো যায়, তাহলে যে যুদ্ধ হয়েছে, সে যুদ্ধ যুদ্ধ মনে হবে। তখনই জিয়াউর রহমানকে সেখান থেকে ধরে নিয়ে আসা হয়।’
তিনি বলেন, ‘মেজর রফিক তার বইয়ে স্পষ্ট লিখেছেন। প্রথমে তাকে বলা হয়। কিন্তু তিনি তখন পাকিস্তান আর্মির সাথে যুদ্ধ করছেন এবং অ্যামবুশ করে বসে আছেন। তিনি বলছেন, আমি যদি সরে যাই তাহলে ওরা এটা দখল করে নেবে। জিয়াউর রহমানকে যখন ধরে আনা হলো কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র থেকে তাকে দিয়ে ঘোষণাটা পাঠ করানো হলো। সেভাবেই জিয়াউর রহমানের মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ।
‘এ কথাটা সত্যি যে জিয়াউর রহমান যে কোনো ফিল্ডে বা কোথাও যুদ্ধ করেছে এমন ইতিহাস শোনা যায় না। আমাদের অনেক মুক্তিযোদ্ধারা আহত হয়েছে; বিভিন্ন ফিল্ডে যুদ্ধ করেছে কিন্তু তার (জিয়া) কিন্তু এমন কোনো ইতিহাস নেই।’
‘জিয়াই ছিলেন মোশতাকের ক্ষমতার উৎস’
বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর ক্ষমতায় আসা খন্দকার মোশতাক জিয়াউর রহমানকে নিয়েই ষড়যন্ত্র করেছিলেন বলে মন্তব্য করেন সরকারপ্রধান।
তিনি বলেন, ‘জিয়াউর রহমানকেই পেয়েছিল খন্দকার মোশতাকরা দোসর হিসেবে। সেই ছিল তার মূল শক্তির উৎস। কারণ ক্ষমতা যদি এভাবে দখল করতে হয় আর হত্যাকাণ্ড চালাতে হয় তাহলে সামরিক বাহিনীর সহযোগিতা প্রয়োজন।
‘সেই মোশতাক-জিয়া মিলেই চক্রান্তটা করেছিল। মোশতাক, জিয়ার ওপর নির্ভর করে যে রাষ্ট্রপতি হয়েছিল আপনারা যদি একটু লক্ষ্য করেন সে কতদিন থাকতে পেরেছিল? থাকতে কিন্তু পারে নাই। মীরজাফরও পারে নাই। কারণ বেইমানদের ব্যবহার করে সবাই। তাদের কেউ বিশ্বাস করে না, রাখে না। জিয়াউর রহমানও সে কাণ্ডই করেছিল। মোশতাক কিন্তু তিন মাসও পূর্ণ করতে পারে নাই, তাকে বিদায় নিতে হয়েছিল। জেলখানায় যে হত্যাকাণ্ড হয়, সেটাও কিন্তু জিয়াউর রহমানের নির্দেশে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘৩২ নম্বরে রাসেলকে হত্যার উদ্দেশ্যটাই ছিল, খুনি রশিদ-ফারুকদের কথাই আছে, বঙ্গবন্ধুর রক্তের যেন কেউ না থাকে। এই ৩২ নম্বরেই কিন্তু আমি একটি বাসার দোতলায় ভাড়া থাকতাম। সেখানেও কিন্তু আর্মি গিয়েছিল। আমি যেহতু বিদেশে ছিলাম…আমার একটি ফ্রিজে কিন্তু গুলির দাগও ছিল। মাত্র ১৫ দিন আগেই তো আমরা দেশ ছাড়ি। তখন তো ভাবতেও পারিনি যে এভাবে এক দিনের মধ্যেই সব শেষ হয়ে যাবে।
‘কিন্তু ষড়যন্ত্র, চক্রান্ত যে হচ্ছে, এটা শোনা যেত। আব্বা তো সেটা বিশ্বাস করতেন না। তিনি তো বাংলাদেশের মানুষকে গভীরভাবে ভালোবাসতেন। তাকে অনেক দেশের রাষ্ট্রপ্রধান, সরকারপ্রধান এমনকি ইন্দিরা গান্ধী নিজেও বলেছেন। উনি বলেছেন ওরা আমার ছেলে; আমার সন্তানের মতো। ওরা আমাকে কেন মারবে? উনার একটা অন্ধ বিশ্বাস, এ দেশের মানুষের প্রতি ছিল যে, উনার গায়ে কেউ হাত দেবে না।’
সরকারপ্রধান বলেন, ‘মাত্র সাড়ে তিন বছর জাতির পিতা হাতে পেয়েছিলেন দেশ গড়ার। এই সাড়ে তিনটা বছরও কিন্তু তাকে সেভাবে সময় দেয়া হয়নি। যেদিন থেকে তিনি বাংলার মাটিতে পা রাখলেন তার পর থেকেই কিন্তু ষড়যন্ত্রের জাল বিস্তার করতে শুরু করল। বাংলাদেশের স্বাধীনতাকে ধ্বংস করা, চেতনাকে ধ্বংস করা, স্বাধীনতার আদর্শকে নস্যাৎ করা এটাই ছিল এদের লক্ষ্য।
‘কিন্তু দুর্ভাগ্যের বিষয় যে, আমাদের দলের ভেতরে আমার বাবার মন্ত্রিসভার সদস্য খন্দকার মোশতাকসহ যারা জড়িত ছিল, আর তাদেরই মূল শক্তি ছিল। সেনাবাহিনীতে সেনাপ্রধান হয়, কিন্তু উপ-সেনাপ্রধান বলে কেউ হয় না। তবে জেনারেল জিয়াউর রহমান…মুক্তিযোদ্ধা যারাই ছিল বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সবাইকেই অত্যন্ত স্নেহ করতেন।
‘কাজেই তার সংসারটা টিকিয়ে রাখতে তাকে কুমিল্লা ক্যান্টনমেন্টে সে কর্মরত ছিল। সেখান থেকে নিয়ে এসে ঢাকায় উপ-সেনাপ্রধান করে তাকে রেখেছিল। কিন্তু সে কখনো বাংলাদেশের অস্তিত্বে বিশ্বাস করত না, স্বাধীনতায় বিশ্বাস করত না।’
আওয়ামী লীগের প্রধান বলেন, ‘প্রচার পেয়েছে জিয়া নাকি গণতন্ত্র দিয়েছে। যে দেশে প্রতি রাতে কারফিউ থাকে সেটা আবার গণতন্ত্র হয় কীভাবে? ভোট চুরি থেকে শুরু করে সবকিছুই কিন্তু এই জিয়াউর রহমানই শুরু করেছে। এমনকি সংবিধান লঙ্ঘন করা, সেটাও জিয়াউর রহমান করেছে।
‘যা হোক আমাদের সৌভাগ্য যে হাইকোর্টের একটা রায় যে, জিয়ার ক্ষমতা দখল, এরশাদের ক্ষমতা দখল, মার্শাল ল’ দিয়ে যে ক্ষমতা দখল সেগুলোকে অবৈধ ঘোষণা করা হয়েছে।’
‘কেউ এগিয়ে আসেনি কেন?’
পঁচাত্তরের ১৫ আগস্ট হত্যার রাতে ফোন করেও বঙ্গবন্ধু বাইরে থেকে কোনো সহযোগিতা কেন পেলেন না তা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন তার জ্যেষ্ঠ কন্যা শেখ হাসিনা।
তিনি বলেন, ‘ঘাতকের দল এই হত্যাকাণ্ড করে বাংলাদেশকে ইসলামিক রিপাবলিক অব বাংলাদেশ ঘোষণা দিয়েছিল রেডিওতে প্রথম। বাংলাদেশ বেতার হয়ে যায় রেডিও বাংলাদেশ, পাকিস্তানি কায়দায়। এভাবে সব নামগুলি একসময় পরিবর্তন করে দেয়।
‘তবে তা ধরে রাখতে তারা পারেনি। কারণ এই অন্যায় কখনো আল্লাহও মেনে নেয়নি; বাংলাদেশের মানুষও মানেনি। তেব হ্যা সেদিন বাংলাদেশে এটা ঠিক যে এরকম একটি ঘটনার পর আমাদের দল, সমর্থক, মুক্তিযোদ্ধাদের যে ভূমিকা ছিলো তা হয়তো তারা করতে পারেনি।’
তিনি বলেন, ‘কিন্তু এটা আপনারা জানেন, যখনই বাড়ি আক্রমণ শুরু হয় প্রথমে সেরনিয়াবাত সাহেবের বাসায় বা শেখ মনির বাসায় এবং আমাদের বাসায় যখন গুলি শুরু হয়, বঙ্গবন্ধু কিন্তু সবাইকে ফোন করেছিলেন। আব্দুর রাজ্জাকের সাথে কথা হয়, তোফায়েল আহমেদের সাথে কথা হয়, সেনাপ্রধান সফিউল্লাহর সাথে কথা হয়।
‘সেনাবাহিনীরও যার যা ভূমিকা ছিল, তারাও কিন্তু সঠিকভাবে করে নাই। এর পেছনের রহস্যটা কী, সেটাই কথা।’
‘দেশে ফিরে চেনা মুখ পাইনি’
বঙ্গবন্ধুকে হত্যার মাত্র ১৫ দিন আগে জার্মানির উদ্দেশে রওনা হন বঙ্গবন্ধুর দুই কন্যা শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা। প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যে সেই স্মৃতিচারণ উঠে আসে। কথা বলতে গিয়ে একপর্যায়ে আবেগ আপ্লুত হয়ে পড়েন সরকারপ্রধান।
তিনি বলেন, ‘স্বাধীনতার ৫০ বছরে আওয়ামী লীগ আসার পরেও যতটুকু উন্নতি হয়েছে, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব যদি থাকতেন তাহলে ৪০ বছর আগেই বাংলাদেশ উন্নত দেশ হিসেবে বিশ্বে মর্যাদা পেত। বাংলাদেশের জনগণকে কিন্তু সেখান থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে।
‘জানি না, আল্লাহ হয়তো বাঁচিয়েও রেখেছিলেন। আমার তো বাবা, মা, ভাই সব হারিয়ে যেদিন বাংলার মাটিতে পা দিলাম… আমাকেও তো আসতে অনেক বাধা দিয়েছে। তারপরেও জোর করেই এসেছি। হ্যাঁ, আমি সেই চেনা মুখগুলো পাইনি। বনানীতে সারি সারি কবর পেলাম।’
পরিবার হারিয়ে প্রিয় সংগঠন আওয়ামী লীগ ও দেশের মানুষকেই আপনজন মনে করার কথা জানান তিনি।
প্রধানমন্ত্রী অশ্রুসজল চোখে বলেন, ‘পেয়েছি লাখো মানুষ, আর আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মী। তাদের ভালোবাসা, আস্থা, বিশ্বাস। এ জন্য আমি বলতে পারি আওয়ামী লীগটাই আমার পরিবার, বাংলাদেশটাই আমার পরিবার।
‘আমি সেইভাবেই বাংলাদেশের মানুষকে দেখি। যতটুকু কাজ করতে পারব মনে হয়, আমার আব্বা, আম্মা তারা নিশ্চয়ই দেখবেন, হয়তো তাদের আত্মাটা শান্তি পাবে। আমি সেই চিন্তা করেই সব কাজ করি। এ জন্য আমার কোনো মৃত্যু ভয়ও নেই, কোনো আকাঙ্ক্ষা বা চাওয়া-পাওয়া নেই।’
তিনি বলেন, ‘নিজের জন্য আমি কিছু করবই না, করতেও চাই না। আমি শুধু এটুকু চাই, যড়যন্ত্রকারীরা যে উদ্দেশ্য নিয়ে এ দেশ স্বাধীন করেছে, তাদের উদ্দেশ্য তো ছিল বাংলাদেশ ফেইলড রাষ্ট্র হোক। সেটাই করতে দেবো না।
‘যে নাম তারা মুছে ফেলেছিল ২১ বছর, আজকে সেটা আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত। এখন আর কেউ তা মুছতে পারবে না।’
আরও পড়ুন:
গত বছরের জুলাই-আগস্টের গণঅভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত গণহত্যার ঘটনায় মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে দায়ের করা মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আগামী সোমবার (১২ মে) তদন্ত রিপোর্ট দাখিল করবে ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা। শুক্রবার এক ফেসবুক পোস্টে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম এ তথ্য জানিয়েছেন।
তাজুল ইসলাম বলেন, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে জুলাই গণহত্যার তদন্ত রিপোর্ট আগামী সোমবার চিফ প্রসিকিউটর বরাবরে দাখিল করবে আশা করছি। তদন্ত রিপোর্ট দাখিল হওয়ার পর আনুষ্ঠানিক অভিযোগ, অর্থাৎ ‘ফরমাল চার্জ’ দাখিলের মাধ্যমে হাসিনার বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক বিচারকাজ শুরু হবে।
তিনি বলেন, ইতোমধ্যে চানখারপুল হত্যাকাণ্ডের দায়ে সিনিয়র পুলিশ অফিসারদের বিরুদ্ধে তদন্ত রিপোর্ট দাখিল করা হয়েছে। ওই হত্যাকাণ্ডের দায়ে আনুষ্ঠানিক বিচারের জন্য ফরমাল চার্জ চলতি সপ্তাহেই দাখিল করা হবে এবং এর মাধ্যমে জুলাই গণহত্যার আনুষ্ঠানিক বিচার শুরু হবে ইনশাআল্লাহ। এর আগে গত ১৮ ফেব্রুয়ারি জুলাই-আগস্টের গণহত্যার ঘটনায় মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে দায়ের করা মামলায় শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে তদন্ত ২০ এপ্রিলের মধ্যে শেষ করতে নির্দেশ দেন ট্রাইব্যুনাল।
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তুজা মজুমদারের নেতৃত্বে তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল এ আদেশ দেন। প্রসিকিউশনের সময় আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আদালত এ আদেশ দেন। ট্রাইব্যুনালে প্রসিকিউশনের পক্ষে শুনানি করেন অতিরিক্ত চিফ প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম। গত বছরের ১৭ ডিসেম্বর জুলাই-আগস্টের গণহত্যার ঘটনায় মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে দায়ের করা দুই মামলায় শেখ হাসিনা, ওবায়দুল কাদেরসহ ৪৬ জনের বিরুদ্ধে তদন্ত দুই মাসের মধ্যে শেষ করার নির্দেশ দেন ট্রাইব্যুনাল।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে নিরস্ত্র ছাত্র-জনতার ওপর গুলি, হত্যার নির্দেশদাতা ও পরিকল্পনাকারী হিসেবে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে বিচার চলছে। ছাত্র-জনতার আন্দোলন ঠেকাতে আওয়ামী লীগ সরকার নির্বিচারে হত্যা চালায়। প্রায় দেড় হাজার মানুষ প্রাণ হারায় এই আন্দোলনে। ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মধ্যে ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের ১৫ বছরের শাসনের অবসান হয়। এরপর শান্তিতে নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার দেশ পরিচালনার দায়িত্ব নিলে জুলাই-আগস্টের গণহত্যার বিচার করার সিদ্ধান্ত নেয়।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. আসিফ নজরুল বলেছেন, ‘রাজনৈতিক দলগুলো আওয়ামী লীগের নিষিদ্ধকরণ চাইলে বা বিচারিক আদালত এ সম্পর্কে কোনো পর্যবেক্ষণ বা রায় এলে অবশ্যই আইনানুগভাবে দ্রুত আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করা যাবে।’
শুক্রবার তার ভেরিফাইড ফেসবুকে আইন উপদেষ্টা বলেন, ‘আমার বিরুদ্ধে কিছু মানুষ জঘন্য মিথ্যাচার ও আক্রমণাত্মক বক্তব্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচার করছে। আমি আপনাদের সুস্পষ্টভাবে জানাতে চাই খুনের মামলার আসামি সাবেক রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের বিদেশ গমনে বাধা দেওয়ার দায়িত্ব পুলিশ ও গোয়েন্দা এজেন্সিগুলোর। যা কোনোভাবেই আমার আইন মন্ত্রণালয়ের এখতিয়ারভুক্ত বিষয় নয়।’
তিনি বলেন, ‘আমার মন্ত্রণালয়ের অধীনে আছেন নিম্নআদালতের বিচারকরা। আপনারা নিশ্চয়ই জানেন, আদালতের বিচারকদের দায়িত্ব বিমানবন্দর পাহারা দেওয়া না বা কারো চলাচলে বাধা দেওয়া না।’
ড. আসিফ নজরুল বলেন, ‘আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধকরণের সুযোগ রাখার লক্ষ্যে আইসিটি আইনে সংগঠনকে নিষিদ্ধ করার বিধান আইন মন্ত্রণালয়ের খসড়ায় ছিল। আইন উপদেষ্টা হিসেবে আমি নিজে এটা উপদেষ্টা পরিষদের সভায় উত্থাপন করেছি। আমার উত্থাপিত খসড়ার আমিই বিরোধিতা করব এটা কিভাবে সম্ভব? উপদেষ্টা পরিষদের সভায় কোন উপদেষ্টা কী ভূমিকা রেখেছেন এনিয়ে আমাকে, ছাত্র উপদেষ্টাদের বা অন্য কাউকে দোষারোপ করা থেকে বিরত থাকুন।’
তিনি বলেন, সেখানে যা সিদ্ধান্ত হয় তার দায় দায়িত্ব আমাদের প্রতিটি উপদেষ্টার। আমাদের মধ্যে আওয়ামী লীগের বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণের প্রশ্নে কোনো দ্বিমত নেই। তবে পদ্ধতি নিয়ে সবার নিজস্ব মত থাকতেই পারে। তিনি বলেন, ‘আমাদের এটা মনে রাখা প্রয়োজন যে, আইসিটি আইন চাইলেই আমরা কয়েকদিনের মধ্যে সংশোধন করতে পারবো। আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার জন্য সন্ত্রাস দমন আইনসহ অন্য আইনগুলোও আছে। কাজেই আইন কোনো সমস্যা না।’ আইন উপদেষ্টা বলেন, ‘রাজনৈতিক দলগুলো আওয়ামী লীগের নিষিদ্ধকরণ চাইলে বা বিচারিক আদালত এ সম্পর্কে কোনো পর্যবেক্ষণ বা রায় আসলে অবশ্যই আইনানুগভাবে দ্রুত আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করা যাবে। আমরা সেই প্রত্যাশায় আছি। ইনশাল্লাহ।’
ষড়যন্ত্র রুখে ঐক্যবদ্ধভাবে দেশ গঠনের আহ্বান জানিয়ে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, বাংলাদেশ কোনো ব্যক্তি বা দলের নয়। এই দেশ জনগণের। আমাদের সবার ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। শুক্রবার রাজধানীর খামারবাড়িতে ইস্টার পুনর্মিলনী অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে তিনি এসব কথা বলেন।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, যে প্রত্যাশা নিয়ে মুক্তিযুদ্ধ হয়েছিল, দেশ স্বাধীনের পর থেকে সেই প্রতিচ্ছবি আওয়ামী লীগের আমলে দেখা যায়নি। আওয়ামী লীগ সংবিধানকে নিজেদের দলীয় সংবিধানে পরিণত করেছিল। তাই সংবিধান সংস্কারের কোনো বিকল্প নেই।
তারেক রহমান বলেন, ৫ আগস্ট যেভাবে হাসিনা পালিয়ে গেছেন সেভাবেই পালিয়ে গেছেন আবদুল হামিদ। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার নাকি কিছুই জানে না! তাহলে তারা জানেন কী? তিনি বলেন, জনমনে প্রশ্ন উঠছে, সংস্কারের নামে একদিকে অন্তর্বর্তী সরকার যেমন পলাতক স্বৈরাচারের দোসরদের দেশত্যাগের সুযোগ করে দিচ্ছে, অন্যদিকে ফ্যাসিবাদবিরোধী দলগুলোর মধ্যে ফাটল ধরানোর চেষ্টা করছে, দোসরদের পুনর্বাসনের চেষ্টা করছে। কিন্তু এই দেশ কোনো ব্যক্তি বা দলের নয়, এই দেশটা জণগণের।
ফ্যাসিস্টরা দেশ ছেড়ে পালানোর পর দেশে গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার সুযোগ হয়েছে মন্তব্য করে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, আমাদের ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে, যাতে ভবিষ্যতে আর কেউ ষড়যন্ত্র করতে না পারে। আমাদের যে যার জায়গা থেকে ভূমিকা রেখে দেশকে এগিয়ে নিতে হবে।
রোমান ক্যাথলিক গির্জার নতুন পোপ নির্বাচিত হয়েছেন আমেরিকান কার্ডিনাল রবার্ট প্রভোস্ট। স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার (৮ মে) সন্ধ্যায় ভ্যাটিকানের কনক্লেভে কার্ডিনালদের সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোট পেয়েছেন তিনি।
নিজের ক্যারিয়ারে পেরুতে ধর্মপ্রচার করে বেড়িয়েছেন রবার্ট প্রভোস্ট। এছাড়া ভ্যাটিকানের প্রভাবশালী বিশপস অফিসেরও নেতৃত্ব দিয়েছেন তিনি। ক্যাথলিক গির্জার দুই হাজার বছরের ইতিহাসে এই প্রথম কোনো মার্কিন নাগরিক পোপ হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন।
৬৯ বছর বয়সী এই পোপ নতুন নাম নিয়েছেন লিও চতুর্দশ।
এরআগে ভ্যাটিকানের সিস্টিন চ্যাপেলের চিমন দিয়ে সাদা ধোঁয়া বের হওয়ায় সবাই জেনেছেন যে নতুন পোপ নির্বাচিত হয়েছেন। নতুন পোপকে স্বাগত জানাতে ভ্যাটিকান সিটিতে বিপুল মানুষের ভিড় জমেছে।
পোপ হওয়ার যোগ্য ১৩৩ কার্ডিনালকে নিয়ে গঠিত কলেজ অব কার্ডিনালস। কোনো ধরনের মনোযোগ নষ্ট হওয়া ছাড়াই যাতে প্রার্থনা ও ধ্যান করতে পারেন, পাশাপাশি পোপ নির্বাচনে ভোট দিতে পারেন, সে কারণে ভ্যাটিকানের ভেতরে কার্ডিনালদের আলাদা করে রাখা হয়েছে।
নতুন পোপ নির্বাচিত হওয়ার জন্য দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা প্রয়োজন হয়। ভোট হওয়ার পর একটি বিশেষ স্টোভে ব্যালট পুড়িয়ে দেওয়া হয়। কালো ধোঁয়া বের হওয়ার অর্থ হচ্ছে এখন পর্যন্ত সিদ্ধান্ত আসেনি, অর্থা পোপ নির্বাচিত হননি। আর সাদা ধোঁয়া বের হলে বুঝতে হবে নতুন পোপ নির্বাচিত হয়েছেন।
পোপ নির্বাচনের ক্ষেত্রে আনুষ্ঠানিক কোনো প্রার্থী নেই। তবে বেশ কয়েকজন কার্ডিনাল আছেন, যারা পোপ হওয়ার যোগ্যতা রাখেন।
আধুনিক সময়ে প্রথম দিনেই পোপ নির্বাচিত হওয়ার নজির নেই। তবে দ্বিতীয় দিনে নির্বাচনের সম্ভাবনা থাকে বেশি। ২০১৩ সালে পোপ ফ্রান্সিস এবং ২০০৫ সালে পোপ বেনেডিক্ট দ্বিতীয় দিনেই নির্বাচিত হয়েছিলেন।
নির্বাচনে এবার অংশ নিয়েছেন ৭০ দেশের ১৩৩ জন কার্ডিনাল, যা এ পর্যন্ত সর্বোচ্চ। এটি পোপ ফ্রান্সিসের অধীনে গির্জার বৈশ্বিক বিস্তারের ইঙ্গিত বহন করে।
আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে শাহবাগ অবরোধে যোগ দিয়েছে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, ছাত্র সংগঠন ও জুলাই অভ্যুত্থানকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠা বিভিন্ন প্লাটফর্মের নেতাকর্মীরা।
শুক্রবার পৌনে পাঁচটায় শুরু হওয়া এই অবরোধ এখনো চলছে। লোকে লোকারণ্য হয়ে পড়েছে শাহবাগ এরিয়া। সবার মুখে আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবি।
এই অবরোধে যোগ দিয়েছে জাতীয় নাগরিক পার্টি, জামায়াত ইসলাম, ছাত্র শিবির, হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ, খেলাফত মজলিস, ইসলামি আন্দোলন বাংলাদেশ, সদ্য আত্মপ্রকাশ করা রাজনৈতিক দল ইউনাইটেড পিপলস বাংলাদেশ, জুলাই ঐক্যসহ বিভিন্ন সংগঠন।
তবে এর মধ্যেও কিছুটা শূন্যতা অনুভব করছে জাতীয় নাগরিক পার্টির উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম।
সেই শূন্যতা বিএনপির। সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টায় দেওয়া এক ফেসবুক পোস্টে সারজিস আলম বলেন, বিএনপি এবং তার অঙ্গসংগঠন ব্যতীত সকল রাজনৈতিক দল এখন শাহবাগে।
তিনি লিখেন, বিএনপি আসলে জুলাইয়ের ঐক্য পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হবে। ঐক্যবদ্ধ শাহবাগ বিএনপির অপেক্ষায়। আজকের এই শাহবাগ ইতিহাসের অংশ এবং ভবিষ্যৎ রাজনীতির মানদণ্ড।
এর আগে গতকাল রাত দশটায় আওয়ামী লীগের বিচার নিশ্চিত ও রাজনৈতিক কার্যক্রম নিষিদ্ধের সুস্পষ্ট রোডম্যাপের দাবিতে প্রধান উপদেষ্টার বাসভবনের সামনে অবস্থান শুরু করে জাতীয় নাগরিক পার্টির দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ। তার সাথে সংহতি জানিয়ে সেখানে বিএনপি এবং বামপন্থী সংগঠন ছাড়া সেখানে প্রায় সব দল ও সংগঠন উপস্থিত হয়ে সংহতি জানায়।
এরপর হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালের পাশে মিন্টু রোড়ের ফোয়ারার সামনে মঞ্চ তৈরির কাজ শেষ হলে বেলা বারোটার দিকে যমুনার সামনে থেকে সবাই মঞ্চের সামনে চলে আসেন। জুমার নামাজের পর সেখানেই জমায়েত শুরু হয়। মঞ্চে উপস্থিত হয়ে ইসলাম ধর্মভিত্তিক বিভিন্ন রাজনেতিক দল বক্তব্য প্রদান করেন। সাড়ে চারটার দিকে সর্বশেষ বক্তব্য দেন হাসনাত আবদুল্লাহ। তিনি বলেন শেখ হাসিনা মোদির বেতনভুক্ত কর্মচারী হিসেবে কাজ করেছে। দেশের হিস্যা জনগণের হাতে তুলে দিতে চাই আমরা।
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের মতো একটি ভাইরাস নিয়ে আমরা এক মিনিটও বেঁচে থাকতে চাই না। আমাদের একজনেরও যদি শেষ রক্তবিন্দু থাকে তারপরও আমরা এটির জন্য লড়াই চালিয়ে যাবো।
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ করতে যদি এক বছরও লাগে আমরা এই স্থান ছাড়বো না। বাংলাদেশ উইথ আউট আওয়ামী লীগ যেদিন হবে সেদিনই বাংলাদেশের সম্মৃদ্ধির পথে অগ্রযাত্রা শুরু হবে।
এরপর তিনি শাহবাগ অবরোধের ঘোষণা দেন। বলেন, প্রধান উপদেষ্টার কর্ণকুহরে আমাদের দাবি পৌঁছছে না। আমরা এখন শাহবাগ অবরোধ করবো। এরপর সেখানেই চূড়ান্ত ফয়সালা হবে।
হাসনাতের এই ঘোষণার পর মিন্টু রোড়ের সামনে থেকে শাহবাগের উদ্দেশ্যে রওনা দেন। বেলা পৌনে পাঁচটায় শুরু হওয়া এই অবরোধ ছয়টায় এই প্রতিবেদন লেখা অবস্থায় চলছে। এতে আশেপাশের সড়কে যান চলাচল স্থবির হয়ে পড়েছে। তবে পুলিশ ভিন্ন রাস্তায় এসব যানকে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছেন।
ভারত এবং পাকিস্তানের মধ্যে বিদ্যমান পরিস্থিতিতে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স পাকিস্তানের আকাশসীমা পরিহার করে ফ্লাইট পরিচালনা করছে। এমতাবস্থায় বিমানের টরেন্টো, রোম এবং লন্ডনগামী ফ্লাইট সমূহের সময়সূচিতে পরিবর্তন করা হয়েছে।
আজ শুক্রবার থেকে আগামী ৩১ মে পর্যন্ত সময়ে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স এর টরেন্টো, লন্ডন এবং রোম ফ্লাইট সমূহের ফ্লাইটের পরিবর্তিত সময়সূচি জানানো হয়েছে। এর মধ্যে ঢাকা-টরেন্টো ফ্লাইট বিজি ৩০৫ বা ৩০৬ ঢাকা থেকে প্রস্থান ৩ টা ৪৫ মিনিটের পরিবর্তে ৩ টা (৪৫ মিনিট অগ্রগামী করা হয়েছে)। তবে টরেন্টো থেকে প্রস্থান অপরিবর্তিত রাখা হয়েছে।
ঢাকা লন্ডন ফ্লাইট বিজি ২০১ বা ২০২ ঢাকা থেকে প্রস্থান ৭ টা ৪০ মিনিটের পরিবর্তে ৭ টা (৪০ মিনিট অগ্রগামী করা হয়েছে) এবং লন্ডন থেকে প্রস্থান অপরিবর্তিত রয়েছে।
শুধু বৃহস্পতিবারের জন্য ঢাকা-লন্ডন, ঢাকা থেকে প্রস্থান ৮ টা ৫০ মিনিটের পরিবর্তে ৮ টা ১০ মিনিটে (৪০ মিনিট অগ্রগামী করা হয়েছে)।
এদিকে ঢাকা-রোম ফ্লাইট বিজি ৩৫৫ বা ৩৫৬ ঢাকা থেকে প্রস্থান ১১ টা ৩০ মিনিটের পরিবর্তে ১০ টা ৪৫ মিনিট এবং রোম থেকে প্রস্থান অপরিবর্তিত রয়েছে।
যাত্রীদের বিদ্যমান পরিস্থিতিতে পরিবর্তিত সময় অনুসারে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স এর চেক-ইন কাউন্টারে রিপোর্ট করার জন্য অনুরোধ জানানো যাচ্ছে। যাত্রীদের এই সাময়িক অসুবিধার জন্য বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স আন্তরিক ভাবে দুঃখ প্রকাশ করছে।
বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীতে কর্মরত সেনাবাহিনীর ক্যাপ্টেন ও তদূর্ধ্ব সমপদমর্যাদার কমিশন্ড প্রাপ্ত কর্মকর্তাদের (কোস্টগার্ড ও বিজিবি-তে প্রেষণে নিয়োজিত সমপদমর্যাদার কর্মকর্তাসহ) বিশেষ নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের ক্ষমতা আরও দুই মাস বাড়িয়েছে সরকার।
আজ বৃহস্পতিবার জন প্রশাসন মন্ত্রণালয়ের প্রেষন-২ শাখার সিনিয়র সহকারী সচিব জেতী প্রু স্বাক্ষরিত এক প্রজ্ঞাপনে এ সিদ্ধান্তের কথা জানানো হয়। নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ১৪ মে থেকে পরবর্তী ৬০ দিন পর্যন্ত এ সিদ্ধান্ত বলবৎ থাকবে।
সমগ্র বাংলাদেশে ফৌজদারি কার্যবিধি ১৮৯৮ এর ধারা ৬৪, ৬৫, ৮৩, ৮৪, ৮৬, ৯৫ (২), ১০০, ১০৫, ১০৭, ১০৯, ১১০, ১২৬, ১২৭, ১২৮, ১৩০, ১৩৩ ও ১৪২ ধারার অধীন অপরাধগুলো আমলে নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে পারবেন বিশেষ নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের ক্ষমতাপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা।
উল্লেখ্য, ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর উদ্ভূত আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিতে গত ১৭ সেপ্টেম্বর সশস্ত্র বাহিনীকে (সেনা, নৌ ও বিমানবাহিনী) বিশেষ নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের ক্ষমতা দেওয়া হয়। এর পর থেকে এই মেয়াদ দুই মাস করে বাড়াচ্ছে সরকার।
মন্তব্য