গিনেস বুক অব ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসে নাম লেখাতে আর ছিল কেবল দেড় মাসের অপেক্ষা। এরপরেই হয়তো বিশ্বের সবচেয়ে খর্বাকৃতির গরু হতে পারত রানি। এর আগে হঠাৎ মৃত্যু হয় প্রাণীটির।
সাভারের এই আলোচিত গরুর মৃত্যুর খবর গণমাধ্যমকর্মীরা সরাসরি পান উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তার কাছ থেকে। তবে শুরুর দিকে এই তথ্য অস্বীকার করেন রানির মালিক। পরে বিষয়টি স্বীকার করে ফেসবুকে পোস্ট দেন।
সংবাদকর্মীদের প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা জানিয়েছেন, রানি আগে থেকেই অসুস্থ ছিল। তাকে শেষ সময়ে চিকিৎসার জন্য আনা হয়।
এসব খবর গণমাধ্যমে প্রকাশের পর রানির মৃত্যু নিয়ে নানা প্রশ্ন তোলেন এলাকার লোকজন। ফেসবুকেও অনেকে এ নিয়ে পোস্ট দেন। তাদের ধারণা, গিনেসে নাম লেখাতে খামারমালিক মরিয়া হওয়ায় রানির অসুস্থতা এমনকি মৃত্যুর বিষয়টিও ধামাচাপা দিতে চেয়েছিলেন।
রানির মৃত্যুর দুই দিন আগে তার খোঁজ নিতে আশুলিয়ার কুরগাঁও এলাকার শিকড় অ্যাগ্রো ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড নামের ওই খামারে যান নিউজবাংলার প্রতিবেদক। তখন তাকে খামারে ঢুকতে দেয়া হয়নি। দেখতে দেয়া হয়নি রানিকে।
কারণ জানতে চাইলে খামারের একজন বলেন, স্টাফদের অসুস্থতার কারণে মালিকের নির্দেশে সেখানে প্রবেশ একেবারেই বন্ধ রাখা হয়েছে। এ বিষয়ে জানতে সেদিনই ফোন দেয়া হয় খামারের ব্যবস্থাপনা পরিচালক কাজী মো. আবু সুফিয়ানকে। তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, তাদের নিজস্ব প্রাণিচিকিৎসক নিয়মিত রানিকে দেখতে আসেন। রানি সুস্থ আছে।
এর দুই দিন পর বৃহস্পতিবার সাভার উপজেলার উপসহকারী প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা আব্দুল মোতালিব নিউজবাংলাকে নিশ্চিত করেন, রানি মারা গেছে। মুমূর্ষু অবস্থায় গরুটিকে তার কাছে আনা হয়। তাই তাকে বাঁচানো যায়নি।
রানির অসুস্থতা ও মৃত্যুর কারণ সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে মঙ্গলবার খামার এলাকায় যান নিউজবাংলার প্রতিবেদক, কথা বলেন আশপাশের লোকজনের সঙ্গে। তারা জানান, আগে রানিকে খামারের যে অংশে রাখা হতো, সেটি বাইরে থেকেই দেখা যেত। তবে, বেশ কিছুদিন ধরে রানিকে সেখান থেকে সরিয়ে ভেতরে নিয়ে যাওয়া হয়। খামারে দর্শনার্থী ও গণমাধ্যমকর্মীদের প্রবেশও বন্ধ করে দেয়া হয়।
ওই খামারের পাশেই বাড়ি লোকমান হোসেনের। স্থানীয় সাংবাদিকদের তিনিই রানির বিষয়ে খোঁজখবর দিতেন। তার দাবি, গত বৃহস্পতিবার তিনিই প্রথম জানতে পেরেছিলেন যে রানি মারা গেছে।
নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ‘মারা যাওয়ার আগে রানিরে আমি খামারে দেখি নাই। করোনার কারণে ওনারা আমাদের ঢুকতে দিত না লোকজন অনেক বেশি হয় দেইখা। এই কারণে আমিও যাইতাম না। এলাকার লোকজন প্রাচীরের ওপর দিয়া রানিরে দেখার চেষ্টা করত।
‘বৃহস্পতিবার দুপুরে সাভারের সরকারি পশু হাসপাতালের একজন পরিচিত লোক আমারে ফোন করে জানাল, ভাই পাঁচ মিনিট আগেই রানি মারা গেল। বলছে, আমার চোক্ষের সামনে মারা গেছে। পরে আমি সাংবাদিকদের ফোন দিয়া জানাইছি।’
পশু চিকৎসক মো. আতিকুজ্জামান ওই খামারে গিয়ে নিয়মিত রানিকে দেখতেন। নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ‘মারা যাওয়ার দুই-তিন দিন আগেও আমি খামারে গিয়ে রানিকে দেখে এসেছিলাম। তখন স্বাভাবিক ছিল। কোনো সমস্যা ছিল না।
‘ওইদিন (বৃহস্পতিবার) সকাল ৯টার দিকে হঠাৎ করেই আমাকে ফোন দিছে। বলছে যে, এই রকম পেট ফুলে গেছে। তখন আমি বলছি, আমি উপজেলা পশু হাসপাতালে আছি পাঠায় দেন।’
মৃত্যুর কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমি তাদের পার্সোনাল ডাক্তার না। আমি আরেকটা কোম্পানিতে (এসআই গোদরেজ) জব করি। তবে ওখানে মাঝে মধ্যেই যাওয়া হয়। আমার মনে হয়, পেটে অতিরিক্ত পরিমাণ গ্যাস জমে গিয়েছিল। গ্যাস জমে পেটটা ফুলে গিয়েছিল।
‘গ্যাস তো অনেক কারণেই জমতে পারে। অনেক সময় দেখা যায় যে, দানাদার খাবার গুঁড়া, ভুসি এগুলা খাওয়াইলে পেটে গ্যাস জমে যায়। তা ছাড়া রানি যেহেতু বামন টাইপ, তাই ইমিউনিটিও অনেক কম ছিল। পরে আমরা হাসপাতালে অনেক চেষ্টা করেছি রিকভার করার জন্য। কিন্তু রিকভার করতে পারি নাই।’
উপসহকারী প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা আব্দুল মোতালিব বলেন, ‘গরুটা দুই দিন ধরে অসুস্থ ছিল। এটার শরীরে অ্যান্টিবডি তেমন নাই। ওরা হয়তো পচা-বাসি খাবার খাওয়াইছে। আবার ফিডও খাওয়াইছে মনে হয়। ওরাও বলছে, ফিড খাওয়াইছে।
‘দানাদার খাবার বেশি খাওয়াইলে অনেক সময় পেট ফুলে যেতে পারে, গ্যাস হতে পারে। যার কারণে ফুড পয়জনিং হয়ে মারা গেছে। গরুটা মুমূর্ষু অবস্থায় আমাদের কাছে নিয়ে আসছে। আনার পরে আমরা যথার্থ চিকিৎসা যা দেয়ার দিয়েছি। কিন্তু চিকিৎসায় কোনো উন্নতি হয় নাই। তারপরে গরুটা মারা গেছে।’
এ ধরণের খর্বাকৃতি স্বল্প ইমিউনিটির গরুর যত্ন কেমন হওয়া উচিত, রানিকে সেভাবে রাখা হয়েছিল কি না- তা জানতে যোগাযোগ করা হয় উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা সাজেদুল ইসলামের সঙ্গে।
নিউজবাংলাকে তিনি জানান, এ ধরনের গরু যেহেতু স্বাভাবিক না, সেহেতু এগুলোর যত্ন-আত্তিও অন্যসব গরুর মতো নেয়ার সুযোগ নেই। এমনকি এ ধরনের গরুকে অন্যগুলোর চেয়ে আলাদা জায়গাতেই রাখা দরকার।
সাজেদুল বলেন, ‘আমি প্রথম যখন রানিকে দেখতে সেখানে যাই, তখনই তাদের (খামার কর্তৃপক্ষ) বলেছিলাম এর যত্ন নিতে হবে বিশেষভাবে। তাদের জানিয়েছিলাম, স্বাভাবিক গরুকে যে পরিমাণ খাবার দেয়া হয়, রানিকে সে পরিমাণ দেয়া যাবে না। তার ওজন বুঝে পরিমিত খাবার দিতে হবে। যেহেতু এটি আকারে ছোট, তাই অন্য গরুর থেকে এটিকে আলাদা করে রাখতে হবে।’
রানির যত্নে কোনো ত্রুটি ছিল কি না, জানতে চাইলে সাজেদুল বলেন, ‘এটি আমি বলতে পারব না। রানির বিষয়ে বিভিন্ন সময় খামার কর্তৃপক্ষ আমাদের কাছে ফোন করে পরামর্শ নিতেন। রানিকে শেষ সময়ে যখন নিয়ে আসে, তখন পরীক্ষা করে বোঝা গেছে যে এটি অন্তত দুই দিন ধরে অসুস্থ।
‘যখন রানি অসুস্থ হয়, তখনই আমাদের খবর দেয়া উচিত ছিল। তাহলে সময়মতো যথাযথ চিকিৎসা দিলে হয়তো রানিকে বাঁচানো যেত।’
সাজেদুল মনে করেন, যে গরু নিয়ে দেশে-বিদেশে এত চর্চা হচ্ছে, তার রক্ষণাবেক্ষণের বিষয়ে খামার কর্তৃপক্ষের আরও সচেতন হওয়া প্রয়োজন ছিল।
রানির অসুস্থতার খবর কেন আগে জানানো হলো না, সেই প্রশ্নও তোলেন এই চিকিৎসক।
রানির মৃত্যুর পর একটি বেসরকারি টেলিভিশনের জ্যেষ্ঠ রিপোর্টার জাহিদুর রহমান ফেসবুকে লেখেন, ‘আমরা আসলে কেমন? দেখেন একটা খর্বাকৃতির গরুর জন্য আমাদের কতই না উচ্ছ্বাস, উৎসাহ! গিনেস বুক অব ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসে নাম ওঠানো নিয়ে কথা! সেই খর্বাকৃতির গরুটা অসুস্থতা নিয়ে আজ মারা গেল। যেতেই পারে। জন্ম-মৃত্যু যেখানে সৃষ্টিকর্তার হাতে।
‘খামারের মালিক শিকড় অ্যাগ্রো ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক কাজী মো. আবু সুফিয়ানকে ফোন দিলাম ঘটনার সত্যতা জানার জন্য। তিনি বেমালুম অস্বীকার করলেন। বললেন, তার “রানি” মরেনি। বোঝেন অবস্থা! এই গরুটি তো আর কোটি টাকার ব্যাংক লোন নিয়ে কেনা নয়। তো সেই গরুর মৃত্যুর খবর তিনি কেন অস্বীকার করছেন? কারণ একটাই। তার আকাঙ্ক্ষা, এই খবর কোনোমতে চেপে রাখলে দেড় মাস পর গিনেস বুক অব ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসে তাদের নাম উঠবে।’
এসব বিষয়ে কথা বলতে রাজি হননি খামারের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবু সুফিয়ান। তবে নিজের প্রতিক্রিয়া নিউজবাংলার প্রতিবেদককে ইনবক্স করেন।
তিনি বলেন, ‘রানিকে আবিষ্কারের পর থেকেই সব প্রিন্ট এবং ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিক বন্ধুগণ, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের প্রশাসন, সংশ্লিষ্ট প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সব কর্মকর্তা, চারিগ্রাম এলাকার সর্বস্তরের জনগণের সার্বিক সহযোগিতায় বিশ্বব্যাপী পরিচিতি পায় রানি। অনেক শৌখিন ক্রেতা উচ্চমূল্যে রানিকে কিনেও নিতে চান।
‘কিন্তু আমাদের ইচ্ছে ছিল বাংলাদেশের হয়ে গিনেস বুকে আগে ওর নামটা লেখানো। তারপর বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারকে শিকড় অ্যাগ্রোর পক্ষ থেকে উপহার দেয়া। এ নিয়ে সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে আমরা আবেদনও করে রেখেছিলাম… রানি তো রানি-ই। পৃথিবীর একমাত্র ইউনিক পিস। স্বাভাবিকভাবে সেলিব্রিটি হবার পর রানির নিরাপত্তার কারণে ওর চলাফেরা আমাদের সীমিত করতে হয়। বৃহস্পতিবার বিকেলে বর্তমান পৃথিবীতে সবচেয়ে ছোট গরু আমাদের রানি মারা গেল।’
তিনি জানান, রানিকে ওই রাতেই খামারে মাটিচাপা দেয়া হয়।
রানির খবর গত ৫ জুলাই গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়। এরপরই দেশব্যাপী জনপ্রিয় হয় ২০ ইঞ্চির এই গরুটি। দুই বছর বয়সী রানিকে নিয়ে সংবাদ প্রকাশ করে এএফপি, বিবিসি, অস্ট্রেলিয়ার এবিসি, ফ্রান্সের ফ্রান্স টোয়েন্টিফোর, সংযুক্ত আরব আমিরাতের গালফ নিউজসহ অনেক সংবাদমাধ্যম।
সে সময় বক্সার ভুট্টি জাতের এই গরুকে কিনতে আগ্রহ দেখান শৌখিন ক্রেতা ও খামারমালিকরা। এর জন্য সর্বোচ্চ ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত দিতেও রাজি ছিলেন কেউ কেউ। তবে খামার কর্তৃপক্ষ গিনেস বুকে নাম ওঠার আগে রানিকে হাতছাড়া করতে নারাজ ছিলেন সে সময়।
শেষমেশ চিরতরেই হাতছাড়া হয়ে গেল রানি।
আরও পড়ুন:নাটোরের সিংড়া উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীকে অপহরণ ও নির্যাতনের অভিযোগ ওঠার পর চেয়ারম্যান প্রার্থী ও উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক লুৎফুল হাবীব রুবেলকে কারণ দর্শোনোর নোটিশ (শোকজ) দিয়েছে সিংড়া উপজেলা আওয়ামী লীগ।
শুক্রবার দুপুরে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ওহিদুর রহমান ও সাধারণ সম্পাদক মো. জান্নাতুল ফেরদৌস স্বাক্ষরিত চিঠিতে কারণ দর্শানোর নোটিশ ইস্যু করা হয়।
নোটিশে বলা হয়, ‘গত ১৫ এপ্রিল নাটোর জেলা নির্বাচন কমিশন অফিসের সামনে আসন্ন উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী দেলোয়ার হোসেন পাশার মনোনয়নপত্র জমাদানে বাধা প্রদান, মারপিট ও অপহরণের ঘটনা যা বিভিন্ন মিডিয়ায় প্রচারিত হয় এবং উক্ত ঘটনায় দায়েরকৃত মামলার আসামি সুমনের ১৬৪ ধারায় জবানবন্দিতে আপনার সম্পৃক্ততা পাওয়া যায়, যা দলীয় আচরণবিধি পরিপন্থির সামিল।
‘এমতাবস্থায় কেন আপনার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে না, তার জবাব আগামী ৩ দিনের মধ্যে লিখিতভাবে জানানোর জন্য নির্দেশ প্রদান করা হলো।’
ওই সময়ের মধ্যে জবাব না দিলে তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে নোটিশে উল্লেখ করা হয়।
শোকজের বিষয়টি নিশ্চিত করে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শরিফুল ইসলাম রমজান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘এ ঘটনায় দলীয় তদন্ত সম্পন্ন হয়েছে। দলের সিদ্ধান্ত অনুযায়ীই তাকে শোকজ করা হয়েছে। শোকজের জবাবের প্রেক্ষিতে তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
আসন্ন উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের প্রথম ধাপের মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ দিন সোমবার বিকেলে সিংড়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান প্রার্থী দেলোয়ার হোসেন পাশা অনলাইনে আবেদনের পর জেলা নির্বাচন কার্যালয়ে মনোনয়নপত্রের প্রতিলিপি জমা দিতে আসেন। সেখানে আগে থেকে ওঁৎ পেতে থাকা দুর্বৃত্তরা তাকে মারধর করে কালো মাইক্রোবাসে তুলে নিয়ে যায়। পরে তাকে আবারও বেধড়ক মারধর করে বাড়ির সামনে ফেলে যায়। সেখান থেকে পরিবারের সদস্যরা তাকে সদর হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে স্থানান্তরের পরামর্শ দেন।
এ ঘটনায় দেলোয়ার হোসেনের পরিবার লুৎফুল হাবীব রুবেল ও তার সমর্থকদের দায়ী করে আসছে। ইতোমধ্যে তাদের করা মামলায় গ্রেপ্তারকৃত সুমন নামের এক আসামি আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন যে, লুৎফুল হাবীব রুবেলের পক্ষ নিয়েই সুমনসহ অন্য আসামিরা দেলোয়ার হোসেন পাশাকে অপহরণ ও মারধর করেছেন।
এ ঘটনায় জড়িত থাকার প্রমাণ মেলায় রুবেলকে শোকজ করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।
লুৎফুল হাবীব রুবেল উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও শেরকোল ইউনিয়ন পরিষদের সদ্য পদত্যাগ করা চেয়ারম্যান। ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলকের সঙ্গে আত্মীয়তার সম্পর্ক রয়েছে তার। তিনি প্রতিমন্ত্রীর শ্যালক।
আরও পড়ুন:জমিজমা-সংক্রান্ত বিরোধের জেরে পাবনার ঈশ্বরদী উপজেলায় দুই গ্রুপের সংঘর্ষে খাইরুল ইসলাম নামের এক ব্যক্তি নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় আরও অন্তত ১২ জন আহত হয়েছেন, যাদের বেশ কয়েকজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক।
শুক্রবার বিকেলে উপজেলার সাহাপুর ইউনিয়নের চরগড়গড়ী আলহাজ মোড় এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
নিহত ৪০ বছর বয়সী খাইরুল ইসলাম চরগড়গড়ী আলহাজ মোড় পশ্চিমপাড়ার মৃত নসিম উদ্দিন প্রামাণিকের ছেলে।
আহতদের মধ্যে কয়েক জনের নাম জানা গেছে। তারা হলেন, ৫০ বছর বয়সী সাজু হুদী, জামাত ফকির ও নুর বেগম, ৫৫ বছর বয়সী মানু প্রামানিক, ৬০ বছর বয়সী মোসলেম উদ্দিন, ৩৫ বছর বয়সী খোকন প্রামাণিক, জিল্লুর, ওলিউর রহমান, মজিদ, ইছাই প্রামানিক ও মো. মিঠুন এবং ৩০ বছর বয়সী নাসিরউদ্দিন।
স্থানীয়দের বরাত দিয়ে পুলিশ জানায়, কয়েকদিন আগে জমিজমা-সংক্রান্ত বিরোধের জেরে দুই গ্রুপের লোকজনদের মধ্যে কথাকাটাকাটি হয়। এ নিয়ে গত দুই দিনে দুই গ্রুপের মধ্যে ছোটোখাটো মারামারির ঘটনাও ঘটে। এইসব ঘটনার জের ধরে শুক্রবার বিকেল ৩টার দিকে তারা ফের সংঘর্ষে জড়ায়।
সংঘর্ষ চলাকালে ঘটনাস্থলেই খাইরুল নিহত হন। আর আহতদের উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠান স্থানীয়রা। তাদদের মধ্যে অন্তত ১০ জনের অবস্থা গুরুতর হওয়ায় তাদের রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
বিষয়টি নিশ্চিত করে ঈশ্বরদী থানার ওসি (তদন্ত) মনিরুল ইসলাম বলেন, ‘দুই গ্রুপের সংঘর্ষের ঘটনায় একজন মারা গেছেন। আমরা ঘটনাস্থলে রয়েছি। এ বিষয়ে পরে বিস্তারিত বলতে পারব।’
ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়ায় টাকা না পেয়ে আব্দুল কাদের নামে এক বৃদ্ধকে ছুরিকাঘাতে হত্যার অভিযোগ উঠেছে তারই ছেলের বিরুদ্ধে। ঘটনার পর পলাতক রয়েছে আরিফ হোসেন নামের ওই যুবক।
উপজেলার ফুলবাড়িয়া ইউনিয়নের আন্ধারিয়া পাড়া গ্রামে বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে এ ঘটনা ঘটে।
বিষয়টি নিউজবাংলাকে নিশ্চিত করেছেন ফুলবাড়িয়া থানার ওসি মো. রাশেদুজ্জামান।
তিনি বলেন, ‘টাকার জন্য প্রায়ই বাবাকে চাপ দিত ২০ বছর বয়সী আরিফ। সম্প্রতি বাবার কাছ থেকে ১৫ হাজার টাকা নিয়ে মোবাইল কেনে সে। বৃহস্পতিবার রাত ৯টার দিকে আবারও ১০ হাজার টাকা চাইলে তা দিতে অস্বীকৃতি জানান আব্দুল কাদের। এতে আরিফ ক্ষিপ্ত হয়ে বাড়িঘর ভাঙচুর করার হুমকি দেয়। এমতাবস্থায় রাত সাড়ে ১০টার দিকে আব্দুল কাদের পাশে বড় ছেলের বাড়িতে যাওয়ার উদ্যোগ নিলে পেছন থেকে বাবার পেটে ও পিঠে ছুরিকাঘাত করে পালিয়ে যায় আরিফ। এ সময় স্থানীয়রা সঙ্গে সঙ্গে তাকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।’
ওসি বলেন, ‘এ ঘটনায় থানায় মামলা হয়েছে। ঘটনার পর থেকে আরিফ পলাতক রয়েছে। তাকে গ্রেপ্তার করতে চেষ্টা চলছে।’
চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড উপজেলার ভাটিয়ারি এলাকায় পৃথক ঘটনায় ট্রেনে কাটা পড়ে দুজন নিহত হয়েছেন।
শুক্রবার ভোর ৫টা ও বিকেল সাড়ে চারটার দিকে ভাটিয়ারী রেলওয়ে স্টেশন সংলগ্ন এলাকায় এ ঘটনাগুলো ঘটে।
বিষয়টি নিশ্চিত করে রেলওয়ে পুলিশ জানিয়েছে, মরদেহদুটি উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে।
স্থানীয়দের বরাতে রেলওয়ে পুলিশ জানায়, এদিন ভোরে ভাটিয়ারি এলাকায় চট্টগ্রাম অভিমুখী তুর্ণা নিশিতা এক্সপ্রেসের নিচে কাটা পড়ে মারা যান ভাটিয়ারী ইউনিয়নের জাহানাবাদ গ্রামের বিপ্লব দাশ নামের ২৩ বছর বয়সী এক যুবক।
পরে বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে ঢাকাগামী কক্সবাজার এক্সপ্রেসের নিচে কাটা পড়েন স্থানীয় ভাটিয়ারী বাংলাদেশ মিলিটারি অ্যাকাডেমির সিভিল স্টাফ ২৪ বছর বয়সী মো. আসিফ উদ্দিন।
দুটি ঘটনার পরই মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে।
এ বিষয়ে ফৌজদারহাট রেলওয়ে পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ এসআই মো. ফারুক হোসেন বলেন, ‘শুক্রবার সকালে ট্রেনে কাটা পড়ে নিহত হওয়া বিপ্লব মানসিক সমস্যাগ্রস্ত ছিলেন বলে জানিয়েছেন তার পরিবারের সদস্যরা।’
গাইবান্ধা জেলা কারাগারে নারী হাজতিকে হাত-পা বেঁধে নির্যাতনের অভিযোগের পর প্রধান অভিযুক্ত কারাগারের প্রধান কারারক্ষী আশরাফুল ইসলামসহ দুই কারারক্ষীকে বদলি করা হয়েছে।
শুক্রবার দুপুরে তাদের বদলির বিষয়টি নিউজবাংলাকে নিশ্চিত করেছেন গাইবান্ধা জেলা কারাগারের জেল সুপার জাভেদ মেহেদী। বৃহস্পতিবার রাতে তাদের বদলি করা হয় বলে জানান তিনি।
বদলি হওয়া অপর কারারক্ষীর নাম সাবানা খাতুন। তাদের মধ্যে প্রধান কারারক্ষী আশরাফুল ইসলামকে দিনাজপুর কারাগার এবং সাবানা খাতুনকে ঠাঁকুরগাও কারাগারে বদলি করা হয়েছে।
এর আগে গাইবান্ধা জেলা কারাগারের ভেতর আশরাফুল ইসলাম ও মহিলা কয়েদি (রাইটার) মেঘলা খাতুনের মধ্যে চলমান অবৈধ কার্যকলাপ দেখে ফেলায় বিষয়টি জানাজানির ভয়ে নারী হাজতি সীমাকে অমানুষিক নির্যাতনের অভিযোগ আনেন ভুক্তভোগীর মা করিমন নেছা।
লোমহর্ষক নির্যাতনের বর্ণনা তুলে ধরে হাজতি সীমার উন্নত চিকিৎসা ও নির্যাতনকারীদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নিতে গাইবান্ধার জেলা প্রশাসক বরাবর লিখিত অভিযোগও দেন করিমন নেছা।
ওই অভিযোগপত্রে গাইবান্ধা জেলা কারাগারের প্রধান কারারক্ষী (সুবেদার) আশরাফুল ইসলাম, নারী কারারক্ষী সাবানা খাতুন ও তহমিনা, কয়েদি মেঘলা খাতুন, রেহেনা ও আলেফা, সিআইডি আনিছ ও হাবিলদার মোস্তফাকে অভিযুক্ত করা হয়।
মঙ্গলবার (১৬ এপ্রিল) জেলা প্রশাসককে দেয়া অভিযোগপত্রে উল্লেখ করা হয়, হাজতি মোর্শেদা খাতুন সীমা একটি মামলায় (হাজতি নম্বর-৫০৮) প্রায় ৫ বছর ধরে গাইবান্ধা জেলা কারাগারে বন্দি। কিছুদিন আগে কারাগারে কর্মরত সুবেদার আশরাফুল ইসলাম ও মহিলা কয়েদি (রাইটার) মেঘলা খাতুনের মধ্যে চলমান অবৈধ কার্যকলাপ দেখে ফেলেন সীমা।
বিষয়টি জানতে পেরে সুবেদার আশরাফুল ও মহিলা কয়েদি মেঘলা খাতুন সীমার ওপর ক্ষিপ্ত হন। ঘটনা জানাজানির ভয়ে আতঙ্কিত হয়ে তারা কারাগারের ভেতরে সীমাকে বিভিন্নভাবে মানসিক নির্যাতন করতে থাকেন।
একপর্যায়ে সুবেদার আশরাফুল ও তার সহযোগীরা হাজতি সীমার স্বামী খোকন মিয়াকে গাইবান্ধা কারাগারে ডেকে আনেন। তারা অভিযুক্তরা সীমার বিরুদ্ধে বিভিন্ন ধরনের মিথ্যা ও আপত্তিকর তথ্য দিয়ে সীমার সংসার ভেঙে দেন।
এতসবের পর হাজতি সীমা এসব ঘটনা জানিয়ে জেল সুপারের কাছে বিচার দেবেন জানালে সুবেদার আশরাফুল তাকে ভয়-ভীতি ও হুমকি দেন। এক পর্যায়ে ২০ মার্চ দুপুরে সুবেদার আশরাফুলের নেতৃত্বে মহিলা কয়েদি মেঘলা খাতুন, রেহেনা ও আলেফা এবং কারারক্ষী তহমিনা ও সাবানা কারাগারের মহিলা ইউনিটের ভেতরের বারান্দায় লাঠি দিয়ে পেটাতে থাকেন। পরে সেলের ভেতরে নিয়ে সীমাকে হাতকড়া পরিয়ে রশি দিয়ে দুই পা বেঁধে আবারও মারধর করেন। উপরন্তু নির্যাতনের এসব ঘটনা বাইরে প্রকাশ করলে সীমাকে মেরে ফেলার হুমকিও দেয়া হয়।
অভিযোগে আরও উল্লেখ করা হয়, করিমন নেছা একাধিকবার তার মেয়ের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে চাইলেও সে সুযোগ দেয়া হয়নি। অবশেষে হাজিরার তারিখে আদালতে মেয়ের সাক্ষাৎ পান মা করিমন নেছা। সেদিন সীমা মায়ের কাছে নির্যাতনের ঘটনার লোমহর্ষক বর্ণনা দেন এবং শরীরের বিভিন্ন স্থানে জখমের চিহ্ন দেখান।
অভিযোগ পেয়ে গত ১৬ এপ্রিল ঘটনার তদন্তে জেলা কারাগারে যান গাইবান্ধা জেলা প্রশাসাকের কার্যালয়ের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট (এডিসি) মো. মশিউর রহমান।
সেদিন নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ‘খুব দ্রুত জেলা প্রশাসকের কাছে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেব। এরপরই জড়িতদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে জেলা প্রশাসন।’
শুক্রবার অভিযুক্তদের বদলির বিষয়ে জানতে চাইলে নিউজবাংলাকে তা নিশ্চিত করেন গাইবান্ধা জেলা কারাগারের জেল সুপার জাভেদ মেহেদী।
এ সময় এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘অভিযোগের বিষয়টি জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে তদন্ত করা হচ্ছে। তদন্ত সাপেক্ষে পরবর্তীতে ব্যবস্থা হবে।’
আরও পড়ুন:মিয়ানমারে চলমান সংঘাতের প্রেক্ষাপটে সে দেশ থেকে বাংলাদেশে ঢুকে আশ্রয় নিয়েছেন দেশটির সীমান্তরক্ষী বাহিনী বর্ডার গার্ড পুলিশের (বিজিপি) আরও ১৩ সদস্য।
বাংলাদেশ সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিজিব) সদর দপ্তরের জনসংযোগ বিভাগ থেকে এক বার্তায় শুক্রবার এ তথ্য জানানো হয়।
এতে বলা হয়, শুক্রবার নতুন করে আরও ১১ জন (জীম্বংখালী -৩ জন এবং হাতিমারাঝিরি-৮ জন) বিজিপি সদস্য আশ্রয় গ্রহণ করেছে। এখন পর্যন্ত সর্বমোট ২৮৫ জন বাংলাদেশে অবস্থান করছে।
বিজিবি জানিয়েছে, বাংলাদেশে ঢোকা বিজিপি সদস্যদের তাদের দেশে ফেরত পাঠানো প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে।
শেরপুরের নকলায় বসতবাড়ির সীমানা নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরে এক নারীর লাঠির আঘাতে প্রতিবেশি মোরাদ হোসেন নামের এক ব্যক্তি নিহত হয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনার পর ওই নারী ও তার মেয়েকে আটক করেছে পুলিশ।
শুক্রবার সকাল ৮টার দিকে উপজেলার টালকী ইউনিয়নের পূর্বটালকী গ্রামে ঘটনাটি ঘটে।
নিহত ৫৫ বছর বয়সী মোরাদ হোসেন নকলার পূর্বটালকী গ্রামের মৃত রহিম মাস্টারের ছেলে। চাকরির সুবাদে রাজধানী ঢাকায় বসবাস করতেন তিনি।
নকলা থানার ওসি মো. আব্দুল কাদের মিয়া ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।
স্থানীয়দের বরাতে পুলিশ জানায়, নকলার মোরাদ হোসেন দীর্ঘদিন ধরে রাজধানীর কল্যাণপুরে নিরাপত্তারক্ষী হিসেবে চাকরি করতেন। অনেকদিন থেকে তার প্রতিবেশি চাচাতো ভাই জালাল উদ্দিনের সঙ্গে বসতবাড়ির সীমানা নির্ধার্ণ নিয়ে দ্বন্দ্ব চলছিল। শুক্রবার সকালে ছুটিতে ঢাকা থেকে বাড়িতে আসেন মোরাদ। বাড়িতে প্রবেশ করার পর তার প্রতিবেশি চাচাত ভাইয়ের বউয়ের সঙ্গে ঝগড়া শুরু হয়। এক পর্যায়ে উত্তেজিত ওই নারী লাঠি দিয়ে মোরাদের মাথার পেছনে আঘাত করেন। এতে আহত হয়ে তিনি মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। পরে স্থানীয়রা মোরাদকে নকলা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত বলে ঘোষনা করেন।
ঘটনার পর জালাল উদ্দিনের স্ত্রী ও মেয়েকে আটক করে পুলিশ।
নকলা থানার ওসি মো. আব্দুল কাদের মিয়া বলেন, ‘প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের জন্য দুই নারীকে আটক করা হয়েছে। মরদেহের ময়নাতদন্তের জন্য শেরপুর জেলা সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। পরবর্তী আইনি কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন।’
মন্তব্য