আগামী ১০ বছরে বাংলাদেশকে পরিপূর্ণভাবে ক্যাশলেস বা কাগুজে টাকামুক্ত হিসেবে গড়ে তোলার পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রীর তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তিবিষয়ক উপদেষ্টা সজীব আহমেদ ওয়াজেদ জয়।
রেমিট্যান্স পাঠাতে সোনালী ব্যাংকের চালু করা ব্লেজ সার্ভিসের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় পুরো অনুষ্ঠানটি পরিচালিত হয় ডিজিটাল মাধ্যমে।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক, সোনালী ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান জিয়াউল হাসান সিদ্দিকী অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন। ভার্চুয়ালি আরও যুক্ত ছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর আহমেদ জামাল, সোনালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আতাউর রহমান প্রধান, হোমপে এলএলসি, ইউএস-এর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা রুবেল আহসান এবং আইটিসিএল-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা কাজী সাইফুদ্দিন মুনির প্রমুখ।
অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর তথ্য ও প্রযুক্তি উপদেষ্টা বলেন, ‘ক্যাশলেসই ভবিষ্যৎ। এটাই ডিজিটাল বাংলাদেশের পরবর্তী স্বপ্ন।
‘ব্লেজের মাধ্যমে বিদেশ থেকে সরাসরি সাধারণ মানুষের মোবাইলে রেমিট্যান্স পৌঁছে যাবে। তিনি যেকোনো কেনাকাটার পেমেন্ট মোবাইল ফোন থেকেই করতে পারবেন। তাদের ক্যাশ হাতে রাখতে হবে না। প্রবাসীদের পাঠানো কষ্টের উপার্জন আর কেউ চুরি করতে পারবে না।’
ব্লেজ সার্ভিসের মাধ্যমে বিশ্বের যেকোনো প্রান্ত থেকে প্রবাসীদের পাঠানো টাকা মাত্র পাঁচ সেকেন্ডে সরাসরি গ্রাহকের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে যুক্ত হবে। এ পদ্ধতিতে টাকা পাঠানো যাবে সাত দিন ২৪ ঘণ্টা। সোনালী ব্যাংকের সঙ্গে এই উদ্যোগে রয়েছে হোমপে এবং আইটিসিএল।
অনুষ্ঠানে জয় বলেন, ‘আওয়ামী লীগের নজর শুধু আজকের দিকে নয়। ভবিষ্যতে কী হবে, সেদিকেও আমাদের নজর রয়েছে। এটিকে কেন্দ্র করেই আমাদের সব প্রস্তুতি। আজ থেকে ১০ বছর পর আমরা কোথায় যাব, সেটাই ডিজিটাল বাংলাদেশের ভিশন। আমাদের এখনকার স্বপ্ন হচ্ছে আমরা হব একটি ক্যাশলেস সোসাইটি।
‘আমাদের দেশের ৫ কোটি মানুষের এখনও কোনো ব্যাংক অ্যাকাউন্ট নেই। তারা পুরোপুরি ক্যাশের ওপর নির্ভরশীল। কিন্তু তাদের এই টাকা তো চুরি হতে পারে। পথে অনেকেই লুটে নিতে পারে। ক্যাশ ব্যবস্থাপনায় দুর্নীতির সুযোগ থাকে, কিন্তু ক্যাশলেস হয়ে গেলে এই দুর্নীতির সুযোগ বন্ধ হয়ে যাবে।’
তিনি বলেন, ‘সরকারি সব ভাতা এখন ডিজিটালি দেয়া হচ্ছে। আগে যারা এসব বিতরণ করত, তাদের চুরি করার সুযোগ থাকত। আমরা সেটা বন্ধ করে দিয়েছি।
‘আজকাল ডিজিটাল যুগে কোনো লিমিটেশনের মানে নেই। এ জন্যই ব্লেজের উদ্বোধন। যেমন আমার এখানে এখন দিন কিন্তু বাংলাদেশে রাত। আমি যদি দেশে কাউকে টাকা পাঠাই, সে কিন্তু এখন সেটা পাবে না। হয়তো তাকে আরো দু-এক দিন অপেক্ষা করতে হবে। কিন্তু ব্লেজের মাধ্যমে টাকা পাঠালে সেটা রাত দুইটা বাজলেও পেয়ে যাবে। আর এর জন্য কোথাও যেতে হবে না।’
জয় বলেন, ‘আমিও একজন প্রবাসী, আমার হয়তো সেভাবে দেশে কোনো টাকা পাঠাতে হয়তো হয় না। আমাদের দেশের আয়ের সবচেয়ে বেশি আসে রেমিট্যান্স থেকে। এটা গার্মেন্টসের চেয়েও বেশি। প্রবাসী শ্রমিক বা ইঞ্জিনিয়ার যারা বিদেশে কাজ করেন, তারা পরিবারকে প্রতি মাসেই টাকা পাঠান। আমি বাংলাদেশ ব্যাংককে কৃতজ্ঞতা জানাই, ধন্যবাদ জানাই, তারা এই টাকা পাঠানোর পদ্ধতিটি সহজ করেছে। বিভিন্ন দেশে রেমিট্যান্স সেন্টার খুলেছে।
‘এখন যারা টাকা পাঠান, তাদের আগে ব্যাংকে বা রেমিট্যান্স সেন্টারে যেতে হয়। সেখানে ভেরিফিকেশনের পর তারা টাকা জমা দেন। আবার এসব স্থানে টাকা পাঠাতে হয় সপ্তাহে ৫ দিন সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টার মধ্যে। সেটা পৌঁছাতে পৌঁছাতে আরো দু-এক দিন লেগে যায়।’
সজীব ওয়াজেদ জয় বলেন, ‘এখন কোভিডের কারণে ব্যাংকে বা রেমিট্যান্স সেন্টারে নানা শঙ্কা থাকে। এ পদ্ধতিতে টাকা পাঠালে সেটা থাকছে না। আমি আশা করি, সারা বিশ্বেই প্রবাসীরা এ পদ্ধতিতে টাকা পাঠাতে পারবেন। এই ব্লেজ সার্ভিসটা হবে ক্যাশলেস সোসাইটির একটি অংশ।
‘আপনারা (প্রবাসীরা) যখনই রেমিট্যান্স পাঠাতে চান, এটা ব্যবহার করুন। ভবিষ্যতের বাংলাদেশ হবে সম্পূর্ণ ডিজিটাল ও ক্যাশলেস। এটাই আগামী ১০ ও ২০ বছরের স্বপ্ন।’
তথ্য ও প্রযুক্তি উপদেষ্টা বলেন, ‘ডিজিটাল বাংলাদেশের স্বপ্ন হচ্ছে বাংলাদেশকে উন্নত করা, এগিয়ে নিয়ে যাওয়া এবং মানুষের জীবনকে সহজ করা। কোভিডের সময় আমরা এর সবচেয়ে বেশি সুফল পেয়েছি। এ সময় অনেক দেশের সরকার অসহায় হয়ে গেছে। সরকার পরিচালনা করতে পারেনি, স্কুল-কলেজ বন্ধ হয়ে যায়।
‘আমরা অনেক আগে থেকেই ডিজিটাল হওয়ার প্রস্তুতি নিয়েছি। শুরু থেকেই বিভিন্ন সরকারি কাজে ভিডিও কনফারেন্সের ব্যবহার হয়েছে অনেক আগেই। কোভিডের আগে থেকে সিস্টেমটা ছিল।
‘আমরা ইউনিয়ন পর্যায়ে অপটিক্যাল ফাইবার স্থাপন করি। কোভিড হওয়ার আগে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে অতটা কাজ হয়নি। কিন্তু যখন কোভিড শুরু হলো, তখন সিস্টেমটা ছিল বলে দ্রুত এই পদ্ধতিতে চলে যেতে পেরেছি। আর এ কারণে আমাদের অর্থনীতিতে কোভিডের প্রভাব তেমন একটা পড়েনি।’
অনুষ্ঠানে আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনায়েদ আহমেদ পলক জানান, আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে কাগজহীন দপ্তর কার্যক্রমে প্রায় ১১ হাজার দপ্তর যুক্ত করা হয়েছে।
তিনি বলেন, ‘বিশ্বের খুব কম দেশই পাওয়া যাবে যারা হয়ত অর্থনৈতিকভাবে উন্নত, কিন্তু (বাংলাদেশে) দেড় কোটি পেপারলেস ই-ফাইল সম্পাদন করা হয়েছে, খরচ-অর্থ-দুর্নীতি কমিয়ে জনগণের দোড়গোড়ায় সেবা পৌঁছে দেয়া সম্ভব হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘১২ বছর আগে প্রধানমন্ত্রী ডিজিটাল বাংলাদেশের যে রূপকল্পটি ঘোষণা করেছিলেন, সজীব ওয়াজেদ জয় ভাইয়ের অনুপ্রেরণায় এবং পরামর্শে সেই ডিজিটাল বাংলাদেশের সব লক্ষ্য পূরণ করে আমরা দক্ষ মানবসম্পদে পরিণত হয়েছি। আমাদের ১৫ লক্ষাধিক তরুণ-তরুণীর আইসিটি সেক্টরে কর্মসংস্থান হয়েছে।
‘বাংলাদেশে ১২ কোটি ইন্টারনেট ব্যবহারকারী সৃষ্টি হয়েছে এবং একেবারে গ্রাম পর্যন্ত সরকারের সেবা ৮ হাজার ডিজিটাল সেন্টারের মাধ্যমে ১৬ হাজার তরুণ-তরুণী গ্রামে বসে প্রদান করছে।’
অনুষ্ঠানে সোনালী ব্যাংকের চেয়ারম্যান জিয়াউল হাসান সিদ্দিকী বলেন, “সোনালী ব্যাংক ডিজিটাল ব্যাংকিংয়ে অনেক দূর এগিয়ে গেছে। অ্যাকাউন্ট খোলার জন্য এখন আর সরাসরি ব্যাংকে যেতে হয় না। মুঠোফোন অ্যাপ্লিকেশনে ‘সোনালী ই-সেবা’-এর মাধ্যমে ২ মিনিটে ঘরে বসেই খোলা যায় অ্যাকাউন্ট।”
তিনি বলেন, ‘সোনালী ই-সেবা অ্যাপ্লিকেশনটি ব্যাংকের নিজস্ব জনবল ও ব্যবস্থাপনায় তৈরি করেছে। আমরা সোনালী ব্যাংককে পুরোপুরি ডিজিটালাইজেশনের জন্য নানা ধরনের উদ্যোগ নিয়েছি। ব্যাংকের উদ্যোগে চালু হওয়া রেমিট্যান্স সেবা ব্লেজ সে উদ্যোগেরই একটি।’
অনুষ্ঠানে সোনালী ব্যাংকের চেয়ারম্যান জিয়াউল হাসান সিদ্দিকীর ভূয়সী প্রশংসা করে জানানো হয়, তিনি এক সময়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর ছিলেন এবং যুগোপযোগী অনেকগুলো পদক্ষেপ নিয়েছেন। এগুলো ব্যাংক খাতকে গতিশীল করতে অনেক সহায়তা করেছে।
অনুষ্ঠানে সোনালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আতাউর রহমান প্রধান বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রবর্তিত ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণে সক্রিয় অংশীদার হিসেবে সোনালী ব্যাংক প্রযুক্তিনির্ভর আধুনিক ব্যাংকিং সেবা জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিচ্ছে। তারই ধারাবাহিকতায় প্রবাসীদের কষ্টার্জিত অর্থ ব্যাংকিং চ্যানেলে ডিজিটাল পদ্ধতিতে তাৎক্ষণিক পরিশোধের জন্য সোনালী ব্যাংক এই উদ্যোগ গ্রহণ করেছে।’
সোনালী ব্যাংকের প্রযুক্তিগত আধুনিকায়নের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘সারা দেশে সোনালী ব্যাংকের ১ হাজার ২২৮টি শাখার সবগুলোতে এখন আমরা অনলাইন সুবিধা থেকে শুরু করে প্রযুক্তিগত সব ধরনের সেবা দিয়ে যাচ্ছি।’
সোনালী ব্যাংকের প্রযুক্তিগত সক্ষমতা বাড়ানোর ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রীর তথ্য ও প্রযুক্তি উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয় এবং তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলকের সার্বক্ষণিক সহায়তার কথা তুলে ধরেন মো. আতাউর রহমান প্রধান।
সোনালী ব্যাংক প্রযুক্তির মাধ্যমে ব্যাংক সেবা কী করে গ্রাহকের ঘর পর্যন্ত পৌঁছে দিচ্ছে তাও তুলে ধরেন তিনি।
ব্লেজ সেবাটি যেভাবে পাওয়া যাবে
সোনালী ব্যাংকের ব্লেজ সেবা চালু হওয়ার ফলে প্রবাসীদের কষ্টার্জিত অর্থ বিশ্বের যে কোনো প্রান্ত থেকে ব্যাংকিং চ্যানেলে ডিজিটাল পদ্ধতিতে মাত্র ৫ সেকেন্ডে বাংলাদেশে বেনিফিসিয়ারির ব্যাংক অ্যাকাউন্টে জমা হবে।
প্রাথমিক পর্যায়ে দেশের ৩৫টি ব্যাংকের গ্রাহক ব্লেজ সেবাটি গ্রহণ করতে পারবে। পর্যায়ক্রমে দেশের সব ব্যাংকের গ্রাহক ও এমএফএস হিসাবধারীরা এই সেবার আওতায় আসবেন। নিরবচ্ছিন্নভাবে সপ্তাহে সাত দিন ২৪ ঘণ্টা এই সেবা পাওয়া যাবে।
প্রাথমিক পর্যায়ে অ্যাপ/ওয়েবভিত্তিক ইন্টারন্যাশনাল মানি ট্রান্সফার প্রতিষ্ঠান যেমন Skrill, Tranglo (Malaysia), Taptap Send ইত্যাদির ব্যবহারকারীরা তার ওয়ালেট অ্যাকাউন্ট বা অ্যাপ হতে বেনিফিসিয়ারির ব্যাংক হিসাব সংশ্লিষ্ট তথ্য পূরণ করে ‘সেন্ড’ বাটনে ক্লিক করার সঙ্গে সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বেনিফিসিয়ারির রেমিট্যান্সের তথ্য হোমপের মাধ্যমে সোনালী ব্যাংকে চলে আসবে। বেনিফিসিয়ারি সোনালী ব্যাংকের গ্রাহক হলে ২ শতাংশ প্রণোদনাসহ রেমিট্যান্স গ্রাহকের হিসাবে তাৎক্ষণিকভাবে জমা হবে। যদি বেনিফিসিয়ারি অন্য ব্যাংকের গ্রাহক হয় তবে আইটিসিএল প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে ২ শতাংশ প্রণোদনাসহ তাৎক্ষণিক টাকা বেনিফিসিয়ারির সংশ্লিষ্ট ব্যাংক হিসাবে জমা হবে। রেমিট্যান্স প্রেরণকারী ও বেনিফিসিয়ারি উভয়ই রেমিট্যান্সের অর্থ জমা হওয়ার তথ্য তাৎক্ষণিক পেয়ে যাবেন। এ পর্যায়ে ব্লেজের মাধ্যমে পাঁচ লাখ টাকা পর্যন্ত রেমিট্যান্স আনা যাবে।
সোনালী ব্যাংকের সঙ্গে রক্ষিত মানি ট্রান্সফার প্রতিষ্ঠানের প্রিপেইড হিসাবের মাধ্যমে ওই রেমিট্যান্স সেটেলমেন্ট হবে।
আরও পড়ুন:কুষ্টিয়ার কুমারখালী তরুণ মোড় থেকে হাসিমপুর পর্যন্ত প্রায় চার কিলোমিটার সড়ক দীর্ঘদিন ধরে জরাজীর্ণ অবস্থায় পড়ে আছে। ফলে প্রতিদিন ঝুঁকি নিয়ে যাতায়াত করছেন হাজারও মানুষ। এই সড়ক দিয়েই সদকি, জগনাথপুর ইউনিয়ন এর পাশাপাশি খোকসা উপজেলারও বেশ কয়েকটি গ্রামের মানুষ যাতায়ত করে। গুরুত্বপূর্ণ এই সড়কটি সংস্কারে নেই কোনো কার্যকর উদ্যোগ। ফলে ছোট-বড় দুর্ঘটনা ঘটছে অহরহ, ঝুঁকিতে পড়ছেন রোগী, শিক্ষার্থী থেকে শুরু করে সাধারণ যাত্রীরা।
স্থানীয়রা জানান, খানাখন্দে ভরা এই সড়ক প্রতি বর্ষায় হয়ে ওঠে আরও ভয়ংকর। প্রতিনিয়ত ঘটে ছোটো বড় দুর্ঘটনা।
যানবাহন-ভ্যান উল্টে যাত্রী আহত হওয়ার ঘটনাও ঘটে। গাড়ির যন্ত্রাংশও নষ্ট হয়ে যায় বারবার। পথচারী আশিকুর রহমান বলেন ‘রোগী নিয়ে যাওয়া যেন বিপদজনক সড়কের কারণে রোগীর অবস্থা আরও খারাপ হয়ে পড়ে।
দীর্ঘদিন ধরে রাস্তাটি সংস্কার না হওয়ায় জীবনের ঝুঁকি নিয়েই চলতে হচ্ছে। স্থানীয় বাসিন্দা আপান ইসলাম বলেন, মাঝেমধ্যেই দেখি যাত্রীরা পড়ে গিয়ে নানা দুর্ঘটনা ঘটে। এতে শিশু-বৃদ্ধরা বেশি আহত হন। স্কুলের শিশুদের নিয়ে সবসময় ভয়ে থাকেন অভিভাবকরা।’
উপজেলা শহরে যাতায়াতের প্রধান সড়কের এই যদি হয় হাল। ট্রাকচালক রুস্তম আলী বলেন, মাঝেমধ্যেই এই সড়ক দিয়ে যাতায়ত করি। উঁচুনিচু গর্ত সড়ক হওয়ায় গাড়ির নানা যন্ত্রাংশ নষ্ট হয়ে পড়ে প্রায়ই। এগুলো ঠিক করতে করতেই আমাদের লাভ-ক্ষতি প্রায় সমান হয়ে যায়। কুমারখালী উপজেলা প্রকৌশলী (এলজিডি) মো. নাজমুল হক বলেন, এই রাস্তার স্টেমেট পাঠাইছি দেখি বরাদ্দ পাইলে কি করা যাই। তবে উপজেলার আইডিভুক্ত সড়ক কত কিলোমিটার জানতে চাইলে তিনি বলেন,এভাবেতো বলা যায় না অফিসে আসতে হবে ফাইল-টাইলের ব্যাপার স্যাপার।
স্থানীয়রা বলছেন, বরাদ্দের অজুহাত না দেখিয়ে গুরুত্বপূর্ণ এই সড়কটির দ্রুত সংস্কার কাজ শুরু না করলে জনদুর্ভোগ আরও বাড়বে।
ভোলার চরফ্যাশন উপজেলার একটি আঞ্চলিক সড়ক দীর্ঘ ৫ বছর ধরে খানাখন্দে ভরা রয়েছে। প্রতিদিন হাজারো মানুষ এই বেহাল পথে চলাচল করতে গিয়ে চরম ভোগান্তিতে পড়ছেন। যানবাহন, স্কুল-কলেজগামী শিক্ষার্থী ও রোগী পরিবহনে দেখা দিয়েছে মারাত্মক দুরবস্থা।
সোমবার বেলা ১২ টার দিকে সরেজমিনে দেখা যায়, চরফ্যাশন উপজেলার রসুলপুর ইউনিয়নের হলুদ দালান মেইন সড়ক থেকে ভাসানচর বেড়িবাঁধ পর্যন্ত ৪ কিলোমিটার সড়কের প্রায় ৯৯ শতাংশ কার্পেটিং উঠে গেছে। কোথাও কাদামাটি, কোথাও আবার হাটুসম গর্ত তৈরি হয়েছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ২০১১ সালের ৭ জানুয়ারি সড়কটি নির্মাণ করা হয়েছিল। এরপর থেকে কোনো সংস্কার করা হয়নি। ফলে ধীরে ধীরে পুরো কার্পেটিং উঠে গিয়ে সড়কটি প্রায় চলাচল অযোগ্য হয়ে পড়ে।
রসুলপুর ৪নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা আবু তাহের মাঝি বলেন, এই সড়ক দিয়ে রসুলপুর ইউনিয়নের ৪ ও ৭ নম্বর ওয়ার্ড ও চরমানিকা ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ডসহ আশপাশের প্রায় লক্ষাধিক মানুষ চলাচল করেন। অসুস্থ রোগী হাসপাতালে নেওয়া প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়ে। শুধু কষ্ট নয়, অনেক সময় জীবনও ঝুঁকির মধ্যে পড়ে।
একই এলাকার চা দোকানি জাহাঙ্গীর জানান, ২০১১ সালে সড়কটি নির্মাণের পর প্রায় ৮-৯ বছর মানুষ চলাচল করেছে। কিন্তু গত ৫ বছর ধরে কার্পেটিং উঠে বড় বড় গর্ত তৈরি হয়েছে। এতে গাড়ি ও পথচারী সবাই মারাত্মক ঝুঁকিতে আছে।
স্থানীয় পল্লী চিকিৎসক শফিউল্লাহ সবুজ বলেন, জরুরি রোগী পরিবহন করতে গিয়ে প্রচুর সময় নষ্ট হয়। মানুষের দুর্ভোগ সীমা ছাড়িয়েছে। অথচ কর্তৃপক্ষ কেউই নজর দিচ্ছেন না।
ওই সড়কে নিয়মিত অটো রিকশা চালক বশির ও বেলাল জানান, এই সড়কে রিকশা চালাতে গিয়ে বারবার যন্ত্রাংশ নষ্ট হয়। যা আয় করি তার বেশির ভাগই মেরামতে চলে যায়। তাই দ্রুত সড়ক মেরামতের দাবি জানাচ্ছি।
চরফ্যাশন উপজেলা এলজিইডি প্রকৌশলী মো. সাদ জগলুল ফারুক জানান, সড়ক সংস্কারের প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। অনুমোদন পেলেই ওই আঞ্চলিক সড়কটির কাজ শুরু করা হবে।
চরফ্যাশন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রাসনা শারমিন মিথি বলেন, গ্রামবাসীর ভোগান্তির বিষয়টি আমি অবগত হয়েছি। সংশ্লিষ্ট দপ্তরের সঙ্গে কথা বলে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
তারেক রহমানের ৩১ দফা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ে ‘আগামীর অগ্রনায়ক’ শীর্ষক বুকলেট বিতরণ ও গণসংযোগ করা হয়েছে। সোমবার দুপুরে উপজেলার মোগড়াপাড়া চৌরাস্তা এলাকার বিভিন্ন মার্কেটে গিয়ে ক্রেতা ও বিক্রেতাদের মাঝে বুকলেট বিতরণ করেন অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি কেন্দ্রীয় স্বেচ্ছাসেবক সাবেক সহসভাপতি ও নারায়ণগঞ্জ-৩ আসনের বিএনপির দলীয় মনোয়ন প্রত্যাশী অধ্যাপক ওয়াহিদ বিন ইমতিয়াজ বকুল।
বুকলেট বিতরণকালে অধ্যাপক ওয়াহিদ বিন ইমতিয়াজ বকুল বলেন, রাষ্ট্র কাঠামোর ৩১ দফা আগামীর পজিটিভ বাংলাদেশ। ৩১ দফা বাস্তবায়ন করতে পারলেই বাংলাদেশ বিশ্বের কাছে উন্নত রাষ্ট্র হিসেবে মাথা তুলে দাড়াবে। বাংলাদেশের জনগণ একটি সমৃদ্ধশালী রাষ্ট্রের গর্বিত নাগরিক হবেন। যেখানে দারিদ্র্যতা ও ঋণের বোঝা থেকে মুক্তি পাবেন। তিনি বলেন, বিএনপি ঘোষিত ৩১ দফার মধ্যেই শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও কর্মসংস্থানসহ মানুষের মৌলিক অধিকার এবং বাস্তবায়নের পথ দেখানো হয়েছে। আমাদের এই ভাবনাকে জনগণের মধ্যে ছড়িয়ে দিতে হবে। দলের সকল নেতাকর্মী, তরুণরা প্রত্যেকেই এই ৩১ দফার অ্যাম্বাসেডর।
বুকলেট ও গণসংযোগকালে উপস্থিত ছিলেন, সোনারগাঁ পৌরসভা বিএনপির সহ সভাপতি আনোয়ার হোসেন, নারায়ণগঞ্জ জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের যুগ্ম আহ্বায়ক মনিরুজ্জামান মনির, কাঁচপুর ইউনিয়ন ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি মোশাররফ হোসেন, নারায়ণগঞ্জ জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সাবেক সদস্য সোহেল আরমান, সোনারগাঁ উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের যুগ্ম আহ্বায়ক শফিক ভূইয়া, সোনারগাঁ পৌরসভা স্বেচ্ছাসেবক দলের যুগ্ম আহ্বায়ক আতা রাব্বি জুয়েল, সোনারগাঁ উপজেলা ছাত্রদলের সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক মাসুদ রানা বাবু, বৈদ্দ্যের বাজার ইউনিয়ন ছাত্রদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার আদিব ইকবাল প্রমুখ।
একটি সভ্য সমাজে এই মব সংস্কৃতি মেনে নেওয়া সম্ভব নয়। সরকারের সদিচ্ছার অভাব নেই, তবে রাষ্ট্র পরিচালনার জন্য যে অভিজ্ঞতা দরকার, তার ঘাটতির কারণেই বিশৃঙ্খলা তৈরি হচ্ছে। দেশে চলমান আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ও রাজনৈতিক অস্থিরতা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন বিএনপি জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য আবু নাসের মুহাম্মদ রহমাতুল্লাহ।
সোমবার দুপুর ১২টায় বরিশাল প্রেসক্লাবে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে তিনি এসব কথা বলেন।
রহমাতুল্লাহ বলেন, নির্বাচন ছাড়া দেশের স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনা সম্ভব নয়। তাই সরকারের অঙ্গীকার অনুযায়ী একটি সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন আয়োজন করা তাদের দায়িত্ব। স্থিতিশীল পরিবেশ তৈরি না করে সেই অঙ্গীকার পূরণ করা সম্ভব নয়।
তিনি আরও বলেন, ডাকসু ও জাকসু নির্বাচনে সরকারের ব্যর্থতা জনগণের আস্থা ও প্রত্যাশাকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। একজন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক যখন নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে পরিচালনায় উদ্যোগের অভাবের কথা স্বীকার করেন, তা জাতি হিসেবে আমাদের জন্য দুঃখজনক।
মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতার ইতিহাস নিয়ে কথা বলেন, ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের পর শেখ মুজিব মুক্তিযুদ্ধের আকাঙ্ক্ষা পূরণে ব্যর্থ হন। পরে শহীদ জিয়া রাষ্ট্রক্ষমতায় এসে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ও গণতন্ত্র নিশ্চিত করেছিলেন। গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ছাড়া গণতন্ত্র টিকে থাকতে পারে না।
রহমাতুল্লাহ জাতীয় নির্বাচনের বিষয়ে বলেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত প্রথম নির্বাচনই প্রশ্নবিদ্ধ হলে জাতীয় নির্বাচন কীভাবে সুষ্ঠু হবে, তা নিয়ে মানুষের মধ্যে শঙ্কা তৈরি হওয়া স্বাভাবিক। তাই এখন থেকেই সব রাজনৈতিক দলকে নিয়ে ঐকমত্যের ভিত্তিতে যথাযথ পদক্ষেপ নিতে হবে। তা না হলে গণতন্ত্র ও স্বাধীনতা আবারও হুমকির মুখে পড়বে। দলের প্রার্থী মনোনয়ন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, নির্বাচনের সময় হলে দল যাকে মনোনয়ন দেবে, বিএনপি ঐক্যবদ্ধভাবে তার পক্ষেই কাজ করবে।
মতবিনিময় সভায় উপস্থিত ছিলেন বরিশাল প্রেসক্লাবের সভাপতি আমিনুল ইসলাম খসরু, সহসভাপতি জাকির হোসেন, সিনিয়র সাংবাদিক নুরুল আলম ফরিদ, কমল সেন গুপ্ত, সাইফুর রহমান মিরণ, সৈয়দ মেহেদী, তারিকুল ইসলাম তুহিনসহ স্থানীয় সাংবাদিকরা।
ময়মনসিংহের নান্দাইল উপজেলায় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ধর্মীয় শিক্ষক নিয়োগ না দিয়ে সঙ্গীত বা গানের শিক্ষক নিয়োগের প্রতিবাদে এক বিশাল প্রতিবাদ সমাবেশ ও বিক্ষোভ মিছিল অনুষ্ঠিত হয়েছে।
আজ সোমবার (১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫ইং) সকাল ১১টায় নান্দাইলের চন্ডিপাশা খেলার মাঠ থেকে এ মিছিল শুরু হয়ে উপজেলার প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে। এতে নান্দাইল উপজেলার বিভিন্ন গ্রাম ওপ্রতিষ্ঠান থেকে হাজারো ধর্মপ্রাণ মানুষ অংশগ্রহণ করেন।
ইত্তেফাকুল উলামা ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ নান্দাইল উপজেলা শাখার উদ্যোগে আয়োজিত এ কর্মসূচিতে বক্তারা বলেন,।
"৯২% মুসলমানের এই দেশে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ধর্মীয় শিক্ষক নিয়োগ না দিয়ে সঙ্গীতের শিক্ষক নিয়োগ সম্পূর্ণ অযৌক্তিক। এটি আমাদের ধর্মীয় চেতনাকে আঘাত করার শামিল। আমরা এর তীব্র নিন্দা জানাই এবং প্রতিটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ধর্মীয় শিক্ষক নিয়োগের জোর দাবি জানাই।
বক্তারা আরও বলেন, সরকার যদি দ্রুত এই বিষয়টি সমাধান না করে, তবে সারা দেশে আরও কঠোর আন্দোলনের কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।
কর্মসূচিকে সফল করতে ইসলামী আন্দোলনের নেতাকর্মীসহ স্থানীয় ধর্মীয় জনগণ ব্যাপকভাবে সহযোগিতা করেন। শান্তিপূর্ণ এই মিছিলের মাধ্যমে ধর্মপ্রাণ মুসল্লী ও সাধারণ মানুষের দাবি সরকারের কাছে পৌঁছে দেওয়া হয়।
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতার বলেছেন, সারা দেশে দেশীয় মাছের সংকট প্রকট হয়ে উঠছে। এই সংকট নিরসনে উন্মুক্ত জলাশয়ের কোন বিকল্প নাই। সরকার দেশের নদ-নদীতে মাছের অভয়ারণ্য তৈরি করতে কার্যক্রম গ্রহণ করছে।
উপদেষ্টা আজ সকালে কুড়িগ্রামে জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে জেলা মৎস্য কর্মকর্তা, জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা, বেসরকারি প্রতিষ্ঠান,নারী কৃষক এবং স্হানীয় এনজিও প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাদের সাথে আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তৃতায় এসব কথা বলেন। জেলা প্রশাসন, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর আলোচনা সভার আয়োজন করে।
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা বলেন, বন্যায় নদীগুলোতে পলি পরার কারণে নাব্যতা হ্রাস, পানি দূষণ, চায়না জাল ব্যবহার ও ইলেকট্রিক শর্ট দিয়ে মাছ কারণে দিনদিন মাছের পরিমাণ কমছে। জোরালো অভিযান চালিয়ে এসব অবৈধ মাছ ধরার যন্ত্রপাতি উদ্ধার করতে হবে। অভিযান চলমান রাখতে নদীগুলোতে স্পীড বোটের ব্যবহার করা হবে।
চরাঞ্চলের মানুষের জীবনমান প্রসঙ্গে তিনি উল্লেখ করেন, যোগাযোগ ব্যবস্থার অপ্রতুলতার কারণে তারা সরকারি অনেক সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। এছাড়া তিনি প্রতিটি মন্ত্রণালয়কে এই অঞ্চলের মানুষের জন্য বিশেষ কর্মপরিকল্পনা গ্রহণের আহ্বান জানান।
খামারিদের উৎপাদিত দুধ সংরক্ষণ বিষয়ে প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা বলেন, যথাযথ সংগ্রহ ও সংরক্ষণের অভাবে খামারিরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। তাই এই অঞ্চলে চিলিং সেন্টার স্থাপনের প্রকল্প গ্রহণ করা হবে।
জুলাই যোদ্ধাদের আত্মত্যাগ প্রসঙ্গে বলেন, জুলাই যোদ্ধাগণ অনেকে জীবন উৎসর্গ করেছেন আবার অনেকে পঙ্গুত্ব বরণ করেছেন। তাদের এই ঋণ ভুলবার নয়। এজন্য তিনি সরকারি ও এনজিওর উদ্যোগে তাদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে আহ্বান জানান।
কুড়িগ্রামের জেলা প্রশাসক সিফাত মেহনাজের সভাপতিত্বে আরো উপস্হিত ছিলেন সিভিল সার্জন ডা. স্বপন কুমার বিশ্বাস, জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মোক্তাদির খান, জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. হাবিবুর রহমান, কৃষি সম্প্রসারণের অতিরিক্ত উপপরিচালক আব্দুল্লাহ আল মামুন, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মাসুদ রানাসহ জেলা প্রশাসনের অন্যান্য কর্মকর্তারাও উপস্থিত ছিলেন।
এরপর উপদেষ্টা কুড়িগ্রাম সদরের পাঁচগাছি ইউনিয়নের ছড়ারপাড় গ্রামে নারী কৃষকের বাড়ি পরিদর্শন করেন।
বাংলাদেশে গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা করার লক্ষ্যে একযোগে কাজ করার আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। গতকাল রোববার সন্ধ্যায় এক ফেসবুক পোস্টে এ আহ্বান জানান তিনি।
তারেক রহমান বলেন, ‘২০০৭ সাল থেকে প্রতি বছর ১৫ সেপ্টেম্বর আন্তর্জাতিক গণতন্ত্র দিবস পালিত হয়ে আসছে। গণতন্ত্রের সারবত্তা ও এর অন্তর্নিহিত শক্তি সম্পর্কে বিশ্বসম্প্রদায়ের মাঝে আগ্রহ সৃষ্টির লক্ষ্যেই এই দিবসটি পালিত হয়।’
তিনি বলেন, ‘আন্তর্জাতিক গণতন্ত্র দিবস জাতিসংঘের সদস্যভুক্ত দেশগুলোতে গণতন্ত্র চর্চার লক্ষ্যে প্রচলিত একটি বিশেষ দিন। বাংলাদেশসহ বিশ্বব্যাপী গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য আত্মদানকারী শহীদদের প্রতি জানাচ্ছি গভীর শ্রদ্ধা ও তাদের বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করছি, আহতদের সমবেদনা জানাচ্ছি। সারা বিশ্বের গণতন্ত্রকামী মানুষের প্রতি জানাচ্ছি আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন।’
তিনি আরো বলেন, ‘মহান স্বাধীনতার ঘোষক শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান বহুদলীয় গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার করেছিলেন একদলীয় বাকশালের আগ্রাসী থাবা থেকে।
তার কালজয়ী দর্শন বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদের মর্মমূলে ছিল বহুদলীয় গণতন্ত্র। আর প্রকৃত গণতন্ত্রের ভিত্তিই হচ্ছে মানবিক মর্যাদা, ব্যক্তি ও বাকস্বাধীনতা এবং সামাজিক ন্যায়বিচার ও সাম্য। দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া অগ্রগামী করেছিলেন শহীদ জিয়ার চিন্তা ও দর্শনকে। আর এ জন্য তাকে সহ্য করতে হয়েছে বিভিন্ন সময়ের স্বৈরতন্ত্রের হিংস্র আক্রমণ।
বাংলাদেশে স্বাধীনতার পর থেকেই বারবার স্বৈরতন্ত্র হানা দিয়েছে। রাজনৈতিক দল ও সংবাদপত্র নিষিদ্ধ করা, মত প্রকাশের স্বাধীনতাকে অপরাধ হিসেবে বিবেচনা করা, ভুয়া ভোটার দিয়ে নির্বাচন করা, গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে ধ্বংস করা ইত্যাদি অনাচার করা হয়েছে রাষ্ট্রশক্তিকে হাতের মুঠোয় নিয়ে। একটি ভীতিকর ও কর্তৃত্ববাদী পরিবেশ গড়ে তোলা হয়েছিল ক্ষমতাকে চিরস্থায়ীভাবে ধরে রাখার স্বপ্নে বিভোর হয়ে। গত দেড় দশক আওয়ামী ফ্যাসিবাদের আত্মপ্রকাশে গণতন্ত্র ছিল অবরুদ্ধ, বন্দি রাখা হয়েছিল সারা জাতিকে। গণতন্ত্রের নীতিমালা প্রচার ও সমুন্নত রাখার যেকোনো প্রচেষ্টাকেই পতিত আওয়ামী সরকার নির্দয়ভাবে প্রতিহত করেছে।’
তারেক রহমান বলেন, ‘এবারের আন্তর্জাতিক গণতন্ত্র দিবসের মূল প্রতিপাদ্য, ‘অ্যাচিভিং জেন্ডার ইকুইলিটি অ্যাকশন বাই অ্যাকশন’, অর্থাৎ পদক্ষেপের পর পদক্ষেপ গ্রহণ করে লিঙ্গ সমতা অর্জন করতে হবে। গণতন্ত্রে নারী-পুরুষ বা অন্য যেকোনো লিঙ্গের মানুষ লিঙ্গ-নির্বিশেষে সবার সমান সুযোগ ও মর্যাদা লাভ করে। এটি একটি মূল মানবাধিকার। গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র-সমাজে কেউ বঞ্চনার শিকার হলে জোরালো প্রতিবাদের পরিবেশ থাকে, সে কারণে নারী-পুরুষ বা অন্য যেকোনো লিঙ্গের ভেদরেখা তীব্র হতে পারে না এবং ক্রমান্বয়ে সমানাধিকার নিশ্চিত হওয়ার পথে অগ্রসর হয়।’
তিনি বলেন, ‘গণতন্ত্র হলো একটি সর্বজনীন মূল্যবোধ ও রাজনৈতিক পদ্ধতি, জনগণের নিজস্ব রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক পরিসর নির্ধারণে স্বাধীনভাবে প্রকাশিত ইচ্ছা এবং জীবনের সব ক্ষেত্রে তাদের পূর্ণ অংশগ্রহণের ওপর ভিত্তি করে গড়ে ওঠে। গত বছরের জুলাই মাসে ছাত্র-জনতার এক নজিবিহীন গণঅভ্যুত্থানে ৫ আগস্ট ইতিহাসে এক ভয়ংকর স্বৈরশাসনের পতন ঘটে। এখন তাই ঐক্যবদ্ধভাবে বাংলাদেশে গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা করার লক্ষ্যে আমাদের একযোগে কাজ করে যেতে হবে। আমাদের রাষ্ট্র মেরামতের ভিত্তি হবে অবাধ, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন; বিচার বিভাগ ও গণমাধ্যমের স্বাধীনতা এবং গণতন্ত্রের সব মূলনীতির প্রাতিষ্ঠানিক প্রয়োগ। ইনশাআল্লাহ আমরা এমন একটি বাংলাদেশ গড়ে তুলব, যেখানে নিশ্চিত হবে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের সমৃদ্ধি ও স্বনির্ভরতা, অন্তর্ভুক্তিমূলক ও উদার রাজনৈতিক পরিবেশ এবং সামাজিক স্থিতি ও ন্যায়পরায়ণতা।’
মন্তব্য