বছর ঘুরে এসেছে ২২ শ্রাবণ। বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ৮০তম প্রয়াণ দিবস আজ।
১৩৪৮ বঙ্গাব্দের এদিন বাঙালির মনন-চিন্তা-চেতনার সঙ্গে নিবিড়ভাবে মিশে থাকা এই কবির জীবনাবসান ঘটে।
বর্ষা ঋতু নিয়ে রবীন্দ্রনাথ রচনা করেছেন অসংখ্য কবিতা, ছোটগল্প, গান। সেই বর্ষাতেই চিরবিদায় নেন তিনি।
রবীন্দ্রনাথ বাংলা সাহিত্যকে পৌঁছে দিয়েছেন বিশ্বদরবারে। তার লেখনী সমৃদ্ধ করেছে বাংলা সাহিত্যকে।
১২৬৮ বঙ্গাব্দের ২৫শে বৈশাখ কলকাতার জোড়াসাঁকোর ঠাকুর পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। তার মা সারদাসুন্দরী দেবী ও বাবা কলকাতার বিখ্যাত জমিদার ও ব্রাহ্মসমাজের ধর্মগুরু দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর।
রবীন্দ্রনাথ শৈশবে কলকাতার ওরিয়েন্টাল সেমিনারি, নরম্যাল স্কুল, বেঙ্গল একাডেমি ও সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজিয়েট স্কুলে পড়াশোনা করেন।
জোড়াসাঁকোর বাড়িতে অথবা বোলপুর ও পানিহাটির বাগানবাড়িতে ছেলেবেলায় ঘুরে বেড়াতে পছন্দ করতেন ঠাকুর বাড়ির ছোট ছেলে রবীন্দ্রনাথ। চার দেয়ালের মাঝে আটকে না রেখে তিনি নিজেকে মেলে ধরেছিলেন প্রকৃতির কাছে।
রবীন্দ্রনাথের সাহিত্যে হাতে খড়ি আট বছর বয়সে। শুরুটা কবিতা দিয়ে। কবিতাই তাকে তুলে ধরে বিশ্বদরবারে। তিনি হয়ে ওঠেন বিশ্বকবি।
১৮৭৪ সালে ভারতের ‘তত্ত্ববোধিনী’ পত্রিকায় তার লেখা কবিতা ‘অভিলাষ’ প্রকাশিত হয়। এটিই তার প্রথম প্রকাশনা।
১৭ বছর বয়সে ১৮৭৮ সালে তিনি প্রথমবার ইংল্যান্ডে যান। ১৮৮৩ সালে তার বিয়ে হয় মৃণালিনী দেবীর সঙ্গে। ১৮৯০ সাল থেকে রবীন্দ্রনাথ পূর্ববঙ্গের শিলাইদহের জমিদারি এস্টেটে থাকা শুরু করেন।
১৯১৩ সালে ‘গীতাঞ্জলি’ কাব্যগ্রন্থের ইংরেজি অনুবাদের জন্য তিনি সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পান। তার নোবেল জয় বাংলা ভাষা ও সাহিত্যকে এনে দেয় গৌরবের মুকুট। এশিয়া মহাদেশে সাহিত্যে নোবেল পাওয়া তিনিই প্রথম লেখক।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর একাধারে কবি, ঔপন্যাসিক, সংগীতস্রষ্টা, নাট্যকার, চিত্রকর, ছোটগল্পকার, প্রাবন্ধিক, অভিনেতা, কণ্ঠশিল্পী ও দার্শনিক।
তাকে ‘গুরুদেব’, ‘কবিগুরু’ ও ‘বিশ্বকবি’ অভিধায় ভূষিত করা হয়।
তার জীবদ্দশায় এবং মৃত্যুর পরে মিলিয়ে ৫২টি কাব্যগ্রন্থ, ৩৮টি নাটক, ১৩টি উপন্যাস, ৩৬টি প্রবন্ধ ও অন্য গদ্যসংকলন প্রকাশিত হয়।
রবীন্দ্রনাথের সব লেখা ৩২ খণ্ডে ‘রবীন্দ্র রচনাবলী’ নামে প্রকাশিত হয়েছে।
তার ছোটগল্প ৯৫টি, গান এক হাজার ৯১৫টি। তিনি প্রায় দুই হাজার ছবি এঁকেছেন।
১৯৪০ সালে অসুস্থ হওয়ার পর আর সেরে উঠতে পারেননি রবীন্দ্রনাথ। দীর্ঘ রোগভোগের পর ১৯৪১ সালের ২২ শ্রাবণ জোড়াসাঁকোর বাসভবনেই শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন বাংলা সাহিত্যের এই প্রবাদপুরুষ।
আরও পড়ুন:সাম্যবাদের কবি সুকান্ত ভট্টাচার্যের ৯৮তম জন্মবার্ষিকী বৃহস্পতিবার।
তরুণ এ বিপ্লবী কবি ১৯২৬ সালের ১৫ আগস্ট কলকাতার কালীঘাটের মহিমা হালদার স্ট্রিটে মামা বাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবার নাম নিবারণ ভট্টাচার্য ও মা সুনীতি দেবী।
‘ছাড়পত্র’, ‘ঘুম নেই’, ‘পূর্বাভাস’, ‘অভিযান’, ‘হরতাল’ কবি সুকান্ত ভট্টাচার্যের উল্লেখযোগ্য কাব্যগ্রন্থ। তার রচিত কাব্যগুলো এখনও বিপ্লবীদের অনুপ্রেরণা জোগায়।
ভারতে জন্মগ্রহণ করলেও কবির পূর্বপুরুষের নিবাস গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়া উপজেলার আমতলী ইউনিয়নের উনশিয়া গ্রামে। বর্তমানে কবির পিতৃভিটায় তার নামে সরকারিভাবে একটি অডিটোরিয়াম ও লাইব্রেরি করা হয়েছে। কবির পৈতৃক বাড়ি দেখার জন্য দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে দর্শনার্থীরা আসেন।
এ ছাড়াও প্রতি বছর মার্চ মাসের প্রথম সপ্তাহে কবির পূর্বপুরুষের ভিটায় পাঁচ দিনব্যাপী গ্রামীণ মেলার আয়োজন করা হয়। এ মেলায় ভারতসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে কবিপ্রেমীরা অংশ নেন, তবে কবির জন্ম ও মৃত্যুর দিনে এ উপজেলায় সরকারি বা বেসরকারিভাবে তেমন কোনো অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয় না।
কবি মিন্টু রায় বলেন, ‘বাংলা সাহিত্যে অসাধারণ অবদান রেখে গেছেন কবি সুকান্ত ভট্টাচার্য। কবির স্মরণে প্রতি বছর মার্চ মাসের প্রথম সপ্তাহে কোটালীপাড়ায় সুকান্ত মেলা হয়।
‘বছরে একটি মেলার আয়োজন করে কবি সুকান্তকে আগামী প্রজন্মের কাছে তুলে ধরা সম্ভব নয়। আমি চাইব জাতীয়ভাবে কবি সুকান্ত ভট্টাচার্যের জন্ম ও মৃত্যুবার্ষিকী যেন পালন করা হয়।’
উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী কোটালীপাড়া শাখার সাধারণ সম্পাদক অশোক কর্মকার বলেন, ‘প্রতি বছর আমরা আমাদের সংগঠনের পক্ষ থেকে কবির জন্ম ও মৃত্যুদিনে তার ভাস্কর্যে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদনসহ আলোচনা সভার আয়োজন করে থাকি। এ বছর দেশের প্রেক্ষাপট একটু ভিন্ন রয়েছে। তাই কয়েক দিন পরে আমরা কবির জন্মদিন পালন করব।’
কবি সুকান্ত সেবা সংঘের সভাপতি অ্যাডভোকেট দেলোয়ার হোসেন সরদার বলেন, ‘সুকান্তের বাবা নিবারণ ভট্টাচার্য মাদারীপুরে চাকরি করতেন। দেশ বিভক্তের আগেই তিনি কোটালীপাড়ার পৈতৃক ভিটা ফেলে রেখে কলকাতা চলে যান। পরে আমরা মামলা করে কবির পৈতৃক ভিটামাটি অবৈধ দখলদারদের হাত থেকে উদ্ধার করি।
‘কবির স্মৃতি ধরে রাখতে কবির পৈতৃক ভিটায় অডিটোরিয়াম ও লাইব্রেরি নির্মাণ করেছে সরকার। এখানে রয়েছে একটি সংগ্রহশালা। আগামী প্রজন্মের কাছে কবির বিপ্লবী চেতনাকে তুলে ধরতে হবে। তা হলেই নতুন প্রজন্ম কবির জীবন ও আদর্শ সম্পর্কে জানতে পারবে।’
কবি সুকান্ত ভট্টাচার্য ১৯৪৭ সালের ১৩ মে ২১ বছর বয়সে কলকাতায় মৃত্যুবরণ করেন।
আরও পড়ুন:বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক পদে নিয়োগের ২৩ দিনের মাথায় পদত্যাগ করলেন অধ্যাপক হারুন-উর-রশীদ আসকারী। গত ১৮ জুলাই বাংলা বাংলা একাডেমিতে কবি মুহম্মদ নূরুল হুদার স্থলাভিষিক্ত হয়েছিলেন তিনি।
শনিবার বাংলা একাডেমির জনসংযোগ উপবিভাগের উপ-পরিচালক নার্গিস সানজিদা সুলতানা সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে এ তথ্য জানান।
চলতি বছরের ১৮ জুলাই এক প্রজ্ঞাপনে তিনি বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক পদে নিযুক্ত হন। আর দায়িত্ব গ্রহণ করেন ২৪ জুলাই।
একুশে পদক ও বাংলা অ্যাকাডেমি পুরস্কার পাওয়া কবি অসীম সাহা মারা গেছেন। মঙ্গলবার বিকেলে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৭৫ বছর।
জানা গেছে, কবি দীর্ঘদিন ধরে অসুস্থ ছিলেন। পারকিনসন্স রোগে আক্রান্ত কবি বিষণ্নতায়ও ভুগছিলেন। নিজে থেকে কোনোকিছু খেতে পারতেন না। শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে গত মাসে তাকে হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়।
কবি অসীম সাহা ১৯৪৯ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি নেত্রকোণা জেলায় মামাবাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন। তার পৈতৃক নিবাস মাদারীপুর জেলায়।
অসীম সাহার বাবা অখিলবন্ধু সাহা ছিলেন একজন অধ্যাপক। কবি ১৯৬৫ সালে মাধ্যমিক এবং ১৯৬৭ সালে মাদারীপুর নাজিমুদ্দিন মহাবিদ্যালয় থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করেন।
১৯৬৯ সালে ভর্তি হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা বিভাগে। মুক্তিযুদ্ধের পর ১৯৭৩ সালে তিনি স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন।
কবি অসীম সাহার লেখা উল্লেখযোগ্য গ্রন্থের মধ্যে রয়েছে- ‘পূর্ব পৃথিবীর অস্থির জ্যোৎস্নায়’, ‘কালো পালকের নিচে’, ‘পুনরুদ্ধার’, ‘উদ্বাস্তু’, ‘মধ্যরাতের প্রতিধ্বনি’ ‘অন্ধকারে মৃত্যুর উৎসব’, ‘মুহূর্তের কবিতা’ ও ‘ম-বর্ণের শোভিত মুকুট’।
সাহিত্যে অবদানের জন্য ২০১৯ সালে বাংলাদেশ সরকার তাকে একুশে পদকে ভূষিত করে। ২০১১ সালে তিনি বাংলা অ্যাকাডেমি সাহিত্য পুরস্কার পান।
এছাড়াও কবি অসীম সাহা আলাওল সাহিত্য পুরস্কার (১৯৯৩) ও শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন পুরস্কারসহ (২০১২) আরও বিভিন্ন সম্মাননা অর্জন করেছেন।
মানিকগঞ্জের শিবালয়ে বর্ণাঢ্য আয়োজনে মধ্য দিয়ে জাতীয় কবি নজরুল ইসলামের ১২৫তম জন্মবার্ষিকী পালিত হয়েছে।
শনিবার সকালে জেলা প্রশাসন ও সাংস্কৃতিক মন্ত্রণালয়ের আয়োজনে শিবালয় উপজেলার তেওতা জমিদার বাড়ি প্রাঙ্গণে কবি নজরুল ইসলাম ও কবিপত্নী আশালতা সেনগুপ্তার (প্রমিলা) প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করা হয়। এরপর বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা বের হয়।
শোভাযাত্রা শেষে আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এছাড়া জাতীয় কবির ১২৫তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে দিনব্যাপী কবিতা আবৃতি, নাটক, গল্প ও রচনা প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়।
শিবালয় উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মো. বেলাল হোসেনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে মানিকগঞ্জের স্থানীয় সরকার শাখার উপ-পরিচালক সানজিদা জেসমিন, নজরুল গবেষক অধ্যাপক ড. নিরঞ্জন অধিকারী, সাবেক জেল শিক্ষা কর্মকর্তা মোহাম্মদ আব্দুল মোন্নাফ খান, কৃষিবিদ রফিকুল ইসলামসহ অন্যান্যরা বক্তব্য রাখেন। এ সময় বিভিন্ন স্কুল-কলেজের শিক্ষক-শিক্ষার্থীসহ প্রশাসনের কর্মকর্তা, নজরুল অ্যাকাডেমির সদস্য ও স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন।
জাতীয় কবির স্মৃতিবিজড়িত তেওতা গ্রামে নজরুল-প্রমিলা বিশ্ববিদ্যালয়, নজরুল গবেষণা কেন্দ্র ও জাদুঘর নির্মাণের দাবি করেন নজরুল গবেষক অধ্যাপক ড. নিরঞ্জন অধিকারী। একইসঙ্গে কবি ও কবিপত্নী প্রমিলার স্মৃতিবিজড়িত তেওতা জমিদার বাড়ি সংস্কার ও পুকুর ঘাট রক্ষণাবেক্ষণে সরকারের কাছে জোর দাবি জানান তিনি।
নজরুল গবেষক জানান, ১৯০৮ সালে শিবালয়ের তেওতা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন আশালতা সেনগুপ্তা ওরফে দোলন বা দুলি। আশালতা সেনগুপ্তা ছিলেন বাবা বসন্ত কুমার ও মা গিরিবালা দেবীর একমাত্র সন্তান। তার বাবা বসন্ত কুমার সেনগুপ্ত ত্রিপুরায় নায়েবের পদে চাকরি করতেন। তার কাকা ইন্দ্র কুমার সেনগুপ্ত ত্রিপুরায় কোর্ট অফ ওয়ার্ডসের ইন্সপেক্টর ছিলেন। চাকরি সূত্রে আশালতার বাবা বসন্ত কুমার পরিবার নিয়ে তেওতায় বসবাস করতেন এবং তার কাকা ইন্দ্র কুমার পরিবার পরিজন নিয়ে বসবাস করতেন কুমিল্লায়।
তবে হঠাৎ করে বসন্ত কুমারের মৃত্যু হলে কাকা ইন্দ্র কুমারের সঙ্গে কুমিল্লায় চলে যান আশালতা ও তার মা গিরিবালা বেদী। এরইমধ্যে কাজী নজরুল ইসলাম তার বন্ধু আলী আকবর খানের সঙ্গে একবার কুমিল্লায় বেড়াতে যান এবং সেখানে ইন্দ্র কুমার সেনগুপ্তের বাড়িতে আশালতার সঙ্গে তার পরিচয় হয়। এরপর তাদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। আশলতা সেনগুপ্তার টানে পাঁচবার কুমিল্লায় যান কাজী এবং তিনবার আসেন তেওতা গ্রামে। তেওতা জমিদার বাড়ির পাশেই ছিল তাদের বাড়ি।
নজরুল জেল থেকে মুক্তি পেয়ে কুমিল্লায় গেলে তাদের সম্পর্কের বিষয়টি জানাজানি হলে সামাজিক চাপে মা গিরিবালা দেবী মেয়ে আশালতা সেনগুপ্তাকে নিয়ে কলকাতায় চলে যান। এরপর ১৯২৪ সালে গিরিবালা দেবীর ইচ্ছায় নজরুল ও আশালতার বিয়ে হয়। প্রেম চলাকালে আশালতাকে প্রমিলা নামে ডাকতেন কবি।
তিনি জানান, শিবালয় উপজেলার তেওতা গ্রামে কবি নজরুল ও তার পত্নী প্রমিলার স্মৃতি জড়িয়ে আছে। বিয়ের পরও তারা বেশ কয়েকবার এ গ্রামে এসেছিলেন।
তেওতা জমিদার বাড়ির শান বাঁধানো পুকুরে নজরুল ইসলাম সাঁতার কেটেছেন, পুকুরপাড়ের বকুল গাছের তলায় বসে বাঁশি বাজিয়েছেন। এমনকি জমিদার বাড়ির নবরত্ন মঠের দোল উৎসবেও যোগ দিয়েছিলেন।
সবুজ শ্যামল তেওতা গ্রামের পাশ দিয়ে বয়ে গেছে যমুনা নদী। তেওতা গ্রামের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যে মুগ্ধ হয়ে কবি লিখেছিলেন, ‘আমার কোন কূলে আজ ভিড়ল তরী এ কোন সোনার গাঁয়।’
প্রমিলার প্রতি মুগ্ধ হয়ে তিনি লিখেছিলেন, ‘নীলাম্বরী শাড়ি পরি নীল যমুনায় কে যায়।’
এ ছাড়াও তেওতায় বসে কবি ‘ছোট হিটলার’, ‘লিচু চোর’ ও ‘হারা ছেলের চিঠি’র মতো সাহিত্য রচনা করেছেন। এসবের মাধ্যমে নজরুল ইসলাম তেওতা গ্রামের প্রতিচ্ছবি ফুটিয়ে তুলেছেন।
আরও পড়ুন:রবীন্দ্রনাথের চিন্তা-চেতনা দ্বারা প্রভাবিত হয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশ স্বাধীন করেছেন বলে মনে করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ এস এম মাকসুদ কামাল।
তিনি বলেন, ‘রবীন্দ্রনাথের চিন্তা-চেতনায় প্রভাবিত হয়ে বঙ্গবন্ধু অসাম্প্রদায়িক চেতনা, গণতান্ত্রিক ও মানবিক মূল্যবোধ, দেশপ্রেম, মাটি ও মানুষের প্রতি অকৃত্রিম ভালোবাসা নিয়ে সারা জীবন আন্দোলন-সংগ্রাম ও অপরিসীম ত্যাগের মাধ্যমে আমাদের স্বাধীন জাতিরাষ্ট্র উপহার দিয়েছেন।’
বুধবার ঢাবির ছাত্র শিক্ষক কেন্দ্রে (টিএসসি) বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ১৬৩তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভায় সভাপতির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
‘সোনার বাংলা স্বপ্ন ও বাস্তবতা: রবীন্দ্রনাথ থেকে বঙ্গবন্ধু’ প্রতিপাদ্যকে ধারণ করে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
উপাচার্য বলেন, ‘মানুষকে ভালোবেসে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর জালিয়ানওয়ালাবাগ হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে ব্রিটিশ সরকার প্রদত্ত নাইটহুট উপাধি ত্যাগ করেছিলেন। ঠিক তেমনি নিজের জন্য খোঁড়া কবরের সামনে দাঁড়িয়ে পাকিস্তানি শাসকদের সঙ্গে বাঙালির অধিকার প্রতিষ্ঠা ও মুক্তির ব্যাপারে আপোষ করেননি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। এভাবেই বঙ্গবন্ধু ও রবীন্দ্রনাথের দর্শন ও চিন্তা-ভাবনায় অপূর্ব মিল রয়েছে।’
অধ্যাপক মাকসুদ কামাল বলেন, ‘পৃথিবী যতদিন থাকবে ততদিন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কর্ম, চিন্তা-ভাবনা, আদর্শ ও দর্শন বেঁচে থাকবে। বঙ্গবন্ধু সারা জীবন কৃষক, শ্রমিক ও মেহনতি মানুষের মুক্তির জন্য আন্দোলন-সংগ্রাম করেছেন, আর রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর কবিতা, গল্প, গান, রচনা, সাহিত্য ও শিল্পকর্মে দরিদ্র কৃষক ও শ্রমিকের মুক্তির গান গেয়েছেন। তারা উভয়ই অসাম্প্রদায়িক চেতনা ধারণ, উগ্র জাতীয়তাবাদ পরিহার এবং আত্মশুদ্ধির পন্থা অবলম্বন করেছেন।’
আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ সামাদ সম্মাননীয় অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন। এতে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বাংলা বিভাগের অধ্যাপক ড. সৈয়দ আজিজুল হক। অনুষ্ঠান সঞ্চালন করেন রেজিস্ট্রার প্রবীর কুমার সরকার।
অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ সামাদ বলেন, ‘রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তার কবিতা ও সাহিত্যকর্মে সমাজের নানা অসঙ্গতি, কুসংস্কার, বৈষম্য, মানুষের কষ্ট, প্রকৃতি, পরিবেশ, মানবপ্রেমসহ বিভিন্ন বিষয় তুলে ধরেছেন। বঙ্গবন্ধু এবং রবীন্দ্রনাথ উভয়ই উগ্র জাতীয়তাবাদের বিরোধী ছিলেন। তারা উভয়ই বিশ্বাস করতেন, উগ্র জাতীয়তাবাদ সমাজে সংঘাতের সৃষ্টি করে।’
অসাম্প্রদায়িক ও মানবিক মূল্যবোধসম্পন্ন সমাজ প্রতিষ্ঠায় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের চিন্তাভাবনা ও দর্শন সকলের সামনে সবসময় তুলে ধরতে হবে বলে উল্লেখ করেন অধ্যাপক সামাদ।
মূল প্রবন্ধে অধ্যাপক ড. সৈয়দ আজিজুল হক বলেন, ‘সোনার বাংলা প্রতিষ্ঠায় বঙ্গবন্ধু ও রবীন্দ্রনাথের ভাবনায় ও কর্মে অনেক মিল ছিল। বাঙালির ন্যায়সঙ্গত অধিকার আদায়ে, আত্মশক্তি অর্জনে উভয়েই সোচ্চার ছিলেন। রবীন্দ্রনাথের শ্রেষ্ঠ সৃজনশীল কাজগুলো তৎকালীন পূর্ববঙ্গের গ্রাম্যজীবন ও পদ্মাপাড়ের মানুষের জীবন নিয়ে রচিত।’
সৈয়দ আজিজুল হক বলেন, ‘রবীন্দ্রনাথ যেমন লেখনির মাধ্যমে মানুষের চিন্তা-চেতনার পরিবর্তন করে সমাজ সংস্কার করতে চেয়েছেন, তেমনি বঙ্গবন্ধু তার দীর্ঘ সংগ্রামী জীবনে অপরিসীম ত্যাগের মাধ্যমে স্বাধীন ও সার্বভৌম সোনার বাংলা প্রতিষ্ঠায় এককভাবে নেতৃত্ব দিয়েছেন।’
আলোচনা পর্ব শেষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সংগীত বিভাগ ও নৃত্যকলা বিভাগের যৌথ উদ্যোগে এক মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিবেশিত হয়।
রমজান উপলক্ষে বিশেষ আলোচনা সিরিজ শুরু করেছে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব রিসার্চ অ্যান্ড এডুকেশন (বিআইআরই)।
গত ১৫ মার্চ এ আলোচনা শুরু হয়, যা চলবে ৫ এপ্রিল পর্যন্ত। এটি প্রতি শুক্রবার অনুষ্ঠিত হচ্ছে।
আলোচনার প্রথম পর্বে ১৫ মার্চ বিকেল পৌনে পাঁচটায় বাংলায় সুফি দর্শন নিয়ে কথা বলেন তাহমিদাল জামি। দ্বিতীয় পর্বে মধ্যযুগের বাংলা সাহিত্যে ইসলাম ও ইহজাগতিকতা নিয়ে একই দিন সন্ধ্যা ৭টায় আলাপ শুরু করেন পারভেজ আলম।
আগামী ২২ মার্চ বেলা তিনটায় আলোচনার তৃতীয় পর্বে বাংলায় বৈষ্ণব ধর্ম নিয়ে কথা বলবেন মুহাম্মদ তানিম নওশাদ। একই বক্তা ওই দিন সন্ধ্যা সাতটায় চতুর্থ পর্বে বাংলায় খ্রিষ্ট ধর্ম নিয়ে আলোচনা করবেন।
আলোচনা সিরিজের পঞ্চম পর্বে আগামী ২৯ মার্চ সন্ধ্যা সাতটায় কথা বলবেন অধ্যাপক জিনবোধি মহাথেরো।
সাত পর্বের এ সিরিজের সমাপনী দিন ষষ্ঠ ও সপ্তম পর্বের আলোচনা হবে। ওই দিন বেলা তিনটা থেকে বাংলার ফকিরি দর্শন নিয়ে আলাপ করবেন অরূপ রাহী। আর সন্ধ্যা সাতটায় বাংলাদেশ ও ইউরোপের ধর্মের পর্যালোচনা বিষয়ে কথা বলবেন গৌতম দাস।
আলাপগুলো দেখা যাবে বিআইআরইর ইউটিউব চ্যানেলের এই লিংকে।
আরও পড়ুন:শেষ হলো বাঙালির প্রাণের অমর একুশে বইমেলা। বিদায়ের সুরে পর্দা নামল এবারের অধিবর্ষের বইমেলায়। একইসঙ্গে শুরু হলো আগামী বছরের ভাষার মাস ফেব্রুয়ারির প্রতীক্ষা।
চলতি বছরের আয়োজনে ৬০ কোটি টাকার বেশি বই বিক্রি হয়েছে। নতুন বই প্রকাশ হয়েছে ৩ হাজার ৭৫১টি। গত বছর মেলায় বিক্রি হয়েছিল ৪৭ কোটি টাকা মূল্যের বেশি। আর নতুন বইয়ের সংখ্যা ছিলো ৩ হাজার ৭৩০টি৷
এবারের মেলায় শুক্রবার (১ মার্চ) পর্যন্ত দর্শনার্থীর সংখ্যা ৬০ লাখের কাছাকাছি। নতুন ৬০০ বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করা হয়েছে। মেলায় ৯ শতাধিক স্টল ও ৬৭০টি প্রকাশনী ছিল।
শেষ দিন শনিবার বইমেলা প্রাঙ্গণ ঘুরে দেখা মেলে ভিন্ন চিত্র। অন্তিম দিনে ছিলো না অন্যান্য দিনের মতো ভিড়। অন্য দিনের তুলনায় জমেনি মেলাও। দর্শনার্থীর সংখ্যা ছিল খুবই কম। স্টলে স্টলে শুধুই ক্রেতা ও পাঠকের ভিড়। বইপ্রেমীদের ব্যাগ ভর্তি বই কিনতে দেখা যায়। অধিকাংশ পাঠককে হাতে বই নিয়ে ঘুরতে দেখা গেছে। বই ছাড়া মেলা প্রাঙ্গণ ছাড়ছিলেন না কেউই।
এদিন ব্যস্ত সময় পার করেন বিক্রেতা ও প্রকাশকরা। সঙ্গে ছিলেন লেখকরাও। মেলার শেষ দিন হওয়ায় বই গোছাচ্ছেন কর্মীরা। প্রদর্শনী থেকে বইগুলো প্যাকেজিং করে বিদায়ের জন্য প্রস্তুতি নেয়া চলতে থাকে সন্ধ্যার পর থেকেই। তবে বাংলা একাডেমির নির্দেশনায় কোনো প্রকাশনীই এদিন অবশিষ্ট বই মেলা থেকে নিয়ে যেতে পারেনি।
বেশ কয়েকজন বিক্রয়কর্মী জানান, মেলায় শেষ দিন দর্শনার্থী কম হলেও বেচাকেনা ভালো হয়েছে। যারা স্টলে আসছেন তাদের প্রায় সবাই বই কিনেছেন। কেবল ঘুরতে আসা মানুষের সংখ্যা খুবই কম।
মেলায় আসা লিমন ইসলাম লিটন বললেন, ‘শেষ দিন মেলায় এসেছি। প্রথম দিকে একবার এসেছিলাম। এখন শুধু তালিকা ধরে বই কিনেছি। এবারের মেলায় এখনও আগের ফিকশনগুলোই চলছে। তবে বইমেলা বেশ ভালো চলেছে বলে মনে হয়েছে।’
শব্দশৈলী প্রকাশনীর প্রকাশক ইফতেখার আমীন বলেন, ‘মেলার সময় বাড়ানোর কারণে বেশ ভালো বিক্রি হয়েছে। আজ (শনিবার) বই কেনেননি এমন ক্রেতা মেলায় চোখে পড়েনি। প্রবন্ধ, ইতিহাস, মুক্তিযুদ্ধ, স্বাস্থ্যবিষয়ক ও বাচ্চাদের নৈতিকতার বই বেশি বেচাকেনা হয়েছে।’
অনুপম প্রকাশনীর প্রকাশক মিলন কান্তি নাথ বলেন, ‘বইমেলার সময় বৃদ্ধি করায় বড় বড় প্রকাশনীগুলো লাভবান হয়েছে। আমাদের বেচাকেনা বেশ ভালোই হয়েছে। ক্রেতারা এসেছেন, বই কিনেছেন। এবারের বইমেলা বেশ ভালোভাবেই গেল।’
এদিকে অমর একুশে বইমেলার ৩১তম দিনে শনিবার মেলা শুরু হয় সকাল ১১টায় এবং চলে রাত ৯টা পর্যন্ত। শেষ দিন মেলায় নতুন বই এসেছে ১৪৯টি।
বিকেল ৫টায় মেলার সমাপনী অনুষ্ঠানে শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক কবি মুহম্মদ নূরুল হুদা। ‘অমর একুশে বইমেলা ২০২৪’-এর সদস্য সচিব ডা. কে এম মুজাহিদুল ইসলামের লিখিত প্রতিবেদন পাঠ করেন একাডেমির উপ-পরিচালক ড. সাহেদ মন্তাজ।
সমাপনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা ও সংস্কৃতি বিষয়ক উপদেষ্টা ড. কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী। সম্মানিত অতিথি ছিলেন সংস্কৃতি বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী বেগম নাহিদ ইজাহার খান। বিশেষ অতিথি ছিলেন সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব খলিল আহমদ।
বক্তব্য দেন সহযোগী প্রতিষ্ঠান বিকাশ লিমিটেড-এর সিএমও মীর নওবত আলী।
সভাপতিত্ব করেন বাংলা একাডেমির সভাপতি কথাসাহিত্যিক সেলিনা হোসেন।
অনুষ্ঠানে সম্প্রতি বেইলি রোডে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে নিহতদের স্মরণে দাঁড়িয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।
কবি মুহম্মদ নূরুল হুদা বলেন, ‘এবার ছিল অধিবর্ষের বইমেলা। নির্ধারিত ২৯ দিনের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় অতিরিক্ত দুদিন যুক্ত হয়ে ৩১ দিনের দীর্ঘ বইমেলা শেষ হয়েছে। ২০২৪-এর বইমেলা অতীতের যেকোনো সময়ের তুলনায় ছিল বিস্তৃত, ব্যাপক ও বর্ণাঢ্য।
‘শীতে শুরু হয়ে বইমেলা স্পর্শ করেছে বসন্ত-বাতাস। একুশের রক্তপলাশের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে মার্চের চেতনার রং।’
সদস্য সচিব তার প্রতিবেদনে বলেন, ‘মেলায় অংশগ্রহণকারী প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী এবারের বইমেলায় শেষ দিন পর্যন্ত প্রায় ৬০ কোটি টাকার বই বিক্রি হয়েছে। বাংলা একাডেমি বিক্রি করেছে এক কোটি ৩৬ লাখ টাকার বই।’
ড. কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী বলেন, ‘অমর একুশে বইমেলা বাঙালির ভাষা, শিল্প-সাহিত্য ও ঐতিহ্যের অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে উঠেছে। বইমেলার মাধ্যমে প্রতিবছর আমরা আমাদের সৃজনশীলতাকে উদযাপন করি। এই মেলা আমাদের আবেগের, জাতিসত্তার, ভাষা-সাহিত্য ও ঐতিহ্যের প্রতি ভালোবাসার মেলা।
বেগম নাহিদ ইজাহার খান বলেন, ‘বইমেলা আমাদের প্রাণের মেলা। এই মেলা দেখতে দেখতে চার দশক অতিক্রম করে এখন বিশাল আকার ধারণ করেছে। বিশ্ব বাঙালির কাছে যেমন ঠিক তেমনই বিশ্বের জ্ঞানপিপাসু মানুষের কাছেও একুশের বইমেলা এক অসাধারণ বুদ্ধিবৃত্তিক ও সাংস্কৃতিক ঘটনা হিসেবে স্বীকৃত।’
মীর নওবত আলী বলেন, ‘বাঙালির প্রাণের মেলা অমর একুশে বইমেলার সঙ্গে সহযোগিতায় থাকতে পেরে বিকাশ লিমিটেড আনন্দিত ও গর্বিত।’
খলিল আহমদ বলেন, ‘অমর একুশে বইমেলা কেবল বই বিক্রির জায়গা নয়; দল-মত, ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সবার প্রাণের মেলা। সবার সক্রিয় অংশগ্রহণ ও সহযোগিতায় এবারের মেলা সাফল্যমণ্ডিত হয়েছে।’
কথাসাহিত্যিক সেলিনা হোসেন বলেন, ‘বাংলা একাডেমি আয়োজিত অমর একুশে বইমেলা আমাদের জাতীয় জীবনের এক অসাধারণ বুদ্ধিবৃত্তিক ও সাংস্কৃতিক ঘটনা। তথ্য-প্রযুক্তির বিপুল বিকাশের পরও মুদ্রিত বইয়ের আবেদন যে কোনোমতেই ফুরিয়ে যায়নি তার প্রমাণ একুশে বইমেলায় ক্রমবর্ধমান জনসমাগম।
গুণীজন স্মৃতি পুরস্কার-২০২৪ প্রদান
অমর একুশে বইমেলা ২০২৪-এর সমাপনী অনুষ্ঠানে ২০২৩ সালে প্রকাশিত বিষয় ও গুণমানসম্মত সর্বাধিক সংখ্যক বই প্রকাশের জন্য কথাপ্রকাশ-কে চিত্তরঞ্জন সাহা স্মৃতি পুরস্কার-২০২৪ দেয়া হয়।
২০২৩ সালে প্রকাশিত গ্রন্থের মধ্যে শৈল্পিক ও গুণমান বিচারে সেরা বই বিভাগে মনজুর আহমদ রচিত ‘একুশ শতকে বাংলাদেশ: শিক্ষার রূপান্তর’ গ্রন্থের জন্য প্রথমা প্রকাশন, মঈন আহমেদ রচিত ‘যাত্রাতিহাস: বাংলার যাত্রাশিল্পের আদিঅন্ত’ গ্রন্থের জন্য ঐতিহ্য এবং আলমগীর সাত্তার রচিত ‘কিলো ফ্লাইট’ প্রকাশের জন্য জার্নিম্যান বুকস-কে মুনীর চৌধুরী স্মৃতি পুরস্কার-২০২৪ দেয়া হয়। ২০২৩ সালে প্রকাশিত শিশুতোষ বইয়ের মধ্য থেকে গুণমান বিচারে সর্বাধিক গ্রন্থ প্রকাশের জন্য রোকনুজ্জামান খান দাদাভাই স্মৃতি পুরস্কার-২০২৪ দেয়া হয় ময়ূরপঙ্খি-কে।
এবারের মেলায় অংশগ্রহণকারী প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্য থেকে নান্দনিক অঙ্গসজ্জায় সেরা প্রতিষ্ঠান হিসেবে অন্যপ্রকাশ (প্যাভিলিয়ন), নিমফিয়া পাবলিকেশন (২-৪ ইউনিট) ও বেঙ্গল বুকস (১ ইউনিট)-কে শিল্পী কাইয়ুম চৌধুরী স্মৃতি পুরস্কার-২০২৪ দেয়া হয়।
অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন বাংলা একাডেমির পরিচালক (চলতি দায়িত্ব) ড. শাহাদাৎ হোসেন এবং উপ-পরিচালক সায়েরা হাবীব।
আরও পড়ুন:
মন্তব্য