আফগানিস্তানের কান্দাহার প্রদেশে পুলিৎজারজয়ী ভারতীয় ফটোসাংবাদিক দানিশ সিদ্দিকীর লড়াইয়ের মধ্যে পড়ে নিহত হননি। তালেবান যোদ্ধারা দানিশকে ধরে নিয়ে গিয়ে বর্বরভাবে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছে বলে দাবি করেছে আফগান নিরাপত্তা বাহিনীর মুখপাত্র।
প্রথমে দাবি করা হয়েছিল, আফগান সেনা ও তালেবানের লড়াইয়ের মধ্যে পড়ে দানিশ সিদ্দিকী নিহত হন।
আফগান জাতীয় প্রতিরক্ষা ও নিরাপত্তা বাহিনীর মুখপাত্র আজমল ওমর সিনওয়ারি নিশ্চিত করে বলেছেন, দানিশ সিদ্দিকীকে তালেবান ধরে নিয়ে যায় এবং পরে তাকে হত্যা করে।
ইন্ডিয়া টুডে টিভিকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে আফগান ওই কর্মকর্তা বলেন, ‘বিচ্ছিন্নতার কোনো নিশ্চয়তা নেই। যে এলাকায় দানিশ হত্যার শিকার হয়েছেন সেটি তালেবানের নিয়ন্ত্রণাধীন। বিষয়টি এখনও তদন্ত হচ্ছে। প্রত্যক্ষদর্শী খুঁজে পেতে সময় লাগছে।’
গত সপ্তাহে আমেরিকাভিত্তিক ওয়াশিংটন এক্সামিনার ম্যাগাজিন প্রথমবারের মতো দাবি করে, দানিশ সিদ্দিকী কোনো ক্রসফায়ারে নিহত হননি, তাকে তালেবান যোদ্ধারা ধরে নিয়ে গিয়ে বর্বরোচিতভাবে হত্যা করে। দানিশের পরিচয় নিশ্চিত হওয়ার পরই তাকে এভাবে হত্যা করা হয়।
৩৮ বছর বয়সী দানিশ সিদ্দিকী রয়টার্সের হয়ে আফগানিস্তানে একটি অ্যাসাইনমেন্টে ছিলেন। ১৭ জুলাই কান্দাহার শহরের স্পিন বলদাখ জেলায় আফগান ও তালেবান সেনাদের মধ্যে সংঘর্ষের পর দানিশের মরদেহ পায় আফগান পুলিশ।
ওই পত্রিকার প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘তালেবান যখন সিদ্দিকীকে ধরে তখন তিনি জীবিত ছিলেন। তালেবান সিদ্দিকীর পরিচয় যাচাই করে এবং তারপর তার মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করে। কমান্ডার এবং তার দলের অন ্রসদস্যরা তাকে উদ্ধারে গিয়ে নিহত হন।’
আজমল ওমর সিনওয়ারি বলেন, ‘তালেবান ওই এলাকা নিয়ন্ত্রণের দাবি করছে যা সম্পূর্ণ মিথ্যা। তালেবান পাকিস্তানের আর্থিক সহায়তা ও সমর্থনে আফগানিস্তানের সরকারের সঙ্গে যুদ্ধে লিপ্ত হয়েছে।’
আফগান বাহিনীর গাড়িবহরে রকেট হামলার ছবিসহ বেশ কিছু ছবি তুলেছিলেন দানিশ সিদ্দিকী।
কান্দাহার প্রদেশের কান্দাহার শহরের ভেতর ও আশপাশে তালেবানের সঙ্গে আফগান সেনাবাহিনীর লড়াই তীব্র রূপ নিলে গত ১০ জুলাই ভারতের কনস্যুলেট থেকে দেশটির বিমানবাহিনীর একটি ফ্লাইটে কূটনীতিক, কর্মচারী ও নিরাপত্তা কর্মকর্তাসহ প্রায় ৫০ জনকে দেশে ফিরিয়ে নিয়েছে নয়াদিল্লি।
আরও পড়ুন:বাংলাদেশের সঙ্গে বাণিজ্য যুদ্ধে জড়ানোর ইচ্ছা ভারত সরকারের। এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম টাইমস অব ইন্ডিয়া।
গত ৮ এপ্রিল বাংলাদেশকে দেওয়া ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করে দেয় ভারত। এর এক সপ্তাহ পর অন্তর্বর্তী সরকার নির্দেশনা জারি করে ভারত থেকে স্থল বন্দর দিয়ে বাংলাদেশে সুতা আমদানি করা যাবে না। আর স্থল বন্দর দিয়ে সুতা আমদানি বন্ধের বিষয়টির পরই টাইমস অব ইন্ডিয়া গতকাল বৃহস্পতিবার জানাল, বাংলাদেশের সঙ্গে ভারত বাণিজ্য যুদ্ধ চায় না। এছাড়া ঢাকা বাণিজ্য বিষয়ক যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে সেটির বদলে কোনো পাল্টা ব্যবস্থা দিল্লি হয়ত নেবে না বলে সংবাদমাধ্যমটির শিরোনামে দাবি করা হয়েছে।
টাইমস অব ইন্ডিয়া ভারত সরকারি সূত্রের বরাতে জানিয়েছে, নিজেদের বিমানবন্দর ও স্থল বন্দরের জট কমাতে বাংলাদেশকে দেওয়া ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করেছে ভারত। যদিও দেশটির একাধিক সংবাদমাধ্যমে বেশ ফলাও করে বলা হয়েছিল, প্রধান উপদেষ্টা ভারতের সেভেন সিস্টার্স নিয়ে মন্তব্য করার পর ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করেছে তাদের সরকার।
টাইমস অব ইন্ডিয়ার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নেপাল ও ভুটানে বাংলাদেশের পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিলের কোনো প্রভাব পড়বে না বলে ভারত সরকার আশ্বস্ত করেছে।
তারা আরও দাবি করেছে, ভারত সরকার ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিলের আগেই গত মার্চ মাসে বাংলাদেশ তিনটি বন্দর বন্ধ ও স্থল বন্দর দিয়ে সুতা আমদানির বন্ধের সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। তবে সুতা আমদানি সংক্রান্ত নির্দেশনা গত সপ্তাহে জারি করে অন্তর্বর্তী সরকার।
এছাড়া গত জানুয়ারিতে বেনাপোল কাস্টমস হাউজে বাংলাদেশ সতর্কতা বাড়ানোর যে ঘোষণা দিয়েছিল সেটিও দুই দেশের বাণিজ্য বাধাগ্রস্ত করা হয়েছিল বলে দাবি করেছে তারা।
সংবাদমাধ্যমটির প্রতিবেদনে আরও দাবি করা হয়েছে, ভারতের সঙ্গে বাণিজ্য বাধাগ্রস্ত করতে বাংলাদেশে পাকিস্তানের সঙ্গে সরাসরি বাণিজ্য শুরু করেছে। এতে ফেব্রুয়ারিতে পাকিস্তান ট্রেডিং কর্পোরেশনে মাধ্যমে ৫০ হাজার টন চাল আমদানি করা হয়।
সূত্র: টাইমস অব ইন্ডিয়া
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিশেষ দূত উইটকফ বলেছেন, ওয়াশিংটনের সাথে চুক্তি করতে চাইলে তেহরানকে অবশ্যই তার ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণসহ পারমাণবিক সমৃদ্ধকরণ কর্মসূচি সম্পূর্ণরপে ‘বাতিল’ করতে হবে। আগামী শনিবার মাস্কাটে দ্বিতীয় দফা আলোচনা শুরুর আগে এই দাবি জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।
বুধবার এক প্রতিবেদনে এই খবর জানিয়েছে মার্কিন সংবাদমাধ্যম নিউইয়র্ক টাইমস।
উইটকফের এই মন্তব্য তার আগের দিন করা মন্তব্যের সাথে সাংঘর্ষিক। কারণ, উইটকফ আগের দিন বলেছিলেন, ইরান শক্তি উৎপাদনের জন্য যদি খুব কম পরিমাণে ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করে তাহলে তাতে যুক্তরাষ্ট্রের আপত্তি থাকবে না।
অথচ মঙ্গলবার এক বিবৃতিতে উইটকফ বলেছেন, ‘মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি, স্থিতিশীলতা এবং সমৃদ্ধির জন্য যেকোনো চূড়ান্ত ব্যবস্থার মধ্যে একটি কাঠামো তৈরি করতে হবে। যার অর্থ ইরানকে তার পারমাণবিক সমৃদ্ধকরণ এবং অস্ত্রায়ন কর্মসূচি সম্পূর্ণ ‘বাতিল’ করতে হবে।
উইটকফ জানিয়েছেন, ‘বিশ্বের জন্য এটা অপরিহার্য যে আমরা একটি কঠিন, ন্যায্য চুক্তি করবো যা টেকসই হবে। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প আমাকে এটাই করতে বলেছেন।’
উইটকফের মতো একই কথা বলেছে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর। যুক্তরাষ্ট্র ইরানের ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ বাতিল চায় বলে জানায় স্টেট ডিপার্টমেন্ট।
এরআগে গত শনিবার ওমানে একটি পারমাণবিক চুক্তিতে পৌঁছাতে প্রথম দফার আলোচনায় বসে যুক্তরাষ্ট্র ও ইরান।
এতে ইরানের পক্ষ থেকে পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাঘচি এবং যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে মধ্যপ্রাচ্য বিষয়ক বিশেষ প্রতিনিধি স্টিভ উইটকফ নেতৃত্ব দেন। এই বিষয়ে তেহরান জানায়, প্রথম দফার আলোচনা ‘পারস্পরিক শ্রদ্ধার ওপর ভিত্তি করে একটি গঠনমূলক পরিবেশে হয়েছে।
ট্রাম্প সম্প্রতি ইরানকে হুমকি দিয়েছেন, যদি তারা যুক্তরাষ্ট্রের সাথে পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে নতুন চুক্তিতে পৌঁছাতে ব্যর্থ হয়, তাহলে সামরিক হামলা এবং নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হবে।
এরআগে ২০১৫ সালে ইরানের সাথে বিশ্ব পরাশক্তিগুলোর একটি চুক্তি হয়েছিল। কিন্তু প্রথম মেয়াদে ক্ষমতায় এসে ট্রাম্প সেই চুক্তি থেকে ২০১৮ সালে যুক্তরাষ্ট্রকে প্রত্যাহার করে নেন।
ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় গণহত্যা চালাচ্ছে ইসরায়েল। এর জেরে ইসরায়েলি নাগরিকদের প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে দক্ষিণ এশিয়ার দ্বীপ রাষ্ট্র মালদ্বীপ। গতকাল মঙ্গলবার মালদ্বীপ সরকার এই ঘোষণা দিয়েছে। টাইমস অব ইন্ডিয়ার এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এক বিবৃতিতে মালদ্বীপের প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ মুইজ্জুর কার্যালয় জানিয়েছে, গাজায় ইসরায়েলের ‘ক্রমাগত নৃশংসতা এবং গণহত্যার’ কারণে এই নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে।
ফিলিস্তিনিদের প্রতি ‘দৃঢ় সংকল্পের’ অংশ হিসেবে এমন উদ্যোগ নিয়েছে দেশটি। গতকাল মঙ্গলবার মালদ্বীপের সংসদে আইনটি পাস হয়। এর প্রায় সঙ্গে সঙ্গে প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ মুইজ্জু আইনটির অনুমোদন দেন। এটি অনতিবিলম্বে কার্যকর হবে বলে প্রেসিডেন্টের দপ্তরের এক কর্মকর্তা বার্তাসংস্থা এএফপিকে জানিয়েছেন।
টাইমস অব ইসরায়েলের উদ্ধৃতি অনুসারে, মুইজ্জুর কার্যালয় এক বিবৃতিতে বলেছে, ‘এই অনুমোদন ফিলিস্তিনি জনগণের বিরুদ্ধে ইসরায়েল কর্তৃক সংঘটিত অব্যাহত নৃশংসতা এবং গণহত্যার প্রতিক্রিয়ায় সরকারের দৃঢ় অবস্থানকে প্রতিফলিত করে।’
স্থানীয় গণমাধ্যমের মতে, মালদ্বীপের সংসদে ভোটদানকারী সব সংসদ সদস্যের সর্বসম্মত ভোটে এই নিষেধাজ্ঞা পাস হয়েছে। মালদ্বীপের প্রেসিডেন্ট বলেন, ‘আমরা ৭ এপ্রিল পাসপোর্ট ও অভিবাসন বিভাগকে এ সংক্রান্ত চিঠিটি দিয়েছি।’
ইসরায়েলিদের মালদ্বীপে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হবে বলে গত বছরের জুনে জানিয়েছিলেন মালদ্বীপের প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ মুইজ্জু। ওই সময় ইসরায়েলিদের প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা দিতে করণীয় ঠিক করতে কমিটি ঠিক করা হয়।
এর আগে, গত রোববার বাংলাদেশ সরকার তাদের নাগরিকদের পাসপোর্টে ‘ইসরায়েল ছাড়া’ শব্দ পুনরায় অন্তর্ভুক্তির সিদ্ধান্তের কথা জানায়। যার ফলে কার্যকরভাবে বাংলাদেশি নাগরিকরা ইসরায়েল ভ্রমণে যেতে পারবেন না।
প্রসঙ্গত, ইসরায়েলের হামলায় গাজায় এখন পর্যন্ত ৫০,০০০-এরও বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। জানুয়ারিতে যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হওয়া সত্ত্বেও, ১৮ মার্চ গাজায় আবার বিমান হামলা শুরু করে ইসরায়েল। যার ফলে যুদ্ধবিরতি কার্যত শেষ হয়। গাজায় বিমান হামলায় প্রতিদিনই প্রাণ হারাচ্ছে নারী-শিশুসহ অসংখ্য নিরাপরাধ মানুষ।
ফিলিস্তিনি সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাস সোমবার জানিয়েছে, গাজায় আটক অবশিষ্ট জিম্মির অর্ধেকের মুক্তি দেওয়া হলে ইসরাইল ৪৫ দিনের যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব দিয়েছে। জাতিসংঘ জানিয়েছে, যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে এখন এটি সবচেয়ে খারাপ মানবিক সংকটের কবলে। গাজা সিটি থেকে এএফপি এ খবর জানায়।
হামাসের একজন কর্মকর্তা এএফপিকে জানান, ইসরাইল গাজা যুদ্ধের অবসান নিশ্চিত করার জন্য ফিলিস্তিনিদের নিরস্ত্রীকরণেরও দাবি করেছে। তবে কর্মকর্তা বলেছেন, নিরস্ত্রীকরণের প্রস্তাব একটি ‘লাল রেখা’ অতিক্রম করেছে।
কর্মকর্তা এবং মিশরীয় মধ্যস্থতাকারীরা জানান, একটি ইসরাইলি প্রস্তাব পাস করেছে। প্রস্তাবে বলা হয়েছে ‘চুক্তির প্রথম সপ্তাহে অর্ধেক জিম্মির মুক্তি দেওয়া হলে কমপক্ষে ৪৫ দিনের জন্য যুদ্ধবিরতি বাড়ানো হবে ও সাহায্য প্রবেশ করবে।’
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবরের হামাস হামলা চালিয়ে ২৫১ জনকে জিম্মি করে। ওই হামলা যুদ্ধের সূত্রপাত করে।
গাজায় এখনও প্রায় ৫৮ জন বন্দী রয়েছে, ইসরাইলি সেনাবাহিনী যার ৩৪ জন মৃত বলে দাবি করে।
কর্মকর্তা আরো বলেন, হামাস নেতারা যুদ্ধবিরতি প্রস্তাব পর্যালোচনা করেন। তবে অস্ত্র প্রতিরোধের বিষয়টি একটি লাল রেখা ও আলোচনার অযোগ্য বিষয়’ বলে মন্তব্য করেছে।
ওই কর্মকর্তা বলেন, হামাসের আলোচকরা কাতারে যাচ্ছেন, যেখানে তাদের একটি অফিস রয়েছে এবং ইসরাইলের সাথে মূল মধ্যস্থতাকারী আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়েছে। হামাসের বিবৃতির বিষয়ে ইসরাইল তাৎক্ষণিকভাবে কোনো মন্তব্য করেনি।
জাতিসংঘ বলছে, চিকিৎসা সামগ্রী সরবরাহ, জ্বালানি, পানি ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের ঘাটতি রয়েছে।
জাতিসংঘের মানবিক বিষয়ক সমন্বয় অফিস (ওসিএইচএ) জানিয়েছে, ‘যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে ১৮ মাসের মধ্যে মানবিক পরিস্থিতি এখন সবচেয়ে খারাপ।’
এর আগে, কয়েক সপ্তাহ ধরে এই অঞ্চলে কোনও সাহায্য প্রবেশ না করায় পরিস্থিতি দ্রুত অবনতি হচ্ছে এবং গাজার মানবিক সংকট নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছে বলে জাতিসংঘ সতর্ক করেছে।
কর্মকর্তা বলেন, হামাস মধ্যস্থতাকারীদের জানিয়েছে, তারা স্থায়ী যুদ্ধবিরতি, গাজা উপত্যকা থেকে সম্পূর্ণ ইসরাইলি প্রত্যাহার ও সাহায্য প্রবেশের অন্তর্ভুক্ত যেকোনো প্রস্তাবে সম্মত হতে ইচ্ছুক।’
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের হামলার পর থেকে গাজায় যুদ্ধরত ইসরাইল যুদ্ধ বিরতির পরবর্তী ধাপ নিয়ে মতবিরোধের মধ্যে দিয়ে দুই মাস ধরে চলা বিরতি ভেঙে যাওয়ার পর মার্চ মাসে ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে পুনরায় অভিযান শুরু করে।
যুদ্ধবিরতি ভেঙে যাওয়ার আগে, ২ মার্চ থেকে ইসরাইল মানবিক সাহায্য বন্ধ করে দেয় এবং লাখ লাখ মানুষকে বাস্তুচ্যুত করে।
ওসিএইচএ জানিয়েছে, সাহায্য কর্মীদের ‘অবশিষ্ট মজুদের সর্বোচ্চ ব্যবহার করার জন্য রেশনিং ও সরবরাহ কমাতে’ বাধ্য করা হয়েছে।
দক্ষিণাঞ্চলীয় খান ইউনিস শহরের নাসের হাসপাতালের একজন চিকিৎসক আহমেদ আল-ফারাহ বলেন, ‘সবকিছুর ঘাটতি’ থাকা সত্ত্বেও চিকিৎসা দল অবিরাম কাজ করছে।
ফিলিস্তিনি প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস ও ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাখোঁ গাজায় ‘জরুরি’ যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানিয়েছেন।
ফিলিস্তিনের সরকারি সংবাদ সংস্থা ওয়াফা জানিয়েছে, এক ফোনালাপে ম্যাখোঁ ও আব্বাস ‘যুদ্ধবিরতির জরুরি প্রয়োজনীয়তা, মানবিক সহায়তা সরবরাহ ত্বরান্বিত করা এবং ফিলিস্তিনি জনগণের তাদের ভূমি থেকে বাস্তুচ্যুতি প্রত্যাখ্যানের বিষয়ে জোর দিয়েছেন।’
ম্যাখোঁ এক্স-এ বলেছেন, জিম্মিদের মুক্ত করতে ও লড়াই বন্ধ করতে ‘ফ্রান্স সম্পূর্ণরূপে প্রস্তুত।’ তিনি হামাসবিহীন যুদ্ধ-পরবর্তী গাজা পরিচালনার পদক্ষেপের অংশ হিসেবে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের ‘সংস্কার’ করার পক্ষেও কথা বলেছেন।
হামাসের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা তাহের আল-নুনু ইঙ্গিত দিয়েছেন যে, ‘গুরুতর বন্দী বিনিময়ের’ শর্তে ইসরাইল যুদ্ধের অবসান ঘটানোর নিশ্চয়তা দিলে হামাস সকল জিম্মিকে মুক্তি দিতে ইচ্ছুক। ‘ দখলদার বাহিনী তার প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করছে, যুদ্ধবিরতি চুক্তি বাস্তবায়নে বাধা দিচ্ছে এবং যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছে উল্লেখ করে নুনু বলেন, ‘বন্দীর সংখ্যা কোনো বিষয় নয়।’ তবে মিশরীয় ও কাতারের মধ্যস্থতাকারীদের সাথে আলোচনার পর তিনি জোর দিয়ে বলেন, হামাস তাদের অস্ত্র ত্যাগ করবে না।
ইসরাইলি সংবাদ ওয়েবসাইট ওয়াইনেট জানিয়েছে, নতুন যুদ্ধবিরতি প্রস্তাবের আওতায়, ইসরাইল যুদ্ধবিরতির দ্বিতীয় পর্যায়ের আলোচনায় অংশ নেওয়ার মার্কিন গ্যারান্টির বিনিময়ে হামাস ১০ জন জীবিত জিম্মিকে মুক্তি দেবে।
১৯ জানুয়ারি থেকে শুরু হওয়া প্রথম যুদ্ধবিরতি ভেঙে যাওয়ার আগে একাধিক জিম্মি-বন্দী বিনিময় অন্তর্ভুক্ত ছিল।
ইসরাইল প্রথম পর্যায়ের মেয়াদ বাড়ানোর চেষ্টা করে। অন্যদিকে হামাস সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের রূপরেখা অনুসারে চুক্তির অধীনে দ্বিতীয় পর্যায়ের আলোচনার ওপর জোর দেয়।
তবে ম্যাখোঁ ঘোষণা করেছেন, ফ্রান্স কয়েক মাসের মধ্যে একটি ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দিতে পারে। তিনি সোমবার আশা প্রকাশ করেন যে, ফরাসি স্বীকৃতি অন্যান্য দেশকেও অনুসরণ করতে ‘উদ্দীপনা’ দেবে। তিনি বলেন, দেশগুলো ইসরাইলকে স্বীকৃতি দেয় না তাদেরও তা দেওয়া উচিত।
ইসরাইল ম্যাখোঁর ঘোষণার তীব্র সমালোচনা করেছে। ইসরাইল জোর দিয়ে বলেছে, স্বীকৃতির পদক্ষেপগুলো অসময়ের।
নেতানিয়াহু এক বিবৃতিতে বলেন, আমাদের ভূমির কেন্দ্রস্থলে একটি ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র যেটির একমাত্র আকাঙ্ক্ষা হল ইসরাইলের ধ্বংস। সেটির ধারণা প্রচার করে প্রেসিডেন্ট ম্যাখোঁ মারাত্মক ভুল করছেন।
যুক্তরাষ্ট্রকে চাপে ফেলে ‘টাইট’ দিতেই চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং পাঁচ দিনের রাষ্ট্রীয় সফর শুরু করেছেন বলে মন্তব্য করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।
সফরের শুরুতে স্থানীয় সময় সোমবার (১৪ এপ্রিল) ভিয়েতনামের রাজধানী হ্যানয় পৌঁছান শি। হ্যানয়ের বৈঠক শেষেই এ সম্পর্কে নিজের প্রতিক্রিয়া জানান ট্রাম্প। চলতি সপ্তাহে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় চীনের প্রতিবেশী ৩টি দেশে সফর শুরু করেন চীনের প্রেসিডেন্ট।
চীনের রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থা সিনহুয়ার তথ্যমতে, শি তার সফরে ১৪ থেকে ১৫ এপ্রিল ভিয়েতনাম ও মালয়েশিয়ায় যাবেন এবং ১৫ থেকে ১৮ এপ্রিল কম্বোডিয়ায় যাবেন।
এমন একটি সময় শি এই সফর শুরু করেছেন, যখন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে শুল্কারোপ নিয়ে উত্তেজনা চলছে। এছাড়া ভিয়েতনাম, মালয়েশিয়া ও কম্বোডিয়াও ট্রাম্পের শুল্কারোপে বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়তে যাচ্ছে। ব্রিটিশ দৈনিক গার্ডিয়ানের খবরে এমন তথ্য দেওয়া হয়েছে।
সফরের প্রথমদিনে ভিয়েতনামের শীর্ষ নেতা তো লামের সঙ্গে বৈঠক করেন চীনের প্রেসিডেন্ট। এ সময় দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক সুদৃঢ়করণসহ দেশ দুটির মধ্যে সরবরাহ শৃঙ্খল মজবুত করতে বেশকিছু সমঝোতা স্মারক সই করেন শি ও লাম।
এর পরপরই হোয়াইট হাউসের ওভাল অফিসে এই বৈঠক নিয়ে প্রতিক্রিয়া জানান ট্রাম্প। যুক্তরাষ্ট্রকে ক্ষতির উদ্দেশেই এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে বলে মন্তব্য করেন ট্রাম্প।
তিনি বলেন, ‘এখানে আমি চীনেরও দোষ দেখছি না, ভিয়েতনামেরও না। খুবই ভালো একটি বৈঠক হয়েছে, যেখানে আলোচনার বিষয় হলো—কীভাবে আমরা যুক্তরাষ্ট্রকে টাইট দিতে পারি!’
বর্তমানে বিশ্ব বাণিজ্য ব্যবস্থায় একটি সংকট তৈরি হয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে এই বৈঠক খুবই গুরুত্বপূর্ণ। একদিকে, চীনের মাথার ওপর যুক্তরাষ্ট্রের আরোপিত ১৪৫ শতাংশ শুল্ক। অন্যদিকে, ভিয়েতনামের ওপর রয়েছে ওয়াশিংটনের ৪৬ শতাংশ শুল্ক। যদিও সেটি ৯০ দিনের জন্য সাময়িকভাবে স্থগিত করেছেন ট্রাম্প। তাই শঙ্কা এখনো কাটেনি। এককভাবে ভিয়েতনামের পণ্য রপ্তানির সবথেকে বড় বাজার হলো যুক্তরাষ্ট্র।
এ কারণে শুল্ক কার্যকর হলে সেটি ভিয়েতনামের অর্থনীতিতে নিশ্চিতভাবে বিরূপ প্রভাব ফেলবে। আবার চীনের অর্থনীতিকে স্থিতিশীল করতে হলে চীনেরও একটি বিকল্প বাজার দরকার। সে কারণে চীন এবার দক্ষিণ এশিয়ায় মনোযোগ দিচ্ছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
চীনের প্রেডিডেন্ট আগেই তার এই সফরের পরিকল্পনা করলেও কাকতালীয়ভাবে ট্রাম্পের শুল্কারোপের পর এই সফর আন্তর্জাতিক কূটনৈতিক অঙ্গণে বাড়তি উত্তেজনা সৃষ্টি করেছে বলে মনে করেন অনেকে।
ট্রাম্পের পাল্টা শুল্কারোপের বিপরীতে যুক্তরাষ্ট্রের শুল্কের প্রভাব কমাতে দেশটির সঙ্গে আলোচনায় জোর দিয়েছে কোনো কোনো দেশ। চীন কিংবা কানাডার মতো কিছু দেশ আবার পাল্টা শুল্কও আরোপ করেছে।
এছাড়া, চীন নিজেদের একটি বিশ্বস্ত বাণিজ্যিক অংশীদার হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক সুসংহত করার চেষ্টা করছে। আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনার প্রতি জোর দিয়েছেন শি জিনপিং।
ভিয়েতনামের সমাজতান্ত্রিক দলের পত্রিকা নিহানদানের একটি প্রতিবেদনে তিনি বলেন, ‘এই বাণিজ্যযুদ্ধে আসলে কেউই জয়ী হবে না। এই সুরক্ষাবাদ (শুল্কারোপসহ নানাভাবে বিভিন্নদেশ থেকে পণ্য আমদানি বন্ধ করা) কোনোভাবেই সুফল বয়ে আনবে না।’
ভিয়েতনামের প্রধানমন্ত্রী ফাম মিন চিনের সঙ্গে বৈঠকের পর শি বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের এই অন্যায় শুল্কারোপের বিরুদ্ধে তাদের সোচ্চার হওয়া উচিত। এ সময় রেলসহ বিভিন্ন খাতে মোট ৪৫টি চুক্তি সই করা হয়েছে বলে চিন ও ভিয়েতনামের বিভিন্ন গণমাধ্যমে বলা হয়েছে। তবে চুক্তিগুলোর বিষয়ে বিস্তারিত কোনো তথ্য জানা যায়নি।’
শুধু ভিয়েতনামই নয়; দক্ষিণ এশিয়ার আরও অনেক দেশও চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে একটি ভারসাম্য বজায় রেখে চলতে চাচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি না করতে পেরে নিজেদের পণ্যগুলো দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতে রপ্তানি করতে পারে চীন। এই আশঙ্কা থেকেই মূলত যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গেও তাল মিলিয়ে আবার চীনকেও অখুশি না করে চলতে চাইছে দেশগুলো।
চীন-যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে চলমান উত্তেজনা বিশ্বের বৃহৎ দুটির অর্থনীতির মধ্যে সম্পর্ক পুরোপুরি নষ্ট করতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন অনেকে।
আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম ব্লুমবার্গ টিভিতে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে মার্কিন অর্থমন্ত্রী স্কট বেসেন্ট বলেছেন, ‘দেশ দুটির মধ্যে সম্পর্ক নষ্ট হতে পারে। আবার সম্পর্ক টিকেও যেতে পারে। এছাড়া এক পর্যায়ে গিয়ে একটি বড় চুক্তি হতে পারে।’
কোনো চুক্তি হবে কিনা বা এই শুল্কারোপ আসলে কি ধরনের অবস্থা সৃষ্টি করবে; তা নিয়ে সন্দিহান বিশেষজ্ঞরা। ট্রাম্প ও তার কর্মকর্তারা আগেই নিশ্চিত করেছেন, ৯০ দিনের জন্য শুল্কের স্থগিতাদেশ সাময়িক।
নিজের সামাজিকমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে দেওয়া এক পোস্টে তিনি বলেছেন, ‘কোনো দেশই এখনো এই শুল্কের আওতাধীন না, চীন তো একদমই না। তারা আমাদের সঙ্গে সবচেয়ে বেশি খারাপ করেছে।’
ইউক্রেনের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় সুমি শহরে ভয়াবহ হামলা চালিয়েছে রাশিয়া। রাশিয়ার ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় অন্তত ৩০ জন নিহত হয়েছেন। সুমি শহরের ভারপ্রাপ্ত মেয়র আরতেম কোবজার গতকাল রোববার এক টেলিগ্রাম বার্তায় এ তথ্য জানান। খবর রয়টার্সের।
কোবজার বলেন, ‘এই পবিত্র পাম সানডের দিনে আমাদের শহর এক ভয়াবহ ট্র্যাজেডির মুখোমুখি হয়েছে। শত্রুরা সাধারণ নাগরিকদের লক্ষ্য করে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে। দুঃখজনকভাবে এতে ইতোমধ্যেই ৩০ জনের মৃত্যু হয়েছে’। অন্যদিকে সুমি প্রদেশের গভর্নর ভলোদিমির আরতিউখ জানিয়েছেন, শহরের কেন্দ্রস্থলে দুটি ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র আঘাত হানে।
এদিকে ইউক্রেনের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ইহর ক্লাইমেঙ্কো জানান, রোববারের এই হামলায় স্থানীয় সময় দুপুর ১২টা ২০ মিনিট পর্যন্ত ৩০ জন নিহত ও ৮৩ জন আহত হয়েছেন। যাদের মধ্যে সাতজনই শিশু। পরে এক্সে দেওয়া এক বার্তায় ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেন, ‘ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় উদ্ধার অভিযান চলছে এবং সব ধরনের জরুরি পরিষেবা কাজ করছে’।
তিনি আরও বলেন, ‘বিশ্বকে শক্তভাবে এর প্রতিক্রিয়া জানাতে হবে। যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপ এবং যারা এই যুদ্ধ ও হত্যাকাণ্ড বন্ধ করতে চায়, সবার এখন দায়িত্ব রয়েছে’।
পাশাপাশি জেলেনস্কি আবারও দাবি করে বলেন, মস্কো ইচ্ছাকৃতভাবে এই যুদ্ধ দীর্ঘায়িত করছে। তার ভাষায়, ‘রাশিয়ার ওপর চাপ বাড়ানো ছাড়া শান্তি সম্ভব নয়। আলোচনায় কখনোই ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র এবং বোমা থেমে থাকে না’।
একইসঙ্গে ইউক্রেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আন্দ্রিই সিবিহা এক এক্স বার্তায় বলেন, রাশিয়া টানা দ্বিতীয় মাসের মতো যুক্তরাষ্ট্রের পূর্ণ যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছে। যদিও ইউক্রেন গত ১১ মার্চ তা নিঃশর্তভাবে গ্রহণ করেছিল। তিনি বলেন, ‘এর পরিবর্তে রাশিয়া তাদের সন্ত্রাস বাড়াচ্ছে। আমরা আমাদের মিত্রদের কাছে অতিরিক্ত আকাশ প্রতিরক্ষা সহায়তা ও মস্কোর ওপর আরও চাপ বাড়ানোর আহ্বান জানাচ্ছি’।
তবে রাশিয়ার পক্ষ থেকে এই হামলা বা ইউক্রেনের অভিযোগ নিয়ে তাৎক্ষণিকভাবে কোনো মন্তব্য আসেনি।
রাশিয়ার সঙ্গে যুদ্ধের সমাপ্তি চায় ইউক্রেন
রাশিয়ার সঙ্গে সাময়িক যুদ্ধবিরতি নয় বরং ইউক্রেন চলতি বছরেই পুরোপুরি যুদ্ধের সমাপ্তি চায় বলে জানিয়েছেন দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী আন্দ্রি সিবিহা। শনিবার তুরস্কে আন্তালিয়া কূটনীতিক ফোরামে ইউক্রেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, আমরা এ বছরই এই যুদ্ধের সমাপ্তি চাই। কিন্তু এতে যেন কোনো ধরনের কারসাজি না করা হয়। তিনি জোর দিয়ে বলেন, সংঘাতের একটি শান্তিপূর্ণ ও কূটনৈতিক সমাধানের পথ খুঁজে বের করাই আমাদের লক্ষ্য। কারণ রাশিয়া-ইউক্রেন সংঘাতের ফলাফলই ইউরোপের ভবিষ্যতের নিরাপত্তা কাঠামো গড়ে তুলবে।
আন্তর্জাতিক এজেন্ডায় উত্তর আটলান্টিক চুক্তি সংস্থায় ইউক্রেনের সম্ভাব্য সদস্যপদ রাখার ওপরও জোর দিয়েছেন ইউক্রেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী। তিনি বলেন, ইউক্রেনের ১১০টি যুদ্ধ করার মতো ব্রিগেড প্রস্তুত রয়েছে, যা ট্রান্সআটলান্টিকের নিরাপত্তায় অবদান রাখতে পারে।
ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভে একটি ভারতীয় ওষুধ কোম্পানির গুদামে রাশিয়ার ক্ষেপণাস্ত্র হামলার পর আগুন ধরে গেছে। ইউক্রেনের দূতাবাস রোববার (১৩ এপ্রিল) এ তথ্য নিশ্চিত করেছে। ভারতে অবস্থিত ইউক্রেনীয় দূতাবাস অভিযোগ করেছে যে, রাশিয়া ইচ্ছাকৃতভাবে ইউক্রেনে ভারতীয় ব্যবসা প্রতিষ্ঠানকে লক্ষ্যবস্তু করছে। এনডিটিভির এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
ইউক্রেনের দূতাবাস এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, রাশিয়ার একটি ক্ষেপণাস্ত্র ইউক্রেনে কুসুম নামের একটি ভারতীয় ওষুধ কোম্পানির গুদামে আঘাত হেনেছে। ভারতের সঙ্গে ‘বিশেষ বন্ধুত্বের’ দাবি করেও মস্কো ইচ্ছাকৃতভাবে ভারতীয় ব্যবসাগুলোকে লক্ষ্যবস্তু করছে। শিশু এবং বয়স্কদের জন্য তৈরি ওষুধ ধ্বংস করা হচ্ছে।
ভারতীয় ব্যবসায়ী রাজীব গুপ্তের মালিকানাধীন কুসুম ইউক্রেনের বৃহত্তম ওষুধ কোম্পানিগুলোর মধ্যে একটি। বেশ কিছু সূত্র এনডিটিভিকে জানিয়েছে, একটি ক্ষেপণাস্ত্র নয় বরং একটি ড্রোন সরাসরি গুদামে আঘাত হেনেছে।
কিয়েভের বিবৃতির আগে ইউক্রেনে নিযুক্ত ব্রিটেনের রাষ্ট্রদূত মার্টিন হ্যারিস বলেছেন, রাশিয়ার হামলায় কিয়েভের একটি প্রধান ওষুধের গুদাম ধ্বংস হয়েছে। তবে মার্টিন আরও বলেছেন, রাশিয়ার ড্রোন দিয়ে হামলা চালানো হয়েছে কোনো ক্ষেপণাস্ত্র নয়।
সিরিয়ায় আসাদ সরকারের পতনের পর ইসরায়েল দেশটিকে আবারও অস্থিতিশীল করে তুলছে বলে অভিযোগ করেছেন তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোগান। স্থানীয় সময় রবিবার (১২ এপ্রিল) তুরস্কে চলমান আন্টালিয়া কূটনীতি ফোরামে (এডিএফ) অংশগ্রহণ করে এই মন্তব্য করেন তিনি।
ইসরায়েলের সঙ্গে কূটনৈতিক আলোচনার মাত্র দুদিন পরেই এমন বক্তব্য বিস্মিত করেছে অনেক কূটনৈতিক বিশ্লেষককে। ব্রিটিশ দৈনিক গার্ডিয়ান এমন খবর দিয়েছে।
মূলত, এই দুটি দেশেরই সামরিক বাহিনী সিরিয়াতে সক্রিয় রয়েছে। ফলে সেখানে যেকোনো ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা এড়াতে গত বুধবার (৯ এপ্রিল) আজারবাইজানে বৈঠক করেন তুরস্ক ও ইসরায়েলের কর্মকর্তারা।
তবে বৈঠকের পরও সিরিয়ায় শান্তি নষ্ট করায় ইসরায়েলের সামরিক কার্যক্রমের সমালোচনা করেছেন তুরস্কের প্রেসিডেন্ট।
আন্টালিয়া সম্মেলনে বিশ্ব নেতা ও কূটনীতিকদের উদ্দেশ্যে এরদোগান জানান, ‘সিরিয়ায় নতুন করে কোনো সংঘাত তারা চান না। যে বিপ্লবের মধ্য দিয়ে বাসার-আল-আসাদ সরকারের পতন হয়েছে, তা ইসরায়েলের কারণে ব্যর্থ হচ্ছে।’
আসাদের পতনের পর সিরিয়ার গঠিত অন্তর্বর্তী সরকারের অন্যতম পৃষ্ঠপোষক এরদোগান।
সিরিয়ার ভৌগলিক অখণ্ডতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষায় যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও রাশিয়ার ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গেও আলোচনা হয়েছে বলে জানান তিনি। সিরিয়ার ওপর চলমান বিভিন্ন নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারে আঙ্কারার চেষ্টার কথাও পুনর্ব্যক্ত করেন তিনি।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন সিরিয়ার অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান আহমেদ আল সারা। সিরিয়ায় নতুন করে কাউকে সংঘাত সৃষ্টি করতে দেওয়া হবে না বলে সারাকে আশ্বস্ত করেন এরদোগান। সম্মেলনের ফাঁকে একটি বৈঠকও করেন তারা।
গত ৮ ডিসেম্বর আল সারার নেতৃত্বাধীন বিদ্রোহী গোষ্ঠী হায়াত তাহরির আলশামস (এইচটিএস) দামেস্ক দখল মাধ্যমে আসাদ সরকারের পতন ঘটায়। এরপর সিরিয়ায় অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হলেই দেশটির সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন করে তুরস্ক।
দামেস্কের সঙ্গে প্রতিরক্ষা বিষয়ে একটি চুক্তিও করতে চাইছে আঙ্কারা, এর মাধ্যমে সিরিয়াতে সামরিক ঘাঁটি স্থাপনসহ দেশটির আকাশসীমা ব্যবহারের পরিকল্পনা রয়েছে তুরস্কের।
অন্যদিকে আাসদের পতনের পরই সিরিয়ায় সামরিক তৎপরতা জোরদার করেছে ইসরায়েল। এ কারণে তুরস্ক ও ইসরায়েলের মধ্যে উত্তেজনার সৃষ্টি করেছে। এ মাসের শুরুর দিকে সিরিয়ায় তিনটি সামরিক ঘাঁটিতে বিমান হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল।
আবার হামা প্রদেশের প্রধান বিমানবন্দর ও হোমসের টি-৪ ও পালমিরা বন্দর পরিদর্শন করেছেন তুরস্কের সেনা কর্মকর্তারা। যেখানে তারা দামেস্কের সঙ্গে একটি যৌথ প্রতিরক্ষা চুক্তির অংশ হিসেবে নিজেদের সেনাবাহিনী মোতায়েন করতে পারে। এ নিয়ে তুরস্ক ও ইসরায়েলের মধ্যকারে উত্তেজনা আরও বেড়েছে।
নিউইয়র্ক ভিত্তিক থিংকট্যাঙ্ক সেঞ্চুরি ইন্টারন্যাশনালের আরন লুন্ড বলেছেন, ‘সিরিয়ার গৃহযুদ্ধের দ্বিতীয়ার্ধে আসাদের অন্যতম রক্ষাকর্তা ছিল রাশিয়া। এখন আসাদের পতনের পর যদি সিরিয়ার আকাশসীমা ব্যবহার করতে পারে তুরস্ক, তাহলে এই অঞ্চলটিতে ইসরায়েলের সামরিক কার্যক্রম অনেকটাই সীমিত হয়ে পড়বে।‘
তিনি বলেন, ‘ইসরায়েলের সামরিক অভিযানই শুধু আঙ্কারার জন্য সমস্যা নয়, সিরিয়ার অন্তর্বর্তী সরকার গঠনে তেল আবিবের নানা বাধা নিয়েও চিন্তিত তারা। যেমন, দেশটির দক্ষিণে আল সারার সরকার কোনো সেনা মোতায়ন করতে পারবে না বলে জানিয়েছে তেল আবিব।’
এরইমধ্যে সিরিয়ার দক্ষিণের দারাহ শহরে অনুপ্রবেশ শুরু করেছে ইসরায়েলের সেনাবাহিনী। চলমান উত্তেজনার মধ্যে দেশ দুটির মধ্যকার বৈঠককে ইতিবাচক পদক্ষেপ হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন আরন।
তিনি বলেন, সিরিয়ায় এই দুটি দেশই নিজেদের সামরিক তৎপরতা বহাল রাখবে। তবে তাদের মধ্যে যদি একটি যোগাযোগ চ্যানেল স্থাপিত হয় সেটি সব পক্ষের জন্য ভালো হবে বলে মনে করেন এই বিশ্লেষক।
বুধবারের বৈঠকের পর তুরস্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাকান ফিদান বলেন, ইসরাইলের সাথে উচ্চ পর্যায়ের আলোচনা হয়েছে। দুই আঞ্চলিক শক্তির মধ্যে ভুল বোঝাবুঝি রোধ করার জন্য এবং সংঘাত বন্ধ করতে আলোচনা অত্যন্ত প্রয়োজন।
এদিকে বৈঠকের পর ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর কার্যালয় এক বিবৃতিতে জানায়, আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা রক্ষার জন্য সংলাপ চালিয়ে যেতে সম্মত হয়েছে তুরস্ক ও ইসরায়েল।
মন্তব্য