সামাজিক পরিবর্তনে অবদান রাখার স্বীকৃতি হিসেবে চলতি বছর ডায়ানা অ্যাওয়ার্ড পেয়েছেন তিন শতাধিক তরুণ। প্রিন্সেস ডায়ানার জন্মদিন সামনে রেখে সোমবার রাত ৯টায় এ অ্যাওয়ার্ড ঘোষণা করা হয়।
পুরস্কারপ্রাপ্তদের সম্পূর্ণ তালিকাটি আছে দ্য ডায়ানা অ্যাওয়ার্ডস ওয়েবসাইটে। এদের মধ্যে ১৯ জন বাংলাদেশি।
জেনে নেয়া যাক, কোন খাতে কীভাবে অবদানের ফলে এ সম্মাননা পেয়েছেন তারা।
মাহবুবুল আবরার
বেসরকারি সাহায্য সংস্থা জাগো ফাউন্ডেশনের অঙ্গ সংগঠন ভলান্টিয়ার ফর বাংলাদেশের তরুণ উন্নয়ন বিশেষজ্ঞ মাহবুবুল।
করোনাভাইরাস মহামারিতে ১৩টির বেশি জেলায় ত্রাণ সরবরাহের কাজ শুরু হয় তার হাত ধরে, যার সুফলভোগী প্রায় ৫০ হাজার মানুষ।
৪৫টি জেলায় ৭ হাজার স্বেচ্ছাসেবককে নিয়ে তিনি ‘আপনার মাস্ক কোথায়’ কর্মসূচি পরিচালনা করেছেন।
মহামারির সংকটজনক সময়ে এসব উদ্যোগে নেতৃত্ব দিয়ে বিপুলসংখ্যক তরুণকে সমাজসেবায় উদ্বুদ্ধ করেছেন তিনি।
মোহাম্মদ আফজাল সুলতান সাফি
চট্টগ্রামভিত্তিক বেসরকারি সাহায্য সংস্থা দূরবীণ ফাউন্ডেশনের উদ্যোক্তা সাফি দেশের শিক্ষা খাত ও কর্মক্ষেত্রে ত্রিপুরা জনগোষ্ঠীর অন্তর্ভুক্তি নিয়ে কাজ করেন। একজন দক্ষ নারী দর্জির অধীনে ১০ জন করে নারীকে সেলাইয়ের প্রশিক্ষণ ও সেলাই মেশিন সরবরাহের মাধ্যমে ক্ষুদ্র ব্যবসা দাঁড় করাতে সাহায্য করেছেন তিনি।
২১ বছর বয়সী এই তরুণ ২০২৫ সালের মধ্যে শতভাগ ত্রিপুরা শিশুকে শিক্ষার আওতায় আনতে চান। এ পর্যন্ত ৩৪টি শিশুকে স্কুলে ভর্তি হতে সাহায্য করেছেন তিনি।
পারিবারিক নির্যাতন, এর কারণ, ক্ষতিকর প্রভাবের মতো বিষয়ে কর্মশালারও আয়োজন করেছেন সাফি, যে বিষয়ে ক্ষুদ্র এ নৃগোষ্ঠীর আগে কোনো ধারণাই ছিল না।
আফজালের উদ্যোগে বাল্যবিবাহের ক্ষতিকর দিক সম্পর্কে জানার পর ১৮ বছর বয়সের আগে কিশোরীদের বিয়ে না দেয়ার প্রতিজ্ঞা নিয়েছেন ত্রিপুরা অভিভাবকরা।
আনিকা সুবাহ আহমেদ উপমা
২০১৬ সালে ‘ইভোল্যুশন ৩৬০’ নামে তরুণদের একটি সংগঠন গড়ে তোলেন উপমা। নারী-পুরুষ বৈষম্যমুক্ত বিশ্ব গড়ে তোলা, জেন্ডারভিত্তিক সহিংসতা নির্মূল আর জাতিসংঘের টেকসই উন্নয়নের পাঁচ নম্বর লক্ষ্যমাত্রা জেন্ডার সমতা তৈরির লক্ষ্য অর্জনে কাজ করছে সংগঠনটি।
বর্তমানে ২১ বছর বয়সী এই তরুণী মাত্র ১৫ জন স্বেচ্ছাসেবক নিয়ে মানিকগঞ্জ থেকে শুরু করেন ‘হি ফর শি’ কর্মসূচি, যা পরে বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সম্প্রসারণ হয়। এর আওতায় যৌনশিক্ষার আওতায় কিশোর ছেলেদের পারস্পরিক সম্মতির বিষয়টি উপলব্ধি করানোর উদ্যোগ নেয়া হয় এবং কিশোরী মেয়েদের দেয়া হয় আত্মরক্ষামূলক প্রশিক্ষণ।
বর্তমানে তার দলে রয়েছে ৩০০ স্বেচ্ছাসেবক। নতুন প্রকল্প হিসেবে শিশুদের ওপর যৌন হয়রানি বন্ধে ‘গুড টাচ ব্যাড টাচ’ শীর্ষক সচেতনতামূলক কর্মসূচি নিয়ে কাজ করছেন উপমা।
শওকত আরাফাত
১৭ বছর বয়সে চট্টগ্রাম থেকে ভলান্টিয়ার ফর বাংলাদেশের হয়ে স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে কাজ শুরু করেছিলেন শওকত। কঠোর পরিশ্রম আর পরিবর্তনে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ শওকত ২ বছরের মধ্যে সংগঠনের জেলা পর্যায়ের প্রধান হন।
বর্তমানে ২৩ বছর বয়সী এই যুবক কাজ করেছেন ৩ হাজার রোহিঙ্গা শরণার্থীর তথ্য তালিকাভুক্তকরণে। তাদের বাসস্থান ও শিক্ষা কর্মসূচিতে যুক্ত হতেও সহযোগিতা করেছেন।
রাঙ্গামাটিতে ভূমিধসে গৃহহীন হওয়া মানুষের জন্য তহবিল সংগ্রহ, পবিত্র রমজান মাসে ১০০ শিশুর ইফতারের ব্যবস্থা করাসহ সুবিধাবঞ্চিতদের কল্যাণে বিভিন্ন কাজে অংশ নিয়েছেন তিনি।
রিজভী আরেফীন
অলাভজনক প্রতিষ্ঠান ‘অ্যাওয়ারনেস ৩৬০’-এর সহ-প্রতিষ্ঠাতা রিজভী ব্যক্তিজীবনে নানা রকম হয়রানির শিকার হয়ে ভুগতেন হীনমন্যতায়। বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে তিনি জাতিসংঘের বৈশ্বিক উন্নয়ন নিয়ে গবেষণা করে উপলব্ধি করেন যে, তার শৈশবের বিভিন্ন ঘটনার জন্য তিনি দায়ী নন। এ রকমই ভুক্তভোগী বাকিদের জন্যও সুযোগের পথ উন্মুক্ত করতে কাজ শুরু করেন তিনি।
টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট (এসডিজি) অর্জনে তরুণদের দক্ষতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে কাজ করছেন রিজভী। শিক্ষা, জেন্ডার সমতা, স্যানিটেশনসহ বিভিন্ন ইস্যুতে তার জনস্বার্থমূলক কাজের সুফলভোগী দেড় লাখের বেশি মানুষ।
গত ৮ বছরে ১০ হাজার ঘণ্টার বেশি সময় রিজভী ব্যয় করেছেন স্বেচ্ছাসেবার কাজে।
মুরশিদুল আলম ভূঁইয়া
২০১৬ সালে কয়েকজন বন্ধুকে নিয়ে ‘টিম ব্যর্থ’ গড়ে তোলেন মুরশিদুল। মানুষের মধ্যে সৃজনশীল জ্ঞানচর্চা বাড়ানোর লক্ষ্যে বহুমুখী কাজ করছে তার সংগঠন।
বর্তমানে ১৯ বছর বয়সী এই তরুণের নেতৃত্বে বিভিন্ন দেশের মানুষকে নিয়ে গড়ে উঠেছে একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক সম্প্রদায়, যেখানে তুলে ধরা হয় জীবনের নানা গল্প আর স্মৃতিচারণা।
মুরশিদুলের আশা, বৈচিত্র্যময় মানবজীবনের জীবনের বিভিন্ন দিক, গল্প, স্মৃতিচারণা আর অভিজ্ঞতার সংস্পর্শে নিয়ে আসার মাধ্যমে অনেককেই জীবন সম্পর্কে আশাবাদী হতে সাহায্য করবেন তিনি।
খাদিজা তুল কুবরা বিনতে আহসান
বাংলাদেশে মেয়ে শিশু ও কিশোরীদের মধ্যে বেড়ে ওঠার সময় যারা হয়রানি ও নিপীড়নের শিকার হয়েছে, তাদের একজন খাদিজা। জেন্ডারভিত্তিক সহিংসতা প্রতিরোধ ও সমতা তৈরিকে জীবনের লক্ষ্য করেছেন ২৪ বছরের এই তরুণী।
২০১৮ সালে তিনি গড়ে তোলেন ‘উইমেন ভিউ’ (WeMen View)। বর্তমানে সংগঠনটির সঙ্গে স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে কাজ করছে ৭০ জন। ১ হাজারের বেশি তরুণ-তরুণীকে নিয়ে জেন্ডারভিত্তিক সহিংসতাবিষয়ক কর্মশালা পরিচালনা করেছেন তারা।
৮ হাজার ডলারের বেশি তহবিল সংগ্রহ করেছেন খাদিজা। করোনাভাইরাস মহামারির সময়ে ১ হাজারের বেশি মানুষকে খাদ্য ও নিত্যপণ্য বিনা মূল্যে সরবরাহ করে নিজের দাতব্য কাজগুলো অব্যাহত রেখেছেন তিনি।
২০২০ সালে সাইক্লোন আম্ফানে গৃহহীন মানুষের আবাসনের ব্যবস্থা করতে সমন্বিত প্রকল্প চালু হয় খাদিজার হাত ধরে।
সাদিদ বিন হাসান
২০১৯ সালে যুক্তরাষ্ট্রের স্যান ফ্রান্সিসকোতে পূর্ণকালীন চাকরি ছাড়েন সাদিদ। ঝরে পড়া ৭ হাজার শিক্ষার্থীকে বিশ্ববিদ্যালয়ে পৌঁছে দেয়ার লক্ষ্যে কাজ শুরু করেন তিনি।
‘ক্রসরোডস ইনিশিয়েটিভ’-এর মাধ্যমে পরবর্তী ৩ বছরে সরাসরি ও অনলাইনে ১ লাখ শিক্ষার্থীকে সহযোগিতা করেছেন সাদিদ। মূলত পরামর্শদানের মাধ্যমে তরুণদের দিকনির্দেশনা দিতে সংযোগ স্থাপনের কাজ করে প্ল্যাটফর্মটি।
এ পর্যন্ত তার সহযোগিতায় শিক্ষার্থীরা ১০ লাখ ডলারের বৃত্তি পেয়েছেন। ২০২৫ সালের মধ্যে ১০ লাখ শিক্ষার্থীকে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে শিক্ষাগ্রহণের যোগ্য করে তুলতে চান সাদিদ।
সপ্তাহে ৮০ ঘণ্টার বেশি কাজ করেন সাদিদ। তিনি জানান, আমৃত্যু প্রতিদিন কমপক্ষে একজনকে সাহায্য করতে চান।
আনাস হোসেন
বাংলাদেশের গ্রামাঞ্চলে জরুরি স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতে কাজ করছে সেইফহুইল। প্রতিষ্ঠানটির সহ-প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আনাস হোসেন।
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) থেকে কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে পড়াশোনা শেষ করা আনাস কাজ করেছেন পরিবেশবিদ হিসেবে, জাগো ফাউন্ডেশন, বাংলাদেশ ইয়ুথ লিডারশিপ সেন্টারসহ (বিওয়াইএলসি) বিভিন্ন সংগঠনের সঙ্গে।
সাগর মজুমদার
ভার্চুয়াল রিয়েলিটি (ভিআর) প্রযুক্তির মাধ্যমে শিক্ষাদান কার্যক্রম পরিচালনা করছেন সাগর মজুমদারের নার্ডিজ। প্রতিষ্ঠানটির চিফ অপারেটিং অফিসার তিনি।
ইতিহাস, ভূগোল ও বিজ্ঞান বিষয়ে ১২০টির বেশি পাঠ্যসূচি তৈরিতে তিনি সহযোগিতা করেছেন। এর সুফলভোগী বাংলাদেশের ২৭টি জেলার ৪০ হাজারের বেশি শিশু।
পাঠদান কার্যক্রমে ভিআর প্রযুক্তিকে কার্যকর উপকরণ হিসেবে প্রমাণ করেছেন সাগর ও তার দল।
বিদ্যমান শিক্ষাব্যবস্থার ঘাটতি পূরণে এই প্রযুক্তি নিয়ে কাজ করার ব্যাপারে আশাবাদী সাগর। তার মতে, এর মাধ্যমেই একদিন দেশের সব শিশু মানসম্পন্ন শিক্ষা ও অভিজ্ঞতামূলক শিক্ষা নেয়ার সুযোগ পাবে।
গুলনাহার মাহবুব মনিকা
নিজের পেশায় মনোযোগ দেয়ার পাশাপাশি বাস্কেটবল খেলায় নারীদের অংশগ্রহণ বৃদ্ধিতে কাজ করছেন ২৪ বছরের তরুণী মনিকা। নারীদের মধ্যে যোগাযোগ ও সম্পর্ক জোরদারের মাধ্যমে মানসিক চাপ কমানো, নারীদের ক্ষমতায়নে সহযোগিতা করেন তিনি।
এ লক্ষ্যে সব বয়সের নারীদের জন্য বিভিন্ন টুর্নামেন্টের নিয়মিত আয়োজন করেন মনিকা। তার সহযোগিতায় পাঁচ নারী অ্যাথলেট পৃষ্ঠপোষকতা পাচ্ছেন।
ভবিষ্যতে কেবল নারীদের নিয়ে জাতীয় লীগ ও বাংলাদেশে বাস্কেটবলে প্রথম নারী দল গঠন নিয়ে আশাবাদী মনিকা। তিনি নিজেও জাতীয় পর্যায়ের একজন বাস্কেটবল খেলোয়াড়।
সিদরাতুল মুনতাহা
বাংলাদেশে বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, প্রকৌশলবিদ্যা ও গণিতে পরবর্তী প্রজন্মকে আগ্রহী করে তোলার লক্ষ্যে কাজ করছেন ২৪ বছরের তরুণী সিদরাতুল। ‘বাংলাদেশ চ্যাপ্টার অফ টেকনোভেশন গার্লস’ নামে একটি প্রতিষ্ঠান চালু করেছেন তিনি।
কিশোরী ও তরুণীদের দারিদ্র্য নির্মূল, জলবায়ু পরিবর্তন, জেন্ডার সমতা, নারীদের নিরাপত্তা, বাল্যবিবাহ, যৌতুক, বেকারত্বসহ সামাজিক বিভিন্ন বিষয়ে মোবাইল অ্যাপভিত্তিক উদ্যোগে সাহায্য করেন তিনি।
সিদরাতুলের দুই শিষ্য নারীদের মানসম্পন্ন শিক্ষা নিশ্চিতে ঋণদানভিত্তিক এবং বাল্যবিবাহ বন্ধে অ্যাপ চালু করেছেন। ট্রান্সজেন্ডারদের জন্য অ্যাপ তৈরির কাজ করছেন অনেকে।
মারিয়া মুমু
এক বন্ধুর আত্মহত্যার ঘটনায় মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে কাজ শুরু করেন মারিয়া মুমু। তিনি নিজেও ভুগছিলেন হতাশা ও অবসাদে।
‘মশাল মেন্টাল হেলথ’ নামে একটি মানসিক স্বাস্থ্যবিষয়ক পরামর্শক প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছেন ২০ বছর বয়সী এই তরুণী। মূলত তরুণ-তরুণীদের মানসিক স্বাস্থ্যসেবা নিয়ে কাজ করে প্রতিষ্ঠানটি।
সামাজিকভাবে তার প্রতিষ্ঠানটির অগ্রযাত্রা শুরু হয় ‘মিস ইউনিভার্স বাংলাদেশ’-এর সঙ্গে যুক্ত হওয়ার মধ্য দিয়ে। এ প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে তিনি মানসিক স্বাস্থ্যবিষয়ক বার্তা পৌঁছে দেন লাখো মানুষের কাছে।
করোনাভাইরাস মহামারিকালীন মানসিক সুস্থতার বিষয়টি নতুন করে আলোচনায় উঠে আসে। এ সময়ে বিনা মূল্যে সেবাদানের প্রথম উদ্যোগ নেয়া অন্যতম প্রতিষ্ঠান মারিয়ার ‘মশাল মেন্টাল হেলথ’।
ইউসুফ মুন্না
কিশোর বয়স থেকেই লেখালেখির আগ্রহ ছিল ইউসুফের। কিন্তু বারবার সম্পাদক ও প্রকাশনা সংস্থাগুলোর প্রত্যাখ্যানের শিকার হয়েছেন তিনি। বর্তমানে নিজের ‘রিফ্লেক্টিভ টিনস’ কর্মসূচির মাধ্যমে তরুণদের সৃজনশীলতা প্রকাশে সহযোগিতা করছেন ২১ বছর বয়সী এই তরুণ।
গত ৭ বছরে বাংলাদেশের অর্ধশতাধিক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সরাসরি কাজ করেছে ‘রিফ্লেক্টিভ টিনস’। তারা সহযোগিতা করেছে দেশের ৬১ হাজার কিশোর-কিশোরীকে।
শুধু ২০২০ সালে প্রতিষ্ঠানটির চারটি ভিন্ন প্রকল্পে যুক্ত হয়েছে ১১ হাজার শিক্ষার্থী, যা আগের তুলনায় ১২ গুণ বেশি।
লামিয়া তানজিন তানহা
অলাভজনক প্রতিষ্ঠান ‘ট্রান্সএন্ড’-এর প্রতিষ্ঠাতা ২০ বছর বয়সী তানহা। বাংলাদেশের ট্রান্সজেন্ডার কমিউনিটির কল্যাণে কাজ করছে প্রতিষ্ঠানটি।
দেশজুড়ে ৭০ জন স্বেচ্ছাসেবকের সহযোগিতায় শিক্ষা, প্রশিক্ষণ, উদ্যোক্তা হতে আর কর্মসংস্থানে যোগ দিতে ট্রান্সজেন্ডারদের সহযোগিতা করছে তানহার ট্রান্সএন্ড। কম্পিউটার আর ইংরেজি ভাষায় দক্ষতা বাড়াতেও সাহায্য করে প্রতিষ্ঠানটি।
এ পর্যন্ত দেশের ৩ লাখ ৪৫ হাজার মানুষের কাছে পৌঁছেছে ট্রান্সএন্ড। কর্মদক্ষতা বৃদ্ধিতে ১৩৫ জন ট্রান্সজেন্ডারকে প্রশিক্ষণ আর ৪৩ জনকে চাকরি পেতে সহযোগিতা করেছে প্রতিষ্ঠানটি।
ট্রান্সজেন্ডারদের জন্য একটি প্ল্যাটফর্ম গড়ে তোলার পাশাপাশি বাংলাদেশি তরুণ সমাজের অগ্রগতির লক্ষ্যেও কাজ করছেন তিনি।
সরকার তানভীর আহমেদ
রাজশাহীর জয়পুরহাটের বাসিন্দা সরকার তানভীর আহমেদ। নিজ এলাকায় তরুণ সংঘের নেতা তিনি। সমাজে ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে তরুণদের কল্যাণে কাজ করতে আগ্রহী তিনি।
২২ বছর বয়সী তানভীরের নেতৃত্বে বিভিন্ন সামাজিক প্রকল্পে কাজ করছেন ২৫টি দেশের ৩৫০ তরুণ-তরুণী। ২০০৯ সাল থেকে বৃক্ষরোপণ, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা কর্মসূচি, নারী নিরাপত্তা, তথ্যের অপপ্রচার, শীতবস্ত্র বিতরণসহ নানা বিষয়ে কাজ করেছেন এই তরুণরা।
আফরুজা তানজি
স্কুলের একটি প্রকল্পের অংশ হিসেবে গ্রামাঞ্চলের নারীদের সঙ্গে কথা বলেছিলেন আফরুজা। জেনেছেন কর্মক্ষেত্রে আর আর্থিক স্বনির্ভরতা অর্জনের পথে বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতার কথা। এরপর থেকেই প্রান্তিক নারীদের ক্ষমতায়নে তাদের দক্ষতা বাড়াতে প্রশিক্ষণ ও কর্মশালা আয়োজনে কাজ শুরু করেন তিনি।
বর্তমানে ২৩ বছর বয়সী আফরুজা ৭ শতাধিক কিশোরী ও নারীকে আর্থিক হিসাববিষয়ক প্রশিক্ষণ দিয়েছেন। তিনি ক্ষুদ্র শিল্পবিষয়ক প্রশিক্ষণ দিয়েছেন ১০০ নারীকে। ১ হাজারের বেশি শিল্পকর্মের বাণিজ্যিকীকরণ করেছেন। তিনি হাজারো কিশোরী ও নারীকে জীবিকা উপার্জনে যুক্ত করেছেন।
মোস্তফা জামান
মোস্তফা জামান ভলান্টিয়ার ফর বাংলাদেশের ময়মনসিংহ জেলা শাখার প্রতিষ্ঠাতা সদস্য ও স্বেচ্ছাসেবী। পেশায় চিকিৎসক ২৪ বছর বয়সী জামান ৬ বছর ধরে কাজ করছেন সুবিধাবঞ্চিত নারী ও কিশোরীদের স্তন ও জরায়ুর ক্যান্সার নিয়ে সচেতনতা তৈরিতে।
‘স্যানিটেশন, হেলথ এডুকেশন অ্যান্ড ফলো আপ’ নামে আরেক কর্মসূচি চালু করেছেন তিনি। এর মাধ্যমে ক্যান্টিনে কর্মরত কিশোরদের পরিচ্ছন্নতাবিষয়ক প্রশিক্ষণ দেয়া হয়।
২৫ স্বেচ্ছাসেবকের একটি দল পরিচালনা করেন জামান। এ পর্যন্ত প্রায় ১০ হাজার মানুষ জামানের সামাজিক কাজের কারণে উপকৃত হয়েছেন।
এ ছাড়া, ‘ওয়ান অব ইউ’ সংগঠনের আজিজুল ইসলামের বিষয়ে বিস্তারিত জানা যায়নি।
বিভিন্ন সময়ে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ডায়ানা অ্যাওয়ার্ড পাওয়া তরুণদের শক্তিশালী নেটওয়ার্কে যুক্ত হয়ে কাজের পরিধি বৃদ্ধির সুযোগ পাবেন এই বাংলাদেশিরা।
প্রতি বছর ৯ থেকে ২৫ বছর বয়সীদের মধ্যে এ পুরস্কার বিতরণ করা হয়।
আরও পড়ুন:ইসরায়েল সরকার ফিলিস্তিনি বন্দিদের ন্যূনতম খাদ্য সরবরাহ থেকেও বঞ্চিত রাখছে বলে জানিয়েছেন ইসরায়েলের সুপ্রিম কোর্ট। গত রোববার এক ঐতিহাসিক রায়ে এ কথা জানান দেশটির সর্বোচ্চ আদালত।
আদালত নির্দেশ দিয়েছেন, বন্দিদের জন্য উন্নত মানের খাবারসহ নিয়মিত খাদ্য সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে। ইসরায়েল-হামাস যুদ্ধের প্রায় ২৩ মাসে এই প্রথম ইসরায়েলের আদালত দেশটির সরকারের পদক্ষেপের বিরুদ্ধে এভাবে রায় দিলেন।
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের হামলার পর থেকে গাজায় ভয়াবহ আগ্রাসন শুরু করে ইসরায়েল। এরপর থেকে ফিলিস্তিনিদের গণহারে আটক করেছে তারা। গাজা ও পশ্চিম তীর থেকে আটক হওয়া অনেককে মাসের পর মাস শিবির ও কারাগারে রাখার পর অভিযোগ ছাড়াই মুক্তি দেওয়া হয়েছে। তারা জানিয়েছেন, ইসরায়েলি কারাগারগুলোতে অতিরিক্ত ভিড়, অল্প খাবার, চিকিৎসার অভাবসহ রোগের প্রাদুর্ভাব রয়েছে।
তিন সদস্যের বেঞ্চ সর্বসম্মত রায়ে বলেন, সরকারকে আইন অনুযায়ী প্রতিদিন তিনবেলা খাবার সরবরাহ করতেই হবে, যাতে বন্দিদের ‘মৌলিক বেঁচে থাকার শর্ত’ নিশ্চিত হয়।
দুই-এক ভোটে আদালত আরও স্বীকার করেছেন, সরকারের ইচ্ছাকৃত খাদ্যসংকোচন নীতি বন্দিদের মধ্যে অপুষ্টি ও অনাহার সৃষ্টি করেছে।
রায়ে বলা হয়, এখানে আরামদায়ক জীবন বা বিলাসিতার কথা নয়, বরং আইনে নির্ধারিত ন্যূনতম বেঁচে থাকার শর্ত পূরণের কথা বলা হচ্ছে। আমাদের সবচেয়ে খারাপ শত্রুর পথ অনুসরণ করা উচিত নয়।
ফিলিস্তিনি কর্মকর্তাদের দাবি, যুদ্ধ শুরুর পর থেকে অন্তত ৬১ বন্দি ইসরায়েলের হেফাজতে মারা গেছেন। এর মধ্যে চলতি বছরের মার্চে এক কিশোর (১৭) অনাহারে মারা গেছে বলে চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন।
কারাগার তদারকির দায়িত্বে থাকা ইসরায়েলের জাতীয় নিরাপত্তামন্ত্রী ইতামার বেন-গভির বরাবরের মতো কঠোর অবস্থান নিয়েছেন। তিনি বলেছেন, বন্দিদের শুধু ‘আইনে নির্ধারিত সর্বনিম্ন শর্তেই’ রাখা হবে। আদালতের রায়কে তিনি ‘ইসরায়েলের জন্য লজ্জাজনক’ বলে আখ্যা দিয়েছেন।
রায়টি আদালতে আবেদন করা মানবাধিকার সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন ফর সিভিল রাইটস ইন ইসরায়েল (এসিআরআই) ও গিশার বড় জয় হিসেবে দেখা হচ্ছে। এএসিআরআই সামাজিক মাধ্যমে লিখেছে, ইসরায়েলের কারাগারগুলোকে সরকার ‘নির্যাতন শিবিরে’ পরিণত করেছে।
সংগঠনটির ভাষায়, কোনও রাষ্ট্রের উচিত নয় মানুষকে অনাহারে রাখা। মানুষ মানুষকে না খাইয়ে রাখবে না—সে যা-ই করে থাকুক না কেন। সূত্র: বিবিসি, আল-জাজিরা, এপি
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রধান টেড্রোস আধানম ঘেব্রেয়াসুস যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষস্থানীয় জনস্বাস্থ্য সংস্থাকে ‘অমূল্য’ হিসেবে উল্লেখ করেছেন। কিন্তু প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসনের কারণে তা আজ বিপর্যস্ত।
রোববার এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, ‘কোনো প্রতিষ্ঠানই নিখুঁত নয় এবং সর্বশেষ বিজ্ঞান এবং বাস্তব সময়ে উদীয়মান চ্যালেঞ্জগুলোর ক্ষেত্রে প্রয়োগ নিশ্চিত করতে অব্যাহত উন্নতি প্রয়োজন। তবে মার্কিন সিডিসির কাজ অমূল্য এবং এটিকে সুরক্ষিত রাখতে হবে!’
কিন্তু, ট্রাম্পের সরকার তার পরিচালক সু মোনারেজকে তার চাকরির মাত্র কয়েক সপ্তাহ পরেই বরখাস্ত করার পর মার্কিন রোগ নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ কেন্দ্র (সিডিসি) চরম অস্থিরতার মধ্যে পড়েছে। মোনারেজ মার্কিন স্বাস্থ্য মন্ত্রী রবার্ট এফ. কেনেডি জুনিয়রের সাথে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন। তিনি বিজ্ঞানীদের বরখাস্ত করেছিলেন এবং দেশের টিকা নীতিগুলো পুনর্গঠন করেছিলেন।
টেড্রোস বলেছেন, সিডিসি ‘দীর্ঘদিন ধরেই উৎকর্ষের কেন্দ্র’ ছিল। অনেক দেশ এটি অনুকরণ করেছে। তিনি বলেছেন, সিডিসির সাথে ‘হু’-এর ‘ঘনিষ্ঠ এবং দীর্ঘস্থায়ী অংশীদারিত্ব’ রয়েছে। ‘হু’র সবচেয়ে বড় দাতা দেশ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। কিন্তু জানুয়ারিতে ট্রাম্প স্বাক্ষরিত নির্বাহী আদেশের অধীনে জাতিসংঘের স্বাস্থ্য সংস্থা থেকে বেরিয়ে আসে। ট্রাম্প অভিযোগ করেছিলেন, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সবচেয়ে বেশি তহবিল দিয়ে থাকে।
যুক্তরাষ্ট্রকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা থেকে সম্পূর্ণরূপে প্রত্যাহারের প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন করতে এক বছর সময় লেগেছে। মোনারেজ কেনেডির টিকা নীতি পরিবর্তনকে সমর্থন করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে বলে জানা গেছে।
তার পদচ্যুতির ফলে কমপক্ষে চারজন শীর্ষ সিডিসি কর্মকর্তা পদত্যাগ করেন। ফলে মার্কিন সংস্থায় বিশৃঙ্খলা আরো গভীর করে তোলে। দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে কেনেডি কোভিড-১৯ টিকা কারা গ্রহণ করতে পারবেন তা সীমিত করেছেন।
লক্ষ লক্ষ জীবন বাঁচানোর জন্য কৃতিত্ব প্রাপ্ত ‘এমআরএনএ’ প্রযুক্তির জন্য ফেডারেল গবেষণা অনুদান বন্ধ করে দিয়েছেন এবং অটিজম সম্পর্কে মিথ্যা দাবির ওপর নতুন গবেষণা ঘোষণা করেছেন।
ভারতের মুম্বাইয়ের ফোর্ট এলাকায় নতুন গথিক স্থাপত্যশৈলীর একটি ভবন। পুরোনো ভবনটির একটি ছোট্ট অফিস থেকে ৬০ বছরের বেশি সময় ধরে বের হচ্ছে পারসি সম্প্রদায়ের সাময়িকী ‘পারসিয়ানা’। ঐতিহ্যবাহী সাময়িকীটি আগামী অক্টোবর মাস থেকে আর বের হবে না। গত আগস্টে এ ঘোষণা দেওয়া হয়েছে।
চিকিৎসক পেস্টনজি ওয়ার্ডেন ১৯৬৪ সালে ইংরেজি ভাষার সাময়িকীটি প্রকাশ করা শুরু করেছিলেন। মুম্বাইয়ের পারসি সম্প্রদায়ের মানুষের জীবনযাত্রা ও ঘটনাবলি নথিবদ্ধ করাই ছিল প্রাথমিক উদ্দেশ্য। সপ্তম-অষ্টম শতকে ইরান বা পারস্য থেকে ভারতে আসা জরথুস্ত্র ধর্মাবলম্বীদের মানুষজন পারসি সম্প্রদায় হিসেবে পরিচিত।
১৯৭৩ সালে মাত্র এক রুপিতে সাময়িকীটি কিনে নেন সাংবাদিক জেহাঙ্গীর প্যাটেল। এর পর থেকে তিনিই এর সার্বিক দায়িত্বে রয়েছেন। দায়িত্ব নেওয়ার পর একটির বদলে মাসে দুটি করে সংখ্যা বের করা শুরু করেন তিনি। সাহসী প্রতিবেদন, ব্যঙ্গাত্মক কলাম ও চিত্রাঙ্কনের মাধ্যমে সাময়িকীটি দ্রুত জনপ্রিয়তা অর্জন করে। ১৯৮৭ সালে আন্ত:ধর্মীয় বিয়ের বিজ্ঞাপন ছাপিয়ে সাময়িকীটি আলোড়ন তৈরি করেছিল।
ছয় দশকে পারসিয়ানা কেবল একটি সাময়িকী নয়; বরং সারা বিশ্বের জরথুস্ত্র ধর্মাবলম্বীদের মধ্যে সেতুবন্ধের মাধ্যম হয়ে উঠেছিল। পাকিস্তানভিত্তিক এক পাঠক বলেন, ‘এটি শুধু প্রকাশনা ছিল না। ছিল আমাদের সঙ্গী ও সেতুবন্ধ।’ যুক্তরাষ্ট্রের এক পাঠক লিখেছেন, ‘এই সাময়িকী বিতর্কিত বিষয়গুলো সামনে নিয়ে আসত।’
আগস্টে পারসিয়ানার এক সম্পাদকীয়তে সাময়িকীটি বন্ধের কারণ হিসেবে বলা হয়, গ্রাহকসংখ্যা কমেছে, তহবিলের সংকট বেড়েছে ও প্রকাশনার কাজ চালিয়ে যাওয়ার মতো উত্তরসূরি পাওয়া যায়নি।
৮০ বছর বয়সি জেহাঙ্গীর ১৫ সদস্যের একটি দল নিয়ে পারসিয়ানা বের করতেন। তার সহকর্মীদের প্রায় সবার বয়স ৬০ ও ৭০–এর মধ্যে। পারসিয়ানা বন্ধ হয়ে যাওয়াকে ‘কষ্টের’ উল্লেখ করে জেহাঙ্গীর বলেন, ‘শেষ দিনে কোনো কেক বা উৎসব থাকবে না। এটা দুঃখের সময়।’
গাজা উপত্যকার গাজা শহরে ইসরায়েলের দূরনিয়ন্ত্রিত ও বিস্ফোরকভর্তি 'রোবট' দিয়ে হামলা চালানো হচ্ছে, যা সেখানকার বাসিন্দাদের মধ্যে ব্যাপক আতঙ্ক সৃষ্টি করেছে।
হামজা শাবান নামের ৩৫ বছর বয়সি এক ফিলিস্তিনি মিডল ইস্ট আইকে বলেন, ‘আমি জানালা দিয়ে বাইরে তাকালাম, রোবটটি কোথায় আছে। আমার কাছে, নাকি কাছাকাছি?’ পরে দেখা গেল রোবটটি প্রায় ১০০ মিটার দূরে ছিল। এরপর আরেকটি বিস্ফোরণে তিনি জানালা থেকে দুই মিটার দূরে ছিটকে পড়েন। হামজা শাবান বলেন, ‘আমি হামাগুড়ি দিয়ে শোবার ঘরের দিকে পালাতে শুরু করলাম। আমি শুনতে পাচ্ছিলাম, উড়ন্ত ধ্বংসাবশেষ ও অন্যান্য ধ্বংসাবশেষ একটার সঙ্গে আরেকটায় আঘাত করছে। ভয়ানক শব্দ।’
হামজা শাবানের এই অভিজ্ঞতা এখন গাজা নগরীর বাসিন্দাদের জন্য একটি সাধারণ ঘটনা হয়ে উঠেছে। গত মাসে ইসরায়েল প্রায় ১০ লাখ মানুষের গাজা নগরীতে হামলা বাড়ানোর ঘোষণা দেওয়ার পর থেকে প্রায় প্রতি রাতেই বড় বড় বিস্ফোরণে শহরটি কেঁপে উঠছে।
ইসরায়েল ঘনবসতিপূর্ণ আবাসিক এলাকায় স্থলসেনা মোতায়েনের পরিবর্তে দূরনিয়ন্ত্রিত ও বিস্ফোরকভর্তি এপিসি (আর্মার্ড পার্সোনেল ক্যারিয়ার) পাঠাচ্ছে। এই নতুন যুদ্ধকৌশলের কেন্দ্রে আছে এই দূরনিয়ন্ত্রিত যানগুলো, যা দূর থেকে নির্দিষ্ট স্থানে পাঠানো হয় এবং তারপর বিস্ফোরণ ঘটানো হয়। এতে ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ হয়।
কিছু ক্ষেত্রে এই যানগুলো রাস্তার বিভিন্ন জায়গায় বিস্ফোরকভর্তি ব্যারেল ফেলে এবং পরে একসঙ্গে বিস্ফোরণ ঘটানো হয়, যাতে পুরো এলাকার সর্বোচ্চ ক্ষতি হয়। হামজা শাবান জানান, সাধারণত রাত ১০টা বা ১১টার দিকে যখন মানুষ ঘুমাতে যায়, তখনই বিস্ফোরণ শুরু হয় এবং প্রতি রাতেই এমন ৮ থেকে ১০টি বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যায়। তিনি বলেন, ‘এসব বিস্ফোরণ ভীষণ শক্তিশালী, যা পুরো ভবনকে গুঁড়িয়ে ধ্বংসস্তূপে পরিণত করে।’
হামজা শাবান ইসরায়েলের অনেক যুদ্ধ দেখেছেন এবং এফ-১৬ যুদ্ধবিমানের হামলার ধ্বংসযজ্ঞের সঙ্গেও পরিচিত। তবে এবারের ধ্বংসযজ্ঞের মাত্রা সম্পূর্ণ ভিন্ন বলে তিনি মনে করেন। তিনি বলেন, ‘এসব রোবটের সঙ্গে কোনো কিছুরই তুলনা হয় না। এগুলো বিমান হামলার চেয়েও অনেক বেশি বিধ্বংসী।’
হামাস একটি যুদ্ধবিরতি চুক্তিতে সই করলেও ইসরায়েল সেটি বাতিল করে দেয়। এরপর ইসরায়েলের নিরাপত্তা মন্ত্রিসভা পুরো গাজা উপত্যকা দখলের পরিকল্পনা অনুমোদন করে, যার শুরু গাজা নগরী থেকে। এর পর থেকে ইসরায়েল আকাশ ও স্থল হামলা আরও জোরদার করেছে। গাজাভিত্তিক সরকারি গণমাধ্যম দপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, গত ১৩ আগস্ট থেকে উপত্যকার জনবহুল এলাকায় অন্তত ১০০টি বিস্ফোরক রোবট ব্যবহার করা হয়েছে।
অলাভজনক সংস্থা ইউরো-মেডিটেরেনিয়ান হিউম্যান রাইটস মনিটরের তথ্য অনুযায়ী, এসব বিস্ফোরণে প্রতিদিন প্রায় ৩০০টি আবাসিক ইউনিট ধ্বংস হচ্ছে। সংস্থাটির তথ্য অনুযায়ী, প্রতিটি রোবটে প্রায় সাত টন পর্যন্ত প্রচণ্ড শক্তিশালী বিস্ফোরক ভরা থাকে। এই রোবটগুলোর ব্যবহার গাজা নগরীর উত্তর, পূর্ব ও দক্ষিণের এলাকাগুলোতে বেশি হচ্ছে।
ইউরো-মেড মনিটর বলছে, এই রোবটগুলো এমন এক ‘অভূতপূর্ব গতিতে’ ব্যবহার করা হচ্ছে, যা গাজা নগরীকে ‘মানচিত্র থেকে মুছে ফেলার’ কৌশলের ইঙ্গিত দেয়। সংস্থাটি আরও বলেছে যে, বর্তমান গতিধারা চলতে থাকলে দুই মাসের মধ্যে নগরীর বাকি অংশও ধ্বংস হয়ে যেতে পারে। ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর বিপুল সামরিক শক্তি এবং ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে তাদের অপরাধ ঠেকাতে কোনো আন্তর্জাতিক চাপ না থাকায় এই সময়সীমা আরও কমে আসতে পারে।
ইসরায়েলের সংবাদমাধ্যম ওয়ালা জানিয়েছে, সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে ইসরায়েলি বাহিনী বিস্ফোরক রোবটের ব্যবহার তিন গুণ বাড়িয়েছে এবং গাজায় আরও শত শত রোবট পাঠানো হচ্ছে। এই যানগুলো এমনভাবে তৈরি যে তা অবকাঠামোর সর্বোচ্চ ক্ষতি করে এবং হামাস যোদ্ধাদের সঙ্গে ইসরায়েলি সেনাদের সরাসরি সংঘর্ষ কমিয়ে স্থল অভিযানে ইসরায়েলি সেনাদের ঝুঁকি হ্রাস করে।
সূত্র: মিডল ইস্ট আই
প্রধানমন্ত্রী শিগেরু ইশিবা পদত্যাগের ঘোষণা দেওয়ার এক দিন পর সোমবার জাপানের পরবর্তী নেতা হওয়ার দৌড়ে প্রথম প্রার্থী হিসেবে যোগ দিলেন ‘ট্রাম্প হুইস্পেরার’ নামে পরিচিত সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী তোশিমিৎসু মোতেগি।
টোকিও থেকে বার্তা সংস্থা এএফপি জানায়, মোতেগি বিশ্বের চতুর্থ বৃহত্তম অর্থনীতির দেশটির নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন। জয়লাভ করলে তাকে জাপানে খাদ্যের দাম বৃদ্ধি ও এর গুরুত্বপূর্ণ অটো সেক্টরে মার্কিন শুল্কের ফলে সৃষ্ট নতুন অস্থিরতা সামাল দেওয়ার মতো কঠিন চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হবেন।
দুটি নির্বাচনে দীর্ঘদিনের প্রভাবশালী দল লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এলডিপির) ভরাডুবি হলে ইশিবা গত রোববার পদত্যাগের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন এবং এরপর অক্টোবরের শুরুতে তার দল নতুন প্রধানকে নির্বাচন করবে বলে জানা গেছে।
দলের হেভিওয়েট প্রার্থী মোতেগি সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমি প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার জন্য মনস্থির করেছি।’
তিনি আরও বলেন, ‘দেশে ও বিদেশে কঠিন সমস্যা সমাধান করে আমাদের দেশ জাপানকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে।’
১১ মাসের অস্থিরতার মধ্যে, ইশিবাকে আগে নির্ভরযোগ্য হিসেবে দেখা হতো। তবে তিনি সংসদের উভয় কক্ষেই তার সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারিয়ে ফেলেন।
১৯৫৫ সাল থেকে প্রায় ধারাবাহিকভাবে শাসন করে আসা এলডিপির জন্য এটি একটি বড় ধরনের ধাক্কা। ৬৯ বছর বয়সি এলডিপির সাবেক মহাসচিব মোতেগি আগামী দিনে আবির্ভূত হতে পারেন, এমন প্রার্থীদের মধ্যে রয়েছেন।
হার্ভার্ড-শিক্ষিত এই রাজনীতিবিদকে শক্তিশালী ইংরেজিতে কথা বলার জন্য ‘ট্রাম্প হুইস্পেরার’ বলা হতো। কারণ তিনি মার্কিন-জাপান বাণিজ্য আলোচনায় দক্ষতার সঙ্গে পরিচালনা করেছিলেন।
আরেকজন প্রার্থী হলেন ৬৪ বছর বয়সি কট্টর জাতীয়তাবাদী এবং এক সময়ের হেভি মেটাল ড্রামার সানা তাকাইচি। তিনি ২০২৪ সালে ইশিবার কাছে হেরে গিয়েছিলেন। শিনজিরো কোইজুমিও (৪৪) প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারেন।
শিনজিরো সাবেক একজন প্রধানমন্ত্রীর ছেলে। তিনি সম্প্রতি ইশিবার কৃষিমন্ত্রী হিসেবে চালের দাম কমানোর দায়িত্ব পেয়েছিলেন।
অন্যান্য প্রার্থীদের মধ্যে ইশিবার শীর্ষ সরকারের মুখপাত্র ইয়োশিমাসা হায়াশি ও সাবেক অর্থনৈতিক নিরাপত্তামন্ত্রী তাকায়ুকি কোবায়াশি অন্তর্ভুক্ত থাকতে পারেন।
দলের একজন কর্মকর্তা এএফপিকে জানান, এলডিপি এই সপ্তাহে কখন এবং কীভাবে তাদের নতুন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন করবেন- তা নিয়ে আলোচনা করবে। তবে জাপানের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার জন্য নতুন নেতার এখনো সংসদের উভয় কক্ষের অনুমোদনের প্রয়োজন হবে।
ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু মাস খানেক আগে এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, তিনি নিজেকে ‘ব্যাপকভাবে’ ‘বৃহত্তর ইসরায়েল’ ধারণার সঙ্গে যুক্ত মনে করেন। তার এই বক্তব্যের পর, অনেকের মনেই প্রশ্ন জেগে ওঠে যে, নেতানিয়াহু আসলে বৃহত্তর ইসরায়েল বলতে কোন কোন দেশ বা অঞ্চলকে বোঝাচ্ছেন।
নেতানিয়াহুর ‘বৃহত্তর ইসরায়েল’সংক্রান্ত মন্তব্যের পরে অনেক আরব দেশ নিন্দা জানিয়েছে। দেশগুলো নেতানিয়াহুর মন্তব্যকে তাদের ভূখণ্ডের সার্বভৌমত্বের জন্য হুমকি হিসেবে দেখেছে। ‘বৃহত্তর ইসরায়েল’ ধারণাটিকে নানাভাবে ব্যাখ্যা করা হয়। তবে এই ধারণা মূলত দীর্ঘ সময় ধরে চরম জাতীয়তাবাদী ইসরায়েলি তথা জায়নবাদীদের মধ্যে ব্যবহৃত হয়ে আসছে।
এই ‘বৃহত্তর ইসরায়েল’ প্রায়শই এমন এক ভিশন হিসেবে উপস্থাপন করা হয়, যেখানে ভূখণ্ড সম্প্রসারণের মাধ্যমে ফিলিস্তিন, লেবানন এবং জর্ডানকে অন্তর্ভুক্ত করা হবে। পাশাপাশি সিরিয়া, ইরাক, মিশর এবং সৌদি আরবের গুরুত্বপূর্ণ অংশও ইসরায়েলের সঙ্গে যুক্ত করা হবে।
তবে সংকীর্ণ অর্থে ১৯৬৭ সালে ইসরায়েল আরব-ইসরায়েল যুদ্ধের সময় যেসব ভূখণ্ড দখল করেছিল, সেগুলো বোঝাতেও এই শব্দবন্ধ ব্যবহৃত হয়। সে সময় ইসরায়েল ফিলিস্তিনি ভূখণ্ড, সিরিয়ার গোলান মালভূমি এবং মিসরের সিনাই উপদ্বীপ দখল করেছিল।
যদিও নেতানিয়াহুর এই মন্তব্য সাম্প্রতিক এবং ‘বৃহত্তর ইসরায়েল’ধারণাটি নতুন নয় এবং স্পষ্টভাবে সংজ্ঞায়িতও নয়, তারপরও কিছু মানুষের কাছে, গাজায় চলমান ইসরায়েলি গণহত্যা এবং ইরানের সঙ্গে যুদ্ধের আলোকে ক্রমবর্ধমানভাবে প্রাসঙ্গিক মনে হচ্ছে।
‘বৃহত্তর ইসরায়েল’ধারণাটির জনক রাজনৈতিক জায়নবাদের জনক থিওডর হার্জল। তিনি তার ডায়েরিতে লিখেছিলেন যে ইহুদি রাষ্ট্র ‘মিসরের প্রবাহ (নীলনদ) থেকে (ইরাকের ইউফ্রেটিস (ফোরাত নদী) পর্যন্ত’ বিস্তৃত হওয়া উচিত। এই বাক্যাংশটি হিব্রু বাইবেল বা তানাখের আদিপুস্তকের জেনেসিস অংশ থেকে নেওয়া হয়েছে। যেখানে আল্লাহ ইব্রাহিম এবং তার বংশধরদের ‘মিসরের প্রবাহ থেকে ইউফ্রেটিস পর্যন্ত’ বিশাল ভূমি প্রদান করেছেন।
কিছু ইসরায়েলি আবার ‘বৃহত্তর ইসরায়েল’ বলতে তুলনামূলক কম বিস্তৃত একটি এলাকাকে বোঝেন। এই বিষয়ে ইহুদি ধর্মগ্রন্থ বুক অব ডিউটেরোনমি বা যা দ্বিতীয় আইন বইতে উল্লেখ রয়েছে। যেখানে আল্লাহ মূসাকে (আ.) নির্দেশ দেন ফিলিস্তিন, লেবানন, এবং মিশর, জর্ডান ও সিরিয়ার অংশ দখল করতে। আবার অনেকে শামুয়েলের কিতাব থেকে উদাহরণ টানেন। যেখানে রাজা শৌল ও দাউদের অধীনে দখলকৃত ভূখণ্ডের বর্ণনা আছে, যার মধ্যে ফিলিস্তিন, লেবানন এবং জর্ডান ও সিরিয়ার কিছু অংশ রয়েছে।
ইহুদিদের অনেকেই এই ধারণাকে কেবল রাজনৈতিক ধারণা মনে করেন না। বরং তাদের কাছে এটি এক ঐশ্বরিক আদেশ পূরণ এবং তারা যা নিজেদের জন্য অধিকারভুক্ত মনে করে সেই ভূমি পুনরুদ্ধারের প্রচেষ্টা।
১৯৪৮ সালে ইসরায়েল রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠার পর থেকেই দেশটির সীমান্ত অস্থির ছিল। ১৯৬৭ সালের আরব-ইসরায়েল যুদ্ধের সময়, ইসরায়েল গাজা উপত্যকা এবং পশ্চিম তীর, সিরিয়ার গোলান মালভূমি এবং মিসরের সিনাই উপদ্বীপ দখল করে। এটি ইসরায়েলের ভূখণ্ড সম্প্রসারণের প্রথম বড় সামরিক প্রচেষ্টা ছিল। পরে সিনাই মিসরের কাছে ফেরত দেওয়া হয় শান্তি চুক্তির অংশ হিসেবে, আর গোলান হাইটস আনুষ্ঠানিকভাবে সংযুক্ত করা হয়।
এই যুদ্ধের পর ‘বৃহত্তর ইসরায়েল’ ধারণা নতুনভাবে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে, বিশেষ করে ধর্মীয় জায়োনিস্টদের মধ্যে। ২০ শতকের শেষ দিকে, এই শব্দ বন্ধটিকে কিছু ইসরায়েলি ইতিহাস ও ধর্মীয় লক্ষ্য পূরণের প্রতীক হিসেবে গ্রহণ করেন। এরই ধারাবাহিকতায় ১৯৬৭ সালে ‘মুভমেন্ট ফর গ্রেটার ইসরায়েল’ নামক রাজনৈতিক দলের জন্ম হয়, যা ১৯৭০-এর দশকের শেষ পর্যন্ত সক্রিয় ছিল। এটি দখলকৃত ভূখণ্ড রক্ষা এবং ইহুদি নাগরিকদের বসতি স্থাপনের পক্ষে কাজ করত।
বর্তমান ইসরায়েলি সরকার ২০২২ সালে ক্ষমতায় আসার পর থেকে ‘বৃহত্তর ইসরায়েল’ উল্লেখ আরও সাধারণ হয়ে গেছে। গত বছর অর্থমন্ত্রী বেজালেল স্মতরিচ ইসরায়েলের সীমান্ত সম্প্রসারণের পক্ষে বক্তব্য দেন, যেখানে তিনি সিরিয়ার রাজধানী দামেস্ক ইসরায়েলের অন্তর্ভুক্ত করার কথা বলেন।
তিনি বলেছিলেন, ইসরায়েল ক্রমশ সব ফিলিস্তিনি ভূখণ্ড এবং জর্ডান, লেবানন, মিশর, সিরিয়া, ইরাক ও সৌদি আরবের কিছু অংশ অন্তর্ভুক্ত করবে। ‘বৃহত্তর ইসরায়েল’ ধারণার উল্লেখ করে ধর্মীয় সূত্র টেনে তিনি বলেন, ‘লিখিত আছে যে, জেরুজালেমের ভবিষ্যৎ হলো দামেস্ক পর্যন্ত প্রসারিত হওয়া।’
স্মতরিচ ২০২৩ সালে প্যারিসে ইসরায়েলে ক্ষমতাসীন লিকুদ পার্টির কর্মীর স্মরণসভায়ও একই ধরনের ধারণা তুলে ধরেছিলেন। জর্ডানসহ ইসরায়েলের মানচিত্রের সামনে দাঁড়িয়ে তিনি বলেছিলেন, ‘ফিলিস্তিনি জনগণ নামে কোনো কিছু নেই।’ অন্যান্য মন্ত্রী এবং এমপিরাও গাজায় ফিলিস্তিনিদের ভূমি দখল করার পক্ষে বক্তব্য রেখেছেন।
মরণব্যধি ক্যানসারের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে রাশিয়ার বিজ্ঞানীদের তৈরি ভ্যাকসিন ট্রায়ালে সফল হয়েছে। যা এখন সব রোগীর ক্ষেত্রে ব্যবহারের জন্য প্রস্তুত। রাশিয়ার ফেডারেল মেডিকেল অ্যান্ড বায়োলজিক্যাল এজেন্সির (এফএমবিএ) প্রধান ভেরোনিকা স্কভোর্টসোভা ইস্টার্ন অর্থনৈতিক ফোরামে এ ঘোষণা দেন।
নতুন ভ্যাকসিনটির নাম এন্টারোমিক্স। এটি তৈরি হয়েছে এমআরএনএ প্রযুক্তি ব্যবহার করে। এ প্রযুক্তির মাধ্যমে কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন তৈরি করার পর এটি বিশ্বব্যাপী পরিচিতি লাভ করে।
নতুন এই ভ্যাকসিন দুর্বল ভাইরাস ব্যবহারের পরিবর্তে মানব শরীরের কোষগুলোকে প্রোটিন তৈরিতে প্রশিক্ষণ দেয়। এরপর শরীর এমন প্রোটিন তৈরি করে যা ক্যানসার কোষগুলোকে আক্রমণ করে।
পরীক্ষায় কী দেখা গেছে?
ফেডারেল মেডিকেল অ্যান্ড বায়োলজিক্যাল এজেন্সি জানিয়েছে, ভ্যাকসিনটি তিন বছরের প্রাক-ক্লিনিকাল পরীক্ষা সফলভাবে সম্পন্ন করেছে। পরীক্ষায় দেখা গেছে, বারবার ডোজ দেওয়ার পরেও এটি সম্পূর্ণ নিরাপদ। সবচেয়ে ভালো ফলাফল হলো, কিছু ক্ষেত্রে ক্যান্সারের ধরনের ওপর নির্ভর করে টিউমারের আকার ৬০ শতাংশ থেকে ৮০ শতাংশ পর্যন্ত ছোট হয়েছে বা সেগুলোর বৃদ্ধি অনেক কমে গেছে। গবেষকরা আরও দেখেছেন যে, এই ভ্যাকসিন যারা গ্রহণ করেছেন তাদের বেঁচে থাকার সম্ভাবনাও উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে।
কোন ক্যান্সারে এটি কাজ করবে?
প্রাথমিকভাবে, এই ভ্যাকসিনটি কোলন ক্যান্সারের চিকিৎসায় ব্যবহার করা হবে। তবে বিজ্ঞানীরা গ্লিওব্লাস্টোমা (এক ধরনের দ্রুত বর্ধনশীল মস্তিষ্কের ক্যান্সার) এবং বিভিন্ন ধরনের মেলানোমা (গুরুতর ত্বকের ক্যানসার, যার মধ্যে চোখের মেলানোমাও অন্তর্ভুক্ত) এর জন্যও ভ্যাকসিন তৈরির কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন।
মন্তব্য