সামাজিক পরিবর্তনে অবদান রাখার স্বীকৃতি হিসেবে চলতি বছর ডায়ানা অ্যাওয়ার্ড পেয়েছেন তিন শতাধিক তরুণ। প্রিন্সেস ডায়ানার জন্মদিন সামনে রেখে সোমবার রাত ৯টায় এ অ্যাওয়ার্ড ঘোষণা করা হয়।
পুরস্কারপ্রাপ্তদের সম্পূর্ণ তালিকাটি আছে দ্য ডায়ানা অ্যাওয়ার্ডস ওয়েবসাইটে। এদের মধ্যে ১৯ জন বাংলাদেশি।
জেনে নেয়া যাক, কোন খাতে কীভাবে অবদানের ফলে এ সম্মাননা পেয়েছেন তারা।
মাহবুবুল আবরার
বেসরকারি সাহায্য সংস্থা জাগো ফাউন্ডেশনের অঙ্গ সংগঠন ভলান্টিয়ার ফর বাংলাদেশের তরুণ উন্নয়ন বিশেষজ্ঞ মাহবুবুল।
করোনাভাইরাস মহামারিতে ১৩টির বেশি জেলায় ত্রাণ সরবরাহের কাজ শুরু হয় তার হাত ধরে, যার সুফলভোগী প্রায় ৫০ হাজার মানুষ।
৪৫টি জেলায় ৭ হাজার স্বেচ্ছাসেবককে নিয়ে তিনি ‘আপনার মাস্ক কোথায়’ কর্মসূচি পরিচালনা করেছেন।
মহামারির সংকটজনক সময়ে এসব উদ্যোগে নেতৃত্ব দিয়ে বিপুলসংখ্যক তরুণকে সমাজসেবায় উদ্বুদ্ধ করেছেন তিনি।
মোহাম্মদ আফজাল সুলতান সাফি
চট্টগ্রামভিত্তিক বেসরকারি সাহায্য সংস্থা দূরবীণ ফাউন্ডেশনের উদ্যোক্তা সাফি দেশের শিক্ষা খাত ও কর্মক্ষেত্রে ত্রিপুরা জনগোষ্ঠীর অন্তর্ভুক্তি নিয়ে কাজ করেন। একজন দক্ষ নারী দর্জির অধীনে ১০ জন করে নারীকে সেলাইয়ের প্রশিক্ষণ ও সেলাই মেশিন সরবরাহের মাধ্যমে ক্ষুদ্র ব্যবসা দাঁড় করাতে সাহায্য করেছেন তিনি।
২১ বছর বয়সী এই তরুণ ২০২৫ সালের মধ্যে শতভাগ ত্রিপুরা শিশুকে শিক্ষার আওতায় আনতে চান। এ পর্যন্ত ৩৪টি শিশুকে স্কুলে ভর্তি হতে সাহায্য করেছেন তিনি।
পারিবারিক নির্যাতন, এর কারণ, ক্ষতিকর প্রভাবের মতো বিষয়ে কর্মশালারও আয়োজন করেছেন সাফি, যে বিষয়ে ক্ষুদ্র এ নৃগোষ্ঠীর আগে কোনো ধারণাই ছিল না।
আফজালের উদ্যোগে বাল্যবিবাহের ক্ষতিকর দিক সম্পর্কে জানার পর ১৮ বছর বয়সের আগে কিশোরীদের বিয়ে না দেয়ার প্রতিজ্ঞা নিয়েছেন ত্রিপুরা অভিভাবকরা।
আনিকা সুবাহ আহমেদ উপমা
২০১৬ সালে ‘ইভোল্যুশন ৩৬০’ নামে তরুণদের একটি সংগঠন গড়ে তোলেন উপমা। নারী-পুরুষ বৈষম্যমুক্ত বিশ্ব গড়ে তোলা, জেন্ডারভিত্তিক সহিংসতা নির্মূল আর জাতিসংঘের টেকসই উন্নয়নের পাঁচ নম্বর লক্ষ্যমাত্রা জেন্ডার সমতা তৈরির লক্ষ্য অর্জনে কাজ করছে সংগঠনটি।
বর্তমানে ২১ বছর বয়সী এই তরুণী মাত্র ১৫ জন স্বেচ্ছাসেবক নিয়ে মানিকগঞ্জ থেকে শুরু করেন ‘হি ফর শি’ কর্মসূচি, যা পরে বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সম্প্রসারণ হয়। এর আওতায় যৌনশিক্ষার আওতায় কিশোর ছেলেদের পারস্পরিক সম্মতির বিষয়টি উপলব্ধি করানোর উদ্যোগ নেয়া হয় এবং কিশোরী মেয়েদের দেয়া হয় আত্মরক্ষামূলক প্রশিক্ষণ।
বর্তমানে তার দলে রয়েছে ৩০০ স্বেচ্ছাসেবক। নতুন প্রকল্প হিসেবে শিশুদের ওপর যৌন হয়রানি বন্ধে ‘গুড টাচ ব্যাড টাচ’ শীর্ষক সচেতনতামূলক কর্মসূচি নিয়ে কাজ করছেন উপমা।
শওকত আরাফাত
১৭ বছর বয়সে চট্টগ্রাম থেকে ভলান্টিয়ার ফর বাংলাদেশের হয়ে স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে কাজ শুরু করেছিলেন শওকত। কঠোর পরিশ্রম আর পরিবর্তনে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ শওকত ২ বছরের মধ্যে সংগঠনের জেলা পর্যায়ের প্রধান হন।
বর্তমানে ২৩ বছর বয়সী এই যুবক কাজ করেছেন ৩ হাজার রোহিঙ্গা শরণার্থীর তথ্য তালিকাভুক্তকরণে। তাদের বাসস্থান ও শিক্ষা কর্মসূচিতে যুক্ত হতেও সহযোগিতা করেছেন।
রাঙ্গামাটিতে ভূমিধসে গৃহহীন হওয়া মানুষের জন্য তহবিল সংগ্রহ, পবিত্র রমজান মাসে ১০০ শিশুর ইফতারের ব্যবস্থা করাসহ সুবিধাবঞ্চিতদের কল্যাণে বিভিন্ন কাজে অংশ নিয়েছেন তিনি।
রিজভী আরেফীন
অলাভজনক প্রতিষ্ঠান ‘অ্যাওয়ারনেস ৩৬০’-এর সহ-প্রতিষ্ঠাতা রিজভী ব্যক্তিজীবনে নানা রকম হয়রানির শিকার হয়ে ভুগতেন হীনমন্যতায়। বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে তিনি জাতিসংঘের বৈশ্বিক উন্নয়ন নিয়ে গবেষণা করে উপলব্ধি করেন যে, তার শৈশবের বিভিন্ন ঘটনার জন্য তিনি দায়ী নন। এ রকমই ভুক্তভোগী বাকিদের জন্যও সুযোগের পথ উন্মুক্ত করতে কাজ শুরু করেন তিনি।
টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট (এসডিজি) অর্জনে তরুণদের দক্ষতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে কাজ করছেন রিজভী। শিক্ষা, জেন্ডার সমতা, স্যানিটেশনসহ বিভিন্ন ইস্যুতে তার জনস্বার্থমূলক কাজের সুফলভোগী দেড় লাখের বেশি মানুষ।
গত ৮ বছরে ১০ হাজার ঘণ্টার বেশি সময় রিজভী ব্যয় করেছেন স্বেচ্ছাসেবার কাজে।
মুরশিদুল আলম ভূঁইয়া
২০১৬ সালে কয়েকজন বন্ধুকে নিয়ে ‘টিম ব্যর্থ’ গড়ে তোলেন মুরশিদুল। মানুষের মধ্যে সৃজনশীল জ্ঞানচর্চা বাড়ানোর লক্ষ্যে বহুমুখী কাজ করছে তার সংগঠন।
বর্তমানে ১৯ বছর বয়সী এই তরুণের নেতৃত্বে বিভিন্ন দেশের মানুষকে নিয়ে গড়ে উঠেছে একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক সম্প্রদায়, যেখানে তুলে ধরা হয় জীবনের নানা গল্প আর স্মৃতিচারণা।
মুরশিদুলের আশা, বৈচিত্র্যময় মানবজীবনের জীবনের বিভিন্ন দিক, গল্প, স্মৃতিচারণা আর অভিজ্ঞতার সংস্পর্শে নিয়ে আসার মাধ্যমে অনেককেই জীবন সম্পর্কে আশাবাদী হতে সাহায্য করবেন তিনি।
খাদিজা তুল কুবরা বিনতে আহসান
বাংলাদেশে মেয়ে শিশু ও কিশোরীদের মধ্যে বেড়ে ওঠার সময় যারা হয়রানি ও নিপীড়নের শিকার হয়েছে, তাদের একজন খাদিজা। জেন্ডারভিত্তিক সহিংসতা প্রতিরোধ ও সমতা তৈরিকে জীবনের লক্ষ্য করেছেন ২৪ বছরের এই তরুণী।
২০১৮ সালে তিনি গড়ে তোলেন ‘উইমেন ভিউ’ (WeMen View)। বর্তমানে সংগঠনটির সঙ্গে স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে কাজ করছে ৭০ জন। ১ হাজারের বেশি তরুণ-তরুণীকে নিয়ে জেন্ডারভিত্তিক সহিংসতাবিষয়ক কর্মশালা পরিচালনা করেছেন তারা।
৮ হাজার ডলারের বেশি তহবিল সংগ্রহ করেছেন খাদিজা। করোনাভাইরাস মহামারির সময়ে ১ হাজারের বেশি মানুষকে খাদ্য ও নিত্যপণ্য বিনা মূল্যে সরবরাহ করে নিজের দাতব্য কাজগুলো অব্যাহত রেখেছেন তিনি।
২০২০ সালে সাইক্লোন আম্ফানে গৃহহীন মানুষের আবাসনের ব্যবস্থা করতে সমন্বিত প্রকল্প চালু হয় খাদিজার হাত ধরে।
সাদিদ বিন হাসান
২০১৯ সালে যুক্তরাষ্ট্রের স্যান ফ্রান্সিসকোতে পূর্ণকালীন চাকরি ছাড়েন সাদিদ। ঝরে পড়া ৭ হাজার শিক্ষার্থীকে বিশ্ববিদ্যালয়ে পৌঁছে দেয়ার লক্ষ্যে কাজ শুরু করেন তিনি।
‘ক্রসরোডস ইনিশিয়েটিভ’-এর মাধ্যমে পরবর্তী ৩ বছরে সরাসরি ও অনলাইনে ১ লাখ শিক্ষার্থীকে সহযোগিতা করেছেন সাদিদ। মূলত পরামর্শদানের মাধ্যমে তরুণদের দিকনির্দেশনা দিতে সংযোগ স্থাপনের কাজ করে প্ল্যাটফর্মটি।
এ পর্যন্ত তার সহযোগিতায় শিক্ষার্থীরা ১০ লাখ ডলারের বৃত্তি পেয়েছেন। ২০২৫ সালের মধ্যে ১০ লাখ শিক্ষার্থীকে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে শিক্ষাগ্রহণের যোগ্য করে তুলতে চান সাদিদ।
সপ্তাহে ৮০ ঘণ্টার বেশি কাজ করেন সাদিদ। তিনি জানান, আমৃত্যু প্রতিদিন কমপক্ষে একজনকে সাহায্য করতে চান।
আনাস হোসেন
বাংলাদেশের গ্রামাঞ্চলে জরুরি স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতে কাজ করছে সেইফহুইল। প্রতিষ্ঠানটির সহ-প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আনাস হোসেন।
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) থেকে কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে পড়াশোনা শেষ করা আনাস কাজ করেছেন পরিবেশবিদ হিসেবে, জাগো ফাউন্ডেশন, বাংলাদেশ ইয়ুথ লিডারশিপ সেন্টারসহ (বিওয়াইএলসি) বিভিন্ন সংগঠনের সঙ্গে।
সাগর মজুমদার
ভার্চুয়াল রিয়েলিটি (ভিআর) প্রযুক্তির মাধ্যমে শিক্ষাদান কার্যক্রম পরিচালনা করছেন সাগর মজুমদারের নার্ডিজ। প্রতিষ্ঠানটির চিফ অপারেটিং অফিসার তিনি।
ইতিহাস, ভূগোল ও বিজ্ঞান বিষয়ে ১২০টির বেশি পাঠ্যসূচি তৈরিতে তিনি সহযোগিতা করেছেন। এর সুফলভোগী বাংলাদেশের ২৭টি জেলার ৪০ হাজারের বেশি শিশু।
পাঠদান কার্যক্রমে ভিআর প্রযুক্তিকে কার্যকর উপকরণ হিসেবে প্রমাণ করেছেন সাগর ও তার দল।
বিদ্যমান শিক্ষাব্যবস্থার ঘাটতি পূরণে এই প্রযুক্তি নিয়ে কাজ করার ব্যাপারে আশাবাদী সাগর। তার মতে, এর মাধ্যমেই একদিন দেশের সব শিশু মানসম্পন্ন শিক্ষা ও অভিজ্ঞতামূলক শিক্ষা নেয়ার সুযোগ পাবে।
গুলনাহার মাহবুব মনিকা
নিজের পেশায় মনোযোগ দেয়ার পাশাপাশি বাস্কেটবল খেলায় নারীদের অংশগ্রহণ বৃদ্ধিতে কাজ করছেন ২৪ বছরের তরুণী মনিকা। নারীদের মধ্যে যোগাযোগ ও সম্পর্ক জোরদারের মাধ্যমে মানসিক চাপ কমানো, নারীদের ক্ষমতায়নে সহযোগিতা করেন তিনি।
এ লক্ষ্যে সব বয়সের নারীদের জন্য বিভিন্ন টুর্নামেন্টের নিয়মিত আয়োজন করেন মনিকা। তার সহযোগিতায় পাঁচ নারী অ্যাথলেট পৃষ্ঠপোষকতা পাচ্ছেন।
ভবিষ্যতে কেবল নারীদের নিয়ে জাতীয় লীগ ও বাংলাদেশে বাস্কেটবলে প্রথম নারী দল গঠন নিয়ে আশাবাদী মনিকা। তিনি নিজেও জাতীয় পর্যায়ের একজন বাস্কেটবল খেলোয়াড়।
সিদরাতুল মুনতাহা
বাংলাদেশে বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, প্রকৌশলবিদ্যা ও গণিতে পরবর্তী প্রজন্মকে আগ্রহী করে তোলার লক্ষ্যে কাজ করছেন ২৪ বছরের তরুণী সিদরাতুল। ‘বাংলাদেশ চ্যাপ্টার অফ টেকনোভেশন গার্লস’ নামে একটি প্রতিষ্ঠান চালু করেছেন তিনি।
কিশোরী ও তরুণীদের দারিদ্র্য নির্মূল, জলবায়ু পরিবর্তন, জেন্ডার সমতা, নারীদের নিরাপত্তা, বাল্যবিবাহ, যৌতুক, বেকারত্বসহ সামাজিক বিভিন্ন বিষয়ে মোবাইল অ্যাপভিত্তিক উদ্যোগে সাহায্য করেন তিনি।
সিদরাতুলের দুই শিষ্য নারীদের মানসম্পন্ন শিক্ষা নিশ্চিতে ঋণদানভিত্তিক এবং বাল্যবিবাহ বন্ধে অ্যাপ চালু করেছেন। ট্রান্সজেন্ডারদের জন্য অ্যাপ তৈরির কাজ করছেন অনেকে।
মারিয়া মুমু
এক বন্ধুর আত্মহত্যার ঘটনায় মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে কাজ শুরু করেন মারিয়া মুমু। তিনি নিজেও ভুগছিলেন হতাশা ও অবসাদে।
‘মশাল মেন্টাল হেলথ’ নামে একটি মানসিক স্বাস্থ্যবিষয়ক পরামর্শক প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছেন ২০ বছর বয়সী এই তরুণী। মূলত তরুণ-তরুণীদের মানসিক স্বাস্থ্যসেবা নিয়ে কাজ করে প্রতিষ্ঠানটি।
সামাজিকভাবে তার প্রতিষ্ঠানটির অগ্রযাত্রা শুরু হয় ‘মিস ইউনিভার্স বাংলাদেশ’-এর সঙ্গে যুক্ত হওয়ার মধ্য দিয়ে। এ প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে তিনি মানসিক স্বাস্থ্যবিষয়ক বার্তা পৌঁছে দেন লাখো মানুষের কাছে।
করোনাভাইরাস মহামারিকালীন মানসিক সুস্থতার বিষয়টি নতুন করে আলোচনায় উঠে আসে। এ সময়ে বিনা মূল্যে সেবাদানের প্রথম উদ্যোগ নেয়া অন্যতম প্রতিষ্ঠান মারিয়ার ‘মশাল মেন্টাল হেলথ’।
ইউসুফ মুন্না
কিশোর বয়স থেকেই লেখালেখির আগ্রহ ছিল ইউসুফের। কিন্তু বারবার সম্পাদক ও প্রকাশনা সংস্থাগুলোর প্রত্যাখ্যানের শিকার হয়েছেন তিনি। বর্তমানে নিজের ‘রিফ্লেক্টিভ টিনস’ কর্মসূচির মাধ্যমে তরুণদের সৃজনশীলতা প্রকাশে সহযোগিতা করছেন ২১ বছর বয়সী এই তরুণ।
গত ৭ বছরে বাংলাদেশের অর্ধশতাধিক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সরাসরি কাজ করেছে ‘রিফ্লেক্টিভ টিনস’। তারা সহযোগিতা করেছে দেশের ৬১ হাজার কিশোর-কিশোরীকে।
শুধু ২০২০ সালে প্রতিষ্ঠানটির চারটি ভিন্ন প্রকল্পে যুক্ত হয়েছে ১১ হাজার শিক্ষার্থী, যা আগের তুলনায় ১২ গুণ বেশি।
লামিয়া তানজিন তানহা
অলাভজনক প্রতিষ্ঠান ‘ট্রান্সএন্ড’-এর প্রতিষ্ঠাতা ২০ বছর বয়সী তানহা। বাংলাদেশের ট্রান্সজেন্ডার কমিউনিটির কল্যাণে কাজ করছে প্রতিষ্ঠানটি।
দেশজুড়ে ৭০ জন স্বেচ্ছাসেবকের সহযোগিতায় শিক্ষা, প্রশিক্ষণ, উদ্যোক্তা হতে আর কর্মসংস্থানে যোগ দিতে ট্রান্সজেন্ডারদের সহযোগিতা করছে তানহার ট্রান্সএন্ড। কম্পিউটার আর ইংরেজি ভাষায় দক্ষতা বাড়াতেও সাহায্য করে প্রতিষ্ঠানটি।
এ পর্যন্ত দেশের ৩ লাখ ৪৫ হাজার মানুষের কাছে পৌঁছেছে ট্রান্সএন্ড। কর্মদক্ষতা বৃদ্ধিতে ১৩৫ জন ট্রান্সজেন্ডারকে প্রশিক্ষণ আর ৪৩ জনকে চাকরি পেতে সহযোগিতা করেছে প্রতিষ্ঠানটি।
ট্রান্সজেন্ডারদের জন্য একটি প্ল্যাটফর্ম গড়ে তোলার পাশাপাশি বাংলাদেশি তরুণ সমাজের অগ্রগতির লক্ষ্যেও কাজ করছেন তিনি।
সরকার তানভীর আহমেদ
রাজশাহীর জয়পুরহাটের বাসিন্দা সরকার তানভীর আহমেদ। নিজ এলাকায় তরুণ সংঘের নেতা তিনি। সমাজে ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে তরুণদের কল্যাণে কাজ করতে আগ্রহী তিনি।
২২ বছর বয়সী তানভীরের নেতৃত্বে বিভিন্ন সামাজিক প্রকল্পে কাজ করছেন ২৫টি দেশের ৩৫০ তরুণ-তরুণী। ২০০৯ সাল থেকে বৃক্ষরোপণ, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা কর্মসূচি, নারী নিরাপত্তা, তথ্যের অপপ্রচার, শীতবস্ত্র বিতরণসহ নানা বিষয়ে কাজ করেছেন এই তরুণরা।
আফরুজা তানজি
স্কুলের একটি প্রকল্পের অংশ হিসেবে গ্রামাঞ্চলের নারীদের সঙ্গে কথা বলেছিলেন আফরুজা। জেনেছেন কর্মক্ষেত্রে আর আর্থিক স্বনির্ভরতা অর্জনের পথে বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতার কথা। এরপর থেকেই প্রান্তিক নারীদের ক্ষমতায়নে তাদের দক্ষতা বাড়াতে প্রশিক্ষণ ও কর্মশালা আয়োজনে কাজ শুরু করেন তিনি।
বর্তমানে ২৩ বছর বয়সী আফরুজা ৭ শতাধিক কিশোরী ও নারীকে আর্থিক হিসাববিষয়ক প্রশিক্ষণ দিয়েছেন। তিনি ক্ষুদ্র শিল্পবিষয়ক প্রশিক্ষণ দিয়েছেন ১০০ নারীকে। ১ হাজারের বেশি শিল্পকর্মের বাণিজ্যিকীকরণ করেছেন। তিনি হাজারো কিশোরী ও নারীকে জীবিকা উপার্জনে যুক্ত করেছেন।
মোস্তফা জামান
মোস্তফা জামান ভলান্টিয়ার ফর বাংলাদেশের ময়মনসিংহ জেলা শাখার প্রতিষ্ঠাতা সদস্য ও স্বেচ্ছাসেবী। পেশায় চিকিৎসক ২৪ বছর বয়সী জামান ৬ বছর ধরে কাজ করছেন সুবিধাবঞ্চিত নারী ও কিশোরীদের স্তন ও জরায়ুর ক্যান্সার নিয়ে সচেতনতা তৈরিতে।
‘স্যানিটেশন, হেলথ এডুকেশন অ্যান্ড ফলো আপ’ নামে আরেক কর্মসূচি চালু করেছেন তিনি। এর মাধ্যমে ক্যান্টিনে কর্মরত কিশোরদের পরিচ্ছন্নতাবিষয়ক প্রশিক্ষণ দেয়া হয়।
২৫ স্বেচ্ছাসেবকের একটি দল পরিচালনা করেন জামান। এ পর্যন্ত প্রায় ১০ হাজার মানুষ জামানের সামাজিক কাজের কারণে উপকৃত হয়েছেন।
এ ছাড়া, ‘ওয়ান অব ইউ’ সংগঠনের আজিজুল ইসলামের বিষয়ে বিস্তারিত জানা যায়নি।
বিভিন্ন সময়ে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ডায়ানা অ্যাওয়ার্ড পাওয়া তরুণদের শক্তিশালী নেটওয়ার্কে যুক্ত হয়ে কাজের পরিধি বৃদ্ধির সুযোগ পাবেন এই বাংলাদেশিরা।
প্রতি বছর ৯ থেকে ২৫ বছর বয়সীদের মধ্যে এ পুরস্কার বিতরণ করা হয়।
আরও পড়ুন:গাজার দক্ষিণে যুক্তরাষ্ট্র-সমর্থিত একটি সংস্থার পরিচালিত নতুন ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রে মঙ্গলবার হাজারো ফিলিস্তিনি ভিড় করেন। এ সময় চরম বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। ইসরাইল এদিন গাজায় নতুন ত্রাণ বিতরণ পদ্ধতি কার্যকর করে।
ফিলিস্তিনের রাফা থেকে এএফপি জানায়, মাত্র কয়েকদিন আগে ইসরাইল কর্তৃক আরোপিত পূর্ণাঙ্গ ত্রাণ অবরোধ আংশিকভাবে শিথিল করার পর রাফায় এ ঘটনা ঘটেছে। ২ মার্চ থেকে আরোপিত সেই অবরোধ খাদ্য ও ওষুধের তীব্র সংকট তৈরি করে।
পরে ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু স্বীকার করেন যে ‘ত্রাণকেন্দ্রে এক মুহূর্তের জন্য নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলেছিলাম’। তবে এক জ্যেষ্ঠ সামরিক কর্মকর্তা এই বিতরণকে ‘সফলতা’ হিসেবে আখ্যা দেন।
যুক্তরাষ্ট্র-সমর্থিত গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশন (জিএইচএফ) জানায়, বিশৃঙ্খলা সত্ত্বেও স্বাভাবিক কার্যক্রম পুনরায় শুরু হয়েছে।
বাস্তুচ্যুত গাজাবাসী আয়মান আবু যায়েদ এএফপিকে বলেন, তিনি কেন্দ্রে সারিতে দাঁড়িয়ে ছিলেন, ‘হঠাৎ করেই অনেক মানুষ ধাক্কা দিয়ে এলোমেলোভাবে ঢুকে পড়তে থাকে’।
তিনি বলেন, ‘এটা হয়েছে ত্রাণের অভাব এবং বিলম্বের কারণে। মানুষ ভেতরে ঢুকে যতটুকু পারা যায় সংগ্রহের চেষ্টা করেছে।’
একপর্যায়ে ‘ইসরাইলি বাহিনী গুলি ছোড়া শুরু করে, শব্দটা খুব ভয়ের ছিল। মানুষ ছত্রভঙ্গ হয়ে পড়ে। তারপরও অনেকে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ত্রাণ নেওয়ার চেষ্টা চালিয়ে যায়।’
পরবর্তীতে ইসরাইলি সামরিক বাহিনী জানায়, তারা ‘কেন্দ্রের বাইরের এলাকায় সতর্কতামূলক গুলি’ ছুঁড়েছে।
তারা আরও জানায়, ‘পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এসেছে, ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রম পরিকল্পনামাফিক চলবে, এবং আইডিএফ (ইসরাইলি বাহিনী)-এর সদস্যদের নিরাপত্তা বিঘ্নিত হয়নি।’
জিএইচএফ এক বিবৃতিতে জানায়, ‘এসডিএস (ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্র)-এ একসময় এত বেশি ভিড় হয় যে আমাদের দল পেছনে সরে গিয়ে কিছু সংখ্যক গাজাবাসীকে নিরাপদে ত্রাণ নিতে দেয় এবং ছত্রভঙ্গ হতে দেয়।’
‘স্বাভাবিক কার্যক্রম পুনরায় শুরু হয়েছে’, যোগ করে সংস্থাটি।
এএফপির ফুটেজে দেখা গেছে, মঙ্গলবার বিপুল সংখ্যক মানুষ ত্রাণের বাক্স, যার গায়ে ‘জিএইচএফ’ চিহ্ন ছিল, বহন করে এলাকা ত্যাগ করছে।
-‘৪,৬২,০০০ খাবারের ব্যবস্থা’-
জিএইচএফ আরও জানিয়েছে, ‘হামাসের আরোপিত অবরোধ’ তাদের একটি কেন্দ্রে কয়েক ঘণ্টার বিলম্ব সৃষ্টি করেছে।
এদিকে হামাসের সরকারি গণমাধ্যম দপ্তর এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, গাজায় ত্রাণ বিতরণের জন্য ইসরাইলের নতুন উদ্যোগ ‘চরমভাবে ব্যর্থ’ হয়েছে।
বিবৃতিতে বলা হয়, ‘এই ব্যর্থতা দেখা দেয় তখন, যখন হাজার হাজার ক্ষুধার্ত মানুষ, যারা প্রায় ৯০ দিন ধরে দখলদার বাহিনীর অবরোধে খাদ্য ও ওষুধবিহীন অবস্থায় রয়েছে, দুঃখজনক ও মর্মন্তুদ দৃশ্যের মধ্যে ওইসব এলাকায় ছুটে যায়।’
মঙ্গলবারের বিবৃতিতে জিএইচএফ জানায়, এখন পর্যন্ত ‘প্রায় ৮,০০০ খাবারের বাক্স বিতরণ করা হয়েছে... যা ৪,৬২,০০০ খাবার হিসেবে গণ্য’। তারা জানায়, এর আগের দিন থেকেই কার্যক্রম শুরু হয়েছিল।
এক জ্যেষ্ঠ ইসরাইলি সামরিক কর্মকর্তা এএফপিকে বলেন, ‘আজকের দিনটি যুক্তরাষ্ট্রীয় সংস্থাগুলোর মাধ্যমে ত্রাণ বিতরণের জন্য সফল ছিল।’ তিনি আরও বলেন, ‘হামাস চেষ্টা করেছিল যেন সাধারণ মানুষ ভয় পেয়ে এগিয়ে না আসে। কিন্তু গাজাবাসীরা হাজার হাজার প্যাকেজ নিতে এসেছিল।’
ইসরাইল জিএইচএফ-এর ত্রাণ বিতরণ প্রচেষ্টাকে সহযোগিতা করছে, এবং বলছে যে তারা ত্রাণকে হামাসের হাত থেকে দূরে রাখতে চায়।
মঙ্গলবার নেতানিয়াহু বলেন, ‘আমরা আমাদের মার্কিন বন্ধুদের সঙ্গে পরিকল্পনা করেছি, যাতে ত্রাণ বিতরণ সাইটগুলো নিয়ন্ত্রিত হয় এবং একটি মার্কিন কোম্পানি ফিলিস্তিনি পরিবারগুলোর মধ্যে খাবার বিতরণ করে।’
‘এক মুহূর্তের জন্য নিয়ন্ত্রণ হারানো গিয়েছিল, তবে পরে তা পুনরুদ্ধার করা গেছে।’
-‘হৃদয়বিদারক দৃশ্য’-
জিএইচএফ-এর বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে যে তারা ইসরাইলের সামরিক লক্ষ্য বাস্তবায়নে সহায়তা করছে, ফিলিস্তিনিদের উপেক্ষা করছে, জাতিসংঘের ব্যবস্থাকে পাশ কাটিয়েছে এবং মানবিক নীতিমালার সঙ্গে অসামঞ্জস্য আচরণ করছে।
জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেসের মুখপাত্র মঙ্গলবারের দৃশ্যকে ‘নেহায়েত হৃদয়বিদারক’ বলে উল্লেখ করেন।
স্টেফান দুজারিক বলেন, ‘গত সপ্তাহে মহাসচিব যা বলেছেন, আমরা ও আমাদের অংশীদাররা একটি সুসংহত, নীতিনির্ভর, পরিচালনাযোগ্য পরিকল্পনা তৈরি করেছি, যা সদস্য রাষ্ট্রগুলোর সমর্থন নিয়ে জরুরি মানবিক সহায়তা পৌঁছে দেওয়ার জন্য প্রস্তুত।’
জেনেভায় গত ফেব্রুয়ারিতে নিবন্ধিত হলেও, জিএইচএফ-এর কোনো অফিস বা প্রতিনিধি নেই মানবিক বিশ্বের অঘোষিত রাজধানীতে।
সংস্থাটির সাবেক নির্বাহী পরিচালক জেক উড রোববার পদত্যাগের ঘোষণা দেন। তিনি বলেন, মানবিক নীতির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে কাজ করা সম্ভব নয়।
কিছু মানবিক কর্মী যুক্তি দিয়েছেন যে, নিরাপদ ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্র নির্ধারণের মাধ্যমে মানুষকে পুনরায় স্থানচ্যুত হতে বাধ্য করা মানবিক নীতির লঙ্ঘন।
সমালোচকেরা প্রশ্ন তুলেছেন, এসব বিতরণ কেন্দ্র কোথায় হবে তা কে নির্ধারণ করেছে ু বিশেষ করে যখন ইসরাইল ‘গাজা বিজয়ের’ পরিকল্পনা করছে বলে তথ্য প্রকাশিত হয়েছে।
জাতিসংঘ জিএইচএফ-এর পরিকল্পনায় অংশ নেওয়ার বিষয়টি প্রত্যাখ্যান করেছে। তাদের এক মুখপাত্র বলেছেন, ‘এটি আমাদের মৌলিক নীতিমালার সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ নয় নিরপেক্ষতা, স্বাতন্ত্র্য ও স্বাধীনতার মতো নীতিগুলোর সঙ্গেও না।’
২৪ মে নিউইয়র্ক টাইমসে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ইসরাইলি কর্মকর্তাদের বরাতে বলা হয়, গাজার জন্য যুক্তরাষ্ট্র-সমর্থিত নতুন ত্রাণ পরিকল্পনাটি ‘মূলত ইসরাইলিদের দ্বারা তৈরি ও পরিকল্পিত, এর লক্ষ্য হামাসকে দুর্বল করা।’
ইউরোপীয় অটোমোবাইল ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন (এসিইএ) মঙ্গলবার জানিয়েছে, চীনা বৈদ্যুতিক গাড়ি নির্মাতাদের শেয়ার বৃদ্ধি পাওয়ায় এপ্রিল মাসে ইলন মাস্কের টেসলার তৈরি গাড়ির বিক্রি অর্ধেকেরও বেশি কমে গেছে।
প্যারিস থেকে বার্তা সংস্থা এএফপি এ খবর জানায়।
ইউরোপীয় ইউনিয়নের ২৭টি দেশে সামগ্রিকভাবে বৈদ্যুতিক গাড়ির বিক্রি বৃদ্ধি পেলেও, ইলন মাস্কের টেসলার শেয়ার নাটকীয়ভাবে হ্রাস পেয়েছে।
ইউরোপীয় অটোমোবাইল ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন (এসিইএ) জানিয়েছে, এপ্রিল মাসে টেসলার বিক্রি কমে ৫ হাজার ৪৭৫টি গাড়িতে দাঁড়িয়েছে, যা গত বছরের একই মাসের তুলনায় ৫২.৬ শতাংশ কম।
২০২৫ সালের প্রথম চার মাসে, টেসলার বিক্রি গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ৪৬.১ শতাংশ কমে ৪১ হাজার ৬৭৭টি গাড়িতে দাঁড়িয়েছে।
জেটো ডায়নামিক্সের পরামর্শদাতাদের মতে, একসময় বৈদ্যুতিক গাড়ি বিক্রিতে শীর্ষস্থানীয় প্রতিষ্ঠান টেসলাকে এপ্রিল মাসে ভক্সওয়াগন, বিএমডব্লিউ, রেনল্ট এবং চীনা নির্মাতা বিওয়াইডিসহ ১০টি প্রতিদ্বন্দ্বী টেসলাকে ছাড়িয়ে গেছে।
টেসলা এপ্রিল মাসে ঘোষণা করেছিল, প্রথম প্রান্তিকে বিশ্বব্যাপী তাদের বিক্রয় ১৩ শতাংশ কমেছে, যা মাস্কের ওপর চাপ বাড়িয়েছে, যদিও কোম্পানিটি আংশিকভাবে মডেল ওয়াই স্ট্যান্ডার্ড-বেয়ারার আপগ্রেডের কারণে উৎপাদন হ্রাসের জন্য দায়ী করেছে।
মাস্ক তখন থেকেই ঘোষণা করেছেন, তিনি ট্রাম্পকে মার্কিন সরকারের ব্যয় কমাতে সাহায্য করার জন্য তার কাজ কমিয়ে দেবেন এবং গত সপ্তাহে বলেছিলেন টেসলার বিক্রয় ‘ভালো’ হচ্ছে।
এসিইএ তথ্য অনুসারে, এপ্রিল মাসে বৈদ্যুতিক গাড়ির বিক্রি গত বছরের তুলনায় সামগ্রিকভাবে ২৬.৪ শতাংশ বেড়ে বাজারের ১৫.৩ শতাংশ অংশ দখল করেছে।
ইউরোপ জুড়ে এই বৃদ্ধি অসম কারণ বিভিন্ন সরকার এবং নির্মাতারা বৈদ্যুতিক গাড়ি কেনার জন্য বিভিন্ন প্রণোদনা দেয়। জার্মানি, বেলজিয়াম, ইতালি এবং স্পেনে উল্লেখযোগ্য বৃদ্ধি দেখা গেছে। তবে ফ্রান্সে বৈদ্যুতিক গাড়ির বিক্রি কমেছে।
এসিইএ-এর মহাপরিচালক সিগ্রিড ডি ভ্রিস বলেন, ব্যাটারি-বৈদ্যুতিক যানবাহনের চাহিদা ধীরে ধীরে গতি পাচ্ছে, কিন্তু ইইউ দেশগুলোতে প্রবৃদ্ধি ক্রমবর্ধমান এবং অসম রয়ে গেছে’।
তিনি বলেন, ‘ব্যাটারি-ইলেকট্রিক যানবাহনকে মূলধারার পছন্দে পরিণত করার জন্য, সরকারগুলোর জন্য প্রয়োজনীয় সক্ষমতা বৃদ্ধির শর্তাবলী, যেমন ক্রয় এবং আর্থিক প্রণোদনা, রিচার্জিং অবকাঠামো এবং বিদ্যুতের দাম বাস্তবায়ন অব্যাহত রাখা অপরিহার্য।’
ইউরোপীয় বাজারে এখনও ছোট বৈদ্যুতিক ব্যাটারি সহ হাইব্রিড গাড়ির বিক্রি প্রাধান্য পেয়েছে। চলতি বছরের শুরু থেকে ২০.৮ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। যেখানে একই সময়ে কেবল পেট্রোল-চালিত গাড়ি ২০.৬ শতাংশ কমেছে।
বিওয়াইডি, এমজি, এক্সপেং এবং লিপমোটর ব্র্যান্ডগুলোর বৈদ্যুতিক এবং হাইব্রিড বিক্রয় বছরে ৫৯ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।
এসিইএ বিশেষজ্ঞ ফেলিপ মুনোজ বলেছেন, ইউরোপীয় ইউনিয়ন বৈদ্যুতিক যানবাহনের মতো চীনা হাইব্রিড গাড়ির ওপর শুল্ক আরোপ করে কিনা তা এখনও দেখার বিষয়।
২০৩৪ সালের ফিফা বিশ্বকাপ এবং ২০৩০ সালের এক্সপোসহ বড় বড় আন্তর্জাতিক ইভেন্ট আয়োজনের প্রস্তুতির আগে দর্শনার্থীদের আকর্ষণ করতে চায় সৌদি আরব। এ লক্ষ্যে ২০২৬ সালের মধ্যে ৬০০টি পর্যটন স্থানে দীর্ঘদিনের জন্য মদের নিষেধাজ্ঞা তুলে নেবে। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য সান এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, এক ধাক্কায় ‘অতি-রক্ষণশীল’ দেশটি পাঁচ তারকা হোটেল, বিলাসবহুল রিসোর্ট এবং প্রবাসী-বান্ধব কম্পাউন্ডসহ লাইসেন্সপ্রাপ্ত স্থানে ওয়াইন, বিয়ার এবং সাইডার বিক্রির অনুমতি দেবে। তবে জনসাধারণ, বাড়ি, দোকান এবং ফ্যান জোনে মদ্যপান নিষিদ্ধ থাকবে।
দ্য সানের প্রতিবেদন বলছে, এই নাটকীয় নীতিগত পরিবর্তন ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমানের ‘ভিশন ২০৩০’-এর অংশ। এর লক্ষ্য আন্তর্জাতিক পর্যটন বৃদ্ধি করা, বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্ট করা এবং এর ‘টিটোটাল ভাবমূর্তি’ ঝেড়ে ফেলা।
কর্মকর্তারা আশা করছেন, নিওম, সিন্দালাহ দ্বীপ এবং লোহিত সাগর প্রকল্পের মতো জমকালো এলাকায় নিয়ন্ত্রিত অ্যালকোহল বিক্রি দেশটিকে সংযুক্ত আরব আমিরাত এবং বাহরাইনের মতো উপসাগরীয় প্রতিদ্বন্দ্বীদের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় সুবিধা দেবে-যেখানে পর্যটন অঞ্চলে মদ্যপান ইতোমধ্যেই বৈধ। দ্য সানের প্রতিবেদন অনুসারে, লাইসেন্সপ্রাপ্ত স্থানগুলো কঠোরভাবে ‘নিয়ন্ত্রিত ব্যবস্থার’ অধীনে পরিচালিত হবে। প্রশিক্ষিত কর্মী এবং অপব্যবহার রোধ ও দেশের ইসলামী মূল্যবোধ সমুন্নত রাখার জন্য কঠোর নিয়ম থাকবে।
কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, লক্ষ্য হলো-সাংস্কৃতিক পরিচয় না হারিয়ে বিশ্বকে স্বাগত জানানো। বিশ্ব পর্যটন মানচিত্রে সৌদি আরবকে একটি প্রগতিশীল, অথচ সম্মানজনক খেলোয়াড় হিসেবে স্থান দেওয়া। প্রতিবেদন অনুসারে, এই পরিকল্পনাটি ২০২৬ সালে কার্যকর হওয়ার কথা রয়েছে - বিশ্বকাপ শুরু হওয়ার আট বছর আগে। দেশের ভাবমূর্তি আধুনিকীকরণের ক্রমবর্ধমান চাপের মধ্যে এই সিদ্ধান্ত এসেছে।
দ্য সানের প্রতিবেদন আরও বলছে, চলতি বছরের শুরুতে যুক্তরাজ্যে নিযুক্ত সৌদি রাষ্ট্রদূত ঘোষণা করেছিলেন, ২০৩৪ বিশ্বকাপে মদ সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ করা হবে। এরপর এটি ইংল্যান্ডের ফুটবল ভক্তদের মধ্যে ক্ষোভের জন্ম দেয়।
সৌদির উপ প্রতিরক্ষা মন্ত্রী প্রিন্স খালিদ বিন বন্দর আল সৌদ গত ফেব্রুয়ারিতে এলবিসি রেডিওকে বলেছিলেন, ‘এখানে কোনো অ্যালকোহল নেই, বরং আমাদের আবহাওয়ার মতো, এটি একটি শুষ্ক দেশ। প্রত্যেকেরই নিজস্ব সংস্কৃতি আছে। আমরা আমাদের সংস্কৃতির সীমানার মধ্যে থাকা মানুষকে আপন করে নিতে পেরে খুশি, কিন্তু আমরা অন্য কারও জন্য আমাদের সংস্কৃতি পরিবর্তন করতে চাই না। এটি কোনো সৌদি অনুষ্ঠান নয়, এটি একটি ‘বিশ্ব অনুষ্ঠান’ এবং অনেকাংশে যারা আসতে চান তাদের আমরা স্বাগত জানাব।’
এরপর বিষয়টি পশ্চিমা মহলে ক্ষোভের জন্ম দেয়। দ্য সান অনুসারে, কিন্তু এখন সৌদি অভ্যন্তরীণ ব্যক্তিরা আশা করছেন, নতুন মদ নীতি সমালোচকদের মুখ বন্ধ করে দেবে এবং দেখাবে যে, দেশটি ‘পার্টি করতে প্রস্তুত’, তবে সীমাবদ্ধতার মধ্যে।
সূত্র দ্য সানকে জানায়, এই মডেলটি দুবাই এবং মানামায় সফল ‘অ্যালকোহল প্রচারণা’ থেকে অনুপ্রাণিত। যেখানে কঠোর নিয়ন্ত্রণ রয়েছে, ফলে ঐতিহ্যকে নষ্ট না করে পর্যটন এবং ব্যবসাকে বাড়িয়ে তুলেছে। সৌদি জোর দিয়ে বলছে, কেউ আইনের অপব্যবহার করলে, ধরা পড়লে তাকে দ্রুত পরিণতির মুখোমুখি হতে হবে।
দ্য সান বলছে, একটি সরকারি বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘বিক্রয় কেবলমাত্র নিয়ন্ত্রিত পরিবেশে হবে, লাইসেন্সপ্রাপ্ত পরিষেবাকর্মী এবং স্পষ্ট পরিচালনামূলক নিয়মাবলী নিশ্চিত করার জন্য, যাতে অ্যালকোহল দায়িত্বশীলতা এবং সম্মানের সাথে পরিচালনা করা হয়।’ আরও জানানো হয়, ২০% এর বেশি ‘ABV’ স্পিরিট এবং হার্ড লিকার নিষিদ্ধ থাকবে। দোকান, টেকওয়ে বা হোম ব্রুয়িং থাকবে না।
ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলি বর্বরতা অব্যাহত রয়েছে। গাজায় ইসরায়েলি হামলায় শুক্রবার থেকে এ পর্যন্ত অন্তত ৭৬ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। আল-জাজিরাকে স্থানীয় একটি চিকিৎসা সূত্র এ তথ্য জানিয়েছে।
প্রতিবেদন বলছে, হামলা অব্যাহত থাকায় নিহতের সংখ্যা আরও বাড়ছে। গাজার জাবালিয়া শরণার্থী শিবিরে এক পরিবারকে লক্ষ্য করে চালানো বোমাবর্ষণে প্রায় ৫০ জন নিহত বা নিখোঁজ হয়েছেন বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন। তারা অভিযোগ করেন, ইসরায়েলি সেনাবাহিনী মজা করে বেসামরিক লোকজনকে হত্যা করছে।
জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস বলেন, গাজার পরিস্থিতি এখন এই ‘নিষ্ঠুর সংঘর্ষের সবচেয়ে নিষ্ঠুর পর্যায়ে’ পৌঁছেছে। তিনি বলেন, ফিলিস্তিনিরা অভুক্ত থেকে মরছে, অথচ ইসরায়েল সাহায্য হিসেবে কেবল ‘এক চামচ ত্রাণ’ প্রবেশ করতে দিচ্ছে। এখন পর্যন্ত অবরুদ্ধ উত্তর গাজায় কোনো ত্রাণ পৌঁছায়নি।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, চলমান যুদ্ধে এখন পর্যন্ত কমপক্ষে ৫৩ হাজার ৮২২ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন এবং আহত হয়েছেন ১ লাখ ২২ হাজার ৩৮২ জন। তবে গাজার সরকারি মিডিয়া অফিস জানিয়েছে, মৃতের প্রকৃত সংখ্যা ৬১ হাজার ৭০০-এর বেশি হতে পারে। ধ্বংসস্তূপের নিচে এখনো বহু মানুষ চাপা পড়ে রয়েছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।
খাবারে পানি মিশিয়ে বেশি দিন চালানোর চেষ্টা
দুই বছর বয়সী মেয়ার, হাসপাতালে একটি বেডে শুয়ে আছে। তার পাঁজরের হাড় বেরিয়ে এসেছে, পেট ফোলা। মেয়ের দুর্বল হাত ধরে শার্ট পরিয়ে দিচ্ছিলেন মা আসমা আল-আর্জা। বেডে শুয়ে হাঁপাতে হাঁপাতে হঠাৎ চিৎকার করে কাঁদতে শুরু করে। এই প্রথম নয়, আগেও অপুষ্টির কারণে বেশ কয়েকবার হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে গাজা উপত্যকার এই নিষ্পাপ শিশুটি। তবে এবারই টানা ১৭ দিন বাচ্চাটি হাসপাতালে রয়েছে বলে জানান তার মা।
মেয়ারের সিলিয়াক ডিজিজ নামের একটি বিশেষ রোগ রয়েছে। এ কারণে গ্লুটেনজাত খাবার খেতে পারে না সে, তার জন্য বিশেষ খাবারের দরকার হয়। কিন্তু ১৯ মাসের যুদ্ধ আর ইসরায়েলের কঠোর অবরোধের কারণে গাজায় এই খাবার এখন আর নেই। সাধারণ খাবারও সে হজম করতে পারে না। মেয়ারের মা বলেন, ডায়াপারের পাশাপাশি ওর সয়ামিল্ক আর বিশেষ খাবারের দরকার। কিন্তু সীমান্ত বন্ধ থাকায় এগুলো পাওয়া যাচ্ছে না। পাওয়া গেলেও অনেক দাম, আমি কিনতে পারি না। জাতিসংঘের শিশু সংস্থা ইউনিসেফের তথ্য অনুযায়ী, এ বছর গাজায় নয় হাজারের বেশি শিশু অপুষ্টিতে আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসা নিয়েছে। আগামী বছর এই সংখ্যা আরও অনেক বাড়বে বলে আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা।
ইসরায়েল যদি সামরিক অভিযান বন্ধ না করে এবং গাজায় ত্রাণ প্রবেশের ওপর আরোপিত অবরোধ পুরোপুরি না তুলে নেয়, তাহলে গাজায় দুর্ভিক্ষ দেখা দিতে পারে বলে বারবার সতর্ক করছেন বিশেষজ্ঞরা। এরই মধ্যে গাজায় অনেক মানুষ খাবার পাচ্ছেন না বলে জানিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। জাতিসংঘ জনসংখ্যা তহবিলের ফিলিস্তিনি অঞ্চলের প্রতিনিধি নেস্টর ওয়োমুহাঙ্গি বলেন, গাজার যেদিকে তাকাবেন, ক্ষুধার্ত মানুষ চোখে পড়বে। সবাই ইশারায় দেখান যে তারা খাবার চান। যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে গাজায় এখন সবচেয়ে খারাপ পরিস্থিতি চলছে।
টানা অবরোধে টান পড়েছে ত্রাণে
সবশেষ গত ২ মার্চ গাজায় সব ধরনের খাদ্য, ওষুধ ও প্রয়োজনীয় পণ্য প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা দেয় ইসরায়েল। প্রায় ২০ লাখ ফিলিস্তিনির বসবাস এই অঞ্চলে। একের পর এক বিমান হামলা ও স্থল অভিযানের সঙ্গে চলছে এই অবরোধ। যুদ্ধ পরিস্থিতিতে গাজার মানুষ বাইরের সহায়তার ওপর পুরোপুরি নির্ভরশীল। কারণ ইসরায়েলের হামলায় স্থানীয়ভাবে খাবার উৎপাদনের প্রায় সব ব্যবস্থাই ধ্বংস হয়ে গেছে।
অবরোধের পর গাজার খাদ্যসংকট নিয়ে সমালোচনা শুরু হলে প্রথমদিকে ইসরায়েল দাবি করেছিল, গাজায় পর্যাপ্ত খাবার আছে। তবে শেষ পর্যন্ত আন্তর্জাতিক চাপের মুখে তারা পিছু হটতে বাধ্য হয়। এরপর চলতি সপ্তাহে গাজায় সীমিত পরিসরে শিশুখাদ্যসহ মানবিক সহায়তা প্রবেশ করতে দেয় ইসরায়েল।
জাতিসংঘ বলছে, ইসরায়েল যেটুকু সহায়তা প্রবেশ করতে দিয়েছে, তা একেবারেই অপ্রতুল। অবরোধের আগে প্রতিদিন প্রায় ৬০০টি ত্রাণের ট্রাক গাজায় প্রবেশ করত। বর্তমানে যা প্রবেশ করতে দেওয়া হচ্ছে, তা আগের সংখ্যার ধারেকাছেও নয়।
জাতিসংঘের শিশু সংস্থার সদস্য টেস ইনগ্রাম বলেন, এরই মধ্যে গাজায় শিশুরা অপুষ্টিতে মারা যেতে শুরু করেছে। যদি দ্রুত পুষ্টিকর খাবার না পৌঁছায়, তাহলে আরও অনেক শিশু প্রাণ হারাতে পারে। তাছাড়া, সামরিক নিয়মকানুন ও গাজার অভ্যন্তরে আইনশৃঙ্খলা ব্যবস্থা পুরোপুরি ভেঙে পড়ায় সহায়তা ঠিকঠাক পৌঁছানোও কঠিন হয়ে পড়েছে বলে জানিয়েছেন তিনি।
বুধবার নাম প্রকাশ না করার শর্তে জাতিসংঘের এক কর্মকর্তা জানান, মধ্য গাজায় কয়েকটি গুদামে ১২টির বেশি ট্রাক পৌঁছেছে। অবরোধ কিছুটা শিথিল হওয়ার পর এটিই প্রথম সহায়তা, যা সরাসরি বিতরণের জায়গায় পৌঁছাতে পেরেছে।
এদিকে, হামাস সদস্যরা ত্রাণ আত্মসাৎ করেছে বলে অভিযোগ তুলেছে ইসরায়েল। যদিও তারা এই বক্তব্যের সপক্ষে কোনো প্রমাণ দিতে ব্যর্থ হয়েছে। এমনকি ত্রাণ বিতরণের নতুন পরিকল্পনার কথাও জানিয়েছেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। নতুন পরিকল্পনায় হামাস যোদ্ধারা যাতে খাবার না পায়, তা নিশ্চিত করা হবে বলে জানানো হয়েছে। যদিও নেতানিয়াহুর এ প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছে জাতিসংঘসহ অন্যান্য ত্রাণদাতা সংস্থা।
অনবরত হামলার কারণে এত এত আহত মানুষ নিয়ে চরম সংকটে পড়েছে গাজার হাসপাতালগুলো। সেখানকার খাদ্য বিতরণ কেন্দ্রগুলোতে সবসময় রোগীদের উপচে পড়া ভিড় লক্ষ্য করা যায়।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও অ্যাপলের পণ্যের ওপর নতুন শুল্ক আরোপের হুমকি দেওয়ার পর শুক্রবার বিশ্বজুড়ে শেয়ারবাজারে ব্যাপক দরপতন হয়েছে।
নিউইয়র্ক থেকে এএপি জানায়, ওয়াল স্ট্রিটের তিনটি প্রধান সূচক পুরো দিন ধরে পড়তির মধ্যেই ছিল। সবচেয়ে বড় ধাক্কা খেয়েছে প্রযুক্তি ভিত্তিক নাসদাক সূচক, যেখানে অ্যাপলের শেয়ার একাই ৩ শতাংশ কমে গেছে।
প্যারিস ও ফ্রাঙ্কফুর্টের বাজার প্রায় ১.৫ শতাংশ করে কমেছে, বিশেষ করে বিলাসবহুল পণ্য ও গাড়ি নির্মাতা কোম্পানিগুলোর শেয়ারমূল্য ট্রাম্পের হুমকিতে ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, যেখানে তিনি ইইউর পণ্যের ওপর ৫০ শতাংশ শুল্ক আরোপের কথা বলেছেন।
লন্ডনের এফটিএসই ১০০ সূচকও প্রাথমিক বৃদ্ধি শেষে দিনের শেষে নেতিবাচক হয়ে পড়েছে।
জার্মানির অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির তথ্য ইতিবাচকভাবে সংশোধন হওয়ায় দিনের শুরুতে ডিএএক্স সূচক কিছুটা বাড়লেও পরে তা পড়ে যায়।
শুল্কনীতি শাস্তিমূলক, অর্থনৈতিক নয়:
বিনিয়োগ পরামর্শদাতা প্রতিষ্ঠান কুইল্টারের কৌশলবিদ লিন্ডসে জেমস বলেন, ‘চীনের তুলনায় ইইউ এখন বেশি শুল্কের মুখে পড়ছে—এটা কয়েক সপ্তাহ আগেও অকল্পনীয় ছিল। এতে বোঝা যাচ্ছে, এই নীতি অর্থনৈতিক যুক্তির চেয়ে শাস্তিমূলক উদ্দেশ্যে নেওয়া হয়েছে।’
এদিকে তেলের দাম কিছুটা বেড়েছে, যদিও দিনে তা একবার এক শতাংশের মতো পড়ে গিয়েছিল। ডলারের দাম ছিল চাপে।
সম্প্রতি যুক্তরাজ্যের সঙ্গে বাণিজ্য চুক্তি এবং চীনের সঙ্গে শুল্ক স্থগিতের পর বিনিয়োগকারীরা কিছুটা আশাবাদী হলেও ট্রাম্পের নতুন হুমকিতে সেই আস্থা আবারও নড়বড়ে হয়ে গেছে।
স্টোনএক্সের বাজার বিশ্লেষক ফাওয়াদ রাজাকজাদা বলেন, ‘বাণিজ্য চুক্তি নিয়ে যত আশাবাদই ছিল, মূহূর্তেই সব শেষ হয়ে গেছে।
এদিকে ট্রাম্প তার নিজের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম 'ট্রুথ সোশ্যাল'-এ লেখেন, ‘ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে আলোচনা এগোচ্ছে না, তাই ১ জুন থেকে আমি ৫০ শতাংশ শুল্ক আরোপের সুপারিশ করছি।’
এক্সটিবি প্ল্যাটফর্মের গবেষণা পরিচালক ক্যাথলিন ব্রুকস বলেছেন, ট্রাম্পের প্রতি ইইউর নেতাদের বিশ্বাসের অভাব ও তাঁর ব্যক্তিগত অসন্তোষের কারণে দীর্ঘমেয়াদি বাণিজ্য যুদ্ধের সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে।
গত মাসে ট্রাম্প ইইউর পণ্যের ওপর ২০ শতাংশ শুল্ক আরোপের ঘোষণা দিলেও আলোচনার সুযোগ দিতে তা সাময়িকভাবে স্থগিত করেছিলেন। তবে ১০ শতাংশ আমদানি শুল্ক এবং গাড়ি, স্টিল ও অ্যালুমিনিয়ামে ২৫ শতাংশ শুল্ক এখনও বহাল রয়েছে।
শুক্রবার তিনি হুঁশিয়ারি দেন, অ্যাপলের আইফোন যদি যুক্তরাষ্ট্রে তৈরি না হয়, তবে ২৫ শতাংশ শুল্ক বসানো হবে।
প্রথমে শুধু অ্যাপলকে লক্ষ্য করলেও পরে তিনি বলেন, এই শুল্ক অন্য সব স্মার্টফোন নির্মাতাদেরও (যেমন স্যামসাং) প্রভাবিত করতে পারে।
এই ঘোষণাগুলোর ফলে শেয়ারবাজারে নতুন করে বড় ধরনের অস্থিরতা তৈরি হয়। আগে থেকেই মার্কিন ঋণ ও সুদের হার বাড়ার আশঙ্কায় বাজার চাপে ছিল ।
পাকিস্তানে একটি স্কুলবাসে বোমা হামলার ঘটনায় নিহতের সংখ্যা বেড়ে আটজনে দাঁড়িয়েছে। হামলায় গুরুতর তিন শিশু আজ শুক্রবার মারা যাওয়ার পর হতাহতের এই সংখ্যা দাঁড়িয়েছে। গত বুধবার দেশটির দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের বেলুচিস্তান প্রদেশের খুজদার শহরে এই হামলার ঘটনা ঘটে।
পাকিস্তান সেনাবাহিনী বলেছে, এই হামলায় বিদ্রোহীদের মদদ দিয়েছে ভারত।
নিহতদের মধ্যে দুই সেনাও রয়েছেন। সেনাসদস্যরা হামলার সময় বাসে ছিলেন। পাকিস্তানের এই প্রদেশটিতে কয়েক দশক ধরে বিচ্ছিন্নতাবাদীর বিদ্রোহ করে আসছে।
বার্তা সংস্থা এপি জানিয়েছে, হামলায় ৩৯ শিশুসহ মোট ৫৩ জন আহত হয়েছেন। শিশুরা তাদের আর্মি পাবলিক স্কুলে যাওয়ার সময় বোমা হামলার শিকার হন।
পাকিস্তানের সামরিক মুখপাত্র লেফটেন্যান্ট জেনারেল আহমেদ শরীফ বলেছেন, আহত শিশুদের মধ্যে বেশ কয়েকজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। তিনি বলেন, প্রাথমিক তদন্তে ধারণা করা হচ্ছে ভারতের নির্দেশে নিষিদ্ধ ঘোষিত বালুচ লিবারেশন আর্মির বিদ্রোহীরা বোমা হামলা চালিয়েছে। ভারতের পরামর্শে সংগঠনটিকে ২০১৯ সালে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে যুক্তরাষ্ট্র।
শরিফ বলেন, পাকিস্তানের কাছে প্রমাণ আছে যে, ‘পাকিস্তানের অভ্যন্তরে সন্ত্রাসী হামলা’ পরিচালনা করছে ভারত। এসব বিষয়ে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের নজর দেওয়া উচিত বলেও উল্লেখ করেন তিনি। তবে ভারত এই অভিযোগের কোনো জবাব দেয়নি এবং পাকিস্তানও নিজের দাবির সমর্থনে কোনো প্রমাণ উপস্থাপন করেনি।
কোনো গোষ্ঠী এখন পর্যন্ত ওই হামলার দায় স্বীকার করেনি।
চলতি মাসের শুরুতে দুই পক্ষের মধ্যে চার দিনের সীমান্ত সংঘর্ষের পর থেকে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে উত্তেজনা এখনও চরমে। এমনকি যুদ্ধবিরতিতে রাজি হওয়ার আগেও উভয় পক্ষই সীমান্তে গুলি চালিয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রে ইসরায়েলি দূতাবাসের দুই কর্মকর্তাকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। স্থানীয় সময় বুধবার (২১ মে) সন্ধ্যায় ওয়াশিংটন ডিসির ইহুদি জাদুঘরের কাছে এ ঘটনা ঘটে।
সামাজিকমাধ্যম এক্সে দেওয়া এক পোস্টে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের নিরাপত্তা দপ্তরের প্রধান ক্রিস্টি নোম। তিনি জানান, এ হামলার ঘটনা ঘটেছে ফেডারেল ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (এফবিআই) ওয়াশিংটন কার্যালয়ের একেবারে কাছাকাছি এলাকায়।
যুক্তরাষ্ট্রের অ্যাটর্নি জেনারেল পাম বন্ডি জানান, তিনি ওয়াশিংটনের বর্তমান অ্যাটর্নি ও সাবেক বিচারক জ্যানিন পিরোর সঙ্গে ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে তাৎক্ষণিকভাবে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করেছেন।
এদিকে, এ হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন জাতিসংঘে নিযুক্ত ইসরায়েলের রাষ্ট্রদূত ড্যানি ড্যানন। এক্সে দেওয়া এক পোস্টে এ ঘটনাকে তিনি ‘একটি বর্বর ও ইহুদি-বিদ্বেষমূলক সন্ত্রাসী হামলা’ বলে উল্লেখ করেন।
তবে বুধবার রাত পর্যন্ত হামলার সঙ্গে কারা জড়িত কিংবা কী উদ্দেশ্যে এ হামলা চালানো হয়েছে, সে সম্পর্কে আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু জানায়নি পুলিশ।
ড্যানন বলেন, ‘আামদের বিশ্বাস, এই জঘন্য অপরাধের সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র দৃঢ় পদক্ষেপ নেবে। বিশ্বের যেখানেই হোক না কেন, ইসরায়েল তার নাগরিক ও কূটনৈতিক প্রতিনিধিদের সুরক্ষায় দৃঢ় পদক্ষেপ নিতে থাকবে।’
মন্তব্য