বাংলাদেশ মেরিন একাডেমিতে চান্স পাওয়া আমার জীবনের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। এইচএসসি পাস করার পরে কোথায় ভর্তি হব, না হব ইত্যাদি বিষয় নিয়ে বড়দা’র সঙ্গে যখন আলোচনা করছিলাম তখন বড়দা বলল, ‘যাই করিস না কেন, আমার মতো ডাক্তার হবি না! আমি তোকে ডাক্তার হতে বললে পরে আজীবন আমাকে গালি দিবি যে, জেনেশুনে কেন তোকে মেডিক্যালে ভর্তি হতে বললাম!’
আমি বললাম, ‘তাহলে আর্মিতে ট্রাই করি?’
তাতেও তার খুব একটা আগ্রহ দেখা গেল না। এরপর মেরিনার হওয়ার কথা বলতেই বলল, ‘এটা তো খারাপ না, ট্রাই করতে পারিস। দেশ বিদেশ ঘুরে বেড়াবি, ছয় মাস পর পর ছুটিতে আসবি।’
সব ভেবে শেষমেশ মেরিনার হওয়ার সিদ্ধান্ত নিলাম। সত্যি বলতে মেরিন/মেরিনারদের সম্পর্কে স্বচ্ছ কোনো ধারণাই ছিল না একাডেমিতে ভর্তির আগ পর্যন্ত!
আমার দুই বছরের একাডেমিক জীবনে মাত্র এক বছর করে সিনিয়র-জুনিয়রদের পেয়েছি। অর্থাৎ আমি ৪৭তম ব্যাচের ক্যাডেট, ৪৬তম ব্যাচের স্যারদের সঙ্গে এক বছর আর ৪৮তম ব্যাচের জুনিয়রদের সঙ্গে এক বছর কাটিয়েছি।
এর মধ্যে নানা ধরনের ছুটিও ছিল, কিন্তু এত অল্প সময়ে এত গভীর সম্পর্ক আমাদের মাঝে গড়ে উঠেছে যেটা অবিশ্বাস্য!
কেবল ইমিডিয়েট সিনিয়র-জুনিয়রদের সঙ্গে নয়, একাডেমির প্রত্যেকের সঙ্গে প্রত্যেকের এত আন্তরিক সম্পর্ক যা সাধারণত দেখা যায় না। শুধু বললেই হলো, আমি একাডেমি ক্যাডেট, ব্যাস!
পাসিং আউটের পর একাডেমি, একাডেমির সিনিয়র-জুনিয়র কী জিনিস তা আরও ভালোভাবে উপলব্ধি করেছি। আমি ক্যাডেট হিসেবে জাহাজে জয়েন করার সুযোগ পাই ২৫তম ব্যাচের এক স্যারের মাধ্যমে।
স্যার আমাকে উনার ভাগ্নে পরিচয় দিয়ে ২৬তম ব্যাচের আরেক স্যারের অফিসে পাঠিয়েছিলেন আমার জয়েনিংয়ের ব্যাপারে। পরে সেই স্যারের অনুরোধে আমি জাহাজে জয়েন করেছিলাম এবং আল্লাহর রহমতে একটানা ১৫ মাস ১৪ দিন ক্যাডেট হিসেবে ছিলাম!
আমি পাসিং আউটের সাত মাস পর জাহাজে জয়েন করি। এই সাতটি মাস যে কীভাবে কেটেছিল সেটা আল্লাহ ভালো জানেন। একদিকে আব্বার ডায়ালাইসিসের মাত্রাতিরিক্ত খরচ, অন্যদিকে আমি বেকার বসে আছি।
আমার দেখা আমাদের পরিবারের সবচেয়ে সংকটময় সময় ছিল সেটা। খুব আশা ছিল প্রথম ইনকামের টাকা আব্বার হাতে তুলে দেব, কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে সে আশা পূরণের সুযোগ পাইনি।
সেই সাত মাসের দুঃসহ সময়ে আমাকে সবচেয়ে বেশি সাপোর্ট দিয়েছিলেন ১৫তম ব্যাচের এক স্যার। আমি হতাশায় নির্ঘুম থেকে রাত ২/৩টায় মেসেজ দিয়ে দেখতাম ভোর ৬টায় স্যার রিপ্লাই দিয়েছেন! স্যারকে সময় অসময়ে মেসেজের পর মেসেজ দিয়েছি কিন্তু কখনও বিরক্ত হননি।
বড়দা বলতেন, ‘একমাত্র তোদের প্রফেশনেই হয়ত এমন মানুষ হয়। আমাদের কোনো সিনিয়র মেসেজ/মেইল পড়েও দেখেন না, রিপ্লাই তো দূরের কথা!’
সেই স্যার অনেকভাবে অনেকবার তার সিনিয়র, ব্যাচমেটকে বলেছিলেন আমার জবের জন্য, কিন্তু উপযুক্ত সুযোগের অভাবে জয়েনিং হয়নি। তবে স্যারের আন্তরিকতার এতটুকু কমতি ছিল না।
পাসিং আউটের পর থেকে এই আট বছরে কতভাবে যে কত সিনিয়র স্যারের সাহায্য পেয়েছি তার ইয়ত্তা নেই। কয়েকটা ঘটনা বলি...
১০তম ব্যাচের এক স্যার সিংগাপুর থাকেন। ঢাকায় উনার ব্যবসা আছে। স্যার সিংগাপুর থেকে ফোন করে আমাকে বলেছিলেন, আমি চাইলে আপাতত জয়েন করতে পারি তার ঢাকা অফিসে। এরপর জাহাজে জয়েনিং এর সুযোগ হলে চলে যাব যে কোনো সময়। উনি আমাকে ব্যক্তিগতভাবে চেনেন না, শুধু একাডেমির জুনিয়র হিসেবেই এ সুবর্ণ সুযোগ দিয়েছিলেন।
২৫তম ব্যাচের এক স্যার আমাকে পাসিং আউটের পর থেকেই সাপোর্ট দিচ্ছেন সেই সুদূর অস্ট্রেলিয়া থেকে! যখন যেভাবে পেরেছেন আমাকে সাহায্য করেছেন। অস্ট্রেলিয়া থেকে প্রায়ই ফোন দিয়েছেন। বলেছেন, যদি কখনও টাকার দরকার হয় স্যারকে যেন জানাই! যেখানে নিজের অনেক আত্মীয়স্বজন থেকেই বিপদের সময় পাঁচ হাজার টাকা পাইনি সেখানে স্যার আমাকে ৫০ হাজার টাকা দিতে চেয়েছেন শুধু একাডেমির জুনিয়র হিসেবে! তাও সে সময় যখন আমার সামনে কোনো আশা-ভরসা ছিল না। আজ পর্যন্ত স্যারকে সামনাসামনি দেখার সৌভাগ্য হয়নি আমার।
২০১৫ সালে জুনিয়র অফিসার হবার পরীক্ষায় পাস করার পর হোয়াটসঅ্যাপে দেশ-বিদেশের অসংখ্য সিনিয়র মেরিনারদের মেসেজ দিয়েছি একটা জবের জন্য। অনেকেই সাহায্যের জন্য চেষ্টা করেছিলেন, সিভি নিয়েছিলেন। আশ্চর্যজনকভাবে একদিন ২৯তম ব্যাচের এক স্যার সিংগাপুর থেকে ফোন করে বললেন, সিংগাপুরের অন্যতম সেরা একটা কোম্পানি থেকে শিগগিরই আমার সঙ্গে যোগাযোগ করা হবে। আমি যেন সবসময় ফোন চালু রাখি, রেগুলার ইমেইল চেক করি। সঙ্গে এটাও বললেন, সিলেকশনের পর যদি এজেন্সি কোনো ধরনের চার্জ দাবি করে আমি যেন সরাসরি স্যারকে জানাই। আল্লাহর অশেষ রহমতে কোনো ধরনের তথাকথিত সার্ভিস চার্জ ছাড়াই, সরাসরি অফিসার হিসেবে র্যাংকের সেরা বেতনে জয়েন করেছিলাম। উল্লেখ্য, সেই কন্ট্রাক্টটি আমার এবং আমার পরিবারের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয় ছিল। সেই কন্ট্রাক্টটের জন্যই পরিবারের সমস্ত আর্থিক ঋণ দ্রুততম সময়ে শোধ করতে সক্ষম হয়েছিলাম।
অফিসার হিসেবে প্রথম কন্ট্রাক্ট শেষ করার পর প্রায় নয় মাস অপেক্ষা করেছিলাম। এর পর দ্বিতীয় কন্ট্রাক্ট করার সুযোগ পেয়েছিলাম ২৪তম ব্যাচের এক স্যারের আন্তরিকতার জন্য। আমার জয়েনিং ডিল নিয়ে সমস্যার কথা বলার পর স্যার নিজে উদ্যোগ নিয়ে আমার ইউএসএ ভিসা করানোসহ রি-জয়েনিংয়ের সমস্ত কাজে সাহায্য করেছিলেন।
২৪তম ব্যাচের আর একজন স্যারের সঙ্গে যোগাযোগ আছে যিনি বিখ্যাত মার্কস লাইনের চিফ ইঞ্জিনিয়ার। স্যার মার্কসে এমন কোনো কাজ নেই করেননি আমাকে জয়েন করানোর জন্য! স্যার আমাকে প্রতিনিয়ত মেসেজের রিপ্লাই দিতেন এত ব্যস্ততার মাঝেও। স্যারের সঙ্গে প্রথম যেদিন কাকতালীয়ভাবে ধানমন্ডিতে দেখা হলো সেদিন আমার স্ত্রী তিথিও সঙ্গে ছিল। ভাবী তিথিকে নিজের স্বর্ণের আংটি পরিয়ে দিয়েছিলেন নতুন বউ দেখে। স্যার বাসায় অনেক সময় দিয়ে রেস্টুরেন্টে ডিনার করিয়ে এরপর আমাদের ছেড়েছেন। অথচ স্যারের সঙ্গে আমার পরিচয়-কথাবার্তা হোয়াটস অ্যাপে শুধু একাডেমির একজন জুনিয়র হিসেবে।
বছরখানেক আগে আমার এক আত্মীয়ের জরুরি কিছু টাকার দরকার হয়েছিল। আমি জাহাজ থেকে পাঠাতে গেলে সময়-ঝামেলা দুটোই বেশি লাগবে ভেবে ৩৪তম ব্যাচের এক স্যারকে মেসেজ দিয়েছিলাম। স্যার আমাকে তৎক্ষণাৎ রিপ্লাই দিয়ে জিজ্ঞেস করলেন কবে কত টাকা লাগবে! জানানোর এক দিনের মধ্যেই স্যার ১০০০ ডলার ট্রান্সফার করে দিয়েছিলেন!
২০১৮ তে সিংগাপুরে সিনিয়র অফিসার হবার পরীক্ষা দেয়ার সময়ে ৪৪, ৪৫, ৪৬তম ব্যাচের স্যারদের আর ৪৮তম ব্যাচের একমাত্র জুনিয়রের আন্তরিকতার কথাও কখনও ভোলার নয়।
কিছুদিন আগে করোনার লকডাউনে তিথি-তাজমীন অস্ট্রেলিয়া আটকা পড়লে সেখানে থাকা ১০তম ব্যাচের এক স্যার বলেছিলেন, ‘If your family needs any help please let me know.’ বিপদের সময় এমন ছোট্ট একটা মেসেজ যে কতবড় মানসিক সাপোর্ট তা বলে বোঝানো যাবে না।
শুধু যে একাডেমির সিনিয়ররাই আন্তরিক তেমন না। একাডেমির বাইরের অনেক ক্যাপ্টেন-চিফ ইঞ্জিনিয়ার স্যারের সাহায্য ভালোবাসা পেয়েছি যাদের প্রতি আমি আজীবন কৃতজ্ঞ।
সিলেট ক্যাডেট কলেজের এক্স-ক্যাডেট একজন চিফ ইঞ্জিনিয়ার স্যার ২০১৫ থেকে বিভিন্নভাবে আমাকে সাপোর্ট দিয়ে যাচ্ছেন। আমার জব দেয়া থেকে ইউএসএ ভিসা করানোর জন্য আন্তরিকভাবে চেষ্টা করেছিলেন।
সিংগাপুরে থাকাকালীন পহেলা বৈশাখের প্রোগ্রামে নিয়ে যেতে এক স্যার নিজে আমাদের বাসার নিচে এসেছিলেন পিক করতে। ভাবী-ভাতিজিদের সঙ্গে আমাদেরকে একই গাড়িতে করে নিয়ে গিয়েছেন, আবার নামিয়ে দিয়েছেন। কতটুকু আপন মনে করলে নিজের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে জুনিয়রদের নিয়ে একটা অনুষ্ঠানে উপস্থিত হন তা সহজেই অনুমেয়।
এমন আরও অনেক অনেক ঘটনা আছে সিনিয়র, জুনিয়রদের নিয়ে যা বলে শেষ করা যাবে না। সিনিয়রদের আন্তরিকতা দেখে আমি প্রতিনিয়ত অবাক হই।
ভালো খারাপ দুনিয়ার সবখানে, সব প্রফেশনে আছে। আমাদের একাডেমিক সিনিয়র বা প্রফেশনও তার ব্যতিক্রম নয়। আমি নিজেও বেশ কয়েকজন মেরিনারকে দেখেছি, যারা জুনিয়রদের নিয়ে ব্যবসা করে, একাডেমিক সিনিয়র বলে জুনিয়রদের থেকে বিভিন্নভাবে সুবিধা নেয়ার চেষ্টা করে জুনিয়রদের অজ্ঞতা বা বিশ্বাসের সুযোগ নিয়ে।
তবে সেসব গুটিকয়েক মেরিনার, এক্স-ক্যাডেটদের জন্য বাকি হাজারও সাদা মনের মেরিনারের ভালো ব্যাপারগুলো প্রকাশ না করাও আমার কাছে অন্যায় বলে মনে হয়। সবখানে, সব ব্যাচেই কিছু অপ্রত্যাশিত ভাইরাস থাকে, যা ফিল্টারিংয়ের সুযোগ নেই। আমার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতায় যতটুকু দেখেছি, মেরিনারদের মধ্যে সে খারাপের অনুপাত খুবই নগণ্য। হয়ত হাজারে ৮-১০ জন! এই ৮-১০ জনের জন্যই বাকিরা কত ভালো তা সহজে উপলব্ধি করতে পেরেছি।
আমি অত্যন্ত গর্বিত বাংলাদেশ মেরিন একাডেমির একজন ক্যাডেট হতে পেরে, বাংলাদেশ মেরিন কমিউনিটির একজন হতে পেরে। এ কমিউনিটির একজন না হলে হয়ত জানাই হতো না আল্লাহ দুনিয়াতে এত মহৎ আর উদার মনের বিনয়ী মানুষকে পাঠিয়েছেন।
লেখক: এক্স ক্যাডেট, বাংলাদেশ মেরিন একাডেমি (৪৭তম ব্যাচ)
আরও পড়ুন:বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো. নিজাম উদ্দিনকে সচিব হিসেবে পদোন্নতি দিয়ে স্থানীয় সরকার বিভাগের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে।
সোমবার জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়।
জনস্বার্থে জারিকৃত এ আদেশ অবিলম্বে কার্যকর হবে বলে প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে।
বিশিষ্ট মানবাধিকারকর্মী ও ইম্প্যাক্ট ফাউন্ডেশন বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা-ট্রাস্টি মনসুর আহমেদ চৌধুরী ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)-এর ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারপারসন নির্বাচিত হয়েছেন। তিনি বিদায়ী চেয়ারপারসন অ্যাডভোকেট সুলতানা কামালের স্থলাভিষিক্ত হলেন।
আর টিআইবির ট্রাস্টি বোর্ডের নতুন দুই সদস্য হয়েছেন সংস্থাটির প্রতিষ্ঠাকালীন নির্বাহী পরিচালক ব্যারিস্টার মনজুর হাসান এবং নারীর ক্ষমতায়ন, জেন্ডার সমতা ও সুশাসন বিশেষজ্ঞ তাহেরা ইয়াসমিন।
তাছাড়া টিআইবির অডিট কমিটির চেয়ারম্যানের দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন সংস্থাটির ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য ফারুক আহমেদ। অডিট কমিটির অপর সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পেয়েছেন অবসরপ্রাপ্ত কম্পট্রোলার জেনারেল, ডিফেন্স ফাইন্যান্স মোতাহার হোসেইন।
টিআইবি’র নতুন চেয়ারপারসন মনসুর আহমেদ চৌধুরী বহুল আলোচিত ভাসমান হাসপাতাল ‘জীবন তরী’-এর উদ্যোক্তা। মানবাধিকার বিশেষ করে প্রতিবন্ধীদের অধিকারের নিশ্চয়তাসহ তাদের জীবন-মানের সার্বিক উন্নয়নে দীর্ঘদিন ধরে তিনি কাজ করছেন।
‘জাতীয় প্রতিবন্ধী ফোরাম’ গঠনে মনসুর আহমেদ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন এবং এর চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেন। তিনি জাতিসংঘ মানবাধিকার কমিশনের প্রতিবন্ধীবিষয়ক কমিটির সদস্য হিসেবে (২০০৯-১২ মেয়াদে) দায়িত্ব পালন করেছেন।
কাজের স্বীকৃতি হিসেবে তিনি নিরাফাত আনাম মেমোরিয়াল ইনক্লুশন পদক, সিলেট রত্ন পদক, আজীবন সম্মাননা (সিঙ্গার বাংলাদেশ ও চ্যানেল আই) এবং সিনিয়র অশোকা ফেলোশিপ সম্মানে ভূষিত হয়েছেন।
টিআইবি ট্রাস্টি বোর্ডের নতুন সদস্য ব্যারিস্টার মনজুর হাসান বর্তমানে ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্টার ফর পিস অ্যান্ড জাস্টিসের নির্বাহী পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। টিআইবির প্রতিষ্ঠাকালীন নির্বাহী পরিচালকের দায়িত্ব পালন ছাড়াও তিনি ব্র্যাকের ডেপুটি এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর এবং ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের আন্তর্জাতিক উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।
সুশাসন প্রতিষ্ঠায় বিশেষ অবদানের জন্য তিনি ২০০৩ সালে ব্রিটেনের রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের কাছ থেকে ‘অফিসার অফ দ্য মোস্ট এক্সেলেন্ট অর্ডার অফ দ্য ব্রিটিশ এম্পায়ার (ওবিই)’ উপাধিতে ভূষিত হন।
বোর্ডের আরেক নতুন সদস্য তাহেরা ইয়াসমিন নারীর ক্ষমতায়ন, জেন্ডার সমতা এবং সুশাসন বিশেষজ্ঞ। তিনি অক্সফাম, কেয়ার এবং জিআইজেড-এর মতো আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানে শীর্ষস্থানীয় পদে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি জিআইজেড-এর রুল অব ল’র অপারেশন পরিচালক এবং অ্যাকসেস টু জাস্টিস ফর উইম্যান প্রোগ্রামের সিনিয়র অ্যাডভাইজার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। বেসরকারি সংস্থা ও উন্নয়ন খাতে স্ট্রাটেজিক প্ল্যানিং ও কর্মসূচি বাস্তবায়ন বিশেষজ্ঞ হিসেবে তিনি সুখ্যাতি অর্জন করেছেন।
প্রসঙ্গত, ট্রাস্টি বোর্ড টিআইবির সর্বোচ্চ নীতি-নির্ধারণী ফোরাম। বোর্ডের অন্যরা হলেন- অধ্যাপক ড. তাসনিম আরেফা সিদ্দিকী, সাধারণ সম্পাদক; দ্য ডেইলি স্টার প্রকাশক ও সম্পাদক মাহফুজ আনাম, কোষাধ্যক্ষ।
সদস্যবৃন্দ হলেন- সাহিত্যিক ও শিক্ষাবিদ আবুল মোমেন, অধ্যাপক ড. ফখরুল আলম, অ্যাডভোকেট সুস্মিতা চাকমা, সোসাইটি অফ এনভায়রনমেন্ট অ্যান্ড হিউম্যান ডেভেলপমেন্ট (শেড)-এর প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক ফিলিপ গাইন, মানবাধিকার ও সমাজকর্মী বনশ্রী পাল এবং ব্র্যাক ইন্টারন্যাশনাল-এর প্রাক্তন নির্বাহী পরিচালক ফারুক আহমেদ।
আরও পড়ুন:রাষ্ট্রপতির কার্যালয়ের জনবিভাগের সিনিয়র সচিব ড. নাসিমুল গনিকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব করা হয়েছে।
রোববার জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে।
ড. নাসিমুল গনি বিসিএস ১৯৮২ ব্যাচের প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তা। ২০০৯ সালে তাকে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা করা হয়। চার বছর ওএসডি থাকার পর ২০১৩ সালে তাকে চাকরি থেকে অবসর দেয়া হয়।
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর গঠিত অন্তর্বর্তীকালীন সরকার তাকে সিনিয়র সচিব পদমর্যাদায় রাষ্ট্রপতির কার্যালয়ের জনবিভাগে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেয়।
৪২তম (বিশেষ) বিসিএস স্বাস্থ্য নিয়োগ পরীক্ষায় লিখিত ও মৌখিক উভয় পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েও নিয়োগবঞ্চিত এক হাজার ৯১৯ জন চিকিৎসক তাদেরকে দ্রুত নিয়োগের দাবি জানিয়েছেন।
রোববার ৪২তম (বিশেষ) বিসিএস স্বাস্থ্যে অপেক্ষমাণ চিকিৎসকরা সংবাদ সম্মেলন করে এই দাবি জানান।
‘৪২তম (বিশেষ) বিসিএস স্বাস্থ্য (লিখিত ও মৌখিক) উভয় পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েও ক্যাডার পদে নিয়োগবঞ্চিত ১৯১৯ জন চিকিৎসককে ন্যায্য নিয়োগ’ শীর্ষক এই সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয় জাতীয় প্রেস ক্লাবের আবদুস সালাম হলে।
সংবাদ সম্মেলনে নিয়োগবঞ্চিত চিকিৎসকরা বলেন, ২০২১ সালে ৪২তম বিসিএসের ফলাফলে পর্যাপ্ত পদ না থাকায় এক হাজার ৯১৯ জন চিকিৎসক দীর্ঘদিন ধরে নিয়োগবঞ্চিত হয়ে আছেন। লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার পরও তারা বৈষম্যের শিকার। স্বাস্থ্য অধিদফতর নীতিগতভাবে দ্রুত দু’হাজার চিকিৎসক নিয়োগের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আমরা চাই এক্ষেত্রে ৪২তম বিসিএসের অপেক্ষমাণ চিকিৎসকদের অগ্রাধিকার দেয়া হোক।
তারা বলেন, দেশে উপজেলা ও জেলা পর্যায়ে চরম চিকিৎসক সংকট রয়েছে। সাধারণ মানুষ, বিশেষ করে গ্রামীণ জনগোষ্ঠী তাদের মৌলিক অধিকার হিসেবে চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। দেশে ডেঙ্গু পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করছে। পর্যাপ্ত চিকিৎসক না থাকায় রোগীরা যথাযথ চিকিৎসা সেবা পাচ্ছেন না।
সাধারণ বিসিএসের নিয়োগ প্রক্রিয়া সময়সাপেক্ষ উল্লেখ করে চিকিৎসকরা বলেন, বর্তমানে ৪৪, ৪৫ ও ৪৬তম বিসিএস প্রক্রিয়াধীন। ৪২তম বিসিএসের পরে আর কোনো চিকিৎসক নিয়োগ হয়নি। তাই দীর্ঘ প্রক্রিয়া এড়িয়ে দ্রুত নিয়োগ দিয়ে চিকিৎসক সংকট নিরসনের দাবি জানাচ্ছি আমরা।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন- মনোরোগ বিশেষজ্ঞ ও এবি পার্টির আহ্বায়ক মেজর (অব.) অধ্যাপক ডা. আব্দুল ওহাব মিনার, এবি পার্টির যুগ্ম সদস্য সচিব ব্যারিস্টার আসাদুজ্জামান ফুয়াদ, ডা. ফারজানা সাথী, ডা. মো. রেজওয়ান কবীরসহ ৪২তম বিসিএস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ চিকিৎসকরা।
সরকারি কর্মকমিশন (পিএসসি) ৪৭তম বিসিএসের আবেদনের নতুন তারিখ চূড়ান্ত করেছে। গৃহীত সিদ্ধান্ত অনুযায়ী- আগামী ২৯ ডিসেম্বর সকাল ১০টা থেকে আবেদন করতে পারবেন প্রার্থীরা। তা চলবে আগামী ২০২৫ সালের ৩১ জানুয়ারি রাত ১১টা ৫৯ মিনিট পর্যন্ত। এবার প্রার্থীদের আবেদন ফি দুশ’ টাকা।
পিএসসির জনসংযোগ কর্মকর্তা এস এম মতিউর রহমান বৃহস্পতিবার সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান।
এর আগে বুধবার (১১ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস (বিসিএস) পরীক্ষাসহ সব ধরনের সরকারি প্রতিষ্ঠানে নিয়োগ পরীক্ষার আবেদন ফি সর্বোচ্চ ২০০ টাকা নির্ধারণ করে প্রজ্ঞাপন জারি করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। বিসিএসে মৌখিক পরীক্ষার নম্বর ২০০ থেকে কমিয়ে ১০০ করা হয়েছে বলেও জানানো হয়।
প্রসঙ্গত, ৪৭তম বিসিএসের আবেদন শুরুর একদিন আগে ৯ ডিসেম্বর (সোমবার) অনলাইনে আবেদন অনিবার্য কারণে স্থগিত করে পিএসসি।
সরকারি কর্মচারীদের মহার্ঘ ভাতা সংস্থানের বিষয় পর্যালোচনা করতে কমিটি গঠন করেছে সরকার। জাতীয় বেতন স্কেল ২০১৫-এর আওতাভুক্ত কর্মচারীদের জন্য প্রধান উপদেষ্টার মুখ্য সচিবকে আহ্বায়ক করে সাত সদস্যের কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগের প্রবিধি অনুবিভাগ প্রবিধি-৩ শাখা থেকে এ সংক্রান্ত একটি কমিটি গঠন করে অফিস আদেশ জারি করা হয়েছে।
বাংলাদেশ সরকারের কর্মে নিয়োজিত জাতীয় বেতন স্কেল, ২০১৫-এর আওতাভুক্ত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অনুকূলে ‘মহার্ঘ ভাতা’ সংস্থানের বিষয়টি পর্যালোচনা করে সুপারিশ প্রণয়নের লক্ষ্যে এই কমিটি গঠন করা হয়েছে। উপ-সচিব সৈয়দ আলী বিন হাসানের সই করা আদেশে এ তথ্য জানানো হয়।
প্রধান উপদেষ্টার মুখ্য সচিবকে আহ্বায়ক করে গঠিত কমিটিতে সদস্য হিসেবে রয়েছেন- জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব, মহাহিসাব-নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রক, অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগের সচিব, প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের সচিব, লেজিসলেটিভ ও সংসদ বিষয়ক বিভাগ এবং আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব এবং অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগের প্রবিধি অনুবিভাগের অতিরিক্ত সচিব।
কমিটির কার্যপরিধিতে বলা হয়েছে, কমিটি মহার্ঘ ভাতার প্রযোজ্যতা ও প্রাপ্যতার বিষয় পর্যালোচনা করবে এবং প্রয়োজনীয় সুপারিশ দাখিল করবে। কমিটি প্রয়োজনে এক বা একাধিক কর্মকর্তাকে কো-অপ্ট করতে পারবে।
বাংলাদেশ পুলিশের বিভিন্ন ইউনিটে বদলি ও রদবদলের ধারাবাহিকতায় বিভিন্ন জেলার ১২ পুলিশ সুপারকে (এসপি) একযোগে বদলি করা হয়েছে।
বুধবার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পুলিশ-১ শাখার উপসচিব আবু সাঈদের সই করা এক প্রজ্ঞাপনে এই বদলির আদেশ দেয়া হয়েছে।
প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, পুলিশ অধিদপ্তরের (টিআর) পুলিশ সুপার আবু সাইমকে রংপুরের পুলিশ সুপার, গাইবান্ধার কমান্ড্যান্ট (পুলিশ সুপার) ইন সার্ভিস ট্রেনিং সেন্টার আবু সায়েম প্রধানকে চট্টগ্রামের পুলিশ সুপার, পিবিআইয়ের পুলিশ সুপার কাজী আখতার উল আলমকে ময়মনসিংহের পুলিশ সুপার, এসবির পুলিশ সুপার জাকির হোসেনকে দিনাজপুরের পুলিশ সুপার, পিবিআইয়ের পুলিশ সুপার শরিফ উদ্দীনকে বরিশালের পুলিশ সুপার, এসবির পুলিশ সুপার ফারজানা ইসলামকে রাজশাহীর পুলিশ সুপার হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়েছে।
এছাড়া পুলিশ অধিদপ্তরের পুলিশ সুপার ড. চৌধুরী মো. যাবের সাদেককে গাজীপুরের পুলিশ সুপার, এন্টি টেররিজম ইউনিটের ঢাকার পুলিশ সুপার ইয়াছমিন খাতুনকে মানিকগঞ্জের পুলিশ সুপার, এপিবিএন সদর দপ্তরের পুলিশ সুপার নিশাত অ্যাঞ্জেলাকে গাইবান্ধার পুলিশ সুপার, ঢাকা রেঞ্জ ডিআইজি কার্যালয়ের পুলিশ সুপার আসলাম শাহাজাদাকে হবিগঞ্জের পুলিশ সুপার, পিবিআইয়ের পুলিশ সুপার এহতেশামুল হককে ব্রাক্ষ্মণবাড়িয়ার পুলিশ সুপার এবং এসবির বিশেষ পুলিশ সুপার মোহাম্মদ সাফিউল সারোয়ারকে নওগাঁর পুলিশ সুপার হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়েছে।
জনস্বার্থে জারি করা এ আদেশ অবিলম্বে কার্যকর হবে বলে প্রজ্ঞাপনে উল্লেখ করা হয়েছে।
মন্তব্য