সময়টা ১৯৪৭ এর ফেব্রুয়ারি। খুলনা জেলার ডাকবাংলো মোড়ের দৃষ্টিনন্দন এক বাড়ি ‘ফেইরি কুইন’। সেই বাড়িতেই ১৯ তারিখ জন্ম হয় একটি কন্যা সন্তানের। রওশন হাসিনা ও সৈয়দ মাহবুবুল হক’র প্রথম সন্তান। এই কন্যা সন্তানটিই ফেরদৌসী প্রিয়ভাষিণী নামে পরবর্তীতে জড়িয়ে যান বাংলাদেশের ইতিহাসের নানান অধ্যায়ের সাথে।
যে ‘ফেইরি কুইন’ বাড়িতে জন্ম প্রিয়ভাষিণীর সে বাড়িটি ছিলো মূলত তাঁর নানার বাড়ি। প্রিয়ভাষিণীর ব্যক্তি ও শিল্পী জীবনে তাঁর নানা বাড়ির প্রভাব অপরিসীম। এই বাড়িটিতেই কেটেছে শৈশব-কৈশোরের মধুর দিনগুলো। প্রকৃতির সাথে মিলেমিশে একাত্ম হবার প্রথম সুযোগটি ঘটে এখানেই। ফেরদৌসী প্রিয়ভাষিণীর নানা এ্যাডভোকেট আব্দুল হাকিম কংগ্রেসের রাজনীতির সাথে জড়িত ছিলেন। ১৯৫২ সালে তার নানা সুপ্রিম কোর্টে কাজ করার জন্য চলে আসেন ঢাকায়। প্রিয়ভাষিণীও নানার পরিবারের সঙ্গে ঢাকায় আসেন। তখন তাঁর বয়স সবে মাত্র পাঁচ বছর। জীবনে প্রথমবারের মতো স্কুলে যাওয়া শুরু করেন। টিকাটুলির ‘নারী শিক্ষা মন্দির’ তার প্রথম শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। ১৯৫৪ সালে যুক্তফ্রন্টের শাসনামলে তার নানা স্পীকার হিসেবে দায়িত্বপ্রাপ্ত হন। নানা স্পীকার হওয়ার সুবাদে তারা চলে আসেন মিন্টু রোডের এক বাসায়। এবার প্রিয়ভাষিণী ভর্তি হন সিদ্ধেশ্বরী গার্লস স্কুলে। শহীদ জননী জাহানারা ইমাম তখন ছিলেন সেই স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা। পরীক্ষায় ফলাফল যাই হোক না কেন নিয়মিত স্কুলে উপস্থিত থাকার জন্য প্রিয়ভাষিণী প্রতিবছরই পুরস্কৃত হতেন। লেখাপড়ার প্রতি অদম্য টান বা স্কুলের প্রতি বিশেষ ভালো লাগা এসব কোনও বিষয়ই কিন্তু তাকে রোজ স্কুলে টেনে নিয়ে আসতো না। কারণটি ছিলো সম্পূর্ণ অন্যকিছু। প্রিয়ভাষিণী জাহানারা ইমামকে না দেখে একটা দিনও থাকতে পারতেন না। তাই তাকে দেখার জন্যই প্রতিদিন নিয়ম করে স্কুলে যেতেন তিনি।
স্কুলের পাশাপাশি প্রিয়ভাষিণী পারিবারিকভাবে একটি শিল্প-সাংস্কৃতিক পরিবেশের মাঝে বেড়ে উঠেছেন। সেই সাথে পেয়েছেন খালাদের কঠোর অনুশাসন। বড় মামা নাজিম মাহমুদ নাটক ও গান লিখতেন, সেইসাথে নিজে গান ও আবৃত্তিও করতেন। মেজ মামা সেলিম বুলবুলও গান করতেন। তবলার উপর একটা বইও রয়েছে তাঁর। আর খালারাও ছিলেন আবৃত্তি ও গানে পটু। কাজেই স্বাভাবিকভাবেই তাদের মননশীলতার ছোঁয়া প্রিয়ভাষিণীকেও করেছিলো আলোড়িত। সেই ছোটবেলা থেকেই আবৃত্তি আর গানের প্রতি তাঁর একধরণের ঝোঁক তৈরি হয়ে যায়। কিন্তু হঠাৎ করেই সবকিছু ছেড়ে তাকে চলে আসতে হয়। ১৯৫৬ সালের দিকে নয় বছর বয়সে প্রিয়ভাষিণীকে চলে আসতে হয় বাবার কাছে। তাঁর বাবা তখন খুলনার দৌলতপুর কলেজের অধ্যাপক। যদিও তাঁর দাদার বাড়ি ফরিদপুর শহরের চর কমলাপুর রোডে। কিন্তু দাদার বাড়ির সাথে কখনোই তেমন কোনও সখ্যতা গড়ে ওঠেনি তাঁর। দাদা সৈয়দ জহুরুল হক ছিলেন বড় লাটের ‘কেয়ার টেকার’। দাদার চিন্তাভাবনাও ছিলো তৎকালীন ইউরোপীয় সাহেবদের দ্বারা প্রভাবিত। তিনি বাড়িটিও তৈরি করেছিলেন ইউরোপীয় ঢঙে। বাবার কর্মস্থল দৌলতপুরে এসে তিনি ভর্তি হন ‘বীণাপানি’ পাঠশালায়। পাঠশালার সেই দিনগুলোর স্মৃতি তার জীবনে শেষ পর্যন্ত অম্লান হয়ে ছিলো। পাঠশালার বেঞ্চ আর বাঁশের খুঁটিতে লেখা থাকতো টুকরো টুকরো নানান অর্থহীন কথা। এর সবই পরবর্তীতে তাঁর করা ভাস্কর্য ‘বীনাপানি পাঠশালা’তে ঠাঁই পেয়েছে।
পারিবারিক ও সামাজিক নানান সমস্যার মধ্যেও অনিয়মিত হিসেবে তিনি খুলনার পাইওনিয়ার গার্লস স্কুল থেকে এসএসসি এবং গার্লস কলেজ থেকে এইচএসসি ও ডিগ্রি পাস করেন। বাবা মায়ের ১১ সন্তানের মধ্যে প্রিয়ভাষিণীই সবার বড়। বয়সে বড় হওয়ায় মায়ের কাজে সহযোগিতা করতে, ছোট ভাইবোনকে সামলে রাখতে হতো তাকেই। আর এ কারণে প্রায়ই মাটি হয়ে যেত তার বিকেলের খেলা। তবে পুতুল খেলা কামাই হতো না কখনও। পাড়ার মেয়েদের সঙ্গে দুপুরের নির্জন সময়ে মেতে উঠতেন পুতুল খেলায়। বর-কনে সাজিয়ে রীতিমত ঘটা করে দিতেন পুতুলের বিয়ে। প্রিয় পুতুল মঞ্জুরিকাকে নিয়ে অনেক সময় বানিয়ে বানিয়ে গল্পও বলতেন।
খুব ছোটবেলা থেকেই অনেক মহৎ মানুষদের সান্নিধ্যে আসতে পেরেছিলেন তিনি। অম্লান দত্ত, কবি সুফিয়া কামাল, এস.এম.সুলতান থেকে শুরু করে খান সরওয়ার মুর্শিদ, জিল্লুর রহমান সিদ্দিকী ছাড়াও আরো অনেকের নৈকট্য লাভ করেছেন ছোটবেলাতেই। কিন্তু এতো কিছুর পরও বাবার কঠিন শাসনে হাঁপিয়ে উঠত প্রিয়ভাষিণীর মন। মনে মনে ভাবতেন কবে ষোল বছর পূর্ণ হবে, কবে স্বাধীন হবেন তিনি। এই স্বাধীনতার লোভেই হয়তো মাত্র ষোল বছর বয়সে জীবনে প্রথমবারের মতো ভুল করে ভুল মানুষের প্রেমে পড়ে যান। প্রিয়ভাষিণী নিজেই যার নাম দিয়েছিলেন ‘ষোড়শ সমস্যা’। এই ‘ষোড়শ সমস্যা’য় পড়ে তিনি ওই অল্প বয়সেই পছন্দের মানুষকে বিয়ে করেন। কিন্তু তার স্বামীর ছিলোনা কোনও শিক্ষাগত যোগ্যতা। ‘যে মানুষকে ভালোবাসা যায় তার শিক্ষাগত যোগ্যতা নেই বলে তাকে ছেড়ে যাওয়া নৈতিক নয়’ এই ভাবনা থেকে প্রিয়ভাষিণী তাকে স্কুলে ভর্তি করিয়ে দেন। পরিবারের খরচ, সন্তানের খরচ সেই সাথে স্বামীর খরচ- সব মিলিয়ে তীব্র অর্থ কষ্টে জীবন চলছিলো তাঁর। তাই প্রিয়ভাষিণী সিদ্ধান্ত নেন চাকুরি করার। ১৯৬৩ সালে খুলনার আঁগা খান স্কুলে মাত্র ৬০ টাকা বেতনে চাকুরি জীবন শুরু করেন। ২০/৩০ টাকা বেতনে তিন/চারটা টিউশনিও জোগাড় করেন। এতকিছুর পরেও সংসারটা বাঁচাতে পারেননি তিনি। ১৯৭১ সালে বিচ্ছেদ হয়ে যায় প্রথম স্বামীর সঙ্গে। স্বামীর সঙ্গে বিচ্ছেদ হওয়ার পর যুদ্ধের সেই ভয়াবহতার মাঝে একজন নারী হয়েও তিনি সন্তানদের নিয়ে নতুন জীবন শুরু করার কথা ভাবেন। কিন্তু এর মাঝে তার জীবনে নেমে আসে চরম এক বিপর্যয়। ১৯৭১ সালে এদেশের লক্ষ লক্ষ মেয়েদের মতো তিনিও অমানবিক নির্যাতনের শিকার হন পাক হানাদার বাহিনীর। যুদ্ধের পর ১৯৭২ সালে প্রিয়ভাষিণী আবারও বিয়ে করেন। তার দ্বিতীয় স্বামী আহসান উল্লাহ আহমেদ ছিলেন প্রথম শ্রেণীর কর্মকর্তা। স্বামী, সন্তান, সংসার সামলিয়ে মাঝে কিছু বছর কর্মবিরতির পর ১৯৭৭ সাল থেকে ১৯৯৮ সাল পর্যন্ত তিনি একটানা কাজ করে গেছেন বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে। এতোকিছুর মাঝে পরম যত্নে বড় করে তুলেছেন ছয় সন্তানকে। বড় ছেলে কারু তিতাস, মেজ ছেলে কাজী মহম্মদ নাসের, ছোট ছেলে কাজী মহম্মদ শাকের (তূর্য্য)। তিন মেয়ে-রাজেশ্বরী প্রিয়রঞ্জিনী, রত্নেশ্বরী প্রিয়দর্শিনী, ফুলেশ্বরী প্রিয়নন্দিনী।
জীবনের তীব্র বঞ্চনাবোধ থেকেই বের হয়ে এসেছে তাঁর যাবতীয় শিল্পকর্ম বলে মনে করেন প্রিয়ভাষিণী। ১৯৭৭ সালে তিনি নিজেকে নতুন করে ফিরে পেলেন। উপলব্ধি করলেন, কিছু একটা করতে হবে। আর সেকারণেই তিনি সেসময় নিজেকে নানান কাজে ব্যস্ত রাখা শুরু করলেন। কিন্তু হাজার কিছুর ভীড়েও একাকিত্বের একটা বোধ তাকে পেয়ে বসতো মাঝেমধ্যেই। প্রকৃতির মাঝে যে মৌনতা আছে, যে একাকিত্ব আছে তাই আবার বহুকাল পরে তাঁকে টেনে নিল। প্রকৃতির বিষন্নতা, মোহময়তা তাঁর মাঝে নানা ছবি গড়ে তুলতে শুরু করলো। তখনই তিনি ঝরা পাতা, মরা গাছের ডাল আর গাছের গুড়িতে খুঁজে পেলেন নানান অবয়ব। স্বামীর চাকরির কারণে যখন তিনি গ্রামে থাকতেন তখন চারপাশের প্রকৃতিতে যা কিছু পেতেন তাই দিয়ে তিনি সুন্দর করে ঘর সাজাতে চেষ্টা করতেন। তখন ফুলের টবে গাছ লাগাতেন সুন্দর করে। মূলত ঘর ও নিজেকে দামী জিনিসের পরিবর্তে সহজলভ্য জিনিস দিয়ে কীভাবে সাজানো যায় তার সন্ধান থেকেই তাঁর শিল্পচর্চার শুরু। ফেরদৌসী প্রিয়ভাষিণীর শিল্পকর্ম দেখে সেসময় অনেকেই মুগ্ধ হতেন। এরকমই এক সময়ে তার জীবনে আরেকবার উদয় হন শিল্পী এস এম সুলতান। শিল্পী সুলতানের সঙ্গে খুব ছোটবেলায় একবার দেখা হয়েছিলো ১৯৫৯ সালে, দৌলতপুর কলেজে। তখনও এস এম সুলতান শিল্পী হিসেবে ততটা সুনাম অর্জন করেননি। বড়ই অদ্ভূতভাবে দেখা হয়েছিলো তাঁর সাথে প্রিয়ভাষিণীর। এরপর দীর্ঘদিন আর তাঁর দেখা পাননি প্রিয়ভাষিণী। ১৯৮৫ সালে আবার তাঁর সাথে যোগাযোগ হয়। একদিন সুলতান তাঁর কাজ দেখে মুগ্ধ হয়ে যান। এস এম সুলতানের অনুপ্রেরণা আর উৎসাহে ভাস্কর হিসেবে প্রিয়ভাষিণীর আত্মপ্রকাশ ঘটে সর্বমহলে। প্রিয়ভাষিণীর হাতে সামান্য এক নারকেলের শুষ্ক খোলা অথবা ঝরে পড়া তরুর শাখা এক দৃষ্টিনন্দন পাখির চেহারায় পরিবর্তিত হয়ে যায়। তার সৃষ্টিশীলতায় নিরেট শাখা-শিকড়-পত্রপল্লব থেকে জেগে ওঠে ক্রোধ, ভালোবাসা, ক্ষোভ, ঘৃণা এবং প্রেম,কখনও মাদার তেরেসা, কখনও ছিন্নমূল, কখনওবা একাত্তর। সুলতানের বিশেষ অনুপ্রেরণা ও স্থানীয় সংগঠন চারুপীঠের উদ্যোগে ১৯৯০ সালে যশোর জেলা শিল্পকলা অ্যাকাডেমিতে অনুষ্ঠিত হয় তাঁর প্রথম প্রদর্শনী। কেবল বাঁশ আর কাঠের বিভিন্ন আসবাবপত্রের প্রদর্শনী ছিলো সেটা। এরপর ১৯৯৪ সালে ঢাকার বেঙ্গল ফাউন্ডেশনে তার দ্বিতীয় প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হয়। এছাড়া বিভিন্ন সময়ে এশিয়ান ও দ্বিবার্ষিকসহ অনেকগুলো প্রদর্শনীতে অংশ নিয়েছেন তিনি। প্রিয়ভাষিণীর উল্লেখযোগ্য কয়েকটি ভাস্কর্য হলো- কনসেন্ট্রেশন ক্যাম্প, শরণার্থী, অস্তগামী জীবন, পোট্রেট অব আব্রাহাম লিংকন, পোট্রে্ইট অফ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, মিছিল, ভালোবাসার দিন, নারী নির্যাতন, মুক্তিযুদ্ধের নানা ইতিহাস ইত্যাদি।
ফেরদৌসী প্রিয়ভাষিণীই প্রথম নারী যিনি স্বাধীনতা-উত্তরকালে সামাজিক চোখ রাঙানীকে উপেক্ষা করে জনসমক্ষে যুদ্ধকালীন নির্যাতনের অভিজ্ঞতা তুলে ধরেছেন। পরবর্তীতে ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সহ-সভানেত্রী হিসেবে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিতে কাজ করেছেন। ২০০১ সালে জাপানে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিতে অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক সম্মেলনে তিনি বাংলাদেশের পক্ষে অংশ নেন। ২০০৪ সালে রিডার্স ডাইজেস্ট পত্রিকায় তিনি ‘হিরো অব দি মান্থ’ মনোনীত হয়েছিলেন। এছাড়াও নারী ও মানবাধিকারসহ অন্যান্য বেশ কিছু প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে নানাভাবে তার সংশ্লিষ্টতা ছিলো। শিল্পকলায় অসাধারণ অবদানের স্বীকৃতি স্বরূপ ফেরদৌসী প্রিয়ভাষিণীকে বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক ২০১০ সালে দেশের সর্বোচ্চ বেসামরিক পুরস্কার ‘স্বাধীনতা পুরস্কার’ প্রদান করা হয়। ২০১৮ সালের ৬ মার্চ ৭১ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেন দেশবরেণ্য এই ভাস্কর।
লেখক: গবেষক ও গণমাধ্যমকর্মী
প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে গঠিত বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার দেশের মাঝারি ও ক্ষুদ্র শিল্পের বিকাশে খুবই আন্তরিক।
এ খাতের কাঙ্ক্ষিত উন্নয়নের পাশাপাশি টেকসই শিল্পায়ন, ব্যবসা-বাণিজ্য ও বিনিয়োগ প্রসারে বাংলাদেশ অ্যাক্রেডিটেশন বোর্ড (বিএবি) ও সংশ্লিষ্ট সকলকে ইতিবাচক ভূমিকা অব্যাহত রাখার জন্য তিনি আহ্বান জানান।
আজ রোববার প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস ‘বিশ্ব অ্যাক্রেডিটেশন দিবস’ উপলক্ষে দেয়া এক বাণীতে এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, ‘বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও ‘বিশ্ব অ্যাক্রেডিটেশন দিবস-২০২৫’ উদ্যাপন করা হচ্ছে জেনে আমি আনন্দিত। এ উপলক্ষ্যে আমি বাংলাদেশ অ্যাক্রেডিটেশন বোর্ড (বিএবি) এর সকল অংশীজন এবং সহযোগী সংস্থাকে জানাই আন্তরিক শুভেচ্ছা। দিবসটির এবারের প্রতিপাদ্য ‘অ্যাক্রেডিটেশন : ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোগের ক্ষমতায়ন (এসএমই)’, বর্তমান বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে সময়োপযোগী হয়েছে বলে আমি মনে করি।’
ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তারা বিশ্ব অর্থনীতির অন্যতম চালিকাশক্তি উল্লেখ করে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘আমাদের মোট দেশজ উৎপাদনের একটি বৃহৎ অংশ এসএমই খাত থেকে আসে। নতুন নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টিতেও এ খাতের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এসএমই খাতের প্রতিষ্ঠানগুলো প্রতিনিয়ত আন্তর্জাতিক বাজারে প্রবেশে প্রতিবন্ধকতা, ক্রেতা ও ভোক্তার পরিবর্তনশীল চাহিদা এবং আর্থিক সীমাবদ্ধতার মতো চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হচ্ছে। এ সকল চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে প্রয়োজন সম্মিলিত বৈশ্বিক উদ্যোগ।’
তিনি বলেন, ‘অ্যাক্রেডিটেশন ব্যবস্থা জাতীয় গুণগতমান অবকাঠামো উন্নয়নের মাধ্যমে পণ্য ও সেবার সরবরাহ ব্যবস্থার সকল পর্যায়ে গুণগতমান নিশ্চিতকরণ, দক্ষ কারিগরি জনবল সৃষ্টি, বাণিজ্যে কারিগরি বাধা অপসারণ এবং আন্তর্জাতিক বাজারে প্রবেশের সুযোগ সৃষ্টি করে এ সকল চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে বিএবি এ লক্ষ্যে কাজ করে এখন পর্যন্ত বিভিন্ন ল্যাবরেটরি, ডায়াগনস্টিক সেন্টার, সনদ প্রদানকারী সংস্থা এবং পরিদর্শন সংস্থাসহ মোট ১৫৫টি সরকারি, বেসরকারি এবং বহুজাতিক সংস্থাকে আন্তর্জাতিক মান অনুসারে অ্যাক্রেডিটেশন সনদ প্রদান করেছে।’
মাদক মুক্ত সমাজ গড়ার প্রত্যয়ে ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়ায় গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহী ও এক সময়ের জনপ্রিয় খেলা হা-ডু-ডু খেলা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
আজ রোববার (৮ জুন) বিকেলে উপজেলার রাধাকানাই ইউনিয়নের খালইপুড়া দাখিল মাদরাসা মাঠে সূর্য তরুণ যুব সংঘের বর্ণাঢ্য আয়োজনে বিলুপ্তপ্রায় এ খেলাটি অনুষ্ঠিত হয়।
খোরশেদ আলম আকন্দ এর সভাপতিত্বে এতে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন মোমেনশাহী ল কলেজের সভাপতি ও উপজেলা বিএনপির যুগ্ন আহবায়ক এড. রেজাউল করিম চৌধুরী।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি বলেন, গ্রামগঞ্জের একসময়কার জনপ্রিয় পুরনো এ খেলাটি গ্রামের কাঁচা রাস্তায়, মাঠ, বাগানে বা খোলা স্থানে জমজমাট ও উৎসবমুখর পরিবেশে হতো। কালের বিবর্তনে এই খেলা এখন আর আগের মতো দেখা যায় না। তাই জনপ্রিয় এ খেলাটি টিকিয়ে রাখা এবং নতুন প্রজন্মকে খেলাধূলায় উজ্জীবিত করায় তিনি সূর্য তরুণ যুব সংঘকে অভিনন্দন জানান।
এ খেলায় ঢাকা একাদশকে হারিয়ে গ্রাম একাদশ বিজয় লাভ করেন। পরে বিজয়ীদলকে পুরস্কার হিসেবে একটি খাসি উপহার দেওয়া হয়। এসময় অন্যান্যদের মাঝে আরও উপস্থিত ছিলেন, বাংলাদেশ মাদরাসা শিক্ষক সমিতি ফুলবাড়িয়া শাখার সদস্য সচিব মোখলেছুর রহমান বিএসসি, এডভোকেট মো. জসিম উদ্দিন, ডা. রফিকুল ইসলাম, মো. আবুল কালাম প্রমুখ।
নাগরিক জীবনের ব্যস্ততায় হারিয়ে যাওয়া এই ঐতিহ্যবাহী খেলাটি উপভোগ করতে খালইপুড়া দাখিল মাদরাসা মাঠে বিপুলসংখ্যক দর্শক ও ক্রীড়া প্রেমী জড়ো হয়।
ঝিনাইগাতীতে ঈদ-উল-আজহার পরদিন, ৮ জুন রবিবার, ময়মনসিংহ বিভাগীয় কমিশনার মো: মোখতার আহমদে এর মহতী উদ্যোগে এবং ঝিনাইগাতী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জনাব আশরাফুল আলম রাসেলের সরাসরি তত্ত্বাবধানে উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় অসহায় ও দরিদ্র ১৫০টি পরিবারের মাঝে কুরবানির মাংস বিতরণ করা হয়।
এই কর্মসূচির অংশ হিসেবে ঝিনাইগাতী উপজেলার হলদীগ্রাম, নয়া রাংটিয়া, ভারুয়া, পূর্ব গজারীকুড়া আশ্রয়ণ ও গুচ্ছগ্রামের ১২০টি পরিবার এবং উপজেলার অন্যান্য এলাকার আরও ৩০টি পরিবার এই সহায়তা পান। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ছিল—প্রত্যেকটি পরিবারের দরজায় গিয়ে ইউএনও নিজ হাতে কুরবানির মাংস তুলে দেন এবং প্রত্যেকের সাথে আন্তরিকভাবে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় করেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক গুচ্ছগ্রামের এক মহিলা বলেন, “আমি তো ভাবছিলাম, আমাগো কথা কে ভাবে? কিন্তু স্যার যেইভাবে সামনে আইস্যা ডাক দিল আর মাংসের প্যাকেট হাতে দিয়ে ঈদ মোবারক কইলো, মনডারে বইলা বোঝানো যাইবো না। দোয়া করি, আল্লাহ যেন ইউএনও স্যারকে সব সময় গরিব-দুখির লগে থাকার তৌফিক দান করেন।”
ইউএনও আশরাফুল আলম রাসেল বলেন, “ঈদের আনন্দ যেন প্রান্তিক ও অসহায় মানুষদের মাঝেও পৌঁছে যায়, সেটাই ছিল আমাদের প্রধান লক্ষ্য। আমরা চাইনি কেউ এই উৎসব থেকে বাদ পড়ে থাকুক।”
এই ব্যতিক্রমধর্মী ও মানবিক উদ্যোগে কেবল খাবার নয়, পৌঁছে গেছে ভালোবাসা, সম্মান ও রাষ্ট্রের প্রতিনিধিত্বকারী একজন কর্মকর্তার সরাসরি উপস্থিতি—যা ওইসব মানুষের জন্য ছিল এক অনন্য অনুভূতি।
স্থানীয় বাসিন্দারা ইউএনও আশরাফুল আলম রাসেল মহোদয়ের এ আন্তরিক প্রচেষ্টাকে অভিনন্দন জানান এবং বলেন, এমন মানবিক প্রশাসনিক কর্মকাণ্ড মানুষকে রাষ্ট্রের প্রতি আস্থাশীল করে তোলে।
প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে দেখা করে দুর্নীতির অভিযোগ নিয়ে ‘ভুল–বোঝাবুঝির’ অবসান করতে চান যুক্তরাজ্যের সাবেক ‘সিটি মিনিস্টার’ টিউলিপ সিদ্দিক। তাই অধ্যাপক ইউনূসের আসন্ন যুক্তরাজ্য সফরের সময় তাঁর সাক্ষাৎ চেয়ে চিঠি দিয়েছেন বাংলাদেশের ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভাগনি টিউলিপ।
যুক্তরাজ্যের সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ানের প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানানো হয়েছে।
টিউলিপের বিরুদ্ধে শেখ হাসিনার সরকারের আমলে বাংলাদেশে বাড়তি সুবিধা নেওয়ার অভিযোগ এনেছে কর্তৃপক্ষ। গত বছরের আগস্টে গণ-অভ্যুত্থানের মুখে শেখ হাসিনার সরকারের পতন হয়। তিনি পালিয়ে ভারতে চলে যান। বাংলাদেশে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারপ্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।
সংবাদমাধ্যমে টিউলিপের বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ নিয়ে শোরগোল হয়েছে। এর মধ্যে টিউলিপ কিংবা তাঁর মায়ের (শেখ রেহানা) বিরুদ্ধে প্রভাব খাটিয়ে ৭ হাজার ২০০ বর্গফুটের প্লট নেওয়ার দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) অভিযোগ রয়েছে।
টিউলিপ এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। আর টিউলিপের আইনজীবীরা বলেছেন, এসব অভিযোগ ‘রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত’। এর কোনো ভিত্তি নেই। সেই সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করছে না বলেও অভিযোগ টিউলিপের।
কয়েক দিনের প্রবল বৃষ্টি ও যমুনা নদীর পানি বৃদ্ধির সাথে সাথে পাল্লা দিয়ে মানিকগঞ্জের দৌলতপুর উপজেলার বাচামারা,বাঘুটিয়া,চরকাটারী ইউনিয়নে ব্যাপক ভাঙ্গন শুরু হয়েছে। যমুনা নদীতে পানি বৃদ্ধি ফলে প্রবল ¯্রােত ভাঙ্গনে করাল গ্রাসে শনিবার ঈদের দিন দুপুরে বাচামারা ইউনিয়নের নিজ ভারাঙ্গা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত তিনতলা পাকা ভবন নদী গর্ভে তলিয়ে যায় । সেই সাখে গত এক সপ্তাহে কয়েক শত ঘরবাড়ি বসতভিটা ও ফসলি জমি নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে । স্কুল ভবন নদী গর্ভে বিলীন হওয়ায় ঐ বিদ্যালয়ের কমলমতি ছাত্র/ছাত্রীদের লেখা পড়া অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে ।
নদীপাড়ের মানুষ স্বাভাবিক ভাবে জীবন যাপন করলেও বর্ষার শুরুতেই তাদের ভাঙন আতঙ্ককে প্রহর ঘুনতে হচ্ছে। প্রতি বছর বর্ষা মৌসুমে নদীপাড়ে ভাঙন শুরু হলে ঘরবাড়ি বসতভিটা, ফসলি জমি হারিয়ে নি:স্ব হয়ে পড়েন নদীপাড়ের বাসিন্দারা।স্থানীয় পানি উন্নয়ন অফিস ভাঙনরোধে জরুরি ভিত্তিতে ১৪ হাজার জিও ব্যাগ ফালানোর কার্যক্রম হাতে নিয়েছে বলে জানা গেছে।
পানি উন্নয়ন অফিস সূত্রে জানা গেছে,মানিকগঞ্জের বুক চিরে বয়ে গেছে পদ্মা, যমুনা, কালীগঙ্গা, ধলেশ্বরী, ইছামতী, গাজীখালিসহ ১৪টি নদী।ভাঙন আতঙ্ক নদী পাড়ের মানুষেরে এযেন নিত্য দিনের সঙ্গি। প্রতি বছর বর্ষা মৌসুমে নদীপাড়ে ভাঙন শুরু হলে ঘরবাড়ি বসতভিটা, ফসলি জমি হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে পড়েন নদীপাড়ের বাসিন্দারা।
জানা গেছে,দৌলতপুর উপজেলার চর কালিয়াপুর,বাঘুটিয়া, ভারাঙ্গা,রংদারপাড়া,বিষ্ণপুর,রামচন্দ্রপুর,আবুডাঙ্গা পূর্বপাড়া,চরকাটারি বোর্ডঘর বাজার,চরকাটারি সবুজসেনা হাইস্কুল,বাচামারা ইউনিয়নের চরভারাঙ্গা সরকার পাড়া,মজম শেকের পাড়া,বাচামারা পশ্চিম পাড়া,উত্তরখন্ড,সুবুদ্ধি,বাঘুটিয়া ইউনিয়নের পাচুরিয়া , বাঘুটিয়া বাজার,পারুরিয়া বাজার,রাহাতপুর, জিয়নপুর ইউনিয়নের বৈন্যাঘাট,লাউতাড়া,লাউতাড়া আশ্রয়ন কেন্দ্র ,চকবাড়াদিয়া, চকমিরপুর ইউনিয়নের ভাঙ্গা রামচন্দ্রপুর,রামচন্দ্রপুর নতুন পাড়া, হাতকোড়া খলসী ইউনিয়নের চরমাস্তল,বিষ্ণপুর খাঁপাড়া,পার মাস্তলসহ ২৮ টি এলাকা নদী ভাঙনের ঝুঁকিতে রয়েছে ।
দৌলতলপুর উপজেলার বাঘুটিয়া ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান মো : গোলাম ইয়াছিন জানান,রাহুতপুর এলাকায় বালুমহল ইজারার নাম করে বাঘুটিয়া এলাকায় নদী থেকে বালু উত্তলোন করায় প্রতি বছর ভাঙন দেখা দেয়।এতে আমাদের গ্রামের কয়েকশ পরিবারকে অপূরনীয় ক্ষতির মূখে পড়তে হয়।বালু না কাটলে আমাদের এলাকায় নদী কিছুটা কম ভাঙবে।
বাচামারা ইউনিয়নের ইউপি সদস্য মো: ওয়াজেদ আলী সরকার বলেন, নদীতে প্রবল ¯্রােত ২/৩ দিনে ব্যাপক ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে । চোখের পলকে নিজ ভারাঙ্গা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত তিনতলা পাকা ভবন নদী গর্ভে বিলীন হয়ে তলিয়ে গেলো । ভাঙনরোধে সরকারের কাছে ব্যাবস্থা নেওয়ার দাবী জানান তিনি।
মানিকগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মুহাম্মদ আক্তারুজ্জামান জানান, নদীপাড়ের ঝুকিপূর্ণ স্থানগুলোর ভাঙন ঠেকাতে জরুরি ভিত্তিতে ১৪ হাজার জিও ব্যাগ ফালানোর কার্যক্রম শুরু করা হবে।এছাড়া নদী ভাঙন প্রতিরোধে স্থায়ী প্রতিরক্ষামূলক প্রকল্প গ্রহণের লক্ষ্যে ফিজিবিলিটি স্টাডি চলমান রয়েছে ও কারিগরি কমিটি গঠন করা হয়েছে।
এবিষয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার নাহিয়ান নুরেন জানান, শুক্রবারে নিজভারাঙ্গা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভবন নদী ভাঙ্গনের সংবাদ পেয়ে তাৎক্ষনিক ভাবে উপজেলা প্রকৌশলীকে জরুরী ভিত্তিতে স্কুল ভবন নিলাম দেয়া যায় কিনা ব্যবস্থা প্রহনের নির্দেশ দেয়া হয়েছিল । উপজেলা প্রকৌশলী সরেজমিনে গিয়ে দেখেছেন কিন্তু ভাঙ্গনের ফলে ভবনটি অত্যান্ত ঝুকিপূর্ণ হওয়ায় কোন কুলকিনারা করতে পারেনি । খ্বর পেয়েছি ঈদের দিন ভবনটি নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে ।
গতকাল শনিবার পবিত্র ঈদুল আজহার দিনে বন্ধ থাকার পর আজ রোববার থেকে ফের চালু হয়েছে মেট্রোরেল। তবে মেট্রোতে কোরবানির পশুর চামড়া, কাঁচা বা রান্না করা মাংস পরিবহন করা যাবে না।
রোববার সকাল ৮টা থেকে মেট্রোরেল চলাচল শুরু হয়।
ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড (ডিএমটিসিএল) সূত্রে জানা যায়, আজ (রোববার) প্রতি ৩০ মিনিট পরপর ট্রেন চলছে। আগামীকাল সোমবার থেকে মেট্রোরেল সরকারি ছুটির দিনের সময়সূচি অনুযায়ী চলাচল করবে।
গত মঙ্গলবার ডিএমটিসিএলের পরিচালক (প্রশাসন) এ কে এম খায়রুল আলমের স্বাক্ষর করা এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, মেট্রোরেলে কোরবানির পশুর চামড়া, কাঁচা বা রান্না করা মাংস পরিবহন করা যাবে না। মেট্রো স্টেশনের প্রতিটি গেটে যাত্রীদের যথাযথভাবে তল্লাশি করা হবে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, কোনো যাত্রীর কাছে কাঁচা বা রান্না করা মাংস পাওয়া গেলে তাৎক্ষণিক তার মেট্রো স্টেশনে প্রবেশ আটকে দেওয়া হবে। মেট্রোরেলের নিরাপত্তা কর্মীদের এসব নির্দেশনা কঠোরভাবে বাস্তবায়ন করতেও বিজ্ঞপ্তিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
ঈদুল আজহার দ্বিতীয় দিনেও রাজধানী ঢাকার বিভিন্ন জায়গায় কোরবানির দৃশ্য চোখে পড়েছে।
গতকাল শনিবার ঈদের প্রথম দিন ব্যস্ততা ও চাপ সামলাতে না পেরে কিংবা কসাই সংকটের কারণে যারা কোরবানি করতে পারেননি আজ রোববার ঈদের দ্বিতীয় দিনে তারা পশু কোরবানি করছেন। নগরীর পুরান ঢাকা, লালবাগ, টিকাটুলী, মুগদা এবং বাসাবো এলাকায় সকাল থেকেই কোরবানির পশু জবাই ও মাংস প্রক্রিয়াকরণের ব্যস্ত দৃশ্য চোখে পড়েছে।
পুরান ঢাকার বংশাল এলাকায় সরেজমিনে দেখা যায়, কয়েকটি বাসার সামনে পলিথিন টানিয়ে পশু কোরবানির প্রস্তুতি চলছে। আবার অনেকেই ইতোমধ্যে পশু কোরবানি সম্পন্ন করেছেন। তার কিছু দূরেই রাস্তার পাশে কয়েকজন তরুণ মাংস কাটছেন, পাশে দাঁড়িয়ে কসাই নির্দেশনা দিচ্ছেন। কিছু দূরে শিশু-কিশোররা দাঁড়িয়ে কোরবানির দৃশ্য দেখছে। লালবাগের বউবাজার, টিকাটুলীর জনবহুল গলি, মুগদা ও বাসাবোর অভ্যন্তরীণ বেশকিছু সড়কেও একই চিত্র দেখা যায়।
সংশ্লিষ্টরা জানান, গতকাল ঈদের দিন কসাই সংকট এবং সময় ও প্রস্তুতির অভাবে কোরবানি করতে না পেরে অনেকেই আজ করছেন। কারও কারও গরু হাট থেকে বাড়ি পৌঁছেছে ঈদের দিন রাতে। আবার কেউ কেউ ইচ্ছে করেই ভিড় এড়িয়ে আজ কোরবানি করছেন, যাতে সময় নিয়ে কাজ করতে পারেন।
এদিকে আজও পরিচ্ছন্নতা রক্ষায় সিটি করপোরেশনের তৎপরতা দেখা গেছে। ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন জানিয়েছে, কোরবানির দ্বিতীয় দিনেও পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম চলছে। ডিএনসিসির পরিচ্ছন্নতা বিভাগের এক কর্মকর্তা বলেন, যেসব এলাকায় আজ কোরবানি হচ্ছে, সেখানে আমরা নির্ধারিত পয়েন্টে কর্মী পাঠিয়ে বর্জ্য অপসারণ করছি। ঈদের তিন দিনই আমরা মাঠে থাকব।
ধর্মীয় দিক থেকে ঈদুল আজহার দ্বিতীয় দিন অর্থাৎ ১১ জিলহজও কোরবানির জন্য গুরুত্বপূর্ণ। ইসলামের বর্ণনায় এ দিনটি মর্যাদাপূর্ণ বলে উল্লেখ রয়েছে। নবী করিম (সা.) বলেছেন, আল্লাহর কাছে সবচেয়ে শ্রেষ্ঠ দিন হলো কোরবানির দিন, এরপরের দিনটি। তাই অনেকেই আজও কোরবানি করছেন। শরিয়ত অনুযায়ী ১০ থেকে ১২ জিলহজ, মোট তিন দিন কোরবানি করার বিধান রয়েছে। এই সময়ের মধ্যে যে কোনো দিন কোরবানি দেওয়া বৈধ, তবে প্রথম দিন কোরবানি করা সবচেয়ে উত্তম। সময়মতো কোরবানি না হলে তার পরিবর্তে সদকা করারও নির্দেশ রয়েছে।
মন্তব্য