× হোম জাতীয় রাজধানী সারা দেশ অনুসন্ধান বিশেষ রাজনীতি আইন-অপরাধ ফলোআপ কৃষি বিজ্ঞান চাকরি-ক্যারিয়ার প্রযুক্তি উদ্যোগ আয়োজন ফোরাম অন্যান্য ঐতিহ্য বিনোদন সাহিত্য শিল্প ইভেন্ট উৎসব ধর্ম ট্রেন্ড রূপচর্চা টিপস ফুড অ্যান্ড ট্রাভেল সোশ্যাল মিডিয়া বিচিত্র সিটিজেন জার্নালিজম ব্যাংক পুঁজিবাজার বিমা বাজার অন্যান্য ট্রান্সজেন্ডার নারী পুরুষ নির্বাচন রেস অন্যান্য আফগানিস্তান ১৫ আগস্ট কী-কেন স্বপ্ন বাজেট আরব বিশ্ব পরিবেশ বিশ্লেষণ ইন্টারভিউ মুজিব শতবর্ষ ভিডিও যৌনতা-প্রজনন মানসিক স্বাস্থ্য অন্যান্য উদ্ভাবন প্রবাসী আফ্রিকা ক্রিকেট শারীরিক স্বাস্থ্য আমেরিকা দক্ষিণ এশিয়া সিনেমা নাটক মিউজিক শোবিজ অন্যান্য ক্যাম্পাস পরীক্ষা শিক্ষক গবেষণা অন্যান্য কোভিড ১৯ ইউরোপ ব্লকচেইন ভাষান্তর অন্যান্য ফুটবল অন্যান্য পডকাস্ট বাংলা কনভার্টার নামাজের সময়সূচি আমাদের সম্পর্কে যোগাযোগ প্রাইভেসি পলিসি

বাংলাদেশ
গান আলাপে কিংবদন্তি কণ্ঠশিল্পী রুনা লায়লা
google_news print-icon

গান আলাপে কিংবদন্তি কণ্ঠশিল্পী রুনা লায়লা

গান-আলাপে-কিংবদন্তি-কণ্ঠশিল্পী-রুনা-লায়লা
বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের গান, এর সংকট ও সমাধানের পাশাপাশি রুনা লায়লার অসামান্য জীবনের নানা বাঁকের কথা উঠে এসেছে এই আলাপে। রুনা লায়লার মুখোমুখি হয়েছিলেন কবি আব্দুল্লাহ আল মুক্তাদির। খুবই আন্তরিক আলাপে তিনি এ সময়ের গানের ভুবন প্রসঙ্গে বলেন, ‘এখন তো কাটপেস্টের যুগ।' শিল্পীদের প্রসঙ্গে বলেন, 'শুধু নতুন শিল্পী হলেই হবে না, মান থাকতে হবে।'

উপমহাদেশের অন্যান্য চলচ্চিত্র ইন্ডাস্ট্রির মতো, ঢাকাই চলচ্চিত্রে গানের বড় একটা ভূমিকা থাকায় স্বভাবতই ভালো গায়ক বা গায়িকার বড় প্রয়োজন আগেও ছিল, এখনো আছে। যারা দশকের পর দশক ঢাকাই চলচ্চিত্রের প্লেব্যাক জগতের প্রতিনিধিত্ব করছেন, তাদের মধ্যে অন্যতম রুনা লায়লা। দেশের সীমানার বাইরে তার খ্যাতি ছড়িয়েছে বৈচিত্র্যময় গায়কির জন্য। গজল, ফোক, ডিসকো, নজরুলগীতিসহ গানের বিভিন্ন ধারায় তার সাড়া জাগানো উপস্থিতির প্রমাণ মিলেছে বহুবার।

গোল্ডেন ডিস্ক, প্লাটিনাম ডিস্ক-জয়ী বিভিন্ন সুপার হিট অ্যালবাম তিনি করেছেন উর্দু আর হিন্দি ভাষায়। টিভি অনুষ্ঠান ও মঞ্চে রুনা লায়লার নিজেকে উপস্থাপন করার স্টাইল এখনো অনেক শিল্পীর অনুকরণীয়। এত কিছুর পরেও নিজেকে প্লেব্যাক গায়িকা হিসেবে পরিচয় দিতে ভালোবাসেন কিংবদন্তি এই শিল্পী।

১৯৫২ সালের ১৭ নভেম্বর সিলেটে জন্ম নেয়া রুনার শৈশব কেটেছে তদানীন্তন পশ্চিম পাকিস্তানে। বাবার চাকরিসূত্রে সেখানে থাকতে হয়েছিল তাকে। ১৯৬৪ সালে মাত্র ১২ বছর বয়সে লাহোরে জুগনু ছবিতে ‘গুড়িয়াছি মুন্নি মেরি’ গানের মাধ্যমে প্লেব্যাক জগতে পা রাখেন রুনা। ১৯৭০ সালে ঢাকার স্বরলিপি ছবিতে প্রথম বাংলা চলচ্চিত্রের জন্য গান করেন; গানটি ছিল ‘গানেরই খাতায় স্বরলিপি লিখে।’

১৯৭৪ সালে মুম্বাইয়ের ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে তার অভিষেক হয় এক সে বাড়কার এক ছবির মাধ্যমে। পাকিস্তান আর ভারতে উর্দু, হিন্দি, সিন্ধি, পাঞ্জাবি, পশতু ইত্যাদি ভাষায় প্রচুর গান গাইলেও, ঢাকার চলচ্চিত্র ইন্ডাস্ট্রিকেই তিনি বেছে নিয়েছেন তার মূল কর্মক্ষেত্র হিসেবে।

গান আলাপে কিংবদন্তি কণ্ঠশিল্পী রুনা লায়লা
রুনা লায়লা, ষাটের দশকে


সময়ের পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের গান, এর সংকট ও সমাধানের পাশাপাশি এই শিল্পীর অসামান্য জীবনের নানা বাঁকের কথা উঠে এসেছে এই আলাপে। রুনা লায়লার মুখোমুখি হয়েছিলেন কবি আব্দুল্লাহ আল মুক্তাদির। ১৩ আগস্ট ২০১১ সালে নেয়া এ সাক্ষাৎকার প্রসঙ্গ ও সমসাময়িকতা বিবেচনায় এখনো প্রাসঙ্গিক।

আব্দুল্লাহ আল মুক্তাদির: ক্ল্যাসিকাল, সেমি-ক্ল্যাসিকাল ও গানের অন্যান্য ধারায় কিন্তু আপনি বিশেষভাবে খ্যাত; তারপরেও চলচ্চিত্রের গানকেই আপনি মূল কর্মক্ষেত্র হিসেবে নিয়েছেন। চলচ্চিত্রের গানের ক্ষেত্রে আপনার ভালো লাগা বা দুর্বলতা কতখানি?

রুনা লায়লা : চলচ্চিত্রের গানে একটা বড় সুবিধা হলো, এখানে সব ধরনের গান করার সুযোগ পাওয়া যায়। আধুনিক গান হোক, রোমান্টিক ধাঁচের হোক, সেমি-ক্ল্যাসিকাল হোক, ডিসকো, পপ, ফোক সবই আছে এর মধ্যে। এর প্রচারও অনেক বেশি। অনেক মানুষই চলচ্চিত্র দেখে বা যারা নাও দেখে রেডিওতে গানগুলো শোনে। আর আমি তো মূলত প্লেব্যাক সিঙ্গারই, ন্যাচারালি এর প্রতি একটা উইকনেস তো থাকবেই।

আব্দুল্লাহ আল মুক্তাদির: আপনি ভারত, পাকিস্তান, বাংলাদেশ তিন দেশের জন্যই প্লেব্যাক করেছেন। বাংলাদেশ ছাড়া বাকি দুটো দেশে বড় সুযোগ থাকা সত্ত্বেও আপনি ঢাকার চলচ্চিত্র ইন্ডাস্ট্রিকেই বেছে নিয়েছেন। ওই দুই দেশে আপনার অভিজ্ঞতাও যথেষ্ট। ওখানকার আয়োজন, বিশেষ করে সঙ্গীতায়োজনে আপনার বিশেষ কিছু ভালো লাগা নিশ্চয়ই আছে। আপনার এই অভিজ্ঞতাগুলোর কতখানি এখানে কাজে লাগাতে পেরেছেন?

রুনা লায়লা : আসলে তিন দেশে গানের স্টাইল বা ধারা একদম অন্য রকম। আমাদের এখানে মূলত বাংলা গানটাই বেশি হয়, মানে বাংলা স্টাইলেই বেশি হয়। তারপরেও বলব যে, এখানে আমি অনেক ধরনের গানই গাওয়ার সুযোগ পেয়েছি। আর যেহেতু আমি বাংলাদেশের গায়িকা, বাংলাদেশেই থাকি, সেহেতু স্বাভাবিকভাবেই বাংলা ছবিতেই আমার বেশি গান হয়েছে এবং হচ্ছে। আর ইন্ডিয়াতে ওরা হচ্ছে টেকনিক্যালি অনেক অ্যাডভান্সড। একটা গানের মধ্যে অনেক কিছু তারা অ্যাড করতে পারে। এবং অনেক ধরনের, সংখ্যায় অনেক অ্যাক্যুস্টিক ইন্সট্রুমেন্ট ব্যবহার করা হয়। যা আমাদের এখানে দুঃখজনকভাবে বলতে গেলে একদমই নেই, আর থাকলেও খুবই কম। তো অনেক মিউজিক ডিরেক্টরকে দেখেছি, তারা যেহেতু এখানে সেরকম ইন্সট্রুমেন্ট পায় না, ইন্ডিয়াতে গিয়ে রেকর্ড করে আনে, ট্র্যাক করে আনে।

আর পাকিস্তানের কথা বলতে গেলে, মূলত আমি ওইখানেই আমার ক্যারিয়ার শুরু করেছি। ফিল্মের গান প্রথম আমি ওখানেই গাই। এরপর অনেক বছর, অনেক ধরনের, অনেক সুরকারের সাথে আমি কাজ করেছি। ওই অভিজ্ঞতাগুলো আমি এখানে কাজে লাগাচ্ছি, যেহেতু আমার বেইজটাতে বেশ বৈচিত্র্য রয়েছে। আমি আগেই অনেক ধরনের গান গাওয়ার সুযোগ পেয়েছি পাকিস্তানে, যার কারণে ওই অভিজ্ঞতাটা আমি এখানে কাজে লাগাতে পারছি।

আব্দুল্লাহ আল মুক্তাদির: পাকিস্তানে আপনার চলচ্চিত্রের ক্যারিয়ারের প্রসঙ্গ যখন এলোই, তখন যার সঙ্গীত, যার নাম সবার আগে আসে, তিনি নিসার বাজমি। অনেক ভার্সেটাইল একজন সুরকার। বলা হয়ে থাকে আপনার এবং তার অসাধারণ একটা কেমিস্ট্রি ছিল। উনি ডিসকো, পপ, মডার্ন, ক্ল্যাসিকাল সব ধরনের গান আপনাকে দিয়ে করিয়েছেন চলচ্চিত্রে। ওনার সম্পর্কে জানাটা জরুরি। আমাদের দেশে ওনার সম্পর্কে জানাশোনা একটু কম।

রুনা লায়লা : আসলে নিসার বাজমি সাহেব তো ওনার ক্যারিয়ার শুরু করেছিলেন ইন্ডিয়াতে। এবং আমি যখন ১৯৭৪ সালে প্রথমবার লক্ষ্মীকান্ত-পেয়ারালালজির গান করতে যাই, লক্ষ্মীকান্তজি আমাকে বললেন যে, নিসার বাজমি সাহেবের সুরে আমার করা কিছু গানের ক্যাসেট ওনাদের কাছে ছিল; লক্ষ্মীকান্তজির কাছে। আমি জিজ্ঞেস করায় উনি বললেন, বাজমি সাহেব তো আমাদের গুরু। উনি যখন এখানে সুর করতেন আমরা তখন মিউজিশিয়ানস ছিলাম, ওনার সাথে অনেক কাজ করেছি। খুব শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করলেন বাজমি সাহেবকে।

আর বাজমি সাহেব বেসিক্যালি এত ধরনের গান আমাকে দিয়ে গাইয়েছেন যে, আমার মনে হয়, আমার ভয়েজটাকে উনিই একমাত্র পুরোপুরি ইউটিলাইজ করেছেন। অনেক সময় আমি নিজেও জানতাম না যে আমি এই ধরনের গান গাইতে পারব, কিন্তু উনি ঠিকই বের করে নিয়েছেন আমার কাছ থেকে। ওনার মধ্যে ওই জিনিসটা ছিল। উনি বুঝতে পারতেন যে, কোন আর্টিস্টকে দিয়ে কোন গান গাওয়ালে সে ভালো করবে।

আমাকে উনি সব সময় বলতেন, তুমি একজন ভার্সেটাইল সিঙ্গার, তুমি সব ধরনের গানই গাইবে। সব ধরনের গানই উনি আমাকে দিয়ে গাইয়েছেন। এবং ওনার অসাধারণ কিছু কম্পোজিশনে আমি গাওয়ার সুযোগ পেয়েছি। যার জন্যে এখনো ওই গানগুলো মানুষ শুনতে চায়। ‘দিল ধারকে’ যে রকম, তারপরে ‘আপ দিলকি আঞ্জুমান মে’, ‘কাটে না কাটেরে রাতিয়া’। ভিন্ন ধরনের গান কিন্তু সবগুলো, প্রত্যেকটার আলাদা একটা আপিল আছে। উনি যে অর্কেস্ট্রেশন, যে অ্যারেঞ্জমেন্টগুলো করতেন, ওই অ্যারেঞ্জমেন্টগুলো বোধ হয় এই সাব-কন্টিনেন্টে কম হয়েছে। হি ওয়াজ ওয়ান অব দ্য লিডিং মিউজিক ডিরেক্টরস। খুব জিনিয়াস একটা লোক।

অনেক কাজ করেছি আমরা একসঙ্গে। আমাকে এত গান গাওয়ানোর জন্য ওনাকে অনেক প্রবলেম ফেইস করতে হয়েছে। অনেক আর্টিস্ট রাগ করেছেন। কিন্তু আমার উপর ওনার খুব বিশ্বাস ছিল। আমাকে দিয়ে তিনি সব ধরনের গান গাইয়ে ছেড়েছেন। তখন আমার বয়সও অনেক কম ছিল। অনেক সময় আমি বলতাম, বাজমি সাহাব, এই গানটা অনেক কঠিন, আমি পারব না গাইতে। উনি বলতেন, পারবে না কেন? অবশ্যই পারবে। উনি আমার ভিতরের সম্ভাবনাটাকে, অ্যাবিলিটিটাকে চিনতে পেরেছিলেন।

আব্দুল্লাহ আল মুক্তাদির: সেই তুলনায় আমাদের সঙ্গীতায়োজনের সমস্যা কী? বিশেষ করে ৯০-এর দশকের মাঝামাঝি থেকে কিন্তু বৈচিত্র্যের অভাবসহ আরও অনেক ধরনের সংকট দেখা গেছে। ২০০০ সালের দিকে আপনার ঘোষণা মনে হয় পত্রিকায় এসেছিল যে, আপনি আর নিয়মিত গাইবেন না। এরপর কিন্তু সংকটটা আরও বেড়েছে।

রুনা লায়লা : আসলে মাঝখানে আমাদের ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির অবস্থা, ছবির যে অবস্থা ছিল; খুব খারাপ একটা সময় গেছে। শুধু গানের ক্ষেত্রেই না, আমি বলব ফিল্মের সব ক্ষেত্রেই খুব বাজে একটা সময় গেছে এবং সেটাকে কাটিয়ে উঠতেই অনেক সময় লেগেছে। আস্তে আস্তে এখন ভালো ভালও ছবিও কিছু হচ্ছে, ভালও গানও কিছু বেরোচ্ছে।

আর আমাদের মেইন প্রবলেম হচ্ছে যে, বড় ধরনের টেকনিক্যাল সাপোর্ট নেই; প্লাস আমাদের অ্যাকুস্টিক ইন্সট্রুমেন্টের একটা অভাব আছে। আমার মনে হয় যে, আমাদের অ্যাক্যুস্টিক ইন্সট্রুমেন্টের প্লেয়ার ছিল, কিন্তু তাদের সেভাবে ইউটিলাইজ করা হয় নাই। যার কারণে, আস্তে আস্তে ওই ফ্লোটা মরে গেছে। পুরো গানের সবকিছু একজনই করছে, একজনই সবকিছু বাজিয়ে দিচ্ছে। এভাবে তো আসলে মজাটা থাকে না। ভায়োলিন থাকল, ফ্লুট থাকল, সান্তুর বা সেতার থাকল, সারেঙ্গি থাকল। এসব কিন্তু আর শোনাই যায় না, গেলেও খুব কম। আর এখন কাজ যেটা হচ্ছে সেটা ঝটপট করে ফেলা।

আগে তো আমরা মিউজিক ডিরেক্টরের সাথে একটা গান তিন দিন রিহার্সেল করতাম, তারপরে দুই দিন মিউজিশিয়ানদের সাথে ফুল রিহার্সেল হতো; তারপরে আমরা রেকর্ডিংয়ে যেতাম। রেকর্ডিং লাইভ হতো, ইন্সট্রুমেন্টসহ। একটা গান করতে সারা দিন, অনেক সময় সারা রাতও লেগে যেত। লাইভ ছিল, তাই কেউ একজন ভুল করলে আবার নতুন করে শুরু করতে হতো।

এখন ওই ডেডিকেশনটাও কমে গেছে, কাজের যে একটা ফ্লো ছিল, সেটাও নেই। আমরাও এখন অনেকটা লেজি হয়ে গেছি। একবার একটা লাইন গাইলাম, ঠিক হলো না, আচ্ছা আর একবার করে নিই; বা মুখটা গাইলাম আর দরকার নাই। কাট্‌ অ্যান্ড পেস্ট করে শেষে ওটাই লাগিয়ে দেব। এখন তো কাট অ্যান্ড পেস্টের যুগ।

গান আলাপে কিংবদন্তি কণ্ঠশিল্পী রুনা লায়লা
সংগীত পরিবেশনরত রুনা লায়লা


আব্দুল্লাহ আল মুক্তাদির: কাট অ্যান্ড পেস্ট করলে কিন্তু গানের এসেন্সটা নষ্ট হয়ে যায়। যেমন আপনার ক্ষেত্রে আমরা খেয়াল করেছি, আপনি একটা লাইন শুরুতে যেভাবে গান, পরে আবার অন্য যেকোনো জায়গায় লাইনটা এলে আর ওভাবে গান না। গানের ক্ষেত্রে শেষ করা শুরু করার ধরনটা কিন্তু আলাদা।

রুনা লায়লা: হ্যাঁ। আমি সেইজন্য চেষ্টা করি পুরোটাই করার, পুরো গানটাই আমি গাই। পারতপক্ষে তাই কাট অ্যান্ড পেস্ট করতে দিই না। কাট অ্যান্ড পেস্টে ইমোশনটাও অনেক কমে যায়।

আব্দুল্লাহ আল মুক্তাদির: আপনি, সাবিনা ইয়াসমীন; আপনারা যখন ৬০-এর দশকের শেষে বা ৭০-এ আসলেন, অনেক বড় মাপের গায়ক-গায়িকাদের উত্তরাধিকার হিসেবে। আপনারা কিন্তু জনপ্রিয়তা বা যোগ্যতায় আগের সবাইকে একরকম ছাড়িয়ে গেলেন। আপনাদের পরে এত দিন চলে গেল, একটা শিল্পীও আসে নাই, যারা ছাড়িয়ে যাওয়া দূরে থাক, আপনাদের সাথে তুলনায়ও যেতে পারে। এরকম হওয়ার কারণটা কী?

রুনা লায়লা: এটার কারণ আসলে খুঁজে বের করা খুবই কঠিন, কেন আসেনি। এমনকি ভারতেও, লতাজি, আশাজির পরে ওই মাপের সিঙ্গার তো আর আসেনি। হ্যাঁ, অনেক ভালো সিঙ্গার আছে, কিন্তু ওই জিনিস তো আর হবে না। যে রকম পাকিস্তানে ম্যাডাম নূরজাহানের পরে অনেক সিঙ্গার এসেছে, ভালো গান করেছে কিন্তু তার মতো আর আসেনি। আমার মনে হয় আমাদের এখানেও ব্যাপারটা অনেকটা ওই রকম। আমাদের এখানে সুযোগের অভাবেও অনেক ট্যালেন্ট বেরিয়ে আসতে পারছে না। ওই প্ল্যাটফর্মও পাচ্ছে না। কারণ মিউজিক ডিরেক্টররা নতুনদের গাওয়াতে ভয় পাযন।

আমি অনেক সময় অনেক মিউজিক ডিরেক্টরকে, প্রডিউসারকে বলি নতুনদের দিয়ে গাওয়ান না কেন? আমরা তো অনেককাল গাইলাম। তারা বলে, ‘ম্যাডাম, ওই জিনিস তো হবে না।’ আমার কথা হলো, ওই জিনিস না হোক, ওরা ওদের মতন করে অন্যকিছু দিক। এখন যদি মাথার মধ্যে সব সময় ওইটাই থাকে যে সাবিনা-রুনার মতো হতে হবে, তাহলে তো অন্য কেউ আর আসতে পারবে না। সেই সুযোগটা তো ওদের করে দিতে হবে।

আব্দুল্লাহ আল মুক্তাদির: ক্ল্যাসিকাল গানের ব্যাপারে আসা যাক। পাকিস্তানের চলচ্চিত্রের গানের একটা বিশেষ বৈশিষ্ট্য ক্ল্যাসিকাল-বেইজড গানের ব্যবহার। আপনিও পাকিস্তানের চলচ্চিত্রে অনেকগুলো এই ধরনের গান করেছেন। কিন্তু বাংলাদেশে এই রকম গানের ব্যবহার কম। হাতেগোনা ছবি আনারকলি, মহানায়ক বা রাজলক্ষ্মীশ্রীকান্ত ছাড়া খুব একটা দেখা যায় না। রিসেন্টলি রূপকথা গল্পের ‘কার তরে নিশি জাগো রাই’ গানটি হয়েছে। এ রকম গানের ব্যবহার খুব একটা হয় না কেন?

রুনা লায়লা : বাংলাদেশি ছবিতে ক্ল্যাসিকাল গান যত হয়েছে, তার ম্যাক্সিমাম গাওয়ার সুযোগ আমার হয়েছে। আমার বেইজটা ক্ল্যাসিকালের ছিল। আর পাকিস্তানে থাকাকালীন যেসব গান গেয়েছি, যাদের গান গেয়েছি, ওরা অনেক ক্ল্যাসিকাল বেইজড গান করত। এদেশেও হয়েছে এই রকম গান। কিন্তু অনেক কম। কারণ, এখানে গানের ধারাটাই অন্যরকম। ওখানে যে রকম ক্ল্যাসিকালকে নিয়ে ওরা খেলা করে।

আর এখানে যদি কোনো সিকোয়েন্স থাকে, যদি দরকার পড়ে, তাহলেই কেবল এ ধরনের গান দেয়া হয়। আদারওয়াইজ এখানে সেমি-ক্ল্যাসিকাল গানও হয় না। এবং ‘কার তরে নিশি জাগো রাই’ এই গানটার কথা যখন আমাকে প্রথমে বারী (বারী সিদ্দিকী) বলল, ‘ম্যাডাম, একটা ক্ল্যাসিকাল গান আছে ফিল্মের জন্য, আপনি কি গাইবেন?’ আমি বললাম, ‘গাইব না কেন? শুনি আগে একটু।’ তারপর ও এল বাসায়। গানটা শুনলাম। গানটা তো আমার আগেই শোনা ছিল। বাড়ে গুলাম আলী সাহাবের গাওয়া ‘বাজুবন্দ খুর খুল যায়’ ছিল ওই সুরের। শুনিয়ে ও আমাকে জিজ্ঞেস করল গাইবে নাকি। বললাম, অবশ্যই গাইব। সাংঘাতিক ভালো গান! কঠিন গান! খুবই কঠিন।

যাই হোক, ভালোয় ভালোয় পার করা গেল। বারী একটা কথা বলল, ‘এই গানটা, ম্যাডাম আপনি যদি বলতেন গাইবেন না, তাহলে এখানে আর হতো না। আমাকে ইন্ডিয়াতে যেতে হতো।’ এই গানটা আমি গেয়েছিও একটু অন্য স্টাইলে। একদম ঠুমরী, টপ্পা গানগুলোর গায়কি যে রকম হয়, সেই রকম করে গাওয়ার চেষ্টা করেছি।

আব্দুল্লাহ আল মুক্তাদির: ১৯৭৭ সালে যখন প্রথম স্বাধীনতা পুরস্কার দেওয়া হলো, তখন বলা চলে, বাংলা চলচ্চিত্র শিল্পের গানের জন্য একটা বড় রকমের স্বীকৃতি এসেছিল। একজন প্লেব্যাক গায়িকাকে কাজী নজরুল ইসলাম, জয়নুল আবেদিন বা মাওলানা ভাসানীর মতো মানুষদের সাথে পুরস্কৃত করা হলো। কিন্তু এই ধরনের স্বীকৃতি আপনার ক্ষেত্রে বা অন্য কারও ক্ষেত্রে কিন্তু পরে গিয়ে আর কন্টিনিউ করেনি। একুশে পদক কিন্তু আপনাকে এখনো দেয়নি। তো এই ব্যাপারগুলো চলচ্চিত্রের গানের জন্য কতখানি, আপনি কীভাবে দেখেন?

রুনা লায়লা : আমি একটা জিনিস বলব যে, স্বাধীনতা পুরস্কার আমাকে দিয়েছে বিজ্ঞ লোকদের সঙ্গে, অনেক বড় মাপের মানুষদের সাথে। তখন আমি বয়সেও ছোট বা এক্সপেরিয়েন্সেও ছোট। তবু কন্ট্রিবিউশনের জন্যে, এটা মাথায় রেখে হয়তো দিয়েছে। কিন্তু পরবর্তীতে ওর সাথে যে সম্মানটা আসা উচিত ছিল, যেমন ভিআইপি পাওয়া, ওইটা কিন্তু আমি এখনো পাইনি। ভিআইপি স্ট্যাটাসও পাইনি, সিআইপি স্ট্যাটাসও পাইনি।

আমি একজন সাধারণ নাগরিক হিসেবে ট্রাভেল করি, আসি-যাই। আমাকে সাধারণ মানুষ অনেক সম্মান দেয়, শ্রদ্ধা করে। কিন্তু কোনো সরকারের কাছ থেকেই ওই স্বীকৃতিটা, পদকের সাথে যেই স্বীকৃতি আসার কথা, সেটা আসেনি। এটা আমার একটা বিরাট দুঃখ।

আমার মনে হয়, আমি যতটুকুই করতে পেরেছি আমার দেশের জন্য, আমার দেশের গানকে নিয়ে বাইরের দেশে যতটা পারি রিপ্রেজেন্ট করতে, সেটুকু আমি করেছি। স্ট্যাটাসটা আদৌ কখনো আসবে কি না জানি না। এটা একটা বিরাট দুঃখ আমার মনে। আমরা দেখি, নতুন, ইয়াং অনেক ক্রিকেটারও ভিআইপি পাচ্ছে। কিন্তু অনেক জাতীয় পুরস্কার, স্বাধীনতা দিবস পদক বা একুশে পদক যারা পেয়েছেন, তারা অনেকেই কিন্তু এ দিক থেকে পিছিয়ে আছেন। তাদেরকে কোনোরকম সম্মানজনক স্বীকৃতি কিন্তু কোনো সরকারই দেয়নি। এটা খুব দুঃখজনক।

আর এরপরে ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির গানের জগত থেকে আর কাকে দিয়েছে বা না দিলে কেন দেয় নি- এটা আমি বলতে পারব না। যারা কমিটিতে আছেন, তারাই ঠিক করেন কাদের দেবেন।

আব্দুল্লাহ আল মুক্তাদির: আপনি যখন চলচ্চিত্রে গান করেন, আপনার একটা বিশেষ খ্যাতি আছে; তা হলো গানের, সুরের বৈচিত্র্য। বিভিন্ন রকম ভয়েজে আপনি গান করতে পারেন। এটা কি বিশেষ কোনো স্ট্র্যাটেজি? আপনার গলা মাঝে মাঝে যার উপর পিকচারাইজড হচ্ছে, তার সাথে এত বেশি মিলে যায় যে মনে হয় ওই অভিনেত্রী নিজেই গাচ্ছেন। আপনি কি পারসোনালি অভিনেত্রীদের চিনে জেনে তারপর গান করেন?

রুনা লায়লা : আসলে পাকিস্তানে থাকতে, ইন্ডিয়াতে বা এখানেও আমি যেকোনো গান গাওয়ার আগে জিজ্ঞেস করে নিই, গানটা কার উপরে পিকচারাইজড হবে। শবনম, রানীর উপরে হবে, না আমাদের এখানে শাবনূর, মৌসুমী বা ববিতার উপরে হবে? কার উপরে যাবে? তার কথা চিন্তা করে, সে কী ধরনের এক্সপ্রেশন দেবে বা তার মুভমেন্ট কেমন হবে এসব মাথায় রেখে আমি গানটা ওই স্টাইলেই করি। আর চেষ্টা করি, গানের মধ্যে নব্বই ভাগ এক্সপ্রেশন দিয়ে দিতে, আর বাকি দশ ভাগ ওদের নিজেদের দিতে হয়। এতে করে ওদের খাটুনিটাও কমে যায়।

আব্দুল্লাহ আল মুক্তাদির: কিন্তু অনেক সময় এত বেশি মিলে যায় যে অবাক লাগে, প্রিয়শত্রু ছবিতে দিতির লিপে; ‘চিঠি কেন আসে না’ বা ‘তুমি আজকে যাও বন্ধু’ এসব গানের ভিডিও দেখলে মনে হয় ভয়েজটা দিতির নিজের! কিংবা মৌসুমীর ‘কাল তো ছিলাম ভালো’…

রুনা লায়লা : মৌসুমী, শাবনূর সবার জন্যই তো গেয়েছি। কিন্তু সব থেকে মজার ব্যাপার যেটা, সেটা হলো, মৌসুমী বলো, শাবনূর বলো, পপি সবারই কিন্তু প্রথম ছবির প্রথম গানটি কিন্তু আমার গাওয়া।

আব্দুল্লাহ আল মুক্তাদির: দিতি, শাবনাজ এদেরও। ‘বন্ধুর বাঁশি বাজেরে, আমার কানে কানে’!

রুনা লায়লা : হ্যাঁ।

গান আলাপে কিংবদন্তি কণ্ঠশিল্পী রুনা লায়লা
সাম্প্রতিক সময়ে মঞ্চে রুনা লায়লা

আব্দুল্লাহ আল মুক্তাদির: পুরোনো গানের রিমেক বা রিমিক্স প্রসঙ্গে আসি। যেসব পুরোনো গান রিমেক করে বা রিমিক্স করে, আবার বাজারে আনা হয়। দেখা যায়, অনেক ক্ষেত্রেই নতুন গানের চেয়ে বেশি জনপ্রিয় হয়। এতবার শোনা চলচ্চিত্রের সেইসব গানের এত গ্রহণযোগ্যতার ভিত্তি আসলে কী?

রুনা লায়লা: এটা কিন্তু শুধু বাংলাদেশেই হয়; এমন না। ইন্ডিয়ার গানগুলো দ্যাখো, সেই পুরোনো গানগুলোই কিন্তু আসছে ঘুরে-ফিরে। ইয়াং জেনারেশন নিয়ে যতগুলো কম্পিটিশন হচ্ছে, সেই লতাজি, আশাজির, মুকেশজি, কিশোরদার, রাফি সাহাবের গানগুলোই সবাই গাইছে এবং সেগুলো এখনো অনেক পপুলার গান! আগে, আমার মনে হয়, কম্পোজিশন সবকিছু মিলিয়ে পুরো জিনিসটাই এমনভাবে পরিবেশন করা হতো যে যুগের পর যুগ চলছে। এবং আরও চলবে। দেখবে তোমার পরে যারা আসবে তারাও ঐ গানগুলোকে নেবে।

এখানে আমার একটা কথা বলার আছে, গানগুলো যে রিমেক, রিমিক্স হচ্ছে এগুলো যদি অরিজিনাল আর্টিস্টকে দিয়েই আবার করানো হয়, আমার মনে হয় অনেক ভালো হতো। অনেক সময় রিমেক, রিমিক্স করতে গিয়ে গানগুলো ঠিক ওই রকম হয়ও না। আবার অনেক কিছু ওর মধ্যে ঢুকিয়ে দেয়। যেগুলো শুনতেও ভালো লাগে না। অমনই নাকি চলে! তারপরেও আমার মত হলো, অরিজিনাল আর্টিস্টকে দিয়ে গাওয়াতে পারলেই সবচেয়ে ভালো।

আব্দুল্লাহ আল মুক্তাদির: গানের কথায়, সঙ্গীতায়োজন নিয়ে আপনি হয়তো বিভিন্ন সময় বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন হয়েছেন। শিল্পীসহ নানা সংকট নিয়ে বা এগুলোর সমাধান নিয়ে চিন্তা নিশ্চয়ই আপনার মাথাতেও এসেছে।

গান আলাপে কিংবদন্তি কণ্ঠশিল্পী রুনা লায়লা
সাক্ষাৎকারের পর কবি আব্দুল্লাহ আল মুক্তাদির এর সাথে রুনা লায়লা

রুনা লায়লা: এক নম্বর কথা হলো, সবার আগে যেটা দরকার, নতুন শিল্পীদের সুযোগ দিতেই হবে। আমাদের ঘরে নতুন শিল্পী তৈরি রাখতেই হবে। এছাড়া কোনো উপায় নেই। শুধু নতুন শিল্পী হলেই হবে না, মান থাকতে হবে। ভালো শিল্পী তৈরি করতে হবে। অনেক প্রতিভাবান ছেলেমেয়ে, অনেক ক্ষেত্রেই সুযোগ পাচ্ছে না। সুযোগের অভাবে অনেকে বেরিয়ে আসতে পারছে না। এদেরকে যদি সবাই মিলে সুন্দর সুযোগ করে দিই আমরা, আমার মনে হয়, আরও অনেক ভালো শিল্পী আমাদের এখানে হবে। অনেকে আবার মনে করতে পারে আগের জনদের মতো তো হবে না। আসলে কেউ কারও জায়গাটা নিতে পারে না, যার যার স্থানে সে সে আছে। কেউ আর রুনা-সাবিনা হতে পারবে না।

যে যার নিজস্ব একটা পজিশন গড়ে নিয়েছে। এরপর যারা আসবে, তারা তাদের মতো পজিশন করে নেবে। এর জন্য প্রচুর সাধনা, ডেডিকেশন দরকার। সত্যিকার অর্থে গান ভালোবাসতে হবে। আমরা এত বছর পার করে এসে এখন মোটামুটি একটা পজিশনে এসে দাঁড়িয়েছি। কিন্তু এর পিছনে যে কত খাটুনি, কত পরিশ্রম, কত ত্যাগ! কতকিছু করে তারপর আমরা এখানে এসেছি। তো এই জিনিসটা যারা নতুন আসছে তাদের মাথায় থাকা দরকার। তাদের আমি বলব যে, টাকা অনেক আসবে জীবনে। কিন্তু টাকাটাই বড় না।

ইচ্ছা যদি থাকে, যদি সাধনা থাকে, সত্যিকার অর্থে গানবাজনা মনে এনে গান করলে তারপরে একসময় কাজ পাবে। কাজ পেলে টাকাও আসবে। আর আমি টাকার জন্য গাইব, এটা মাথায় রেখে যদি নামি গানের জগতে, তাহলে কিন্তু হবে না। তবে এখন বেশির ভাগেরই আমি এই প্রবণতা দেখি। আমি কাউকে ছোট করার জন্য বলছি না বা সবার বেলায় বলব না। কিন্তু বেশির ভাগই চিন্তা করে কটা শো করা যায়, কত টাকা আমি পাচ্ছি। একজন তরুণ শিল্পী একদিন আমার সাথে গান গাইছিল, তাকে আমি জিজ্ঞাসা করলাম, ‘তুমি গান শিখ?’

বলে, ‘না।’

বললাম, ‘রেওয়াজ করো?’

বলল, ‘না।’

বলি, ‘তাহলে তুমি গাও কী করে?’

বলে, ‘যা জানি তাই গাই। এমনিতেই আমি শো করছি, সুযোগ পাচ্ছি, গান শেখার আর দরকার তেমন পড়ে না।’

এ রকম মানসিকতা হলে তা খুবই হতাশার ব্যাপার!

আব্দুল্লাহ আল মুক্তাদির: প্রিয় শিল্পী, আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।

রুনা লায়লা: তোমাকেও অনেক ধন্যবাদ।

কবি আব্দুল্লাহ আল মুক্তাদিরের জন্ম সিরাজগঞ্জে, ১৯৯০ সালে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজি সাহিত্যে পড়াশোনা শেষ করে এখন শিক্ষকতা করছেন ত্রিশালের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগে। দৈনিক সংবাদের সাহিত্য পাতায় ছোটগল্প ও কবিতা প্রকাশের মাধ্যমে আত্মপ্রকাশ ২০১০ সালে । এখন পর্যন্ত প্রকাশিত কবিতার বই দুইটা, অন্য গাঙের গান, সমুদ্রসমান (২০১৬) ও যুদ্ধ যুদ্ধ রুদ্ধ দিন (২০২০)। প্রথম গল্প সংকলন বছরের দীর্ঘতম রাত প্রকাশিত হয়েছে ২০১৯ সালে।

আরও পড়ুন:
মধ্যরাতের গান ছুঁলো কোটি প্রাণ
অর্থহীনের সুমন সংকটাপন্ন নন: ম্যানেজার
মারা গেছেন ‘অশ্রু দিয়ে লেখা’ গানের সুরকার
কণ্ঠশিল্পী আসিফের শুদ্ধি অভিযান
‘ডাক দিয়াছেন দয়াল আমারে’ গীতিকারে পরিবর্তন

মন্তব্য

আরও পড়ুন

বাংলাদেশ
Another 120 people from Libya have been brought back home

লিবিয়া থেকে আরও ১২৩ জনকে দেশে ফিরিয়ে আনা হয়েছে

লিবিয়া থেকে আরও ১২৩ জনকে দেশে ফিরিয়ে আনা হয়েছে

লিবিয়া থেকে স্বেচ্ছায় দেশে ফেরার আগ্রহ প্রকাশ করা আরও ১২৩ অনিবন্ধিত বাংলাদেশি নাগরিককে গতকাল বৃহস্পতিবার দেশে ফিরিয়ে আনা হয়েছে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, এসব বাংলাদেশির সবাই বুরাক এয়ারের একটি বিশেষ চার্টার্ড ফ্লাইটে (ইউজেড ০২২২) সকাল ৯টা ৫০ মিনিটে হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে এসে পৌঁছান।

উল্লেখ্য, প্রত্যাগতদের অধিকাংশই মানবপাচারের শিকার। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নেতৃত্বে, ত্রিপোলিতে বাংলাদেশ দূতাবাস, প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় এবং আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থার (আইওএম) সমন্বিত উদ্যোগে প্রত্যাবাসন কার্যক্রমটি বাস্তবায়িত হয়েছে।

দেশে ফেরার পর পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় এবং আইওএম-এর প্রতিনিধিরা তাদের স্বাগত জানান ।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, অধিকাংশ বাংলাদেশি সমুদ্রপথে ইউরোপে পৌঁছানোর উদ্দেশে অনিবন্ধিতভাবে লিবিয়ায় প্রবেশ করেছিলেন। লিবিয়ায় অবস্থানকালে তাদের অনেকেই মানব পাচারকারীদের দ্বারা অপহরণ ও নির্যাতনের শিকার হন।

সরকারি কর্মকর্তারা এসব অভিবাসীকে পরামর্শ দেন, যেন তারা অন্যদের এই ধরনের বিপজ্জনক ও অবৈধ পথে বিদেশ গমনের ঝুঁকি সম্পর্কে সচেতন করেন এবং ভবিষ্যতে এমন যাত্রা থেকে বিরত থাকার পরামর্শ দেন।

পুনর্বাসন সহায়তার অংশ হিসেবে আইওএম প্রত্যেককে নগদ ৬ হাজার টাকা, জরুরি খাদ্য সহায়তা, প্রাথমিক চিকিৎসা সেবা এবং প্রয়োজনে অস্থায়ী আবাসনের ব্যবস্থা করেছে।

সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আরও জানানো হয়, বর্তমানে লিবিয়ার বিভিন্ন বন্দিশিবিরে আটক থাকা অন্যান্য বাংলাদেশির নিরাপদ ও মর্যাদাপূর্ণ প্রত্যাবাসনের কাজ চলছে।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, ত্রিপোলিতে বাংলাদেশ দূতাবাস, প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় এবং আইওএম যৌথভাবে এ বিষয়ে কাজ করে যাচ্ছে।

মন্তব্য

তদন্ত কমিশনের সংবাদ সম্মেলন

গুমের শিকার ব‍্যক্তিদের চার ধরনের পরিণতি হতো

গুমের শিকার ব‍্যক্তিদের চার ধরনের পরিণতি হতো

রাজনৈতিক উদ্দেশ্যেই গুম করা হতো বলে জানিয়েছেন গুম সংক্রান্ত তদন্ত কমিটির সভাপতি বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরী। গুমের শিকার ব্যক্তিদের সম্ভাব্য ৪ ধরনের পরিণতি হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর গুলশানে সংবাদ সম্মেলনে গুমসংক্রান্ত তদন্ত কমিটির সভাপতি এসব তথ্য জানান। কমিশনে দাখিল করা অভিযোগ বিশ্লেষণে এসব তথ্য দেন তিনি।

তিনি বলেন, গুমের শিকার ব্যক্তিদের সম্ভাব্য যে ৪ ধরনের পরিণতি হয়েছে, তা হলো: ১. গুমের শিকার ব্যক্তিকে হত্যা করা। ২. বিচারের আগেই মিডিয়ার সামনে উপস্থাপন করে জঙ্গি তকমা দিয়ে বাংলাদেশেই বিচারাধীন বা নতুন ফৌজদারি মামলায় গ্রেফতার দেখানো।৩. তাকে সীমান্ত দিয়ে ভারতে পাঠিয়ে সে দেশের আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের মাধ্যমে গ্রেপ্তারের ব্যবস্থা করা। ৪. ভাগ্য সুপ্রসন্ন হলে, অল্পসংখ্যক ক্ষেত্রে মামলা না দিয়ে ছেড়ে দেওয়া।

গুম কমিশনের ২য় অন্তর্বর্তী প্রতিবেদন গত ৪ জুন প্রধান উপদেষ্টা বরাবর জমা দেওয়ার পর আজ দুপুরে রাজধানীর গুলশানে গুম সংক্রান্ত কমিশন অফ ইনকোয়ারির কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে মইনুল ইসলাম চৌধুরী এ সব কথা বলেন।

গুম কমিশনের সভাপতি বলেন, বিগত কর্তৃত্ববাদী সরকারের আমলে বিরোধী রাজনৈতিক শক্তি এবং ভিন্ন মতাবলম্বীদের বিরুদ্ধে পদ্ধতিগত দমননীতির অংশ হিসেবে গুমকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছিল।

তিনি বলেন, ৫ আগস্ট রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পরেও বহু অপরাধী ও তাদের শুভাকাঙ্ক্ষীরা রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার কেন্দ্রে থাকায় অনেক জোরালো প্রমাণ ও নিদর্শন ধ্বংস, অনেক ক্ষেত্রে প্রাতিষ্ঠানিক অসহযোগিতা, সাক্ষীদের ভয়ভীতি প্রদর্শনসহ নানারকম ভীতিকর ও আতঙ্কজনক পরিবেশ সৃষ্টি করেছে। তবুও বহু ভুক্তভোগী জীবনের ঝুঁকি নিয়ে তাদের অভিযোগ ও অভিজ্ঞতা জানিয়েছেন। তারা দেশীয় ও আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে বিস্তারিতভাবে সে কাহিনি তুলে ধরেছেন।

গুম সংক্রান্ত কমিশন অফ ইনকোয়ারির সভাপতি আরো বলেন, বিগত সরকারের শাসনামলে গুম একটি সুশৃঙ্খল ও প্রাতিষ্ঠানিক রূপে ‘জঙ্গিবাদবিরোধী’ অভিযানের ছায়াতলে ইসলামি উগ্রবাদের হুমকিকে ব্যবহার করে রাজনৈতিক ক্ষমতা কেন্দ্রীভূত করা, আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি অর্জন ও শাসন দীর্ঘায়িত করার উদ্দেশে পরিচালিত হয়েছিল। ভুক্তভোগীদের মধ্যে ছিলেন- মেধাবী শিক্ষার্থী, রাজনৈতিক কর্মী ও সাংবাদিক থেকে সাধারণ জনগণ।

মইনুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, এ প্রক্রিয়ায় তারা ফৌজদারি বিচার ব্যবস্থাকে অস্ত্র বানিয়েছিল। আইন প্রয়োগকারী সংস্থা ও নিরাপত্তা বাহিনীকে রাজনৈতিক প্রভাবাধীন করে এবং নির্যাতন ও গোপন আটকের সংস্কৃতি প্রাতিষ্ঠানিকভাবে চালু করেছিল। এমনকি সাধারণ নাগরিকদের বেআইনি পন্থায় বারবার ভারতীয় বাহিনীর হাতেও তুলে দেওয়া হয়েছিল।

কমিশন অফ ইনকোয়ারি অ্যাক্টের ধারা ১০ এ(১) ও (২) অনুযায়ী কমিশনে দাখিলকৃত ১৩১টি অভিযোগের বিষয়ে আইন মোতাবেক জিডি রেকর্ডপূর্বক ভিকটিমদের সন্ধান ও উদ্ধার কার্যক্রম পরিচালনার জন্য পুলিশ মহাপরিদর্শক বরাবর প্রেরণ করা হয়েছে।

তিনি বলেন, গোপন আটক কেন্দ্রের অস্তিত্ব এখন আর অস্বীকার করা যায় না। সকল ক্ষেত্রেই ভুক্তভোগীরা প্রায় একই ধরনের প্রক্রিয়ার শিকার হয়েছেন। পদ্ধতিগত নির্যাতন, সন্ত্রাসী হিসেবে প্রচার, একই ধরনের আইন অনুযায়ী অভিযোগ দায়ের ও একই ধরনের ভাষায় বর্ণনা। বিভিন্ন পটভূমি থেকে আসা ব্যক্তিদের অভিজ্ঞতার এই সামঞ্জস্য রাজনৈতিক উদ্দেশ্যকে স্পষ্ট করে।

তিনি বলেন, প্রতিবেদনে ১৯ শতাংশ ফেরত না আসা ১২ জন ভিকটিমের বিষয়ে অগ্রগতি তুলে ধরেছি, যাদের বিষয়ে প্রাথমিকভাবে অনুসন্ধান সম্পন্ন হয়েছে। তাদের গুমের জন্য কারা দায়ী, তা প্রাথমিকভাবে আমরা শনাক্ত করতে পেরেছি। চলমান অনুসন্ধানের স্বার্থে এই মুহূর্তে এর চেয়ে বেশি প্রকাশ করা সম্ভব হচ্ছে না।

ফিরে না আসা ভিকটিমদের বিষয়ে অপরাধী ও গুমের অপরাধ সংঘটনের স্থানসহ নানাবিধ বিষয়ে তথ্যের ঘাটতি বা পুরোনো কললিস্ট না পাওয়াসহ নানারকম বিলম্বঘটিত প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হলেও কমিশন আন্তরিকতার সঙ্গে অনুসন্ধান কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে বলেও জানান তিনি।

প্রতিবেদনে কমিশন সন্ত্রাসবিরোধী যে সব মামলায় অপব্যবহার হয়েছে, তা ন্যায় বিচারের মানদণ্ড বিবেচনায় নিয়ে দ্রুত নিষ্পত্তির ব্যবস্থা এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ঊর্ধ্বতনের সঙ্গে আলোচনার প্রেক্ষিতে মালয়েশিয়া-ইন্দোনেশিয়ার মতো উপযুক্ত কাউন্টার টেরোরিজম মেথড বের করার জন্য দুটি সুপারিশ করা হয়।

এ সময় গুম সংক্রান্ত কমিশন অফ ইনকোয়ারির সদস্য অবসরপ্রাপ্ত অতিরিক্ত বিচারক মো. ফরিদ আহমেদ শিবলী, মানবাধিকার কর্মী নূর খান, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও কমিশনের সদস্য নাবিলা ইদ্রিস, মানবাধিকার কর্মী ও কমিশনের সদস্য সাজ্জাদ হোসেন উপস্থিত ছিলেন।

মন্তব্য

বাংলাদেশ
The accused in the murder case

আদালত থেকে পালাল হত্যা মামলার আসামি

আদালত থেকে পালাল হত্যা মামলার আসামি

ঢাকার তৃতীয় অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ আদালতের এজলাস থেকে হাজতখানায় নেওয়ার পথে পুলিশকে মারধর করে পালিয়েছেন হত্যা মামলার এক আসামি।

আসামি শরিফুল ইসলাম (২২) দিনাজপুর জেলার নবাবগঞ্জ থানার হরিপুর গ্রামের মৃত শফিক আহম্মেদের ছেলে। তিনি রাজধানীর খিলগাঁও থানার জিসান হোসেন (১৪) হত্যা মামলার চার্জশিটভুক্ত আসামি। মামলাটি বর্তমানে সাক্ষ্যগ্রহণের পর্যায়ে রয়েছে।

গতকাল বৃহস্পতিবার বেলা সাড়ে ১১ টার পর সংশ্লিষ্ট আদালতের দায়িত্বে থাকা পুলিশ কনস্টেবল শহিদুল্লাহকে মারধর করে ছুটে পালিয়ে যান আসামি শরিফুল। এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতের হাজতখানার ইনচার্জ এসআই রিপন।

তিনি বলেন, আসামিকে আদালত থেকে হাজতখানায় নেওয়ার সময় পুলিশকে আঘাত করে তিনি পালিয়ে যায় আসামি শহিদুল।

ডিএমপির প্রসিকিশন বিভাগের এডিসি মাইন উদ্দিন বলেন, আসামির হাতে হাতকড়া পরানো ছিল। তিনি ধাতব কিছু দিয়ে হাতকড়া ঢিলা করে কৌশলে খুলে ফেলে। পরে পুলিশ কনস্টেবলের হাতে আঘাত করে পালিয়ে যায়।

তিনি বলেন, আমরা আইনগত ব্যবস্থা নিচ্ছি। কোতোয়ালি থানাকে জানানো হয়েছে আসামিকে গ্রেপ্তারের জন্য। তার বিরুদ্ধে মামলার প্রস্তুতি চলমান।

মন্তব্য

বাংলাদেশ
The 5th Annual Senate Meeting in the BUP

বিইউপিতে ১৭তম বার্ষিক সিনেট সভা অনুষ্ঠিত

বিইউপিতে ১৭তম বার্ষিক সিনেট সভা অনুষ্ঠিত

১৯ জুন ২০২৫ তারিখে বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালস (বিইউপি) এর ১৭তম বার্ষিক সিনেট সভা বিইউপির বিজয় অডিটোরিয়ামে অনুষ্ঠিত হয়। সভায় সভাপতিত্ব করেন বিইউপির উপাচার্য ও সিনেট চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল মোঃ মাহ্বুব-উল আলম, বিএসপি, এনডিসি, এএফডব্লিউসি, পিএসসি, এমফিল, পিএইচডি।

সভার শুরুতে বিইউপির উপাচার্য ও সিনেট চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল মোঃ মাহ্বুব-উল আলম বিদায়ী সদস্যদের ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন এবং নবনিযুক্ত সদস্যদের স্বাগত জানান। পরে বিইউপির ট্রেজারার এয়ার কমডোর মোঃ রেজা এমদাদ খান, জিইউপি, বিইউপি, এনডিসি, পিএসসি, জিডি(পি), ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরের সংশোধিত বাজেট ১৩৪ কোটি ৮ লক্ষ টাকা ও ২০২৫-২০২৬ অর্থবছরের ১৩৪ কোটি ৯৭ লক্ষ টাকার বাজেট উপস্থাপন করেন।

সিনেট সদস্যগণ ট্রেজারার এর বক্তৃতার ওপর আলোচনা করেন এবং সর্বসম্মতিক্রমে বাজেট প্রস্তাব অনুমোদন করেন। এছাড়াও সিনেট সভায় ১৭তম বার্ষিক প্রতিবেদন উপস্থাপিত ও সর্বসম্মতিক্রমে অনুমোদিত হয়। ১৭তম বার্ষিক সিনেট সভাটি সার্বিকভাবে সঞ্চালনা করেন বিইউপির রেজিস্ট্রার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোঃ রাব্বি আহসান, এনডিসি, পিএসসি।

সভায় সিনেট চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল মাহ্বুব তাঁর বক্তব্যে বলেন, বিইউপি বয়সে নবীন হলেও এর শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও গবেষকগণের বিভিন্ন প্রতিযোগিতা, সেমিনার, ওয়ার্কশপ ও গবেষণা ভিত্তিক কার্যক্রমের অর্জনসমূহ জাতীয় আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে সুনাম বয়ে আনছে। যুগোপযোগী শিক্ষা প্রদান, গবেষণা ও উদ্ভাবনী কার্যক্রমে বিশ্বমানের বিশ্ববিদ্যালয়ে উন্নিত হওয়ার লক্ষ্যে অত্র বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক একটি সুনির্দিষ্ট Academic Strategic Plan –২০৫০ প্রণয়ন করা হয়েছে।

Academic Strategic Plan এর মাধ্যমে পাঠ্যক্রমের আধুনিক মান নির্ধারণ, Outcome Based Education (OBE) কারিকুলাম প্রনয়ণ, গবেষণা, উদ্ভাবন, প্রকাশনা ও গবেষণা সহায়তার সক্ষমতা বৃদ্ধির উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।

মাননীয় উপাচার্য সকলকে অবহিত করেন যে বিইউপি’র গবেষণাভিত্তিক অগ্রযাত্রায় BUP Research Centre (BRC) অংঙ্গীভূত ফ্যাকাল্টি ও অধিভুক্ত প্রতিষ্ঠানসমূহে গবেষণা, উদ্ভাবন ও পরামর্শমূলক কার্যক্রমে গতিশীলতা আনার লক্ষ্যে কাজ করছে। 'Inspiring Innovation for Advancing Knowledge' শ্লোগানকে ধারণ করে, BUP Research Centre, গবেষকদের মানসম্মত গবেষণায় উৎসাহ দিচ্ছে এবং শিল্প-প্রতিষ্ঠান ও একাডেমিয়ার মধ্যে সংযোগ স্থাপনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।

এছাড়াও তিনি উল্লেখ করেন, দেশীয় ও আন্তর্জাতিক গবেষকদের গবেষণালব্ধ জ্ঞান প্রসারের উদ্দেশ্যে বিইউপি থেকে ৫টি জার্নাল প্রতিবছর নিয়মিত প্রকাশিত হচ্ছে যা সকলের মাঝে সমাদৃত। সিনেট চেয়ারম্যান আরও উল্লেখ করেন যে, শিক্ষার্থীদের শিক্ষার পাশাপাশি একজন সুশৃঙ্খল, নৈতিকতা সম্পন্ন সু-নাগরিক হিসেবে গড়ে তোলার ক্ষেত্রে বিইউপি বদ্ধপরিকর এবং সে লক্ষ্যে প্রতিনিয়ত কাজ করে যাচ্ছে। এছাড়াও শিক্ষার্থীদের চারিত্রিক গুণাবলি ও আত্মিক উন্নয়নের লক্ষ্যে সকল প্রোগ্রামের পাঠ্যক্রমে নৈতিক শিক্ষা অন্তর্ভুক্ত করার মাধ্যমে Need Based Education - কেও গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করা হচ্ছে। তিনি বলেন যে, আধুনিক শিক্ষাব্যবস্থায় শিক্ষার্থীদের মানসম্মত কারিকুলাম ও শিক্ষা পরিবেশের পাশাপাশি বৈচিত্র‍্যময় সাংস্কৃতিক সান্নিধ্যের গুরুত্বকে সামনে রেখে বিইউপি'তে বিদেশি শিক্ষার্থী ভর্তির প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। এছাড়া, নবপ্রজন্মের মধ্যে নৈতিক মূল্যবোধ, সততা, চরিত্র গঠন ও সমাজের প্রতি দায়বদ্ধতা এবং দেশপ্রেম জাগ্রত করতে পড়াশোনার পাশাপাশি বাংলাদেশের সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য, জাতীয় দিবসগুলোর তাৎপর্য ও মাহাত্ম্য তুলে ধরে বিইউপি’র বিভিন্ন আলোচনা সভা, সিম্পোজিয়াম, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজনের কথা উল্লেখ করেন।

এই সিনেট সভায় বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের সচিব, বাংলাদেশ সশস্ত্রবাহিনীর উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা এবং বিইউপির উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

মন্তব্য

বাংলাদেশ
BNP does not support the electoral college in the presidential election

রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে ইলেকট্রোরাল কলেজব্যবস্থা সমর্থন করে না বিএনপি

রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে ইলেকট্রোরাল কলেজব্যবস্থা সমর্থন করে না বিএনপি

রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে প্রস্তাবিত ইলেকট্রোরাল কলেজব্যবস্থাকে সম্পূর্ণ অগ্রহণযোগ্য বলে মন্তব্য করেছে বিএনপি। দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, ‘জনগণের ভোটাধিকার হরণে এই ব্যবস্থাকে আরেকটি ছলচাতুরী হিসেবে দেখা হচ্ছে।’

গতকাল বুধবার বিকালে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এমন মন্তব্য করেন।

তিনি বলেন, রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের জন্য কমিশনের যে প্রস্তাব তাতে একটা ইলেক্টোরাল কলেজ করা হবে। এবং প্রায় ওনাদের ভাষ্য অনুযায়ী ৭০ হাজারের মতো ভোটার থাকবে। ইউনিয়ন পর্যায় থেকে শুরু করে স্থানীয় সরকার পর্যায়ের প্রতিনিধিগণ এখানে ভোটার হবেন। এবং রাষ্ট্রপতিকে সৎ, দক্ষ ও অভিজ্ঞ একজন ব্যক্তিকে মনোনয়ন দেওয়ার জন্য ওখানে প্রস্তাব করা হয়েছে।

সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘জাতীয় সাংবিধানিক কাউন্সিল (এনসিসি) গঠনের প্রস্তাবে আগের মতোই একমত নয় বিএনপি।

এই কাউন্সিলের জবাবদিহি না থাকায় সমর্থন করে না বিএনপি। এই কাউন্সিলে আরেকটি ভারসাম্যহীন অবস্থা তৈরি হবে বলে মনে করি আমরা।’

স্বাধীন বিচারব্যবস্থার দাবি জানিয়ে সালাহউদ্দিন বলেন, ‘স্বাধীন বিচারব্যবস্থা হলে ভারসাম্যহীনতা দূর হবে, ফ্যাসিবাদ দমন করবে। প্রধানমন্ত্রী ও রাষ্ট্রপতির ক্ষমতার ভারসাম্য, অন্য সাংবিধানিক পদ, সংস্থা স্বাধীন করতে পারলে সমস্যা থাকবে না।’

বিএনপি মনে করে সুশাসন নিশ্চিত করতে ন্যায়পাল করা যেতে পারে। বিদ্যমান ব্যবস্থা বজায় রেখে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সংসদ হলে তাদের যোগ করা যেতে পারে, বলেন তিনি।

তিনি আরও বলেন, ‘নির্বাচন কমিশন আইন সংশোধন করা যেতে পারে। জবাবদিহি নিশ্চিত করতে হবে। বিএনপি মনে করে, দুদক ও মানবাধিকার কমিশনের মতো প্রতিষ্ঠান শক্তিশালী করতে বিদ্যমান আইনগুলো সংস্কারের প্রয়োজন।

মন্তব্য

বাংলাদেশ
Bhawal Chandipur Agrakhola road is like a death

ভাওয়াল-চন্ডিপুর-অগ্রখোলা সড়ক যেন মরণফাঁদ

চরম দুর্ভোগে এলাকাবাসী   
ভাওয়াল-চন্ডিপুর-অগ্রখোলা সড়ক যেন মরণফাঁদ

কেরানীগঞ্জের শাক্তা ও তারানগর ইউনিয়নের বুক চিরে চলা ভাওয়াল-চন্ডিপুর-অগ্রখোলা সড়কের বেহাল দশায় নিত্যদিন ভোগান্তিতে পড়ছে হাজারো মানুষ। দীর্ঘদিন ধরে সংস্কারের অভাবে সড়কজুড়ে এখন গর্ত আর ধুলাবালি। সামান্য বৃষ্টিতে কাদায় যানবাহন আটকে যায়, আর শুকনো মৌসুমে উড়ে ধূলোর ঝড়।

রাস্তাটির বেহাল অবস্থার কারণে প্রায় প্রতিদিনই দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছেন পথচারী ও যানবাহনের চালকরা। ছোট-বড় গর্তে হোঁচট খেয়ে পড়ে আহত হন অনেক পথচারী। অন্যদিকে, যানবাহন চলাচলের অযোগ্য এই সড়কে প্রতিনিয়তই নষ্ট হয়ে পড়ে ভ্যান, অটোরিকশা, ট্রাকসহ বিভিন্ন গাড়ি। আকিজ ফাউন্ডেশন স্কুল, মেকাইল মাদ্রাসা ও অগ্রখোলা কমিউনিটি হাসপাতালের সামনের অবস্থা এতটাই খারাপ যে মাঝে মাঝেই উল্টে যায় যাত্রী বোঝাই যানবাহন ।

সড়কের করুণ অবস্থার কারণে অনেক চালক ও পথচারী এখন পাশের বেলনা, কলাতিয়া ও নয়াবাজার হয়ে বিকল্প রাস্তায় যাতায়াত করছেন। এতে সময়, অর্থ ও দুর্ভোগ বাড়ছে।

এ সড়ক দিয়ে প্রতিদিন কেরানীগঞ্জ ছাড়াও নবাবগঞ্জ, দোহার, সিরাজদিখানসহ দক্ষিণবঙ্গের হাজার হাজার মানুষ মোহাম্মদপুর হয়ে রাজধানীতে প্রবেশ করে। অথচ বছরের পর বছর ধরে অবহেলায় পড়ে আছে সড়কটি।

স্থানীয় বাসিন্দা কবির হোসেন বলেন, ‘রাস্তাটার অবস্থা এমন যে, অটোরিকশা সিএনজিতে ওঠা মানেই কোমর ভাঙা। মাঝে মাঝেই যানবাহন পড়ে মানুষ আহত হয়। স্কুলের বাচ্চারা পর্যন্ত ভয়ে এই রাস্তায় যেতে চায় না। কোন এমপি-মন্ত্রী একবার এই রাস্তা দিয়ে গেলে বুঝত কষ্টটা কেমন।

একই ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন পণ্যবাহী ট্রাকচালক রাকিব হাওলাদার। তিনি বলেন, একবার গর্তে পড়লে গাড়ির যন্ত্রাংশ নষ্ট হয়ে যায়। ট্রাকে থাকা জিনিসপত্র পড়ে যায়, এভাবে থাকলে এই রাস্তা দিয়ে আর চলাচল করা সম্ভব নয়। এটি দ্রুত সংস্কার করা উচিত।

এ বিষয়ে কেরানীগঞ্জ উপজেলা প্রকৌশল অধিদপ্তরের উপ-প্রকৌশলী আব্দুল লতিফ বলেন, সড়কটি ইতোমধ্যে ডিপিপিতে অনুমোদন পেয়েছে। তাই এখন সংস্কার করা হচ্ছেনা। বছরের শেষ দিকে ২০ ফুট প্রশস্ত করে এবং আরও শক্তিশালী করে কাজ শুরু হবে। তখন রাস্তাটি আরো টেকসই হবে।

এদিকে এলাকাবাসীর দাবি, সংস্কার কাজ শুরুর আগ পর্যন্ত অন্তত গর্ত ভরাট করে সাময়িক চলাচলের উপযোগী করে তুলতে হবে। নইলে প্রতিদিন দুর্ঘটনার আশঙ্কা থেকেই যাচ্ছে।

মন্তব্য

বাংলাদেশ
Twenty four bucks the family of four runs a family of four

আড়াইশ টাকা আয়ে চারজনের সংসার চালায় কিশোর তোফাজ্জল!

আড়াইশ টাকা আয়ে চারজনের সংসার চালায় কিশোর তোফাজ্জল!

একটা ভাঙাচোরা বাইসাইকেলই তার ভরসা। এ সাইকেল চালিয়ে ১৫ কিলোমিটার দুরের দুর্গম খাসিয়া পল্লীতে কাজ করে দুই-আড়াইশ টাকা রোজগার করে কিশোর তোফাজ্জল (১৪)। মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার সীমান্তবর্তী ৯নং ইসলামপুর ইউনিয়নের কাঁঠালকান্দী গ্রামের আলী আহমেদ (৬৫) এর ছেলে তোফাজ্জল হোসেন। পরিবারে সে একমাত্র উপার্জনক্ষম। বাবা হার্টের রোগী, বোন আয়েশা খাতুন (২৫) মানসিক ভারসাম্যহীন আর বয়োবৃদ্ধ দাদী সমিতা বিবি (৮২) দীর্ঘদিন ধরে শয্যাশায়ী।

তোফাজ্জল কান্নাজড়িত কন্ঠে এ প্রতিবেদককে বলেন, প্রতিদিনি সকালে ভাঙাচোরা একটি সাইকেল নিয়ে ১৫ কিলোমিটার দুরের খাসিয়া পল্লীতে কাজে যাই। সন্ধ্যায় ফিরি। যা রোজগার হয়, দুবেলাও খেতে পাইনা। এ দুনিয়ায় আল্লাহ ছাড়া আমাদের আর কেউ নাই। প্রতিবেশী ফজল মিয়া, আবু শহীদ এ পরিবারের দুরাবস্থার কথা জানিয়ে বলেন, প্রকৃতই তারা খুব অসহায় ও মানবেতর জীবন কাটাচ্ছেন। তিনজনই অসুস্থ। মাঝে মধ্যে আমরা যতটা সম্ভব সহযোগিতা করার চেষ্টা করি।

সরেজমিন তোফাজ্জলদের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, সরকারি আবাসন প্রকল্পের ছোট্ট একটি ঘরে মেঝেয় জীর্ণ-শীর্ণ কাঁথায় শুয়ে আছেন সমিতা বিবি। অপুষ্টি আর ক্ষুধার যন্ত্রণায় ক্লান্ত। ঠিকমতো কথা বলতে পারছেন না। যা বললেন বোঝা গেলো, ডালভাত খেয়ে ঈদের দিন পার করেছি। ক্ষিদের জ্বালায় রাতে ঘুম আসে না। একরত্তি নাতি আর কিইবা করবে। তবু যা করছে আল্লাহর কাছে শুকরিয়া। চাল ডাল আনলে ওষুধ আনতে পারে না। তবু প্রায়ই অনাহারে থাকতে হয়। ঈদে চান্দে প্রতিবেশীরা কেউ খাবার দেয়, কেউ সামান্য টাকা-পয়সা দেয়। এইভাবেই টিকে আছি।

স্থানীয়দের সহযোগিতাই একমাত্র ভরসা। মানুষের সাহায্যে দুমুঠো ভাত খেতে পারেন, যদি কেউ সাহায্যে না করে তাহলে না খেয়েই থাকতে হয়। তার বিলাপে চোখে জল চলে আসে। এ যেন দারিদ্র্যের এক করুণ চিত্র। এই অসহায় নারীর জীবন কাটছে অভাব আর কষ্টে। পা ভেঙে এক বছর ধরে শয্যাশায়ী। ছেলে আলী আহমেদও হার্টের রোগী। কোন কাজকর্ম করতে পারেন না। তাই ১৩/১৪ বছরের নাতি তোফাজ্জলের কাঁধেই সংসারের ভার। দুর্গম খাসিয়া পুঞ্জিতে কাজ করে দিনে আয় করে দুই-আড়াইশ টাকা মাত্র। এ টাকায় দুবেলা খাবার যোগানোই মুশকিল। তার ওপর অসুস্থ দাদি, বাবা আর মরার উপর খাঁড়ার ঘা মানসিক প্রতিবন্ধী বড় বোন আয়েশা খাতুন।

ইসলামপুর ইউনিয়নের স্থানীয় ইউপি সদস্য ফারুক আহমেদ জানান, একসময় তাদের মাথা গোঁজার ঠাঁই ছিলো না। কয়েক বছর আগে সরকারি আবাসন প্রকল্পের মাধ্যমে এ পরিবারের জন্য একটি ঘরের ব্যবস্থা করা হয়েছে। সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তোফাজ্জলদের দুরাবস্থা জেনে অনেকে খাদ্য সামগ্রী দিয়ে তাদের সহায়তা করছেন। তবে বয়োবৃদ্ধ সমিতা বিবি ও মানসিক প্রতিবন্ধী আয়েশা খাতুনের সুচিকিৎসা ও তোফাজ্জলদের আত্মনির্ভরশীল হওয়ার ব্যবস্থা জরুরি।

মন্তব্য

p
উপরে