উপমহাদেশের অন্যান্য চলচ্চিত্র ইন্ডাস্ট্রির মতো, ঢাকাই চলচ্চিত্রে গানের বড় একটা ভূমিকা থাকায় স্বভাবতই ভালো গায়ক বা গায়িকার বড় প্রয়োজন আগেও ছিল, এখনো আছে। যারা দশকের পর দশক ঢাকাই চলচ্চিত্রের প্লেব্যাক জগতের প্রতিনিধিত্ব করছেন, তাদের মধ্যে অন্যতম রুনা লায়লা। দেশের সীমানার বাইরে তার খ্যাতি ছড়িয়েছে বৈচিত্র্যময় গায়কির জন্য। গজল, ফোক, ডিসকো, নজরুলগীতিসহ গানের বিভিন্ন ধারায় তার সাড়া জাগানো উপস্থিতির প্রমাণ মিলেছে বহুবার।
গোল্ডেন ডিস্ক, প্লাটিনাম ডিস্ক-জয়ী বিভিন্ন সুপার হিট অ্যালবাম তিনি করেছেন উর্দু আর হিন্দি ভাষায়। টিভি অনুষ্ঠান ও মঞ্চে রুনা লায়লার নিজেকে উপস্থাপন করার স্টাইল এখনো অনেক শিল্পীর অনুকরণীয়। এত কিছুর পরেও নিজেকে প্লেব্যাক গায়িকা হিসেবে পরিচয় দিতে ভালোবাসেন কিংবদন্তি এই শিল্পী।
১৯৫২ সালের ১৭ নভেম্বর সিলেটে জন্ম নেয়া রুনার শৈশব কেটেছে তদানীন্তন পশ্চিম পাকিস্তানে। বাবার চাকরিসূত্রে সেখানে থাকতে হয়েছিল তাকে। ১৯৬৪ সালে মাত্র ১২ বছর বয়সে লাহোরে জুগনু ছবিতে ‘গুড়িয়াছি মুন্নি মেরি’ গানের মাধ্যমে প্লেব্যাক জগতে পা রাখেন রুনা। ১৯৭০ সালে ঢাকার স্বরলিপি ছবিতে প্রথম বাংলা চলচ্চিত্রের জন্য গান করেন; গানটি ছিল ‘গানেরই খাতায় স্বরলিপি লিখে।’
১৯৭৪ সালে মুম্বাইয়ের ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে তার অভিষেক হয় এক সে বাড়কার এক ছবির মাধ্যমে। পাকিস্তান আর ভারতে উর্দু, হিন্দি, সিন্ধি, পাঞ্জাবি, পশতু ইত্যাদি ভাষায় প্রচুর গান গাইলেও, ঢাকার চলচ্চিত্র ইন্ডাস্ট্রিকেই তিনি বেছে নিয়েছেন তার মূল কর্মক্ষেত্র হিসেবে।
সময়ের পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের গান, এর সংকট ও সমাধানের পাশাপাশি এই শিল্পীর অসামান্য জীবনের নানা বাঁকের কথা উঠে এসেছে এই আলাপে। রুনা লায়লার মুখোমুখি হয়েছিলেন কবি আব্দুল্লাহ আল মুক্তাদির। ১৩ আগস্ট ২০১১ সালে নেয়া এ সাক্ষাৎকার প্রসঙ্গ ও সমসাময়িকতা বিবেচনায় এখনো প্রাসঙ্গিক।
আব্দুল্লাহ আল মুক্তাদির: ক্ল্যাসিকাল, সেমি-ক্ল্যাসিকাল ও গানের অন্যান্য ধারায় কিন্তু আপনি বিশেষভাবে খ্যাত; তারপরেও চলচ্চিত্রের গানকেই আপনি মূল কর্মক্ষেত্র হিসেবে নিয়েছেন। চলচ্চিত্রের গানের ক্ষেত্রে আপনার ভালো লাগা বা দুর্বলতা কতখানি?
রুনা লায়লা : চলচ্চিত্রের গানে একটা বড় সুবিধা হলো, এখানে সব ধরনের গান করার সুযোগ পাওয়া যায়। আধুনিক গান হোক, রোমান্টিক ধাঁচের হোক, সেমি-ক্ল্যাসিকাল হোক, ডিসকো, পপ, ফোক সবই আছে এর মধ্যে। এর প্রচারও অনেক বেশি। অনেক মানুষই চলচ্চিত্র দেখে বা যারা নাও দেখে রেডিওতে গানগুলো শোনে। আর আমি তো মূলত প্লেব্যাক সিঙ্গারই, ন্যাচারালি এর প্রতি একটা উইকনেস তো থাকবেই।
আব্দুল্লাহ আল মুক্তাদির: আপনি ভারত, পাকিস্তান, বাংলাদেশ তিন দেশের জন্যই প্লেব্যাক করেছেন। বাংলাদেশ ছাড়া বাকি দুটো দেশে বড় সুযোগ থাকা সত্ত্বেও আপনি ঢাকার চলচ্চিত্র ইন্ডাস্ট্রিকেই বেছে নিয়েছেন। ওই দুই দেশে আপনার অভিজ্ঞতাও যথেষ্ট। ওখানকার আয়োজন, বিশেষ করে সঙ্গীতায়োজনে আপনার বিশেষ কিছু ভালো লাগা নিশ্চয়ই আছে। আপনার এই অভিজ্ঞতাগুলোর কতখানি এখানে কাজে লাগাতে পেরেছেন?
রুনা লায়লা : আসলে তিন দেশে গানের স্টাইল বা ধারা একদম অন্য রকম। আমাদের এখানে মূলত বাংলা গানটাই বেশি হয়, মানে বাংলা স্টাইলেই বেশি হয়। তারপরেও বলব যে, এখানে আমি অনেক ধরনের গানই গাওয়ার সুযোগ পেয়েছি। আর যেহেতু আমি বাংলাদেশের গায়িকা, বাংলাদেশেই থাকি, সেহেতু স্বাভাবিকভাবেই বাংলা ছবিতেই আমার বেশি গান হয়েছে এবং হচ্ছে। আর ইন্ডিয়াতে ওরা হচ্ছে টেকনিক্যালি অনেক অ্যাডভান্সড। একটা গানের মধ্যে অনেক কিছু তারা অ্যাড করতে পারে। এবং অনেক ধরনের, সংখ্যায় অনেক অ্যাক্যুস্টিক ইন্সট্রুমেন্ট ব্যবহার করা হয়। যা আমাদের এখানে দুঃখজনকভাবে বলতে গেলে একদমই নেই, আর থাকলেও খুবই কম। তো অনেক মিউজিক ডিরেক্টরকে দেখেছি, তারা যেহেতু এখানে সেরকম ইন্সট্রুমেন্ট পায় না, ইন্ডিয়াতে গিয়ে রেকর্ড করে আনে, ট্র্যাক করে আনে।
আর পাকিস্তানের কথা বলতে গেলে, মূলত আমি ওইখানেই আমার ক্যারিয়ার শুরু করেছি। ফিল্মের গান প্রথম আমি ওখানেই গাই। এরপর অনেক বছর, অনেক ধরনের, অনেক সুরকারের সাথে আমি কাজ করেছি। ওই অভিজ্ঞতাগুলো আমি এখানে কাজে লাগাচ্ছি, যেহেতু আমার বেইজটাতে বেশ বৈচিত্র্য রয়েছে। আমি আগেই অনেক ধরনের গান গাওয়ার সুযোগ পেয়েছি পাকিস্তানে, যার কারণে ওই অভিজ্ঞতাটা আমি এখানে কাজে লাগাতে পারছি।
আব্দুল্লাহ আল মুক্তাদির: পাকিস্তানে আপনার চলচ্চিত্রের ক্যারিয়ারের প্রসঙ্গ যখন এলোই, তখন যার সঙ্গীত, যার নাম সবার আগে আসে, তিনি নিসার বাজমি। অনেক ভার্সেটাইল একজন সুরকার। বলা হয়ে থাকে আপনার এবং তার অসাধারণ একটা কেমিস্ট্রি ছিল। উনি ডিসকো, পপ, মডার্ন, ক্ল্যাসিকাল সব ধরনের গান আপনাকে দিয়ে করিয়েছেন চলচ্চিত্রে। ওনার সম্পর্কে জানাটা জরুরি। আমাদের দেশে ওনার সম্পর্কে জানাশোনা একটু কম।
রুনা লায়লা : আসলে নিসার বাজমি সাহেব তো ওনার ক্যারিয়ার শুরু করেছিলেন ইন্ডিয়াতে। এবং আমি যখন ১৯৭৪ সালে প্রথমবার লক্ষ্মীকান্ত-পেয়ারালালজির গান করতে যাই, লক্ষ্মীকান্তজি আমাকে বললেন যে, নিসার বাজমি সাহেবের সুরে আমার করা কিছু গানের ক্যাসেট ওনাদের কাছে ছিল; লক্ষ্মীকান্তজির কাছে। আমি জিজ্ঞেস করায় উনি বললেন, বাজমি সাহেব তো আমাদের গুরু। উনি যখন এখানে সুর করতেন আমরা তখন মিউজিশিয়ানস ছিলাম, ওনার সাথে অনেক কাজ করেছি। খুব শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করলেন বাজমি সাহেবকে।
আর বাজমি সাহেব বেসিক্যালি এত ধরনের গান আমাকে দিয়ে গাইয়েছেন যে, আমার মনে হয়, আমার ভয়েজটাকে উনিই একমাত্র পুরোপুরি ইউটিলাইজ করেছেন। অনেক সময় আমি নিজেও জানতাম না যে আমি এই ধরনের গান গাইতে পারব, কিন্তু উনি ঠিকই বের করে নিয়েছেন আমার কাছ থেকে। ওনার মধ্যে ওই জিনিসটা ছিল। উনি বুঝতে পারতেন যে, কোন আর্টিস্টকে দিয়ে কোন গান গাওয়ালে সে ভালো করবে।
আমাকে উনি সব সময় বলতেন, তুমি একজন ভার্সেটাইল সিঙ্গার, তুমি সব ধরনের গানই গাইবে। সব ধরনের গানই উনি আমাকে দিয়ে গাইয়েছেন। এবং ওনার অসাধারণ কিছু কম্পোজিশনে আমি গাওয়ার সুযোগ পেয়েছি। যার জন্যে এখনো ওই গানগুলো মানুষ শুনতে চায়। ‘দিল ধারকে’ যে রকম, তারপরে ‘আপ দিলকি আঞ্জুমান মে’, ‘কাটে না কাটেরে রাতিয়া’। ভিন্ন ধরনের গান কিন্তু সবগুলো, প্রত্যেকটার আলাদা একটা আপিল আছে। উনি যে অর্কেস্ট্রেশন, যে অ্যারেঞ্জমেন্টগুলো করতেন, ওই অ্যারেঞ্জমেন্টগুলো বোধ হয় এই সাব-কন্টিনেন্টে কম হয়েছে। হি ওয়াজ ওয়ান অব দ্য লিডিং মিউজিক ডিরেক্টরস। খুব জিনিয়াস একটা লোক।
অনেক কাজ করেছি আমরা একসঙ্গে। আমাকে এত গান গাওয়ানোর জন্য ওনাকে অনেক প্রবলেম ফেইস করতে হয়েছে। অনেক আর্টিস্ট রাগ করেছেন। কিন্তু আমার উপর ওনার খুব বিশ্বাস ছিল। আমাকে দিয়ে তিনি সব ধরনের গান গাইয়ে ছেড়েছেন। তখন আমার বয়সও অনেক কম ছিল। অনেক সময় আমি বলতাম, বাজমি সাহাব, এই গানটা অনেক কঠিন, আমি পারব না গাইতে। উনি বলতেন, পারবে না কেন? অবশ্যই পারবে। উনি আমার ভিতরের সম্ভাবনাটাকে, অ্যাবিলিটিটাকে চিনতে পেরেছিলেন।
আব্দুল্লাহ আল মুক্তাদির: সেই তুলনায় আমাদের সঙ্গীতায়োজনের সমস্যা কী? বিশেষ করে ৯০-এর দশকের মাঝামাঝি থেকে কিন্তু বৈচিত্র্যের অভাবসহ আরও অনেক ধরনের সংকট দেখা গেছে। ২০০০ সালের দিকে আপনার ঘোষণা মনে হয় পত্রিকায় এসেছিল যে, আপনি আর নিয়মিত গাইবেন না। এরপর কিন্তু সংকটটা আরও বেড়েছে।
রুনা লায়লা : আসলে মাঝখানে আমাদের ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির অবস্থা, ছবির যে অবস্থা ছিল; খুব খারাপ একটা সময় গেছে। শুধু গানের ক্ষেত্রেই না, আমি বলব ফিল্মের সব ক্ষেত্রেই খুব বাজে একটা সময় গেছে এবং সেটাকে কাটিয়ে উঠতেই অনেক সময় লেগেছে। আস্তে আস্তে এখন ভালো ভালও ছবিও কিছু হচ্ছে, ভালও গানও কিছু বেরোচ্ছে।
আর আমাদের মেইন প্রবলেম হচ্ছে যে, বড় ধরনের টেকনিক্যাল সাপোর্ট নেই; প্লাস আমাদের অ্যাকুস্টিক ইন্সট্রুমেন্টের একটা অভাব আছে। আমার মনে হয় যে, আমাদের অ্যাক্যুস্টিক ইন্সট্রুমেন্টের প্লেয়ার ছিল, কিন্তু তাদের সেভাবে ইউটিলাইজ করা হয় নাই। যার কারণে, আস্তে আস্তে ওই ফ্লোটা মরে গেছে। পুরো গানের সবকিছু একজনই করছে, একজনই সবকিছু বাজিয়ে দিচ্ছে। এভাবে তো আসলে মজাটা থাকে না। ভায়োলিন থাকল, ফ্লুট থাকল, সান্তুর বা সেতার থাকল, সারেঙ্গি থাকল। এসব কিন্তু আর শোনাই যায় না, গেলেও খুব কম। আর এখন কাজ যেটা হচ্ছে সেটা ঝটপট করে ফেলা।
আগে তো আমরা মিউজিক ডিরেক্টরের সাথে একটা গান তিন দিন রিহার্সেল করতাম, তারপরে দুই দিন মিউজিশিয়ানদের সাথে ফুল রিহার্সেল হতো; তারপরে আমরা রেকর্ডিংয়ে যেতাম। রেকর্ডিং লাইভ হতো, ইন্সট্রুমেন্টসহ। একটা গান করতে সারা দিন, অনেক সময় সারা রাতও লেগে যেত। লাইভ ছিল, তাই কেউ একজন ভুল করলে আবার নতুন করে শুরু করতে হতো।
এখন ওই ডেডিকেশনটাও কমে গেছে, কাজের যে একটা ফ্লো ছিল, সেটাও নেই। আমরাও এখন অনেকটা লেজি হয়ে গেছি। একবার একটা লাইন গাইলাম, ঠিক হলো না, আচ্ছা আর একবার করে নিই; বা মুখটা গাইলাম আর দরকার নাই। কাট্ অ্যান্ড পেস্ট করে শেষে ওটাই লাগিয়ে দেব। এখন তো কাট অ্যান্ড পেস্টের যুগ।
আব্দুল্লাহ আল মুক্তাদির: কাট অ্যান্ড পেস্ট করলে কিন্তু গানের এসেন্সটা নষ্ট হয়ে যায়। যেমন আপনার ক্ষেত্রে আমরা খেয়াল করেছি, আপনি একটা লাইন শুরুতে যেভাবে গান, পরে আবার অন্য যেকোনো জায়গায় লাইনটা এলে আর ওভাবে গান না। গানের ক্ষেত্রে শেষ করা শুরু করার ধরনটা কিন্তু আলাদা।
রুনা লায়লা: হ্যাঁ। আমি সেইজন্য চেষ্টা করি পুরোটাই করার, পুরো গানটাই আমি গাই। পারতপক্ষে তাই কাট অ্যান্ড পেস্ট করতে দিই না। কাট অ্যান্ড পেস্টে ইমোশনটাও অনেক কমে যায়।
আব্দুল্লাহ আল মুক্তাদির: আপনি, সাবিনা ইয়াসমীন; আপনারা যখন ৬০-এর দশকের শেষে বা ৭০-এ আসলেন, অনেক বড় মাপের গায়ক-গায়িকাদের উত্তরাধিকার হিসেবে। আপনারা কিন্তু জনপ্রিয়তা বা যোগ্যতায় আগের সবাইকে একরকম ছাড়িয়ে গেলেন। আপনাদের পরে এত দিন চলে গেল, একটা শিল্পীও আসে নাই, যারা ছাড়িয়ে যাওয়া দূরে থাক, আপনাদের সাথে তুলনায়ও যেতে পারে। এরকম হওয়ার কারণটা কী?
রুনা লায়লা: এটার কারণ আসলে খুঁজে বের করা খুবই কঠিন, কেন আসেনি। এমনকি ভারতেও, লতাজি, আশাজির পরে ওই মাপের সিঙ্গার তো আর আসেনি। হ্যাঁ, অনেক ভালো সিঙ্গার আছে, কিন্তু ওই জিনিস তো আর হবে না। যে রকম পাকিস্তানে ম্যাডাম নূরজাহানের পরে অনেক সিঙ্গার এসেছে, ভালো গান করেছে কিন্তু তার মতো আর আসেনি। আমার মনে হয় আমাদের এখানেও ব্যাপারটা অনেকটা ওই রকম। আমাদের এখানে সুযোগের অভাবেও অনেক ট্যালেন্ট বেরিয়ে আসতে পারছে না। ওই প্ল্যাটফর্মও পাচ্ছে না। কারণ মিউজিক ডিরেক্টররা নতুনদের গাওয়াতে ভয় পাযন।
আমি অনেক সময় অনেক মিউজিক ডিরেক্টরকে, প্রডিউসারকে বলি নতুনদের দিয়ে গাওয়ান না কেন? আমরা তো অনেককাল গাইলাম। তারা বলে, ‘ম্যাডাম, ওই জিনিস তো হবে না।’ আমার কথা হলো, ওই জিনিস না হোক, ওরা ওদের মতন করে অন্যকিছু দিক। এখন যদি মাথার মধ্যে সব সময় ওইটাই থাকে যে সাবিনা-রুনার মতো হতে হবে, তাহলে তো অন্য কেউ আর আসতে পারবে না। সেই সুযোগটা তো ওদের করে দিতে হবে।
আব্দুল্লাহ আল মুক্তাদির: ক্ল্যাসিকাল গানের ব্যাপারে আসা যাক। পাকিস্তানের চলচ্চিত্রের গানের একটা বিশেষ বৈশিষ্ট্য ক্ল্যাসিকাল-বেইজড গানের ব্যবহার। আপনিও পাকিস্তানের চলচ্চিত্রে অনেকগুলো এই ধরনের গান করেছেন। কিন্তু বাংলাদেশে এই রকম গানের ব্যবহার কম। হাতেগোনা ছবি আনারকলি, মহানায়ক বা রাজলক্ষ্মী–শ্রীকান্ত ছাড়া খুব একটা দেখা যায় না। রিসেন্টলি রূপকথা’র গল্পের ‘কার তরে নিশি জাগো রাই’ গানটি হয়েছে। এ রকম গানের ব্যবহার খুব একটা হয় না কেন?
রুনা লায়লা : বাংলাদেশি ছবিতে ক্ল্যাসিকাল গান যত হয়েছে, তার ম্যাক্সিমাম গাওয়ার সুযোগ আমার হয়েছে। আমার বেইজটা ক্ল্যাসিকালের ছিল। আর পাকিস্তানে থাকাকালীন যেসব গান গেয়েছি, যাদের গান গেয়েছি, ওরা অনেক ক্ল্যাসিকাল বেইজড গান করত। এদেশেও হয়েছে এই রকম গান। কিন্তু অনেক কম। কারণ, এখানে গানের ধারাটাই অন্যরকম। ওখানে যে রকম ক্ল্যাসিকালকে নিয়ে ওরা খেলা করে।
আর এখানে যদি কোনো সিকোয়েন্স থাকে, যদি দরকার পড়ে, তাহলেই কেবল এ ধরনের গান দেয়া হয়। আদারওয়াইজ এখানে সেমি-ক্ল্যাসিকাল গানও হয় না। এবং ‘কার তরে নিশি জাগো রাই’ এই গানটার কথা যখন আমাকে প্রথমে বারী (বারী সিদ্দিকী) বলল, ‘ম্যাডাম, একটা ক্ল্যাসিকাল গান আছে ফিল্মের জন্য, আপনি কি গাইবেন?’ আমি বললাম, ‘গাইব না কেন? শুনি আগে একটু।’ তারপর ও এল বাসায়। গানটা শুনলাম। গানটা তো আমার আগেই শোনা ছিল। বাড়ে গুলাম আলী সাহাবের গাওয়া ‘বাজুবন্দ খুর খুল যায়’ ছিল ওই সুরের। শুনিয়ে ও আমাকে জিজ্ঞেস করল গাইবে নাকি। বললাম, অবশ্যই গাইব। সাংঘাতিক ভালো গান! কঠিন গান! খুবই কঠিন।
যাই হোক, ভালোয় ভালোয় পার করা গেল। বারী একটা কথা বলল, ‘এই গানটা, ম্যাডাম আপনি যদি বলতেন গাইবেন না, তাহলে এখানে আর হতো না। আমাকে ইন্ডিয়াতে যেতে হতো।’ এই গানটা আমি গেয়েছিও একটু অন্য স্টাইলে। একদম ঠুমরী, টপ্পা গানগুলোর গায়কি যে রকম হয়, সেই রকম করে গাওয়ার চেষ্টা করেছি।
আব্দুল্লাহ আল মুক্তাদির: ১৯৭৭ সালে যখন প্রথম স্বাধীনতা পুরস্কার দেওয়া হলো, তখন বলা চলে, বাংলা চলচ্চিত্র শিল্পের গানের জন্য একটা বড় রকমের স্বীকৃতি এসেছিল। একজন প্লেব্যাক গায়িকাকে কাজী নজরুল ইসলাম, জয়নুল আবেদিন বা মাওলানা ভাসানীর মতো মানুষদের সাথে পুরস্কৃত করা হলো। কিন্তু এই ধরনের স্বীকৃতি আপনার ক্ষেত্রে বা অন্য কারও ক্ষেত্রে কিন্তু পরে গিয়ে আর কন্টিনিউ করেনি। একুশে পদক কিন্তু আপনাকে এখনো দেয়নি। তো এই ব্যাপারগুলো চলচ্চিত্রের গানের জন্য কতখানি, আপনি কীভাবে দেখেন?
রুনা লায়লা : আমি একটা জিনিস বলব যে, স্বাধীনতা পুরস্কার আমাকে দিয়েছে বিজ্ঞ লোকদের সঙ্গে, অনেক বড় মাপের মানুষদের সাথে। তখন আমি বয়সেও ছোট বা এক্সপেরিয়েন্সেও ছোট। তবু কন্ট্রিবিউশনের জন্যে, এটা মাথায় রেখে হয়তো দিয়েছে। কিন্তু পরবর্তীতে ওর সাথে যে সম্মানটা আসা উচিত ছিল, যেমন ভিআইপি পাওয়া, ওইটা কিন্তু আমি এখনো পাইনি। ভিআইপি স্ট্যাটাসও পাইনি, সিআইপি স্ট্যাটাসও পাইনি।
আমি একজন সাধারণ নাগরিক হিসেবে ট্রাভেল করি, আসি-যাই। আমাকে সাধারণ মানুষ অনেক সম্মান দেয়, শ্রদ্ধা করে। কিন্তু কোনো সরকারের কাছ থেকেই ওই স্বীকৃতিটা, পদকের সাথে যেই স্বীকৃতি আসার কথা, সেটা আসেনি। এটা আমার একটা বিরাট দুঃখ।
আমার মনে হয়, আমি যতটুকুই করতে পেরেছি আমার দেশের জন্য, আমার দেশের গানকে নিয়ে বাইরের দেশে যতটা পারি রিপ্রেজেন্ট করতে, সেটুকু আমি করেছি। স্ট্যাটাসটা আদৌ কখনো আসবে কি না জানি না। এটা একটা বিরাট দুঃখ আমার মনে। আমরা দেখি, নতুন, ইয়াং অনেক ক্রিকেটারও ভিআইপি পাচ্ছে। কিন্তু অনেক জাতীয় পুরস্কার, স্বাধীনতা দিবস পদক বা একুশে পদক যারা পেয়েছেন, তারা অনেকেই কিন্তু এ দিক থেকে পিছিয়ে আছেন। তাদেরকে কোনোরকম সম্মানজনক স্বীকৃতি কিন্তু কোনো সরকারই দেয়নি। এটা খুব দুঃখজনক।
আর এরপরে ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির গানের জগত থেকে আর কাকে দিয়েছে বা না দিলে কেন দেয় নি- এটা আমি বলতে পারব না। যারা কমিটিতে আছেন, তারাই ঠিক করেন কাদের দেবেন।
আব্দুল্লাহ আল মুক্তাদির: আপনি যখন চলচ্চিত্রে গান করেন, আপনার একটা বিশেষ খ্যাতি আছে; তা হলো গানের, সুরের বৈচিত্র্য। বিভিন্ন রকম ভয়েজে আপনি গান করতে পারেন। এটা কি বিশেষ কোনো স্ট্র্যাটেজি? আপনার গলা মাঝে মাঝে যার উপর পিকচারাইজড হচ্ছে, তার সাথে এত বেশি মিলে যায় যে মনে হয় ওই অভিনেত্রী নিজেই গাচ্ছেন। আপনি কি পারসোনালি অভিনেত্রীদের চিনে জেনে তারপর গান করেন?
রুনা লায়লা : আসলে পাকিস্তানে থাকতে, ইন্ডিয়াতে বা এখানেও আমি যেকোনো গান গাওয়ার আগে জিজ্ঞেস করে নিই, গানটা কার উপরে পিকচারাইজড হবে। শবনম, রানীর উপরে হবে, না আমাদের এখানে শাবনূর, মৌসুমী বা ববিতার উপরে হবে? কার উপরে যাবে? তার কথা চিন্তা করে, সে কী ধরনের এক্সপ্রেশন দেবে বা তার মুভমেন্ট কেমন হবে এসব মাথায় রেখে আমি গানটা ওই স্টাইলেই করি। আর চেষ্টা করি, গানের মধ্যে নব্বই ভাগ এক্সপ্রেশন দিয়ে দিতে, আর বাকি দশ ভাগ ওদের নিজেদের দিতে হয়। এতে করে ওদের খাটুনিটাও কমে যায়।
আব্দুল্লাহ আল মুক্তাদির: কিন্তু অনেক সময় এত বেশি মিলে যায় যে অবাক লাগে, প্রিয়শত্রু ছবিতে দিতির লিপে; ‘চিঠি কেন আসে না’ বা ‘তুমি আজকে যাও বন্ধু’ এসব গানের ভিডিও দেখলে মনে হয় ভয়েজটা দিতির নিজের! কিংবা মৌসুমীর ‘কাল তো ছিলাম ভালো’…
রুনা লায়লা : মৌসুমী, শাবনূর সবার জন্যই তো গেয়েছি। কিন্তু সব থেকে মজার ব্যাপার যেটা, সেটা হলো, মৌসুমী বলো, শাবনূর বলো, পপি সবারই কিন্তু প্রথম ছবির প্রথম গানটি কিন্তু আমার গাওয়া।
আব্দুল্লাহ আল মুক্তাদির: দিতি, শাবনাজ এদেরও। ‘বন্ধুর বাঁশি বাজেরে, আমার কানে কানে’!
রুনা লায়লা : হ্যাঁ।
আব্দুল্লাহ আল মুক্তাদির: পুরোনো গানের রিমেক বা রিমিক্স প্রসঙ্গে আসি। যেসব পুরোনো গান রিমেক করে বা রিমিক্স করে, আবার বাজারে আনা হয়। দেখা যায়, অনেক ক্ষেত্রেই নতুন গানের চেয়ে বেশি জনপ্রিয় হয়। এতবার শোনা চলচ্চিত্রের সেইসব গানের এত গ্রহণযোগ্যতার ভিত্তি আসলে কী?
রুনা লায়লা: এটা কিন্তু শুধু বাংলাদেশেই হয়; এমন না। ইন্ডিয়ার গানগুলো দ্যাখো, সেই পুরোনো গানগুলোই কিন্তু আসছে ঘুরে-ফিরে। ইয়াং জেনারেশন নিয়ে যতগুলো কম্পিটিশন হচ্ছে, সেই লতাজি, আশাজির, মুকেশজি, কিশোরদার, রাফি সাহাবের গানগুলোই সবাই গাইছে এবং সেগুলো এখনো অনেক পপুলার গান! আগে, আমার মনে হয়, কম্পোজিশন সবকিছু মিলিয়ে পুরো জিনিসটাই এমনভাবে পরিবেশন করা হতো যে যুগের পর যুগ চলছে। এবং আরও চলবে। দেখবে তোমার পরে যারা আসবে তারাও ঐ গানগুলোকে নেবে।
এখানে আমার একটা কথা বলার আছে, গানগুলো যে রিমেক, রিমিক্স হচ্ছে এগুলো যদি অরিজিনাল আর্টিস্টকে দিয়েই আবার করানো হয়, আমার মনে হয় অনেক ভালো হতো। অনেক সময় রিমেক, রিমিক্স করতে গিয়ে গানগুলো ঠিক ওই রকম হয়ও না। আবার অনেক কিছু ওর মধ্যে ঢুকিয়ে দেয়। যেগুলো শুনতেও ভালো লাগে না। অমনই নাকি চলে! তারপরেও আমার মত হলো, অরিজিনাল আর্টিস্টকে দিয়ে গাওয়াতে পারলেই সবচেয়ে ভালো।
আব্দুল্লাহ আল মুক্তাদির: গানের কথায়, সঙ্গীতায়োজন নিয়ে আপনি হয়তো বিভিন্ন সময় বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন হয়েছেন। শিল্পীসহ নানা সংকট নিয়ে বা এগুলোর সমাধান নিয়ে চিন্তা নিশ্চয়ই আপনার মাথাতেও এসেছে।
রুনা লায়লা: এক নম্বর কথা হলো, সবার আগে যেটা দরকার, নতুন শিল্পীদের সুযোগ দিতেই হবে। আমাদের ঘরে নতুন শিল্পী তৈরি রাখতেই হবে। এছাড়া কোনো উপায় নেই। শুধু নতুন শিল্পী হলেই হবে না, মান থাকতে হবে। ভালো শিল্পী তৈরি করতে হবে। অনেক প্রতিভাবান ছেলেমেয়ে, অনেক ক্ষেত্রেই সুযোগ পাচ্ছে না। সুযোগের অভাবে অনেকে বেরিয়ে আসতে পারছে না। এদেরকে যদি সবাই মিলে সুন্দর সুযোগ করে দিই আমরা, আমার মনে হয়, আরও অনেক ভালো শিল্পী আমাদের এখানে হবে। অনেকে আবার মনে করতে পারে আগের জনদের মতো তো হবে না। আসলে কেউ কারও জায়গাটা নিতে পারে না, যার যার স্থানে সে সে আছে। কেউ আর রুনা-সাবিনা হতে পারবে না।
যে যার নিজস্ব একটা পজিশন গড়ে নিয়েছে। এরপর যারা আসবে, তারা তাদের মতো পজিশন করে নেবে। এর জন্য প্রচুর সাধনা, ডেডিকেশন দরকার। সত্যিকার অর্থে গান ভালোবাসতে হবে। আমরা এত বছর পার করে এসে এখন মোটামুটি একটা পজিশনে এসে দাঁড়িয়েছি। কিন্তু এর পিছনে যে কত খাটুনি, কত পরিশ্রম, কত ত্যাগ! কতকিছু করে তারপর আমরা এখানে এসেছি। তো এই জিনিসটা যারা নতুন আসছে তাদের মাথায় থাকা দরকার। তাদের আমি বলব যে, টাকা অনেক আসবে জীবনে। কিন্তু টাকাটাই বড় না।
ইচ্ছা যদি থাকে, যদি সাধনা থাকে, সত্যিকার অর্থে গানবাজনা মনে এনে গান করলে তারপরে একসময় কাজ পাবে। কাজ পেলে টাকাও আসবে। আর আমি টাকার জন্য গাইব, এটা মাথায় রেখে যদি নামি গানের জগতে, তাহলে কিন্তু হবে না। তবে এখন বেশির ভাগেরই আমি এই প্রবণতা দেখি। আমি কাউকে ছোট করার জন্য বলছি না বা সবার বেলায় বলব না। কিন্তু বেশির ভাগই চিন্তা করে কটা শো করা যায়, কত টাকা আমি পাচ্ছি। একজন তরুণ শিল্পী একদিন আমার সাথে গান গাইছিল, তাকে আমি জিজ্ঞাসা করলাম, ‘তুমি গান শিখ?’
বলে, ‘না।’
বললাম, ‘রেওয়াজ করো?’
বলল, ‘না।’
বলি, ‘তাহলে তুমি গাও কী করে?’
বলে, ‘যা জানি তাই গাই। এমনিতেই আমি শো করছি, সুযোগ পাচ্ছি, গান শেখার আর দরকার তেমন পড়ে না।’
এ রকম মানসিকতা হলে তা খুবই হতাশার ব্যাপার!
আব্দুল্লাহ আল মুক্তাদির: প্রিয় শিল্পী, আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।
রুনা লায়লা: তোমাকেও অনেক ধন্যবাদ।
কবি আব্দুল্লাহ আল মুক্তাদিরের জন্ম সিরাজগঞ্জে, ১৯৯০ সালে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজি সাহিত্যে পড়াশোনা শেষ করে এখন শিক্ষকতা করছেন ত্রিশালের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগে। দৈনিক সংবাদের সাহিত্য পাতায় ছোটগল্প ও কবিতা প্রকাশের মাধ্যমে আত্মপ্রকাশ ২০১০ সালে । এখন পর্যন্ত প্রকাশিত কবিতার বই দুইটা, অন্য গাঙের গান, সমুদ্রসমান (২০১৬) ও যুদ্ধ যুদ্ধ রুদ্ধ দিন (২০২০)। প্রথম গল্প সংকলন বছরের দীর্ঘতম রাত প্রকাশিত হয়েছে ২০১৯ সালে।
ইলিশের উৎপাদন একদিকে কমছে, এতে প্রাকৃতিক কারণও রয়েছে। নদীর নাব্যতা কমে যাচ্ছে, মেঘনা নদীর অববাহিকায় দূষণের মাত্রা বেড়েছে। আবহাওয়া পরিবর্তনের কারণে বৃষ্টি না হলে ইলিশ মাছ ডিম পাড়তে পারে না। পাশাপাশি বিভিন্ন প্রকৃতিক কারণ ও তথাকথিত উন্নয়নের কারণে নদী ভরাট ও দখল হয়ে যাচ্ছে। এমন মন্তব্য করেছেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফরিদা আক্তার। বরিশাল ক্লাব প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠিত উপকূলীয় এলাকার মহিষের চারণভূমি ও উন্নয়নের সমস্যা এবং সাধন শীর্ষক জাতীয় কর্মশালা-২০২৫-এ প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ মন্তব্য করেন।
তিনি বলেন, ইলিশ একটি মাইগ্রেটরি মাছ এটি সমুদ্র থেকে নদীতে আসে এবং আবার ফিরে যেতে হয়। কিন্তু বর্তমানে তা হচ্ছে না। সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো ঝাটকা নিধন। কোস্টগার্ড ও নৌবাহিনী অভিযান চালালেও এটি সম্পূর্ণভাবে বন্ধ করা যায়নি। এছাড়া অবৈধ জালের ব্যবহার ইলিশের প্রাপ্যতা কমাচ্ছে। তবে এসবের বিরুদ্ধে আমরা কার্যকর ব্যবস্থা নিচ্ছি। আশা করছি খুব শীঘ্রই ইলিশের দাম নিয়ন্ত্রণে আসবে।
তিনি জানান,খুব শীঘ্রই ঢাকায় একটি মিটিং অনুষ্ঠিত হবে, যেখানে নদী থেকে মাছ ধরে হাত বদলের সিন্ডিকেট বন্ধ করার পরিকল্পনা গ্রহণ করা হবে। এ উদ্যোগের মাধ্যমে সাধারণ মানুষ সরাসরি বাজারে মাছ পাবে এবং সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণে আসবে।
ফরিদা আক্তার বলেন, উপকূল এলাকায় মহিষের চারণভূমি সংকুচিত হয়ে গেছে। আমরা গবেষণায় দেখেছি এর পেছনে নানা কারণ রয়েছে। বাড়িঘর তৈরি হচ্ছে, এমনকি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোও নির্মিত হচ্ছে। আমাদের দেশে গরু, ছাগল ও মহিষ পালন অন্তত মানুষের খাদ্য ও জীবন রক্ষার জন্য জরুরি। চারণভূমি বিষয়ে আমরা দেখছি যে অনেক কিছু পরিকল্পনা বিহীনভাবে তৈরি হচ্ছে। এতে মহিষের মতো গুরুত্বপূর্ণ সম্পদ ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে। তবে সঠিক নীতি ও ব্যবস্থা নিলে এটি দেশের খাদ্য নিরাপত্তায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারবে।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন,পিকেএসএফ উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক ড. ফজলে রাব্বি সাদেক আহমেদ, বরিশাল বিভাগীয় প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক ড. মোঃ মোস্তাফিজুর রহমান, জিজেইউএস নির্বাহী পরিচালক জাকির হোসেন মহিন। সভাপতিত্ব করেন প্রফেসর ড. ওমর ফারুক, প্রেসিডেন্ট।
বক্তারা বলেন, নদী ও সমুদ্রের টেকসই ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে ইলিশ উৎপাদন বৃদ্ধি করা সম্ভব। মৎস্যজীবী, প্রশাসন ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান একত্রিতভাবে কাজ করলে মাছ চাষ ও সংরক্ষণ কার্যকর হবে।
এছাড়া তারা বলেন, উপকূলীয় এলাকায় মহিষ পালনের সম্ভাবনা অনেক, তবে জলবায়ু পরিবর্তন, চারণভূমির অভাব ও বাজার ব্যবস্থাপনার দুর্বলতা খাতটির উন্নয়নকে বাধাগ্রস্ত করছে। গবেষণা ও আধুনিক প্রশিক্ষণের মাধ্যমে মহিষ পালনকে লাভজনক ও টেকসই খাতে রূপান্তর করা সম্ভব।
শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিব এএইচএম সফিকুজ্জামান এর সভাপতিত্বে আজ রাজধানীর একটি হোটেলে আন্তর্জাতিক শ্রম মান বিষয়ক ত্রিপক্ষীয় কমিটির প্রথম সভা অনুষ্ঠিত হয়।
সভায় শ্রম সচিব বলেন, বাংলাদেশ ইতোমধ্যে আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) ৩৬টি কনভেনশন ও একটি প্রটোকল অনুমোদন করেছে। আইএলও সংবিধান অনুযায়ী, অনুমোদিত ও অননুমোদিত উভয় ধরনের সনদের প্রয়োগ সংক্রান্ত প্রতিবেদন দাখিল করা সকল সদস্য রাষ্ট্রের জন্য বাধ্যতামূলক। এই কমিটি আইএলও কনভেনশন ১৪৪-এর বাধ্যবাধকতার আলোকে বাংলাদেশ কর্তৃক প্রস্তুতকৃত প্রতিবেদনে মালিকপক্ষ ও শ্রমিক সংগঠনগুলোর মতামত, পরামর্শ ও সুপারিশ নিশ্চিত করবে।
সচিব আরও উল্লেখ করেন যে, আইএলও এর ১১টি কনভেনশন (C-01, C-14, C-19, C-81, C-89, C-100, C-106, C-111, C-118, C-138, MLC-2006) নিয়ে আলোচনা করা হয়। এগুলোর মধ্যে C-81 (শ্রম পরিদর্শন), C-100 (নারী ও পুরুষের সমান পারিশ্রমিক), C-111 (কর্মসংস্থান ও পেশায় বৈষম্য) এবং C-138 (ন্যূনতম কাজের বয়স) বিষয়ক চূড়ান্ত প্রতিবেদন আইএলও সংবিধানের ২২ নং অনুচ্ছেদ অনুযায়ী বাধ্যতামূলকভাবে খুব দ্রুত আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার জেনেভাস্থ প্রধান কার্যালয়ে প্রেরণ করা হবে।
সভায় শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা, আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার প্রতিনিধি নিরান রাজমুঠান, কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের এবং শ্রম অধিদপ্তরের কর্মকর্তা, ইমপ্লোয়ার্স ফেডারেশন এর প্রতিনিধি , ইন্ডাস্ট্রি অল বাংলাদেশ এর প্রতিনিধি , বেপজা প্রতিনিধি , NCCWE এর প্রতিনিধি উপস্থিত ছিলেন।
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতার বলেছেন, গবাদিপশু পালন প্রোটিন ঘাটতি নিরসন, মানুষের জীবন-জীবিকা রক্ষা এবং জাতীয় খাদ্য নিরাপত্তার জন্য অপরিহার্য। অথচ অপরিকল্পিত উন্নয়নের কারণে চারণভূমির হ্রাস হচ্ছে, ফলে মহিষের মতো মূল্যবান সম্পদ ক্ষতির মুখে পড়ছে।
আজ সকালে বরিশাল ক্লাবে অনুষ্ঠিত “উপকূলীয় এলাকার মহিষের চারণভূমি ও উন্নয়নের সমস্যা এবং সমাধান” শীর্ষক জাতীয় কর্মশালা ২০২৫-এ প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। কর্মশালার আয়োজন করে বাংলাদেশ বাফেলো এসোসিয়েশন, গ্রামীণ জন উন্নয়ন সংস্থা (জিজিইউএস) এবং কোস্টাল ভেট সোসাইটি।
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা বলেন, সঠিক নীতি নির্ধারণ ও আন্তঃমন্ত্রণালয় সমন্বয়ের মাধ্যমে এখনো অনেক চরাঞ্চল রক্ষা করা সম্ভব। মহিষ পালন বাড়াতে পারলে জাতীয়ভাবে মাংস ও দুধ উৎপাদনে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখা যাবে।
প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা বলেন, দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে মহিষের চারণভূমি দ্রুত কমে যাচ্ছে। অপরিকল্পিত বাড়িঘর নির্মাণ এবং এমনকি সিরাজগঞ্জের শাহাজাদপুর উপজেলায় বৃহৎ গরুর বাথান ভরাট করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার দাবিও উঠছে, যা অত্যন্ত দুঃখজনক। তিনি প্রশ্ন তোলেন, শুধু একটি ডিগ্রি অর্জনের উদ্দেশ্যে গরুর বাথান ধ্বংস করা দেশের সামগ্রিক কল্যাণে কতটা ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে? তিনি আরও বলেন, মহিষের স্বাস্থ্যসুরক্ষার বিষয় বিবেচনায় উপকূলীয় এলাকায় স্পিডবোটভিত্তিক ভেটেরিনারি ক্লিনিক স্থাপন করা প্রয়োজন।
কর্মশালায় বক্তারা বলেন, বর্তমানে গবাদিপশুর চারণভূমি কমে যাওয়া এবং খাদ্যের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় মহিষসহ অন্যান্য গবাদিপশুর সংখ্যা হ্রাস পাচ্ছে। এ পরিস্থিতি মোকাবেলায় স্থানীয় পর্যায়ে কার্যকর পরিকল্পনা গ্রহণ ও টেকসই চারণভূমি উন্নয়ন অপরিহার্য। পাশাপাশি মহিষের উৎপাদন বৃদ্ধি ও জাতীয়ভাবে মাংস ও দুধ উৎপাদন বাড়ানোর আহ্বান জানান তারা।
কর্মশালায় সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ বাফেলো এসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট প্রফেসর ড. ওমর ফারুক।
সম্মানিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিভাগীয় প্রাণিসম্পদ দপ্তরের পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) ডা. মো. মোস্তাফিজুর রহমান, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) লুসিকান্ত হাজং, পিকেএসএফ-এর উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক ড. ফজলে রাব্বি সাদেক আহমেদ, জিজিইউএস-এর নির্বাহী পরিচালক জাকির হোসেন মহিন। এছাড়া সরকারি ও বেসরকারি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাবৃন্দ, স্হানীয় খামারীরা কর্মশালায় অংশ গ্রহণ করেন।
শিশু জন্মের পরপরই মায়ের দুধ খাওয়ানোর প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা নূরজাহান বেগম। তিনি বলেছেন, শিশু জন্মের দুই-তিন দিন পর যখন পর্যাপ্ত দুধ আসে না, তখন অনেক সময় চিকিৎসকরা ফরমুলা দুধের পরামর্শ দেন। কিন্তু ডাক্তারদের কাছে আমার বিনীত অনুরোধ, আপনারা মায়ের দুধ খাওয়ানোর পরামর্শ দিবেন। ফরমুলা দুধের পরামর্শ দেবেন না। তিনি বলেন, একসময় শাল দুধ (কোলস্ট্রাম) খাওয়ানো নিয়ে নানা কুসংস্কার ছিল। এখন মানুষ সচেতন হয়েছে। তবুও উদ্বেগজনকভাবে মাতৃদুগ্ধ খাওয়ানোর হার কমছে। এখন মাত্র ৫৫ শতাংশ শিশু মায়ের দুধ পাচ্ছে, আগে এ হার আরও বেশি ছিল। তিনি মাতৃদুগ্ধ খাওয়ানোর হার বাড়ানোর জন্য কাজ করতে সংশ্লিষ্টদের আহৃবান জানান।
আজ রাজধানীর বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের সম্মেলন কক্ষে ‘বিশ্ব মাতৃদুগ্ধ সপ্তাহ ২০২৫’-এর উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ আহ্বান জানান। জাতীয় পুষ্টি প্রতিষ্ঠান বিভিন্ন এনজিও ও আন্তর্জাতিক সংস্থার সহযোগিতায় এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। এর আগে এ উপলক্ষে এক বর্নাঢ্য রেলির আয়োজন করা হয়।
মাতৃদুগ্ধ উৎপাদনের প্রস্তুতির ওপর গুরুত্বারোপ করে
উপদেষ্টা নূরজাহান বেগম বলেন, শিশু জন্মের পরপরই অনেকসময় পর্যাপ্ত দুধ আসে না। কাজেই প্রস্তুতি আগে থেকেই নিতে হয়। গর্ভাবস্থার ছয় মাস পর থেকে মায়ের খাদ্যাভ্যাস ও যত্নের বিষয়ে নজর দিতে হবে। মা ভালো খেলে, তার শরীর থেকে সন্তানের জন্য যথেষ্ট দুধ তৈরি হবে।
কর্মজীবী মায়েদের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করে তিনি বলেন, মাঠে-ঘাটে নানা কাজে যুক্ত মায়েরা সচেতনতার অভাব ও খাদ্যের ঘাটতির কারণে সন্তানকে পর্যাপ্ত দুধ খাওয়াতে পারেন না। এ প্রসঙ্গে তিনি দারিদ্র্য বিমোচনের দিকেও আলোকপাত করেন। সরকারি হিসাবে দেশে এখন দারিদ্র্যের হার ২০ শতাংশের মতো, বেসরকারি হিসাবে আরও বেশি। যদি এই ২০ শতাংশ মা পর্যাপ্ত খেতে না পারেন, তবে সন্তানও পর্যাপ্ত দুধ পাবে না। তাই দারিদ্র্য হ্রাসে সবাইকে একযোগে কাজ করতে হবে।
সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গি বদলানোর আহ্বান জানিয়ে উপদেষ্টা বলেন, গৃহকর্মী নারীদেরও শিশু জন্মের পরপরই বাচ্চাকে কোলে নেবার সুযোগ দেওয়া উচিত। আমাদের বাসাবাড়িতে যারা কাজ করেন, তাদের অনেক সময় সন্তানকে আনতে দিই না। বিষয়টি ভেবে দেখার অনুরোধ করছি।
স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের সচিব মো. সায়েদুর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে স্বাস্থ্য শিক্ষা বিভাগের সচিব ডা. সারোয়ার বারী, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. মো. আবু জাফর, জনস্বাস্থ্য পুষ্টি প্রতিষ্ঠানের পরিচালক ডা. মোহাম্মদ ইউনুছ আলীসহ মন্ত্রণালয় ও বিভিন্ন স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠানের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও চিকিৎসকরা উপস্থিত ছিলেন।
আগামী নির্বাচনে সঠিকভাবে দায়িত্ব পালনের লক্ষ্যে সারাদেশে জেলা-উপজেলায় বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর চলমান প্রশিক্ষণ কর্মসূচির সঙ্গে নির্বাচনী প্রশিক্ষণ শুরু হয়েছে।
চলমান ২৮ দিনব্যাপী ভিডিপি অ্যাডভান্সড কোর্সের সঙ্গে সমন্বয় করে নির্বাচনী ডিউটির প্রাকপ্রস্তুতি হিসেবে প্রয়োজনীয় অনুশীলন সম্পৃক্ত করা হয়েছে।
এই প্রশিক্ষণের আওতায় বাহিনীর সদস্যদের নির্বাচনে করণীয়, ভোটকেন্দ্রে দায়িত্ব পালন, কেন্দ্রের শৃঙ্খলা রক্ষা, ভোটারদের ভোটদানে সহযোগিতা করা, ব্যালট পেপার এবং ব্যালট বাক্সের নিরাপত্তা নিশ্চিতসহ কয়েকটি বিষয়ে হাতে কলমে মহড়া দেয়া হচ্ছে।
বাহিনীর সদস্যরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে এই মহড়ায় অংশগ্রহণ করছেন।
আসছে ০৬ সেপ্টেম্বর পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.) উদযাপিত হবে। গত রবিবার (২৪ আগস্ট) জাতীয় চাঁদ দেখা কমিটি এ সিদ্ধান্ত জানিয়েছে। ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.) উদযাপনে বর্ণাঢ্য জাতীয় কর্মসূচি গ্রহণ করেছে সরকার।
ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.) উদযাপন সংক্রান্ত আন্তঃমন্ত্রণালয় সভায় এ জাতীয় কর্মসূচি চূড়ান্ত করা হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন ধর্ম উপদেষ্টা ড. আ ফ ম খালিদ হোসেন। এসভায় ধর্ম সচিব একেএম আফতাব হোসেন প্রামানিক, ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মহাপরিচালক আঃ ছালাম খানসহ বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, সংস্থার প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।
ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.) উপলক্ষ্যে রাষ্ট্রপতি ও প্রধান উপদেষ্টা পৃথক পৃথক বাণী প্রদান করবেন। এদিন সকল সরকারি, আধা-সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান, বেসরকারি ভবন ও সশস্ত্র বাহিনীর সকল স্থাপনাসমূহে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হবে। সরকারিভাবে প্রতি বছরের ন্যায় এবারও ঢাকা মহানগরীর গুরুত্বপূর্ণ স্থান ও রাস্তাসমূহে জাতীয় পতাকা, রঙিন পতাকা ও 'কালিমা তায়্যিবা' লিখিত ব্যানার প্রদর্শনের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
সারাবিশ্বের সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ মহামানব হযরত মুহাম্মদ (সা.) জন্ম ও মৃত্যুর স্মৃতিধন্য এ দিবসটি উপলক্ষ্যে ইসলামিক ফাউন্ডেশন (ইফা) কে ক্বিরাত, হামদ-নাত, স্বরচিত কবিতা পাঠ, সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতা ও আরবিতে খুতবা লেখা প্রতিযোগিতা আয়োজনের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এছাড়া, ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.) উপলক্ষ্যে স্মরণিকা প্রকাশ ও সেমিনার আয়োজন করতে বলা হয়েছে।
১২ রবিউল আউয়াল থেকে বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের দক্ষিণ প্রান্তে পক্ষকালব্যাপী ইসলামিক বইমেলার আয়োজন করবে ইফা। এদিনে বাংলাদেশ টেলিভিশন, বাংলাদেশ বেতারসহ অন্যান্য ইলেকট্রনিক মিডিয়া ও প্রচার মাধ্যমে দিবসটি উপলক্ষ্যে বিশেষ অনুষ্ঠান প্রচারের জন্য অনুরোধ জানানো হয়েছে। সংবাদপত্রসমূহে বিশেষ ক্রোড়পত্র প্রকাশও করা হবে।
এ দিবসটি উপলক্ষ্যে বিশ্ববিদ্যালয় সহ সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান, ইফা, ওয়াকফ প্রশাসকের কার্যালয়, ঢাকা ও জেদ্দা হজ অফিসসহ সংশ্লিষ্ট ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানকে হযরত(সা.) এর জীবন ও কর্ম, ইসলামের শান্তি, প্রগতি, সৌহার্দ্য, সহিষ্ণুতা, বিশ্ব ভ্রাতৃত্ব, মানবাধিকার, নারীর মর্যাদা প্রভৃতি বিষয়ের ওপর আলোচনা সভা, দোয়া ও মিলাদ মাহফিল, হামদ-নাত ও কুইজ প্রতিযোগিতা আয়োজনের নির্দেশনা রয়েছে জাতীয় কর্মসূচিতে। বাংলাদেশ শিশু একাডেমি শিশুদের জন্য হামদ-নাত, রচনা প্রতিযোগিতা, আলোচনা সভাসহ বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করবে।
এ দিবসে দেশের সকল সামরিক ও বেসামরিক হাসপাতাল, কারাগার, শিশু সদন, বৃদ্ধ নিবাস ও এতিমখানায় উন্নতমানের খাবার পরিবেশনের জন্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়, বিভাগ ও দপ্তরসমূহকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। বিদেশে বাংলাদেশ দূতাবাস ও মিশনসমূহেও ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.) যথাযথভাবে উদযাপিত হবে।
অন্তর্বর্তী সরকারের এক বছরের কঠোর পরিশ্রম ও সমন্বিত প্রচেষ্টায় দেশের অর্থনীতি স্থিতিশীলতার পথে ফিরে এসেছে বলে মন্তব্য করেছেন সমাজকল্যাণ এবং মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা শারমীন এস মুরশিদ।
আজ সোমবার (২৫ আগস্ট) বগুড়া জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে ‘নাগরিক অধিকার ও জলবায়ু ন্যায্যতা’ প্রকল্পের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
শারমীন এস মুরশিদ বলেন, ‘অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার সময় দেশের অর্থনীতি ছিল নাজুক অবস্থায়। আমরা অভ্যন্তরীণ আস্থা ফিরিয়ে আনার পাশাপাশি আন্তর্জাতিক পরিসরেও প্রমাণ করেছি যে বাংলাদেশ এখনো কোনো ঋণখেলাপি রাষ্ট্র নয়।’
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বগুড়ার জেলার জেলা প্রশাসক হোসনা আফরোজা। বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন লাইট হাউজ বগুড়ার প্রধান নির্বাহী হারুন অর রশিদ, বগুড়ার পুলিশ সুপার জিদান আল মুসা, সিভিল সার্জন ডা. এ কে এম মোফাখখারুল ইসলাম, বগুড়া কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক শামসুদ্দীন ফিরোজসহ বিভিন্ন সরকারি দপ্তরের কর্মকর্তা, এনজিও প্রতিনিধি ও সাংবাদিকরা।
উল্লেখ্য, ‘নাগরিক অধিকার ও জলবায়ু ন্যায্যতা’ প্রকল্পের মাধ্যমে বগুড়া জেলায় নাগরিকদের অধিকার সুরক্ষা ও জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলায় বিভিন্ন কর্মসূচি বাস্তবায়ন করা হবে।
মন্তব্য