‘একটু ভালো করে বাঁচবো বলে আর একটু বেশি রোজগার, ছাড়লাম ঘর আমি ছাড়লাম ভালবাসা আমার নীলচে পাহাড়...’
বিয়ের পর তিথির চার জন্মদিনের চারটাতেই আমি দেশের বাইরে! প্রথম জন্মদিনে ছিলাম অস্ট্রেলিয়ায়, দ্বিতীয় জন্মদিনে সিংগাপুরের ক্লেমেন্টি, তৃতীয় জন্মদিনে প্যাসিফিক ওশান আর এবার আছি সিংগাপুর থেকে ইন্দোনেশিয়া যাবার অপেক্ষায়।
বেশ কিছুদিন আগে মেরিনারদের বিয়ে কেন, করলে কী কী সুবিধা ইত্যাদি লেখা একটা পোস্ট দেখেছিলাম। আমি নিশ্চিত নই কতজন মেরিনারের জীবনসঙ্গী বিয়ের আগ থেকেই একা হাতে নিজেকে, সমস্ত পরিবারকে আগলে রাখা লাগবে বিষয়টি পুরোপুরি জেনে-বুঝে একজন মেরিনারকে বিয়ে করে। একটু আধটু জানলেও বাস্তবতা কতটা উপলব্ধি করতে পেরেছিল বিয়ের আগে সেটাও প্রশ্নসাপেক্ষ।
প্রথমদিকে আমি আর তিথি অনেক ফ্যান্টাসিতে ভুগেছি। মনে হয়েছে জাহাজে মাত্র ৬/৭ মাসেরই তো ব্যাপার। আবার আমি সিনিয়র র্যাংকে গেলে তিথিকে নিয়েও সেইল করতে পারব ইত্যাদি ইত্যাদি। তবে এখন মনে হয় মেরিনারদের জীবন যাপন নিয়ে একটু বেশিই স্বপ্নালু ছিলাম তখন। তিথিও বিয়ের আগে যতটা স্মুদলি সবকিছু একা হাতে হ্যান্ডেল করতে পারবে ভেবেছিল, বাস্তবে তার ব্যতিক্রমই বেশি দেখতে পাচ্ছে।
জাহাজে থাকা অবস্থায় শুধু আর্থিক সাপোর্ট ছাড়া আর কোনো সাপোর্ট আমরা আমাদের স্ত্রী বা পরিবারকে দিতে পারি না। বর্তমানে জুনিয়র র্যাংকে সেই আর্থিক সাপোর্ট দেয়ার সুযোগও অপ্রতুল।
আর্থিক সাপোর্ট অবশ্যই একটা বড় ইস্যু কিন্তু সব কিছু নয়- এটি বেশিরভাগ মেরিনারদের জীবনসঙ্গী কিছুদিন সংসার করার পর বুঝতে পারেন, শুরুতে নয়।
একজন মেরিনারকে বিয়ে করা হয়ত সহজ, কিন্তু আমাদের লাইফস্টাইলের সঙ্গে মানিয়ে নিয়ে পুরো জীবন কাটিয়ে দেয়া মোটেই সহজ ব্যাপার নয়। মেরিনারদের বিয়ে করতে হলে অবশ্যই একজন মেয়েকে 'বিশেষ' এবং ‘অসাধারণ’ হতে হবে। ঢালাওভাবে যে কেউ আমাদের লাইফস্টাইলের সঙ্গে খাপ খাওয়াতে পারবে না। তাই কেউ যদি মানসিকভাবে তেমনটা শক্ত না হন তাহলে তার জন্য মেরিনার কাউকে বিয়ে না করাই সমীচীন বলে মনে করি।
আজকে তাজমীন (আমার সন্তান) বা আমাদের পরিবারের কেউ অসুস্থ হলে তিথিকেই একা একা সব সামলাতে হবে। একটু সান্ত্বনা বা আমার বুকে মাথা রেখে নিজেকে শক্ত রাখার সুযোগও ওর নেই।
আমার জাহাজে ইন্টারনেট থাকার কল্যাণে হয়ত নিয়মিত যোগাযোগ রাখতে পারব (সব জাহাজে সেই সুবিধাও নেই) কিন্তু সেটাই কি সব? টাকাও হয়ত প্রয়োজনের দ্বিগুণ দিলাম, কিন্তু বিপদের সময় স্বামীকে পাশে না পাওয়ার যে অপূর্ণতা, যে আক্ষেপ সেটা কী দিয়ে মিটাবে? আমি যতই দামি দামি গিফট-কসমেটিকস-চকলেটস নিয়ে দেশে যাই না কেন সেটা ওর কষ্ট-আফসোস আর আক্ষেপের তুলনায় নিতান্তই তুচ্ছ।
মেরিনাররা যেমন ‘জাহাজি’ ট্যাগ লাগানোর পর থেকেই নিজেরা দেশের প্রায় সবকিছু থেকেই বঞ্চিত হয় তেমনি তাদের স্ত্রী-সন্তানেরাও। নদীর এপার-ওপার দুই পাড়েই একটা হাহাকার-দীর্ঘশ্বাস থাকে সবসময়।
আমি তাজমীনকে কাছে না পেয়ে ধড়ফড়াইয়া মরি, ওদিকে ফোনে তাজমীন ‘বাবা, প্লিজ কাম হেয়ার, দাদা রুম’ বলে আমাকে ডাকে। ঈদের দিন বা অন্য যে কোনো বিশেষ দিনে আমি একা একা জাহাজে ডিউটি করি, ওদিকে ওরাও বাবা-স্বামীছাড়া!
আমি দেশে না থাকায় আমার বা তিথির প্রিয়জনদের বিয়েসহ অন্যান্য সামাজিক অনুষ্ঠান যেমন মিস্ করি তেমনি ওরাও আমাকে ছাড়া একা একা গিয়ে কোন অনুষ্ঠান উপভোগ করতে পারে না পুরোপুরি। যে কোনো সামাজিক অনুষ্ঠানে যেখানে বাকিদের সবাই বাবা-স্বামীর হাত ধরে উপস্থিত হয় তাজমীন-তিথি সেখানে একা, সঙ্গী-সাপোর্টহীন।
এতকিছুর পরেও আমাদের জীবনসঙ্গীরা আমাদের বা আমাদের পরিবারকে কখনো ফেলে যায় না। হয়ত কখনও কখনও আক্ষেপের ঝুড়ি খুলে বসে, অপ্রাপ্তি বা না পাবার কষ্টগুলো মুখ ফুটে বলে ফেলে কিন্তু দিনশেষে আমরা একই জাহাজে আমাদের জীবন-সমুদ্র পাড়ি দেই। কখনও বিক্ষুব্ধ জলরাশি বা পাহাড়সম ঢেউ এসে ভেঙে দিতে চায়, ডুবিয়ে দিয়ে চায় ভালবাসার সে জাহাজ, কিন্তু আমরা শক্ত করে দুজন দুজনার হাত ধরে বসে থাকি একটা দৃঢ় বিশ্বাস নিয়ে, হয়ত একসঙ্গে ভাসবো বা একসঙ্গে ডুববো, কিন্তু কখনও বিচ্ছিন্ন হব না....
আজকে আমার জীবন-তরীর ক্যাপ্টেনের জন্মদিন, যে কিনা সমস্ত বাধা-বিপত্তি উপেক্ষা করে জীবন-সমুদ্রে আমাকে নিয়ে এগিয়ে চলেছে...
জন্মদিনে অনেক অনেক শুভেচ্ছা আর শুভ কামনা রইলো তিথি। আল্লাহ তোমার সমস্ত মনোবাসনা পূর্ণ করুন। জানি না তোমার ঠিক কততম জন্মদিনে আমি দেশে থাকতে পারব, আর কত জন্মদিন এভাবে দূর থেকেই উইশ করে যাব। কে জানে কবে তোমার জন্মদিনের কেক সামনে রেখে তাজমীনকে কোলে নিয়ে গাইতে পারব-
‘হ্যাপি বার্থডে টু ইউ, হ্যাপি বার্থডে টু ইউ, হ্যাপি বার্থডে টু ইউ ডিয়ার তিথি। হ্যাপি বার্থডে টু ইউ....’
লেখক: এক্স-ক্যাডেট, বাংলাদেশ মেরিন একাডেমি (৪৭তম ব্যাচ)
একসময় মাকুর (তাঁত বোনার কাজে ব্যবহৃত যন্ত্রবিশেষ) ঠকঠক শব্দে মুখর থাকতো নরসিংদী জেলার গ্রামীণ জনপদ। এই দৃশ্য এখন আর খুব একটা চোখে পড়ে না। হাতে টানা তাঁতের জায়গা দখলে নিয়েছে পাওয়ার লুম এবং বিদ্যুৎ-চালিত তাঁত। হাতে বোনা তাঁতের কথা বর্তমান প্রজন্ম শুধু বই-পুস্তকেই পড়েছে বা ছবিতে দেখেছে। বাস্তবে আর দেখার সুযোগ মিলছেনা বললেই চলে।
নরসিংদী জেলায় বর্তমানে হাতে বোনা তাঁত নেই বললেই চলে। গ্রামগুলোতে এখন আর মাকুর ঠকঠক শব্দ শোনা যায় না। শোনা যায় না দিনরাত তাঁত শ্রমিকদের গানের শব্দ। পূর্বে এখানকার তাঁতীদেরকে তাদের হাতে বুনা কাপড় নিয়ে বাজারে গিয়ে বিক্রি করতে দেখা যেতো। কিন্তু তাঁত শিল্পের সাথে জড়িত তাঁতীদেরকে এখন আর তাঁতের কাপড় মাথায় করে বাজারে যেতে দেখা যায় না। নরসিংদী সদর উপজেলার মাধবদী ও শেখেরচর বাবুরহাট, রায়পুরা উপজেলার রাধাগঞ্জ, মনিপুরা ও হাসনাবাদ তাঁতী বাজারগুলোতে এখন আর তাঁতীদের সমাগম ঘটে না। তাঁত পল্লী ও বাজারগুলো এখন এক পরিত্যক্ত বিরানভূমিতে পরিণত হয়েছে।
প্রয়োজনীয় মূলধন, সরকারী ঋণ, রং, সূতা ও প্রয়োজনীয় উপকরণ এবং বাজারজাত করণের অভাবে সর্বোপরি শক্তিচালিত তাঁত এবং পাওয়ারলুমের সাথে প্রতিযোগিতায় টিকতে না পারায় হস্তচালিত তাঁত শিল্প আজ বিলুপ্তির পথে।
এক সময় হস্তচালিত তাঁতের সাহায্যে তৈরী করা হতো বাংলার বিখ্যাত কাপড় মসলিন। এরপর ক্রমান্বয়ে এই হস্তচালিত তাঁতে তৈরী হতে থাকে মোটা শাড়ী, লুঙ্গী, বিছানার চাদর, দরজা জানালার পর্দা, মোটা খদ্দর ও গামছাসহ বিভিন্ন সূতী কাপড়।
এসব তাঁতের তৈরী সূতী কাপড়কে ঘিরে নরসিংদীতে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে ঐতিহাসিক শেখেরচর বাবুরহাট। নরসিংদী জেলার নরসিংদী, রায়পুরা, পলাশ, মনোহরদী, শিবপুর ও বেলাব উপজেলার হাজার হাজার তাঁতী তাদের তৈরী তাঁতের সূতী কাপড় এই বাবুরহাটে নিয়ে বিক্রি করতো। ঢাকা, চট্রগ্রাম, সিলেট, রাজশাহী, দিনাজপুর, খুলনা ও বরিশালসহ দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে পাইকারী ক্রেতারা বাবুরহাটে গিয়ে নরসিংদীর সূতী তাঁত বস্ত্র নিয়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে বিক্রি করতো।
আগে যে তাঁতের কাপড় না হলে মেয়েদের বিয়েই হতো না, আজ সে তাঁতই নেই। জানা গেছে, এ জেলায় নব্বইয়ের দশকের দিকে প্রায় লক্ষাধিক হস্তচালিত তাঁত ছিল। যার মধ্যে সবচেয়ে বেশী তাঁত ছিল রায়পুরা উপজেলার আমিরগঞ্জ, আদিয়াবাদ, চরসুবুদ্ধি, হাইরমারা, মির্জানগর, মরজাল ইউনিয়নে। এছাড়া সদর উপজেলার মাধবদী, আনন্দী, আলগী, গদাইরচর, নুরালাপুর, হাসেমেরকান্দি, করিমপুর, রসূলপুর, অনন্তরামপুর, জিতরামপুর এলাকায় হস্তচালিত তাঁতের প্রচলন ছিল। বর্তমানে শতাধিক হস্তচালিত তাঁত আছে কিনা সন্দেহ।
নরসিংদী সদর উপজেলার করিমপুর ইউনিয়নের রসূলপুর গ্রামের রূপ মিয়া বলেন, একসময় এ গ্রামের প্রতিটি ঘরে ঘরে তাঁত ছিল। তাঁতের এলাকা হিসেবে পরিচিত ছিল করিমপুর ইউনিয়ন। বর্তমানে এ গ্রামের মাত্র ১০/১৫টি পরিবারের মধ্যে হাতেগোনা কিছু তাঁত রয়েছে। এসব তাঁতে শুধু গামছা তৈরী করা হয়। সে গামছা কেলমাত্র চট্টগ্রামের মুনিপুরী কিংবা আদিবাসীরা ব্যবহার করে। এ গামছারও তেমন কোনো চাহিদা নেই। এখন অবসর সময় কাটাতে এবং অন্য কোনো কাজ না থাকায় তারা এখনো পর্যন্ত এ শিল্পের সাথে জড়িত রয়েছেন।
তিনি আরো বলেন, এক সময় নিলিক্ষার তাঁতের শাড়ি না হলে মেয়েদের বিয়েই হতো না। এখন আর এ কাপড়ের কদর নেই বললেই চলে। তাই দিনের পরদিন এ হস্তচালিত তাঁত শিল্পটি বিলুপ্তি হয়ে যাচ্ছে।
তাঁত শ্রমিক আবু কালাম জানান, প্রায় ৫০ বছর ধরে তিনি এই তাঁতের মাধ্যমে কাপড় বুনতেন। তবে এখন আর শাড়ী, লুঙ্গী, বিছানার চাদর, দরজার পর্দা, মোটা খদ্দর তৈরী করেন না। তিনি এখন তৈরী করেন গামছা। আর এসব গামছা বিক্রি করেন শেখেরচর বাবুরহাট বাজারে।
তিনি আরো জানান, বাজার থেকে সূতা এনে প্রসেস করে এই গামছা তৈরী করেন। একটি গামছা তৈরী করতে খরচ হয় ১২৫ টাকা, বিক্রি করেন ১৫০ টাকায়। সারা দিনে ৮ থেকে ১০টা গামছা তৈরী করতে পারেন।
বিষয়টি নিয়ে বিসিক নরসিংদী জেলা কার্যালয়ের সহকারী মহাব্যবস্থাপক জহিরুল ইসলাম খান এর সাথে আলাপ করলে তিনি বলেন, ইতোমধ্যে নরসিংদী জেলার রায়পুরা উপজেলার চরসুবুদ্ধি ইউনিয়নে বিসিকের একটি টিম পরিদর্শন করেছে। সেখানে তাঁত শিল্পের সাথে জড়িত প্রায় ১০টি পরিবারকে এ বিসিকের আওতায় আনার জন্য এবং তাদেরকে বিসিকে নিবন্ধন করার জন্য পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। এছাড়া তাদেরকে বলা হচ্ছে যে, “আপনারা যে সকল দ্রব্যগুলো তৈরী করছেন এগুলো এখনো প্রাচীন দেনধারণার আমলের দ্রব্য। এ দ্রব্যগুলো কিভাবে আধুনিকায়ন করা যায় এবং বাজারে কিভাবে প্রসারিত হয় এসব বিষয়ে তাদেরকে বিসিক পরামর্শ দিচ্ছে।
এছাড়া তাদের উৎপাদিত দ্রব্যগুলো কিভাবে উন্নয়ন করা যায় এবং বিসিকের আয়োজনে যে মেলা অনুষ্ঠিত হয় সে মেলায় তাদের দ্রব্যগুলো প্রচার এবং প্রসারের ব্যাপারে আমরা কাজ করছি। প্রান্তিক উদ্যোক্তাদের বিশেষ করে কুটিরশিল্পের সাথে যারা জড়িত রয়েছে তাদেরকে ৫০ হাজার টাকা থেকে ৫ লাখ টাকা পর্যন্ত শর্ত সাপেক্ষে অল্প সুদে ২ থেকে ৫ বছর মেয়াদী ঋণ দিয়ে থাকি। তবে বর্তমানে নরসিংদী জেলায় কয়টি তাঁতশিল্প রয়েছে তা বলা মুশকিল।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে (চবি) প্রথমবারের মতো পালিত হয়েছে বিশ্ব ফিজিওথেরাপি দিবস। সোমবার সকাল ৯ টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুষদ মিলনায়তনে চবি চিকিৎসা কেন্দ্রের 'ফিজিওথেরাপি এন্ড স্পোর্টস ইঞ্জুরি রিহ্যাব ইউনিটের উদ্যোগে ফিজিওথেরাপি দিবস উপলক্ষে আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়৷
‘সুস্থ বার্ধক্যে ফিজিওথেরাপি—পড়ে যাওয়া ও দুর্বলতা প্রতিরোধে ফিজিওথেরাপির গুরুত্ব’ প্রতিপাদ্যেকে সামনে রেখে অনুষ্ঠিত হয় এ আলোচনা সভা।
চবি মেডিকেল সেন্টারের চীফ মেডিকেল অফিসার ডা. মোহাম্মদ আবু তৈয়বের সভাপতিত্বে এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন চবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইয়াহ্ইয়া আখতার৷ বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (অ্যাকাডেমিক) অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ শামীম উদ্দিন খান, উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. মো. কামাল উদ্দিন। আলোচনা সভার প্রধান বক্তা হিসেবে আলোচনা করেন বাংলাদেশ ফিজিওথেরাপি অ্যাসোসিয়েশন চট্টগ্রাম বিভাগের সভাপতি ও ফিজিওথেরাপিস্ট মোহাম্মদ কামরুজ্জামান।
ফিজিওথেরাপিস্ট মোহাম্মদ কামরুজ্জামান বলেন, ‘শিশুকাল থেকে বৃদ্ধ বয়স পর্যন্ত সুস্থ থাকার জন্য কিভাবে চলাফেরা করবে সেজন্য মায়েদেরকে ট্রেনিং দিতে হবে। যৌবন বয়সের কার্যকলাপ করার জন্য এরগোনোমিক গাইডলাইন সম্পর্কে ধারনা নিতে হবে, যে কিভাবে চলাচল করবে, কিভাবে বসবে, কিভাবে হাঁটবে, কিভাবে কাজকর্ম করবে। বৃদ্ধ বয়সেও সুস্থ থাকার জন্য তাদেরকে সকল নিয়ম কানুন মেনে চলতে হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘বৃদ্ধ বয়সে অনেক ধরনের রোগ হয় যেমন ডায়াবেটিস, হার্ট ডিজিস,স্ট্রোক জনিত সমস্যা। এছাড়াও ব্যথাজনিত রোগের জন্য অনেকে ব্যথানাশক ঔষধ খেয়ে খেয়ে ব্যথা দমিয়ে রাখে, তা থেকেও নতুন নতুন সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে। তাই বৃদ্ধ বয়সে পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া এড়াতে, মাংশ পেশির সক্ষমতা ধরে রাখতে, জয়েন্টের রেঞ্জ অব মোশন ধরে রাখার জন্য একজন ফিজিওথেরাপিস্টের তত্ত্বাবধানে ফিজিওথেরাপি নিলে স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে পারবেন৷’
উপউপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. মো. কামাল উদ্দিন বলেন, ‘আমরা ফিজিওথেরাপিস্টদের কাছে যাই না এটা একটা অসচেতনতা। আমরা রোগ লালন করি। প্রাথমিকভাবে রোগের নিরাময়ের চেষ্টা না করে রোগ নিয়ে বসে থাকি। এজন্য সচেতনতা বৃদ্ধি দরকার। আমাদের ফিজিওথেরাপিস্ট দের কাছে যাওয়ার সচেতনতা তৈরি করা উচিত।’
উপউপাচার্য (অ্যাকাডেমিক) অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ শামীম উদ্দিন খান বলেন, ‘প্রথমবারের মতো চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে দিবসটি পালিত হচ্ছে। এটি একটি ভালো উদ্যোগ।
উপাচার্য অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইয়াহ্ইয়া আখতার বলেন, দিবসটি পালনে উদ্যোগ খুবই প্রশংসাযোগ্য। এর ফলে সচেতনতা বৃদ্ধি পাবে।
অপরাধীদের গ্রেপ্তার, বিচার বিভাগীয় তদন্ত, আহতদের উন্নত চিকিৎসা, শতভাগ আবাসন ও নিরাপদ ক্যাম্পাসের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল করেছে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (চবি) শাখা ছাত্রশিবির।
সোমবার দুপুর সাড়ে ১২টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের চাকসু ভবনের সামনে থেকে মিছিল শুরু করে প্রশাসনিক ভবন, শহীদ মিনার হয়ে কাটা পাহাড় রোড দিয়ে জিরো পয়েন্টে সংক্ষিপ্ত সমাবেশের মাধ্যমে শেষ হয় বিক্ষোভ কর্মসূচি।
বিক্ষোভ মিছিলে সংগঠনটির নেতা কর্মীরা ‘এই মুহূর্তে দরকার, সন্ত্রাসীদের গ্রেপ্তার’, ‘বিচার নিয়ে টালবাহানা, চলবে না চলবে না’, লাল সন্ত্রাসের ঠিকানা, এই ক্যাম্পাসে হবে না’, ‘মববাদের কালো হাত, ভেঙে দাও গুড়িয়ে দাও’, ‘আমার ভাইয়ের রক্ত, বৃথা যেতে দিব না’, ‘জুলাইয়ের প্রশাসন, দাও শতভাগ আবাসন’, ‘তোমার আমার অধিকার, নিরাপদ ক্যাম্পাস’ ইত্যাদি স্লোগান দেন।
শাখা ছাত্রশিবিরের বায়তুল মাল সম্পাদক মুজাহিদুল ইসলামের সঞ্চালনায় মিছিল পরবর্তী সমাবেশে বক্তব্য রাখেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি মোহাম্মদ আলী, কেন্দ্রীয় কার্যকরী পরিষদ সদস্য ও চট্টগ্রাম মহানগর (দক্ষিণ) সভাপতি
ইব্রাহিম হোসেন রনি, শাখা সেক্রেটারি মোহাম্মদ পারভেজ, প্রচার সম্পাদক মো. ইসহাক ভূঁঞা, শিক্ষা সম্পাদক মোনায়েম শরীফ।
এসময়, দাবিগুলো বাস্তবায়নে দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ দৃশ্যমান না হলে প্রশাসনকে পদত্যাগের হুঁশিয়ারি দেন নেতারা।
শাখা ছাত্রশিবিরের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ পারভেজ বলেন, ‘আমরা এখানে পড়াশোনা করতে এসেছি, সন্ত্রাসীদের সাথে যুদ্ধ করতে আসিনি। বিশ্ববিদ্যালয় ও পুলিশ প্রশাসনের নীরবতার কারণে কিছুদিন পরপর আমাদের সন্ত্রাসীদের সাথে মুখোমুখি হতে হয়।’
প্রশাসনকে জোর দিয়ে তিনি বলেন, ‘আপনারা যদি কার্যকর পদক্ষেপ নিতে ব্যর্থ হন, তাহলে আপনাদের শান্তি মতো পদত্যাগও করতে দেব না। হুঁশিয়ার হয়ে যান। শিক্ষার্থীদের নিয়ে অনেক খেলেছেন। আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে যদি উল্লেখযোগ্য কার্যকর পদক্ষেপ না নেন, তাহলে আপনারা এখন যা ভাবছেন, তার চেয়েও পরিণতি ভয়াবহ হবে।’
শাখা ছাত্রশিবিরের সভাপতি মোহাম্মদ আলী বলেন,‘প্রশাসন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার জন্য যথাযথ পদক্ষেপ নিতে পারেনি। ৩০ ও ৩১ আগস্টের ঘটনায় আইন শৃঙ্খলা বাহিনী নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হয়েছে। এই ঘটনার সূত্রপাত থেকে শেষ পর্যন্ত কারা উস্কানি দিয়েছে, কারা নির্দেশদাতা, সন্ত্রাসীরা কাদের প্রশ্রয়ে এখনও গ্রেফতারের বাইরে তা বিচার বিভাগীয় তদন্তের মাধ্যমে উন্মোচিত করে যথাযথ বিচার নিশ্চিত করতে হবে।’
তিনি আরো বলেন, ‘জুলাইয়ের এই প্রশাসন আমাদের আবাসনের জন্য কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নিতে পারেনি। যার ফলে উচ্চ মূল্য দিয়ে কটেজে অবস্থান করতে হয়। আবাসন, নিরাপত্তা, বিচার বিভাগীয় তদন্ত, আহতদের উন্নত চিকিৎসা নিশ্চিত করতে হবে।’
ছাত্রশিবিরের চট্টগ্রাম মহানগর (দক্ষিণ) সভাপতি ইব্রাহিম হোসেন রনি বলেন, ‘আমাদের দাবিগুলো সকল শিক্ষার্থীদের দাবি। সংঘর্ষের ঘটনাকে বিচার বিভাগীয় তদন্তের মাধ্যমে সন্ত্রাসীদের দ্রুত গ্রেপ্তার করতে হবে। এই প্রশাসনকে মুখ বন্ধ রাখলে হবে না। সকল শিক্ষক-শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য নিরাপদ ক্যাম্পাস নিশ্চিত করতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘সংঘর্ষের ঘটনায় জড়িত অপরাধীদের অবিলম্বে গ্রেপ্তার করে বিচারের আওতায় আনতে হবে। যদি গ্রেপ্তার করতে না পারেন, ভিসি মহোদয় আপনাকে অতিদ্রুত পদত্যাগ করতে হবে। প্রোভিসি আপনি মনে করিয়েন না বোবার কোনো শত্রু নেই, মুখ বন্ধ রাখলে হবে না। যদি আপনি নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হন, আপনাকেও পদত্যাগ করতে হবে। প্রক্টর মহোদয়, আপনাকে বলছি, আপনাকেও দ্রুত পদত্যাগ করতে হবে। একইসঙ্গে নিরাপত্তা দপ্তরের সদস্যদের পদত্যাগ করতে হবে। তারা শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা দিতে সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছে।’
একই সাথে দাবিগুলো বাস্তবায়নে দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ দৃশ্যমান না হলে প্রশাসনকে পদত্যাগের হুঁশিয়ারি দেন ছাত্রশিবির নেতারা।
রাজশাহী থেকে ঢাকাগামী যাত্রীবাহী বাস চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। বাসের চালক, সুপারভাইজার ও সহকারীরা বেতন বৃদ্ধির দাবিতে এই বাস চলাচল বন্ধ আছে। তবে একতা ট্রান্সপোর্ট চলছে।
গত রোববার রাত ৯টা থেকে বাস চলাচল বন্ধ ঘোষণা করে দেওয় হয়। এতে দুর্ভোগে পড়েন যাত্রীরা। তবে কিছু বাস বিকল্প ব্যবস্থায় বাস পরিচালনা করে।
শ্রমিকরা জানান, রাজশাহী-ঢাকা বাসের স্টাফদের বেতন খুব কম। ন্যাশনাল ট্রাভেলস রাজশাহী-ঢাকা যাওয়া-আসায় চালকদের প্রতি ট্রিপে বেতন দেয় ১ হাজার ১০০ টাকা। সুপারভাইজারদের দেয় ৫০০ টাকা ও চালকের সহকারীকে দেওয়া হয় ৪০০ টাকা। এছাড়া দেশ ট্রাভেলসে চালকদের দেওয়া হয় ১ হাজার ২০০ টাকা বেতন। তারা বেতন ২ হাজার টাকা করার দাবি জানিয়েছে।
ন্যাশনাল ট্রাভেলসের চালক আলী হোসেন বলেন, ১০ বছর থেকে আমাদের ১ হাজার ১০০ টাকা করে বেতন দেওয়া হচ্ছে। বেতন বাড়ানো হচ্ছে না। এর আগেও আমরা ২৩ আগস্ট শুধু ন্যাশনাল ট্রাভেলস বন্ধ রেখেছিলাম। সে সময় কর্তৃপক্ষ দুদিনের মধ্যে আমাদের বেতন বৃদ্ধির আশ্বাস দিলে আবারও বাস চালু করা হয়। কিন্তু দুই সপ্তাহ পার হয়ে গেলেও আগের বেতন দেওয়া হচ্ছে। তাই অন্য সব বাসের শ্রমিকরা আমাদের সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করে একতা ট্রান্সপোর্ট বাদে সব বাস বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। বেতন বৃদ্ধি না হওয়া পর্যন্ত বাস চলাচল বন্ধ থাকবে।
এ বিষয় নিয়ে কথা বলতে চাইলে দেশ ট্রাভেলসের ব্যবস্থাপক মাসুদ রানা কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।
একতা ট্রান্সপোর্টের ব্যবস্থাপক শরিফুল ইসলাম সুমন বলেন, অন্য পরিবহনের চেয়ে আমাদের বেতন বেশি। চালকদের যাওয়া-আসায় দেওয়া হয় ১ হাজার ৮০০ টাকা, সুপারভাইজারদের দেওয়া হয় ৮০০ টাকা ও চালকের সহকারীদের দেওয়া হয় ৭০০ টাকা। রাতে সব বাস বন্ধ করা হলেও একতাকে শ্রমিকরা চালাতে বলে। এরপর থেকে বাস চলছে।
এদিকে রাজশাহী জেলা মোটর শ্রমিক ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক রফিকুল ইসলাম পাখি বলেন, শ্রমিকরা তাদের বেতন বৃদ্ধির জন্য আন্দোলন করছেন। এর আগে আমরা মালিকদের সঙ্গে বসেছিলাম। মালিকরা ১০০ টাকা বাড়াতে চেয়েছে। কিন্তু তারা মানছে না। বিষয়টি নিয়ে আমরা আবারও মালিকদের সঙ্গে বসব। তাদের যেন দাবি মানা হয় সেটাও বলব।
এ বিষয়ে কথা বলার জন্য রাজশাহী পরিবহন গ্রুপের সাধারণ সম্পাদক নজরুল ইসলাম হেলালের মুঠোফোন বন্ধ পাওয়া যায়। তাই তার বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।
রাজবাড়ীর গোয়ালন্দে নুরু পাগলের দরবারে ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও মরদেহ পোড়ানোর ঘটনায় আলামত সংগ্রহ করেছে সিআইডির ক্রাইম সিন ইউনিট। পাশাপাশি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন ঢাকা রেঞ্জের অতিরিক্ত ডিআইজি মো. সিদ্দিকুর রহমান। সোমবার দুপুর পৌনে ১টার দিকে সিআইডির ক্রাইম সিন ইউনিট দরবারে প্রবেশ করে বিভিন্ন আলামত সংগ্রহ শুরু করার কিছুক্ষণ পর দরবার শরীফ পরিদর্শন ও ক্ষতিগ্রস্ত স্থাপনা ঘুরে দেখেন পুলিশের ঢাকা রেঞ্জের অতিরিক্ত ডিআইজি মো. সিদ্দিকুর রহমান। এ সময় রাজবাড়ীর পুলিশ সুপার মো. কামরুল ইসলাম, গোয়ালন্দ ঘাট থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোহাম্মদ রাকিবুল ইসলামসহ পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
ঘটনাস্থল পরিদর্শন শেষে ঢাকা রেঞ্জের অতিরিক্ত ডিআইজি মো. সিদ্দিকুর রহমান বলেন, ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও মরদেহ পোড়ানোর ঘটনায় যারা জড়িত, তাদের কাউকেই ছাড় দেওয়া হবে না। তিনি উল্লেখ করেন, এ ঘটনার যদি প্রশাসনের কেউ জড়িত থাকে তাকেও ছাড় দেওয়া হবে না। তবে কোনো নিরপরাধ মানুষকে হয়রানি বা গণগ্রেপ্তারও করা হবে না।
এদিকে গোয়ালন্দের নুরু পাগলার কবর নিয়ে বিক্ষোভ মিছিল থেকে পুলিশের ওপর হামলা, গাড়ি ভাঙচুরের ঘটনায় গত রোববার রাতে অভিযান চালিয়ে আরও ৪ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এরা হলো- গোয়ালন্দ পৌরসভার আদর্শ গ্রামের ছালামের ছেলে বিল্লু, মাল্লাপর্ট্রি শাকের ফকিরপাড়ার হেলাল উদ্দিনের ছেলে মো. সাইফুল ইসলাম শুভ, নতুনপাড়া (মাল্লা পর্ট্রি) মো. শওকত সরদারের ছেলে মো. জীবন সরদার, ফরিদপুর কোতোয়ালি থানার ডিগ্রিরচর বারখাদা গ্রামের মো. নিজাম উদ্দিন সরদারের ছেলে মোহাম্মদ ফেরদৌস সরদার।
এর আগে গত শুক্রবার রাতে গোয়ালন্দ ঘাট থানার এসআই সেলিম মোল্লা বাদী হয়ে অজ্ঞাত পরিচয়ে ৩ হাজার ৫০০ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন।
গত শুক্রবার জুম্মাবাদ গোয়ালন্দ উপজেলা আনসার ক্লাব চত্বরে জনতা একত্র হয়। পরে নুরু পাগলের আস্তানায় হামলা করে। এ সময় তারা পুলিশের দুটি গাড়ি, ইউএনওর গাড়ি ভাঙচুর করে। আগুন ধরিয়ে দেয় মাজারে। এ সময় নুরু পাগলের অনুসারী ও উত্তেজিত জনতার ইট, পাথর নিক্ষেপে পুলিশসহ অন্তত ৫০ জন আহত হয়েছেন। পরে উত্তেজিতরা কবর থেকে লাশ উত্তোলন করে পদ্মার মোড়ে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেয় নুরু পাগলের মরদেহ।
গত ২৩ আগস্ট নুরু পাগলের মৃত্যু পর তার পরিবারের সিদ্ধান্তে তাকে তার নিজ বাড়ির সামনের অংশে দুতলা সমান (প্রায় ১২ ফুট উঁচু) একটি কাঠামোর ভেতরে কবরস্থ করা হয়। পরে কবরটিকে কাবা শরীফের আদলে রং করা হয় এবং হজরত ইমাম মাহদী (আ.) দরবার শরীফ্; লেখা ব্যানার টাঙানো হয়। এটা স্থানীয় ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের মধ্যে চরম অসন্তোষ সৃষ্টি করে।
রাজবাড়ীর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. শরীফ আল রাজীব বলেন, এ পর্যন্ত ১১ জন আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
পায়ে আলতা, খোপায় বাহারি ফুল, শাড়ি আর ঢোল-মাদলের তালে তালে রিমঝিম নাচ। সমতলের ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর গানে মুখরিত চারপাশ। ঢোল আর মাদলের তালে নাচে-গানে মাতোয়ারা হয়ে নওগাঁয় উদযাপন করা হলো- আদিবাসী সম্প্রদায়ের ঐতিহ্যবাহী কারাম উৎসব।
সোমবার বিকালে জাতীয় আদিবাসী পরিষদ নওগাঁ জেলা কমিটির আয়োজনে মহাদেবপুর উপজেলার নাটশাল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে ঐতিহ্যবাহী এ উৎসব পালিত হয়। বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ইনিশিয়েটিভ সোশ্যাল চেঞ্জ (আইএসসি) এই আয়োজনে আর্থিক সহযোগিতা করে।
দুই দিনব্যাপী উৎসবের প্রথম দিন গত রোববার রাতে উপজেলার নাটশাল, বকাপুর, জৈন্তাপুর, ঋষিপাড়াসহ আশপাশের ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী গ্রামের নারী-পুরুষ বিভিন্ন ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান পালন করেন। রোববার দিনভর উপোস ছিলেন তারা। সন্ধ্যার আগে কারাম বা খিল কদমের ডাল কেটে এনে পূজার বেদিতে বসানোর কাজটি করেন যুবকরা। আর সন্ধ্যার পর কারাম গাছের ডাল বেদিতে বসানোর পর শুরু হয় পূজা। এরপর রাতভর মূল আচার-অনুষ্ঠানে অংশ নেন নারীরা। তারা দিয়াবাতি, জাওয়া ডালি (অঙ্কুরোদগম শস্যবীজের ডালি), লাল মোরগ, ফলমূলের ডালা বা থালা সৃষ্টিকর্তার উদ্দেশে পূজার বেদিতে উৎসর্গ করেন। সেখানে পূজা পর্ব পরিচালনা করেন পুরোহিত।
রাত একটু গভীর হলে- শিশু, কিশোর-কিশোরীসহ বিভিন্ন বয়সি নর-নারী গ্রামের পূজাস্থানে জড়ো হন। সেখানে পুরোহিত নতুন প্রজন্মের কাছে- কিচ্ছা আকারে কার্মা ও ধার্মা- দুই ভাইয়ের কাহিনি তুলে ধরেন। কিচ্ছা বলা শেষ হলে উপোস থাকা নারীরা পরস্পরকে খাবারের আমন্ত্রণ জানিয়ে উপোস ভাঙেন। পরে বেদিতে পুঁতে রাখা কারাম ডালের চারপাশ ঘুরে ঘুরে ঢাকঢোল ও মাদলের বাজনার তালে তালে নৃত্য পরিবেশন করেন নারীরা। রাতের পূজা পর্ব শেষে সকালে সবাই মিলে বিভিন্ন আচার শেষে গীত গাইতে গাইতে কারাম ডালকে গ্রামের পুকুরে বিসর্জন দেন।
পূজা পর্ব শেষে বিকালে নাটশাল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে সাংস্কৃতিক মিলনমেলা ও ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী সমাবেশের আয়োজন করা হয়। এ মিলনমেলায় নওগাঁর মহাদেবপুর, পত্নীতলা, নিয়ামতপুর উপজেলা ছাড়াও জেলার অন্যান্য উপজেলা এবং বাইরের জেলায় বসবাসরত ক্ষুদ্র জাতিসত্তার সাংস্কৃতিক দলগুলো অংশ নেয়। ৫০টি সাংস্কৃতিক দল নিজ নিজ জাতিগোষ্ঠীর ঐতিহ্য তুলে ধরে ঢাকঢোল, মাদল ও করতালের (ঝুমকি) তালে তালে নাচ ও গান পরিবেশন করে। এতে নিজ নিজ সংস্কৃতির গানের সঙ্গে নাচ পরিবেশন করে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী সাংস্কৃতিক দলগুলো।
এটি মূলত সমতলের ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী মানুষের বৃক্ষ পূজার উৎসব। কারাম (খিল কদম) ডালপূজাকে কেন্দ্র করে এই উৎসব অনুষ্ঠিত হয় বলে একে কারাম উৎসব বলা হয়। ধান রোপণের পর ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী মানুষের অফুরন্ত অবসর। বহুকাল ধরে ভাদ্র মাসের শুক্লা একাদশী তিথিতে এই উৎসব পালিত হয়ে আসছে।
সমতলের ক্ষুদ্র জাতিসত্তার প্রধান উৎসব কারাম। ভাদ্র মাসের পূর্ণিমায় (শুক্লা একাদশী তিথি) এ উৎসবের আয়োজন করে তারা। ক্ষুদ্র জাতিসত্তা অধ্যুষিত গ্রামে গ্রামে কারাম বৃক্ষের ডালপূজাকে কেন্দ্র করে এ উৎসবের আয়োজন করা হয়। তাদের বিশ্বাস, এটি অভাবমুক্তি ও সৌভাগ্য লাভের উৎসব। ধর্মীয় বিভিন্ন আচার-অনুষ্ঠান পালনের মাধ্যমে সৃষ্টিকর্তার কাছে মনের কামনা-বাসনা পূরণের লক্ষ্যে প্রার্থনা করে থাকে ক্ষুদ্র জাতিসত্তার মানুষ। এছাড়া নিজেদের ভাষা ও সংস্কৃতি আন্দোলনের অংশ হিসেবে ১৯৯৬ সাল থেকে জাতীয় আদিবাসী পরিষদ এ পূজাকে ঘিরে নওগাঁসহ সমতলের বিভিন্ন অঞ্চলে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও আদিবাসী সম্মেলনের আয়োজন করে আসছে।
এদিন বেলা ৩টায় ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী সমাবেশ ও সাংস্কৃতিক মিলনমেলার উদ্বোধন করেন জাতীয় আদিবাসী পরিষদ কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি গণেশ মার্ডি। পরে আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন মহাদেবপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আরিফুজ্জামান। বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন, জাতীয় আদিবাসী পরিষদ কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক বিমল চন্দ্র রাজোয়ার, বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা আইএসসির সভাপতি ডি এম আব্দুল বারী ও নির্বাহী পরিচালক আবুল হাসনাত, জাতীয় আদিবাসী পরিষদ নওগাঁ জেলা কমিটির উপদেষ্টা আজাদুল ইসলাম, পত্নীতলা ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী সাংস্কৃতিক একাডেমির পরিচালক যোগেন্দ্রনাথ সরকার প্রমুখ।
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) শাখা ছাত্রশিবিরের সেক্রেটারি ইউসুব আলী বলেছেন, সাজিদ হত্যার তদন্তভার কোনো সংস্থার হাতে হস্তান্তর করা হয়নি। মামলাটি এখনো হেডকোয়ার্টারে ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে। কোনো শক্তির কারণে এই মামলাটি এখনো তদন্তকারী সংস্থার কাছে হস্তান্তর করা হয়নি এটা আমরা জানতে চাই। ছাত্র-সমাজ জানতে চায় কেন তারা এখনো কোনো পদক্ষেপ দেখতে পাচ্ছে না। যুগোপযোগী একটি নিরাপদ ক্যাম্পাস করার দাবিতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে ২৪ দফা সংবলিত ১১০ প্রস্তাবনা দিয়েছিলাম। কিছু প্রস্তাবনা বাস্তবায়ন করলেও সিংহভাগ শিক্ষার্থীবান্ধব প্রস্তাবনা এখনো বাস্তবায়ন করেনি।
সোমবার দুপুর ২টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন ভবনের সামনে শিক্ষার্থী সাজিদ হত্যার তদন্ত ও বিচার অতিদ্রুত নিশ্চিত করা এবং ২৪ দফা দাবি বাস্তবায়নের মানববন্ধন কর্মসূচিতে তিনি এসব কথা বলেন।
ইউসুব আলী বলেন, জুলাই শহিদদের রক্তের ওপর দিয়ে যে প্রশাসন এসেছে তাদের কাছে প্রত্যাশা ছিল শিক্ষার্থীদের নিয়ে কাজ করবে এবং শিক্ষার্থীবান্ধব ক্যাম্পাস গড়বে কিন্তু আমরা পেয়েছি সাজিদের লাশ। সাজিদ হত্যার বিচার দ্রুত সময়ের মধ্যে করতে হবে। আগামী ২ দিনের মধ্যে তদন্ত সংস্থার কাছে দায়িত্ব হস্তান্তর করতে হবে এবং বাস্তব পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ে নির্মাণাধীন কাজে নিযুক্ত শ্রমিকরা বহিরাগতদের আক্রমণের শিকার হয়েছে। প্রশাসন সেখানে নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হয়েছে। আগামীতে আমরা এমন আক্রমণে শিকার হব না তার কোনো নিশ্চয়তা নেই। প্রশাসনকে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে এবং আমাদের অন্যান্য দাবিুগুলো পূরণ করতে হবে যার ফলাফল হিসেবে শিক্ষার্থীবান্ধব ক্যাম্পাস গড়া সম্ভব হবে। অন্যথায় প্রশাসনিক পদে আপনাদের থাকার কোনো প্রয়োজন নেই।
তিনি বলেন, আমাদের গুরুত্বপূর্ণ প্রস্তাবনার মধ্যে ছিল ইকসু গঠন। বর্তমানে কমিটি গঠন করা হলেও এখন পর্যন্ত কোনো বাস্তব পদক্ষেপ দৃশ্যমান হয়নি। এখন পর্যন্ত সামাজিক সংগঠন বা কোনো শিক্ষার্থীকে নিয়ে একবারও বসা হয়নি। এ রকম টালবাহানা করলে প্রশাসনের পদ থেকে বিতাড়িত করতে বাধ্য হব।
মন্তব্য