প্রতিদিনের মতো আজও অর্ক এক্সারসাইজ করে বাইরে এসে বসল। জাহাজে থাকার একটা ভালো দিক দুর্গন্ধ-ধুলাবালিবিহীন মাঝ দরিয়ার একদম ফ্রেশ বাতাসে সব সময় ফুসফুসটা ভরে রাখা যায়। অর্কর বিশ্বাস এই নির্মল বাতাসের জোরেই জাহাজিরা জাহাজে এসে অসুস্থ হয় না সহজে।
অর্ক মার্চেন্ট জাহাজের একজন ক্যাডেট (ট্রেইনি অফিসার)। ও এখানে একমাত্র বাংলাদেশি, বাকিদের বেশিরভাগ ইন্ডিয়ান, ফিলিপিনো, একজন রাশিয়ান আর একজন টার্কিশ। অর্কর বাড়িতে বাবা ছাড়া মা, বোন, বড় ভাই-ভাবী সবাই আছেন। বাবা গত হয়েছেন ও একাডেমিতে থাকাবস্থায় সেই ২০১৮ তে।
অর্ক একাডেমিতে যখন জয়েন করেছিল সে সময় ওর ওজন ৯২ কেজি! কিন্তু ট্রেনিং শেষে পাসিং আউটের সময় ৫ ফিট ১০ ইঞ্চির অর্কর ওজন ৭৩ কেজিতে নেমে এসেছিল! শুধু যে সিনিয়রদের বরাতেই কমেছে তেমন নয়, মেরিনারদের ফিটনেসের প্রয়োজনীয়তা নিয়ে সিনিয়রদের কথাগুলো উপলব্ধি করে অর্ক নিজে সিনিয়র হবার পরেও নিয়মিত এক্সারসাইজ করেছে ফিটনেসের জন্য। জাহাজে এসে যদিও প্রথম কয়েক মাস নিয়মিত এক্সারসাইজ করার সুযোগ হয়ে উঠেনি। তবে এখন অর্ক নিয়মিত এক্সারসাইজ করে জাহাজের জিমনেশিয়ামে। প্রথম দিকে যে কোনো জাহাজে ‘টালটু’ একটু বেশি থাকে কিনা!
অর্কর সঙ্গে আরও একজন ডিউটির পর জিমনেশিয়ামে আসে, নাম কেভাল, হাসিখুশি এক গুজরাটি। কেভাল হলো ইঞ্জিন অফিসারদের একজন সহকারী যাদেরকে জাহাজে বলা হয় অয়লার বা মোটরম্যান। কেভাল আর অর্ক প্রায়ই এক্সারসাইজের পর গ্যাংওয়েতে বসে বুক ভরে বিশুদ্ধ বাতাস নিতে।
কেভাল আজ আসেনি এক্সারসাইজ করতে। খাটুনি বেশি হওয়ায় হয়ত ক্লান্ত। অর্ক অবশ্য প্রতিদিনের মতো আজও ঘাম ঝড়িয়ে একা একাই গ্যাংওয়েতে বসেছে। আকাশে আজ পূর্ণ চাঁদ। পাঁচ মিনিটেই মন-প্রাণ জুড়িয়ে যায় এমন পূর্ণিমা রাতে নিশ্চুপ সমুদ্র আর নির্মল বাতাসের মাঝে বসলে। মন থেকে আপনা-আপনি স্রষ্টার প্রতি কৃতজ্ঞতা চলে আসে।
কেবিনে ফিরে যাবার সময় কী মনে করে অর্ক রেলিংয়ের কাছে গিয়ে দাঁড়াল। তির-তির করে প্লাস ক্যারিবিয়ান সি’র নোনাজল কেটে জাহাজ এগিয়ে চলেছে ব্রাজিলের দিকে। ওরা আমেরিকার নিউ অরলিন্স থেকে রওনা দিয়েছে প্রায় ১০ দিন হলো। আরও নয় দিনের পথ বাকি এখনও। অর্ক একটু ঝুঁকে দেখছিল পানিতে চাঁদের আলো কীভাবে জাহাজের সাথে ধাক্কা খাচ্ছে অবিরত। হঠাৎ করেই এক তীব্র দুলুনিতে অর্ক অকূল দরিয়ায় ছিটকে পড়ল!
জাহাজ থেকে অনাকাঙ্ক্ষিতভাবে কেউ সমুদ্রে পড়ে গেলে দেখা মাত্রই লাইফবয়া ছুড়ে দিয়ে 'ম্যান ওভারবোর্ড' 'ম্যান ওভারবোর্ড' বলে চিৎকার করতে হয়। সঙ্গে সঙ্গে ডিউটি অফিসারকেও জানাতে হয় যেন জাহাজ ঘুরিয়ে ওভারবোর্ড হওয়া ক্রুকে উদ্ধার করতে পারে। জাহাজে নিয়মিত ড্রিলও হয়ে থাকে এসব নিয়ে। অর্কর জাহাজে তো গত সপ্তাহেই 'ম্যান ওভারবোর্ড' ড্রিল করেছে ওরা। কিন্তু এই সন্ধ্যাবেলা জাহাজের কেউই তো দেখেনি, কেউই তো জানে না অর্ক ওভারবোর্ড হয়েছে! 'ম্যান ওভারবোর্ড' বলে চিৎকার করে লাইফবয়া ছুড়ে দেবে কে? অর্ক কি তাহলে এমন পূর্ণিমা রাতে হাজার-লক্ষ তারাকে সাক্ষী রেখে মহাকালের মাঝে বিলীন হয়ে যাবে? ওর তো আজীবনের ইচ্ছা ছিল বিদায়ের সময় ওর প্রিয়জনেরা সবাই পাশে থাকবে...
অর্ক যখন ওভারবোর্ড হয় তখন সন্ধ্যা প্রায় সাড়ে ৭টা। ওদের জাহাজটা ইউএমএস। ইউএমএস হলো আনঅ্যাটেন্ডেন্ট মার্সিনারি মেশিনারি স্পেস অর্থাৎ জাহাজের ইঞ্জিনরুমে কাউকে ডিউটিতে না রেখে জাহাজ তথা ইঞ্জিনরুমের সব মেশিনারি চালানো। ইউএমএস শিপে ইঞ্জিন ডিপার্টমেন্টের সবাই নরমালি ৮টা-৫টা ডিউটি করে। বিকেল ৫টায় কাজ শেষে ইউএমএস অ্যাকটিভ করে দেয়। এরপর আবার রাত ৯টায় ডিউটি ইঞ্জিনিয়ার মোটরম্যানসহ ১ ঘণ্টার ‘ইউএমএস রাউন্ড’ নেয়। ইউএমএস অ্যাকটিভ থাকা অবস্থায় ইঞ্জিন রুমে কোনো সমস্যা হলে ডিউটি ইঞ্জিনিয়ারের কেবিনে অটোমেটিক এলার্ম বেজে ওঠে। আজ ফোর্থ হলো ডিউটি ইঞ্জিনিয়ার, রাত ন’টায় অর্কর রাউন্ড তার সঙ্গে...
***
এমন মায়াবী পূর্ণিমা রাতে অর্ক জলে ভাসছে! এটা কি সত্যি নাকি কল্পনা অর্ক ভেবে পায় না। নাহ কল্পনা নয়, সত্যি সত্যিই অর্ক অসীম নীল দরিয়ায় একটা পিঁপড়ার মতো ভাসছে। খুব নার্ভাস লাগছে, ভয়ে গলা শুকিয়ে আসছে। এত বিশাল সমুদ্রে অর্ক একা! এই বুঝি কিছুতে এসে পা টান দিলো!
ছোটবেলায় অর্ক একটা গল্প পড়েছিল। মা পাখি তার ছানাকে বাসায় রেখে যাবে খাবারের জন্য। যাবার আগে মা বার বার সাবধান করে যায় কিছুতেই নিচের নদীর মাছদের কথা না শুনতে, বিশ্বাস না করতে। ছানা সুবোধের মতো মাথা নাড়িয়ে সম্মতি দিলে মা চলে যায়। ওদিকে মা পাখি চলে যাবার পরেই নিচ থেকে টেংরা, বোয়াল, চিতল ইত্যাদি মাছ পাখির ছানাকে বলে নিচে নেমে আসতে। বলে যে, পানিতে অনেক মজা, অনেক আরাম! ছানা বলে, ‘না না, আম্মু আমাকে নিষেধ করেছে নিচে যেতে, তোমাদের কথা শুনতে। নিচে আসলেই তোমরা আমাকে মেরে ফেলবে।’ কিন্তু মাছেরা ঠিকই মিথ্যা বলে, ছলচাতুরি করে ছোট্ট ছানাটাকে পানিতে নামিয়ে আনে! এরপর ট্যাংরা খোঁচা দেয়, বোয়াল হা-করে ভয় দেখায়। ছানাটার ভয়ে জান উড়ে যাবার অবস্থা। পরে সময়মতো মা পাখি এসে উদ্ধার করলে ছানাটা মায়ের কাছে ক্ষমা চায় নিজের ভুল বুঝতে পেরে, মায়ের কথা না শুনার পরিণাম বুঝতে পেরে।
পানিতে পড়ে হঠাৎ ছোটবেলার গল্পটা মনে পড়লো অর্কর। সেই কত বছর আগে পড়েছিল! ওরও এখন সেই পাখির ছানার মতো অবস্থা। বরং এখানে টেংরা, কাতল, বোয়ালের বদলে আছে হাঙর, তিমি আর অজানা কত প্রাণী। পাখির মায়ের মতো সময়মতো কেউ কি ওকে উদ্ধার করতে আসবে?
অর্ক ধীরে ধীরে মনে করার চেষ্টা করছে, ওভারবোর্ড হলে কী কী করতে হবে। প্রথমত, প্যানিকড হলে চলবে না, শান্ত থাকতে হবে। মনোবল হারানো যাবে না। দ্বিতীয়ত, বেশি দাপাদাপি করে এনার্জি নষ্ট করা যাবে না। চুপচাপ ভেসে থাকতে হবে হাত-পা যতটা সম্ভব কম নড়াচড়া করে। তৃতীয়ত, ভুলেও সমুদ্রের লবণাক্ত পানি পান করা যাবে না। লবণাক্ত পানি পান করলে তৃষ্ণা তো মিটবেই না বরং বার বার প্রস্রাব হয়ে ডিহাইড্রেশন হয়ে তাড়াতাড়ি মরতে হবে। অর্কর মনে পড়ল আজ সি-ওয়াটার টেম্পারেচার ছিল ২৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ভাগ্যিস ১০/১২ নয়, তাহলে দ্রুত হাইপোথারমিয়ায় মরতে হতো।
অর্ক আকাশের দিকে তাকাল, কত হাজার হাজার তারা জ্বলজ্বল করছে। খুব দ্রুতই ও তারাদের সঙ্গে মিলিত হবে হয়ত। সেই ছোটবেলা থেকে আজ অবধি সবকিছু অর্কর চোখের সামনে সিনেমার মতো ভেসে উঠছে। অথৈ জলে ভেসে ভেসেই ও যেন হেঁটে যাচ্ছে স্কুলে, কলেজে সিগারেট ফুঁকছে, অ্যাকাডেমির প্যারেড গ্রাউন্ডে ফ্রন্টরোল-সাইডরোল দিচ্ছে! দেখতে পাচ্ছে ছোট্ট ভাতিজা-ভাগ্নিদের মায়ামুখ, মায়ের পবিত্র চেহারা, ভালোবাসার প্রেমিকার হাসিমুখ, কপালের টিপ, চোখের কাজল। স্পষ্ট শুনতে পাচ্ছে বাবার দরাজ গলা, ভাই-বোনের হাসাহাসির শব্দ।
চোখ খুলে আবার তারাদের দিকে তাকাল। বাবা কি তারা হয়ে ওর অপেক্ষায় চেয়ে আছে সেই ২০১৮ থেকে? নিঃসঙ্গ-একাকী বাবার একাকীত্ব আজ ঘুচবে কি...?
***
রাত ৯টা বেজে ৫ মিনিট। ফোর্থ ইঞ্জিনিয়ার ঠিক ন’টায় এসেই ইঞ্জিনরুম ‘ম্যানড’ করেছে। অর্কই সবসময় আগে এসে থাকে কিন্তু আজ এখনো কেন আসছে না ভেবে ওর কেবিনে ফোন দিল ফোর্থ ইঞ্জিনিয়ার। কিন্তু পরপর দুবার ফোন দিয়েও ওকে পেল না। এরপর মেসরুমে ফোন করেও অর্ককে পাওয়া গেল না। জাহাজে মাত্র ২০-২২ জনের একটা পরিবার। সচরাচর কেবিন, মেসরুম আর ডিউটির জায়গায়তেই সবাইকে পাওয়া যায়। ফোর্থ ইঞ্জিনিয়ার ব্রিজে ফোন করে ব্যাপারটা জানাল যেন ক্রুদের মাস্টার স্টেশনে আসার জন্য অ্যানাউন্স করা হয়। মাস্টার স্টেশন হলো জাহাজের যে কোনো ইমার্জেন্সিতে সবার কমন সম্মেলন স্থান।
অ্যানাউন্সমেন্টয়ের দুই মিনিটের মধ্যেই সবাই হাজির হলো মাস্টার স্টেশনে একসেপ্ট অর্ক!! ওকে শেষবার জাহাজের সেকেন্ড ইঞ্জিনিয়ার জিমনেশিয়ামে দেখেছে বলে জানাল। এরপর কেভাল জানাল যে ওরা প্রতিদিন ওয়ার্ক আউট করে বাইরে বসে হাওয়া খেতে। আজ কেভাল যেহেতু আসেনি সেহেতু অর্ক হয়ত একাই গিয়েছিল আর কোনোভাবে ওভারবোর্ড হয়েছে।
কেভালের কথাকেই সবাই বেশি যৌক্তিক আর বিশ্বাসযোগ্য বলে মনে করল। ওরা সন্ধ্যা ৭টা সাড়ে ৭টা নাগাদ কেবিনে ফিরত বলেও জানায় কেভাল।
জাহাজের গতির হিসেব হয় নটিক্যাল মাইলে, ১ নটিক্যাল মাইল= ১.৮৫২ কি.মি। অর্কর জাহাজের গতি ঘণ্টায় ১৪ নটিক্যাল মাইল। সে হিসেবে অর্ক যদি ৭টায় ওভারবোর্ড হয়ে থাকে তাহলে ওরা প্রায় ৩০-৩৫ নটিক্যাল মাইল দূরে চলে এসেছে সোয়া ২ ঘণ্টায়। ক্যাপ্টেন তৎক্ষণাৎ জাহাজ ঘুরানোর সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলে আসা ফেনিল রেখা ধরে এগিয়ে চলল...
***
অর্ক মনে মনে একটু বাঁচার আশা পাচ্ছে আজ ওর ইউএমএস রাউন্ড ছিল বলে। ও জানে ন’টার রাউন্ডে না গেলেই সবাই ওর খোঁজ করবে আর হয়ত জাহাজ ফিরে আসবে ওকে উদ্ধারে। কিন্তু এতক্ষণ কি ও টিকে থাকতে পারবে? এত বিশাল সমুদ্রে মাঝরাতে ওর মতো পিঁপড়াকে খুঁজে পাবে? অর্ক দীর্ঘ জীবন নিয়ে অনেক বেশি আশাবাদী ছিল সবসময়। প্রথম জাহাজে এসেই এভাবে একা একা অতল দরিয়ায় মরতে হবে সেটা ও দুঃস্বপ্নেও ভাবেনি। অন্য মানুষেরাও কি ভাবে যে সে কবে কীভাবে মারা যাবে? মনে হয় বেশিরভাগ মানুষেরই কাঙ্ক্ষিত মৃত্যুর সঙ্গে প্রকৃত মৃত্যুর পরিবেশ মেলে না। কেউ হাসপাতালের বেডে মরবে ভাবে কিন্তু দেখা গেল আগুনে পুড়ে কয়লা হয়ে গেল। কেউ সড়ক দুর্ঘটনায় মরবে ভাবে কিন্তু হার্ট অ্যাটাকে মারা যায়। কেউ বা বৃদ্ধ হয়ে বা নানা-দাদা হয়ে মরতে চায় কিন্তু বিয়ের আগেই পটল তোলে।
অর্কও চেয়েছিল অর্পিতাকে বিয়ে করে সুন্দর সংসার করে নাতি-পুতির মুখ দেখে মরবে। এ নিয়ে কতদিন কত স্বপ্নের কথা বলেছে অর্পিতার সঙ্গে... কিন্তু এই ছিল বাস্তবতা সেটা যদি কেউ জানত! ওর এত স্বপ্নের জাহাজই ওকে পরপারে নিয়ে যাবে যদি বুঝত তাহলে হয়ত কোনদিন জাহাজিই হতো না। তবুও অর্ক আশায় আছে, ও বাঁচবে, ওর জাহাজ ফিরে আসবে...
***
রাত প্রায় ১টা! ক্যাপ্টেন তন্নতন্ন করে খুঁজে চলেছে। রেসকিউ বোট নামিয়েও খুঁজে দেখা হচ্ছে কিন্তু কোথাও কারো অস্তিত্ব চোখে পড়ছে না। অর্ককে খুঁজে পেতে কোনো চেষ্টারই ত্রুটি করছে না কেউ। কিন্তু কোথায় সবার প্রিয়, সর্বদা হাসিখুশি সে ক্যাডেট? গত ২ ঘণ্টা ধরে জাহাজ সামনে পিছে ডানে বামে করে অবিরাম ওকে খুঁজছে। অবশেষে রেসকিউ বোট থেকে ব্রিজের ওয়াকিটকিতে খুশির চিৎকার শোনা গেল।
সামান্য দূরেই ওরা একজনকে ভেসে থাকতে দেখতে পাচ্ছে। ক্যাপ্টেনসহ জাহাজের সবাই আনন্দে ফেটে পড়ল। কিন্তু এ আনন্দ মিলিয়ে গেল কিছুক্ষণ পরেই যখন আবার জানানো হলো, অর্ক এ পৃথিবীতে ওর সমস্ত স্বপ্ন অপূর্ণ রেখেই ওর বাবার একাকীত্ব ঘুচাতে চলে গেছে আকাশের দিকে মুখ করে...
লেখক: এক্স-ক্যাডেট, বাংলাদেশ মেরিন একাডেমি (৪৭তম ব্যাচ)
রূপগঞ্জের অজোপাড়াগায়ের পল্লীতে গড়ে ওঠেছে নৌকার গ্রাম। আর এ নৌকার গ্রামকে ঘিরে বালু নদীর তীর ঘেষে জমে ওঠেছে ব্যতিক্রমী নৌকার হাট। কাঠের খুটখাট আর নদীর পানির ছলাৎ-ছলাৎ শব্দ যে-কারো মনকে আবেগে ভরিয়ে দেবে। নৌকা তৈরির এ গ্রাম দু’টির অদূরেই বালু নদীর তীর ঘেঁষে গড়ে ওঠেছে ঐতিহ্যবাহী নৌকার হাট। বর্ষা আসলেই রূপগঞ্জের নয়ামাটি ও পিরুলিয়া এলাকায় নৌকা তৈরির ধুম পড়ে যায়। কারিগরেরা হয়ে পড়ে মহাব্যস্ত। কায়েতপাড়া নৌকার হাটটিতে তখন চলে নৌকা বেচাকেনার রমরমা ব্যবসা। এছাড়া গোলাকান্দাইল ইউনিয়নের গোলাকন্দাইল বাজারে প্রতি বৃহস্পতিবার বসে নৌকার হাট। ইছাখালী-নগরপাড়া সড়কের অদূরেই নৌকার গ্রাম। আষাঢ় থেকে ভাদ্র মাত্র তিন মাসের মৌসুমি ব্যবসা। চাহিদা যথেষ্ট, তাই কারিগরদের ব্যবস্থাও বেশি ।
শুরুর ইতিহাস ঃ রূপগঞ্জ উপজেলার কায়েতপাড়া ইউনিয়নের পিরুলিয়া ও নয়ামাটি এলাকার কারিগরেরা স্বাধীনতারও আগে থেকে নৌকা তৈরি করে আসছে। কারো-কারো মতে,এ এলাকার নৌকা তৈরির ইতিহাস প্রায় শতাব্দী প্রাচীন। পিরুলিয়া এলাকার অতশীপরবৃদ্ধ অঞ্জনকুমার দাস বলেন, আমার জন্মের আগে থেইক্যা বাপ-দাদারা গয়না( নৌকা) বানাইয়া আইতাছে হুনছি। নয়ামাটি ও পিরুলিয়া ছাড়া গোলাকান্দাইল ইউনিয়নের গোলাকান্দাইল, সাওঘাট এলাকার কারিগরেরা নৌকা তৈরি করে আসছে।
কারিগর কারা ঃ নৌকা তৈরির গ্রাম পিরুলিয়া ও নয়ামাটি বললেই সবাই চেনে। তবে এ এলাকা দু’টি গ্রামের ৯০ ভাগই মানুষ হিন্দু সম্প্রদায়ের। হিন্দুরাই দীর্ঘদিন ধরে নৌকা তৈরি করে আসছে। আশির দশকের পর নৌকা ব্যবসায়ী কমে যায়। অনেকে ভারত চলে যাওয়ায় এখনো দেড়’শ পরিবার টিকে রয়েছে কোনোমতে। সাওঘাট এলাকার কারিগর প্রদ্যুত কুমার সরকার বলেন, আগে ব্যবসা ভালাই আছিলো। অহন কাটের দাম আর লোয়া ( লোহা ) পেরেকের দাম বাইড়া যাওনে লাভ কম অয়।
কারিগরদের কথা ঃ পিরুলিয়া ও নয়ামাটি এলাকার নৌকা তৈরির কারিগরেরা এখন ভালই আছেন। নৌকা বিক্রি করে তারা সংসার চালাচ্ছেন। ছেলেমেয়েদের লেখাপড়া করাচ্ছেন। বছর শেষে মোটামুটি লাভের মুখ ও দেখছেন। কথাগুলো একবাক্যে বললেন পিরুলিয়া এলাকার সত্যেন দাস। তার ছেলে লেখাপড়া করছে। মেয়েকে বিয়ে দিয়েছেন। নয়ামাটি এলাকার রমেশ দাস বলেন, কই খারাপতো নাইগো দাদা। মোডা ভাত- আর মোডা কাপড় পরবার পারি। এইডাই সুখ।
বর্তমান অবস্থা ঃ নৌকা তৈরির কারিগরদের অবস্থা এখন কিছুটা ভাটা পড়েছে। ৯০’দশকের পর যান্ত্রিক সভ্যতা ফিরে আসায় নৌকার কদর কিছুটা কমে যায়। প্রতিবছর বর্ষায় নৌকা তৈরির ধুম চলে। তবে বন্যা হলে ব্যবসা ভালো হয় বলে জানালেন সুনীল দাস। তিনি বলেন, ৮৮’ আর ৯৮’ সালের বন্যায় অনেক টেহা লাব অইছিলো। নয়ামাটি এলাকার নৌকার কারিগর রবি দাস বলেন, কাডের দাম বাইড়া যাওনে লাভটা কম হয়। নাইলে ব্যবসা খারাপ না। আর ষ্টেলের নৌকার কারনে কিছুডা লছ অইতাছে। তারপরেও খারাপ নাই। ডাইল-ভাত খাইবার পারি।
খরচ কত ঃ এক-একটি নৌকা তৈরি করতে খরচ পড়ে ১৫/২০ হাজার টাকা। আর মোটামুটি কাঠের নৌকা তৈরিতে খরচ পড়ে ৮/১০ হাজার টাকা। কথাগুলো বললেন নৌকার কারিগর তাপস দাস।
নৌকার হাটের কথা ঃ বালু নদীর তীর ঘেঁষেই কায়েতপাড়া বাজারে নৌকার হাট। ঢাকার নিম্মাঞ্চলসহ আশপাশের বিভিন্ন এলাকা থেকে ক্রেতারা নৌকা কিনতে আসেন। দামে সস্তা হওয়ায় এখানকার নৌকার কদরও বেশি। গোলাকান্দাইল ইউনিয়নের গোলাকান্দাইল বাজারের সামনে বিলে জমে ব্যতিক্রমি নৌকার হাট। এ হাটে প্রতি বৃহস্পতিবারে প্রায় কয়েক হাজার নৌকা ওঠে। নৌকার হাট শুরু হয় নৌকা তৈরির গ্রামগুলোর কারিগরদের ঘিরেই। প্রতি বৃহস্পতিবার এ হাট জমে ওঠে। বৃহস্পতিবার এ হাটে কয়েক হাজার নৌকা ওঠে। ওঠে নৌকার বৈঠাও। গজারি কাঠের এক-একটি নৌকার দাম পড়ে ১৫/২০ হাজার টাকা। আর কোষা ৭/৮ হাজার টাকায়। বৈঠাগুলো ৪শ’ থেকে ৫শ’ টাকায় বিক্রি হয়। নৌকা বিক্রেতা সুবল চন্দ্র দাস বলেন, দাদু ব্যবসা ভালোই, তয় পানি বেশি অইলে লাভ অয়। ঢাকার ত্রিমহোনী থেকে নৌকা কিনতে আসা ওমরআলী বলেন, এ হাটে তুলনামূলক সস্তায় নৌকা পাওয়া যায়। আড়াইহাজার থেকে নৌকা কিনতে আসা সামছুল হক বলেন, এ হাটে নৌকার দাম কম। তাই এহান থেইক্যা কিনবার আইছি।
র্যাবের অভিযানে ০৫ টি ডাকাতি, ০২ টি অস্ত্র আইনের মামলাসহ মোট ০৯ টি মামলার আসামী জলিল ডাকাতকে পটুয়াখালী জেলার মির্জাগঞ্জ হতে গ্রেফতার করেছে সিপিসি-১, র্যাব-৮ এবং সিপিএসসি, র্যাব-৬, খুলনার যৌথ আভিযানিক দল।
র্যাব-৮, সিপিসি-১ (পটুয়াখালী) এবং র্যাব-৬, সিপিএসসি (খুলনা) এর যৌথ গোয়েন্দা ও অভিযানিক কার্যক্রমের ধারাবাহিকতায় গোপন সংবাদের ভিত্তিতে ২১ জুন ২০২৫ ইং তারিখ বিকেল আনুমানিক ১৭৪৫ ঘটিকায় একটি বিশেষ অভিযান পরিচালনা করে পিরোজপুর জেলার মঠবাড়িয়া থানায় সংঘটিত চাঞ্চল্যকর ক্লুলেস ডাকাতি মামলার মূল হোতা মোঃ আঃ জলিল খাঁন (৪০), পিতা- আলী আকবর খাঁন, সাং-হোসনাবাদ, থানা- বেতাগী, জেলা- বরগুনা’কে গ্রেফতার করা হয়। ঘটনার বিবরণে জানা যায়, ভুক্তভোগী মোঃ গিয়াস উদ্দিন একজন প্রবাসী, যিনি সৌদি আরব থেকে ৯ জানুয়ারি ২০২৫ ইং দেশে ফেরেন। গত ৮ এপ্রিল ২০২৫ ইং তারিখ গভীর রাতে, আনুমানিক ০৩:০০ ঘটিকায় তার মঠবাড়িয়া থানাধীন বাড়িতে একদল সশস্ত্র ডাকাত হামলা চালায়। ১০-১২ জনের এই ডাকাত দল বাড়ির গ্রিল কেটে ঘরে প্রবেশ করে পরিবারের সদস্যদের অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে। তারা ঘরের মালামাল ভাংচুর করে এবং ভয়ভীতি প্রদর্শনের মাধ্যমে নগদ অর্থ ও মূল্যবান জিনিসপত্র লুট করে নিয়ে যায়। ডাকাতরা ওই সময় ঘর থেকে প্রায় ৩,৫০,০০০ (তিন লক্ষ পঞ্চাশ হাজার) টাকা নগদ, ২৯ ভরি স্বর্ণালঙ্কার, ২টি স্মার্টফোন এবং ১টি ল্যাপটপসহ মোট আনুমানিক ৪৫,২০,০০০ (পঁয়তাল্লিশ লক্ষ বিশ হাজার) টাকার সম্পদ লুট করে নিয়ে যায়। এ ঘটনায় মঠবাড়িয়া থানায় একটি মামলা রুজু করা হয়। ঘটনার পরপরই র্যাব গোয়েন্দা তৎপরতা জোরদার করে এবং ঘটনার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের চিহ্নিত করার কাজ শুরু করে। এরই ধারাবাহিকতায়, ২১ জুন ২০২৫ তারিখ বিকালে পরিচালিত অভিযানে মোঃ আঃ জলিল খাঁনকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয় র্যাব। তাকে পরবর্তী আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য পটুয়াখালী জেলার মির্জাগঞ্জ থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে।
নানা টালবাহানার পর ইরান-ইসরায়েল সংঘাতে জড়াল যুক্তরাষ্ট্র। ইরানের তিনটি পারমাণবিক স্থাপনায় হামলায় চালিয়েছে ওয়াশিংটন। এতে চলমান সংঘাত আরও বাড়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
স্থানীয় সময় রবিবার (২২ জুন) ভোরে ফোরদো, ইসফাহান ও নাতানজের পারমাণবিক স্থাপনায় হামলা চালায় যুক্তরাষ্ট্র। বার্তা সংস্থা অ্যাসেসিয়েটেড প্রেসের খবরে এই তথ্য জানানো হয়েছে।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেওয়া এক পোস্টে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প লেখেন, ‘আমরা ইরানের তিনটি পারমাণবিক স্থাপনায় অত্যন্ত সফলভাবে হামলা পরিচালনা করেছি, যার মধ্যে রয়েছে ফোরদো, নাতানজ ও ইসফাহান।’
হামলার বিষয়টি ইরানের পারমাণবিক সংস্থা থেকেও নিশ্চিত করা হয়েছে। তবে হামলা সত্ত্বেও ওই স্থাপনাগুলোর কার্যক্রম বন্ধ না করে বরং চালিয়ে যাওয়া হবে বলে দাবি করেছে ইরান।
ইরানের পরমাণু কর্মসূচি স্থগিত করার অজুহাতে এক সপ্তাহের বেশি সময় ধরে দেশটির আকাশ প্রতিরক্ষা, ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থা ও পারমাণবিক স্থাপনাগুলোতে হামলা চালিয়ে আসছে ইসরায়েল। এবার তেল আবিবের সঙ্গে যুক্ত হলো ইসরায়েলের মিত্র দেশ যুক্তরাষ্ট্র।
মার্কিন ও ইসরায়েলি কর্মকর্তারা জানান, ইরানের সুরক্ষিত পারমাণবিক স্থাপনায় হামলার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের স্টেলথ বোমা ও জিবিইউ-৫৭ ‘বাঙ্কার বাস্টার’ বোমা প্রয়োজন ছিল, যা ভূগর্ভের গভীরেও আঘাত হানতে সক্ষম।
ট্রাম্প জানান, তিনি রাত ১০টায় (ইস্টার্ন টাইম) জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেবেন। এই হামলাকে ‘মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ইসরায়েল ও বিশ্বের জন্য একটি ঐতিহাসিক মুহূর্ত’ হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন তিনি। তিনি বলেন, ‘এখনই ইরানকে এই যুদ্ধ বন্ধে রাজি হতে হবে। ধন্যবাদ!’
হোয়াইট হাউস ও পেন্টাগন এ বিষয়ে তাৎক্ষণিক কোনো মন্তব্য না করলেও ট্রাম্প সমর্থিত ফক্স নিউজের উপস্থাপক শন হ্যানিটি জানান, ট্রাম্পের সঙ্গে কথা বলার পর তিনি নিশ্চিত হয়েছেন যে, ফোরদোয় ছয়টি বাঙ্কার বাস্টার বোমা নিক্ষেপ করা হয়েছে এবং যুক্তরাষ্ট্রের সাবমেরিন থেকে নাতানজ ও ইসফাহানে ৩০টি টমাহক ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়া হয়েছে।
এর আগে, বৃহস্পতিবার (১৯ জুন) ইসরায়েল ও ইরানের সংঘাতে জড়ানোর বিষয়ে আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে সিদ্ধান্ত নেবেন বলে জানিয়েছিলেন ট্রাম্প। তার আগে ইরানকে নিঃশর্ত আত্মসমর্পণের আহ্বানও জানান তিনি। তবে তার ওই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেন ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি।
তিনি বলেন, এই সংঘাতে যেকোনো সামরিক হস্তক্ষেপ আমেরিকানদের জন্য ‘অপূরণীয় ক্ষতির’ কারণ হবে।
দুই সপ্তাহের কথা বললেও মাত্র দুদিন পরই ইরানে অভিযান পরিচালনার অনুমোদন দেন ট্রাম্প। ধারণা করা হচ্ছে, ইসরায়েলি নেতাদের চাপ ও রিপাবলিকান আইনপ্রণেতাদের তাগিদে এই দ্রুত সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তিনি।
এদিকে, শনিবার (২১ জুন) দীর্ঘস্থায়ী সংঘাতের জন্য প্রস্তুত হওয়ার কথা জানায় ইসরায়েল। তবে ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের জড়িত হওয়া পরিস্থিতিকে সবার জন্য অত্যন্ত বিপজ্জনক করে তুলবে।’
অন্যদিকে, যুক্তরাষ্ট্র যদি ইসরায়েলের সঙ্গে যুদ্ধে যোগ দেয়, তাহলে তারা আবারও লোহিত সাগর অঞ্চলে মার্কিন জাহাজ লক্ষ্য করে হামলা শুরু করবে বলে হুমকি দিয়েছে ইয়েমেনের ইরান-সমর্থিত হুথি বিদ্রোহীরা। এতে পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে উঠেছে।
২০১৮ সালে ২০১৫ সালের পরমাণু চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে প্রত্যাহার করে নেওয়ার সাত বছর পর ইরানের সঙ্গে এই সামরিক সংঘাত ঘটল ট্রাম্পের।
ইরানের পরমাণু কার্যক্রম সীমিত করার বিনিময়ে অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা শিথিল করতে ওই চুক্তিটি করেছিল ওবামা প্রশাসন ও অন্যান্য বিশ্বশক্তি।
তবে ট্রাম্পের এই হামলার সিদ্ধান্ত তার নিজ রাজনৈতিক দলের ভেতর থেকেই সমালোচিত হয়েছে। এই সংঘাতে গভীরভাবে জড়িয়ে পড়া ট্রাম্পের যুদ্ধবিমুখ প্রতিশ্রুতি লঙ্ঘন করবে বলেও সতর্ক করেছেন অনেকে।
মাছের উৎপাদন বৃদ্ধি ও নিরাপদ খাদ্য উৎপাদনের ওপর গুরুত্বারোপ করে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতার বলেছেন, মাছ আমিষের যোগানদাতা; প্রাণিজ আমিষ হিসেবে মাছ বাঙালির অবিচ্ছেদ্য অংশ।
উপদেষ্টা গতকাল বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিএফআরআই) ময়মনসিংহ কর্তৃক আয়োজিত ‘বার্ষিক গবেষণা অগ্রগতি (২০২৪-২৫) পর্যালোচনা ও গবেষণা পরিকল্পনা (২০২৫-২৬) প্রণয়ন শীর্ষক আঞ্চলিক কর্মশালায় প্রধান অতিথির বক্তৃতায় এসব কথা বলেন।
উপদেষ্টা বলেন, মাছ বিশেষ করে ছোটমাছ কিভাবে বিলুপ্তির হাত থেকে রক্ষা করা যায় তার জন্য বিএফআরআইকে সচেষ্ট থাকতে হবে। বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের মৎস্য বিভাগ, বিএফআরআই এবং মৎস্য অধিদপ্তরকে অভিন্ন লক্ষ্যে আন্তঃসমন্বয় করে কাজ করতে হবে; তবেই বাংলাদেশের মৎস্য সম্পদের গুণগত পরিবর্তন সম্ভব।
বিজ্ঞানীদের জাতির মূল্যবান সম্পদ উল্লেখ করে প্রধান অতিথি বলেন, তারা যেন তাদের মেধা দিয়ে দেশের কল্যাণে কাজ করতে পারে, গবেষণায় আরও মনোনিবেশ করতে পারে—সেজন্য সরকারের পক্ষ থেকে সর্বোচ্চ সহযোগিতা নিশ্চিত করা হবে। তিনি আরও বলেন, বিজ্ঞানীদের এমন প্রযুক্তি উদ্ভাবন করতে হবে, যা সাধারণ মানুষের বোধগম্য হবে এবং যার উপকারিতা জনগণ সরাসরি বুঝতে পারবে। এসব প্রযুক্তি যদি মৎস্য অধিদপ্তরের মাধ্যমে মাঠপর্যায়ে সম্প্রসারিত করা যায়, তাহলে দেশে মাছের সংকট থাকবে না বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
উপদেষ্টা আরো বলেন, কৃষি কার্যক্রমে ব্যবহৃত কীটনাশক হাওর এলাকার মাছের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর প্রভাব ফেলছে। এ পরিস্থিতি মোকাবিলায় জাতীয়, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে কীটনাশক নিয়ন্ত্রণে বিশেষ কমিটি গঠন করা হয়েছে। আশা করা যাচ্ছে এই কমিটিগুলোর কার্যকর পদক্ষেপের মাধ্যমে হাওরাঞ্চলে কীটনাশক ব্যবহার উল্লেখযোগ্য হারে কমবে; ফলে জলজ প্রাণীর নিরাপত্তা নিশ্চিত হবে।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের মাৎস্যবিজ্ঞান অনুষদের ডিন প্রফেসর ড. মো. রফিকুল ইসলাম সরদার বলেন, গবেষণাকে মাঠ পর্যায়ে পৌঁছে দেওয়ার জন্য কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ও বিএফআরআই এর মধ্যে ঘনিষ্ঠ সমন্বয় জরুরি।
বিএফআরআই এর মহাপরিচালক ড. অনুরাধা ভদ্রের সভাপতিত্বে ময়মনসিংহ বিভাগের মৎস্য অধিদপ্তরের পরিচালক নৃপেন্দ্র নাথ বিশ্বাস, বিএফআরআই এর বিজ্ঞানীরা, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের কর্মকর্তাবৃন্দ, মৎস্য খামারিরা এ সময় উপস্থিত ছিলেন। কর্মশালায় স্বাদু পানি কেন্দ্রের মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. হারুন উর রশিদ গবেষণা পরিকল্পনার বিস্তারিত তুলে ধরেন।
এর আগে উপদেষ্টা বিএফআরআই এর গবেষণা মাঠের ঘারুয়া, রাণী, মহাশোল, দেশী স্বঁরপুটি, ভাগনা, গুলশা, পাবদা, টেংরা, বাটা, বিএফআরআই তেলাপিয়া, বটমক্লিন সিস্টেম (পাবদা ও মাগুর), গুড়া চিংড়ি, কুচিয়া, কার্প রেণু হ্যাচারি এবং মুক্তা ল্যাব পরিদর্শন করেন।
আগামীকাল সোমবার সারা দেশের শুল্ক, ভ্যাট ও আয়কর কর্মকর্তা-কর্মচারীরা তিন ঘণ্টা অবস্থান কর্মসূচি ও কলমবিরতি পালন করবেন। সকাল ৯টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত এই কর্মসূচি চলবে। গতকাল শনিবার বিকালে এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদ এক সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে এই কর্মসূচি ঘোষণা দিয়েছে। রাজধানীর আগারগাঁওয়ের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) ভবনে এই সংবাদ সম্মেলন হয়। এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদের সভাপতি ও অতিরিক্ত কমিশনার হাছান মুহম্মদ তারেক রিকাবদার এবং মহাসচিব অতিরিক্ত কর কমিশনার মিজ সেহেলা সিদ্দিকা বক্তব্য দেন। এনবিআরে যৌক্তিক সংস্কারের দাবিতে এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদ আন্দোলন করছে। সংবাদ সম্মেলনে দাবি করা হয়, অবিলম্বে এনবিআর চেয়ারম্যানকে অপসারণ করতে হবে। তার মাধ্যমে রাজস্ব সংস্কারবিষয়ক কার্যক্রম সময়ক্ষেপণ ছাড়া কিছু নয় বলে ঐক্য পরিষদ মনে করে। উল্লেখ্য, আগে থেকেই ঐক্য পরিষদ রাজস্ব ভবনে চেয়ারম্যানকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেছে। সংবাদ সম্মেলনে আরও বলা হয়, গত ১৯ জুন এনবিআর কর্তৃক গঠিত কমিটিতে এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদের যথাযথ প্রতিনিধিত্ব থাকতে হবে। রাজস্ব অধ্যাদেশ সংশোধনের লক্ষ্যে এনবিআরের কর ও কাস্টমস ও ভ্যাট অনুবিভাগের ছয়জন সদস্য সমন্বয়ে একটি কমিটি গঠন করা হয়। এই কমিটিতে এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদের কোনো প্রতিনিধি অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি, এমনকি তাদের সঙ্গে কোনো আলোচনাও করা হয়নি। আবার এনবিআর চেয়ারম্যান বিভিন্ন সভায় ও বক্তব্যে এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদের বৈধতা ও অস্তিত্ব নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন এবং উসকানিমূলক বক্তব্য দিয়েছেন। গতকাল শনিবার বিকালে এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদের সভায় অতিরিক্ত কমিশনার হাছান মুহম্মদ তারেক রিকাবদারকে সভাপতি ও অতিরিক্ত কর কমিশনার মিজ সেহেলা সিদ্দিকাকে মহাসচিব করে এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদের ৩০১ সদস্যবিশিষ্ট অ্যাডহক কমিটি গঠন করা হয়। সভায় সামগ্রিক রাজস্ব সংস্কার ভাবনার অংশ হিসেবে ‘কেমন এনবিআর চাই’ শীর্ষক সেমিনার আয়োজনের লক্ষ্যে গত বৃহস্পতিবার প্রস্তুতিমূলক সভা আয়োজনের জন্য কক্ষ বরাদ্দ চেয়ে লিখিত আবেদন দেওয়ার পরও কক্ষ বরাদ্দ প্রদান না করায় তীব্র নিন্দা জানানো হয়।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) ও অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ (আইআরডি) বিলুপ্ত করে রাজস্ব নীতি ও রাজস্ব ব্যবস্থাপনা বিভাগ নামে দুটি বিভাগ করে গত ১২ মে অধ্যাদেশ জারি করে সরকার। এরপর থেকে এর প্রতিবাদে নানা ধরনের কর্মসূচি পালন করেন রাজস্ব বোর্ডের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদের ব্যানারে এসব কর্মসূচি পালন করা হয়। গত ২৬ মে সরকার ঘোষণা দেয়, আগামী ৩১ জুলাইয়ের মধ্যে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে এনবিআর নিয়ে জারি করা অধ্যাদেশের প্রয়োজনীয় সংশোধন করা হবে। এর ধারাবাহিকতায় আজ একটি কমিটি গঠন করা হলো।
পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন এবং পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেছেন, বাংলাদেশ বনশিল্প উন্নয়ন কর্পোরেশনের (বিএফআইডিসি) রাবার কাঠের পাশাপাশি পরিবেশবান্ধব বিকল্প পণ্যের প্রসারে কার্যকর উদ্যোগ নিচ্ছে সরকার।
গতকাল শনিবার রাজধানীর মিরপুরে বিএফআইডিসির ক্যাবিনেট ম্যানুফ্যাকচারিং প্লান্টে প্রস্তাবিত শো-রুম স্থাপনের সম্ভাব্য স্থান পরিদর্শনকালে তিনি এসব কথা বলেন।
পরিবেশ উপদেষ্টা বলেন, সরকারিভাবে উৎপাদিত গৃহস্থালী কাঠসামগ্রীকে আরও সহজলভ্য ও আকর্ষণীয় করে তুলতেই এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, বিএফআইডিসির উৎপাদিত পণ্যে রয়েছে দীর্ঘস্থায়িত্ব, কারিগরি দক্ষতা এবং দেশীয় সম্পদের যথাযথ ব্যবহার, যা জনআস্থার জন্য যথেষ্ট। এই সক্ষমতাকে কাজে লাগিয়ে সরকারি বনশিল্প খাতকে আরও প্রতিযোগিতামূলক করে গড়ে তোলা সম্ভব।
উপদেষ্টা বলেন, বিএফআইডিসি কর্তৃপক্ষ উপদেষ্টাকে উৎপাদন প্রক্রিয়া, প্রযুক্তিগত সক্ষমতা এবং শো-রুম স্থাপনের সম্ভাব্য স্থান ঘুরিয়ে দেখান। তিনি নির্দেশনা দেন, এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নিয়ে স্থান নির্ধারণ ও অন্যান্য কার্যক্রম দ্রুত সম্পন্ন করতে।
পরিদর্শনকালে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. ফারহিনা আহমেদ, বনশিল্প উন্নয়ন কর্পোরেশনের চেয়ারম্যান মো. নাসির উদ্দীনসহ মন্ত্রণালয় ও কর্পোরেশনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
বেদখল হওয়া খাসজমি উদ্ধার ও দখলদারদের বিরুদ্ধে নিয়মিত আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের পরামর্শ দিয়ে খাদ্য ও ভূমি উপদেষ্টা আলী ইমাম মজুমদার বলেছেন, কারও মুখের দিকে তাকিয়ে উদ্ধার অভিযান পরিচালনা করা যাবে না। খাসজমির মালিক ভূমি মন্ত্রণালয়।
পটুয়াখালী জেলার সার্কিট হাউসে গতকাল অনুষ্ঠিত পটুয়াখালী শহরের গুরুত্বপূর্ণ খাসজমিসহ জেলার খাসজমি ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত কর্মকর্তাদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় তিনি এসব কথা বলেন। পটুয়াখালী জেলার জেলা প্রশাসক আবু হাসনাত মোহাম্মদ আরেফীনের সভাপতিত্বে সংশ্লিষ্ট এসিল্যান্ড, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাসহ অন্যান্য কর্মকর্তারা মতবিনিময় সভায় উপস্থিত ছিলেন।
এ সময় জেলার অবৈধভাবে দখলকৃত খাসজমি উদ্ধারের জন্য অগ্রাধিকার ভিত্তিতে উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করতে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশনা দেন।
তিনি আরও বলেন, মাঠপর্যায়ে জেলা প্রশাসক, ইউএনও, এসিল্যান্ড এবং ভূমি সহকারী কর্মকর্তারা খাসজমি দেখভাল করে থাকে। খাসজমি রক্ষার দায়িত্ব জেলা প্রশাসক, ইউএনও, এসিল্যান্ড এবং ভূমি সহকারী কর্মকর্তাদের। সংশ্লিষ্টদের অবহেলা এবং উদাসীনতার কারণে দীর্ঘ সময়ে বিপুল পরিমাণ খাসজমি বেদখল হয়েছে। কেউ প্রভাব খাটিয়ে, কেউবা জাল দলিল করে এ সব খাসজমি দখল করছে।
মন্তব্য