বাংলাদেশের শিল্প-সাহিত্যে বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন সমুজ্জ্বল হয়ে উঠেছে। কেবল কবিতায় নয় গল্প-উপন্যাস ও চিত্রকলায় তার ফিরে আসা অন্ধকার থেকে আলোর জগতে ফিরে আসা হিসেবে চিহ্নিত। স্বপ্ন ও আশাবাদীতায় জাগ্রত জনতার কথাও এসেছে এ প্রসঙ্গে। অন্যদিকে বাঙালির স্বাধীনতা লাভের ইতিহাসও বিবৃত হয়েছে। দেশভাগের পর ১৯৭১ পর্যন্ত যে ঘটনাগুলো মুখ্য হয়ে উঠেছিল তার কয়েকটি দিক কবিতা বিশ্লেষণের পূর্বে স্মরণ করা যেতে পারে।
২.
১৯৪৮ সালের মার্চের ভাষা প্রশ্নে প্রতিবাদের পথ বেয়ে ১৯৪৯-এ জন্ম হয় ‘আওয়ামী মুসলিম লীগে’র। এই রাজনৈতিক সংগঠনটি বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের প্রধান অনুঘটক। অন্যদিকে বিভাগোত্তর কালের কমিউনিস্ট পার্টির একমাত্র প্রগতিশীল সাহিত্য সংগঠন ‘প্রগতি লেখক ও শিল্পী সঙ্ঘ’ ক্রমশই কমিউনিস্ট বিপ্লবের দ্বিধাবিভক্ত ও তাত্ত্বিক বিতর্কের ফলে ১৯৫০ সালের মাঝামাঝি সময়ে ঢাকা জেলায় এর অস্তিত্ব একেবারে বিলুপ্ত হয়। কেন্দ্রীয় সরকারের অবদমন নীতি ও বাংলাদেশকে পাকিস্তানের নতুন-কলোনিতে পরিণত করার চক্রান্তে এবং রাষ্ট্রভাষা প্রসঙ্গে যে গভীর ষড়যন্ত্র ও বিতর্ক উত্থাপিত হয়, এরই ফলে সংগঠিত হয় ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন।
১৯৪৮ থেকে ১৯৫২ এই কালক্রমিক ঘটনা প্রবাহে পাকিস্তানের শাসন-শোষণের বিরুদ্ধে প্রতিবাদস্বরূপ ২১ ফেব্রুয়ারির রক্তদান ছিল পৃথিবীর ইতিহাসে বাঙালির রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক অস্তিত্বের জানান দেওয়ার ঘটনা। দেশ-বিভাগোত্তর কেন্দ্রীয় প্রশাসনের রাজনৈতিক কূটজাল, অত্যাচার, নিপীড়ন, ধর্মীয় কলহ ও দুর্নীতির ভয়াবহ বিস্তারের বিরুদ্ধে বাঙালির ঐক্য ১৯৫৪ সালের সাধারণ নির্বাচনে যুক্তফ্রন্টের বিজয় লাভ অনিবার্য করে তোলে। কিন্তু যুক্তফ্রন্টের মন্ত্রিসভা গঠিত হলেও পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় সরকারের চক্রান্তে বাংলাদেশের খাদ্য পরিস্থিতির অবনতি ও বিভিন্ন শিল্পাঞ্চলে দাঙ্গার সৃষ্টি করে ১৯৫৪ সালের মে মাসে যুক্তফ্রন্ট মন্ত্রিসভা পরিকল্পিতভাবে বাতিল করা হয়।
১৯৫৪ থেকে ১৯৫৮ সাল পর্যন্ত কেন্দ্রীয় ও প্রাদেশিক প্রশাসনের বিচিত্রমুখী ষড়যন্ত্রের পরে দেশে সামরিক জান্তার ক্ষমতা দখলের ঘটনা ঘটে। সামরিক শাসক দেশের রাজনীতি, সংস্কৃতি, সাহিত্য প্রতিটি ক্ষেত্রেই কেন্দ্রীয় ও প্রাদেশিক নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠায় উদ্যোগী হয়। মূলত দেশবিভাগ থেকে রাষ্ট্রভাষা আন্দোলন এবং পরবর্তী পাঁচ বছর বাংলাদেশের রাজনৈতিক ঘটনাপ্রবাহ দ্বন্দ্ব-জটিল হলেও এর সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডলটি ছিল সকল বিকৃতি, কুসংস্কার, কূপমণ্ডুকতা এবং জাতি-ধর্ম-বর্ণ ও সম্প্রদায়গত সকল প্রকার বৈরীভাবের বিরুদ্ধে মানবতার আদর্শকে রাষ্ট্র ও সমাজ জীবনের সকল ক্ষেত্রে মহিমাদীপ্ত করার কাল।
এদিক থেকে ১৯৫৭ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে কাগমারিতে পূর্ব পাকিস্তানের আওয়ামী লীগের কাউন্সিল অধিবেশনের আন্তর্জাতিক মানের সাংস্কৃতিক সম্মেলনের কথা উল্লেখযোগ্য। রাজনীতির সঙ্গে সংস্কৃতির এই যোগসূত্র বাংলাদেশের কবিদের আলোড়িত করেছিল স্বাভাবিক কারণে। তবে ১৯৫৮ থেকে ১৯৬৯ সালের সামরিক জান্তার করতলগত বাংলাদেশের নগর-গ্রামের গণজাগরণ এ অঞ্চলের সমাজ মানসের প্রগতিশীল রূপান্তরের স্বতন্ত্র মাত্রা হিসেবে চিহ্নিত করা যায়। এরপর স্বাধিকার অর্জনের পথে ১৯৬৯-এর পথ বেয়ে ১৯৭১-এর মুক্তিসংগ্রাম দেশ বিভাগের পরবর্তী আরেকটি দেশবিভাগের ঘটনাকে ত্বরান্বিত করে দেয়। জন্ম হয় নতুন দেশ- ‘বাংলাদেশ’।
১৯৪৮ থেকে ১৯৭১ পর্যন্ত বিভিন্ন কালানুক্রমিক ঘটনা ধারায় আমাদের শিক্ষিত মধ্যবিত্ত মানসে অসাম্প্রদায়িক চেতনা, মানবতাবাদী আদর্শ এবং প্রগতিশীল ও গণতান্ত্রিক জীবনবোধের বিকাশ ঘটে। কবিরা সেই শ্রেণির অংশ হিসেবে তাদের কবিতার ধারায় ইতিবাচক দৃষ্টিকোণ থেকে নির্মাণ করেন স্বাধিকারের সপক্ষে আমাদের সমাজমানসের বিচিত্র তরঙ্গ। মনে রাখা দরকার ভাষা-আন্দোলন থেকে ১৯৭১ পর্যন্তই কেবল নয় ২০২০ সালে প্রকাশিত বঙ্গবন্ধুর নানান অনুষঙ্গে অভিব্যক্ত এদেশের কবিতায় স্বতন্ত্র পর্যবেক্ষণ যুক্ত হয়েছে। বঙ্গবন্ধু নিজে কবি ছিলেন না কিন্তু ছিলেন রাজনীতির কবি- ‘রাজনীতির প্রকৌশলী নন মুজিব, মুজিব হচ্ছেন রাজনীতির কবি, বাঙালির স্বাভাবিক প্রবণতা প্রয়োগিক নয়, শৈল্পিক। তাই মনে হয়, বাংলাদেশের সকল মানুষ, শ্রেণি ও মতাদর্শকে এক সূত্রে গাঁথা হয়ত কেবল মুজিবের মতো রাজনৈতিক কবির পক্ষেই সম্ভব।’ বেলাল চৌধুরী বলেছেন, কবিতা একটি জাতির ভাষার স্মৃতি। (কবিতায় বঙ্গবন্ধু, ভূমিকা, ২০১০) প্রকৃতপক্ষে বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে রচিত কবিতায় বাঙালি জাতির ভাষার স্মৃতি উচ্চকিত হয়েছে। বঙ্গবন্ধুর মতো মহাপুরুষকে নিয়ে রচিত কবিতায় কবি সমাজ ও জীবনের প্রতি দায়বদ্ধ থাকতে বাধ্য। কারণ কবিতার মাধ্যমে কবি একাত্মতার বাণী প্রচার করেন। মানুষের সঙ্গে মানুষের একাত্ম হওয়ার এই বাণী অসংখ্য কবির অজস্র চরণে কখনও শেখ মুজিব, কখনও বঙ্গবন্ধু স্বাক্ষরিত হয়ে আত্মপ্রকাশ করেছে।
৩.
১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি বাংলাদেশের ইতিহাসে অবিস্মরণীয় একটি দিন। সেদিন মহান নেতা, হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি, বাংলাদেশের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান পাকিস্তানের কারাগার থেকে ফিরে এসেছিলেন মুক্ত স্বদেশে। যে স্বদেশকে তিনি নিজের জীবনের অংশ করে নিয়েছিলেন। সেদিন ঢাকার ১০ লাখ মানুষের সামনে ভাষণ দিতে গিয়ে বারবার ভেঙে পড়েছেন; অশ্রু সজল নয়নে চেয়েছেন মানুষের মুখপানে। ১৯৭১ সালে দেশের মধ্যে যা কিছু ঘটেছে তা তিনি জেল থেকে ছাড়া পাওয়ার পরই জেনেছিলেন। হানাদার বাহিনী ও এদেশীয় লুটেরা রাজাকার-আলবদর-আলশামসের অত্যাচারের কথা শুনেছিলেন। এজন্যই আবেগময়ী ভাষণে তিনি এদেশকে পাকিস্তান কর্তৃক শ্মশান করে ফেলার কথা বলেছিলেন। তিনি কথা বলতে পারছিলেন না। তার অনুভূতি তখন প্রতিটি তন্ত্রীতে তন্ত্রীতে শিহরণ জাগাচ্ছিল।
যখন তাকে বহন করা বিমানটি ঢাকার মাটি স্পর্শ করছিল, তখন বিপুল জনতার ঢেউ দেখে তিনি বলেছিলেন- ‘আমার দেশের মানুষ আমাকে এত ভালোবাসে। আমি এদেরকে খাওয়াবো কীভাবে?’ (দ্রষ্টব্য, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান: জীবন ও রাজনীতি, ২০০৮, বাংলা একাডেমি, পৃ ৮৬১-৬৪) দেশ পরিচালনায় জননেতার এই উৎকণ্ঠা সত্যিই শেষ দিন পর্যন্ত অটুট ছিল। যুদ্ধোত্তর ধ্বংসস্তূপের ওপর দাঁড়িয়ে তিনি প্রকৃত দেশপ্রেমিক ও বীরের মতো মানুষের জন্য উদগ্রীব হয়েছেন। একাত্তরে হত্যাযজ্ঞের শিকার মানুষের আত্মীয়-স্বজনের হাহাকার, নিরাশ্রয় আর খাদ্যহীন পরিস্থিতির কথা বলে তিনি বিশ্ববাসীকে দেখিয়ে দিলেন পাকিস্তানীদের বীভৎসতার চালচিত্র।
‘স্বাধীন’ শব্দটি তার প্রাণের গহীন থেকে উচ্চারিত হলো - ‘ভাইয়েরা আমার লক্ষ মানুষের প্রাণদানের পর আজ আমার দেশ স্বাধীন হয়েছে। আজ আমার জীবনের সাধ পূর্ণ হয়েছে। বাংলাদেশ আজ স্বাধীন।’(প্রাগুক্ত)
এই স্বাধীন দেশের প্রথম সংবর্ধনায় তিনি তার ভাষণে আত্মত্যাগী মানুষের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়েছেন। শহিদদের জন্য অন্তরের অনুভূতি ব্যক্ত করেছেন। বলেছেন- ‘আমার বাংলায় আজ এক বিরাট ত্যাগের বিনিময়ে স্বাধীনতা এসেছে। তিরিশ লক্ষ লোক মারা গেছে। আপনারা জীবন দিয়েছেন, কষ্ট করেছেন। বাংলার মানুষ মুক্ত হাওয়ায় বাস করবে, খেয়ে-পরে সুখে থাকবে, এটাই ছিল আমার সাধনা।’(প্রাগুক্ত)
তিনি সেদিন ভারতের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন। তার মুক্তির জন্য ইন্দিরা গান্ধীর প্রচেষ্টাকে স্মরণ করেছেন। আর বড় হৃদয়ের মানুষ ছিলেন বলেই শত্রু পাকিস্তানিদেরও মঙ্গল কামনা করেছেন। কারণ বাংলাদেশ তখন স্বাধীন। এর চেয়ে বড় আর কোনো চাওয়া ছিল না তার।
১০ জানুয়ারির ভাষণেই বঙ্গবন্ধু যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের ঘোষণা দেন। তিনি বলেন- ‘অনেকেই আমার বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিয়েছে আমি তাদের জানি। ইয়াহিয়া সরকারের সাথে যারা সক্রিয়ভাবে সহযোগিতা করেছে তাদের বিরুদ্ধে যথাসময়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’(প্রাগুক্ত)
তিনি আরও উল্লেখ করে বলেছিলেন- ‘২৫ মার্চ থেকে এ পর্যন্ত ৯ মাসে বর্বর পাকিস্তানি সেনাবাহিনী এদেশের প্রায় সব বুদ্ধিজীবীকে হত্যা করেছে। তারা আমার মানুষকে হত্যা করেছে। হাজার হাজার মা-বোনের সম্ভ্রম নষ্ট করেছে।’(প্রাগুক্ত)
বিশ্ব মানবতার ইতিহাসে জঘন্যতম কুকীর্তির তদন্ত হওয়া দরকার বলেই পরবর্তীকালে ১১ হাজার কুখ্যাত যুদ্ধাপরাধীদের কারাগারে আটকও রাখা হয়েছিল। কিন্তু ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টে সপরিবারে জাতির পিতাকে নির্মমভাবে হত্যা করার পরে জেনারেল জিয়া ক্ষমতা গ্রহণ করে তাদের জেল থেকে ছেড়ে দেন।
বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন নিয়ে এদেশের শিল্পী-সাহিত্যিকরা অনুভূতি ব্যক্ত করেছেন সৃজনশীলতার উঠোনে। যেমন, সিকান্দার আবু জাফরের ‘সে নাম মুজিব’ ও আবুবকর সিদ্দিকের ‘প্রশ্ন’ জাতির পিতার স্বদেশ প্রত্যাবর্তন নিয়ে লেখা কবিতা। ফিরে আসা বঙ্গবন্ধুর চোখে অশ্রু ছিল সেদিন। কোনো কোনো কবি সেই দৃশ্যও কবিতার চরণে উপস্থাপন করেছেন। (শেখ মুজিব একটি লাল গোলাপ, প্রাগুক্ত, পৃ ৫৬৯) আবুবকর সিদ্দিক ‘বঙ্গবন্ধুর বাংলায় ফেরা’ কবিতায় বঙ্গবন্ধুর ‘স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের আনন্দ এবং বিরান বাংলায় স্বজন হারানোর বেদনাকে পাশাপাশি উপস্থাপন করেছেন।’(সাইফুল্লাহ মাহমুদ দুলাল, আমি তোমাদেরই লোক, পৃ ৫৭১) কামাল চৌধুরীর ‘১০ জানুয়ারি ১৯৭২’- এ বিষয়ের আরেকটি উল্লেখযোগ্য কবিতা। বঙ্গবন্ধু ফিরে এলেন, মানুষের ভালোবাসায় সিক্ত হলেন। কিন্তু যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশের হাল টেনে ধরলেন, মানুষ আশায় বুক বাঁধল-
‘চতুর্দিকে শোক, আহাজারি, ধ্বংসচিহ্ন, পোড়াগ্রাম, বিধ্বস্ত জনপদ
তিনি ফিরে আসলেন, ধ্বংসস্তূপের ভেতর ফুটে উঠল কৃষ্ণচূড়া
মুকুলিত হ’ল অপেক্ষার শিমুল
শোক থেকে জেগে উঠল স্বপ্ন, রক্তে বাজল দারুণ দামামা
বেদনার অশ্রুরেখা মুছে ফেলে
‘জয় বাংলা, জয় বাংলা’ ব’লে হেসে উঠল
লতাগুল্ম, ধূলিকণা, পরিপূর্ণ দীপ্ত পতাকা।’(কবিতায় বঙ্গবন্ধু, ২০১২, পৃ ৩৭)
সিকানদার আবু জাফর রচিত ‘ফিরে আসছেন শেখ মুজিব’ সম্পর্কে কবীর চৌধুরী লিখেছেন, ‘বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশের মাটিতে, তার মুক্তস্বদেশে ফিরে আসেন ১৯৭২ সালের ১০ই জানুয়ারি। বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের আগেই আন্তর্জাতিক তৎপরতা ও পাকিস্তানের বাস্তব পরিস্থিতির ফলে তখন তার মুক্তি ও বাংলাদেশে ফিরে আসার বিষয়টি সুনিশ্চিত হয়ে যায়, তখন সংগ্রামী কবি সিকানদার আবু জাফর ‘ফিরে আসছেন শেখ মুজিব’ নামে একটি চমৎকার কবিতা লেখেন। সিকানদার আবু জাফর তখন আরও বহু দেশত্যাগী বাংলাদেশের মানুষের মতো ভারতের পশ্চিম বাঙলায় ছিলেন।’(কবীর চৌধুরী, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব, বাঙালি জাতীয়তাবাদ মুক্তবুদ্ধির চর্চা, র্যাডিকেল এশিয়া পাবলিকেশন্স, লন্ডন, ১৯৯২, পৃ ১১) মূলত কবি এ কবিতায় বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতা সংগ্রামে ডাকের সফলতার চিত্র তুলে ধরেছেন।
বাঙালির ত্যাগ-তিতিক্ষার ফল স্থপতিরূপে বঙ্গবন্ধুর ফিরে আসা। তার প্রত্যাবর্তন আমাদের স্বপ্নগুলো বাস্তবে পরিণত করে। কবি জানতেন বঙ্গবন্ধু ফিরে আসবেন। ৭ মার্চের ডাক ব্যর্থ হতে পারে না। মা- বোনদের ইজ্জত বৃথা যেতে পারে না। নির্মলেন্দু গুণের ‘প্রত্যাবর্তনের আনন্দ’ বঙ্গবন্ধুর আত্মকথনে রচিত। স্বদেশে ফিরে আসা বীরের চেতনার নানা প্রান্ত উন্মোচিত হয়েছে এখানে। পঁচাত্তরের পনের আগস্ট ও পরবর্তীতে সত্যের জয়গান সম্পর্কে জাতির পিতার কথনে কবির চরণ এরকম-
‘আনন্দের ঘোর কাটতে না কাটতেই,
একাত্তরের পরাজিত এজিদবাহিনী
রাত্রির অন্ধকারে সংগঠিত হয়ে পঁচাত্তরের পনেরই আগস্ট
সপরিবারে হত্যা করলো আমাকে।...
বহুদিন পর আজ সত্য জয়ী হয়েছে-,
সংগ্রাম জয়ী হয়েছে, সুন্দর জয়ী হয়েছে।
আজ আমার খুব আনন্দের দিন।’( মুজিবমঙ্গল, ২০১২, পৃ ৬১-৬২ )
কবি আসাদ মান্নানের কবিতায় বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে বাল্যকালের অভিজ্ঞতাকে বর্তমানের বোধিতে ধরা, বৃহত্তর পরিসরে জাতির পিতার চিরন্তন ভাবমূর্তিকে প্রকাশ করা সত্যিই অভিনব। কখনোবা আবেগের সঙ্গে যুক্তির বিন্যাসে ও লেখনী নিঃসৃত চিত্রকল্পসজ্জায় উপলব্ধিময় আখ্যানের রূপ দৃশ্যমান হয়ে উঠেছে। বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে কবির চিন্তা পাঠকের মাঝে ছড়িয়ে দিয়েছেন প্রযত্নে। ভাষার নানা নির্দেশ ও ইতিহাস অনুসন্ধিৎসার উপস্থাপনা এবং বাংলা কবিতার ঐতিহ্য সংলগ্নতায় আসাদ মান্নান অনন্য। ১০ জানুয়ারি নিয়ে লেখা ‘পিতা তুমি ফিরে এলে’ কবিতার একটি অংশ-
‘নতুন আশার টানে ছুটে যায় আলো জ্বালতে গঞ্জের বাজারে-
কামার কুমার কুলি জেলে তাঁতী এক পায়ে নেমেছে রাস্তায়:
ভয়াবহ অই দীর্ঘ রক্তপথ পার হয়ে আলোর নাবিক
তুমি পিতা ফিরে এলে বীর বেশে বিজয়ী যোদ্ধার মতো-
স্বপ্নের জাহাজে চড়ে তীরে এসে দাঁড়িয়েছ মুক্তির হাওয়ায়;
মাঠে মাঠে সোনা ফলে, কৃষকের হাসি জমে ধানের গোলায়:
তোমার আভার কাছে পরাজিত সূর্যটাকে মেঘের আড়ালে
ঢেকে রাখে দুঃখিনী মুজিব বাংলা- বাঙালির স্বাধীন ভূখণ্ড।’
এছাড়া প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার রচনায়, হাবীবুল্লাহ সিরাজীর কবিতায় কিংবা অজস্র প্রবন্ধ-নিবন্ধে বঙ্গবন্ধুর ফিরে আসা পরিপূর্ণ মুক্তির দিশা হিসেবে এবং স্বাধীনতা অর্জনের সার্থকতায় শোভিত হয়েছে।
বস্তুত ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধুর ফিরে আসা এদেশবাসীর কাছে ছিল বিশ্ব ইতিহাসের অন্যতম আলোড়িত ঘটনা। এজন্য কবিদের অনুভূতি ও মননে সেই সন্দ্বীপন ইতিহাস ও কল্পনায় রঙিন হবে এটাই স্বাভাবিক। কবিতার চরণে সেই দিনটির আনন্দ, উচ্ছ্বাস ফিরে আসার তাৎপর্যে অনন্য হয়ে প্রকাশ পেয়েছে।
লেখক: ড. মিল্টন বিশ্বাস, কবি, কলামিস্ট, সাধারণ সম্পাদক, বাংলাদেশ প্রগতিশীল কলামিস্ট ফোরাম, নির্বাহী কমিটির সদস্য, সম্প্রীতি বাংলাদেশ এবং অধ্যাপক, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়।
মালয়েশিয়ার ব্যবসায়ীদের বাংলাদেশে বিনিয়োগের আহ্বান জানিয়েছেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি বলেছেন, অন্তর্বর্তী সরকার দেশকে ব্যবসাবান্ধব করতে নানাবিধ পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘অতীতে বাংলাদেশে ব্যবসা আমাদের প্রত্যাশা অনুযায়ী এগোয়নি। তবে নতুন বাংলাদেশে অনেক কিছুই নতুনভাবে গড়ে উঠছে, যার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে ব্যবসার সম্ভাবনা।’
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ সম্ভাব্য সব উপায়ে ব্যবসাবান্ধব হতে চেষ্টা করছে। আমি পরিবর্তিত বাংলাদেশে অসীম সম্ভাবনা খুঁজে পেয়েছি।’
অধ্যাপক ইউনূস আজ মঙ্গলবার কুয়ালালামপুরে বাংলাদেশ ও মালয়েশিয়ার মধ্যে বাণিজ্য এবং বিনিয়োগ সুযোগ নিয়ে আয়োজিত এক ব্যবসায়িক ফোরামে এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশে রয়েছে তরুণ ও সৃষ্টিশীল জনগোষ্ঠী। তিনি বিনিয়োগকারীদের বিশ্বজুড়ে বসবাসরত তরুণ বাংলাদেশি প্রবাসীদের সম্ভাবনা কাজে লাগানোর আহ্বান জানান।
বিদেশে থাকা তরুণ বাংলাদেশিদের প্রসঙ্গ টেনে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, তাদের মধ্যে সবসময় বাংলাদেশের জন্য কিছু করার তীব্র আকাঙ্ক্ষা রয়েছে।
বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা) এবং বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষের (বেজা) নির্বাহী চেয়ারম্যান চৌধুরী আশিক মাহমুদ বিন হারুন অনুষ্ঠানের শুরুতে বক্তব্য প্রদান করেন। এতে তিনি বিনিয়োগকারীদের জন্য বাংলাদেশের প্রতিযোগিতামূলক সুবিধা এবং শুল্ক ও অশুল্ক বাধা অপসারণে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রচেষ্টার কথা তুলে ধরেন।
সেলুলার অপারেটর রবি’র প্রধান শেয়ারহোল্ডার, আজিয়াটা গ্রুপের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক বিবেক সুদও বক্তব্য দেন। এতে তিনি বাংলাদেশে আজিয়াটার ২৮ বছরে ব্যবসা সম্প্রসারণ, অংশীদারিত্ব ও যৌথ সাফল্যের কথা তুলে ধরেন।
এ সময় পেট্রোলিয়াম ন্যাশনাল বেরহাদ (পেট্রোনাস)-এর প্রেসিডেন্ট ও গ্রুপ সিইও তেংকু মুহাম্মদ তৌফিক, সার্বভৌম সম্পদ তহবিল খাজানাহ ন্যাশনাল-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক আমিরুল ফেইসাল ওয়ান জাহির, পাম অয়েল কোম্পানি সাইম ডার্বি প্লান্টেশনস, কুয়ালালামপুর কেপং বেরহাদ (কেএলকে), আইওআই কর্পোরেশন এবং ফেলদা গ্লোবাল ভেঞ্চারস (এফজেভি)-এর শীর্ষ কর্মকর্তা, প্রোটন হোল্ডিংস বেরহাদের (প্রোটন) চেয়ারম্যান সৈয়দ ফয়সাল আলবার এবং গ্লোভ প্রস্তুতকারক টপ গ্লাভ কর্পোরেশনের নির্বাহী চেয়ারম্যান লিম উই চাই প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন ।
ব্যবসায়িক এই সমাবেশের আগে মঙ্গলবার পুত্রজায়ায় মালয়েশিয়ার ন্যাশনাল চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি এবং ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বারস অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি -এর মধ্যে একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়।
মালয়েশিয়ার শ্রমবাজারে আরও অধিকসংখ্যক বাংলাদেশী কাজ করার সুযোগ পাবেন বলে আশা প্রকাশ করেছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
মালয়েশিয়া সফরের দ্বিতীয় দিনে তিনি আজ কুয়ালালামপুরে সেদেশের প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিমের সঙ্গে উচ্চ পর্যায়ের বৈঠক এবং দুই দেশের মধ্যে ৫টি সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) এবং তিনটি সহযোগিতামূলক নোট বিনিময় স্বাক্ষরের পর যৌথ সংবাদ সম্মেলনে এ আশা প্রকাশ করেন।
কুয়ালালামপুরের পুত্রজায়ায় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ‘বিপুলসংখ্যক বাংলাদেশী কর্মী মালয়েশিয়ায় কাজ করছে। তারা উপার্জিত অর্থ দেশে পাঠান, যা তাদের পরিবারের সদস্যদের জীবনযাপন, সন্তানের লেখাপড়া এবং ভালো শিক্ষা গ্রহণে সহায়তা করছে। আমরা আশা করি বাংলাদেশের জন্য এই দরজা খোলা থাকবে এবং আমাদের দেশের আরও অধিকসংখ্যক তরুণ-তরুণী এখানে কাজ করার সুযোগ পাবেন।’
বাংলাদেশের কর্মীদের মালয়েশিয়ায় কাজ করার সুযোগ দেওয়ায় দেশটির প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে তিনি আরও বলেন, ‘মালয়েশিয়ার জনগণ তাদের সঙ্গে পরিবারের একজন সদস্য এবং বন্ধুর মত আচরণ করে। এতে তারা খুব খুশি। তারা অর্থ উপার্জনের পাশাপাশি এখান থেকে অনেক কিছু শেখে, যা দেশে ফিরে যাওয়ার পর নিজের ব্যবসা দাঁড় করাতে সহায়ক হয়।’
মালয়েশিয়ার ব্যবসায়ীদের বাংলাদেশে বিনিয়োগের আহ্বান জানিয়ে অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ‘আমরা বাংলাদেশকে একটা উৎপাদনকেন্দ্র হিসেবে গড়ে তুলতে চাই। আপনারা বাংলাদেশে বিনিয়োগ করুন এবং প্রযুক্তি নিয়ে আসুন। আমাদের মানবসম্পদকে কাজে লাগিয়ে আপনারা পণ্য উৎপাদন করে বিদেশে রপ্তানি করতে পারেন।’
একটা টেকসই অর্থনীতি গড়ে তোলার লক্ষ্যে বাংলাদেশকে বিনিয়োগ ও ব্যবসার জন্য উন্মুক্ত করা হয়েছে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
গত বছরের জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে গত বছর ছাত্র-জনতা রাস্তায় নেমেছিল। আন্দোলনের মুখে স্বৈরশাসক বিদায় নিয়েছে। এরপর নতুন সরকারের দায়িত্ব নিয়ে ধ্বংসপ্রাপ্ত দেশে স্থিতিশীলতা ফেরাতে আমরা সহযোগিতা খুঁজছিলাম, আর তখন মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিম বন্ধুর মত আমাদের পাশে দাঁড়িয়েছিলেন। তিনি আমাদের শক্তি জুগিয়েছিলেন।
বাংলাদেশে সঠিক পথ নিশ্চিত করতে দৃঢ় সংকল্পের কথা উল্লেখ করে অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ‘আমরা দেশে শৃঙ্খলা ফেরাতে পেরেছি। অর্থনীতিকে পুনরুদ্ধার করেছি।
ধ্বংসপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠানগুলোকে আবারও কার্যকর করা গেছে। যে কারণে এক বছরের মাথায় এসে আমরা নির্বাচনের প্রস্তুতি নিতে পারছি।’
আগামী ফেব্রুয়ারি মাসে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের কথাও জানান তিনি।
প্রধান উপদেষ্টা রোহিঙ্গা সংকট নিরসন এবং আসিয়ানের সদস্যপদ প্রাপ্তির জন্য মালয়েশিয়ার জোরালো সমর্থন চান।
সংবাদ সম্মেলনে মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিম আশা প্রকাশ করে বলেন, দুই দেশের মধ্যে বিদ্যমান চমৎকার সম্পর্ক উভয় দেশের জনগণের ভাগ্য উন্নয়নে সহায়ক হবে।
কুষ্টিয়ায় এক সপ্তাহে বিজিবির মাদকবিরোধী অভিযানে প্রায় ১ কোটি ৫৭ লক্ষ টাকার মাদক, ১জন অবৈধ অনুপ্রবেশকারী এবং অন্যান্য চোরাচালানী মালামাল আটক করেছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)। মঙ্গলবার (১২ আগস্ট) দুপুরে কুষ্টিয়া ৪৭ বিজিবির পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানানো হয়।
বিজিবি জানায়, সুনির্দিষ্ট গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে কুষ্টিয়া ব্যাটালিয়ন (৪৭ বিজিবি) গত ৫ আগস্ট থেকে ১১ আগস্ট পর্যন্ত ধারাবাহিক অভিযান পরিচালনা করেন। এসময় ১০ বোতল বিদেশী মদ, ২০ বোতল ফেন্সিডিল, ৭০০ গ্রাম হেরোইন, ৫২৮৮ পিস যৌন উত্তেজক ট্যাবলেট, ১৯,১১২ প্যাকেট অবৈধ নকল বিড়ি, ১৪৫০ পিস চকলেট বাজি, ২৩৬৫.৫ কেজি চায়না দুয়াড়ী ও কারেন্ট জাল, ২৫৯৩ কেজি নিষিদ্ধ পলিথিন, ২৭৪০ পিস ডেক্সামিথাশন ট্যাবলেট এবং অবৈধ অনুপ্রবেশের জন্য ১ জন বাংলাদেশী নাগরিক কে আটক করেছে ৪৭ ব্যাটালিয়ন। এসকল আটককৃত মাদকদ্রব্য এবং অন্যান্য চোরাচালানী মালামালের সর্বমোট মূল্য প্রায় ১ কোটি ৫৬ লাখ ৮৪ হাজার ৩১০ টাকা।
কুষ্টিয়া ব্যাটালিয়ন (৪৭ বিজিবি) এর অধিনায়ক লেঃ কর্নেল মাহমুদ মুর্শেদ রহমান পিএসসি বলেন, সীমান্তে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এবং মাদক পাচারসহ সব ধরনের অবৈধ কার্যক্রম প্রতিরোধে কঠোর অবস্থানে রয়েছে ৪৭ বিজিবি। ভবিষ্যতে চোরাকারবারীসহ মাদক আটকে বিজিবি’র কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ অব্যাহত থাকবে।
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের মেয়াদ ১৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বাড়িয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে।
আজ (মঙ্গলবার) মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের মন্ত্রিপরিষদ সচিব ড. শেখ আব্দুর রশীদ স্বাক্ষরিত প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, এ আদেশ অবিলম্বে কার্যকর হবে।
আরও বলা হয়, সরকার গত ১২ ফেব্রুয়ারি জারি করা প্রজ্ঞাপন এস.আর.ও নম্বর ৫৫-আইন/২০২৫ দ্বারা গঠিত জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের মেয়াদ আগামী ১৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বাড়ানো হল।
এর আগে, চলতি বছরের ১২ ফেব্রুয়ারি গঠিত হয় জাতীয় ঐকমত্য কমিশন।
সংবিধান সংস্কার কমিশনের প্রধান অধ্যাপক ড. আলী রীয়াজ এই কমিশনের সহ সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন। কমিশনের অন্য সদস্যরা হলেন, জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের সদস্য ড. মো. আইয়ুব মিয়া, পুলিশ সংস্কার কমিশনের প্রধান সফর রাজ হোসেন, নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের প্রধান বদিউল আলম মজুমদার, বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশনের প্রধান বিচারপতি এমদাদুল হক এবং দুর্নীতি দমন কমিশন সংস্কার কমিশনের প্রধান ড. ইফতেখারুজ্জামান।
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনকে সকল ধরনের সাচিবিক সহায়তা দিচ্ছে আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়।
রাজধানী ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় ট্রাফিক আইন লঙ্ঘনকারীদের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করে গত দুই দিনে ২ হাজার ২৪৬টি মামলা করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) ট্রাফিক বিভাগ।
এছাড়াও অভিযানকালে ৩২২টি গাড়ি ডাম্পিং ও ৯৯টি গাড়ি রেকার করা হয়েছে।
ডিএমপি’র মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন্স বিভাগের উপ-কমিশনার মুহাম্মদ তালেবুর রহমান স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আজ এ তথ্য জানানো হয়।
এতে বলা হয়, সোমবার ডিএমপি’র ট্রাফিক বিভাগ রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে এসব মামলা করে।
ঢাকা মহানগর এলাকায় ট্রাফিক শৃঙ্খলা রক্ষায় ডিএমপি’র ট্রাফিক বিভাগের অভিযান অব্যাহত থাকবে বলে বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়।
জয়পুরহাটে ব্যাংকে টাকা জমা দেওয়ার ভুয়া চালান দিয়ে বাংলাদেশ ফার্টিলাইজার অ্যাসোসিয়েশনের (বাফা) গুদাম থেকে সার তোলার সময় ডিলারের ছেলেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গতকাল সোমবার রাতে গুদামের হিসাব কর্মকর্তা এস এম হাসানুর রহমান বাদী হয়ে তার বিরুদ্ধে সদর থানায় মামলা করেন।
গ্রেপ্তার হাসিব আল মামুন (৩৪) বিসিআইসি ডিলার মেসার্স মামুন ব্রাদার্সের মালিক মামুনুর রশিদের ছেলে। তাদের বাড়ি পাঁচবিবি উপজেলার গোপালপুর গ্রামে। হাসিব ঠিকাদারের প্রতিনিধি হিসেবে বাফার গুদাম থেকে সার উত্তোলন করতেন।
বাফার গুদাম ও মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, গতকাল বিকেলে হাসিব আল মামুন সার উত্তোলন করতে বাফার গুদামে আসেন। তিনি জনতা ব্যাংকের দুটি শাখার সাড়ে ১৬ লাখ টাকার জমা ভাউচারের চালান দাখিল করেন। এর মধ্যে জনতা ব্যাংকের জয়পুরহাট শাখার সাড়ে ৭ লাখ টাকা ও পাঁচবিবি শাখার ৯ লাখ টাকার জমা ভাউচারের চালান। বাফারের হিসাব কর্মকর্তা এস এম হাসানুর রহমান শুধু জনতা ব্যাংকের জয়পুরহাট শাখার সাড়ে সাত লাখ টাকা জমার মুঠোফোনে খুদে বার্তা পান। জনতা ব্যাংকের পাঁচবিবি শাখার ৯ লাখ টাকা জমার খুদে বার্তা পাননি।
হাসিব আল মামুন দুটি জমা ভাউচারের চালানে দ্রুত সার নেওয়ার তাগাদা দিচ্ছিলেন। এতে হিসাব কর্মকর্তার সন্দেহ হয়। তিনি জনতা ব্যাংকের পাঁচবিবি শাখার ব্যবস্থাপকের কাছে ফোন করেন। ব্যাংকের শাখা ব্যবস্থাপক ৯ লাখ টাকার কোনো জমা ভাউচার এ শাখা থেকে ইস্যু করা হয়নি বলে তাকে জানান। পরে হাসিব আল মামুনকে বাফার গুদামে আটকে রাখা হয়। তিনি গুদাম কর্মকর্তাদের কাছে জালিয়াতির কথা স্বীকার করেন। রাত ১০টার দিকে তাকে পুলিশে সোপর্দ করা হয়।
জয়পুরহাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) তামবিরুল ইসলাম বলেন, ভুয়া চালানে সার তোলা চেষ্টা করা হয়েছিল। এ ঘটনায় থানায় একটি মামলা হয়েছে। একজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আজ মঙ্গলবার তাকে আদালতে পাঠানো হবে।
‘প্রযুক্তি নির্ভর যুবশক্তি, বহুপাক্ষিক অংশীদারত্বে অগ্রগতি’ প্রতিপাদ্যে নোয়াখালীতে উদযাপিত হয়েছে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক যুব দিবস।
দিবসটি উপলক্ষে আলোচনা সভা, যুব ঋণের চেক বিতরণ, প্রশিক্ষণ সনদ বিতরণ, সফল আত্মকর্মী ও সফল যুব সংগঠকদের মধ্যে ক্রেস্ট প্রদান করা হয়েছে।
মঙ্গলবার সকাল দশটায় জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সামনে দিবসটির কার্যক্রম উদ্বোধন করেন জেলা প্রশাসক খন্দকার ইশতিয়াক আহমেদ।
যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর নোয়াখালীর উপ-পরিচালক মোঃ ইসহাকের সভাপতিত্বে এ সময় উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মোঃ ইয়াছিন, সহকারী পুলিশ সুপার (চাটখিল সার্কেল) মনীষ দাশ।
উদ্বোধন শেষে জেলার বিভিন্ন যুব সংগঠনের সংগঠকদের অংশগ্রহণে একটি বর্ণাঢ্য র্যালি বের হয়। র্যালিটি শহরের গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে জেলার শিল্পকলা একাডেমিতে গিয়ে শেষ হয়।
র্যালি শেষে জেলা শিল্পকলা একাডেমিতে আলোচনা সভায় অনুষ্ঠিত হয়। এ সময় বিভিন্ন ক্ষেত্রে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত যুবকদের মধ্যে যুব ঋণের চেক বিতরণ, সনদ বিতরণ এবং সফল যুব সংগঠকদের মধ্যে সনদ ও ক্রেস্ট বিতরণ করা হয়।
আলোচনা সভায় নোয়াখালী জেলা প্রশাসক (যুগ্ম সচিব) খন্দকার ইসতিয়াক আহমেদ বলেন, যুবরাই উন্নয়ন ও উৎপাদনের প্রধান হাতিয়ার। তারুণ্যের জয়যাত্রাকে কাজে লাগিয়ে প্রযুক্তিনির্ভর যুবশক্তিকে মানবসম্পদে পরিণত করার লক্ষ্যে কর্মমুখী প্রশিক্ষণ, আত্মকর্মসংস্থান ঋণ, সংগঠনভিত্তিক স্বেচ্ছা ও সেবামূলক কাজে যুবদের সম্পৃক্ত করতে হবে।
মন্তব্য