বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির নাট্যকলা ও চলচ্চিত্র বিভাগের ব্যবস্থাপনায় সপ্তাহব্যাপী ভরত নাট্যশাস্ত্রের অভিনয় কর্মশালা শেষ হয়েছে আজ বুধবার।
ভরত নাট্যশাস্ত্রের ব্যাপক চর্চার দিক উন্মোচনের কথা বিবেচনা করে এই কর্মশালা শুরু হয়েছিল গত ২৬ নভেম্বর।
একাডেমির জাতীয় নাট্যশালার স্টুডিও থিয়েটার হল এবং ৩ নম্বর মহড়াকক্ষে কর্মশালাটি অনুষ্ঠিত হয়।
বাংলাদেশের বিভিন্ন নাট্য সংগঠনের ৩২জন নাট্যকর্মী এই কর্মশালায় অংশ নেন। প্রধান প্রশিক্ষক ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের থিয়েটার অ্যান্ড পারফরমেন্স স্টাডিজ বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ওয়াহিদা মল্লিক জলি।
সমাপনী অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, ‘ত্রিশ বছর যাবৎ এই বিষয় নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠদান করছি। কিন্তু কখনও এ ধরনের কর্মশালা আয়োজন করতে দেখিনি। এই প্রথমবার বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি ভরত নাট্যশাস্ত্রের এই কর্মশালা আয়োজন করেছে। এজন্য একাডেমির মহাপরিচালককে ধন্যবাদ জানাই।’
কর্মশালায় অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে রুহি আফসানা দিপ্তী অনুভুতি প্রকাশ করে বলেন, ‘শিল্প নির্মাণ কাজে কীভাবে ভরত নাট্যশাস্ত্রকে কাজে লাগাতে পারব তা নিয়েই বিশদ আলোচনা হয়েছে।‘
তিনি বলেন, ‘আঙ্গিক, বাচিক, সাত্ত্বিক ও আহার্য অভিনয় নিয়ে পরিষ্কার ধারণা পেয়েছি। রস ভাব নিয়েও আলোচনা হয়েছে। শিল্পী হিসেবে অনেক বেশি সমৃদ্ধ হয়েছি।’
বুধবার সন্ধ্যা ৬টায় একাডেমির জাতীয় নাট্যশালার স্টুডিও থিয়েটার হলে কর্মশালার সমাপনী ও সনদপত্র বিতরণ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
অনলাইনে শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন একাডেমির সচিব মো. নওসাদ হোসেন, নাট্যকলা ও চলচ্চিত্র বিভাগের পরিচালক আফসানা করিম এবং কর্মশালার প্রধান প্রশিক্ষক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের থিয়েটার অ্যান্ড পারফরমেন্স স্টাডিজ বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ওয়াহিদা মল্লিক জলি।
প্রকৃতিতে এসেছে হেমন্ত। আলতো রোদ গায়ে মাখতেই পালায় দুপুর। এরপর বিকেল আর সন্ধ্যা তড়িঘড়ি করেই জানান দেয় নিজেদের অবস্থান। অবশ্য কর্মব্যস্ত জীবনে দুপুর কিংবা সন্ধ্যার হদিস রাখার অবসর মেলে না আমাদের। এখন হেমন্তকাল, এই সময়ে জানান দেয় ছাতিম ফুলের তীব্র সুবাস। সকালে পুবের নরম রোদে ফুলগুলো চিকচিক করে আর হেমন্তের সন্ধ্যার বিবরণ পূর্ণাঙ্গ হয় না ছাতিম ফুলের এই তীব্র ঘ্রাণ ছাড়া। ছাতিম যেন হেমন্তেরই গায়ের ঘ্রাণ।
মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জের শ্রীমঙ্গল-শমশেরনগর সড়কেরে ভানুগাছ বাজারের পাশে দাঁড়িয়ে থাকা ১টি ছাতিম গাছ ও তার ফুলের তীব্র ঘ্রাণই জানিয়ে দেয় হেমন্তের সরব উপস্থিতি। বিশেষ করে সন্ধ্যা থেকে শুরু করে রাতের পুরো সময়টায় এ ঘ্রাণ ছড়ায়। সারা দিনের পরিশ্রম শেষে সন্ধ্যায় প্রকৃতিতে বয়ে বেড়ানো হালকা বাতাসের সঙ্গে থেকে থেকে ভেসে আসে ছাতিম ফুলের এই মিষ্টি ঘ্রাণ। ফুলের সেই সুবাসে মুগ্ধ পথচারীরা।
হেমন্তকালে প্রকৃতিতে সাধারণত তেমন কোনো ফুল ফুটতে দেখা যায় না। প্রকৃতি যখন কিছুটা ফুলশূন্য হয়ে পরে তখন ফোটে ছাতিম। হেমন্তের গোধুলি লগ্ন থেকে রাত অবধি মিষ্টি গন্ধ ছড়িয়ে প্রকৃতিকে মাতিয়ে রাখে এই ছাতিম। বাতাসে ছাতিমের সুবাস অন্য ধরনের মাদকতা ছড়ায় হৃদয়ে।
এক সময় গ্রাম কিংবা শহরে সব জায়গায় দেখা মিলতো ছাতিম গাছের, কিন্তু এখন এটি অবাধ নিধনের শিকার। এখন আর সেভাবে দেখা মেলে না এ গাছের। সন্ধ্যার পর পথ চলতে চলতে হঠাৎ নাকে এসে লাগা বুনো সৌরভের ঝাপটা জানান দেয় এই গাছ ও তার ফুলের অস্তিত্ব। তবে দৃষ্টিসীমার চেয়ে খানিকটা উঁচু বলে সাধারণ অবস্থান থেকে গন্ধ বিলানো ছাতিমের ফুল সহজে চোখে পড়ে না। কিছুটা উঁচু জায়গায় উঠলে দেখা যায় গাছ জুড়ে গুচ্ছ গুচ্ছ হালকা ঘিয়ে রঙের ফুল। মনে হবে যেন কেউ অসংখ্য ফুলের স্তবক তৈরি করে রেখেছে।
শুধু ফুলের সুবাসই নয়, ছাতিম গাছ দেখতেও সুন্দর। এর ওপরের দিকটা ছাতার মতো ছড়ানো। এই গাছ প্রায় ৪০ মিটার পর্যন্ত লম্বা হয়। একাধিক শাখা-প্রশাখা বিশিষ্ট গাছটির ছাল অসমতল ও ধূসর। এর পাতার ওপরের দিক চকচকে আর তলার দিক ধূসর। ১০ থেকে ১৫ সেন্টিমিটার পর্যন্ত লম্বা পাতা হয়। একই মূলাবর্তে চার থেকে সাতটি পর্যন্ত পাতা থাকে। বছরের এ সময়টায় সারা গাছ ভরে গুচ্ছবদ্ধ, তীব্রগন্ধি ছোট ছোট ফুল ফোটে।
গাছটির সংস্কৃত নাম সপ্তপর্ণী। অঞ্চলভেদে একে ছাতিয়ান, ছাইত্যান, ছাতইনসহ নানা নামে ডাকা হয়। ইংরেজিতে একে ডাকা হয় ডেভিলস ট্রি (Devils tree) নামে। ছাতিমের বৈজ্ঞানিক নাম অ্যালস্টনিয়া স্কলারিস (Alstonia scholaris)। স্কলারিস শব্দটির সঙ্গে বিদ্যা অর্থাৎ লেখাপড়ার যোগ আছে। এ ধরনের নামকরণের কারণ, ছাতিমের নরম কাঠ থেকে ব্লাকবোর্ড ও পেনসিল তৈরি হয় বলে। এ ছাড়া ছাতিম কাঠ দিয়ে কোথাও কোথাও কফিন বানানো হয়ে থাকে। গাছটি একসময় খুব দেখা গেলেও এখন তেমন একটা দেখা যায় না এটি পরিবেশের জন্য বেশ উপকারী, তাই আমাদের এই গাছকে সংরক্ষণ করা উচিত।
কলেজ ছাত্র প্রান্ত জানায়, বাড়ি যেতে-আসতে দুইবার ছাতিম গাছটি আমাকে বিমোহিত করে। ছাতিম ফুলের তীব্র ঘ্রাণ আমার বেশ ভালো লাগে। প্রাকৃতিক সুগন্ধে ভরপুর ছাতিম গাছ যাতে এলাকা থেকে বিলীন হয়ে না যায় সে ব্যাপারে সবাই সচেষ্ট হবে এমন প্রত্যাশা করেন এলাকাবাসী।
লেখক নির্মল এস পলাশ বলেন, আমাদের বাড়িতে যেতে-আসতে দুইবার ছাতিম গাছ দুটি আমাকে বিমোহিত করে। আমরা সিলেটিরা ছাতনি গাছ বলি। ছাতিম ফুলের তীব্র ঘ্রাণ আমার বেশ ভালো লাগে বিধায় এর একটি গাছের চারা আমার বাড়িতে রোপণ করতে চেয়েছিলাম কিন্তু শহরের কোনো নার্সারিতে এ গাছের চারা খুঁজে পাইনি। যেহেতু এ গাছটি এখন তেমন একটা খুঁজে পাওয়া যায় না এবং প্রকৃতিতে এর বেশ উপকারিতা আছে তাই এ গাছটির কিছু চারা বাণিজ্যিকভাবে চাষ করা উচিত। প্রাকৃতিক সুগন্ধে ভরপুর ছাতিম গাছ যাতে এলাকা থেকে বিলীন হয়ে না যায়।
হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কার্গো ভিলেজে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় প্রায় ১২ হাজার কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে দাবি করেছে রপ্তানিকারকদের সংগঠন এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ইএবি)। এই পরিস্থিতিতে অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্ত পণ্যের বিপরীতে বিমা দাবি দ্রুত নিষ্পত্তি ও বিমার বাইরে করা পণ্যের ক্ষেত্রে সরকারি বিশেষ তহবিল গঠন করে ক্ষতিপূরণ ও সহায়তা নিশ্চিত করার দাবি জানিয়েছে সংগঠনটি।
গতকাল সোমবার রাজধানীর কারওয়ান বাজারে হোটেল সোনারগাঁওয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব দাবি জানান ইএবি সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম। সংবাদ সম্মেলনে তৈরি পোশাক, বস্ত্রকল, ওষুধ, চামড়াসহ বিভিন্ন খাতের ব্যবসায়ী নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
লিখিত বক্তব্যে মোহাম্মদ হাতেম বলেন, বিমানবন্দরের কার্গো ভিলেজে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় ব্যবসায়ীরা শঙ্কিত। এর মাধ্যমে নিরাপত্তা ব্যবস্থার ব্যাপক দুর্বলতা প্রকাশ পেয়েছে। এ ঘটনায় প্রাথমিকভাবে ১২ হাজার কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়ে থাকতে পারে।
তিনি বলেন, এই অগ্নিকাণ্ডে স্পষ্ট যে কার্গো ভিলেজের নিরাপত্তা ব্যবস্থা কার্যকর নয়। নিরাপত্তা ঘাটতির কারণে কেবল ব্যবসায়িক ক্ষতি নয়, আন্তর্জাতিক ক্রেতাদের কাছেও বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। দীর্ঘদিন ধরে রপ্তানিকারকরা কার্গো ভিলেজে নিরাপত্তাহীনতা, গুদাম ব্যবস্থাপনায় অব্যবস্থাপনা ও মালামাল চুরির অভিযোগ জানিয়ে আসলেও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নেয়নি।
সংবাদ সম্মেলনে ইএবি বলেছে, ওষুধ, তৈরি পোশাক, কৃষিপণ্য, ফলমূল, হিমায়িত খাদ্য ও অন্যান্য রপ্তানিকারক খাত এতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এই ঘটনায় বিদেশি ক্রেতারা বাংলাদেশের রপ্তানি পণ্যের নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কিত হতে পারেন, যা ভবিষ্যতে রপ্তানি চুক্তি ও অর্ডারে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে।
সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে ইএবি সভাপতি বলেন, আগুনের ঘটনাটি যথাযথ গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করতে হবে এবং দ্রুত তদন্ত সম্পন্ন করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে, যাতে ভবিষ্যতে এ ধরনের অঘটন আর না ঘটে।
এ সময় কার্গো ভিলেজের আধুনিকায়ন ও নিরাপত্তা ব্যবস্থার উন্নয়ন, ওষুধ শিল্পের জন্য আলাদা শীততাপনিয়ন্ত্রিত গুদাম স্থাপন, নিরাপদ দূরত্বে রাসায়নিক গুদাম নির্মাণ ও সম্পূর্ণ অটোমেটেড ও আধুনিক প্রযুক্তিনির্ভর গুদাম ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করার দাবি জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।
উল্লেখ, গত শনিবার দুপুর আড়াইটার দিকে বিমানবন্দরের কার্গো এলাকায় আকস্মিকভাবে আগুন লাগে।
সরকারি চাকরিজীবীদের নতুন বেতন নির্ধারণের খসড়া প্রস্তাব চূড়ান্ত করেছে গঠিত জাতীয় বেতন কমিশন। প্রস্তাবে গত ১০ বছরের ব্যবধানে বেতন বাড়ানোর সুপারিশ করা হয়েছে ৯০ থেকে ৯৭ শতাংশ। গতকাল সোমবার এই খসড়া প্রস্তাব চূড়ান্ত করেছে জাতীয় বেতন কমিশন।
প্রস্তাবে গ্রেড-১ এর কর্মকর্তাদের মূল বেতন ১ লাখ ৫০ হাজার ৫৯৪ টাকা করার সুপারিশ করা হয়েছে।
এ ছাড়া গ্রেড-২ এ ১ লাখ ২৭ হাজার ৪২৬ টাকা, গ্রেড-৩ এ ১ লাখ ৯ হাজার ৮৪ টাকা, গ্রেড-৪ এ ৯৬ হাজার ৫৩৪ টাকা, গ্রেড-৫ এ ৮৩ হাজার ২০ টাকা, গ্রেড-৬ এ ৬৮ হাজার ৫৩৯ টাকা, গ্রেড-৭ এ ৫৫ হাজার ৯৯০ টাকা, গ্রেড-৮ এ ৪৪ হাজার ৪০৬ টাকা, গ্রেড-৯ এ ৪২ হাজার ৪৭৫ টাকা, গ্রেড-১০ এ ৩০ হাজার ৮৯১ টাকা মূল বেতনের পস্তাব করা হয়েছে।
অন্যদিকে গ্রেড-১১ তে ২৪ হাজার ১৩৪ টাকা, গ্রেড-১২ তে ২১ হাজার ৮১৭ টাকা, গ্রেড-১৩ তে ২১ হাজার ২৩৮ টাকা, গ্রেড-১৪ তে ১৯ হাজার ৬৯৩ টাকা, গ্রেড-১৫ তে ১৮ হাজার ৭২৮ টাকা, গ্রেড-১৬ তে ১৭ হাজার ৯৫৫, গ্রেড-১৭ তে ১৭ হাজার ৩৭৬ টাকা, গ্রেড-১৮ তে ১৬ হাজার ৯৯০ টাকা, গ্রেড-১৯ তে ১৬ হাজার ৪৪১ টাকা এবং গ্রেড-২০ এর কর্মচারীদের জন্য ১৫ হাজার ৯২৮ টাকা মূল বেতন নির্ধারণের প্রস্তাব দিয়েছে জাতীয় বেতন কমিশন।
এর আগে মূল্যস্ফীতির চাপ সামলাতে সরকারি কর্মচারীদের বেতন বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেয় অন্তর্বর্তী সরকার। এজন্য গত ২৭ জুলাই গঠন করা হয় জাতীয় বেতন কমিশন।
যারা চূড়ান্ত প্রতিবেদন দিতে চায় নির্ধারিত সময়ের আগে ভোটের আগেই, অর্থাৎ আগামী মাস ডিসেম্বরে।
এরই মাঝে চূড়ান্ত করা হয়েছে সরকারি কর্মচারীদের বেতন কাঠামোর খসড়া। গত ১০ বছরের মূল্যস্ফীতি বিবেচনায় ২০৩০ সালে বেতন কত বাড়তে পারে, সেটারও একটা সুপারিশ দিচ্ছে এই কমিশন।
অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ সম্প্রতি গণমাধ্যমকে জানান, পে-কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়নে যে অতিরিক্ত অর্থের প্রয়োজন হবে, তা সংশোধিত বাজেটে বরাদ্দ রাখা হবে। ডিসেম্বরে চলতি বাজেট সংশোধনের কাজ শুরু হবে। তিনি আরও বলেন, পে-কমিশনের গেজেট প্রকাশের ওপর এ বাস্তবায়ন নির্ভর করবে। তবে আগামী বছরের শুরুতে এটি কার্যকর হতে পারে।
এদিকে সরকারি মন্ত্রণালয়, বিভাগ ও অধীনস্থ দপ্তরগুলোর নিয়োগ ও পদোন্নতি সংক্রান্ত কার্যক্রমে অংশগ্রহণকারী কর্মকর্তাদের সম্মানী উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়ানো হয়েছে। এ বিষয়ে গতকাল সোমবার একটি প্রজ্ঞাপন জারি করেছে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ। নতুন কাঠামো অনুযায়ী, সম্মানীর ধরন ১১টি থেকে বাড়িয়ে ১৩টি করা হয়েছে। যা ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসের পর সংশোধন করা হলো।
প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী, প্রশ্নপত্র প্রণয়নের সম্মানী ১ হাজার টাকা বাড়িয়ে জনপ্রতি ৬ হাজার টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। বিভাগীয় নির্বাচন ও পদোন্নতি কমিটির সদস্যরা প্রতি সভায় ৬ হাজার টাকা করে পাবেন। এক্ষেত্রেও এক হাজার টাকা করে বাড়ানো হয়েছে। মৌখিক ও ব্যবহারিক পরীক্ষার বোর্ডের সদস্য এবং বিষয়বিশেষজ্ঞরাও প্রতিদিন ৬ হাজার টাকা করে সম্মানী পাবেন।
উত্তরপত্র মূল্যায়নের ক্ষেত্রে পূর্ণাঙ্গ উত্তরপত্রের জন্য ১২০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ১৩০ টাকা এবং অবজেকটিভ উত্তরপত্রের জন্য ৩০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৩৫ টাকা করা হয়েছে। দুপুরের খাবার বাবদ বরাদ্দ সাড়ে ৪৫০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৫০০ টাকা করা হয়েছে।
পরীক্ষা কার্যক্রমে জড়িত সহায়ক কর্মীদের জন্য নতুন ভাতার হার নির্ধারণ করা হয়েছে ৮০০ থেকে ১ হাজার ২০০ টাকার মধ্যে, যা তাদের পদমর্যাদা অনুযায়ী প্রদান করা হবে। পরীক্ষাকেন্দ্রের প্রধানের মনোনীত সমন্বয়কারী পাবেন ৩ হাজার ৫০০ টাকা এবং লিখিত পরীক্ষার কেন্দ্র পরিদর্শক পাবেন প্রতিদিন ১ হাজার ৮০০ টাকা।
এছাড়া, নিয়োগ ও পদোন্নতি কার্যক্রমে অন্যান্য আনুষঙ্গিক খরচের জন্য সর্বোচ্চ ৮ হাজার টাকার সীমা নির্ধারণ করা হয়েছে। অর্থ মন্ত্রণালয়ের এই সিদ্ধান্ত প্রশাসনিক কার্যক্রম আরও গতিশীল করবে এবং সরকারি মানবসম্পদ ব্যবস্থাপনায় জড়িত কর্মকর্তাদের অংশগ্রহণে উৎসাহ যোগাবে বলে আশা করা হচ্ছে।
কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলার আল্লারদর্গা বাজারে অবস্থিত সততা ক্লিনিক এ ক্লিনিক ব্যবসার আড়ালে দীর্ঘদিন ধরে দেহ ব্যবসা পরিচালনার অভিযোগে এলাকাবাসী এক অভিযুক্তকে হাতেনাতে আটক করেছে। সোমবার (২০ অক্টোবর) রাত ৮টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। পরে দৌলতপুর থানার পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, সততা ক্লিনিকের মালিক আব্দুল মোমিন দীর্ঘদিন ধরে পার্শ্ববর্তী জেলা থেকে নারীদের এনে ক্লিনিকের আড়ালে দেহ ব্যবসা চালিয়ে আসছিলেন। বিষয়টি নিয়ে এলাকাবাসী একাধিকবার সাবেক এমপি রেজাউল হক চৌধুরীর কাছে অভিযোগ করলেও কোনো কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ রয়েছে। মাঝেমধ্যে সন্দেহজনক নারীদের সেখানে দেখা যায় বলেও অভিযোগ করেন তারা। সোমবার রাত আটটার দিকে এলাকাবাসীর সন্দেহজনক অবস্থায় সাতক্ষীরার এক নারী ও ওই এলাকার এক পুরুষকে হাতেনাতে ধরে। পরে পুলিশে খবর দিলে পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে।
এ বিষয়ে ক্লিনিকের মালিক মমিন মোল্লাকে ফোন দিলে তিনি তার ফুপাতো ভাইকে দিয়ে ফোন রিসিব করান এবং পরে কথা বলতে চান।
এ বিষয়ে ক্লিনিক মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আতিয়ার রহমান বলেন, ক্লিনিক ব্যবসার আড়ালে দেহ ব্যবসা অভিযোগে এলাকাবাসী হাতেনাতে আটক করেছে এমন খবর শুনেছি। তিনি আরও বলেন, এর আগেও এ ধরনের কথা শুনেছি। সে আমাদের সমিতির সদস্য না হওয়ায় আমরা সরাসরি কোনো ব্যবস্থা নিতে পারিনি। তবে পুলিশ তদন্ত করছেন। তদন্ত শেষে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবেন।
ঘটনার বিষয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মো. তৌহিদুল হাসান তুহিনের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
দৌলতপুর থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) আখতারুজ্জামান লিটন বলেন, খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হয়। বতর্মানে পরিস্থিতি পুলিশের নিয়ন্ত্রণে। ক্লিনিকের আড়ালে দেহ ব্যবসার অভিযোগের বিষয়ে তদন্ত করে সত্যতা পেলে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
অভাব-অনটনের মধ্যেও হার মানেননি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগর পৌর এলাকার সুহাতা গ্রামের সুমাইয়া আক্তার। সংসারের ভার সামলে, মায়ের সঙ্গে নকশিকাঁথা সেলাই ও টিউশনি করে নিজের পড়াশোনার খরচ জোগাড় করে ২০২৫ সালের এইচএসসি পরীক্ষায় নবীনগর মহিলা কলেজের মানবিক বিভাগ থেকে জিপিএ-৫ অর্জন করেছেন তিনি।
যেখানে এ বছর এইচএসসি পরীক্ষার ফলাফল শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের হতাশ করেছে, সেখানে সুমাইয়ার এ সাফল্য এলাকাজুড়ে আলোচনার জন্ম দিয়েছে। এর আগে এসএসসি পরীক্ষাতেও একই কৃতিত্ব দেখিয়েছিলেন তিনি।
সুমাইয়ার পিতা মো. জীবন মিয়া পেশায় ইজি বাইকচালক। সীমিত আয়ে সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হয় তাদের। তাই মা পারভীন আক্তার বাড়িতে মানুষের অর্ডার অনুযায়ী ১০০০ থেকে ১৫০০ টাকায় কাঁথা সেলাইয়ের কাজ করেন। মা-মেয়ের এই আয়ে চলে সংসার ও সুমাইয়ার পড়াশোনা। পাশাপাশি তিনি কয়েকজন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীকে প্রাইভেট পড়ান। চাচা স্বপন মিয়ার অনুপ্রেরণায় নিয়মিত গুঞ্জন পাঠাগারে পড়াশোনা করেন সুমাইয়া।
সুমাইয়া বলেন, “আমার বাবা ঋণগ্রস্ত, অটোরিকশা চালিয়ে কিস্তি শোধ করতে হয়। ভবিষ্যতের পড়াশোনা নিয়ে চিন্তায় আছি, তবে আমি পড়াশোনা চালিয়ে যেতে চাই — প্রয়োজনে আরও পরিশ্রম করব।”
বইমজুর হিসেবে পরিচিত তার চাচা হাবিবুর রহমান স্বপন বলেন, “সুমাইয়া অত্যন্ত মেধাবী ও পরিশ্রমী। দর্জি কাজ, কাঁথা সেলাই এবং টিউশনি করে এসএসসি ও এইচএসসিতে জিপিএ-৫ অর্জন করেছে। যারা তার পাশে ছিলেন, বিশেষ করে শিক্ষকমণ্ডলী, তাদের প্রতি আমরা কৃতজ্ঞ। মেয়েটি যেন উচ্চশিক্ষা নিতে পারে, সে জন্য সমাজের দয়ালু মানুষের সহযোগিতা প্রয়োজন।”
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বৈঠকে বসছে বিএনপির একটি উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধি দল। মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এই প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেবেন।
মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৬টায় রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। বিএনপি চেয়ারপারসনের প্রেস উইং থেকে বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়েছে।
এর আগে গত ৩১ আগস্ট প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠক করে বিএনপির প্রতিনিধিদল।
সাতক্ষীরার কলারোয়ায় দুই কন্যার পর আবারও কন্যা শিশু জন্ম হওয়ায় পাঁচ দিনের নবজাতককে খালে ফেলে হত্যার অভিযোগ উঠেছে এক মায়ের বিরুদ্ধে। পুলিশ অভিযুক্ত মা শারমিন আক্তারকে (৩২) গ্রেপ্তার করেছে।
সোমবার (২০ অক্টোবর) রাত পৌনে ১২টার দিকে উপজেলার রঘুনাথপুর গ্রামে ঘটনাটি ঘটেছে। মঙ্গলবার (২১ অক্টোবর) বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন কলারোয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শেখ সাইফুল ইসলাম।
তিনি জানান, সোমবার রাত ৮টার দিকে শিশুটির বাবা ইব্রাহিম খলিল (৪২) থানায় এসে নবজাতক নিখোঁজের বিষয়ে একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করতে চান। তবে তার বক্তব্য সন্দেহজনক মনে হলে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে শিশুর মা শারমিনের সঙ্গে কথা বলে।
জিজ্ঞাসাবাদে শারমিন আক্তার জানান, তাদের আগেই পাঁচ বছর ও দেড় বছরের দুটি কন্যাসন্তান রয়েছে। পর পর কন্যা সন্তান জন্ম হওয়ায় তিনি ক্ষোভের বশে নবজাতক শিশুটিকে বাড়ির পাশের খালে ফেলে দেন।
পরে তার স্বীকারোক্তি অনুযায়ী পুলিশ খালের কচুরিপনার ভেতর থেকে নবজাতকের মরদেহ উদ্ধার করে। ওই অবস্থায় নবজাতককে হাসপাতলে নেওয়া হলে চিকিৎসক মৃতের বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
কলারোয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শেখ সাইফুল ইসলাম বলেন, মৃত শিশুর দাদি খাদিজা খাতুন বাদী হয়ে থানায় মামলা দায়ের করেছেন। মামলার পর গ্রেপ্তার শারমিন আক্তারকে মঙ্গলবার আদালতের মাধ্যমে জেল হাজতে পাঠানো হয়েছে। শিশুর ডিএনএ নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছে।
ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন সাতক্ষীরার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মিঠুন সরকার, ডিবি ও পিবিআই কর্মকর্তাসহ স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা।
মন্তব্য