অ্যাকাডেমি অব আমেরিকান পোয়েটস-এর চেয়ারম্যান মাইকেল জ্যাকবস এক বিবৃতিতে বলেছেন, ‘তার কবিতা, তার সামগ্রিক কাজ এবং তার স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্যমণ্ডিত কণ্ঠস্বর মানব-পরিস্থিতিকে স্মরণীয় ও উত্তেজনাকর ভাষায় উপস্থাপন করে।’ জ্যাকব্স তার আগে বলেছেন, ‘আমাদের সবচেয়ে খ্যাতিমান আমেরিকান কবি হিসেবে লুইস গ্লুক এ বছর সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পাওয়ায় আমরা রোমাঞ্চিত।’
আমেরিকান কবিসমাজ যে রোমাঞ্চিত হয়েছে তার আরও প্রমাণ মেলে ক্লডিয়া র্যাঙ্কিনের কথায়। ক্লডিয়া র্যাঙ্কিন অপেক্ষাকৃত তরুণ কবি, ‘সিটিজেন’ ও ‘জাস্ট আস’ নামে দুটি সাড়া জাগানো বইয়ের লেখক। লুইস গ্লুকের অধীনে অধ্যয়ন করেছেন ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ে, আর এখন ওই বিশ্ববিদ্যালয়েই গ্লুকের সহকর্মী তিনি। কবি হিসেবে গ্লুকের পৃষ্ঠপোষকতাও পেয়েছেন বরাবর এবং তার কথায়, ‘আমার যখন ১৯ বছর বয়স আর জানার চেষ্টা করছি কবিতাশৈলীর ভিতরে কী আছে, তিনি তখন আমার প্রতি কখনও যে প্রাণময়তা, কখনও যে নিষ্ঠা দেখিয়েছেন তা ভোলার নয়।’ এরপর ক্লডিয়া বলেছেন সম্ভবত সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কথাটি- ‘তার মধ্যে মাঝারিপনার কোনও জায়গা ছিল না, মিথ্যা প্রশংসার কোনও জায়গা ছিল না। লুইস যখন কথা বলেন, তখন তাকে আপনি বিশ্বাস করবেন, কেননা সভ্যতার আড়ালে নিজেকে গোপন করেন না তিনি।’
লুইস গ্লুক সম্পর্কে উচ্ছ্বসিত মনোভাব নোবেল পুরস্কার পাওয়ার আগে থেকেই ছিল আমেরিকান কবিসমাজে। ডাব্লিউ আর মোসেস, র্যান্ডল জ্যারেল, জর্জ ম্যারিওন ও’ডনেল, জন বেরিম্যান, মেরি বার্নার্ড প্রমুখ কবিও লুইসে মুগ্ধ। যদিও গ্লুকের পূর্বসূরীদের মধ্যে রবার্ট ফ্রস্ট বা গোয়েন্ডোলিন ব্রুক্স বা ওয়ালেস স্টিভেন্সকে বছরের পর বছর পাশ কাটিয়ে গিয়েছিল নোবেল কমিটি। তবে তাদের এবারকার নির্বাচন নিয়ে কোনও সংশয় নেই, অন্তত আমেরিকান কবিসমাজের মধ্যে। তারা ‘অকপট ও আপসহীন’ হিসেবে প্রভূত প্রশংসা করেছে লুইসের। আর ম্যাসাচুসেটসের কেমব্রিজে নিজের বাড়ির বাইরে লুইস নোবেল পুরস্কারপ্রাপ্তির প্রথম প্রতিক্রিয়ায় সাংবাদিকদের বলেছেন, তিনি ‘আলোড়ন, উল্লাস আর কৃতজ্ঞতা’ অনুভব করছেন।
পরে তিনি বলেছেন, ‘পার্থিব পুরস্কার বিশ্বে অস্তিত্বশীল থাকাটাকে সহজ করে দেয়। এটা আপনাকে একটা ভালো কাজ পাওয়ার অবস্থায় নিয়ে যায়। মানে হলো, একটা বিমানে চড়ার পক্ষে আপনি মোটা টাকা খরচ করতে পারেন। কিন্তু আমি যা চাই তার প্রতীক হিসেবে- এটা আমার জীবনকালে আমার সত্তাকে ধারণ করতে সক্ষম নয়। আমি মৃত্যুর পর বেঁচে থাকতে চাই, সেই প্রাচীন ধারায়। আর জানার উপায় নেই তা হবে কি না, জানা যাবেও না, আমার মৃতদেহের ওপর কতগুলো নীল রিবন এঁটে দেওয়া হলে তাতে কিছু আসে যায় না।’
লুইস এলিজাবেথ গ্লুকের জন্ম ১৯৪৩ সালের ২২ এপ্রিল। যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক সিটিতে জন্মগ্রহণ করলেও বেড়ে ওঠেন লং আইল্যান্ডে। তার বাবা ড্যানিয়েল গ্লুক ছিলেন ব্যবসায়ী, মা বিয়াট্রিস গ্লুক ছিলেন গৃহিনী। তাদের দুই মেয়ের মধ্যে লুইস ছিলেন বড়। মা ও বাবা উভয়ের পূর্বপুরুষের দিক থেকে লুইসের ধমনীতে প্রবাহিত হচ্ছে পূর্ব ইউরোপীয় ইহুদি রক্ত। তার বাবার লেখক হওয়ার আকাঙ্ক্ষা ছিল। কিন্তু ভগ্নিপতির সঙ্গে ব্যবসায় ঢুকে পড়েছিলেন। লুইসের মা ছিলেন ওয়েলেস্লি কলেজের গ্র্যাজুয়েট। শৈশবে মা-বাবার কাছ থেকে গ্রিক পুরাণ আর ধ্রুপদী গল্প সম্পর্কে জানতে পেরেছিলেন লুইস। কবিতা লিখতে শুরু করেছিলেন ছোটবেলায়।
কিশোরীকালে অ্যানোরেক্সিয়া নার্ভোসা রোগে আক্রান্ত হয়েছিলেন লুইস। ওই সময়ে ও তারুণ্যে সেটা তার জন্য হয়ে দাঁড়িয়েছিল সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। নিউইয়র্কের হিউলেটে জর্জ ডাব্লিউ হিউলেট হাইস্কুলে শেষের দিকে সাইকোঅ্যানালিটিক্যাল ট্রিটমেন্ট নিতে শুরু করেছিলেন তিনি। কয়েক মাস পর পুনর্বাসনের জন্য স্কুল থেকে তাকে সরিয়ে নেওয়া হয়, তবে ১৯৬১ সালে গ্র্যাজুয়েট হতে সমস্যা হয়নি তার। পরের সাত বছর তার থেরাপি চলে। এই সময়টাকে তিনি গুরুত্ব দিয়েছেন আত্মোপলব্ধির সুযোগ পাওয়ার জন্য। নিজের এই পরিস্থিতির কারণে পূর্ণকালীন ছাত্রী হিসেবে কলেজে ভর্তি হতে পারেননি। পরিবর্তে সারা লরেন্স কলেজে কবিতা বিষয়ক ক্লাসে অধ্যয়ন করেন। ১৯৬৩ থেকে ১৯৬৬ সাল পর্যন্ত কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের স্কুল অব জেনারেল স্টাডিজে কবিতার কর্মশালায় অংশ নেন। অপ্রথাবদ্ধ শিক্ষার্থীদের জন্য তাদের একটা ডিগ্রি প্রোগ্রাম ছিল। তার শিক্ষকদের মধ্যে ছিলেন লিওনি অ্যাডাম্স ও স্ট্যানিও কুনিট্জ। কবি হয়ে ওঠার পথে এ দুজনের অবদান সবসময় স্বীকার করেন লুইস।
কোনও ডিগ্রি না নিয়েই কলম্বিয়া ছাড়ার পর সেক্রেটারিয়াল কাজ দিয়ে কর্মজীবন শুরু করেন লুইস। ১৯৬৭ সালে বিয়ে করেন চার্লস হার্টজ জুনিয়রকে। সেটা শেষ হয় বিচ্ছেদে। ১৯৬৮ সালে প্রকাশিত হয় তার প্রথম কবিতার বই ফার্স্টবর্ন। কিছু ইতিবাচক সমালোচনা হয়েছিল বইটি নিয়ে। ১৯৭১ সালের পর, যখন তিনি ভার্মন্টের গডার্ড কলেজে কবিতার শিক্ষকতা করতেন, অনেক দিন বন্ধ থাকার পর আবার লেখালেখি শুরু হয়। তার দ্বিতীয় কবিতার বই দ্য হাউজ অন মার্শল্যান্ড প্রকাশিত হয় ১৯৭৫ সালে। সেটা তার ‘ব্রেক থ্রু ওয়ার্ক’ হিসেবে স্বীকৃতি পায় অনেক সমালোচকের তরফে। তার মধ্যে তারা আবিষ্কার করেছিলেন ‘একটি বৈশিষ্ট্যমূলক কণ্ঠস্বর’-এর সংকেত।
১৯৭৩ সালে জন্ম নেয় নোয়া; লুইস ও তার পার্টনার জন ড্র্যানাউয়ের ছেলে। যদিও লুইস ড্র্যানাউকে বিয়ে করেন ১৯৭৭ সালে। ১৯৮০ সালে ড্র্যানাউ ও কবি এলেন ব্রায়ান্ট ভয়েটের স্বামী ফ্রান্সিস ভয়েট মিলে প্রতিষ্ঠা করেন নিউ ইংল্যান্ড কুলিনারি ইনস্টিটিউট, বেসরকারি কলেজ। সে বছরই প্রকাশিত হয় লুইসের তৃতীয় কবিতার বই ডিসেন্ডিং ফিগার। কবি গ্রেগ কুজমা এ বইয়ের কিছু বিষয়বস্তুর কারণে ‘চাইল্ড হেটার’ হিসেবে লুইসের সমালোচনা করেন। তবে সামগ্রিকভাবে পাঠকমহলে বইটি সমাদৃত হয়। একই বছর লুইসদের ভার্মন্টের বাড়িতে আগুন ধরে এবং তার অনেক লেখা পুড়ে যায়। এই ট্র্যাজেডি থেকে উঠে এসে লুইস সেইসব কবিতা লেখা শুরু করেন. যা তাকে এনে দেয় সম্মানজনক সব পুরস্কার।
১৯৮৪ সালে লুইস ইংরেজি বিভাগের সিনিয়র লেকচারার হিসেবে যোগ দেন ম্যাসাচুসেটসের উইলিয়ামস কলেজে। ১৯৮৫ সালে প্রকাশিত হয় তার কবিতার বই দ্য ট্রায়াম্ফ অব অ্যাকিলিস। বইটি উচ্ছ্বসিত প্রশংসা পায় সমালোচকদের। তার বিখ্যাত আরও দুটি কবিতার বই অ্যারারাট ও দ্য ওয়াইল্ড আইরিস প্রকাশিত হয় ১৯৯০ ও ১৯৯২ সালে। শেষের বইটি সম্পর্কে পাবলিশার্স উইক্লি মন্তব্য করেন, ‘গুরুত্বপূর্ণ বই’ এবং সমালোচক এলিজাবেথ লান্ড দ্য ক্রিস্টিয়ান সায়েন্স মনিটরে লেখেন, ‘একটি মাইল ফলক কাজ’। এ বইটির জন্য ১৯৯৩ সালের পুলিৎজার পুরস্কারে ভূষিত করা হয় লুইস গ্লুককে। তার অন্যান্য বইয়ের মধ্যে আরও আছে মিডোল্যান্ডস, ভিটা নোভা, দ্য সেভেন এজেস, অ্যাভার্নো, এ ভিলেজ লাইফ, ফেইথফুল অ্যান্ড ভার্চুয়াস নাইট। এছাড়া গদ্যগ্রন্থ প্রুফ্স অ্যান্ড থিওরিস : এসেস অন পোয়েট্রি (১৯৯৪) এবং অ্যামেরিকান অরিজিনালিটি: এসেস অন পোয়েট্রি (২০১৭)।
আমেরিকার সব বড় পুরস্কারই পেয়েছেন লুইস গ্লুক। পুলিৎজার ছাড়াও পেয়েছেন ন্যাশনাল হিউম্যানিটিস মেডাল, ন্যাশনাল বুক অ্যাওয়ার্ড, ন্যাশনাল বুক ক্রিটিকস সার্কল অ্যাওয়ার্ড, বলিঞ্জেন প্রাইজ। লুইস গ্লুক ২০০৩ থেকে ২০০৪ সাল পর্যন্ত ছিলেন পোয়েট লরিয়েট অব দ্য ইউনাইটেড স্টেটস। বাকি ছিল শুধু নোবেল সাহিত্য পুরস্কার, সেই শূন্যতাও এবার পূরণ হয়ে গেল।
প্রমিত হোসেন: অনুবাদক ও সাংবাদিক
পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডা. আবুল কাশেমের বিরুদ্ধে ধর্ষণের শিকার এক শিশুর অভিভাবকের সঙ্গে অত্যন্ত অশালীন ভাষা ব্যবহার ও দুর্ব্যবহারের গুরুতর অভিযোগ উঠেছে।
বৃহস্পতিবার (১৮ সেপ্টেম্বর) হাসপাতালের মহিলা সার্জারি ওয়ার্ডে ঘটা এই ঘটনার একটি বিতর্কিত ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ায় ব্যাপক ক্ষোভ ও সমালোচনার সৃষ্টি হয়েছে।
ভিডিওটিতে দেখা যায়, চিকিৎসক আবুল কাশেম চিকিৎসাধীন ধর্ষণের শিকার শিশুটির বাবা ও স্বজনদের উদ্দেশ্য করে কুরুচিপূর্ণ, অপমানজনক ও হুমকিমূলক ভঙ্গিতে কথা বলছেন।
স্থানীয় ভাষায় তাকে বলতে শোনা যায়— ‘ ‘হাসপাতালডাক তোমরা চিড়িয়াখানা পাইছ, চিড়িয়াখানার মতো ভর্তি হবার আইসো, কোনঠে সাংবাদিক আইসো, দেউনিয়া-মদ্দিনা আইসো, এলাকাবাসী আইসো, পুরুষ-মহিলা আইসো, ছোট-বড় আইসো, এইটা হরিবোল, হরিবোল দেওয়ার জায়গা নাকি? এই ছুটি বাড়ি যাও, আইজকে বিস্তিবার (বৃহস্পতিবার) আর কোথায় রাখব? তোমরা মামলা করলে করো, না করলে…(অশ্লীল ভাষায় কিছু বলেন)।’
এদিকে, বিতর্কিত ভিডিওটি সিভিল সার্জনের নজরে আসার পর রাতেই অভিযুক্ত চিকিৎসক আবুল কাশেমকে শনিবারের (২০ সেপ্টেম্বর) মধ্যে ঘটনার কারণ দর্শানোর (শোকজ) নোটিশ দেয়া হয়েছে।
এ বিষয়ে পঞ্চগড় সার্জন ডা. মো. মিজানুর রহমান জানান, কী ঘটেছিল এবং কেন রোগীর পরিবারের সঙ্গে এমন আচরণ করা হয়েছে, তার সঠিক জবাব চেয়ে নোটিশ করা হয়েছে। গত শুক্রবার ১৯ সেপ্টেম্বর সরকারি ছুটি থাকায় শনিবারের মধ্যে জবাব চাওয়া হয়েছে। বিষয়টি যেহেতু আলোচিত, তাই জবাব পাওয়ার পর তা মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়ে পরবর্তী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।
কুষ্টিয়ার দৌলতপুরে রোগীবাহী একটি অ্যাম্বুলেন্সে ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে। শুক্রবার গভীর রাতে, উপজেলার খলিশাকুণ্ডি ইউনিয়নের পিপুলবাড়িয়া মাঠ এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। ডাকাতেরা রাস্তার ওপর গাছ ফেলে অ্যাম্বুলেন্সটি থামিয়ে, অস্ত্রের মুখে রোগীর স্বজনদের কাছ থেকে প্রায় ৩০ হাজার টাকা ছিনিয়ে নেয়।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, দৌলতপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে স্ট্রোকের রোগী লিটনকে কুষ্টিয়া সদর হাসপাতালে নেওয়া হচ্ছিল। পথিমধ্যে পিপুলবাড়িয়া মাঠের কাছে যাত্রীছাউনির সামনে গাছ ফেলে রাস্তা অবরোধ করে পাঁচ-ছয়জনের এক ডাকাত দল। দেশীয় অস্ত্র হাতে তারা অ্যাম্বুলেন্সের চালক ও ভেতরে থাকা চারজনকে জিম্মি করে অর্থ ছিনিয়ে নেয়।
অ্যাম্বুলেন্স চালক রতন আহমেদ জানান, রাত ১টার দিকে রোগীকে কুষ্টিয়ায় নিয়ে যাচ্ছিলাম। হঠাৎ ডাকাতেরা গাড়ি আটকে আমার গলায় ছুরি ঠেকিয়ে টাকার ব্যাগ নিয়ে যায়। তারা কাউকে কিছু না বলতে কড়া হুমকি দিয়ে ঘটনাস্থল ত্যাগ করে।
রোগীর এক স্বজন জালাল বলেন, আমরা চালককে কাতলামারী হয়ে না যেতে অনুরোধ করেছিলাম, কিন্তু তিনি ওই পথেই যান। পথে এই ঘটনা ঘটে এবং আমাদের কাছ থেকে নগদ ৩০ হাজার টাকা ছিনিয়ে নেয় ডাকাতরা।
দৌলতপুর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. তৌহিদুল হাসান তুহিন জানান, রাত সাড়ে ১২টার দিকে লিটন নামে একজন রোগী হৃদরোগ ও ডায়াবেটিসজনিত সমস্যা নিয়ে ভর্তি হন। উন্নত চিকিৎসার জন্য তাঁকে কুষ্টিয়া সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়েছিল। পথে অ্যাম্বুলেন্সে ডাকাতির ঘটনাটি অত্যন্ত উদ্বেগজনক।
এ বিষয়ে দৌলতপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সোলাইমান শেখ বলেন, এখনো পর্যন্ত আমাদের কাছে কেউ লিখিত অভিযোগ করেনি। অভিযোগ পেলে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, বাংলাদেশকে এখনই পরিচ্ছন্ন, নিরাপদ এবং সাশ্রয়ী জ্বালানি সমাধানের দিকে এগিয়ে যেতে হবে, যাতে দেশ টেকসই অর্থনৈতিক উন্নয়নের নতুন পথে এগিয়ে যেতে পারে।
তিনি বলেন, ‘এখন সময় এসেছে বাংলাদেশকে গুরুত্ব সহকারে বিকল্প পরিচ্ছন্ন জ্বালানি বিবেচনা করার, যার মধ্যে বৃহৎ পরিসরে সৌরবিদ্যুৎ স্থাপন অন্যতম।’
গত বৃহস্পতিবার রাতে অ্যানথ্রোপোসিন ইনস্টিটিউটের চেয়ারম্যান কার্ল পেজ এবং তাঁর সহকর্মীদের সঙ্গে এক ভার্চুয়াল সম্মেলনে দেওয়া বক্তব্যে এ কথা বলেন প্রধান উপদেষ্টা।
অধ্যাপক ইউনূস বলেন, বিশ্বের ঘনবসতিপূর্ণ এবং জলবায়ু ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর একটি হিসেবে বাংলাদেশ দীর্ঘদিন জীবাশ্ম জ্বালানির ওপর নির্ভরশীল থাকার সামর্থ্য রাখে না।
কার্ল পেজ তাঁর বক্তব্যে নতুন প্রজন্মের পারমাণবিক প্রযুক্তি ও হাইব্রিড সিস্টেমের সাম্প্রতিক অগ্রগতির কথা তুলে ধরেন। তিনি বলেন, এসব প্রযুক্তি নির্ভরযোগ্য, শূন্য-কার্বন বিদ্যুৎ উৎপাদনে সক্ষম। বিশেষ করে ভাসমান বা বার্জ-মাউন্টেড রিঅ্যাক্টর তুলনামূলকভাবে কম খরচে, কম রক্ষণাবেক্ষণে, দীর্ঘ সময় ধরে বাংলাদেশের ক্রমবর্ধমান শিল্পখাতের বিদ্যুৎ চাহিদা পূরণ করতে পারবে।
পেজ বলেন, ‘পারমাণবিক শক্তি আজ আর বিশ্বব্যাংকের মতো বড় উন্নয়ন অর্থায়ন সংস্থাগুলোর কাছে নিষিদ্ধ বিষয় নয়। ইন্দোনেশিয়ার মতো দেশ ইতোমধ্যেই তাদের ক্রমবর্ধমান জ্বালানি চাহিদা পূরণে এ প্রযুক্তি গ্রহণ করছে।’
তিনি উল্লেখ করেন, উদ্ভাবনে বাংলাদেশের শক্তিশালী রেকর্ড রয়েছে, তাই দেশটি পরিচ্ছন্ন জ্বালানির রূপান্তরে নেতৃত্ব দিতে পারে। এর সুফল হবে কর্মসংস্থান সৃষ্টি, জ্বালানির দাম স্থিতিশীল রাখা এবং শিল্প খাতের প্রতিযোগিতা বৃদ্ধি।
পেজ আরও বলেন, ‘বাংলাদেশ উদীয়মান প্রযুক্তির জন্য একটি কৌশলগত কেন্দ্র এবং পারমাণবিক উদ্ভাবনে শান্তিপূর্ণ নেতৃত্বের ভূমিকায় অবতীর্ণ হতে পারে।’
অধ্যাপক ইউনূস জানান, অন্তর্বর্তী সরকার সম্প্রতি একটি নতুন জাতীয় বিদ্যুৎনীতি প্রণয়ন করেছে, যাতে সৌর জ্বালানির গ্রহণযোগ্যতা বাড়ানোকে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে।
তবে তিনি উল্লেখ করেন, পারমাণবিক বিকল্প নিয়ে যে কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে কঠোর গবেষণা ও সম্ভাব্যতা যাচাই অপরিহার্য।
তিনি বলেন, ‘আমরা অবশ্যই এসব সুযোগ অনুসন্ধান করব। তবে প্রতিশ্রুতিশীল এসব প্রযুক্তি নিয়ে গভীর গবেষণা দরকার। কোনো সন্দেহ নেই—বাংলাদেশকে জীবাশ্ম জ্বালানির ওপর নির্ভরতা দ্রুত হ্রাস করতেই হবে।’
বৈঠকে আরও উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) নির্বাহী চেয়ারম্যান চৌধুরী আশিক মাহমুদ বিন হারুন এবং সরকারের সিনিয়র সচিব ও এসডিজি বিষয়ক মুখ্য সমন্বয়ক লামিয়া মোরশেদ।
জয়পুরহাটের ক্ষেতলাল উপজেলার শালবন গ্রামে নিখোঁজের তিন দিন পর শিশু তাসনিয়ার বস্তাবন্দি লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। শুক্রবার সন্ধ্যায় প্রতিবেশী একরামুল ইসলামের বাড়ির গোয়ালঘর থেকে তার লাশটি উদ্ধার করা হয়।
নিহত তাসনিয়া আক্তার (১১)উপজেলার শালবন গ্রামের এরশাদ আলীর মেয়ে। স্থানীয় এলাকাবাসী এ ঘটনায় উত্তেজিত হয়ে পড়লে পরিস্থিতি শান্ত করে রাতে লাশটি উদ্ধার করে থানায় নিয়ে যায় পুলিশ।
এ ঘটনায় দুই নারীকে আটক করেছে পুলিশ। আটককৃতরা হলেন, উপজেলার বড়তারা ইউনিয়নের শালবন গ্রামের একরামুল হকের স্ত্রী হাবিবা (৩০) ও একই এলাকার আব্দুল রাজ্জাকের স্ত্রী আঞ্জুয়ারা (৬২)।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্র জানায়, গত তিন দিন ধরে শিশু তাসনিয়াকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না। খোঁজাখুঁজির এক পর্যায়ে শুক্রবার সন্ধ্যায় প্রতিবেশী একরামুলের গোয়ালঘরে বস্তাবন্দি অবস্থায় একটি লাশ দেখতে পান স্থানীয়রা। পরে খবর পেয়ে লাশটি উদ্ধার করে পুলিশ। এ খবর ছড়িয়ে পড়লে একরামুল বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে যায়। তবে তার স্ত্রীকে আটক করা হয়েছে।
ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে ক্ষেতলাল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো.আব্দুল করিম বলেন, খবর পেয়ে শিশুর লাশটি উদ্ধার করা হয়েছে। সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরির পর ময়নাতদন্তের জন্য জয়পুরহাট জেনারেল হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে। এ ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের শনাক্ত ও আটক অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
পতাকা বৈঠকের মাধ্যমে দুই দেশের সিমান্তরক্ষী বাহিনীর যৌথ সম্মতিতে বিভিন্ন সময়ে অবৈধ পথে ভারতে গিয়ে কারাভোগ শেষে ১৮ জন বাংলাদেশী নাগরিককে ফেরত দিয়েছে বিএসএফ।
শুক্রবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে মেহেরপুরের গাংনী উপজেলার কাজিপুর সিমান্তের ১৪৭ নম্বর আন্তর্জাতিক মেইন পিলার কাছে বিজিবি সদস্যদের হাতে তাদের হস্তান্তর করা হয়। সকলেই বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলার বাসিন্দা।
কুষ্টিয়া বিজিবি ৪৭ ব্যাটালিয়নের অধিন কাজিপুর বিওপি-র কোম্পানী কমান্ডার সুবেদার শাহাব উদ্দিন জানান, দেশের বিভিন্ন সিমান্ত দিয়ে বাংলাদশী নাগরিকরা অভৈধ ভাবে ভারতে প্রবেশের সময় ভারতীয় সিমান্তরক্ষী বাহিনীর হাতে ধরা পড়ে।
পরে তাদের বিভিন্ন মেয়াদে দেওয়া সাজা ভোগ শেষে শুক্রবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে পতাকা বৈঠকের মাধ্যমে বিএসএফ সদস্যরা বিজিবিকে হস্তান্তর করে।
ফেরত আসা ১৮জনের তথ্য যাচাই বাছাই শেষে গাংনী থানায় সৌপর্দ করা হবে।
ভারতের গান্দিনা বিএসএফ ১১ ব্যাটেলিয়ন ক্যাম্পের এসি সুনিল কুমার যাদব সহ অন্যান্য সদস্যরা উপস্থিত ছিল।
ভারত থেকে কারাভোগ শেষে বাংলাদেশে ফেরত আসারা হলো, পটুয়াাখালী জেলার মেহেদী, চুয়াডাঙ্গার নুরজাহান, নড়াইলের ফরিদ শেখ, ঝিনাইদহের জিসান মন্ডল, সাইদুল ইসলাম, চাঁদপুরের খোকন বেপারী, সাতক্ষীরার মাজেদা ঢালী, শামিম হোসেন, মিঠুন ঘোষ, খালিদা সরদার, মিলন কুমার, রাজশাহীর আব্দুল কুদ্দুস, যশোরের আহমেদ আলী, মৌলভীবাজারের লিটন দেব, চট্টগ্রামের শুভ মজুমদার, ঢাকার স্বাধীন রাজবংশী, মাদারিপুরের মহিউদ্দিন ফকির, নাসিমা শেখ কুষ্টিয়া।
চুরির অভিযোগে এক যুবককে আটক করে কুকুর দিয়ে কামড়ানোর একটি ভিডিও ভাইরাল হয়েছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে। মধ্যযুগীয় কায়দায় নির্যাতনের অমানবিক এমন ঘটনা ঘটেছে কুমিল্লার বুড়িচং উপজেলার ময়নামতি ইউনিয়নের দেবপুর এলাকায় সাকুরা স্টিল মিলে।
চুরির অভিযোগে নির্যাতিত হওয়া ওই যুবকের কুকুর লেলিয়ে দিয়ে নির্যাতনের এমন ভিডিওটি শ্রী জয় (৩২)। তিনি চান্দিনা উপজেলার মাইজখার গ্রামের শ্রী বিষ্ণুর ছেলে। ভিডিওতে দেখা যায়, দুটি কুকুর ওই যুবককে কামড়াচ্ছে এবং কয়েকজন ব্যক্তি লাঠি হাতে তাকে মারধর করছে। কুকুরের কামড় ও লাঠির আঘাতে অসহায় যুবক চিৎকার করতে থাকে।
স্থানীয়সূত্রে জানা যায়, সাকুরা মিলটিতে প্রায়ই চুরির ঘটনা ঘটছিল। শুক্রবার (১৯ সেপ্টেম্বর) জুমার নামাজের সময় নিরাপত্তা কর্মী ও শ্রমিকরা তাকে ধরার জন্য অপেক্ষা করে। নামাজ শুরু হলে শ্রী জয় মিলের ভেতরে প্রবেশ করলে তাকে কুকুর লেলিয়ে ধরা হয় এবং পরে শারীরিক নির্যাতন চালানো হয়।
এ ঘটনায় র্যাব ও পুলিশ যৌথভাবে অভিযান চালিয়ে শান্ত ইসলাম, মোহাম্মদ লিপু ও মো. সজিব নামে তিনজনকে আটক করেছে।
র্যাব-১১ সিপিসি-২ এর মেজর সাদমান ইবনে আলম জানান, ঘটনাটির তদন্ত চলছে। শনিবার সকাল সাড়ে ১০টায় সংবাদ সম্মেলনে বিস্তারিত জানানো হবে।
বুড়িচং থানার ওসি মোহাম্মদ আজিজুল হক বলেন, ঘটনায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। পরে যৌথ অভিযানে তিনজনকে আটক করা হয়েছে।
রাজধানীর যাত্রাবাড়ীর ধলপুরে একটি বাসায় এসি বিস্ফোরণে একই পরিবারের চারজন দগ্ধ হয়েছেন। শুক্রবার রাত দেড়টার দিকে এ ঘটনা ঘটে।
দগ্ধদের জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে ভর্তি করা হয়েছে। তারা হলেন, মোহাম্মদ তুহিন হোসেন (৩৮), তার স্ত্রী ইভা আক্তার (৩০), দুই ছেলে ৯ বছরের তানভীর ও ৭ বছরের তাওহীদ।
তুহিনের শরীরের ৪৭ শতাংশ ও তানভীরের শরীরের ৪০ শতাংশ দগ্ধ হয়েছে। তাদের অবস্থা সংকটাপন্ন। এছাড়া তাওহীদের ৮ ও ইভা আক্তারের শরীরের ১৫ শতাংশ পুড়ে গেছে।
ইভা আক্তারের বোন ফারজানা আক্তার বলেন, ‘তার বোনসহ পরিবারের সদস্যরা রাতে বাসায় ঘুমিয়ে ছিলেন। হঠাৎ রাত দেড়টার দিকে এসি বিস্ফোরণ হয়।’
মন্তব্য