ইউভাল নোয়া হারারি সম্পর্কে প্রথম শুনি তার বই স্যাপিয়েন্স প্রকাশের পর। পরিচিত মহলের অনেকেই বইটির প্রশংসা করেছেন। আমার স্যাপিয়েন্স পড়া হতে হতে হারারির পরের দুই বই হোমো ডিউস ও টুয়েন্টি ওয়ান লেসনস ফর টুয়েন্টি ফার্স্ট সেঞ্চুরি-ও প্রকাশিত হয়ে গিয়েছিল। অর্থাৎ স্যাপিয়েন্স পড়ার ক্ষেত্রে আমি সম্ভবত পিছিয়ে পড়াদের অন্তর্ভুক্ত। তবে স্যাপিয়েন্স বইটি আমাকে দারুণভাবে নাড়া দিয়েছিল। ৭০ হাজার বছর আগে কীভাবে নানা প্রজাতির মানুষের ভেতর থেকে হোমো স্যাপিয়েন্স তথা আমরাই টিকে গেলাম কিংবা কীভাবেই বা এই পৃথিবী আসলে মানুষের পৃথিবীতে পরিণত হলো, তার এক দারুণ ও ভিন্নরূপী ধারাবর্ণনা করেছেন হারারি তার এই বইতে।
পৃথিবী কিংবা মানুষের ইতিহাস বর্ণনার প্রচলিত পদ্ধতিগুলোর বাইরে গিয়ে ৭০ হাজার বছর আগের বুদ্ধিবৃত্তিক বিপ্লব, ১২ হাজার বছর আগের কৃষি বিপ্লব ও ৫০০ বছর আগের বৈজ্ঞানিক বিপ্লবের মাধ্যমে মানুষের ইতিহাস সাজিয়ে হারারি স্যাপিয়েন্সের অগ্রযাত্রার মূল বাঁকগুলো অনেকটাই নিখুঁতভাবে তুলে ধরতে পেরেছেন বলে মনে হয়। ফলে হারারির একটা প্রভাব নিশ্চিতভাবেই তার পাঠকদের ওপর পড়ার কথা ও তা দীর্ঘদিন বিদ্যমানও থাকার কথা। হাজার হাজার বছরের মানুষের ইতিহাস বা মানুষকে বোঝার জন্যে এই বইটি পড়া বেশ জরুরি। যদিও হারারির লেখনীর কিছু অংশ থেকে তার পশ্চিমমুখীনতা খুব সহজেই ধরা পড়ে।
তবে হারারির এই পশ্চিমমুখীনতা কি আসলে খুব বড় কোনো সমস্যা? হারারি যদি ইসরায়েল তথা মধ্যপ্রাচ্যের মানুষ না হতেন তাহলে হয়তো বিষয়টা নিয়ে আলোচনারও কিছু থাকতো না। কারণ পশ্চিমের কয়জন তাত্ত্বিক পশ্চিম তথা ইউরোপের বাইরের বিশ্ব নিয়ে ভেবেছেন বা ভাবলেও প্রচলিত ধারণার বাইরে এসে ভাবার চেষ্টা করেছেন? সেই সংখ্যা খুব বেশি হওয়ার কথা না। আবার এ কথাও সত্য যে যদি ৫০০ বছর আগের যে বৈজ্ঞানিক বিপ্লবের ফলে স্যাপিয়েন্সের মূল অগ্রযাত্রা শুরু হয়েছে বলে হারারি বলতে চান, সেই বৈজ্ঞানিক অগ্রযাত্রা তো আসলে ইউরোপেরই অগ্রযাত্রা।
চার্চের কর্তৃত্ব থেকে বের হয়ে কিংবা উপনিবেশের গোড়াপত্তন কিংবা পুঁজিবাদের উত্থান, সবকিছুর পেছনে হারারির ভাষায় ছিল মানুষের ‘অজ্ঞতা আবিষ্কার’, প্রাচ্যের মানুষেরা একে বলতে পারেন ইউরোপের মানুষের ‘অজ্ঞতা আবিষ্কার’। তাই সেই সময়ের বৈজ্ঞানিক অগ্রযাত্রাকে ধরে মানুষের ইতিহাস বর্ণনা করতে হলে সম্ভবত হারারির ইউরোপকেন্দ্রিক হওয়া ছাড়া উপায়ও খুব বেশি ছিল না।
কিন্তু আপাত দৃষ্টিতে যা যতটা সরল, তা সম্ভবত ততটা সরল আদৌ নয়। তাই স্যাপিয়েন্স পড়ে হারারির ভূয়সী প্রশংসা করলেও হারারিকে ক্রিটিক্যালি পড়ার একটা প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয় দৃঢ়ভাবে। হারারির দ্বিতীয় বই হোমো ডিউস পড়ার পর তাকে ক্রিটিক্যালি ভাবা ছাড়া রেহাই দিলে আদতে কিছু বিপদের শঙ্কা হয়তো থেকে যায়। স্যাপিয়েন্স-এর উপশিরোনাম ছিল ‘আ ব্রিফ হিস্ট্রি অব হিউম্যানকাইন্ড’, আর হোমো ডিউস-এর উপশিরোনাম হলো ‘আ ব্রিফ হিস্ট্রি অব টুমরো’। হোমো ডিউস-এর এই উপশিরোনাম থেকেই বুঝতে পারা যায় যে এই বইতে হারারি আসলে আলোচনা করতে চাচ্ছেন আগামী দিনগুলোতে আমাদের সাথে কী হতে যাচ্ছে তা নিয়ে।
যেহেতু হারারি হোমো ডিউস-এ ভবিষ্যত সময়ের চিত্র আঁকতে চেয়েছেন, তাই বলতেই হয়, এই বইয়ের অনেক কিছুই হারারির এক ধরনের অনুমান, যা তিনি বর্তমান বাস্তবতা থেকে উপলব্ধি করতে সক্ষম হয়েছেন। বইটির কোনো কোনো অংশে হারারি তা স্বীকার করেও নিয়েছেন, যা করাই স্বাভাবিক।
কিন্তু বিপদ হলো, অতীত ও বর্তমানের আলোকে যে ভবিষ্যতের সম্ভাবনা বা শঙ্কা হারারি করছেন, তাকে একেবারে নিষ্পাপ চিন্তা বা কল্পনা বলে ছেড়ে দিলে বিপদের সম্ভাবনা আছে।
তো হারারি আসলে কী বলেছেন? মোটাদাগে যদি হোমো ডিউস-এ হারারির উপসংহার বলতে হয়, তাহলে বলতে হবে যে প্রাযুক্তিক উন্নয়নের একটি পর্যায়ে রক্তমাংসের মানুষের অনেক কাজই আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সের মাধ্যমে সম্পাদিত হবে এবং ডেটা বা তথ্য হয়ে উঠবে আগামী দিনের ধর্মের মতো একটি বিষয়, কিংবা বলা যেতে পারে ডেটা বা তথ্যই হয়ে উঠবে সবচেয়ে বড় সম্পদ।
এই উপসংহারে পৌঁছানোর আগে হারারি বলেছেন যে গত ৫০০ বছরে, অর্থাৎ বৈজ্ঞানিক বিপ্লবের ফলে মানুষ দুর্ভিক্ষ, মহামারী ও যুদ্ধের মতো বিপর্যয়গুলোতে এখন আর আগের মতো ভুক্তভোগী নয়। স্যাপিয়েন্স-এও তিনি যুদ্ধের ক্ষেত্রে একই আলোচনা করেছিলেন। কিন্তু হারারি যে হিসাবে যুদ্ধ কমে যাওয়ার কথা বলেন, সেই হিসাব কিংবা তথ্য ত্রুটিপূর্ণ মনে হয় এই কারণে যে, আগে কতজন মানুষ যুদ্ধবিগ্রহে মারা গিয়েছে আর এখন কতজন মারা যাচ্ছে কিংবা যুদ্ধের পরিমাণ কমে যাওয়ার হিসাব দিয়ে যুদ্ধের বিচার করা যায় কিনা তা নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ থেকে যাওয়া স্বাভাবিক।
যাই হোক, এই দাবির পর হোমো ডিউস-এ হারারি বলছেন, আগামী দিনগুলোতে মানুষ তিনটি বিষয় বা ক্ষমতা অর্জনের জন্যে কাজ করবে। এগুলো হলো সুখ, অমরত্ব ও ঈশ্বরত্ব বা ঈশ্বরে পরিণত হওয়া। আর্থ-রাজনীতিক ও স্বাস্থ্যগত উন্নয়নের মাধ্যমে প্রথম দুইটি ক্ষমতা অর্জন করা সম্ভব হলেও মানুষ কীভাবে নিজেদের ঈশ্বরে পরিণত করবে?
হারারি বলতে চান, প্রাযুক্তিক উন্নয়নের কারণে মানুষের কাছে আগামী দিনগুলোতে এমন সব ক্ষমতা থাকবে যার কারণে প্রতিটি মানুষ আসলে ঈশ্বরের মতোই ক্ষমতাবান হয়ে উঠবে। আর সামষ্টিক পর্যাতে ডেটা বা তথ্য এই কাজটি করে দেবে। তিনি বলতে চান, মানুষের সম্পর্কে যত বেশি তথ্য কেন্দ্রীয়ভাবে এক জায়গায় জমা করে রাখা যাবে, তত সহজ হবে মানুষের দৈনন্দিন জীবন, নিরাপত্তাপ্রদান ও স্বাস্থ্যগত সুরক্ষা। এক্ষেত্রে তিনি কেন্দ্রীয় কোনো প্রশাসনের কাছে আপনার-আমার সব তথ্য দিয়ে নিশ্চিন্তে জীবন পার করার পক্ষপাতী ও আমাদেরকে তাই হতে বলেন।
হারারি যেসব সুবিধা বা ক্ষমতার কথা বলেছেন, তার সবই হয়তো আমরা অনেকেই চাই, কিন্তু নিজের একান্ত গোপনীয়তা আরেকজনের হাতে তুলে দিয়ে এটা চাই কিনা তা নিয়ে আসলে ভাবার আছে। যদিও আমাদের হাতে হাতে থাকা মোবাইল ফোনের মাধ্যমে গুগল ও অন্যান্য সামাজিক মাধ্যমগুলো ইতোমধ্যেই আমাদেরকে আমাদের চেয়েও বেশি জেনে ফেলেছে ও প্রতিনিয়ত আরো বেশি করে জেনে নিয়ে তার মুনাফা বৃদ্ধি করছে। অর্থাৎ পুঁজিবাদের মুনাফা গোটাকয়েক কোম্পানি আর করপোরেশনের হাতে জমা হচ্ছে। তবে হারারি যেভাবে তথ্য দিতে বলছেন, তার ভেতর স্বপ্রণোদিত হওয়ার একটা ব্যাপার আছে, যা সম্ভবত এই গুগলগোষ্ঠীর ক্ষেত্রে আমরা হচ্ছি না। কিন্তু হারারি তার হোমো ডিউস-এ পাঠকদের যে পথে যেতে বলেন, সেখানে একচেটিয়া পুঁজিবাদের জয়জয়কার ছাড়া খুব বেশি কিছু আদৌ দেখা যায় না। তার ওপর হারারি বলতে চান যে পশ্চিমা মানবতাবাদ যেখানে প্রায় ৫০০ বছর ধরে মানুষের বিভিন্ন কার্যক্রমের কেন্দ্রীয় চিন্তার বিষয় হিসেবে আবর্তিত হয়ে এসেছে, সেগুলো আসলে মানুষের মস্তিষ্কের কিছু ইলেক্ট্রনের কম্পন ছাড়া তেমন কিছু নয়। তিনি জোর দিয়ে বলতে চান, মানুষ সামনের দিনগুলোতে বুঝে যাবে আত্মা, সততা, নৈতিকতা আসলে তেমন কোনো অস্তিত্বশীল বিষয় নয়।
সমস্যাটা হচ্ছে, হারারিকে পুরোপুরি বাতিল করা সম্ভব নয়। হারারি দারুণ দারুণ সত্য তথ্যের ভেতর সূক্ষ্মভাবে এমন সব বিষয়ের পক্ষে কথা বলেন, যার ফলাফল হিসেবে মানুষের নিজেদের ভেতরের সম্পর্কের স্পর্শকাতরতা, গোপনীয়তা, আবেগ কমে যাবে কিন্তু বৃদ্ধি পাবে নিরাপত্তা, কেটে যাবে রোগ-শোকে মৃত্যুর ভয় কিংবা পাওয়া যাবে অমরত্ব। কিন্তু এই অমরত্বের জন্যে জীবনের যে দর্শন ত্যাগ করার দিকে হারারি আমাদের সূক্ষ্মভাবে ইঙ্গিত দিয়ে যান, সেদিকে যদি আমরা এগিয়ে যাই, তাহলে যে জীবন মানুষের জন্যে অপেক্ষা করে আছে, তা কি আদৌ মানুষের জীবন হতে যাচ্ছে? নাকি এতক্ষণ যা বলা হলো সেগুলোই আসলে সেকেলে কথা?
শিবলী নোমান: শিক্ষক, সাংবাদিকতা ও গণমাধ্যম অধ্যয়ন বিভাগ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়
বরগুনার আমতলী উপজেলায় সরকারি বিএডিসির (বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশন) আমন ধানের বীজ নিয়ে ভয়াবহ অনিয়মের অভিযোগ ওঠেছে। স্থানীয় ডিলার মধু প্যাদা অনুমোদন না থাকা সত্ত্বেও বিশাল পরিমাণ বীজ সংগ্রহ করে কৃত্রিম সংকট তৈরি করে তা অতিরিক্ত দামে বিক্রি করছেন বলে দাবি কৃষকদের।
অভিযোগে জানা গেছে, মধু প্যাদা বরিশালের ফরিদ মিয়া নামের এক ব্যক্তির কাছ থেকে গত ২৫ দিনে প্রায় ৬০ মেট্রিক টন বিআর-৪৯ ও বিআর-২৩ জাতের ধানের বীজ কিনে তার মহিষকাটা বাজারের তিনটি গোডাউনে মজুত করেন। এরপর তা তালতলী, রাঙ্গাবালি, কলাপাড়া ও আমতলী উপজেলার বিভিন্ন দোকানে ৬৭০ টাকার বীজ ৭৫০ টাকায় বিক্রি করছেন। এতে কৃষকরা যেমন ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন, তেমনি সরকার নির্ধারিত সরবরাহ ব্যবস্থাও ভেঙে পড়ছে।
স্থানীয় কৃষক নজরুল ইসলাম বলেন, ‘সরকারি বীজ না পেয়ে বাধ্য হয়ে বেশি দামে বীজ কিনতে হচ্ছে। এর পেছনে মধু প্যাদার সিন্ডিকেটই দায়ী।’
আড়পাঙ্গাশিয়া ইউনিয়নের আফজাল হোসেন শরীফ বলেন, ‘১০ কেজি বিআর-৪৯ জাতের বীজ কিনেছি ৭৫০ টাকায়, যা সরকারি দামের চেয়ে অনেক বেশি।’
বিষয়টি নিয়ে উপজেলা কৃষি অফিসার রাসেল মিয়া বলেন, ‘কেউ অতিরিক্ত দামে বীজ বিক্রি করলে তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ইতোমধ্যে একজন ডিলারের লাইসেন্স বাতিল করা হয়েছে।’ তিনি আরও জানান, অনুমোদন ছাড়া ডিলারদের মধ্যে বীজ লেনদেন সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ।
অন্যদিকে, মধু প্যাদা অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ‘আমি সরকারি দুটি লাইসেন্সে ৪ মেট্রিকটন বীজ পেয়েছি। চাহিদা থাকায় অতিরিক্ত বীজ ফরিদ মিয়ার কাছ থেকে সংগ্রহ করেছি।’ তবে বরিশাল জননী ট্রেডার্সের মালিক ফরিদ মিয়া বলেন, ‘আমার ব্যবসায়িক স্বার্থে সব তথ্য প্রকাশ করা সম্ভব নয়।’
এ বিষয়ে বরিশাল বিএডিসির উপপরিচালক মো. আসাদুজ্জামান সাংবাদিকদের সঙ্গে অসৌজন্যমূলক আচরণ করে বলেন, ‘ডিলাররা বাহির থেকে বীজ কিনলে সমস্যা কোথায়?’
এদিকে আমতলী উপজেলায় এ বছর ২৩ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে আমন চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হলেও, বিএডিসি সরবরাহ করেছে মাত্র ৫৫ মেট্রিক টন বীজ, যা প্রয়োজনের তুলনায় খুবই অপ্রতুল। ফলে অধিকাংশ কৃষক চাষাবাদের জন্য প্রয়োজনীয় বীজ সংগ্রহে হিমশিম খাচ্ছেন।
বিষয়টি তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়ে আমতলীর ইউএনও মো. রোকনুজ্জামান খান বলেন, ‘কোনো ডিলার কৃত্রিম সংকট তৈরি করে অধিক দামে বীজ বিক্রি করলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
কৃষকদের অভিযোগ ও স্থানীয় প্রশাসনের আশ্বাসের মাঝে, এখন প্রশ্ন- কৃষকের ন্যায্য অধিকার নিশ্চিত করতে বীজের বাজারে এই সিন্ডিকেটের লাগাম টানা যাবে তো?
বাংলাদেশপন্থী রাজনীতি গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়ে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেছেন, জনগণের পক্ষে বাংলাদেশপন্থী রাজনীতি গড়ে তুলুন।
বুধবার (৯ জুলাই) দুপুরে চুয়াডাঙ্গা জেলার পথসভায় নাহিদ এমন মন্তব্য করেন।
এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ বলেন, ‘চুয়াডাঙ্গা মানুষের শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও উন্নয়নের পক্ষে দাঁড়ান। দেশ গঠনে সংস্কারের পক্ষে দাঁড়াতে হবে।’
মুজিববাদী ফ্যাসিস্ট দল বাংলাদেশে আসতে হলে আমাদের জীবনের ওপর দিয়ে আসতে হবে উল্লেখ করে নাহিদ ইসলাম বলেন, বিচার সংস্কার ও নতুন সংবিধানের দাবিতে আপনারা আমাদের পাশে দাঁড়ালে হতাশ হবেন না। নাগরিক পার্টি আপনাদের ইনসাফভিত্তিক রাজনীতি উপহার দেবে।
বিচার, সংস্কার ও নতুন সংবিধানের দাবিতে দেশব্যাপী ‘দেশ গড়তে জুলাই পদযাত্রা’ কর্মসূচি পালন করছে গণঅভ্যুত্থান থেকে গড়ে উঠা এই নতুন রাজনৈতিক দল। পদযাত্রাটি গত ১ জুলাই থেকে শুরু হয়ে ২৯ জুলাই পর্যন্ত চলবে।
নাহিদ বলেন, ভারত সরকারের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ সমর্থনে শেখ হাসিনা সরকার এদেশের মানুষদের গুম, খুন করেছে। বাংলাদেশের সীমান্ত, মাটি, মানুষ ও মানচিত্রকে রক্ষা করা ছাত্র-তরুণদের দায়িত্ব। সেই দায়িত্বের ভিত্তিতে জাতীয় নাগরিক পার্টি কাজ করবে।
নাহিদ ইসলাম বলেন, জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সকল হত্যাকাণ্ডের জন্য খুনি হাসিনা ও তার দল দায়ী। ভারত সরকার এই সন্ত্রাসী, খুনি বাহিনীকে নিজ দেশে আশ্রয় দিয়েছে।
এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ভারতীয় আধিপত্যের দ্বারা বাংলাদেশের মানুষদের মানবিক মর্যাদা, সার্বভৌমত্ব ক্ষুণ্ন হয়েছে, তাদের দাসত্বের জীবনযাপন করতে হয়েছিল। ভারত আমাদের পানির ন্যায্য হিস্যা থেকে বঞ্চিত করছে। রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক, অর্থনৈতিকভাবে বারবার আমাদের অবনমন করা হয়েছে।
ভারতের সাথে সমতার ভিত্তিতে সম্পর্কের কথা উল্লেখ করে নাহিদ বলেন, ভারত যদি বাংলাদেশের সাথে সৌহার্দপূর্ণ সম্পর্ক চায় তবে সেই সম্পর্ক হবে সমতা, ন্যায্যতা ও মর্যাদার ভিত্তিতে।
তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা মো. মাহফুজ আলমের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন ইউনেস্কোর বাংলাদেশ প্রতিনিধি সুসান ভাইজ।
বুধবার (৯ জুলাই) বিকেলে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ে এই সাক্ষাৎ অনুষ্ঠিত হয়।
সাক্ষাৎকালে উপদেষ্টা জানান, গণমাধ্যম সংস্কারের লক্ষ্যে সরকার ইতোমধ্যে বেশ কিছু উদ্যোগ নিয়েছে। সংবাদপত্রের প্রচারসংখ্যা নিরীক্ষা পদ্ধতির সংস্কারে টাস্কফোর্স গঠনের সিদ্ধান্ত হয়েছে। এছাড়া, সাংবাদিকতার অধিকার সুরক্ষা-সংক্রান্ত অধ্যাদেশ প্রণয়নের কাজ চলছে। স্বল্প সময়ের মধ্যে অধ্যাদেশ জারি করা হবে। গণমাধ্যম-বিষয়ক আরও কিছু সংস্কার কার্যক্রম আগামী কয়েক মাসের মধ্যে বাস্তবায়ন করা সম্ভব হবে বলেও তিনি আশা প্রকাশ করেন।
বাংলাদেশে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বর্তমান সময়ে গণমাধ্যমের ওপর সরকারের পক্ষ থেকে কোনো চাপ নেই। সংবাদ প্রচারের ক্ষেত্রে গণমাধ্যম সম্পূর্ণ স্বাধীন। সাক্ষাতে উপদেষ্টা আরও জানান, গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠান ও সংশ্লিষ্ট অংশীজনের সঙ্গে আলোচনার ভিত্তিতে সংবাদপত্র ও সাংবাদিকদের জন্য অনুসরণীয় আচরণবিধি প্রণয়নেও উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
সাক্ষাৎকালে ইউনেস্কোর আন্তর্জাতিক কনসালটেন্ট লিনা ফক্স উপস্থিত ছিলেন।
যুক্তরাষ্ট্রসহ পাঁচ দেশে ভোটার নিবন্ধন ও জাতীয় পরিচয়পত্র প্রদান কার্যক্রম শুরু করার সম্মতি পেয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। অন্য চারটি দেশ হল- মালদ্বীপ, জর্ডান, দক্ষিণ আফ্রিকা ও ওমান।
বুধবার (৯ জুলাই) যুক্তরাষ্ট্রসহ পাঁচ দেশে ভোটার নিবন্ধন কার্যক্রম শুরু করার জন্য পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সম্মতি পত্র পেয়েছে ইসি।
বুধবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সহকারী সচিব শাকেরা আহমেদ স্বাক্ষরিত ইসিকে দেওয়া সম্মতি প্রদান সংক্রান্ত চিঠিতে বলা হয়েছে, ‘উপর্যুক্ত বিষয়ে পত্রের প্রেক্ষিতে যুক্তরাষ্ট্র (লস এঞ্জেলেস), মালদ্বীপ, জর্ডান, দক্ষিণ আফ্রিকা এবং ওমানে ভোটার নিবন্ধন ও জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) প্রদান কার্যক্রম চালু করার বিষয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সম্মতি জ্ঞাপন করা হলো। এ বিষয়ে পরবর্তী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হলো।’
এর আগে গত ২ জুলাই ইসির জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগের পরিচালক (নিবন্ধন ও প্রবাসী) মো. আব্দুল মমিন সরকার স্বাক্ষরিত ‘প্রবাসে বসবাসরত বাংলাদেশি নাগরিকগণের প্রবাসেই ভোটার নিরন্ধন ও জাতীয় পরিচয়পত্র প্রদানের লক্ষ্যে কার্যক্রম শুরুর সম্মতি প্রদান’ সংক্রান্ত এ চিঠি পররাষ্ট্র সচিবকে দেওয়া হয়।
চিঠিতে বলা হয়েছে, ‘বিশ্বের ৪০টি দেশে প্রবাসী বাংলাদেশি নাগরিকগণকে জাতীয় পরিচয়পত্র প্রদানের লক্ষ্যে নির্বাচন কমিশন সচিবালয় কর্তৃক পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। ইতোমধ্যে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সম্মতিক্রমে সংযুক্ত আরব আমিরাত, সৌদি আরব, ইতালি, যুক্তরাজ্য, কুয়েত, কাতার, মালয়েশিয়া, অস্ট্রেলিয়া ও কানাডায় ভোটার নিবন্ধন ও জাতীয় পরিচয়পত্র প্রদান কার্যক্রম শুরু করা হয়েছে।
অবশিষ্ট ৩১টি দেশের মধ্যে আজ বুধবার যুক্তরাষ্ট্র, ওমান, জর্ডান, দক্ষিণ আফ্রিকা, মালদ্বীপে প্রবাসী ভোটার তালিকা করার সম্মতি আজ পেয়েছে। এখন অবশিষ্ট আছে বাহরাইন, লেবানন, লিবিয়া, সুদান, সিঙ্গাপুর, দক্ষিণ কোরিয়া, হংকং, মিশর, ব্রুনাই, মরিশাস, ইরাক, যুক্তরাষ্ট্র, গ্রিস, স্পেন, জার্মানি, জাপান, ফ্রান্স, নেদারল্যান্ড, বেলজিয়াম, সুইজারল্যান্ড, ব্রাজিল, চীন, ইন্দোনেশিয়া, নিউজিল্যান্ড, রাশিয়া, তুরস্ক ও সাইপ্রাস।
চিঠিতে বলা হয়েছে, ‘উপর্যুক্ত দেশগুলোতে ভোটার নিবন্ধন কার্যক্রম শুরুর সকল প্রস্তুতি নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের রয়েছে। অন্যান্য দেশের ন্যায় অগ্রাধিকার ভিত্তিতে সম্মতি প্রদানের জন্য সিনিয়র সচিব, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বরাবর পত্র প্রেরণ করা হয়।
চিঠিতে আরো বলা হয়, এর মধ্যে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় গত ২৫ মে জাপানে ভোটার নিবন্ধন ও জাতীয় পরিচয়পত্র প্রদান কার্যক্রম শুরু করার সম্মতি প্রদান করেছে। এ প্রেক্ষিতে আগামী ১৫ জুলাইয়ে মধ্যে এ কার্যক্রম শুরুর প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে।
এ অবস্থায় অগ্রাধিকার ভিত্তিতে যুক্তরাষ্ট্র, মালদ্বীপ, তুরস্ক, জর্ডান, দক্ষিণ আফ্রিকা, ওমান, মিশর ও ফ্রান্সে ভোটার নিবন্ধন ও জাতীয় পরিচয়পত্র প্রদানের কার্যক্রম শুরুর লক্ষ্যে অন্যান্য দেশের ন্যায় সম্মতি প্রদানের জন্য অনুরোধ করা হয়। এ দেশগুলোতে ভোটার নিবন্ধন কার্যক্রম শুরুর সকল প্রস্তুতি নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের রয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ইসির জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগের মহাপরিচালক এ এস এম হুমায়ুন কবীর বলেন, ‘আট দেশে ভোটার নিবন্ধন ও জাতীয় পরিচয়পত্র প্রদান কার্যক্রম শুরু করার জন্য আমাদের (ইসি) প্রস্তুতি থাকায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়েছি। এ বিষয়ে ইতোমধ্যে কাজ শুরু হয়েছে।
ইসির কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, বর্তমানে সংযুক্ত আরব আমিরাত, সৌদি আরব, যুক্তরাজ্য, ইতালি, কুয়েত, কাতার, মালয়েশিয়া, অস্ট্রেলিয়া ও কানাডায় প্রবাসীদের ভোটার নিবন্ধন ও এনআইডি প্রদানের কার্যক্রম চলমান রয়েছে। এসব দেশ থেকে এখন পর্যন্ত প্রায় ৪৭ হাজার ৩২ জন প্রবাসী ভোটার হতে আবেদন করেছেন। এর মধ্যে মিশন অফিস ২৯ হাজার ৫৬৩ জনের বায়োমেট্রিক গ্রহণ করেছে। ২০ হাজার ৪৫১ জনকে ভোটার হিসেবে অন্তর্ভুক্তির অনুমোদন দিয়েছে। আবেদন বাতিল হয়েছে ৩ হাজার ৬৭৭ জনের।
ধর্ম উপদেষ্টা ড. আ ফ ম খালিদ হোসেন বলেছেন, মাদ্রাসা শিক্ষা ব্যবস্থার অতীত ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনতে হবে। এ শিক্ষা ব্যবস্থার স্বাতন্ত্র্য বজায় রাখতে হবে।
তিনি বলেন, মাদ্রাসা শিক্ষা একটি বিশেষায়িত শিক্ষা ব্যবস্থা। একে ধরে রাখতে হবে। অতি আধুনিকতার নামে এ শিক্ষা ব্যবস্থাকে ধ্বংসের মুখে পতিত হতে দেওয়া যাবে না।
বুধবার (৯ জুলাই) ঢাকার আইডিইবি মিলনায়তনে ‘টেকসই উন্নয়নে আলিয়া মাদ্রাসা শিক্ষা ধারা: চ্যালেঞ্জ ও উত্তরণের উপায়’ শীর্ষক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি এ কথা বলেন।
বাংলাদেশ মাদ্রাসা ছাত্রকল্যাণ পরিষদ এ সেমিনারের আয়োজন করে।
ধর্ম উপদেষ্টা বলেন, আলিয়া মাদ্রাসা শিক্ষা ব্যবস্থা যুগযুগ ধরে সমগ্র ভারত উপমহাদেশে ইসলামি জ্ঞান চর্চা, মূল্যবোধের বিকাশ ও ইসলামি চিন্তাধারা প্রসারে উল্লেখযোগ্য অবদান রেখে আসছে। কিছু ত্রুটি-বিচ্যূতি থাকলেও এ শিক্ষা ব্যবস্থার অবদান বিশাল।
তিনি আরও বলেন, কোলকাতা আলিয়া মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠার পর থেকে দেওবন্দ মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠার পূর্ব পর্যন্ত মধ্যবর্তী ৮৬ বছর আলিয়া মাদ্রাসা শিক্ষায় শিক্ষিত আলেম-ওলামারাই ভারতে জ্ঞানের মশাল জ্বেলেছিলেন। এখনও আলিয়া মাদ্রাসা থেকে শিক্ষা অর্জন করে অনেক আলেম-ওলামা সমাজের বিভিন্ন স্তরে তাৎপর্যপূর্ণ ভূমিকা রেখে চলেছেন।
তিনি হীনম্মন্যতা বোধ থেকে বের হয়ে আসতে সকলকে অনুরোধ জানান।
ধর্ম উপদেষ্টা বলেন, মাদ্রাসা শিক্ষা ব্যবস্থার টুটি যারা চেপে ধরতে চায়, তাদের বিরুদ্ধে আন্দোলন চালিয়ে যেতে হবে। ফ্যাসিবাদ যেন পুনরায় সৃষ্টি হতে না পারে, সে বিষয়ে সকলকে সতর্ক থাকতে হবে।
মাদ্রাসা শিক্ষার্থীদেরকে হতাশাগ্রস্ত না হয়ে, আশাবাদী হওয়ার পরামর্শ দেন তিনি।
মাদ্রাসা শিক্ষার গুরুত্ব তুলে ধরে ড. খালিদ বলেন, বিগত ষোল বছর মাদ্রাসা শিক্ষাকে অবদমিত করে রাখা হয়েছিলো। সাধারণ কোন বিষয়ে অনার্স চালু করার ক্ষেত্রে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় ছিলো ইতিবাচক, কিন্তু ইসলামি স্টাডিজ, আরবি সাহিত্য, ইসলামের ইতিহাস প্রভৃতি বিষয়ের ক্ষেত্রে এ বিশ্ববিদ্যালয়ের দৃষ্টিভঙ্গি ছিলো নেতিবাচক। এই ধারা জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তুলে দেওয়া হয়েছে। এখন মাদ্রাসা শিক্ষা ব্যবস্থা উন্নত হবে।
বাংলাদেশ মাদ্রাসা ছাত্রকল্যাণ পরিষদের উপদেষ্টা অধ্যক্ষ মাওলানা যাইনুল আবেদীনের সভাপতিত্বে এ সেমিনারে প্রধান আলোচক ছিলেন ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর অধ্যাপক ড. মো. শামসুল আলম।
এতে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের কারিকুলাম বিশেষজ্ঞ ড. মোহাম্মদ হেদায়েত উল্লাহ।
সেমিনারে অন্যান্যের মধ্যে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের অধ্যাপক ড. আহমদ আলী, ইসলামী আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের ডীন অধ্যাপক মো. অলিউল্লাহ, বাংলাদেশ ইসলামি ছাত্র শিবিরের সভাপতি জাহিদুল ইসলাম প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।
আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে বরখাস্ত হওয়া দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) উপ-সহকারী পরিচালক শরীফ উদ্দিনকে চাকরিচ্যুতির আদেশ অবৈধ ঘোষণা করেছেন হাইকোর্ট। একই সঙ্গে জ্যেষ্ঠতা ও অন্যান্য সুবিধাসহ তাকে চাকরিতে পুনর্বহাল করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
হাইকোর্টের রায়ের অনুলিপি পাওয়ার ৩০ দিনের মধ্যে এই আদেশ বাস্তবায়ন করতে বলা হয়েছে। এ বিষয়ে জারি করা রুল নিষ্পত্তি করে বুধবার (৯ জুলাই) বিচারপতি রেজাউল হাসান ও বিচারপতি বিশ্বজিৎ দেবনাথের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ রায় ঘোষণা করেন।
তিন বছর আগে ২০২২ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি শরীফ উদ্দিনকে চাকরি থেকে অপসারণ করা হয়। কোনো ধরনের কারণ দর্শানো ছাড়াই কোনো কর্মীকে চাকরি থেকে অপসারণ-সংক্রান্ত দুদক কর্মচারী বিধিমালার ৫৪(২) বিধির বৈধতা নিয়ে ও চাকরিতে পুনর্বহালের নির্দেশনা চেয়ে একই বছরের ১৩ মার্চ শরীফ রিট করেন।
প্রাথমিক শুনানি নিয়ে গত বছরের ৬ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্ট রুল দেন। রুলে দুদকের উপ-সহকারী পরিচালক পদ থেকে শরীফ উদ্দিনকে চাকরিচ্যুতির আদেশ কেন বেআইনি হবে না, তা জানতে চাওয়া হয়। একই সঙ্গে বেতন, সব সুবিধাসহ তাকে চাকরিতে পুনর্বহাল করতে কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না, তা-ও জানতে চাওয়া হয় রুলে। দুদকসহ বিবাদীদের রুলের জবাব দিতে বলা হয়।
রুলের ওপর গতকাল মঙ্গলবার শুনানি শেষে আদালত আজ রায়ের জন্য দিন রেখেছিলেন। রুল যথাযথ (অ্যাবসোলিউট) ঘোষণা করে আজ রায় দেওয়া হলো।
রায়ের সময় শরীফ উদ্দিন আদালতে উপস্থিত ছিলেন। আদালতে শরীফ উদ্দিনের পক্ষে শুনানি করেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মো. সালাহ উদ্দীন দোলন, সঙ্গে ছিলেন আইনজীবী মিয়া মোহাম্মদ ইশতিয়াক। দুদকের পক্ষে শুনানি করেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী আসিফ হাসান।
রায়ের পর জ্যেষ্ঠ আইনজীবী সালাহ উদ্দীন দোলন বলেন, শরীফ উদ্দিনের চাকরিচ্যুতির আদেশ অবৈধ ও বাতিল ঘোষণা করেছেন হাইকোর্ট। জ্যেষ্ঠতা ও সব সুযোগ-সুবিধাসহ তাঁকে চাকরিতে ৩০ দিনের মধ্যে পুনর্বহাল করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
দুদকের আইনজীবী আসিফ হাসান বলেন, রায়ের বিষয়টি দুদককে জানানো হবে। আপিল করবে কি না, সে বিষয়ে দুদক সিদ্ধান্ত নেবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্তি বাতিল করে বিআইটি মডেলের মতো স্বাধীন কমিশন গঠনের এক দফা দাবিতে বরিশাল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের শিক্ষার্থীরা বুধবার সকাল ১০টা থেকে বরিশাল-ভোলা মহাসড়ক অবরোধ করেন। প্রায় চার ঘণ্টা ধরে সড়কে গাছের গুঁড়ি ফেলে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে আন্দোলনে অংশ নেন তারা। এতে উভয় দিকের যান চলাচল সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে যায়, আর ভোগান্তিতে পড়েন যাত্রীরা।
শিক্ষার্থীরা জানান, দীর্ঘ দুই মাস ধরে তারা স্বতন্ত্র কমিশন গঠনের দাবিতে ক্লাস ও পরীক্ষা বর্জন করে একাডেমিক কার্যক্রম পুরোপুরি বন্ধ রেখে আন্দোলন চালিয়ে আসছেন। কিন্তু ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ কোনো কার্যকর পদক্ষেপ না নেওয়ায় তারা বাধ্য হয়েই সড়ক অবরোধ করেন।
একপর্যায়ে পুলিশ আন্দোলনকারীদের সরাতে লাঠিচার্জ করলে উভয়পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়। শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, পুলিশের মৃদু লাঠিচার্যে তাদের অন্তত ২০ জন আহত হয়েছেন। পরে শিক্ষার্থীরা সড়ক থেকে সরে এসে কলেজ ক্যাম্পাসের সামনে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ চালিয়ে যান।
শিক্ষার্থীরা স্পষ্ট জানিয়ে দেন, তাদের এক দফা দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত তারা আন্দোলন চালিয়ে যাবেন এবং সড়ক বা ক্যাম্পাস ছাড়বেন না।
এদিকে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে বন্দর থানা পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন। তবে শিক্ষার্থীরা দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত অবস্থান কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন। পুলিশের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিক কোনো বক্তব্য পাওয়া না গেলেও, বরিশাল সদর উপজেলার নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট (ভূমি) আজহারুল ইসলাম জানান, শিক্ষার্থীদের সঙ্গে দফায় দফায় আলোচনা চলছে। তাদের প্রতিনিধি দলকে জেলা ও বিভাগীয় পর্যায়ে দায়িত্বশীলদের সঙ্গে বসানো হবে বলেও আশ্বাস দেন তিনি।
বরিশাল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের অধ্যক্ষ লিটন রাব্বানী জানান, শিক্ষার্থীদের দাবি সম্পর্কে মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠানো হয়েছে এবং ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা চলছে। দ্রুত সমাধানের আশ্বাসও দেন তিনি।
মন্তব্য