১৭ বছর আগে রাজধানীতে আওয়ামী লীগের সমাবেশে গ্রেনেড হামলার দিবসে ওই ঘটনার স্মৃতিচারণ করলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। জানালেন, ওই দিন স্বয়ং সৃষ্টিকর্তা তাকে নিজ হাতে বাঁচিয়েছেন।
বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে শনিবার সকালে ২১ আগস্ট বোমা হামলার দিন স্মরণে এক আলোচনা সভায় তিনি এ কথা বলেন।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আগস্ট মাসটা শুধুই আসে আমাদের জন্য যেন শোক আর কষ্টের বার্তা নিয়ে। ১৫ আগস্ট হারিয়েছি বাবা, মা, ভাই, পরিবার পরিজনকে। আগস্ট মাসটা আসেই যেন একটা শোক, ব্যথা, বেদনা নিয়ে।
বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার ক্ষমতা দখল করল। তাদের অত্যাচারটা যেন শুরু হয়েছিল ১ অক্টোবর থেকেই। অথবা আমি বলব, জুলাই মাসে আমরা যখন ক্ষমতা হস্তান্তর করলাম তার সাথে সাথেই। তারা একটা অদৃষ্ট শক্তির বলয়ে তাদের মধ্যে দুর্বৃত্তায়ণ শুরু হলো। আমাদের সামরিক-অসামরিক অনেক অফিসার, তাদের ওএসডি করা, চাকরিচ্যুত করা থেকে শুরু করে আওয়ামী লীগের অগণিত নেতাকর্মীর উপর অকথ্য অত্যাচার নির্যাতন শুরু করল।’
তিনি বলেন, ‘নির্বাচনের পর বিএনপি যখন ক্ষমতায় আসল শুরু হলো সারা দেশে আওয়ামী লীগের নেতাকমীদের ওপর আক্রমণ। হাজার হাজার নেতাকর্মীকে হত্যা করা, গ্রেপ্তার করা, গুম করে ফেলা, নারীদের ওপর পাশবিক অত্যাচার। পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী যেভাবে নির্যাতন করেছিল, ঠিক একই কায়দায় সে নির্যাতন শুরু করল।
‘এর এক পর্যায়ে হত্যা নির্যাতন জঙ্গিবাদ সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে প্রতিবাদে শান্তির পক্ষে আমরা একটা র্যালি করার সিদ্ধান্ত নিলাম। আমরা চেয়েছিলাম মুক্তাঙ্গনে করতে, কিন্তু বিএনপি সরকার অনুমতি দেয়নি। যখন অনেকবার চেষ্টা করেও হলো না তখন আমরা সিদ্ধান্ত নিলাম আওয়ামী লীগ অফিসের সামনেই করব।’
সমাবেশের প্রস্তুতি তুলে ধরে সরকার প্রধান বলেন, ‘পোস্টার করা হলো, পত্রিকায় বিজ্ঞাপণ আমরা দিলাম। পুরো ঢাকা ও বাংলাদেশে এটা প্রচার করা হলো। ঠিক রাত সাড়ে ১১টা-১২ টার দিকে একটা পারমিশন আসলো যে মুক্তাঙ্গনে করা যাবে। পরের দিনই র্যালি। আমরা বললাম, আওয়ামী লীগের অফিসের সামনে আমাদের মাইক টাইক লাগানো হয়ে গেছে সেখানেই করব।
‘কারণ হঠাৎ করে এই পরমিশন দিলো কেন? রহস্যটা কি? আমরা শুরু থেকেই সন্দিহান ছিলাম, কিন্তু এভাবে যে প্রকাশ্য দিবালোকে আর্জেস গ্রেনেড মেরে হত্যা প্রচেষ্টা চালাবে এটা কখনও স্বপ্নেও ভাবতে পারিনি।’
তিনি বলেন, ‘তার আগে কিন্তু খালেদা জিয়া বক্তৃতা দিয়েছে। আমার নাম ধরেই দিয়েছে যে প্রধানমন্ত্রী তো দূরের কথা বিরোধীদলের নেতাও কোনোদিন হতে পারব না। এর আগে কোটালি পাড়ায় বোমা যখন পোতে তার আগে বলেছিল একশ বছরেও আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসতে পারবে না। কাজেই আমরা তারপরেও সেখানে র্যালি করতে গেলাম।’
‘গায়ে শুধু রক্ত পড়ছে’
একুশে আগস্ট গ্রেনেড হামলার ঘটনায় মৃত্যুপুরীতে পরিণত হয় আওয়ামী লীগের সমাবেশ। সেই হামলার মূল উদ্দেশ্যই ছিল তৎকালীন বিরোধী দলীয় নেতা শেখ হাসিনাকে হত্যা করা। আলোচনা সভায় শেখ হাসিনার বর্ণনায় ১৭ বছর পরও জীবন্ত হয়ে সেই মুহুর্ত।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘ট্রাকেই মঞ্চ করা হয়েছে। আমি উঠে বক্তৃতা দিলাম। মাইকটা রাখতে যাব, এ সময় আমাদের ফটো সাংবাদিক গোর্কি সে এসে বলল, আমি তো ছবি নিতে পারিনি। সাংবাদিকরা সব ট্রাকেই চালকের উপরের ছাদে বসা। ওরাও চিৎকার শুরু করল, আপা ছবি নিতে পারিনি, একটা মাইকটা ধরেন। মাইকটা তখনও আমার হাতে।
‘আমি নিচে নামছিলাম, থমকে দাঁড়ালাম। এর মধ্যেই গ্রেনেডের আওয়াজ। সাথে সাথে আমাকে, হানিফ ভাই পাশেই দাঁড়ানো ছিল। হানিফ ভাই ওইদিন বারবার কেন যেন ঘুরে দাঁড়াচ্ছিল। আমি বলছিলাম, আমি তো কাউকে দেখতে পারছি না, আপনি একটু সরেন। তো আমাকে বলছিল, না আমি এখানেই দাঁড়াব।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘তিনি (হানিফ) সাথে সাথে আমাকে ধরে ফেললেন। আমার সাথে মামুন ছিল, আশে পাশে যারা ছিল আমাকে পুরা ঘিরে ধরল। একটার পর একটা গ্রেনেডের আওয়াজ হচ্ছে। আমি তখন বসা, বারবার ওঠার চেষ্টা করছি কিন্তু আমাকে উঠতে দেয়নি। আমার চশমাটা কোথায় ছিটকে পড়ে গেল। আমি দেখলাম আমার গায়ে শুধু রক্ত পড়ছে।
‘অর্থাৎ ওই যে স্পিন্টারগুলি সব হানিফ ভাইয়ের মাথায়, তার গায়ে লাগছে। যেহেতু সে ধরে রেখেছে, আমার শরীরে রক্তে ভেসে যাচ্ছে। তিনটা ফোটার পর কয়েক সেকেন্ড, তারপর আবার। মনে হচ্ছে এর শেষ নেই। এ যেন কেয়ামতের মতো। চারিদিকে ধোঁয়া এবং সেই অবস্থা।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘ঠিক জানি না আল্লাহ কীভাবে যেন হাতে তুলে বাঁচাল। আমার গায়ে একটা স্প্রিন্টারও আর লাগেনি। কিন্তু আওয়াজে যে ক্ষতিটা হয়েছিল, ডান দিকের কানটা দিয়ে আমি শুনতে পাইনি। সেই ট্রাকে অনেকেই আহত হয়েছে। সিঁড়িতে যারা দাঁড়িয়েছিল তারা আহত।
‘একটা পর্যায়ে যখন থামল, আমি উঠে দাঁড়ালাম। ওরা ভেবেছে আমি মনে হয় আহত। কারণ, আমার সারা শরীর তো রক্তাক্ত। আমি বললাম না আমার তো কিছু হয়নি। দেখলাম হানিফ ভাই পুরো মাথা রক্তাক্ত। ওখানে যারা ছিল সবাই, ওনার ছেলে খোকনসহ আমাদের যারা ছিল প্রত্যেকেই আহত।’
‘গুলিতেই মারা গেল মাহবুব’
সেদিন শুধু গেনেড হামলা করেই আক্রমণকারীরা খান্ত হয়নি। শেখ হাসিনাকে লক্ষ্য করে বেশ কয়েক রাউন্ড গুলিও ছোড়া হয়েছিল। শেখ হাসিনাকে বাঁচাতে গিয়ে গুলিতে নিহত হন তার দেহরক্ষী।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘যখন আমি গাড়িতে উঠতে যাব, দরজা খুলে মাহবুব দাঁড়ানো। তখনই গুলি আসলো। সেই গুলিতেই কিন্তু মাহবুব মারা গেল। আর কয়েকটি গুলি আমার গাড়িতে লাগলো। যখন আমি গাড়িটা ঘুড়িয়ে জিরো পয়েন্টের কাছে তখন আমি শুনছি হৈ চৈ আওয়াজ। গাড়ি কিন্তু একটানে চালিয়ে নিয়ে আসলো।
‘পরে জানলাম ওখানে এই আহত অবস্থায় মানুষ যখন পড়ে ছটফট করছে তখন পুলিশ বা কেউ কিন্তু এগিয়ে আসেনি সাহায্যের জন্য। উল্টো পুলিশ এসে লাঠি চার্জ শুরু করল। আমাদের এক মহিলাকর্মী আহত অবস্থায়, তার স্বামী এসেছে তাকে লাথি মেরে পুলিশ বের করে দিচ্ছে। সেখানে লাঠিচার্জ আর টিয়ারগ্যাস মারতে শুরু করল। ওই গ্যাসেই তো আরও অনেকে অসুস্থ। তার মানেটা কি? যারা আক্রমণকারী, এদের রক্ষা করতেই এই টিয়ারগ্যাস মারা। সরকারের যদি সহযোগিতা না থাকে তাহলে এরকম ঘটনা ঘটতে পারে না।’
তিনি বলেন, ‘আমার গাড়িটা যখন ৫ নম্বরে সুধাসদনে ঢুকলো, সাথে সাথে পুরো গাড়িটা বসে গেল। আমি যখন নামছি রেহানা ছিল, ও তো চিৎকার। আমি বললাম, আমার কিছু হয়নি। হানিফ ভাই আমাকে ধরেছিল, তার মাথা-শরীরে সব স্প্রিন্টার তার রক্তই আমার গায়ে।
‘ওখানে দাঁড়িয়েই আমি খোঁজ নিতে চেষ্টা করলাম। সাথে সাথে আমাদের ড্রাইভার আলী হোসেন আর শাহজাহানকে পাঠালাম। যতদূর পারো হাসপাতালে নিয়ে যাও।’
‘বিএনপিমনা ডাক্তাররা কেউ ছিল না’
প্রধানমন্ত্রী জানান, সেদিন হামলার পর আহতদের যখন ঢাকা মেডিক্যালে চিকিৎসার জন্য নেয়া হয় তখন বিএনপিমনা চিকিৎসকরা কেউই ছিলেন না।
তিনি বলেন, ‘সবচেয়ে দুর্ভাগ্যের বিষয়, যারা বিএনপিমনা ডাক্তার তারা কেউ ঢাকা মেডিক্যালে ছিল না। আর বঙ্গবন্ধু মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে কোনো আহতকে ঢুকতেই দেয়া হয়নি। বলেছে, এখানে ইমারজেন্সিতে কেউ চিকিৎসা নিতে পারবে না।
‘আমাদের ডাক্তার রোকেয়া আইভি রহমানসহ প্রায় ৭০ জনকে সে একা এনাস্থেশিয়া দিয়েছে। এভাবেই আমাদের মাইন্ডের যারা তারা ছুটে এসেছে চিকিৎসা দেয়ার চেষ্টা করেছে। লাইন ধরে রোগী। যেভাবে পেড়েছে হাসপাতাল বা ক্লিনিকে নেয়া হয়েছে। আমাদের নেতাকর্মী যারা ছিল সবাই সাহায্য করল, ছুটে গেল চিকিৎসা দিতে। যারা মৃত তাদের লাশগুলো মেডিক্যাল কলেজে, তাদের লাশগুলোও আত্মীয়দের দেবে না। কিছুতেই দেবে না। পরে বাধ্য হয়ে ভোর রাতে এক এক করে দিতে শুরু করল।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমি শুনেছি, সে সময় এক ডিজিএফআই অফিসার সেখানে ডিউটিরত ছিল। হামলার পর সে হেডকোয়ার্টারে ফোন করে। তখন তাকে ধমক দেয়া হয়। দু একজন পুলিশ অফিসার যারা জানতো না, তারা পুলিশ হেডকোয়ার্টারে ফোন করে তাদেরকেও ধমক দেয়া হয়।
বিষয়টি নিয়ে সংসদেও আলোচনা করতে দেয়া হয়নি বলে জানান বঙ্গবন্ধু কন্যা। তিনি বলেন, ‘আমরা যখন পার্লামেন্টে গেলাম। এ বিষয়টি তোলার চেষ্টা করলাম। কিছুতেই এ ব্যাপারে কথা বলতে দেবে না। একটা শোক প্রস্তাব আমরা দিলাম সেটা প্রত্যাখ্যান করা হলো। আমরা যারা কথা বলতে চেয়েছি আমাদের মাইক দেয়া হলো না। খালেদা জিয়া নিজেই দাঁড়িয়ে বললো, ওনাকে আবার কে মারবে? উনি তো নিজেই ভ্যানিটি ব্যাগে করে গ্রেনেড নিয়ে গেছেন।
‘তা আমি বললাম, আমার হাতে তো ভ্যানিটি ব্যাগও ছিল না, কিছুই ছিল না। আর আমি কবে এই আর্জেস গ্রেনেড মারায় এক্সপার্ট হয়ে গেলাম তা তো জানি না। আমরা কী সুইসাইড করতে গিয়েছিলাম ওখানে। আইভি রহমানকে সবাইকে নাকি আমিই গ্রেনেড মেরেছি, এধরনের কথা।’
আহতদের চিকিৎসার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘সাহারা আপাকে পেলাম, শান্তিনগরের ওদিকে একটা হাসপাতালে মৃতপ্রায়। তাকে তাড়াতাড়ি তুলে নিয়ে এসে বাংলাদেশ মেডিক্যালে আমরা ভর্তি করলাম। বিভিন্ন জায়গা থেকে আহতদের নিয়ে আসা, তাদের ভালো চিকিৎসার ব্যবস্থা করা।
‘আমি সত্যিই ধন্যবাদ জানাই, আমাদের যে ডাক্তার, তারা দিনরাত জান দিয়ে খেটেছে এবং আমাদের আহতদের পাশে দাঁড়িয়েছে। সবাই ছুটে এসেছে, রক্ত দিয়েছে, আর্থিক সহায়তা করেছে। পরে দেশে বিদেশে পাঠিয়েও রোগীদের চিকিৎসা আমরা করিয়েছি। এখনো অনেকের চিকিৎসা করতে হচ্ছে।’
‘আলমত নষ্টের চেষ্টা’
হামলার ঘটনা থেকে নজর সরাতে আলামত নষ্টের চেষ্টাও করা হয় বলে জানান শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘যারা গণতন্ত্রের কথা বলেন, এটা কোন ধরনের গণতন্ত্র। প্রকাশ্য দিবালোকে একটা জনসভায় আর্জেস গ্রেনেড যারা মারতে পারে, শুধু তাই না, সাথে সাথে সেখানে রক্ত, জুতা সব পড়ে আছে। তখনও একটা গ্রেনেড সেখানে ফাটেনি। সেটাও পড়ে আছে। সেটা যখন উদ্ধার হলো, একজন আর্মি অফিসার বলল যে এটাকে আলামত হিসেবে রাখতে হবে।
‘তাকে ধমক দেয়া হলো পরে তার ওপর অনেক নির্যাতনও করেছে। সেটাও ধ্বংস করে দেয়া হলো। পানি দিয়ে সব ধোয়া শুরু করল, তখন আমি নানক-আজমকে বললাম, ওখানে আলামত নষ্ট করে দিচ্ছে যতদূর পারো রক্ষা করো। যেসব জায়গায় গ্রেনেডগুলো ছিল, ওরা লাল পতাকা দিয়ে জায়গাগুলো চিহ্নিত করল। এই কাজগুলো কাদের? এগুলোতো সরকারের। পুলিশ কিন্তু তা করেনি। আলামতও তারা রাখতে পারেনি। এটা হলো বাস্তবতা।’
তিনি বলেন, ‘পরে যখন চারদিকে সমালোচনা, তখন সাবেক একজন জজসাহেবকে দিয়ে একটা তদন্ত কমিটি করা হলো। সেখানে তারা আবিস্কার করল, পাশের দেশের গোয়েন্দা সংস্থা এসে এই ঘটনা ঘটিয়েছে। পাশের দেশের গোয়েন্দা সংস্থা এভাবে দিনে দুপুরে যদি এটা করতে পারে তাহলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কী করছিল? তাহলে তারা স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব রক্ষা করবে কীভাবে? এভাবে তারা সমস্ত দৃষ্টিটা অন্যদিকে ঘোরানোর চেষ্টা করল।
‘তারপরেও সমালোচনা ও দাবির মুখে প্রথমে একটি ছেলেকে পড়ে আওয়ামী লীগের একটি ছেলেকে গ্রেপ্তার করল। বলা হলো এই হামলায় তারা জড়িত। আমি বললাম কখনই এটা হতে পারে না। দিনের পর দিন তাদের অত্যাচার করে নাম নেয়ার চেষ্টা করা হলো। উদ্দেশ্য ছিলো তাদের দিয়ে স্বীকার করাবে, এটা দলীয় কোন্দল। এরপর নোয়াখালীর জজ মিয়াকে টাকা পয়সা দিয়ে এক কাহিনী রচনা করল।’
আরও পড়ুন:লিবিয়া থেকে স্বেচ্ছায় দেশে ফেরার আগ্রহ প্রকাশ করা আরও ১২৩ অনিবন্ধিত বাংলাদেশি নাগরিককে গতকাল বৃহস্পতিবার দেশে ফিরিয়ে আনা হয়েছে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, এসব বাংলাদেশির সবাই বুরাক এয়ারের একটি বিশেষ চার্টার্ড ফ্লাইটে (ইউজেড ০২২২) সকাল ৯টা ৫০ মিনিটে হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে এসে পৌঁছান।
উল্লেখ্য, প্রত্যাগতদের অধিকাংশই মানবপাচারের শিকার। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নেতৃত্বে, ত্রিপোলিতে বাংলাদেশ দূতাবাস, প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় এবং আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থার (আইওএম) সমন্বিত উদ্যোগে প্রত্যাবাসন কার্যক্রমটি বাস্তবায়িত হয়েছে।
দেশে ফেরার পর পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় এবং আইওএম-এর প্রতিনিধিরা তাদের স্বাগত জানান ।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, অধিকাংশ বাংলাদেশি সমুদ্রপথে ইউরোপে পৌঁছানোর উদ্দেশে অনিবন্ধিতভাবে লিবিয়ায় প্রবেশ করেছিলেন। লিবিয়ায় অবস্থানকালে তাদের অনেকেই মানব পাচারকারীদের দ্বারা অপহরণ ও নির্যাতনের শিকার হন।
সরকারি কর্মকর্তারা এসব অভিবাসীকে পরামর্শ দেন, যেন তারা অন্যদের এই ধরনের বিপজ্জনক ও অবৈধ পথে বিদেশ গমনের ঝুঁকি সম্পর্কে সচেতন করেন এবং ভবিষ্যতে এমন যাত্রা থেকে বিরত থাকার পরামর্শ দেন।
পুনর্বাসন সহায়তার অংশ হিসেবে আইওএম প্রত্যেককে নগদ ৬ হাজার টাকা, জরুরি খাদ্য সহায়তা, প্রাথমিক চিকিৎসা সেবা এবং প্রয়োজনে অস্থায়ী আবাসনের ব্যবস্থা করেছে।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আরও জানানো হয়, বর্তমানে লিবিয়ার বিভিন্ন বন্দিশিবিরে আটক থাকা অন্যান্য বাংলাদেশির নিরাপদ ও মর্যাদাপূর্ণ প্রত্যাবাসনের কাজ চলছে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, ত্রিপোলিতে বাংলাদেশ দূতাবাস, প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় এবং আইওএম যৌথভাবে এ বিষয়ে কাজ করে যাচ্ছে।
রাজনৈতিক উদ্দেশ্যেই গুম করা হতো বলে জানিয়েছেন গুম সংক্রান্ত তদন্ত কমিটির সভাপতি বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরী। গুমের শিকার ব্যক্তিদের সম্ভাব্য ৪ ধরনের পরিণতি হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর গুলশানে সংবাদ সম্মেলনে গুমসংক্রান্ত তদন্ত কমিটির সভাপতি এসব তথ্য জানান। কমিশনে দাখিল করা অভিযোগ বিশ্লেষণে এসব তথ্য দেন তিনি।
তিনি বলেন, গুমের শিকার ব্যক্তিদের সম্ভাব্য যে ৪ ধরনের পরিণতি হয়েছে, তা হলো: ১. গুমের শিকার ব্যক্তিকে হত্যা করা। ২. বিচারের আগেই মিডিয়ার সামনে উপস্থাপন করে জঙ্গি তকমা দিয়ে বাংলাদেশেই বিচারাধীন বা নতুন ফৌজদারি মামলায় গ্রেফতার দেখানো।৩. তাকে সীমান্ত দিয়ে ভারতে পাঠিয়ে সে দেশের আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের মাধ্যমে গ্রেপ্তারের ব্যবস্থা করা। ৪. ভাগ্য সুপ্রসন্ন হলে, অল্পসংখ্যক ক্ষেত্রে মামলা না দিয়ে ছেড়ে দেওয়া।
গুম কমিশনের ২য় অন্তর্বর্তী প্রতিবেদন গত ৪ জুন প্রধান উপদেষ্টা বরাবর জমা দেওয়ার পর আজ দুপুরে রাজধানীর গুলশানে গুম সংক্রান্ত কমিশন অফ ইনকোয়ারির কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে মইনুল ইসলাম চৌধুরী এ সব কথা বলেন।
গুম কমিশনের সভাপতি বলেন, বিগত কর্তৃত্ববাদী সরকারের আমলে বিরোধী রাজনৈতিক শক্তি এবং ভিন্ন মতাবলম্বীদের বিরুদ্ধে পদ্ধতিগত দমননীতির অংশ হিসেবে গুমকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছিল।
তিনি বলেন, ৫ আগস্ট রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পরেও বহু অপরাধী ও তাদের শুভাকাঙ্ক্ষীরা রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার কেন্দ্রে থাকায় অনেক জোরালো প্রমাণ ও নিদর্শন ধ্বংস, অনেক ক্ষেত্রে প্রাতিষ্ঠানিক অসহযোগিতা, সাক্ষীদের ভয়ভীতি প্রদর্শনসহ নানারকম ভীতিকর ও আতঙ্কজনক পরিবেশ সৃষ্টি করেছে। তবুও বহু ভুক্তভোগী জীবনের ঝুঁকি নিয়ে তাদের অভিযোগ ও অভিজ্ঞতা জানিয়েছেন। তারা দেশীয় ও আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে বিস্তারিতভাবে সে কাহিনি তুলে ধরেছেন।
গুম সংক্রান্ত কমিশন অফ ইনকোয়ারির সভাপতি আরো বলেন, বিগত সরকারের শাসনামলে গুম একটি সুশৃঙ্খল ও প্রাতিষ্ঠানিক রূপে ‘জঙ্গিবাদবিরোধী’ অভিযানের ছায়াতলে ইসলামি উগ্রবাদের হুমকিকে ব্যবহার করে রাজনৈতিক ক্ষমতা কেন্দ্রীভূত করা, আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি অর্জন ও শাসন দীর্ঘায়িত করার উদ্দেশে পরিচালিত হয়েছিল। ভুক্তভোগীদের মধ্যে ছিলেন- মেধাবী শিক্ষার্থী, রাজনৈতিক কর্মী ও সাংবাদিক থেকে সাধারণ জনগণ।
মইনুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, এ প্রক্রিয়ায় তারা ফৌজদারি বিচার ব্যবস্থাকে অস্ত্র বানিয়েছিল। আইন প্রয়োগকারী সংস্থা ও নিরাপত্তা বাহিনীকে রাজনৈতিক প্রভাবাধীন করে এবং নির্যাতন ও গোপন আটকের সংস্কৃতি প্রাতিষ্ঠানিকভাবে চালু করেছিল। এমনকি সাধারণ নাগরিকদের বেআইনি পন্থায় বারবার ভারতীয় বাহিনীর হাতেও তুলে দেওয়া হয়েছিল।
কমিশন অফ ইনকোয়ারি অ্যাক্টের ধারা ১০ এ(১) ও (২) অনুযায়ী কমিশনে দাখিলকৃত ১৩১টি অভিযোগের বিষয়ে আইন মোতাবেক জিডি রেকর্ডপূর্বক ভিকটিমদের সন্ধান ও উদ্ধার কার্যক্রম পরিচালনার জন্য পুলিশ মহাপরিদর্শক বরাবর প্রেরণ করা হয়েছে।
তিনি বলেন, গোপন আটক কেন্দ্রের অস্তিত্ব এখন আর অস্বীকার করা যায় না। সকল ক্ষেত্রেই ভুক্তভোগীরা প্রায় একই ধরনের প্রক্রিয়ার শিকার হয়েছেন। পদ্ধতিগত নির্যাতন, সন্ত্রাসী হিসেবে প্রচার, একই ধরনের আইন অনুযায়ী অভিযোগ দায়ের ও একই ধরনের ভাষায় বর্ণনা। বিভিন্ন পটভূমি থেকে আসা ব্যক্তিদের অভিজ্ঞতার এই সামঞ্জস্য রাজনৈতিক উদ্দেশ্যকে স্পষ্ট করে।
তিনি বলেন, প্রতিবেদনে ১৯ শতাংশ ফেরত না আসা ১২ জন ভিকটিমের বিষয়ে অগ্রগতি তুলে ধরেছি, যাদের বিষয়ে প্রাথমিকভাবে অনুসন্ধান সম্পন্ন হয়েছে। তাদের গুমের জন্য কারা দায়ী, তা প্রাথমিকভাবে আমরা শনাক্ত করতে পেরেছি। চলমান অনুসন্ধানের স্বার্থে এই মুহূর্তে এর চেয়ে বেশি প্রকাশ করা সম্ভব হচ্ছে না।
ফিরে না আসা ভিকটিমদের বিষয়ে অপরাধী ও গুমের অপরাধ সংঘটনের স্থানসহ নানাবিধ বিষয়ে তথ্যের ঘাটতি বা পুরোনো কললিস্ট না পাওয়াসহ নানারকম বিলম্বঘটিত প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হলেও কমিশন আন্তরিকতার সঙ্গে অনুসন্ধান কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে বলেও জানান তিনি।
প্রতিবেদনে কমিশন সন্ত্রাসবিরোধী যে সব মামলায় অপব্যবহার হয়েছে, তা ন্যায় বিচারের মানদণ্ড বিবেচনায় নিয়ে দ্রুত নিষ্পত্তির ব্যবস্থা এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ঊর্ধ্বতনের সঙ্গে আলোচনার প্রেক্ষিতে মালয়েশিয়া-ইন্দোনেশিয়ার মতো উপযুক্ত কাউন্টার টেরোরিজম মেথড বের করার জন্য দুটি সুপারিশ করা হয়।
এ সময় গুম সংক্রান্ত কমিশন অফ ইনকোয়ারির সদস্য অবসরপ্রাপ্ত অতিরিক্ত বিচারক মো. ফরিদ আহমেদ শিবলী, মানবাধিকার কর্মী নূর খান, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও কমিশনের সদস্য নাবিলা ইদ্রিস, মানবাধিকার কর্মী ও কমিশনের সদস্য সাজ্জাদ হোসেন উপস্থিত ছিলেন।
ঢাকার তৃতীয় অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ আদালতের এজলাস থেকে হাজতখানায় নেওয়ার পথে পুলিশকে মারধর করে পালিয়েছেন হত্যা মামলার এক আসামি।
আসামি শরিফুল ইসলাম (২২) দিনাজপুর জেলার নবাবগঞ্জ থানার হরিপুর গ্রামের মৃত শফিক আহম্মেদের ছেলে। তিনি রাজধানীর খিলগাঁও থানার জিসান হোসেন (১৪) হত্যা মামলার চার্জশিটভুক্ত আসামি। মামলাটি বর্তমানে সাক্ষ্যগ্রহণের পর্যায়ে রয়েছে।
গতকাল বৃহস্পতিবার বেলা সাড়ে ১১ টার পর সংশ্লিষ্ট আদালতের দায়িত্বে থাকা পুলিশ কনস্টেবল শহিদুল্লাহকে মারধর করে ছুটে পালিয়ে যান আসামি শরিফুল। এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতের হাজতখানার ইনচার্জ এসআই রিপন।
তিনি বলেন, আসামিকে আদালত থেকে হাজতখানায় নেওয়ার সময় পুলিশকে আঘাত করে তিনি পালিয়ে যায় আসামি শহিদুল।
ডিএমপির প্রসিকিশন বিভাগের এডিসি মাইন উদ্দিন বলেন, আসামির হাতে হাতকড়া পরানো ছিল। তিনি ধাতব কিছু দিয়ে হাতকড়া ঢিলা করে কৌশলে খুলে ফেলে। পরে পুলিশ কনস্টেবলের হাতে আঘাত করে পালিয়ে যায়।
তিনি বলেন, আমরা আইনগত ব্যবস্থা নিচ্ছি। কোতোয়ালি থানাকে জানানো হয়েছে আসামিকে গ্রেপ্তারের জন্য। তার বিরুদ্ধে মামলার প্রস্তুতি চলমান।
১৯ জুন ২০২৫ তারিখে বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালস (বিইউপি) এর ১৭তম বার্ষিক সিনেট সভা বিইউপির বিজয় অডিটোরিয়ামে অনুষ্ঠিত হয়। সভায় সভাপতিত্ব করেন বিইউপির উপাচার্য ও সিনেট চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল মোঃ মাহ্বুব-উল আলম, বিএসপি, এনডিসি, এএফডব্লিউসি, পিএসসি, এমফিল, পিএইচডি।
সভার শুরুতে বিইউপির উপাচার্য ও সিনেট চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল মোঃ মাহ্বুব-উল আলম বিদায়ী সদস্যদের ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন এবং নবনিযুক্ত সদস্যদের স্বাগত জানান। পরে বিইউপির ট্রেজারার এয়ার কমডোর মোঃ রেজা এমদাদ খান, জিইউপি, বিইউপি, এনডিসি, পিএসসি, জিডি(পি), ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরের সংশোধিত বাজেট ১৩৪ কোটি ৮ লক্ষ টাকা ও ২০২৫-২০২৬ অর্থবছরের ১৩৪ কোটি ৯৭ লক্ষ টাকার বাজেট উপস্থাপন করেন।
সিনেট সদস্যগণ ট্রেজারার এর বক্তৃতার ওপর আলোচনা করেন এবং সর্বসম্মতিক্রমে বাজেট প্রস্তাব অনুমোদন করেন। এছাড়াও সিনেট সভায় ১৭তম বার্ষিক প্রতিবেদন উপস্থাপিত ও সর্বসম্মতিক্রমে অনুমোদিত হয়। ১৭তম বার্ষিক সিনেট সভাটি সার্বিকভাবে সঞ্চালনা করেন বিইউপির রেজিস্ট্রার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোঃ রাব্বি আহসান, এনডিসি, পিএসসি।
সভায় সিনেট চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল মাহ্বুব তাঁর বক্তব্যে বলেন, বিইউপি বয়সে নবীন হলেও এর শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও গবেষকগণের বিভিন্ন প্রতিযোগিতা, সেমিনার, ওয়ার্কশপ ও গবেষণা ভিত্তিক কার্যক্রমের অর্জনসমূহ জাতীয় আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে সুনাম বয়ে আনছে। যুগোপযোগী শিক্ষা প্রদান, গবেষণা ও উদ্ভাবনী কার্যক্রমে বিশ্বমানের বিশ্ববিদ্যালয়ে উন্নিত হওয়ার লক্ষ্যে অত্র বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক একটি সুনির্দিষ্ট Academic Strategic Plan –২০৫০ প্রণয়ন করা হয়েছে।
Academic Strategic Plan এর মাধ্যমে পাঠ্যক্রমের আধুনিক মান নির্ধারণ, Outcome Based Education (OBE) কারিকুলাম প্রনয়ণ, গবেষণা, উদ্ভাবন, প্রকাশনা ও গবেষণা সহায়তার সক্ষমতা বৃদ্ধির উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
মাননীয় উপাচার্য সকলকে অবহিত করেন যে বিইউপি’র গবেষণাভিত্তিক অগ্রযাত্রায় BUP Research Centre (BRC) অংঙ্গীভূত ফ্যাকাল্টি ও অধিভুক্ত প্রতিষ্ঠানসমূহে গবেষণা, উদ্ভাবন ও পরামর্শমূলক কার্যক্রমে গতিশীলতা আনার লক্ষ্যে কাজ করছে। 'Inspiring Innovation for Advancing Knowledge' শ্লোগানকে ধারণ করে, BUP Research Centre, গবেষকদের মানসম্মত গবেষণায় উৎসাহ দিচ্ছে এবং শিল্প-প্রতিষ্ঠান ও একাডেমিয়ার মধ্যে সংযোগ স্থাপনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।
এছাড়াও তিনি উল্লেখ করেন, দেশীয় ও আন্তর্জাতিক গবেষকদের গবেষণালব্ধ জ্ঞান প্রসারের উদ্দেশ্যে বিইউপি থেকে ৫টি জার্নাল প্রতিবছর নিয়মিত প্রকাশিত হচ্ছে যা সকলের মাঝে সমাদৃত। সিনেট চেয়ারম্যান আরও উল্লেখ করেন যে, শিক্ষার্থীদের শিক্ষার পাশাপাশি একজন সুশৃঙ্খল, নৈতিকতা সম্পন্ন সু-নাগরিক হিসেবে গড়ে তোলার ক্ষেত্রে বিইউপি বদ্ধপরিকর এবং সে লক্ষ্যে প্রতিনিয়ত কাজ করে যাচ্ছে। এছাড়াও শিক্ষার্থীদের চারিত্রিক গুণাবলি ও আত্মিক উন্নয়নের লক্ষ্যে সকল প্রোগ্রামের পাঠ্যক্রমে নৈতিক শিক্ষা অন্তর্ভুক্ত করার মাধ্যমে Need Based Education - কেও গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করা হচ্ছে। তিনি বলেন যে, আধুনিক শিক্ষাব্যবস্থায় শিক্ষার্থীদের মানসম্মত কারিকুলাম ও শিক্ষা পরিবেশের পাশাপাশি বৈচিত্র্যময় সাংস্কৃতিক সান্নিধ্যের গুরুত্বকে সামনে রেখে বিইউপি'তে বিদেশি শিক্ষার্থী ভর্তির প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। এছাড়া, নবপ্রজন্মের মধ্যে নৈতিক মূল্যবোধ, সততা, চরিত্র গঠন ও সমাজের প্রতি দায়বদ্ধতা এবং দেশপ্রেম জাগ্রত করতে পড়াশোনার পাশাপাশি বাংলাদেশের সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য, জাতীয় দিবসগুলোর তাৎপর্য ও মাহাত্ম্য তুলে ধরে বিইউপি’র বিভিন্ন আলোচনা সভা, সিম্পোজিয়াম, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজনের কথা উল্লেখ করেন।
এই সিনেট সভায় বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের সচিব, বাংলাদেশ সশস্ত্রবাহিনীর উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা এবং বিইউপির উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে প্রস্তাবিত ইলেকট্রোরাল কলেজব্যবস্থাকে সম্পূর্ণ অগ্রহণযোগ্য বলে মন্তব্য করেছে বিএনপি। দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, ‘জনগণের ভোটাধিকার হরণে এই ব্যবস্থাকে আরেকটি ছলচাতুরী হিসেবে দেখা হচ্ছে।’
গতকাল বুধবার বিকালে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এমন মন্তব্য করেন।
তিনি বলেন, রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের জন্য কমিশনের যে প্রস্তাব তাতে একটা ইলেক্টোরাল কলেজ করা হবে। এবং প্রায় ওনাদের ভাষ্য অনুযায়ী ৭০ হাজারের মতো ভোটার থাকবে। ইউনিয়ন পর্যায় থেকে শুরু করে স্থানীয় সরকার পর্যায়ের প্রতিনিধিগণ এখানে ভোটার হবেন। এবং রাষ্ট্রপতিকে সৎ, দক্ষ ও অভিজ্ঞ একজন ব্যক্তিকে মনোনয়ন দেওয়ার জন্য ওখানে প্রস্তাব করা হয়েছে।
সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘জাতীয় সাংবিধানিক কাউন্সিল (এনসিসি) গঠনের প্রস্তাবে আগের মতোই একমত নয় বিএনপি।
এই কাউন্সিলের জবাবদিহি না থাকায় সমর্থন করে না বিএনপি। এই কাউন্সিলে আরেকটি ভারসাম্যহীন অবস্থা তৈরি হবে বলে মনে করি আমরা।’
স্বাধীন বিচারব্যবস্থার দাবি জানিয়ে সালাহউদ্দিন বলেন, ‘স্বাধীন বিচারব্যবস্থা হলে ভারসাম্যহীনতা দূর হবে, ফ্যাসিবাদ দমন করবে। প্রধানমন্ত্রী ও রাষ্ট্রপতির ক্ষমতার ভারসাম্য, অন্য সাংবিধানিক পদ, সংস্থা স্বাধীন করতে পারলে সমস্যা থাকবে না।’
বিএনপি মনে করে সুশাসন নিশ্চিত করতে ন্যায়পাল করা যেতে পারে। বিদ্যমান ব্যবস্থা বজায় রেখে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সংসদ হলে তাদের যোগ করা যেতে পারে, বলেন তিনি।
তিনি আরও বলেন, ‘নির্বাচন কমিশন আইন সংশোধন করা যেতে পারে। জবাবদিহি নিশ্চিত করতে হবে। বিএনপি মনে করে, দুদক ও মানবাধিকার কমিশনের মতো প্রতিষ্ঠান শক্তিশালী করতে বিদ্যমান আইনগুলো সংস্কারের প্রয়োজন।
কেরানীগঞ্জের শাক্তা ও তারানগর ইউনিয়নের বুক চিরে চলা ভাওয়াল-চন্ডিপুর-অগ্রখোলা সড়কের বেহাল দশায় নিত্যদিন ভোগান্তিতে পড়ছে হাজারো মানুষ। দীর্ঘদিন ধরে সংস্কারের অভাবে সড়কজুড়ে এখন গর্ত আর ধুলাবালি। সামান্য বৃষ্টিতে কাদায় যানবাহন আটকে যায়, আর শুকনো মৌসুমে উড়ে ধূলোর ঝড়।
রাস্তাটির বেহাল অবস্থার কারণে প্রায় প্রতিদিনই দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছেন পথচারী ও যানবাহনের চালকরা। ছোট-বড় গর্তে হোঁচট খেয়ে পড়ে আহত হন অনেক পথচারী। অন্যদিকে, যানবাহন চলাচলের অযোগ্য এই সড়কে প্রতিনিয়তই নষ্ট হয়ে পড়ে ভ্যান, অটোরিকশা, ট্রাকসহ বিভিন্ন গাড়ি। আকিজ ফাউন্ডেশন স্কুল, মেকাইল মাদ্রাসা ও অগ্রখোলা কমিউনিটি হাসপাতালের সামনের অবস্থা এতটাই খারাপ যে মাঝে মাঝেই উল্টে যায় যাত্রী বোঝাই যানবাহন ।
সড়কের করুণ অবস্থার কারণে অনেক চালক ও পথচারী এখন পাশের বেলনা, কলাতিয়া ও নয়াবাজার হয়ে বিকল্প রাস্তায় যাতায়াত করছেন। এতে সময়, অর্থ ও দুর্ভোগ বাড়ছে।
এ সড়ক দিয়ে প্রতিদিন কেরানীগঞ্জ ছাড়াও নবাবগঞ্জ, দোহার, সিরাজদিখানসহ দক্ষিণবঙ্গের হাজার হাজার মানুষ মোহাম্মদপুর হয়ে রাজধানীতে প্রবেশ করে। অথচ বছরের পর বছর ধরে অবহেলায় পড়ে আছে সড়কটি।
স্থানীয় বাসিন্দা কবির হোসেন বলেন, ‘রাস্তাটার অবস্থা এমন যে, অটোরিকশা সিএনজিতে ওঠা মানেই কোমর ভাঙা। মাঝে মাঝেই যানবাহন পড়ে মানুষ আহত হয়। স্কুলের বাচ্চারা পর্যন্ত ভয়ে এই রাস্তায় যেতে চায় না। কোন এমপি-মন্ত্রী একবার এই রাস্তা দিয়ে গেলে বুঝত কষ্টটা কেমন।
একই ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন পণ্যবাহী ট্রাকচালক রাকিব হাওলাদার। তিনি বলেন, একবার গর্তে পড়লে গাড়ির যন্ত্রাংশ নষ্ট হয়ে যায়। ট্রাকে থাকা জিনিসপত্র পড়ে যায়, এভাবে থাকলে এই রাস্তা দিয়ে আর চলাচল করা সম্ভব নয়। এটি দ্রুত সংস্কার করা উচিত।
এ বিষয়ে কেরানীগঞ্জ উপজেলা প্রকৌশল অধিদপ্তরের উপ-প্রকৌশলী আব্দুল লতিফ বলেন, সড়কটি ইতোমধ্যে ডিপিপিতে অনুমোদন পেয়েছে। তাই এখন সংস্কার করা হচ্ছেনা। বছরের শেষ দিকে ২০ ফুট প্রশস্ত করে এবং আরও শক্তিশালী করে কাজ শুরু হবে। তখন রাস্তাটি আরো টেকসই হবে।
এদিকে এলাকাবাসীর দাবি, সংস্কার কাজ শুরুর আগ পর্যন্ত অন্তত গর্ত ভরাট করে সাময়িক চলাচলের উপযোগী করে তুলতে হবে। নইলে প্রতিদিন দুর্ঘটনার আশঙ্কা থেকেই যাচ্ছে।
একটা ভাঙাচোরা বাইসাইকেলই তার ভরসা। এ সাইকেল চালিয়ে ১৫ কিলোমিটার দুরের দুর্গম খাসিয়া পল্লীতে কাজ করে দুই-আড়াইশ টাকা রোজগার করে কিশোর তোফাজ্জল (১৪)। মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার সীমান্তবর্তী ৯নং ইসলামপুর ইউনিয়নের কাঁঠালকান্দী গ্রামের আলী আহমেদ (৬৫) এর ছেলে তোফাজ্জল হোসেন। পরিবারে সে একমাত্র উপার্জনক্ষম। বাবা হার্টের রোগী, বোন আয়েশা খাতুন (২৫) মানসিক ভারসাম্যহীন আর বয়োবৃদ্ধ দাদী সমিতা বিবি (৮২) দীর্ঘদিন ধরে শয্যাশায়ী।
তোফাজ্জল কান্নাজড়িত কন্ঠে এ প্রতিবেদককে বলেন, প্রতিদিনি সকালে ভাঙাচোরা একটি সাইকেল নিয়ে ১৫ কিলোমিটার দুরের খাসিয়া পল্লীতে কাজে যাই। সন্ধ্যায় ফিরি। যা রোজগার হয়, দুবেলাও খেতে পাইনা। এ দুনিয়ায় আল্লাহ ছাড়া আমাদের আর কেউ নাই। প্রতিবেশী ফজল মিয়া, আবু শহীদ এ পরিবারের দুরাবস্থার কথা জানিয়ে বলেন, প্রকৃতই তারা খুব অসহায় ও মানবেতর জীবন কাটাচ্ছেন। তিনজনই অসুস্থ। মাঝে মধ্যে আমরা যতটা সম্ভব সহযোগিতা করার চেষ্টা করি।
সরেজমিন তোফাজ্জলদের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, সরকারি আবাসন প্রকল্পের ছোট্ট একটি ঘরে মেঝেয় জীর্ণ-শীর্ণ কাঁথায় শুয়ে আছেন সমিতা বিবি। অপুষ্টি আর ক্ষুধার যন্ত্রণায় ক্লান্ত। ঠিকমতো কথা বলতে পারছেন না। যা বললেন বোঝা গেলো, ডালভাত খেয়ে ঈদের দিন পার করেছি। ক্ষিদের জ্বালায় রাতে ঘুম আসে না। একরত্তি নাতি আর কিইবা করবে। তবু যা করছে আল্লাহর কাছে শুকরিয়া। চাল ডাল আনলে ওষুধ আনতে পারে না। তবু প্রায়ই অনাহারে থাকতে হয়। ঈদে চান্দে প্রতিবেশীরা কেউ খাবার দেয়, কেউ সামান্য টাকা-পয়সা দেয়। এইভাবেই টিকে আছি।
স্থানীয়দের সহযোগিতাই একমাত্র ভরসা। মানুষের সাহায্যে দুমুঠো ভাত খেতে পারেন, যদি কেউ সাহায্যে না করে তাহলে না খেয়েই থাকতে হয়। তার বিলাপে চোখে জল চলে আসে। এ যেন দারিদ্র্যের এক করুণ চিত্র। এই অসহায় নারীর জীবন কাটছে অভাব আর কষ্টে। পা ভেঙে এক বছর ধরে শয্যাশায়ী। ছেলে আলী আহমেদও হার্টের রোগী। কোন কাজকর্ম করতে পারেন না। তাই ১৩/১৪ বছরের নাতি তোফাজ্জলের কাঁধেই সংসারের ভার। দুর্গম খাসিয়া পুঞ্জিতে কাজ করে দিনে আয় করে দুই-আড়াইশ টাকা মাত্র। এ টাকায় দুবেলা খাবার যোগানোই মুশকিল। তার ওপর অসুস্থ দাদি, বাবা আর মরার উপর খাঁড়ার ঘা মানসিক প্রতিবন্ধী বড় বোন আয়েশা খাতুন।
ইসলামপুর ইউনিয়নের স্থানীয় ইউপি সদস্য ফারুক আহমেদ জানান, একসময় তাদের মাথা গোঁজার ঠাঁই ছিলো না। কয়েক বছর আগে সরকারি আবাসন প্রকল্পের মাধ্যমে এ পরিবারের জন্য একটি ঘরের ব্যবস্থা করা হয়েছে। সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তোফাজ্জলদের দুরাবস্থা জেনে অনেকে খাদ্য সামগ্রী দিয়ে তাদের সহায়তা করছেন। তবে বয়োবৃদ্ধ সমিতা বিবি ও মানসিক প্রতিবন্ধী আয়েশা খাতুনের সুচিকিৎসা ও তোফাজ্জলদের আত্মনির্ভরশীল হওয়ার ব্যবস্থা জরুরি।
মন্তব্য