রাজধানীর রমনায় ঢাকা জেলা পুলিশ সুপারের বাংলোর গার্ড কনস্টেবল মেহেদী হাসান গুলিতে নিহত হয়েছেন।
শুক্রবার বেলা আনুমানিক তিনটার দিকে ঘটনাটি ঘটে।
পুলিশ জানিয়েছে, মেহেদী নিজের বন্দুকের গুলিতেই নিহত হয়েছেন। এটা দুর্ঘটনা বা আত্মহত্যাও হতে পারে বলেও ধারণা করছেন কর্মকর্তারা।
সংবাদ পেয়ে রমনা থানার উপপরিদর্শক এসআই ছালামসহ নিহতের সহকর্মীরা তাকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নিয়ে যান। পরে বিকেল পৌনে পাঁচটার দিকে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
রমনা মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মনিরুল ইসলাম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘ডিউটিরত অবস্থায় তার (মেহেদী) রাইফেল থেকে গুলি হয়েছে। এটা হতে পারে সুইসাইডাল বা এক্সিডেন্টাল। তবে সুইসাইড হওয়ার সম্ভাবনা বেশি।’
মেহেদীর থুতনিতে গুলি ঢোকে। নিহত মেহেদীর বাড়ি টাঙ্গাইলের ঘাটাইলের আনহেলার গ্রামে। তার বাবার নাম আব্দুল হানিফ। তার মরদেহ ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মর্গে রয়েছে।
দেশের উদীয়মান গেমিং কমিউনিটির জন্য নতুন ও উদ্দীপনাময় অধ্যায় হিসেবে আনুষ্ঠানিকভাবে অপো ইস্পোর্টস ক্লাব উন্মোচন করেছে বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় স্মার্ট ডিভাইস উদ্ভাবক অপো। এই উদ্যোগের প্রথম আয়োজন হিসেবে নতুন উন্মোচিত অপো এ৬ প্রো’র মাধ্যমে পাবজি মোবাইল টুর্নামেন্ট অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। এই প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আগ্রহী গেমারদের একত্রিত করতে চায় অপো, যেখানে দক্ষতা, কৌশল ও প্রযুক্তি একত্রিত হবে।
টুর্নামেন্টে অংশগ্রহণকারীরা মোট ৩,০০,০০০ টাকা পুরস্কারের জন্য প্রতিযোগিতা করার সুযোগ পাবেন; যা এটিকে সাম্প্রতিক মাসগুলোতে বহুল প্রতীক্ষিত মোবাইল গেমিং প্রতিযোগিতার মঞ্চ হিসেবে তুলে ধরেছে। প্রতিযোগিতাটির রেজিস্ট্রেশন চলবে ১০-১৩ অক্টোবর, ১৪-২১ অক্টোবর পর্যন্ত চলবে কোয়ালিফায়িং রাউন্ড। কোয়ার্টারফাইনাল হবে ২৩ ও ২৪ অক্টোবর, সেমিফাইনাল ২৬ ও ২৭ অক্টোবর এবং গ্র্যান্ড ফাইনাল ও বিজয়ী ঘোষণা হবে ৩১ অক্টোবর। খেলোয়াড়রা অপো’র অফিসিয়াল ডিসকর্ড কমিউনিটি https://discord.gg/zU8TbkuEA থেকে রেজিস্ট্রেশন করতে পারবেন।
এই ইস্পোর্টস অভিজ্ঞতার মূলে রয়েছে অপো এ৬ প্রো। গেমারদের জন্য অসাধারণ পারফরম্যান্স ও নির্ভরযোগ্যতা নিশ্চিত করতে এই স্মার্টফোন এসেছে। এটি সুপারকুল ভিসি কুলিং সিস্টেমের কারণে দীর্ঘসময় খেললেও ডিভাইস অতিরিক্ত গরম হয়ে যাবে না। এর এআই লিঙ্কবুস্ট ৩.০ স্থিতিশীল নেটওয়ার্ক সংযোগ নিশ্চিত করবে, যা টানটান উত্তেজনার ম্যাচেও ল্যাগ-মুক্ত খেলার নিশ্চয়তা প্রদান করবে। এর সুবিশাল ৭০০০ মিলিঅ্যাম্পিয়ারের ব্যাটারি, ৮০ ওয়াট সুপারভুক ফাস্ট চার্জিং ও আইপি৬৯-রেটেড ডিউরেবিলিটি সবচেয়ে চ্যালেঞ্জিং অবস্থাতেও নিরবচ্ছিন্ন খেলার নিশ্চয়তা দেয়।
এ বিষয়ে অপো বাংলাদেশ অথোরাইজড এক্সক্লুসিভ ডিস্ট্রিবিউটরের ম্যানেজিং ডিরেক্টর ডেমন ইয়াং বলেন, “অপো ইস্পোর্টস ক্লাব উন্মোচনের মাধ্যমে বাংলাদেশের গেমারদের জন্য পেশাদার ও অন্তর্ভুক্তিমূলক প্ল্যাটফর্ম তৈরি করা আমাদের লক্ষ্য। অপো এ৬ প্রো আমাদের খেলোয়াড়দের মতোই শক্তিশালী, সহনশীল ও যেকোনো চ্যালেঞ্জ গ্রহণে প্রস্তুত। নতুন প্রজন্মের ইস্পোর্টস প্রতিভাদের সহায়তা করতে পেরে এবং তাদের জাতীয় পর্যায়ে নিয়ে আসতে পেরে আমরা অত্যন্ত উচ্ছ্বসিত।”
রেজিস্ট্রেশন ও আপডেটের জন্য অংশগ্রহণকারী ও ফ্যানদের অফিসিয়াল ডিসকর্ড কমিউনিটিতে https://discord.gg/zU8TbkuEA যোগ দেওয়ার আহবান জানানো হচ্ছে। একইসাথে রিয়েল-টাইম আপডেট, ম্যাচ হাইলাইট ও বিজয়ী ঘোষণার ক্ষেত্রে ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম, ইউটিউব ও টিকটকে অপো বাংলাদেশকে ফলো করুন।
নোয়াখালীর সোনাইমুড়ী উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মাঈনুল ইসলামের সম্পদের খোঁজে মাঠে নেমেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক), নোয়াখালী।
১২ অক্টোবর রবিবার নোয়াখালীর দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) সহকারী পরিচালক আব্দুল্লাহ আল নোমান বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, সাবেক সোনাইমুড়ী উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ও বর্তমানে নোয়াখালী চিকিৎসা সহকারী প্রশিক্ষণ কেন্দ্র (ম্যাটস) জুনিয়র লেকচারার ডা. মাঈনুল ইসলামের অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে দুর্নীতি দমন কমিশন মহাপরিচালক বরাবর লিখিত অভিযোগ হয়। উক্ত অভিযোগের ভিত্তিতে ইতিপূর্বে সরেজমিনে গিয়ে তদন্ত করা হয়েছে। অতি শীঘ্রই তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করা হবে।
অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে, সোনাইমুড়ী পৌর এলাকার কৌশল্যারবাগ গ্রামের মৃত আবদুল মতিনের ছেলে ডা. মাঈনুল ইসলাম ২০০০ সালে সোনাইমুড়ী বাজারের কলেজ রোডে মেডিকেয়ার হাসপাতাল নামে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান হন। ২০০১ সালে সোনাইমুড়ী উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কেন্দ্রে পদায়ন থাকলেও তিনি নিয়মিত দায়িত্ব পালন করেননি। তার বিরুদ্ধে সরকারি হাসপাতালের চাকরি করা কালীন বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগ থাকলেও তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকারের স্থানীয় সংসদ সদস্যকে হাত করে তিনি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কর্মকর্তার পদ নেন। তখন থেকে সরকারি হাসপাতালের বিভিন্ন বরাদ্দের অর্থ আত্বসাৎ করে বিপুল অঙ্কের টাকার মালিক হন। বিগত ২৩ বছর তিনি সোনাইমুড়ীর বিভিন্ন ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কেন্দ্র ও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কর্মরত থেকে ২ টি বিলাশ বহুল গাড়ী ক্রয় করেছেন। ঢাকায় ৩ টি বিলাশ বহুল প্ল্যাট কিনেছেন। একেকটি প্ল্যাটের মূল্য প্রায় দেড় কোটি টাকা। কানাডায় তার সহোদরের মাধ্যমে ২ টি বাড়ী ক্রয় করেছেন। তার গ্রামের বাড়ী সোনাইমুড়ী পৌরসভার শিমুলিয়া গ্রামে বহুতল ভবন নির্মাণ করেছেন। পৌর এলাকার সোনাইমুড়ী বাজারে জমিলা মেমোরিয়াল নামে তার মালিকানাধীন ১ টি হাসপাতাল রয়েছে। তার স্ত্রীর নামে ঢাকার পশ্চিম ধানমন্ডি ঝিকাতলায় ২২৭/৩, এ-৫, রোড নং- ১৯ ঠিকানায় ১ টি বাড়ী রয়েছে। বিভিন্ন ব্যাংকে নামে বেনামে একাউন্টে রয়েছে বিপুল পরিমাণের টাকা।রয়েছে কয়েক কোটি টাকা মূল্যের কৃষি জমি।
নোয়াখালীর দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) এর উপ -পরিচালক মো. ফারুক আহমেদ বলেন, স্বাস্থ্য কর্মকর্তার সম্পদের তদন্ত করছে নোয়াখালী দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। অতি শীঘ্রই তদন্ত করে প্রতিবেন দাখিল করা হবে।
ডাক্তার মাইনুল ইসলাম মুঠোফোনে জানান, তার বিরুদ্ধে দুদকে একটি অভিযোগ হয়েছে তিনি জেনেছেন। নোয়াখালী দুর্নীতি দমন কমিশনের সদস্যরা সরেজমিনে এসেছেন।
রোমে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে রোববার তাঁর হোটেলে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেছেন আন্তর্জাতিক কৃষি উন্নয়ন তহবিলের (আইএফএডি) প্রেসিডেন্ট আলভারো লারিও।
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘পিআর পদ্ধতির আন্দোলনের লক্ষ্যই হচ্ছে নির্বাচনকে বিলম্বিত করা, এটা জনগণ গ্রহণ করবে না।’
তিনি বলেন, ‘কয়েকটি রাজনৈতিক দল পিআর পদ্ধতি নিয়ে কথা বলছে এবং আপনারা দেখেছেন এটার জন্য তারা আন্দোলনও করছে। এর একটাই লক্ষ্য তা হচ্ছে, নির্বাচনকে বিলম্বিত করা। জনগণের ক্ষমতা জনগণের হাতে ফিরিয়ে দেওয়ার যে প্রক্রিয়া সেই প্রক্রিয়াকে বিলম্বিত করা।’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘পিআর পদ্ধতি এই দেশের মানুষ গ্রহণ করবে না। আমাদের দলের পক্ষ থেকে তো আমরা স্পষ্ট করে বলেছি, এখনো বলছি, জনগণই এই পদ্ধতি গ্রহণ করবে না, চাপিয়ে দেওয়া কোনো কিছু এদেশের মানুষ গ্রহণ করবে না।’
গতকাল রোববার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি কার্যালয়ের মিলনায়তনে ন্যাশনাল পিপলস পার্টির উদ্যোগে ডেমোক্র্যাটিক লীগের সাধারণ সম্পাদক সাইফুদ্দিন আহমেদ মনির দ্বিতীয় মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে এক আলোচনা সভায় বিএনপির মহাসচিব এই শঙ্কা প্রকাশ করেন।
বিএনপি মহাসচিব আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, ‘অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কমিটমেন্ট হলো ২৬ সালের ফেব্রুয়ারি মাসের মধ্যেই এই নির্বাচন হবে। আমরা সেটাই দেখতে চাই। জনগণ নির্বাচন দেখতে চায় এবং সেই নির্বাচনের মধ্য দিয়ে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় ফিরে যেতে চায় এবং গণতন্ত্রের মধ্য দিয়েই জনগণের আশা আকাঙ্ক্ষাগুলো পূরণ করতে চায়।’
বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘আমরা জানি যে নির্বাচন হবে। সেই নির্বাচনে যেকোন দল জয়ী হতে পারে জনগণের ইচ্ছার উপর দিয়ে। কিন্তু সেই দলকেই জনগণ বেছে নেবে, যে দল পরীক্ষিত অতীতে যারা পরীক্ষা দিয়েছে অর্থাৎ সরকারে ছিল কাজ করেছে। যেই দল মানুষকে আশার আলো দেখিয়েছে, যেই দল অন্ধকার থেকে আলোতে টেনে নিয়ে এসেছে।’
শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানই এই দেশে প্রথম সংবিধানে বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম সংযোজন করেছিলেন, তিনিই প্রথম এই দেশের সংবিধানে আল্লাহর উপর অবিচল আস্থা ও বিশ্বাস কথাটি রেখেছিলেন।
এখন কিছু দল সেগুলোকে বিকৃত করে বিভিন্নভাবে এই বিএনপিকে চিত্রায়িত করার চেষ্টা করছে।’
তিনি বলেন, ‘যারা বয়স কম তারা জানে না, যাদের বয়স একটু বেশি তারা দেখেছেন ১৯৭৫ সাল নভেম্বর কী অবস্থার প্রেক্ষিতে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের নেতৃত্বে এই দেশের মানুষ সেই ভারতীয় আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে বেরিয়ে এসে সম্পূর্ণভাবে নিজেদের পায়ে দাঁড়ানোর জন্য নতুন করে তখন স্বনির্ভর বাংলাদেশ তৈরি করার কাজে ঝাপিয়ে পড়েছিল।’
তিনি আরও বলেন, ‘ঠিক একইভাবে আজকে আবার আমরা সবাই এক হয়েছি আমাদের নেতা তারেক রহমানের নেতৃত্বে। আমরা অবশ্যই বাংলাদেশকে আবার একটা স্বনির্ভর, আত্মমর্যাদা সম্পন্ন দেশ হিসেবে বিশ্বের দরবারে মাথা উঁচু করে দাঁড় করাব, এমন বাংলাদেশই নির্মাণ করতে চাই।’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘অনেক ষড়যন্ত্র আছে, চক্রান্ত আছে। সমস্ত ষড়যন্ত্র চক্রান্তকে পরাজিত করবার শক্তি বাংলাদেশের মানুষের আছে।’
সামনে কঠিন পরীক্ষা উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘সামনে কঠিন পরীক্ষা অপেক্ষা করছে। প্রতিদিন আপনাদের এই ইউটিউব, টেলিভিশন, সোশ্যাল মিডিয়া এগুলোতে বিভিন্ন রকম মিথ্যা অপপ্রচার চালিয়ে যাওয়া হচ্ছে।’ আমার বিশ্বাস আপনারা এখান থেকে সঠিক তথ্যটি বেছে নিতে পারবেন। এই দেশের মানুষ কখনো ভুল করে না, সবসময় সঠিক পথে এগিয়ে যায়। শান্তিপূর্ণভাবে আমরা সেই প্রক্রিয়ার মধ্যে যেতে চাই।
যেখানে একটি নির্বাচনের মধ্য দিয়ে জনগণ তার আস্থা প্রকাশ করবে এবং তাদের একটা পার্লামেন্ট ও তাদের সরকার বেছে নেবে। আপনাদের আবার অনুরোধ করব যে, সুযোগ আমরা পেয়েছি বাংলাদেশকে নতুন করে একটা গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিসেবে গড়ে তুলবার সেই সুযোগ যেন আমরা না হারাই।’
একাত্তর মুছে ফেলা যাবে না উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘কিছু সংখ্যক মানুষ চেষ্টা করে আমাদের ১৯৭১ সালের ইতিহাসকে ভুলিয়ে দিতে। এটাও সবসময় মাথায় রাখতে হবে যে, একাত্তরে যুদ্ধ হয়েছিল বলেই আমরা স্বাধীন হয়েছিলাম, স্বাধীন হয়েছিলাম বলেই আজকে আমরা নতুন রাষ্ট্রের নতুন চিন্তা করতে পারছি, স্বাধীন হয়েছিলাম বলেই কিন্তু আমরা আজকে এই বাংলাদেশকে বাংলাদেশের মানুষের অবস্থার পরিবর্তন করবার যে সংগ্রাম সেই সংগ্রামে অংশ নিতে পারছি।’
তিনি বলেন, ‘তখন আমরা যুবক ছিলাম, লড়াই করেছি, যুদ্ধ করেছি। আমাদের মধ্যে এখানে অনেকে আছেন যারা সেই যুদ্ধে অংশ নিয়েছিলেন, পরবর্তীকালে গণতান্ত্রিক আন্দোলনগুলোতে অংশ নিয়েছেন, এই চব্বিশের আন্দোলনে অংশ নিয়েছেন, আমরা সবাই এই যুদ্ধগুলোতে অংশ নিয়েছি। শুধু একটা লক্ষ্য আমরা বাংলাদেশকে সত্যিকার অর্থেই একটি গণতান্ত্রিক সমৃদ্ধ একটা বাংলাদেশ হিসেবে গড়ে তুলতে চাই। সেই কথাটি মাথায় রেখে সকলে যেন সামনের দিকে এগিয়ে যাই।’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের বয়স এক বছর পার হয়েছে, এই ১৪ মাসে রাতারাতি আলাদিনের চেরাগের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশকে একটা খুব সুন্দর বানিয়ে ফেলবে এই আশা জনগণ করে না এই সরকারের কাছ থেকে। কিন্তু প্রক্রিয়ার শুরুটা চায়... চায় যে সেই প্রক্রিয়া শুরু হোক যে প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে আমরা একটা নতুন বাংলাদেশ দেখতে পাব।’
তিনি বলেন, ‘আপনারা ইতোমধ্যে দেখেছেন, যে তারেক রহমান একটা সাক্ষাৎকার দিয়েছে বিবিসিতে।
সেখানে তিনি এই প্রশ্নগুলো তুলে ধরেছেন এবং কিভাবে তিনি দেশের সমস্যার সমাধান করতে চান সেই সমস্যাগুলো তিনি তুলে ধরেছেন। ফিন্যাশনাল টাইমসেও তিনি একইভাবে কথাগুলো বলেছেন।’
বেকার সমস্যাসহ বিভিন্ন ইস্যুতে বিদ্যমান সমস্যা সমাধানে বিএনপি ইতোমধ্যে কমিটি গঠন করে কাজ শুরু করেছে এবং ‘অনেক কাজ সম্পন্ন’ করে রাখা হয়েছে বলেও জানান বিএনপি মহাসচিব।
ন্যাশনাল পিপলস পার্টির চেয়ারম্যান ফরিদুজ্জামান ফরহাদের সভাপতিত্বে ও মহাসচিব মোস্তাফিজুর রহমান মোস্তফার সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় জাগপার খন্দকার লুফুর রহমান, গণদলের এটিএম গোলাম মাওলা চৌধুরী, সাম্যবাদী সৈয়দ নুরুল ইসলাম, বাংলাদেশ ন্যাপের এমএন শাওন সাদিকী বক্তব্য রাখেন।
বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থা আজ এক গভীর ও বহুমাত্রিক সংকটের মুখে দাঁড়িয়ে। একদিকে শিক্ষার গুণগত মান, দক্ষতা ও প্রাসঙ্গিকতা নিয়ে দীর্ঘদিনের বিতর্ক; অন্যদিকে শিক্ষক সমাজের আর্থিক নিরাপত্তা, সামাজিক মর্যাদা ও পেশাগত স্বাধীনতা ক্রমেই হুমকির মুখে পড়ছে। এমন এক সময়, যখন জাতির ভবিষ্যৎ নিয়ে প্রশ্ন উঠছে, তখন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ও ভবিষ্যতের রাষ্ট্রনায়ক তারেক রহমান ২০২৫ সালের ৭ অক্টোবর শিক্ষক সমাবেশে যে ঐতিহাসিক বক্তব্য রেখেছেন, তা কেবল একটি রাজনৈতিক অঙ্গীকার নয়—বরং এটি বাংলাদেশের শিক্ষা, শিক্ষক সমাজ ও মানবিক রাষ্ট্র গঠনের এক দূরদৃষ্টিসম্পন্ন দার্শনিক নকশা।
শিক্ষাকে রাষ্ট্র নির্মাণের প্রাণশক্তি হিসেবে দেখার আহ্বান
তারেক রহমান তার বক্তব্যে শিক্ষা ব্যবস্থার মূল প্রশ্নটি সামনে এনেছেন—‘আমরা সবাই মিলে যদি শিক্ষক-শিক্ষার্থী এবং বিদ্যমান শিক্ষার গুণগত মান নিশ্চিত করতে না পারি, তবে ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে আন্তর্জাতিক মানের প্রতিযোগিতায় টিকিয়ে রাখা সম্ভব নয়।’
এই এক বাক্যেই তিনি শিক্ষা ব্যবস্থার সারবস্তু তুলে ধরেছেন। তার কাছে শিক্ষা কোনো কাগুজে রুটিন নয়, বরং দক্ষ নাগরিক, জাতির মানসিক, নৈতিক ও বুদ্ধিবৃত্তিক অস্তিত্বের মেরুদণ্ড। তিনি স্পষ্ট করেছেন, শিক্ষাব্যবস্থার উন্নয়ন কেবল অবকাঠামোগত নয়; এটি এক দক্ষ, মানবিক, বুদ্ধিবৃত্তিক ও নৈতিক পুনর্জাগরণ।
তার চিন্তায় শিক্ষা হচ্ছে জাতীয় পরিচয়ের পুনর্নির্মাণের ভিত্তি। সেই শিক্ষা হবে এমন—যা একদিকে জ্ঞান ও প্রযুক্তিতে দক্ষতা অর্জনের সুযোগ দেবে, অন্যদিকে নাগরিকদের মধ্যে দায়িত্ববোধ, সততা, নৈতিকতা ও মানবিকতা বিকশিত করবে।
পুঁথিনির্ভরতা থেকে মুক্তি: দক্ষতা ও ব্যবহারিক জ্ঞানের বিপ্লব
তারেক রহমানের শিক্ষাদর্শনের একটি মৌলিক ভিত্তি হলো—পুঁথিনির্ভর শিক্ষা থেকে ব্যবহারিক ও কর্মমুখী শিক্ষায় রূপান্তর। তিনি দৃঢ় কণ্ঠে বলেন, ‘দেশের শিক্ষাব্যবস্থাকে পুঁথিনির্ভর না রেখে শিক্ষা কারিকুলামকে স্কুল পর্যায় থেকেই ব্যবহারিক ও কারিগরি নির্ভর শিক্ষাব্যবস্থায় রূপান্তর করার বিকল্প নেই।’
এই বক্তব্য কেবল একটি শিক্ষানীতির প্রস্তাব নয়—এটি এক অর্থনৈতিক বাস্তবতা ও সামাজিক মুক্তির রূপরেখা। তিনি উপলব্ধি করেছেন যে, আজকের বিশ্বে শুধুমাত্র বইয়ের জ্ঞান যথেষ্ট নয়; দরকার বাস্তব দক্ষতা, উদ্ভাবন ও প্রযুক্তিগত জ্ঞান। তার এই চিন্তা এবং তার সার্থক বাস্তবায়ন চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের যুগে বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে আন্তর্জাতিক মানে প্রতিযোগিতার সক্ষমতা দেবে।
শিক্ষক: সমাজের নৈতিক বাতিঘর ও জাতির আত্মা
তারেক রহমান শিক্ষক সমাজকে কেবল পেশাজীবী হিসেবে নয়, বরং জাতির নৈতিক দিকনির্দেশক হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। তার কথায়—
‘পারিবারিক গণ্ডি পার হওয়ার পর পরই প্রতিটি শিক্ষার্থীর দেখা হয় একজন শিক্ষকের সাথে। প্রতিটি শিক্ষার্থীর সামনে শিক্ষকই হচ্ছেন আদর্শ রোল মডেল। প্রতিটি শিক্ষককে শিক্ষার্থীর প্রয়োজন ও প্রিয়জন হয়ে উঠতে হবে।’
এই উক্তি শিক্ষকের সামাজিক ভূমিকার সর্বোচ্চ মূল্যায়ন। তিনি স্বীকার করেন যে, শিক্ষক কেবল পাঠদানকারী নন; তিনি জাতির চিন্তা, মনন ও চরিত্র গঠনের স্থপতি।
তবে বাস্তবতার নিরিখে তিনি সততার সঙ্গে উচ্চারণ করেন-‘শিক্ষকরাই যদি সংসার ও সম্মান নিয়ে প্রতিনিয়ত টানাপড়েনে থাকেন, তবে তাদের পক্ষে শিক্ষার্থীদের সামনে রোল মডেল হয়ে ওঠা সম্ভব নয়।’
এটি কোনো রাজনৈতিক বক্তৃতা নয়, বরং রাষ্ট্রের দায়িত্ববোধের এক নৈতিক উচ্চারণ—যেখানে তিনি শিক্ষকদের মর্যাদা ও আর্থিক নিরাপত্তাকে জাতীয় পুনর্জাগরণের অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসেবে দেখেছেন।
আর্থিক নিরাপত্তা ও সামাজিক মর্যাদার রাষ্ট্রীয় নিশ্চয়তা
তারেক রহমান বিশ্বাস করেন, শিক্ষক সমাজকে আর্থিকভাবে সুরক্ষিত ও সামাজিকভাবে মর্যাদাবান না করলে শিক্ষাক্ষেত্রে স্থায়ী উন্নয়ন সম্ভব নয়। তার বক্তব্যে স্পষ্টভাবে উঠে আসে—‘শিক্ষকতা পেশা কখনোই উপায়হীন বিকল্প কিংবা একটি সাধারণ চাকরি হতে পারে না।’
তিনি এমন এক রাষ্ট্র কাঠামোর রূপরেখা দিয়েছেন, যেখানে সর্বোচ্চ মেধাবী তরুণরা শিক্ষকতাকে তাদের প্রথম পেশাগত পছন্দ হিসেবে গ্রহণ করতে উৎসাহী হয়। এজন্য তিনি ঘোষণা দেন—বিএনপি ক্ষমতায় গেলে শিক্ষকদের চাকরির স্থায়িত্ব, জাতীয়করণ এবং আর্থিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে একটি উচ্চ পর্যায়ের কমিশন গঠন করা হবে।
তিনি আরও বলেন, রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠান ও সামাজিক পরিসরে শিক্ষকদের মর্যাদা বৃদ্ধির জন্য প্রয়োজন হলে Warrant of Precedence পুনর্মূল্যায়ন করা হবে—যাতে শিক্ষকদের সম্মান জাতির সেরা আসনে প্রতিষ্ঠিত হয়। তার এই প্রস্তাব কেবল প্রশাসনিক পদক্ষেপ নয়, বরং রাষ্ট্রের আত্মসম্মান পুনরুদ্ধারের এক অমোঘ ঘোষণা।
শিক্ষা সংস্কার: নতুন প্রজন্মের জন্য নতুন দিগন্ত
তারেক রহমানের শিক্ষা দর্শনের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ স্তম্ভ হলো শিক্ষা কাঠামোর যুগোপযোগী সংস্কার। তিনি বলেন—‘প্রচলিত শিক্ষা কারিকুলামকে ব্যবহারিক ও কারিগরি শিক্ষা প্রধান করে ঢেলে সাজানোর লক্ষ্যে অগ্রাধিকারভিত্তিতে শিক্ষা সংস্কার কমিশন গঠন করা হবে।’
এই পরিকল্পনার মধ্যে নিহিত আছে এক জাতীয় পুনর্গঠনের স্বপ্ন। তিনি শিক্ষা সংস্কারকে কেবল নীতিগত প্রতিশ্রুতি হিসেবে নয়, বরং রাষ্ট্রের মানবসম্পদ বিকাশের মৌলিক কৌশল হিসেবে দেখেন।
এই শিক্ষা হবে এমন, যা নাগরিককে শুধুমাত্র চাকরির প্রার্থী নয়, বরং নেতৃত্বদানকারী, উদ্ভাবনমুখী ও মূল্যবোধসম্পন্ন মানুষে পরিণত করবে।
শিক্ষকরাই তৈরি করবে দক্ষ জনশক্তির আগামীর বাংলাদেশ
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বিশ্বাস করেন এদেশের প্রতিটি মানুষকে একজন দক্ষ নাগরিকে রূপান্তর করার মাধ্যমে বাংলাদেশকে একটি শক্তিশালী অর্থনীতির রাষ্ট্রে পরিণত করা সম্ভব। সেক্ষেত্রে শিক্ষকগণ শুধুমাত্র তাত্ত্বিক জ্ঞান নয়, বরং প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার বাইরে ব্যবহারিক ও কর্মমুখী প্রশিক্ষণের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের হাতে-কলমে বিভিন্ন কাজ শিখতে উদ্ভুদ্ধ করবেন। পাশাপাশি একাধিক ভাষা শিক্ষার মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের নিজ অবস্থানকে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে উপস্থাপন করার প্রয়াসকে সার্থক করতে শিক্ষকদের সর্বোচ্চ সহযোগিতা করতে হবে।
একটি দেশের সার্বিক উন্নয়ন ও অগ্রগতির জন্য দক্ষ জনশক্তির বিকল্প নেই। শিক্ষা ব্যবস্থার মূল চালিকাশক্তি হিসেবে শিক্ষকগণ এ দক্ষ জনশক্তি তৈরিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। একজন শিক্ষক কেবল পাঠদানই করেন না, বরং শিক্ষার্থীদের জ্ঞান, দক্ষতা, নৈতিকতা ও মূল্যবোধ গঠনে সহায়ক ভূমিকা পালন করেন, যা পরবর্তীতে তাদের কর্মজীবনে দক্ষ ও সৎ নাগরিক হিসেবে গড়ে তোলে। এই দক্ষ নাগরিক ও শক্তিশালী অর্থনীতির বাংলাদেশ গড়ার মূল কারিগর হবেন এদশের সকল শিক্ষকরা।
শিক্ষক মর্যাদা ও রাষ্ট্রীয় ভাবমূর্তি: এক অবিচ্ছেদ্য সম্পর্ক
তারেক রহমানের প্রজ্ঞাপূর্ণ পর্যবেক্ষণ—‘রাষ্ট্র ও সমাজে শিক্ষকদের মর্যাদার সঙ্গে রাষ্ট্রের মর্যাদা ও ভাবমূর্তি জড়িত।’
তিনি ব্যাখ্যা করেন, যখন শিক্ষক অবমূল্যায়িত হন, তখন জাতি আত্মিকভাবে দরিদ্র হয়ে পড়ে। আর যখন শিক্ষক সমাজে সম্মানিত হন, তখন জাতির নৈতিক পুনর্জাগরণ ঘটে।
এই উপলব্ধি প্রমাণ করে—তিনি শিক্ষা ও শিক্ষকতাকে কেবল উন্নয়নের উপকরণ নয়, বরং জাতীয় আত্মার প্রতিফলন হিসেবে বিবেচনা করেন।
তারেক রহমানের শিক্ষা দর্শনের দার্শনিক সারবত্তা
তারেক রহমানের বক্তব্যে যে দর্শন প্রতিফলিত হয়েছে তা মূলত মানবকেন্দ্রিক রাষ্ট্রচিন্তা। তার রাষ্ট্রদর্শনে শিক্ষা কেবল অর্থনৈতিক অগ্রগতির হাতিয়ার নয়; এটি ন্যায়, মানবতা ও নৈতিকতার ভিত্তিতে রাষ্ট্র পুনর্গঠনের চালিকাশক্তি।
তিনি এমন একটি বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখেন—যেখানে প্রতিটি শিক্ষক জাতির বিবেক, প্রতিটি শিক্ষার্থী সম্ভাবনার প্রতীক, এবং প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নৈতিক জাগরণের কেন্দ্র।
তারেক রহমানের শিক্ষক সমাবেশে প্রদত্ত ভাষণটি বাংলাদেশের শিক্ষা আন্দোলনের ইতিহাসে এক নতুন অধ্যায় রচনা করেছে। এটি কেবল বক্তৃতা নয়, বরং এক রাজনৈতিক দার্শনিক দলিল, যেখানে শিক্ষা, শিক্ষক ও রাষ্ট্র একে অপরের পরিপূরক হয়ে দাঁড়িয়েছে।
তার বার্তাটি ছিল গভীর, স্পষ্ট ও প্রজ্ঞাপূর্ণ—
‘যেখানে শিক্ষক সম্মানিত, সেখানেই রাষ্ট্র মর্যাদাবান।’
এই এক বাক্যে তিনি রাষ্ট্রচিন্তার মূল সূত্রটি নির্ধারণ করেছেন। তার নেতৃত্বে যদি বাংলাদেশ ভবিষ্যতে অগ্রযাত্রা শুরু করে, তবে সেই রাষ্ট্র হবে এমন এক বাংলাদেশ—
‘যেখানে জ্ঞান, দক্ষতা ও মূল্যবোধে সমৃদ্ধ মানবিক রাষ্ট্রই হবে জাতির নতুন পরিচয়।’
ভাঙাচোরা নৌকায় ভূমধ্যসাগরের বিপজ্জনক পথ পাড়ি দিয়ে অবৈধভাবে ইউরোপে প্রবেশের শীর্ষে রয়েছে বাংলাদেশিরা। চলতি বছরে অবৈধ পথে ইউরোপে অবৈধ অভিবাসনের হার ২২ শতাংশ কমলেও এ পথ পাড়ি দিয়ে প্রবেশ করেছেন ৫০ হাজার ৮৫০ জন, যা গত বছরের তুলনায় ২ শতাংশ বেশি। শুধু চলতি মাসে প্রবেশ করেছেন ৮ হাজার ৪৬ জন। এ রুটে ইউরোপে প্রবেশকারীদের অধিকাংশই বাংলাদেশি। সম্প্রতি ইউরোপীয় সীমান্ত ও উপকূলরক্ষী সংস্থা ফ্রনটেক্সের সর্বশেষ প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানানো হয়।
এতে বলা হয়, জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত অবৈধভাবে ইউরোপে প্রবেশ করেছেন ১ লাখ ৩৩ হাজার ৪০০ জন। এর মধ্যে শীর্ষ অবস্থানে রয়েছেন বাংলাদেশ, মিসর ও মরক্কোর নাগরিকরা। তবে কঠোর নজরদারি ও সীমান্ত নিয়ন্ত্রণ জোরদার করায় এ বছর ইউরোপে অনিয়মিত অনুপ্রবেশ কমেছে। পশ্চিম আফ্রিকান রুট দিয়ে অবৈধভাবে ইউরোপে প্রবেশ ৫৮ শতাংশ, পশ্চিম বলকান রুট দিয়ে ৪৭ শতাংশ এবং পূর্ব ইউরোপের স্থলসীমান্ত দিয়ে অবৈধ প্রবেশ ৩৬ শতাংশ কমেছে। তবে মধ্য ভূমধ্যসাগরীয় সাগরপথে এখনো সবচেয়ে বেশি অভিবাসী ইতালিতে প্রবেশ করে। পুরো ইউরোপে মোট অবৈধ প্রবেশকারীদের প্রায় ৪০ শতাংশই এই রুট দিয়ে প্রবেশ করেছে। এ ছাড়া পশ্চিম ভূমধ্যসাগরীয় রুটে অনিয়মিত প্রবেশ বেড়েছে ২৮ শতাংশ। সেপ্টেম্বরে এ রুটে ইউরোপে প্রবেশ বেড়েছে অর্ধেকেরও বেশি, যার মধ্যে আলজেরিয়া থেকে যাত্রা করা অভিবাসীই প্রায় তিন-চতুর্থাংশ।
এদিকে ফ্রান্স হয়ে ইংলিশ চ্যানেল পাড়ি দিয়ে যুক্তরাজ্যে অবৈধভাবে প্রবেশের চেষ্টা ১৪ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। এ বছর সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ৫৪ হাজার ৩০০ জন নাগরিক যুক্তরাজ্যে প্রবেশের চেষ্টা করেছেন। আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা (আইওএম) জানিয়েছে, অবৈধ পথে ইউরোপ প্রবেশের সংখ্যা কিছুটা কমলেও মানবিক সংকট এখনো গভীর। এ বছর সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিতে গিয়ে কমপক্ষে ১ হাজার ২৯৯ জনের মৃত্যু হয়েছে। মৃত্যুর সংখ্যা প্রমাণ করে, সহজে ইউরোপ প্রবেশের জন্য মানুষ এখনো জীবনের ঝুঁকি নিতেও দ্বিধা করছে না।
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইন সংবিধান থেকেও শক্তিশালী—এটা সংবিধানের মাধ্যমেই স্বীকৃতি দেয়া আছে বলে উল্লেখ করেছেন ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘এই আইনটি বিশেষভাবে তৈরি করা হয়েছে সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী ও বিমানবাহিনীসহ বিভিন্ন ডিসিপ্লিনারি ফোর্সের বিচারের জন্য। এখানে যে অপরাধগুলো বর্ণনা করা হয়েছে—সেই অপরাধগুলোর বিচার বাংলাদেশের সাধারণ কোনো আইনে নেই। এমনকি আর্মি, নেভি, এয়ারফোর্সের নিজস্ব আইনেও নেই। সুতরাং এসব অপরাধের বিচার কেবল এই আইনের মাধ্যমেই করতে হবে।’
গতকাল রোববার সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন চিফ প্রসিকিউটর। তিনি আরও বলেন, ‘আইন সবসময় আইনের গতিতেই চলবে। যখন আদালত থেকে কোনো পরোয়ানা বা গ্রেপ্তারি পরোয়ানা ইস্যু হবে, সংবিধানেও আছে, ট্রাইব্যুনাল আইনেও আছে, ফৌজদারি কার্যবিধিতেও আছে। একজন আসামিকে গ্রেপ্তার করা হলে, যেখানেই গ্রেপ্তার করা হোক, তাকে আদালতে আনার সময়ে যতটুকু সময় ব্যয় হবে, সে সময়টুকু ছাড়া ২৪ ঘণ্টার মধ্যে আদালতের সামনে উপস্থিত করতে হবে, এটাই হচ্ছে আইনের বিধি। যদি আদালত কাউকে কেবলমাত্র অথরিটি দেয়, তাহলে আটক রাখতে পারে। সুতরাং নিয়ম হচ্ছে কাউকে আটক করার পূর্বে ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই তাকে আদালতে হাজির করতে হবে। এরপর কেবল আদালত যদি তাকে আটক রাখতে বলে, তাহলে আটক রাখা হবে,আদালত যদি জামিন দিয়ে ছেড়ে দিতে বলেন, ছেড়ে দিতে পারে। ডিসিশন নেয়ার অথরিটি তখন আদালতের ওপর চলে যায়—এটা হচ্ছে আইনি ব্যাখ্যা। এখন পর্যন্ত আমাদের কাছে কেউ এ ব্যাপারে আইনি ব্যাখ্যা চাননি। যদি কেউ চান, তাহলে নিশ্চয়ই আইনি ব্যাখ্যা তাদের জানানো হবে।
এ সময় সাংবাদিকরা প্রশ্ন করেন তাহলে সেনাবাহিনীর যে ১৫ জন সেনা হেফাজতে, তাদের স্ট্যাটাস কী হবে? জবাবে তাজুল বলেন, ‘আমাদের কাছে যেহেতু আনুষ্ঠানিকভাবে ডকুমেন্টারি পদ্ধতিতে কেউ বলেনি যে, তাদের আটক রাখা হয়েছে। মিডিয়াতে যেটি এসেছে, সেটিকে আমরা আমলে নিচ্ছি না। আমাদের যদি বলা হয়, আটক রাখা হয়েছে, তাহলে অবশ্যই ২৪ ঘণ্টার মধ্যে আদালতের কাছে আনতে হবে।’
ট্রাইব্যুনালের রেজিস্ট্রার অফিস থেকে গ্রেপ্তারি পরোয়ানাগুলো যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো হয়েছে বলেও তিনি জানান।
চব্বিশের গণঅভ্যুত্থান অনিবার্য হয়ে পড়েছিল
এদিকে গত ১৫ বছর ধরে আওয়ামী লীগ সরকার ক্রমান্বয়ে দানবে পরিণত হওয়ার কারণেই চব্বিশের গণঅভ্যুত্থান অনিবার্য হয়ে পড়েছিল বলে উল্লেখ করেছেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম। ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন জনের বিরুদ্ধে চব্বিশের জুলাই-আগস্টে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় যুক্তিতর্ক উপস্থাপন পর্বে গতকাল বিগত সরকারের প্রেক্ষাপট তুলে ধরে তিনি একথা বলেন।
বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এ চিফ প্রসিকিউটর বলেন, গত ১৫ বছর ধরে আওয়ামী লীগ সরকার ক্রমান্বয়ে দানবে পরিণত হয়েছিল। প্রথমে পিলখানা হত্যাকাণ্ডের মাধ্যমে তারা আমাদের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার মেরুদণ্ডটাকে ভেঙে দেয়। পরবর্তীতে গুম-খুনের কালচার চালু করে। এরপর তারা আমাদের নির্বাচন ব্যবস্থা ধ্বংস করে দেয়। তত্ত্বাবধান ব্যবস্থা বাতিল করে দেওয়া হয়। দেশে দুর্নীতি সর্বগ্রাসী রূপ পায়। এ সবের মাধ্যমেই তারা (আওয়ামী লীগ সরকার) ক্রমান্বয়ে একটা দানবীয় সরকারে পরিণত হয়েছিল।
চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম আরো বলেন, ‘জনগণকে নির্যাতন করা, হত্যা করা ও একটা ভয়ের রাজত্ব কায়েম করা ছিল তাদের (আওয়ামী লীগ সরকারের) টার্গেট। এই দানবীয় শাসকই একটা পর্যায়ে ২০২৪ সালে আমাদের তরুণ-তরতাজা প্রজন্মের ওপর সর্বাত্মক আক্রমণ চালায়।’
এর আগে গত বুধবার এই মামলার শেষ সাক্ষী (৫৪তম) তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. আলমগীরের জেরা শেষ হলে, যুক্তিতর্ক উপস্থাপনের জন্য গতকাল রোববার দিন ধার্য করা হয়।
এই মামলায় সাক্ষ্য দিয়েছেন গণঅভ্যুত্থানের অন্যতম প্রতীক শহীদ আবু সাঈদের পিতাসহ স্বজনহারা পরিবারের অনেকে। এছাড়া স্টার উইটনেস হিসেবে সাক্ষ্য দিয়েছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির আহ্বায়ক ও জুলাই আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়া নাহিদ ইসলাম এবং দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান। সর্বমোট সাক্ষ্য দিয়েছেন ৫৪ জন সাক্ষী।
এই মামলায় প্রসিকিউসন পক্ষে চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম ও গাজী এসএইচ তামিম শুনানি করছেন।
পলাতক শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে শুনানি করেন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমির হোসেন আর এই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে রাজসাক্ষী হওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পক্ষে আছেন আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ।
মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলায় শেখ হাসিনা, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ও সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে গত ১০ জুলাই অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১। একপর্যায়ে এই মামলায় দোষ স্বীকার করে ঘটনার সত্যতা উদঘাটনে (অ্যাপ্রোভার) রাজসাক্ষী হতে সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের আবেদন মঞ্জুর করেন ট্র্যাইব্যুনাল। পরবর্তীতে এই মামলার রাজসাক্ষী হয়ে সাক্ষ্য দেন পুলিশের সাবেক আইজিপি চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুন।
এই মামলাটি ছাড়াও শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে ট্রাইব্যুনালে আরও দুটি মামলা রয়েছে।
এর মধ্যে একটি মামলায় আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে গুম-খুনের ঘটনায় তাকে আসামি করা হয়েছে।
অন্য মামলাটি হয়েছে রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হত্যাকাণ্ডের ঘটনায়।
গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে আওয়ামী লীগ সরকার, এর দলীয় ক্যাডার ও সরকারের অনুগত প্রশাসনসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে বলে একের পর এক অভিযোগ জমা পড়ে। দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে এসব অপরাধের বিচার কাজ চলছে।
মন্তব্য