আলোচিত চলচ্চিত্র অভিনেত্রী পরীমনির পৃষ্ঠপোষক হিসেবে এক নারীকে নজরদারিতে রাখার কথা জানিয়েছে পুলিশ। তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে বলে জানিয়েছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (উত্তর) যুগ্ম কমিশনার হারুন অর রশীদ।
তিনি কে, এই বিষয়টি এখনই প্রকাশ না করার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, সেই নারী পরীমনির খুবই ঘনিষ্ঠ।
পুলিশের একটি ঘনিষ্ঠ সূত্র বলছে, ওই নারী নিজেও সিনেমা পরিচালনার সঙ্গে জড়িত। তার সঙ্গে পরীমনির ঘনিষ্ঠতার তথ্যও এসেছে কিছুদিন আগেও। সেই নারীকে এই নায়িকা খুব আপনজনের একটি সম্বোধন করতেন।
শুক্রবার দুপুরে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা কার্যালয়ের সামনে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন ডিবি কর্মকর্তা। চার দিনের রিমান্ড আদেশ পাওয়ার পর বৃহস্পতিবার রাতে এই কার্যালয়েই পরীমনি নিয়ে আসা হয় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য।
আগের রাতে বনানীর নিজ বাসা থেকে আটক পরীর বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি অবৈধভাবে মদ কিনে বাসায় মজুদ করতেন আর সেখানে একটি মিনিবারের মতো গড়ে তুলেছিলেন। নানা সময় সেখানে পার্টি হতো।
আর সেখানে নানা অনৈতিক কর্মকাণ্ড হতো।
পরীমনির বাসা থেকে জব্দ করা মদের বোতল। ছবি: নিউজবাংলা
মদের পাশাপাশি এই নায়িকার বাসা থেকে এলএসডি ও আইস নামে মাদক উদ্ধারের কথাও জানানো হয়েছে।
প্রথমদিনের জিজ্ঞাসাবাদে কী পাওয়া গেছে- এমন প্রশ্নে হারুন অর রশিদ বলেন, ‘গতকাল তারা রিমান্ডে এসেছে। প্রাথমিকভাবে আমরা তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করেছি। তাদের বাসা থেকে উদ্ধার মাদক বিষয়ে আমরা কথা বলেছি।
‘সে যে এই বিপথে এসেছে, অন্ধকার পথে পা বাড়িয়েছে, এটার পিছনে কারা কারা তাকে পেট্রোনাইজড করেছে,পৃষ্ঠপোষকতা করেছে। সে নামগুলো বলেছে।’
কাদের নাম বলেছেন পরীমনি?
গোয়েন্দা কর্মকর্তা কারও নাম না জানিয়ে বলেন, ‘এছাড়া একজন মহিলার নামও বলেছে।’
সেই নারী কে- এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ওই মহিলার নাম আমরা এখনই বলছি না। তাকে নজরদারিতে রাখছি। শিগগিরই তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করব।’
গত জুনে পরীমনি বিরুলিয়া এলাকায় ঢাকা বোট ক্লাবে তাকে ধর্ষণ চেষ্টা ও হত্যার হুমকি দেয়ার অভিযোগ এনে তুমুল আলোচনায় আসেন।
পরীমনি অভিযোগটি সামনে আনার পর গণমাধ্য কর্মীরা যখন তার বাসায় যায়, তখন সেখানে ছিলেন চলচ্চিত্র পরিচালক চয়নিকা চৌধুরী। পরী তাকে ‘মম মম’ বলছিলেন।
পরীর বাসায় অভিযান চালিয়ে র্যাব তাকে গ্রেপ্তারের পর চয়নিকার নিরবতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। পরে নিউজবাংলাকে তিনি বলেছেন, পরীমনির সঙ্গে তার যোগাযোগ পেশাগত কারণে।
পরীমনির কাছে কেন এবার যাননি-এই প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘অনেকে অনেক কথাই বলবে। আমি গেলেও আলোচনা-সমালোচনা করবে; না গেলেও আলোচনা-সমালোচনা করবে। এতে আমার কিছু যায় আসে না।
‘পরীমনির বাসায় অভিযান চলার কথা শুনে সেখানে আমি কেন যাব? আমি আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। আইন অনুযায়ী সেখানে কাজ হবে, এটাই তো স্বাভাবিক। আমার সেখানে কী করার আছে? আর সেখানে গেলেই কি আমি পরীমনির বাসায় যেতে পারতাম?’
আরও পড়ুন:অন্তর্বর্তী সরকারের এক বছরের কঠোর পরিশ্রম ও সমন্বিত প্রচেষ্টায় দেশের অর্থনীতি স্থিতিশীলতার পথে ফিরে এসেছে বলে মন্তব্য করেছেন সমাজকল্যাণ এবং মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা শারমীন এস মুরশিদ।
আজ সোমবার (২৫ আগস্ট) বগুড়া জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে ‘নাগরিক অধিকার ও জলবায়ু ন্যায্যতা’ প্রকল্পের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
শারমীন এস মুরশিদ বলেন, ‘অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার সময় দেশের অর্থনীতি ছিল নাজুক অবস্থায়। আমরা অভ্যন্তরীণ আস্থা ফিরিয়ে আনার পাশাপাশি আন্তর্জাতিক পরিসরেও প্রমাণ করেছি যে বাংলাদেশ এখনো কোনো ঋণখেলাপি রাষ্ট্র নয়।’
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বগুড়ার জেলার জেলা প্রশাসক হোসনা আফরোজা। বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন লাইট হাউজ বগুড়ার প্রধান নির্বাহী হারুন অর রশিদ, বগুড়ার পুলিশ সুপার জিদান আল মুসা, সিভিল সার্জন ডা. এ কে এম মোফাখখারুল ইসলাম, বগুড়া কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক শামসুদ্দীন ফিরোজসহ বিভিন্ন সরকারি দপ্তরের কর্মকর্তা, এনজিও প্রতিনিধি ও সাংবাদিকরা।
উল্লেখ্য, ‘নাগরিক অধিকার ও জলবায়ু ন্যায্যতা’ প্রকল্পের মাধ্যমে বগুড়া জেলায় নাগরিকদের অধিকার সুরক্ষা ও জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলায় বিভিন্ন কর্মসূচি বাস্তবায়ন করা হবে।
ভূমি মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব এএসএম সালেহ আহমেদ বলেছেন; অনলাইন ভূমি ব্যবস্থাপনার ফলে ভুয়া ভূমি রেজিস্ট্রেশন ও জালিয়াতির সুযোগ কমে গেছে। অনলাইন রেজিস্ট্রেশন ও ই-মিউটেশন সিস্টেমের কারণে মালিকানার তথ্য স্বয়ংক্রিয়ভাবে হালনাগাদ হয়, যা ভুয়া দলিল তৈরির সুযোগ অনেকাংশে হ্রাস করে এবং ভূমি সংক্রান্ত অপরাধ প্রতিরোধে সাহায্য করে। মাননীয় প্রধান উপদেষ্টার নির্দেশনা মোতাবেক ভূমিসেবা ডিজিটাইজেশন টিম গঠন করা হয়েছে। এই টিম বিভাগ ভিত্তিক কার্য পর্যালোচনা করে প্রতি সপ্তাহে সিনিয়র সিচব মহোদয়কে অবহিত করছেন।
আজ সোমবার (২৫ আগস্ট) মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে ‘৭৭তম টিম সভা’য় তিনি এসব কথা বলেন। সভাপতিত্ব করেন ভূমি মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব।
সিনিয়র সচিব বলেন; ভূমি সেবা প্রদানে আধুনিক বিজ্ঞান ও তথ্য-প্রযুক্তির ব্যবহারের ফলে সেবাগ্রহীতাদের মধ্যে সন্তুষ্টির মাত্রা ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি পাচ্ছে। তেমনি মহানগর থেকে মাঠ পর্যায় সর্বত্র কার্যক্রম পরিদর্শন/মনিটরিং জোরদার করা হয়েছে। পরিদর্শন প্রতিবেদন নিয়ে সভা করে কারো বিরুদ্ধে দায়িত্ব পালনে অসততার বা সেবা গ্রহীতাকে হয়রানির প্রমান পেলে বিধি মতে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে। এছাড়াও যে কোনো মাধ্যমে দূর্নীতি বা হয়রানির প্রমান পেলেও ব্যবস্থাগ্রহণ করা হচ্ছে। ভূমিসেবায় দূর্নীতির ব্যাপারে কোন আপোষ নয়। জনবান্ধব ভূমিসেবা প্রদানই ভূমি মন্ত্রণালয়ের প্রধান লক্ষ্য।
সভায় জনানো হয়; সরকারি স্বার্থসংশ্লিষ্ট গুরুত্বপুর্ণ মামলা সুষ্ঠভাবে পরিচালনার স্বার্থে মন্ত্রণালয়ের নিজস্ব প্যানেল আইনজীবী নিয়োগের বিষয়ে অর্থ মন্ত্রণালয় অনুমোদন পাওয়া গেছে। অবৈধ বালু ও মাটি উত্তোলন বন্ধে নিয়মিত মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হচ্ছে,জরিমানা করা হচ্ছে। সার্বিক পরিস্থিতি ভালো । এছাড়া ভূমি ব্যবস্থাপনা ম্যানুয়েল,২০২৫ মতামতের জন্য বিভাগীয় কমিশনার ও জেলা প্রশাসকদের কাছে পাঠানো হয়েছে। মতামত পাওয়াগেলে ভেটিংএর জন্য আইন মন্ত্রণালয় পাঠানো হবে । এছাড়াও ভূমি ভবনে স্থাপিত ভূমি যাদুঘরে ইতিহাস ঐতিহ্য সংরক্ষণ,আধুনিকায়ন ও সমৃদ্ধকরণের লক্ষ্যে জেলা প্রশাসকদের কাছে ভূমি ব্যবস্থাপনার বিবর্তন সংক্রান্ত তথ্য ও ভূমি জরিপকার্যে ব্যবহৃত ভূমি ঐতিহ্যের ধারক এমন যন্ত্রপাতি ও সরঞ্জাম যদি থাকে ভূমি মন্ত্রণালয়ে প্রেরণের জন্য পত্র দেয় হয়েছে।
সভায় উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত সচিব (প্রশাসন অনুবিভাগ),মো: শরিফুল ইসলাম; অতিরিক্ত সচিব (জরিপ ও সায়রাত অনুবিভাগ) সায়মা ইউনুস,এনডিসি ; অতিরিক্ত সচিব (উন্নয়ন অনুবিভাগ),মো: এমদাদুল হক চৌধুরী; অতিরিক্ত সচিব (মাঠ প্রশাসন অনুবিভাগ)মোহাম্মদ মাহফুজুর রহমানসহ মন্ত্রণালয়ের ঊর্ব্ধতন কর্মকর্তাবৃন্দ।
ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) সাথে শ্রম খাতের পারস্পরিক সহযোগিতা জোরদার, শ্রমিকদের অধিকার সুরক্ষা সম্পর্কিত বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আজ বাংলাদেশ সচিবালয়ে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিব এ এইচ এম সফিকুজ্জামান এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের বাংলাদেশে নিযুক্ত রাষ্ট্রদূত এইস ই মাইকেল মিলারের মধ্যে এক গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
বৈঠকে শ্রম আইন যুগোপযোগীকরণ, ট্রেড ইউনিয়ন রেজিস্ট্রেশন প্রক্রিয়া ডিজিটালাইজেশন, শ্রমিকদের বিরুদ্ধে থাকা মামলা দ্রুত নিষ্পত্তি, শিশুশ্রম ও জবরদস্তিমূলক শ্রম নিরসন, সামাজিক সংলাপ জোরদার, ফ্যাক্টরি পরিদর্শন কার্যক্রম বৃদ্ধি এবং সামগ্রিকভাবে শ্রম খাতের সংস্কার নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়।
শ্রম সচিব এ এইচ এম সফিকুজ্জামান বৈঠকে বলেন, গত বছরের সেপ্টেম্বরে ত্রিপক্ষীয় পরামর্শ পরিষদ (টিসিসি) কর্তৃক স্বাক্ষরিত ১৮ দফা দাবি বাস্তবায়ন এবং শ্রম সংস্কার কমিশনের সুপারিশ পর্যালোচনা করা হচ্ছে । মাননীয় প্রধান উপদেষ্টার নির্দেশনা অনুযায়ী শ্রম উপদেষ্টার নেতৃত্বে শ্রম আইন আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী সংশোধন করা হবে। আগামী ২৬ আগস্ট ত্রিপক্ষীয় পরামর্শক পরিষদ (TCC) এর সভায় সংশোধনী প্রস্তাব উপস্থাপন করে সকল অংশীজনের মতামত গ্রহণ করা হবে।
তিনি আরও জানান, শ্রমিক বা শ্রমিক নেতৃবৃন্দের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক বা হয়রানিমুলক ৪৫ টি মামলার মধ্যে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়, আইন মন্ত্রণালয় এবং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করে ইতোমধ্যে ৪৪ টি মামলা নিষ্পত্তি হয়েছে। পেশাগত স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও) এর কনভেনশন সি ১৫৫ এবং সি ১৮৭ অনুস্বাক্ষর এবং কর্মক্ষেত্রে নারীর প্রতি সহিংসতা ও হয়রানি বন্ধে কনভেনশন সি ১৯০ অনুস্বাক্ষরের প্রক্রিয়া দ্রুততম সময়ের মধ্যে সম্পন্ন করা হবে। এছাড়া, ট্রেড ইউনিয়ন রেজিস্ট্রেশন ব্যবস্থাকে আরও স্বচ্ছ ও দ্রুততর করতে শ্রম অধিদপ্তর একে ডিজিটালাইজড করার কাজ করছে।
ইইউ রাষ্ট্রদূত এইস ই মাইকেল মিলার ট্রেড ইউনিয়ন গঠন ও তাদের কার্যক্রম পরিচালনায় নিয়োগকর্তা বা কোনো পক্ষের হস্তক্ষেপ না থাকতে দেওয়া, বাংলাদেশ শ্রম আইন (বিএলএ) এবং রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চল (ইপিজেড) শ্রম আইনের মধ্যে সামঞ্জস্য আনা, শ্রমিকদের বিরুদ্ধে চলমান সকল পুরনো ও বিচারাধীন মামলা দ্রুত নিষ্পত্তি, নিয়মিত সামাজিক সংলাপের আয়োজন, শ্রমঘন এলাকায় ফ্যাক্টরি পরিদর্শন বাড়ানো এবং অনানুষ্ঠানিক খাতের শ্রমিকদেরও শ্রম আইনের আওতায় আনার গুরুত্বের উপর আলোকপাত করেন।
এছাড়াও বাংলাদেশের চলমান শ্রম সংস্কার কার্যক্রমের মধ্যে আন্তর্জাতিক শ্রম মানদণ্ডের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ কম্প্রিহেনসীভ শ্রম আইনের সংশোধনীর উপর তিনি গুরুতারোপ করেন। কেননা ইউরোপীয় ইউনিয়নের বাজারে বাংলাদেশের পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে প্রাপ্ত 'এভরিথিং বাট আর্মস' (ইবিএ) সুবিধার ধারাবাহিকতায় স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণের পরে জিএসপি প্লাস বাজার সুবিধাসহ সেইফ গার্ড ক্লজের ক্ষেত্রে ইতিবাচক পদক্ষেপ বিবেচনার লক্ষ্যে শ্রম আইনের প্রত্যাশিত সংশোধনী ইউরোপীয় ইউনিয়নের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে জানান রাষ্ট্রদূত এইস ই মাইকেল মিলার।
বৈঠকে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাবৃন্দ এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতার বলেছেন, “প্রাকৃতিকভাবে মাছ পাওয়ার স্থান ধ্বংস হলে মৎস্যজীবীরা মাছ পাবে না। বর্তমানে যেখানে যে পরিমাণ মাছ পাওয়ার কথা, তা পাওয়া যাচ্ছে না। এতে প্রকৃত মৎস্যজীবীরা বঞ্চিত হচ্ছে। তাই সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে অমৎস্যজীবীদের কাছে আর জলাশয় ইজারা দেওয়া যাবে না। তিনি বলেন, ইতোমধ্যে বাওড় ইজারা সমস্যার সমাধানে ভূমি মন্ত্রণালয়ের অনুমতি নেওয়া হয়েছে।
আজ বিকেলে রাজধানীর বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমিতে জাতীয় মৎস্য সপ্তাহ ২০২৫-এর মূল্যায়ন, সমাপনী ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় উপদেষ্টা এসব কথা বলেন। অনুষ্ঠানের আয়োজন করে মৎস্য অধিদপ্তর।
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা বলেন, মৎস্য সপ্তাহ শেষ হলেও, আজ থেকেই শুরু হলো সারা বছরের মৎস্য সপ্তাহ। নতুন উদ্যোমে কাজ শুরু করতে হবে। এ সপ্তাহে যেভাবে মানুষের মধ্যে উৎসাহ-উদ্দীপনা তৈরি হয়েছে, তা সবার মাঝে ছড়িয়ে দিতে হবে। তিনি এ বছরের মৎস্য পদক প্রসঙ্গে বলেন, পদকপ্রাপ্তি বিষয়ে কোনো প্রকার তদবির হয়নি। একাধিক ধাপ অতিক্রম করেই যোগ্যদের পদক প্রদান করা হয়েছে।
বিএফআরআইয়ের তরুণ বিজ্ঞানীদের প্রশংসা করে উপদেষ্টা বলেন, অভয়াশ্রম নিয়ে আপনাদের নিবিড় গবেষণা আমাদের অনুপ্রাণিত করছে। গবেষণাকে কেবল কাগজে সীমাবদ্ধ না রেখে মাঠ পর্যায়ে প্রয়োগ করতে হবে।
তিনি আরও বলেন, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় শুধু খাদ্য উৎপাদন নয়, এটি একটি বৌদ্ধিক কেন্দ্র (ইন্টেলেকচুয়াল স্পেস)। দেশের মানুষের জন্য সাশ্রয়ী মূল্যে ইলিশ সরবরাহ করতে হবে, আর আমরা তা করতে সক্ষম হবো।
অনুষ্ঠানে মৎস্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ড. মো. আবদুর রউফ বলেন, ইলিশ উৎপাদন প্রকৃতি নির্ভর। অনেক জায়গায় বাধার কারণে ইলিশ সাগর থেকে নদীতে আসতে পারে না। ফলে ইলিশ আহরণ কম হয়, আর দাম বেড়ে যায়। তিনি আরও বলেন, চিংড়ি চাষ বৃদ্ধির জন্য নির্দিষ্ট জোন তৈরির উদ্যোগ নেওয়া হবে।
মৎস্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ড. মো. আবদুর রউফের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মন্ত্রণালয়ের সচিব আবু তাহের মুহাম্মদ জাবের। সম্মানিত অতিথি ছিলেন প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ড. মো. আবু সুফিয়ান, বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক ড. অনুরাধা ভদ্রা এবং মৎস্য উন্নয়ন করপোরেশনের পরিচালক মোহাম্মদ বদরুল হক। অনুষ্ঠানে মৎস্য অধিদপ্তরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, মৎস্যজীবী ও সুধীজন অংশ নেন।
সিরাজগঞ্জে দুদকের ১৮১তম গণশুনানিতে ১৩৪টি অভিযোগের মধ্যে উত্থাপিত ৯৫ টি অভিযোগের মধ্যে তাৎক্ষণিকভাবে ৩৪টি অভিযোগ নিষ্পত্তি করা হয়,৩২টি অভিযোগ দুদুক কর্তৃক অনুসন্ধান হবে বিভাগীয় তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে ২৬ টি অভিযোগের এবং আদালতে মামলা থাকায় ৩ টি অভিযোগের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি।
সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধি এবং দুর্নীতি প্রতিরোধের লক্ষ্যে রবিবার সকাল ৯টায় সিরাজগঞ্জ জেলার জেলা শিল্পকলা একাডেমী মিলনায়তনে দুদকের ১৮১ তম গণশুনানি উদ্বোধন করে প্রধান অতিথি দুদকের কমিশনার ( তদন্ত) মিঞা মুহাম্মদ আলি আকবার আজিজী বলেন, সুনীতি নয় তাই দুর্নীতি। সেবাদাতা ও সেবাগ্রহীতার মধ্যে দ্বন্দ্ব ও অনৈতিক কর্মকান্ডের কারণে দুর্নীতির প্রসার ঘটে। ছোট ছোট অসংগতি দিনে দিনে কিভাবে ক্ষোভের বিদ্রোহ ছড়িয়ে পড়ে তা বিগত গণহত্যাকারী পতিত সরকার হাড়ে হাড়ে টের পেয়েছে,এর চেয়ে আর ভাল উদাহরণ হতে পারে না।
বর্তমান দুর্নীতি দমন কমিশন ( মোমেন কমিশন) জিরো টলারেন্স নীতিতে চলছে,চলবে। আর দুর্নীতি নয়,দুর্নীতি নির্মূল করে সুখী সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ে তোলাই গণশুনানির উদ্দেশ্য।
দুদকের পাবনা সমন্বিত জেলা কার্যালয় আয়োজিত ও সিরাজগঞ্জ জেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় দুদকের ১৮১তম গণশুনানিতে সভাপতিত্ব করেন সিরাজগঞ্জ জেলা প্রশাসক মুহাম্মদ নজরুল ইসলাম।
গণশুনানিতে স্বাগত বক্তব্য রাখেন দুর্নীতি দমন কমিশনের রাজশাহী বিভাগীয় কার্যালয়ের পরিচালক মোঃ ফজলুল হক। অতিথিবৃন্দের মধ্যে বক্তব্য রাখেন দুদকের মহাপরিচালক ( প্রতিরোধ) মোঃ আখতার হোসেন, মহাপরিচালক ( তদন্ত ১) মুহাম্মদ রেজাউল করিম ও পুলিশ সুপার মোঃ ফারুক হোসেন।
কানায় কানায় পূর্ণ অডিটোরিয়ামে জেলার বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষ,ছাত্র জনতাসহ সহকারী বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা কর্মচারী গণমাধ্যমকর্মীদের উপস্থিতিতে দাখিলকৃত ১৩৪ অভিযোগের মধ্যে ৯৫টি উত্থাপিত হয়। সকাল ৯টা থেকে বিরতিহীনভাবে বিকেলে ৫টা পর্যন্ত গণ শুনানির মডারেট করেন জেলা প্রশাসক মুহাম্মদ নজরুল ইসলাম।
দুদকের উপপরিচালক ( জনসংযোগ) মোঃ আকতারুল ইসলাম জানান গণশুনানিতে বিভিন্ন সরকারি অফিসে সেবা প্রাপ্তিতে হয়রানীর শিকার বা সেবা বঞ্চিত সংক্ষুব্ধ জনসাধারণ তাদের অভিযোগসমূহ সিরাজগঞ্জ জেলার সকল সরকারি দপ্তর প্রধানদের উপস্থিতিতে কমিশনের সামনে তুলে ধরেন। একই সাথে সেবা বঞ্চিত জনসাধরণের উত্থাপিত অভিযোগের বিষয়ে দুদক কর্তৃক তাৎক্ষণিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হবে। সরকারি পরিষেবা প্রাপ্তি নিশ্চিতকরণ এবং সরকারি কর্মকর্তাদের মাঝে সততা, নিষ্ঠা, জবাবদিহিতা ও মূল্যাবোধ বৃদ্ধি করার মাধ্যমে দেশ থেকে দুর্নীতি নির্মূল করাই ছিল এই গণশুনানির মূল অভিপ্রায়।
পাকিস্তানের উপ-প্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসহাক দার আজ রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন।
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বাসস’কে এ তথ্য জানান।
ইসহাক দার দুই দিনের বাংলাদেশ সফরে গতকাল ঢাকায় পৌঁছান।
আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল এনএইচআরসি আইন, ২০০৯ সংশোধনের বিষয়ে সরকারের প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেছেন।
তিনি বলেন, ‘কমিশনার নিয়োগ অবশ্যই স্বচ্ছ, উন্মুক্ত ও প্রতিযোগিতামূলক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে হতে হবে। কেবলমাত্র সর্বোচ্চ সততার অধিকারী ব্যক্তিরাই নাগরিকদের অধিকার রক্ষায় দায়িত্ব পালন করবেন।’
শনিবার সিলেটে আয়োজিত এক সভায় ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে তিনি একথা বলেন।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে ড. আসিফ নজরুল বলেন, আইন সংশোধন ও এর যথাযথ বাস্তবায়নের মাধ্যমে বাংলাদেশ একটি স্বাধীন ও আস্থাভাজন জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের উদাহরণ স্থাপন করতে পারবে।
জাতীয় মানবাধিকার কমিশনকে (এনএইচআরসি) একটি স্বাধীন, গ্রহণযোগ্য ও কার্যকর প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তুলতে এবং জনগণের আস্থা ফিরিয়ে আনতে দেশব্যাপী পরামর্শ প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।
সুইস দূতাবাসের সহযোগিতায় এই উদ্যোগে নেতৃত্ব দিচ্ছে আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের আইন ও সংসদ বিষয়ক বিভাগ (এলপিএডি) ও জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচি (ইউএনডিপি)।
সংস্কার প্রক্রিয়াটি এনএইচআরসি আইন, ২০০৯ সংশোধনের মাধ্যমে বিদ্যমান আইনগত ও প্রাতিষ্ঠানিক ঘাটতি দূর করা এবং কমিশনকে আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত মানদণ্ড, বিশেষত জাতিসংঘের প্যারিস প্রিন্সিপলস এর সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ করার ওপর গুরুত্ব দিচ্ছে বলে ইউএনডিপি’র এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়।
মানবাধিকার সুরক্ষা ও উন্নয়নের জন্য প্রতিষ্ঠিত এনএইচআরসি তাদের পূর্ণাঙ্গ ম্যান্ডেট কার্যকরভাবে বাস্তবায়নে বিভিন্ন চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে। সীমিত ক্ষমতা ও স্বাধীনতা নিয়ে প্রশ্নের কারণে এর কার্যকারিতা ব্যাহত হয়েছে। তাই সংস্কার প্রক্রিয়ার মাধ্যমে কমিশনের ভূমিকা ও সক্ষমতা জোরদার করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
এই উদ্যোগের অংশ হিসেবে দেশের আটটি বিভাগে বহুপক্ষীয় পরামর্শ সভা অনুষ্ঠিত হবে, শেষে ঢাকায় জাতীয় পরামর্শ সভা হবে। এসব পরামর্শ সভায় সরকারি কর্মকর্তা, সুশীল সমাজ, মানবাধিকার কর্মী, শিক্ষাবিদ, গণমাধ্যম ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের শিকার ব্যক্তিরা একত্রিত হয়ে সংস্কারের জন্য বাস্তবসম্মত প্রস্তাব দেবেন।
প্রথম পরামর্শ সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে ২৩ আগস্ট ২০২৫ সিলেটে। সেখানে অংশগ্রহণকারীরা আইনগত ও প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কার, জবাবদিহিতা জোরদার এবং রাষ্ট্রীয় ও অরাষ্ট্রীয় উভয় ধরনের নির্যাতন থেকে নাগরিক সুরক্ষার বিষয়ে মতামত ও সুপারিশ দেন।
সভায় সভাপতিত্ব করেন এলপিএডি সচিব ড. হাফিজ আহমেদ চৌধুরী। তিনি বলেন, ‘ভালো আইন প্রয়োজনীয়, কিন্তু এর কার্যকর প্রয়োগ সমান গুরুত্বপূর্ণ। এনএইচআরসি আইনকে আরও শক্তিশালী ও কার্যকর করার জন্য আমরা আজ সিলেট থেকে শুরু করে দেশব্যাপী পরামর্শ সভার মাধ্যমে সংশোধন প্রক্রিয়া শুরু করেছি।’
জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচি (ইউএনডিপি) বাংলাদেশ-এর ভারপ্রাপ্ত ডেপুটি রেসিডেন্ট রিপ্রেজেন্টেটিভ আনোয়ারুল হক বলেন, ‘এনএইচআরসি শক্তিশালী করা দেশের গণতান্ত্রিক অভিযাত্রা এবং মানবাধিকারের প্রতি প্রতিশ্রুতি রক্ষার জন্য অপরিহার্য। এই পরামর্শ সভার মাধ্যমে আমরা কমিশনের স্বাধীনতা, গ্রহণযোগ্যতা ও কার্যকারিতা নিশ্চিত করতে চাই, যা বৈশ্বিক মানদণ্ডের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ।’
এলপিএডি’র যুগ্ম-সচিব ড. এস এম শফায়েত হোসেন সভায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন।
তিনি এনএইচআরসি আইন, ২০০৯-এর ম্যান্ডেট, সীমাবদ্ধতা ও চ্যালেঞ্জ তুলে ধরেন।
সিলেটের জেলা প্রশাসক সরওয়ার আলমও সভায় বক্তব্য রাখেন।
সভায় আলোচনার মূল বিষয় ছিল কমিশনারদের নিয়োগ প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা, তদন্ত ক্ষমতা জোরদার, কার্যক্রমের স্বাধীনতা বৃদ্ধি এবং সুশীল সমাজ ও গণমাধ্যমের সঙ্গে উন্নত সহযোগিতা।
বিভাগীয় পরামর্শ সভা থেকে প্রাপ্ত সুপারিশগুলো ঢাকার জাতীয় পরামর্শ সভায় আইন সংস্কারের রোডম্যাপে অন্তর্ভুক্ত করা হবে।
এই সংস্কার প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সরকার ও এর সহযোগী সংস্থাগুলোর আইনের শাসনকে আরও শক্তিশালী করা, নাগরিক অধিকার সুরক্ষিত করা এবং মানবাধিকারকে অংশগ্রহণমূলক শাসনব্যবস্থা ও টেকসই উন্নয়নের মূল ভিত্তি হিসেবে প্রতিষ্ঠা করার লক্ষ্য নিয়েছে।
মন্তব্য