করোনাভাইরাসকে ‘আল্লাহর সৈনিক’ আখ্যা ও করোনা থেকে বাঁচতে একটি দোয়া করার পরামর্শ দেয়ার সোয়া এক বছরের মাথায় এই ভাইরাস প্রতিরোধী টিকা নিলেন আলোচিত ধর্মীয় বক্তা মিজানুর রহমান আজহারী।
বর্তমানে মালয়েশিয়ার অবস্থানকারী ব্যাপক আলোচিত এই বক্তা দ্বিতীয় টিকা নেয়ার বিষয়টি তার নিজের ভ্যারিফাইড ফেসবুক পেজে শেয়ার করে সবাইকে টিকা নিতেও বলেছেন।
২০১৯ সালের শেষ দিকে চীনে এবং পরে পশ্চিমা দুনিয়ায় করোনার বিস্তার হলে বাংলাদেশের ধর্মীয় বক্তারা ব্যাপকভাবে বলতে থাকেন, এই ভাইরাস পৃথিবীতে আল্লাহ পাঠিয়েছেন অমুসলিমদেরকে শায়েস্তা করতে।
করোনাকে আল্লাহর সৈনিক আখ্যা দিয়ে দেশে হাস্যরসের জন্ম দেন নানা উদ্ভট বক্তব্য দিয়ে আলোচনায় আসা মুফতি কাজী ইব্রাহীম।
ওই বছরের মার্চে মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশিদের একটি মাহফিলে যোগ দিয়ে একই কথা বলেন আহজারীও। তিনি সে সময় করোনা থেকে বাঁচতে একটি নির্দিষ্ট দোয়া করতে নিজের ফেসবুকে পরামর্শ দেন।
তবে এক বছর পর সেই মালয়েশিয়া যখন করোনায় জর্জরিত, হাসপাতালগুলোতে রোগীর ঠাঁই হচ্ছে না, অক্সিজেনের অভাবে মানুষ মারা যাচ্ছে, তখন সোমবার বাংলাদেশ সময় রাতে টিকা নেয়ার বিষয়ে স্ট্যাটাস দেন আজহারী।
তিনি লেখেন, ‘আলহামদুলিল্লাহ, আজ মালয়েশিয়াতে করোনা ভ্যাকসিন— ফাইজারের দ্বিতীয় ডোজ সম্পন্ন করলাম। আল্লাহ তা’আলা টিকার সব ধরনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া থেকে আমাদের মুক্ত রাখুন। এর পুরোপুরি উপকার আমাদের নসিব করুন।’
তিনি অন্যদেরকেও টিকা নেয়ার পরামর্শ দিয়ে বলেন, ‘আপনারা যারা এখনও ভ্যাকসিন নেননি, সম্ভব হলে দ্রুত নিয়ে নিন। যতো দ্রুত ভ্যাকসিনেশন কার্যক্রম শেষ হবে, তত দ্রুত সংক্রমণ কমে আসবে এবং আমরা স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারব ইনশাআল্লাহ।’
আজহারীকে ফাইজারের টিকা দেয়া হলেও তিনি তার সমর্থকদেরকে যে টিকা পাওয়া যায়, সেটিই নেয়ার পরামর্শ দিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘ভ্যাকসিনগুলোর কার্যকারিতা ভিন্ন ভিন্ন হলেও, সব ভ্যাকসিন একটা কাজ করতে প্রায় শতভাগ সক্ষম। আর সেটা হচ্ছে—শরীরে ভাইরাসের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ ব্যবস্থা গড়ে তোলা, যা আপনাকে অতি মাত্রায় অসুস্থ হওয়া এবং সংকটাপন্ন হওয়া থেকে রক্ষা করবে। সুতরাং যে ভ্যাকসিনই আগে পাবেন, আল্লাহর উপর ভরসা করে সেটাই নিয়ে নিন।’
টিকার বিকল্প নেই উল্লেখ করে তিনি এও লেখেন, ‘ভ্যাকসিনের কাজ হলো শরীরে ভাইরাসের বিরুদ্ধে এন্টিবডি তৈরি করা। ভ্যাকসিন নেয়া থাকলে, আপনি আক্রান্ত হলেও হয়তো ক্রিটিকাল সিচুয়েশনে পড়তে হবে না। অথবা আপনি করোনা ভাইরাস বহনকারী হলেও, ভ্যাকসিন নেয়ার কারণে হয়ত নিজে আক্রান্ত হবেন না, কিন্তু ভ্যাকসিন নেয়নি এমন লোকদের সংস্পর্শে গেলে, আপনার মাধ্যমে তারা আক্রান্ত হতে পারে।
‘তাই, কোনো দেশের বেশিরভাগ মানুষের টিকা দেয়া সম্পন্ন হয়ে গেলে, শুধুমাত্র তখনই কেবল মাস্কের বাধ্যবাধকতা উঠিয়ে নেয়া এবং স্বাস্থ্যবিধি শিথিল করা যেতে পারে। তা না হলে ভ্যাক্সিনেশন কার্যক্রমেও খুব বেশি লাভবান হওয়া সম্ভব নয়। তাই, এই মুহূর্তে প্রতিটি দেশে গণ টিকার বিকল্প নেই।’
গত বছর যা বলেছিলেন আজহারী
গত বছরের মার্চের দ্বিতীয় সপ্তাহে মালয়েশিয়ায় দেয়া আহজারীর একটি বক্তব্য ব্যাপক আলোচনা তৈরি করে।
তিনি সেদিন বলেন, ‘এই করোনা হচ্ছে আল্লাহর সৈনিক। আল্লাহ সব সময় ধরে না। ধরলে আবার ছাড়ে না। জলে-স্থলে ভূমিকম্প, ভূমিধস, মহামারি– এগুলো যা হচ্ছে সব আমাদের হাতের কামাই।
‘মাঝেমধ্যে আল্লাহ ভাইরাস পাঠান। কিছু দিন আগে সার্সভাইরাস পাঠিয়েছিলেন। সার্স যেতে না যেতেই এখন পাঠিয়েছে করোনা। কিছু দিন আগে বাংলাদেশে ছিল ডেঙ্গু। হঠাৎ করে দেখবেন আবার ঘূর্ণিঝড়, টাইফুন। আল্লাহ এগুলো দিয়ে আমাদের স্মরণ করিয়ে দেন, ভালো হওয়ার জন্য। নাফরমানি ছেড়ে দেয়ার জন্য। এক আল্লাহর দাসত্ব ও ইবাদত করার জন্য।’
আজহারী আরও বলেন, ‘এটি হলো মুসলিম জাতির জন্য রিমাইন্ডার। এটি হার্ড রিমাইন্ডার। এই রিমাইন্ডার আল্লাহ পাঠান, যাতে আমাদের টনক নড়ে। যাতে আমাদের ঘুমন্ত বিবেক জেগে ওঠে।’
করোনা ঠেকাতে তখন দোয়ার পরামর্শও ছিল
এখন টিকা নেয়ার পরামর্শ দেয়া আহজারী মার্চের প্রথম সপ্তাহে তার ভ্যারিফাইড পেজে একটি দোয়া শেয়ার করে সেটি বেশি বেশি পড়ার পরামর্শও দেন।
দোয়াটি শেয়ার করে তিনি লেখেন, ‘করোনাভাইরাসের হাত থেকে রক্ষা পেতে, প্রয়োজনীয় সতর্কতার পাশাপাশি এই দোয়াটি বেশি বেশি পাঠ করুন। আল্লাহতায়ালা আমাদের সবাইকে এই ভয়াবহ ভাইরাস থেকে হেফাজত করুক।’
দেশে গত ২৪ ঘণ্টায় ৩১২টি নমুনা পরীক্ষা করে ১৩ জনের শরীরে করোনাভাইরাস শনাক্ত করা হয়েছে। তবে এ সময়ের মধ্যে কেউ মারা যায়নি। আজ মঙ্গলবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সমন্বিত নিয়ন্ত্রণ কক্ষ থেকে পাঠানো প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানানো হয়। এ দিন প্রতি ১০০ নমুনায় শনাক্তের হার ৪ দশমিক ১৭ শতাংশ বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানায়, ‘২০২০ সালের ১৮ মার্চ থেকে এখন পর্যন্ত দেশে করোনায় মৃত্যু ২৯ হাজার ৫২১ জন। এর মধ্যে চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে এখন পর্যন্ত মৃত্যু হয়েছে ২২ জনের। এছাড়া ২০২০ সালের ৮ মার্চ থেকে মোট শনাক্ত হয়েছে ২০ লাখ ৫২ হাজার ১২৭ জন। এর মধ্যে গত জানুয়ারি থেকে এখন পর্যন্ত শনাক্ত হয়েছেন ৫৮২ জন।
এডিশ মশাবাহিত ডেঙ্গু রোগে আক্রান্তের সংখ্যা ক্রমেই বেড়ে চলেছে। সারা দেশে মশা নিধন কার্যক্রমের দুর্বলতার কারণে ডেঙ্গু পরিস্থিতি উদ্বেগজনক মোড় নিয়েছে। চলতি বছরের মে মাসের তুলনায় জুন মাসে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা প্রায় তিনগুণ বেড়েছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের দেওয়া পরিসংখ্যান বিশ্লেষণে দেখা যায়, বছরের শুরুর দিকে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা তুলনামূলকভাবে কম ছিল। জানুয়ারিতে ১,১৬১ জন, ফেব্রুয়ারিতে ৩৭৪, মার্চে ৩৩৬ এবং এপ্রিলে ৭০১ জন হাসপাতালে ভর্তি হন। তবে মে মাস থেকে পরিস্থিতির অবনতি হতে শুরু করে এবং জুনে এসে তা ভয়াবহ রূপ নেয়। আশঙ্কার বিষয় হলো, ঢাকার বাইরের জেলাগুলোতে, বিশেষ করে বরগুনায়, ডেঙ্গুর প্রকোপ অনেক বেশি।
এদিকে চলতি বছরের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত দেশে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা ১০ হাজার ২৯৬ জনে পৌঁছেছে। সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে আরও ৪২৯ জন আক্রান্ত হয়েছেন। এ সময়ে কারও মৃত্যু হয়নি।
সোমবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুম থেকে পাঠানো এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, নতুন শনাক্ত ৪২৯ জন ডেঙ্গুরোগীর মধ্যে— বরিশাল বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ১৪৯ জন; চট্টগ্রাম বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ৫৭ জন; ঢাকা বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ৬১ জন; ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন ৪২ জন; ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন ৪৫ জন; খুলনা বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ২১ জন ও রাজশাহী বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ৫৪ জন।
গত ২৪ ঘণ্টায় সুস্থ হয়ে হাসপাতাল ছাড়পত্র পেয়েছেন ৩৫৮ জন রোগী। চলতি বছরে এ পর্যন্ত মোট ৯ হাজার ৮৭ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী সুস্থ হয়ে হাসপাতাল ছেড়েছেন।
চলতি বছরের ৩০ জুন পর্যন্ত ডেঙ্গু আক্রান্তদের মধ্যে পুরুষ ৫৯ দশমিক ১ শতাংশ এবং নারী ৪০ দশমিক ৯ শতাংশ।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানায়, গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে কোনো মৃত্যুর ঘটনা না ঘটলেও চলতি বছরে এখন পর্যন্ত ৪২ জন মারা গেছেন। মৃতদের মধ্যে একজন রাজশাহী বিভাগের বাসিন্দা।
এদিকে বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করে বলছেন, এডিস মশার বিস্তার এখনই নিয়ন্ত্রণ করা না গেলে পরিস্থিতি নাগালের বাইরে চলে যেতে পারে। বিশেষ করে রাজধানীর বাইরের এলাকাগুলোতে জরুরি ভিত্তিতে ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের কীটতত্ত্ববিদ অধ্যাপক কবিরুল বাশার গণমাধ্যমকে বলেন, 'মে মাসের তুলনায় জুনে আক্রান্তের সংখ্যা তিনগুণ হয়েছে। এই ধারা অব্যাহত থাকলে জুলাইয়ে এ সংখ্যা চার থেকে পাঁচগুণ এবং আগস্টে দশগুণ পর্যন্ত বাড়তে পারে।'
প্রসঙ্গত, ২০২৪ সালের জানুয়ারি থেকে ৩০ জুন পর্যন্ত দেশে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১০ হাজার ২৯৬ জনে। এর আগে ২০২৩ সালের পুরো বছরে দেশে ডেঙ্গু আক্রান্ত হন ৩ লাখ ২১ হাজার ১৭৯ জন এবং মারা যান ১ হাজার ৭০৫ জন। ২০২৪ সালের পুরো বছরের (১ জানুয়ারি–৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত) সর্বমোট হিসাব অনুযায়ী, ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ১ লাখ ১ হাজার ২১৪ জন এবং মৃতের সংখ্যা ছিল ৫৭৫ জন।
করোনা সংক্রমণের নতুন ঢেউয়ের মধ্যে দেশে আরও ২১ জনের শরীরে প্রাণঘাতী ভাইরাসটি শনাক্ত করা হয়েছে।
রবিবার (২৯ জুন) সকাল ৮টা থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টায় এসব শনাক্ত হয়েছে। তবে, নতুন করে কোনো মৃত্যুর ঘটনা ঘটেনি এই সময়ের মধ্যে।
সোমবার (৩০ জুন) স্বাস্থ্য সেবা বিভাগ এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এই তথ্য জানিয়েছে।
এতে বলা হয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় ৩৮৪ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। পরীক্ষার বিপরীতে শনাক্তের হার ৫ দশমিক ৪৭ শতাংশ।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, এ পর্যন্ত ২০ লাখ ৫২ হাজার ১১৪ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে এখন পর্যন্ত মারা গেছেন ২২ জন। আর দেশে ভাইরাসটিতে মোট মৃত্যু হয়েছে ২৯ হাজার ৫২১ জনের।
গত শনিবার সকাল ৮টা থেকে রোববার সকাল ৮টা পর্যন্ত (একদিনে) ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন আরও ৩৮৩ জন রোগী। এসব রোগীদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ১৩৬ জন আক্রান্ত বরিশাল বিভাগে। একইসঙ্গে এই সময়ে ডেঙ্গুতে আরও একজনের মৃত্যু হয়েছে।
রোববার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুম থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
এতে বলা হয়েছে, হাসপাতালে নতুন ভর্তিদের মধ্যে বরিশাল বিভাগে ১৩৬ জন, চট্টগ্রাম বিভাগে ৫৫ জন, ঢাকা বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ৪৮, ঢাকা উত্তর সিটিতে ৩২ জন, ঢাকা দক্ষিণ সিটিতে ২৮, খুলনা বিভাগে ৪১ জন, ময়মনসিংহ বিভাগে ১০ জন এবং রাজশাহী বিভাগে ৩৩ জন নতুন রোগী ভর্তি হয়েছেন।
এদিকে গত এক দিনে সারাদেশে ৩৪৯ জন ডেঙ্গু রোগী হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র পেয়েছেন। এ নিয়ে চলতি বছর ছাড়পত্র পেয়েছেন ৮ হাজার ৭২৮ জন।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, এবছরের জানুয়ারি থেকে এখন পর্যন্ত সব মিলিয়ে ৯ হাজার ৮৬৭ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। তবে বছরের এখন পর্যন্ত ডেঙ্গুতে মৃত্যু হয়েছে ৪২ জনের।
সারাদেশে করোনা ভাইরাসের নতুন সাব-ভ্যারিয়েন্ট এর সংক্রমণ বৃদ্ধি পাওয়ায় পর সিলেট এ ভাইরাসে আক্রান্ত একজনের মৃত্যু হয়েছে।
শনিবার দুপরে এ তথ্যটি নিশ্চিত করেছে সিলেট বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। নতুন করে করোনার আক্রমন শুরুর পর সিলেটে প্রথম এই কোন রোগী মারা গেলেন।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানায়, করোনায় আক্রান্ত ৬৯ বছর বয়েসি পুরুষ ১৯ জুন শহীদ শামসুদ্দিন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। বৃহস্পতিবার রাতে মারা যান তিনি। এছাড়া সিলেটে এ পর্যন্ত করোনায় আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ২০ জন বলে জানায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন শহীদ শামসুদ্দিন হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডাক্তার মো. মিজানুর রহমান জানান, নিহত ব্যক্তির বাড়ি সিলেট সদর উপজেলায়। তিনি করোনা ছাড়াও আরও অন্যান্য জটিল রোগে আক্রান্ত ছিলেন।
চট্টগ্রামে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে আরও একজনের মৃত্যু হয়েছে; গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে শনাক্ত হয়েছেন আরও ছয়জন। এ নিয়ে চলতি জুন মাসেই জেলায় করোনায় মৃতের সংখ্যা সাতজনে দাঁড়াল।
২৮ জুন চট্টগ্রাম সিভিল সার্জন কার্যালয় থেকে পাঠানো সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টার প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়।
প্রতিবেদনে বলা হয়, জেলার মিরসরাই উপজেলার বাসিন্দা সালেহা বেগম (৪০) নামে এক নারী শুক্রবার নগরের জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। করোনায় আক্রান্ত হওয়ার আগে থেকেই তিনি হৃদরোগসহ নানা জটিলতায় ভুগছিলেন।
এদিকে, সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় ৯১টি নমুনা পরীক্ষা করে ছয়জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। তাদের মধ্যে চারজন নগরের এবং দুজন বিভিন্ন উপজেলার বাসিন্দা।
শনাক্ত হওয়া রোগীদের মধ্যে নগরের শেভরন ডায়াগনস্টিক সেন্টারে চারজন এবং এভারকেয়ার হাসপাতালে দুজনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছিল।
সিভিল সার্জন কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, চট্টগ্রামে চলতি জুন মাসে মোট ১৩০ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। আক্রান্তদের মধ্যে ৬৬ জন পুরুষ, ৬৩ জন নারী ও একজন শিশু রয়েছে।
মশাবাহীত রোগ ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে গত ২৪ ঘণ্টায় বরিশালের দুই জেলায় দুজনের মৃত্যু হয়েছে। একই সময় গোটা বিভাগের সরকারি হাসপাতালগুলোতে ভর্তি হয়েছেন আরও ১০৫ জন আক্রান্ত রোগী। এ নিয়ে বর্তমানে বিভাগের ছয় জেলার সরকারি হাসপাতালগুলোতে ভর্তি থেকে চিকিৎসা নিচ্ছেন ৪৩৫ জন। মৃত্যুবরণ করা দুজন হলেন- বরগুনা জেলার বেতাগী উপজেলার কালিকাবাড়ি এলাকার বাসিন্দা আ. করিম (৫০) ও পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলার টিয়াখালী ইউনিয়নের রাজপাড়া এলাকার মো. ইউসুফ খন্দকার (৭২)। এর মধ্যে আ. করিম বরিশাল শেরইবাংলা চিকিৎসা মহাবিদ্যালয় হাসপাতালে ও বৃদ্ধ মো. ইউসুফ খন্দকার কলাপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। গতকাল শুক্রবার দুপুরে বরিশাল বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ডা. শ্যামল কৃষ্ণ মণ্ডল এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, বর্তমানে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হওয়ার সংখ্যা উদ্বেগ ও আশঙ্কাজনক। এ পরিস্থিতি থেকে বেরোতে হবে। চিকিৎসার চেয়ে প্রতিরোধ জরুরি। তাই মশার বিস্তার রোধ করতে বাড়ির আশেপাশে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করতে হবে। মশার কামড় থেকে নিজেকে রক্ষায় ব্যবস্থা নিতে হবে।
বরিশাল বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্যানুযায়ী, চলতি বছরের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত বরিশাল বিভাগের ছয় জেলার বিভিন্ন হাসপাতালে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে ভর্তি হয়েছেন ৪ হাজার ৩০৫ জন। এদের মধ্যে মৃত্যু হয়েছে ১১ জনের। বর্তমানে চিকিৎসা নিচ্ছেন ৪৩৫ জন।
বরগুনায় আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। মৃত ১১ জনের মধ্যে ছয়জনেরই বরগুনার বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু হয়েছে। শুধু মৃত্যুই নয় এ জেলায় আক্রান্তের সংখ্যাও বেশি, বরগুনা জেলায় এ পর্যন্ত ২ হাজার ৬৩২ জন ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন।
মন্তব্য