ঈদ শেষে নওগাঁ থেকে ঢাকায় আসার প্রধান ভরসা বাসের কাউন্টারগুলোতে ভিড় এখন উপচে পড়া। যারা আগাম টিকিট করে রেখেছিলেন, তারা স্বস্তিতে, তবে যাদের টিকিট কাটা নেই, তাদের যাত্রা হয়ে গেছে অনিশ্চিত।
নির্ধারিত ভাড়ার চেয়ে বেশি দিয়েও মিলছে না টিকিট। মহামারির মধ্যে নিষিদ্ধ থাকলেও বাসে প্রতি আসনে যাত্রী তুলেও পূরণ করা যাচ্ছে না চাহিদা।
করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের মধ্যে ১ জুলাই থেকে কঠোর বিধিনিষেধ দিয়ে সারা দেশেই মানুষের অবাধ চলাচলে নিষেধাজ্ঞা দেয় সরকার, যা এবার পরিচিতি পেয়েছে শাটডাউন নামে। তবে ঢাকার সঙ্গে যোগযোগ আরও আগে থেকেই বন্ধ ছিল গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ, মুন্সিগঞ্জ, মানিকগঞ্জের ওপর দিয়ে গাড়ি চলাচল বন্ধ থাকায়।
এই পরিস্থিতিতে এবার ঈদে বাড়ি যাওয়া অনিশ্চয়তার মধ্যে সরকার হঠাৎ করেই ১৫ জুলাই থেকে আট দিনের জন্য বিধিনিষেধ শিথিল করে। চালু হয় গণপরিবহন।
সে সময় জানিয়ে দেয়া হয়, ২৩ জুলাই থেকে আবার বন্ধ হয়ে যাবে মানুষের চলাচল, বিপণিবিতান, অফিস, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। এর আগে ২০২০ সালের সাধারণ ছুটি ও গত এপ্রিল থেকে লকডাউন ও ১ জুলাই থেকে শাটডাউনে পোশাক কারখানা বন্ধ না থাকলেও এবার বন্ধ থাকবে বলেও জানিয়ে দেয়া হয়।
অর্থাৎ ঈদে বাড়ি গেলে উৎসবের পর দিনই ফিরতে হবে, এটা জানিয়ে দিয়েছিল সরকার। কিন্তু সামাজিক মাধ্যমে গুজব ছড়িয়ে পড়ে যে ২৭ জুলাই ভোর পর্যন্ত শিথিল থাকবে বিধিনিষেধ। আর সেই গুজবে আস্থা রেখে এখন ভোগান্তিতে হাজারো মানুষ।
বিধিনিষেধ শুরুর আগের দিন সরকারের পক্ষ থেকে আবার জানানো হয়েছে, শুক্রবার ভোর থেকে আবার শাটডাউন শুরু হচ্ছে। আর এবার আগের চেয়ে কঠোর থাকবে পুলিশ।
এই অবস্থায় কেবল নওগাঁ নয়, ঢাকামুখি সব যাত্রাতেই ভোগান্তি চরমে উঠেছে। যাত্রীর তুলনায় যানবাহন কম, টিকিটের জন্য হাহাকার-এই বাস্তবতায় দূরের যাত্রাতেও মহাসড়কে নিষিদ্ধ থ্রি হুইলারে চেপেছেন হাজার হাজার যাত্রী, তাতেও ভাড়া লাগছে কয়েক গুণ।
কয়েক গুণ ভাড়া, তাও প্রতি আসনে যাত্রী
নওগাঁ থেকে ঢাকা পথের যাত্রী শারমিন আক্তার বলেন, ‘আমি গত মঙ্গলবার অগ্রিম টিকিট কেটেছি। অন্য সময় টিকিটের মূল্য ৪৫০-৫০০ টাকা হলেও আমি ১ হাজার ২০০ টাকা দিয়ে টিকিট কেটেছি। আবার দুই সিটে এক জন যাত্রী যাবার কথা থাকলেও ডাবল করে যেতে হচ্ছে। সকাল সাড়ে ১০টার দিকে বাস ছাড়ার কথা থাকলেও দুপুর ৩টার দিকে বাস ছেড়েছে।’
ঢাকাগামী হানিফ পরিবহনের বেলা একটার বাসের টিকিট কেটেছেন মো. বক্কর। তিনি বলেন, ‘ছুটির পর ঢাকা যাওয়া একটা চ্যালেঞ্জ। করোনা আর লকডাউনে এইবার সেই চ্যালেঞ্জ অন্য মাত্রায়।’
জেলার রাণীনগরের রবিউল ইসলাম ঢাকার একটি পেট্রল পাম্পে কাজ করেন। তিনি বলেন, ‘ঈদের আগের দিন হামরা গ্রামের বড়িত আচিছি আবার আজক্যাই যাওয়া লাগবে। কিন্তু হামরা কোনো টিকিটই পাচ্চি না।
‘কালকা থাকা কামোত জয়েন করা লাগবে। আজ না গেলে সমস্যাত পড়া লাগবে। কী করমু একন বুঝবার পারিচ্ছি না। আর ২-৩দিন পর যদি লকডাউন দিত, তালে হয়ত হামরা কোনোভাবে যাবার পারনুনি।’
শাহ ফতেহ আলী বাস কাউন্টারের ম্যানেজার আজাদ হোসেন বলেন, ‘ঢাকামূখী যাত্রীদের বেশি চাপ। তাই অনেক বাসে দুই সিটে একজন করে যাত্রী যাওয়ার কথা থাকলেও যাত্রীদের কথা ভেবে দুই সিটে দুইজন করে যাত্রী নিয়ে যেতে হচ্ছে।’
শ্যামলী পরিবহনের কাউন্টার মাস্টার রানা হোসেন দুই সিটে দুই যাত্রী নেয়ার কথা অস্বীকার করে বলেন, ‘আমরা দুই সিটে এক যাত্রীই নিচ্ছি।’
আর অতিরিক্ত ভাড়ার নেয়ার কথা বললে তিনি বলেন, ‘দেখুন আমরা অন্য সাইট থেকে ৪০ সিটের বাস ভাড়া করেছি ৪০ হাজার টাকা দিয়ে। তাই যাত্রীদের কাছ থেকে ১ হাজার ২০০টাকা করে ভাড়া নিতে হচ্ছে। বাস ভাড়া, স্টাফ খরচ বিবেচনা করেই একটু বাড়তি ভাড়া নেয়া হচ্ছে।’
জেলা বাস মালিক সমিতির সভাপতি এহসান রেজা বলেন, ‘ঢাকামুখী যাত্রীদের খুব ভিড়। তাদের কথা বিচেনা করে অনেক বাসে দুই সিটে দুই জন করে যাত্রী নিয়ে যেতে হচ্ছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আজ সন্ধ্যা পর্যন্ত বাস ঢাকায় যাবে। তবে তার পর আর কোন বাস ঢাকার উদ্দেশ্যে ছেড়ে যাবে না।’
টেম্পো, অটোরিকশায় ঢাকায় ফেরা
বরিশালের বাস টার্মিনাল ও লঞ্চ ঘাটে টিকিট নেই বলে যাত্রীরা অনন্যোপায় হয়ে তিন চাকার ধীরগতির যানে চাপছেন। টেম্পো, সিএনজিচালিত অটোরিকশা ও মাহেন্দ্রে করে ঢাকার পথে রওয়ানা হয়েছেন তারা। এমনিতে মহাসড়কে এসব গাড়ি চলাচল করতে দেয়া হয় না। তবে এখন চলছে।
বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই বরিশাল লঞ্চ ঘাটে ছিল উপড়ে পড়া ভিড়। কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনালে ঢাকামুখী মানুষের ঢল নামে দুপুরের পর থেকে।
টার্মিনাল নথুল্লাবাদে কথা হয় সাকুরা বাস কাউন্টারের সামনে টিকেটের জন্য অপেক্ষমাণ বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত সিদ্দিকুর রহমানের সঙ্গে।
তিনি বলেন, ‘জরুরিভাবে ঢাকা যাওয়া প্রয়োজন। তবে সব লঞ্চ কাউন্টার ঘুরে এখন বাস কাউন্টারে এসেছি। কোনো টিকেট নেই। এখন বিকল্প চিন্তাভাবনা করছি।’
মাওয়ার উদ্দেশে থ্রি হুইলারে ওঠা সাবিনা ইয়াসমিন বলেন, ‘কোনো জায়গায় টিকিট পাইনি। এখন বাধ্য হয়ে এই থ্রি হুইলারে উঠেছি। জানি রিস্ক আছে, তবে কিছু করার নেই। যেতে তো হবে।’
আরেক যাত্রী বলেন, ‘বাস লঞ্চে তো টিকিটই পাই নাই। বর্তমানে থ্রি হুইলারটাই সোনার হরিণ। থ্রি হুইলারে প্রতি জনের থেকে ৮০০ টাকা করে ভাড়া নিচ্ছে।’
বরিশালের সুন্দরবর, এডভেঞ্চার, সুরভী ও কীর্তণখোলা লঞ্চ কাউন্টার ঘুরে টিকেট না পাওয়া মুশফিকুর রহমান বলেন, ‘কোনো কাউন্টারে টিকেট নাই, কাল লকডাউন শুরু হলে চাকরি নিয়ে টানাটানি শুরু হবে।’
ঈগল পরিবহনের কাউন্টার স্টাফ টালু দাস জানান, ‘টিকিট অনেক আগে থেকেই বুকিং হয়েছিল। বাকি কিছু সকালেই শেষ হয়ে গেছে।’
বরিশাল টু মাওয়া রুটের বিএমএফ পরিবহনের কাউন্টারের কর্মী চঞ্চল জানান, সব যাত্রীকে নিতে না পারায় অনেকেই ক্ষিপ্ত হচ্ছেন।
সুন্দরবন লঞ্চের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শহিদুর রহমান পিন্টু বলেন, ‘ঈদ উপলক্ষে লঞ্চের টিকেট আগাম বিক্রি করা হয়েছে। কোনো টিকেটই বাকি নেই। ডেক ছাড়া আমাদের কাছে কোনো কেবিনের টিকিটও নেই।’
আরও পড়ুন:প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেছেন, আসন্ন উপজেলা নির্বাচন ব্যর্থ হলে ৭ জানুয়ারি (দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দিন) যে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, সেটি ব্যর্থ হবে।
রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে বৃহস্পতিবার সকালে উপজেলা পরিষদ নির্বাচন উপলক্ষে মাঠ প্রশাসনের সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা বিষয় সভায় তিনি এ কথা বলেন।
সিইসি বলেন, ‘দেশের নির্বাচনে আবেগ-অনুভূতির জন্য কিছুটা বিশৃঙ্খলা হয়। ভোটাররা যেন নির্বিঘ্নে ভোট দিতে পারে, সেই ব্যবস্থা করতে হবে। যেকোনো মূল্যে নির্বাচন সুষ্ঠু করতে হবে। এই নির্বাচনে ব্যর্থ হলে বিগত সংসদ নির্বাচনে যে গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা প্রতিষ্ঠা হয়েছে, তা ক্ষুণ্ন হতে পারে। বাংলাদেশে গণতন্ত্র আছে, তা সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে প্রমাণ করতে হবে।’
সভায় দেশের সব জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারসহ স্বরাষ্ট্র ও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের শীর্ষ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
সব ধরনের আগ্রাসন ও নৃশংসতার বিরুদ্ধে দাঁড়ানোর পাশাপাশি যুদ্ধকে ‘না’ বলতে বৃহস্পতিবার সবার প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
থাইল্যান্ডে জাতিসংঘের কনফারেন্স সেন্টারে (ইউএনসিসি) এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের জন্য জাতিসংঘের অর্থনৈতিক ও সামাজিক কমিশনের (ইউএনএসক্যাপ) ৮০তম অধিবেশনে দেয়া ভাষণে তিনি এ আহ্বান জানান বলে বার্তা সংস্থা বাসসের প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আমাদের সব ধরনের আগ্রাসন ও নৃশংসতার বিরুদ্ধে কথা বলতে হবে এবং যুদ্ধকে ‘না’ বলতে হবে। বাংলাদেশ জাতিসংঘ মহাসচিবের ‘শান্তির জন্য নতুন এজেন্ডা’র পক্ষে।”
ভাষণে সব ধরনের যুদ্ধ, আগ্রাসন ও নৃশংসতা বন্ধে বিশ্ব নেতাদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, গাজায় ইসরায়েলের হামলা শুধু হতাহতের সংখ্যা বাড়াচ্ছে, বিশেষত নারী ও শিশুরা এর বলি হচ্ছে। অথচ আলোচনায় আসতে পারে শান্তি।
তিনি বলেন, ‘ফিলিস্তিনি যুদ্ধ ও গণহত্যা চলছে। এটি অবশ্যই বন্ধ হতে হবে। যুদ্ধ কোনো সমাধান দিতে পারে না।’
এ প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা তার উদ্যোগ ও শাসনামলে ১৯৯৬ সালে বাংলাদেশে ‘পার্বত্য শান্তি চুক্তি’র কথা উল্লেখ করেন।
তিনি বলেন, ‘আমাদের অবশ্যই আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে আঞ্চলিক বিরোধ ও উত্তেজনা নিষ্পত্তি করতে হবে।’
আরও পড়ুন:দেশজুড়ে চলমান দাবদাহ আরও ৭২ ঘণ্টা অব্যাহত থাকতে পারে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর।
রাষ্ট্রীয় সংস্থাটির আবহাওয়াবিদ শাহীনুল ইসলাম বৃহস্পতিবার তাপপ্রবাহের সতর্কবার্তায় এ তথ্য জানিয়েছেন।
সতর্কবার্তায় বলা হয়, ‘দেশের ওপর চলমান তাপপ্রবাহ আজ (২৫ এপ্রিল, ২০২৪) হতে পরবর্তী ৭২ ঘণ্টা অব্যাহত থাকতে পারে।’
৭২ ঘণ্টার পূর্বাভাস
আবহাওয়া অধিদপ্তর বৃহস্পতিবার সকাল ৯টা থেকে পরবর্তী ৭২ ঘণ্টার আবহাওয়ার পূর্বাভাসে তাপপ্রবাহ বা দাবদাহ নিয়ে জানায়, খুলনা বিভাগসহ দিনাজপুর, নীলফামারী, রাজশাহী, পাবনা, ফরিদপুর ও গোপালগঞ্জ জেলার ওপর দিয়ে তীব্র তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। ময়মনসিংহ, মৌলভীবাজার, রাঙ্গামাটি, চাঁদপুর, নোয়াখালী, ফেনী ও বান্দরবান জেলাসহ বরিশাল বিভাগ এবং রংপুর, রাজশাহী ও ঢাকা বিভাগের অবশিষ্টাংশের ওপর দিয়ে মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের দাবদাহ বয়ে যাচ্ছে এবং তা অব্যাহত থাকতে পারে।
তাপমাত্রার বিষয়ে পূর্বাভাসে বলা হয়, সারা দেশে দিন ও রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে। জলীয় বাষ্পের আধিক্যের কারণে অস্বস্তিভাব বিরাজমান থাকতে পারে।
আরও পড়ুন:রাজধানীর উপকণ্ঠ সাভারে রানা প্লাজা ট্র্যাজেডির ১১ বছর পূর্তিতে বুধবার প্রাণ হারানো শ্রমিকদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়েছেন হতাহত শ্রমিক, তাদের পরিবার, বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠন ও পুলিশ সদস্যরা।
২০১৩ সালের ২৪ এপ্রিল ঘটে যাওয়া ওই দুর্ঘটনায় পাঁচটি পোশাক কারখানার এক হাজার ১৩৮ জন শ্রমিক প্রাণ হারান। পঙ্গুত্ব নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন দুই সহস্রাধিক শ্রমিক।
ট্র্যাজেডির বার্ষিকীতে আহত শ্রমিকদের পুনর্বাসন ও সুচিকিৎসা নিশ্চিতের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সমাবেশ করেন শ্রমিক ও সংগঠনগুলোর সদস্যরা।
সাভার বাসস্ট্যান্ড এলাকায় বুধবার সকাল থেকে ধসে পড়া রানা প্লাজার সামনে অস্থায়ী স্মৃতিস্তম্ভে শ্রদ্ধা জানানো শুরু হয়।
একে একে নিহত শ্রমিকের পরিবার, আহত শ্রমিক, পুলিশ ও বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠনের ফুলের শ্রদ্ধায় সিক্ত হয়ে ওঠে বেদি। ওই সময় নিহত শ্রমিকদের আত্মার মাগফিরাত কামনায় দোয়া ও এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।
পরে ক্ষতিগ্রস্ত শ্রমিকদের বিভিন্ন দাবি আদায়ে বিক্ষোভ সমাবেশ, র্যালি ও মানববন্ধন করা হয়।
রানা প্লাজা ট্র্যাজেডিতে প্রাণ হারানো শ্রমিকদের অনেক স্বজন প্রিয়জনের কথা স্মরণ করে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন।
সমাবেশে রানা প্লাজা ট্র্যাজেডির ১১ বছর পর এখন পর্যন্ত ক্ষতিগ্রস্ত শ্রমিকদের সুচিকিৎসা, ক্ষতিপূরণ ও পুনর্বাসন নিশ্চিত না হওয়ায় ক্ষোভ জানিয়ে তা দ্রুত বাস্তবায়নের দাবি জানান বক্তারা।
একই সঙ্গে ভবনের মালিক সোহেল রানার সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ডেরও দাবি জানান তারা।
আরও পড়ুন:দেশজুড়ে বয়ে চলেছে তাপপ্রবাহ। প্রচণ্ড গরমে অস্থির জনজীবন। বিদ্যুতের লোডশেডিং সেই অস্বস্তি-অস্থিরতা আরও বাড়িয়ে তুলেছে।
বিদ্যুৎ উৎপাদনে নতুন রেকর্ড গড়লেও সারাদেশে লোডশেডিং কমার কোনো লক্ষণ নেই। বরং আগের তুলনায় লোডশেডিংয়ের পরিমাণ বেড়েছে প্রায় ৫০ শতাংশ।
পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অফ বাংলাদেশের (পিজিসিবি) ন্যাশনাল লোড ডিসপ্যাচ সেন্টারের (এনএলডিসি) তথ্যের উল্লেখ করে বার্তা সংস্থা ইউএনবি জানায়, বুধবার (দেশে প্রায় দেড় হাজার মেগাওয়াট লোডশেডিং হয়েছে। আগের দিন মঙ্গলবার তা ছিল ১ হাজার ৪৯ মেগাওয়াট।
এনএলডিসির তথ্যে আরও দেখা যায়, মঙ্গলবার রাত ১টায় লোডশেডিং ছিল ১ হাজার ৪৬৮ মেগাওয়াট। তবে বুধবার দিনের বেলায় বিদ্যুৎ ঘাটতির মাত্রা কমে সকাল ৭টায় ৫৪২ মেগাওয়াটে নেমে আসে। আবার বেলা গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে তা বাড়তে থাকে। বিকেল ৩টায় লোডশেডিং বেড়ে দাঁড়ায় ৮২১ মেগাওয়াট।
বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (বিপিডিবি) ও পিজিসিবির তথ্য বলছে, ১৫ হাজার ২০০ মেগাওয়াট চাহিদার বিপরীতে বুধবার বিকেল ৫টায় দেশে বিদ্যুৎ উৎপাদন হয়েছে ১৪ হাজার ৪৭৩ মেগাওয়াট। সে হিসাবে সন্ধ্যার এই গুরুত্বপূর্ণ সময়ে উৎপাদন ঘাটতি ছিল ৭২৭ মেগাওয়াট।
ওদিকে বুধবার সন্ধ্যায় চাহিদার পূর্বাভাস ছিল ১৬ হাজার ৮০০ মেগাওয়াট এবং সরবরাহের পূর্বাভাস ছিল ১৬ হাজার ৫৩০ মেগাওয়াট।
সরকারি সূত্রে জানা গেছে, রাজধানী ঢাকা ও অন্যান্য বড় শহরে লোডশেডিং এড়াতে গিয়ে গ্রামাঞ্চলে লোডশেডিংয়ের পরিমাণ বেড়েছে।
বিভিন্ন এলাকা থেকে পাওয়া সংবাদে জানা যায়, এই গ্রীষ্মে প্রচণ্ড গরমের মধ্যে লোডশেডিংয়ের মাত্রা গ্রামীণ মানুষের দুর্দশা আরও বাড়িয়ে তুলছে।
এদিকে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন পেট্রোবাংলার সরকারি তথ্যে দেখা যায়, ৩ হাজার ৭৬০ মেগাওয়াট চাহিদার বিপরীতে দেশে গ্যাস উৎপাদন হয়েছে দৈনিক ৩ হাজার ৫৬ মিলিয়ন ঘনফুট।
বেশ কিছু বিদ্যুৎকেন্দ্র, বিশেষ করে যেগুলো প্রাথমিক জ্বালানি হিসেবে গ্যাস ব্যবহার করে, সেগুলোতে গ্যাস সংকটের কারণে উৎপাদন বন্ধ রয়েছে।
বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো ২ হাজার ৩১৬ দশমিক ৯ মিলিয়ন ঘনফুট চাহিদার বিপরীতে ১ হাজার ৩৪৯ দশমিক ৯ মিলিয়ন ঘটফুট গ্যাস সরবরাহ পেয়েছে।
আরও পড়ুন:সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে নতুন তিন বিচারপতি নিয়োগ দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি। বৃহস্পতিবার তারা শপ্রথ গ্রহণ করবেন।
রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে আইন ও বিচার বিভাগের সচিব মো. গোলাম সারওয়ার স্বাক্ষরিত এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে বুধবার।
প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানের ৯৫ (১) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী মহামান্য রাষ্ট্রপতি বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের তিনজন বিচারককে তাদের শপথ গ্রহণের তারিখ থেকে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ করেছেন।
আপিল বিভাগে নবনিযুক্ত বিচারপতিগণ হলেন- বিচারপতি মুহাম্মদ আবদুল হাফিজ, বিচারপতি মো শাহিনুর ইসলাম ও বিচারপতি কাশেফা হোসেন।
বৃহস্পতিবার শপথ
সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল মো. গোলাম রব্বানী স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে বুধবার বলা হয়, আপিল বিভাগে নবনিযুক্ত তিন বিচারপতি বৃহস্পতিবার শপথ গ্রহণ করবেন। এদিন সকাল সাড়ে ১০টায় সুপ্রিম কোর্টের জাজেজ লাউঞ্জে প্রধান বিচারপতি তাদেরকে শপথ পাঠ করাবেন।
মিয়ানমারের কারাগারে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা ভোগ শেষে ১৭৩ বাংলাদেশি দেশে ফিরেছেন। গভীর সাগরে অবস্থানরত মিয়ানমার প্রতিরক্ষা বাহিনীর জাহাজ ‘চিন ডুইন’ থেকে তাদের নিয়ে বাংলাদেশ নৌ বাহিনীর একটি জাহাজ বুধবার দুপুর দেড়টার দিকে কক্সবাজার শহরের নুনিয়ার ছড়া ঘাটে এসে পৌঁছায়।
এর আগে বুধবার বেলা ১১টার দিকে মিয়ানমারের প্রতিনিধি দলটি কক্সবাজার এসে পৌঁছায়।
প্রতিনিধি দলটি কক্সবাজার পৌঁছানোর পরপরই ঘাট থেকে গাড়িযোগে বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার উদ্দেশে রওনা হয়, যেখানে বিজিবির অধীনে বাংলাদেশে পালিয়ে আশ্রয় নেয়া মিয়ানমারের সেনাবাহিনী ও বর্ডার গার্ড পুলিশের (বিজিপি) ২৮৫ সদস্য রয়েছেন। তাদের নিয়ে বৃহস্পতিবার মিয়ানমার ফেরত যাবে প্রতিনিধি দলটি।
এদিন বেলা ১১টার দিকে ঘটনাস্থলে আসেন জাতীয় সংসদের হুইপ ও কক্সবাজার ৩ আসনের সংসদ সদস্য সাইমুম সরওয়ার কমল।
তিনি বলেন, ‘দুপুর ১টার দিকে ১৭৩ বাংলাদেশি ঘাটে এসে পৌঁছাতে পারেন। তারা মিয়ানমারের কারাগারে ভিন্ন মেয়াদে সাজা ভোগ করে সরকারের প্রচেষ্টায় ফিরছেন।’
সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, ১৭৩ জনের মধ্যে ১২৯ জন কক্সবাজার জেলার, ৩০ জন বান্দরবান জেলার, সাতজন রাঙ্গামাটি জেলার এবং একজন করে রয়েছেন খাগড়াছড়ি, নোয়াখালী, নারায়ণগঞ্জ, চট্টগ্রাম, রাজবাড়ী, নরসিংদী ও নীলফামারী জেলার। ইতোমধ্যে ফেরত আসাদের অপেক্ষায় ঘাটে ভীড় করছেন তাদের স্বজনরা।
কক্সবাজারের পুলিশ সুপার মো. মাহাফুজুল ইসলাম জানিয়েছেন, দেশে ফেরত আসাদের গ্রহণ করে পুলিশে হস্তান্তর করবে বিজিবি। তারপর যাচাই-বাছাই শেষে স্ব স্ব থানার পুলিশের মাধ্যমে তাদের স্বজনদের কাছে হস্তান্তরের প্রক্রিয়া সম্পন্ন হবে।
এদিকে ইয়াঙ্গুনে বাংলাদেশ দূতাবাস সূত্র জানিয়েছে, রাখাইন রাজ্যে সংঘাতের কারণে সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশে আসতে বাধ্য হওয়া মিয়ানমারের প্রতিরক্ষা বাহিনীর সদস্যদের ফিরিয়ে নিতে বাংলাদেশ সফররত মিয়ানমারের প্রতিরক্ষা বাহিনীর ‘চিন ডুইন’ জাহাজটি ১৭৩ বাংলাদেশিকে বহন করে মঙ্গলবার যাত্রা শুরু করে। এর মধ্যে ১৪৪ জন কারাগারে পূর্ণ মেয়াদে সাজা ভোগ করেছেন। অপর ২৯ জন মিশনের প্রচেষ্টায় ক্ষমা পেয়ে বাংলাদেশে ফিরছেন।
মূলত বাংলাদেশিদের নিয়ে আসা মিয়ানমারের জাহাজটিই বৃহস্পতিবার সকালে বাংলাদেশে পালিয়ে আশ্রয় নেয়া মিয়ানমারের সেনাবাহিনী ও বিজিপির ২৮৫ সদস্যকে নিয়ে ফেরত যাবে।
মিয়ানমারের ২৮৫ সদস্যকে ফেরত নেয়ার প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতেই মিয়ানমারের প্রতিনিধি দলটি নাইক্ষ্যংছড়ি গেছে।
মিয়ানমারে ফেরত যাওয়াদের মধ্যে গত ১৯ এপ্রিল একদিনে নতুন ২৪ জন, ১৬ এপ্রিল ৬৪ জন, ১৪ এপ্রিল ১৪ জন, ৩০ মার্চ ৩ জন ও ১ মার্চ ১৭৭ জন বিজিপি ও সেনা সদস্য পালিয়ে আশ্রয় নেন। এরও আগে ফেব্রুয়ারির শুরুতে কয়েক দফায় বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছিলেন আরও ৩৩০ জন, যাদের গত ১৫ ফেব্রুয়ারি মিয়ানমারে ফেরত পাঠানো হয়েছিল।
প্রথম দফায় ফেরতের সময় ঘটনাস্থলে গণমাধ্যমকর্মীদের প্রবেশ ও সংশ্লিষ্টরা কথা বললেও এবার তা হচ্ছে না। ফেরত আসা বাংলাদেশিদের গ্রহণ এবং ২৮৫ জনকে ফেরত পাঠানোর প্রক্রিয়া শেষ করে ঢাকায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষে প্রেস ব্রিফিং করে বিস্তারিত জানানো হবে। সেখানেও গণমাধ্যমকর্মীদের প্রবেশ সংরক্ষিত হতে পারে।
আরও পড়ুন:
মন্তব্য