নানারকম অনিয়মের ভেতর দিয়ে রূপগঞ্জের ভুলতায় গড়ে তোলা হয়েছিল হাশেম ফুড অ্যান্ড ব্যাভারেজ লিমিটেড কারখানা। ভবনের নকশাই অনুমোদন করা হয়নি। মানা হয়নি ইমারত নির্মাণ বিষয়ক বিধি। অগ্নিনিরাপত্তা ব্যবস্থাতে ছিল অবহেলা।
অগ্নিকাণ্ডের পর তদন্তের সঙ্গে যুক্ত একাধিক ব্যক্তির সঙ্গে কথা বলে এ চিত্র পাওয়া গেছে।
তারা বলেছেন, শুধু যাত্রার শুরু থেকে নয়, উৎপাদনে এসেও একের পর এক লঙ্ঘন করা হয়েছে নিয়ম-কানুন। ছিল না নিরাপদ কর্মপরিবেশ। শ্রমিকদের কাজ করার স্থলেই রাখা হতো ঝুঁকিপূর্ণ দাহ্য পদার্থ। ফায়ার অ্যালার্ম, ইমারজেন্সি এক্সিট ডোর, হাইড্রেন্ট সিস্টেমের মতো পর্যাপ্ত অগ্নিনির্বাপণ সরঞ্জামের ঘাটতি ছিল।
বিশাল ভবনে দুটি সিঁড়ি ছিল। কিন্তু প্রতিটি ফ্লোরে সিঁড়ি লোহার জালের পার্টিশনে ঘেরা এবং তা তালাবদ্ধ রাখার কারণে কর্মঘণ্টা শেষ না হওয়া পর্যন্ত ওই সিঁড়ি দিয়ে কখনই নামতে পারত না শ্রমিকরা।
ইলেকট্রনিক সেফটি অ্যান্ড সিকিউরিটি অ্যাসোসিয়েশন অফ বাংলাদেশের (ইসসাব) ভাইস প্রেসিডেন্ট ইঞ্জিনিয়ার মো. মঞ্জুর আলম নিউজবাংলাকে জানান, বাণিজ্যিক ভবনে সাধারণত যে ধরনের স্প্রিংকলার সিস্টেম এবং হাইড্রেন্ট সিস্টেম থাকে, তার কোনো পয়েন্ট তারা ওই কারখানায় দেখতে পাননি। ফায়ার অ্যালার্ম সিস্টেমেরও কোনো আয়োজন তাদের চোখে পড়েনি।’
তিনি বলেন, ‘সবচেয়ে বড় কথা এখানে ফায়ার এক্সিটটা ভালভাবে ছিল না। ফায়ার ডোর এবং জরুরি নির্গমন পথ বিধি অনুযায়ী হয়নি। শুনেছি ১৮০ জন শ্রমিক নাকি কাজ করছিল। যদি পর্যাপ্ত ইভ্যাকুয়েশন সিস্টেম থাকত, তাহলে শ্রমিকরা সহজে বের হতে পারত। সেদিক থেকে আমরা কোনো ভবন নিরাপত্তার বিধি মানার কোনো স্পষ্ট প্রতিফলন পাইনি।’
ইসসাব-এর পরিচালক জাকির উদ্দিন আহমেদ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘প্রাথমিকভাবে এখানে ইমারত নির্মাণ বিধি, ফায়ার সেফটি কোনোটিরই প্রতিফলন দেখা যায়নি। দাহ্য পদার্থ যেখানে সংরক্ষণ করা হবে, সেটিকে ফায়ার ইটের ওয়াল দিয়ে ঘেরাও করে সেফটি নিশ্চিত করার কথা। এগুলো যারা প্রফেশনাল, তারা সবাই জানে। কিন্তু আমরা এখানে অনেক ক্ষেত্রেই দেখেছি, এর ব্যত্যয় ঘটেছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘জাতীয় ইমারত নির্মাণ বিধির চতুর্থ অধ্যায়ে বলা আছে, কীভাবে ভবনের অগ্নি নিরাপত্তা নিশ্চিত হবে। এখানে অবশ্যই তার বড় আকারের ব্যত্যয় আছে। আর ব্যত্যয় আছে বলেই ৪৯টা তাজা প্রাণ হারাতে হয়েছে।’
এই বিশেষজ্ঞ প্রকৌশলী প্রাথমিক পরিদর্শন শেষে নিজস্ব মতামত দিয়ে বলেন, ‘ভবনের প্রতিটি ফ্লোর পার্টিশন দিয়ে আলাদা করা ছিল। এখানে কাঁচামাল থাকার কারণে এবং মেশিনারিজ থাকার কারণে আপিন যে সোজা দৌঁড়ে চলে যাবেন, সে রকম পরিস্থিতি ছিল না।
‘মালিক বা ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ যেভাবে ম্যাটিরিয়ালগুলো রেখেছিল, এগুলোই মূলত শ্রমিকগুলোর বাঁচার ক্ষেত্রে বাধা হিসেবে কাজ করেছে। সম্পূর্ণ ভবনে মাত্র দুটি সিঁড়ি আমরা পেয়েছি। সামনের দিকে যে সিঁড়ি, সেটা আগুনের কারণেই বন্ধ ছিল, ব্লক ছিল। ওটা বাদ দিলে দ্বিতীয় সিঁড়ি ছিল মাত্র একটা। এই কারণে হয়তো শ্রমিকরা তা ব্যবহার করতে পারেনি। তারা হয় ছাদে অথবা ভূমিতে চলে আসতে পারেনি।’
এ প্রসঙ্গে প্রকৌশলী মো. মাহমুদুর রশিদ জানান, ‘দুর্ঘটনার প্রকৌশলগত কী ত্রুটি ছিল এবং তা কীভাবে রিকভারি করা যেত, আমরা সেটি প্রাথমিক যাচাই করেছি। বাংলাদেশ ন্যাশনাল বিল্ডিং কোডের যত ধরনের রুলস অ্যান্ড রেগুলেশন আছে, যে ফায়ার সেফটি কোড অফ কন্ডাক্ট আছে, তার অনেকাংশই এখানে অনুসরণ হয়নি।’
তিনি বলেন, প্রতিটি ভবনের আগে নকশা তৈরি করা হয়, তারপর ভবন তৈরি হয়। এখানে এটার ব্যত্যয় ঘটেছে। তারা আগে বিল্ডিং করেছে, উৎপাদনে এসেছে। যতোটুকু তথ্য পেয়েছি, নকশার অনুমোদনের জন্য পাঠানো হয়েছে। কিন্তু এখনও তারা অনুমোদন পায়নি। অথচ আজকে এতো বছর ধরে এই ফ্যাক্টরি চলছে।’
অপর এক প্রশ্নের জবাবে মাহমুদুর রশিদ বলেন, ‘এখানে একটা ইমারজেন্সি ফায়ার এক্সিট ডোর নেই। এতোগুলো মানুষের প্রাণ চলে গেল। এর দায়দায়িত্ব কে নেবে? আমরা সবাইকে বলতে চাই, আপনারা আপনাদের ভবনকে নিরাপদ করার জন্য ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্স থেকে অ্যাপ্রুভাল নেবেন।’
হাশেম ফুড অ্যান্ড বেভারেজে নিরাপত্তার বিধিবিধান মানা হচ্ছে কিনা কি-না সেটি দেখার দায়িত্ব ছিল স্থানীয় কলকারখানা পরিদর্শন পরিদপ্তর অফিসের। মুঠোফোনে এ অফিসের শীর্ষস্থানীয় এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘এখানে প্রত্যেকটা কল-কারখানায় আমাদের ইন্সপেক্টররা নিয়মিত পরিদর্শন করেন। যদি কোনো ত্রুটি পান, তাদেরকে নোটিশ দেয়া হয়। বিভিন্নভাবে তাদের উৎসাহিত করা হয়, যাতে তারা স্ট্যান্ডার্ডটা মেইনেটইন করেন এবং প্ল্যানটা অনুমোদন করান এবং ত্রুটি দূর করেন।’
দুর্ঘটনাকবলিত ভবনটি ঘুরে দেখা গেছে, ভবনের ছয় তলায় ছিল কার্টনের গোডাউন। পঞ্চম তলায় বিভিন্ন কেমিক্যাল ও প্লাস্টিক মোড়কের গোডাউন। চতুর্থ এবং তৃতীয় তলায় উৎপাদিত হতো সেজান জুসের বিভিন্ন পণ্য। তবে পণ্য উৎপাদনের পাশাপাশি পাশেই রাখা ছিল সারি সারি কার্টনভর্তি পণ্য। সঙ্গে অতি দাহ্য পদার্থের ছড়াছড়ি।
তৃতীয় তলায় ক্যান্ডি লাইন ও নসিলা উৎপাদনের প্লান্টের ফ্লোরে মজুদ ছিল যাবতীয় ফ্লেভার, সুগার ও গ্লুকোজের কার্টন, নানারকম কেমিক্যাল ও মোড়ক উৎপাদনের পলি। চতুর্থ তলায় লাচ্ছা সেমাই, চানাচুর ঝালমুড়ি তৈরি হলেও এ তলার একপাশে ছিল গোডাউন, যেখানে বিপুল পরিমাণ সয়াবিন ও ডালডার মজুদ ছিল।
নিচতলায় ছিল কার্টন, এলডিপি বা প্লাস্টিকের পলি উৎপাদন প্লান্ট। এখানে আরেকটি সাইটে প্রক্রিয়াজাত করা হতো ময়দা, ছিল কম্প্রেশার মেশিন। রাখা ছিল ফয়েল পেপারের বড় বড় রোল। আঁঠা জাতীয় কেমিক্যালের উপস্থিতিও এখানে পাওয়া গেছে। নিচতলায় ড্রিংকস, বিস্কুট উৎপাদন প্লান্ট হলেও এখানে বিপুল পরিমাণ দাহ্য পদার্থ মজুদ ছিল। দ্বিতীয় তলায় লিচুর জুস ও লাচ্ছি তৈরি হতো। তৈরি হতো এসব পণ্যের প্লাস্টিক বোতল। ছিল প্লাস্টিক পণ্য উৎপাদনের কাঁচামাল রেজিনের মতো দাহ্য পদার্থ।
নারায়ণগঞ্জ ফায়ার সার্ভিসের উপপরিচালক তানহা জানান, সবকটি ফ্লোরেই সিঁড়ির সামনে লোহার তারের পার্টিশন দেয়া আছে। উৎপাদনরত অবস্থায় এসব ফ্লোরগুলোর পার্টিশন তালাবদ্ধ থাকায় অগ্নিকাণ্ডের সময় শ্রমিকরা উপরে যেতে পারেননি, নিচেও নামতে পারেননি বলে মনে হচ্ছে। এ কারণে মৃত্যুর সংখ্যা বেশি হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক শ্রমিক জোটের কেন্দ্রীয় কার্যকরি কমিটির সভাপতি মো. মোশারফ হোসেন বলেন, কারখানাটি ছিল একটি মৃত্যুকূপ। আগুন লাগলে নিরাপদে বেরিয়ে আসার মতো ন্যূনতম পরিস্থিতি কারখানাটিতে ছিল না।
আরও পড়ুন:স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় এবং যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া বলেছেন, প্রতিটি অঞ্চলে আন্তর্জাতিক খেলা পৌঁছে দিব। এটিকে ঘিরে গড়ে উঠবে স্পোর্টস ইকোসিস্টেম।
উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদের ভেরিফাইড ফেসবুকে দেওয়া পোস্টে বলা হয়, 'কথা দিয়েছিলাম প্রতিটি অঞ্চলে আন্তর্জাতিক খেলা পৌঁছে দিব। তাকে ঘিরে গড়ে উঠবে স্পোর্টস ইকোসিস্টেম। এই প্রতিশ্রুতির অংশ হিসেবে রাজশাহীতে হবে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট আর নীলফামারিতে আন্তর্জাতিক ফুটবল। এছাড়াও পরিকল্পনায় আছে খুলনাও।'
পোস্টে আরো বলা হয়েছে, 'প্রয়োজনীয় সংস্কার শেষে দ্রুতই মাঠে বল গড়াবে ইনশাআল্লাহ।'
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) প্রতিনিধি দলের সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলনের সঙ্গী গণতন্ত্র মঞ্চের লিয়াজোঁ কমিটির বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে।
রোববার রাতে গুলশানে বিএনপি চেয়ারপার্সনের কার্যালয়ে আয়োজিত এ বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী ও ইকবাল হাসান মাহমুদ চৌধুরী টুকু।
গণতন্ত্র মঞ্চ লিয়াজোঁ কমিটির সদস্য বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকিসহ কমিটির সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।
বিএনপির মিডিয়া সেলের ফেইসবুক পেইজে এ তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে।
রামপুরা ২৩০/১৩২ কেভি গ্রিড উপকেন্দ্রে ত্রুটির কারণে রাজধানীর বিভিন্নস্থানে বিদ্যুৎ নেই বলে জানিয়েছে পাওয়ার গ্রিড বাংলাদেশ পিএলসি (পিজিসিবি)। এর ফলে ঢাকার একটি বড় অংশ এখন বিদ্যুৎবিহীন অবস্থায় রয়েছে। ত্রুটি মেরামত করে দ্রুত বিদ্যুৎ সরবরাহের চেষ্টা করা হচ্ছে বলে পিজিসিবি জানিয়েছে।
আজ রোববার রাত ১০টার দিকে এই ত্রুটি দেখা দেয়। এতে বসুন্ধরা, গুলশান, আফতাবনগর, রামপুরা, মগবাজার, মধুবাগ, ফার্মগেট, রাজাবাজার, কাওরান বাজার, বনানী, হাতিরঝিল, মহাখালী, সেগুনবাগিচা, মগবাজার, তেজগাঁও, ফার্মগেট, বনশ্রীসহ অনেক এলাকা এখন বিদ্যুৎবিহীন।
পিজিসিবির সহকারী মহাব্যবস্থাপক (এজিএম) এ বি এম বদরুদ্দোজা খান সুমন বলেন, রামপুরা ২৩০/১৩২ কেভি গ্রিড সাবস্টেশনে রাত ৯টা ৫০ মিনিটে আকস্মিক কারিগরি ত্রুটি দেখা দেয়। এতে ঢাকার একাংশে বিদ্যুৎ সরবরাহে অনাকাঙ্ক্ষিত বিচ্যুতি হয়েছে। পাওয়ার গ্রিডের প্রকৌশলীরা দ্রুত সমস্যা সমাধানে কাজ করছেন বলে তিনি জানান।
সম্ভাব্য দ্রুততম সময়ে সমস্যা সমাধান করা সম্ভব হবে বলে আশা তিনি জানান, রামপুরা গ্রিডের ২৩০ কেভি অংশে সমস্যা হওয়ায় কারণে ডেসকো'র বসুন্ধরা ১৩২/৩৩ কেভি গ্রিডের (আংশিক), পূর্বাচল গ্রিড, বনানী গ্রিড, আফতাবনগর গ্রিড, গুলশান গ্রিড বিদ্যুৎহীন হয়ে পড়েছে। এনএলডিসির সঙ্গে যোগাযোগ করে সঠিক কারণ উদ্ঘাটন এবং দ্রুত বিদ্যুৎ ব্যবস্থা চালুর চেষ্টা চলছে। তবে সব জায়গায় বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক হতে কিছুটা সময় লাগতে পারে বলে তিনি জানান।
বরিশালের নদ-নদী এবং সাগরে হঠাৎ করে ধরা পড়ছে ঝাকে ঝাকে ইলিশ। সেই সঙ্গে ঝিমিয়ে যাওয়া বরিশালের সর্ববৃহৎ পোর্ট রোড মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র আবারও সরগরম হয়ে উঠেছে। ব্যবসায়ীদের দাবি-গত তিনদিন ধরে দৈনিক দুইশ থেকে সাড়ে তিনশ মণ পর্যন্ত ইলিশ আসছে এই পাইকারি মৎস্য আড়তে। তবে সরবরাহের অর্ধেকের বেশি ইলিশ আকারে ছোট দাবি বলে আড়তদারদের।
ইলিশের সরবরাহ বাড়তে শুরু করলেও দাম এখনো নিম্ন আয়ের মানুষের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে। এক কেজি জাটকা কিনতে এখনো গুণতে হচ্ছে সর্বনিম্ন পাঁচশ টাকা। তবে সরবরাহ বৃদ্ধির ধারাবাহিকতা ঠিক থাকলে চলতি মাসেই ইলিশে দাম আরও কমে বলে আশাবাদী ব্যবসায়ীরা।
সরজমিনে বরিশাল নগরীর পোর্ট রোড ইলিশ মোকামে দেখা যায়, ভোর পাঁচটা বাজার আগে থেকেই আড়তে আসছে একের পর এক ইলিশের ট্রলার। সাগর এবং নদীর মাঝ পোর্ট রোডে নামিয়ে দিয়ে ট্রলার নিয়ে জেলেরা আবার ছুটছেন সাগর এবং নদীতে। তবে বর্তমানে বরিশাল মোকামে আসা অর্ধেক ইলিশ স্থানীয় নদ-নদীর বলে দাবি জানিয়েছেন আড়াতদাররা।
পোর্টরোড আক্তার মৎস্য আড়তের আড়তদার আক্তার হোসেন জানিয়েছেন, গত দুই-তিন দিনের তুলনায় রোববার ইলিশের দাম কিছুটা কম ছিল। কারণ এ কয়দিনে আড়তে ইলিশের সরবরাহ কিছু বেশি হয়েছে। এর পরও এলসি সাইজ অর্থাৎ ৭০০-৯৯৯ গ্রাম ওজনের প্রতিমণ ইলিশ ৭৫-৭৬ হাজার টাকায় বিক্রি হয়েছে।
এছাড়া এক কেজি সাইজের ইলিশ প্রতিমণ ৮৮ হাজার, এক কেজির ওপরে ১২শ গ্রাম পর্যন্ত ইলিশ প্রতিমণ ৯২ হাজার, দেড় কেজি ওজনের ইলিশ প্রতিমণ ৯৮ হাজার টাকা, ভেলকা সাইজ অর্থাৎ ৫০০ থেকে ৭০০ গ্রাম প্রতিমণ ৫৮-৬০ হাজার টাকা, ৩০০ থেকে ৫শ গ্রাম ইলিশ প্রতিমণ ৩২ হাজার টাকা এবং জাটকা ইলিশ প্রতিমণ বিক্রি হয়েছে ২০ হাজার টাকা দরে।
মৎস্য আড়তদার ইয়ার হোসেন জানিয়েছেন, পদ্মা সেতু নির্মাণের আগে বরিশালের আড়তে প্রতিদিন ৩-৪ হাজার মণ ইলিশও এসেছে। কিন্তু পদ্মা সেতু চালুর পর সেই পরিমাণ কমে গেছে। তবে পটুয়াখালীর কলাপাড়ার মৎস্য আড়তে কিছুটা ঝামেলা হয়েছে বিধায় গত তিন দিন ধরে নদী এবং সাগরের মাছের ট্রলার বরিশালে আসছে। এ কারণে বরিশালের আড়তে সরবরাহও বেড়েছে।
বরিশাল শহীদ জিয়া মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি জহির সিকদার বলেন, রোববার বরিশালের আড়তে তিনশ মনের বেশি ইলিশ এসেছে। যা চলতি বছরে সর্বোচ্চ। তবে সরবরাহ হওয়া ইলিশের মধ্যে প্রায় আড়াইশ মণই জাটকা। তাছাড়া নদীর থেকে সাগরের ইলিশটাই বেশি আসছে।
তিনি জানান, গত শনিবার বরিশাল পোর্ট রোড মোকামে ২০০ মণ এবং তার আগের দিন শুক্রবার প্রায় দুইশ মণ ইলিশ এসেছে পোর্ট রোডের ইলিশ মোকামে। ফলে গত তিন দিনের ব্যবধানে ইলিশের দাম মণপ্রতি ৫ হাজার থেকে ৬ হাজার টাকা পর্যন্ত কমেছে। আগামী ২৫ জুন পূর্ণিমার জোঁ রয়েছে। ওইদিন থেকে আরও বেশি মাছ ধরা পড়বে বলে আশাবাদী এই ব্যবসায়ী।
খুঁচরা বাজারে দেখা যায়, আড়তে মাছের সরবরাহ বাড়লেও খুচরা বাজারে তার প্রভাব পড়েনি। সংকটের অজুহাতে এখনো বাড়তি দামেই ইলিশ বিক্রি করছেন বাজারের ব্যবসায়ীরা। ৭০০-৯৯৯ গ্রামের ইলিশ পাইকারী হিসেবে প্রতি কেজির দাম ১৮শ থেকে ১৯শ টাকা হলেও তা বিক্রি করা হচ্ছে ২২শ থেকে আড়াই হাজার টাকায়। একইভাবে কেজি সাইজের ইলিশ প্রতি কেজি ২২শ টাকার পরিবর্তে বিক্রি করা হচ্ছে ২৫শ থেকে ২৮শ টাকায়। আর জাটকা ইলিশ বিক্রি করা হচ্ছে ৬০০ থেকে ৮০০ টাকায়। বাড়তি দামে ইলিশ বিক্রি করায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন নিম্ন আয়ের ক্রেতারা।
বরিশাল জেলা মৎস্য কর্মকর্তা রিপণ কান্তি ঘোষ বলেন, একসময় বরিশালের পোর্ট রোড মৎস্য আড়ত জমজমাট ছিল। তখন দক্ষিণাঞ্চলের নদী এবং সাগরের ইলিশ এখানো আসত। তবে এখন যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নতির কারণে ইলিশ যাচ্ছে পটুয়াখালীর মহিপুর, আলিপুর এবং পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে। তাছাড়া বরিশালের হিজলা-মেহেন্দিগঞ্জ এলাকার ইলিশ নিয়ে যাওয়া হচ্ছে চাঁদপুরে। বরিশালের আড়তে যা মাছ আসছে তা স্থানীয় নদনদীর মাছ।
তিনি বলেন, মা ইলিশ সংরক্ষণ অভিযান অনেকটা সফল হয়েছে। এ সময় প্রচুর ইলিশের পোনা ছেড়েছে। এর সুফল সামনে পাওয়া যাবে। তবে এখনই গত কয়েকদিন ধরে হঠাৎ করেই নদনদীতে বড় সাইজের ইলিশ ধরা পড়তে শুরু করেছে। এটা ভালো লক্ষ্যন। বৃষ্টি এবং বৈরী আবহাওয়ার কারণে ইলিশ ধরা পড়ছে বেশি। ভবিষ্যতে আরও বেশি ইলিশ ধরা পড়লে দামও কমে আসবে বলেন এই কর্মকর্তা।
নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলার অজোপাড়াগায়ে গড়ে ওঠেছে নৌকার গ্রাম। আর এ নৌকার গ্রামকে ঘিরে বালু নদীর তীর ঘেষে জমে ওঠেছে ব্যতিক্রমী নৌকার হাট। কাঠের খুটখাট আর নদীর পানির ছলাৎ-ছলাৎ শব্দ যে-কারো মনকে আবেগে ভরিয়ে দেবে। হয়তো ক্ষণিকের জন্য কেউ কবি বনে যেতে পারে। নৌকা তৈরির এ গ্রাম দু’টির অদূরেই গড়ে ওঠা ঐতিহ্যবাহী নৌকার হাটটি বর্ষা আসলেই জমে উঠে। আর বর্ষা ঘিরে নয়ামাটি ও পিরুলিয়া এলাকায় নৌকা তৈরির ধুম পড়ে যায়। কারিগরেরা হয়ে পড়ে মহাব্যস্ত। কায়েতপাড়া নৌকার হাটটিতে তখন চলে নৌকা বেচাকেনার রমরমা ব্যবসা। এছাড়া গোলাকান্দাইল ইউনিয়নের গোলাকন্দাইল বাজারে প্রতি বৃহস্পতিবার বসে নৌকার হাট। ইছাখালী-নগরপাড়া সড়কের অদূরেই নৌকার গ্রাম। আষাঢ় থেকে ভাদ্র মাত্র তিন মাসের মৌসুমি ব্যবসা। চাহিদা যথেষ্ট, তাই কারিগরদের ব্যবস্থাও বেশি।
শুরুর ইতিহাস : রূপগঞ্জ উপজেলার কায়েতপাড়া ইউনিয়নের পিরুলিয়া ও নয়ামাটি এলাকার কারিগরেরা স্বাধীনতারও আগে থেকে নৌকা তৈরি করে আসছে। কারো-কারো মতে, এ এলাকার নৌকা তৈরির ইতিহাস প্রায় শতাব্দী প্রাচীন। পিরুলিয়া এলাকার অতশীপরবৃদ্ধ অঞ্জনকুমার দাস বলেন, আমার জন্মের আগে থেইক্যা বাপ-দাদারা গয়না (নৌকা) বানাইয়া আইতাছে হুনছি। নয়ামাটি ও পিরুলিয়া ছাড়া গোলাকান্দাইল ইউনিয়নের গোলাকান্দাইল, সাওঘাট এলাকার কারিগরেরা নৌকা তৈরি করে আসছে।
কারিগর কারা : নৌকা তৈরির গ্রাম পিরুলিয়া ও নয়ামাটি বললেই সবাই চেনে। তবে এ এলাকা দুটি গ্রামের ৯০ ভাগই মানুষ হিন্দু সম্প্রদায়ের। হিন্দুরাই দীর্ঘদিন ধরে নৌকা তৈরি করে আসছে। আশির দশকের পর নৌকা ব্যবসায়ী কমে যায়। অনেকে ভারত চলে যাওয়ায় এখনো দেড়শ পরিবার টিকে রয়েছে কোনোমতে। সাওঘাট এলাকার কারিগর প্রদ্যুত কুমার সরকার বলেন, আগে ব্যবসা ভালাই আছিলো। অহন কাটের দাম আর লোয়া (লোহা ) পেরেকের দাম বাইড়া যাওনে লাভ কম অয়।
কারিগরা যা বলছেন: পিরুলিয়া ও নয়ামাটি এলাকার নৌকা তৈরির কারিগরেরা এখন ভালোই আছেন। নৌকা বিক্রি করে তারা সংসার চালাচ্ছেন। ছেলেমেয়েদের লেখাপড়া করাচ্ছেন। বছর শেষে মোটামুটি লাভের মুখ ও দেখছেন। কথাগুলো একবাক্যে বললেন পিরুলিয়া এলাকার সত্যেন দাস। তার ছেলে লেখাপড়া করছে। মেয়েকে বিয়ে দিয়েছেন। নয়ামাটি এলাকার রমেশ দাস বলেন, কই খারাপতো নাইগো দাদা। মোডা ভাত- আর মোডা কাপড় পরবার পারি। এইডাই সুখ।
বর্তমান অবস্থা : নৌকা তৈরির কারিগরদের অবস্থা এখন কিছুটা ভাটা পড়েছে। ৯০ দশকের পর যান্ত্রিক সভ্যতা ফিরে আসায় নৌকার কদর কিছুটা কমে যায়। প্রতি বছর বর্ষায় নৌকা তৈরির ধুম চলে। তবে বন্যা হলে ব্যবসা ভালো হয় বলে জানালেন সুনীল দাস। তিনি বলেন, ৮৮’ আর ৯৮’ সালের বন্যায় অনেক টেহা লাব অইছিলো। নয়ামাটি এলাকার নৌকার কারিগর রবি দাস বলেন, কাডের দাম বাইড়া যাওনে লাভটা কম হয়। নাইলে ব্যবসা খারাপ না। আর স্টিলের নৌকার কারণে কিছুডা লছ অইতাছে। তারপরেও খারাপ নাই। ডাইল-ভাত খাইবার পারি।
খরচ কত : এক-একটি নৌকা তৈরি করতে খরচ পড়ে ১৫/২০ হাজার টাকা। আর মোটামুটি কাঠের নৌকা তৈরিতে খরচ পড়ে ৮/১০ হাজার টাকা। কথাগুলো বললেন নৌকার কারিগর তাপস দাস।
নৌকার হাটের কথা : বালু নদীর তীর ঘেঁষেই কায়েতপাড়া বাজারে নৌকার হাট। বর্ষা মাসজুড়েই এ হাট জমে। ঢাকার নিম্নাঞ্চলসহ আশপাশের বিভিন্ন এলাকা থেকে ক্রেতারা নৌকা কিনতে আসেন। দামে সস্তা হওয়ায় এখানকার নৌকার কদরও বেশি। গোলাকান্দাইল ইউনিয়নের গোলাকান্দাইল বাজারের সামনে বিলে জমে ব্যতিক্রমি নৌকার হাট। এ হাটে প্রতি বৃহস্পতিবারে প্রায় কয়েক হাজার নৌকা ওঠে। নৌকার হাট শুরু হয় নৌকা তৈরির গ্রামগুলোর কারিগরদের ঘিরেই। প্রতি বৃহস্পতিবার এ হাট জমে ওঠে। বৃহস্পতিবার এ হাটে কয়েক হাজার নৌকা ওঠে। ওঠে নৌকার বৈঠাও। গজারি কাঠের এক-একটি নৌকার দাম পড়ে ১৫/২০ হাজার টাকা। আর কোষা ৭/৮ হাজার টাকায়। বৈঠাগুলো ৪শ থেকে ৫শ টাকায় বিক্রি হয়। নৌকা বিক্রেতা সুবল চন্দ্র দাস বলেন, দাদু ব্যবসা ভালোই, তয় পানি বেশি অইলে লাভ অয়। ঢাকার ত্রিমহোনী থেকে নৌকা কিনতে আসা ওমরআলী বলেন, এ হাটে তুলনামূলক সস্তায় নৌকা পাওয়া যায়। আড়াইহাজার থেকে নৌকা কিনতে আসা সামছুল হক বলেন, এ হাটে নৌকার দাম কম। তাই এহান থেইক্যা কিনবার আইছি।
প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, স্বাধীন ও দক্ষ বিচার বিভাগ গড়ে তুলতে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
তিনি বলেন, জুলাই বিপ্লব নতুন সভ্যতা গড়ে তোলার সুযোগ করে দিয়েছে। প্রধান উপদেষ্টা এই সুযোগ কাজে লাগানোর জন্য বিচার বিভাগ সংশ্লিষ্টদের প্রতি আহ্বান জানান।
রোববার হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে আয়োজিত ‘বিচার বিভাগের স্বাধীনতা ও দক্ষতা’ বিষয়ক এক জাতীয় সেমিনারে তিনি এসব কথা বলেন।
প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদ অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন। এতে অন্যান্যের মধ্যে বাংলাদেশের অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান ও বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট জয়নাল আবেদীন বক্তব্য রাখেন।
ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) জানিয়েছে, তারা বাংলাদেশের আগামী নির্বাচনের প্রস্তুতির পরিপ্রেক্ষিতে নির্বাচন কমিশন (ইসি) ও সুশীল সমাজের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করছে।
রবিবার (২২ জুন) এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে ঢাকায় ইউরোপীয় দূতাবাস এমন তথ্য জানিয়েছে।
ইইউ দূতাবাস বিবৃতিতে জানায়, বাংলাদেশের জন্য আরও গণতান্ত্রিক ভবিষ্যৎ নির্মাণে সুশীল সমাজকে ক্ষমতায়নে কাজ করছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন প্রতিনিধি ও এর অংশীদাররা।
ইউরোপীয় পার্টনারশিপ ফর ডেমোক্রেসির (ইপিডি) সহায়তায় এর অংশীদার সংগঠন আনফারেল ১৮ থেকে ২০ জুন ঢাকায় তিনদিনব্যাপী একটি ওয়ার্কশপের আয়োজন করে। এর বিষয়বস্তু ছিল নাগরিক নির্বাচন পর্যবেক্ষণ।
ইইউ দূতাবাস জানায়, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে সক্রিয় ও নিরপেক্ষ নির্বাচন পর্যবেক্ষকদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়ে সব অংশগ্রহণকারী একমত পোষণ করেছেন।
নির্বাচন পর্যবেক্ষকদের জন্য সুস্পষ্ট দিকনির্দেশনা প্রণয়নে সহযোগিতা এবং এতে কেন্দ্রীয় ভূমিকা পালনের কথা স্বীকার করেছে বাংলাদেশের নির্বাচন কমিশন।
মন্তব্য