নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের সজিব গ্রুপের কারখানা হাশেম ফুডসের ভবনে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় উদ্ধার কার্যক্রম শেষ ঘোষণা করেছে ফায়ার সার্ভিস।
ফায়ার সার্ভিসের উপপরিচালক দেবাশীষ বর্ধন শনিবার সন্ধ্যায় আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্ধারকাজ শেষ হওয়ার কথা জানান।
এরপর সাড়ে সাতটার দিকে ফায়ার সার্ভিসের সব গাড়ি ঘটনাস্থল ত্যাগ করে।
দেবাশীষ বর্ধন বলেন, ‘এখন পর্যন্ত এ ঘটনায় ৫২ জনের মৃত্যু হয়েছে। শনিবার সকাল নয়টার পর থেকে ভবনের ছয়তলায় তল্লাশি চালিয়ে কোনো মরদেহ পাওয়া যায়নি। শুক্রবার রাতে পাঁচতলায় তল্লাশি করা হয়েছে। সেখানেও কোনো মরদেহ পাইনি।
‘দীর্ঘ সময় আগুন জ্বলায় ভবনের দেয়াল ও পিলারে ফাটল দেখা দিয়েছে। পাঁচতলার এক অংশ দেবে গেছে। আমরা ভবনটি ঝুঁকিপূর্ণ মনে করছি।’
ফায়ার সার্ভিসের এই কর্মকর্তা আরও জানান, এ কারখানায় বিভিন্ন ধরনের পণ্য তৈরি করা হয়। এ জন্য বিভিন্ন দাহ্য বস্তু ব্যবহার করা হয়। আছে নানা ধরনের কেমিক্যাল। এ কারণে আগুন বারবার নেভানো হলেও তা জ্বলে উঠেছে।
আগুন নেভাতে দেরি হলেও ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা চেষ্টা করেছেন যত দ্রুত সম্ভব এই উদ্ধার অভিযান শেষ করা যায়। এখন ফায়ার সার্ভিসের পাঁচ সদস্যের কমিটি তদন্ত শুরু করবে। তদন্ত শেষে বিস্তারিত জানানো হবে।
গত বৃহস্পতিবার রাতে কারখানাটিতে আগুন লাগার পর শুরুতে তিনজনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেলেও পরের দিন উদ্ধার করা হয় ৪৯ জনের মরদেহ। মোট মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৫২ জনে।
বেশির ভাগের মরদেহই পুড়ে কয়লা হয়ে গেছে। পরিচয় শনাক্তের জন্য স্বজনদের নমুনা সংগ্রহ করে ডিএনএ পরীক্ষা চলছে।
এ ঘটনায় ভুলতা ফাঁড়ির ইনচার্জ নাজিম উদ্দিন মজুমদার শনিবার বেলা দুইটার দিকে চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালকসহ প্রতিষ্ঠানটির শীর্ষ পর্যায়ের আট কর্মকর্তার নামে হত্যা মামলা করেন।
মামলার পর তাদের আদালতে তোলা হলে জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম ফাহমিদা খাতুন প্রত্যেককে চার দিন রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের অনুমতি দিয়েছে।
আগুন নেভাতে দীর্ঘ সময় লাগার কারণ মনে করা হচ্ছে কারখানার প্রতি ফ্লোরে মজুত করা দাহ্য পদার্থ। ছিল বিপুল পরিমাণ রাসায়নিক, যা আগুন আরও ছড়িয়ে যেতে অনুঘটক হিসেবে কাজ করেছে।
আরও পড়ুন:বর্ণিল সাজে সেজেছে পদ্মার পাড়। স্বপ্নের পদ্মা সেতু উদ্বোধন উপলক্ষে উৎসবে মেতেছে জনতা। পদ্মার দক্ষিণপ্রান্তে মাদারীপুরের কাঁঠালবাড়ীতে আওয়ামী লীগের জনসভাস্থলে এখন জনস্রোত। ভোর রাত থেকে দেশের নানা অঞ্চল থেকে মানুষ আসছে এই সভায় যোগ দিতে।
বাস, ট্রাক, লঞ্চ, নৌকায় মানুষ দলে দলে জনসভায় হাজির হচ্ছে। জনসভাস্থল থেকে আশ-পাশের সব দিকেই মানুষ আর মানুষ। বিভিন্ন স্লোগান, বর্ণিল সাজে উপস্থিত হচ্ছেন সবাই।
সেতুর উত্তর প্রান্তে মুন্সীগঞ্জের মাওয়া আর দক্ষিণ প্রান্তে কাঁঠালবাড়ী। শনিবার সকাল ১০টায় মাওয়া প্রান্তে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সমাবেশে পদ্মা সেতু উদ্বোধনের ঘোষণা দেবেন। এরপর সেতুর ফলক ও ম্যুরাল উদ্বোধন করবেন তিনি। পরে টোল দিয়ে সেতু পার হয়ে জনসভায় যোগ দেবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
জনসভাস্থলে দেখা গেছে, সোয়া ৯টায় পবিত্র ধর্মগ্রন্থ পাঠের মধ্য দিয়ে সমাবেশের আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়েছে। বরিশাল, ভোলা, পটুয়াখালীসহ দক্ষিণ অঞ্চল থেকে একের পর এক লঞ্চ এসে ভিড়ছে কাঁঠালবাড়ী ঘাটে। মিছিলে মিছিলে মানুষের বিশাল সমাবেশ জন সমুদ্রে পরিণত হয়েছে।
পদ্মা সেতুর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে যোগ দিতে মুন্সীগঞ্জের মাওয়ার পথে রওনা হয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
তেজগাঁও বিমানবন্দর থেকে হেলিকপ্টারে শনিবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে মাওয়ার উদ্দেশে রওনা হন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী মাওয়ায় যোগ দেবেন সুধী সমাবেশে। রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ সাড়ে তিন হাজার নাগরিককে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে এই সমাবেশে। এর মধ্যেই খুলে দেয়া হয়েছে সুধী সমাবেশস্থল। আসতে শুরু করেছেন আমন্ত্রিত অতিথিরা।
দূরদুরান্ত থেকে যারা অনুষ্ঠানস্থলে আসছেন, তারা একটু আগেই রওনা হয়েছেন। ফলে ভোর সাড়ে ৬টা থেকে শুরু হয় অতিথিদের আগমন।
সমাবেশস্থল থেকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মহাসড়ক বা এক্সপ্রেসওয়েজুড়ে সতর্ক অবস্থানে দেখা গেছে নিরাপত্তাকর্মীদের। সমাবেশস্থলের কাছাকাছি আসতেই অতিথিদের পথ চেনাতে ব্যতিব্যস্ত দেখা গেছে তাদের।
পদ্মা সেতুর উদ্বোধন অনুষ্ঠানের আমন্ত্রণপত্রের সঙ্গেই পাঠানো হয়েছে গাড়িতে ব্যবহারের বিশেষ স্টিকার। লালরঙা বা সবুজরঙা স্টিকার দেখে নিরাপত্তাকর্মী অতিথিদের চিনিয়ে দিচ্ছিলেন সুধী সমাবেশস্থলে প্রবেশের মুখ। ওই সময় তৎপরতা দেখা গেছে পর্যটন করপোরেশনের কর্মীদেরও। আমন্ত্রিত অতিথিদের গাড়িতে তারা তুলে দিচ্ছিলেন সকালের খাবার।
এখন পর্যন্ত সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী, আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ নেতাদের অনুষ্ঠানস্থলে দেখা গেছে। এদের মধ্যে আছেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিমন্ত্রী ইয়াফেস ওসমান, বেসামরিক বিমান ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী মাহবুব আলী।
আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ নেতাদের মধ্যে আছেন দলের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য আমির হোসেন আমু, প্রেসিডিয়াম সদস্য অবসরপ্রাপ্ত কর্নেল ফারুক খান।
অন্য দলের নেতা-কর্মীদের মধ্যে দেখা গেছে সাম্যবাদী দলের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক শিল্পমন্ত্রী দিলীপ বড়ুয়া, জাতীয় পার্টির মসিউর রহমান রাঙ্গাসহ কয়েকজন নেতাকে।
জমকালো এই আয়োজনের বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ দলটির সাত নেতাকে আমন্ত্রণ জানানো হলেও তারা আসবেন না বলেই আগেই জানিয়েছেন।
আরও পড়ুন:আর কিছু মুহূর্তের অপেক্ষা; উদ্বোধন হতে যাচ্ছে দক্ষিণাঞ্চলবাসীর স্বপ্নের পদ্মা সেতু। শনিবারের উদ্বোধনী জনসভায় যোগ দিতে শুক্রবার রাতে বরিশাল বিভাগের বিভিন্ন এলাকা থেকে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মী ও সাধারণ মানুষ রওনা হন তিনটি লঞ্চে করে।
শুক্রবার রাত ১১টার দিকে বরিশালের কীর্তনখোলা নদীতে এসে পৌঁছায় লঞ্চগুলো। এরপর প্রতিটি লঞ্চ থেকে ফোটানো হয় আতশবাজি। এ সময় বরিশাল নদীবন্দরে নোঙর করা অন্যান্য লঞ্চ থেকেও আতশবাজি প্রদর্শন করা হয়; আলোকিত হয়ে ওঠে কীর্তনখোলা।
টানা ২০ মিনিট আতশবাজি ফোটানো হয়। এরপর এক এক করে সমাবেশস্থলের উদ্দেশে রওনা হয় লঞ্চগুলো।
প্রথমে সুরভী-৭ লঞ্চ বরিশালের কীর্তণনখোলা নদী অতিক্রম করে। চোখ ধাঁধানো আলোকসজ্জা করা হয় লঞ্চটিতে। প্রতিটি লঞ্চেই এমন আলোকসজ্জার সঙ্গে নাচ-গানে মেতে ওঠেন মানুষ।
কেন্দ্রীয় লঞ্চ মালিক সমিতির সহসভাপতি ও বরিশাল মহানগর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি সাইদুর রহমান রিন্টু নিউজবাংলাকে বলেন, ‘বরিশাল বিভাগ থেকে ৬০টি লঞ্চ পদ্মা সেতু উদ্বোধনী সমাবেশস্থলে যাচ্ছে। এর মধ্যে অনেক লঞ্চ রওনা হয়েছে নেতা-কর্মীদের নিয়ে। আমরা ইতিহাসের সাক্ষী হতে উচ্ছ্বসিত হয়ে সমাবেশস্থলে যাচ্ছি।’
বরিশাল নদীবন্দরে রাতে গিয়ে আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গসংগঠনের নেতা-কর্মীদের ব্যাপক সমাগম দেখা গেছে। তবে নিরাপত্তার স্বার্থে বরিশাল জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের পাস কার্ড ছাড়া বরিশাল নদীবন্দরে প্রবেশ করতে পারেনি কেউ। এই নদীবন্দর থেকে ৮টি লঞ্চ ছেড়ে গেছে পদ্মা সেতু উদ্বোধনী সমাবেশস্থলের উদ্দেশে।
বরিশাল সিটি করপোরেশনের মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘বরিশাল বিভাগ থেকে এক লাখ মানুষ যাচ্ছে পদ্মা সেতু উদ্বোধনী সমাবেশস্থলে। জনসমাবেশে যোগ দিতে আনন্দিত দক্ষিণাঞ্চলের মানুষ লঞ্চে করে রওনা হয়েছেন। আমরা নিরাপত্তা নিশ্চিতে যথাযথ ব্যবস্থা নিয়েছি।’
আরও পড়ুন:পদ্মা সেতু উদ্বোধন উপলক্ষে বর্ণিল সাজে সেজেছে নরসিংদী। শনিবার আত্মমর্যাদা ও প্রত্যয়ের পদ্মা সেতু উদ্বোধন উপলক্ষে নানা আয়োজনের অংশ হিসেবে শুক্রবার গভীর রাতেই জেলার মোসলেহ উদ্দিন ভূইয়া স্টেডিয়ামে জ্বলে ওঠে আলো।
এদিকে পদ্মা সেতু উদ্বোধনের আনন্দ জেলায় দ্বিগুণ করতে জেলা প্রশাসন আয়োজন করছে ‘প্রত্যয়ের জয়গান’ নামের একটি কনসার্ট।
মোসলেহ উদ্দিন ভূইয়া স্টেডিয়ামে আজ বিকেল ৩টায় দেশের জনপ্রিয় ব্র্যান্ড দল ‘মাইলস’-এর শিল্পীদের মধ্যে গান পরিবেশন করবেন শাফিন আহমেদ। কনসার্টটি দর্শকের জন্য উন্মুক্ত থাকবে বলে জানা গেছে নরসিংদী জেলা প্রশাসন কার্যালয় থেকে।
নরসিংদী বিভিন্ন উপজেলাসহ জেলা প্রশাসনের আয়োজনে রয়েছে দিনব্যাপী কর্মসূচি। এর মধ্যে শনিবার সকাল ৯টার দিকে জেলা প্রশাসকের কার্যালয় প্রাঙ্গণ থেকে স্টেডিয়াম পর্যন্ত এক বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রারও আয়োজন করা হয়েছে।
এরপর মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর স্বপ্নের পদ্মা সেতু উদ্বোধনের কেন্দ্রীয় অনুষ্ঠান বড় পর্দায় উপভোগ করবেন নরসিংদীবাসী।
বর্ণিল এই উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে নরসিংদী জেলা প্রশাসক আবু নইম মোহাম্মদ মারুফ খানসহ স্থানীয় সম্মানিত ব্যক্তিরা ও জনপ্রতিনিধিরা অংশ নেবেন।
আরও পড়ুন:রাজধানীর বংশালে একটি বাসায় গ্যাসের লিকেজ থেকে আগুনে একই পরিবারের চারজন দগ্ধ হয়েছেন।
শনিবার ভোর ৪টার দিকে বংশালের আগাসাদেক রোড এলাকার এ ঘটনায় দগ্ধদের উদ্ধার করে শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে ভর্তি করা হয়েছে।
দগ্ধরা হলেন ৬২ বছর বয়সী মো. ইসরাফিল, ৫০ বছর বয়সী মোছাম্মদ সালমা বেগম, ৩৫ বছর বয়সী মোছা. শাহজাদী আক্তার ও ২৮ বছর বয়সী মো. ইমরান হোসেন।
ইসরাফিলের ভাতিজা মো. তারেক বলেন, আগাসাদেক রোডের ৫৬ নম্বর বাসায় গ্যাস লিকেজ থেকে হঠাৎ আগুন লেগে যায়। পরে দগ্ধ অবস্থায় ওই চারজনকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। কীভাবে আগুন লেগেছে; এ বিষয়ে আমরা কিছু বলতে পারব না।
শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের জরুরি বিভাগের কর্তব্যরত চিকিৎসক জানান, দগ্ধদের মধ্যে দুজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। বাকি দুজনের অবস্থা শঙ্কামুক্ত বলা যাবে না। তাদের শরীরে ৫০ থেকে ১৫ শতাংশ দগ্ধ হয়েছে।
ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ (পরিদর্শক) মো. বাচ্চু মিয়া বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, বংশালের আগাসাদেক এলাকার একটি বাসা থেকে চারজন দগ্ধ হয়ে এসেছেন। তাদের চারজনকেই ভর্তি নেয়া হয়েছে। দুজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক।
আরও পড়ুন:রাজধানীর বনানীর আওয়াল সেন্টারের ৯ তলা ভবন থেকে পড়ে মো. নাসির উদ্দিন নামের এক ইঞ্জিনিয়ারের মৃত্যু হয়েছে।
শুক্রবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে এই ঘটনা ঘটে। গুরুতর আহত অবস্থায় তাকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নিয়ে আসার পর চিকিৎসক রাত সাড়ে ১২টার দিকে মৃত ঘোষণা করেন।
বনানী থানা পুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই) আব্দুল মতিন বলেন, ‘আমরা খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে যাই। তাকে উদ্ধার করে প্রথমে শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হয়। অবস্থার অবনতি হলে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নিয়ে এলে কর্তব্যরত চিকিৎসক রাত সাড়ে ১২টার দিকে মৃত ঘোষণা করেন।’
তিনি আরও বলেন, ‘নিহত ব্যক্তি বনানীর আওয়াল সেন্টারের ৯ তলা থেকে নিচে পড়ে গুরুতর আহত হন। তারপর হাসপাতালে নিয়ে এলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। নিহতের আইডি কার্ড দেখে নাম-ঠিকানা আমরা জানতে পারি। তিনি খুলনা জেলার মোংলা থানার অ্যাসিস্ট্যান্ট ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে কর্মরত ছিলেন। নিহতের মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য ঢামেক মর্গে রাখা হয়েছে। বিস্তারিত জানার চেষ্টা চলছে ময়নাতদন্তের প্রতিবেদনের রিপোর্ট পেলে মৃত্যুর সঠিক কারণ জানা যাবে।’
ফুরিয়ে আসছে ক্ষণগণনার পালা। আর অল্প সময়ের মধ্যে বহুল প্রতীক্ষার পদ্মা সেতুর উদ্বোধন ঘোষণা করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
উচ্ছ্বাসে মুখর গোটা মাওয়া প্রান্ত। অপেক্ষা বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার আগমনের।
দুর্নীতিচেষ্টার মিথ্যে অভিযোগ এনে পদ্মা সেতুর অর্থায়ন থেকে বিশ্বব্যাংকের সরে দাঁড়ানোর ঘোষণার পর নিজস্ব অর্থায়নের এই সেতু নির্মাণের ঘোষণা দিয়েছিলেন বঙ্গবন্ধুকন্যা। তার নেতৃত্বেই নির্মিত হয়েছে সেতুটি। আজ তার হাত ধরেই খুলে যাবে সেতুটি।
এর মধ্য দিয়ে দক্ষিণাঞ্চল সরাসরি যুক্ত হচ্ছে রাজধানীর সঙ্গে। শনিবার সকাল সাড়ে ৯টায় তেজগাঁও বিমানবন্দর থেকে মুন্সীগঞ্জের মাওয়া প্রান্তের উদ্দেশে হেলিকপ্টারে রওনা হবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। যোগ দেবেন সুধী সমাবেশে।
রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ সাড়ে তিন হাজার নাগরিককে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে এই সমাবেশে। এর মধ্যেই খুলে দেয়া হয়েছে সুধী সমাবেশ স্থল। আসতে শুরু করেছেন আমন্ত্রিত অতিথিরা।
দূরদুরান্ত থেকে যারা অনুষ্ঠানস্থলে আসছেন, তারা একটু আগেই রওনা হয়েছেন। ফলে ভোর সাড়ে ৬টা থেকে শুরু হয় অতিথিদের আগমন।
সমাবেশস্থল থেকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মহাসড়ক বা এক্সপ্রেসওয়েজুড়ে সতর্ক অবস্থানে দেখা গেছে নিরাপত্তাকর্মীদের। সমাবেশস্থলের কাছাকাছি আসতেই অতিথিদের পথ চেনাতে ব্যতিব্যস্ত দেখা গেছে তাদের।
পদ্মা সেতুর উদ্বোধন অনুষ্ঠানের আমন্ত্রণপত্রের সঙ্গেই পাঠানো হয়েছে গাড়িতে ব্যবহারের বিশেষ স্টিকার। লালরঙা বা সবুজরঙা স্টিকার দেখে নিরাপত্তাকর্মী অতিথিদের চিনিয়ে দিচ্ছিলেন সুধী সমাবেশস্থলে প্রবেশের মুখ। ওই সময় তৎপরতা দেখা গেছে পর্যটন করপোরেশনের কর্মীদেরও। আমন্ত্রিত অতিথিদের গাড়িতে তারা তুলে দিচ্ছিলেন সকালের খাবার।
এখন পর্যন্ত সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী, আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ নেতাদের অনুষ্ঠানস্থলে দেখা গেছে। এদের মধ্যে আছেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিমন্ত্রী ইয়াফেস ওসমান, বেসামরিক বিমান ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী মাহবুব আলী।
আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ নেতাদের মধ্যে আছেন দলের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য আমির হোসেন আমু, প্রেসিডিয়াম সদস্য অবসরপ্রাপ্ত কর্নেল ফারুক খান।
অন্য দলের নেতা-কর্মীদের মধ্যে দেখা গেছে সাম্যবাদী দলের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক শিল্পমন্ত্রী দিলীপ বড়ুয়া, জাতীয় পার্টির মসিউর রহমান রাঙ্গাসহ কয়েকজন নেতাকে।
জমকালো এই আয়োজনের বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ দলটির সাত নেতাকে আমন্ত্রণ জানানো হলেও তারা আসবেন না বলেই আগেই জানিয়েছেন।
পদ্মা সেতুতে বিশ্বব্যাংকের অর্থায়ন বন্ধে অন্যতম অনুঘটক হিসেবে সরকারের পক্ষ থেকে দায়ী করা গ্রামীণ ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাতা ড. মুহাম্মদ ইউনূসও বাদ পড়েনি আমন্ত্রিত অতিথিদের তালিকা থেকে। তিনি আসবেন কি না সে বিষয়টি নিশ্চিত করা যায়নি। অনুষ্ঠানস্থলে প্রবেশ করেছেন সংবাদমাধ্যমকর্মীরাও।
সুধী সমাবেশ শেষে বেলা ১১টার দিকে স্মারক ডাকটিকিট, স্যুভেনির শিট, উদ্বোধনী খাম ও সিলমোহর অবমুক্ত করবেন সরকারপ্রধান। পদ্মা সেতু নির্মাণ সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে ফটোসেশনে অংশ নেয়ার কথাও রয়েছে তার।
বেলা ১১টা ১২ মিনিটে টোল দিয়ে মুন্সীগঞ্জের মাওয়া প্রান্তে সেতুর উদ্বোধনী ফলক ও ম্যুরাল-১ উন্মোচন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপর ১১টা ২৩ মিনিটের দিকে পদ্মা সেতু পাড়ি দেবেন বঙ্গবন্ধুকন্যা। ওই সময় কিছুক্ষণের জন্য গাড়ি থেকে নেমে সেতুতে পায়চারি করতে পারেন তিনি।
বেলা ১১টা ৪৫ মিনিটের দিয়ে শরীয়তপুরের জাজিরা প্রান্তে পৌঁছেই পদ্মার সেতুর আরেকটি উদ্বোধনী ফলক ও ম্যুরাল-২ উন্মোচন করবেন প্রধানমন্ত্রী। এরপর কাঁঠালবাড়ীর ইলিয়াছ আহমেদ চৌধুরী ফেরিঘাটে আওয়ামী লীগের জনসভায় দলপ্রধান হিসেবে যোগ দেবেন শেখ হাসিনা।
প্রধানমন্ত্রী পদ্মা সেতু পাড়ি দেয়ার সময় পদ্মায় নৌ মহড়ার আয়োজন করা হয়েছে। ৩১টি বিমান ও হেলকপ্টার নিয়ে ফ্লাইং পাস্ট করার জন্য প্রস্তুত রয়েছে বিমানবাহিনী। এই বহরে আছে মিগ-২৯ এর মতো যুদ্ধবিমানও।
উদ্বোধনের পর রোববার ভোর ৬টা থেকে যান চলাচলের জন্য খুলে দেয়া হবে পদ্মা সেতু। এতে ফুরাবে ফেরি পারাপারের বিড়ম্বনা, বাঁচবে সময়। বদলে যাবে দৃশ্যপট, আরও সচল হবে দেশের অর্থনীতির চাকা।
আরও পড়ুন:
মন্তব্য