পটুয়াখালীর বাউফলে একটি বিয়ের সালিশ করতে গিয়ে অপ্রাপ্তবয়স্ক কিশোরীকে বিয়ে করার ঘটনায় শাস্তির মুখে পড়তে যাচ্ছেন চেয়ারম্যান শাহীন হাওলাদার।
সেই কিশোরী আগে থেকেই বিবাহিত ছিলেন। আর ঘটনাটি ফাঁস হওয়ার পর চেয়ারম্যানকে তালাক দেয়া হয়েছে। তবে এখানে বেশ কয়েকটি আইনের লঙ্ঘন হয়েছে। আর এ কারণে হস্তক্ষেপ করেছে উচ্চ আদালত।
রোববার হাইকোর্টের বিচারপতি ফারাহ মাহবুব ও বিচারপতি এস এম মনিরুজ্জামানের ভার্চ্যুয়াল বেঞ্চ বিষয়টি তদন্তের নির্দেশ দেয়।
৩০ দিনের মধ্যে পটুয়াখালীর জেলা প্রশাসক, জেলা নিবন্ধক ও পিবিআইকে তদন্ত করে আলাদা তিনটি প্রতিবেদন জমা দিতে হবে সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেলের কাছে।
ওই কিশোরীকে নিরাপত্তা দিতে বাউফলের এসপিকে নির্দেশও দেয়া হয়েছে।
এ বিষয়ে পরবর্তী আদেশের জন্য ৮ আগস্ট দিন ঠিক করে দিয়েছে আদালত।
সালিশ করতে গিয়ে কিশোরীকে ৬০ বছর বয়সী চেয়ারম্যানের বিয়ে করার বিষয়টি আদালতের নজরে আনেন আইনজীবী আমাতুল করিম। এ সময় তাকে সহযোগিতা করেন আইনজীবী ইকরামুল টুটুল, আইনজীবী খায়রুন্নেসা নাসিমা, সীমা জহুর ও কানিজ ফাতেমা।
জ্যেষ্ঠ বিচারপতি শুনানিতে বলেন, ‘পত্রিকার প্রতিবেদন দেখে যা বুঝলাম সালিশ করার জন্য ক্ষমতাপ্রাপ্ত হয়ে ক্ষমতার অপ্যবহার করেছেন চেয়ারম্যান।’
আইনজীবী আমাতুল করিম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘পটুয়াখালীর সালিশের ঘটনা পত্রিকায় প্রকাশ হয়। ওই প্রতিবেদনটি আজকে আদালতের নজরে আনি। তখন আদালত চেয়ারম্যান ক্ষমতার অপব্যবহার করেছেন কি না সে বিষয়ে জেলা প্রশাসককে তদন্ত করতে বলেছেন।’
তিনি বলেন, ‘একই সঙ্গে পিবিআই ফৌজদারি অপরাধের বিষয়ে তদন্ত করবে এবং জেলা নিবন্ধক বিয়ে নিবন্ধনের বিষয়ে তদন্ত করবেন। এই ঘটনায় কোনো পদক্ষেপ নেয়া হলে সেটিও জানাতে হবে। কোন অপরাধের সম্পৃক্ততা পেলে ব্যবস্থা নিতে বলেছেন আদালত। পাশাপাশি রুলও জারি করেছে আদালত।’
ঘটনা যেভাবে ঘটল
কনকদিয়া ইউনিয়নের নারায়ণপাশা গ্রামের এক যুবক ও স্থানীয় মসজিদের ইমামের সঙ্গে মেয়েটির প্রেমের সম্পর্ক ছিল। মেয়েটি স্থানীয় একটি স্কুলে অষ্টম শ্রেণিতে পড়ে।
এই সম্পর্ক মেনে নিতে পারেনি পরিবার। এর মধ্যে দুজন তিন দিন আগে বাসা থেকে পালিয়ে যায়।
পরে মেয়েটির বাবা দুজনকে পাশের বাড়ির এক আত্মীয়র কাছ থেকে ধরে নিয়ে আসেন এবং বিষয়টি সমাধানের জন্য কনকদিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান শাহীন হাওলাদারকে জানান।
চেয়ারম্যান শাহীন হাওলাদার শুক্রবার ইউনিয়ন পরিষদে সালিস বৈঠক ডাকেন। বৈঠকে ছেলে ও মেয়ের পরিবারের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।
বৈঠকে মেয়েটিকে দেখে পছন্দ হয়ে যায় চেয়ারম্যান শাহীন হাওলাদারের। তিনি মেয়েটির বাবাকে বিয়ের প্রস্তাব দেন। তিনি রাজি হলে জুমার নামাজের পর চেয়ারম্যানের আয়লা বাজারের বাসায় কাজি ডেকে পাঁচ লাখ টাকা কাবিনে বিয়ে হয়।
এই বিয়েতে মেয়ের বয়স নিয়েও জালিয়াতি করার অভিযোগ উঠেছে। ইউনিয়ন পরিষদ থেকে মেয়ের বয়স ১৮ বছর বলে সনদ দেয়া হয়েছে। কিন্তু সে যে স্কুলে পড়ত, সেই স্কুলের প্রধান শিক্ষক এ কথা শুনে অবাক হয়েছেন।
চেয়ারম্যান শাহীন আগে থেকে বিবাহিত। তার প্রথম স্ত্রীর কাছ থেকে কোনো অনুমতিও নেয়া হয়নি। আর এই বিয়ের পর তিনি রাগে বাবার বাড়ি চলে গেছেন।
শাহীন দুই সন্তানের জনক। ছেলেকে এরই মধ্যে বিয়ে দিয়েছেন আর মেয়ের বয়স তার নববিবাহিতা স্ত্রীর সমান।
সংবাদ প্রকাশ হওয়ার পর তালাক
এই বিয়ের কথা জানাজানি হলে স্থানীয় প্রশাসন বিষয়টি খতিয়ে দেখার উদ্যোগ নেয়। আর চাপের মুখে চেয়ারম্যান কথা বলেন তার কিশোরী বধূর সঙ্গে।
শনিবার রাতেই সেই কিশোরী তালাকনামায় সই করে। এরপর তাকে অভিভাবকের হাতে তুলে দেয়া হয়। পরে সে তার আগের স্বামী মসজিদের ইমামের কাছে ফিরে যায়।
মেয়েটি যা বলল
চেয়ারম্যানকে তালাক দিয়ে এসে সেই কিশোরী মোবাইল ফোনে নিউজবাংলাকে জানায়, সে পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ার সময় তার নানাবাড়ির সামনে চুনাইরপুর বায়তুল মামুন জামে মসজিদে ইমামতি করতেন রমজান আলী। তার কাছে কোরআন শরিফ পড়ত সে। একপর্যায়ে তাদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক হয়। তিন বছর ধরে চলে এই প্রেম।
ওই মসজিদেই রমজানের সঙ্গে তার বিয়ে হয়। তবে বয়স কম হওয়ায় কাবিন হয়নি।
পরে বিষয়টি জানাজানি হলে কয়েক মাস যোগাযোগ বন্ধ ছিল। তবে গত ১৮ মে তার বাবা-মা তার দাদির ফুফাতো বোনের ছেলের কাছে বিয়ে দেন তাকে।
বিয়ের পর নুরাইনপুর বন্দরে বসে তাদের মাত্র এক ঘণ্টার জন্য দেখা হয়েছিল। গত শুক্রবার তাকে স্বামীর বাড়ি তুলে দেয়ার কথা ছিল।
মেয়েটি এর ফাঁকে রমজানের সঙ্গে যোগাযোগ করে। আর গত ২৪ জুন তারা ঘর ছাড়ে।
বাইকে করে দুজন চলে যায় কনকদিয়া ইউনিয়নের কুম্বখারী রমজানের মামা শাহ আলমের বাড়িতে।
পরে মেয়েটির বাবা বিষয়টি চেয়ারম্যান শাহীন হাওলাদারকে জানান। গত শুক্রবার তিনি সালিস ডাকেন। বলেন, এর একটি ফয়সালা করে দেবেন।
মেয়েটি জানায়, তারা শাহীন হাওলাদারের বাড়ি গেলে চেয়ারম্যান তাকে অন্য একটি কক্ষে ডেকে নিয়ে তার সঙ্গে কথা বলেন।
চেয়ারম্যান তাকে বলেন, ‘ওই ছেলের তো (রমজানের) টাকাপয়সা নাই। তুমি তার ঘরে গিয়ে সুখী হতে পারবা না। বরং আমাকে বিয়ে করলে সুখী হবা।’
মেয়েটি তার প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে। সে মনে করেছিল ‘বুড়ো দাদু’ (চেয়ারম্যান) তার সঙ্গে দুষ্টুমি করছেন। পরে তিনি কক্ষ থেকে বের হয়ে বলেন, রমজানকে বিয়ে করতে হলে তো আগের স্বামীকে তালাক দিতে হবে। এরপর কাজি ডেকে এনে তালাক দেয়া হয়।
এরপর চেয়ারম্যান শাহীন হাওলাদার তাকে প্রতারণা করে বিয়ে করেন বলে মেয়েটি অভিযোগ করেছে।
চার বিয়ে করার চ্যালেঞ্জ চেয়ারম্যানের
চেয়ারম্যান শাহীন হাওলাদারের সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘হয়, তালাক হইছে। খুশি হইছেন আপনারা?’
মেয়েটিকে অশালীন গালি দিয়ে তিনি বলেন, ‘তার আগের স্বামী (গালি দিয়ে অন্য শব্দ) রয়েছে।’
বয়স লুকিয়ে বিয়ের দায় মেয়েটির ওপরে দেন শাহীন হাওলাদার। বলেন, ‘জন্মতারিখ ভুল করলে হেডা ওই (গালি দিয়ে) করছে আমি তো করি নাই। আমার কাছে যে জন্মসনদ আছে তাতে বয়স ১৮ হয়েছে। ভুল করলে ওইডায় করছে আমি তো করি নাই। আপনারা আমারডা মোডা দেখছেন হেইজন্য যা ইচ্ছা তাই লিখে যাচ্ছেন, কলিজায় জোর থাকলে ওর বিরুদ্ধে ল্যাহেন। ওর বয়স কম হওয়া সত্ত্বেও ও আগে এতগুলো বিয়ে করল ক্যামনে? হেইয়া ল্যাহেন।’
টানা কয়েক মিনিট এভাবে বলে চেয়ারম্যান জানতে চান ‘আর কিছু জানতে চান?’
তালাক পাওয়ার পর এখন কেমন লাগছে- এমন প্রশ্নে ক্ষিপ্ত হয়ে আবার বললেন, ‘অনুভূতি অনেক ভালো। আবার বিয়ে করব। আপনার কাছে কোনো সুন্দরী মাইয়া থাকলে নিয়ে আইসেন। একটা না, এক সাথে চাইরডা বিয়ে করমু। যদি না পারি তহন কইয়েন।‘
এই বলেই ফোন কেটে দিলেন চেয়ারম্যান।
দুটি আইনের লঙ্ঘন
চেয়ারম্যানের এই বিয়েতে দুটি আইনের লঙ্ঘন হয়েছে। প্রথমত. তিনি বাল্যবিয়ে করেছেন, সেটি আইনে দণ্ডনীয়, দ্বিতীয়ত. তিনি প্রথম স্ত্রীর অনুমতি ছাড়া বিয়ে করেছেন। এ ক্ষেত্রেও সাজা হতে পারে।
বাল্যবিয়ে নিরোধ আইন ২০১৭ অনুযায়ী প্রাপ্ত বয়স্ক কোন নারী বা পুরুষ বাল্যবিয়ে করলে তিনি অনধিক দুই বছরের কারাদণ্ড বা এক লাখ টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন। অর্থদণ্ড অনাদায়ে অনধিক তিন মাস কারাদণ্ডে দণ্ডিত হবেন।
যে কাজী এই বিয়ে পড়িয়েছেন, শাস্তির মুখোমুখি হতে পারে তাকেও। আইনে বাল্য বিয়ে পড়ালে অনধিক দুই বছর ও কমপক্ষে ছয় মাস কারাদণ্ড বা অনধিক ৫০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডের কথা বলা আছে।
অন্যদিকে স্ত্রীর অনুমতি ছাড়া দ্বিতীয় বিয়ে করলে এক বছরের কারাদণ্ড এবং ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত জরিমানা বা উভয় দণ্ডের কথা বলা আছে।
দণ্ডবিধি ১৮৬০-এর ৪৯৪-এর বিধান মতে, কারাদণ্ডের মেয়াদ সাত বছর পর্যন্ত হতে পারে।
আরও পড়ুন:বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের ফলে একটা দায়বদ্ধতা তৈরি হয়েছে মন্তব্য করে নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশনের প্রধান শিরীন পারভীন হক বলেছেন, দেশের সব ক্ষেত্রে নারীর প্রতি বৈষম্য নিরসনে কাজ করতে হবে।
আন্তর্জাতিক নারী দিবসকে সামনে রেখে বৃহস্পতিবার রাজধানীর গুলশানের একটি হোটেলে একশনএইড বাংলাদেশ আয়োজিত অনুষ্ঠানে এ কথা বলেন তিনি।
নারীর অধিকার প্রতিষ্ঠা নিয়ে শিরীন হক বলেন, ‘আমাদের মূল ধারা হবে সকল ক্ষেত্রে নারীর প্রতি বৈষম্যের নিরসন এবং নারী-পুরুষের জেন্ডার বৈষম্য কমাতে কাজ করতে হবে। নারীর উন্নয়ন বিকাশে বাধাগুলো নিয়ে বিষয় চিহ্নিত করা।
‘অন্য সকল সংস্কার কমিশনে নারী অধিকারের প্রাধান্য নিশ্চিত করতে হবে। এটা আমরা চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিচ্ছি। ক্রান্তিকালে নারীর অধিকার প্রতিষ্ঠা ও অগ্রগতির জন্য কাজ করার সর্বোত্তম সুযোগ।’
অনুষ্ঠানে সমাজে যৌন হয়রানি, সহিংসতা ও বাল্যবিয়ে বন্ধ এবং জলবায়ু, প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলা ও সবুজায়ন এবং ক্রীড়াঙ্গনে নারী নেতৃত্ব বিকাশে বিশেষ অবদান রাখার স্বীকৃতিস্বরূপ তিন ক্যাটাগরিতে দেশের প্রান্তিক পর্যায়ের তিনজনকে ‘নাসরীন স্মৃতিপদক ২০২৫’ পুরস্কার প্রদান করা হয়। এ বছর পদক গ্রহণ করেন ডনাইপ্রু নেলী, রিনা খাতুন ও আফরোজা খন্দকার।
দিবস উদ্যাপন আয়োজনে নারীদের সাফল্য প্রদর্শন ও পুরস্কার প্রদানসহ ছিল আলোচনা সেশন।
একশনএইড বাংলাদেশ-এর কান্ট্রি ডিরেক্টর ফারাহ্ কবিরের সঞ্চালনায় এ আলোচনায় অংশ নেন বিভিন্ন খাতের বিশেষজ্ঞরা। ওই সময় দেশের সব ক্ষেত্রে নারীদের ক্ষমতায়ন নিশ্চিতে বর্তমান অবস্থা, চ্যালেঞ্জ, সম্ভাবনা ও করণীয় বিষয়গুলো তুলে ধরা হয়।
আলোচনা সভায় বক্তাদের একজন বলেন, দেশে নারীর ক্ষমতায়নে সামগ্রিক চিত্রের অগ্রগতি হলেও তা উল্লেখযোগ্য নয়। এখনও অনেক পিছিয়ে আছেন নারীরা। ন্যায়সঙ্গত ও অন্তর্ভুক্তিমূলক সমাজ গঠনে বিভিন্ন স্তরের নারীদের সামনে থাকা কাঠামোগত চ্যালেঞ্জগুলোর বিষয়ে সচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে। একই সঙ্গে নারীর ক্ষমতায়নের প্রতি ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি গড়ে তোলা এবং সম্মিলিত পদক্ষেপ গ্রহণকে উৎসাহিত করাসহ নারী ও কন্যাশিশুরা যেন সমান সুযোগ পায় এবং উন্নতি করতে পারে, সে লক্ষ্যে সব ক্ষেত্রে পদক্ষেপের গতি বাড়াতে হবে।
বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে নারীদের উল্লেখযোগ্য নেতৃত্বের কথা স্বীকার করে নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশনের প্রধান ও নারীপক্ষের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য শিরীন পারভীন হক বলেন, ‘নারীদের অগ্রগতিতে পেছনে ঠেলে দেওয়ার চেষ্টা চলছে। এটা কারা করছে, কেন করছে সেটা বের করা দরকার। জুলাইয়ের আন্দোলনে মেয়েরাই রোকেয়া হল থেকে সবার আগে বের হলো। কিন্তু পরে এত দ্রুত মেয়েরা সরে গেল কেন?
‘জায়গা কেউ ইচ্ছে করে ছেড়ে দেয়নি। চাপ সৃষ্টি করে জায়গা ছাড়তে বাধ্য করা হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘সরকারের উপদেষ্টা পরিষদের মতো গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় নারীদের অন্তর্ভুক্তি আমরা নিশ্চিত করতে পারিনি। মেয়েদের পেছনে রাখার প্রবণতা দেখা গেছে।
‘আমরা দেখেছি আন্দোলনে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়ে নারীরা দারুণ সাহস দেখিয়েছে। এত তাড়াতাড়ি মেয়েদের মাঠ থেকে সরিয়ে দেওয়া হবে আশা করিনি।’
নারীদের ব্যক্তিগত পর্যায় থেকে শুরু করে কমিউনিটি উন্নয়নে একশনএইড কীভাবে অবদান রেখে চলেছে তা তুলে ধরেন ফারাহ কবির।
তিনি বলেন, ‘দেশের নারীদের অগ্রগতিতে প্রাধান্য দিয়ে কাজ করে চলেছে একশনএইড বাংলাদেশ। নারী সুরক্ষা, অবৈতনিক কাজের স্বীকৃতি, জেন্ডারভিত্তিক সহিংসতা প্রতিরোধে অবস্থান ও নারীদের অর্থনৈতিক ক্ষমতায়নসহ সমানাধিকারভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠায় অগ্রণী ভূমিকা পালন করে চলেছি আমরা। আমরা চাই, নারী ক্ষমতায়ন কার্যক্রমে আরও গতি আসুক।’
ওই সময় নারী উন্নয়নে সবার অংশগ্রহণ নিশ্চিত ও বৃদ্ধির আহ্বান জানান তিনি।
আরও পড়ুন:‘কর্মক্ষেত্রে নারীর অংশগ্রহণ বাড়লেও নারীর ক্ষমতায়ন বা সামাজিক মর্যাদা বাড়েনি। দেশের উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে সিদ্ধান্ত গ্রহণে নারীর অংশগ্রহণ ও ক্ষমতায়ন জরুরি।
‘অর্থনৈতিক ও সামাজিক পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে রাজনীতিতে নারীদের কথা বলার জায়গাটা তৈরি করে দিতে হবে। সিদ্ধান্ত গ্রহণের জায়গাগুলোতে নারীদের নিয়ে আসতে হবে।’
আন্তর্জাতিক নারী দিবস সামনে রেখে বার্তা সংস্থা ইউএনবিকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে এসব কথা বলেছেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) উপাচার্য অধ্যাপক ড. সাদেকা হালিম।
তিনি বলেন, ‘নারী পরিচয়ের আগে আমার বড় পরিচয় হলো আমি একজন মানুষ। নারী-পুরুষ ভেদাভেদ তৈরি, নারীকে হেয় করা, শারীরিক ও মানসিকভাবে পুরুষের চেয়ে দুর্বল মনে করা হয় আজও।’
পুরুষতান্ত্রিক সমাজে নারীদের মূল্যায়ন সম্পর্কে সাদেকা হালিম বলেন, ‘সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গি এমন হয়েছে যে সমাজে নারীকে দ্বিতীয় শ্রেণির নাগরিক হিসেবে দেখা হয়; যদিও বাংলাদেশের সংবিধানে নারী ও পুরুষ সমান। কিন্তু বাস্তবে কোনো দেশই খুঁজে পাওয়া যাবে না, যেখানে নারীকে পুরুষের সমান ভাবা হয়।’
‘সমাজের প্রতিটি ক্ষেত্রেই নারীত্ব নিয়ে রাজনীতি হচ্ছে। সেটা পরিবার, সমাজ, রাষ্ট্র, প্রতিষ্ঠান, শিক্ষাঙ্গন, ভাগ-বাটোয়ারার ক্ষেত্র, এমনকি ধর্মীয়ভাবেও। পৃথিবীতে এমন কোনো ধর্ম খুঁজে পাওয়া যাবে না, যেখানে প্রতিটি ক্ষেত্রে নারীকে সমান অধিকার দেয়া হয়েছে।’
‘এমনকি নারীর সন্তান জন্ম দেয়ার বিষয় নিয়েও রাজনীতি করা হয়। সন্তান জন্মের পর পরই সন্তানের অধিকার কিভাবে হবে সেটা আমরা ধর্মীয়ভাবে নির্ধারণ করি। বাবা ও মায়ের অধিকার কতটুকু, আমাদের সিভিল ল’তে কতটুকু, শরিয়া ল’তে কতটুকু- এসব বিষয় অনেকটাই পুরুষকেন্দ্রিক। পুরুষকে সব সময় প্রাধান্য দেয়া হয়। পুরুষরাই এ সমাজে নিয়ন্ত্রকের ভূমিকা পালন করে।’
এই উপমহাদেশে নারীদের ভূমিকা সম্পর্কে ড. সাদেকা হালিম বলেন, ‘ভারত উপমহাদেশে নারীর ক্ষমতায়ন যে এখন হয়েছে তা নয়। অবিভক্ত ভারত উপমহাদেশে নারীরা কিন্তু ইউরোপের নারীদের আগেই ভোটাধিকার পেয়েছিল। ইতিহাস ঘাটলে দেখা যায় নারীরা যুদ্ধে অংশ নিয়েছে, রানি হয়েছে, ট্যাক্স সংগ্রহ করেছে।
‘আধুনিক রাষ্ট্রে পুঁজিবাদের বিস্তার ঘটার সঙ্গে সঙ্গে নারীদের কাজের পরিধি বেড়েছে, কিন্তু নারীদের পণ্য হিসেবে দেখা হচ্ছে। তার কাজকে কাজ হিসেবে আমরা দেখিনি। নারীরা স্ত্রী, মা বা মেয়ে হিসেবে যে ভূমিকা পালন করে সেটিকেও অবমূল্যায়ন করা হয়।
‘কোনো নারী চাকরি করলেও তাকে আমরা প্রশ্ন করি তার স্বামী কী করে। সে যদি স্বামীর থেকে বেশি বেতন পায়, তাহলে পুরুষও হীনম্মন্যতায় ভোগে।’
সমাজের সাধারণ নারীদের অবস্থা বর্ণনা করতে গিয়ে জবি উপাচার্য বলেন, ‘অর্থনৈতিক ক্ষমতায়ন তো নারীদের অনেকেরই হয়েছে। গার্মেন্ট সেক্টর, চিংড়ি মাছের ঘের, কল-কারখানায় নারীরা কাজ করছে। এটি ভারত বা পাকিস্তানের চেয়ে অনেক বেশি। কিন্তু নারীর সামাজিক মর্যাদা কি বেড়েছে? এটা খুবই জটিল একটি বিষয়।
‘চরম দারিদ্র্যের শিকার নারীরা কোনো কিছু ভাবে না, বা ভাবার সুযোগ পায় না। তারা জানে তাদেরই কাজ করতে হবে, ক্ষুধা মেটাতে হবে। তারাই শিশুদের মুখে খাবার তুলে দিচ্ছে। সাধারণ নারীরা অনেক পরিশ্রমী। সামাজিক সমালোচনা গ্রাহ্য না করে তারা চ্যালেঞ্জের মোকাবিলা করছে। কিন্তু সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রক্রিয়ায় তাদের বাদ দেয়া হচ্ছে।’
নারীর সামাজিক নিরাপত্তার বিষয়ে সাদেক হালিম বলেন, ‘আমরা নারীর নিরাপদ চলাচল নিশ্চিত করতে পারিনি। বাংলাদেশে বা প্রবাসে যে পরিমাণ নারী কাজ করে সেখানেও আমরা দেখি যে নারীরা নিরাপদ নয়। এমনকি খুব নিকট আত্মীয়ের মাধ্যমে তারা ধর্ষণের শিকার হয়।’
তিনি বলেন, ‘তবে বাংলাদেশে দীর্ঘ সময় ধরে প্রধানমন্ত্রী নারী, স্পিকার নারী, বিরোধীদলীয় নেত্রী নারী। এবারকার কেবিনেটে একটি উল্লেখযোগ্য অংশ নারী মন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রী হয়ে আসছেন। এটা ইতিবাচক দিক।
‘সংখ্যার দিক থেকে নারীর অংশগ্রহণ অনেক বেশি, কিন্তু নারীর ক্ষমতায়ন বা সামাজিক মর্যাদার জায়গায় গুণগত মানের দিক থেকে কতটা বদলেছে সেটি বড় বিষয়। যখন নারীরা সিদ্ধান্ত গ্রহণে আসবে, নেতৃত্ব দেবে, তখনই বদলাবে সমাজ।’
আরও পড়ুন:আন্তর্জাতিক নারী দিবস আজ। প্রতি বছর ৮ মার্চ নারীর উন্নয়ন, ক্ষমতায়ন ও অধিকার প্রতিষ্ঠায় সারা বিশ্বে দিবসটি পালিত হয়।
এ বছর নারী দিবসে জাতিসংঘের প্রতিপাদ্য হল ‘নারীদের ওপর বিনিয়োগ করুন, দ্রুত উন্নতি আনুন।’ এর মাধ্যমে লিঙ্গ সমতা আনতে যে যথেষ্ট অর্থ বিনিয়োগ করা হচ্ছে না সেই বিষয়টাতে মনোযোগ দেয়া হয়েছে।
আন্তর্জাতিক নারী দিবসের এ বছরের থিম ‘ইনস্পায়ার ইনক্লুশন’, যার লক্ষ্য হচ্ছে নারীদের জন্য এমন পরিবেশ তৈরি করা, যেখানে তারা সমাজে নিজের জায়গা সম্পর্কে জানতে পারে। এর সঙ্গে এ গল্পগুলো সামঞ্জস্যপূর্ণ।
দিবসটির উৎপত্তি ২০ শতকের গোড়ার দিকে, যা উত্তর আমেরিকা এবং ইউরোপের শ্রমিক আন্দোলন থেকে উদ্ভূত হয়েছিল। ১৯০৯ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রে প্রথম জাতীয় নারী দিবস পালন করা হয়।
পরবর্তীতে ১৯১০ সালে মার্কসবাদী তাত্ত্বিক এবং ‘নারী অধিকার’ আন্দোলনের বিশিষ্ট নেত্রী ক্লারা জেটকিন কোপেনহেগেনে আন্তর্জাতিক নারী সম্মেলনে আন্তর্জাতিক নারী দিবসের প্রস্তাব করেন। ধারণাটি সর্বসম্মতিক্রমে অনুমোদিত হয়েছিল ১৯১১ সালে। যেখানে ১০ লাখেরও বেশি অংশগ্রহণকারী নারীর অধিকারের পক্ষে ছিলেন।
আন্তর্জাতিক নারী দিবস শুধু নারীদের অর্জন উদযাপনের দিন নয়, এটি লিঙ্গ সমতা, এর প্রতিফলন, সমর্থন, এবং বিশ্বজুড়ে নারী এবং মেয়েদের জন্য বাধাগুলো ভেঙে ফেলার পদক্ষেপকে উৎসাহিত করে।
আরও পড়ুন:মাতৃগর্ভে থাকা অবস্থায় অনাগত শিশুর লিঙ্গ পরিচয় প্রকাশ করা যাবে না মর্মে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর গঠিত কমিটির প্রতিবেদন হাইকোর্টে দাখিল করা হয়েছে।
বিচারপতি নাইমা হায়দার ও বিচারপতি কাজী জিনাত হকের হাইকোর্ট বেঞ্চে সোমবার এই নীতিমালা দাখিল করেছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। আদালত এই নীতিমালার ওপর শুনানির জন্য মঙ্গলবার দিন ঠিক করেছে।
আদালতে রিটের পক্ষে ছিলেন অ্যাডভোকেট ইশরাত হাসান। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল অমিত দাশগুপ্ত।
দাখিল করা নীতিমালায় বলা হয়েছে- কোনো ব্যক্তি, হাসপাতাল, ডায়াগনস্টিক সেন্টার, ল্যাবরেটরি কোনো লেখা বা চিহ্ন বা অন্য কোনো উপায়ে শিশুর লিঙ্গ পরিচয় প্রকাশ করতে পারবে না। এ বিষয়ে কোনোরকম বিজ্ঞাপন দিতে পারবে না। সরকারের মন্ত্রণালয়গুলো ডাক্তার, নার্স, পরিবার পরিকল্পনা কর্মী, টেকনিশিয়ান কর্মীদের নেতিবাচক ফলাফল সম্পর্কে ট্রেনিং দেবে এবং নৈতিকতা ও পেশাগত আচরণ বিষয়ে ট্রেনিং দেবে।
নীতিমালায় আরও বলা হয়েছে- হাসপাতাল, ডায়াগনস্টিক সেন্টারসহ মেডিক্যাল সেন্টারগুলো এ সংক্রান্ত সব ধরনের টেস্টের ডাটা সংরক্ষণে রাখবে। হাসপাতাল, ডায়াগনস্টিক সেন্টারসহ মেডিক্যাল সেন্টারগুলো ডিজিটাল ও প্রিন্ট মাধ্যমে লিঙ্গ সমতা এবং কন্যাশিশুর গুরুত্ব তুলে ধরে বিভিন্ন মেসেজ প্রচার করবে।
এর আগে ২০২০ সালের ৩ ফেব্রুয়ারি মাতৃগর্ভে থাকা অবস্থায় অনাগত শিশুর লিঙ্গ পরিচয় প্রকাশ রোধে নীতিমালা তৈরি করতে রুল জারি করে হাইকোর্ট।
বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের হাইকোর্ট বেঞ্চ ওই রুল জারি করেছিলেন।
রুলে অনাগত শিশুর লিঙ্গ পরিচয় রোধে নীতিমালা বা নির্দেশনা তৈরি করতে বিবাদীদের ব্যর্থতা কেন অবৈধ ও আইনগত কর্তৃত্ব বহির্ভূত ঘোষণা করা হবে না এবং অনাগত শিশুর লিঙ্গ পরিচয় নির্ধারণে নীতিমালা তৈরি করতে বিবাদীদের কেন নির্দেশ দেয়া হবে না তা জানতে চাওয়া হয়।
হাইকোর্টের ওই রুলের পর নীতিমালা তৈরির জন্য কমিটি গঠন করে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
এর আগে ২০২০ সালের ২৬ জানুয়ারি গর্ভের শিশুর লিঙ্গ পরিচয় জানার উদ্দেশ্যে পরীক্ষা ও লিঙ্গ পরিচয় প্রকাশ বন্ধে নির্দেশনা চেয়ে জনস্বার্থে রিট করেন অ্যাডভোকেট ইশরাত হাসান।
প্রথমবারের মতো কৃষ্ণাঙ্গ কোনো ব্যক্তিকে প্রেসিডেন্ট হিসেবে নিয়োগ দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্বখ্যাত উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটি।
স্থানীয় সময় শুক্রবার ক্লদিন গেকে নিয়োগ দেয় প্রতিষ্ঠানটি। বিশ্ববিদ্যালয়টিকে নেতৃত্ব দেয়া দ্বিতীয় নারী ক্লদিন।
সিএনএনের প্রতিবেদনে বলা হয়, ম্যাসাচুসেটসের গভর্নর ও হার্ভার্ড গ্র্যাজুয়েট মাউরা হ্যালি শুক্রবার বিকেলে দেয়া ভাষণে প্রেসিডেন্ট হিসেবে ক্লদিনের নিয়োগের গুরুত্ব তুলে ধরেন।
তিনি বলেন, ‘প্রেসিডেন্ট গে, প্রেসিডেন্ট হিসেবে আপনার দায়িত্বপ্রাপ্তি সত্যিই ঐতিহাসিক। আপনার প্রতি আমার শ্রদ্ধা ও সমর্থন।’
প্রেসিডেন্ট পদে ব্যাপক অনুসন্ধানের পর হার্ভার্ডের প্রধান নিয়ন্ত্রক বোর্ড হার্ভার্ড করপোরেশন ক্লদিন গেকে নিয়োগ দেয়।
১৬৪০ সালে প্রতিষ্ঠিত হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩০তম প্রেসিডেন্ট হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয় ক্লদিনকে। তিনি ১৯৯৮ সালে সরকার বিষয়ে হার্ভার্ড থেকে পিএইচডি ডিগ্রি নেন। ২০০৬ সালে প্রতিষ্ঠানটিতে শিক্ষকতা শুরু করেন তিনি।
এর আগে কলা ও বিজ্ঞান অনুষদের ডিন হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন ক্লদিন। তিনি রাজনৈতিক আচরণের ওপর শীর্ষস্থানীয় বিশেষজ্ঞ।
২০১৭ সালে ‘ইনইকোয়ালিটি ইন আমেরিকা ইনিশিয়েটিভ’ নামের উদ্যোগের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারপারসন ছিলেন তিনি। এ উদ্যোগের উদ্দেশ্য সামাজিক ও অর্থনৈতিক অসাম্য নিয়ে গবেষণা।
আরও পড়ুন:লন্ডনে একটি উচ্চ পর্যায়ের প্যানেল আলোচনার বক্তারা মেরিন একাডেমিতে নারীদের অন্তর্ভুক্ত করাসহ মেরিটাইম শিল্পে নারীদের উৎসাহিত করার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বের প্রশংসা করেছেন।
লন্ডনের বাংলাদেশ হাইকমিশনের উদ্যোগে সম্প্রতি ইন্টারন্যাশনাল মেরিটাইম অর্গানাইজেশনে (আইএমও) ‘এমপাওয়ারিং উইমেন ইন মেরিটাইম অ্যান্ড ওশান ডিপ্লোম্যাসি’ শীর্ষক এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। সূত্র: ইউএনবি
যুক্তরাজ্যে বাংলাদেশের হাইকমিশনার সাইদা মুনা তাসনিম আলোচনায় সভাপতিত্ব করেন। তিনি আইএমও-তে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি এবং উইমেন ইন ডিপ্লোম্যাসি নেটওয়ার্ক (ডব্লিউডিএন), লন্ডনের সভাপতির দায়িত্বে নিয়োজিত।
বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূত, হাইকমিশনার, আইএমও-তে নিয়োজিত স্থায়ী প্রতিনিধি, ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও বিশেষজ্ঞসহ ১০০ জনেরও বেশি প্রতিনিধি এতে অংশ নেন।
বৈশ্বিক সামুদ্রিক শিল্পে নারীদের কম উপস্থিতির কথা তুলে ধরে হাইকমিশনার তাসনিম বলেন, বিশ্বব্যাপী ১ দশমিক ২ মিলিয়ন সনদপ্রাপ্ত নাবিকের মধ্যে নারী মাত্র ১ দশমিক ২৮ শতাংশ। অন্যদিকে ক্রুজ শিল্পে শ্রমশক্তির মাত্র ২ শতাংশ নারী।
হাইকমিশনার বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মেরিন ইন্ডাস্ট্রিতে নারী ক্যাডেট নিয়োগের দূরদর্শী সিদ্ধান্তের জন্য গর্ব বোধ করি। প্রধানমন্ত্রীর দূরদর্শী নেতৃত্বের কারণে নেভিগেশন অফিসার, মেরিন ইঞ্জিনিয়ার এমনকি ক্যাপ্টেনের মতো সিনিয়র ম্যানেজমেন্ট পদসহ বিভিন্ন ভূমিকার জন্য বার্ষিক ১০০ জনেরও বেশি মহিলা নাবিক নিয়োগ করা হয়।
‘এই রূপান্তরমূলক প্রচেষ্টাগুলো ঐতিহ্যগতভাবে পুরুষ-প্রধান সামুদ্রিক শিল্পে লিঙ্গ বৈচিত্র্যের প্রচারে উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলেছে।’
দূত নারী-পুরুষ সমতা বাড়াতে ও সামুদ্রিক খাতে নারীদের কণ্ঠ জোরদার করতে বিআইএমসিওসহ আইএমও সচিবালয়, আইএমও-এর সহযোগী সদস্য, উইমেনস ইন্টারন্যাশনাল শিপিং অ্যান্ড ট্রেডিং অ্যাসোসিয়েশন (ডব্লিউআইএসটিএ) ইন্টারন্যাশনাল, উইমেন ইন মেরিটাইম অ্যাসোসিয়েশন (ডব্লিউআইএমএএস) এবং নেতৃস্থানীয় শিপিং শিল্প সমিতিগুলোর সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সহযোগিতায় কাজ করার জন্য ডাব্লিউডিএন-এর দৃঢ় প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেন।
অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের পাশাপাশি বিশ্বব্যাপী নারী নাবিকসহ নাবিকদের অবদানের ওপর বাংলাদেশ হাইকমিশনের তৈরি একটি ডকুমেন্টারি প্রদর্শন করা হয়, যা অংশগ্রহণকারীদের বিশেষ মনোযোগ আকর্ষণ করে ও প্রশংসিত হয়।
উচ্চ পর্যায়ের এই আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য দেন- লিগ্যাল অ্যাফেয়ার্স অ্যান্ড এক্সটারনাল রিলেশনস ডিভিশনের ডিরেক্টর ডোরোটা লস্ট সিমিনস্কা, যুক্তরাজ্যে মালদ্বীপের হাইকমিশনার ড. ফারাহ ফয়জল, জর্জিয়ার আইএমও-এর রাষ্ট্রদূত ও জনসংযোগ সোফি কাস্ত্রাভা, অ্যান্টিগুয়া ও বারমুডার হাইকমিশন কারেন-মাই হিল ওবিই, স্টেট ডিপার্টমেন্ট ফর শিপিং অ্যান্ড মেরিটাইম কেনিয়ার প্রিন্সিপাল সেক্রেটারি রাষ্ট্রদূত ন্যান্সি ডব্লিউ কারিগিথু, আইএমওর মার্শাল আইল্যান্ডের টেকনিক্যাল অ্যাডভাইজার ও কার্গোস অ্যান্ড কন্টেইনার ক্যারেজ অন আইএমও সাব-কমিটির চেয়ার মেরিয়ান অ্যাডামস, আইএমওতে আর্জেন্টিনার জনসংযোগ এবং ইউএস জারেড ব্যাংকসের জনসংযোগ ফার্নান্দা মিলিশে, সৌদি আরবের এপিআর হায়াত আল ইয়াবিস এবং এডিটর অব ম্যাগাজিন লন্ডনের সম্পাদক এলিজাবেথ স্টুয়ার্ট।
এয়ারপোর্ট আর্মড পুলিশ ব্যাটলিয়নে (এপিবিএন) দেশে প্রথমবারের মতো নারী পুলিশ সদস্যদের ডগ হ্যান্ডলার হিসেবে গড়ে তোলা হচ্ছে।
সাতজন নারী পুলিশ সদস্য বেসিক কেনাইন হ্যান্ডলার ট্রেনিং কোর্সে অংশ নিয়ে নতুন এ যুগের সূচনা করেছেন।
নারীদের প্রশিক্ষক হিসেবে কাজ করেছেন যুক্তরাজ্য ও নিউজিল্যান্ডের পেশাদার ডগ স্কোয়াড প্রশিক্ষক টনি ব্রাইসন ও মেলিন ব্রডউইক।
ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাস ও এয়ারপোর্ট এপিবিএনের যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত এ প্রশিক্ষণ কর্মসূচিটি নারী পুলিশ সদস্যরা সফলতার সঙ্গে শেষ করেছেন।
প্রশিক্ষণপ্রাপ্তদের হাতে বৃহস্পতিবার সকালে সমাপনী সনদ তুলে দেন এয়ারপোর্ট এপিবিএন অধিনায়ক অতিরিক্ত ডিআইজি তোফায়েল আহম্মদ, হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের নির্বাহী পরিচালক গ্রুপ ক্যাপ্টেন মোহাম্মদ কামরুল ইসলাম ও ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা।
এপিবিএনের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (মিডিয়া) মোহাম্মদ জিয়াউল বলেন, ‘২০১৭ সালে দুইটি ল্যাবরেডর, দুইটি জার্মান শেফার্ড ও চারটি বেলজিয়ান ম্যালিনয়েস জাতের কুকুর এবং ১৬ জন হ্যান্ডলার নিয়ে এয়ারপোর্ট আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের কেনাইন ইউনিট যাত্রা শুরু করে। শুধু বিমানবন্দরের নিরাপত্তা রক্ষায় ডেডিকেটেড এই ডগ স্কোয়াড বিমানবন্দরে আসা যাত্রী, সহযাত্রী এবং তাদের ব্যাগেজ স্ক্রিনিংয়ে ব্যবহৃত হচ্ছে। এ ছাড়াও ক্যানোপি নিরাপত্তা, পার্কিং এরিয়া এবং যানবাহনে বিস্ফোরক পদার্থের উপস্থিতি সার্চ, ব্যাগেজ বেল্ট এলাকার নিরাপত্তা রক্ষা এবং ভিভিআইপি নিরাপত্তা রক্ষায় কাজ করে যাচ্ছে।’
এয়ারপোর্ট আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের ডগ স্কোয়াডে ২০২৫ সালের মধ্যে কুকুরের সংখ্যা ৬৬টি করার পরিকল্পনা হাতে নেয়া হয়েছে বলে জানান জিয়াউল হক।
তিনি বলেন, ‘তৃতীয় টার্মিনালের সম্ভাব্য বিশাল অপারেশনের কথা মাথায় রেখে এই পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। ২০২৩ সালের মধ্যে ব্রিটেন এবং নেদারল্যান্ডস থেকে আরও অন্তত ১৫টি ডগ এই স্কোয়াডে যুক্ত হবে। বর্তমানে ভগগুলো এক্সপ্লোসিভ সার্চের জন্য প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত হলেও অচিরেই নারকোটিকস ডগ, ট্রাকিং ডগ, কারেন্সি শিফিং ডগও এই বহরে যুক্ত হবে। এ সকল ট্রেনিংয়ে কারিগরি ও লজিস্টিক সাপোর্ট দিয়ে এয়ারপোর্ট আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নকে সহায়তা করবে ঢাকার ইউএস অ্যাম্বাসি।’
পরিপূর্ণ ডগ স্কোয়াড বিমানবন্দরে নাশকতা, মাদক চোরাচালান, স্বর্ণ চোরাচালন, মুদ্রা পাচার রোধে অসামান্য ভূমিকা রাখতে পারে বলে জানান অনুষ্ঠানে উপস্থিত আলোচকরা।
মন্তব্য