ছয় মাসের মধ্যে চীনের সাংহাই বা থাইল্যান্ডের ব্যাংকক শহরের মতো ঢাকার বিমানবন্দর সড়কটি দৃষ্টিনন্দন করে ডিজিটাল সড়কে রূপান্তরের কাজ শুরু হয় ২০১৭ সালের শুরুতে।
তবে ২০২১ সালের জুন মাসের শেষ দিকে এসেও শেষ হয়নি ‘বনানী ওভারপাস থেকে বিমানবন্দর মোড় সৌন্দর্যায়ন’ শীর্ষক প্রকল্পের কাজ। কবে নাগাদ কাজ শেষ হবে, তাও বলতে পারছেন না সংশ্লিষ্টরা।
চীনের ফুজহৌ রিয়েলিসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সহায়তায় এ কাজ করছে ভিনাইল ওয়ার্ল্ড গ্রুপ নামের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। বিতর্কের মুখে কয়েক বছর আগে প্রকল্পের আওতায় বনসাই লাগানোর কাজ বন্ধ করে দেয় তারা।
তবে বনানী থেকে বিমানবন্দর পর্যন্ত ছয় কিলোমিটারে চলতে থাকে শোভাবর্ধন ও ডিজিটাল সড়কে রূপান্তরের কাজ।
প্রকল্প বাস্তবায়ন সংশ্লিষ্টরা বলছেন, হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের থার্ড টার্মিনাল ও ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ প্রকল্প চলমান হওয়ায় সৌন্দর্যবর্ধন প্রকল্পের কাজ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। এই দুটি মেগা প্রকল্প শেষ না হওয়া পর্যন্ত সড়কটিকে পূর্ণাঙ্গ ডিজিটাল রূপ দেয়া ও এর সৌন্দর্যবর্ধন সম্ভব হচ্ছে না।
বিমানবন্দরের থার্ড টার্মিনালের কাজ শেষ হওয়ার কথা ২০২৩ সালের জুনে। আর ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের (বিমানবন্দর থেকে তেজগাঁও পর্যন্ত) কাজ শেষ হওয়ার কথা ২০২২ সালের মার্চ থেকে এপ্রিলে।
এমন পরিস্থিতিতে ২০২৩ সালের জুন মাসের আগে সৌন্দর্যবর্ধন প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার কোনো সুযোগ নেই বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
নিউজবাংলাকে তারা জানান, ২০১৬ সালের জুলাইয়ে র্যাডিসন হোটেলের সামনে শুরু হয় সৌন্দর্যবর্ধনের পাইলট প্রকল্প। সেটি সফল হওয়ার পর ২০১৭ সালের জানুয়ারিতে ‘বনানী ওভারপাস থেকে বিমানবন্দর মোড় সৌন্দর্যায়ন প্রকল্প’ নামের এই প্রকল্প শুরু হয়। ছয় মাসের মধ্যে শেষ করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে কাজ শুরু করে ভিনাইল ওয়ার্ল্ড গ্রুপ।
পুরো কাজ তত্ত্বাবধানে আছে সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর (সওজ)। ভিনাইল ওয়ার্ল্ড গ্রুপ তাদের করপোরেট সামাজিক দায়বদ্ধতা (সিএসআর) ফান্ড থেকে ৯০ কোটি টাকা ব্যয়ে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করার কথা জানায়।
সওজের সঙ্গে চুক্তি অনুযায়ী, বাস্তবায়নের পর ১০ বছর পর্যন্ত প্রকল্পের রক্ষণাবেক্ষণ করবে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটি। সে জন্য বছরে ৫ কোটি টাকা হিসাবে ১০ বছরে ৫০ কোটি টাকা ব্যয় হবে।
সব মিলিয়ে প্রকল্পটির জন্য সিএসআর ফান্ড থেকে ১৪০ কোটি টাকা ব্যয় করবে প্রতিষ্ঠানটি। বিনিময়ে প্রকল্প উদ্বোধনের পর থেকে সড়কের বিভিন্ন স্থানে তারা দোকান ও বিজ্ঞাপন ভাড়া দিয়ে ‘কিছুটা’ খরচ তুলবে।
সম্প্রতি বিমানবন্দর সড়ক ঘুরে দেখা যায়, বনানী লেভেল ক্রসিং থেকে শুরু করে বিমানবন্দর মোড় পর্যন্ত সড়কের পাশে বেশ কয়েকটি স্থানে যাত্রীছাউনি, বসার বেঞ্চ স্থাপন করা হয়েছে। সৌন্দর্যবর্ধনে বিভিন্ন ধরনের গাছও লাগানো হয়েছে।
এসবের ফাঁকে ফাঁকে বিভিন্ন অবকাঠামো গড়ে তোলা হয়েছে। কোথাও তোলা হয়েছে ভবনের ভিত্তি, কোথাও দেয়াল। এর কোনোটিতেই যত্নের কোনো ছাপ নেই।
ডিজিটাল সড়ক হিসেবে ওয়াইফাই সুবিধা থাকার কথা থাকলেও কোথাও ওয়াইফাই সংযোগ পাওয়া যায়নি। কোনো যাত্রীছাউনির কাজই শতভাগ শেষ হয়নি।
ছাউনিতে মোবাইল ফোনের চার্জের পয়েন্ট থাকলেও সেগুলো ঢাকা রয়েছে। কয়েকটি যাত্রীছাউনিতে রয়েছে ‘অত্যাধুনিক স্ক্রিন’, যেগুলোতে মাঝেমধ্যে বিজ্ঞাপন চলতে দেখা যায়।
প্রকল্প এলাকায় কয়েকটি পাবলিক টয়লেট রয়েছে। রয়েছে আরও কিছু অবকাঠামো। তবে টয়লেটসহ এসব অবকাঠামো তালাবদ্ধ।
নিকুঞ্জ গেটের কাছে নজরে পড়ে মুক্তিযুদ্ধের ওপর নির্মিত একটি ভাস্কর্য, যার নাম ‘বীর’। তবে আর্মি গলফ ক্লাবের সামনে শেওড়া এলাকায় এবং বিমানবন্দরের থার্ড টার্মিনালের সামনে কোনো ধরনের সৌন্দর্যবর্ধনের কাজ চোখে পড়েনি।
কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালের সামনে একটি ফার্মেসি এবং ঠিক বিপরীত পাশে একটি মিনি ফাস্টফুডের দোকান দেখা যায়।
ফার্মেসির এক কর্মচারী নিউজবাংলাকে বলেন, ‘এই দোকানের মালিক ভিনাইল ওয়ার্ল্ড গ্রুপের মালিক আবেদ মনসুর সাহেব। উনিই এটা দেখাশোনা করেন। আর ওই পাশের ফাস্টফুডের দোকানও মনসুর সাহেবের কাছের লোক চালায়।’
কুড়িল বিশ্বরোড বাসস্ট্যান্ডে কথা হয় সোহেল শাহরিয়ার নামে এক চাকরিজীবীর সঙ্গে।
তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমার কর্মস্থল কারওয়ান বাজার আর বাসা কুড়িল কাজী বাড়ি এলাকায়। প্রতিদিনই আমাকে এখানে এসে বাসে উঠতে হয়। গত কয়েক বছর ধরেই দেখছি এখানে অর্ধেক কাজ করে রাখা হয়েছে।
‘যাত্রীছাউনি বানাইছে। কিন্তু কাজ শেষ করে নাই। পত্রিকায় দেখেছিলাম এই রেললাইনের ওপর একটা ওভারব্রিজ হবে। কই? হইল না তো। কয়েক বছর আগেই শুনেছিলাম, ছয় মাসেই নাকি এটা ডিজিটাল সড়ক হবে। কই? হইল না তো।’
ছয় মাসে কাজ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও ৫৪ মাসেও কেন হয়নি, তা জানতে কথা হয় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ভিনাইল ওয়ার্ল্ড গ্রুপের সিইও আবেদ মনসুরের সঙ্গে।
নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ‘এই প্রকল্প এলাকার কিছু জায়গায় থার্ড টার্মিনালের কাজ চলছে। কিছু জায়গায় এলিভেটেড এক্সপ্রেসের কাজ চলছে। কিছু জায়গায় রেলের কাজও চলছে। এসব জায়গা ছাড়া আমাদের প্রায় সব কাজই শেষ।
‘ওই সব জায়গায় আমরা কাজ করছি না। কারণ আজ কাজ ধরলে কালই দেখা যাবে মেগা প্রকল্পের জন্য খোঁড়াখুঁড়ি শুরু হচ্ছে। এতে শুধু শুধু টাকার অপচয় ছাড়া আর কিছুই হবে না।’
ভিনাইল ওয়ার্ল্ড গ্রুপের সিইও আবেদ বলেন, ‘ওইগুলো হলো জাতীয় প্রকল্প। ওই প্রকল্প বন্ধ করে তো আর আমার এই ছোট প্রকল্পের কাজ করতে পারি না। তা ছাড়া ওই সব প্রকল্পের কর্তৃপক্ষ তাদের কাজ শুরু করার আগেই আমাদের জানিয়ে দিয়েছে কোথায় কোথায় তারা কাজ করবে। তাই ওই সব জায়গায় আমরা কাজ করিনি।
‘তবে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আমাদের কথা হয়েছে। তারা যখন উপরের গার্ডারের কাজ শেষ করবে, তখন তাদের আর নিচে কাজ থাকবে না। তখনই আমরা আমাদের কাজ শেষ করব।’
সব মিলিয়ে খুব সামান্য কিছু কাজ বাকি আছে বলে দাবি করেন তিনি।
আবেদ মুনসুর বলেন, ‘প্রকল্পটি আমরা আমাদের কোম্পানির সিএসআর ফান্ড থেকে বাস্তবায়ন করছি। তাই আমরা এখানে আমাদের লাভ-লোকসানের কথা ভাবি না।’
প্রকল্প বাস্তবায়নের আগেই দোকান ভাড়া আর বিজ্ঞাপন প্রচারের কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘ওই ফার্মেসিও আমাদের সিএসআর ফান্ডের টাকায় করা। এখানে কমন কিছু ওষুধ আছে, যেগুলো আমাদের সবারই প্রয়োজন হয়।
‘সেগুলো আমরা এখানে অনেক কম টাকায় বিক্রি করি। যে বিজ্ঞাপন ভাড়া পাই, তা আমাদের মোট বিনিয়োগের তুলনায় খুবই সামান্য। এটা লাভের জন্য করছি না।’
আবেদ মনসুর বলেন, ‘এখানে আমরা প্রকল্প বাস্তবায়ন করছি ৯০ কোটি টাকায়। বছরে ৫ কোটি টাকা ব্যয় হবে রক্ষণাবেক্ষণের জন্য।
‘মোট ১০ বছর এই রক্ষণাবেক্ষণ বাবদ আমাদের খরচ হবে ৫০ কোটি টাকা। সব মিলিয়ে আমাদের খরচ হবে ১৪০ কোটি টাকা। এসবই আমাদের কোম্পানির সিএসআর ফান্ডের।’
প্রকল্পের পুরো কাজ তত্ত্বাবধানে আছে সওজ। বিভাগের ঢাকা জোনের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী সবুজ উদ্দিন খান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে ও বিমানবন্দরের থার্ড টার্মিনালের কাজ চলার কারণে এসব এলাকায় খোঁড়াখুঁড়ি চলছে।
‘কোথাও পাইলিং হয়েছে, কোথাও পাইলিং হবে, যে কারণে সৌন্দর্যবর্ধন প্রকল্পের অনেক জায়গায় অর্ধেক কাজ হয়ে পড়ে আছে। এই খোঁড়াখুঁড়ির মধ্যে তো আর আমরা এই কাজ করতে পারি না। মেগা প্রকল্পগুলোর কাজ শেষ হলে আমরা এই কাজ এগিয়ে নেব।’
প্রকল্পের কাজ শেষ না হওয়ার আগেই দোকান চালু ও বিজ্ঞাপন প্রচারের জন্য ভিনাইল ওয়ার্ল্ড গ্রুপ অনুমতি নিয়েছে কি না, তা জানতে চাওয়া হয় সওজের প্রকৌশলীর কাছে।
জবাবে তিনি বলেন, ‘এতে ওইভাবে আমাদের অনুমোদন নেই। কিন্তু যেহেতু নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠান অনেক টাকা ইনভেস্ট করছে, তাই তারা এটা করছে মনে হয়।’
প্রকল্পে যা যা হওয়ার কথা
‘বনানী ওভারপাস থেকে বিমানবন্দর মোড় সৌন্দর্যায়ন প্রকল্প’ নামে বনানী লেভেল ক্রসিং থেকে বিমানবন্দর মোড় পর্যন্ত ছয় কিলোমিটার সড়কে ডিজিটাল সেবার সুবিধা রেখে অবকাঠামো স্থাপনের কথা রয়েছে।
এই সড়কের দুই পাশে বিভিন্ন স্থানে থাকবে ১২টি মিনি পাহাড়ি ঝরনা। ফুটপাতে থাকবে দৃষ্টিনন্দন ফুল, সবুজ পাতার বাহার।
বাসের জন্য অপেক্ষমাণ যাত্রীদের জন্য থাকবে ১২টি ডিজিটাল যাত্রীছাউনি, যেখানে থাকবে ওয়াইফাই ও মোবাইল চার্জের সুবিধা। থাকবে বিশুদ্ধ পানিও।
কয়েকটি ব্রেস্ট ফিডিং পয়েন্ট থাকবে সড়কের পাশে। থাকবে ডিজিটাল পুলিশ বক্সও।
নিকুঞ্জ থেকে বিমানবন্দর পর্যন্ত থাকবে সাইকেল লেন। ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন ও ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের চেতনার প্রকাশ থাকবে সড়কের তিনটি ভাস্কর্যে।
নির্দিষ্ট দূরত্বে থাকবে বিজ্ঞাপনের ডিজিটাল বিলবোর্ড, ডিজিটাল ডাস্টবিন, ডিজিটাল ট্রাফিক সাইন, স্বয়ংক্রিয় ধুলা পরিষ্কারের যন্ত্র, এলইডি স্ট্রিট লাইট, এলইডি অর্নামেন্টাল গার্ডেন লাইট।
নিকুঞ্জ অংশে শিশুদের জন্য থাকবে কিড জোন। পুরো সড়ক থাকবে ক্লোজড সার্কিট টেলিভিশন (সিসিটিভি) ক্যামেরার আওতায়।
নির্বাচন কমিশন থেকে জাতীয় নাগরিক পার্টিকে (এনসিপি) ‘শাপলা’ প্রতীক বরাদ্দ দিতে কোনো বাধা নেই বলে জানিয়েছেন সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মোহাম্মদ হোসেনসহ ১০১ জন আইনজীবী। বুধবার সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী আমিনা আক্তার লাভলী এবং লাবাবুল বাসার স্বাক্ষরিত বিবৃতিটি জানানো হয় এই মত।
বিবৃতিতে বাংলাদেশের সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৪(৩) এবং অন্যান্য বিদ্যমান আইন অনুসারে এনসিপির শাপলা প্রতীক বরাদ্দ পেতে কোনো আইনগত বাধা নেই বলে উল্লেখ করে বলা হয়, ১৯৭২ সালের অর্ডারের তৃতীয় তফসিল এবং ১৯৭২ সালের বিধিমালার পরিশিষ্ট-ক তে জাতীয় প্রতীকের নকশা অংকিত আছে। নকশা অনুযায়ী জাতীয় প্রতীক হচ্ছে লালচে এবং হলুদ রঙের যুগল বৃত্তের ভেতরে লালচে এবং হলুদ রঙে অংকিত পানির ওপর ভাসমান শাপলা ফুল, দু’পাশে দুটি ধানের শীষ, উপরে তিনটি সংযুক্ত পাট পাতা যার ঠিক দুই পাশে দুটি করে চারটি তারকার সন্নিবেশ ও সামষ্টিক রূপ। অর্থাৎ জাতীয় প্রতীকের নকশা এবং রঙ ১৯৭২ সালের অর্ডারের ৩য় তফসিল ও বিধিমালার পরিশিষ্ট-ক দ্বারা সুনির্দিষ্ট। তাছাড়া জাতীয় প্রতীকের শাপলাটি পানিতে ভাসমান কিন্তু এনসিপি ‘ভাসমান শাপলা’ প্রতীক হিসেবে চায়নি।
একাধিক রাজনৈতিক দলের প্রতীকে হিসেবে জাতীয় প্রতীকের উপাদান বরাদ্দ দেওয়ার নজির উপস্থাপন করে বিবৃতিতে বলা হয়, ধানের শীষ, শাপলা, পাটপাতা এবং তারকা আলাদা আলাদা করে চারটি ভিন্ন ভিন্ন বিষয়। আর এই চারের সমষ্টিই হচ্ছে জাতীয় প্রতীক, যা দুই রঙের দুটি বৃত্ত দ্বারা পরিবেষ্টিত। জাতীয় প্রতীকের উপাদানের মধ্যে দুইটি উপাদান ইতোমধ্যে দুইটি নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের প্রতীক হিসেবে বরাদ্দকৃত। সুতরাং প্রয়োজনীয় শর্ত পূরণসাপেক্ষে এনসিপির নিবন্ধিত হবার বিষয়ে নির্বাচন কমিশন আইন মোতাবেক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবে এবং প্রতীকের তালিকায় সংযোজনপূর্বক শাপলা প্রতীকটি এনসিপিকে বরাদ্দ দিবে বলে বিবৃতিদাতা আইনজীবীরা আশা প্রকাশ করেন।
ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড, উত্তরা সেন্টার, মেট্রো রেল স্টেশন, উত্তরা এবং বিজয় সরণিতে অগ্নিনির্বাপণ, উদ্ধার, প্রাথমিক চিকিৎসা ও বহির্গমন বিষয়ক মহড়া করেছে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স। ২৫ জুন সকাল ১১টায় উত্তরা সেন্টারে এবং বিকেল ৩টায় বিজয় সরণি সেন্টারে এই মহড়া অনুষ্ঠিত হয়। মহড়ায় ওয়াটার টেন্ডার, পাম্প ক্যারিং টেন্ডার, সিজার লিফট, অ্যাম্বুলেন্স ও স্নোরকেল গাড়িসহ বিভিন্ন সরঞ্জাম ব্যবহার করা হয়।
মেট্রো রেলে বা মেট্রো রেল স্টেশনে হঠাৎ করে অগ্নিদুর্ঘটনা সংঘটিত হলে কিভাবে যাত্রীদের সুরক্ষা দিতে হবে, কিভাবে অগ্নিনির্বাপণ করতে হবে, কিভাবে সাধারণ লোককে ইভাকুয়েট করতে হবে এবং আহত ব্যক্তিদের প্রাথমিক শুশ্রূষা প্রদান করে কিভাবে হাসপাতালে প্রেরণ করতে হবে মহড়ায় তার বাস্তব অনুশীলন দেখানো হয়। মহড়ায় ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের পাশাপাশি মেট্রোরেলের নিরাপত্তা কর্মী এবং ফায়ার সার্ভিসের স্থানীয় ভলান্টিয়াররা অংশগ্রহণ করেন। মহড়া চলাকালীন মেট্রোপলিটন পুলিশ ও ট্রাফিক পুলিশের সদস্যগণ যানবাহন নিয়ন্ত্রণসহ অন্যান্য নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করেন।
মহড়া শেষে বক্তব্য প্রদান করেন ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডের পরিচালক (প্রশাসন) একেএম খায়রুল আলম। এ সময় গণমাধ্যমকর্মীদের ব্রিফ করেন এবং তাদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের ঢাকা বিভাগের উপপরিচালক জনাব মোঃ ছালেহ উদ্দিন। ব্রিফিংয়ে জানানো হয়, সচেতনতা সৃষ্টিসহ প্রকৃত দুর্ঘটনায় মেট্রো রেল কর্তৃপক্ষ এবং যাত্রী সাধারণের কার কী করণীয় সে সম্পর্কে অবহিত করার লক্ষ্যে এ প্রশিক্ষণ মহড়ার আয়োজন করা হয়েছে। এর ধারাবাহিকতা অব্যাহত থাকবে।
মহড়া দুটি পরিচালনা করেন ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স, ঢাকার সহকারী পরিচালক কাজী নজমুজ্জামান। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন মিডিয়া সেলের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোঃ শাজাহান শিকদার ও সিনিয়র স্টেশন অফিসার একেএম রায়হানুল আশরাফ। এ সময় ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড এবং ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের জোন প্রধানগণসহ বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা উপস্থিত ছিলেন। খবর : ফায়ার সার্ভিস মিডিয়া সেল।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডে (এনবিআর) যৌক্তিক সংস্কারের দাবিতে আবারও তিন ঘণ্টার কলম বিরতি ও অবস্থান কর্মসূচি শুরু করেছেন কর্মকর্তারা ও কর্মচারীরা।
সোমবার (২৩ জুন) সকাল ৯টা থেকে আগারগাঁওয়ের এনবিআর ভবনে কাফনের কাপড় পরে এই কর্মসূচি শুরু করেন তারা।
এর আগে শনিবার (২১ জুন) এ কর্মসূচি ঘোষণা দেয় এনবিআর কর্মকর্তাদের সংগঠন এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদ।
কাউন্সিলের সভাপতি ও অতিরিক্ত কমিশনার হাসান মোহাম্মদ তারেক রিকাবদার এবং সাধারণ সম্পাদক ও অতিরিক্ত কর কমিশনার সহেলা সিদ্দিকা পুনরায় এনবিআরে ‘যুক্তিসংগত সংস্কার’ বাস্তবায়নের দাবি জানান।
তারা বলেন, এনবিআর চেয়ারম্যানকে অবিলম্বে অপসারণ করতে হবে, কারণ তার নেতৃত্ব সংস্কার প্রক্রিয়া শুধু বিলম্বিত হয়েছে।
এর আগেই তাকে এনবিআরের প্রধান কার্যালয়ে ‘অবাঞ্ছিত’ ঘোষণা করে এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদ।
গত ১৯ জুন গঠিত এনবিআর সংস্কার কমিটি নিয়েও অসন্তোষ প্রকাশ করেছে তারা।
এ প্রসঙ্গে তারা বলেন, রাজস্ব অধ্যাদেশ সংশোধনের লক্ষ্যে এনবিআরের কর, কাস্টমস ও ভ্যাট অনুবিভাগের ছয়জন সদস্য সমন্বয়ে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। কিন্তু উদ্বেগের বিষয়, এ কমিটিতে এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদের কোনো প্রতিনিধিকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি, এমনকি তাদের সঙ্গে কোনো আলোচনা পর্যন্ত করা হয়নি।
প্রসঙ্গত, ১২ মে জারি করা এক অধ্যাদেশে এনবিআর ও অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ (আইআরডি) বাতিল করে সরকার রাজস্ব নীতি বিভাগ এবং রাজস্ব ব্যবস্থাপনা বিভাগ নামে দুটি নতুন বিভাগ গঠন করে।
এরপর থেকেই এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদের ব্যানারে এনবিআর কর্মকর্তারা নানা ধরনের প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন করে আসছেন।
সংস্কার প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে গত ৩১ জুলাইয়ের মধ্যে সংশ্লিষ্ট অধ্যাদেশ সংশোধনের ঘোষণা দেয় সরকার। এরই ধারাবাহিকতায় সোমবার নতুন এই কমিটি গঠন করা হয়।
এদিকে, শিশুমেলা থেকে এনবিআর কার্যালয় পর্যন্ত রাজধানীর আগারগাঁও এলাকায় সব ধরনের সভা-সমাবেশ নিষিদ্ধ করেছে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)। রবিবার থেকে কার্যকর হওয়া নিষেধাজ্ঞা পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত বহাল থাকবে বলে এক গণবিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে।
আজ ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) নগর ভবনের সব কক্ষের তালা খুলে দেওয়া হবে। তবে প্রশাসক ও প্রকৌশলীদের কক্ষ তালাবদ্ধই থাকবে।
গতকাল রোববার দুপুরে নগর ভবনে এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানানো হয়। সেখানে বলা হয়, নাগরিক সেবার স্বার্থে আঞ্চলিক অফিসসহ সংশ্লিষ্ট দফতরগুলো চালু রাখা এবং কর্মরতদের নিজ নিজ দফতরে ফিরে গিয়ে দায়িত্ব পালনের আহ্বান জানানো হয়েছে।
আন্দোলনের সমন্বয়ক ও সাবেক সচিব মশিউর রহমান বলেন, ‘ঢাকাবাসীর পক্ষ থেকে আমরা স্থানীয় সরকার উপদেষ্টার সব ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করার জন্য প্রস্তুত। একই সঙ্গে নাগরিক সেবা নির্বিঘ্ন রাখতে সংশ্লিষ্ট সব বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নিজ নিজ দায়িত্ব পালনের আহ্বান জানাচ্ছি।’
তিনি আরও বলেন, ‘ইশরাক হোসেনের শপথ গ্রহণ না করিয়ে আদালত ও সংবিধান লঙ্ঘন করায় স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজিব ভূঁইয়ার অপসারণ দাবি করছি।’
মশিউর রহমান বলেন, ‘প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা, সচিব, স্বাস্থ্য বিভাগ, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগ, ভাণ্ডার ও ক্রয়, হিসাব ও অডিট, সমাজ কল্যাণ, আইন, রাজস্ব, সম্পত্তি, পরিবহন, বিদ্যুৎ, যান্ত্রিক, সংস্থাপন, নিরাপত্তা, জনসংযোগ, আইসিটি সেল, নগর পরিকল্পনা বিভাগ এবং আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তাদের নিজ নিজ দফতরে থেকে জন্ম-মৃত্যু সনদ, নাগরিক সনদ, ওয়ারিশ সনদ, প্রত্যয়নপত্র, ট্রেড লাইসেন্স ইস্যু ও নবায়ন, মশক নিধন, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, ডেঙ্গু-চিকুনগুনিয়া প্রতিরোধ এবং সড়কবাতি সচল রাখার মতো গুরুত্বপূর্ণ নাগরিক সেবা নিশ্চিত করতে হবে।’
তিনি হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, ‘কোনও দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা, সাবেক সরকারের দোসর বা ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের দোসর নগরভবন বা আঞ্চলিক কার্যালয়ে প্রবেশ করতে পারবে না। দেখামাত্র প্রতিহত করা হবে। কোনও কর্মকর্তার দায়িত্ব পালনে গাফিলতি করলে তার বিরুদ্ধেও কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
উল্লেখ্য, গত ১৪ মে নগর ভবনের বেশ কিছু কক্ষে শিকল দিয়ে তালা ঝুলিয়ে দেওয়া হয়েছিল। সেই তালা খুললেও প্রশাসক ও প্রকৌশলীদের কক্ষ বন্ধই থাকবে। আন্দোলনকারীরা জানিয়েছেন, নতুন করে কেউ নিয়োগ দিতে চাইলে সেটিও প্রতিহত করা হবে।
১৮তম শিক্ষক নিবন্ধনের মৌখিক পরীক্ষায় (ভাইভা) অংশগ্রহণ করা সব প্রার্থীকে সনদ প্রদানের দাবিতে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ হয়েছে। এ সময় আন্দোলনকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে জলকামান ও সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করেছে পুলিশ।
রবিবার (২২ জুন) বেলা সাড়ে ১১টার দিকে রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে এ ঘটনা ঘটে। এর ফলে ওই এলাকা উত্তপ্ত হয়ে ওঠে।
এর আগে, সকাল ১১টার দিকে আন্দোলনকারীরা প্রেসক্লাবের সামনে থেকে অগ্রসর হওয়ার চেষ্টা করলে পুলিশ তাদের বাধা দেয়। এ সময় পুলিশ বারবার সরে যেতে বললেও স্লোগান দিতে থাকেন আন্দোলনকারীরা। পরে সাড়ে ১১টার দিকে তাদের ওপর জলকামান ও সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করে ছত্রভঙ্গ করে দেওয়া হয়।
শাহবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) খালিদ মনসুর জানান, ঘটনাস্থল থেকে তিনজনের সঙ্গে কথা বলছে পুলিশ এবং প্রেসক্লাব ফাঁড়িতে বসেই তাদের কথা হবে।
আন্দোলনকারীরা জানান, ১৮তম শিক্ষক নিবন্ধনের প্রিলি ও লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার পরও ভাইভায় রেকর্ড ২০ হাজার ৬৮৮ জন প্রার্থীকে ইচ্ছে করে ফেল করিয়ে দেওয়া হয়েছে।
তাদের দাবি, ফলাফল পুনর্মূল্যায়ন করে ভাইভায় অংশ নেওয়া সবাইকে শিক্ষক নিবন্ধন সনদ দিতে হবে।
এর পরিপ্রেক্ষিতে গত ১৫ জুন তারা এনটিআরসির সামনে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করেন।
রাজধানীর শেরেবাংলা নগর থানার শিশুমেলা থেকে আগারগাঁও রোডের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) কার্যালয় ও আশপাশের এলাকায় সব ধরনের সভা-সমাবেশ নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
আগামীকাল রবিবার (২২ জুন) থেকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত এই নির্দেশনা কার্যকর হবে। শনিবার (২১ জুন) ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) এক গণবিজ্ঞপ্তিতে এমন তথ্য দেওয়া হয়েছে।
এতে বলা হয়েছে, ‘শেরেবাংলা নগর থানার অন্তর্গত শিশুমেলা থেকে আগারগাঁও রোডে অবস্থিত এনবিআর কার্যালয় (জাতীয় রাজস্ব বোর্ড), বিডা কার্যালয় (বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ) ও আশেপাশের এলাকায় সব ধরনের সভা, সমাবেশ, মিছিল, শোভাযাত্রা ও বিক্ষোভ প্রদর্শন ইত্যাদি নিষিদ্ধ করা হলো।’
ডিএমপি জানিয়েছে, জনশৃঙ্খলা রক্ষার স্বার্থে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ অধ্যাদেশের ২৯ ধারায় অর্পিত ক্ষমতাবলে আগামী রবিবার (২২ জুন) সকাল ৬টা থেকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত এই নির্দেশনা কার্যকর থাকবে।
গণবিজ্ঞপ্তিতে সই করেন ডিএমপি কমিশনার শেখ সাজ্জাত আলী।
টানা চতুর্থ দিনের মতো ‘সরকারি চাকরি (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৫’ বাতিলের দাবিতে সচিবালয়ে আন্দোলন ও বিক্ষোভ করছেন সরকারি কর্মচারীরা। অধ্যাদেশটি বাতিল না হলে আরও কঠোর আন্দোলনে যাওয়ার ঘোষণাও দিয়েছেন তারা।
বৃহস্পতিবার (১৯ জুন) সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ ও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের ভবনের নিচে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের কর্মচারীরা একত্রিত হয়ে আন্দোলন ও বিক্ষোভ করেন কর্মচারীরা। পরে সচিবালয়ের ভিতরে বিক্ষোভ মিছিল করেন তারা।
এ সময় বাংলাদেশ সচিবালয় কর্মচারী ঐক্য ফোরামের কো-চেয়ারম্যাননুরুল ইসলাম জানান, চাকরি অধ্যাদেশ পুরোপুরি বাতিল না হওয়া পর্যন্ত এ আন্দোলন চলবে।
গত ২২ মে উপদেষ্টা পরিষদে অনুমোদনের পর সরকারি চাকরি অধ্যাদেশের খসড়া বাতিলের দাবিতে গত ২৪ মে আন্দোলনে নামেন সচিবালয়ের কর্মচারীরা।
কর্মচারীদের আন্দোলনের মধ্যেই ২৫ মে রাতে এই অধ্যাদেশ জারি করে সরকার। অধ্যাদেশ অনুযায়ী, চার ধরনের শৃঙ্খলা ভঙ্গের অপরাধের জন্য বিভাগীয় মামলা ছাড়াই শুধু কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়ে চাকরিচ্যুত করা যাবে।
সরকারি কর্মচারীরা অধ্যাদেশটিকে নিবর্তনমূলক ও কালো আইন হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। । এটি বাতিল করার জন্য সচিবালয়ে বিক্ষোভ মিছিল, কর্মবিরতি, অবস্থান কর্মসূচি ছাড়াও কয়েকজন উপদেষ্টাকে স্মারকলিপি দিয়েছেন তারা।
মন্তব্য