রাজধানীর ওয়াসপুরের বাসিন্দা অপূর্ব রায় কাজ করেন একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে। করোনার কারণে প্রায়ই অফিসের বিভিন্ন কাজ করতে হয় বাসা থেকে। এ কারণে আগের চেয়ে তার ইন্টারনেটনির্ভরতা বেড়েছে কয়েক গুণ।
কয়েক মাস আগে এলাকার একটি ইন্টারনেট সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে ১ হাজার টাকা সার্ভিস চার্জ দিয়ে ইন্টারনেট সংযোগ নিয়েছেন তিনি। এরপর থেকে প্রতি মাসে ৫ এমবিপিএসের (মেগাবাইট-পার-সেকেন্ড) লাইন চালাতে তার গুনতে হচ্ছে ৭৫০ টাকা।
সম্প্রতি সরকার সারা দেশে ইন্টারনেটের মূল্য ৫০০ টাকা বেঁধে দিয়েছে। কিন্তু এখনও আগের দামই দিয়ে যাচ্ছেন তিনি।
অপূর্ব নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমি যে লাইনটি ব্যবহার করছি, এর গতি খুব খারাপ। দিনে অন্তত ৪৫ থেকে ৫০ মিনিটের জন্য কোনো ইন্টারনেট থাকে না। তার ওপর যদি কখনও বৃষ্টি বা ঝড় হয়, তাহলে সারা দিনই কোনো সংযোগ পাওয়া যায় না।’
ইন্টারনেট সেবা নিশ্চিত করতে ৬ জুন সারা দেশে ইন্টারনেটের অভিন্ন দাম বেঁধে দিয়েছে সরকার।
ঘোষণা অনুযায়ী, এখন থেকে সারা দেশে পাঁচ এমবিপিএস শেয়ার্ড ব্যান্ডউইথ প্যাকেজের সর্বোচ্চ মূল্য ৫০০ টাকা, ১০ এমবিপিএস প্যাকেজের মূল্য সর্বোচ্চ ৮০০ টাকা এবং ২০ এমবিপিএসের মূল্য সর্বোচ্চ ১২০০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।
বিটিআরসি বলছে, ঘোষণার পর থেকে কার্যকর হবে এ রেট। কিন্তু সার্ভিস প্রোভাইডাররা বলছেন, সরকারের নির্দেশনা এখনও হাতে পাননি তারা। আর এ কারণে গ্রাহকদের আগের দামেই ইন্টারনেট বিল শোধ করতে হচ্ছে।
ইন্টারনেট সংযোগ ব্যবহারে রাজধানীর একেক এলাকায় একেক দাম দেখা গেছে।
রাজধানী মিরপুরের রূপনগর আবাসিক এলাকার আরামবাগ হাউজিং সোসাইটিতে বসবাসকারী বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী ইমরোজ শাহরিয়ার অবশ্য পাঁচ এমবিপিএসের জন্য আগে থেকেই ৫০০ টাকা দিয়ে আসছেন। তিনি বলেন, ‘সমস্যা বলতে মাঝে মধ্যে বৃষ্টি হলে স্পিড কমে যায়, গভীর রাত বা ভোর ছাড়া ডাউনলোড করতে খানিকটা সময় লাগে। তবে কাস্টমার সার্ভিস তুলনামূলক ভালো।’
তবে উত্তরা ১১ নম্বর সেক্টরের বাসিন্দা মেহরিন জাহানের ভাগ্য ততটা ভালো নয়। তিনি ৫ এমবিপিএসের ইন্টারনেট সেবার জন্য মাসে দিচ্ছেন ১ হাজার ৪৯৯ টাকা। তার ওপর সেবার মান নিয়ে তার নানান অভিযোগ। তিনি বলেন, ‘আমরা মাত্র দুইটা মোবাইল ব্যবহার করি। এর বাইরে বাচ্চা জুমে ক্লাস করে। এতেই নেট খুব স্লো কাজ করে। ফেসবুকের ভিডিও দেখার সময়ও বাফারিং করে মাঝে মাঝে।’
রাজধানীর কলাবাগানের ফার্স্ট লেনের বাসিন্দা রবিউল্লাহ রবির বাসায় ১০ এমবিপিএসের সংযোগ চলে। এর জন্য মাসে দিতে হয় ৭০০ টাকা।
নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ‘প্রায়ই সংযোগ থাকে না। সামান্য ঝড়বৃষ্টিতেও নেট চলে যায়। সবচেয়ে বড় সমস্যা যেটা, রাত ১০টার পরে নেটের কোনো সমস্যা হলে তা ঠিক করতে অধিকাংশ সময়ে পরদিন পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়।’
গ্রাহকদের এসব অভিযোগের ব্যাপারে জানতে চাইলে মোহাম্মদপুরের বছিলা এলাকায় ইন্টারনেট সেবাপ্রদানকারী মাজেদা নেটওয়ার্ক লিমিটেডের স্বত্বাধিকারী মো. ইশরাফিল বলেন, ‘আমাদের কাছে সরকার থেকে এখনও কোনো লিখিত নির্দেশনা আসেনি। আগে থেকেই গ্রাহকের কাছ থেকে আমরা যে বিল নিয়ে থাকি, তা অনেক কম।’
ইন্টারনেটগ্রহীতা ও ব্যবসায়ীদের দাবি, এই ব্যবসা এখন স্থানীয় রাজনৈতিক নেতা-কর্মীদের দখলে থাকায় গ্রাহকদের সুবিধা-অসুবিধাকে তারা পাত্তা দেন না। গ্রাহকরা এক কথায় তাদের হাতে জিম্মি।
মিরপুর ১ নম্বরের বাসিন্দা তৌফিক হাসান বলেন, ‘আমি যেখানে থাকি, সেখানে একটি প্রাইভেট কোম্পানি নেট ও ডিশের ব্যবসা করে। কোম্পানির নাম রওশন আরা টেলিকম। মূলত এই কোম্পানিটি এলাকার কাউন্সিলরের। তাই অন্য কোনো কোম্পানি এখানে ব্যবসা করতে পারে না।
‘কোনো ধরনের ফরম্যাট নেই এদের কাছে যে কত এমবিপিএসে কত টাকা। যার থেকে যা পারে, তাই তারা রাখছে। আমি প্রথমে দেড় এমবিপিএস নিয়েছিলাম ৫০০ টাকায় আর নেটের তার কেনা বাবদ ১ হাজার টাকা দিয়েছিলাম। এটা ২০১৩ সালের কথা। দীর্ঘদিন পর ২০১৮ সাল থেকে আমার কাছ থেকে নেয়া হচ্ছে ৬০০ টাকা। এমবিপিএস বলে বাড়িয়ে আড়াই এমপিপিএস করা হয়েছে। কিন্তু দুঃখের বিষয় আমি এত স্পিড কখনোই পাইনি।’
তার দাবি, এই এলাকায় অন্য কোনো প্রতিষ্ঠান ব্যবসা করতে পারছে না। তাই বাধ্য হয়ে এই প্রতিষ্ঠান থেকেই সেবা নিতে হচ্ছে তাকে।
ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (আইএসপিএবি) এর মহাসচিব এমদাদুল হক নিউজবাংলাকে বলেন, ‘প্রান্তিক পর্যায়ে তিনটা প্রাইস ঠিক করেছে সরকার। ঢাকা শহরের গ্রাহকেরা আগে থেকেই এই সেবা পাচ্ছিল। ঢাকা শহরে ট্রান্সমিশন খরচ কম। গ্রাহকেরা ৫ এমবিপিএস আগে থেকেই ৫০০ বা ৬০০ টাকায় পাচ্ছেন।
‘১০ এমবিপিএস পাচ্ছেন ৭০০ থেকে ৯০০ টাকার মধ্যে। সমস্যাটা হচ্ছে ঢাকার বাইরে। সারা দেশে ইন্টারনেট সংযোগের অবকাঠামো গড়ে দেয়ার কথা নেশনওয়াইড টেলিকম্যুনিকেশন ট্রান্সমিশন নেটওয়ার্ক (এনটিটিএন) কোম্পানিগুলোর। এই ট্রান্সমিশন আমার এখতিয়ারে না।’
তিনি বলেন, ‘এনটিটিএন কোম্পানিগুলোর কাছ থেকে আমরা ট্রান্সমিশন ভাড়া নিয়ে ইউজারের কাছে চলে যাই। আমরা এই যে ভাড়াটা নেই, এটা অনেক বেশি। এক এমবিপিএস ইন্টারন্যাশনাল ব্যান্ডউইথ আমরা কিনি ৪০০ টাকায়। ঢাকা থেকে ময়মনসিংহে যেতে গেলে আবার ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা চার্জ পড়ে। এর কারণে রেট বেশি পড়ে। ঢাকায় এই খরচটা হয় না। হলেও সামান্য।’
তিনি আরও বলেন, ‘ইনফো সরকার-৩ নামে একটা প্রজেক্ট বানিয়েছে আইসিটি মিনিস্ট্রি। প্রতিটি ইউনিয়নে তারা ফাইবার অপটিক নিয়ে গেছে। এটা তো সরকারি টাকায় নেয়া হয়েছে। তাহলে এখন তো আমার ময়মনসিংহ যেতে বেশি টাকা গোনার কথা না, যেটা ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা দিচ্ছি, ওইটা ১০০ টাকায় যাওয়ার কথা।
‘এখন ইনফো সরকার-৩ এর এই ট্রান্সমিশন নেটওয়ার্কটা রেডি আছে। ওই প্রজেক্ট থেকে এখনও প্রাইজ নির্ধারণ করা হয় নাই। ওইটা যখন আমরা সুলভ মূল্যে পেয়ে যাব, তখন থেকে গ্রামে-গঞ্জে ঢাকার মতো সুলভ মূল্যে একই দামে ইন্টারনেট পাওয়া যাবে।’
মন্ত্রীর বেঁধে দেয়া রেট ও ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সেবার অসামঞ্জস্যের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘মন্ত্রী যে প্রাইস ঠিক করে দিয়েছেন, সেটা আংশিক বাস্তবায়ন হয়েছে। ঢাকা শহরে কম্পিটিশন অনেক বেশি। দেখা যায়, আমি ১০ এমবিপিএস ডিক্লেয়ার করলাম ১ হাজার টাকা। আরেকজন বলল, ১৫ এমবিপিএস দিবে ১ হাজার টাকায়। সরকার বলছে, আমি হাইয়েস্ট রেট নির্ধারণ করে দিলাম এটা, লোয়েস্ট রেট কমও হতে পারে। কেউ অভিযোগ দিলে আমরা বিটিআরসিকে জানাই। তারা অ্যাকশন নেয়। আমরা তো কমপ্লেইনের অপেক্ষায় আছি।’
বিটিআরসির জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. জাকির নিউজবাংলাকে বলেন, ‘প্যাকেজটা লঞ্চিং হয়ে গেছে। অর্থাৎ যেদিন ঘোষণা এসেছে, সেদিন থেকেই এটা কার্যকর। আগে থেকে যারা বিভিন্ন দামে ইন্টারনেট সেবা নিচ্ছেন, তারা এখন সরকারের বেঁধে দেয়া দামে ইন্টারনেটের বিল দেবেন। কোনো ইন্টারনেট সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান যদি বেশি টাকা নেয়, তাহলে আমাদের জানান। আমরা ব্যবস্থা নেব।’
আরও পড়ুন:প্রাইভেট হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের মালিকদের উদ্দেশে আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল বলেছেন, আপনাদের মতে চিকিৎসা খাতে ৪-৫ বিলিয়ন ডলারের একটা বাজার আছে। এই বাজার আপনারা নিতে পারেন না? কেন মানুষ চিকিৎসার জন্য বিদেশ যেতে চায়? ভারত, ব্যাংককে এমন মানুষও চিকিৎসা নিতে যায়, যারা কখনও ঢাকায় আসেনি। তারা বিরক্ত ও নিরুপায় হয়ে যায়। তাদের যাওয়া বন্ধ করেন। এখানে সেবা দিলে মানুষ কখনোই বিদেশ যাবে না। যাওয়ার কোনও কারণই নাই। এই বাজার দখল করলে আপনাদের লাভ, দেশেরও লাভ।
শনিবার (১৬ আগস্ট) রাজধানীর শহীদ আবু সাইদ ইন্টারন্যাশনাল কনভনেশন সেন্টারে বাংলাদেশ প্রাইভেট হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের নবনির্বাচিত কার্যনির্বাহী কমিটির অভিষেক ও বার্ষিক সাধারণ সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
আসিফ নজরুল বলেন, অনেক চিকিৎসক অনর্থক টেস্ট দেন। আমার বাসার হেল্পিং হ্যান্ড, গরিব ছেলে, ঢাকার একটি হাসপাতালে ১৪টি টেস্ট দিয়েছে। সে রাগ করে বাড়ি চলে গেছে। সেখান থেকে টেস্ট ছাড়া ভালো হয়ে ফেরত এসেছে। ওখানে তার পরিচিত ডাক্তার ছিল। এই অত্যাচার বন্ধ হয় নাই। গরিব রোগীদের অনর্থক ১৪-১৫টা টেস্ট দেওয়ার প্রক্রিয়া বন্ধ করা দরকার। আরেকটা বিষয় হলো, নির্দিষ্ট ওষুধ কিনতে হবে, কেন? পৃথিবীতে কোন জায়গায় প্রাইভেট ক্লিনিকে ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধির জন্য নির্দিষ্ট সময় থাকে ডাক্তারের। আপনারা কি ওষুধ কোম্পানির দালাল, এ দেশের বড় বড় হাসপাতালের ডাক্তাররা কি ওষুধ কোম্পানির মধ্যসত্ত্বভোগী? কোন জায়গায় নামান আপনারা নিজেদের!
আইন উপদেষ্টা বলেন, আরেকটা অভিযোগ করা হয়, টেস্টের রেজাল্ট ভুল। অনেক জায়গায় অনেক ভালো রেজাল্ট হয়, আমি খারাপ জায়গার কথা বলছি। একটা জেনারেল কমপ্লেইন যেটা আমার কাছে হৃদয়বিদারক লাগে, নার্সদের ব্যবহার খারাপ। নার্সদের মন খারাপ থাকে, হাসপাতালের কর্মচারীদের মন খারাপ থাকে, তারা ক্ষিপ্ত হয়ে থাকেন, ভালো সেবা দিতে চায় না। কেন চায় না– নার্সদের বেতন ১২ হাজার টাকা, আপনারা কি কম টাকা লাভ করেন? আপনারা যারা অনেকে হাসপাতালের মালিক আছেন, আমি ব্যক্তিগতভাবে চিনি, আপনাদের কোটি টাকার বাগানবাড়ি থাকতে পারে, নার্সদের ভালো বেতন দিতে পারেন না? নার্স যদি ১২ হাজার টাকা বেতন পায়, তাহলে কি ভালো সেবা দেবে? সে তো বিরক্ত হয়ে থাকবে। আপনারা লাভ করেন কিন্তু ন্যায্যভাবে করেন।
তিনি বলেন, আজ মানুষ ভারত-থাইল্যান্ড যেতে চায় না। আপনাদের চিকিৎসা দেওয়ার সক্ষমতা আছে। আপনারা করোনাকালে প্রমাণ করেছেন। নিজের জীবন উৎসর্গ করে সেবা দিয়েছেন। কর্মীর যদি বেতন বাড়িয়ে দেন সামান্য লাভ থেকে কতো টাকা চলে যাবে? যদি ১০০ কোটি টাকা লাভ করেন, তাহলে ১০ শতাংশ কম লাভ হয়। ১০ শতাংশ কম লাভের বিনিময় সেই কর্মী যে সেবা দেবে সেটা দিয়ে পূরণ হয়ে যায়। আপনারা এদিকে একটু লক্ষ্য রাখবেন।
প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস ‘শুভ জন্মাষ্টমী’ উপলক্ষ্যে দেয়া বাণীতে বলেছেন, ছাত্র-শ্রমিক-জনতার ঐতিহাসিক গণ-অভ্যুত্থানের মাধ্যমে গঠিত অন্তর্বর্তী সরকার সম্প্রীতির এই বন্ধনকে অটুট রাখতে বদ্ধপরিকর। তিনি বলেন, সমাজে বিদ্যমান শৃঙ্খলা, ভ্রাতৃত্ববোধ ও সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতিকে কেউ যেন নষ্ট করতে না পারে সেজন্য সকলকে সজাগ থাকতে হবে।
শুভ জন্মাষ্টমী উপলক্ষ্যে আজ শুক্রবার এক বাণীতে প্রধান উপদেষ্টা এ সব কথা বলেছেন। তিনি এ সময় ‘শুভ জন্মাষ্টমী’ উপলক্ষ্যে দেশের সনাতন ধর্মাবলম্বী সকলকে আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানিয়েছেন।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ধর্মাবতার শ্রীকৃষ্ণের জন্মতিথি ‘শুভ জন্মাষ্টমী’ হিন্দু সম্প্রদায়ের অন্যতম প্রধান ধর্মীয় উৎসব। সমাজে সাম্য ও শান্তি প্রতিষ্ঠা করতে শ্রীকৃষ্ণ আজীবন ন্যায়, মানবপ্রেম ও শান্তির বাণী প্রচার করেছেন। শ্রীকৃষ্ণ যেখানেই অন্যায়-অবিচার দেখেছেন, সেখানেই অপশক্তির হাত থেকে শুভশক্তিকে রক্ষার জন্য আবির্ভূত হয়েছেন।
তিনি বলেন, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি আমাদের সংস্কৃতির অনন্য বৈশিষ্ট্য। আবহমানকাল থেকে এ দেশের মানুষ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রেখে নিজ নিজ ধর্ম পালন করছে। শ্রীকৃষ্ণের আদর্শ ও শিক্ষা পারস্পরিক সৌহার্দ্য ও ভ্রাতৃত্বের বন্ধনকে আরো সুদৃঢ় করবে বলে উল্লেখ করে তিনি সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতিতে ভরপুর বৈষম্যমুক্ত এক নতুন বাংলাদেশ গড়ার আহ্বান জানান।
বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানিয়ে ফুলের তোড়া পাঠিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
শুক্রবার বিকেলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও বেগম খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক অধ্যাপক ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন এ তথ্য জানান।
তিনি বলেন, আপনারা জানেন, আজ গণতন্ত্রের মা, তিনবারের প্রধানমন্ত্রী ও আমাদের নেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার জন্মদিন। তিনি এ দিনটি উদযাপন করেন না, তবে দল থেকে সারাদেশে মিলাদ ও দোয়া মাহফিল হচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা আজ বিকেলে ম্যাডামের (বেগম জিয়া) জন্য ফুলের তোড়া পাঠিয়েছেন। তাঁর কর্মকর্তারা এটি বিএনপি চেয়ারপারসনের গুলশানের বাসভবনে পৌঁছে দেন।
বিকেল প্রায় ৪টায় প্রধান উপদেষ্টার একান্ত সচিব সজীব এম খায়রুল ইসলাম ও প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের পরিচালক মোহাম্মদ নাজমুল ইসলাম গুলশানে বিএনপি চেয়ারপার্সনের বাসভবন ‘ফিরোজা’য় গিয়ে তাঁর একান্ত সচিব এবিএম আবদুস সাত্তারের হাতে ফুলের তোড়াটি হস্তান্তর করেন।
এ সময় বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য বেলায়েত হোসেন, বিএনপি মিডিয়া সেলের সদস্য শায়রুল কবির খান এবং চেয়ারপার্সনের ব্যক্তিগত উইংয়ের কর্মকর্তা মাসুদ রহমান উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে, বৃহস্পতিবার রাতে চীনের রাষ্ট্রদূতের কার্যালয় থেকেও বিএনপি চেয়ারপার্সনের জন্য জন্মদিনের ফুলের তোড়া পাঠানো হয়।
বেগম খালেদা জিয়া ১৯৪৫ সালের ১৫ আগস্ট দিনাজপুরে জন্মগ্রহণ করেন। এ বছর তিনি ৮১ বছরে পা রেখেছেন।
ধূমপান ও তামাকমুক্ত রেল পরিষেবা গড়ে তুলতে বিশেষ ভূমিকা রাখায় ২২ কর্মকর্তা/কর্মচারীকে পুরস্কৃত করেছে রেলপথ মন্ত্রণালয়।
বৃহষ্পতিবার (১৪ আগস্ট) রাজধানীর রেল ভবনে “বাংলাদেশ রেলওয়েকে তামাকমুক্ত করার উদ্যোগ” শীর্ষক প্রকল্পের উদ্যোগে এক বিশেষ অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়। এতে ধূমপান ও তামাকমুক্ত রেল পরিষেবা গড়ে তুলতে রেল স্টেশনে তামাক সচেতনতা ও প্রতিরোধ কার্যক্রমে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখার জন্য আরএনবি ও জিআরপি (পুলিশ) এবং রেলওয়ের ২২ কর্মকর্তা/কর্মচারীকে সম্মাননা পদক ২০২৫ প্রদান করা হয়। এই স্বীকৃতির মাধ্যমে রেলওয়ে কর্মীদের উৎসাহিত করে দেশের সকল স্টেশন ও ট্রেনকে ধূমপান ও তামাকমুক্ত করার প্রক্রিয়া আরও ত্বরান্বিত হবে বলে আয়োজকরা আশাবাদ ব্যক্ত করেন। বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে পুরস্কার প্রাপ্তরা হলেন-
মোহাম্মদ মাহবুবুল আলম মজুমদার, উপসচিব (বাজেট অধিশাখা), রেলপথ মন্ত্রণালয়; মোঃ জাকির হোসেন, পরিচালক ট্রাফিক (পরিবহণ), বাংলাদেশ রেলওয়ে; মোঃ আনসার আলী, উপ-পরিচালক (টিসি), বাংলাদেশ রেলওয়ে; গৌতম কুমার কুণ্ডু, বিভাগীয় বাণিজ্যিক কর্মকর্তা (পাকশী), বাংলাদেশ রেলওয়ে; মোঃ আব্দুল্লাহ আল মামুন, বিভাগীয় পরিবহন কর্মকর্তা (লালমনিরহাট), বাংলাদেশ রেলওয়ে; ফারহান মাহমুদ, এডিসিও (চট্টগ্রাম), বাংলাদেশ রেলওয়ে; মোহাম্মদ আমিনুল হক, এসিও-১ (ঢাকা), বাংলাদেশ রেলওয়ে প্রমূখ।
অনুষ্ঠানে “বাংলাদেশ রেলওয়েকে তামাকমুক্ত করার উদ্যোগ” শীর্ষক প্রকল্পের বেজলাইন ও এন্ডলাইন সার্ভের তথ্য-উপাত্ত উপস্থাপন ও এর বিভিন্ন দিক নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেন গবেষণা প্রতিষ্ঠান আর্ক এর নির্বাহী পরিচালক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. রুমানা হক।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সচিব মোঃ ফাহিমুল ইসলাম। বিশেষ অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ রেলওয়ের মহাপরিচালক মোঃ আফজাল হোসেন। এছাড়া রেলপথ মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ রেলওয়ের বিভিন্ন স্তরের কর্মকর্তারা/কর্মচারীরা এতে অংশগ্রহণ করেন।
ধূমপান ও তামাকের ব্যবহার যাত্রীসেবার মানের ওপর যেসব নেতিবাচক প্রভাব ফেলে অনুষ্ঠানে তার বিস্তারিত আলোচনা করেন তামাক ও তামাকজাত দ্রব্যের অপব্যবহার রোধে ভূমিকা পালনকারী সাবেক ও বর্তমান সরকারী ও বেসরকারী কর্মকর্তারা। তাঁরা রেলওয়ের প্রতিটি স্টেশন, প্ল্যাটফর্ম এবং ট্রেনে ধূমপানমুক্ত পরিবেশ নিশ্চিত করার দাবি জানান। এ লক্ষ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি, কঠোর নজরদারি এবং আইন প্রয়োগের পাশাপাশি যাত্রী ও কর্মীদের মধ্যে ইতিবাচক আচরণ গড়ে তোলার ওপর তাঁরা গুরুত্বারোপ করেন।
রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সচিব মোঃ ফাহিমুল ইসলাম প্রধান অতিথির বক্তব্যে বলেন, “রেলপথ জনগণের জন্য একটি নিরাপদ ও স্বাস্থ্যকর যাতায়াত ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে চায়। তাই ধূমপানমুক্ত পরিবেশ তৈরিতে আমরা কোনো ধরনের শৈথিল্য দেখাবো না।”
অনুষ্ঠানে সকল কর্মকর্তা, কর্মচারী ও উপস্থিত অতিথিবৃন্দ ধূমপান ও তামাকমুক্ত বাংলাদেশ গড়তে একসঙ্গে কাজ করার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন।
উপদেষ্টা পরিষদের সভা আজ (বৃহস্পতিবার) অনুষ্ঠিত হয়েছে।
রাজধানীর তেজগাঁওয়ে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে এই সভা অনুষ্ঠিত হয়। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস এতে সভাপতিত্ব করেন।
দেশের শতকরা ৯০ ভাগ বিরোধের উৎস্য ভূমি। এটা কিন্তু খুব কমই প্রতিকার নিতে পারছি আমরা। এটা অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা হিসেবে আমারও দায়িত্ব রয়েছে। এক্ষেত্রে জনগণেরও সচেতনতা প্রয়োজন। ফেনীতে অনুষ্ঠিত অটোমেটেড ভূমি সেবা সিস্টেমে তথ্য সন্নিবেশ ও সংশোধন সংক্রান্ত কর্মশালায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের ভূমি মন্ত্রণালয় ও খাদ্য মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আলী ইমাম মজুমদার।
বুধবার (১৩ আগস্ট) দুপুরে ফেনী জেলা প্রশাসকের কার্যালয় প্রাঙ্গণে অটোমেটেড ভূমি সেবা সিস্টেমে তথ্য সন্নিবেশ ও সংশোধন সংক্রান্ত এ কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়। পাইলট প্রকল্প হিসেবে এটি ফেনী থেকে কার্যক্রম শুরু হয়েছে।
চট্টগ্রাম বিভাগের বিভাগীয় কমিশনার ড. মো. জিয়াউদ্দীন এর সভাপতিত্বে কর্মশালায় বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ইউএনডিপি, বাংলাদেশ এর আবাসিক প্রতিনিধি স্টেফান লিলার।
ফেনী জেলা প্রশাসন, ভূমি ব্যবস্থাপনা অটোমেশন প্রকল্প, ভূমি মন্ত্রণালয় ও ইউএনডিপি বাংলাদেশ এর যৌথ আয়োজনে অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন ফেনী জেলা প্রশাসক সাইফুল ইসলাম। আলোচক হিসেবে উপস্থিত থেকে বক্তব্য রাখেন ভূমি মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (উন্নয়ন) মো: এমদাদুল হক চৌধুরী, ভূমি ব্যবস্থাপনা অটোমেশন প্রকল্প এর প্রকল্প পরিচালক ও যুগ্ম সচিব মো: পারভেজ হাসান বিপিএএ।
অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল মোতালেব, সাংবাদিক আবু তাহের, ফেনী আইনজীবী সমিতির সভাপতি এডভোকেট নুরুল আমিন খান, ফেনী সদর সহকারী কমিশনার (ভূমি) সজিব তালুকদার, ফেনী সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার সুলতানা নাসরিন কান্তা, ফেনী জেলা জামায়াতের আমীর মুফতি আব্দুল হান্নান, ফেনী জেলা বিএনপির সদস্য সচিব আলাল উদ্দিন আলাল, বৃহত্তর নোয়াখালীর ভূমি বিষয়ক সার্চ অফিসার সরোয়ার উদ্দিন, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) ফাহমিদা হক প্রমূখ।
কর্মশালায় উপস্থিত ছিলেন জেলার ভূমি বিভাগ, সরকারি ও বেসরকারি বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তা, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ, বিভিন্ন সংগঠনের নেতৃবৃন্দ, ছাত্র প্রতিনিধি সহ গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ।
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতার বলেছেন, বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণের পথে রয়েছে, কিন্তু এই পদক্ষেপটি আমরা গত সরকারের রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের উত্তরাধিকার হিসেবে গ্রহণ করেছি। তিনি বলেন, গত সরকারের সময়ে প্রকাশিত জিডিপি, ব্যক্তিগত আয়, মাতৃস্বাস্থ্য ও অন্যান্য সামাজিক সূচকগুলো বাস্তবতার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ ছিল না। বাস্তবিক অর্থে,স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণে বাংলাদেশ এখনও পুরোপুরি প্রস্তুত নয়।
উপদেষ্টা আজ বুধবার (১৩ আগষ্ট) প্রেস ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশ (পিআইবি) কনফারেন্স রুমে নাগরিক উদ্যোগ ও পিপলস হেলথ মুভমেন্ট আয়োজিত "বাংলাদেশের ভবিষ্যত নির্ধারণী উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে উত্তরণ ও দ্বিপাক্ষিক মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি বিষয়ে সতর্ক পুনর্বিবেচনা প্রয়োজন"- শীর্ষক মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ কথা বলেন।
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা বলেন, স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উত্তরণের পরিসংখ্যান বহন করলেও তা বাস্তবায়ন করা যাচ্ছে না। আগামী ২০২৬ সালের নভেম্বর মাসে আমাদের দেশের উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা গ্রহণের সময় আসবে, এবং অন্তর্বর্তী সরকারকে তা অনুযায়ী নিয়ম মেনে প্রস্তুতি নিতে হচ্ছে।
তিনি বলেন, এলডিসি উত্তরণের ফলে শুল্ক ও জিএসপি সুবিধার প্রভাব কোথায় বৃদ্ধি পাবে এবং কোথায় হ্রাস পাবে, তা সঠিকভাবে মূল্যায়ন করতে হবে। পাশাপাশি আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতার ক্ষেত্রে নানা চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হবে। তিনি সতর্ক করে বলেন, বিদেশ থেকে স্বল্পমূল্যে গরুর মাংস আমদানি করলে দেশীয় গবাদিপশুর বাজারে প্রভাব পড়বে এবং লাখ লাখ খামারি, বিশেষ করে গরীব মহিলারা যারা গরু লালন-পালন করে উদ্যোক্তা হিসেবে অবদান রাখছেন, তাদের ক্ষতি হবে।
উপদেষ্টা বলেন, “আমরা বিদেশ থেকে মাংস আমদানি কমানোর জন্য চেষ্টা করছি। কারণ, আমদানি করা মাংসের মাধ্যমে জুনোটিক রোগ প্রবেশের ঝুঁকি রয়েছে।”
তিনি আরো বলেন, সাগরের সি উইড ও কুচিয়া রপ্তানির ক্ষেত্রে প্রচুর সম্ভাবনা রয়েছে। স্বয়ংসম্পূর্ণ দেশ হিসেবে আমাদের আমদানি হ্রাস করতে হবে এবং দেশীয় উৎপাদন ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে হবে।
এসময় আরো বক্তৃতা করেন অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ, থার্ড ওয়ার্ল্ড নেটওয়ার্কের জেনেভা ভিত্তিক লিগ্যাল অ্যাডভাইজার ও সিনিয়র রিসার্চার সানিয়া রিড স্মিথ, জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. জাহেদ মাসুদ, অ্যাডভোকেট তাসলিমা জাহান প্রমুখ। সভায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন নাগরিক উদ্যোগের কো-অর্ডিনেটর বারাকাত উল্লাহ মারুফ।
মন্তব্য