মিয়ানমারে রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসের শিকার হয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের ভাসানচরে স্থানান্তর নিয়ে জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থাগুলো শুরুতে একটু আপত্তি তুললেও ভাসানচর ঘুরে দেখে তাদের অবস্থান পরিবর্তন হয়েছে। একই সঙ্গে জাতিসংঘের সংস্থাগুলোসহ অন্যান্য এনজিও সেখানে কাজ শুরু করতে রাজি হয়েছে।
নিউজবাংলাকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণসচিব মো. মোহসীন।
গত রোববার প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে অন্তত ১০টি দেশের রাষ্ট্রদূত এবং হাইকমিশনার, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও ইউএনএইচসিআরের প্রতিনিধি, পররাষ্ট্রসচিব, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণসচিবসহ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধিদের উপস্থিতিতে একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব ড. আহমদ কায়কাউস।
ওই বৈঠকে কক্সবাজারের বিভিন্ন ক্যাম্পে অবস্থানরত আরও ৮০ হাজার রোহিঙ্গাকে দ্রুত সময়ের মধ্যে ভাসানচরে স্থানান্তর করার সিদ্ধান্তও নেয়া হয়।
সেদিন প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব জানান, মিয়ানমার থেকে বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর বসবাসের উপযোগী ব্যবস্থাসহ সব মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করতে সরকার সচেষ্ট রয়েছে। ভাসানচরের উন্নত পরিবেশ আন্তর্জাতিক অঙ্গনে প্রশংসিত হয়েছে।
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণসচিব বলেন, ‘ভাসানচর নিয়ে বৈঠকে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। ইউএনএইচসিআর-প্রধানও সেই বৈঠকে ছিলেন। তারা একমত, কক্সবাজারে ইউএন সিস্টেম যেভাবে কাজ করেছে, তারা ভাসানচরে কাজ করবে।’
জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থাগুলো ভাসানচরে কার্যক্রম শুরু করার তাৎপর্য সম্পর্কে জানতে চাওয়া হয় সচিবের কাছে। তিনি বলেন, ‘ইউএন হলো ম্যান্ডেট। পৃথিবীর যেকোনো জায়গায় এ ধরনের শরণার্থী যদি হয়, তারাই লুক আফটার করবে। ইউএন গেলে অবশ্যই আমাদের জন্য সুবিধা। রোহিঙ্গাদের খাদ্যের চিন্তা করতে হবে না। পুরো ম্যানেজমেন্ট ইউএন করবে। আমরা তাদের সহযোগিতা করব।’
বৈঠকের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণসচিবকে সভাপতি করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগ ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় এবং শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনারের কার্যালয়কে (ট্রিপল আরসি) নিয়ে সাত সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে।
বৈঠকে যোগ দেয়া কূটনীতিক ও উন্নয়ন সংস্থার প্রতিনিধিরা ভাসানচর নিয়ে বেশ প্রশংসা করেছেন বলেও জানান সচিব। তিনি বলেন, ‘তারা বলেছেন, পৃথিবীর যেখানে যেখানে শরণার্থী আছে, তারা সেখানে এটিকে মডেল হিসেবে উপস্থাপন করবেন যে বাংলাদেশে যারা শরণার্থী আছে, যারা জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত হয়ে আছে, তাদের জন্য বাংলাদেশ কী করেছে। প্রত্যেক অ্যাম্বাসেডর একই কথা বলেছেন।’
বৈঠকে অংশ নেয়া বিভিন্ন দেশের কূটনীতিক ও সংস্থার প্রতিনিধিরা রোহিঙ্গাদের জীবিকার সংস্থানের সুযোগ তৈরির ওপরও জোর দিয়েছেন বলে জানান দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা সচিব।
তিনি বলেন, ‘যাতে শরণার্থীরা ব্যস্ত থাকেন, সে জন্য সরকারের পক্ষ থেকেও ব্যবস্থা নিচ্ছি, মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকেও ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। এ ছাড়া কিছু এনজিও এগিয়ে এসেছে। আমরা লাইভলিহুডের ব্যবস্থা করব, যাতে খাবারের পরেও তাদের ব্যস্ততা থাকে। কিছু অর্থ যেন তারা পায়।’
ইতিমধ্যে রোহিঙ্গাদের সেলাই কাজসহ হস্তশিল্পের প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে বলেও জানান তিনি।
সাত সদস্যের যে কমিটি গঠন করা হলো, সেই কমিটির কাজ সম্পর্কে জানতে চাওয়া হয় ওই কমিটির প্রধান মো. মোহসীনের কাছে। তিনি বলেন, ‘এই কমিটির কাজ হলো ইউএন-এ যারা জড়িত, ডব্লিউএফপি দেবে খাদ্য, ইউনিসেফ দেবে শিক্ষা– এ রকম যারা তাদের সঙ্গে বসে অপারেটিং সিস্টেমটা তৈরি করা। কীভাবে তারা যাবেন, কবে থেকে কাজ শুরু হবে, কখন থেকে যাবে– এসব ঠিক করা।’
মো. মোহসীন জানান, খুব দ্রুত বৈঠকে বসতে চান তারা। তিনি বলেন, ‘তাদের সঙ্গে আগামী বৃহস্পতিবার একটি সভা হবে। সেখানে ইউএনএইচসিআর থাকবে। অপরাশেন করতে গেলে কীভাবে হবে, সেটা নিয়ে আলোচনা হবে। আমরা আশা করছি, ইউএনএইচসিআর বা ইউএন ভাসানচরে বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে কাজ করবে।
‘আগামী বৃহস্পতিবার প্রথম সভা দিয়েছি। ইউএন-এর যারা আছে, তারাসহ সাত সদস্যের কমিটির প্রথম সভা হবে। আশা করি, দু-একটি সভার পরেই তারা মাঠে কাজ শুরু করে দেবে।’
কক্সবাজারে শরণার্থী শিবির ও তার বাইরে অবস্থান নেয়া প্রায় ১১ লাখ রোহিঙ্গাকে নিয়ে দেখা দেয় নানা সামাজিক সমস্যা। তারই পরিপ্রেক্ষিতে এক লাখ রোহিঙ্গাকে হাতিয়ার কাছে মেঘনা মোহনার দ্বীপ ভাসানচরে স্থানান্তরের পরিকল্পনা নেয় সরকার।
সরকারের নিজস্ব অর্থায়নে ২ হাজার ৩১২ কোটি টাকা ব্যয়ে ১৩ হাজার একর আয়তনের ওই চরে ১২০টি গুচ্ছগ্রামের অবকাঠামো তৈরি করে ১ লাখের বেশি মানুষের বসবাসের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
কয়েক ধাপে ভাসানচরে এখন পর্যন্ত ১৮ হাজার ৮৫৯ রোহিঙ্গা শরণার্থীকে পুনর্বাসন করা হয়েছে বলে জানান সচিব।
বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত বিভিন্ন দফায় আশ্রয় নেয়া মোট রোহিঙ্গা শরণার্থী ১১ লাখের ওপরে।
ত্রাণসচিব বলেন, ‘আমরা ১ লাখ নিয়ে যাব। আশা করছি, এই সভাগুলো হয়ে যাওয়ার পরে আবহাওয়া একটু অনুকূলে এলে আমরা নিয়ে যাওয়া শুরু করব।’
সরকারের লক্ষ্য অনুযায়ী আরও ৮০ হাজারের বেশি রোহিঙ্গা শরণার্থীকে স্থানান্তর করতে হবে। এ জন্য কত দিন সময় লাগতে পারে, জানতে চাওয়া হলে মো. মোহসীন বলেন, ‘এটা তো ধাপে ধাপে হবে। একবারে বলা যাবে না। প্রথমে কক্সবাজার থেকে চট্টগ্রামে আনা, সেখান থেকে আবার নিয়ে যাওয়া। আমরা চেষ্টা করব, নেক্সট ডিসেম্বর, জানুয়ারির মধ্যে তাদের নিয়ে যেতে।’
সরকারের অনুমতি ছাড়া ভাসানচরে সাধারণ মানুষের আনাগোনা ও নৌযান চলাচল বন্ধ করে দিয়েছে সরকার। ভাসানচরের তত্ত্বাবধানে কারা আছে- জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের ট্রিপল আরসি তত্ত্বাবধান করছে।
‘আর প্রকল্পটা যেহেতু নেভি (নৌবাহিনী) বাস্তবায়ন করেছে, এ জন্য নেভির লোকজন সেই প্রকল্পটা দেখভাল করে। কিন্তু পুরোটা সিভিল অ্যাডমিনিস্ট্রেশন পরিচালনা করছে। এখন যে খাবার এবং নন-ফুড আইটেম দিচ্ছে, তারা এনজিও। ৩০টার মতো এনজিও আমরা পেয়েছি, ইন্টারন্যাশনাল এনজিও।’
ভাসানচরে কাজ করছে ৪৯টি এনজিও
জাতিসংঘ এখনও যুক্ত না হলেও ভাসানচরে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর খাদ্য ও শিক্ষাসহায়তা নিয়ে এগিয়ে এসেছে এনজিও খাত।
এনজি ব্যুরো জানিয়েছে, বর্তমানে ৫৩টি দেশি-বিদেশি বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা (এনজিও) ভাসানচরে রোহিঙ্গাদের সহায়তায় কাজ করতে নিবন্ধিত হয়েছে। এর মধ্যে চারটি এনজিও এখনও কী প্রকল্পে কাজ করতে চায়, সে বিষয়ে বিস্তারিত পরিকল্পনা তুলে ধরেনি। অর্থাৎ এ মুহূর্তে কাজ করছে ৪৯টি এনজিও।
এনজিও ব্যুরোর উপপরিচালক আব্দুল্লাহ আল খায়রুম বলেন, ‘ভাসানচরে এনজিও সহায়তা কার্যক্রম বাড়ছে। মূলত খাদ্য, শিক্ষাসহ কয়েকটি খাতে ব্যয় করছে বেশ কয়েকটি এনজিও সংস্থা। তবে বিদেশি সহায়তাপুষ্ট এনজিওই বেশি।’
সম্পৃক্ততা এবং সহায়তা
এনজিও ব্যুরো প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২০ সালের নভেম্বর থেকে এ বছরের জানুয়ারি পর্যন্ত প্রথম তিন মাসে কাজ করে ১৯টি এনজিও। ৩০ প্রকল্পে তারা ব্যয় করে ১২ কোটি ১৭ লাখ টাকা। এর মধ্যে দেশি ১৪ এনজিও ২৫ প্রকল্পে ব্যয় করে ৯ কোটি ৫৬ লাখ টাকা। আর বিদেশি পাঁচটি এনজিও পাঁচটি প্রকল্পে ব্যয় করেছে ২ কোটি ৬১ লাখ টাকা।
সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ভাসানচরে বাড়তে থাকে এনজিওদের কার্যক্রম। গত মার্চ শেষে সহায়তা করা এনজিও সংখ্যা দাঁড়ায় ৪০টি। প্রকল্পের সংখ্যা বেড়ে হয় ৭৩টি। পাশাপাশি বাড়ে সহায়তার পরিমাণও। মার্চে দেশি ৩০টি এনজিও ৬২ প্রকল্পে ব্যয় করে ১৯ কোটি ৭২ লাখ টাকা। আর বিদেশি ১০ এনজিও ১১ প্রকল্পে ব্যয় করে ১৯ কোটি ১৫ লাখ টাকা।
মার্চের পর গত তিন মাসে নতুন যুক্ত হয় আরও ১৩টি এনজিও। বর্তমানে ৪৯টি এনজিও ৯০ প্রকল্পে সহায়তা কাজ পরিচালনা করছে। এসব সংস্থা ব্যয় করেছে ৪৩ কোটি ৬০ লাখ টাকা। এর মধ্যে বিদেশি অর্থায়নের ২৯টি এনজিও ৩৪ কোটি ৬৫ লাখ টাকা ব্যয় করেছে। ৫৬টি প্রকল্পে ব্যয় হয়েছে এ অর্থ। আর ২০টি এনজিও নিজস্ব অর্থায়নে ব্যয় করেছে ৮ কোটি ৯৫ লাখ টাকা। রোহিঙ্গাদের সহায়তায় ৩৪টি প্রকল্পে এই অর্থ ব্যয় করা হয়েছে।
যেসব খাতে সহায়তা
ভাসানচরে অবকাঠামো থাকায় এ খাতে এনজিওগুলোর কোনো ব্যয় করতে হচ্ছে না। তবে সহায়তার সবচেয়ে বেশি ব্যয় গেছে খাদ্য সংগ্রহে।
জানুয়ারি পর্যন্ত ৩৯ হাজার ১৭০ কেজি চাল, ৫ হাজার ৯০৯ কেজি ডাল, ২ হাজার ৯৫৯ লিটার তেল, ৪ হাজার ৫ কেজি লবণ বিতরণ করা হয়।
এ ছাড়া ৪ হাজার ১০৫ কেজি চিনি, ৫ হাজার ৪০২ কেজি পেঁয়াজ, ৮৫১ কেজি রসুন, আলু ৯ হাজার ১১৫ কেজি, আটা ৩ হাজার ৪০৫ কেজি, ডিম দেয়া হয়েছে ১৫ হাজার পিস।
এ ক্ষেত্রে তৈরি খাবার বা শুকনা খাবারে ব্যয় হয় ১৭ লাখ টাকা। ওষুধ ও চিকিৎসাসামগ্রীতে ৬ লাখ ৩৯ হাজার টাকা ব্যয় হয়েছে। ভাসানচরে ১৬ হাজার ১৫২টি শীতবস্ত্র বিতরণ করা হয়েছে। এলপিজি গ্যাস সরবরাহ হয়েছে ১ হাজার ৩৮৭ সিলিন্ডার। এ ছাড়া শিক্ষা, মাছ চাষসহ বিভিন্ন প্রশিক্ষণেও ব্যয় হচ্ছে অর্থ।
আরও পড়ুন:রাজা জিগমে খেসার নামগেল ওয়াংচুকের আমন্ত্রণে ভুটান সফরে গেছেন তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ আলী আরাফাত। শুক্রবার ভুটানের রাজার সঙ্গে থিম্পু পৌঁছেছেন তিনি।
বাংলাদেশ সফর শেষে বৃহস্পতিবার বিকেলে কুড়িগ্রামের ভূরুঙ্গামারী উপজেলার সোনাহাট স্থলবন্দর দিয়ে সড়কপথে দেশে ফেরেন ভুটানের রাজা। রাজার আমন্ত্রণে তার সফরসঙ্গী হয়ে ভারত হয়ে ভুটানে যান তথ্য প্রতিমন্ত্রী। সূত্র: বাসস
এদিন ভুটানের দক্ষিণাঞ্চলীয় গেলেফু সিটিতে অবস্থান করেন ভুটানের রাজা ও বাংলাদেশের তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী। সেখানে অবস্থানকালে ভুটানের রাজা বেশকিছু সময় ধরে তথ্য প্রতিমন্ত্রীকে নিয়ে গেলেফু সিটি ঘুরে দেখেন এবং সেখানে শান্তিপূর্ণ, পরিবেশবান্ধব, পরিচ্ছন্ন ও সৌন্দর্যমণ্ডিত আইকনিক সিটি গড়ে তোলার পরিকল্পনার কথা জানান।
গেলেফু সিটি থেকে ভুটানের রাজার সঙ্গে বিমানযোগে পারো আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছান তথ্য প্রতিমন্ত্রী। বিমানবন্দরে ভুটানের রাজা ও মোহাম্মদ আলী আরাফাতকে স্বাগত জানান ভুটানের প্রধানমন্ত্রী শেরিং তোবগে ও ভুটানে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত শিবনাথ রায়। পরে পারো আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে ভুটানের রাজধানী থিম্পুতে যান রাজা জিগমে খেসার নামগেল ওয়াংচুক এবং প্রতিমন্ত্রী আলী আরাফাত।
ভুটান সফর শেষে রোববার দুপুরে তথ্য প্রতিমন্ত্রীর দেশে ফেরার কথা রয়েছে।
সোমালি জলদস্যুদের হাতে জিম্মি জাহাজ এমভি আবদুল্লাহ থাকা খাবার কমে আসছে। এ কারণে জলদস্যুরা বাইরে থেকে জাহাজে খাবার নিয়ে আসা শুরু করেছে। ফলে খাবার নিয়ে তেমন সমস্যা না হলেও বিশুদ্ধ পানির সমস্যা দেখা দিতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
বিষয়টি নিশ্চিত করে কেএসআরএম সূত্র জানিয়েছে, দস্যুদের সঙ্গে সমঝোতার বিষয়টিও এগিয়েছে। দ্রুততম সময়ের মধ্যে ২৩ নাবিক ও জাহাজ উদ্ধারে করণীয় সবকিছুই করা হচ্ছে বলে প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে।
বাংলাদেশ মার্চেন্ট মেরিন অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক শাখাওয়াত হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, ‘সাধারণত জাহাজে দুই ধরনের খাবার থাকে। এগুলো হচ্ছে, হিমায়িত খাবার ও শুকনো খাবার। যাত্রাপথের সময় অনুযায়ী জাহাজে খাবার মজুত রাখা হয়। তবে শুকনো খাবার অনেক দিনের জন্য মজুত থাকে।’
তিনি বলেন, ‘জাহাজ জিম্মি করলে জলদস্যুরা সাধারণত খাবার সরবরাহ করে। তবে সুপেয় পানি নিয়ে সমস্যা হয়। সেক্ষেত্রে রেশনিং করে পরিস্থিতি সামাল দিতে হয়।’
তিনি আরও জানান, জলদস্যুরা সম্প্রতি জাহাজের বাইরে থেকে খাবার আনছে- এরকম খবর তারা পেয়েছেন।
জাহাজের মালিক প্রতিষ্ঠান কেএসআরএম গ্রুপের মিডিয়া উপদেষ্টা মিজানুল ইসলাম বলেন, ‘খাবার এখনও শেষ হয়নি, তবে কমে আসছে। জলদস্যুরা তাদের নিজেদের জন্য বাইরে থেকে খাবার এনেছে বলে আমরা জেনেছি।’
তিনি বলেন, ‘আটক জাহাজ এবং জিম্মি ২৩ নাবিককে দ্রুত উদ্ধারে সর্বোচ্চ চেষ্টা চলছে।
‘এমভি আবদুল্লাহকে জিম্মি করার সময় জাহাজটিতে নাবিকদের জন্য ২৫ দিনের খাবার ও ২০০ টন বিশুদ্ধ পানি ছিল। এই পানি দিয়ে এক মাস পর্যন্ত চালানো যাবে বলে তখন নাবিকরা জানিয়েছিলেন। তারা বলেছিলেন, তবে রেশনিং করলে অনেক দিন চালানো যাবে। পানি বাঁচাতে এখন শুধু রান্না ও খাবারের জন্য বিশুদ্ধ পানি ব্যবহার করছেন তারা।’
১২ মার্চ ভারত মহাসাগরে ২৩ জন বাংলাদেশি নাবিকসহ এমভি আবদুল্লাহকে জিম্মি করে সোমালি দস্যুরা। পরে তারা জাহাজটিকে সোমালিয়া উপকূলের কাছে নিয়ে যায়। চট্টগ্রামের কবির গ্রুপের মালিকানাধীন জাহাজটি বর্তমানে সোমালিয়ার গদভজিরান জেলার জিফল উপকূল থেকে দেড় নটিক্যাল মাইল দূরে নোঙর করে আছে।
প্রায় ১৩ বছর আগে ২০১০ সালের ৫ ডিসেম্বর এমভি জাহান মণি নামের একই গ্রুপের মালিকানাধীন একটি জাহাজ জিম্মি করেছিল সোমালি জলদস্যুরা। জাহাজটি ১০০ দিন পর সব নাবিকসহ উদ্ধার করা হয়েছিল।
অপরদিকে, জলদস্যুদের কবল থেকে জিম্মি ২৩ নাবিককে উদ্ধার ও জাহাজ এমভি আবদুল্লাহ ফেরত আনার বিষয়ে আলোচনা অনেকদূর এগিয়েছে বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদও।
বৃহস্পতিবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা জানান।
এ বিষয়ে মন্ত্রী বলেন, ‘আমরা যোগাযোগের মধ্যে আছি। আমাদের উদ্দেশ্য হলো, নাবিকদের অক্ষত অবস্থায় উদ্ধার করা। একইসঙ্গে জিম্মি জাহাজটি উদ্ধার করাও আমাদের উদ্দেশ্য। শুধু এতটুকু বলতে চাই, আমরা অনেক দূর এগিয়েছি।’
জাহাজে খাবার সংকটের বিষয়ে এক প্রশ্নে মন্ত্রী বলেন, ‘অতীতে যখন জাহাজ অপহরণ হয়েছে, কখনও খাবারের সংকট হয়নি। তিন বছর ছিল, তখনও হয়নি; ১০০ দিন ছিল, তখনও হয়নি। আশা করি, এক্ষেত্রেও হবে না।’
আরও পড়ুন:দেশের চারটি বিভাগে বৃষ্টির আভাস দিয়ে আবহাওয়া অধিদপ্তর বলেছে, অন্য অঞ্চলগুলোতে আবহাওয়া প্রধানত শুষ্ক থাকতে পারে।
রাষ্ট্রীয় সংস্থাটি শুক্রবার সকাল ৯টা থেকে পরবর্তী ৭২ ঘণ্টার আবহাওয়ার পূর্বাভাসে এমন বার্তা দিয়েছে।
পূর্বাভাসে সিনপটিক অবস্থা নিয়ে বলা হয়, পশ্চিমা লঘুচাপের বর্ধিতাংশ পশ্চিমবঙ্গ ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থান করছে। মৌসুমের স্বাভাবিক লঘুচাপ দক্ষিণ বঙ্গোপসাগরে অবস্থান করছে।
বৃষ্টিপাত নিয়ে বলা হয়, ঢাকা, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের দুই-এক জায়গায় অস্থায়ী দমকা অথবা ঝোড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে।
এ ছাড়া দেশের অন্যান্য জায়গায় অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ আবহাওয়া প্রধানত শুষ্ক থাকতে পারে।
আজকের তাপমাত্রা নিয়ে পূর্বাভাসে বলা হয়, সারা দেশে দিন ও রাতের তাপমাত্রা সামান্য বাড়তে পারে।
আরও পড়ুন:স্বল্পোন্নত দেশ (এলডিসি) থেকে ২০২৬ সালে উত্তরণের পর সর্বোচ্চ সুবিধা পেতে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ ও উত্তরণ-পরবর্তী চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সংশ্লিষ্ট সবাইকে কৌশল প্রণয়ন করতে বলেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সূত্র: বাসস
রাজধানীর শেরে বাংলা নগরে এনইসি সম্মেলন কক্ষে বৃহস্পতিবার অনুষ্ঠিত জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় সভাপতিত্বকালে তিনি এ নির্দেশনা দেন।
বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের ব্রিফিংকালে পরিকল্পনা বিভাগের সিনিয়র সচিব সত্যজিৎ কর্মকার সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন।
তিনি বলেন, ‘এলডিসি থেকে উত্তরণে সম্ভাবনার পাশাপাশি কিছু চ্যালেঞ্জও রয়েছে। স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উত্তরণের বিষয়ে সরকারের তরফ থেকে সমন্বয়ের কোনো সমস্যা নেই। এটি কোনো নির্দিষ্ট মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব নয়, বরং এটি একটি সার্বিক সমস্যা।’
ব্রিফিংয়ে পরিকল্পনামন্ত্রী মেজর জেনারেল (অব.) মো. আব্দুস সালাম ও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী মো. শহীদুজ্জামান সরকার বক্তব্য দেন। এ সময় পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য ও সংশ্লিষ্ট সচিবগণ উপস্থিত ছিলেন।
পরিকল্পনামন্ত্রী জানান, বৈঠকে মোট ৮ হাজার ৪২৫ কোটি ৫১ লাখ টাকা ব্যয়সাপেক্ষ মোট ১১টি প্রকল্প অনুমোদন দেয়া হয়েছে। মোট প্রকল্প ব্যয়ের মধ্যে ৭ হাজার ৯৩৯ কোটি ৮৭ লাখ টাকা সরকার দেবে এবং বাকি ৪৮৫ কোটি ৬৪ লাখ টাকা প্রকল্প সহায়তা হিসেবে আসবে।
বৈঠকে প্রধানমন্ত্রীর কিছু নির্দেশনা প্রকাশ করে পরিকল্পনা সচিব বলেন, প্রধানমন্ত্রী মিসরের কায়রোতে বাংলাদেশ চ্যান্সারি কমপ্লেক্স ও আবাসিক ভবন নির্মাণের জন্য ১৬৬ কোটি টাকার প্রকল্পের অনুমোদন দেয়ার সময় প্রয়োজনীয় বিশ্রাম কক্ষ রাখা এবং প্রবাসী বাংলাদেশিরা যেন স্বাচ্ছন্দ্যের সঙ্গে পরিষেবা পান সেজন্য পর্যাপ্তসংখ্যক বুথ রাখার নির্দেশ দিয়েছেন।
বৃহত্তর রংপুর অঞ্চলের জেলাগুলোতে গ্রামীণ অবকাঠামোগত উন্নয়নে আড়াই হাজার কোটি টাকার প্রকল্প অনুমোদনের উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী কুড়িগ্রামে নদীভাঙন রোধে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ এবং রাস্তা ও সেতু নির্মাণের সময় বন্যার বিষয়টি বিবেচনা করার ওপর গুরুত্বারোপ করেন।
সারা দেশে ইউনিয়ন পরিষদ কমপ্লেক্স (তৃতীয় পর্যায়) নির্মাণের জন্য ৩ হাজার ৫৯ কোটি টাকার প্রকল্প সম্পর্কে সত্যজিৎ বলেন, প্রধানমন্ত্রী সারা দেশে বাকি ইউনিয়ন পরিষদ কমপ্লেক্সগুলোর নির্মাণ দ্রুত সম্পন্ন করার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দিয়েছেন।
এ বিষয়ে তিনি উপকূলীয় এলাকার ইউনিয়ন পরিষদ কমপ্লেক্সে বৃষ্টির পানি সংরক্ষণের পাশাপাশি সোলার সিস্টেম রাখার জন্য একটি ব্যবস্থা অন্তর্ভুক্ত করার পরামর্শ দেন।
পরিকল্পনা সচিব বলেন, প্রধানমন্ত্রী যেসব প্রকল্প সমাপ্তির পথে সেগুলোর সবশেষ অবস্থা সম্পর্কে জানতে সংশ্লিষ্ট উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের সঙ্গে বসেছেন।
প্রধানমন্ত্রী পরিকল্পনা কমিশনকে এসব প্রকল্পের জন্য প্রয়োজনীয় বরাদ্দ নিশ্চিত করতে বলেন, যাতে করে এগুলো দ্রুত সম্পন্ন করা যায়।
মিরপুরে বাংলাদেশ তাঁত বোর্ড কমপ্লেক্স প্রতিষ্ঠার জন্য ১১৫ কোটি টাকার প্রকল্প অনুমোদনের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী সেখানে নারীদের প্রশিক্ষণের বিষয়টি অগ্রাধিকার দিতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেন।
এক প্রশ্নের জবাবে পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, সরকার প্রকল্প বাস্তবায়নে বিলম্ব করতে না চাইলেও মাঝে মাঝে জমি অধিগ্রহণ সংক্রান্ত জটিলতা ও ডলারের দাম বৃদ্ধির কারণে বিলম্ব হয়।
তিনি বলেন, ‘উন্নয়ন প্রকল্পগুলো যাচাই-বাছাই করে অনুমোদন দেয়া হচ্ছে।
সভায় অনুমোদিত অন্যান্য প্রকল্পগুলো হল- অতিরিক্ত ২৮৮ কোটি ৭ লাখ টাকা ব্যয়ে ২০টি মিটার গেজ ডিজেল ইলেক্ট্রিক লোকোমোটিভ এবং ১৫০টি মিটার গেজ যাত্রীবাহী ক্যারেজ সংগ্রহ (প্রথম সংশোধিত); ৪৮১ কোটি ৮৯ লাখ টাকা ব্যয়ে কাশিনাথপুর-দাশুরিয়া-নাটোর-রাজশাহী-নবাবগঞ্জ-কানসাট-সোনামসজিদ-বালিয়াদিঘি সীমান্ত জাতীয় মহাসড়কের যথাযথ মান উন্নয়ন; ৩৭১ কোটি ৩২ লাখ টাকা ব্যয়ে সরকারি মৎস্য খামারের সক্ষমতা বৃদ্ধি ও মৎস্য উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য অবকাঠামোগত উন্নয়ন প্রকল্প (প্রথম পর্যায়); ২৩২ কোটি ৮৩ লাখ টাকা ব্যয়ে কক্সবাজার জেলায় বাংলাদেশ মৎস্য উন্নয়ন করপোরেশনের ফিশ ল্যান্ডিং সেন্টারের উন্নয়ন; অতিরিক্ত ১৬৬ কোটি ৮৩ লাখ টাকা ব্যয়ে অবকাঠামো, উন্নত দক্ষতা ও তথ্যের প্রবেশাধিকারের মাধ্যমে দুর্বল জনগোষ্ঠীর জন্য টিকে থাকার সামর্থ বৃদ্ধি এবং অতিরিক্ত ১ হাজার ৪৪ কোটি ৬০ লাখ টাকা ব্যয়ে আটটি বিভাগীয় শহরে পূর্ণাঙ্গ ক্যান্সার, হার্ট ও কিডনি রোগের চিকিৎসা কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা (প্রথম সংশোধিত)।
আরও পড়ুন:কোনো ধরনের দুর্নীতিকে প্রশ্রয় দেবেন না বলে জানিয়েছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) নবনিযুক্ত উপাচার্য অধ্যাপক ডা. দীন মোহাম্মদ।
তিনি বলেছেন, ‘আমি কোনো দুর্নীতি করব না। কোনো দুর্নীতি প্রশ্রয়ও দেব না। আমি মানুষ হিসেবে ভুল করতেই পারি, তবে ভুল হলে ধরিয়ে দেবেন। আমার কাজের গতি যেন ত্বরান্বিত হয়, সে ব্যাপারে সহযোগিতা করবেন।’
বৃহস্পতিবার দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের ডা. মিল্টন হলে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন তিনি। এর আগে দুপুর ১২টার দিকে উপাচার্যের কার্যালয়ে দায়িত্ব গ্রহণ করেন নতুন উপাচার্য।
দায়িত্ব নিয়েই সবার প্রতি সহযোগিতার আহ্বান জানিয়ে উপাচার্য বলেন, ‘আমি আপনাদেরই লোক, আমি বঙ্গবন্ধুর লোক, আমি প্রধানমন্ত্রীর লোক। আমাকে সবাই সহযোগিতা করবেন, ভুল হয়ে ধরিয়ে দেবেন। তবে কেউ আমাকে পিছু টানবেন না।’
তিনি বলেন, ‘আমি কারও অন্যায় আবদার শুনব না। সবাইকে নিয়ে একসঙ্গে কাজ করতে চাই। প্রশাসনিক ক্ষমতা দেখাতে নয়, আমি আপনাদের বন্ধু হয়ে কাজ করতে চাই। আমি আপনাদের পাশে থেকে সব সমস্যা সমাধান করব।’
চিকিৎসকদের উদ্দেশে নতুন উপাচার্য বলেন, ‘আপনাদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব পালন করলেই আমি সবচেয়ে খুশি হব। অন্যকিছু দিয়ে আমাকে খুশি করা যাবে না। কেউ দায়িত্ব পালন করতে না পারলে দায়িত্ব থেকে সরে যেতে হবে। যিনি চ্যালেঞ্জ নিয়ে কাজ করতে পারবেন, তিনিই দায়িত্ব নেবেন।’
তিনি আরও বলেন, ‘ডা. শারফুদ্দিন আহমেদ আমার বন্ধু। তিনি আমাকে দায়িত্ব বুঝিয়ে দিয়ে বিদায় নিয়েছেন। আমি শারফুদ্দিন আহমেদকে শুভেচ্ছা জানাই।’
ডা. দীন মোহাম্মদ বলেন, ‘আমি সুনির্দিষ্ট কোনো গ্রুপের লোক নই। আমি কোনো ধরনের গ্রুপে যেতে চাই না। এ বয়সে আমার কোনো গ্রুপিংয়ের প্রয়োজন নেই। আমাকে যে আস্থা এবং বিশ্বাস নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এখানে পাঠিয়েছেন, আমি সেটাকে মূল্যায়ন করতে চাই।’
উদ্বোধনের দীর্ঘদিন পরও সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতাল চালু না হওয়া প্রসঙ্গে নতুন উপাচার্য বলেন, ‘সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতাল চালু করা একটা বড় চ্যালেঞ্জ।’ এ বিষয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী ও সচিবের সঙ্গে কথা হয়েছে বলে জানান তিনি।
উপাচার্য বলেন, ‘এই বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে আমার দায়বদ্ধতা আছে। আমি বিদেশ থেকে অভিজ্ঞ চিকিৎসক-ট্রেইনারদের নিয়ে এসে আমাদের চিকিৎসকদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করব। আশা করি, সেবায় প্রতিষ্ঠানটি বিশ্বের অন্যতম জায়গায় অবস্থান করবে।’
বিশ্ববিদ্যালয়টিকে বিশ্বের অন্যতম একটি প্রতিষ্ঠানে পরিণত করা উপাচার্য হিসেবে তার একমাত্র অ্যাজেন্ডা বলে উল্লেখ করেন তিনি।
নোবেল বিজয়ী প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে ইউনেস্কো ‘ট্রি অফ পিস’ পুরস্কার প্রদান করেনি বলে শিক্ষামন্ত্রীর দাবির একদিন পর এ বিষয়ে বিবৃতি দিয়েছে ইউনূস সেন্টার।
বৃহস্পতিবার প্রকাশিত ওই বিবৃতিতে ইউনূস সেন্টার জানিয়েছে, ২০২৪ সালের ১৪-১৬ মার্চ প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূসকে আজারবাইজানের বাকুতে অনুষ্ঠিত বাকু ফোরাম একাদশে বিশিষ্ট বক্তা হিসেবে আমন্ত্রণ জানানো হয়।
বিবৃতিতে বলা হয়, নিজামি গানজাভি ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার থেকে অধ্যাপক ইউনূসকে পাঠানো বাকু ফোরামের অফিশিয়াল অনুষ্ঠানসূচিতেও অধ্যাপক ইউনূস ইউনেস্কোর পুরস্কার গ্রহণ করবেন বলে উল্লেখ করা হয়েছিল। অধ্যাপক ইউনূসকে বাকু ফোরামের সমাপনী নৈশভোজে যোগদানের বিষয়টি বিশেষভাবে মনে করিয়ে দেওয়া হয়, যাতে তিনি ‘ট্রি অফ পিস’ পুরস্কারটি গ্রহণের জন্য মঞ্চে সশরীর উপস্থিত থাকেন।
ইউনূস সেন্টার সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে ইউনেস্কোর পুরস্কারের বিষয়টি উল্লেখ করে। অধ্যাপক ইউনূসকে প্রদত্ত ‘ট্রি অফ পিস’ ২০১৪ সালে প্রধানমন্ত্রীকে প্রদত্ত পদকের একই ভাস্করের একই ভাস্কর্য।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, এর আগে ২০২৩ সালের জুনে অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস ইউনেস্কোর প্রধান কার্যালয় পরিদর্শনের সময় ইউনেস্কো এবং অধ্যাপক ইউনূস প্রতিষ্ঠিত আন্তর্জাতিক সংগঠন ইউনূস স্পোর্টস হাবের মধ্যে একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়, যার উদ্দেশ্য ছিল ইউনেস্কোর ফিট ফর লাইফ ফ্ল্যাগশিপের অধীন টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত করতে উভয় প্রতিষ্ঠানের একসঙ্গে কাজ করে যাওয়া।
এর আগে বুধবার শিক্ষামন্ত্রী ও বাংলাদেশ ইউনেস্কো কমিশনের চেয়ারম্যান মহিবুল হাসান চৌধুরী বলেন, “নোবেল বিজয়ী প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূসকে ইউনেস্কো ‘ট্রি অফ পিস’ পুরস্কার দেয়নি।”
তিনি বলেন, “আজারবাইজানের গঞ্জাভি ফাউন্ডেশনের আমন্ত্রণে ড. ইউনূসকে ইসরাইলের একজন ভাস্কর ‘ট্রি অফ পিস’ পুরস্কারে ভূষিত করেন।”
ইউনেস্কো থেকে পুরস্কার পেয়েছেন বলে ড. ইউনূস যে দাবি করেছেন তা অসত্য বলে দাবি করেন মন্ত্রী।
আরও পড়ুন:শান্তিতে নোবেলজয়ী হয়েও ড. ইউনূস ফিলিস্তিনের গাজায় ইসরায়েলি গণহত্যার পক্ষ নিয়েছেন বলে মন্তব্য করেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ। তিনি বলেছেন, হত্যাযজ্ঞে নিশ্চুপ থেকে এবং একজন ইসরায়েলির দেয়া পুরস্কার নিয়ে ড. ইউনূস প্রকারান্তরে গণহত্যায় সমর্থন দিয়েছেন। আর ইউনূস সেন্টার এটিকে ইউনেস্কোর পুরস্কার উল্লেখ করে মিথ্যাচার করছে, যা খুবই দুঃখজনক।
রাজধানীর সেগুনবাগিচায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে বৃহস্পতিবার মতবিনিময়কালে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে ড. হাছান মাহমুদ এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, ‘ইউনূস সেন্টারের মিথ্যাচারে আমি বিষ্মিত, হতবাক। সম্প্রতি আজারবাইজানের বাকুতে একটি সম্মেলনে মিজ হেদভা সের নামে একজন ইসরায়েলি ভাস্বর ড. ইউনুসকে একটি পুরস্কার দিয়েছেন। এ সম্মেলনে ইউনেস্কো কোনোভাবে জড়িত ছিল না।
‘এই পুরস্কার ইউনেস্কোর পক্ষ থেকে তো নয়ই, একজন ব্যক্তির পক্ষ থেকে দেয়া হয়েছে। আর ইউনূস সেন্টার সেটিকে ইউনেস্কোর পক্ষ থেকে দেয়া হয়েছে বলে মিথ্যাচার ও অপপ্রচার করেছে। তবে এটিই প্রথম নয়, এর আগেও এ ধরনের মিথ্যাচার ইউনূস সেন্টারের পক্ষ থেকে করা হয়েছে।’
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘ড. ইউনূস শান্তিতে নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন। ওদিকে গাজায় আজ নির্বিচার হত্যাযজ্ঞ চলছে, নারী ও শিশুদের হত্যা করা হচ্ছে। এ নিয়ে তিনি একটি শব্দও উচ্চারণ করেননি, প্রতিবাদ করেননি।
‘বরং এই সময়ে তিনি একজন ইসরায়েলির কাছ থেকে পুরস্কার গ্রহণ করেছেন। এর অর্থ কি এটাই নয় যে ড. ইউনূস প্রকারান্তরে গণহত্যায় সমর্থন দিয়েছেন? এটি অত্যন্ত দুঃখজনক।’
সীমান্ত হত্যায় বিজিবি’র মাধ্যমে প্রতিবাদ
মতবিনিময় অনুষ্ঠানে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেন, ‘২৫ মার্চ মধ্যরাতে লালমনিরহাট ও ২৬ মার্চ ভোরে নওগাঁ সীমান্তে ভারতের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফের গুলিতে দুই বাংলাদেশি নিহত হওয়ার ঘটনায় বিজিবি’র মাধ্যমে প্রতিবাদ জানানো এবং সীমান্তে পতাকা বৈঠকও হয়েছে।
তিনি বলেন, ‘বিষয়টি নিয়ে আমরা অনেকদিন ধরেই ভারতের সঙ্গে আলোচনা করে আসছি। সম্প্রতি ভারত সফরেও এ নিয়ে দ্বিপাক্ষিক বৈঠকগুলোতে গুরুত্বসহ আলোচনা করেছি। সেই প্রেক্ষিতে সীমান্তে এখন বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই নন-লেথাল বা প্রাণঘাতী নয় এমন অস্ত্র ব্যবহার করা হয়। রাবার বুলেটে অনেকে আহত হন; কিন্তু প্রাণহানি কমে এসেছে। তবে আমাদের লক্ষ্য প্রাণহানিকে শূন্যের কোটায় নিয়ে আসা।’
নাবিক ও জাহাজ উদ্ধারে নানামুখী তৎপরতা চলছে
সাংবাদিকদের আরেক প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘সোমালি জলদস্যুদের কবল থেকে বাংলাদেশি জাহাজ এমভি আব্দুল্লাহর নাবিকদের নিরাপদে উদ্ধার ও জাহাজটিকে মুক্ত করাই আমাদের মূল উদ্দেশ্য।’
তিনি বলেন, ‘জাহাজ সম্পর্কে শুধু এটুকু বলতে চাই, নাবিকদের মুক্ত করার জন্য আমরা তাদের সঙ্গে যোগাযোগে আছি। আমরা নানামুখী তৎপরতা চালাচ্ছি। আমরা অনেকদূর এগিয়েছি।’
জাহাজে খাদ্য সংকট নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী জানান, জাহাজটিতে খাদ্য সংকট নেই। এর আগে তিন মাস ধরে জলদস্যুদের কবলে থাকা অন্য জাহাজেও খাদ্য সংকট ছিল না।
আরও পড়ুন:
মন্তব্য