দাম জানিয়ে দেয়ার কারণে চীন উদ্ভাবিত সিনোফার্মের টিকা প্রাপ্তি নিয়ে যে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছিল, তা কেটে গেছে বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন।
নিউজবাংলাকে তিনি জানিয়েছেন, বাংলাদেশ দুঃখ প্রকাশ করে চিঠি দেয়ার পর ভুল-বোঝাবুঝির অবসান হয়েছে। বাংলাদেশ ১০ ডলারেই টিকা পাবে বলে আশা করছেন তিনি।
চীন সরকারের আনুষ্ঠানিক বক্তব্য পাওয়া না গেলেও ঢাকায় দেশটির দূতাবাসের উপকমিশনার হাওলাং ইয়ান নিশ্চিত করেছেন বাংলাদেশ টিকা পাবে।
চীনের সঙ্গে টিকা আলোচনা যেভাবে
অক্সফোর্ড উদ্ভাবিত করোনার টিকার জন্য নির্ভর করেছিল ভারতের সিরাম ইনস্টিটিউটের ওপর। সেখান থেকে ৩ কোটি ৪০ লাখ টিকা কেনার চু্ক্তি হয়েছিল। এর বাইরে বিশ্বজুড়ে ন্যায্যতার সঙ্গে টিকা বিতরণে গড়ে ওঠা জোট কোভ্যাক্স থেকে পাওয়ার কথা ছিল আরও সাত কোটির বেশি টিকা।
কিন্তু কোভ্যাক্স কোনো টিকা দেয়নি। সিরাম থেকে ৭০ লাখ পাওয়ার পর আর কোনো টিকা আসেনি। আর সে দেশ থেকে উপহার হিসেবে পাওয়া গিয়েছিল আরও ৩৩ লাখ টিকা।
এই এক কোটি তিন লাখ টিকার সবই প্রায় শেষ। আর টিকাস্বল্পতায় প্রথম ধাপে যে ৬২ লাখ মানুষকে টিকা দেয়া হয়েছিল, তাদের সবাইকে দ্বিতীয় ডোজ দেয়া যায়নি।
সিরাম থেকে টিকা প্রাপ্তির অনিশ্চয়তার মধ্যে সরকার চীন ও রাশিয়ার কাছ থেকে টিকা নিয়ে আসার যে চেষ্টা করে। টিকা আমদানির পাশাপাশি দেশে উৎপাদন নিয়েও চেষ্টা চলছে।
যে কারণে অচলাবস্থা
চীনের টিকা কেনার প্রস্তুতি যখন এগিয়ে চলেছে, তখন এই বিষয়টিতে অনিশ্চয়তা চলে আসে এক সরকারি কর্মকর্তার কারণে।
চীনের সিনোফার্মের দেড় কোটি টিকা আনতে চায় সরকার। ২৭ মে চীনের কাছ থেকে দেড় কোটি টিকা কেনার প্রস্তাব অনুমোদন দেয় ক্রয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি।
সিরাম ইনস্টিটিউট থেকে চার ডলারে টিকা কেনার চুক্তি হওয়ার পর এই টিকার দাম বেশি হয়েছে কি না, এ নিয়ে তুমুল বিতর্ক হয়েছে বাংলাদেশে। সরকারবিরোধীদের দাবি, অন্যান্য দেশ যে টাকায় টিকা কিনছে, বাংলাদেশ দিয়েছে এর চেয়ে বেশি।
চীনের কাছ থেকে টিকা কেনার আলোচনার সময় দাম কত হবে, এ বিষয়ে কোনো কিছুই বলা হচ্ছিল না।
তবে সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠকের পর এই বিষয়টি নিয়ে তথ্য পাওয়া যায়। বৈঠক শেষে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব ড. শাহিদা আকতার বলেন, ‘চীন থেকে প্রতি চালানে ৫০ লাখ করে তিন ধাপে দেড় কোটি ডোজ করোনার টিকা কেনার নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়েছে। এক ডোজ টিকা ১০ ডলার ধরে হিসাব করলে দেড় কোটি ডোজ আনতে সরকারের খরচ হবে ১ হাজার ২৬৭ কোটি টাকা। সরাসরি ক্রয় পদ্ধতিতে এ টিকা কেনা হবে।’
চুক্তি হওয়ার আগেই দাম গণমাধ্যমে প্রকাশ হয়ে পড়ায় তৈরি হয় জটিলতা।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আবুল বাশার খুরশীদ আলম বলেন, ‘তারা (চীন) বারবার বলেছিল এই দাম কারো কাছে না বলতে। দাম প্রকাশের পর ইন্দোনেশিয়াসহ বেশ কিছু দেশ চীনের কাছ থেকে বেশি দামে টিকা নিতে আপত্তি জানিয়েছে। টিকার দামের বিষয়টি নন-ডিসক্লোজেবল ছিল। সাংবাদিকরা কীভাবে কীভাবে বের করে ফেলেছেন। এখন তারা (চীন) আমাদের চাপাচাপি করছে। চীন আমাদের লো-প্রাইসে (কম দামে) টিকা দিচ্ছে, তবে দাম প্রকাশ হওয়ার পর জটিলতা বাড়ছে।’
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এক কর্মকর্তা নিউজবাংলাকে জানান, টিকার দাম গণমাধ্যমে আসার কারণে চুক্তি অনুযায়ী ১০ ডলারে টিকা পাওয়া নিয়ে শঙ্কা দেয়া দিয়েছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে বেইজিংকে এ বিষয়ে একটি চিঠি দেয়া হয়েছে। এতে বেইজিংয়ের কাছে দুঃখ প্রকাশ করা হয়েছে। ইচ্ছাকৃতভাবে টিকার দাম প্রকাশ করা হয়নি বলে চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে।
পাশাপাশি টিকার দাম জনসমক্ষে প্রকাশ করার কারণে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব শাহিদা আকতারকে তার পদ থেকে সরিয়ে বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওএসডি) করা হয়।
যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদমাধ্যম ভয়েজ অব আমেরিকার এক প্রতিবেদনে বলা হয়, এই তথ্য প্রকাশ হয়ে যাওয়ার পর শ্রীলঙ্কাসহ বেশ কিছু দেশও একই দামে টিকা চাইছে। তাদের সঙ্গে ১৫ ডলারে টিকা দেয়ার আলোচনা চলছিল।
যা বলছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী
বাংলাদেশ দুঃখ প্রকাশ করে চিঠি পাঠানোর পর চীনের অবস্থান কী- এ বিষয়ে জানতে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেনের সঙ্গে কথা বলে নিউজবাংলা।
তিনি বলেন, ‘টিকা নিয়ে চীনের সঙ্গে যে ঝামেলা হয়েছিল, সে ঝামেলার মীমাংসা হয়েছে। তারাও একটু দুঃখ প্রকাশ করেছে। শুরুর দিকে তারাও তো একটা ঝামেলা করেছিল। আমরাও ভুল করেছি।’
তাহলে বাংলাদেশ কী মূল্যে টিকা পাচ্ছে, এ প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘ইনশা আল্লাহ আশা করা যায় ১০ ডলারে টিকা আমরা পাব।’
চীন দূতাবাসের যে বক্তব্য
এই বিষয়টি নিয়ে এখনও চীন সরকার আনুষ্ঠানিক কোনো তথ্য দেয়নি।
তবে শনিবার ঢাকায় চীন দূতাবাসের উপকমিশনার হাওলাং ইয়ান ফেসবুক পেজে একটি পোস্ট দেন, যাতে তিনি নানা প্রসঙ্গ টানেন।
চীন দ্বিতীয় ধাপে উপহার হিসেবে যে ছয় লাখ টিকা বাংলাদেশকে দিতে যাচ্ছে, তা ১৩ জুনের মধ্যে ঢাকায় পৌঁছবে বলে নিশ্চিত করেন তিনি। এর আগে দেশটি উপহার দিয়েছিল পাঁচ লাখ টিকা।
ইংরেজিতে দেয়া পোস্টে চীনের কর্মকর্তা লেখেন, ‘চীন সরকারের উপহারের ছয় লাখ টিকা বাংলাদেশকে ১৩ জুনের মধ্যে পৌঁছে দিতে প্রস্তুতি চলছে।’
অন্য আরেকটি পোস্টে ‘বাংলাদেশের ওপর চীন ক্ষুব্ধ’ বলে ডেইলি স্টারের একটি প্রতিবেদন শেয়ার দিয়ে তিনি এই কূটনীতিক লেখেন, ‘ভাবছি, গণমাধ্যমের এই তথ্য যদি সঠিক হয়, তাহলে বলতে হবে বাংলাদেশের দিক থেকে সব সময় কেন ভুল তথ্য দেয়া হচ্ছে।’
তিনি লেখেন, ‘সত্য বলতে প্রথমত, সিনোফার্ম ও বাংলাদেশের পক্ষে মধ্যে আজ অবধি কোনো চুক্তি হয়নি। দ্বিতীয়ত, যা হয়েছে তা ছিল বাংলাদেশ সরকার ও চীনা সরকারের মধ্যে বাণিজ্যিকভাবে সিনোফার্মের টিকা উৎপাদনের আলোচনা।’
তিনি এও লেখেন যে, ‘শুধু এটুকু বলতে পারি, আমরা আন্তরিকভাবে আশাবাদী যে আমাদের বাংলাদেশি ভাইবোনেরা সঠিক সময়ে সর্বাধিক প্রয়োজনীয় টিকা পাবেন।’
আরও পড়ুন:দেশে গত ২৪ ঘণ্টায় ৩১২টি নমুনা পরীক্ষা করে ১৩ জনের শরীরে করোনাভাইরাস শনাক্ত করা হয়েছে। তবে এ সময়ের মধ্যে কেউ মারা যায়নি। আজ মঙ্গলবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সমন্বিত নিয়ন্ত্রণ কক্ষ থেকে পাঠানো প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানানো হয়। এ দিন প্রতি ১০০ নমুনায় শনাক্তের হার ৪ দশমিক ১৭ শতাংশ বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানায়, ‘২০২০ সালের ১৮ মার্চ থেকে এখন পর্যন্ত দেশে করোনায় মৃত্যু ২৯ হাজার ৫২১ জন। এর মধ্যে চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে এখন পর্যন্ত মৃত্যু হয়েছে ২২ জনের। এছাড়া ২০২০ সালের ৮ মার্চ থেকে মোট শনাক্ত হয়েছে ২০ লাখ ৫২ হাজার ১২৭ জন। এর মধ্যে গত জানুয়ারি থেকে এখন পর্যন্ত শনাক্ত হয়েছেন ৫৮২ জন।
এডিশ মশাবাহিত ডেঙ্গু রোগে আক্রান্তের সংখ্যা ক্রমেই বেড়ে চলেছে। সারা দেশে মশা নিধন কার্যক্রমের দুর্বলতার কারণে ডেঙ্গু পরিস্থিতি উদ্বেগজনক মোড় নিয়েছে। চলতি বছরের মে মাসের তুলনায় জুন মাসে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা প্রায় তিনগুণ বেড়েছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের দেওয়া পরিসংখ্যান বিশ্লেষণে দেখা যায়, বছরের শুরুর দিকে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা তুলনামূলকভাবে কম ছিল। জানুয়ারিতে ১,১৬১ জন, ফেব্রুয়ারিতে ৩৭৪, মার্চে ৩৩৬ এবং এপ্রিলে ৭০১ জন হাসপাতালে ভর্তি হন। তবে মে মাস থেকে পরিস্থিতির অবনতি হতে শুরু করে এবং জুনে এসে তা ভয়াবহ রূপ নেয়। আশঙ্কার বিষয় হলো, ঢাকার বাইরের জেলাগুলোতে, বিশেষ করে বরগুনায়, ডেঙ্গুর প্রকোপ অনেক বেশি।
এদিকে চলতি বছরের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত দেশে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা ১০ হাজার ২৯৬ জনে পৌঁছেছে। সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে আরও ৪২৯ জন আক্রান্ত হয়েছেন। এ সময়ে কারও মৃত্যু হয়নি।
সোমবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুম থেকে পাঠানো এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, নতুন শনাক্ত ৪২৯ জন ডেঙ্গুরোগীর মধ্যে— বরিশাল বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ১৪৯ জন; চট্টগ্রাম বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ৫৭ জন; ঢাকা বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ৬১ জন; ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন ৪২ জন; ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন ৪৫ জন; খুলনা বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ২১ জন ও রাজশাহী বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ৫৪ জন।
গত ২৪ ঘণ্টায় সুস্থ হয়ে হাসপাতাল ছাড়পত্র পেয়েছেন ৩৫৮ জন রোগী। চলতি বছরে এ পর্যন্ত মোট ৯ হাজার ৮৭ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী সুস্থ হয়ে হাসপাতাল ছেড়েছেন।
চলতি বছরের ৩০ জুন পর্যন্ত ডেঙ্গু আক্রান্তদের মধ্যে পুরুষ ৫৯ দশমিক ১ শতাংশ এবং নারী ৪০ দশমিক ৯ শতাংশ।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানায়, গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে কোনো মৃত্যুর ঘটনা না ঘটলেও চলতি বছরে এখন পর্যন্ত ৪২ জন মারা গেছেন। মৃতদের মধ্যে একজন রাজশাহী বিভাগের বাসিন্দা।
এদিকে বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করে বলছেন, এডিস মশার বিস্তার এখনই নিয়ন্ত্রণ করা না গেলে পরিস্থিতি নাগালের বাইরে চলে যেতে পারে। বিশেষ করে রাজধানীর বাইরের এলাকাগুলোতে জরুরি ভিত্তিতে ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের কীটতত্ত্ববিদ অধ্যাপক কবিরুল বাশার গণমাধ্যমকে বলেন, 'মে মাসের তুলনায় জুনে আক্রান্তের সংখ্যা তিনগুণ হয়েছে। এই ধারা অব্যাহত থাকলে জুলাইয়ে এ সংখ্যা চার থেকে পাঁচগুণ এবং আগস্টে দশগুণ পর্যন্ত বাড়তে পারে।'
প্রসঙ্গত, ২০২৪ সালের জানুয়ারি থেকে ৩০ জুন পর্যন্ত দেশে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১০ হাজার ২৯৬ জনে। এর আগে ২০২৩ সালের পুরো বছরে দেশে ডেঙ্গু আক্রান্ত হন ৩ লাখ ২১ হাজার ১৭৯ জন এবং মারা যান ১ হাজার ৭০৫ জন। ২০২৪ সালের পুরো বছরের (১ জানুয়ারি–৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত) সর্বমোট হিসাব অনুযায়ী, ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ১ লাখ ১ হাজার ২১৪ জন এবং মৃতের সংখ্যা ছিল ৫৭৫ জন।
করোনা সংক্রমণের নতুন ঢেউয়ের মধ্যে দেশে আরও ২১ জনের শরীরে প্রাণঘাতী ভাইরাসটি শনাক্ত করা হয়েছে।
রবিবার (২৯ জুন) সকাল ৮টা থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টায় এসব শনাক্ত হয়েছে। তবে, নতুন করে কোনো মৃত্যুর ঘটনা ঘটেনি এই সময়ের মধ্যে।
সোমবার (৩০ জুন) স্বাস্থ্য সেবা বিভাগ এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এই তথ্য জানিয়েছে।
এতে বলা হয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় ৩৮৪ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। পরীক্ষার বিপরীতে শনাক্তের হার ৫ দশমিক ৪৭ শতাংশ।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, এ পর্যন্ত ২০ লাখ ৫২ হাজার ১১৪ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে এখন পর্যন্ত মারা গেছেন ২২ জন। আর দেশে ভাইরাসটিতে মোট মৃত্যু হয়েছে ২৯ হাজার ৫২১ জনের।
গত শনিবার সকাল ৮টা থেকে রোববার সকাল ৮টা পর্যন্ত (একদিনে) ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন আরও ৩৮৩ জন রোগী। এসব রোগীদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ১৩৬ জন আক্রান্ত বরিশাল বিভাগে। একইসঙ্গে এই সময়ে ডেঙ্গুতে আরও একজনের মৃত্যু হয়েছে।
রোববার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুম থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
এতে বলা হয়েছে, হাসপাতালে নতুন ভর্তিদের মধ্যে বরিশাল বিভাগে ১৩৬ জন, চট্টগ্রাম বিভাগে ৫৫ জন, ঢাকা বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ৪৮, ঢাকা উত্তর সিটিতে ৩২ জন, ঢাকা দক্ষিণ সিটিতে ২৮, খুলনা বিভাগে ৪১ জন, ময়মনসিংহ বিভাগে ১০ জন এবং রাজশাহী বিভাগে ৩৩ জন নতুন রোগী ভর্তি হয়েছেন।
এদিকে গত এক দিনে সারাদেশে ৩৪৯ জন ডেঙ্গু রোগী হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র পেয়েছেন। এ নিয়ে চলতি বছর ছাড়পত্র পেয়েছেন ৮ হাজার ৭২৮ জন।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, এবছরের জানুয়ারি থেকে এখন পর্যন্ত সব মিলিয়ে ৯ হাজার ৮৬৭ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। তবে বছরের এখন পর্যন্ত ডেঙ্গুতে মৃত্যু হয়েছে ৪২ জনের।
সারাদেশে করোনা ভাইরাসের নতুন সাব-ভ্যারিয়েন্ট এর সংক্রমণ বৃদ্ধি পাওয়ায় পর সিলেট এ ভাইরাসে আক্রান্ত একজনের মৃত্যু হয়েছে।
শনিবার দুপরে এ তথ্যটি নিশ্চিত করেছে সিলেট বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। নতুন করে করোনার আক্রমন শুরুর পর সিলেটে প্রথম এই কোন রোগী মারা গেলেন।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানায়, করোনায় আক্রান্ত ৬৯ বছর বয়েসি পুরুষ ১৯ জুন শহীদ শামসুদ্দিন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। বৃহস্পতিবার রাতে মারা যান তিনি। এছাড়া সিলেটে এ পর্যন্ত করোনায় আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ২০ জন বলে জানায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন শহীদ শামসুদ্দিন হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডাক্তার মো. মিজানুর রহমান জানান, নিহত ব্যক্তির বাড়ি সিলেট সদর উপজেলায়। তিনি করোনা ছাড়াও আরও অন্যান্য জটিল রোগে আক্রান্ত ছিলেন।
চট্টগ্রামে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে আরও একজনের মৃত্যু হয়েছে; গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে শনাক্ত হয়েছেন আরও ছয়জন। এ নিয়ে চলতি জুন মাসেই জেলায় করোনায় মৃতের সংখ্যা সাতজনে দাঁড়াল।
২৮ জুন চট্টগ্রাম সিভিল সার্জন কার্যালয় থেকে পাঠানো সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টার প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়।
প্রতিবেদনে বলা হয়, জেলার মিরসরাই উপজেলার বাসিন্দা সালেহা বেগম (৪০) নামে এক নারী শুক্রবার নগরের জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। করোনায় আক্রান্ত হওয়ার আগে থেকেই তিনি হৃদরোগসহ নানা জটিলতায় ভুগছিলেন।
এদিকে, সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় ৯১টি নমুনা পরীক্ষা করে ছয়জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। তাদের মধ্যে চারজন নগরের এবং দুজন বিভিন্ন উপজেলার বাসিন্দা।
শনাক্ত হওয়া রোগীদের মধ্যে নগরের শেভরন ডায়াগনস্টিক সেন্টারে চারজন এবং এভারকেয়ার হাসপাতালে দুজনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছিল।
সিভিল সার্জন কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, চট্টগ্রামে চলতি জুন মাসে মোট ১৩০ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। আক্রান্তদের মধ্যে ৬৬ জন পুরুষ, ৬৩ জন নারী ও একজন শিশু রয়েছে।
মশাবাহীত রোগ ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে গত ২৪ ঘণ্টায় বরিশালের দুই জেলায় দুজনের মৃত্যু হয়েছে। একই সময় গোটা বিভাগের সরকারি হাসপাতালগুলোতে ভর্তি হয়েছেন আরও ১০৫ জন আক্রান্ত রোগী। এ নিয়ে বর্তমানে বিভাগের ছয় জেলার সরকারি হাসপাতালগুলোতে ভর্তি থেকে চিকিৎসা নিচ্ছেন ৪৩৫ জন। মৃত্যুবরণ করা দুজন হলেন- বরগুনা জেলার বেতাগী উপজেলার কালিকাবাড়ি এলাকার বাসিন্দা আ. করিম (৫০) ও পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলার টিয়াখালী ইউনিয়নের রাজপাড়া এলাকার মো. ইউসুফ খন্দকার (৭২)। এর মধ্যে আ. করিম বরিশাল শেরইবাংলা চিকিৎসা মহাবিদ্যালয় হাসপাতালে ও বৃদ্ধ মো. ইউসুফ খন্দকার কলাপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। গতকাল শুক্রবার দুপুরে বরিশাল বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ডা. শ্যামল কৃষ্ণ মণ্ডল এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, বর্তমানে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হওয়ার সংখ্যা উদ্বেগ ও আশঙ্কাজনক। এ পরিস্থিতি থেকে বেরোতে হবে। চিকিৎসার চেয়ে প্রতিরোধ জরুরি। তাই মশার বিস্তার রোধ করতে বাড়ির আশেপাশে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করতে হবে। মশার কামড় থেকে নিজেকে রক্ষায় ব্যবস্থা নিতে হবে।
বরিশাল বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্যানুযায়ী, চলতি বছরের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত বরিশাল বিভাগের ছয় জেলার বিভিন্ন হাসপাতালে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে ভর্তি হয়েছেন ৪ হাজার ৩০৫ জন। এদের মধ্যে মৃত্যু হয়েছে ১১ জনের। বর্তমানে চিকিৎসা নিচ্ছেন ৪৩৫ জন।
বরগুনায় আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। মৃত ১১ জনের মধ্যে ছয়জনেরই বরগুনার বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু হয়েছে। শুধু মৃত্যুই নয় এ জেলায় আক্রান্তের সংখ্যাও বেশি, বরগুনা জেলায় এ পর্যন্ত ২ হাজার ৬৩২ জন ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন।
মন্তব্য