× হোম জাতীয় রাজধানী সারা দেশ অনুসন্ধান বিশেষ রাজনীতি আইন-অপরাধ ফলোআপ কৃষি বিজ্ঞান চাকরি-ক্যারিয়ার প্রযুক্তি উদ্যোগ আয়োজন ফোরাম অন্যান্য ঐতিহ্য বিনোদন সাহিত্য শিল্প ইভেন্ট উৎসব ধর্ম ট্রেন্ড রূপচর্চা টিপস ফুড অ্যান্ড ট্রাভেল সোশ্যাল মিডিয়া বিচিত্র সিটিজেন জার্নালিজম ব্যাংক পুঁজিবাজার বিমা বাজার অন্যান্য ট্রান্সজেন্ডার নারী পুরুষ নির্বাচন রেস অন্যান্য আফগানিস্তান ১৫ আগস্ট কী-কেন স্বপ্ন বাজেট আরব বিশ্ব পরিবেশ বিশ্লেষণ ইন্টারভিউ মুজিব শতবর্ষ ভিডিও যৌনতা-প্রজনন মানসিক স্বাস্থ্য অন্যান্য উদ্ভাবন প্রবাসী আফ্রিকা ক্রিকেট শারীরিক স্বাস্থ্য আমেরিকা দক্ষিণ এশিয়া সিনেমা নাটক মিউজিক শোবিজ অন্যান্য ক্যাম্পাস পরীক্ষা শিক্ষক গবেষণা অন্যান্য কোভিড ১৯ ইউরোপ ব্লকচেইন ভাষান্তর অন্যান্য ফুটবল অন্যান্য পডকাস্ট বাংলা কনভার্টার নামাজের সময়সূচি আমাদের সম্পর্কে যোগাযোগ প্রাইভেসি পলিসি

জাতীয়
ভারতে পাচার বাংলাদেশি তরুণীর ভয়বাহ বয়ান
google_news print-icon

ভারতে পাচার বাংলাদেশি তরুণীর ভয়াবহ বয়ান

ভারতে-পাচার-বাংলাদেশি-তরুণীর-ভয়াবহ-বয়ান
রিফাতুল ইসলাম হৃদয় ওরফে টিকটক হৃদয়। ছবি: সংগৃহীত
প্রতারণার ফাঁদে ফেলে টিকটক হৃদয় ভারতে যেসব নারীকে পাচার করেছেন, তাদের একজন পালিয়ে এসে সম্প্রতি মামলা করেছেন ১২ জনের বিরুদ্ধে। ওই তরুণীর এজাহারে উঠে এসেছে নারী পাচার চক্রের নিষ্ঠুর কর্মকাণ্ডের ভয়াবহ চিত্র।

চাকরি দেয়ার কথা বলে এক তরুণীর সঙ্গে পরিচিত হন ভিডিও শেয়ারিং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম টিকটক তারকা রিফাদুল ইসলাম হৃদয়। এরপর টিকটক হ্যাংআউটের জন্য কুষ্টিয়ায় যাওয়ার কথা বলে ওই তরুণীকে তিনি নিয়ে যান সাতক্ষীরায়। আর সেখান থেকে কৌশলে ভারতে পাচার করা হয় তরুণীকে।

ভারতের বেঙ্গালুরুতে নিয়ে ওই তরুণীকে হোটেল ও ম্যাসাজ পারলারে যৌনকর্মী হিসেবে কাজ করতে বাধ্য করা হয়।

টিকটক হৃদয়ের ফাঁদে পড়ে ভারতে পাচার হওয়ার পর ৭৭ দিনের এক ভয়ংকর দুঃস্বপ্নময় সময় পার করে গত মে মাসে কৌশলে পালিয়ে দেশে ফিরে আসেন ওই তরুণী।

ফিরে এসে মঙ্গলবার রাতে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) হাতিরঝিল থানায় মানব পাচার আইনে প্রতিরোধ ও দমন আইনে হৃদয়সহ ১২ জনের ‍বিরুদ্ধে মামলা করেন তিনি।

এদের তিনজনকে মঙ্গলবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে সাতক্ষীরা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। তারা হলেন মেহেদী হাসান বাবু, মহিউদ্দিন ও আবদুল কাদের।

কীভাবে টিকটক হৃদয়ের সঙ্গে পরিচয় এবং কোন কৌশলে তাকে ফাঁদে ফেলে পাচার করা হয়, এর বর্ণনা মামলার এজাহারে জানিয়েছেন ওই তরুণী।

ভারতে পাচার বাংলাদেশি তরুণীর ভয়াবহ বয়ান
ভারতের বেঙ্গালুরু শহর। ছবি: সংগৃহীত

টিকটক হৃদয়ের সঙ্গে যেভাবে পরিচয়

তরুণী জানান, এক বান্ধবীর সঙ্গে হাতিরঝিলে ঘুরতে গেলে হৃদয় যেচে এসে পরিচিত হন তার সঙ্গে।

তিনি এজাহারে বলেন, ‘২০১৯ সালে মার্চ মাসের কোনো একসময়ে আমি আমার বান্ধবী আফরিন (ছদ্মনাম) সাথে হাতিরঝিলের মধুবাগ ব্রিজে ঘুরতে যাই। আফরিনের বাসা মগবাজারে। এ সময় ২০-২৫ বছর বয়সী পাঁচ-ছয়জন ছেলে আমাদের সামনে আসে।

‘তাদের মধ্যে একজন আফরিনের সঙ্গে কথা বলে। তার নাম রিফাদুল ইসলাম হৃদয়। সে আফরিনের সঙ্গে দুয়েকটা কথা বলে আমার পরিচয় জানতে চাইলে আফরিন আমাকে তার বান্ধবী বলে পরিচয় করিয়ে দেয়। রিফাদুল ইসলাম হৃদয় আমার মোবাইল নম্বর ও ফেসবুক আইডি চাইলে আমি দিতে অস্বীকৃতি জানাই।’

তিনি বলেন, ‘মাসখানেক পর বসুন্ধরা সিটির তৃতীয় তলার একটি শোরুমে বিক্রয়কর্মী নিয়োগ দেয়া হবে জেনে আমি চাকরিপ্রার্থী হিসেবে সেখানে যাই। রিফাদুল ইসলাম হৃদয়ও চাকরিপ্রার্থী হিসেবে সেখানে যায়। সেখানে সে আমাকে চিনতে পারে। আমার মোবাইল নম্বর ও ফেসবুক আইডি চায়। আমি মোবাইল নম্বর দিই। ফেসবুক আইডি দিইনি।’

টিকটকের আগ্রহকে কাজে লাগান হৃদয়

ওই তরুণী জানান, হৃদয় পরিচিত হওয়ার পর বিভিন্ন সময়ে তাকে কল করতেন, মেসেজ দিতেন। বিভিন্ন জায়গায় ঘুরতে ডাকতেন। কিন্তু তিনি যাননি। ২০১৯ সালে প্রথম হাতিরঝিলে ও দ্বিতীয়বার বসুন্ধরা সিটিতে তাদের দেখা হয়।

২০২০ সালের প্রথম দিকে মৌচাকের সেন্টার পয়েন্ট মার্কেটের তৃতীয় তলার একটি বুটিক শপে বিক্রয়কর্মী হিসেবে কাজ শুরু করেন ওই তরুণী। হৃদয় সেই খবর পেয়ে সেখানেও কয়েক দিন যান।

বিক্রয়কর্মী নয়, ভালো বেতনে চাকরি পাইয়ে দেয়ার আশ্বাস দেন হৃদয়। এরই মধ্যে ওই তরুণীকে প্রেমের প্রস্তাব দেন তিনি। তা প্রত্যাখ্যান করেন তরুণী।

তরুণী এজাহারে বলেন, ‘আমি প্রেমের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে বাসায় বিয়ের প্রস্তাব পাঠাতে বলি। সে খুব শিগগিরই পারিবারিকভাবে বিয়ের প্রস্তাব পাঠাবে বলে জানায়। এরপর সে আমার সাথে কয়েকবার দেখা করতে চেয়েছে। আমি রাজি হইনি। তবে সে আমাকে ফেসবুকে ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাঠিয়ে তাকে অ্যাড করার জন্য ফোনে অনুরোধ করলে আমি তাকে আমার ফ্রেন্ড লিস্টে অ্যাড করি। মোবাইল ফোনে ও ফেসবুক মেসেঞ্জারে তার সাথে মাঝে মাঝে আমার কথা হতো।’

২০২০ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে রিফাদুল ইসলাম হৃদয় নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লা থানা এলাকায় অ্যাডভেঞ্চার ল্যান্ডপার্কে ‘টিকটক হ্যাংআউট’ পার্টির আয়োজন করেন। হৃদয় মোবাইল ফোনে ও ফেসবুক মেসেঞ্জারে তরুণীকে সেখানে যাওয়ার আমন্ত্রণ জানান। ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, মানিকগঞ্জ ও মুন্সিগঞ্জ থেকে টিকটক তারকারা সেখানে আসবে বলে তরুণীকে জানানো হয়।

তরুণী বলেন, ‘টিকটক নিয়ে আমারও আগ্রহ ছিল। ঢাকা থেকে কীভাবে যাব, জানতে চাইলে হৃদয় জানায়, রিজার্ভ করা বাস ঢাকা থেকে অ্যাডভেঞ্চার ল্যান্ডপার্কে যাবে। যেহেতু আরও অনেকেই যাবে, আমি টিকটক হ্যাংআউট পার্টিতে যেতে রাজি হই। ওই পার্টিতে প্রায় ৭০-৮০ জনের মতো উপস্থিত ছিল। সকাল ১০টা থেকে বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত পার্টি চলে। সবাই অনেক ছবি তোলে।

‘টিকটক তারকা হিসাবে হৃদয়ের বেশ পরিচিতি ছিল। হৃদয় জানায়, টিকটকে ভিডিও বানিয়ে অনেক টাকা ইনকাম করার সুযোগ আছে। সে আমাকে জনপ্রিয় টিকটক তারকা বানানোর আশ্বাস দেয়।’

অ্যাডভেঞ্চার ল্যান্ডপার্কের পার্টি থেকে ফেরার পর তরুণীকে বুটিক শপের চাকরি ছেড়ে দিতে চাপ দেন হৃদয়। তার কাছে ভালো বেতনে দেশে-বিদেশে চাকরির সুযোগ আছে বলে জানান তিনি। গত বছর লকডাউন শুরুর পর হৃদয়ের সঙ্গে অনেক দিন দেখা হয়নি তরুণীর। তবে যোগাযোগ হতো মোবাইল ফোন ও ফেসবুকে।

২০২০ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর গাজীপুরের ‘আফরিন গার্ডেন রিসোর্টে’ হৃদয় একটি পুল পার্টির আয়োজন করে। এতে ৭০০-৮০০ তরুণ-তরুণী অংশগ্রহণ করে। সবাই টিকটক করে এবং হৃদয়ের পরিচিত। হৃদয় ও তার কয়েকজন বন্ধু ফেসবুকে টিকটক গ্রুপ খুলে এই পার্টিতে অংশ নিতে গ্রুপের সদস্যদের আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন। পার্টিতে অংশ নেন ওই তরুণী।

করোনায় বেকার, কুষ্টিয়ায় ফাঁদ

লকডাউনে বুটিক শপের চাকরি হারান ওই তরুণী। তার বাবা অসুস্থ। দীর্ঘদিন কাজ না থাকায় ঋণ করে সংসার চলছিল তাদের। তখন হৃদয়কে একটি চাকরির জন্য অনুরোধ করেন ওই তরুণী। হৃদয় কিছু করবেন বলে আশ্বাস দেন।

এরই মধ্যে চলতি বছরের ১৫ ফেব্রুয়ারি হৃদয় মেসেঞ্জারে নক করে ওই তরুণীকে জানান, কুষ্টিয়ায় বাউল লালন ফকিরের মাজারে টিকটক হ্যাংআউটের আয়োজন করেছে খুলনার একটি টিকটক গ্রুপ। হাতিরঝিল মোড়লবাড়ির সামনে থেকে তিনটি বাস যাবে সকাল ৯টায়।

ওই তরুণী এজাহারে বলেন, ‘যেহেতু ঢাকা থেকে আরও অনেকেই কুষ্টিয়ায় লালন ফকিরের মাজারে যাবে বলে হৃদয় আমাকে জানায়, সে জন্য যেতে রাজি হই।

‘কুষ্টিয়ার টিকটক হ্যাংআউট ১৯ ফেব্রুয়ারি। আমি সকাল সাড়ে ৮টায় রিকশায় করে হাতিরঝিল মোড়লবাড়ির সামনে চলে আসি। গ্রুপের সদস্যদের কাউকে দেখতে না পেয়ে হৃদয়কে মেসেঞ্জারে ফোন করলে সে আমাকে জানায়, রাতে বাস ছাড়ার টাইম চেঞ্জ করে ৭টা ২০ মিনিটে বাস ছেড়ে গেছে। গভীর রাতে গ্রুপে মেসেজ দেয়া হয়েছিল। সে নিজেও টের পায়নি।’

তরুণী উল্লেখ করেন, ‘হৃদয় খুব আফসোস করতে থাকে। এই পার্টিতে না গেলে তার নাকি টিকটক ক্যারিয়ার নষ্ট হয়ে যাবে। তার প্রতিদ্বন্দ্বীরা তার ক্যারিয়ার ধ্বংসের জন্য তাকে পার্টিতে বাদ দেয়ার জন্যই সুকৌশলে গভীর রাতে বাস ছাড়ার টাইম চেঞ্জ করেছে। খুব ইমোশনাল হয়ে সে আমার হাত ধরে বলে যে, সে দমবার পাত্র নয়। সে বলে, যেকোনো মূল্যে সে কুষ্টিয়ায় যেতে চায়। আমি তার সাথে যাব কি না। খুব ইমোশনাল দেখে আমি রাজি হয়ে যাই।’

কুষ্টিয়ার কথা বলে সাতক্ষীরায়

ওই তরুণী হৃদয়ের সঙ্গে কুষ্টিয়া যেতে রাজি হওয়ায় সিএনজিচালিত অটোরিকশায় করে তারা দুজন শ্যামলী যান। সেখানে হোটেলে নাশতা করেন। এরই মাঝে কুষ্টিয়ার গাড়ি আছে কি না, তা দেখতে বেরিয়ে যান হৃদয়।

ভুক্তভোগী তরুণী এজাহারে বলেন, ‘মিনিট দশেক পরে হৃদয় আমাকে দ্রুত বাসে উঠতে বলে। বাস নাকি ছেড়ে যাচ্ছে। হৃদয় ও আমি বাসে উঠি। পাশাপাশি দুই সিটে বসি। কোন বাসে উঠি মনে নেই। বাসে ওঠার কিছুক্ষণ পর আমি ঘুমিয়ে পড়ি। ঘুম থেকে উঠে দেখি বাস থেমে আছে। কুষ্টিয়া পৌঁছাতে কতক্ষণ সময় লাগবে, জিজ্ঞাসা করলে হৃদয় জানায়, “এটা আরিচাঘাট। আরও চার-পাঁচ ঘণ্টা লাগবে।’”

আরিচাঘাট হয়ে ফেরিতে করে নদী পার হওয়ার পর আবার ঘুমিয়ে পড়েন তরুণী। বিকেল সাড়ে পাঁচটার দিকে আবার তার ঘুম ভাঙে। হৃদয় তখন ঘুমাচ্ছিলেন।

তরুণী বলেন, ‘আমি সুপারভাইজারকে জিজ্ঞাসা করি, কুষ্টিয়া পৌঁছাতে আর কতক্ষণ লাগবে। সুপারভাইজার জানায়, এটা কুষ্টিয়ার বাস না। কিছুক্ষণের মধ্যে সাতক্ষীরা লাস্ট স্টপেজে পৌঁছাবে বাস। আমি ধাক্কা দিয়ে হৃদয়ের ঘুম ভাঙাই।

‘সাতক্ষীরার গাড়িতে কেন ওঠা হলো, প্রশ্ন করলে হৃদয় জানায়, বাস চিনতে ভুল হতে পারে। তার কোনো দোষ নেই। কুষ্টিয়া যেতে না পারলে তো তারই ক্ষতি। হৃদয় আমাকে টেনশন করতে নিষেধ করে।’

তরুণীর ভাষ্য অনুযায়ী, সাতক্ষীরার বাসটি একটি সিনেমা হলের সামনে থামে। কিছুক্ষণ পর মাগরিবের আজান হয়। হৃদয় অস্থিরভাবে হাঁটাহাঁটি করতে করতে মোবাইলে কথা বলতে থাকেন।

১০ মিনিট পর ২৫ থেকে ৩০ বছর বয়সী একজন লোক মোটরসাইকেল চালিয়ে হৃদয় ও ভুক্তভোগী তরুণীর কাছে আসেন। হৃদয় লোকটিকে বলেন, ‘আমরা ঢাকা থেকে কুষ্টিয়া যেতে চেয়েছিলাম। ভুল করে সাতক্ষীরা এসেছি। দ্রুত কুষ্টিয়া যাওয়ার কোনো বাস আছে কি না।’

মোটরসাইকেলে আসা লোকটি জানান, সামনে কুষ্টিয়ার লাস্ট বাসটি আছে। ১৫-২০ মিনিটের মধ্যেই বাস ছাড়বে।

ওই ব্যক্তিটি হৃদয় ও তরুণীকে দ্রুত মোটরসাইকেলে চড়তে ইশারা করেন। হৃদয় ও তরুণী মোটরসাইকেলে চড়েন। ১৫ থেকে ২০ মিনিট পর একটি টিনশেড বাড়ির সামনে মোটরসাইকেলটি থামে।

মোটরসাইকেলের চালক তাদের জানান, বাস চলে গেছে। রাতে আর বাস নেই। হৃদয় মোটরসাইকেলচালককে অনুরোধ করেন যেন তাদের শহরে কোথাও থাকার ব্যবস্থা করে দেন।

হৃদয় জানান, তার কাছে ৩০০ টাকা আছে মাত্র। মোটরসাইকেলচালক বলেন, এত কম টাকায় সাতক্ষীরা সদরে কোনো হোটেলে সিঙ্গেল রুম পাওয়া যাবে না। তা ছাড়া দুজনের তো দুই রুম লাগবে।

মোটরসাইকেলচালক পাশের একটি বাসা দেখিয়ে বলেন, সেখানে সস্তায় একটি পরিবারের সঙ্গে থাকা যাবে। সেই বাসায় যেতে অস্বীকৃতি জানান তরুণী।

অভিযোগে তরুণী বলেন, ‘হৃদয় আমাকে অনুরোধ করে সেই বাসায় যেতে। যেহেতু পরিবারের সাথে থাকা যাবে, কাজেই আমরা দুজন আলাদা রুমে থাকতে পারব। রাতে বন্ধুবান্ধবদের সাথে কথা বলে সে বিকাশ অ্যাকাউন্টে টাকা নেবে। সকালে সেই টাকা ক্যাশ আউট করে কুষ্টিয়ায় যাবে।

‘আমার কাছেও তেমন টাকাপয়সা ছিল না। যেহেতু হৃদয়ের কাছে পর্যাপ্ত টাকা নেই এবং সেই বাসাটিতে বাসায় পরিবারের সাথে আলাদা রুমে থাকা যাবে, তাই আমি সেই বাসায় থাকতে রাজি হই।’

বাড়িটি ভারতে পাচারের ট্রানজিট পয়েন্ট

তিন কক্ষের এই বাড়িটির মালিক আলম। সেখানে তার স্ত্রী ও দুই সন্তান থাকে। হৃদয় ও তরুণী বাড়িতে ঢোকার কিছুক্ষণ পর হৃদয়ের সমবয়সী আরও তিন তরুণ ও লাবণী (ছদ্মনাম) নামের ২৫ থেকে ৩০ বছর বয়সী এক নারী আসেন। হৃদয় সেই তিন তরুণের সঙ্গে কথা বলেননি। হৃদয়ের সঙ্গে আসা তরুণী ও লাবণীকে একটি কক্ষে থাকতে দেয়া হয়। হৃদয় ও অন্য তিন তরুণ তৃতীয় কক্ষটিতে ঘুমান।

ওই তরুণী এজাহারে বলেন, ‘রাত আড়াইটার দিকে হৃদয় রুমের দরজা ধাক্কাতে ধাক্কাতে আমার নাম ধরে ডেকে দরজা খুলতে বলে। লাবণী ও আমার ঘুম ভাঙে। দরজা খুলে দিলে হৃদয় ও ৩০-৩৫ বছর বয়সী এক লোককে দরজার সামনে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখি। হৃদয় তাকে আনিস ভাই বলে ডাকে। আনিস আমাকে ও লাবণীকে দেখে চলে যায়। আমরা ঘুমিয়ে পড়ি।

‘ভোর সাড়ে পাঁচটার দিকে হৃদয় আবার রুমের দরজা ধাক্কাতে ধাক্কাতে আমার নাম ধরে ডেকে দ্রুত দরজা খুলতে বলে। দরজা খুলে দেখি হৃদয়সহ লাবণীর সঙ্গে আসা অন্য তিন তরুণ রুমের সামনে দাঁড়ানো। হৃদয় ও সেই তিন তরুণ আমাদের দ্রুত রুম থেকে বের হতে বলে। আমরা দ্রুত বের হয়ে দৌড়ে বেশ দূরের একটি বাড়িতে চলে যাই।

‘সেই বাড়িটিতে গিয়ে আমরা ছয়জন একটি রুমে ঢোকামাত্রই হৃদয় দরজা বন্ধ করে দেয়। হৃদয় বলে, পুলিশের গাড়ি এসেছে। আমরা আর ঘুমাইনি। সকাল সাতটার দিকে হৃদয় জানায়, বাইরে পুলিশ ঘোরাঘুরি করছে। পুলিশ না চলে গেলে বাড়ি থেকে বের হওয়া যাবে না।’

ভারতের সীমান্ত দেখানোর ফাঁদ

সকাল ৮টার দিকে ৫০ থেকে ৫৫ বছর বয়সী এক লোক ছয়জনের নাশতা নিয়ে আসেন। তার নাম আবদুল কাদের। তিনি জানান, সামনেই ভারতের বর্ডার। প্রাকৃতিক দৃশ্য নাকি খুব সুন্দর। এই এলাকায় এলে কেউ সেখানে না ঘুরে ফেরে না।

তরুণী বলেন, ‘আমার কোনো আগ্রহ ছিল না। একটু পরেই হৃদয় এসে আবদুল কাদেরকে বলল, ভারতীয় বর্ডার কতদূর, সেখানে ছবি তোলার মতো ভালো কোনো দৃশ্য আছে কি না। আবদুল কাদের হৃদয়কেও একইভাবে জানাল, সেখানকার দৃশ্য খুব সুন্দর। ছবি তোলার জন্য অনেকেই দূর-দূরান্ত থেকে সেখানে যায়।

‘যেহেতু হৃদয় টিকটক করে, সে ভারতীয় বর্ডারের কাছে গিয়ে ছবি তুলতে চায়, আমাকে তার সাথে যেতে অনুরোধ করে। আবদুল কাদেরকে অনুরোধ জানায়, ভারতীয় বর্ডারের কাছাকাছি যাওয়ার ব্যবস্থা করে দেয়ার জন্য। আবদুল কাদের আমাদেরকে ভারতীয় বর্ডারের খুব কাছাকাছি নিয়ে যাওয়ার আশ্বাস দেয়।’

সীমান্তের পথে যাত্রা শুরু

দুপুর ১২টার দিকে আবদুল কাদের দুই সেট ছেঁড়া জামাকাপড় নিয়ে এসে দুই তরুণীকে পরতে বলে। ছেঁড়া জামাকাপড় না পরলে নাকি ভিতরে যাওয়া যায় না।

ওই তরুণী বলেন, ‘প্রায় ১০-১৫ মিনিট পর দুটি লাল মোটরসাইকেল নিয়ে ২৫-৩০ বছর বয়সী দুজন পুরুষ লোক আসে। দুজনের নাম মেহেদী হাসান বাবু ও মহিউদ্দিন। মেহেদী হাসান বাবুর বাবার নাম আবদুল কাদের। দুজন মোটরসাইকেল রেখে আমাদেরকে দ্রুত বের হতে বলে।’

হৃদয়, ভুক্তভোগী তরুণী, লাবণী, লাবণীর সঙ্গে আসা তিন ছেলে মেহেদি হাসান বাবু, মহিউদ্দিন ও আবদুল কাদের সীমান্তের দিকে হাঁটতে থাকেন।

ওই তরুণী বলেন, ‘১০-১৫ মিনিট হাঁটার পর এক জায়গায় দেখি, আমার বয়সী চারজন মেয়ে ও ৩০ থেকে ৩৫ বছর বয়সী এক পুরুষ লোক দাঁড়িয়ে আছে। তার নাম হারুন। আনিস সালাম দিয়ে আমাদের বলে, সামনে কোনো সমস্যা হবে না। সে বলে রেখেছে। মেহেদী হাসান বাবু, মহিউদ্দিন ও হারুনকে আনিস নির্দেশ দেয় আমরা যেন সহি-সালামতে সেখানে ঘুরতে পারি।

‘আনিস ও আবদুল কাদের এবং লাবণীর সাথে থাকা তিন ছেলে চলে যায়। মেহেদী হাসান বাবু, মহিউদ্দিন ও হারুনের সাথে হৃদয়সহ আমরা ছয়জন হাঁটতে থাকি। ৩০-৪০ মিনিট হাঁটার পর ভারতীয় বর্ডারের সামনে আমরা বসে থাকি। হৃদয় আমাকে জানায়, ভারতীয় সীমানায় ঢুকে সে আমার সাথে সেলফি তুলবে।’

ভারতে পাচার বাংলাদেশি তরুণীর ভয়াবহ বয়ান
ভারতের হায়দরাবাদ শহর। ছবি: সংগৃহীত

কৌশলে সীমান্ত পার

ভুক্তভোগী ওই তরুণী বলেন, ‘প্রায় দুই ঘণ্টা বসে থাকার পর মেহেদী হাসান বাবু, মহিউদ্দিন ও হারুন আমাদের একটা পাকা রাস্তায় তুলে হাঁটতে বলে। পাকা রাস্তার মাথায় দাঁড়ানো ট্রাউজার ও গেঞ্জি পরিহিত এক লোককে দেখিয়ে বলে, আনিস ভাই ওনাকে বলে দিয়েছে। দ্রুত চলে যাও। সে সব ব্যবস্থা করে দেবে। হৃদয়সহ আমরা হেঁটে তার কাছে গেলে সে আমাদের রিসিভ করে।

‘লোকটি দ্রুত হাঁটতে হাঁটতে তাকে অনুসরণ করতে বলে। লোকটি রাস্তা ব্যবহার না করে ক্ষেত-খামারের ওপর নিয়ে হাঁটতে থাকে। আমি কিছুটা ভয় পেয়ে হৃদয়কে এটা কোন জায়গা জিজ্ঞাসা করলে সে এখনও বাংলাদেশে আছি বলে জানায়। জমি ও ক্ষেতের আইল দিয়ে প্রায় দুই-তিন ঘণ্টা হাঁটার পর ট্রাউজার পরিহিত ওই ব্যক্তি লুঙ্গি পরিহিত একজনের কাছে আমাদের বুঝিয়ে দিয়ে চলে যায়।’

লুঙ্গি পরা লোকটির সঙ্গে প্রায় দুই ঘণ্টা হাঁটার পর এক জায়গায় গিয়ে ওই তরুণী চারটি মোটরসাইকেলসহ চারজনকে পান।

হৃদয় তরুণীকে কালো রঙের একটি মোটরসাইকেলে উঠতে বলেন। মোটরসাইকেলের চালকের নাম ছিল বকুল ওরফে ছোট খোকন। তার বয়স ৪০-৪২ বছর। তরুণী ও হৃদয় ছোট খোকনের মোটরসাইকেলে বসেন।

ছোট খোকন জোরে মোটরসাইকেল চালাতে থাকেন। তরুণী ভয় পেয়ে ঢাকায় ফিরতে চাইলে হৃদয় তাকে জানান, কোনো ভয় নেই। তিনিও ঢাকাতেই ফিরবেন।

তরুণী বলেন, ‘১০ থেকে ১৫ মিনিট যাওয়ার পর একটি টিনশেড বাসার সামনে বকুল মোটরসাইকেল থামায়। মিনিট পাঁচেক পরে অন্য একটি মোটরসাইকেল চড়ে লাবণী আসে। লাবণী ও আমাকে ওই বাসায় রেখে হৃদয়, বকুল ওরফে ছোট খোকন মোটরসাইকেলে চড়ে একটু পর আসবে জানিয়ে চলে যায়। সেই বাসার একজন মহিলা আমাকে ও লাবণীকে খাবার ও জামাকাপড় দেয়।

‘খাবার খেয়ে লাবণী ও আমি ঘুমিয়ে পড়ি। রাতে বকুল ওরফে ছোট খোকন এসে লাবণীকে নিয়ে যায়। ঘণ্টাখানেক পর ছোট খোকন আবার এসে হৃদয় খুব কান্নাকাটি করছে জানিয়ে হৃদয়ের কাছে নিয়ে যাওয়ার কথা বলে আমাকে একটি অন্ধকার রুমে নিয়ে যায়। সেই অন্ধকার রুমে লাবণীও ছিল। আমরা দুজনই চিৎকার করে কাঁদতে থাকি। কাঁদতে কাদঁতে লাবণী আমাকে জানায়, মুম্বাইয়ে তার দূরসম্পর্কের চাচার বাসায় যাওয়ার জন্য এই পথে এসেছে।’

তরুণী বলেন, ‘আমাদের চিৎকার ও কান্নাকাটি শুনে বকুল ওরফে ছোট খোকন আমাকে ও লাবণীকে তার নিজের বাসায় নিয়ে রাখে। পরদিন সকালে বকুল লাবণীকে অন্য কোথাও নিয়ে যায়। আমাকে ছোট খোকনের বাসায় রাখা হয়। রাতে হৃদয় অসুস্থ জানিয়ে আমাকে আবার অন্য একটি বাসায় নিয়ে যায় ছোট খোকন। সে বাসায় হৃদয় ছাড়া অন্য কেউ ছিল না।’

শারীরিক সম্পর্ক স্থাপনে বাধ্য করা হয় তরুণীকে

তরুণী এজাহারে বলেছেন, ‘আধার কার্ড বানানোর জন্য সেই বাসায় বকুল আমার ছবি তোলে এবং দরকারি তথ্য লিখে নেয়। এরপর হৃদয় ও ছোট খোকন দুজন মিলে আমাকে জোরপূর্বক শারীরিক সম্পর্ক স্থাপনে বাধ্য করে।

‘আমি বুঝতে পারি হৃদয় কৌশলে আমাকে ভারতে পাচার করেছে। এতক্ষণ পর্যন্ত যা হয়েছে, সবকিছুই পরিকল্পিত। আমি চিৎকার করে আশপাশের লোকজন ও পুলিশকে জানাতে চাইলে হৃদয় ও বকুল আমাকে জানায়, আমি পাসপোর্ট ছাড়া অবৈধভাবে ভারতে প্রবেশ করেছি। তাদের কথামতো না চললে তারা পুলিশকে খবর দিয়ে আমাকে ধরিয়ে দেবে। তাতে আমার ২০ বছর জেল হবে। আমি প্রচণ্ড কান্নাকাটি করতে থাকি। শেষ রাতে তারা দুজন আবার আমাকে শারীরিক সম্পর্ক স্থাপনে বাধ্য করে।’

ওই তরুণী বলেন, ‘পরদিন সকালে ছোট খোকন লাবণীকে নিয়ে আসে। সে-ও কাঁদতে কাঁদতে আমাকে জানায়, রাতে তিনজন তাকে ধর্ষণ করেছে।’

লাবণী ও তরুণীকে আধার কার্ড এবং বেঙ্গালুরুগামী বিমানের টিকিট ধরিয়ে দেয় ছোট খোকন। হৃদয়, ওই তরুণী ও লাবণী ইনডিগো এয়ারলাইনসের ফ্লাইটে বেঙ্গালুরু যান। বিমানবন্দরে তাদের রিসিভ করে সবুজ ও রুবেল নামে দুজন।

বিমানে আসা তিনজনকে আনন্দপুরা সার্কেলে রুবেল ওরফে রাহুল তার বাসায় নিয়ে যান। সেখানে রুবেল ও তার স্ত্রী সোনিয়া থাকেন।

তরুণী মামলার এজাহারে বলেন, ‘হৃদয় ও আমাকে সেই বাসায় ১০ দিন রাখা হয়। হৃদয় রুবেলের সাথে বাসার বাইরে যেত। তবে আমাদের বাসার দরজায় তালা মেরে আটকে রাখা হতো।

‘রুবেলের স্ত্রী সোনিয়ার কাছে আমরা দেশে ফেরার জন্য সাহায্য চাই। তাতে সে তার স্বামীকে বলে ডাবল তালা মারার ব্যবস্থা করে। এরপর হৃদয়সহ আমাকে আনন্দপুরা সার্কেলের একটি পাঁচতলা ভবনের তৃতীয় তলায় নিয়ে যাওয়া হয়। সেই বাসায় আগে থেকেই ইয়াসমিন (ছদ্মনাম-যার নির্যাতনের ভিডিও ভাইরাল হয়) ও তাপসী (ছদ্মনাম) আগে থেকেই ছিল। তাদের দুজনের বাড়িও বাংলাদেশে। পরদিন ইয়াসমিনকে হায়দরাবাদের একটি আবাসিক হোটেলের কাছে পাঠানো হয়। তাপসী খুব কান্নাকাটি করছিল। সে আত্মহত্যার চেষ্টা করে। তাকে প্রচণ্ড মারধর করে অন্য একটি বাসায় নিয়ে যাওয়া হয়।’

বাধ্য করে বানানো হয় যৌনকর্মী

তরুণী বলেন, ‘চার-পাঁচ দিন পর সাগর, হৃদয়, আকিল ও ডালিম এসে আমাকে জানায়, আমাকে কাজে যেতে হবে। চেন্নাইয়ের ওইয়ো হোটেলে আমাকে ১০ দিনের জন্য পাঠানো হবে। আমি যেতে অস্বীকৃতি জানালে হৃদয়, সাগর ও সবুজ আমাকে মারধর করে। আমি চিৎকার করে কাঁদতে থাকলে হৃদয় ও সাগরের সামনে সবুজ আমাকে ধর্ষণ করে।

‘এ সময় হৃদয় আমার নগ্ন ছবি ও ভিডিও ধারণ করে। হৃদয় আমাকে হুমকি দেয়, তাদের কথামতো না চললে আমার নগ্ন ছবি ও আমার পরিবারের সদস্যসহ ঢাকায় পরিচিত সবাইকে পাঠিয়ে দেবে।’

তরুণী বলেন, ‘তিন-চার দিন পর হৃদয়, সবুজ ও সাগর আমাকে একটি মাইক্রোবাসে উঠিয়ে ওইয়ো হোটেলে রেখে আসে। প্রথম দিনেই আমাকে ১৯ জনের সাথে শারীরিক সম্পর্ক করতে বাধ্য করা হয়। আমি অসুস্থ হয়ে পড়ি। হোটেলের লোকজনের কাছে হাত-পা ধরে কান্নাকাটি করি। হোটেলের লোকজন হিন্দিতে বলে, আমাকে দৈনিক ৩০টি কাজ করতে হবে। পাঁচ দিন পর আমি প্রচণ্ড অসুস্থ হয়ে পড়ি। হোটেলের লোক ফোন করলে হৃদয় ও সবুজ আমাকে নিতে আসে। হোটেলের লোকজন সবুজকে অপমান করে।’

তরুণীর বর্ণনা অনুযায়ী, এরপর হৃদয় ও সবুজ ওই তরুণীকে বেঙ্গালুরুর আনন্দপুরা সার্কেলের বাসায় ফিরিয়ে নিয়ে যান। হোটেল থেকে ফেরার পর তরুণী দেখেন, হৃদয় ঢাকা থেকে আরও চার তরুণীকে নিয়ে এসেছেন। হোটেল থেকে ফেরার পর চারজনের সঙ্গে এক কক্ষে থাকতেন ওই ভুক্তভোগী তরুণী।

এরই মধ্যে গত ২৭ মার্চ হৃদয় ওই তরুণীর সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক করতে চান। কিন্তু তরুণী বাধা দেয়ায় তাকে মারধর করেন তিনি। মদের বোতল দিয়ে মাথায় আঘাত করেন। এতে তরুণীর মাথা ফেটে যায়, চারটি সেলাই লাগে। এই অসুস্থতার মধ্যেই সবুজ, হৃদয়, সাগর ও আকিল যৌনকর্মী হিসেবে কাজে যাওয়ার জন্য তরুণীকে চাপ দেন।

ওই তরুণীসহ দুজন নারীকে একটি ম্যাসাজ পারলারে কাজে পাঠান তারা। হায়দরাবাদে ইয়াসমিন যে হোটেলে ছিলেন, সেখানে পাঠানো হয় আরেক মেয়েকে।

পালানোর প্রক্রিয়া শুরু

ভুক্তভোগী তরুণী বলেন, ‘দুই দিন পর আমার প্রচণ্ড ব্লিডিং শুরু হয়। ম্যাসাজ পারলারের লোকজন আমাকে আনন্দপুরা সার্কেলের বাসায় রেখে যান। যেহেতু আমি “কাজ করতে” পারিনি, আমার খাওয়াদাওয়া ও বাসা ভাড়া বাবদ তারা নাকি ৯০ হাজার টাকা পায়। এইখানে কাজ করে শোধ না করা পর্যন্ত আমাকে অন্য একটি বাসায় নিয়ে আটকে রাখা হয়।’

পালানোর জন্য ইয়াসমিনের সহযোগিতা চান ওই তরুণী। ইয়াসমিন বছরখানেক ধরে আছেন সেখানে। সবকিছু চেনেন। ইয়াসমিন প্রথমে রাজি না হলেও পরে জানান, ভুক্তভোগী তরুণীসহ তিনজন পালাতে পারলে যেন কেরালায় যান। তাহলে তিনিও হায়দরাবাদের হোটেল থেকে পালিয়ে কেরালায় যাবেন।

ইয়াসমিনের সহায়তায় ৭ মে বাংলাদেশে ফিরে আসেন ভুক্তভোগী তরুণী।

তরুণীর মাধ্যমে মিলেছে জড়িতদের পরিচয়

ওই তরুণী বলেন, ‘পালানোর পরিকল্পনা করে আমি কাজে যেতে রাজি হই। সবুজ ও হৃদয় আমাকে চেন্নাইয়ের একটি হোটেলে রেখে আসে। একদিন পর সেই হোটেল থেকে আমি পালাতে সক্ষম হই। ৭ মে আমি বাংলাদেশে আসি।’

ওই তরুণী বলেন, তিনি হৃদয়ের কাছ থেকেই তার চক্রের অন্যদের নাম-পরিচয় কৌশলে উদঘাটন করেছেন।

তিনি বলেন, ‘আমার জীবনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে অনিচ্ছা সত্ত্বেও হৃদয়সহ অন্যান্যদের সাথে মিলেমিশে চলার ভান করি। আমাকে পাচারে জড়িত প্রত্যেক ব্যক্তির নাম আমি হৃদয়ের কাছে ফোনে নিই এবং কৌশলে হৃদয়ের মোবাইল থেকে জড়িত ব্যক্তিদের মোবাইল নম্বর সংগ্রহ করে আমার মোবাইলে সেভ করি।’

দেশে ফিরে এসে গত সোমবার রাতে ১২ জনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাত আরও আসামিদের বিরুদ্ধে মামলা করেন ভুক্তভোগী তরুণী।

নাম উল্লেখ করা আসামিরা হলেন রিফাদুল ইসলাম হৃদয়, আনিস, আবদুল কাদের, মেহেদী হাসান বাবু, মহিউদ্দিন, হারুন, বকুল ওরফে ছোট খোকন, সবুজ, রুবেল ওরফে রাহুল, সোনিয়া, আকিল ও ডালিম।

আরও পড়ুন:
টিকটক ভিডিও বানিয়ে আটক ৯
টিকটক গ্রুপে নজরদারি
আবারও টিকটকে নতুন সিইও
পাকিস্তানে আবার নিষিদ্ধ টিকটক
ভারতে টিকটক বন্ধ বাণিজ্য নীতির লঙ্ঘন: চীন

মন্তব্য

আরও পড়ুন

জাতীয়
Give information to the BGB to prevent the infiltration of illegal weapons

অবৈধ অস্ত্রের অনুপ্রবেশ ঠেকাতে বিজিবিকে তথ্য দেওয়ার আহবান

অবৈধ অস্ত্রের অনুপ্রবেশ ঠেকাতে বিজিবিকে তথ্য দেওয়ার আহবান

সম্প্রতি জানা যায় যে, কিছু অসাধুচক্র দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি বিনষ্ট করার উদ্দেশ্যে অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্র অনুপ্রবেশ করানোর অপচেষ্টা চালাচ্ছে। বিজিবির নিজস্ব গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে গত ০৩ মাসে বিজিবি ১৬টি দেশি-বিদেশি পিস্তল, ০২টি রিভলভার, ০২টি এসএমজি, ০৫টি রাইফেল, ১৬টি দেশীয় বন্দুক, ০৩টি শর্টগান, ০৩টি মর্টার শেল, ০৮টি হ্যান্ড গ্রেনেড, ২৭টি অন্যান্য অস্ত্র, ২১টি ম্যাগাজিন এবং ১০০৩ রাউন্ড বিভিন্ন অস্ত্রের গোলাবারুদ জব্দ করেছে।

সীমান্ত দিয়ে দেশে অবৈধ অস্ত্রের অনুপ্রবেশ ঠেকাতে মাঠ পর্যায়ে বিজিবির গোয়েন্দা তৎপরতা ও আভিযানিক কার্যক্রম বৃদ্ধি করা হয়েছে। অবৈধ অস্ত্রের অনুপ্রবেশ রোধে বিজিবির টোল ফ্রি ০১৭৬৯৬০০৫৫৫ নাম্বারে তথ্য দিয়ে সহায়তা করার জন্য সকলের প্রতি অনুরোধ করা যাচ্ছে।

মন্তব্য

জাতীয়
The Chief Advisor awarded the Youth Volunteer Award to 12 youths 

প্রধান উপদেষ্টা ১২ তরুণকে ‘ইয়ুথ ভলান্টিয়ার অ্যাওয়ার্ড’ প্রদান করলেন 

প্রধান উপদেষ্টা ১২ তরুণকে ‘ইয়ুথ ভলান্টিয়ার অ্যাওয়ার্ড’ প্রদান করলেন 

প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস আজ ১২ তরুণকে ‘ইয়ুথ ভলান্টিয়ার অ্যাওয়ার্ড ২০২৫’ প্রদান করেছেন। স্বেচ্ছাসেবামূলক কাজ ও তরুণ প্রজন্মের অনুপ্রেরণামূলক অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ এ পুরস্কার প্রদান করা হয়।

প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের শাপলা হলে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। এ বছর পাঁচটি ভিন্ন ক্যাটাগরিতে তরুণদের এই সম্মাননা প্রদান করা হয়েছে।

পুরস্কারপ্রাপ্তদের মধ্যে জাতীয় মহিলা ফুটবল দলের অধিনায়ক আফঈদা খন্দকারও রয়েছেন।

মন্তব্য

জাতীয়
Madaripur Sadar Parapur is making public suffering from the sandy sand business

মাদারীপুর সদরের পেয়ারপুরে জনদূর্ভোগ তৈরী করে চলছে রমরমা স্তূপকৃত বালুর ব্যবসা

মাদারীপুর সদরের পেয়ারপুরে জনদূর্ভোগ তৈরী করে চলছে রমরমা স্তূপকৃত বালুর ব্যবসা

মাদারীপুর সদর উপজেলার পেয়ারপুর ইউনিয়নের রাস্তার পাশে জনবসতি এলাকায় বালুর স্তূপ করে চলছে রমরমা ব্যবসা। সদর উপজেলার পেয়ারপুর ইউনিয়নের প্রভাবশালী, অর্থ-বিত্ত-বৈভবের মালিক ইলিয়াস ব্যাপারী গং এ ব্যবসা চালিয়ে জনদূর্ভোগ তৈরী করছেন বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা। এর ফলে স্থানীয় বাসিন্দাদের জীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে। জনসাধারণের চলাচলে বিঘ্ন ঘটা থেকে শুরু করে বাড়ি-ঘরে পানি ঢুকে যাওয়ায় অনেক পরিবার গৃহহীণ হওয়ার উপক্রম। এ পরিস্থিতিতে ভুক্তভোগীরা আদালতের দ্বারস্থ হয়েছেন।

​পেয়ারপুর ইউনিয়নের বাসিন্দাদের অভিযোগ, দীর্ঘদিন ধরে স্থানীয় প্রভাবশালী ইলিয়াস ব্যাপারী জনবসতিপূর্ণ এলাকায় বালু বিক্রি করছেন। এর ফলে আঞ্চলিক সড়কগুলো বালুর স্তূপে বেশীরভাগ সময় অবরুদ্ধ থাকে, যা পথচারী ও যানবাহন চলাচলে মারাত্মক সমস্যার সৃষ্টি করে। বিশেষ করে বর্ষা মৌসুমে এ সমস্যা আরো প্রকট আকার ধারণ করে। ​ভুক্তভোগী স্থানীয় বাসিন্দা মোঃ নুরুল হক জমাদ্দার জানান, বালু ব্যবসাস্থলের জমি নিয়ে আমাদের আদালতে মামলা চলছে, বালু ব্যবসার আড়ালে বেরিকেড, কাদাপানি সহ বিভিন্ন সমস্যা তৈরী করে কৌশলে আমাদের বাড়ি থেকে বিতাড়িত করার জন্য বাড়ির সামনে বালুর স্তূপ করে রেখে রমরমা অবৈধ ব্যবসা চালাচ্ছেন ইলিয়াস ব্যাপারী গং। এ কারণে চলাফেরা করাই কঠিন হয়ে পড়েছে। বালুর স্তূপ করে চলাচলের রাস্তা টুকু বন্ধ্ করে দেয়া হয়েছে। সামান্য বৃষ্টি হলেই বালুর সাথে পানি মিশে কাদা হয়ে যায় এবং পানি সরাসরি আমাদের ঘরে ঢুকে যায়। পানির কারনে আমাদের বাড়ি-ঘর বসবাসের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। উক্ত এলাকায় আরেকজন বাসিন্দা আঃ আজিজ জমাদ্দার বলেন, আমাদের ছেলে-মেয়েরা ঠিকঠাকমতো স্কুলে যেতে পারে না, কারণ রাস্তা পুরোটাই পানি ও বালুতে ভরা থাকে। আমরা একাধিকবার আমাদের অসহনীয় দূর্ভোগের কথা স্থানীয় প্রশাসনকে জানিয়েছি, তারা এখানে এলে সাময়িকভাবে তা বন্ধ করা হয় এবং চলে গেলে আবার তা চালু করা হয়। তাই বাধ্য হয়ে আমরা আদালতের কাছে আইনি প্রতিকার চেয়েছি।

​ তারা অবিলম্বে এ অবৈধ বালু বিক্রি ও দূর্ভোগ তৈরীকারী ব্যবসা বন্ধ বা অন্যত্র সরিয়ে নিতে আদালতের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন। এলাকার মানুষের দাবি বালুর ব্যাবসা বন্ধ করে তাদের স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে দেয়া হোক।

​এ বিষয়ে মাদারীপুর সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ওয়াদিয়া শাবাবের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, তারা বিষয়টি সম্পর্কে অবগত এবং আদালতের নির্দেশনা পেলে সে মোতাবেক দ্রুত প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন।

​স্থানীয়রা এখন তাকিয়ে আছেন আদালতের দিকে। কেননা আদালত তাদের আস্থার ও ন্যায়বিচার পাওয়ার স্থল- যেখানে তাদের আশা আইনের শাসন প্রতিষ্ঠিত হবে এবং তারা এ দুঃসহ পরিস্থিতি থেকে মুক্তি পাবেন। উদ্ভূত পরিস্থিতি সম্পর্কে বালু ব্যবসায়ী ইলিয়াস ব্যাপারী কাছে এ ব্যাপারে জানতে চেয়ে মুঠোফোনে কল করলে তার মোবাইল ফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়।

মন্তব্য

জাতীয়
In Madhabpur the locals were injured in the bite of the mad dog

মাধবপুরে পাগলা কুকুরের কামড়ে আহত ৬, আতঙ্কে এলাকাবাসী!

মাধবপুরে পাগলা কুকুরের কামড়ে আহত ৬, আতঙ্কে এলাকাবাসী!

হবিগঞ্জের মাধবপুরে এক পাগলা কুকুরের কামড়ে এ পর্যন্ত অন্তত ৬ জন আহত হয়েছেন।উপজেলার চৌমুহনি ইউনিয়নের কমলপুর গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। এতে শিশুসহ পুরো গ্রামবাসীর মাঝে চরম আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। শিশু-কিশোররা ভয়ে স্কুলে যেতেও সাহস পাচ্ছে না।এ নিয়ে সোমবার (১৫ সেপ্টেম্বর) সকালে স্থানীয় একটি মসজিদে পাগাল কুকুরটি থেকে সাবধান থাকতে ও একে নিধন করতে মসজিদে মাইকিং করে সতর্ক করা হয়।

আহতদের মধ্যে মিলাদ মিয়া ও মনোয়ারা বেগমের অবস্থা আশঙ্কাজনক। তাদের মাধবপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে।

স্থানীয়রা জানান, হঠাৎ এক কুকুর গ্রামে প্রবেশ করে এলোপাতাড়ি কামড়ে একের পর এক মানুষকে আহত করে। আতঙ্কের মাত্রা বাড়তে থাকায় গ্রামবাসীকে সতর্ক করতে মসজিদে মাইকিং করা হয়। তবে কুকুরটিকে এখনও আটক বা নিধন করা যায়নি।

স্থানীয় সেলিম মিয়া বলেন, “পাগলা কুকুরের ভয়ে আমাদের বাচ্চারা স্কুলে যেতে পারছে না।কুকুরটির লাল বর্ণের কুকুরি। আমরা মসজিদ থেকে মাইকিং করেছি। সরকারি উদ্যোগে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়া উচিত।”

এ বিষয়ে মাধবপুরের প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মিঠুন সরকার জানান, “কুকুরকে ধরে র‌্যাবিস টিকা দেয়ার প্রযুক্তি আমাদের নেই। এটি বন বিভাগ করলে করতে পারে। আপাতত এলাকাবাসীকেই প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নিতে হবে।”

এদিকে গ্রামবাসী দ্রুত সরকারি হস্তক্ষেপ ও স্থায়ী সমাধান দাবি করেছেন।

মন্তব্য

জাতীয়
The body of the missing businessman in Comilla recovered

কুমিল্লায় নিখোঁজ ব্যবসায়ীর মরদেহ উদ্ধার

কুমিল্লায় নিখোঁজ ব্যবসায়ীর মরদেহ উদ্ধার

কুমিল্লা নগরীতে নিখোঁজের একদিন পর রেল সড়কের পাশ থেকে জামশেদ ভূঁইয়া নামের এক ব্যবসায়ীর মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। রোববার সন্ধ্যায় শহরতলীর পালপাড়া রেললাইনের পাশের একটি ঝোপ থেকে পুলিশ ওই মরদেহ উদ্ধার করে। জামশেদ ভূঁইয়া কুমিল্লা নগরীর ৩ নম্বর ওয়ার্ড কালিয়াজুরী ভূঁইয়া বাড়ির সাবেক কমিশনার প্রয়াত আব্দুল কুদ্দুস ভূঁইয়া তৃতীয় পুত্র।

মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন কোতয়ালি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মহিনুল ইসলাম।

পরিবারের বরাত দিয়ে পুলিশ জানায়, গত শনিবার সন্ধ্যায় বাসা থেকে মাগরিবের নামাজ আদায় করার জন্য বের হন জামশেদ। এরপর তিনি বাসায় ফেরেননি। এ বিষয়ে পরিবারের পক্ষ থেকে থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করা হয়। রোববার বিকেলের পর রেললাইনের পাশে একটি ঝোপে ওই ব্যক্তির মরদেহ দেখতে পেয়ে পুলিশে খবর দেওয়া হয়। খবর পেয়ে পরিবারের লোকজন মরদেহ শনাক্ত করে।

রাতে কোতয়ালি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মহিনুল ইসলাম সমকালকে বলেন, নিখোঁজের বিষয়ে শনিবার রাতে জামশেদ ভূঁইয়া ভাই থানায় অভিযোগ করেছিলেন। রোববার সন্ধ্যায় আমরা মরদেহ উদ্ধার করেছি। তবে ওই ব্যক্তির শরীরে কোনো আঘাতের চিহ্ন ছিল না। এখনো মৃত্যুর কারণ জানা যায়নি। রহস্য উদঘাটনে পুলিশের একাধিক টিম কাজ করছে। সোমবার কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে মরদেহের ময়নাতদন্ত করা হবে।

মন্তব্য

জাতীয়
The unhappy court to investigate the investigation and asked to do

তদন্ত নিয়ে অসন্তুষ্ট আদালত ‘আপ্রাণ চেষ্টা’ চালাতে বললেন

তদন্ত নিয়ে অসন্তুষ্ট আদালত ‘আপ্রাণ চেষ্টা’ চালাতে বললেন

সাংবাদিক দম্পতি সাগর সরওয়ার ও মেহেরুন রুনি হত্যা মামলার তদন্ত নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করে তা শেষ করতে ‘আপ্রাণ চেষ্টার’ তাগিদ দিয়েছেন আদালত। গতকাল রোববার মামলার তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের জন্য দিন ধার্য ছিল। তদন্তকারী সংস্থা পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) প্রতিবেদন দাখিল করতে পারেনি। এজন্য ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মিনহাজুর রহমান প্রতিবেদনের জন্য আগামী ৩০ নভেম্বর দিন ধার্য করেছেন।

এ নিয়ে সাগর সরওয়ার ও মেহেরুন রুনি হত্যা মামলার তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের তারিখ ১২১তম বার পেছান হলো। আদালতের শেরেবাংলা নগর থানার সাধারণ নিবন্ধন শাখা সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। গতকাল মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পিবিআইর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. আজিজুল আদালতে উপস্থিত হন। বেলা ১২টা ১০ মিনিটে শুনানি শুরু হয়। আদালত আজিজুলের কাছে জানতে চান, তিনি সিআইডিতে আছেন কিনা? আজিজুল জানান, পিবিআইতে আছেন।

আদালততদন্তের অগ্রগতি কতদূর?

কর্মকর্তা– উচ্চ আদালতের নির্দেশে একটি উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন টাস্কফোর্সের মাধ্যমে তদন্ত শুরু হয়। এরপর আমাকে দায়িত্ব দেওয়া হয় তদন্তের। আমি এই মামলা সংশ্লিষ্ট সাংবাদিক, প্রতিবেশী, আত্মীয়স্বজন ও ডিএনএ এক্সপার্টদের জিজ্ঞাসাবাদে অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পেয়েছি। দুজনের মিক্সড ডিএনএ তথ্য পাওয়া গেছে। কিন্তু শনাক্ত করা যাচ্ছে না। এসব কারণে মামলার তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে দেরি হচ্ছে। কিছুদিন আগে এই মামলার তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার নির্ধারিত সময় পার হলেও উচ্চ আদালত থেকে আরও সময় নেওয়া হয়েছে।

বিচারক– যা বুঝলাম, এই মামলার আগের তদন্ত কর্মকর্তা যিনি ছিলেন, তিনিও একই কথা বলেছেন। আপনার তদন্তের অগ্রগতিতে আদালত অসন্তুষ্ট। আপনি আপ্রাণ চেষ্টা করবেন।

২০১২ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি মাছরাঙা টেলিভিশনের বার্তা সম্পাদক সাগর সারোয়ার ও এটিএন বাংলার জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক মেহেরুন রুনিকে হত্যা করা হয়। এরপর নিহত রুনির ভাই নওশের আলম রোমান মামলা করেন।

মন্তব্য

জাতীয়
Locals gave the schoolgirl to the police

স্কুলছাত্রীকে শ্লীলতাহানি, ৫ বখাটেকে পুলিশে দিল এলাকাবাসী

স্কুলছাত্রীকে শ্লীলতাহানি, ৫ বখাটেকে পুলিশে দিল এলাকাবাসী

মানিকগঞ্জের শিবালয়ে এক স্কুলছাত্রীকে শ্লীলতাহানির চেষ্টার অভিযোগে পাঁচ বখাটে পিটিয়ে পুলিশে দিয়েছে স্থানীয়রা। রবিবার (১৪ সেপ্টেম্বর) বিকেলের দিকে উপজেলার ষাইট ঘর তেওতা বটতলা মোড়ে এ ঘটনা ঘটে।

গ্রেপ্তাররা হলেন- উপজেলার তেওতা ইউনিয়নের সাতুরিয়া গ্রামের পান্নু শেখের ছেলে ইমরান শেখ ৩), একই এলাকার আলী চাঁনের ছেলে আশিক খাঁ (২৪), পার্শ্ববর্তী চরধুবলীয়া গ্রামের মৃত বিষা খাঁর ছেলে শিপন খাঁ (২৪), পয়লা গ্রামের তোতা শেখের ছেলে ইয়াছিন শেখ (২২) এবং ভাঙ্গাবাড়ি এলাকার মৃত আজাহার আলীর ছেলে ফরিদ শেখ (২০)। এ ঘটনায় ভুক্তভোগী বাদী হয়ে থানায় নারী ও শিশু নির্য়াতন আইনে একটি মামলা দায়ের করেছেন।

মামলা ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, স্থানীয় একটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির এক ছাত্রী তার বান্ধবীর সঙ্গে রবিবার বিকালের দিকে স্কুল থেকে বাসায় ফিরছিল। পথিমধ্যে আরিচা-জাফরগঞ্জ সড়কের ষাইট ঘর তেওতা আবুলের বটতলা মোড় এলাকায় ইমরান, আশিক, শিপন, ইয়াসিন এবং ফরিদ নামের পাঁচজন বখাটে ওই ছাত্রীকে গতিরোধ করে। এসময় তারা তাকে ওড়না ধরে টান দিয়ে মাটিতে ফেলে দেয় এবং শ্লীলতাহানির চেষ্টা করে। ঘটনার আকস্মিকতায় ভুক্তভোগী ছাত্রী ও তার বান্ধবী আত্মচিৎকার করলে স্থানীয়রা এগিয়ে এসে তাদের উদ্ধার ও বখাটের আটক করে।

এসময় উত্তেজিত হয়ে লোকজন তাদের পিটিয়ে শিবালয় থানা পুলিশকে খবর দেয়। পরে পুলিশ তাদের আটক করে থানায় নিয়ে যায়। এ ঘটনায় ভুক্তভোগীর বাবা থানায় একটি মামলা দায়ের করেছেন।

শিবালয় থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. কামাল হোসেন জানান, ইভটিজিংয়ের দায়ে পাঁচ বখাটেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

তাদের বিরুদ্ধে নারী ও শিশু নির্য়াতন দমন আইনে মামলা রুজু হয়েছে। আজ সোমবার তাদের আদালতে পাঠানোর বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। শিবালয় থানা পুলিশ ইভটিজিংয়ের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স রয়েছে।

মন্তব্য

p
উপরে