ফিলিস্তিনে ইসরায়েলের ঘৃণ্য হামলার পরেও আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলো চুপ কেন তা জানতে চেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বলেছেন, বাংলাদেশ সব সময় তাদের পাশে আছে। ভবিষ্যতেও সহযোগিতা করে যাবে।
বুধবার বাজেট অধিবেশন শুরুর দিন সংসদের রীতি অনুযায়ী আনা শোক প্রস্তাব পরবর্তী আলোচনায় তিনি এ প্রশ্ন রাখেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ফিলিস্তিনে যে ঘটনা ঘটেছে তা সত্যিই অমানবিক। ছোট শিশুদের কান্না এবং তাদের সেই অসহায়ত্ব, মাতৃপিতৃ হারা হয়ে ঘুরে বেড়ানো সেটা সহ্য করা যায় না।’
তিনি বলেন, ‘ইজরায়েল কর্তৃক এভাবে একের পর এক হত্যা… এর আগেও হত্যাযজ্ঞ তারা চালিয়েছে। আমরা আগেও এ হত্যাযজ্ঞের তীব্র নিন্দাও জানাই। আজকে বিশেষ করে ছোট শিশু যারা আহত হয়, তাদের উপর জুলুম, তারা অত্যাচারিত হয়, তারা মা-বাবা হারায় এটা সত্যিই দুঃখজনক।’
ফিলিস্তিন-ইসরায়েলের মধ্যে গোলযোগ চলছে ১৯৮৮ সালে ইহুদিদের রাষ্ট্রটির প্রতিষ্ঠার পর থেকেই। সম্প্রতি আল আকসা মসজিদে সংঘর্ষের পর ইসরায়েলে ফিলিস্তিনি সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাসের রকেট হামলার পর পূর্ণ শক্তিতে পাল্টা জবাব দেয় ইসরায়েল। বিমান হামলায় একের পর এক গুঁড়িয়ে দেয়া হয় বেশ কিছু বহুতল ভবন। প্রাণ হারায় দুই শতাধিক ফিলিস্তিনি, যার একটি বড় অংশই শিশু।
এ নিয়ে তীব্র সমালোচনার মধ্যে ২১ মে যুদ্ধবিরতিতে রাজি হয় ইসরায়েল। থামে ধ্বংসযজ্ঞ।
আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলোর সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘যারা অনেক সময় মানবতার কথা বলে তারা এ সময় চুপ থাকে কেন? আন্তর্জাতিক বহু সংস্থা এখন কথা বলে না কেন? এটাই আমার প্রশ্ন।’
তিনি বলেন, ‘আমরা আমাদের ফিলিস্তিনের ভাইদের সাথে সব সময়ই আছি। আমাদের সরকার থেকে যে কোনো সহযোগিতা আমরা অতীতেও করেছি, এটা আমরা অবশ্যই করে যাব। ইসরায়েলের এই ঘৃণ্য আক্রমণের তীব্র নিন্দা আমরা জানাই।’
সংসদ আধিবেশষে শোক প্রস্তাব পরবর্তী আলোচনায় বাংলা একাডেমির সাবের মহাপরিচালক শামসুজ্জামানকেও স্মরণ করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘কয়েকজনের কথা না বললেই নয়। শামসুজ্জামান খান সাহেব, আজকে জাতির পিতার অসামাপ্ত আত্মজীবনী, কারাগারের রোজ নামচা, আমার দেখা নয়া চীন প্রত্যেকটা বই লেখায় আমরা কিন্তু একসাথে কাজ করেছি।
‘আজকে খুব দুর্ভাগ্য, বেবি মওদুদ, সেও সংসদ সদস্য ছিলো। তিনিও আমাদের মাঝে নাই। জামান ভাই সর্বশেষ তিনিও চলে গেলেন। আমরা কয়েকজন মিলে একসাথে যে কাজ করতাম, একেএকে কিন্তু সবাইকেই হারালাম। জাতির পিতার আরেকটি লেখা, স্মৃতিকথা সেটার কাজটাও সংশোধনীর পর্যায়ে শামসুজ্জামান খান সাহেবই করে গেছেন। আমরা এই বইগুলো যখন বের করি তিনি সব সময় পরামর্শ দিতেন।’
তিনি বলেন, ‘প্রত্যেকটা জিনিস সংশোধনের কাজ সেখানে কোন বানান ভুল আছে কিনা তা তিনি খুব যত্নের সাথে দেখে দিতেন। আমাদের সকলের জন্য আলাদা আলাদা কলম ছিলো। শামসুজ্জামান খান সাহেবের জন্য একটা লাল কলম, আমার জন্য একটা সবুজ কলম আর বেবির জন্য একটি কালো কলম রাখা ছিলো। এভাবে আমরা যে যখন যেটা পারতাম সংশোধন করে নিতাম।
‘প্রত্যেকটা বই যে আমরা প্রকাশ করেছি তাতে তার অবদান রয়েছে। বাংলা একাডেমির উন্নয়নের জন্য অনেক কাজ তিনি করেছেন। তার পরে আমরা যখন হাবিবুল্লাহ সিরাজী সাহেবকে দায়িত্ব দিলাম তিনিও কাজ করতে শুরু করলেন। কিন্তু পরপর দুজনই আমাদের ছেড়ে চলে গেলেন। এটা আসলে খুব দু:খজনক যে একে একে সবাইকে আমরা হারাচ্ছি।’
একাদশ সংসদের দুই সদস্য আব্দুল মতিন খশরু ও আসলামুল হকেরও স্মৃতি চারণ করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘আমরা বাজেট অধিবেশন শুরু করছি। কিন্তু আমাদের শুরু করতে হচ্ছে শোক প্রস্তাব দিয়ে, এটাই হচ্ছে সব থেকে দু:খের। আমরা এই চলমান সংসদে, করোনা সংক্রমণ শুরু পর থেকে অনেক সাথীকে হারিয়েছি।
‘জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে পঁচাত্তরের ১৫ আগষ্ট স্বপরিবারে হত্যার পর ইমডেমনিটি অর্ডিনেন্স দিয়ে খুনিদের বিভিন্ন দূতাবাসে চাকরি দিয়ে পুরস্কৃত করা হয়েছিলো। আমি আর রেহানা শুধু বেঁচে ছিলাম। বিচার পাওয়ার কোনো অধিকার আমাদের ছিলো না। ছিয়ানব্বই সালে সরকার গঠনের পর সেই ইমডেমনিটি অর্ডিনেন্স আমরা বাতিল করি, সেই বিল উপস্থাপন করেছিলো মতিন খশরু। তার সেই আবেগভরা বক্তৃতা এখনো আমার কানে বাজে।’
তিনি বলেন, ‘সুপ্রিমকোর্ট বারের নির্বাচন যখন করতে যায়, আমি তাকে বলেছিলাম বেশি ঘোরাঘুরি না করতে। কিন্তু তার তখন একটা আগ্রহ ছিলো তাকে জিততেই হবে। আর সারা বাংলাদেশ সে সফর করে। তারপরেই সে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়। আমি প্রতিদিন তার খবর নিতাম। কিন্তু দুর্ভাগ্য যে তাকে আর বাঁচানো গেলো না। আমাদের ছেড়ে সে চলে গেছে।
‘আসলামুল হক আমাদের একজন নিবেদিত প্রাণ কর্মী। আমাদের আন্দোলন সংগ্রাম সব কিছুতেই সে অগ্রণী ভূমিকা নিয়েছে এবং এলাকার মানুষের জন্য সে কাজ করেছে। আর এজন্য বারবার সে নির্বাচিতও হয়েছে। সাধারণ মানুষের জন্য তার অন্যরকম একটা দরদ ছিলো এবং এলাকার উন্নয়নের জন্যও সে নিবেদিত প্রান ছিলো।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা কতজন গণপরিষদ সদস্য, ১৯৭০ সালের নির্বাচিত, তাদেরকেও আমরা হারিয়েছি। আজকে আমরা যে সংবিধান পেয়েছি, সেই সংবিধানে তাদেরই সাক্ষর রয়েছে। এছাড়াও আওয়ামীলীগের বহু নেতাকর্মী ও সাবেক এমপিকে আমরা হারিয়েছি।’
‘আসলে জীবনটাই হয়েছে এমন কখন যে কে আছে কখন যে কে নাই তার কোন হিসেব নাই। বিশেষ করে করোনার দ্বিতীয় ঢেউটা যখন এলো আমরা চেষ্টা করলাম কোনোভাবে নিয়ন্ত্রণে আনতে। কিন্তু হঠাৎ আবার বর্ডারের যে জেলাগুলি সেখানে আবার দেখা গেছে।’
করোনা নিয়ন্ত্রণে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে জানিয়ে সরকার প্রধান বলেন, ‘কিন্তু তারপরেও আমি বলবো, আমাদের স্বাস্থ্যবিধিটা যেনো সকলেই মেনে চলেন। এটা বাংলাদেশের সব মানুষের কাছে আমাদের একটা আহ্বান থাকবে।
‘টিকাদান থেকে শুরু করে সব রকম ব্যবস্থা আমরা নিচ্ছি। তারপরেও নিজেরা সুরক্ষিত থাকতে হবে,’ যোগ করেন প্রধানমন্ত্রী।
শোক প্রস্তাব সংসদে গৃহিত হওয়ার পর তাদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে দাঁড়িয়ে এক মিনিটের নিরবতা পালন করা হয়। করা হয় বিশেষ দোয়াও। এরপর সংসদের রীতি অনুযায়ী সংসদের কার্যক্রম দিনের মতো মুলতবি ঘোষণা করা হয়।
আরও পড়ুন:
কদিন ধরেই তীব্র গরম। দেশের কোথাও মাঝেমধ্যে বৃষ্টি হচ্ছে, তবে গরম অবশ্য কমছে না। আবহাওয়া আপাতত এমনই থাকবে।
শুক্রবার সন্ধ্যা ৬টা থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টার পূর্বাভাসে এ তথ্য দিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, কুমিল্লা ও কিশোরগঞ্জ অঞ্চলসহ ময়মনসিংহ ও সিলেট বিভাগের দু-এক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে।
এতে বলা হয়, একই সঙ্গে কোথাও কোথাও বিক্ষিপ্তভাবে শিলাবৃষ্টি হতে পারে। এ ছাড়া দেশের অন্যত্র অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ আবহাওয়া প্রধানত শুষ্ক থাকতে পারে।
অধিদপ্তর বলছে, রাজশাহী, পাবনা ও টাঙ্গাইল জেলাসহ খুলনা বিভাগের ওপর দিয়ে তীব্র তাপপ্রবাহ এবং চাঁদপুর ও মৌলভীবাজার জেলাসহ ঢাকা ও রাজশাহী বিভাগের অবশিষ্টাংশ ও বরিশাল বিভাগের ওপর দিয়ে মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে এবং তা অব্যাহত থাকতে পারে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সারা দেশে দিনের তাপমাত্রা সামান্য বৃদ্ধি পেতে পারে এবং রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে। জলীয় বাষ্পের আধিক্যের কারণে অস্বস্তি বৃদ্ধি পেতে পারে।
আবহাওয়ার সার্বিক পর্যবেক্ষণে বলা হয়, লঘুচাপের বর্ধিতাংশ পশ্চিমবঙ্গ ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থান করছে। মৌসুমের স্বাভাবিক লঘুচাপ দক্ষিণ বঙ্গোপসাগরে অবস্থান করছে।
আগামী পাঁচ দিনের পূর্বভাসে বলা হয়েছে, তাপপ্রবাহ প্রায় একই রকম থাকতে পারে। আবহাওয়ায় তেমন পরিবতর্তন আসবে না।
দেশে চলমান দাবদাহ শুক্রবার থেকে পরবর্তী ৭২ ঘণ্টা অব্যাহত থাকতে পারে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর।
রাষ্ট্রীয় সংস্থাটি শুক্রবার তাপপ্রবাহের সতর্কবার্তায় এ কথা জানায়।
আবহাওয়াবিদ ড. মুহাম্মদ আবুল কালাম মল্লিক স্বাক্ষরিত সতর্কবার্তায় বলা হয়, ‘দেশের ওপর দিয়ে চলমান তাপপ্রবাহ আজ (১৯ এপ্রিল, ২০২৪) হতে পরবর্তী ৭২ ঘণ্টা অব্যাহত থাকতে পারে এবং তাপমাত্রা আরও বৃদ্ধি পেতে পারে।
‘জলীয় বাষ্পের আধিক্যের কারণে অস্বস্তি বৃদ্ধি পেতে পারে।’
৭২ ঘণ্টার আবহাওয়ার পূর্বাভাস
আবহাওয়া অধিদপ্তর শুক্রবার সকাল ৯টা থেকে পরবর্তী ৭২ ঘণ্টার আবহাওয়ার পূর্বাভাসে সিনপটিক অবস্থা নিয়ে বলেছে, লঘুচাপের বর্ধিতাংশ পশ্চিমবঙ্গ ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থান করছে। মৌসুমের স্বাভাবিক লঘুচাপ দক্ষিণ বঙ্গোপসাগরে রয়েছে।
তাপপ্রবাহ বা দাবদাহের বিষয়ে বলা হয়, বাগেরহাট, যশোর, চুয়াডাঙ্গা ও কুষ্টিয়া জেলার ওপর দিয়ে তীব্র তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। অন্যদিকে দিনাজপুর, রাঙ্গামাটি, চাঁদপুর, খুলনা, সাতক্ষীরা, বরিশাল ও পটুয়াখালী জেলা এবং ঢাকা ও রাজশাহী বিভাগের ওপর দিয়ে মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। এটি অব্যাহত থাকতে পারে।
আরও পড়ুন:প্রথম ধাপের উপজেলা নির্বাচনে মোট বৈধ প্রার্থী দাঁড়িয়েছে এক হাজর ৭৮৬ জন। মাঠ পর্যায় থেকে পাঠনো তথ্য একীভূত করার পর এ তথ্য জানিয়েছেন নির্বাচন কমিশনের অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ।
তিনি জানান, প্রথম ধাপে চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে মনোনয়নপত্র দাখিল করেছিলেন এক হাজার ৮৯০ জন। এদের মধ্যে বাছাইয়ে ১০৪ জনের মনোনয়নপত্র বাতিল, আর বৈধতা পেয়েছে এক হাজার ৭৮৬ প্রার্থীর।
নির্বাচন কমিশন ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী, রিটার্নিং কর্মকর্তার সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে ১৮ থেকে ২০ এপ্রিল পর্যন্ত আপিল করা যাবে। আপিল নিষ্পত্তি ২১ এপ্রিল, প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ সময় ২২ এপ্রিল। এরপর প্রতীক বরাদ্দ ২৩ এপ্রিল এবং ১৫০ উপজেলায় ভোটগ্রহণ হবে আগামী ৮ মে।
অপপ্রচার রোধে প্রশিক্ষণের প্রয়োজন হলে ভারতীয় প্রতিষ্ঠানের সহায়তা নেয়া হবে বলে জানিয়েছেন তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ আলী আরাফাত।
বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে প্রতিমন্ত্রীর নিজ দপ্তরে ভারতের হাইকমিশনার প্রণয় কুমার ভার্মার সৌজন্য সাক্ষাৎ শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এ কথা বলেন।
আরাফাত বলেন, ‘অপপ্রচার রোধে ভারতের কিছু প্রতিষ্ঠান কাজ করে। তারা কীভাবে কাজ করে, তাদের অভিজ্ঞতা এবং প্রক্রিয়া-পদ্ধতি বিনিময় জানা-বোঝার চেষ্টা করব। এক্ষেত্রে কোনো প্রশিক্ষণের প্রয়োজন হলে আমরা তাদের কাছ থেকে সহায়তা নেব।’
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ এবং ভারতের মধ্যে যেসব কো-অপারেশন আছে, সেসব নিয়ে আলোচনা হয়েছে। বিশেষ করে বিটিভিতে দুই ঘণ্টার একটি চাংক নিয়ে আমরা আন্তর্জাতিক সংবাদ বিশ্লেষণ, চলমান ঘটনাপ্রবাহ এবং সংবাদ উপস্থাপনা শুরু করতে যাচ্ছি। সেক্ষেত্রে ভারতের যে সংবাদ সংস্থাগুলো আছে, বিশেষ করে এএনআইয়ের সঙ্গে কোলাবরেশন করা যায় কি না, তা নিয়ে আলোচনা হয়েছে।
‘যেহেতু বিটিভি ইন্ডিয়াতে দেখানো হয়, সেহেতু দুই ঘণ্টার এ চাংক আমরা ধীরে ধীরে দুই, তিন, চার ঘণ্টা পর্যন্ত বাড়াব। আমরা আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী করতে চাচ্ছি, যেখানে দক্ষিণ এশিয়ার বিভিন্ন দেশের খবর থাকবে। এর বাইরেও বিভিন্ন দেশের খবর থাকবে।’
প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা চেষ্টা করব ভারতীয় দর্শকদের আকৃষ্ট করতে। এ ছাড়া ইন্ডিয়ান ফিল্ম অ্যান্ড টেলিভিশন নিয়ে ইনস্টিটিউশন আছে, তাদের সঙ্গে কোলাবরেশন করা, বিভিন্ন ধরনের প্রোগ্রাম ও ট্রেনিং করা।’
‘সম্প্রতি মুজিব শিরোনামের যে সিনেমাটি সহ-প্রযোজনা হয়েছে, এমন অন্য কোনো সিনেমায় সহ-প্রযোজনার সুযোগ আছে কি না তা নিয়ে আলোচনা হয়েছে’- যোগ করেন প্রতিমন্ত্রী।
ভারতের সিনেমা যেহেতু বাংলাদেশের বাজারে চলে সেহেতু বাংলাদেশেরও ভালো মানের সিনেমা ভারতে চালানোর বিষয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘দর্শককে জোর করে কিছু দেখানো যায় না। বাজারে কোনো জিনিসের চাহিদা থাকলে তা স্বয়ংক্রিয়ভাবেই যাবে-আসবে। সিনেমা যেহেতু প্রোডাক্ট, সেহেতু ভারতের বাজারে দর্শক থাকলে অবশ্যই যাবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘যে বিষয়গুলো নিয়ে আমাদের আরও কো-অপারেশনের সুযোগ আছে, সেসব নিয়ে আমরা আলোচনা করেছি। আমি মনে করি- বাংলাদেশ এ বিষয়ে বেশি লাভবান হবে। কারণ ভারতের ফিল্মে, টেলিভিশনে বা অন্যান্য জায়গায় যে অভিজ্ঞতা আছে, তা আমরা যত বেশি নেয়ার চেষ্টা করা যায়। দেশের উন্নয়নের জন্য এসব জরুরি।’
আরও পড়ুন:সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল এস এম শফিউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতি অর্জনে অবদান রাখতে এবং দেশকে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নের সোনার বাংলায় পরিণত করায় অবদান রাখতে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী সবকিছু করছে।
বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অফ ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজ (বিআইআইএসএস) মিলনায়তনে ‘ডিফেন্স ডিপ্লোমেসি: স্ট্র্যাটেজি ফর বাংলাদেশ’ শীর্ষক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। সূত্র: ইউএনবি
সেনাপ্রধান বলেন, ‘মাতৃভূমিকে রক্ষা করা, দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষা করা আমাদের কর্তব্য এবং আমরা তার জন্য প্রস্তুত আছি। আমরা সবকিছুই করছি।’
বঙ্গবন্ধুর পররাষ্ট্র নীতির বাণী ‘সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারও সঙ্গে বৈরিতা নয়’ উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘এই পররাষ্ট্রনীতি বাস্তবায়নে আমরা সবকিছু করছি।’
জাতীয় নিরাপত্তা বজায় রেখে টেকসই অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির ওপর গুরুত্বারোপ করে সেনাপ্রধান বলেন, ‘কূটনীতি যেকোনো ধরনের জাতীয় স্বার্থ অর্জনের প্রচেষ্টা ছাড়া আর কিছুই নয়।’
বেসামরিক শক্তির সহায়তায় সেনাবাহিনী কীভাবে দেশে গঠনমূলক কর্মকাণ্ড, দেশ-বিদেশে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা এবং অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করছে সে কথাও উল্লেখ করেন তিনি।
সেনাপ্রধান বলেন, ‘যেখানেই সুযোগ আছে, তা প্রত্যক্ষ হোক বা পরোক্ষ, আমরা সুযোগ গ্রহণ করি এবং বাংলাদেশের স্বার্থে সবকিছু করি।’
সামরিক কূটনীতির কথা বলতে গিয়ে জেনারেল শফিউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘আরও সম্পদ ও বাজেট বরাদ্দ করে তাদের সক্ষমতা বাড়াতে হবে। আমরা জানি কীভাবে এটা করতে হয়। কিন্তু আমাদের এটা করার সামর্থ্য থাকা উচিত।’
মিয়ানমার ইস্যু প্রসঙ্গে সেনাপ্রধান বলেন, ‘মিয়ানমারের সামরিক নেতাদের কেউ কেউ আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞার মুখোমুখি হচ্ছেন এবং এখানে নিজেদের সমস্যায় ফেলার ঝুঁকি রয়েছে।
‘এক বন্ধুকে খুশি করার জন্য আমরা আরেক বন্ধুর বিরোধিতা করতে পারি না। বেশকিছু বিষয় রয়েছে যা আমাদের খেয়াল করতে হবে। এসব ঘটনার প্রভাবও বিবেচনায় নেয়া হয়েছে। আমরা আমাদের সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি এবং আমরা সঠিক পথেই রয়েছি।’
জেনারেল শফিউদ্দিন বলেন, দূর থেকে চালানো যায় এমন কিছু যানবাহন দেশেই তৈরি হচ্ছে যা বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর জন্য বেশ উপকারে আসবে। আগে এসব যন্ত্রপাতি আমদানি করতে হতো। তাই এখন আমাদের প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয় হচ্ছে।’
সেনাপ্রধান বলেন, ‘বাংলাদেশ সেনাবাহিনী কেবল যুদ্ধে লড়াই করাই শেখে না, বরং জাতীয় স্বার্থে কীভাবে যুদ্ধ প্রতিরোধ বা এড়াতে হয় তা-ও জানে। আমরা সঠিক পথেই আছি এবং আমরা আমাদের দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হবো না।’
একইসঙ্গে তিনি বলেন, ‘দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষা করা সামরিক বাহিনীর প্রধান দায়িত্ব। এটি তারা কখনও ভুলে যায় না এবং এ কাজে সবসময় তাদের প্রস্তুত থাকতে হবে।
‘উদ্দেশ্য রাতারাতি পরিবর্তন হতে পারে। কিন্তু সক্ষমতা রাতারাতি পরিবর্তন হয় না। আজ আপনি আমার বন্ধু, আগামীকাল বন্ধু না-ও হতে পারেন। কিন্তু জাতীয় স্বার্থ, মাতৃভূমি রক্ষায় আমাদের সক্ষমতা থাকতে হবে- পররাষ্ট্রনীতির এই আদেশ আমাদের সবার জন্য সমান।’
অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন বিআইআইএসএস চেয়ারম্যান রাষ্ট্রদূত এ এফ এম গওসোল আযম সরকার ও মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মো. আবু বকর সিদ্দিক খান।
আরও পড়ুন:বাংলাদেশের সীমান্ত রক্ষী বাহিনী বর্ডার গার্ড বাংলাদশের (বিজিবি) মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আশরাফুজ্জামান সিদ্দিকী বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি এলাকা পরিদর্শন করেছেন।
বিজিবি মহাপরিচালক বৃহস্পতিবার সকালে নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ১১ বিজিবি ব্যাটালিয়ন সদর দপ্তরের কোয়ার্টার গার্ড পরিদর্শন শেষে বিজিবি কার্যালয় পরিদর্শন করেন। দুপুরে মিয়ানমারের রাখাইন থেকে পালিয়ে আসা বর্ডার গার্ড সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে আশ্রয় নেয়া প্রতিবেশী দেশটির জান্তা বাহিনীর সদস্যদের খোঁজখবর নেন তিনি।
পরে তিনি ১১ বিজিবির অধীন চাকঢালা বিওপি (বর্ডার অবজারবেশন পোস্ট) পরিদর্শন করেন। এ সময় তিনি মিয়ানমার থেকে জান্তা বাহিনীর সদস্যদের পালিয়ে আসার স্পটগুলো সম্পর্কে খোঁজখবর নেন। সীমান্তে বিজিবিকে সর্বোচ্চ সতর্ক থাকতে নির্দেশ দেন।
পরিদর্শনকালে বিজিবি মহাপরিচালকের সঙ্গে ছিলেন কক্সবাজার রিজিয়ন কমন্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ মোরশেদ আলমসহ বিজিবি রামুর সেক্টর ও অধীনস্ত বিজিবি ব্যাটালিয়নে নাইক্ষ্যংছড়ি ১১ বিজিবি’র জোন কমন্ডার ও অধিনায়ক লে. কর্নেল সাহল আহমদ এসিসহ বিজিবির কর্মকর্তারা।
বান্দরবানে কুকি চিন ন্যাশনাল ফ্রন্টের (কেএনএফ) সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে যৌথ অভিযানে গ্রেপ্তার হওয়া ৫৩জনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছে আদালত। রুমা থানার দুটি মামলায় বৃহস্পতিবার এই আদেশ দেয়া হয়। পাশাপাশি এক নারীকে জেল গেটে জিজ্ঞাসাবাদসহ মামলায় ৫৭জনকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে।
বান্দরবান সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক মোহাম্মদ নাজমুল হোছাইন বৃহস্পতিবার দুপুরে মামলার শুনানি শেষে এই আদেশ দেন।
আদালতে আসামি পক্ষে একাধিক আইনজীবী উপস্থিত ছিলেন। আইনজীবীরা জানান, রুমা থানার জিআর মামলা নং- ৪ ও ৭ মামলায় পুলিশ আসামিদের আদালতে হাজির করে রিমান্ড চেয়ে আবেদন করে। আদালত উভয় পক্ষের শুনানি শেষে ৫৩জনের রিমান্ড মঞ্জুর করে। এর মধ্যে ৫২জনকে দু’দিন করে রিমান্ড এবং একজনকে জেলগেটে জিজ্ঞাসাবাদের অনুমতি দেয়া হয়।
এর আগে বান্দরবান জেলা কারাগার থেকে কঠোর নিরাপত্তায় ১৮জন নারী ও ৩৯জন পুরুষ বন্দিকে দুটি গাড়িতে করে আদালতে হাজির করা হয়। সম্প্রতি বান্দরবানের রুমায় সোনালী ব্যাংকে লুটের ঘটনায় তাদেরকে রুমা উপজেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়।
এদিকে বান্দরবানে চলমান যৌথ অভিযানে সন্দেহভাজন আরও একজনকে আটক করা হয়েছে। এ পর্যন্ত ৬৬জনকে গ্রেপ্তার করে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
মন্তব্য