প্রায় ১৬০ কোটি টাকা অর্থ পাচারের মামলায় ফারমার্স ব্যাংকের অডিট কমিটির সাবেক চেয়ারম্যান মাহবুবুল হক চিশতীর ছেলে রাশেদুল হক চিশতীর জামিন বাতিল করে দ্রুত বিচার শেষ করতে বিচারিক আদালতকে নির্দেশ দিয়েছে আপিল বিভাগ।
প্রধান বিচারপতিসহ পাঁচ বিচারকের আপিল বেঞ্চ মঙ্গলবার এ আদেশ দেয়।
আদালতে রাশেদুল হকের পক্ষে শুনানি করেন সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল এ এফ হাসান আরিফ। দুদকের পক্ষে ছিলেন খুরশীদ আলম খান। আর রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল শেখ মোহাম্মদ মোরশেদ।
খুরশীদ আলম খান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘রাশেদুল হক চিশতীর জামিন-সংক্রান্ত হাইকোর্টের আদেশ বাতিল করে দিয়েছেন আপিল বিভাগ। তার জামিন আবেদন খারিজ করে দিয়েছেন। একই সঙ্গে বিচারিক আদালতকে দ্রুত বিচার শেষ করতে নির্দেশ দিয়েছেন। এ আদেশের ফলে তাকে জেলেই থাকতে হচ্ছে।’
ফারমার্স ব্যাংকের অডিট কমিটির সাবেক চেয়ারম্যান মাহবুবুল হক নিজেও এই মামলার আসামি। তারা দুজনই কারাগারে।
রাশেদুল হক চিশতীকে গত ২৬ জানুয়ারি জামিন দেয় হাইকোর্ট। তবে এ আদেশ স্থগিত চেয়ে আপিল করে দুদক। এরপর ১ ফেব্রুয়ারি রাশেদ চিশতীকে হাইকোর্টের দেয়া জামিন স্থগিত করে আপিল বিভাগ।
গত বছরের ১৯ মে রাশেদ চিশতীকে তিনটি মামলায় বিচারিক আদালত জামিন দিয়েছিল। পরে জামিন স্থগিত চেয়ে হাইকোর্টে আবেদন করে দুর্নীতি দমন কমিশন।
মামলার বিবরণ থেকে জানা যায়, প্রায় ১৬০ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে ২০১৮ সালের ১০ এপ্রিল গুলশান থানায় মাহবুবুল হক চিশতী ওরফে বাবুল চিশতী, স্ত্রী রোজী চিশতী, ছেলে রাশেদুল হক চিশতী, ব্যাংকটির ফার্স্ট প্রেসিডেন্ট মুহাম্মদ মাসুদুর রহমান খান, সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট জিয়া উদ্দিন আহমেদ এবং ব্যাংকটির গুলশান করপোরেট শাখার সাবেক ব্যবস্থাপক ও বর্তমান সিনিয়র এক্সিকিউটিভ ভাইস প্রেসিডেন্ট দেলোয়ার হোসেনের বিরুদ্ধে মামলা হয়।
মামলায় আসামির বিরুদ্ধে ১৫৯ কোটি ৯৫ লাখ ৪৯ হাজার ৬৪২ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ আনা হয়েছে। এ মামলায় গ্রেপ্তারের পর থেকে মাহবুবুল হক চিশতী ও রাশেদ চিশতী কারাগারে।
বাবুল চিশতী ও তার পরিবার ফৌজদারি অপরাধে যুক্ত: আপিল বিভাগ
এর আগে গত ২৭ মে এ মামলার শুনানির সময় বাবুল চিশতীকেই মূল অপরাধী হিসেবে মন্তব্য করেছিল আপিল বিভাগ।
ওই দিন আদালত বলেছিল, মামলার নথি অনুযায়ী মাহবুবুল হক চিশতী ওরফে বাবুল চিশতীই মূল অপরাধী। অপরাধ কার্যক্রমে তিনি তার পুরো পরিবারের সদস্যদের ব্যবহার করেছেন। পুরো পরিবারই ফৌজদারি অপরাধে জড়িত।
বাবুল চিশতীর ছেলে রাশেদ চিশতীর জামিন শুনানির সময় এমন মন্তব্য করেন আপিল বিভাগের এক বিচারক।
বিচারক রাশেদ চিশতীর আইনজীবীকে উদ্দেশ করে বলেন, ‘আপনারা এখনও প্রমাণ করতে পারেননি এই অর্থের বৈধ উৎস কী।’
ক্রোক ও ফ্রিজ করা হয় বিপুল সম্পদ
মাহবুবুল হক চিশতী ওরফে বাবুল চিশতীর বিরুদ্ধে ২০১৯ সালের ৩৭ কোটি ৩৮ লাখ ৩ হাজার ২৫৬ টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জন ও মানি লন্ডারিংয়ের অভিযোগে একটি মামলা হয়। সেই মামলায় তদন্ত কর্মকর্তার আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আদালত বাবুল চিশতীর স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ ক্রোক ও ফ্রিজের আদেশ দেন।
সে সময় বাবুল চিশতীর জব্দ করা স্থাবর সম্পদগুলো হল, জামালপুরের বকশীগঞ্জের বিভিন্ন মৌজায় ৪৯ শতাংশ, ৩৪ শতাংশ, ৩৬ শতাংশ, ৩ হাজার বর্গফুট, ৭৩ শতাংশ, ১৫ শতাংশ, ৭ দশমিক ৫০ শতাংশ, ৮ শতাংশ, ২৮ শতাংশ, ৫৮ শতাংশ, ২৪ শতাংশ, একটি টিনশেড ঘর, ৩০০ শতাংশ, ৩৩ শতাংশ, ১০ শতাংশ, ১২ দশমিক ৫০ শতাংশ, ৮ শতাংশ, ২৮ শতাংশ, ২ শতাংশ, ১০ শতাংশ, ১৩৮ শতাংশ, ৪৬ শতাংশ, ৭২ শতাংশ, ২৫ শতাংশ, ১৮ শতাংশ, ১২ দশমিক ৫০ শতাংশ, ৩৩ শতাংশ, ১৪ শতাংশ, ২২ শতাংশ, একটি তৃতীয়তলা ভবন, দুটি টিনশেড ঘর, ৪০ শতাংশ, ১১১ শতাংশ, ১১০ শতাংশ, ২৫ শতাংশ, ৩০ শতাংশ, ১১ দশমিক ১৫ শতাংশ, ২২২ দশমিক ৫০ শতাংশ, ৫৫ শতাংশ, ৩৬ শতাংশ, ৯১ শতাংশ, ২৬ শতাংশ, ৩৯ শতাংশ, ৩৭ শতাংশ ও শেরপুরের শ্রীবরদীর মাধবপুর মৌজায় ২০০ শতাংশ জমি।
এছাড়া একটি জিপগাড়ি, দুটি প্রাইভেট কার ও দুটি মোটরসাইকেল জব্দ করা হয়। আর অস্থাবর সম্পদের মধ্যে রয়েছে একটি শটগান, একটি পিস্তল, ২০ কোটি ১১ লাখ টাকা মূল্যের একটি তেল ট্যাংকার।
এছাড়া ফারমার্স ব্যাংক, পদ্মা ব্যাংক, এবি ব্যাংক, ইসলামী ব্যাংক, জনতা ব্যাংক, যমুনা ব্যাংক, ব্যাংক এশিয়া ও ন্যাশনাল ব্যাংকের ২৮টি হিসাবে জমাকৃত অর্থ, পদ্মা ব্যাংকের ২ কোটি শেয়ার, সিএন নিউজ লিমিটেডের ৫ হাজার শেয়ার, কারেন্ট নিউজ ডটকম ডট বিডি লিমিটেডের ৬ হাজার ৫০০ শেয়ার, এমএম জেড আইটি সোর্স অ্যান্ড সার্ভিস লিমিটেডের ১ হাজার ২০০ শেয়ার, চ্যানেল ২৬ লিমিটেডের ২০ হাজার শেয়ার, ফিউশন ফুডওয়্যার লিমিটেডের ৫০০ শেয়ার, পদ্মা ব্যাংক সিকিউরিটিজ লিমিটেডের একটি শেয়ার ও বাবুল চিশতী স্টিল মিল লিমিটেডের ৫০০ শেয়ার।
বাবুল চিশতীর স্ত্রী রোজী চিশতীর বিরুদ্ধে গত বছরের ২৩ জানুয়ারি ৩৭ কোটি ৩৮ লাখ ৩ হাজার ২৫৬ টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জন ও মানি লন্ডারিংয়ের অভিযোগে মামলা করা হয়।
সে সময় রোজী চিশতীর জব্দ করা স্থাবর সম্পদ হল, রাজধানীর মিরপুরের চাকুলী মৌজায় মিরপুর হাউজিং এস্টেটের ৩৫০ বর্গগজের জমি ও জমির ওপর নির্মিত সাততলা ভবন, রাজধানীর উত্তরখান মৌজার ১৫ শতাংশ জমি। জামালপুরের বকশীগঞ্জের চর কাউরিয়া মৌজায় ৭৯ শতাংশ জমি, একই মৌজায় ৫৫ শতাংশ জমি। ময়মনসিংহ সদরের টাউন মৌজায় চারটি ফ্ল্যাট (৪ হাজার বর্গফুট; ১ শতাংশ জমিসহ ৩ হাজার ৮০০ বর্গফুট; ১ শতাংশ জমিসহ ৩ হাজার ৮০০ বর্গফুট; ১ হাজার ৩০০ বর্গফুট), জোয়ার সাহারা মৌজায় ৩ কাঠা জমি ও জমির ওপর নির্মিত ৩ তলা ভবন।
এছাড়া ময়মনসিংহ সদরে টাউন মৌজায় ৫ শতাংশ জমি ও জমির ওপর নির্মিত ৭ তলা ভবন, চরকাউরিয়া মৌজায় সাড়ে ১৪ শতাংশ জমি (নির্মাণাধীন ভবনসহ) ও জমির ওপর নির্মাণাধীন ভবন। নারায়ণগঞ্জে বোরো নাওরা মৌজায় ৭ দশমিক ৫০ শতাংশ জমি। শেরপুরের শ্রীবরদীর জলংগা মাধবপুর মৌজায় ২৬৬ শতাংশ জমি। জামালপুরের বকশীগঞ্জে বিভিন্ন মৌজায় ৫৯ দশমিক ৫ শতাংশ, ৩৯ শতাংশ, ১০০ শতাংশ, ১০০ শতাংশ, ২০ শতাংশ, ৮৫ শতাংশ, ১৫ শতাংশ, ৫৩ শতাংশ, ৮০ শতাংশ, ৩৪ শতাংশ, ১৫ শতাংশ, ৬৭ শতাংশ, ১১০ শতাংশ, ১৩৮ শতাংশ, ৫৫ শতাংশ, ৬২ শতাংশ, ১৪ দশমিক ৫ শতাংশ, ৫৫ শতাংশ, ৪ শতাংশ, ১২ দশমিক ৬০ শতাংশ, ৬২ দশমিক ৭৫ শতাংশ, ৭২ শতাংশ, ৬১ দশমিক ৭৭ শতাংশ, ২ দশমিক ৭ শতাংশ, ৫২ শতাংশ, ২০ দশমিক ৫০ শতাংশ, ২৪ দশমিক ২৫ শতাংশ, ৪ দশমিক ৫ শতাংশ, ৫৪ দশমিক ২৬ শতাংশ, ৩৪ শতাংশ, ৩৪ দশমিক ৫০ শতাংশ, ১০২ শতাংশ, ৬২ দশমিক ৭৫ শতাংশ, ২৩ দশমিক ৯৪ শতাংশ, ৩৫ দশমিক ৭৫ শতাংশ, ১৯ শতাংশ, ২৪ দশমিক ৫০ শতাংশ, ১১ শতাংশ, ১২ শতাংশ ও ৩১ শতাংশ জমি।
একই সঙ্গে টয়োটা নোয়াহ মডেলের একটি গাড়ি ও টাটা ট্যাংকার লরি মডেলের একটি গাড়ি ক্রোক করা হয়। আর অস্থাবর সম্পদের মধ্যে ফারমার্স ব্যাংক লিমিটেডের (বর্তমানে পদ্মা ব্যাংক) পাঁচটি ব্যাংক হিসাব, ব্যাংক এশিয়া ও ট্রাস্ট ব্যাংকে একটি করে ব্যাংক হিসাব ফ্রিজ করা হয়েছে। এছাড়া রূপসী ল্যান্ড ডেভেলপার লিমিটেডের ১ হাজার ২৫০টি শেয়ার, বকশীগঞ্জ এগ্রো ইন্ডাস্ট্রিজের ৩০ শতাংশ শেয়ার, ফিউশন ফুটওয়্যার লিমিটেডের ৫০০ শেয়ার, বকশীগঞ্জ জুট স্পিনার্স লিমিটেডের ৪০ হাজার শেয়ার ও ৩ লাখ ৫০ হাজার টাকার সঞ্চয়পত্র ফ্রিজ করা হয়।
বাবুল চিশতীর ছেলে রাশেদুল হক চিশতীর বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদ অর্জন ও মানি লন্ডারিংয়ের অভিযোগে মামলাতেও আসামির স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ ক্রোক ও ফ্রিজ করা হয়েছে।
রাশেদের জব্দ করা স্থাবর সম্পদের মধ্যে রয়েছে রাজধানীর তেজগাঁওয়ে ৪ শতাংশ জমিসহ ৩০০ বর্গফুটের সেমি পাকা বাড়ি, বসুন্ধরায় ৭ শতাংশ জমি, মানিকগঞ্জের সিংগাইরে ৪ দশমিক ৫০ কাঠা, ৩ কাঠা জমি, ময়মনসিংহ সদরে ৪০ অযুতাংশের ওপর তৃতীয় তলায় ৮০০ বর্গফুটের ফ্ল্যাট ও চট্টগ্রাম সদরে ১ হাজার ৯৭৮ বর্গফুটের একটি ফ্ল্যাট।
এছাড়া জামালপুরের বকশীগঞ্জের বিভিন্ন মৌজায় ৭ শতাংশ ও এর ওপর নির্মিত পাঁচতলা ভবন, ৩৩ শতাংশ জমি, ৯০ শতাংশ, ১৭৯ শতাংশ, ১০ শতাংশ, ১০ শতাংশ, ১০ শতাংশ, ৪৩ শতাংশ, ১০ শতাংশ, ২ শতাংশ, ২৪ শতাংশ, ১০ শতাংশ, ৫৮ শতাংশ, ৩৬ শতাংশ, ২৫ শতাংশ, ২৪ শতাংশ, ১৩ শতাংশ, ১৮ দশমিক ৫০ শতাংশ, ১২ শতাংশ, ৩৬ শতাংশ, ৫৫ শতাংশ, ১২ শতাংশ, ১৩ দশমিক ৭৫ শতাংশ, ৬ দশমিক ৫০ শতাংশ, ১৫ দশমিক ৭৫ শতাংশ, ১৫ দশমিক ৫০ শতাংশ, ২২ শতাংশ, ২৫ শতাংশ, ২ শতাংশ, ২৭ দশমিক ৫০ শতাংশ, ৫০ শতাংশ, ১০ শতাংশ, ১১ শতাংশ, ৪৪ শতাংশ, ১০ শতাংশ, ২৭ দশমিক ৫০ শতাংশ, ২৩ দশমিক ৪০ শতাংশ, ৩০ দশমিক ৫০ শতাংশ, ২৬ শতাংশ, ১৩ শতাংশ, ৪৫ শতাংশ, ৮ শতাংশ, ৫৩ শতাংশ, ১৪ দশমিক ৭৫ শতাংশ, ২৬ শতাংশ, ৪০ শতাংশ, ১৫ দশমিক ৭৫ শতাংশ, ৪০ শতাংশ, ১৬ দশমিক ৭৫ শতাংশ, ২৮ শতাংশ, ৪১ দশমিক ১৫ শতাংশ, ৩৪ শতাংশ, ২৮ শতাংশ, ৪১ দশমিক ২৫ শতাংশ, ২২ শতাংশ, ২৬ দশমিক ৫০ শতাংশ, ১০ দশমিক ৫০ শতাংশ, ৩৪ শতাংশ, ৮ শতাংশ, ৫৫ শতাংশ, ২২ শতাংশ, ৮ শতাংশ, ২৭ দশমিক ৫০ শতাংশ, ৬ শতাংশ, ৫ দশমিক ৫০ শতাংশ, ১০৫ শতাংশ, ১১ শতাংশ, ১৮ শতাংশ, ১৬ শতাংশ, ৪ শতাংশ, ৪৯ শতাংশ, ১৩ দশমিক ৭৫ শতাংশ, ১০ দশমিক ৮০ শতাংশ, ২২ শতাংশ, ২২ শতাংশ, ৩৭ দশমিক ২৫ শতাংশ, ২২ শতাংশ, ১৬ দশমিক ৫০ শতাংশ, ৯ শতাংশ, ৬৪ শতাংশ, ১৭ শতাংশ, ১৬ দশমিক ৫০ শতাংশ, ৫ দশমিক ৫০ শতাংশ, ১০ শতাংশ, ১৬৬ শতাংশ, ১৬৩ শতাংশ, ১১ শতাংশ, ১৫ শতাংশ, ২২ দশমিক ৭৫ শতাংশ, ৯ দশমিক ২৫ শতাংশ, ৫ শতাংশ, ৩৬ শতাংশ, ১৩ দশমিক ৭৫ শতাংশ, ৬৬ শতাংশ, ৩৬ শতাংশ, ২০ শতাংশ, ২৩০ শতাংশ, ১৮ শতাংশ, ১০ শতাংশ, ১ হাজার ২৩ শতাংশ, ১১ শতাংশ, ৪ শতাংশ, ৩৩ দশমিক ৫০ শতাংশ, ১৬১ শতাংশ, ১১ শতাংশ, ২১ শতাংশ, ২৭ দশমিক ৫০ শতাংশ, ৮ দশমিক ২৫ শতাংশ, ১৩ দশমিক ৭৫ শতাংশ, ২৭ শতাংশ, ৪১ দশমিক ৫০ শতাংশ, ১৩ শতাংশ, ১৩ শতাংশ, ২৩ শতাংশ, ১৮ শতাংশ, ৪২ শতাংশ, ২৪ দশমিক ২৭ শতাংশ, ২৭ দশমিক ১৫ শতাংশ, ১০ শতাংশ, ৮০ দশমিক ৫০ শতাংশ, ১৫ শতাংশ, ৪৪ শতাংশ, ৩৫ শতাংশ, ১৩ শতাংশ, ৩৭ দশমিক ৮০ শতাংশ, ১২ শতাংশ, ২৭ দশমিক ৭৫ শতাংশ, ৭ শতাংশ, ৯ শতাংশ, ১৮ শতাংশ, ১৫ শতাংশ, ২১ দশমিক ৩০ শতাংশ, ২১ শতাংশ, ২১ শতাংশ, ৪৪ শতাংশ, ২ দশমিক ৭৫ শতাংশ, ৪১৮ শতাংশ, ৯ শতাংশ, ৯ শতাংশ, ১ শতাংশ, ১২ শতাংশ, ১২ শতাংশ, ৫ দশমিক ৫০ শতাংশ, ৩৩ দশমিক ৫০ শতাংশ, ১৮১ শতাংশ, ৮ দশমিক ৪৪ শতাংশ, ১৪৬ দশমিক ৫০ শতাংশ, ৬২ শতাংশ ও ১৪৬ দশমিক ৫০ শতাংশ জমি রয়েছে।
এছাড়া রাশেদের একটি প্রাইভেট কার, একটি জিপ গাড়ি, একটি শটগান ও একটি পিস্তল জব্দ করা হয়েছে। অস্থাবর সম্পদের মধ্যে ফারমার্স ব্যাংক, ব্যাংক এশিয়া, এবি ব্যাংক, ডাচ্-বাংলা ব্যাংক ও ইসলামী ব্যাংকের বিভিন্ন শাখায় মোট ২২টি অ্যাকাউন্টে রক্ষিত অর্থ, পদ্মা ব্যাংক লিমিটেডের ৩০ লাখ শেয়ার, সিএন নিউজ লিমিটেডের ৩ হাজার শেয়ার, কারেন্ট নিউজ ডটকম ডট বিডি লিমিটেডের ৪ হাজার ৫০০ শেয়ার, রূপসী ল্যান্ড অ্যান্ড ডেভেলপারস লিমিটেডের ১ হাজার ২৫০ শেয়ার, বকশীগঞ্জ এগ্রো ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের ৭০ শতাংশ শেয়ার, ফিউশন ফুটওয়্যার লিমিটেডের ১৯ হাজার ৫০০ শেয়ার, পদ্মা ব্যাংক, ব্যাংক সিকিউরিটিজ লিমিটেডের ১টি শেয়ার, বাবুল চিশতী স্টিল মিল লিমিটেডের ১৯ হাজার ৫০০ শেয়ার, বকশীগঞ্জ জুট স্পিনার্স মিল লিমিটেডের ৯ কোটি টাকা মূল্যের শেয়ার জব্দ করা হয়।
বাবুল চিশতীর মেয়ে রিমি চিশতীর বিরুদ্ধে ২০১৯ সালের ১৫ ডিসেম্বর ২১ কোটি ২০ লাখ ৯৮ হাজার ১২৮ টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জন ও মানি লন্ডারিংয়ের অভিযোগে মামলা করা হয়। এ মামলায় রিমির জব্দ করা স্থাবর সম্পদের মধ্যে রয়েছে জামালপুরের বিভিন্ন মৌজায় ৪০ শতাংশ, ৪ দশমিক ৬৭৬ শতাংশ, ১১ দশমিক ৫০ শতাংশ, ২৫ শতাংশ, গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের খাইল কৈর মৌজায় ২০ শতাংশ জমি। অস্থাবর সম্পদের মধ্যে রযেছে ফারমার্স ব্যাংকের ৬টি ব্যাংক হিসাব ও ট্রাস্ট ব্যাংকে একটি ব্যাংক হিসাব। এসব হিসাবে প্রায় ২১ লাখ টাকা রয়েছে। এছাড়া বকশীগঞ্জ জুট স্পিনার্স লিমিটেডের ১০ হাজার শেয়ারও ফ্রিজ করা হয়েছে।
বাবুল চিশতীর ছেলে রাশেদুল হক চিশতীর স্ত্রী ফারহানা আহমেদের বিরুদ্ধে ২০১৯ সালের ১৫ ডিসেম্বর ১৩ কোটি ৬৮ লাখ ৫১ হাজার ৬১৩ টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জন ও মানি লন্ডারিংয়ের অভিযোগে মামলা করা হয়। মামলায় তদন্তকারী কর্মকর্তার আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আদালত তার স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ ক্রোক ও ফ্রিজের আদেশ দেন। ফারহানা আহমেদের জব্দ করা স্থাবর-অস্থাবর সম্পদের মধ্যে আছে একটি মোটর গাড়ি, ফারমার্স ব্যাংকের ৩টি হিসাব ও যমুনা ব্যাংকের ৪টি ব্যাংক হিসাব। এছাড়া ব্যাংক অ্যাকাউন্টগুলোতে প্রায় ১৫ লাখ টাকা রয়েছে।
জামালপুর বকশীগঞ্জের ধনুয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বাবুল চিশতীর শ্যালক মো. মোস্তফা কামালের বিরুদ্ধে ২০১৯ সালের ৫ ডিসেম্বর ৮৪ লাখ ৭২ হাজার ১৮৩ টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জন ও মানি লন্ডারিংয়ের অভিযোগে মামলা করা হয়।
এ মামলায় মোস্তফা কামালের জব্দ করা স্থাবর সম্পদের মধ্যে রয়েছে রাজধানীর রামপুরায় মেরাদিয়া মৌজায় ১ হাজার ২৭৫ বর্গফুটের ফ্ল্যাট, ময়মনসিংহ সদরে ৩ শতাংশ জমি, ধনুয়া কালামপুরে ১৫ শতাংশ জমি, ১০০ শতাংশ জমি, ১৫ দশমিক ৬২ শতাংশ জমি, ১৭ দশমিক ৫০ শতাংশ জমি, ৫৮ শতাংশ জমি, একটি টয়োটা মডেলের গাড়ি। অস্থাবর সম্পদের মধ্যে ফারমার্স ব্যাংকের বিভিন্ন শাখায় ১৩টি ব্যাংক হিসাবে রাখা প্রায় ১৫ লাখ টাকা এবং ফারিব অটোরাইস মিল লিমিটেডের ৩ হাজার ৩০০ শেয়ার।
আরও পড়ুন:মুন্সীগঞ্জের লৌহজংয়ে পদ্মা নদীতে বুধবার রাতের আঁধারে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের সময় দুটি ড্রেজার জব্দ করেছে নৌ-পুলিশ।
মাওয়া নৌ ফাঁড়ির ইনচার্জ মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমান বৃহস্পতিবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
তিনি জানান, রাতের আঁধারে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের খবর পেয়ে উপজেলার মেদিনীমণ্ডল ইউনিয়নের যশিলদিয়ায় বুধবার রাত দেড়টার দিকে পদ্মা নদীতে অভিযান চালানো হয়। ওই সময় নিয়ম অমান্য করে বালু উত্তোলন করায় ওই দুটি ড্রেজার জব্দ করা হয়।
তিনি আরও জানান, ড্রেজার জব্দ করার সময় কাউকে আটক করা সম্ভব হয়নি। জব্দকৃত ড্রেজার দুটির বিষয়ে আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে।
মেহেরপুরের গাংনীতে সেচ পাম্পের সুইচ দিতে গিয়ে বিদুৎস্পৃষ্ট হয়ে আবদুল হান্নান (৭৫) নামের কৃষকের মৃত্যু হয়েছে।
উপজেলার বামন্দী ইউনিয়নের দেবীপুর দক্ষিণপাড়ায় বৃহস্পতিবার সকাল নয়টার দিকে এ দুর্ঘটনাটি ঘটে।
প্রাণ হারানো আবদুল হান্নান দেবীপুর দক্ষিণপাড়ার খোদা বক্সের ছেলে।
এসব তথ্য নিশ্চিত করে ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) সদস্য হিরোক আহমেদ বলেন, ‘আজ সকালে আবদুল হান্নান নিজ গ্রামের মাঠে অবস্থিত সেচ পাম্পের সুইচ দিতে গিয়ে বিদ্যুৎস্পৃষ্টের শিকার হয়ে ঘটনাস্থলেই মৃত্যুবরণ করেন। পরে স্থানীয়রা মরদেহটি ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার করে নিজ বাড়ি দেবীপুরে নিয়ে আসে।’
বামন্দী পুলিশ ক্যাম্প ইনচার্জ উপপরিদর্শক (এসআই) শরীফুল ইসলাম ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, ‘বিদুৎস্পৃষ্টে মৃত্যুর সংবাদ পেয়ে আমরা ঘটনাস্থলে এসে প্রাথমিক তদন্ত শেষ করেছি। বতর্মানে মরদেহটি পরিবারের কাছে রয়েছে।’
প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেছেন, আসন্ন উপজেলা নির্বাচন ব্যর্থ হলে ৭ জানুয়ারি (দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দিন) যে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, সেটি ব্যর্থ হবে।
রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে বৃহস্পতিবার সকালে উপজেলা পরিষদ নির্বাচন উপলক্ষে মাঠ প্রশাসনের সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা বিষয় সভায় তিনি এ কথা বলেন।
সিইসি বলেন, ‘দেশের নির্বাচনে আবেগ-অনুভূতির জন্য কিছুটা বিশৃঙ্খলা হয়। ভোটাররা যেন নির্বিঘ্নে ভোট দিতে পারে, সেই ব্যবস্থা করতে হবে। যেকোনো মূল্যে নির্বাচন সুষ্ঠু করতে হবে। এই নির্বাচনে ব্যর্থ হলে বিগত সংসদ নির্বাচনে যে গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা প্রতিষ্ঠা হয়েছে, তা ক্ষুণ্ন হতে পারে। বাংলাদেশে গণতন্ত্র আছে, তা সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে প্রমাণ করতে হবে।’
সভায় দেশের সব জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারসহ স্বরাষ্ট্র ও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের শীর্ষ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
নাটোরের বড়াইগ্রামে ট্রাকের চাকায় পিষ্ট হয়ে এক ভ্যানচালক নিহত হয়েছেন।
বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে উপজেলার আগ্রান ঈদগাহ মাঠ এলাকায় বনপাড়া-হাটিকুমরুল মহাসড়কের এই দুর্ঘটনায় আহত হয়েছেন ওই ভ্যানের এক যাত্রী।
নিহত মোজাহার আলী একই উপজেলার পারকোল গ্রামের মৃত শাহাদত আলীর ছেলে।
বনপাড়া হাইওয়ে থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) আলীমুল ইসলাম জানান, মহাসড়ক পার হওয়ার সময় দ্রুতগতির একটি ট্রাক ভ্যানটিকে চাপা দিয়ে চলে যায়। এতে ট্রাকের চাকায় পিষ্ট হয়ে ঘটনাস্থলেই ভ্যানচালক মোজাহার মারা যান। সেই সাথে ভানযাত্রী মিজান শেখ আহত হন।
তিনি বলেন, পরে স্থানীয়রা আহত মিজানকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করেন। এ বিষয়ে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।
সব ধরনের আগ্রাসন ও নৃশংসতার বিরুদ্ধে দাঁড়ানোর পাশাপাশি যুদ্ধকে ‘না’ বলতে বৃহস্পতিবার সবার প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
থাইল্যান্ডে জাতিসংঘের কনফারেন্স সেন্টারে (ইউএনসিসি) এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের জন্য জাতিসংঘের অর্থনৈতিক ও সামাজিক কমিশনের (ইউএনএসক্যাপ) ৮০তম অধিবেশনে দেয়া ভাষণে তিনি এ আহ্বান জানান বলে বার্তা সংস্থা বাসসের প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আমাদের সব ধরনের আগ্রাসন ও নৃশংসতার বিরুদ্ধে কথা বলতে হবে এবং যুদ্ধকে ‘না’ বলতে হবে। বাংলাদেশ জাতিসংঘ মহাসচিবের ‘শান্তির জন্য নতুন এজেন্ডা’র পক্ষে।”
ভাষণে সব ধরনের যুদ্ধ, আগ্রাসন ও নৃশংসতা বন্ধে বিশ্ব নেতাদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, গাজায় ইসরায়েলের হামলা শুধু হতাহতের সংখ্যা বাড়াচ্ছে, বিশেষত নারী ও শিশুরা এর বলি হচ্ছে। অথচ আলোচনায় আসতে পারে শান্তি।
তিনি বলেন, ‘ফিলিস্তিনি যুদ্ধ ও গণহত্যা চলছে। এটি অবশ্যই বন্ধ হতে হবে। যুদ্ধ কোনো সমাধান দিতে পারে না।’
এ প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা তার উদ্যোগ ও শাসনামলে ১৯৯৬ সালে বাংলাদেশে ‘পার্বত্য শান্তি চুক্তি’র কথা উল্লেখ করেন।
তিনি বলেন, ‘আমাদের অবশ্যই আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে আঞ্চলিক বিরোধ ও উত্তেজনা নিষ্পত্তি করতে হবে।’
আরও পড়ুন:তীব্র তাপপ্রবাহে পানির জন্য হাহাকার সৃষ্টি হয়েছে বরেন্দ্র অঞ্চল রাজশাহীতে। পানির অভাবে ব্লাস্টসহ বিভিন্ন রোগ বালাইয়ের শিকার হচ্ছে বোরো ধান। ধানের পাশাপাশি ক্ষতির মুখে পড়েছে অন্যান্য ফসলও। পানির সংকট হওয়ায় আমের মুকুল ঝরে যাচ্ছে।
রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার ধান চাষি আজমত উল্লাহ জানান, পানির অভাবে ধানের জমি ফেটে চৌচির হয়ে যাচ্ছে। ধানে পোকাড় আক্রমণ হচ্ছে। ধানের থোড়া আসায় পানির দরকার হলেও পানি পাওয়া যাচ্ছে না। কয়েকদিন বরেন্দ্রের গভীর নলকূপে সেচের জন্য ঘুরছেন। তবে সিরিয়াল পাচ্ছেন না।
জেলার কয়েকটি আম বাগান ঘুরে দেখা যায়, প্রচুর পরিমাণ আম ঝড়ে পড়ছে। গাছের নিচে ঝড়া আম স্তুপ হয়ে আছে।
চারঘাট উপজেলার আমচাষী জব্বর আলী বলেন, পানির অভাবে আম ঝড়ে যাচ্ছে। প্রতিদিনই আম ঝড়ে যাচ্ছে। পানি দিয়েও আম ঝড়া ঠেকানো যাচ্ছে না। পানিও ঠিক মত উঠছে না। এবার আমের ফলন ঠিক মত হবে না।
অন্যান্য চাষীরাও বলছেন একই কথা। পানি না থাকায় বালায় নাশক স্প্রেও দেয়া যাচ্ছে না। ফলে পোকামাকড় আক্রমণ ঠেকানো যাচ্ছে না।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বরেন্দ্রের অপরিকল্পিত সেচ প্রকল্পের কারণে এই অঞ্চলে পানির স্তর ক্রমেই নিচে নামছে। ফলে পানির সংকট সৃষ্টি হয়ে ফসল উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। পানির অভাবে বোরো ধানের উৎপাদন প্রায় ৩০ শতাংশ কমে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের এগ্রোনমি অ্যান্ড এগ্রিকালচার এক্সটেনশন বিভাগের অধ্যাপক ড. মাহমুদুল হাসান বলেন, বোরো ধানের জমিতে কম পক্ষে ৩ সেন্টিমিটার পানি থাকা প্রয়োজন। তা না হলে ধানের ব্যাপক ক্ষতিসাধন হয়। ধানের থোড়া তে প্রচুর পরিমাণ চিটা দেখা দেয়। আর পানির অভাবে বোরো ধানে ব্লাস্ট রোগ হয়ে ধান গাছ হলুদ হয়ে যায়। যেভাবেই হোক বোরো ধানের জমিতে সব সময় পানির ধরে রাখতে হবে। এবার যেভাবে তাপ প্রবাহ ও পানির সংকট তৈরি হয়েছে এটা আরো কিছুদিন অব্যাহত থাকলে বোরোর উতপাদন ৩০ শতাংশ পর্যন্ত কমে যাবে।
রাজশাহী ফল গবেষণা কেন্দ্রের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. শফিকুল ইসলাম বলেন, তাপ প্রবাহের ফলে আমের ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে। পানির সংকট তৈরি হওয়ায় আম ঝড়ে পড়ছে। আমের ঝড়ে পড়া রোধে আম গাছের গোড়াতে সপ্তাহে অন্তত একদিন পানি দিতে হবে হবে। কৃষকদের আমরা গাছের গোড়াতে পানি দেয়ার পরামর্শ দিচ্ছি। এ বছর রাজশাহী জেলায় ১৯ হাজার ৬০২ হেক্টর জমিতে আম চাষ হচ্ছে। উৎপাদন লক্ষমাত্রা ২ লাখ ৬০ হাজার ১৬৪ মেট্রিক টন নির্ধারণ করা হলেও তা অর্জন করা সম্ভব হবে না।
পরিবেশ বিশেষজ্ঞ ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল ও পরিবেশবিদ্যা বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক ড. শীতাংশু কুমার পাল বলেন, রাজশাহী অঞ্চলে পানির স্তর নিচে নেমে যাচ্ছে। ফলে প্রতি বছর পানির তীব্র সংকট সৃষ্টি হচ্ছে। বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের অপরিকল্পিত গভীর নলকূপের মাধ্যমে সেচ প্রকল্পের কারণে পানির স্তর আরো বেশি দ্রুত নিচে নেমেছে। গভীর নলকূপেও এখন ঠিম মত অয়ানি উঠছে না। এই অবস্থা থেকে উত্তরণ পেতে হবে ভূগর্ভস্থ পানি উত্তোলন কমিয়ে নদী থেকে জমিতে সেচ দেয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। পাশাপাশি বৃষ্টির পানি জমানোর ওপর গুরুত্ব দিতে হবে।
তবে বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আব্দুর রশিদের দাবি, সমালোচকরা পানি সংকটের বিষয়ে বরেন্দ্রের ঘাড়ে এককভাবে দোষ চাপাচ্ছে। পানির সংকট মোকাবিলায় নতুন নতুন প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়নের মাধ্যমে কৃষি জমিতে সেচ দেয়ার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। পদ্মা নদী থেকে আশেপাশের অঞ্চলে সেচের পানি সরবারাহ করতে ইতিমধ্যে উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। পাশাপাশি নষ্ট হয়ে যাওয়া গভীর নলকূপ গুলোও মেরামত করা হচ্ছে।
তিনি বলেন, তীব্র তাপ প্রবাহের ফলে কিছুটা পানি সংকট তৈরি হলেও তা দ্রুত সমাধান করতে বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ কাজ করে যাচ্ছে। বোরো ধানের জমিতে পানি পানি সরবারাহের বিষয়ে বরেন্দ্র অগ্রাধিকার দিচ্ছে।
রাজশাহী জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপ-পরিচালক সাবিনা বেগম জানান, বোরো ধানের জমিতে পানি সরবাহর নিশ্চিত করতে সংশ্লিষ্ট সব দপ্তর একযোগে কাজ করার ব্যাপারে সমন্বয় করা হচ্ছে। পাশাপাশি বিদ্যুৎ বিভাগের সাথে কথা বলা হচ্ছে যেন সেচের জন্য নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবারাহ নিশ্চিত করা যায়।
গাইবান্ধার পলাশবাড়ীতে সম্পত্তির লোভে মারধর করে আপন ভাতিজিকে হত্যার অভিযোগ উঠেছে এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে।
উপজেলার মনোহরপুর ইউনিয়নের কুমুদপুর গ্রামে বুধবার দুপুরে এ ঘটনা ঘটে।
এ ঘটনায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নারীসহ তিনজনকে আট করেছে পলাশবাড়ী থানা পুলিশ।
প্রাণ হারানো তরুণীর নাম শারমিন আক্তার (২২), যিনি প্রয়াত শুক্কুর উদ্দিনের মেয়ে। বিয়ে বিচ্ছেদের পর শারমিন বাবার বাড়িতেই থাকতেন।
শারমিনের অভিযুক্ত চাচার নাম আবদুল খালেক।
তরুণীর পরিবার, স্থানীয় লোকজন ও পুলিশ জানায়, প্রায় এক বছর আগে পিতৃহারা শারমিনকে কৌশলে বিয়ে দেন তার চাচারা। বিয়ের পর তালাক হলে সমঝোতায় দেনমোহরের টাকা শারমিনকে না দিয়ে আত্মসাৎ করেন তার বড় চাচা আবদুল খালেক। সেই টাকা ও শারমিনের নামে থাকা জমি নিয়ে তাদের মধ্যে মনোমালিন্য চলছিল।
তারা আরও জানান, সম্পত্তি নিয়ে বুধবার বেলা ১১টার দিকে শারমিনের সঙ্গে তার চাচাদের বিরোধ বাধে। ওই সময় অভিযুক্তদের মারধরে গুরুতর আহত হন শারমিন। পরে আহত শারমিনকে অভিযুক্তরাই উদ্ধার করে চিকিৎসার জন্য গাইবান্ধার জেনারেল হাসপাতালে নিলে চিকিৎসক তাকে মৃত বলে জানান।
শারমিনের দুলাভাই রুহুল আমিন বলেন, ‘শারমিন ও শাম্মী আপন দুই বোন। আমার শ্বশুর (শারমিনের বাবা) মারা গেছেন। বাবা মারা যাওয়ার পর শারমিন আমার বাড়িতেই থাকত। পরে শারমিনের বাবলু নামের এক ফুফা ও তার জ্যাঠারা মিলে কৌশলে শারমিনকে আমার বাড়ি থেকে নিয়ে এসে বিয়ে দেন।
‘বিয়ের তিন-চার মাস পরই তালাক হয় শারমিনের। তখন থেকেই শারমিন আমার শাশুড়ির সাথে তার বাবার বাড়িতেই থাকত।’
শারমিনের মা এবং এ তরুণীর দুলাভাই রুহুল আমিনের অভিযোগ, শাম্মী ও শারমিনের নামে ৩২ শতাংশ জমি আছে। সেই জমি নেয়ার লোভে ক্ষিপ্ত হয়ে বিভিন্ন সময়ে ঝগড়া-বিবাদ, গালিগালাজসহ শারমিনকে মারধর করতেন তার চাচা আবদুল খালেক। এরই ধারাবাহিকতায় বুধবার শারমিনের কাছে জমি চেয়ে মারধর শুরু করেন তিনি। পরে আবদুল খালেকের ভাই আবদুল বারী, ভাতিজা রহমান ও ছকু নামের একজন মারধর করতে থাকেন। ওই সময় তাদের মারধরে শারমিন ঘটনাস্থলেই মারা যান।
মোবাইল ফোনে নিউজবাংলাকে ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে পলাশবাড়ী থানার ওসি কেএম আজমিরুজ্জামান বলেন, ‘মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য গাইবান্ধা জেনারেল হাসপাতালের মর্গে রাখা হয়েছে। এ ঘটনায় নারীসহ তিনজনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করা হয়েছে।
‘নিহতের পরিবারের পক্ষ থেকে মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে। মামলা হলে তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
ওই সময় এক প্রশ্নের জবাবে ওসি বলেন, ‘প্রাথমিক সুরতহালে নিহতের শরীরে কোনো আঘাতের চিহ্ন পাওয়া যায়নি। এ ছাড়া গলাতে কোনো দাগ চোখে পড়েনি, তবে শ্বাসরোধের বিষয়টি ক্লিনিক্যালি পরীক্ষা-নিরীক্ষা ছাড়া নিশ্চিত বলা যাচ্ছে না।’
আরও পড়ুন:
মন্তব্য