বিশ্ব শান্তি রক্ষায় জীবন উৎসর্গকারী আট বাংলাদেশিকে জাতিসংঘ তাদের সর্বোচ্চ পদক দ্যাগ হ্যামারশোল্ড মেডেলে ভূষিত করেছে।
জাতিসংঘের সদর দপ্তররের বাংলাদেশ স্থায়ী মিশন থেকে শুক্রবার পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে তথ্য জানানো হয়। এতে বলা হয়, সর্বোচ্চ ত্যাগের স্বীকৃতিস্বরূপ এ বছর বিশ্বের ৪৪টি দেশের ১২৯ জন শান্তিরক্ষীকে পুরস্কারটিতে ভূষিত করা হয়েছে।
জাতিসংঘ সদর দপ্তরে আন্তর্জাতিক শান্তিরক্ষী দিবস উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে এই মেডেল দেয়া হয়। ভার্চুয়াল অনুষ্ঠানের মাধ্যমে জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস পুরস্কার পাওয়া ৪৪ দেশের স্থায়ী প্রতিনিধিদের হাতে মেডেল তুলে দেন।
এই পদক বিশ্ব শান্তি প্রতিষ্ঠার মহৎ উদ্দেশ্যে উৎসর্গকৃত জীবনের শক্তি, বিশুদ্ধতা ও নশ্বরতাকেই বারবার স্মরণ করে বলে বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়।
এ বছর বাংলাদেশের আটজন শান্তিরক্ষী পদক পেয়েছেন, যা একক দেশ হিসেবে সর্বোচ্চ।
কর্তব্যরত অবস্থায় আত্মোৎসর্গকারী বাংলাদেশের আট শান্তিরক্ষী হলেন মালিতে মিনুস্মা মিশনের ওয়ারেন্ট অফিসার আব্দুল মো. হালিম, কঙ্গোতে মনুস্কো মিশনের ওয়ারেন্ট অফিসার মো. সাইফুল ইমাম ভূইয়া, সার্জেন্ট মো. জিয়াউর রহমান, সার্জেন্ট এমডি মোবারক হোসেন ও ল্যান্স করপোরাল মো. সাইফুল ইসলাম, সেন্ট্রাল আফ্রিকান রিপাবলিকে মিনুস্কা মিশনের ল্যান্স করপোরাল মো. আব্দুল্লাহ আল মামুন ও সার্জেন্ট মো. ইব্রাহীম এবং দক্ষিণ সুদানে আনমিস মিশনের ওয়াসারম্যান নুরুল আমিন।
বাংলাদেশের পক্ষ থেকে এই মেডেল গ্রহণ করেন জাতিসংঘে নিযুক্ত বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি ও রাষ্ট্রদূত রাবাব ফাতিমা।
ভার্চুয়াল অনুষ্ঠানটিতে অংশ নেন মিশনের ডিফেন্স অ্যাডভাইজর ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. ছাদেকুজ্জামান।
জাতিসংঘে বাংলাদেশ স্থায়ী মিশন এসব মেডেল কর্তব্যরত অবস্থায় নিহত বাংলাদেশি শান্তিরক্ষীদের পরিবারের কাছে পৌঁছে দেয়ার ব্যবস্থা নেবে।
পদক প্রদান অনুষ্ঠান উপলক্ষে দেয়া এক শোক বার্তায় রাষ্ট্রদূত ফাতিমা বলেন, ‘আমি জাতিসংঘের পতাকাতলে কর্তব্যরত অবস্থায় জীবনদানকারী নীল হেলমেটের সব সাহসী পুরুষ ও নারীর প্রতি গভীর শ্রদ্ধা প্রদর্শন করছি এবং তাদের পরিবার ও স্বজনদের প্রতি গভীর সমবেদনা প্রকাশ করছি।’
তিনি আরও বলেন, বিশ্ব শান্তি প্রতিষ্ঠার পবিত্র দায়িত্ব পালনকালে বাংলাদেশ তার অনেক বীর সেনানিকে হারিয়েছে। কিন্তু এই ত্যাগ জাতিসংঘে দায়িত্ব পালনের কোনো আহ্বানে সাড়া দিতে কখনই আমাদের জন্য বাধা হয়ে দাঁড়ায়নি। বরং শান্তির লক্ষ্যে নিজেদের উৎসর্গ করার দৃঢ় সংকল্পকে আরও জোরদার করেছে।
আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে উদ্দেশ্য করে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি বলেন, বুভুক্ষা ও দুর্দশা মুক্ত বিশ্ব প্রতিষ্ঠা করে শান্তির অনুসন্ধান করলেই কেবল কর্তব্যরত অবস্থায় জীবনদানকারী এই শান্তিরক্ষীদের প্রতি প্রকৃত সম্মান প্রদর্শন করা হবে।
আন্তর্জাতিক শান্তিরক্ষী দিবসের এবারের প্রতিপাদ্য ‘স্থায়ী শান্তির পথে: শান্তি ও নিরাপত্তার জন্য যুব-শক্তিকে বৃদ্ধি করা’।
দিবসটি উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানের শুরুতে মহাসচির আন্তোনিও গুতেরেসে বিগত সাত দশকব্যাপী জাতিসংঘের পতাকাতলে কর্তব্যরত অবস্থায় জীবনদানকারী সামরিক ও বেসামরিক শান্তিরক্ষীদের বিদেহী আত্মার স্মরণে জাতিসংঘ সদর দপ্তরের উত্তর লনে অবস্থিত ‘শান্তিরক্ষী মেমোরিয়াল সাইট’ -এ পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন।
জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে বাংলাদেশ বর্তমানে সর্বোচ্চ শান্তিরক্ষী পাঠানো দেশ। জাতিসংঘের ৯টি শান্তিরক্ষা মিশনে বাংলাদেশের প্রায় ৭ হাজার শান্তিরক্ষী কর্মরত। এ পর্যন্ত শান্তিরক্ষা মিশনে কর্তব্যরত অবস্থায় বাংলাদেশের ১৫৯ জন শান্তিরক্ষী মৃত্যুবরণ করেছেন।
প্রতি বছরই যথাযোগ্য মর্যাদায় জাতিসংঘ সদর দপ্তরে আন্তর্জাতিক শান্তিরক্ষা দিবস উদযাপন করা হয়। কোভিড-১৯ অতিমারিজনিত কারণে এবারের অনুষ্ঠানটি ভার্চুয়ালভাবে আয়োজন করা হয়েছে।
বাড়ির ছাদ থেকে প্রমত্ত পদ্মার বুকে দাঁড়িয়ে থাকা দেশের অহংকারের প্রতীক পদ্মা সেতু স্পষ্ট দেখা গেলেও, দূরত্ব নেহাত কম নয়। সেতু দিয়ে যান চলাচল করলে সেটা বোঝা যায়, দেখা যায় আবছা।
তবুও আগ্রহের কমতি নেই জীবন বাবুর পরিবারের। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যখন সেতু পাড়ি দেবেন, সেই দৃশ্যটি দেখতে বাড়ির ছাদে জড়ো হয়েছেন তার পরিবারের সব সদস্য।
পুরো নাম জীবন দাশ। পদ্মা সেতুর মাওয়া প্রান্তের মেদিনী মণ্ডলে তার বাড়ি। ৪০ বছর ধরে থাকছেন এখানে। অবশ্য এখন যে পাঁচ তলা ভবনের ছাদ থেকে সেতু দেখছেন, সেই বাড়িটি বেশি পুরনো নয়। বছর দুয়েক হলো শেষ হয়েছে নির্মাণ কাজ।
জীবন বাবু জানালেন তাদের বাড়ি ছিল মাওয়া গ্রামে। সেসব অনেক বছর আগের কথা। খরস্রোতা পদ্মার ভাঙনে তলিয়ে গেছে সেই গ্রাম। হারিয়ে গেছে তাদের বাড়ি। তিনি জানালেন, ‘মাঝ নদীতে আমাদের ওই গ্রাম ছিল। যেখানে আমাদের বাড়ি ছিল।’
ছাদ আয়োজন নিয়ে জানতে চাইলে জীবন দাশ বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যাবেন সেতু পার হয়ে। সেই দৃশ্যটি নিজ চোখে দেখতে চাই।’
প্রধানমন্ত্রীর সেতু পাড়ি দেয়ার সময় থাকতে পারে কড়া রোদ্দুর। পরিবারের শিশু ও বয়স্কদের কষ্ট বাড়বে তাতে। তাই শামিয়ানা টানানো হয়েছে ছাদে। তার নিচেই আয়োজন করে বসেছেন সবাই।
নিজের ছেলে মেয়ে, পুত্রবধূ, নাতি-নাতনি সবাই মিলিত হয়েছেন বাড়ির ছাদে। মুন্সীগঞ্জের ভাগ্যকূল, কামারগাঁও, শ্রীনগর থেকে আত্মীয় স্বজনরাও এসেছেন তার বাড়িতে। জীবন জানালেন, ‘বাড়ির ছাদ থেকে পদ্মা সেতু দেখা যায় এটা সবাই জানে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আজকে যাবেন, সেটা দেখার জন্যই তারাও এসেছেন আমাদের বাড়িতে।’
আমন্ত্রিত অতিথি ছাড়া পদ্মা সেতুর উদ্বোধনী সুধী সমাবেশে যোগ দেয়ার সুযোগ নেই কারও। নিরাপত্তাজনিত কারণে প্রকল্প এলাকায় যাওয়ার সুযোগ নেই। ফলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যখন সেতু পাড়ি দেবেন, সেই দৃশ্যটা নিজেদের বঞ্চিত করতে চান না তারা।
জীবন দাশ বলেন, ‘টেলিভিশনে সব দেখার সুযোগ থাকলেও নিজ চোখে দেখার যে আনন্দ সেটা তো অন্য রকমের।’
মাওয়া বাজারে মিষ্টির দোকানি দুলাল। তার বয়স ৫০ বছর। জীবন বাবুর বাড়িতে ভাড়া থাকেন তিনি। যোগ দিয়েছেন ছাদের আয়োজন।
নিউজবাংলাকে দুলাল বলেন, ‘আমি এখানে আসছি প্রধানমন্ত্রী আসব। এত্তবড় একটা প্রোগ্রাম। আমার সঙ্গে বউ পোলারাও আসছে।’
গৃহিণী মিনা রাণী দাশ বলেন, ‘শেখ হাসিনাকে দেখার জন্যই ছাদে আইসা বসছি। শেখ হাসিনা গাড়ি দিয়ে যাবে ওই পার, সেটা দেখব।’
গৃহস্থ সব কাজ ছেড়ে ছাদে অপেক্ষারত ৬০ বছর বয়সী এই নারী আরও বলেন, ‘খুব আনন্দ লাগতেছে, শেখ হাসিনা পদ্মা সেতু করে দিছে। আজকের দিনে বেশি আনন্দ লাগতেছে। এই আনন্দ আমাদের দুর্গাপূজার চেয়েও বেশি।’
বুড়োদের সঙ্গে শিশুদের উচ্ছ্বাসেরও কমতি নেই। যদিও পদ্মা সেতুর তাৎপর্য বুঝে ওঠার বয়স তাদের হয়নি। তারা জানে না কত দীর্ঘ অপেক্ষার পর নির্মিত হয়েছে এই সেতু। এটি নির্মাণ করতে গিয়ে কত কাঠখড় পোড়াতে হয়েছে সরকারকে। তাদের কাছে নিছক একটি স্থাপনা এই সেতু। তাই বাড়ির সবার সঙ্গে আনন্দ উদযাপনই মূল লক্ষ্য তাদের।
পঞ্চম শ্রেণির ছাত্র উৎসব দাশ ও তার কয়েকজন বন্ধু মিলে নিজেরাও পলিথিন টানিয়ে শামিয়ানা বানিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীকে দেখব। কিন্তু রোদ বেশি। তাই এই পলিথিন টানিয়েছি আমরা।’
এতো গেল জীবন দাশের ছাদের গল্প। আশেপাশের ছাদের দিকে তাকালেও চোখে পড়ে এমন দৃশ্য।
প্রধানমন্ত্রীর প্রেস উইং থেকে দেয়া সূচি অনুযায়ী, সুধী সমাবেশ শেষে বেলা ১১টার দিকে স্মারক ডাকটিকিট, স্যুভেনির শিট, উদ্বোধনী খাম ও সিলমোহর অবমুক্ত করবেন সরকারপ্রধান। পদ্মা সেতু নির্মাণ সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে ফটোসেশনে অংশ নেয়ার কথাও রয়েছে তার।
বেলা ১১টা ১২ মিনিটে টোল দিয়ে মুন্সিগঞ্জের মাওয়া প্রান্তে সেতুর উদ্বোধনী ফলক ও ম্যুরাল-১ উন্মোচন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
এরপর ১১টা ২৩ মিনিটের দিকে পদ্মা সেতু পাড়ি দেবেন বঙ্গবন্ধুকন্যা। এ সময় কিছুক্ষণের জন্য গাড়ি থেকে নেমে সেতুতে পায়চারি করতে পারেন তিনি।
বেলা ১১টা ৪৫ মিনিটের দিয়ে শরীয়তপুরের জাজিরা প্রান্তে পৌঁছেই পদ্মার সেতুর আরেকটি উদ্বোধনী ফলক ও ম্যুরাল-২ উন্মোচন করবেন প্রধানমন্ত্রী। এরপর কাঁঠালবাড়ির ইলিয়াছ আহমেদ চৌধুরী ফেরিঘাটে আওয়ামী লীগের জনসভায় দলপ্রধান হিসেবে যোগ দেবেন শেখ হাসিনা।
প্রধানমন্ত্রী পদ্মা সেতু পাড়ি দেয়ার সময় পদ্মায় নৌ মহড়ার আয়োজন করা হয়েছে। ৩১টি বিমান ও হেলকপ্টার নিয়ে ফ্লাইং পাস্ট করার জন্য প্রস্তুত রয়েছে বিমানবাহিনী। এই বহরে আছে মিগ-২৯ এর মতো যুদ্ধ বিমানও।
রোববার ভোর ৬টা থেকে যান চলাচলের জন্য খুলে দেয়া হবে পদ্মা সেতু। ফুরাবে ফেরি পারাপারের বিড়ম্বনা, বাঁচবে সময়। বদলে যাবে দৃশ্যপট, আরও সচল হবে দেশের অর্থনীতির চাকা।
আরও পড়ুন:পদ্মা সেতুকে সিমেন্ট, পাথরের নেহায়েত একটি স্থাপনা হিসেবে দেখছেন না প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এটি নির্মাণের উদ্যোগ নেয়ার পর থেকে নানা ঘাত প্রতিঘাতের কথা তুলে ধরে তিনি বলেছেন, এটি বাঙালি জাতির গর্ব, মর্যাদা, সক্ষমতা ও সাহসের প্রতীক।
১৯৭১ সালের ৭ মার্চ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক ভাষণের উক্তি ‘কেউ আমাদের দাবায়ে রাখতে পারবা না’-এর সঙ্গে সুর মিলিয়ে তিনি এও বলেছেন, ‘আমাদের কেউ দাবায়ে রাখতে পারেনি।
১৯৯৬ সালে ক্ষমতায় আসার পর থেকেই রাজধানীর সঙ্গে দক্ষিণাঞ্চলে সড়ক যোগাযোগের প্রধান বাধা পদ্মা নদীর ওপর সেতু নির্মাণের উদ্যোগ নেন শেখ হাসিনা। ২০০৯ সালে ক্ষমতায় এসে সেটি এগিয়ে নেন। দুই যুগের বেশি সময়ের স্বপ্ন পূরণ হয়েছে।
শনিবার বহুল প্রতীক্ষিত সেতুটি উদ্বোধন করেন বঙ্গবন্ধু কন্যা। তার আগে মুন্সিগঞ্জের মাওয়া প্রান্তে সুধী সমাবেশে বক্তব্য রাখেন তিনি। এ সময় তিনি এ কথা বলেন।
নিজের বাবার করা উচ্চারণের সুরে শেখ হাসিনা বলেন, ‘পদ্মা সেতুর ৪২ টি স্তম্ভ বাংলাদেশের প্রতিচ্ছবি। বঙ্গবন্ধু আমাদের বলেছিলেন, কেউ দাবায়ে রাখতে পারবা না, কেউ দাবায়ে রাখতে পারেনি। আমরা বিজয়ী হয়েছি।’
পদ্মা সেতু নির্মাণে বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে ঋণচুক্তি হলেও নানা ঘটনাপ্রবাহের কারণে পরে নিজস্ব অর্থে সেতু নির্মাণ করে সরকার। শুরুতে কেবল সড়ক সেতু নির্মাণের চিন্তা থাকলেও পরে তাকে যুক্ত করা হয়েছে রেল। আর এক তলার বদলে নির্মিত হয়েছে দ্বিতল সেতু। পুরোটা কংক্রিটের বদলে নির্মিত হয়েছে স্টিল স্ট্রাকচারড সেতু।
এই প্রকল্প থেকে বিশ্বব্যাংক সরে যায় পরামর্শক নিয়োগে দুর্নীতি চেষ্টার অভিযোগ তুলে। শুরু থেকেই সরকার এই অভিযোগ অস্বীকার করে একে চক্রান্ত আখ্যা দিয়ে আসছিল।
বিশ্বব্যাংকের অভিযোগ ছিল, কানাডীয় প্রতিষ্ঠান এস এন সি লাভালিন এই পরামর্শকের কাজ পেতে ঘুষ দেয়ার পরিকল্পনা করছে। পরে কানাডায় এই বিষয়টি নিয়ে এস এন সি লাভালিনের বিরুদ্ধে মামলা হয়। ২০১৭ সালে দেশটির একটি আদালত এই মামলা নাকচ করে বলেছে, বিশ্বব্যাংকের অভিযোগ ‘বায়বীয়’, ‘গালগপ্প’।
প্রধানমন্ত্রী নানা সময় বলে এসেছেন, গ্রামীণ ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাতা ব্যবস্থাপনা পরিচালক ড. মুহম্মদ ইউনুসকে তার পদ ছাড়তে হওয়ায় তিনি ও তার বলয়ে থাকা ব্যক্তিরা বিশ্বব্যাংককে দিয়ে এই কাজ করিয়েছেন। ড. ইউনুসের সঙ্গে সে সময় যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটনের ঘনিষ্ঠতা রয়েছে এবং হিলারি নিজেও চাপ দিয়েছেন বিষয়টি নিয়ে।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তব্য দিতে উঠেই আবেগ আপ্লুত হয়ে পড়েন শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের মানুষ আজ গর্বিত, আমিও আনন্দিত ও গর্বিত। অনেক বাঁধা, ষড়যন্ত্রের জাল ছিন্ন করে আজ আমরা এই সেতু নির্মাণ করতে পেড়েছি।’
পদ্মা সেতু নিয়ে দেশি বিদেশি ‘ষড়যন্ত্রের কারণে’ সেতু নির্মাণের কাজ দুই বছর বিলম্বিত হওয়ার কথাও বলেন তিনি। তবে এ নিয়ে হতাশ নন, বরং এর মধ্য দিয়ে দেশের শক্তিমত্তার প্রমাণ মিলেছে বলে মনে করেন সরকারপ্রধান।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এটা শুধু সেতু নয়, শুধু ইট-সিমেন্টের অবকাঠামো নয়, এ সেতু আমাদের গর্ব, মর্যাদা আর সক্ষমতার প্রতীক। এর সঙ্গে জড়িয়ে আছে আমাদের আবেগ, সাহসিকতা ও প্রত্যয়। ষড়যন্ত্রের জন্য দুই বছর নির্মাণ কাজ বিলম্বিত হয়। কিন্তু আমরা হতাশায় ভুগিনি, আত্মবিশ্বাস নিয়ে এগিয়ে গিয়েছি।
‘সবাই জানেন, এই সেতু যখন নির্মাণ করতে যাই, অনেক ষড়যন্ত্র হয়। মিথ্যা অপবাদ দিয়ে একেকটি পরিবার ও মানুষকে মানসিক যন্ত্রণা দেয়া হয়। শেখ রেহানা, সজিব ওয়াজেদ, সায়মা ওয়াজেদ, রাদওয়ান সিদ্দকীসহ প্রত্যকেটি পরিবারকে মিথ্যা অপবাদ দেয়া হয়।
‘সে সময় আমার উপদেষ্টা মশিউর রহমান, সৈয়দ আবুল হোসেন, সচিব মোশাররফ হোসেন ভূইয়া সহ যারা ছিলো তাদের মিথ্যা অপবাদ দেয়া হয়। তাদের পরিবার যে যন্ত্রণা ভোগ করেছে আমি সহমর্মিতা জানাই।’
আরও পড়ুন:স্বপ্নের পদ্মা সেতুর উদ্বোধনী দিনে আরও অনেকের সঙ্গে সাক্ষী হতে নিজের নৌকা নিয়ে মাদারীপুরের কাঁঠালবাড়ী আওয়ামী লীগের জনসভায় এসেছেন শরীয়তপুরের জাজিরার আবু বকর মাতুব্বর।
শনিবার সকাল ১০টার দিকে কাঁঠালবাড়ীতে দেখা হয় তার সঙ্গে। সমাবেশস্থল থেকে অনেকটা দূরে নৌকার ওপর বসে ছিলেন তিনি।
আবু বকর নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমি বয়স্ক মানুষ। এখন গায়ে তেমন শক্তি পাই না। তারপরও প্রধানমন্ত্রীকে দেখতে এসেছি।’
এত দূরে বসে প্রধানমন্ত্রীকে দেখতে পাবেন কি-না এমন প্রশ্নে বলেন, ‘এখন তো শরীরে শক্তি নাই। এত মানুষ ঠেলে ভেতরে যাইতে পারুম না। এখানে বসে শুনতে পারলেই দেখা হয়ে যাবে।
‘আমারও বয়স হয়েছে, প্রধানমন্ত্রীরও বয়স হয়েছে। কত দিন আর বাঁচব। প্রধানমন্ত্রী আমাদের এত বড় উপহার দিয়েছেন। আমরা তাকে ধন্যবাদ জানাই।
একই জেলার ওসমান ব্যাপারীও সকাল ছয়টায় রওনা দিয়ে সমাবেশ স্থলে এসেছেন। তিনি নিউজবাংলাকে জানান, সেতু দেখতে আর প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য শুনতে এসেছি।
আরও পড়ুন:
পদ্মা সেতু উদ্বোধন উপলক্ষে সুধী সমাবেশে যোগ দেন গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ও ট্রাস্টি জাফরুল্লাহ চৌধুরী। হুইলচেয়ারে করে তিনি সুধী সমাবেশে আসেন।
শনিবার সকাল ৮টার দিকে মুন্সীগঞ্জের মাওয়া প্রান্তে সমাবেশস্থলে ডা. জাফরুল্লাহকে দেখা যায়। এ সময় তার পরনে ছিল সাদা-কালো রঙের শার্ট ও খাকি লুঙ্গি।
পদ্মা সেতুর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে যোগ দিতে সকাল ১০টায় মাওয়া প্রান্তে পৌঁছান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
তেজগাঁও বিমানবন্দর থেকে হেলিকপ্টারে শনিবার সকাল সাড়ে ৯টার পর মাওয়ার উদ্দেশে রওনা হন তিনি। সকাল ১০টার দিকে তিনি মাওয়া প্রান্তে পৌঁছান।
প্রধানমন্ত্রী মাওয়ায় যোগ দেন সুধী সমাবেশে। রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ সাড়ে তিন হাজার নাগরিককে আমন্ত্রণ জানানো হয় এই সমাবেশে। ভোর সাড়ে ৬টা থেকে শুরু হয় অতিথিদের আগমন।
ফুরিয়ে এলো ক্ষণগণনার পালা। আর অল্প সময়ের মধ্যে বহুল প্রতীক্ষার পদ্মা সেতুর উদ্বোধন ঘোষণা করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
উচ্ছ্বাসে মুখর গোটা মাওয়া প্রান্ত। অপেক্ষার অবসান হলো বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার আগমনের মধ্য দিয়ে।
দুর্নীতিচেষ্টার মিথ্যে অভিযোগ এনে পদ্মা সেতুর অর্থায়ন থেকে বিশ্বব্যাংকের সরে দাঁড়ানোর ঘোষণার পর নিজস্ব অর্থায়নের এই সেতু নির্মাণের ঘোষণা দিয়েছিলেন বঙ্গবন্ধুকন্যা। তার নেতৃত্বেই নির্মিত হয়েছে সেতুটি। আজ তার হাত ধরেই খুলে যাবে সেতুটি।
এর মধ্য দিয়ে দক্ষিণাঞ্চল সরাসরি যুক্ত হচ্ছে রাজধানীর সঙ্গে।
সুধী সমাবেশ শেষে বেলা ১১টার দিকে স্মারক ডাকটিকিট, স্যুভেনির শিট, উদ্বোধনী খাম ও সিলমোহর অবমুক্ত করবেন সরকারপ্রধান। পদ্মা সেতু নির্মাণসংশ্লিষ্টদের সঙ্গে ফটোসেশনে অংশ নেয়ার কথাও রয়েছে তার।
বেলা ১১টা ১২ মিনিটে টোল দিয়ে মুন্সীগঞ্জের মাওয়া প্রান্তে সেতুর উদ্বোধনী ফলক ও ম্যুরাল-১ উন্মোচন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপর ১১টা ২৩ মিনিটের দিকে পদ্মা সেতু পাড়ি দেবেন বঙ্গবন্ধুকন্যা। ওই সময় কিছুক্ষণের জন্য গাড়ি থেকে নেমে সেতুতে পায়চারি করতে পারেন তিনি।
বেলা ১১টা ৪৫ মিনিটে শরীয়তপুরের জাজিরা প্রান্তে পৌঁছেই পদ্মা সেতুর আরেকটি উদ্বোধনী ফলক ও ম্যুরাল-২ উন্মোচন করবেন প্রধানমন্ত্রী। এরপর কাঁঠালবাড়ীর ইলিয়াছ আহমেদ চৌধুরী ফেরিঘাটে আওয়ামী লীগের জনসভায় দলপ্রধান হিসেবে যোগ দেবেন শেখ হাসিনা।
আরও পড়ুন:আর কিছু মুহূর্ত। এরপরই বর্ণিল আয়োজনে ফলক উন্মোচিত হবে দেশের সক্ষমতার প্রতীক পদ্মা সেতুর। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই আয়োজনে যোগ দিতে রাজধানীর তেজগাঁও বিমানবন্দর থেকে হেলিকপ্টারযোগে রওনা হন শনিবার সকাল সাড়ে ৯টায়। ১০টায় যোগ দেন সেতুর মাওয়া প্রান্তের সুধী সমাবেশে। এরপরই সেই মাহেন্দ্রক্ষণ, সেতুর শুভ উদ্বোধন।
সকাল থেকেই সমাবেশে যোগ দিতে সুধীরা এসেছেন রাজধানীসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে। ইতিমধ্যেই অধিকাংশ অতিথিরা সমাবেশস্থলে হাজির হয়েছেন। এখন সেখানে উপস্থিত প্রধানমন্ত্রী।
প্রধানমন্ত্রীর আগমন উপলক্ষে আগে থেকেই সেতু ও আশপাশের এলাকায় নিরাপত্তার স্তর বাড়ানো হয়েছে। এরইমধ্যে সেতুর মাওয়া প্রান্তের সমাবেশস্থল থেকে ১ কি.মি. দূরত্ব পর্যন্ত আশপাশের এলাকায় সাধারণদের চলাচলে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।
বন্ধ রয়েছে সকল দোকান পাট। আশপাশের অলিগলিতে উৎসুক সাধারণদের কিছু জটলা থাকলেও সকাল সাড়ে ৮টা থেকে কাউকেই সড়কে দাঁড়াতে দেয়া হচ্ছে না। প্রধানমন্ত্রী সমাবেশস্থল ত্যাগ করার আগে সকল বাসিন্দাদের নিজ নিজ বাসায় অবস্থান করার অনুরোধ জানিয়েছে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা। এমনকি অনেক গণমাধ্যমকর্মীরাও নিজেদের পেশাগত দায়িত্ব পালনে বিভিন্ন ভবনের ছাদে অবস্থান নিয়েছেন।
মাওয়া বাজার এলাকার বাসিন্দা গৌতম শীল নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমি বাজারে চায়ের দোকানে বসে চা খাচ্ছিলাম। এমন সময় পুলিশ এসে বলল বাসায় চলে যান, এখানে বসা যাবে না। এই কথা শুনে বুঝেছি প্রধানমন্ত্রীর জন্য এই ব্যবস্থা। এখন আমি বাসায় চলে যাচ্ছি।’
বাজার এলাকার পাশের একটি বাড়ির ফটক থেকে রাস্তার দিকে উৎসুক দৃষ্টি রাখা মনোয়ারা বলেন, বাসার কেউ বাইরে যাচ্ছে না, যারা বাইরে গিয়েছিল তারা এসে জানাল এখন সবার বাসায় থাকতে হবে। আমি একটু উঁকি দিয়ে দেখি আরকি কেমন অবস্থা। এইখান থেকেতো প্রধানমন্ত্রীকে দেখা যাবে না তাও দেখি আরকি।’
আরও পড়ুন:গুঁড়িগুঁড়ি বৃষ্টি এসে লাগছে পদ্মা সেতুতে। সেতু এলাকায় সকাল থেকে চলছে রোদ বৃষ্টির লুকোচুরি। এ নিয়ে সকাল ১০টা পর্যন্ত দুই দফা গুঁড়িগুঁড়ি বৃষ্টি ছুঁয়ে গেছে স্বপ্নের পদ্মা সেতুকে।
শনিবার সেতু উদ্বোধনের দিন সকাল পৌনে ৯টার দিকে প্রথম দফা বৃষ্টি নামে। মিনিট না পেরোতেই তা থেমে যায়। আবারও রোদ হেসে ওঠে।
তবে পদ্মা সেতুর ঠিক ওপরে আকাশের রং এখন শরতের মতো। নীল আকাশে তুলার মতো উড়ছে সাদা মেঘ। মেঘের ওড়াউড়িতে কখনও পড়ছে ছায়া, কখনও কড়া রোদ্দুর।
নদীর পাড়ে বইছে শরীর জুড়ানো বাতাস। সকাল ঠিক ৯টা ২৯ মিনিটে আবারও নামে গুঁড়িগুঁড়ি বৃষ্টি। মিনিট দুয়েক স্থায়ী ছিল বৃষ্টি।
মাওয়াপ্রান্ত ছাড়াও বৃষ্টি হয়েছে মাদারীপুরের কাঁঠালবাড়ী আওয়ামী লীগের জনসভাস্থলেও। বৃষ্টির পানিতে ভিজেছে সভায় যোগ দিতে আসা অসংখ্য মানুষ।
পূর্বাভাস দিয়ে অবশ্য আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, পদ্মা সেতু উদ্বোধনের সময় সেতু এলাকায় বৃষ্টির শঙ্কা নেই, তবে উদ্বোধনের আনুষ্ঠানিকতা শেষ হওয়ার পর বিকেলে বৃষ্টির পানি ছুঁয়ে যেতে পারে প্রমত্তা পদ্মার বুকে গড়ে ওঠা এই সেতুকে।
ঢাকা আবহাওয়া অফিসের আবহাওয়াবিদ তরিফুল নেওয়াজ কবির বলেন, ‘পদ্মা সেতু এলাকায় শনিবার বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা খুবই কম। এই এলাকায় দিনে রৌদ্রোজ্জ্বল থাকার সম্ভাবনা বেশি। তবে বেলা ৩টার দিকে বৃষ্টিপাতের প্রবণতা থাকতে পারে।’
আরও পড়ুন:বর্ণিল সাজে সেজেছে পদ্মার পাড়। স্বপ্নের পদ্মা সেতু উদ্বোধন উপলক্ষে উৎসবে মেতেছে জনতা। পদ্মার দক্ষিণপ্রান্তে মাদারীপুরের কাঁঠালবাড়ীতে আওয়ামী লীগের জনসভাস্থলে এখন জনস্রোত। ভোর রাত থেকে দেশের নানা অঞ্চল থেকে মানুষ আসছে এই সভায় যোগ দিতে।
বাস, ট্রাক, লঞ্চ ও নৌকায় মানুষ দলে দলে জনসভায় হাজির হচ্ছে। জনসভাস্থল থেকে আশপাশের সব দিকেই মানুষ আর মানুষ। বিভিন্ন স্লোগান, বর্ণিল সাজে উপস্থিত হচ্ছেন সবাই।
সেতুর উত্তর প্রান্তে মুন্সীগঞ্জের মাওয়া আর দক্ষিণ প্রান্তে কাঁঠালবাড়ী। শনিবার সকাল ১০টায় মাওয়া প্রান্তে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সমাবেশে পদ্মা সেতু উদ্বোধনের ঘোষণা দেবেন। এরপর সেতুর ফলক ও ম্যুরাল উদ্বোধন করবেন তিনি। পরে টোল দিয়ে সেতু পার হয়ে জনসভায় যোগ দেবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
জনসভাস্থলে দেখা গেছে, সোয়া ৯টায় পবিত্র ধর্মগ্রন্থ পাঠের মধ্য দিয়ে সমাবেশের আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়েছে। বরিশাল, ভোলা, পটুয়াখালীসহ দক্ষিণ অঞ্চল থেকে একের পর এক লঞ্চ এসে ভিড়ছে কাঁঠালবাড়ী ঘাটে। মিছিলে মিছিলে মানুষের বিশাল সমাবেশ জনসমুদ্রে পরিণত হয়েছে।
সকাল ১০টার দিকে জনসভাস্থলে বৃষ্টি নেমেছে। আচমকা বৃষ্টি থেকে রক্ষা পেতে দিকবিদিক ছুটছেন নেতাকর্মীরা। আশপাশে আশ্রয় নিয়েছেন অনেকে।
মন্তব্য