করোনা মহামারির কারণে আয় কমে যারা নতুন করে দারিদ্র্যসীমায় ঢুকেছেন, তাদের সিংহভাগ সরকারি সহায়তার বাইরে রয়ে গেছে।
গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ এক জরিপের ভিত্তিতে বলেছে, এ ধরনের মানুষদের ৭৭ শতাংশের কাছেই সরকারি সহায়তা পৌঁছেনি।
আবার যারা হতদরিদ্র, তাদের একটি বড় অংশও সহায়তা পাননি। সরকারের বিভিন্ন কার্যক্রম সম্পর্কে তারা জানতেনও না।
বৃহস্পতিবার সিপিডি আন্তর্জাতিক দাতব্য সংস্থা অক্সফাম আয়োজিত এক ভার্চুয়াল সংলাপে এ তথ্য জানানো হয়।
সংলাপের বিষয়বস্তু ছিল ‘করোনা মোকাবেলায় ত্রাণ কর্মসূচি: কতটা কার্যকর ছিল?’
এতে জানানো হয়, করোনাকালে বিপুলসংখ্যক মানুষ যারা দারিদ্র্যসীমার নিচে নেমে গেছেন, তাদের নাম তালিকাভুক্ত ছিল না। এ কারণেই মূলত তারা সহায়তার বাইরে রয়ে গেছেন।
হালনাগাদ তালিকায় তাদের অন্তর্ভুক্ত করার প্রস্তাবও করেছে সিপিডি।
তালিকা হালনাগাদ করার পরামর্শ
সিপিডির অপর বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমান সংলাপে মূল প্রতিবেদন উপস্থাপন করবেন। তিনি বলেন, এ সময় সরকার এককালীন আড়াই হাজার টাকা, ত্রাণ হিসেবে নগদ টাকা এবং চাল দিয়েছে। দেশের সবচেয়ে দরিদ্র যে ২৫ শতাংশ মানুষ, তার মধ্যে শুধু এক-চতুর্থাংশ এসব সুবিধা পেয়েছেন। তিন-চতুর্থাংশ মানুষ সরকারের কোনো কর্মসূচি থেকে সহায়তা পাননি।
যাদের সহায়তা করা হয়েছে, তাদের ৪৪ শতাংশের সহায়তা পাওয়ার কথা নয় বলেও জানান তিনি।
মোস্তাফিজ বলেন, ‘সরকারি সহায়তায় উপকারভোগী চিহ্নিতকরণ ও নির্বাচনের ক্ষেত্রে দুর্বলতা বেশি চোখে পড়েছে। যেমন, করোনায় আয় কমে গিয়ে, চাকরি হারিয়ে যারা নতুন করে দরিদ্র হয়েছেন, এমন ৭৭ দশমিক ৩ শতাংশ মানুষ কোনো সহায়তা পাননি। এসব মানুষ আগে দরিদ্র ছিলেন না। কিন্তু নতুন করে তাদের দরিদ্রের ডাটাবেজে অন্তর্ভুক্ত হওয়ার সুযোগ ছিল না। তবে যারা কোনো মধ্যমে নিজেদের অবস্থা সম্পর্কে বলেছেন, তাদের একটা অংশ সহায়তা পেয়েছে।’
করোনাকালে বিভিন্ন হটলাইন সুবিধা চালু করে সরকার যে সহায়তার চেষ্টা করছে, সেটির প্রচার খুব একটা হয়নি বলেও জানান তিনি। সিপিডি জেনেছে, মাত্র ১ দশমিক ৬ শতাংশ সরকারি হটলাইন সম্পর্কে জানতেন।
অর্ধেকের বেশি মানুষ জানেন না তারা সহায়তা কোন শাখায় পেতে পারেন। তবে যারা তালিকাভুক্ত হয়েছিলেন, তারা সহজেই সহায়তা পেয়েছেন।
সহায়তা কত
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী এনামুর রহমান জানান, করোনার সময়ও মোট এক কোটি আট হাজার পরিবারকে ভিজিএফের আওতায় ৫০০ টাকা করে দেয়া হয়েছে। হটলাইন নম্বর ৩৩৩ চালু করায় বিপাকে পড়া যে কারও খাদ্য সহায়তা পাওয়ার সুযোগ তৈরি হয়েছে।
এর বাইরে এক লাখ শিক্ষক ও এক লাখ কৃষককে পাঁচ হাজার টাকা করে দেয়া হয়েছে বলেও জানান প্রতিমন্ত্রী।
তবে এসব সহায়তা বিতরণের ক্ষেত্রে কিছু সমন্বয়হীনতার কথা স্বীকার করেন প্রতিমন্ত্রী। বলেন, ‘মানুষের যে চাহিদা সে অনুযায়ী বিতরণের জন্য আমাদের সাহায্য-সুবিধা এখনো উন্নত দেশের মতো হয়নি। তাই প্রায়োরিটি হিসেবে বিতরণ করা হয়েছে। গত বছর করোনার সময় কিছু সমস্যা থাকলেও এবার তার থেকে বেশ উন্নতি হয়েছে, আগের চেয়ে ব্যবস্থাপনা ভালো হয়েছে।’
ত্রাণ মন্ত্রণালয়-সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি তাজুল ইসলাম বলেন, ‘আমাদের একটা নির্ভুল ডাটাবেজ থাকতে হবে। এটা বেশ গুরুত্বপূর্ণ। সরকার সর্বোচ্চ চেষ্টা করছে।’
সুবিধাভোগীর তালিকা করার সময় স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের স্বজনপ্রীতির সমস্যাও তুলে ধরেন তিনি। বলেন, ‘যে যে লোককে সাহায্য দিলে তার ভোট বাড়বে, তিনি তাদের বেছে নেন। তবে দেখতে হবে, যে পেয়েছেন, তিনি সত্যিকার পাওয়ার জন্য উপযুক্ত কি না।’
‘মানুষের যে চাহিদা সে অনুযায়ী বিতরণের জন্য আমাদের সাহায্য-সুবিধা এখনো উন্নত দেশের মতো হয়নি। তাই প্রায়োরিটি হিসেবে বিতরণ করা হয়েছে। গত বছর করোনার সময় কিছু সমস্যা থাকলেও এবার তার থেকে বেশ উন্নতি হয়েছে, আগের চেয়ে ব্যবস্থাপনা ভালো হয়েছে।’
বরাদ্দ বাড়ানো, বিতরণে স্বচ্ছতার পরামর্শ
সিপিডির বিশেষ ফেলো দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, ‘ত্রাণকাজে বরাদ্দ বাড়াতে হবে। বিতরণব্যবস্থাও স্বচ্ছ হতে হবে। কেউ না পেয়ে নালিশ করলে তা সহজেই সমাধান করতে হবে। এর আরও প্রচার-প্রচারণা চালাতে হবে।’
জাতীয়ভাবে তথ্য-উপাত্তের অভাব রয়েছে বলেও মনে করেন তিনি। বলেন, ‘এক দশকের পুরোনো তথ্য দিয়ে সরকারি কার্যক্রম চলছে। এতে বেশ সমস্যা পোহাতে হচ্ছে।’
তবে তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে অর্থ প্রদান আগের চেয়ে উন্নত হয়েছে বলেও মনে করেন তিনি। বলেন, স্বচ্ছতা, নজরদারি ও জবাবদিহিও বেড়েছে।
নগদ সহায়তা বিচক্ষণ সিদ্ধান্ত
ডাক বিভাগের মোবাইল ব্যাংকিং সেবা ‘নগদ’-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক তানভীর এ মিশুক বলেন, ‘করোনার সময় নগদ সহায়তা বিতরণে সরকার যথেষ্ট বিচক্ষণতার পরিচয় দিয়েছে বলে আমার মনে হয়েছে। মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিস অপারেটরকে যুক্ত করার কারণে প্রক্রিয়াটি স্বচ্ছ হয়েছে।’
৫০ লাখ পরিবারকে আড়াই হাজার টাকা করে দেয়ার সিদ্ধান্ত হলেও পরে ৩৬ লাখ পরিবারকে দুবার করে এই টাকা দেয়া হয়েছে।
নগদের এমডি বলেন, ‘আমি এটাকে বড় সাফল্য হিসেবে দেখি। এখানে সরকারের সাড়ে তিন শ কোটি টাকা সাশ্রয় হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘আগে আমরা দেখতাম, ত্রাণের চাল বা ঢেউটিন চুরির খরব সংবাদপত্রে আসত। এবার কিন্তু কোনো চুরির খরব আসেনি। কারণ, এর কোনো সুযোগই ছিল না। তবে স্থানীয় পর্যায় থেকে যে তালিকা এসেছে, সেটা নিয়ে আমার বিশেষ কিছুই বলার নেই।’
মিশুকের কথার সঙ্গে একমত হয়ে অ্যাকসেস টু ইনফরমেশনের (এটুআই) পলিসি অ্যাডভাইজার আনির চৌধুরী বলেন, ‘সরকারি সহায়তা বিতরণের জন্য ব্যাংকিং পদ্ধতি ব্যবহারের বিকল্প হিসেবে এমএফএসকে ব্যবহার খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে।’
মোবাইল ফোন ব্যবহার করেও সহায়তা বিতরণের তালিকা প্রণয়ন করা সম্ভব বলে মনে করেন তিনি।
তাদের এই বক্তব্যে একমত পোষণ করে দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য ত্রাণ সহায়তা বিতরণের জন্য প্রযুক্তি ব্যবহারের ওপর গুরুত্ব দেন।
আরও পড়ুন:চুয়াডাঙ্গা সীমান্তে বিএসএফের গুলিতে এক বাংলাদেশি যুবক নিহত হয়েছেন। বুধবার (০২ জুলাই) দুপুরে দামুড়হুদা উপজেলার ঝাঁঝাডাঙ্গা সীমান্তে ওই ঘটনা ঘটে। নিহত ইব্রাহিম বাবু (৩২) ঝাঁঝাডাঙ্গা গ্রামের নুর ইসলামের ছেলে। ওই ঘটনায় পতাকা বৈঠকের আহ্বান জানিয়েছে বিজিবি।
নিহতের পিতা নুর ইসলাম জানান, দুপুরে আমার ছেলেসহ ৪-৫ জন গরুর ঘাস কাটার জন্য সীমান্তের গালার মাঠে যায়। এ সময় অসাবধনতাবশত সীমান্তের ৭৯ নম্বর মেন পিলার পার হয়ে ভারতে ঢুকে পড়লে সেখানকার ৩২ বিএসএফ হালদারপাড়া ক্যাম্পের সদস্যরা ২ রাউন্ড গুলিবর্ষণ করে। এতে বিদ্ধ হয়ে ঘটনাস্থলেই নিহত হয় বাবু।
চুয়াডাঙ্গা-৬ বিজিবির অধিনায়ক লে. কর্নেল নাজমুল হাসান গুলিবর্ষণের ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে জানান, কয়েকজন স্বর্ণ চোরাকারবারির ওপর বিএসএফ গুলিবর্ষণ করেছে বলে জানা গেছে।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগর থানার সলিমগঞ্জ পুলিশ ফাঁড়ির পুলিশ অভিযান চালিয়ে মঙ্গলবার (০১ জুলাই) বিকালে শ্রীঘর বাজারের নজরুল ইসলামের দোকানের সন্মুখ থেকে ১৮ কেজি গাঁজা উদ্ধার করে। এ সময় আক্কাছ মিয়া (৩২) ও ছিদ্দিকুর রহমান (২১) নামের দুই মাদক ব্যবসায়িকে গ্রেপ্তার করা হয়।
জানা যায়- সলিমগঞ্জ ফাঁড়ির পুলিশ শ্রীঘর বাজারের চেকপোস্টে দায়িত্ব পালন কালে সন্দেহ জনক একটি সিএনজিকে থামিয়ে তল্লাশি করে। আক্কাছ মিয়া কুমিল্লার ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলার বাঙ্গরা বাজার এলাকার মৃত শহীদ মিয়ার ছেলে। ছিদ্দিকুর রহমান নবীনগর উপজেলার বড়াইল গ্রামের আতিকুর রহমানের ছেলে।
নবীনগর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) শাহিনুর ইসলাম জানান- এ ঘটনায় নবীনগর থানায় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে মামলা দায়ের করা হয়েছে।
ফেনীর পরশুরাম ও ছাগলনাইয়া সীমান্ত এলাকা থেকে কয়েকটি গরুসহ কোটি টাকার ভারতীয় মালপত্র জব্দ করেছে বিজিবি। বুধবার (০২ জুলাই) উপজেলাদ্বয়ের ভারত সীমান্ত এলাকায় এসব মালপত্র জব্দ করা হয়। বিজিবি জানায়, ছাগলনাইয়া ও পরশুরাম সীমান্ত এলাকায় টহল দিচ্ছিল বিজিবি। টহল দলকে দেখে চোরাকারবারিরা বিপুল পরিমাণ ভারতীয় মোবাইল ডিসপ্লে ভর্তি কার্টন ও কয়েকটি গরু রেখে পালিয়ে যায়। বিজিবি সদস্যরা মালপত্র ও গরুগুলো জব্দ করে। এসবের আনুমানিক মূল্য ১ কোটি ১ লাখ ২৮ হাজার টাকা। জব্দকৃত মালপত্র স্থানীয় কাস্টমসে জমা দেওয়া হয়েছে ।
ফেনীর ৪ বিজিবির অধিনায়ক লে. কর্নেল মোশারফ হোসেন জানান, সীমান্তে নিরাপত্তা রক্ষা ও চোরাচালান প্রতিরোধসহ অবৈধ অনুপ্রবেশ রোধে বিজিবির অভিযানিক কর্মকাণ্ড ও গোয়েন্দা তৎপরতা অব্যাহত রয়েছে।
ঝিনাইদহে সাপ নিয়ে খেলা করতে গিয়ে সাপের কামড়ে প্রাণ গেল মাহাফুজুর রহমান (১৬) নামের এক কিশোরের। মঙ্গলবার (০১ জুলাই) রাতে ঝিনাইদহ সদর উপজেলার মহারাজপুর ইউনিয়নের বিষয়খালীর কেশবপুর গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। মৃত কিশোর মাহাফুজুর রহমান ওই গ্রামের মত. মতিয়ার রহমান মতির একমাত্র ছেলে।
স্বজন ও বন্ধু সোহান জানায়, গ্রামের প্রাথমিক বিদ্যালয়ে কাছের একটি তালগাছ থেকে সোমবার (৩০ জুন) বিকালে মাহাফুজুর রহমান একটি সাপ ধরে টিফিন বাটিতে করে আটকে রাখে। যা পরদিন মঙ্গলবার দুপুরে ওই তালগাছের কাছে গিয়ে সাপ নিয়ে খেলা করতে গিয়ে মঙ্গলবার (০১ জুলাই) তার হাতে ছোবল দিলে অসুস্থ হয়ে পড়ে। পরে ঝিনাইদহ হাসপাতালে ভর্তিরপর অবস্থার অবনতি হলে ফরিদপুর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু হয়।
জুয়া খেলারত অবস্থায় শিবপুর মডেল থানা পুলিশ ৭ জুয়ারিকে গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয়েছে। বুধবার (০২ জুলাই) সকালে শিবপুর উপজেলার দুলালপুর ইউনিয়নের লাখপুর বাজারের পাশে বাবুল নাজিরের কলাবাগানের ভেতর থেকে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তারকৃতরা হচ্ছে- দৌলত হোসেন (৩৮) সাং-চরআলিনগর, খোরশেদ আলম (২৪) সাং-চরসিন্দুর, ফারুক (৪৫) সাং-হরিনারায়নপুর, আলামিন (৩৮) সাং-মানিকদী, মুকসিন (৪৪) সাং-শিমুলিয়া, সেলিম (৩৫) সাং-লাখপুর ও সুরুজ (৫২) সাং-লাখপুর। পুলিশ তাদের কাছ থেকে নগদ টাকা ও জুয়া খেলার সরঞ্জামাদী উদ্ধার করে। এ ব্যাপারে শিবপুর মডেল থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। ধৃত: জুয়ারীদের আদালতে পাঠানো হয়েছে।
জেলার সীতাকুণ্ডে সরকারি সংরক্ষিত বনাঞ্চলের মূল্যবান বনায়ন কেটে গড়ে ওঠা বিতর্কিত সেই জাহাজভাঙা কারখানাটিতে দ্বিতীয় দফায় উচ্ছেদ অভিযান শুরু হয়েছে। বুধবার (০২ জুলাই) সকালে জেলা প্রশাসন ও বন বিভাগ যৌথভাবে এ অভিযান শুরু করে। এর আগে গত ২৫ জুন প্রথম দফায় উচ্ছেদ করে কারখানাটির স্থাপনা গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়। কারখানা এলাকায় গড়ে ওঠা আরও কিছু স্থাপনা এবং ভবনের অবশিষ্টাংশে বুধবার (০২ জুলাই) জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে উচ্ছেদ কার্যক্রম চালানো হয়েছে।
উচ্ছেদের পাশাপাশি সীতাকুণ্ডের ছলিমপুর এলাকার তুলাতলী মৌজার জায়গাটিতে আনুষ্ঠানিকভাবে বৃক্ষরোপণ শুরু করেছে বন বিভাগ। বিভিন্ন প্রজাতির দুই হাজার গাছ লাগানো হবে ওই স্থানটিতে। প্রথম দফায় সেখানে দুই হাজার বিভিন্ন গাছের চারা রোপণ করা হবে। সীতাকুণ্ড উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. ফখরুল ইসলাম বৃক্ষরোপণ কর্মসূচির উদ্বোধন করবেন।
সীতাকুণ্ডের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. ফখরুল ইসলাম বলেন, অবৈধ জাহাজভাঙা কারখানাটি উচ্ছেদের পাশাপাশি সেখানে আমরা বৃক্ষরোপণ শুরু করেছি। এ জন্য চারা এনেছে বন বিভাগ। এ ছাড়া কারখানার অবশিষ্ট অংশটিতে উচ্ছেদ কার্যক্রম চালানো হয়।’ এই উচ্ছেদ অভিযানে সীতাকুণ্ডের সহকারী কমিশনার (ভূমি) আবদুল্লাহ আল মামুন ও উপকূলীয় বন বিভাগের সহকারী বন সংরক্ষক আবুল কালাম আজাদ, রেঞ্জ কর্মকর্তা মো. রাশেদুজ্জামান উপস্থিত ছিলেন। রেঞ্জ কর্মকর্তা রাশেদুজ্জামান বলেন, ‘আমরা ঝাউ, করঞ্জা ও হিজল- এই তিন প্রজাতির দুই হাজার গাছের চারা এনেছি। এখানে লাগানো হচ্ছে। এর আগে এখানে প্রায় পাঁচ হাজার গাছ ধ্বংস করেন জাহাজভাঙা কারখানার লোকজন।’
জেলা প্রশাসনই বনের জায়গাটিতে জাহাজভাঙা কারখানা স্থাপনের জন্য দুবার ইজারার অনুমতি দিয়েছিল। আপত্তির পর আবার ইজারা বাতিল করা হয়। কোহিনূর স্টিল নামে এই কারখানা স্থাপন করেছিলেন আবুল কাসেম নামের এক ব্যক্তি। তিনি ‘রাজা কাসেম’ নামে পরিচিত।
বন বিভাগ সূত্র জানায়, তুলাতলী মৌজায় বন বিভাগের ২০ ধারায় নোটিফিকেশনকৃত বনাঞ্চল রয়েছে। ইজারা চুক্তিতে কাগজে-কলমে সলিমপুর মৌজা দেখানো হলেও মূলত তুলাতলী মৌজায় বিতর্কিত এই ইয়ার্ড গড়ে ওঠে। বন বিভাগ বারবার এ ইজারায় আপত্তি জানিয়ে আসছিল। আপত্তি উপেক্ষা করে তখনকার জেলা প্রশাসকেরা একই ভূমি দুবার রাজা কাসেমকে ইজারা দিয়েছিলেন। ২০১৯ সালে প্রথম ৭ দশমিক ১০ একর ভূমি শিপইয়ার্ডের জন্য ইজারা পায় কাসেমের বিবিসি স্টিল। বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা) আইনি পদক্ষেপ নেয় এই ইজারার বিরুদ্ধে; কিন্তু তুলাতলী মৌজাটি বনাঞ্চল হওয়ায় উচ্চ আদালত ২০২০ সালের ২ জানুয়ারি ইজারা চুক্তি অবৈধ ঘোষণা করেন। পরে আর ইজারা চুক্তি নবায়ন করেনি জেলা প্রশাসন।
বিবিসির নামে ইজারা বাতিল হওয়ার পর কাসেম তার স্ত্রী কোহিনূর আকতার নতুন করে একই জায়গায় জমি ইজারার আবেদন করেন। আবেদনকারী প্রতিষ্ঠানের নাম দেওয়া হয় কোহিনূর স্টিল। এরপর ২০২২ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি কোহিনূর স্টিলের নামে সীতাকুণ্ডের উত্তর সলিমপুর মৌজা দেখিয়ে পাঁচ একর বনভূমি ইজারা দেয় জেলা প্রশাসন।
এ নিয়ে ২০২২ সালের ২৪ সেপ্টেম্বর বিভিন্ন গণমাধ্যমে ‘কৌশলে’ বন ইজারার বিষয়ে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। আবার ২০২৩ সালের ৮ জুন ‘চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের উদারতায় ইয়ার্ডের পেটে ৫ হাজার গাছ’ শিরোনামে আরেকটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। চুক্তির শর্ত ভঙ্গের অভিযোগে ২০২৩ সালে জেলা প্রশাসন সীতাকুণ্ডের কোহিনূর স্টিল নামের ওই জাহাজভাঙা কারখানার ইজারা বাতিল করেছিল। উচ্ছেদ কার্যক্রম পরিচালনা করে হাইকোর্টে প্রতিবেদনও দিয়েছিল জেলা প্রশাসন। এরপর বিভাগীয় কমিশনার বরাবর ইজারা চুক্তি বাতিলের বিরুদ্ধে আপিল করেন কোহিনূর স্টিলের মালিক আবুল কাসেম। ইজারা ফিরে পেয়ে কারখানাটিতে ফের জোরেশোরে কাজ শুরু করা হয়। সীতাকুণ্ডের সলিমপুর এলাকার তুলাতলী মৌজায় কোহিনূর স্টিল নামের ইয়ার্ডটির অবস্থান। তবে আদালতের নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে বিভাগীয় কমিশনার কার্যালয় বাতিল হওয়া ইজারা ফিরিয়ে দেওয়ার আদেশ দেয় ২০২৪ সালের এপ্রিল মাসে। এরপর কাসেম আবার ওই জায়গায় কাজ শুরু করেছিলেন। পরে আদালতের নির্দেশে তা উচ্ছেদের সিদ্ধান্ত নেয় জেলা প্রশাসন।
পূর্ণিমার জোয়ারের প্রভাবে সমুদ্র উত্তাল থাকায় প্রবল ঢেউয়ের তোড়ে মিনি কক্সবাজার খ্যাত চট্টগ্রামের আনোয়ারা উপজেলার পারকি সমুদ্র সৈকত এলাকায় লুসাই পার্ক পয়েন্টসহ বিভিন্ন স্থানে তীব্র ভাঙন দেখা দিয়েছে।
এই ভাঙন রোধে অতি দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা না নিলে পর্যটন শিল্পে বিরুপ প্রভাব পড়বে।
বর্তমানে সৈকতে তীব্র ঢেউয়ের প্রভাবে বীচের আশেপাশের বেড়িবাঁধ, পুকুরপাড়, পার্ক, দোকানপাট ভেঙে যাচ্ছে। এভাবে ভাঙতে থাকলে একসময় পুরো বীচটি সাগরে বিলীন হয়ে যাওয়ার শঙ্কা প্রকাশ করছেন স্থানীয়রা, এদিকে পারকি বীচ রক্ষায় পরিকল্পনা হাতে নেওয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছেন চট্টগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী বর্ণ হক।
ঘুরে দেখা যায়, বীচের দক্ষিণ পাশের প্রায় ঝাউগাছ বিলীন হয়ে গেছে। যে কয়েকটি বাকি আছে সেগুলোও বেঁকে গেছে। বীচের এইপাশের ডোবায় ডুকছে সাগরের পানি। ভেঙে গেছে লুসাই পার্কের সীমানা বেড়িবাঁধ, বিলীন হয়ে গেছে স্থানীয়দের তৈরি করা বেড়িবাঁধ। সাগর গর্ভে চলে যাচ্ছে বীচের পাশে ব্যক্তিমালিকানাধীন জায়গা। বীচের সামনে কোনো প্রতিবন্ধক না থাকায় সাগরে ঢেউয়ের তীব্রতা পৌঁছে যাচ্ছে বীচে গড়ে উঠা দোকানপাট-স্থাপনায়।
স্থানীয় প্রবীণ কয়েকজন ব্যক্তি জানায়, কর্ণফুলীর মোহনায় পাকিস্তানের আমলে ২টিপাথরের বাঁধ ছিলো, বন্দরের নব্যতা বাড়ানোর জন্য ফ্রি ড্রেজিং এর ফলে আনোয়ারা সাইডে দেয়ালটি ভেঙে যায় যার কারণে সাগরে ঢেউ সরাসরি বীচে আঘাত করছে।
পারকি সমুদ্র সৈকতে আসা রিফাত হোসেন নামের এক পর্যটল জানান, দিনদিন পারকি সমুদ্র সৈকতের সৌন্দর্য কমে যাচ্ছে, এখন ঢেউয়ের কারণে বাঁধ, গাছ, দোকানপাট ভেঙে যাচ্ছে। এসব রক্ষায় সরকারকে উদ্যোগ নিতে হবে।
সৈকতের লুসাই পার্কের স্বত্বাধিকারী মো. আকবর বলেন, আমরা লাখ লাখ টাকা বিনিয়োগ করে পারকি সমুদ্র সৈকতে ব্যবসা করছি,আমার লুসাই পার্কের বাঁধ ভেঙে গেছে, এখানে পর্যটন কমপ্লেক্স নির্মাণ হচ্ছে, রয়েছে সরকার-বেসরকারি বিভিন্ন স্থাপনা। তাই এসব রক্ষার্থে বীচ এরিয়ায় বাঁধ দেওয়া প্রয়োজন।
পারকি বীচ ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি মো. কাশেম বলেন, শত শত ব্যবসায়ীরা পারকি বীচকে ঘিরে নিজেদের রুজিরোজগারের ব্যবস্থা করছেন, পানির স্রোত এবং ঝাউগাছ ভেঙে পড়ে আমাদের দোকানপাটের ক্ষয়ক্ষতি হচ্ছে। এই বীচটা আমাদের সম্পদ এটি আমাদের রক্ষা করতে হবে।
বীচ ম্যানেজমেন্ট কমিটির সদস্য ও আনোয়ারা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) তাহমিনা আক্তার বলেন, বিষয়টি সম্পর্কে পানি উন্নয়ন বোর্ড এবং উর্ধতন কর্মকর্তাকে জানানো হবে।
পারকি বীচ রক্ষায় পরিকল্পনা হাতে নেওয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছেন চট্টগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী বর্ণ হক বলেন,পারকি বীচ থেকে টানেল পর্যন্ত বেড়িবাঁধ নির্মাণের বিষয়ে পরিকল্পনা হাতে নেওয়া হয়েছে তবে এখনো তা কাগজেকলমে পাশ হয়নি। এটার জন্য স্থানীয়দের প্রয়োজনীয়তার বিষয়ে ভূমিকা রাখতে হবে বলে জানান তিনি।
মন্তব্য